hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নারীদের যে বিষয়গুলো না জানলেই নয়

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

২৮৩
উম্মুল মু'মিনীন হাফসা বিনতে উমর
(রাদিআল্লাহু আনহা) নাম হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)। তিনি কুরাইশের আদি বংশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বংশ পরিচয় হলো : হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র মেয়ে। যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে মাজউন। ছিলেন মা। তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানীয়া সাহাবী ছিলেন। বিখ্যাত সাহাবী ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন মাজউন ছিলেন হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)র মামা এবং ইসলামের ফিকাহবিদ আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) ছিলেন সহোদর। হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) নবী (ﷺ) -এর নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। খুনাইস (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন হুজাফা বিন কায়েস বিন আদির সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়। তিনি বনু সাহাম গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি দাওয়াতে হকের প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন এবং হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁর সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন। নবুয়তের ৬ বছর পর খুনাইস (রাদিআল্লাহু আনহু) হিজরত করে হাবশা গমন করেন। নবী (ﷺ) এর হিজরতের কিছুদিন পূর্বে মক্কা ফিরে আসেন এবং পুনরায় হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সঙ্গে হিজরত করে মদীনা গমন করেন। খুনাইস (রাদিআল্লাহু আনহু) হক পথের একজন জানবাজ সিপাহী ছিলেন। দ্বিতীয় হিজরীতে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত উৎসাহউদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর তৃতীয় হিজরীতে সংঘটিত ওহুদের যুদ্ধে প্রচন্ড বীরত্ব প্রদর্শন করেন এবং লড়াই করতে করতে আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে মদীনা নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তিনি আর সুস্থ হননি এবং পরপারের দিকে যাত্রা করেন। ফলে হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিধবা হয়ে যান। ইদ্দত পুরো হলে ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করলেন। একদিন রসূলে কারীম (ﷺ) নির্জনে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সঙ্গে হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র প্রসঙ্গ উথাপন করলেন। ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) ব্যাপারটি অবহিত ছিলেন না। সুতরাং তিনি আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)কে বিয়ে করার জন্য বললেন। কিন্তু তিনি চুপ রইলেন। এতে ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) মনোক্ষুন্ন হলেন। অতঃপর তিনি ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র নিকট গেলেন। সে সময় রোকেয়া (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) মারা যান। ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁকে নিজের কলিজার টুকরাকে বিয়ে করতে বলেন। ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। এ সময় ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) - এর নিকট হাজির হয়ে সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন।

নবী (ﷺ) বললেন : “হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিয়ে আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) উভয় থেকে উত্তম ব্যক্তির সঙ্গে কেন হতে পারবে না।”

এরপর নবী (ﷺ) হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বিয়ে করেন এবং নিজের দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলছুম (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সঙ্গে বিয়ে দেন। সহীহ বুখারীর এক রাওয়ায়েতে আছে, হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র মেজাজে কিছুটা তিরিক্ষেপনা ছিল এবং কখনো কখনো। রসূল (ﷺ) -কে কড়া জবাব দিতেন। একদিন তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা ওমর ফারুক। (রাদিআল্লাহু আনহু) একথা জানতে পেরে হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি শুনেছি তুমি রসূল (ﷺ) -কে সমানে সমান জবাব দাও। এ কথা কি ঠিক?” হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) জবাব দিলেন : “অবশ্যই আমি এ ধরনের করে থাকি।”

ওমর ফরুক (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁকে বললেন : “মা, খবরদার! আমি তোমাকে আল্লাহর ভয় দেখাচ্ছি। তুমি ঐ নারীর (আয়িশা) সমকক্ষ হতে চেষ্টা করো না। রসূল (ﷺ) -এর মহব্বতের কারণে তাঁর নিজের রূপের উপর গৌরব আছে।” হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) রসূলে কারীম (ﷺ) -কে সকল ধরনের মাসয়ালা নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতেন। একবার নবী (ﷺ) বললেন : “বদর ও হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণকারীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “ইয়া রসূলুল্লাহ! আল্লাহ তো বলেন, “তোমাদের মধ্যে সকলেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” নবী (ﷺ) বললেন : হাঁ, কিন্তু এও তো আছে, “অতঃপর আমরা পরহেজগারদেরকে নাজাত দেব এবং যালিমদেরকে হাটুর উপর উপুড় করে ছেড়ে দেব।”

মেজাজের তিরিক্ষেপনা সত্ত্বেও হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) অত্যন্ত আল্লাহভীতু ছিলেন এবং বেশীর ভাগ সময় আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। হাফিজ ইবনে আব্দুল বার (রহ.) “আল-ইসতিয়াব” গ্রন্ধে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। একবার জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র প্রসঙ্গে এই শব্দাবলী রসূল (ﷺ) -এর সম্মুখে উল্লেখ করেন : “সে খুব ইবাদতকারী, সিয়াম রাখনেওয়ালী। (হে মুহাম্মাদ) সে জান্নাতেও আপনার স্ত্রী।”

রসূলে কারীম (ﷺ) হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা। করেছিলেন। মুসনাদে আহমদে আছে, রসূল (ﷺ) -এর নির্দেশ অনুযায়ী শাফা’ (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে আব্দুল্লাহ অদবিয়া তাঁকে লিখা শিখিয়েছিলেন। জানা যায় প্রিয় নবী (ﷺ) কুরআনে হাকিমের সকল লিখিত অংশ একত্রিত করে হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট রেখে দিয়েছিলেন। এই সকল অংশ রসূল (ﷺ) -এর ওফাতের পর সারা জীবন তাঁর নিকট ছিল। এটা একটি বিরাট মর্যাদার ব্যাপার ছিল।

হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) দাজ্জালকে খুব ভয় পেতেন। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় ইবনে ছাইয়াদ নামক এক ব্যক্তি ছিলো। তারমধ্যে দাজ্জালের কিছু চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। একদিন সে আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন ওমরকে (রাদিআল্লাহু আনহু) রাস্তায় পেল। তিনি তার কতিপয় কাজে ঘৃণা প্রকাশ করলেন। ইবনে ছাইয়াদ আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে রাস্তায় আটকে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি তাকে পেটানো শুরু করলেন। হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) খবর পেয়ে ভাইকে বলতে লাগলেন : “তুমি তাকে কেন জড়িত কর। তোমার কি জানা নেই যে, প্রিয় নবী (ﷺ) বলেছেন, ক্রোধই দাজ্জালের আগমনের হেতু হবে।”

হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) ৪৫ হিজরীতে মদীনায় ইন্তিকাল করেন। মদীনার গভর্নর মারওয়ান জানাযা পড়ান এবং কিছুদূর পর্যন্ত মুর্দা কাঁধে করে নিয়ে যান। এরপর আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযা কবর পর্যন্ত নিয়ে যান। অতঃপর উম্মুল মুমিনিনের (রাদিআল্লাহু আনহা) ভাই আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং ভ্রাতুস্পুত্ররা লাশ কবরে নামান।

মৃত্যুর পূর্বে আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে ওসিয়ত করেন যে, গাবায় অবস্থিত তাঁর সম্পত্তি সদাকা করে ওয়াকফ করে দিতে। রসূল (ﷺ) -এর ঔরসে কোন সন্তান তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেনি। জ্ঞান ও ফজিলতের দিক থেকেও হাফসা (রাদিআল্লাহু আনহা) অত্যন্ত উঁচু মর্যাদায় সমাসীন ছিলেন। তিনি ৬০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ফাতিমা বিনত মুহাম্মাদ (ﷺ)

নাম ফাতিমা। রসূলে কারীম (ﷺ) -এর চতুর্থ এবং সর্বকনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন। সাইয়িদাতুন নিসায়াল আলামীন, সাইয়িদাতুন নিসায়ি আহলিল জান্নাত, জাহরা, বতুল, তহিরাহ, মুতহিরাহ, রাজিয়াহ, মুরজিয়াহ এবং যাকিয়াহ তাঁর লকব বা উপাধি ছিলো।

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্মকাল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের রাওয়ায়েত রয়েছে। এক রাওয়ায়েত অনুযায়ী নবী (ﷺ) -এর নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্বে তাঁর জন্ম হয়েছিল। এ সময় রসূল (ﷺ) -এর বয়স ৩৫ বছর ছিল। অন্য এক রাওয়ায়েত অনুসারে তাঁর জন্ম নবুয়ত প্রাপ্তির এক বছর পূর্বে হয়েছিল। আর এক রাওয়ায়েত আছে যে, তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

শৈশবকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত গম্ভীর এবং নির্জন প্রিয় ছিলেন। তিনি কোন সময় কোন খেলাধূলায় অংশ নেননি এবং ঘরের বাইরে পা রাখেননি। সব সময় মায়ের পাশেপাশে থাকতেন। তাঁর ও রসূল (ﷺ) -এর নিকট এমন প্রশ্ন করতেন। যাতে তাঁর তীক্ষ্ণ মেধার পরিচয় পাওয়া যেত। আত্মপ্রকাশ ও প্রদর্শনীতে ছিল প্রচন্ড অনীহা। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এক আত্মীয়ের ছিল বিয়ে। তিনি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য ভালো কাপড় ও গহনা বানালেন। বিয়েতে যোগদানের জন্য যখন বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় এলো তখন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এই মূল্যবান কাপড় এবং গহনা পড়তে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করলেন এবং সাদা-সিধেভাবেই বিয়ের মাহফিলে অংশ নিলেন। শৈশবকাল থেকেই তাঁর সকল তৎপরতায় আল্লাহ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দিতেন। একবার যখন তিনি শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন শিশুটি জিজ্ঞেস করলেন, “আম্মাজান! আল্লাহর অসংখ্য কুদরত আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। আল্লাহ কি স্বয়ং দেখা দিতে পারেন না?”

খাদিজা উত্তর দিলেন, “মা আমার! যদি আমরা দুনিয়ায় ভালো কাজ এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করি তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির হকদার হবো এবং সেখানেই আল্লাহর দর্শন লাভ ঘটবে।”

নবুয়তের দশম বছরে খাদিজার ইন্তিকালের পর ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র উপর বিপদের পাহাড় নেমে এলো। তাঁর শিক্ষা ও তত্ত্বাবধানের জন্য নবী (ﷺ) সাওদাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বিয়ে করলেন। রসূল (ﷺ) -এর সমগ্র পবিত্র জীবন দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োগ ছিল। কিন্তু যখনই সময় পেতেন তখনই তিনি ফাতিমাকে সময় দিতেন এবং তাঁকে আদর ও মূল্যবান নসিহত প্রদান করতেন।

একাকীত্বের সময় হাফছা বিনতে ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহা), আয়িশা বিনতে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহা), আসমা বিনতে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং ফাতিমা বিনতে যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রমুখ তাঁর নিকট প্রায়ই আসতেন এবং দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করতেন। দ্বীনের দাওয়াতের অপরাধে মুশরিকরা প্রিয় নবী (ﷺ) কে খুব কষ্ট দিত। কখনো মাথায় মাটি ঢেলে দিত। রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখতো। যখন নবী (ﷺ) ঘরে আসতেন তখন ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন। কখনো স্বয়ং পিতার কষ্ট দেখে দুঃখিত হয়ে পড়তেন। সে সময় নারী ও তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন এবং বলতেন, “প্রিয় মা আমার! ঘাবড়িয়ো না। আল্লাহ তোমার পিতাকে একা ছেড়ে দেবেন না।”

একবার নবী (ﷺ) কাবা শরীফে সলাত আদায় করছিলেন। কাফিররা অকাজে মেতে উঠলো। তারা উটের নাড়ি-ভুরি নিয়ে এলো এবং সিজদারত অবস্থায় রসূল (ﷺ) -এর ঘাড়ের উপর রেখে দিল। এই পাষন্ডদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। উকবাহ বিন আবি মুঈত। জনৈক ব্যক্তি ফাতিমার নিকট এসে বললো যে, তোমার পিতার সঙ্গে পাষন্ডরা এই ব্যবহার করছে। একথা শুনতেই তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন এবং দৌড়ে কাবা গৃহে পৌছে ঘাড় থেকে নাড়ি-ভুরি সরালেন। এ সময় কাফিররা চারপাশে দাঁড়িয়ে হাসছিল এবং তালি বাজাচ্ছিল। প্রিয় নবীর কন্যা তাদের প্রতি রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “হতভাগারা! আহকামুল হাকিমিন তোমাদের এই অপকর্মের অবশ্যই শাস্তি দেবেন।” আল্লাহর কি কুদরত! কয়েক বছর পর এইসব কাফিররা বদরের যুদ্ধে অত্যন্ত নির্মমতার সঙ্গে মারা গিয়েছিল।

এক সময় মক্কায় কাফির-মুশরিকদের যুলুম-নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন আল্লাহর তরফ থেকে রসূল (ﷺ) -এর প্রতি হিজরতের নির্দেশ দেয়া হলো। নবুয়তের ১৩ বছরে এক রাতে নবী (ﷺ) আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে নিজের বিছানায় শুইয়ে রেখে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে সঙ্গে নিয়ে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা দিলেন। মদীনা পৌঁছার কিছুদিন পর নবী (ﷺ) পরিবার পরিজনকে আনার জন্য নিজের গোলাম আবু রাফে (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন হারিছাকে মক্কা প্রেরণ করলেন। এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা), উম্মে কুলছুম (রাদিআল্লাহু আনহা), সাওদা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিন যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় পৌছে সাওদা (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং অন্য কন্যারা রসূল (ﷺ) -এর নিকট নতুন ঘরে অবস্থান শুরু করেন। মদীনায় হিজরতের সময় ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বয়োপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) এর নিকট ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু প্রিয় নবী (ﷺ) চুপ রইলেন অথবা কতিপয় রাওয়ায়েত মুতাবেক বললেন, “যা আল্লাহর হুকুম হবে।” অতঃপর ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন খাত্তাব ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। নবী (ﷺ) তাঁকেও একই জবাব দিলেন। কিছুদিন পর নবী (ﷺ) ফাতিমার সম্পর্ক আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সঙ্গে স্থাপন করলেন। এই সম্পর্ক কিভাবে স্থাপিত হলো সে ব্যাপারে তিন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়।

প্রথম বর্ণনা হলো, একদিন আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু), ওমর ফারুক। (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং সায়াদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আবি ওকাস পরামর্শ করলেন। তাঁরা বললেন, ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য রসূল (ﷺ) নিকট কয়েকটি পয়গাম এসেছে। কিন্তু তিনি কোন পয়গামই মঞ্জুর করেননি। এখন আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বাকী রয়েছেন। সেতো রসূল (ﷺ) -এর জন্য জীবন উৎসর্গকারী এবং অত্যন্ত প্রিয় ও চাচাতো ভাই। জানা যায় যে, দারিদ্রতা ও অস্বচ্ছলতার কারণেই সে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছেন না। তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হোক এবং প্রয়োজন হলে তাকে সাহায্যও করা হোক। পরামর্শের পর এই তিন ব্যক্তি আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে খুঁজতে বের হলেন। তিনি জঙ্গলে নিজের উট চরাচ্ছিলেন। তাঁরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। কিন্তু সহায় সম্বলহীন হওয়ার কারণে তাঁর প্রস্তাব প্রেরণে চিন্তা হলো। তবে এই ব্যক্তিবর্গ বাধ্য করায় রাজি হলেন। এর পূর্বে অন্তরের আকাংখাওতো তাঁর এই ছিল। স্বভাবজাত লজ্জার কারণে বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করতে পারেননি। একসময় সাহস করে রসূল (ﷺ) এর নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিলেন। নবী (ﷺ) তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কাছে এ কথা বললেন। তিনিও চুপ থেকে নিজের সম্মতির কথা প্রকাশ করলেন।

দ্বিতীয় বর্ণনায় আছে যে, আনসারদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) একটি দল আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণে অনুপ্রাণিত করলেন। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) -এর নিকট হাজির হয়ে এ কথা বললেন। নবী (ﷺ) তৎক্ষণাৎ বললেন, “আহলান ওয়া মারহাবা” অতঃপর চুপ থেকে গেলেন। আনসার দলটি বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁদেরকে রসূল (ﷺ) -এর জবাব শুনালেন। তাঁরা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে মুবারকবাদ দিলেন। তাঁরা। বললেন যে, নবী (ﷺ) আপনার পয়গাম মঞ্জুর করেছেন। তৃতীয় বর্ণনা হলো, আলীর (রাদিআল্লাহু আনহা) আযাদকৃত একজন দাসী একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন : “কেউ কি ফাতিমার (রাদিআল্লাহু আনহা) জন্য পয়গাম প্রেরণ করেছে?” আলী (রাদিআল্লাহু আনহা) জবাব দিলেন, “আমি জানি না।” সে বললো, “আপনি কেন পয়গাম প্রেরণ করেন না?” আলী মুরতাজা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “আমার নিকট কি আছে যে, আমি বিয়ে করবো?” এই নেকবখত নারী আলীকে (রাদিআল্লাহু আনহা) জোর করে রসূল : খিদমতে পাঠালেন। কিছুটা রসূল (ﷺ) -এর শান এবং কিছুটা নিজের স্বভাবজাত লজ্জার কারণে তিনি মুখ খুলে কিছু বলতে পারলেন না। মাথা নীচু করে চুপচাপ বসে রইলেন।

নবী (ﷺ) স্বয়ং দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করলেন, “আলী! কি ব্যাপার আজ যে নিয়ম ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ চুপচাপ রইলে, ফাতিমার (রাদিআল্লাহু আনহা) সঙ্গে বিয়ের আবেদন নিয়ে এসেছ নাকি?” আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ব্যক্ত করলেন, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রসূল”

নবী (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার কাছে মোহর আদায় করার মত কিছু আছে কি?” আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) না সূচক জবাব দিলেন। পুনরায় নবী (ﷺ) বললেন, “আমি তোমাকে যে যেরাহ বা লৌহবর্ম দিয়েছিলাম, তাই মোহর হিসেবে দিয়ে দাও।” এরপর আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বর্মটি বিক্রির জন্য বাজারের দিকে রওয়ানা হলেন। রাস্তায় ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সাথে দেখা হলো। তিনি চারশ’ ৮০ দিরহাম দিয়ে বর্মটি কিনে নিলেন। অতঃপর তা আবার আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন।

লৌহবর্ম বিক্রির অর্থ আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) -এর কাছে। উপস্থাপন করলেন। রসূলুল্লাহ ৬৯ বললেন, “এর তিনভাগের দু’ভাগ খোশবু। ইত্যাদি ক্রয়ে খরচ কর এবং অবশিষ্ট একভাগ বিয়ের সাজ-সরঞ্জাম ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ে ব্যয় কর।”

অতঃপর নবী (ﷺ) আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু), ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু), আবদুর রহমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আওফ ও অন্যান্য মুহাজির ও আনসার (রাদিআল্লাহু আনহুম)-দিগকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। যখন সবাই রসূল (ﷺ) -এর কাছে একত্রিত হলেন, তখন নবী (ﷺ) মিম্বরের উপর উঠলেন এবং বললেন :।

“হে মুহাজির ও আনসারের দল! এক্ষণই জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমার নিকট এই খবর নিয়ে এসেছিলেন যে, আল্লাহ তা'আলা বাইতুল মামুরে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে মুহাম্মদ (ﷺ) -এর বিয়ে নিজে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আবি তালিবের সঙ্গে দিয়েছেন এবং আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে যে, নতুন করে বিয়ের আকদ করে সাক্ষীদের সামনে কবুল করাও।”

এরপর নবী (ﷺ) বিয়ের খুতবা পাঠ করলেন এবং মুচকি হেসে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে বললেন : “আমি চারশ’ মিসকাল রৌপ্য মোহরের বিনিময়ে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে তোমার সঙ্গে নিকাহ দিলাম। তুমি কি তা কবুল করছো?”

আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) উত্তরে বললেন, “জ্বী, কবুল করলাম।” অতঃপর নবী (ﷺ) দু’আ করলেন। সকলেই এই দু’আয় শরীক হলেন।

বিয়ের কাল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এই বিয়ে দ্বিতীয় হিজরীর সফর মাসে সুসম্পন্ন হয়েছিল। আবার কেউ বলেন, দ্বিতীয় হিজরীর রজব মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অন্য এক রাওয়ায়েতে তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে বিয়ে অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। কতিপয় ঐতিহাসিক বলেছেন, ওহুদের যুদ্ধের পর এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যা হোক, অধিকাংশ ইতিহাসদিদের মতে বিয়ের সময় ফাতিমার বয়স প্রায় ১৫ বছর ছিলো। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বয়স ছিল ২১ বছর।

নবী (ﷺ) অতঃপর স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ফরয এবং অধিকার সম্পর্কে নসিহত করলেন এবং বিদায় জানানোর জন্য স্বয়ং দরজা পর্যন্ত এলেন। দরজায় আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) দুই বাহু ধরে দু’আ নিলেন। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ও ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) উভয়েই উটে সওয়ার হলেন। সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু) ফারসী উটের রশি ধরলেন। আসমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে আমিম এবং অন্য কতিপয় রাওয়ায়েতে সালমা (রাদিআল্লাহু আনহা) উম্মে রাফে অথবা উম্মে আইমন (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। নবী (ﷺ) নিজ মেয়েকে বিয়েতে যা উপহার দিয়েছিলেন তা হলো :

১। উল ভরা মিসরী কাপড়ে প্রস্তুত বিছানা

২। নকশা করা একটি পালং

৩। খেজুরের ছাল ভর্তি চামড়ার একটি বালিশ

৪। একটি মশক।

৫। পানির জন্য দুটি পাত্র

৬। একটি যাতা

৭। একটি পেয়ালা

৮। দু'টি চাদর

৯। দু’টি বাজুবন্দ

১০। একটি জায়নামায

আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) প্রিয় নবী (ﷺ) এর বাসভবন থেকে কিছুদূরে ভাড়ায় একটি বাড়ী নিয়েছিলেন। বিয়ের পর নবী (ﷺ), আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে। ওয়ালিমার দাওয়াতের ব্যবস্থা করতে বললেন। মোহর আদায়ের পর যে অর্থ বেঁচে গিয়েছিল আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) সেই অর্থ দিয়ে ওয়ালিমার ব্যবস্থা করলেন। এতে পনির, খেজুর, জবের নান এবং গোস্ত ছিল। আসমা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তৎকালীন যুগে এটা ছিল সর্বোত্তম ওয়ালিমা।

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) যখন নিজের নতুন গৃহে গেলেন তখন নবী (ﷺ) তাঁর নিকট বেড়াতে আসলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলেন। অতঃপর ভেতরে প্রবেশ করলেন। একটি পাত্রে পানি আনালেন। নিজের হাত তাতে রাখলেন এবং আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বুক ও বাহুতে পানি ছিটালেন। এরপর ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে নিজের কাছে ডাকলেন। তিনি লজ্জায় অবনত হয়ে রসূল (ﷺ) -এর সামনে এলেন। নবী (ﷺ) তাঁর উপরও পানি ছিটালেন এবং বললেন : “হে ফাতিমা! আমি তোমার বিয়ে স্ব-খান্দানের সর্বোত্তম ব্যক্তির সাথে দিয়েছি।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র গৃহ রসূল (ﷺ) -এর বাসভবন থেকে কিছু দূরে অবস্থিত ছিল। যাতায়াতে কষ্ট হতো। একদিন রসূলে কারীম (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বললেন, “মা! প্রায়ই তোমাকে দেখতে আসতে হয়। তোমাকে আমি কাছে নিয়ে যেতে চাই।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “রসূল (ﷺ) -এর আশেপাশে হারিসা বিন নুমানের অনেক বাড়ী আছে। আপনি তাকে কোন একটি বাড়ী খালি করে দেয়ার জন্য বলে দিন।” হারিসা (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন নুমান একজন ধনী আনসার এবং বেশ কয়েকটি বাড়ীর মালিক ছিলেন। নবী (ﷺ) মদীনা আসার পর তিনি পর পর কয়েকটি বাড়ী ইতিমধ্যেই তাঁকে দিয়েছিলেন।

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) যখন হারিসা (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বাড়ীর আকাংখা প্রকাশ করলেন তখন নবী (ﷺ) বললেন : মা! হারিসার কোন বাড়ী চাইতে এখন আমার লজ্জা লাগে। কেননা সে প্রথমেই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য কয়েকটি বাড়ী দিয়ে দিয়েছে।”

এ কথা শুনে ফাতিমা চুপ হয়ে গেলেন। আস্তে আস্তে এ কথা হারিসা (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন নু'মানের কানে পৌছলো। তিনি জানতে পেলেন যে, নবী (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে নিজের কাছে আনতে চান। কিন্তু বাড়ী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তক্ষুণি রসূল (ﷺ) নিকট হাজির হয়ে ব্যক্ত করলেন : “হে আল্লাহর রসূল! আপনি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে নিকটবর্তী কোন বাড়ীতে আনতে চান। আপনার বাসগৃহের সন্নিহিত বাড়ীটি আমি খালি করিয়ে দিচ্ছি। আপনি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে ডেকে পাঠান। হে আমার প্রভু! আমার জীবন ও সম্পদ আপনার উপর কুরবান হোক। আল্লাহর কসম! নবী (ﷺ) যে জিনিস আমার নিকট থেকে নেবেন তা আমার নিকট থাকার তুলনায় রসূলের নিকট থাকাটাই আমি বেশী পছন্দ করবো।” নবী (ﷺ) বললেন : “তুমি সত্যি বলেছ। আল্লাহ তা'আলা তোমাকে বরকত ও কল্যাণ দান করুন।” অতঃপর তিনি আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে হারিসা (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন নু'মানের বাড়ীতে নিয়ে এলেন।

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও চাল-চলনে। রসূলে কারীম (ﷺ) -এর সর্বোত্তম উদাহরণ ছিলেন। তিনি অত্যন্ত মুত্তাকী, ধৈর্যশীলা এবং দ্বীনদার নারী ছিলেন। গৃহের সকল কাজ স্বহস্তে করতেন। যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে হাত ফোস্কা পড়ে যেত। ঘর ঝাড় দেয়া এবং চুলা ফুকতে যুঁকতে কাপড় ময়লা হয়ে যেত। কিন্তু এ সত্ত্বেও এসব কাজ থেকে রেহাই ছিল না। গৃহের কাজ ছাড়া বেশী বেশী ইবাদত করতেন। ফাতিমা দারিদ্র ও বুভুক্ষায় তাঁকে পুরোপুরি সহযোগিতা করতেন। রসূল, তখনকার বাদশা ছিলেন কিন্তু জামাই ও কন্যা কয়েক বেলা অব্যাহতভাবে অভুক্ত থাকতেন। একদিন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আট প্রহর পর্যন্ত অনাহারে ছিলেন। কোন স্থানে মজুরির বিনিময়ে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) এক দিরহাম পেয়েছিলেন। তখন রাত হয়ে গেছে। কোন স্থান থেকে এক দিরহামের যব কিনে বাড়ী পৌছলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) হাসি-খুশীভাবে স্বামীকে অভ্যর্থনা জানালেন। তাঁর নিকট থেকে যব নিয়ে পিষলেন। রুটি বানালেন এবং আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সামনে তা রাখলেন। তাঁর খাওয়ার পর তিনি খেতে বসলেন। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, সে সময় আমার রসূল (ﷺ) -এর এই কথা স্মরণে এলো যে, “ফাতিমা দুনিয়ার সর্বোত্তম নারী”।

এটা ছিল সেই যুগ যখন প্রতিদিন ইসলাম বিজয় ছড়িয়ে পড়ছিল। মদীনা মুনাওয়ারায় অধিক পরিমাণে গনিমতের মাল আসা শুরু হয়েছিল। একদিন আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) জানতে পেলেন যে, গনিমতের মালে কিছু দাসীও এসেছে। তিনি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বললেন, “ফাতিমা! যাঁতা পিষতে পিষতে তোমার হাতে ফোস্কা এবং চুলা জ্বালাতে জ্বালাতে তোমার চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। রসূল ; নিকট আজ গনিমতের মালের মধ্যে অনেক দাসী এসেছে। রসূল (ﷺ) এর নিকট গিয়ে একটি দাসী চেয়ে নিয়ে এসো।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) নবী কারীম (ﷺ) এর নিকট গিয়ে হাজির হলেন। কিন্তু লজ্জায় মুখ দিয়ে কিছু চাইতে পারলেন না। কিছুক্ষণ রসূল ও এর কাছে। অবস্থান করে ফিরে এলেন এবং আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে বললেন যে, রসূল (ﷺ) -এর নিকট কোন দাসী চাওয়ার সাহস তাঁর হয়নি। অতঃপর স্বামীস্ত্রী উভয়েই রসূল 995 নিকট গিয়ে হাজির হয়ে কাজের কষ্টের কথা উল্লেখ করে একটি দাসী প্রাপ্তির আবেদন জানালেন।

রসূলে কারীম (ﷺ) বললেন : “আমি কোন কয়েদীকে তোমাদের খিদমতের জন্য দিতে পারি না”।

স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চুপচাপ ঘরে ফিরে গেলেন। ইবনে সা'দ (রহ.) এবং হাফিজ ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, রাতে নবী (ﷺ) তাঁদের নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমরা যে বস্তুর অভিলাষী ছিলে তা থেকে উত্তম একটি বস্তু আমি তোমাদেরকে বলছি। প্রত্যেক সলাতের পরে এবং শোয়ার সময় সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়ে নিও। এই আমল তোমাদের জন্য অতি উত্তম খাদেম হিসেবে পরিগণিত হবে।

একবার রসূলে কারীম (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র গৃহে গিয়ে দেখলেন যে, ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) উটের চামড়ার পোশাক পরে আছেন। এবং তাতেও ১৩টি পট্টি মারা। তিনি আটা পিষছেন এবং মুখ দিয়ে আল্লাহর কালাম উচ্চারণ করে চলেছেন। নবী (ﷺ) এই দৃশ্য দেখে বিহবল হয়ে বললেন, “ফাতিমা! সবরের মাধ্যমে দুনিয়ার কষ্ট শেষ কর এবং আখিরাতের স্থায়ী খুশীর অপেক্ষা কর। আল্লাহ তোমাদেরকে নেক পুরস্কার দেবেন।”

আবু যর গিফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, একবার নবী (ﷺ) আমাকে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। আমি যখন তাঁর গৃহে পৌছলাম তখন দেখলাম যে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে কোলে নিয়ে যাতা পিষছেন। বাস্তবত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রায়ই দু' বেলা অভুক্ত থাকতেন এবং সন্তানদের কোলে নিয়ে যাঁতা পিষতেন।

একবার ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) মসজিদে নববীতে আসলেন এবং রুটির একটি অংশ প্রিয় নবী (ﷺ) -কে দিলেন। নবী (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, “এই রুটি কোথেকে এলো?” ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “আব্বাজান! সামান্য যব পিষে রুটি বানিয়েছিলাম। যখন বাচ্চাদেরকে খাওয়াচ্ছিলাম তখন খেয়াল এলো যে আপনাকেও কিছু খাইয়ে দিই। হে আল্লাহর রসূল! তৃতীয় বেলা অভুক্ত থাকার পর এই রুটি ভাগ্যে জুটেছে।” নবী (ﷺ) রুটি খেলেন এবং বললেন : “হে আমার কন্যা! চার বেলা অভুক্ত থাকার পর এই প্রথম রুটির টুকরা তোমার পিতার মুখে পৌছছে।”

একবার নবী কারীম (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র গৃহে আসলেন। দেখলেন যে, দরজায় রঙ্গীন পর্দা ঝুলছে এবং ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র। হাতে দুটো রূপোর চুরি। এদেখে তিনি ফিরে এলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) খুব মর্মাহত হলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। ইত্যবসরে রসূল (ﷺ)-এর গোলাম আবু রাফে (রাদিআল্লাহু আনহা) এসে উপস্থিত হলেন। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) ঘটনা বললেন। তিনি বললেন, নবী (ﷺ) চুরি ও পর্দা পছন্দ করেননি। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) তৎক্ষণাৎ উভয় বস্তুকেই রসূল (ﷺ) কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, তিনি এসব আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিয়েছেন। নবী (ﷺ) খুব খুশী হলেন। নিজের কন্যার কল্যাণ ও বরকত কামনা করে দু’আ করলেন এবং তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দ্বীনের কাজে ব্যয় করে দিলেন।

একবার আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ঘরে ফিরে কিছু খাবার চাইলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “অভুক্ত অবস্থায় আজ তৃতীয় দিন চলছে। যবের। একটি দানাও ঘরে নেই।” আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, “হে ফাতিমা, আমাকে তুমি বলনি কেন?”

একবার দ্বিপ্রহরের সময় রসূলে কারীম (ﷺ) ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘর থেকে বের হলেন। রাস্তায় আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সাথে দেখা হলো। তাঁরাও ক্ষুধার্ত ছিলেন। তিনজন আবু আইয়ুব আনসারী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বাগানে পৌঁছলেন। তিনি খেজুরের খোসা ছাড়িয়ে তাঁদের সামনে রাখলেন। এরপর একটি বকরী জবেহ করে তার গোশত দিয়ে কাবাব এবং তরকারি পাকালেন। দস্তরখান বিছানো হলো।

এ সময় নবী (ﷺ) একটি রুটির উপর সামান্য গোত রেখে তা ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট প্রেরণের কথা বললেন। তিনি জানালেন যে, ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) কয়েকদিন অভুক্ত রয়েছে। একবার বনু সলিম গোত্রের এক দুর্বল বৃদ্ধ মুসলিম হলেন। নবী (ﷺ) তাঁকে দ্বীনের জরুরী আহকাম ও মাসায়েল বর্ণনা করলেন অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কি কোন মাল আছে? তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! বনি সলিমের তিন হাজার মানুষের মধ্যে আমিই সবচেয়ে গরীব ও ফকীর।” নবী (ﷺ) সাহাবাদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে এই মিসকিনকে সাহায্য করবে?” সায়াদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন উবাদাহ উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রসূল ! আমার একটি উটনী আছে। আমি তাঁকে তা দিচ্ছি।” নবী (ﷺ) এরপর বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে আছ যে, তার মাথা ঢেকে দেবে?” আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের পাগড়ী খুলে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিলেন।

অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন : “কে আছে যে তার খাবারের বন্দোবস্ত করবে?”

সালমান ফারসী (রাদিআল্লাহু আনহু) সেই বৃদ্ধ আরাবীকে সঙ্গে নিলেন এবং তাঁর খাবারের বন্দোবস্ত করার জন্য বেরুলেন। কয়েকটি গৃহে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু কিছুই পেলেন না। অতঃপর ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বাড়ীতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, “কে”? তিনি সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং আশা প্রকাশ করে বললেন, “হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর কন্যা! এই মিসকিনের খাবারের বন্দোবস্ত করুন।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, “হে সালমান! আল্লাহর কসম। আজ আমরা তৃতীয় দিনের মত অভুক্ত রয়েছি। শিশু দুটি ভূখা অবস্থায় শুয়ে রয়েছে। কিন্তু সায়েলকে খালি হাতে ফিরে যেতে দেবো না। আমার এই চাদর শামউন ইহুদীর নিকট নিয়ে যাও এবং বলো ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর এই চাদর রেখে গরীব মানুষটিকে কিছু দাও।”

সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু) আরাবীকে সঙ্গে নিয়ে ইহুদীর নিকট গেলেন এবং তাঁকে সকল বৃত্তান্ত বললেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি হয়রান হয়ে পড়লেন এবং বলে উঠলেন, “হে সালমান! আল্লাহর কসম, এরা তাঁরা যাঁদের ব্যাপারে তাওরাতে উল্লেখ করা হয়েছে। তুমি সাক্ষী থেকো যে, আমি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পিতার উপর ঈমান এনেছি।” এরপর কিছু খাদ্য সালমান। (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে দিলেন এবং চাদরও ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তা নিয়ে তাঁর নিকট পৌছলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) স্বহস্তে আনাজ পিষলেন এবং তাড়াতাড়ি আরাবীর জন্য রুটি বানিয়ে সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে দিলেন। তিনি বললেন, “এ থেকে বাচ্চাদের জন্য কিছু রেখে দিন।” ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) জবাব দিলেন, “সালমান! যা আল্লাহর রাস্তায় দিয়েছি, তা আমার বাচ্চাদের জন্য জায়িয নয়।”

সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু) রুটি নিয়ে রসূল (ﷺ) কাছে হাজির হলেন। নবী (ﷺ) সেই রুটি আরাবীকে দিলেন এবং ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র গৃহে গেলেন। তাঁর মাথায় নিজের স্নেহের হাত বুলালেন, আকাশের দিকে তাকালেন এবং দু’আ করলেনঃ “হে আমার আল্লাহ! ফাতিমা তোমার দাসী। তার প্রতি সন্তুষ্ট থেকো।”

একবার জনৈক ব্যক্তি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, চল্লিশ উটের যাকাত কী হবে? ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “তোমার জন্য শুধু এক উট। আমার নিকট যদি চল্লিশটি উট থাকে তাহলে আমি সবই আল্লাহর। রাস্তায় দিয়ে দেব।”

ওহুদের যুদ্ধে প্রিয় নবী (ﷺ) মারাত্মক আহত হয়েছিলেন এবং তাঁর শাহাদাতের খবর রটে গিয়েছিল। মদীনায় এই খবর পৌছলে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) অন্যান্য নারীদের সঙ্গে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ওহুদের ময়দানে পৌছলেন। নবী (ﷺ) -কে জীবিত দেখে স্বস্তি পেলেন। কিন্তু শ্রদ্ধেয় পিতার অবস্থা দেখে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। রসূল (ﷺ) -এর ক্ষত স্থানসমূহ বার বার ধৌত করতে লাগলেন। তবে, কপালের ক্ষত থেকে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হচ্ছিল না। অবশেষে খেজুরের চাটাই জ্বালিয়ে ক্ষতের মধ্যে দেয়ায় রক্ত বেরুনো বন্ধ হলো। একবার ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নবী কারীম (ﷺ) সাহাবী ইমরান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন হাছিনকে সঙ্গে নিয়ে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে সেবা শুশ্রুষার জন্য গেলেন। বাড়ীর দরজায় দিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “আসুন”। নবী (ﷺ) বললেন, আমার সঙ্গে ইমরান বিন হাছিনও রয়েছেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) জবাব দিলেন : “আব্বাজান! এক টুকরা ছাড়া পর্দা করার মত দ্বিতীয় কোন কাপড় আমার নিকট নেই।” নবী (ﷺ) নিজের চাদর ভেতরে নিক্ষেপ করে বললেন : “মা! এদিয়ে পর্দা করো।” এরপর নবী (ﷺ) এবং ইমরান (রাদিআল্লাহু আনহু) ভেতরে গেলেন এবং তাঁকে তাঁর অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “আব্বাজান! কঠিন ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছি এবং ক্ষুধায় কাতর করে রেখেছে। কেননা ঘরে খাবার কিছুই নেই।”

নবী (ﷺ) বললেন : “হে আমার কন্যা! ধৈর্য ধর। আমিও আজ তিনদিন ধরে না। খেয়ে রয়েছি। আল্লাহ তাআলার নিকট আমি যাই চাই তা তিনি আমাকে দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি আখিরাতকে দুনিয়ার উপর অগ্রাধিকার দিয়েছি।” অতঃপর তিনি (ﷺ) নিজের স্নেহমাখা হাত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পিঠের উপর রাখলেন এবং বললেন : “হে কলিজার টুকরা! দুনিয়ার মুসিবতে মন ভেঙ্গো না। তুমি জান্নাতের নারীদের নেত্রী।” ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এই দারিদ্র ও ঐশ্বর্যের সঙ্গে পূর্ণ ইবাদতকারী ছিলেন। হাসান (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি আমার আম্মাকে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ইবাদত করতে এবং আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করতে দেখেছি। কিন্তু তিনি কখনো দু’আতে নিজের জন্য কোন কিছুর আবেদন জানাননি।

একবার ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থ থেকেও সারা রাত। ইবাদতে কাটালেন। সকালে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) যখন সলাতের জন্য মসজিদে গেলেন, তখন তিনি সলাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। সলাত শেষ করে যাঁতা পিষতে লাগলেন। আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ফিরে এসে তাঁকে যাঁতা পিষতে দেখে বললেন : “হে আল্লাহর রসূলের কন্যা! এতো পরিশ্রম কর না। কিছুক্ষণ আরাম কর। নচেত অসুখ বেশী হয়ে যেতে পারে।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলতে লাগলেন : আল্লাহর ইবাদত এবং আপনার আনুগত্য অসুখের সর্বোত্তম চিকিৎসা। এরমধ্যে যদি কোনটি মৃত্যুর কারণ হয়। তাহলে তারচেয়ে বেশী আমার জন্য আর সৌভাগ্যের কী হতে পারে।”

একবার নবী (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে জিজ্ঞেস করলেন : “প্রিয় কন্যা! (মুসলিম) নারীর কী কী গুণ রয়েছে?”

তিনি বললেন : “আব্বাজান! নারীদের উচিত আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল (ﷺ) - এর আনুগত্য করা, সন্তানদের প্রতি স্নেহবৎসল হওয়া, নিজের দৃষ্টি অবনত রাখা, নিজের রূপ গোপন রাখা, নিজে অপরকে না দেখা এবং অন্যও যাতে দেখতে না পায় সে ব্যবস্থা করা।” নবী (ﷺ) এই জবাব শুনে খুব খুশী হলেন।

প্রিয় নবী (ﷺ) ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে সীমাহীন ভালোবাসতেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, একবার আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) আবু জাহিল কন্যা গোরাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) খুব দুঃখিত হলেন। রসূলে কারীম (ﷺ) তাঁর নিকট আসলেন তখন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “হে আল্লাহর রসূল! আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) আমার উপর সতীন আনতে চায়।” এ কথা শুনে রসূল (ﷺ) -এর অন্তরে খুব আঘাত লাগলো। এদিকে গোরার অভিভাবকও রসুল (ﷺ) -এর নিকট এই বিয়ের অনুমতি নিতে এলো। নবী (ﷺ) মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন?

“হিশামের বংশধররা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সঙ্গে নিজের কন্যা বিয়ে দেয়ার জন্য আমার নিকট অনুমতি চায়। কিন্তু আমি অনুমতি দিব না। অবশ্য আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) আমার কন্যাকে তালাক দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) আমার শরীরের একটি অংশ। যে তাকে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দেয়। যে তাকে দুঃখ দেয় সে আমাকে দুঃখ দেয়। আমি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করতে চাই না। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূলের কন্যা এবং আল্লাহর দুশমনের কন্যা উভয়ে এক স্থানে একত্রিত হতে পারে না।”

রসূল (ﷺ) -এর এই ভাষণের এমন প্রভাব হলো যে, আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) তৎক্ষণাৎ বিয়ের ইচ্ছা ত্যাগ করলেন এবং ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় অতঃপর দ্বিতীয়বার বিয়ে করার চিন্তা আর অন্তরে কখনো আনেননি।

নবী (ﷺ) নিজের কন্যাকে যেমন ভালোবাসতেন তেমনি নিজের জামাইদেরকেও সীমাহীন স্নেহ করতেন। তাঁদেরকে বলতেন : “যাদের প্রতি তুমি নারাজ হয়ে গেছ, তাদের প্রতি আমিও অসন্তুষ্ট হবো। যাদের সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধ, আমারও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ। যাদের সঙ্গে তোমাদের সন্ধি রয়েছে তাদের সঙ্গে আমারও সন্ধি রয়েছে।”

আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে বলতেন : “হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার ভাই।”

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পুত্র হাসান (রাদিআল্লাহু আনহু) ও হোসাইন। (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে নবী (ﷺ) নিজের কলিজার টুকরা মনে করতেন। অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে তাঁদেরকে আদর দিতেন এবং নিজের কাঁধের উপর উঠিয়ে নিয়ে বেড়াতেন।

প্রিয় নবী (ﷺ) -এর ইন্তিকালের কিছুদিন পূর্বে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) খবর নেয়ার জন্য আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ঘরে গেলেন। নবী (ﷺ) অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে তাঁকে নিজের কাছে বসালেন এবং কানে আস্তে আস্তে কিছু বললেন। এ কথা শুনে তিনি কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) অন্য কোন কথা তাঁর কানে কানে বললেন। এ কথা শুনে তিনি হাসতে লাগলেন। যখন তিনি ফিরে চললেন তখন আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে ফাতিমা! তোমার কাঁদা এবং হাসার মধ্যে কি রহস্য রয়েছে?” ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, “যে কথা নবী (ﷺ) গোপন রেখেছেন, আমি তা প্রকাশ করবো না।”

রসূলে কারীম (ﷺ) -এর বিদায়ের পর একদিন আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) অন্য রাওয়ায়েত অনুযায়ী উম্মে সালমা (রাদিআল্লাহু আনহা) ফাতিমা

(রাদিআল্লাহু আনহা)-কে সেই দিনের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “প্রথমবার নবী (ﷺ) বলেছিলেন যে, প্রথমে জিবরীল আমীন (আলাইহিস সালাম) বছরে সব সময় একবার কুরআন মজিদ পাঠ করতেন। এই বছর নিয়ম ভঙ্গ করে দু’বার পাঠ করেছেন। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, আমার মৃত্যুর সময় নিকটে এসে গেছে। এতে আমি কাঁদতে লাগলাম।

অতঃপর নবী (ﷺ) বলেছিলেন : “আহলে বাইতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি আমার সঙ্গে মিলিত হবে এবং তুমি জান্নাতে নারীদের নেত্রী হবে।” এ কথায় আমি খুব খুশী হলাম এবং হাসতে লাগলাম। ইন্তিকালের পূর্বে রসূলে কারীম (ﷺ) যখন বার বার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছিলেন তখন ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র অন্তর টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, হায়! “আমার পিতার অশান্তি!” নবী (ﷺ) বলেছিলেন, “আজকের পর তোমার পিতা আর অশান্তিতে ভুগবেন।”

প্রিয় নবী (ﷺ) এর ইন্তিকালের পর ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র উপর শোক ও দুঃখের পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছিল। তিনি বলে উঠলেন : “প্রিয় পিতা, হকের দাওয়াত কবুল করেছিলেন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল হয়েছেন। আহ! জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর ইন্তিকালের খবর কে পৌছাতে পারে।”

এরপর দু’আ করলেন : “ইলাহী আমার! ফাতিমার অন্তরকে মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর অন্তরের নিকট পৌছে দিন। হে আল্লাহ আমার! আমাকে রসূলে কারীম (ﷺ) - এর দীদার লাভ করিয়ে খুশী করে দিন। ইলাহী! হাশরের দিন মুহাম্মাদ (ﷺ)- এর শাফায়াত থেকে নিরাশ করো না।” নবী কারীম (ﷺ) -এর দাফনের পর সাহাবা (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও নারী সাহাবীরা (রাদিআল্লাহু আনহুমা) শোক প্রকাশের জন্য তাঁর নিকট এসেছিলেন। কিন্তু তিনি কোন মতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলেন না। সকল স্কলাররাই এ ব্যাপারে একমত যে, রসূল (ﷺ) -এর ইন্তিকালের পর কেউ-ই ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে আর হাসতে দেখেননি।

রসূল (ﷺ) -এর ইন্তিকালের পর তাঁর মিরাসের মাসয়ালা উত্থাপিত হলো। ফিদক নামক একটি মৌজা ছিল। নবী (ﷺ) কতিপয় লোককে এই শর্তে তা দিয়ে রেখেছিলেন যে, তাতে যা উৎপন্ন হবে তার অর্ধেক তারা রাখবে এবং বাকী অর্ধেক রসূল (ﷺ) -এর নিকট পাঠিয়ে দেবে। নবী (ﷺ) নিজের অংশ থেকে কিছু নিজের পরিবার-পরিজনের খরচের জন্য রাখতেন এবং অবশিষ্ট মুসাফির ও মিসকিনদের জন্য ব্যয় করতেন। কতিপয় ব্যক্তি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)কে বললো, ফিদক নবী (ﷺ) -এর ব্যক্তিগত মালিকানার সম্পত্তি ছিল এবং আপনি তার ওয়ারিস। বস্তুত তিনি প্রথম খলিফা আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)-র নিকট ফিদকের ওয়ারাসাতের দাবী জানালেন।

আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) জবাব দিলেন : “হে ফাতিমা! আমি রসূল (ﷺ) -এর নিকটাত্মীয়দেরকে আমার নিকটাত্মীয় থেকে বেশী ভালোবাসি। কিন্তু মুশকিল হলো নবী (ﷺ) মৃত্যুর সময় যে সম্পদ রেখে যান। তার সম্পূর্ণটাই সদাকা হয়ে যায় এবং তাতে ওয়ারাসাত জারি হয় না। এজন্য আমি সেই সম্পদ ভাগ করতে পারি না। অবশ্য রসূল (ﷺ) -এর জীবদ্দশায় আহলে বাইত তা থেকে যে উপকার নিতেন তা এখনো নিতে পারেন।”

এই জবাবে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) খুব দুঃখিত হলেন এবং তিনি আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)-র উপর অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। তিনি আজীবন তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) শুশ্রুষার জন্য উপস্থিত হলেন। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁকে নিজের গৃহের অভ্যন্তরে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং এভাবে মনের দুঃখ দূর করেন।

ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে ১৮টি হাদীস বর্ণিত আছে। তাঁর হাদীসকারদের মধ্যে রয়েছেন আলী, হাসান, হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহুম)। এছাড়া আয়িশা সিদ্দিকাহ এবং উম্মে সালমা (রাদিআল্লাহু আনহুমা)। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ৬টি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। হাসান (রাদিআল্লাহু আনহু), হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহু), মুহসিন (রাদিআল্লাহু আনহু), উম্মে কুলছুম (রাদিআল্লাহু আনহা), রোকেয়া (রাদিআল্লাহু আনহা) ও যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা)। মুহসিন (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং রোকেয়া (রাদিআল্লাহু আনহা) শৈশবকালেই মারা যান।

হাসান (রাদিআল্লাহু আনহু), হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং উম্মে কুলছুম (রাদিআল্লাহু আনহা) নামকরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রসূল (ﷺ) -এর বংশধারা ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে দিয়েই অব্যাহত ছিল। রসূলে কারীম (ﷺ) -এর বিচ্ছিন্নতামূলক দুঃখ সবচেয়ে বেশী বেজেছিল ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র অন্তরে। তিনি সব সময় দুঃখভারাক্রান্ত থাকতেন। তাঁর অন্তর ভেঙ্গে গিয়েছিল। রসূল (ﷺ) -এর ইন্তিকালের ৬ মাস পরই ১১ হিজরীর রমাদান মাসে ২৯ বছর বয়সে তিনি দুনিয়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে আসমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে উমাইসকে ডেকে বলেছিলেন : “আমার জানাযা দেয়ার সময় এবং দাফনের সময় পর্দার পুরো ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং আপনি ও আমার স্বামী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির নিকট থেকে গোসলের ব্যাপারে সাহায্য নেয়া যাবে না। দাফনের সময় বেশী ভিড় হতে দেয়া যাবে না।” আসমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, “হে রসূলের কন্যা! হাবশায় জানাযার উপর গাছের ডাল বেঁধে ডুলি আকৃতির বানানো হয় এবং তার উপর পর্দা দিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি খেজুরের কয়েকটি ডাল আনালেন এবং তা জোড়া দিলেন। অতঃপর তার উপর কাপড় টাঙিয়ে ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে। দেখালেন। তিনি তা পছন্দ করলেন। বস্তুত মৃত্যুর পর তাঁর জানাযা ঐভাবেই করা হলো। জানাযায় খুব কম সংখ্যক লোকেরই অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ইন্তিকাল রাতে হয়েছিল এবং ওছিয়ত অনুযায়ী আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) রাতেই দাফন করেছিলেন। আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযা পড়ান এবং আলী, আব্বাস এবং ফজল বিন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহুম) তাঁর লাশ কবরে নামান।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন