HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে ১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা

লেখকঃ আহমাদ আবদুল আলী তাহতাভী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে

১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা

আহমাদ আবদুল আলী তাহতাভী

প্রকাশক

মো : রফিকুল ইসলাম

পিস পাবলিকেশন

গ্রন্থকারের ভূমিকা
সকল প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) -এর প্রতি। হে আল্লাহ! তুমি সকল সাহাবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। ইসলামের ইতিহাসে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর জীবনী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানবজাতির ইতিহাস আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর মর্যাদা, সম্মান, একনিষ্ঠতা, জিহাদ এবং দাওয়াত এসব বিষয় কখনো ভুলতে পারবে না। এজন্য আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর জীবনী তার জিহাদ ও চরিত্র এসব বিষয় সংগ্রহ করেছি।

এর মাধ্যমে দায়ী, খতীব, উলামায়ে কেরাম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও দ্বীনি ইলম অর্জনকারী ছাত্ররা যেন এর দ্বারা জীবনে উপকৃত হয়। এ সকল বিষয় তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা দান করবেন। সম্মানিত পাঠক! আমি আপনাদের জন্য নবীর পরে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর জীবনী থেকে ১৫০ টি কাহিনী দলীল প্রমাণ সহকারে এখানে উল্লেখ করছি। যেগুলো জিহাদ চরিত্র ও বন্ধুত্ব এসব ক্ষেত্রে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আমি আল্লাহর নিকট কামনা করছি, এসব গুণাবলির অধিকারীকে কিয়ামতের দিন জান্নাতে দেখতে পাব।

আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থীআহমাদ আবদুল আত তাহতাভী

অনুবাদকের কথা
সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে এমন লোক সৃষ্টি করেছেন যারা ছিলেন তার দ্বীনের উপর অটল ও অনড়। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সে প্রিয় নবীর প্রতি যার পদাংক অনুসরণ করে অনেকেই উচ্চমর্যাদা অর্জন করেছিলেন। আর সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর যারা সর্বক্ষেত্রে দ্বীনকে অগ্রাধিকার দিয়ে গেছেন যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ছিলেন অতি সন্তুষ্ট।

বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আহমাদ আব্দুল আল আত তাহভী উল্লেখযোগ্য সাহাবীদের জীবনী নিয়ে আরবী ভাষায় চমৎকার কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় সাহাবীদের জীবন সম্পর্কে অনেক বই প্রকাশিত হলেও অন্যতম খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে এ গ্রন্থটি আমরা অনুবাদ করে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সামনে পেশ করেছি। কারণ লেখক এ গ্রন্থে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর জীবনী থেকে বাছাই করে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা দলিল প্রমাণসহ উল্লেখ করেছেন যা মানুষের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা।

আমরা মুসলিম হিসেবে যাদেরকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন নবী-রাসূলগণ। তার পর যাদের অনুসরণ করতে হবে তাঁরা হলেন সাহাবায়ে কেরামগণ। নবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা আমার এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর।” আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে আদর্শবান হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

শাইখ আবদুর রহমান বিন মোবারক আলী

আরবী প্রভাষক হাজী মোঃ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদ্রাসা,

সুরিটোলা, ঢাকা

সিদ্দীক নামকরণ
নবী (সাঃ) কে অধিক সত্যায়ন করার কারণে আবু বকর সিদ্দীক উপাধি লাভ করেন। উম্মুল মুমিনীন আয়শা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, নবী (সাঃ) কে যখন মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করানো হলো অর্থাৎ যখন মেরাজ সংঘটিত হলো তখন লোকেরা এ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা শুরু করল। এক পর্যায়ে ঈমানদার কিছু লোক মুরতাদ হয়ে গেল। আবার কতিপয় লোক আবু বকর

রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুএর নিকট গেল এবং তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার বন্ধু মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কি কোন সংবাদ আছে? তিনি নাকি মনে করেন তাকে রাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, নবী (সাঃ) সত্যি কি তাই বলেছেন? তারা বলল, হ্যা। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, যদি তিনি তাই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যই বলেছেন।

লোকেরা বলল, তুমি কিভাবে সত্যায়ন করলে যে, তিনি রাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস গেলেন এবং ভোর হওয়ার আগে আবার ফিরে আসলেন। তিনি বললেন, হ্যা, আমি অবশ্যই তার কথায় বিশ্বাস করি এমনকি এর চেয়েও কঠিন কোন বিষয় হলেও বিশ্বাস করব। সকাল বিকাল তার কাছে আকাশ থেকে খবর আসার কারণে আমি তার কথা বিশ্বাস করব। এজন্যই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সিদ্দীক উপাধি দেয়া হয়। (হাকীম, ৩৬২৬৩)

জাহেলী যুগেও তিনি মদ পান করেননি
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জাহেলী যুগেও সবচেয়ে উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, এমনকি তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও মদকে হারাম করে নিয়েছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নিজের ওপর মদকে হারাম করেছিলেন।

এমনকি তিনি জাহেলী যুগেও পান করেননি এবং ইসলামী যুগেও তিনি তা পান করেন নি। এটা এজন্য যে, তিনি একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে ময়লার মধ্যে হাত দিয়ে তা মুখে দিচ্ছে। সে এর গন্ধ পায় তখন হাত সরিয়ে নেয়। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি কি করছে তা জানে না। লোকটির এ অবস্থা দেখে তিনি নিজের উপর মদকে

হারাম করে দেন। এক ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দীক-কে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জাহেলী যুগে মদ পান করেছেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কেন এটা করলেন? তিনি বললেন, আমি আমার ইজ্জত ও সম্মানকে হেফাজত করি। কেননা, যে ব্যক্তি মদ পান করে, সে তার ইজ্জত ও সম্মানকে নষ্ট করে। (তারীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী, পৃঃ ৪৯)।

আমি কখনো মূর্তিকে সিজদা করিনি
সাহাবীদের এক মজলিসে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি কখনো মূর্তিকে সিজদা করিনি। আর তা এই কারণে যে, আমি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হলাম তখন আমার পিতা আবু কুহাফা আমার হাত ধরে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন, যেখানে অনেক মূর্তি ছিল। তিনি আমাকে বললেন, এগুলো তোমার উপাস্য।

তখন আমি একটি মূর্তির নিকটবর্তী হলাম এবং বললাম, আমি ক্ষুধার্ত আমাকে খাদ্য দাও। কিন্তু সে আমার কোন উত্তর দিল না। আমি আবার বললাম, আমি বস্ত্রহীন আমাকে কাপড় দাও। কিন্তু এতেও সে আমার কোন জবাব দিল না। তখন আমি একটি পাথর তার চেহারার দিকে ছুঁড়ে মারলাম। (আল খুলাফাউর রানি, মাহমুদ শাকির পৃঃ ৩১)

একটি আশ্চর্যজনক সংবাদ

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একদিন একটি স্বপ্ন দেখলেন। তখন তিনি শামে অবস্থান করা ছিলেন। স্বপ্নটি একটি পাদ্রীর নিকট বর্ণনা করলেন। পাদ্রী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, মক্কা থেকে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন গোত্রের? তিনি বললেন, কোরাইশ গোত্রের।

আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী কর? তিনি বললেন, আমি ব্যবসা করি। এসব শুনে পাদ্রী বললেন, যদি আল্লাহ তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন। তাহলে তিনি তোমার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এমন একজন নবী পাঠাবেন যার জীবদ্দশায় তুমি তার সাহায্যকারী হবে এবং তার মৃত্যুর পর তুমি তার খলিফা নির্বাচিত হবে। এটা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মনে মনে আনন্দিত হলেন। (আল খুলাফাউর রাশিদূন, মাহমুদ শাকির পৃঃ৩৪)

তালহা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে মূর্তি পূজার জন্য ডেকেছিলেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে মক্কাবাসীদের নিকট এটা অত্যন্ত কষ্টকর হলো। তারা পরামর্শ করল যে, তার একজন দূত পাঠাবে। যে তাকে মূর্তি পূজার আহ্বান জানাবে এবং তারা এজন্য তালহা ইবনে আবদুল্লাহকে নির্বাচন করল। তালহা তাঁর কাছে আসলেন এবং আবু বকর কে ডাক দিয়ে বললেন, আমার দিকে আস। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তুমি আমাকে কি জন্য ডাকছ? তালহা বললেন, তোমাকে লাত ও উযযার ইবাদাত করার জন্য আহ্বান করছি। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, লাত কী জিনিস? তালহা বললেন, আল্লাহর সন্তান।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তাহলে তার মা কে? তখন তালহা চুপ থাকলেন। একদম ঠোটও নাড়াতে পারলেন না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তালহার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের সাথীর উত্তর দাও। কিন্তু তারাও চুপ থাকল কোন উত্তর দিতে পারল না। এমতাবস্থায় তালহা তাদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তাঁরাও চুপ থাকল। এবার তালহা দ্বিতীয় বার আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে ডাক দিয়ে বললেন, আস। আমি মুসলমান হয়ে যাচ্ছি। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তালহাকে নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর কাছে গেলেন। (উয়ূনুল আখবার, ১৯৯, ২০০)

কাবার প্রান্তে একটি ঘটনা
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর নিজের সম্পর্কে বললেন, আমি কাবার কিনারে বসা ছিলাম। সেখানে যায়েদ ইবনে আমরও বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় ইবনে আবি সালত সেখান দিয়ে গমন করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কিভাবে সকাল করেছ হে কল্যাণের অন্বেষণকারী। তিনি বললেন, মঙ্গলের সাথে। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কিছু পেয়েছ? বললেন, না। এবার তিনি বললেন, একনিষ্ঠ দ্বীন ছাড়া যা আছে সবই বাতিল। তুমি কি এমন কোন নবীর সংবাদ শুনেছ যার অপেক্ষা করা হচ্ছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, না।

অতঃপর তিনি বললেন, আমি ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলকে খুঁজতে লাগলাম, তিনি অধিকাংশ সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তিনি অনেক সাহসী ছিলেন। আমি তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! আমরা কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান রাখি। নিশ্চয় আরবের উন্নত বংশ থেকে একজন নবী আসবেন। সেটা হচ্ছে তোমার বংশ। আমি বললাম, সেই নবী সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি বললেন, তিনি অত্যাচার করেন না, অত্যাচারিত হন না এবং তার কাছে কেউ অত্যাচারিতও হন না। অতঃপর যখন নবী (সাঃ) এর আবির্ভাব হলেন, আমি তার প্রতি ঈমান আনলাম এবং তাঁকে সত্যায়ন করলাম। (তারীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী, পৃঃ ৫২)

যেমন ছিলেন আবু বকর
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তাকে বলল, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন এমন ব্যক্তি যার গায়ের রং ছিল শুভ্র। তিনি ছিলেন পরিচ্ছন্ন। হালকা পাতলা বাহু বিশিষ্ট। প্রশস্ত চেহারার অধিকারী, লজ্জাশীল চক্ষুবিশিষ্ট। (ইবনে সা'দ, তাকাতুল কুবরা- ৩/১৮৮)

১০
জাহেলী যুগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
ইমাম নববী বলেন, জাহেলী যুগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কুরাইশদের নেতা ছিলেন। তিনি তাদের পরামর্শ সদস্য ছিলেন এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন। যখন ইসলামের আগমন হলো তখন তিনি সবকিছু বাদ দিয়ে ইসলামকে প্রাধান্য দিলেন এবং পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলেন। ইবনে আসাকী মারুফ থেকে বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কুরাইশদের ঐ এগার জনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যাদের মর্যাদা জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে অত্যধিক ছিল।

তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নেতৃত্বস্থানীয় লোক ছিলেন। তৎকালীন সময়ে কুরাইশদের রাজা-বাদশাহ ছিল না যার অধীনে প্রতিটি বিষয়ের সমাধা হত বরং প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে একজন নেতা থাকত। তারাই সব কিছু সমাধা করত। বনী হাশেম গোত্র মেহমানদারী করত এবং পানি পান করত। যখন তারা কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইতো তখন দারুন নদওয়াই বৈঠক করত। (সিরত ও মানাকীব আবু বকর, পৃ: ১৯)

১১
জাহেলী যুগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিবাহ
জাহেলী যুগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবদুল উযযার মেয়ে কাতীবাহকে বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে আবদুল্লাহ এবং আসমা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কাতীবাহ আসমার কাছে কিছু হাদিয়া প্রেরণ করেছিলেন, আসমা তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। তখন আসমা নবী (সাঃ) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

নবী (সাঃ) বললেন, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচরণ করা। তবে এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, কাতীবা মুসলমান ছিলেন। (তবাকাতুল কুবরা লি ইবনে সা'দ- ৩/১৬৯) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জাহেলী যুগে বনী কেনান গোত্রের উম্মে রুমান বিনতে আমীরকেও বিবাহ করেন।তিনি খুব তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনায় হিজরত করেন। তাঁর গর্ভে আয়েশা ও আবদুর রহমানের জন্ম।

১২
ইসলামী যুগে আবু বকরের বিবাহ
ইসলাম গ্রহণ করার পর আবু বকর আবদুল্লাহর মা আসমা বিনতে উমায়েসকে বিবাহ করেন, তিনি ছিলেন প্রথম যুগের মুহাজিরীনদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি পূর্বে জাফর ইবনে আবু তালিবের স্ত্রী ছিলেন। যখন জাফর মারা গেলেন তখন আবু বকরের সাথে তার বিবাহ হয় এবং তার গর্ভে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের জন্ম হয়।

এছাড়াও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হাবীবা বিনতে খারীজাহকেও বিবাহ করেন। তার গর্ভে উম্মে কুলসুমের জন্ম হয়। তবে তার জন্ম হয়েছিল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ইন্তেকালের পর। (সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ৩০)

১৩
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর পুত্র সন্তান
আবদুর রহমান বিন আবু বকর। তিনি ছিলেন আবু বকরের সবচেয়ে বড় সন্তান। হুদায়বিয়ার সময় তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি নবী (সাঃ) এর সাথী হন। তাঁর বীরত্ব অনেক প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। আবদুর রহমান অনেক বীর পুরুষ এবং অত্যন্ত তিরন্দাজ ছিলেন। ইয়ামামার যুদ্ধের দিন তিনি ইয়ামামার বাদশাহকে হত্যা করেছিলেন, যে মুসায়লাতুল কাযযাবের বাহিনীর প্রধান ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর। তিনি অনেক পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

নবীর হিজরতের ক্ষেত্রে তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। দিনের বেলায় তিনি মক্কার কাফেরদের সংবাদ সংগ্রহ করতেন এবং যেগুলো গারে হেরায় নবী (সাঃ) ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর কাছে পৌছিয়ে দিতেন। যখন সকাল হতো তখন তিনি তাদের কাছ হতে চলে আসতেন। তায়েফের দিন তিনি তীরের আঘাত প্রাপ্ত হন। পরে তার পিতার খিলাফতের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন। (সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ২০, ২১)

১৪
আবু বকরের কন্যা সন্তান
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর তিন জন কন্যা সন্তান ছিলেন। তাঁরা হলেন- আসমা, আয়শা ও উম্মে কুলসুম। আসমাকে যাতুন নেতাকাইন বলা হতো। কেননা তিনি হিজরতের সময় তার কমরের রশীকে দুভাগ করে খাদ্য বেঁধে দিয়েছিলেন। তাকে বিবাহ করেছিল কুরাইশের জুবায়ের ইবনে আওয়াম নামক এক যুবক। তার গর্ভে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের জন্ম হয়। তিনি শেষ পর্যায়ে মুসলিম জাহানের খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তাকে হত্যা করেছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এমন মহিলা ছিলেন, যার ব্যাপারে অপবাদের দোষারোপ খণ্ডন করা হয় আসমানে।

তিনি ছিলেন নবী (সাঃ) এর সঙ্গীনী। মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী এবং ফকীহ। তার মর্যাদা সকল নারীদের উপর ঠিক সে রকম যেমন মর্যাদা সরীদের (এক ধরনের খাদ্য) সকল খাদ্যের উপর। তার এমন মর্যাদা রয়েছে যা বর্ণনাতীত। উম্মে কুলসুম, তিনি জন্মগ্রহণ করেন তার পিতার মৃত্যুর পর। তাই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে দেখতে পাননি। হাবীবা বিনতে খাদীজার গর্ভে তার জন্ম হয়। মৃত্যুর সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়েশাকে বললেন, আমার মনে হয় খাদীজার গর্ভে কন্যা সন্তান জন্ম হবে। তোমরা তার সাথে সদ্বাচরণ করবে। পরবর্তীতে দেখা গেল যে, ঠিকই কন্যা সন্তান হয়েছে। তালহা ইবনে আবদুল্লাহ তাকে বিবাহ করেন। (সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ২০)

১৫
আল্লাহ তার চুখ অন্ধ করে দিয়েছেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল একখণ্ড পাথর নিয়ে তাদের নিকট আগমন করল। সে চাইছিল এটার দ্বারা তাদেরকে প্রহার করবে। সে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে দেখতে পেল তখন নবী (সাঃ) আবু বকরের পাশে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার চোখকে অন্ধ করে দেন যার ফলে রাসূল (সাঃ) কে দেখতে পায় নি।

সে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে জিজ্ঞেস করল, তোমার ঐ সাথী কোথায়? আমি জানতে পেরেছি সে নাকি আমাদের দুর্নাম করে। আল্লাহর কসম, যদি আমি তাকে পাই তবে এই পাথর দ্বারা তাকে আঘাত করব। রাসূল (সাঃ) কে দেখতে না পেয়ে যখন মহিলাটি চলে যেতে লাগল তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি আপনাকে দেখেছিল? রাসূল (সাঃ) বললেন, না, সে আমাকে দেখতে পায়নি। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ খণ্ড, পৃ: ৩৫৫)

১৬
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে নবীর কাছে বিবাহ দেন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, যখন খাদীজা ইন্তেকাল করলেন তখন খাওলা বিনতে উকায়েম যিনি উসমান ইবনে মাজউনের স্ত্রী ছিলেন, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিয়ে করবেন না? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কাকে বিয়ে করব? খাওলা বললেন, আপনি চাইলে কুমারীও বিয়ে করতে পারেন, আবার বিবাহিতও বিয়ে করতে পারেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, কুমারী কে? খাওলা বললেন, আপনার কাছে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তির কন্যা আয়েশা। তারপর নবী জিজ্ঞেস করলেন, বিবাহিতের মধ্যে কে? খাওলা বললেন, সাওদা বিনতে যাম'আ।

সে আপনার প্রতি ঈমান এনেছে এবং সে আপনার অনুসরণ করেছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি দু’জনের কাছে গিয়ে প্রস্তাব দাও। তখন তিনি প্রথমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বাড়িতে গেলেন এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা -এর মাকে বললেন, আল্লাহ তোমাদের পরিবারে কল্যাণ ও বরকত নাযিল করুন। আল্লাহর রাসূল আমাকে পাঠিয়েছেন আয়েশা সম্পর্কে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা আছে তুমি একটু আবু বকরের অপেক্ষা কর তিনি এখনি আসবেন। একটু পরে আবু বকর আসলেন।

তিনি তাকে বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবারে আল্লাহ কতইনা বরকত নাযিল করছেন। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আয়েশার ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এটা কি তার জন্য ঠিক হবে? সে তো তার ভাইয়ের মেয়ে। একথা শুনে আমি রাসূল (সাঃ) এর কাছে চলে গেলাম এবং বিষয়টি তাকে বললাম। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমার দ্বীনি ভাই। তার মেয়েকে আমার জন্য বিয়ে করা ঠিক আছে। একথা শুনে আমি আবু বকরের কাছে গেলাম। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূল (সাঃ) কে ডেকে নিয়ে আস। অতঃপর তিনি গেলেন এবং বিবাহ সম্পন্ন করলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, তখন আমার বয়স ছিল ৬ বছর। (তাবরানী- ৩২/৩২)

১৭
আমার মনে আছে হে আল্লাহর রাসূল
রাসূল (সাঃ) একদিন তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন আর তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উপস্থিত ছিলেন। উকাযের বাজারে কাস ইবনে সায়িদের কথাগুলো তোমাদের মধ্যে কার মনে আছে? একথা শুনে সবাই চুপ থাকলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ দিন আমি উকাযের বাজারে উপস্থিত ছিলাম। উনার কথা আমার মনে আছে? তিনি বলছিলেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা শোনো এবং ভালো করে মনে রাখ। আর যখন মনে রাখবে তখন তোমরা উপকৃত হবে। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আজ বেঁচে আছে সে অবশ্যই মারা যাবে।

আর যে মারা যাবে সে ধ্বংস হবে। আর যা আগমন করার তা আসবেই। নিশ্চয়ই আকাশের মধ্যে রয়েছে সবকিছুর সংবাদ। যমীনে রয়েছে শিক্ষনীয় বিষয়। যমীনটা হচ্ছে প্রশস্ত বিছানা। আকাশটা হচ্ছে উঁচু ছাদ। তারকাগুলো চলমান। নদীগুলো জমাটবাধা নয়। রাত্রি অন্ধকার। আকাশে রয়েছে অনেক কক্ষপথ। এরপর শপথ করে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য রয়েছে একটি দ্বীন। সেটা তোমাদের দ্বীন থেকে তাঁর কাছে অনেক পছন্দনীয়। আমার কী হয়েছে আমি মানুষকে দেখতে পাচ্ছি তারা দূরে চলে যাচ্ছে, কিন্তু ফিরে আসছে না। তাঁরা কি চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়াকে পছন্দ করে? আর সত্যিই কি তারা চিরস্থায়ী হবে? অথবা তাদেরকে কি ছেড়ে দেয়া হবে যে, তারা আজীবন ঘুমাবে? (মাওয়াকীফুস সিদ্দীক মা’আন নবী, পৃ: ৮)

১৮
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিলাল -কে মুক্ত করেন
বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন সত্যিকার ইসলাম গ্রহণকারী এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী। যখন দুপুরে সূর্য প্রচণ্ড গরম হতো, তখন উমাইয়া ইবনে খালফ তাকে রৌদ্রের মধ্যে শুইয়ে রাখত। মক্কার মরুভূমিতে রোদের তাপের মধ্যে শোয়ায়ে তার উপর পাথরের বড় টুকরা রেখে দেয়া হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু না হয় অথবা সে মুহাম্মদের দ্বীনকে পরিত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হতো। এত বিপদের মধ্যে থেকেও তিনি আহাদ আহাদ অর্থাৎ আল্লাহ এক আল্লাহ এক বলে ঘোষণা করতেন। ওয়ারাকা ইবনে নাওফল একদিন তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন।

তখনও তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। আর তিনি আহাদ আহাদ বলছিলেন। তখন ওয়ারাকা বললেন, হে বিলাল! তুমি তো সত্য কথা বলছ। এরপর তিনি উমাইয়া ইবনে খালফ এবং বনী জমাহ গোত্রের আরো যারা এরকম আচরণ করছিল তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি তোমরা এ অবস্থায় তাকে হত্যা করতে চাও, তবে আমি তাকে তোমাদের থেকে মুক্ত করে নেব। অত:পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার নিকট দিয়ে গমন করলেন। তখনও তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বাড়ি বনী জমাহ গোত্রের মধ্যেই ছিল।

অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উমাইয়া ইবনে খালফকে বললেন, তুমি কি এই মিসকীনের প্রতি দয়া করবে না? তুমি কি আল্লাহকে ভয় করবে না? তখন উমাইয়া বলল, তুমি তাকে মুক্ত কর। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি অবশ্যই তা করব। আমার নিকট তার চেয়ে শক্তিশালী একটি গোলাম আছে। তাকে তোমাকে দিয়ে এর বদলে বিলালকে আমি মুক্ত করব। উমাইয়া বলল, আমি তাই গ্রহণ করলাম। এভাবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তাকে আযাদ করে দেন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ, পৃ: ৮৯)

১৯
বনী মুয়াম্মলের এক দাসীকেও তিনি মুক্ত করেন
মুশরিক থাকা অবস্থায় ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর একটি দাসী ছিল। তিনি তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য শাস্তি দিচ্ছিলেন। এমনকি সে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি তাকে এভাবে শাস্তি দিতেই থাকেন। তখন ঐ দাসী বলল, আল্লাহও তোমার সাথে এই আচরণ করবে। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই দাসীকে মুক্ত করলেন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ, পৃ: ৮৯)

২০
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ইসলাম গ্রহণ
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একদিন নবী (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তিনি জাহেলী যুগে নবী (সাঃ) এর বন্ধু ছিলেন। নবী (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তিনি তাকে বললেন, হে আবুল কাসেম! আপনি তো আপনার কাওমের মজলিসে উপস্থিত থাকেন না। তারা আপনার অনেক কুৎসা রটনা করছে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল। আমি তোমাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি। রাসূল যখন তাঁর কথা শেষ করলেন তখন সাথে সাথে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলেন।

এরপর রাসূল (সাঃ) তাঁর কাছ থেকে চলে যান। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল অত্যন্ত খুশি হন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ, যুবাইর ইবনে আওয়াম এবং সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। ফলে তাঁরাও ইসলাম কবুল করে নেন। অতঃপর পরের দিন উসমান ইবনে মাজউন, আবু উবাইদা ইবনে যাররাহ, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, আবু সালামা ইবনে আবুল আসাদ এবং আরকাম ইবনে উবাই প্রমুখদের নিকটও দাওয়াত পেশ করেন। ফলে তারাও ইসলাম গ্রহণ করেন। (বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ- ৩/২৯)

২১
আবু বকরের হাতে যারা মুসলমান হয়েছিলেন
যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন। তখন তিনি ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে লাগলেন। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন একজন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অত্যন্ত সহজ সরল। কুরাইশদের সবচেয়ে উত্তম গোত্রের এবং সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার মধ্যে নিহিত ছিল অনেক কল্যাণ এবং মঙ্গল। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। যার ব্যবহার ছিল খুবই ভালো। তাঁর কওমের লোকেরা তাঁর নিকট আগমন করত এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। এ সুযোগে তিনি যাদের প্রতি আস্থা রাখতেন তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতেন।

ফলে অনেকেই তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। যেমনউসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ, যুবাইর ইবনে আওয়াম, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, উসমান ইবনে মাজউন, আবু উবাইদা ইবনে যাররাহ, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, আবু সালামা ইবনে আবুল আসাদ এবং আরকাম ইবনে উবাই রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। এ সকল সাহাবী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সাথে নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর নিকট যান। ফলে তিনি তাদের নিকট ইসলাম পেশ করেন এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনান এবং ইসলামের সত্যতা তাদের নিকট তুলে ধরেন এবং তারা ঈমান আনেন। এসব সাহাবী ছিলেন ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমান। তারা রাসূল (সাঃ) কে সত্যায়ন করেন এবং তিনি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছিলেন তা বিশ্বাস করেন। (বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ- ৩/২৯)

২২
রাসূল (সাঃ) কি করছেন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বর্ণনা করেন, যখন নবী (সাঃ) এর সাহাবীরা একত্রিত হলেন। আর তারা ছিলেন সংখায় ৩৮ জন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য রাসূল (সাঃ) এর কাছে আবেদন পেশ করলেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, হে আবু বকর! আমরা এখনো সংখ্যায় অল্প। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তারপরও এ আবেদন করতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা মসজিদের আশে পাশে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা খতীব হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম খতীব যিনি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। এদিকে মুশরিকরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা -এর প্রতি রাগান্বিত হলো এবং তাকে অনেক মারধর করল। এদিকে ফাসীক উৎবা ইবনে রাবিয়া আসল এবং তার জুতা দ্বারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে প্রহার করল। এমনকি তার চেহারায় আঘাত করল। তখন বনু তামীম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সেবা করতে আসল এবং তারা একটি কাপড়ে জড়িয়ে তাকে তার ঘরে পৌঁছিয়ে দিল। এরপর বনু তামীম মসজিদে গিয়ে ঘোষণা করল, যদি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মারা যান তবে আমরা উৎবা ইবনে রাবিয়াকে হত্যা করব। এরপর তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছে গেল, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পিতা এবং তার গোত্র বনু তামীম তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা -এর সাথে কথা বলছিলেন।

তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, রাসূলের কী অবস্থা? তখন তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মাকে বললেন, তুমি তাকে কিছু খেতে দাও অথবা পান করতে দাও। এমতাবস্থায় আবু বকর স্ত্রি বলতে লাগলেন, রাসূল (সাঃ) এর কী অবস্থা? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মা বললেন, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তুমি উম্মে জামিলের কাছে যাও এবং জিজ্ঞেস কর। এরপর আমি উম্মে জামিলের কাছে গেলাম। অতঃপর বললাম, আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর অবস্থা সম্পর্কে তোমার কাছে জানতে চেয়েছেন। তিনি বললেন, আমি আবু বকরকেও চিনি না এবং মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকেও চিনি না।

আর তুমি যদি চাও তাহলে আমাকে তোমার ছেলের কাছে নিয়ে যাও। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর মা বললেন, তাহলে চলুন। এরপর তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা -এর নিকটে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! এই ফাসিকের দল তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি আশা করি আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নেবেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, রাসূলের কী অবস্থা? তিনি বললেন, তিনি নিরাপদে আছেন। তারপর বললেন, কোথায়? তিনি বললেন, দারে আরকামে। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি আল্লাহর সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়েছি যে, আমি রাসূলের সাক্ষাত না পাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু খাব না এবং কোন কিছু পানও করব না।

অতঃপর যখন পরিস্থিতি শান্ত হলো তখন তারা দুজন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে নিয়ে বের হলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা তাদের ওপর ভর করে রাসূলের কাছে গেলেন। রাসূলের সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তিনি তাকে চুম্বন করলেন এবং দুঃখ প্রকাশ করলেন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ফাসীক আমার চেহারায় যে আঘাত করেছিল ঐটা ছাড়া আমার আর কোন সমস্যা নেই। এই আমার মা সে তার সন্তানের সাথে উত্তম আচরণ করেছে আর আপনি হলেন বরকতময়। সুতরাং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি যেন আমার মাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। এরপর রাসূল (সাঃ) দোয়া করলেন, ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মা ইসলাম গ্রহণ করলেন। (বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ- ৩০)

২৩
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন বীর পুরুষ
কোন একদিন আলী ইবনে আবি তালিব খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! সবচেয়ে উত্তম বীর পুরুষ কে? তাঁরা বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি। অতঃপর তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছিল যে, আপনারা এটাই বলবেন; কিন্তু সেই ব্যক্তি হলেন আবু বকর। আমরা একদিন রাসূল (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। অতঃপর বললাম, কে সেই ব্যক্তি যে রাসূল (সাঃ) এর সাথে থাকবে, যাতে করে রাসূল (সাঃ) এর ওপর কোন মুশরিক আক্রমণ করতে না পারে। আল্লাহর কসম, তখন আমাদের কেউ তার নিকটবর্তী হয়নি।

কেবলমাত্র আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর তরবারি উন্মুক্ত করে রাসূল (সাঃ) এর মাথার কাছে গেলেন। তাই আমরা মনে করি যে, তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় বীর পুরুষ। আমি দেখেছি যে, রাসূল (সাঃ) এর সাথে যেসব কুরাইশরা শত্রুতা করছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে গালি দিয়ে বলছে যে, তুমি আমাদের সকল উপাস্যদেরকে এক উপাস্যে পরিণত করেছ। (তখন আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন) আল্লাহর কসম, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছাড়া কেউ তার নিকটবর্তী হয়নি। তিনি তার সাথে জিহাদ করেন এবং লোকদের গালির জবাব দেন। আর তিনি বলেন, তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা কি এমন একটি লোককে হত্যা করতে যাচ্ছ? যে বলে যে, আল্লাহ আমার রব। (বেদায়া ওয়ান নেহায়া- ৩২৭১)

২৪
তিনি ছিলেন ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তির চেয়ে উত্তম
আলী ইবনে আবি তালিব একদিন তার সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তি উত্তম, নাকি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা উত্তম। একথা শুনে কওমের লোকেরা কান্না শুরু করল। অতঃপর আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! ফেরাউন সম্প্রদায়ের পৃথিবী ভর্তি মুমিনদের চেয়ে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা -এর একটি ঘণ্টা অনেক উত্তম। কেননা, ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তি তাদের ঈমানকে গোপন রেখেছিল। অথচ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর ঈমানকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। (বেদায়া ওয়ান নেহায়াহ- ৩/২৭২)

২৫
তুমি তাদেরকে মুক্ত কর
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দুর্বল কৃতদাসদেরকে আযাদ করে দিতেন এবং স্বীয় মাল ও প্রচেষ্টার দ্বারা দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। এক সময় তিনি নাহদিয়া এবং তার কন্যাকে দেখতে পেলেন। তারা দু'জন ছিলেন প্রথম যুগের মুসলমান। তারা দু'জন তাদের মনিবাকে খামির বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সে ছিল (তাদের মনীবা ছিল) বনী আবদুদ দার গোত্রের মহিলা। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনোই তোমাদেরকে আযাদ করব না। একথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে অমুকের মা! তুমি তোমার কসম ভঙ্গ কর। একথা শুনে সে বলল, তুমি কসম ভঙ্গ কর এবং তাদেরকে মুক্ত কর। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এর বিনিময় কত? মহিলা বলল, এত এত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি তাদেরকে গ্রহণ করলাম, এখন থেকে তারা আযাদ। (সীরাতে নবুওয়াত লি ইবনে হিশাম- ১৩৯৩)

২৬
অচিরেই তুমি সন্তুষ্ট হবে
দাস-দাসীদেরকে মুক্ত করে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কোন প্রশংসা কামনা করতেন না। তিনি এটা করতেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। একদিন তার বাবা তাকে বললেন, হে আমার সন্তান! আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। যে, তুমি দুর্বল দাসদেরকে মুক্ত করে যাচ্ছ। সুতরাং তুমি যদি এমন কতককে মুক্ত করতে যারা তোমার পিছনে দাঁড়াতে পারত! তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আমার পিতা! আমি সেটাই চাই যা আমার আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শানে এমন আয়াত নাযিল হলো যা কিয়ামত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হচ্ছে। তা হলো :

অনুবাদ : ৫. অতএব যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় ৬. এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে। ৭. আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। ৮. আর যে কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয়। ৯. এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে। ১০, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। ১১. যখন সে অধঃপতিত হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না।১২. আমার দায়িত্ব পথপ্রদর্শন করা। ১৩. আর আমি মালিক ইহকালের ও পরকালের।

১৪. অতএব, আমি তোমাদেরকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। ১৫. এতে নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে এবং (তারা প্রবেশ করবে) ১৬. যারা মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। ১৭. আর এ থেকে দূরে রাখা হবে খোদাভীরু ব্যক্তিদেরকে। ১৮, যে আত্মশুদ্ধির জন্যে তার ধন-সম্পদ দান করে ১৯, এবং তার ওপর কারো কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না। ২০. তাঁর মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত। ২১. সে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে। (সূরা আল-লাইল-৫-২১/তাফসীরে আলুসী- ৩/১৫২)

২৭
পারস্য এবং রোমের ঘটনা
হিজরতের পূর্বে পারস্য এবং রোমের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে রোমের উপর পারস্যরা জয় লাভ করে। এতে মুশরিকরা আনন্দিত হয়। আর তারা এটাই চাচ্ছিল যে, রোমের উপর পারস্যরা বিজয় লাভ করুক। কারণ তারাও তাদের মতো মূর্তি পূজক ছিল। কিন্তু এ বিষয়টি মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। কারণ, তারা চাইছিল যে, রোমানরা পারসীয়দের উপর জয় লাভ করুক।

কারণ তারা ছিল আহলে কিতাব। এমতাবস্থায় মুশরিকরা নবী (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে বলল, তোমরা আহলে কিতাব এবং নাসারারাও তো আহলে কিতাব। আর আমরা হলাম মূর্খ। অথচ আমাদের পারস্যের ভাইয়েরা তোমাদের ভাইদের উপর জয় লাভ করেছে। সুতরাং তোমরা যদি আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হও, তাহলে আমরাও তোমাদের উপর জয় লাভ করব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিচের আয়াতগুলো নাযিল করেন -

অনুবাদ : ১. আলিফ-লাম-মীম। ২. রোমকরা পরাজিত হয়েছে। ৩. এক নিকটবর্তী স্থানে এবং তারা তাদের এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই জয়লাভ করবে। ৪. তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে। পূর্বের ও পরের মীমাংসা আল্লাহরই (হাতে)। আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে ৫, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি প্রতাপশালী, অত্যন্ত দয়ালু। ৬, এটা আল্লাহর ওয়াদা।

আল্লাহ তার ওয়াদা খিলাফ করেন না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। ৭. তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক অবস্থাটুকুই জানে আর তারা পরকাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফিল। ৮. তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ তো আসমান, যমীন এবং এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তা সবই সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে ও এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু অনেক মানুষই তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকে অবিশ্বাস করে। (সূরা রূম : আয়াত-১-৮)

অত:পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কাফেরদের নিকট গিয়ে বললেন, তোমাদের ভাইয়েদের উপর জয় লাভ করার কারণে তোমরা কি আনন্দিত হচ্ছ? না, তোমরা আনন্দিত হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের চক্ষুকে শীতল করবেন না। আল্লাহ কসম! আল্লাহ তায়ালা পারস্যদের উপর রোমানদেরকে বিজয় দান করবেন। আমাদের নবী (সাঃ) এ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। একথা শুনে উবাই ইবনে খালফ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দিকে উঠে দাঁড়াল এবং বলল, তুমি মিথ্যা বলেছ।

একথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! তুই সবচেয়ে বড় মিথ্যক। আমি তোমার কাছে দশটি শক্তিশালী উটনী বন্ধক রাখছি এবং তুমি আমার কাছে দশটি শক্তিশালী উটনী বন্ধক রাখ। যদি রোমানরা জয় লাভ করে তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি পারসিকরা জয় লাভ করে তবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে এজন্য তিন বছর লাগতে পারে। একথা বলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট সংবাদ দিলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি যেভাবে উল্লেখ করে বিষয়টি সে রকম নয়।

শব্দটি তিন থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যার উপর প্রযোজ্য হয়। সুতরাং তুমি মেয়াদ বাড়াও। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বের হলেন এবং উবাইয়ের সাথে সাক্ষাত করলেন এবং নয় বৎসর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেন। পরে দেখা গেল যে, নয় বছরের আগেই রোমানরা পারসিকদের উপর জয় লাভ করেছে। এতে মুসলমানরা আনন্দিত হলো।

কারণ এর দ্বারা কুরআন যেভাবে সংবাদ দিয়েছে ঠিক সেভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে, নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবং আহলে কিতাব রোমানদেরকে আল্লাহ তায়ালা অগ্নিপূজক পারসিকদের উপর বিজয় দান করেছেন। তবে এ ঘটনাটি কখন সংঘটিত হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, বদরের যুদ্ধের পর। আবার কেউ বলেছেন, হুদাইবিয়ার বছর এবং এ মতটিই অধিকতর বিশুদ্ধ (সীরাতুন নবুওয়াত ফী যু-ইল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ- ১৩৮৯, ৩৯০)

২৮
হাবসায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর হিজরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, যেদিন থেকে আমার বোধশক্তি হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারী রূপে পেয়েছি (ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম পালন করতে আমি তাদেরকে কখনো দেখিনি) এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যার দুই প্রান্তে সকাল সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাছে আসেননি (অর্থাৎ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় তিনি আমাদের ঘরে আসতেন)। মুসলিমরা যখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলো তখন কোন একদিন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হিজরতের নিয়তে আবিসিনিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। তিনি বারকুল গিমাদ নামক জায়গায় পৌছলে ইবনেদ দাগিনাহ তার সাথে দেখা করলেন।

তিনি ছিলেন কারা সম্প্রদায়ের দলপতি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ বকর! কোথায় যেতে চাচ্ছেন? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমার জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনস্থ করেছি যে, আমি দেশে দেশে ঘুরে বেড়াব আর আমার প্রতিপালকের ইবাদাত করব। (এ কথা শুনে) ইবনে দাগিনাহ বললেন, আপনার মতো লোক (স্বেচ্ছায় দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না এবং আপনার মতো ব্যক্তিকে বের করাও চলে না (অর্থাৎ আপনার মতো একজন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষে স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করা যেমন ঠিক নয় তেমনি আপনাকে দেশ থেকে বের করে দেয়াও অন্যায়)।

কেননা আপনি অসহায়কে উপার্জনক্ষম করেন, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখেন, অক্ষমের বোঝা বহন করেন, অতিথির মেহমানদারী করেন এবং বিপদ-দুর্ভিক্ষে লোকদেরকে সাহায্য করেন। আমি আপনার আশ্রয়দাতা (অর্থাৎ আপনার আশ্রয় ও নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার উপর)। সুতরাং আপনি ফিরে যান এবং নিজ দেশে গিয়ে আপন প্রতিপালকের ইবাদাত করুন। এ কথা বলে ইবনেদ দাগিনাহ যাত্রা করলেন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সঙ্গে নিয়ে (মাক্কায়) ফিরে এলেন। তিনি কুরাইশ কাফিরদের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ঘোরাফেরা করলেন এবং বললেন : আবু বকরের মতো ব্যক্তি যেমন বেরিয়ে যেতে পারে না, তেমনি তার মতো ব্যক্তিকে বের করে দেয়াও চলে না। আপনারা কি এমন একজন ব্যক্তিকে (দেশ থেকে) বের করতে চাচ্ছেন যিনি অসহায়কে উপার্জনক্ষম করেন, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখেন, অপরের বোঝা বহন করেন, অতিথির মেহমানদারী করে থাকেন এবং বিপদ-দুর্ভিক্ষে সাহায্য করেন।

এ কথা শুনে (আবূ বকরকে) ইবনেদ দাগিনাহর আশ্রয় প্রদান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে নিরাপত্তা প্রদান করে ইবনেদ দাগিনাহকে বলল, আপনি আবূ বকরকে বলুন, তিনি যেন নিজ ঘরে তার প্রতিপালকের ইবাদাত করেন, সেখানেই যেন নামায পড়েন এবং তার যা ইচ্ছা তা (ঘরেই যেন) পড়েন। এ বিষয়ে তিনি আমাদেরকে যেন কষ্ট না দেন এবং এসব তিনি যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা আমাদের ভয় হচ্ছে তিনি (প্রকাশ্যে ঐসব করে) আমাদের স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যেও (ধর্মের বিষয়ে) আবার কোন ঝামেলা বাঁধিয়ে দেন। ইবনেদ দাগিনাহ এসব কথা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বললেন। তাই তিনি নিজ ঘরে স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাকেন, প্রকাশ্যভাবে নামায এবং কুরআন তিলাওয়াত করেন না। কিছুদিন পর আবু বকরের মনে কি যেন খেয়াল চাপল। তিনি নিজ বাড়ির উঠানে একটি মাসজিদ তৈরি করলেন এবং (ঘর থেকে) বেরিয়ে সেখানে নামায পড়তে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন।

ফলে মুশরিকদের স্ত্রী-সন্তানরা তাঁর কাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাঁর অবস্থা দেখে তাঁরা অবাক হতো এবং একদৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকিয়ে থাকত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন বেশি আল্লাহভীরু ব্যক্তি। যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। এটা মুশরিক কুরাইশ নেতাদেরকে ভাবিয়ে তুলল। তারা ইবনেদ দাগিনাহকে ডেকে পাঠাল। তিনি তাদের কাছে এলে তারা বলল, আমরা তো আবু বকর কে এ চুক্তিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম যে, তিনি নিজ ঘরে তার প্রভুর ইবাদাত করবেন। কিন্তু তিনি তা ভঙ্গ করে নিজ বাড়ির উঠানে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন এবং (তাতে) জনসম্মুখে নামায পড়ছেন ও কুরআন তিলাওয়াত করছেন। এতে আমরা ভয় করছি যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিবেন।

সুতরাং আপনি তাকে গিয়ে বলুন, যদি তিনি নিজ ঘরে (অপ্রকাশ্যে) নিজ প্রভুর ইবাদাত করে সীমাবদ্ধ থাকতে চান তবে তাই করুন। আর যদি তিনি অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ্যে ঐ সব করতে চান তাহলে আপনি তাকে বলুন, তিনি যেন আপনার জিম্মাদারী ফিরিয়ে দেন। কেননা, একদিকে আমরা যেমন আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করাটা অপছন্দ করি, অন্যদিকে তেমনি আবু বকরের প্রকাশ্য ধর্মানুষ্ঠানকেও আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, অতঃপর ইবনেদ দাগিনাহ আবু বকরের কাছে এসে বললেন, যে চুক্তিতে আমি আপনার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম তা আপনার বেশ জানা আছে। সুতরাং হয় আপনি (বাড়াবাড়ি না করে) ঐ চুক্তির উপর সীমাবদ্ধ থাকুন, নয়ত আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরিয়ে দিন। কেননা কোন লোকের সাথে আমি নিরাপত্তা চুক্তি করার পর আমার সেই জিম্মাদারী বিনষ্ট করা হয়েছে এমন একটি কথা আরব জাতি শুনতে পাক এটা আমি মোটেই পছন্দ করি না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আপনার আশ্রয় দানের প্রতিশ্রুতি আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি এবং মহান আল্লাহর আশ্রয় লাভেই আমি সন্তুষ্ট। (ফাতহুল বারী, ৭/২৭৪)

অতঃপর যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইবনেদ দাগিনার জিম্মাদারী থেকে বের হয়ে গেলেন, তখন কুরাইশদের এক মূর্খ ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাত করল। তখন সে কাবার দিকে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় সে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মাথায় মাটি ছুঁড়ে মারল। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট দিয়ে ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা অথবা আস ইবনে ওয়ায়িল যাচ্ছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা তাকে বললেন, এই বোকা লোকটির আচরণ কি লক্ষ্য করেছ? সে বলল, তুমিই তো তোমাকে এই আচরণের উপযুক্ত করেছ। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলছিলেন, হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈর্যশীল। হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈৰ্যশীল, হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈর্যশীল আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া- ৩৯৫)

২৯
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আনন্দের কারণে কেঁদে ফেললেন
যখন মুশরিকরা মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করল, তখন দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য তাদের কেউ কেউ হাবশার দিকে হিজরত করে চলে গেলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হিজরতের নিয়তে প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (আবূ বকরকে) বললেন, দেরী করুন। কেননা আমি নিশ্চিতভাবে আশা করছি যে, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হবে। তখন আবূ বকর এ রাসূলুল্লাহ -এর সাথী হবার নিয়াতে নিজেকে বিরত রাখলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা নবী (সাঃ) ও তাঁর পিতার হিজরতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূল (সাঃ) প্রতিদিন সকালে অথবা বিকালে আমাদের বাসায় আসতেন। কিন্তু যখন রাসূল (সাঃ) কে হিজরতের অনুমতি দেয়া হলো তখন তিনি একদিন দুপুরে আমাদের বাসায় আসলেন।

সাধারণত এমন সময় তিনি কখনো আসতেন না। যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে দেখলেন তখন বললেন, নিশ্চই বড় কোন ঘটনা ঘটেছে তাই রাসূল (সাঃ) এমন সময় এসেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিছানা থেকে সরে গিয়ে রাসূল (সাঃ) কে বসতে দিলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট আমি ও আমার বোন আসমা ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি তোমার নিকট থেকে বেরিয়ে যাব। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দুই মহিলাই তো আমার মেয়ে আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক।

তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমাকে মক্কা ছেড়ে হিজরত করে মদিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তাহলে আমরা কি সকালে বের হব? রাসূল (সাঃ) বললেন, হাঁ সকালে বের হব। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, এদিনের পূর্বে আমি কখনো ভাবিনি যে, আনন্দের ফলে কেউ কান্না করে। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে দেখলাম যে, ঐ দিন তিনি খুশিতে কান্না করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর নবী! নিশ্চয়ই এই দুটি সাওয়ারী আমি হিজরতের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি। এ সময় তারা বনী দায়েল গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনে আরিকাত নামের এক ব্যক্তিকে খাদিম হিসেবে সাথে নেন। সে তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিত। (সীরাতুন নবুওয়াত লি ইবনে কাসীর- ২/৩২)

৩০
নবী (সাঃ) এর সাথে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর হিজরত
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক! তাহলে আমার এ উট দু'টির একটা আপনি গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ বললেন, দামের বদলে। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, অতঃপর আমরা তাদের দু'জনের সফর প্রস্তুতি খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করলাম এবং তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে তা চামড়ার একটা থলেতে রাখলাম। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মেয়ে আসমা। নিজের কোমরবন্দ থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে তা দিয়ে থলেটার মুখ বেঁধে দিলেন। আর এ কারণে আসমাকে বলা হতো “যাতু নিতাক” (বা কোমরবন্দ বিশিষ্ট)।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সাওর পর্বতের একটি গুহায় গিয়ে পৌছলেন। সেখানে তারা তিন রাত পালিয়ে থাকলেন। রাতের বেলা আবু বকর তনয় আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু গুহাতেই থাকতেন। তিনি একজন চতুর ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন তরুণ যুবক ছিলেন। তিনি শেষ রাতে তাঁদের কাছ থেকে রওনা হয়ে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে সকাল বেলা এমনভাবে মিলিত হতেন যেন এখানেই তিনি রাত অতিবাহিত করেছেন। অতঃপর তাদের দুজনের বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করা হতো তার যা কিছু তিনি শুনতেন তা-ই মনে রাখতেন এবং যখন আঁধার ঘনীভূত হতো তখন ঐ সংবাদটি তাদের কাছে পৌছে দিতেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মুক্ত গোলাম আমির ইবনে ফুহাইরাহ্ সন্ধ্যায় রাতের অন্ধকারে দুগ্ধবতী ছাগল তাদের কাছে নিয়ে যেতেন। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে দুধ দোহন করে তাদেরকে তা পান করাতেন। অতঃপর ভোরের অন্ধকারেই ছাগল নিয়ে ফিরে আসতেন। তিনি এ তিন রাতের প্রতি রাতেই এরূপ করতেন। অতপর তারা গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সামনে এবং রাসূল (সাঃ) পিছনে এভাবে তারা মদীনার পথে রওয়ানা হলেন। আবার যখন পিছন থেকে শত্রু আসার ভয় থাকত তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রাসূল (সাঃ) এর পিছনে চলতেন। এভাবে তাদের সফর চলছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একজন সুপরিচিত লোক ছিলেন। যখনই তার সাথে কারো সাক্ষাত হতো। তখন তাকে জিজ্ঞেস করত। তোমার সাথে কে? তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উত্তর দিতেন। তিনি পথ প্রদর্শক। আমাকে দ্বীনের দিকে পথ দেখান। (তাবারানী)।

৩১
আল্লাহ হলেন দুই জনের তৃতীয় জন
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিজরতের সময় গারে সওরে নবী (সাঃ) এর সাথে ছিলাম। আমি একবার মাথা উঁচু করলে দেখতে পেলাম, কুরাইশ অনুচররা পায়চারি করছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! যদি এদের কেউ দৃষ্টি একটু নিচু করে তা হলে অবশ্যই আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তখন নবী (সাঃ) বললেন, হে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু! চুপ কর। আমরা যদিও দু'জন; কিন্তু আমাদের সাথে আল্লাহ তৃতীয় জন আছেন।

যদি তোমরা তাকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং ছিলেন তিনি দু'জনের তৃতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, ‘বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার উপর তার প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফিরদের কথা হেয় করেন। আল্লাহর কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা - ৪০)

৩২
মক্কায় প্রবেশে নবীর সাথী
উরওয়াহ্ ইবনে যুবাইর থেকে বর্ণনা করেছেন যে, পথিমধ্যে একদল মুসলিম উষ্ট্রারোহীর দলে যুবাইরের সঙ্গে নবী (সাঃ) এর দেখা হয়। এরা সিরিয়া থেকে ফিরে আসা ব্যবসায়ী দল ছিল। যুবাইর রাসূলুল্লাহ ও আবূ বকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করার জন্য দিলেন। এদিকে মাদীনার মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ এর মক্কা থেকে বেরিয়ে আসার সংবাদ শুনতে পেল। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকাল বেলা কঙ্করময় ভূমিতে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করত এবং দুপুরের রোদের তাপে চলে যেতে বাধ্য হতো। অতঃপর এক দিন দীর্ঘক্ষণ দেরী করার পর তারা চলে গেল এবং নিজ নিজ ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিল।

এক ইয়াহূদী কোন এক উঁচু দালান থেকে কী যেন নিরীক্ষণ করছিল। এমন সময় সে রাসূলুল্লাহ ও তার সাথীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকা ভেদ করে স্পষ্ট আসতে দেখতে পেল। তখন ইয়াহূদীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকে, হে আরব জাতি! যে সৌভাগ্যের জন্য তোমরা অপেক্ষা করছিলে এ তো সেই সৌভাগ্য। এ কথা শুনে মুসলিমরা ব্যস্ত হয়ে সকলে অস্ত্র তুলে নিল এবং মাদীনার বাইরে কঙ্করময় স্থানটির অপর প্রান্তে রাসূলুল্লাহ এর সঙ্গে দেখা করল। রাসূলুল্লাহ ও তাদেরকে সাথে নিয়ে ডান দিকের পথ ধরে চলতে লাগলেন এবং বনী আমর ইবনে ‘আওফ সম্প্রদায়ে গিয়ে অবতরণ করলেন।

সেদিনটা ছিল রবিউল আউয়াল মাসের কোন এক সোমবার। তারপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু লোকদের জন্য দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ নীরব হয়ে বসে রইলেন। আনসারদের যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেনি তারা এসে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে সালাম করতে লাগল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ এর উপর যখন রোদের তাপ পড়ল এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কিন্তু এগিয়ে এসে নিজ চাদর দিয়ে তাকে ছায়া করলেন তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ কে চিনতে পারল।

৩৩
হিজরতের পর আবু বকরের অসুস্থতা
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহাথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাদীনায় আগমন করলেন তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও বিলাল জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আমি তাদের উভয়ের নিকট গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল! তুমি কেমন আছ? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আবু বকরের যখন জ্বর আসত তখন তিনি বলতেন,

“প্রত্যেকটি লোক নিজ নিজ পরিবারে সুপ্রভাত করছে,

অথচ মৃত্যু তাঁর জুতার ফিতার চাইতেও অধিকতর নিকটবর্তী।”

আর বিলালের অবস্থা ছিল এই, যখন তার জ্বর ছাড়ত তখন সে গলার

আওয়াজ বড় করে এ কবিতাগুলো বলতো,

হায় আফসোস! আমি কি কখনো ঐ উপত্যকায় রাত যাপন করতে পারব,

যেখানে ইযখির ও জালীল ঘাস আমার চারপাশে থাকবে?

আমি মাজান্না নামক জায়গায় পুনরায় কোন দিন পৌছতে পারব কি

এবং শামা ও তাফীল পাহাড় আমার চোখে পড়বে কি?”

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ এর কাছে আসলাম এবং এ সম্পর্কে তাকে জানালাম। তখন তিনি এ বলে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! মাদীনাকে আমাদের কাছে প্রিয় কর যেমন প্রিয় ছিল আমাদের কাছে মক্কা; বরং তার চেয়ে অধিকতর প্রিয় কর দিন এবং আমাদের জন্য একে (মাদীনাকে) স্বাস্থ্যের উপযোগী বানিয়ে দাও। আর এর সা ও মুদএ আমাদের জন্য বারাকাত দান কর এবং এখানকার জ্বরকে সরিয়ে জুহাতে নিয়ে যাও।” (বুখারী, ৬৩৭২)

৩৪
জিহাদের ময়দানে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমরা একই পানির
বদরে অবতরণের পর রাসূল (সাঃ) তার ‘গারে ছুরের সাথী হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে বের হন। তখন তিনি দূর থেকে মক্কার সৈন্যদের তাবু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এ সময় আরবের এক বৃদ্ধের দেখা পান। তিনি সে বৃদ্ধকে কুরাইশ এবং রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উভয় বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার কারণ ছিল, তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন না, কিন্তু বুড়ো বেঁকে বসেন। তিনি বললেন, আপনারা নিজেদের পরিচয় না দেয়া পর্যন্ত আমি কিছুই বলবো না।

নবী করিম (সাঃ) বললেন, আমরা আপনার কাছে যা জানতে চেয়েছি তা বলুন, এরপর আমরা আপনাকে নিজেদের পরিচয় দেব। বৃদ্ধ বললেন, আমি জেনেছি, মোহাম্মদ এবং তার সঙ্গীরা অমুক দিন বেরিয়েছে। সংবাদদাতা যদি আমাকে সত্য কথা জানিয়ে থাকে, তবে আজ তাদের অমুক জায়গায় থাকার কথা। একথা বলে বৃদ্ধ ঠিক সে জায়গার কথাই বললেন, যেখানে সে সময় মদীনার বাহিনী অবস্থান করছিল।

বৃদ্ধ আরো বললেন, কুরাইশ অমুক দিন বেরিয়েছে। সংবাদবাহক যদি আমাকে সত্য জানিয়ে থাকে, তবে কুরাইশদের আজ অমুক জায়গায় থাকার কথা। এ কথা বলে বৃদ্ধ ঠিক সে জায়গার কথা বললেন, যেখানে মক্কী বাহিনী অবস্থান করছিল। বৃদ্ধ কথা শেষ করে বলল, এবার আপনাদের পরিচয় দিন। নবী করিম (সাঃ) বললেন, আমরা একই পানি থেকে উদ্ভূত। একথা বলেই চলে গেলেন। বৃদ্ধ বিড়বিড় করতে লাগল, “কোন পানি থেকে? ইরাকের পানি থেকে?”এ ঘটনা থেকে নবী (সাঃ) এর সাথে আবু বকরের ঘনিষ্ঠতা জানা যায় এমনকি তিনি নবী (সাঃ) এর ব্যক্তিগত পাহাড়াদার ও ছিলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২/২২৮)

৩৫
বদরের যুদ্ধে নবীর পাহাড়াদার
বদরের যুদ্ধে নবী (সাঃ) সাহাবাদের কাতারবন্দী করলেন। তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সা’দ ইবনে মুয়াযের নেতৃত্বে আনসারী যুবকদের একটি দলও উপস্থিত ছিলেন। তারা রাসূল (সাঃ) কে পাহাড়া দিতেন। এক সময় আলী ইবনে আবি তালিব বললেন, হে লোক সকল! সবচেয়ে উত্তম বীর পুরুষ কে? তারা বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি। অতঃপর তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছিল যে, আপনারা এটাই বলবেন।

কিন্তু সেই ব্যক্তি হলেন আবু বকর। আমরা একদিন রাসূল (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। অতঃপর বললাম, কে সেই ব্যক্তি যে রাসূল (সাঃ) এর সাথে থাকবে, যাতে করে রাসূল (সাঃ) এর ওপর কোন মুশরিক আক্রমণ করতে না পারে। আল্লাহর কসম, তখন আমাদের কেউ তার নিকটবর্তী হয়নি। কেবলমাত্র আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর তরবারি উন্মুক্ত করে রাসূল (সাঃ) এর মাথার কাছে গেলেন। তাই আমরা মনে করি তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় বীর পুরুষ। (বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ- ৩/২৭১)

৩৬
যদি তোমাকে দেখতাম তবে আমি তোমাকে হত্যা করতাম
আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর ছিলেন আরবের মধ্যে একজন নামকরা বীর পুরুষ। তিনি সুদক্ষ তীর নিক্ষেপকারী ছিলেন। অনেক দেরীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যার ফলে তিনি বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের পক্ষ হয়ে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সম্মানার্থে তিনি তাঁর বাবার সাথে মুকাবালা করেন নি। পরে যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন তার বাবাকে বললেন, বদরের যুদ্ধে আপনি আমার সামনে পড়েছিলেন, তবে আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।

যার কারণে আমি আপনাকে হত্যা করিনি। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে বললেন, কিন্তু তুমি যদি আমার সামনে পড়তে তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম না। এ থেকে জানা যায় যে, কেমন ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা। যার ফলে তিনি তাঁর সন্তানের ভালোবাসাকেও বিসর্জন দিয়েছেন। (তারীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী- ৯৪)

৩৭
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বদরের যুদ্ধবন্দী
মদীনায় পৌঁছার পর রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে অবশিষ্ট যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ করেন। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ওরা তো চাচাতো ভাই এবং আমাদের বংশ গোত্রেরই লোক। আমার মতে আপনি ওদের কাছ থেকে ফিদিয়া (মুক্তিপণ) নিয়ে ছেড়ে দিন। এতে করে যা কিছু নেয়া হবে, সেসব কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজে আসবে। এরপর রাসূল (সাঃ) হযরত ওমর ইবনে খাত্তাবের মতামত জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি হযরত আবু বকরের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করি।

আমি মনে করি, আপনি আমার আত্মীয় অমুককে আমার হাতে তুলে দিন, আমি তার শিরচ্ছেদ করব। একইভাবে আকীল ইবনে আবু তালেবকে হযরত আলীর হাতে তুলে দিন, আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার শিরচ্ছেদ করবেন। একইভাবে হামযার ভাই অমুককে হাতে তুলে দিন, হামযা তাঁর শিরচ্ছেদ করবেন। এতে আল্লাহ তায়ালা বুঝতে পারবেন, মুশরিকদের জন্যে আমাদের মনে কোন সমবেদনা নেই। আর এ সকল যুদ্ধবন্দী হচ্ছে মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এরপর রাসূল ঘরে প্রবেশ করলেন, কিন্তু কিছুই বললেন না।

কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসলেন। তখন সাহাবারা কেউ কেউ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর পক্ষ নিচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর পক্ষ নিচ্ছিলেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা কতক বান্দার অন্তরকে নরম করে দেন। এমনকি তা দুধের চেয়েও নরম থাকে। আবার কতক লোকের অন্তরকে কঠিন করে দেন, এমনকি তা পাথরের চেয়েও কঠিন থাকে। আর হে আবু বকর! তোমার তুলনা হচ্ছে ইবরাহীম এর সাথে। তিনি বলেছিলেন

যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত- ৩৬)

আর তোমার তুলনা হচ্ছে ঈসার সাথে। তিনি বলেছিলেন

তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা মায়েদা : আয়াত-১১৮)

হে ওমর! তোমার তুলনা হচ্ছে নুহের সাথে। তিনি বলেছিলেন নূহ আলাইহিস সালাম আরো বলেছিলেন” হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে ছেড়ে দিবেন না। (সূরা নূহ : আয়াত-২৬)

আর তুলনা হচ্ছে মূসার সাথে। তিনি বলেছিলেন

হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করো, তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, তারা তো মর্মান্তিক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে। (সূরা ইউনুস-৮৮) (সীরাতুন নবুওয়াত- ২/১৫৭)

৩৮
হে আবু বকর। সুসংবাদ গ্রহণ কর
রাসূল মুজাহিদদের কাতার সোজা করার পর নিজের অবস্থান কেন্দ্রে ফিরে এসে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্যের ওয়াদা পূরণের জন্যে আবেদন জানাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ তায়ালা! তুমি আমার সাথে যে ওয়াদা করেছ তা পূরণ করো। হে আল্লাহ তায়ালা, আমি তোমার কাছে তোমার প্রতি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি। উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর দরবারে এ দোয়া করলেন, 'হে আল্লাহ রাব্বল আলামীন! যদি আজ মুসলমানদের এ দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তবে দুনিয়ায় তোমার ইবাদাত করার মতো কেউ থাকবে না।

হে আল্লাহ তায়ালা! তুমি কি এটা চাও, আজকের পরে কখনোই তোমার ইবাদাত করা না হোক? রাসূল (সাঃ) অতিশয় বিনয় নম্রতার সাথে কাতর কণ্ঠে এ মুনাজাত করছিলেন। তাঁর কাতরোক্তির এক পর্যায়ে উভয় স্কন্ধ থেকে চাদর পড়ে যায়। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী করিম (সাঃ) এর চাদর ঠিক করে দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এবার থামুন। আপনি তো আপনার প্রতিপালকের কাছে অতিশয় কাতরতার সাথে মুনাজাত করেছেন। এদিকে আল্লাহ তায়ালার ফেরেশেতাদের প্রতি ওহী পাঠান, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং তোমরা মুমিনদের অবিচলিত রাখো, অচিরেই আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবো যারা কুফরী করে।” (সূরা আনফাল : আয়াত-১২)

এদিকে আল্লাহ তায়ালা নবী করিম (সাঃ) এর কাছে এ মর্মে ওহী পাঠালেন,

“আমি তোমাদের সাহায্য করবে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে।” (সূরা আনফাল : আয়াত-৯) (সীরাতুন নবুওয়াত- ২/১৪০, ১৪১)

৩৯
নবী ও ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতা
রাসূল (সাঃ) তার কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে ইহুদীদের কাছে গমন করেন। তাদের সাথে বনু কেলাবের নিহত দুই ব্যক্তির রক্তপণ আদায়ে সহায়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন, যাদের হযরত আমর ইবনে উমাইয়া যামরী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ভুলক্রমে হত্যা করেছিলেন। ইহুদীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী উল্লিখিত হত্যার রক্তপণ আদায়ে মুসলমানদের সহায়তা করতে, তারা বাধ্য ছিল। রাসূল তাদের এ কথা বলার পর তাঁরা বলল, হে আবুল কাসেম! আমরা তাই করব। আপনি সঙ্গীদের নিয়ে এখানে অপেক্ষা করুন, আমরা ব্যবস্থা করছি।

একথার পর রাসূল (সাঃ) ইহুদীদের এক ঘরের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলেন। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং অন্য কয়েকজন সাহাবী সে সময় রাসূল-এর সঙ্গে ছিলেন। এদিকে আল্লাহ তায়ালা তার রাসূল (সাঃ) এর কাছে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কে প্রেরণ করেন। তিনি দ্রুত সে জায়গা থেকে উঠে মদীনার পথে রওয়ানা হন। পরে সাহাবায়ে কেরামও তাকে অনুসরণ করেন। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূল ! আপনি এতো দ্রুত চলে এলেন, অথচ আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। রাসূল কুচক্রী ইহুদীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাহাবীদের অবহিত করেন। মদীনায় ফিরে আসার পর রাসূল (সাঃ) তৎক্ষণাৎ মোহাম্মদ ইবনে মাসলামাকে বনু নাযির গোত্রের কাছে প্রেরণ করেন এবং তাদের এ নোটিশ দেন, তোমরা অবিলম্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে যাও। এখানে তোমরা আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। কিন্তু মুনাফিকরা ইহুদীদের খবর পাঠাল, তোমরা নিজের জায়গায় অটল থাক, বাড়িঘর ছেড়ে যেয়ো না।

মুনাফিকদের প্রেরিত এ খবরে ইহুদীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। তারা সিদ্ধান্ত নিল, নির্বাসিত হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করবে। তাদের নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব আশা করছিল, মুনাফিক নেতা তার কথা রাখবে। তাই সে রাসূল (সাঃ) এর কাছে খবর পাঠাল, আমরা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যাবো না। তাই রাসূল (সাঃ) হুয়াই ইবনে আখতাবের পয়গাম পাওয়ার কথা সাহাবায়ে কেরামকে বললে তারা সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যান। রাসূল (সাঃ) তাদের খেজুর গাছগুলো কেটে পুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এ প্রসংগে সূরা হাশর নাযিল হয়।

৪০
পতাকাবাহী আবু বকর
রাসূল (সাঃ) কোরাইসী কূপের কাছে উপস্থিত হন এবং বনূ মোস্তালেক গোত্র যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়। রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবীরাও যুদ্ধের জন্যে সারিবদ্ধ হন। এ অভিযানের সমগ্র ইসলামী পতাকাবাহী ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক। বিশেষভাবে আনসারদের পতাকা হযরত সা’দ ইবনে ওবাদা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর হাতে দেয়া হয়। তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে আমির বানালেন। তিনি মানুষের নিকট ঘোষণা করলেন যে, হে লোক সকল! তোমরা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহর ঘোষণা দাও, তাহলে তোমাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে। কিন্তু তারা এ স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তারা তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। এরপর রাসূল (সাঃ) নিজে মুসলমানদের নেতৃত্ব দিলেন এবং বিজয় লাভ করলেন। এই যুদ্ধে শত্রুদের দশ জন নিহত হলো এবং তাদের সবাই বন্দী হলো। মুসলমানদের মধ্যে কেবল একজনই শাহাদাত বরণ করেছিলেন। (বেদায়া ওয়ান্নেহায়া- ৪/১৫৭)

৪১
নিজের কাপড়ের মধ্যে মাটি বহন করেছেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মুসলমান হওয়ার পর থেকে কোন ভালো কাজেই পিছে থাকতেন না। এমনকি খন্দকের যুদ্ধের দিন তিনি তার কাপড়ে করে মাটি বহন করেছেন। সাহাবাদের সাথে খন্দক খনন করার ব্যাপারে তিনি প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ করেছেন। (মাওয়াকিফুস সিদ্দীক মা’আন নবী, পৃঃ ৩২)

৪২
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে পরামর্শ
মদীনা মুনাওয়ারায় রাসূল (সাঃ) কে স্বপ্ন দেখানো হলো যে, তিনি এবং সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন। তাই ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসে প্রায় ১৪০০ সাহাবীকে সাথে নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হন। যুল হোলায়ফা নামক জায়গায় পৌঁছে রাসূল (সাঃ) তাঁর হাদী (কোরবানীর পশু)-কে কেলাদা (কোরবানীর পশুর বিশেষ নিদর্শন) পরান। উটের চুট চিরে চিহ্ন দেন এবং ওমরার জন্যে এহরাম বাঁধেন। তিনি এসব এ কারণেই করেন যাতে সবাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, তিনি কেবল ওমরা পালনের জন্যেই যাচ্ছেন, যুদ্ধের কোন ইচ্ছা তার নেই। কাফেলার আগে খোযায়া গোত্রের একজন গুপ্তচরকে কোরাইশদের মানোব জানতে প্রেরণ করা হয়। ওসমান নামক জায়গায় পৌঁছার পর গুপ্তচর এসে খবর দিল,

মক্কাবসীরা আপনার সাথে লড়াই করতে এবং মক্কায় প্রবেশরোধে প্রস্তুত হয়ে আছে। এ খবর পেয়ে রাসূল সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন, কিন্তু আমরা তো ওমরার উদ্দেশ্যে এসেছি, কারো সাথে লড়াই করতে আসিনি। তবে আমাদের এবং বায়তুল্লাহর মধ্যে যারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে তাদের সাথে লড়াই করব। রাসূল (সাঃ) বললেন, ঠিক আছে, তাহলে চল। অতএব সকলে মক্কাভিমুখে এগিয়ে চললেন। এদিকে কোরাইশরা রাসূল-এর রওয়ানা হওয়ার খবর পেয়ে পরামর্শ সভার বৈঠক অনুষ্ঠান করে এ মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, যে কোন মূল্যে। মুসলমানদের বায়তুল্লাহ থেকে দূরে রাখতে হবে। ওই দিকে রাসূল কিন্তু তার সফর অব্যাহত রাখেন এবং মক্কাবাসীদের সকল প্রতিরোধের জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন। (তারীখুদ দাওয়াহ ইলাল ইসলাম, পৃঃ ১৬)

৪৩
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উরওয়া ইবনে মাসউদের জবাব দিয়েছেন।
কুরাইশদের মধ্য থেকে বোদায়াল ইবনে ওয়ারাকা তার গোত্র ও খোযায়ারা কয়েকজন লোকসহ আল্লাহর রাসূলের সাথে সাক্ষাতের জন্যে আসেন। তিনি তখন হুদায়বিয়াতে অবস্থান করছিলেন। বোদায়াল যখন নবী (সাঃ) ও মুসলমানদের উদ্দেশ্য জানতে পারল তখন বলল, আপনার বক্তব্য আমি কোরাইশদের কাছে পৌঁছে দেবো। পরে তিনি কোরাইশদের কাছে ফিরে এলেন। এরপর কোরাইশরা মোকরে ইবনে হাফসকে প্রেরণ করে। এরপর বনু কেনান গোত্রের হালিস ইবনে আলকামা নামক এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে। এরপর উরওয়া ইবনে মাসউদকে প্রেরণ করে। তাদের সাথে আলোচনায় যোগ দেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং আরো কয়েকজন সাহাবী।

উরওয়া বলল, হে মোহাম্মদ! বলুন তো, আপনি যদি নিজের কওমকে নির্মূল করে দেন তবে আপনি কি আপনার আগে কোন আরব সম্পর্কে এমন কথা শুনেছেন, যিনি নিজের কওমকে নিমূল নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন? যদি ভিন্ন রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তবে খোদার কসম, আমি এমন সব চেহারা এবং এমন সব উদভ্রান্ত লোকদের দেখছি, যারা আপনাকে ছেড়ে পালিয়ে যাবে। একথা শোনার পর হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, লাতএর লজ্জাস্থানের ঝুলন্ত চামড়া চুষো গিয়ে। আমরা আল্লাহর রাসূলকে ছেড়ে পালিয়ে যাবো? উরওয়া বললো, এ লোকটি কে? সাহাবীরা বললেন, এ ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আবু বকর। উরওয়া তখন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সম্বোধন করে বললো, দেখো, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি এক সময় আমার উপকার করেছিলে, যার কোন বদলা দেইনি। যদি তা না হতো, তবে অবশ্যই আমি তোমার এ কথার জবাব দিতাম। (আবু বকর সিদ্দীক সাখসিয়্যাতুহু, পৃঃ ৮৮)

৪৪
নবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ
হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হওয়ার পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মনে প্রাণে একথা বিশ্বাস করে নিলেন যে, নবী (সাঃ) যা করেছেন তা মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর হবে। কারণ, তিনি নিজের থেকে কিছু বলেন না। অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব -ই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি হক এবং ওরা কি বাতিলের উপর নয়? রাসূল (সাঃ) বললেন, কেন নয়? তিনি বললেন, আমাদের নিহতরা জান্নাত আর ওদের নিহতরা কি জাহান্নামের অধিবাসী নয়? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, কেন নয়? তিনি বললেন, তবে আমরা কেন দ্বীনের ব্যাপারে অবদমিত হলাম? অথচ আল্লাহ তায়ালা এখনো আমাদের এবং ওদের মধ্যে ফায়সালা করেননি।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, খাত্তাবের পুত্র ওমর, আমি আল্লাহর রাসূল। কাজেই আমি আল্লাহর নাফরমানী করতে পারি না। আল্লাহ তায়ালা কি আমাকে বলেননি যে, বায়তুল্লাহ শরীফে নিবেন এবং তাওয়াফ করাবেন? রাসূল (সাঃ) বললেন, কেন নয়? কিন্তু আমি কি বলেছিলাম, আমরা এবারই সফল হব? তিনি বললেন, জ্বি না। রাসূল (সাঃ) বললেন, তবে শোনো, তোমরা অবশ্যই বায়তুল্লাহর কাছে যাবে এবং তার তাওয়াফও করবে।

এরপর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রুষ্ট ক্রুব্ধ মনে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছে গিয়ে রাসূল কে যেসব কথা বলছিলেন, তা বলেন। রাসূল (সাঃ) ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে যেরূপ জবাব দিয়েছিলেন, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সেরূপ জবাবই দেন। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আরো বললেন, আল্লাহর রাসূলের আঁচল ধরে থাক আল্লাহর কসম, তিনি সত্যের উপর রয়েছেন। (সীরাতুন নাবুবীয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ৩/৩৪৬)

৪৫
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও হুদায়বিয়া সন্ধি
হুদায়বিয়া সন্ধি সম্পর্কে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কথা বলছিলেন। এটা ছিল ইসলামের বড় বিজয়সমূহের মধ্যে একটি বিজয়। মূলত হুদায়বিয়ার চেয়ে অন্য কোন বড় বিজয় ইসলামে আর ছিল না। কিন্তু মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সেদিন মুহাম্মদ ও তাঁর রবের বিষয়ে তারা বুঝতে পারেনি। বান্দারা তাড়াহুড়া করে কিন্তু আল্লাহ বান্দার মত তাড়াহুড়া করেন না। তিনি পর্যায়ক্রমে তার উদ্দেশ্যেকে বাস্তবায়ন করেই ছাড়বেন। বিদায় হজ্জের দিন আমি সুহাইল ইবনে আমরকে মানহারের নিকট দেখতে পেলাম।

সে রাসূল (সাঃ) এর কোরবানীর জন্তুটি এগিয়ে দিচ্ছিল। আর রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে তা কোরবানী করছেন। এরপর মাথা মুণ্ডণকারী ব্যক্তিকে ডাকা হলো। অতঃপর রাসূল (সাঃ) তার মাথা মুণ্ডণ করলেন। এদিকে আমি সুহাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখলাম যে, সে রাসূল (সাঃ) এর চুল গুলো কুঁড়িয়ে নিচ্ছে এবং তার চোখে লাগাচ্ছে। অথচ এই সুহাইল হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখতে বাধা দিয়েছিল। সুতরাং আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম যে, তিনি তাকে ইসলামের দিকে হেদায়াত দিয়েছেন। (কানযুল উম্মাল, ৩০১৩৬)

৪৬
তিনি ছিলেন খিলালের অধিকারী
রাফে ইবনে আমর আত তাঈ বলেন, যাতুস সালাসীল এর অভিযানে রাসূল (সাঃ) আমর ইবনে আস -কে মনোনীত করেন এবং সেই বাহিনীতে আবু বকর, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আরো কয়েকজন সাহাবীকে প্রেরণ করেন। অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তারা এক পর্যায়ে তাঈ নামক এক পাহাড়ের নিকট অবতরণ করলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এমন একজন লোককে খোঁজ যে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে দেবে। তারা বলল, রাফে ইবনে আমরই এ কাজ করতে পারবে।

রাফে বলেন যখন আমরা অভিযান শেষে ফিরে আসলাম, তখন আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকটে গেলাম। তার একটা আভা ছিল। যখন তিনি সফর করতেন তখন তা গুটিয়ে নিতেন। আর যখন কোথাও অবতরণ করতেন তখন তা বিছাতেন। আমি বলালম, হে আভার অধিকারী! তোমার সাথীদের মধ্যে আমি তোমাকেই নির্বাচন করেছি। আমাকে তুমি এমন কিছু জিনিস শিক্ষা দাও যা করলে আমি তোমাদের মতো হতে পারব। তবে তা যেন এত লম্বা না হয় যে, আমি তা ভুলে যাই। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তাহলে সে বিষয়গুলো তোমার পাঁচটি আঙ্গুলে মুখস্ত রাখতে পারবে। আমি বললাম, তাহলে বলুন।

তিনি বললেন১. তুমি এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ ও তাঁর রাসূল। ২. তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায কায়েম করবে। ৩. তোমার মালের যাকাত দেবে। ৪. বাইতুল্লায় হজ্জ করবে। ৫. রমযানে রোযা রাখবে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি মনে রাখতে পেরেছ? আমি বললাম, হাঁ। এরপর বললেন, আল্লাহ যখন তাঁর নবীকে নবুওয়াত দিয়ে প্রেরণ করলেন তখন কেউ কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করল। ফলে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করলেন। আর কেউ কেউ ইসলামের প্রবেশ করাকে অপছন্দ করল। আর তারা সবাই আল্লাহর দুশমন। (মাযমাউয যাওয়াঈদ- ৫/২০২)

৪৭
আয়েশা এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মধ্যে কথোপকোথন
কুরাইশদের বিশ্বাসঘাতকতার খবর আসার তিনদিন আগেই রাসূল (সাঃ) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে তার সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে বলেছিলেন। তবে। বিষয়টা গোপন রাখার পরামর্শ দেন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর কাছে আসেন। তিনি বললেন, মা, এ প্রস্তুতি কিসের? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, আমি জানি না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এটা তো রোমকদের। সাথে যুদ্ধের সময় নয়। তাহলে রাসূল (সাঃ) কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, আমি জানি না। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি নাজদদের দিকে যেতে চাচ্ছেন? তাতেই আমি চুপ থাকলাম।

তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি কুরাইশদের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন? তাতেও আমি চুপ থাকলাম। এরপর রাসূল প্রবেশ করলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি কোন দিকে বের হতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, বনী আসফারের দিকে। রাসূল (সাঃ) বললেন, না। তারপর বললেন, তাহলে কি নাজদের দিকে রাসূল (সাঃ) বললেন, না। তাহলে কি। কুরাইশদের উদ্দেশ্যে? এবার রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুরাইশ ও আপনার মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তারা বনী কাহবের সাথে যে আচরণ করেছে। তা কি তোমার নিকট পৌঁছায় নি? (মাগাযিল ওয়াকিত- ২৭৯৬)

৪৮
নবী (সাঃ) এর সাথেই তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন।
মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূল (সাঃ) মক্কায় প্রবেশ করলেন, আর তার পাশে ছিলেন আবু বকর। তিনি নারীদেরকে দেখলেন যে, তারা ঘোড়ার চেহারায় চপেটাঘাত করছে। তখন তিনি আবু বকরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আবু বকর! হাসসান কি বলেছেন? এরপর তিনি নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলেন।

“আমরা আমাদের গোড়াগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। তাইতো তোমরা সেগুলো যুদ্ধের ময়দানে রোগ জীবাণু ছড়ানোর ন্যায় ধুলাবালি করতে দেখতে পাচ্ছ না। বস্তুত সে ঘোড়াগুলো ছিল অনুগত এবং অত্যন্ত সাহসী। ফলে সেগুলো বর্শার আঘাতের মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাঁধে ধারালো তরবারি নিয়ে অগ্রসর হতো। কিন্তু আফসোস! সে দ্রুতগামী উৎকৃষ্ট মানের ঘোড়াগুলো এমন হয়ে গেল যে, এখন নারীরা পর্যন্ত এদের চেহারায় উড়না দিয়ে আঘাত করে।” নবী (সাঃ) বললেন, সে অবস্থানে ঘোড়াগুলোকে তোমরা প্রবেশ করাও হাসান যে রকমটি বলেছে। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৩/৭২)

৪৯
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর সন্তানের হত্যাকারীর সাথে
তায়েফের দিন আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তীরের আঘাতে জখম হন। এই জখমের প্রভাবেই তিনি রাসূল (সাঃ) এর ইন্তেকালের চল্লিশ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ওপর নিক্ষিপ্ত তীরটি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট ছিল। এটা নিয়ে তিনি সাকিফ গোত্রের নিকট গেলেন। তারপর তিনি এটাকে দেখালেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ কি এটা চিনে? তখন সাঈদ ইবনে উবায়েদ বললেন, আমি এই তীর নিক্ষেপ করেছিলাম।

তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এই তীরের আঘাতে আমার ছেলে আবদুল্লাহ মারা গেছে। সুতরাং সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি তোমার হাতে তাকে শাহাদাৎ এর মর্যাদা দান করেছেন। আর তুমি তার হাতে কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করনি। আল্লাহর দয়া দু’জনের প্রতিই রয়েছে। (খুতবু আবু বকর সিদ্দীক, পৃ: ১১৮)

৫০
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও যুল বাদাইনের দাফন
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে অবস্থান করছিলাম। আমি রাতের গভীরে জাগ্রত হলাম। তখন সেনাবাহিনীর নিকট দিয়ে আগুনের মতো কিছু একটা দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি তা দেখতে লাগলাম। তখন দেখতে পেলাম যে, সেখানে আল্লাহর রাসূল, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে। আর এ সময় আবদুল্লাহ যুল বাযাদাইন মৃত্যুবরণ করেন। সাহাবীরা তার জন্য কবর খনন করলেন। রাসূল (সাঃ) তার কবরে নামলেন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে রাসূল (সাঃ) এর নিকটবর্তী করে দিলেন।

রাসূল (সাঃ) তখন বলছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাইকে আমার কাছে তুলে দাও। যখন তাকে কবরে শুয়ালেন, তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলাম, সুতরাং তুমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হায় আফসোস! এ কবরের বাসিন্দা যদি আমি হতাম। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরে প্রবেশ করাতেন, তখন বলতেন, বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিন্নাতি রাসূলিল্লাহ ওয়াবিল ইয়াকীনি ওয়াবিল বা’আছি বা'আদাল মাউতি”। (মাওসুআতু ফিকহীস সিদ্দীক- ২২২)।

৫১
তুমি কি এটা পছন্দ কর?
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমরা কঠিন গরমের সময় তাবুকের যুদ্ধে রওনা হলাম। এক পর্যায়ে আমরা একটি স্থানে অবতরণ করলাম। তখন আমাদের পিপাসা এত বেশি লেগেছিল যে, মনে হচ্ছিল আমাদের শক্তি শেষ হয়ে যাবে।

তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা তো আপনার দোয়া কবুল করেন। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? তিনি বললেন, হ্যা। তারপর রাসূল (সাঃ) তার দু'হাত তুললেন। হাত নামানোর আগেই আকাশে মেঘ দেখা গেল। তারপর বৃষ্টি হলো। সাহাবীরা তাদের সাথে যেসব পাত্র ছিল পানি দ্বারা সেসব পাত্র ভরে নিলেন।ইবনে হিব্বান-১৭০৭)

৫২
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি
তাবুকের যুদ্ধের দিন নবী (সাঃ) সাহাবাদেরকে দান করার জন্য উৎসাহ দিলেন। সাহাবীরা দানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লাগলেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এ সম্পর্কে বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এদিন দান করার জন্য আদেশ করলেন। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমি আবু বকরের চেয়ে আগে থাকব। তাই আমি আমার মালের অর্ধেক নিয়ে গেলাম।

রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এ মাল পরিমাণ সম্পদ রেখে এসেছি। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার সমুদয় মাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) কে রেখে এসেছি। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি কোন ব্যাপারেই আবু বকরকে ছাড়িয়ে যেতে পারিনি। এ রকমই ছিল আমাদের নবীর সাথীদের অবস্থা। তাঁরা কল্যাণের কাছে প্রতিযোগিতা করতেন। সুতরাং আমাদের কী অবস্থা? (সুনানে আবু দাউদ, ১৬৭৮)

৫৩
কোন প্রতিহতকারী আছে কি?
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু প্রথম সারীর মুসলমানদের মধ্যে একজন ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে, তার ছেলে ইসলাম গ্রহণ করতে অনেক দেরী করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হুদায়বিয়ার সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হলেন, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি একজন শক্তিশালী যুবক ও বীর পুরুষ ছিলেন।

একদিন তিনি মুশরিকদের সাথে বের হলেন এবং চিৎকার করে বলেন, আমার সাথে মুকাবেলা করার কেউ আছে কি? তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার কথা শুনলেন এবং তার কথার জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। আল্লাহ তায়ালা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর মনের অবস্থা জেনে নিলেন যেভাবে তিনি নবীদের মধ্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর মনের অবস্থা জেনে ছিলেন। তিনি তার সন্তানকে জবাই করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষে এর বদলা অন্য কিছু আল্লাহ তাকে দান করলেন। (হাকিম- ৩/৪৭৩)

৫৪
আবু বকর এরূপই ছিলেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল (সাঃ) এর সাথী ছিলেন। সফরে এবং বাড়িতে তিনি কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না। এমনকি জিহাদ, হজ্জ ও উমরার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে থাকতেন। গারে ছুরেও তিনি রাসূল (সাঃ) এর সাথী ছিলেন। তিনি সবখানেই রাসূল (সাঃ) এর সাহায্যকারী হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (সূরা তাওবা : আয়াত-৪১)

৫৫
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নেতৃত্বে হজ্জ পালন
নবম হিজরীর যিলকদ বা যিলহজ্জ মাসে নবী করিম (সাঃ) সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে আমিরুল হজ্জ (হাজীদের নেতা) বানিয়ে মক্কায় প্রেরণ করেন। এরপর সূরা তাওবার প্রথমাংশ নাযিল হয়। এতে মুশরিকদের সাথে কৃত চুক্তি অঙ্গীকার সমতার ভিত্তিতে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশ আসার পর নবী কারীম (সাঃ) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে এ ঘোষণা প্রকাশের জন্যে প্রেরণ করেন।

রক্ত এবং ধন-সম্পদ সম্পর্কিত অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে এটাই আরবদের রীতি ছিল (চুক্তির কোন পক্ষ তা রহিত করতে চাইলে হয় সে নিজে এ রহিত করার ঘোষণা দেবে অথবা নিজের গোত্রের কাউকে দিয়ে ঘোষণা করাবে। বংশের বাইরের কোন লোককে দিয়ে ঘোষণা করানো হলে তা মানা হতো না।) হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দাজনান মতান্তরে আরজ প্রান্তরে সাক্ষাৎ হয়। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমীর নাকি আমীরের অধীন? আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমীরের অধীন। এরপর উভয়ে সামনে অগ্রসর হন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু লোকদের হজ্জ করান। ১০ই যিলহজ্জ কুরবানীর দিন আলী একা জামরায় দাঁড়িয়ে নবী কারীম (সাঃ)এর নির্দেশ অনুযায়ী সকল প্রকার চুক্তি অঙ্গীকার সমাপ্তির কথা ঘোষণা করেন। চার মাসের সময় দেয়া হয়। যাদের সাথে কোন অঙ্গীকার ছিল না তাদেরও চার মাস সময় দেয়া হয়। তবে মুসলমানদের সাথে যেসব মুশরিক অঙ্গীকার পালনে জটি করেনি এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অন্যদের সাহায্য করেনি, তাদের চুক্তিপত্র নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এক দল সাহাবীকে পাঠিয়ে এ সাধারণ ঘোষণা প্রচার করেন, ভবিষ্যতে কোন মুশরিক হজ্জ করতে এবং কেউ নগ্নবস্থায় কাবা ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। (সীরাতুন নবুওয়াত- পৃ: ৫৩৬)

৫৬
এই মুহরিমের দিকে লক্ষ্য কর
ইমাম আহমদ তার সনদে বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে হজ্জ করার জন্য বের হলাম। অতঃপর আরা নামক উপত্যকায় যখন পৌছলাম তখন রাসূল (সাঃ) সেখানে অবতরণ করলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বসলেন এবং তার দিকে লক্ষ্য করার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

তখন তার সাথে কোন সাওয়ারী ছিল না। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সওয়ারী কোথায়? তিনি বললেন, গতকাল আমি তা হারিয়ে ফেলেছি। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তাঁর একটি সওয়ারী আপনি তা হারিয়ে ফেললেন? রাসূল (সাঃ) তখন মুচকি হাসছিলেন এবং বললেন, এই মুহরিমের দিকে তাকাও এবং সে কি করছে লক্ষ্য কর। (মুসনাদে আহমদ-২/৩৪৪)

৫৭
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মর্যাদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আত্মমর্যাদাবোধ
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একদা ইহুদীদের শিক্ষালয়ে গেলেন। সেখানে ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছিল। ঐ বিদ্যালয়ে ফানহাস' নামক একজন বড় পণ্ডিত ছিল। আর তার সাথে ‘আশইয়া' নামক একজন বড় আলেম ছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু স্থির ফানহাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার অমঙ্গল হোক। আল্লাহকে ভয় কর এবং ইসলাম গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি জান যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ নবী আল্লাহর রাসূল। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছেন।

তোমরা তাওরাত এবং ইঞ্জিলে তাঁর আলোচনা পেয়েছ। ফানহাস বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাদের মুখাপেক্ষী, আমরা তার মুখাপেক্ষী নই। আমরা তাঁর এরূপ কাকুতি-মিনতি করি না যেমন তিনি আমাদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন। আমরা তাঁর নিকট মোটেই মুখাপেক্ষী নই। কারণ আমরা ধনবান। তিনি যদি ধনী হতেন তাহলে আমাদের নিকট ঋণ চাইতেন না। যেমন আপনার নবী (সাঃ) সুদ হতে বিরত রাখতে চাচ্ছেন অথচ আল্লাহ নিজেই সুদ দিচ্ছেন। তিনি যদি ধনীই হবেন তাহলে আমাদের সুদ দিতে চাইবেন কেন? এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রেগে গেলেন তার গালে সজোরে চড় মারলেন এবং বললেন : হে আল্লাহর দুশমন! যদি তোমাদের মাঝে চুক্তি সম্পাদিত না হতো তাহলে তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম।

এরপর ফানহাস নবী কারীম (সাঃ) এ নিকট গিয়ে বিচার দিয়ে বলল, দেখ তোমার সাথী আমার সাথে কী ব্যবহার করেছে। নবী (সাঃ) বললেন, হে আবু বকর! এমন কী হলো যে, তুমি এরূপ করলে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহর দুশমন ভয়ানক কথা বলেছে। সে মনে করে আল্লাহ গরীব আর তারা ধনী। এজন্য তার চেহারায় আঘাত করেছি। ফাহনাম অস্বীকার করে বলল, না, আমি এরূপ বলিনি। তখন আল্লাহ ফাহনামকে মিথুক প্রমাণ করত এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সত্য প্রমাণ করত এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।

নিশ্চয় আল্লাহর তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে : আল্লাহ দারিদ্র আর আমরা ধনী। শীঘ্রই আমি লিখে রাখবো তারা যা বলেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়টিও এবং আমি বলব, তোমরা উত্তপ্ত আযাব ভোগ কর। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-১৮১) (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/২৯৫)

৫৮
আমি রাসূল (সাঃ) এর গোপনীয়তা প্রকাশ করিনি
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, যখন হাফসা খুনাইস ইবনে হুযায়ফাহ এর হাতে বিধবা হলেন। আর সে বদরে উপস্থিত হয়েছিল। তখন উসমানের সাথে সাক্ষাত হলে হাফসাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম। উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, অপেক্ষা করুন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে দেখা হলে তাকেও হাফসাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। আমার প্রস্তাবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু চুপ থাকলেন কোন উত্তরই দিলেন না।

আমার নিকট উসমানের উত্তরের চেয়ে এটাই বেশি কষ্টকর মনে হলো। তার কয়েক দিন অতিবাহিত হলে বা অপেক্ষার পর রাসূল স্বয়ং তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। তার সাথে হাফসার বিবাহ দিলাম। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমার সাথে দেখা করে বললেন, সম্ভবত বিবাহের প্রস্তাবে উত্তর না দেয়ায় তুমি কষ্ট পেয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ! আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আসলে এ ব্যাপারটা নিয়ে রাসূল নিজে ভাবছিলেন এটা আমি জানতাম তাই আমি কোন উত্তর দেইনি। আর আমি তো রাসূল (সাঃ) এর গোপন বিষয় প্রকাশকারী নই। তিনি যদি বিবাহ না করতেন তাহলে অবশ্যই বিবাহ করতাম।

৫৯
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও জুমার নামায
একদা মদীনাতে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসায়ীগণ আসতে বিলম্ব হয়েছিল। এতে এমন অবস্থা হলো যে, মানুষের খাদ্যসহ নিত্য পণ্যের সংকট দেখা দিল, তাই মানুষ বণিকদের আগমনের প্রহর গুনতে লাগল। একদিন রাসূল (সাঃ) জুমার খুৎবা দিচ্ছিলেন এমন সময় বণিকদল আগমন করলে সাহাবীগণ রাসূল (সাঃ) এর খুৎবা বাদ দিয়ে কেনা-কাটার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। মাত্র ১২ জন ছাড়া সবাই চলে গেল। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন

“আর তাঁরা যখন ব্যবসা অথবা ক্রীড়া কৌতুক দেখে তখন তারা তার দিকে ছুটে যায়, আর তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে যায়। বল, আল্লাহর কাছে যা আছে তা ক্রীড়া কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উত্তম। আর আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা জুম'আ : আয়াত- ১১) তবে যে কয়জন সাহাবী নবী (সাঃ) এর সাথে অবস্থান করছিলেন, তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন।

৬০
নবী (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর প্রতি আস্থাশীল
ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেন, যে অহংকারবশত তার কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। অর্থাৎ (তাকে পাপমুক্ত করবেন না ) একথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, কখনো কখনো অজ্ঞতা আমার কাপড়ের কোণ নিচে চলে যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন, তুমি তো অহংকার বসত এরূপ করছ না। (বুখারী, ৩৬৬৫)

৬১
হে আবু বকর। তাদের উভয়কে সুযোগ দাও
একদা ঈদের দিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর ঘরে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় তার দুই জন আনসারী মেয়ে গান গাইছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তা দেখে বললেন, রাসূল (সাঃ) এর ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র? তখন রাসূল তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে দেয়ালের দিকে ছিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কথা শুনে নবী কারীম (সাঃ) বললেন, হে আবু বকর! তাদের উভয়কে সুযোগ দাও, কেননা প্রত্যেক গোত্রের ঈদের দিন থাকে, আর আজকের দিন হলো মুসলমানদের ঈদের দিন। (মুসলিম, ৮৯২)

৬২
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর আত্মমর্যাদাবোধ
বানী হাশেমের একটি দল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বাড়িতে প্রবেশ করল। (তখন আবু বকর বাড়িতে ছিলেন না) তখন বাড়িতে তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইয়া ছিলেন। তিনি এটা অপছন্দ করলেন এবং ব্যাপারটি রাসূল (সাঃ) কে জানালেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যেসব ধারণা করছ তা হতে আল্লাহ তাকে মুক্ত রেখেছেন। পরে রাসূলৰ মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, আজকের এ দিন হতে কোন ব্যক্তি অপর কারো ঘরে তার অনুপস্থিতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে তার সাথে একজন বা দুইজন লোক থাকলে প্রবেশ করতে পারবে। (আর রিয়াদুন নাযরাহ লিত তাবারী, পৃঃ ২৩৭)

৬৩
মেহমানের সম্মান বা সমাদর
আবদুর রহমান বিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আহলে সুফফাগণ দারিদ্র্য প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। একদিন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে যার কাছে দুজনের খাবার আছে সে যেন একজন মেহমান সাথে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চার জনের খাবার আছে সে যেন, পঞ্চম জনকে মেহমান হিসেবে নিয়ে যায়। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একজন মেহমান নিয়ে বাড়িতে আগমন করেন। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আল্লাহ যতক্ষণ চান ততক্ষণ রাসূল (সাঃ) এর নিকট অবস্থান করেন অর্থাৎ অনেক বিলম্ব করে বাড়ি আসেন। তখন তার স্ত্রী বলেন, ব্যাপার কী মেহমান রেখে এত বিলম্বে বাড়িতে আসলেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তোমরা তাদের খাবার খাওয়াও নি? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর স্ত্রী বলেন, আমরা দিয়েছিলাম, তিনি আপনি আসার আগে খাবেন না বলেছেন। আবদুর রহমান বলেন, আমি বাবার বকা থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে গেলাম। তিনি অনেক রাগারাগি করলেন এবং বললেন, এই নির্বোধ কোথাকার! যা বকা দেয়ার দিলেন। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আপনি তৃপ্তি সহকারে আহার করুন। তখন মেহমান বলল, আল্লাহর শপথ আপনি না খেলে আমি খাব না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নিজেও শপথ করলেন যে, তিনি রাতে আহার করবেন না।

পরক্ষণেই তিনি খাবার চাইলেন এবং বললেন পূর্বে যা ঘটল (শপথ) এগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে, তারপর তিনি নিজেও খেলেন এবং মেহমানও খেল। আবদুর রহমান বলেন, আল্লাহর শপথ খাবারে এত বরকত হচ্ছিল যে, আমরা যখনই কোন লুকমা প্লেট হতে উঠালাম তাঁর চেয়ে বেশি তার নিচে জমা হচ্ছিল। সবাই খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হলো মনে হলো খাবার যা ছিল তার চেয়েবেশি রয়ে গেছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার স্ত্রীকে বললেন, হে বানী ফারাসের বোন খাবারের কী হলো? তিনি বললেন, কিছুই না, চক্ষু শীতল হওয়ার মতো বিষয় খাবার যেন আগের চেয়ে আরো তিনগুণ বেশি হয়েছে। সকলেই খাওয়ার পর রাসূল (সাঃ) এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ১২ জন লোক ছিল এবং তাদের সাথে আরো অনেক লোকজনও ছিল। সবাই সেখান থেকে আহার করল। (মুসলিম, ২০৫৭)

৬৪
শপথ ভঙ্গের মধ্যে যা পাপ রয়েছে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, শপথের কাফফারা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কখনো শপথ ভঙ্গ করতেন না। অতএব বুঝা যায় এর অনেক পাপ রয়েছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, কোন বিষয়ে শপথ করার পর যদি দেখি যে, শপথ ভঙ্গ করলেই কল্যাণ বেশি বা শপথ করা পাপের কাজ তাহলে কাফফারা দিয়ে শপথ ভঙ্গ করে ফেলি এবং যাতে বেশি কল্যাণ সেটাই করি। (মাওসুওয়াতু ফিকহী আবি বকর, পৃঃ ২৪)

৬৫
কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কল্যাণের কাজের প্রতিযোগিতায় সর্বদা অগ্রবর্তী থাকতেন। এমনিভাবে তিনি অনুসরণীয় চরিত্রের মডেলে পরিণত হন। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর একটি হাদীস রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রোযা অবস্থায় সকালে উপণিত হয়েছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি।

নবী কারীম (সাঃ) আবার বললেন, তোমাদের মাঝে কে মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়েছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আমি। রাসূল (সাঃ) আবার বললেন, তোমাদের মাঝে কে আজ রোগীর সেবা করেছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি। তারপর রাসূল (সাঃ) বললেন, উল্লেখিত বিষয়গুলোর গুণ যার মাঝে পাওয়া যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, ১০২৮) ৬৪

৬৬
ব্যবসায় গমন।
রাসূল ব্যবসাকে ভালোবাসতেন আর এটা নবী (সাঃ) ও ভালোবাসতেন। বলেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও এটাকে ভালোবাসতেন। তাই নবী কারীম (সাঃ) এর যুগে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু শাম (সিরিয়া) দেশের বসরাতে ব্যবসার জন্য গমন করেন। যদিও আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর অনেক সম্পদ ছিল তবুও তিনি ব্যবসা করতেন। এ থেকে শিক্ষণীয় হলো যে, প্রত্যেক মুসলিমের হালাল রুজীর ব্যবস্থা থাকা কর্তব্য। যাতে সে ভিক্ষা করা বা হারামে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে এবং আল্লাহ তায়ালা যে সব কাজে অর্থ ব্যয় করলে খুশি হন সেসব কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।

৬৭
সন্তান হত্যাকারীদের সাদরে গ্রহণ
হুনাইন যুদ্ধের পর রাসূল (সাঃ) ও তার সাহাবীগণ তায়েফ অবরোধ করেন। এতে মুসলমানদের কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে কিছু সাহাবী শাহাদাতবরণ করেন। সেই যুদ্ধে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ছেলে আব্দুর রহমানও অংশগ্রহণ করেছিলেন। আব্দুর রহমান তাদের আঘাতে আহত হন। ঐ আঘাতের কারণে মদীনাতে আসলে রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পর তিনি মারা যান। এরপর বনী তায়েফের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আগমনের খবরে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আব্দুর রহমানের প্রতিশোধ নেয়া হবে। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সবার আগে গিয়ে তাদের আগমনে সম্ভাষন জানান। (সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ৪/১৯৩)

৬৮
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাদের নেতা নির্বাচন করলেন
তায়েফের প্রতিনিধিগণ যখন ইসলাম গ্রহণে সম্মত হলো এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো তখন রাসূল তাদের একজনকে আমীর নির্বাচন করতে চাইলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উসমান বিন আবুল আস এ কে নেতা নির্বাচন করার জন্য ইঙ্গিত দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! তাদের মাঝে এই যুবকের ইসলাম বুঝার ও কুরআন শিক্ষা করার আগ্রহ বেশি।

কারণ আমি দেখেছি যে, তার সাথের লোকেরা যখন ঘুমাতো তখন সে রাসূল (সাঃ) এর নিকট ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত এবং কুরআন শিক্ষা লাভ করত। আর রাসূল কে ঘুমন্ত অবস্থা পেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট যেত। আর উসমান বিন আবুল আস বিষয়টি তার সাথী ও আল্লাহর রাসূল থেকেও গোপন করেছিল। তাই তার সাথীগণ আশ্চর্য হলো। (তারীখুল ইসলাম লিয যাহাবী, ৬৭)।

৬৯
হে আবু বকরের পরিবার। এটাই তোমাদের প্রথম বরকত নয়
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ এর সঙ্গে কোন এক (জিহাদের) সফরে গিয়েছিলাম। আমরা বাইদা অথবা যাতুল জাইশ নামক জায়গায় পৌছলে আমার গলার হারটি ছিড়ে পড়ে গেল। হারটি তালাশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ এই সেখানে অবস্থান করলেন। সাথের লোকদেরও তার সঙ্গে অবস্থান করতে হলো। অথচ জায়গাটি এমন ছিল যে, সেখানে পানি ছিল না এবং লোকদের কারো সাথে পানি ছিল না। তাই লোকেরা আমার পিতা আবু বকরের কাছে এসে বলল, আপনি দেখছেন না, 'আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কি কাজটা করল? রাসূলুল্লাহ ও সমস্ত লোকজনকে এমন এক মরুময় জায়গায় অবস্থান করতে বাধ্য করল, যেখানে পানির কোন সন্ধান নেই এবং লোকদের সাথেও পানি নেই।

এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমার কাছে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন আমার রানের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ : ও সমস্ত লোকজনকে এমন একটি জায়গায় থামতে বাধ্য করলে যেখানে কোন পানি নেই, আর তাদের কারো সাথেও পানি নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে তিরস্কার করতে লাগলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক বকা দিলেন। এমন কি রাগের মাথায় আমার কোমরে হাত দিয়ে খোঁচা দিতে থাকলেন। আমার রানের উপর রাসূলুল্লাহ এতে শায়িত ছিলেন বলে আমি নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। রাসূলুল্লাহ এই তখনো নিদ্রিত। এমতাবস্থায় সকাল হয়ে গেল। (ফজরের নামাযের সময়) অথচ পানির কোন সন্ধান নেই। তখন মহান আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন।

“তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর।” (সূরা নিসা: আয়াত- ৪৩) তারপরই সবাই তায়াম্মুম করল তখন উসাইদ ইবনে হুজাইর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আবু বকরের পরিবার! এটা আপনাদের প্রথম বারাকাত নয়। (এর আগেও আপনাদের দ্বারা আমরা আরো বারাকাত লাভ করেছি।) ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, অতঃপর আমি যে উটের উপর আরোহণ করতাম তাকে আমরা উঠালাম আর তার নিচেই হারটি পেয়ে গেলাম। (বুখারী, ৩৬৭২)

৭০
নাতীকে নিয়ে মদীনায় ঘুরে বেড়াতেন
আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মক্কা থাকতেই আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর কে গর্ভে ধারণ করেন। তিনি বলেন, যখন আমার গর্ভের সময় পূর্ণ হলো তখন আমি মদীনায় হিজরত করলাম। আর কুবাতে পৌঁছে আমি সন্তান প্রসব করলাম। সন্তান নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর নিকট তার ঘরে রাখলাম। নবী খেজুর আনতে বললেন। তারপর তিনি তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। শিশুর মুখে প্রথম যে বস্তু প্রবেশ করেছিল তা ছিল রাসূল (সাঃ) এর লালা। তার জন্ম হওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। কারণ বলা হতো যে, ইহুদীরা মুসলমানদের যাদু করেছে তাদের ঘরে কোন সন্তান বা কারো ছেলে সন্তান জন্ম নিবে না। তাই আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর জন্ম নেয়ার পর মুসলমানগণ তাকবীর দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল।

আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে নিয়ে মদীনার অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ালেন যাতে সবাই জানতে পারে প্রচলিত কথা ঠিক নয়। (খিলাফাতু আমীরুল মুমিনীন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের লিস সালাবী, পৃঃ ১০২৯)

৭১
বক্তব্য প্রদানে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তি
আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। আর তিনি কুরাইশদের উল্লেখযোগ্য বক্তা ছিলেন। বক্তব্যের সময় তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মত নাড়া চাড়া, আওয়াজ ও ইশারা-ইঙ্গিত করতেন। তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মতো উচ্চ আওয়াজের লোক ছিলেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর যুগে আফ্রিকার অঞ্চল বারবার বিজয় করে সেখানে বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পদ গনীমত হিসেবে লাভ করেন। যুদ্ধের সেনাপতি আবদুল্লাহ ইবনে আবু সারহকে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে বিজয়ের খবর আগেই পৌঁছানো জন্য প্রেরণ করেন।

তাঁরা মদীনায় এসে উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট যুদ্ধে যা যা ঘটেছিল তা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, ইবনে যুবাইর আপনি যদি মিম্বারে উঠে। ঘটনাগুলো বলতেন তবে আরো ভালো হতো। আর ইবনে যুবাইর এ মিম্বারে উঠে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করলেন। আবদুল্লাহ বললেন, ইবনে যুবাইর আমার ইশারা পেয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করছিল মনে হচ্ছিল যেন আমি সেখানেই অবস্থান করছি। আর ইবনে যুবাইর যখন মিম্বার থেকে নামলেন তখন আবদুল্লাহ বলেন, হে বৎস! আল্লাহর শপথ, তোমার খুৎবা শুনে মনে হচ্ছিল আমি আবু বকরের খুৎবা শুনছি। (খিলাফাতু আমীরুল মুমিনীন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের লিস সালাবী, পৃঃ ১৯)

৭২
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার জিহ্বাকে শাস্তি দেন
একদা ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তার জিহ্বা মুখ থেকে বের করে টেনে ধরে আছেন। এটা দেখে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, থামুন! থামুন! আপনি যা করছেন তার জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, এটা আমাকে খারাপ কাজের নিয়ে গেছে। নিশ্চয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মানব শরীরে (তাকে পাপে লিপ্ত করার ক্ষেত্রে) জিহ্বার চেয়ে ধারালো অস্ত্র আর কিছুই নেই। (মালেক, বায়হাকী)

৭৩
আপনাদের আনন্দে আমাকে শামিল করুন।
একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। এ সময় দেখলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা নবী (সাঃ) এর সাথে রাগ করে উচ্চ আওয়াজে কথা বলছেন। এ অবস্থা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, হে অমুকের বেটি! রাসূল (সাঃ) এর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা বলছ? তখন নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে আড়াল করার জন্য উভয়ের মাঝে দাঁড়ালেন।

তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বের হয়ে গেলেন। আর নবী (সাঃ) আয়েশার সাথে আপোষ করতে লাগলেন এবং বললেন, তুমি কি দেখনি আমি তোমার ও এ লোকের মধ্যে অন্তরায় হয়েছিলাম। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর হাসির শব্দ শুনে বললেন, আপনাদের বিবাদের মাঝে যেমন আমাকে শরীক করেছিলেন তেমনি শান্তিতেও আমাকে শরীক করে নিন। (আবু দাউদ, ৪৯৯৯)

৭৪
নিশ্চয় সে আবু বকরের মেয়ে
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মেয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে অন্তর থেকে বেশি ভালোবাসেন কি না এটা জানার জন্য অন্যান্য স্ত্রীগণ যয়নব বিনতে জাহাস‌ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে নবী (সাঃ) এর নিকট পাঠান। অত:পর যয়নব নবী কারীম (সাঃ) এর দিকে গেলেন। তখন তিনি তাঁকে মুচকী হাসি অবস্থায় পেলেন। নবী কারীম (সাঃ) তাকে বললেন, আরে সে তো আবু বকরের মেয়ে। (বুখারী, মুসলিম)

৭৫
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নবী তনয়া ফাতেমাকে বিবাহের প্রস্তাব
আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মদীনায় আসার পর নবী কারীম (সাঃ) তার মেয়ে ফাতেমা কে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে বিবাহ দেয়ার কথা দিয়েছিলেন। ব্যাপারটা অন্যান্য সাহাবাগণ জানতেন না। আর মুহাজিরগণ মদীনায় আসার পর মদীনাবাসী আনসারের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করলেন। নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সাথে মার্জিত আচরণ করলেন এবং বললেন, এ বিষয়ে তোমাকে জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আবু বকর ব্যাপারটাকে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে জানালেন।

ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু শুনে বললেন, আপনাকে ফেরত দিয়েছেন হে আবু বকর। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমর কে বললেন, তুমি নবীকে প্রস্তাব দাও। ওমর তাই করলেন। উত্তরে নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে যা বলে দিলেন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকেও তাই বললেন। তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে খবর জানালে তিনি বলেন, তোমাকেও ফেরত দিয়েছেন হে উমর। (তাবাকাত লি ইবনে সায়াদ, ১১১)

৭৬
দুনিয়া ও তার আগমনকে ভয় পেতেন
যায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর সাথে ছিলাম। তিনি পানি চাইলেন। তাকে পানি এবং মধু দেয়া হলো। যখন তিনি সেগুলো তার হাতে রাখলেন তখন কান্না করতে লাগলেন। আমরা মনে করলাম হয়তোবা তার কিছু একটা ঘটেছে।

তাই তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। যখন তিনি কান্না থামালেন তখন তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনার কাঁদার কারণ কী? তিনি বললেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। হঠাৎ তিনি নিজের কাছ থেকে কোন কিছু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমন কি জিনিস যা আপনার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি না। নবী (সাঃ) বলেন, দুনিয়া আমার জন্য দীর্ঘ হচ্ছিল।

তাই সেটাকে তাড়িয়ে দিলাম। আমি বললাম, আমার জন্যও করুন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে পাবে না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তারপর থেকে আমার নিকট স্পষ্ট হলো এবং ভয় কাজ করতে লাগল যে, রাসূল (সাঃ) এর কাজের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে এবং দুনিয়াতে বেশি দিন থাকতে হবে। (বাযযার)

৭৭
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর জন্য সাহাবাগণ ক্ষমা প্রার্থনা করতেন
আয়িয ইবনে আমর হতে বর্ণিত আছে যে, আবু সুফয়ান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একদল লোকের সঙ্গে সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সুহায়ব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট আসলেন। তখন তারা বললেন, আল্লাহর তলোয়ারসমূহ আল্লাহর শত্রুদের ঘাড়ে ঠিকসময়ে তার লক্ষ্যস্থলে এসে পড়েনি। রাবী বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তোমরা কি একজন বয়োবৃদ্ধ কুরাইশ নেতাকে এরূপ কথা বলছ? তারপর তিনি রসূলুল্লাহ -এর নিকট এসে তাকে ব্যাপারটি জানালেন।

তখন তিনি একাই বললেন : হে আবূ বকর! তুমি মনে হয় তাদের অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদের অসন্তুষ্ট করে থাক তবে তুমি তোমার প্রতিপালককেই অসন্তুষ্ট করলে। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাদের নিকট এসে বললেন, হে আমার ভাইয়েরা! আমি তোমাদের অসন্তুষ্ট করেছি, তাই।? তারা বললেন, না, হে আমার ভাই! আল্লাহ আপনাকে মাফ করুন। (মুসলিম, ৬৫৬৮)

৭৮
রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের নিকট জান্নাতে আবু বকরের মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণের এক জামায়েতে রাসূল আসলেন এবং বললেন, আমি রাতে জান্নাতে তোমাদের স্থান প্রত্যক্ষ করেছি। তোমাদের স্থান আমার নিকটই। তারপর রাসূল (সাঃ) আবু বকরের সামনে এসে বললেন, হে আবু বকর! এক লোককে আমি চিনি না কিন্তু তার নাম, পিতা ও মাতার নাম জানি সে জান্নাতের যে দরজার কাছে যাবে তাকে বলা হবে স্বাগতম স্বাগতম প্রবেশ করুন। সালামাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় এটা মর্যাদার ব্যাপার, তাই না? তিনি বলেন, সে ব্যক্তি হলো আবু বকর বিন কুহাফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু (বাযযার, তাবারানী)

৭৯
লানতকারী হয়ো না
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় তিনি তার কতিপয় গোলামকে লানত দিচ্ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কা’বার প্রভুর শপথ সিদ্দীক এবং লানতকারী এক সাথে হতে পারে না। সেদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার কতিপয় দাসকে মুক্ত করে দেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, তারপর তিনি। রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে বলেন, এরূপ আর কখনো করবো না।

৮০
সেদিন অবশ্যই তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দুপুরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মসজিদে আসলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আগমনের আওয়াজ পেয়ে বললেন, হে আবু বকর! এ সময় এখানে, তার কারণ কী? তিনি বললেন, অত্যন্ত ক্ষুধার কারণে এখানে এসেছি। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও অত্যন্ত ক্ষুধার জন্য এখানে এসেছি (যদি রাসূল-এর কাছে কিছু পাওয়া যায়)। এ সময় রাসূল (সাঃ) বের হয়ে আসলে তিনি বলেন, কী ব্যাপার এ সময় এখানে? তারা দুজনেই বললেন, অত্যন্ত ক্ষুধার জন্য আমরা এখানে এসেছি।

রাসূল (সাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্ত্বার শপথ, আমিও ক্ষুধার জন্যই এ সময় ঘর থেকে বের হয়েছি। তারপর তিনি দুই সাহাবীকে নিয়ে আবু আইয়ুব আনসারী -এর বাড়িতে গেলেন। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দরজায় আওয়াজ দিলেন তাঁর স্ত্রী দরজা খুলে বললেন, আল্লাহর নবী ও তার সাহাবীদের স্বাগতম। নবী (সাঃ) তাকে বললেন, আবু আইয়ুব কোথায়? সে মহিলা বলল, সে তার খেজুর বাগানে। নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -কে নিয়ে সেখানে গেলেন। আবু আইয়ুব নবী (সাঃ) কে দেখে বললেন, আল্লাহন নবী ও তাঁর সাথীদের স্বাগতম। আপনি তো এ সময় আগমন করেন না। নবী

বললেন, সত্য বলেছ। তারপর আবু আইয়ুব বাগানে পরিপক্ক তাজা খেজুরের একটি ছড়ি কেটে আনলেন। নবী (সাঃ) বললেন, এতো প্রয়োজন ছিল না। আবু আইয়ুব বলেন, আমি জানি আপনি এরূপ খেজুর পছন্দ করেন। যেখান হতে পছন্দ আপনি বেছে বেছে খেতে পারেন। আর এগুলোর সাথে আরো কিছু করব। নবী কারীম (সাঃ) বললেন, যদি তুমি যবেহ করই তবে দুগ্ধবতী যবেহ করবে না। তারপর তিনি একটি ছাগল বা ভেড়া যবেহ করলেন এবং তার স্ত্রীকে বললেন, ভালো করে রুটি তৈরি কর। তুমি ভালোভাবেই রুটি তৈরি করতে জান। তারপর সে মহিলা অর্ধেক গোস্ত পাকালেন আর বাকি অর্ধেক ভূনা করলেন। খাবার তৈরি হলে নবী (সাঃ) এর সামনে তা উপস্থাপন করা হলো।

তারা তিনজন রুটি-গোশত খেলেন। নবী কারীম (সাঃ) আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বললেন, এখান থেকে কিছু ফাতেমার নিকট পৌছাও। কেননা সে আজ পর্যন্ত এরূপ কখনো খায়নি। তারপর আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর নিকট নিয়ে গেলেন। তিনিও খেয়ে তৃপ্ত হলেন। আর নবী (সাঃ) বলেন, রুটি গোশত, শুকনো ভিজা খেজুর এতকিছু। এরপর তার দু'চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! নিশ্চয় কিয়ামতের দিন এসব নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একথা শুনে তার সাথীগণ থমকে গেলেন। তারপর নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা যদি এরূপ নিয়ামত পাও। তাহলে বিসমিল্লাহ' বলে খাও। আর পরিতৃপ্ত হলে বলবে

“আল-হামদুলিল্লাহিল্লাযী আশবাআনা ওয়া আনআমা আলাইনা।” অর্থ : “ঐ আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি আমাদেরকে তৃপ্তি সহকারে আহার করালেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন। তখন এ দু'আ কাফফারা হয়ে যাবে। (ইবনে হিব্বান)

৮১
তাঁর ঈমানের মাহাত্ম্য
নবী (সাঃ) একদিন সাহাবীগণকে বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? এক জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি দেখেছি যে, আকাশ হতে একটি দাড়িপাল্লাওয়ালা আগমন করল বা অবতীর্ণ হলো তদ্বারা আপনাকে এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে ওজন করা হলো। আবু বকরের চেয়ে আপনার ওজন বেশি হলো। তারপর আবি বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে ওজন করা হলো।

এতে আবু বকরের ওজন বেশি হলো। তারপর ওমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে ওজন করা হলো। এতে উমরের ওজন বেশি হলো। তারপর দাড়িপাল্লাটি পুনরায় উঠিয়ে নেয়া হলো। নবী এটাকে সত্যায়ন করলেন। তারপর বললেন, এটা নবুওয়াতের প্রতিনিধিত্ব। অত:পর আল্লাহ যাকে যতটুকু ইচ্ছা রাজত্ব দান করলেন। (তিরমিযী- ২২৮৮, আবু দাউদ-৪৬৩৪)

৮২
নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে দিলেন
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ব্যাপারে একটি স্বপ্ন দেখলেন। যার দ্বারা তাঁর প্রজ্ঞার কথা জানা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুে হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেন, আমি দেখলাম একটি বড় পাত্র পূর্ণ দুধসহ আমাকে দেয়া হলো তা হতে আমি তৃপ্তি সহকারে পান করলাম।

আমার কাছে মনে হলো, দুধ আমার রগ ও রক্ত-মাংসে পৌঁছে গেছে। তারপরেও কিছু দুধ বেশি হলো। তা আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে পান করতে দিলাম। তারা (সাহাবীগণ) বলেন, এটা হলো জ্ঞান, যা আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দান করেছেন। আপনি পরিপূর্ণ হলে অতিরিক্ত অংশ আবু বকরকে দেয়া হয়েছে। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা ঠিক বলেছ। (আল ইহসান ফী তাকরীবে ইবনে হিব্বান, ১৫/২৬৯)

৮৩
হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে দোয়া শিখিয়ে দিন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -একদিন নবী (সাঃ) -কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে দোয়া শিখিয়ে দিন, যার দ্বারা নামাযে দোয়া করতে পারি। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, বল

অর্থ : হে আল্লাহ আমি আমার উপর অনেক যুলুম করেছি। তুমি ছাড়া আমার পাপ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তাই তোমার পক্ষ থেকে আমার উপর রহমত দাও ও ক্ষমা কর। কেননা, তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (বুখারী, মুসলিম)

৮৪
প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী
শায়বী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস -কে জিজ্ঞাসা করেন, কে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছে? তিনি বললেন, তুমি কি হাসান (ইসলামের প্রাথমিক কবি) এর কথা শোননি? তিনি বলেছিলেন যে, যদি তুমি আমার নিকট নির্ভরযোগ্য কোন ভাইকে স্মরণ করতে চাও তাহলে তোমার ভাই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে স্মরণ কর। যে কৃতকর্মে নবী কারীম (সাঃ) কে ছাড়া উত্তম সৃষ্টি, অধিক আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ এবং তিনি পূর্ণ করেন যা ওয়াদা করেন। এমন কোন প্রশংসনীয় কাজ নেই যেখানে তার উপস্থিতি নেই? আর তিনিই প্রথম মানুষ যিনি রাসূল (সাঃ) কে সত্য বলেছিলেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৩৬৭)

৮৫
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আপনি সত্য বলেছেন
আবু দারদা বলেন, রাসূল বলেছেন, তোমরা কি আমার সাথী (আবু বকর)-কে আমার জন্য হলেও ছাড় দিতে পার না? আমি বলতাম, হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয় আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। তোমরা বলতে, আপনি মিথ্যা বলছেন, আর আবু বকর বলতো, আপনি সত্য বলেছেন। (বুখারী, ৪৬৪০)

৮৬
প্রথমে যে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম একদিন আমাকে দেখালেন যে, আমার উম্মত হতে কে কে জান্নাতে প্রবেশ করবে? তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আকাঙ্কা করি আপনার সাথে থাকার যাতে তাদেরকে দেখতে পারি। রাসূল (সাঃ) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে তুমি তো সে ব্যক্তি, হে আবু বকর! যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ)।

৮৭
আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে একজন।
আবু হুরাইরা এ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাগুলো থেকে আহ্বান করে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাটি উত্তম। যে নামাযী, তাকে নামাযের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে।

যে রোযাপালনকারী! তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর যে সাদাক্বাহ দানকারী তাকে সাদক্বার দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। যাকে বেহেশতের দরজাসমূহ থেকে আহ্বান করা হবে তার তো আর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে আহ্বান করা হবে? তিনি কি বললেন, হ্যাঁ। আর আমি আশা রাখি, তুমি তাদের একজন হবে। (বুখারী, মুসলিম)

৮৮
বয়স্ক জান্নাতীদের সরদার
আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, আবু বকর এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আগের এবং পরের সকল বয়স্ক জান্নাতীদের সরদার হবেন। (সীলসীলতুল সহীহা লিল আলবানী, হাঃ ৮২৪)

৮৯
আবু বকর জান্নাতী
আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, আলী জান্নাতী, তালহা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, জুবায়ের হল জান্নাতী, আবদুর রহমান। ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী, সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী ও আবু উবাইদা ইবনেল যাররাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জান্নাতী। (সহীহ আল জামেস সাগীর, হাঃ ৫০)

৯০
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে সকলের আগে থাকতেন
আবু বকর মাযউনি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে বলেন, মুহাম্মাদ -এর সাথীগণ নামাযের ব্যাপারে অথবা রোযার ব্যাপারে আবু বকরের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারতেন না। এমনকি যে বিষয়ে তাঁর অন্তরে থাকত সে বিষয়েও না। ইব্রাহীম বলেন, ইবনে আলীয়া থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে যে, যে জিনিসটি তার অন্তরে থাকত তা হচ্ছে আল্লাহ জন্য ভালোবাসা এবং তার সৃষ্টির কল্যাণ কামনা করা। (মান ইযিলুহুমুল্লাহু লিল আয্যানী, ২/৩৫২)

৯১
তিনি খলিফা হওয়া সত্ত্বেও লোকদের দুধ দোহন করতেন
আনিসা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তিন বছর যাবত আমাদের নিকট আসতেন। হিজরতের পূর্বে দুই বছর এবং হিজরতের পরে এক বছর। তখন মহল্লার দাসীরা তাঁর নিকট তাদের ছাগল নিয়ে আসত। তিনি সেগুলো দোহন করে দিতেন। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বর্ণনায় রয়েছে যে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মহল্লার লোকদের ছাগল দোহন করতেন। যখন তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন মহল্লার এক দাসী বলল, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এখন আর আমাদের ছাগল দোহাবেন না।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সেটা শুনতে পেলেন এবং বললেন, আমার বয়সের কসম! অবশ্যই আমি তোমাদের ছাগল দোহন করব। আমি আশা করি যে, আমি যে চরিত্রের উপরে ছিলাম বর্তমান অবস্থা আমাকে তা আরো পরিবর্তন করবে। সুতরাং তিনি এদের জন্য দুধ দোহন করে দিতেন। আর তখন তিনি রসিকতা করে বালিকাদেরকে বলতেন, তুমি কি চাও আমি তোমার সামনে গরগর আওয়াজ করি? অথবা চিৎকার করে আওয়াজ করি? তখন সে বালিকা কখনো কখনো বলত যে, আপনি গরগর শব্দ করে আওয়াজ করুন। আবার কখনো বলত যে, আপনি চিৎকার করে আওয়াজ করুন। আর সে বালিকা যা বলত তিনি তাই করতেন। (ইবনে সায়াদ ফীত তাবাকাত, ৩/১৮৬)

৯২
আল্লাহর কসম আমি দান বন্ধ করব না
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আত্মীয়তার কারণে মিসতাহ ইবনুে উসাসার জন্য ব্যয় করতেন। আমার পবিত্রতা সম্পর্কে আল্লাহ এসব আয়াত অবতীর্ণ করলে তিনি বলেন, আমি মিসতাহর জন্য কিছুই ব্যয় করব না। কারণ সে আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে। এ সময় আল্লাহ। এ নির্দেশ অবতীর্ণ করেন :

“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর নিআমাত প্রাপ্ত ও স্বচ্ছলতার অধিকারী তারা আল্লাহর রাস্তায় আত্মীয়-মিসকীন ও মুহাজিরদেরকে না দেয়ার জন্য যেন শপথ না করে; বরং তাদের উচিত ক্ষমা করে দেয়া ও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান” (সূরা আন-নূর ২২)। তখন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন তাই আমি পছন্দ করি। তিনি মিসতাহকে এর আগে যা দিতেন তাই দিতে থাকলেন। (রিজাল ওয়ান নিসা নালা ফীহিম কুরআন, পৃঃ ২৮)

৯৩
তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কিছু বলেছ
বর্ণিত আছে যে, রাসূল হাসান কে বললেন, তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কিছু বলেছ (তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কোন কবিতা রচনা করেছ?) তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি নিচের কথাগুলো আবৃত্ত করলেন : “তুমি যদি কোন বিশ্বস্ত ভাইয়ের অবদানের কথা উল্লেখ করতে চাও তাহলে স্মরণ করো তোমার ভাই আবু বকরের কথা। তিনি কতইনা মহান অবদান রেখে গেছেন।

প্রকৃতপক্ষে নবীর পরে সৃষ্টির সেরা সর্বাধিক আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ এবং দায়িত্ব আদায়ে সর্বাধিক বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব। সুতরাং নবীর পর তার রয়েছে প্রশংসিত অবস্থান। আর তিনিই সবার আগে রাসূল (সাঃ) কে সত্যায়ন করেছিলেন। আর সুউচ্চ সাওর পর্বতের গুহায় তিনিই ছিলেন (রাসূলের সাথী হিসেবে দুজনের এক জন। আর তারা সেই পাহাড় আরোহন করলে শত্রুরা তাদের পাশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।” অতঃপর রাসূল (সাঃ) এতে অনেক খুশি হলেন এবং বললেন, হে হাসান! কতইনা উত্তম! (তোমার এ কবিতা)। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১/৫৫, ৫৬)

৯৪
আবু বকরের কথা মনে পড়লে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কাঁদতেন
ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কথা আলোচনা করা হলে তিনি কান্না করতেন এবং বলতেন, যদি আবু বকরের একদিনের আমল আমার সকল দিনের আমলের সমান হতো এবং আমার সকল রাত্রির আমল যদি আবু বকরের এক রাত্রের আমলের সমান হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। রাত্রি হচ্ছে সেই রাত্রি যে রাত্রে তিনি রাসূল-এর সাথে চুর নামক গর্তে অবস্থান করছিলেন। যখন তারা গর্তে পৌঁছলেন, আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুবললেন, হে নবী আল্লাহর কসম! আপনার আগে আমি প্রবেশ করব।

যদি তাতে কোন ক্ষতিকর কোন কিছু থাকে তবে তা আমাকেই স্পর্শ করবে। এরপর তিনি তাতে ঢুকে কিছু ছিদ্র পেলেন। অতঃপর তিনি তাঁর লুঙ্গি ছিড়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিলেন এবং দু'টি গর্ত বাকি ছিল। তাতে তিনি পা রাখলেন। এরপর রাসূল (সাঃ) কে বললেন, প্রবেশ করুন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) গর্তের মধ্যে তার মাথা ঢুকালেন। এরপর তিনি একটু ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পায়ে একটি পাথর পড়ে যায়।

কিন্তু তিনি রাসূল (সাঃ) এর ঘুম ভেঙ্গে যাবে এ ভয়ে তাকে জাগাননি। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শরীর থেকে রাসূল (সাঃ) এর চেহারায় রক্ত পড়ল। তখন রাসূল (সাঃ) জেগে গেলেন। তারপর বললেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আমি দংসিত হয়েছি। এরপর রাসূল (সাঃ) তাতে থু থু দিলেন। তখন তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। (আর রিয়াযুন নাযরাহ, ১/৬৮)

৯৫
আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন
শা’আবী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আলী ইবনে আবি তালিব -এর দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং বললেন, যে সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি এবং নবী (সাঃ) এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তিকে দেখে আনন্দিত হতে চায় সে যেন আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দিকে তাকায়। তখন আলী বললেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যদি এ কথা বলে থাকেন তাহলে নিশ্চয় সবচেয়ে কোমল হৃদয়ের মানুষ এবং সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি এবং গারে ছুরের মধ্যে নবী (সাঃ) এর সাথী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি। (রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ৮৬)

৯৬
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর একক বৈশিষ্ট্য
আবু মূসা ইবনে উকবা বলেন, আমি জানি না যে, এই চার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ রাসূল (সাঃ) কে পেয়েছেন। অথচ তারা একজন আরেক জনের সন্তান। তারা হলেন, আবু কুহাফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু আতিক ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। অনুরূপভাবে আবু কুহাফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জন্য আসমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১/১১৮)

৯৭
তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছাড়া আর কেউ নন
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন। যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু'জনের দ্বিতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, 'বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।' (সূরা তাওবা- ৪০)

মুফাসসিরগণের মধ্যে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে, এ আয়াতের মধ্যে দুজনের একজন বলতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বুঝানো হয়েছে। হাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতের মাধ্যমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ব্যতীত সকলকে ত্রুটিযুক্ত করেছেন। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১/১১৯)

৯৮
আল্লাহর কসম আমি তার সাথী
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে কে সূরা তাওবা তেলাওয়াত করবে? তখন এক ব্যক্তি বলল, আমি পড়ব। যখন তিনি পড়তে পড়তে এ আয়াতে গিয়ে পৌঁছলেন - যদি তোমরা তাকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাঁর সঙ্গীকে বলেছিল, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।'(সূরা তাওবা - আয়াত-৪০) তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! আমিই নবীর সাথী ছিলাম। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১/১১৯)

৯৯
আমি যা চাই সেটাই
একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বাবা তাকে বললেন, হে আমার সন্তান! আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি দুর্বল দাসদেরকে মুক্ত কর। তুমি যদি এমন ব্যক্তিদেরকে মুক্ত করতে যারা তোমার পেছনে দাঁড়াতে পারত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আমার পিতা! আমি যেটা চাই সেটাই করি। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শানে এ আয়াত নাযিল হয়। অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১১২০)

১০০
উম্মে মুয়াব্বাদের কাছ দিয়ে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর গমন
বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় উম্মে মুয়াব্বাদের অনেক ছাগল ছিল। আর তা বৃদ্ধি পেতে থাকল। একদা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার পাশ দিয়ে গমন করলেন। তখন তাঁর ছেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে চিনতে পারল এবং বলল, হে আম্মার! উনি সেই ব্যক্তি যিনি সেই মুবারক ব্যক্তির সাথে ছিলেন।

তখন তিনি উঠে দাড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! হিজরতের সময় তোমার সাথে কে ছিল? তিনি বললেন, তুমি তাকে চিন না? বললেন, না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তিনি তো আল্লাহর নবী। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে সাথে নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর কাছে গেলেন। তখন নবী (সাঃ) তাকে খাবার দিলেন এবং কিছু উপঢৌকন দান করলেন। (সীরাতুন নবুওয়াত লিস সালাবী, ১/৩৫১)

১০১
মক্কায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ভ্রাতৃত্ব
রাসূল (সাঃ) হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকতেই মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেন। তাই তিনি মক্কায় থাকা অবস্থায় আবু বকর এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর মধ্যেও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেন। (সীরাতুন নবুওয়াত লিস সালাবী, পৃঃ ৩৮৩)

১০২
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বিশ্বস্ততা
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, একদিন এক রাখাল তার ছাগল দলের কাছে হাজির থাকাকালে হঠাৎ এক হিংস্র বাঘ এসে থাবা মেরে দল থেকে একটি ছাগল নিয়ে যেতে লাগল। রাখাল হিংস্র বাঘের কবল থেকে বকরীটাকে বাঁচালো।

নেকড়েটি তখন রাখালের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ তো আমার থেকে ছিনিয়ে নিলে। কিন্তু হিংস্র পশুর আক্রমণের দিন এ ছাগলের রক্ষাকারী কে থাকবে, যেদিন আমি ব্যতীত এ ছাগলের কোন রাখাল থাকবে না?

অনুরূপভাবে একদিন এক লোক একটি গাভীর পিঠে চড়ে তাকে দৌড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তার দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গে কথা বলল। গাভীটি বলল, আমাকে তো এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। আমাকে বানানো হয়েছে কৃষি কাজের জন্য। লোকেরা বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ! (নেকড়ে ও গাভী মানুষের মতো কথা বলতে পারে) নবী (সাঃ) বললেন, আমি, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও ওমর ইবনে খাত্তাব এ ঘটনা বিশ্বাস করি। (বুখারী মুসলিম)

১০৩
জান্নাতের সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাগুলো থেকে আহ্বান করে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাটি উত্তম। যে নামাযী, তাকে নামাযের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে রোযাপালনকারী! তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে আহ্বান করা হবে।

আর যে সাদাক্বাহ দানকারী তাকে সাদক্বার দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। যাকে বেহেশতের দরজাসমূহ থেকে আহ্বান করা হবে তার তো আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে আহ্বান করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর আমি আশা রাখি, তুমি তাদের একজন হবে। (বুখারী, মুসলিম)

১০৪
তোমরা আমাকে হেয় করেছিলে কিন্তু সে আমাকে অনুসরণ করেছিল
একদা আকীল বিন আবি তালেব ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এতে আকীলের অপরাধ ছিল। পক্ষান্তরে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। আর মানুষের বংশধারা বর্ণনা করে মানুষকে ঘায়েল করার ক্ষমতা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ছিল। কিন্তু আকীল যেহেতু নবী (সাঃ) এর চাচাতো ভাই, সেহেতু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে কিছু না বলে নবী (সাঃ) এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফলে নবী (সাঃ) সমস্ত মানুষের উপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন।

তিনি বলেন, “তোমরা কি আমার সাথীকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে না? তার এবং তোমাদের প্রকৃত অবস্থা ভালো করে জেনে নাও, আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার বাড়ির গেট অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। তবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর গেট ব্যতীত।

কেননা, তাঁর গেটে তো নূর ঝলমল করে।

আর আল্লাহর শপথ! আমি যখন তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করি তোমরা সবাই বলেছিলে যে, আমি মিথ্যা বলছি। কিন্তু আবু বকর বলেছিল, আপনি সত্য বলছেন এবং সত্য ধর্মের প্রচার করছেন। আর তোমরা তো তোমাদের মাল-সম্পদ নিজেদের কাছে গচ্ছিত রেখে দিয়েছিলে। পক্ষান্তরে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার সমস্ত মাল আমার তরে উৎসর্গ করেছিল। আর তোমরা আমাকে সাহায্য করা থেকে যখন বিরত ছিলে, তখন সে আমার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে আমার অনুসারী হয়েছিল। (তাবারানী, ৩/৩৭৮)

১০৫
নিশ্চয়ই আপনি কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী
আমাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল না? যে কল্যাণের কাজে সবার আগে থাকত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি মসজিদে নামায পড়ছিলাম। তখন রাসূল (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন তার সাথে ছিলেন আবু বকর ও উমর। তিনি আমাকে দোয়া করা অবস্থায় পেলেন।

অতপর বললেন, তুমি চাও তোমাকে দেয়া হবে। অতপর বললেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে আনন্দ লাভ করতে চায় সে যেন ইবনে উম্মে আবদ এর কিরাত অনুযায়ী পাঠ করে। এরপর আমি আমার বাড়িতে চলে গেলাম। পরে আবু বকর প্রথমে এসে আমাকে সুসংবাদ দিলেন। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আসলেন। তখন তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে আমার নিকট থেকে বের হওয়া অবস্থায় পেলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, নিশ্চয় আপনি কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। (আবু ইয়াল, ১/২৬)।

১০৬
হে রাবীয়া। তোমার এবং আবু বকরের কী হলো
রাবীয়া আসলামী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মধ্যে কিছু কথা বার্তা হলো। এক পর্যায়ে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর এমন একটি কথা বললেন, যা আমি অপছন্দ করলাম। এরপর তিনি লজ্জিত হয়ে আমাকে বললেন, হে রাবীয়া! তুমিও আমাকে অনুরূপ কথা বলে প্রতিশোধ নাও। আমি বললাম, আমি এটা করব না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তুমি অবশ্যই তা বল, নতুবা আমি এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর সাহায্য নেব।

তখন আমি বললাম, আমি সেটা করব না। এরপর আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর নিকট চলে গেলেন। আমিও তার পিছন ধরে চললাম। তখন আসলাম গোত্রের কিছু লোক আগমন করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহ আবু বকরের উপর রহমত নাযিল করুন। কোন বিষয়ে তিনি তোমার ব্যাপারে রাসূলের সাহায্য নিতে গেলেন? আমি বললাম, তোমরা কি জান সে কে? তিনি হলেন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি হিজরতের সময় গর্তে দুজনের একজন ছিলেন। তিনি মুসলমানদের মুরব্বী। তোমরা খবরদার তার বিরুদ্ধে আমাকে সহযোগিতা করবে না। এরপর আমি রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করলাম।

তিনি আমার দিকে মাথা তুলে তাকালেন এবং বললেন, হে রাবিয়া। তোমার এবং আবু বকরের কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ রকম এ রকম আমরা কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি একটি কথা বলেন, যা আমি অপছন্দ করলাম। তারপর তিনি আমাকে প্রতিশোধ নিতে বললেন। কিন্তু আমি অস্বীকার করলাম। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি প্রতিশোধ নিও না, তবে তুমি এ কথা বল যে, হে আবু বকর! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিন। পরে আমি তাই বললাম। হাসান বলেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কান্না করতে করতে চলে গেলেন। (আহমদ- ১৬১৪১)

১০৭
হে পাখি। তোমার কতইনা সৌভাগ্য
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এক বাগানে প্রবেশ করলেন। তখন একটি বাদবাছি (পাখি) গাছের ছায়ায় অবস্থান করছিল। এটা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একটি দীর্ঘশ্বাস নিলেন এবং বললেন, হে পাখি! তোমার কতই না সৌভাগ্য, তুমি গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করছ, গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছ এবং কোন হিসাব ছাড়াই হবে তোমার শেষ পরিণতি। হায় আফসোস! আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যদি তোমার মতো হতো। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ১০৫)

১০৮
হে আল্লাহর রাসূল! আমি আর আমার মাল সবই আপনার জন্য।
কোন একদিন রাসূল (সাঃ) বললেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সম্পদ আমার যত উপকার করেছে অন্য কারো সম্পদ তা করেনি। একথা শুনে আবু বকর কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এবং আমার সম্পদ তো আপনার জন্যই। আর রাসূল (সাঃ) তাঁর নিজের মাল যেভাবে ব্যবহার করতেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর মালও সেভাবে ব্যবহার করতেন। (সীরাহ ওয়া মানাকীবে আবু বকর, পৃঃ ১৮৯)

১০৯
ইসলাম গ্রহণের দিন আবু বকরের সম্পদ
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বাড়িতে চল্লিশ হাজার দিরহাম ছিল। কিন্তু যখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করেন, তখন তার সম্পদ ছিল মাত্র পাঁচ হাজার দিরহাম। তার সমুদয় সম্পদ তিনি দাস মুক্তি এবং ইসলামের সাহায্যে ব্যয় করেন। (ইবনে আসাকীর ফী তারিখে দিমাশক, ৩০/৬৮)

১১০
আমরা তাকে সংরক্ষণ করি, তাঁর সন্তানের দেখাশুনা করার জন্য
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি আবু কুহাফাকে সাথে নিয়ে নবী কারীম (সাঃ) এর নিকট গেলাম। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তুমি তো বৃদ্ধ লোকটিকেও নিয়ে এসেছ, তাকে রেখে আসনি। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আপনার নিকট আসার ক্ষেত্রে তিনিই বেশি হকদার। তিনি বললেন, আমরা তার সংরক্ষণ করি, তার সন্তানদের হেফাযতের জন্য। (বাযযার, ১/১৫৬)

১১১
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যেভাবে বিচার করতেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট যখন কোন বিচার আসত, তখন তিনি আল্লাহর কিতাবের দিকে নযর দিতেন। যদি সেখানে ফায়সালা পেয়ে যেতেন, তবে সেভাবেই ফায়সালা দিতেন। আর যদি কুরআনে সেই ফায়সালা না পেতেন, তবে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতের দিকে দৃষ্টি দিতেন। রাসূল (সাঃ) এর সুন্নতে তা পাওয়া গেলে তিনি সেভাবেই সমাধা করতেন। আর যদি রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতে তা পাওয়া না যেত তবে তিনি বের হয়ে বলতেন, আমার কাছে এরকম এরকম বিচার এসেছে।

এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) কী ফায়সালা দিয়েছেন তোমার মধ্যে কারো কি জানা আছে। তখন কোন কোন সময় কিছু কিছু লোক আসত এবং রাসূল (সাঃ) এর ফায়সালা শুনিয়ে দিত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলতেন, সকল প্রশংসা ঐ সত্ত্বার যিনি আমাদের মধ্যে এমন লোক রেখেছেন, যারা নবীর কথা স্মরণ রেখেছে। যদি এক্ষেত্রেও তিনি ব্যর্থ হতেন, তখন গণ্যমান্য লোকদেরকে নিয়ে ফায়সালা করতেন। (সীরাহ ওয়া মানাকীবে আবু বকর, ১৯৭)

১১২
স্বপ্নের তাবীর সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম বংশের লোক ছিলেন। তাছাড়া তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে অত্যধিক জ্ঞান রাখতেন। এমনকি তিনি রাসূল (সাঃ) এর সময়েও স্বপ্নের তাবির করতেন। মুহাম্মদ ইবনে সীরিন যিনি ছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে স্বপ্নের ব্যাখ্যায় অগ্রগণ্য, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এর পরে এই উম্মতের সবচেয়ে অধিক স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী হলেন আবু বকর। (ইবনে সায়াদ)

১১৩
আবু বকরের রাগ দমন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে গালি দিচ্ছিল। তখন নবী কারীম (সাঃ) বসা ছিলেন। নবী কারীম (সাঃ) অবাক হয়ে মুচকি হাসছিলেন। যখন লোকটি অধিক গালি দিতে লাগল তখন আবু বকর। তার কিছু কথার জবাব দিলেন। এ কারণে নবী কারীম (সাঃ) রাগান্বিত হলেন এবং সে স্থান থেকে চলে গেলেন।

এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার সাথে সাক্ষাত করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি আমাকে গালী দিচ্ছিল আর আপনি বসাছিলেন। যখন আমি উত্তর দিলাম তখন আপনি রাগ করে চলে আসলেন। এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, যতক্ষণ তুমি জবাব দাওনি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা তার জবাব দিয়েছে, আর যখন তুমি জবাব দিতে শুরু করলে তখন শয়তান এসে গেল। আর আমি শয়তানের সাথে বসে থাকতে চাইনি। (আহমদ, সীলসীলাতুস সহীহা লিল আলবানী, ২২৩১)

১১৪
স্বপ্নের ব্যাখ্যায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ এর নিকট এসে বলল, আমি স্বপ্নে একটি ছাতা দেখেছি। উক্ত ছাতা থেকে ঘি ও মধু ঝরে ঝরে পড়ছিল। লোকেরা ঐগুলো তুলে নিচ্ছিল।

কেউ বেশি সংগ্রহ করছিল, কেউ বা কম। আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশিও আমি স্বপ্নে দেখেছি। আমি দেখলাম, আপনি তা ধরলেন এবং উঠে গেলেন। আপনার পরে আরেকজন ধরল, সে-ও উঠে গেল। তারপর আরেকজন ধরল, সে-ও উঠে গেল। তারপর অন্য একজন ধরলে রশিটি ছিড়ে গেল। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমাকে এ স্বপ্নের তা'বীর করার অনুমতি দিন। নবী (সাঃ) বললেন, তা'বীর কর।

আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, ছাতা হলো ইসলাম। ছাতা থেকে যে ঘি ও মধু ঝরে ঝরে পড়ছে তা হলো কুরআনের সুমিষ্টতা বা মাধুর্য। মানুষ তা থেকে কম-বেশি গ্রহণ করছে। আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশি হলো, ঐ মহাসত্য যার উপর আপনি রয়েছেন। আপনি তা ধরবেন, আল্লাহ আপনাকে উচ্চে আরোহণ করাবেন। আপনার পর তা আরেকজন ধরবে ও আরোহণ করবে। তারপর আরেকজন ধরবে ও আরোহণ করবে। তার সাহায্যে সে আরোহণ করবে। আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, হে আল্লাহর রাসূল! বলুন, আমি কি সঠিক বলেছি না ভুল? নবী (সাঃ) বললেন, কিছু তো ঠিক বলেছ আর কিছু ভুল বলেছ। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি আমায় বলুন, আমি কোথায় ভুল করেছি, নবী কারীম (সাঃ) বললেন, কসম করো না।(বুখারী, মুসলিম)

১১৫
আল্লাহ তোমাকে বড় সন্তুষ্টি দান করেছেন
আবদুল কায়েস এর প্রতিনিধি দল মদীনায় আগমণ করল এবং তারা নবী (সাঃ) এর পাশে জড়ো হলো। তখন তাদের এক ব্যক্তি দাঁড়াল এবং কথা। বলল। কথার মধ্যে সে কিছু বাজে কথাও বলে ফেলল। তখন নবী কারীম (সাঃ) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর দিকে তাকালেন এবং অবাক হয়ে বললেন, হে আবু বকর! ঐ লোকটি কী বলছে তুমি কি শুনতে পেয়েছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হ্যা! শুনতে পেয়েছি। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তুমি তার উত্তর দাও। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ঐ লোকটির কথার সর্বোত্তম জবাব দিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) এর চেহারায় উজ্জ্বল ভাব ও মুচকী হাসি প্রকাশ পেল।

তিনি বললেন, হে আবু বকর! আল্লাহ তোমাকে সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টি দান করুন। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ রাসূল! বড় সন্তুষ্টি কী? তখন নবী (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবে তাঁর সকল বান্দাদের নিকট তাঁর। জ্যোতী প্রকাশ করবেন। আর আবু বকরের জন্য বিশেষভাবে তার জ্যোতী প্রকাশ করবেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৪/৭৮)

১১৬
সম্মানী লোকেরাই সম্মানী লোকদেরকে চিনতে পারে
আলী ইবনে আবু তালিব সাহাবাদের মজলিসে আগমন করলেন। তখন সাহাবীরা নবী (সাঃ) এর পাশে বসা ছিলেন। তিনি কোথায় বসবেন সেটা নিয়ে ভাবছিলেন। আর নবী লক্ষ্য করছিলেন যে, কে আলীকে জায়গা করে দেয়? এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দাঁড়ালেন এবং তাঁর স্থান থেকে সরলেন এবং বললেন, হে আবুল হাসান! এখানে বসুন তখন তিনি তাদের দুই জনের মাঝখানে বসলেন এবং বললেন, হে আবু বকর! সম্মানী লোকেরাই সম্মানী লোকদেরকে চিনতে পারে। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াহ- ৭/৩৫৯)

১১৭
তুমি যদি সতর্ক করতে তবে অমনোযোগী পেতে না
আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু লোকদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। তিনি দু'রাকাতেই সূরা বাকারা তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর যখন নামায শেষ করলেন তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হে রাসূলের খলিফা! আপনি যখন নামায শেষ করেছেন তখন আমরা দেখলাম যে, সূর্য উদিত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি যদি আমাকে সতর্ক করতে তবে আমাদেরকে অমনোযোগী পেতে না। (রিয়াদুন নাদরাহ-১১২৯)

১১৮
তাকওয়া বজায় রাখার জন্য বমি করলেন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর একটা গোলাম ছিল, যে তাকে কিছু কর প্রদান করত। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার কর হতে খাবার গ্রহণ করতেন। একদা এ গোলাম কিছু জিনিস নিয়ে এল এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে কিছু আহার করলেন। তখন গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন, এটা কি (যা আপনি খেলেন)? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, সেটা কী ছিল? সে গোলাম বলল, জাহেলী যুগে আমি এক লোকের ভবিষ্যৎ গণনা করেছিলাম। মূলত আমি ভাগ্য গুণতে জানতাম না।

বরং তাকে আমি প্রতারিত করেছিলাম মাত্র। আজ সে লোকটি আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে ঐ কাজের মূল্য প্রদান করল। এটাই সে বস্তু যা থেকে আপনি খেলেন। এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুে নিজের হাতখানা মুখে প্রবেশ করিয়ে বমি করে পেটের সবকিছু বের করে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)

১১৯
কারো কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকতেন
আবু মুলাইকা বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর হাত থেকে কোন সময় উট হাঁকানো বেত পড়ে যেত। তখন তিনি নিজেই উটের উপর থেকে নেমে তা উঠাতেন। লোকজন বলত, আপনি আমাদেরকে বললে আমরা তো তা উঠিয়ে দিতে পারতাম। তখন তিনি বলতেন, নবী কারীম (সাঃ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন কারো কাছে কোন কিছু প্রার্থনা না করি। (আহমদ)

১২০
আবু বকরের মৃত্যুর পর ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দুঃখ প্রকাশ করতেন
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন সফর থেকে আগমন করতেন তখন ঘরে প্রবেশ করার আগে মসজিদে যেতেন এবং দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। তারপর নবী (সাঃ) এর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন। তারপর যথাক্রমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন। তিনি যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন, তখন বলতেন, আপনি যদি আমার পিতা না হতেন তবে আপনার পূবে আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কেই সালাম জানাতাম। (রিয়াদুন নাদরাই-১/১৪১)

১২১
বিষয়টি বুঝতে পেরে আবু বকর কান্না করলেন
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হয়ে একদিন মিম্বারে উপবিষ্ট হয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আল্লাহর কাছে যেসব নি'আমাত রয়েছে এ দু’য়র মাঝে একটাকে পছন্দ করে নেয়ার অধিকার দিয়েছিলেন। সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে। তাই বেছে নিয়েছে। এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমার বাপ-মাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। (রাবী বলেন) আবু বকরের কথায় আমরা অবাক হলাম। লোকেরা বলল, এ বৃদ্ধ।

লোকটার অবস্থা দেখ তো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন এক বান্দাহর ব্যাপারে বলছেন যে, আল্লাহ তাঁকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও তার কাছে যেসব নিআমাত রয়েছে তার মাঝে একটাকে বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। আর বৃদ্ধ বলছেন, আমার বাবা-মাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। মূলত সে অধিকার প্রাপ্ত বান্দা ছিলেন রাসূলুল্লাহ ও আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ লোক। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, সাহচর্য ও আর্থিক দিক থেকে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছে আবূ বকব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু।আমার উম্মতের মধ্যে কাউকেও যদি আমি অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তবে অবশ্যই আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামী সম্পর্কই যথেষ্ট। তারপর নবী (সাঃ) বললেন, আবু বকরের ঘরের দিকের দরজা ছাড়া মসজিদের আর কোন দরজা খোলা থাকবে না। (বুখারী, ৩৬৫৪)

১২২
মুসলিম জাহানের খলিফা আবু বকর, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পেলেন, তখন তিনি মদীনার বাইরে সুনহ নামক স্থানে নিজ বাড়িতে ছিলেন। মৃত্যুর সংবাদ শ্রবণ করা মাত্রই তিনি মদীনায় আগমন করে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন। তিনি কারো সাথে কোন কথা না বলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর নিকট গমন করলেন।

অতঃপর তিনি রাসূল (সাঃ) এর দিকে অগ্রসর হলেন। আর রাসূল (সাঃ) কে হিবারা কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়েছিল। তিনি রাসূল (সাঃ) এর চেহারা থেকে কাপড় সরালেন। এরপর তার দিকে কিছুটা ঝুঁকে চুমু খেয়ে কেঁদে বললেন, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে দু'বার মৃত্যু দিবেন না। আর যে মৃত্যু আপনার উপর অবধারিত ছিল, তা ঘটে গেছে। (বুখারী- ৪৪৫২)

১২৩
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর মৃত্যুবরণের ঘোষণা দেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর ব্যাপার নিশ্চিত হওয়ার পর মানুষের মাঝে ভাষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। সর্বপ্রথম তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করলেন। এরপর জোরালো কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, যে মুহাম্মাদের ইবাদাত করতো, সে যেন জেনে নেয় যে, নিশ্চয় তিনি মারা গেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদাত করত, সে আল্লাহ তো চিরঞ্জীব। কখনো তিনি মৃত্যুবরণ করবেন না। অতঃপর তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন।

অর্থাৎ মুহাম্মাদ - একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন। তার পূর্বে অনেক রাসূল‌ অতিবাহিত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা পশ্চাতে ফিরে যাবে? আর যে পশ্চাতে ফিরে যাবে, সে আল্লাহর কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞদের অচিরেই বিনিময় প্রদান করবেন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত- ১৪৪) উপরিউক্ত মর্মস্পর্শী ভাষণ শুনে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম কাঁদতে লাগলেন।

১২৪
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী (সাঃ) এর দাফনের স্থান নির্ধারণ করেন
নবী (সাঃ) কে কোথায় দাফন করা হবে এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়লেন। ইতিমধ্যে আবু বকর সিদ্দীক বের হয়ে এসে বললেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা নবীগণ যেখানে মৃত্যুবরণ করি, সেখানেই আমাদের দাফন করতে হয়। তাই নবী (সাঃ) কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর কামরায় দাফন করা হয়। (বুখারী- ৩৬৬৮)

১২৫
বনু সায়েদা গোত্রের মিলনায়তনে সামাবেশ
নবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর আনসারী সাহাবীগণ বনু সায়েদা গোত্রের মিলনায়তনে সমবেত হলো। অতঃপর আবু বকর, ওমর এবং আবু উবায়দা যখন এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন তারা সেখানে উপস্থিত হন। আনসারী সাহাবীরা দাবি করে বসলেন যে, আমির দু'জন হবে। আমাদের থেকে একজন এবং আপনাদের থেকে একজন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলে উঠলেন, মুসলিমদের আমীর দুই জন হতে পারে না। অতঃপর তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকটবর্তী হয়ে হাত ধরে চিৎকার করে সবার সামনে তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন : ১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন যে, যখন নবী (সাঃ) তাঁর সাথীকে বললেন- সেই সাথী কে ছিল তোমরা বলতো? সমস্বরে সবাই বলে উঠলতিনি আবু বকর।

২. এরপর হযরত ওমর প্রশ্ন করলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তারা দু'জন গুহায় ছিল। সেই দু'জন কারা? সবাই এক বাক্যে বলে উঠল- নবী কারীম (সাঃ) এবং আবু বকর। ৩. অতঃপর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবার প্রশ্ন করলেন, রাসূল বলেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। এর দ্বারা কারা উদ্দেশ্য? উপস্থিত সবাই উত্তরে বললেন, নবী (সাঃ) এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। এরপর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন যে, আবু বকরের এমন মহৎ কৃতিত্ব ও মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও কে তার আগে আমীর হতে চায়? তারা বলল, আমরা এ ধরনের দাবি পেশ করা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দিকে অগ্রসর হলেন এবং বললেন, আপনি হাত সম্প্রসারণ করুন আমি বাইয়াত গ্রহণ করব। এরপর তিনি বাইয়াত গ্রহণ করলেন এবং সকল লোকজনও বাইয়াত গ্রহণ করল। (হাকীম- ৩/৬৭)

১২৬
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর প্রথম খুতবা
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন খেলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলেন তখন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জোরালো ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি। তবে তোমাদের মাঝে আমি কোন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নই। সুতরাং আমি যদি সঠিক করে থাকি, তাহলে তোমরা আমাকে সহযোগিতা করবে। আর যদি ভুল করে থাকি, তাহলে শুধরিয়ে দিবে। সত্যবাদিতা আমানত, মিথ্যাবাদিতা খেয়ানত। তোমাদের মধ্যে থেকে দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবল। সুতরাং আমি তার হক আদায় করতে বাধ্য থাকব। পক্ষান্তরে তোমাদের সবল ব্যক্তি আমার কাছে দুর্বল। সুতরাং তার থেকে যথাযথ হক আদায়ে আমি সামর্থ্য থাকব।

ইনশা আল্লাহ। যে জাতি! আল্লাহর রাহে জিহাদ করা ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ব্যাপকভাবে বালা-মসিবত নাযিল করবেন। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মেনে চলব, ততক্ষণ তোমরা আমার কথা মেনে চলবে। আর যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা অমান্য করি, তাহলে তোমরা আমার কথা মানবে না এবং এ ক্ষেত্রে আমার কোন প্রকার আনুগত্য করা যাবে না। আর তোমরা যদি সালাতের ব্যাপারে সচেষ্ট থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রতি। রহমত বর্ষণ করবেন। (বেদায়া ওয়ান নেহায়াহ- ৬/৩০৬)

১২৭
আবু বকর মুসলমানদের মাঝে অনুদান বিতরণ করেন।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু স্বাধীন-দাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার মাঝে সমভাবে রাষ্ট্রীয় অনুদান বিতরণ করতেন। ফলে একদা কতিপয় মুসলমান এসে আপত্তির ছলে বলল, ওহে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি তো সাধারণ মানুষ অগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী, এবং মর্যাদাশীল অন্যান্য মানুষের অনুদান সমান করে ফেলেছেন।

আমরা মনে করি, যদি আপনি অগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী, অধিক মর্যাদাশীলদের এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতেন, তাহলে ভালো হতো। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা উল্লেখ করেছ, আমি এ ব্যাপারে ভালো করে জানি। এ সকল মহাকর্মের বিনিময় আল্লাহর নিকট রয়েছে। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই এর উত্তম প্রতিদান দান করবেন। আর এই অনুদান তো জীবিকা নির্বাহের ভাতা মাত্র। সুতরাং অগ্রাধিকার দেয়ার পরিবর্তে সমান করে বণ্টন করাই শ্রেয়। (আবু বকর লি আলী আত তানতাবী, পৃঃ ১৮৮)

১২৮
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে ওমর-এর বিতর্ক
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে মুসলমানদের মাঝে সমানভাবে রাষ্ট্রীয় ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আপনি কি দু'বার হিজরতকারী ও উভয় কিবলার অভিমুখী হয়ে সালাত আদায়কারীদের মাঝে এবং মক্কা বিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণকারীর মাঝে ভাতার ক্ষেত্রে সমান করে ফেলবেন? এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তারা তো আল্লাহকে সন্তুষ্টি করনার্থে আমল করেছে। সুতরাং তাদের আমলের প্রতিদান ও পুরস্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর দুনিয়া তো আরোহীর পাথেয় স্বরূপ। তাই আমি এই ভাতা সবাইকে সমপরিমাণ প্রদান করছি। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ১৮৫)

১২৯
তিনি বিধবাদের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে উট, ঘোড়া, অস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করে আল্লাহর রাহে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে প্রদান করতেন। এক বছর শীতকালে গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাপড় খরিদ করে মদীনার বিধবাদের মাঝে বিতরণ করেন। আর তিনি খেলাফতে থাকা অবস্থায় নিজস্ব সম্পদ থেকে জন-কল্যাণে, জিহাদে এবং অন্যান্য সকাজে যা ব্যয় করেছেন তা দুই লক্ষে পৌঁছে। (তারীখুদ দা'ওয়াহ ইলাল ইসলাম, পৃঃ ২৫৮)।

১৩০
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু খলিফা হয়েও ব্যবসা করতে যান
আমরা জানি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সকালে ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে যেতেন। অতঃপর যখন তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হন, তখনও তিনি ব্যবসার কাপড় কাঁধে নিয়ে বাজারে যান। পথিমধ্যে ওমর এবং আবু উবায়দা - এর সাথে সাক্ষাত হলে তারা উভয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, বাজারে যাচ্ছি।

তারা পুণরায় জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বাজারে যাবেন? অথচ মুসলমানদের যাবতীয় দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, তাহলে আমার পরিবারের খাদ্যের ব্যবস্থা কোথা থেকে করব? তখন তারা বললেন, আপনি আমাদের সাথে চলুন। আপনার জন্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছু সম্পদ বরাদ্দ করে দিব। সুতরাং তিনি তাদের সাথে গেলেন। ফলে বিশিষ্ট সাহাবীগণ তার জীবিকা নির্বাহের জন্যে প্রত্যেক দিন একটি ছাগলের অর্ধেক মূল্য ধার্য করে দেন। (রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ১৯১)

১৩১
বৃদ্ধার সেবায় মুসলিম বিশ্বের শাসনকর্তা
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব মদীনার পার্শ্ববর্তী মহলার এক অন্ধ বৃদ্ধা মহিলাকে রাতের বেলায় গিয়ে দেখাশুনা করতেন। তিনি সেই বৃদ্ধার পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে দেয়ার ইচ্ছা করতেন। তিনি যখন সেই উদ্দেশ্যে আসেন, তখন দেখা যায় যে, কে জানি অতি গোপনে তার পূর্বেই সেই কাজ সম্পাদন করে চলে যান।

এভাবে অনেক দিন সর্বাত্মক চেষ্টা করা সত্ত্বেও সেই বৃদ্ধার সেবা করার সুযোগ তিনি পাননি। পরিশেষে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওঁৎ পেতে বসে রইলেন। সেই মহান ব্যক্তিটির পরিচয় জানার জন্যে। হঠাৎ দেখতে পান যে, তিনি হচ্ছেন গোটা মুসলিম বিশ্বের শাসনকর্তা আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। (আবু বকর লি আলী আত তানতাবী, পৃঃ ২৯)

১৩২
উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ
রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমরকে বললেন, চল উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাত করতে যাই। কেননা, রাসূল (সাঃ) তার সাথে সাক্ষাত করে খোঁজ-খবর নিতেন। তাঁরা উম্মে আইমান নামী বৃদ্ধার কাছে পৌছলে তিনি কেঁদে উঠেন। তারা উভয়ে শান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? রাসূল (সাঃ) এর জন্যে আল্লাহর নিকট যা আছে তা অধিক শ্রেয়।

তখন বৃদ্ধা উত্তর দিল। আমি এ কথা জানার জন্য কাদছি না। আমি কাঁদছি এ জন্য যে, আকাশের ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। উক্ত মর্মস্পর্শী কথা শুনে তারাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। নিজেদেরকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারেননি। (মুসলিম- ২৪৫৪)

১৩৩
কথা না বলার মানতকারী মহিলার প্রতি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নসীহত
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যয়নব নাম্মী কট্টরপন্থী এক মহিলার নিকটে গিয়ে দেখলেন যে, সে কারো সাথে কথা বলছে না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, এই মহিলা কথা বলছে না কেন? উপস্থিত লোকেরা উত্তর দিল যে, সে কারো সাথে কথা না বলার মানত করেছে। এটা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, কথা বর্জন করা অবৈধ। এমনটা জাহেলী যুগের কাজ। উক্ত নসীহত শুনে মহিলা মানত ভঙ্গ করে কথা বলল এবং জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি একজন মুহাজির। মহিলা আবার প্রশ্ন করল, আপনি কোন গোত্রের মুহাজির?

তিনি বললেন, কুরাইশ গোত্রের। এরপর মহিলা আবার প্রশ্ন করে বসল, কুরাইশ গোত্রের কে আপনি? তিনি কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললেন, তুমি তো দেখি অধিক প্রশ্ন কর? অতঃপর সেই মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আল্লাহ তায়ালা জাহেলিয়াতের পর যে সত্য ও সঠিক ধর্ম দ্বীনে ইসলাম দান করলেন, এর উপর আমরা কতদিন অটলঅবিচল থাকতে পারব? তিনি উত্তরে বললেন, যতদিন তোমাদের নেতাগণ সঠিক পথ গ্রহণ করে তা গোটা রাষ্ট্রে কায়েম রাখবে। সেই মহিলা পুরনায় প্রশ্ন করল, নেতা আবার কারা? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের মধ্যে কি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নেই? যাদের কথা জনসাধারণ মেনে চলে? মহিলা বলল, জি আছে। তখন আবু বকর সিদ্দীক বললেন, এরাই হচ্ছেন নেতা। (বুখারী-৩৮৩৪)

১৩৪
এত মানুষ ব্যতিরেখে কেবলমাত্র আমাকেই সালাম প্রদান করলে?
একদা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর সাথীদের নিয়ে বসলেন। তখন তিনি মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে এককভাবে শুধুমাত্র তাঁকে (আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে) সালাম দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর খলিফা বলে সম্বোধন করে কিছু বলতে চাইল। তিনি বললেন, এত মানুষ ব্যতিরেখে কেবল আমাকে সালাম করলে? (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ১৯১)

১৩৫
পিতার সাথে আবু বকরের সদাচরণ
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন পিতার বাধ্যগত সন্তান। তিনি তার সাথে সদাচারণ করতেন। তিনি দ্বাদশ হিজরীর রজব মাসে উমরা পালনার্থে মদীনা থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশ্যে একদল যুবক অনুচর সাথে নিয়ে রওয়ানা করেন। তথায় তিনি সকালে পৌঁছেন। অতঃপর তিনি নিজেদের বাড়িতে যান। তখন তার পিতা আবু কুহাফা বাড়ির দরজার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন। তাকে লোকেরা বলল, এই তো আপনার ছেলে এসেছে। তিনি তৎক্ষণাত আনন্দের সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন।

অপরদিকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু অতি তাড়াতাড়ি তার উটকে বসিয়ে নামলেন। সর্বপ্রথম তিনি পিতার সাথে দেখা করে খোজ খবর নিলেন। এরপর আশ পাশের লোকজন তার সাথে সালাম বিনিময় করেন। আর এই লোক সমাগমের মাঝে পিতা বলে উঠলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে এদের শাসনকর্তা বানিয়েছেন। সুতরাং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আব্বাজান! আমার উপর অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আল্লাহর বিশেষ রহমত আর সাহায্য ব্যতীত আমার পক্ষে তা আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়। (সিফাতুস সাফওয়াহ, ১১৫৮)

১৩৬
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দাদীর মিরাস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন
একজন দাদী আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট এসে তার মিরাসের দাবি উত্থাপন করলে তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাবে আপনার জন্য মিরাছের কোন অংশ নির্ধারিত নেই। তাছাড়া আমার জানা মতে, রাসূল (সাঃ) ও আপনার জন্য কোন অংশ ধার্য করেননি। অতঃপর তিনি উপস্থিত জনতাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মুগীরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দাড়িয়ে বলেন, আমি দেখতে পেয়েছি যে, রাসূল (সাঃ) তাকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন।

এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তোমার সাথে আর কেউ ছিল কি? তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সেই দাদীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার প্রদান করেন। (তাযকিরাতুল হুফফায লিয যাহাবী- ১/২০)

১৩৭
ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর মীরাসের দাবি নিয়ে আবু বকর সিদ্দীক এর নিকট আগমন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, ফাতেমা ও আব্বাস আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট এসে রাসূল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে তাদের মীরাসের দাবি উত্থাপন করেন। তখন তারা তাদের ফিদাক এবং তার খাইবার ভূমির অংশের দাবি পেশ করেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এদেরকে বললেন, আমি রসূল -কে বলতে শুনেছি যে, আমরা নবীগণের পরিত্যাজ্য সম্পদের উত্তরাধীকার কেউ হতে পারবে না। আমরা যা রেখে যাই, তা সদকার মাল হিসেবে গণ্য হবে। আর মুহাম্মাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করবে। (বুখারী- ৬৭২৬)

১৩৮
আবু বকর ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে সন্তুষ্ট করেন।
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে দেখতে গেলে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে বললেন, আবু বকর তোমার নিকট আগমনের অনুমতি চাচ্ছে। তখন ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বললেন, আপনি কি চান যে, আমি তাকে অনুমতি প্রদান করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সুতরাং ফাতেমা ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে অনুমতি দেন। ফলে তিনি তাঁর কাছে গমন করে বিভিন্নভাবে সন্তুষ্ট করাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ফাতেমা সন্তুষ্ট হয়ে যান। (আবাত্ত্বীলু ইয়াজীবু আন তামহীয়া মিনাত তারীখ, পৃঃ ১০৯)

১৩৯
আবু বকর ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর জানাযায় ইমামতি করেন
একাদশ হিজরীর রমযান মাসের তিন তারিখ মঙ্গলবার রাতে মাগরিব ও এশার সালাতের মাঝামাঝি সময়ে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবু বকর, উমর, উসমান, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আওফ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উপস্থিত হন। অতঃপর জানাযার সালাত পড়ার উদ্দেশ্যে লাশ রাখা হলে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আবু বকর! আপনি ইমামতি করুন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, হাসানের বাবা! আপনি তো উপস্থিত আছেনই? এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু পুনরায় বললেন, হ্যা! তবুও আপনাকেই সামনে অগ্রসর হতে হবে। আপনি ছাড়া ফাতেমার নামাযের যানাযার ইমামতি করা সমীচীন হবে না। সুতরাং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকেই ইমামতি করতে হয়। নামায শেষে রাতেই তাকে দাফন করা হয়। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ২১১)

১৪০
রাসূল তাকে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়েছেন আর তুমি বলছ তাকে বরখাস্ত করতে?
আনসারী সাহাবীগণ মুসলিম বাহিনীর সেনাপতির দায়িত্ব উসামার পরিবর্তে তার চেয়ে অধিক বয়সী কাউকে দেয়ার দাবি জানিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইবনে খাত্তাবের নিকট দূত প্রেরণ করেন এ মর্মে যে, তিনি যেন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। সুতরাং ওমর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু -এর কাছে উক্ত দাবি উত্থাপন করলেন। ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।

এমনকি ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দাড়ি ধরে বললেন, উমর! তোমার এত বড় স্পর্ধা? রাসূল তাকে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়েছেন, আর তুমি আমাকে বলছ তাকে বরখাস্ত করতে? অতঃপর হযরত ওমর আনসারদের নিকটে গেলে তারা বলল, উমর! তুমি কী করেছ? তখন ওমর বললেন, তোমরা উসামার নেতৃত্ব মেনে নাও। আর শোনোা! তোমাদের কারণে রাসূল (সাঃ) এর খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমার প্রতি রাগ করেছেন। (তারিখুত তাবারী- ৪৬১৪)

১৪১
উসামা বাহিনীকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বিশেষ অসিয়ত
তোমরা খিয়ানত করো না, গণীমতের মাল আত্মসাৎ করো না, গাদ্দারী করবে না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃতি করো না, ফলদায়ক বৃক্ষ কর্তন করো না, বকরী, গরু, উট খাদ্যের উদ্দেশ্য ব্যতীত সেগুলো অন্যায়ভাবে জবেহ করো না।

উপাসনারত ব্যক্তিদেরকে কোনরূপ উত্তোক্ত করো না। আর তোমরা অচিরেই এমন জাতির নিকট আগমন করবে যারা পাত্রে করে তোমাদের বিভিন্নি ধরনের খাদ্য পরিবেশন করবে। সুতরাং তোমরা সে খাদ্য ভক্ষণের সময় বিসমিল্লাহ বলবে। আর তোমরা এমন জাতির সাথে মুকাবেলা করবে যাদের মাথার মধ্যভাগ মুণ্ডন কর আর বাকি অংশ ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং তোমরা এদেরকে তরবারির আঘাতে পরাজিত করবে। আল্লাহর নাম নিয়ে এদেরকে কঠিনভাবে প্রতিহত করবে। (তারিখুত তাবারী- ৪৬১৪)

১৪২
আবু বকর উসামার বাহিনীকে বিদায় দেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু উসামার বাহিনীকে বিদায় দেয়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে সামনে অগ্রসর হন। তখন তাকে উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর খলিফা! আল্লাহর কসম, আপনি সওয়ারীতে আরোহন করবেন অন্যথায় আমি সওয়ারী থেকে নেমে যাব। একথা শুনে বললেন, আল্লাহর শপথ, তুমি নামিও না; আর আমি সওয়ারীতে আরোহনও করব না। আর জিহাদের পথে আমার পদদ্বয় ধুলায় ধুসরিত করলে আমার কোন ক্ষতি হবে না। (তারিখুত তাবারী)

১৪৩
মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
রাসূল (সাঃ) যখন ইন্তেকাল করলেন তখন আবু বকর মুসলিম জাহানের খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে আরবদের কেউ কেউ ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে ওমর ইবনে খাত্তাব আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বললে, কিভাবে আপনি মানুষের সাথে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা কালেমা বলবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে কালেমা পাঠ করবে সে আমার থেকে তার জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হকের বিষয়টি ভিন্ন।

আর এর হিসাব আল্লাহর কাছে সমর্পিত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, আল্লাহর শপথ! যে সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব। কেননা, যাকাত হলো মালের কর। আল্লাহর নামে কসম! যদি তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে যে যাকাত দিত তা থেকে একটি উটের রশি দিতে অস্বীকার করে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পুণর্বহাল করতে পারি। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললে, আল্লাহর কসম! এটা আর কিছুই নয়, বরং আমি লক্ষ্য করলাম যে, আল্লাহ তা'আলা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু- এর লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক নির্দেশ দিয়েছেন সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, তার সিদ্ধান্ত সঠিক। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)

১৪৪
আবু বকর সিদ্দীক -এর সাহসিকতা
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বলা হলো যে, আপনার উপর যে কঠিন বিপদ নেমে এসেছে তা যদি পাহাড়ের উপর অবতরণ করত তবে সে পাহাড়কে ভেঙ্গে চুরমার করে দিত। আর যদি সমুদ্রের উপর অবতীর্ণ হত তবে সে সমুদ্রের সমস্ত পানি শুকিয়ে যেত। তথাপি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি যে, আপনি বিন্দুমাত্রও দুর্বল হননি।

তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, সাওর পর্বতের গুহায় রাত যাপনের পর থেকে কখনো আমার অন্তরে ভয়-ভীতি প্রবেশ করেনি। কেননা, সেখানে নবী (সাঃ) আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে শান্তনা দেয়ার জন্য বলেছিলেন। হে আবু বকর! তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পূর্ণাঙ্গভাবে হেফাযতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ফলে এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ভীতসন্ত্রস্ত হননি। (আবু বকর সিদ্দীক আফযালুস সাহাবা, পৃঃ ৬৯)

১৪৫
তিনি কুরআন সংকলন করেন।
যায়েদ ইবনে সাবেত বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, বহুসংখ্যক কুরআনের হাফিয ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছে; আর আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের বহুলাংশ নষ্ট হয়ে যায় কি না। এ জন্য আমি মনে করছি, আপনি কুরআন সংকলন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করবেন।

আমি উমরকে বললাম, আমি কেমন করে এমন কাজ করি যা রাসূলুল্লাহ করেননি! ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তখন বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তো সর্বোত্তম কাজ! অতঃপর ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এ ব্যাপারে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ এ বিষয়ে আমার অন্তর খুলে দিলেন, যে বিষয়ে আল্লাহ উমারের অন্তর খুলে দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যা (কল্যাণ) দেখতে পেয়েছেন আমিও তা-ই দেখতে পেলাম। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ৩৪৩)

১৪৬
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যায়েদ ইবনে সাবেত -কে কুরআন সংকলনের দায়িত্ব দেন।
যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমাকে বললেন, “দেখ, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক, আমরা তোমাকে মিথ্যারোপ করি না (সত্য বলেই বিশ্বাস করি)। কেননা তুমি রাসূলুল্লাহ এর ওহী লেখে থাকতে। সুতরাং এ মহৎ কাজের আঞ্জাম তোমাকেই দিতে হবে। তুমি কুরআন যোগাড় করে নাও এবং তা সংকলিত ও সন্নিবেশিত কর। ---- আল্লাহর কসম! একটি পাহাড় স্থানান্তর করতে যদি আমাকে বাধ্য করা হতো, সেটা আমার নিকট এ কুরআন সংগ্রহের নির্দেশের তুলনায় অতি সহজ ও হালকা বলে মনে হতো। (বুখারী- ৪৯৮৬)

১৪৭
কোনো বাহিনী পরাজিত হবে না যাদের মধ্যে এমন সেনাপতি থাকবে
ইরাকে অভিযান চালানোর জন্য খালেদ ইবনে ওয়ালিদ খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছ থেকে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কাকা বিন আমর আত-তাইমীকে পাঠিয়ে সাহায্য করেন। তখন তাকে বলা হলো যে, আপনি কি এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছেন, যাকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছেন কোন এক ব্যক্তির খারাপ আচরণের জন্য। তখন কাকা বললেন, এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা, খালেদের মতো ব্যক্তিত্ব যে বাহিনীর মধ্যে থাকবে সে বাহিনী কখনো পরাজিত হতে পারে না। (তারিখৃত তাবারী- ৪/১৬৩)

১৪৮
আবু বকর সিদ্দীক জনগণকে তার বাইয়াত থেকে মুক্ত করে দেন
হিজরীর জমাদিউল উখরায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি তার অসুস্থতা কঠিন আকার ধারণ করে। প্রতি নিয়ত তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। তাই তিনি চাইলেন যে, জনগণকে তাঁর নিকট একত্রিত করতে। ফলে সবাই তাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি তা তোমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছ। আমার মনে হয় আমি বেশি দিন বাঁচব না।

সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমার বাইয়াত থেকে তোমাদের মুক্ত করে দিয়েছেন। আমার দায়বদ্ধতা থেকে তোমরা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গেছ। এমনকি তোমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই তোমাদের পছন্দের ব্যক্তিকে তোমাদের জন্য আমীর হিসেবে নিযুক্ত করে নাও। কেননা, আমি আশা করি যে, আমার জীবদ্দশায় তোমার আমীর নিযুক্ত করলে তোমরা পরস্পর মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়বে না। (তরিকুল ইসলামী-৯/২৫৮)

১৪৯
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবদুর রহমান বিন আওফ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর সাথে পরামর্শ করেন।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবদুর রহমান বিন আওফ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে ডেকে বললেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতো দেখি। তখন তিনি বললেন, তার ব্যাপারে আমার চেয়ে আপনিই ভালো জানেন। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তারপরও তোমার অভিমত জানতে চাচ্ছি। ফলে আব্দুর রহমান বললেন, এ ব্যাপারে আপনার রায়ই হবে চূড়ান্ত এবং শ্রেয়।

১৫০
দারিদ্রতা ও স্বচ্ছলতা
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, তুমি কি লক্ষ্য করো নি যে, আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছলতার আয়াতকে দরিদ্রতার আয়াতের সাথে একত্রিত করে উল্লেখ করেছেন। যাতে করে মুমিন ব্যক্তি আশান্বিত হওয়ার পাশাপাশি ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। সুতরাং সে যেন আল্লাহর কাছে অন্যায়ভাবে কোন কিছু কামনা করে না বসে এবং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়। (আবু শায়েখ এটি বর্ণনা করেছেন)

১৫১
ওমর ইবনে খাত্তাবের জন্য ওয়াসীয়ত
হে উমর! তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে। জেনে রাখ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দিবসের কিছু আমল রয়েছে রাত্রে তিনি তা কবুল করবেন না। আর রাত্রের কিছু আমল রয়েছে যেগুলো দিবসে আদায় করলে তিনি তা কবুল করবেন না। ফরজ আমল আদায় করা ব্যতীত তিনি কোন নফল আমল কবুল করবেন না। দুনিয়াতে ভ্রান্ত মতাদর্শ অনুসরণের কারণে কিয়ামত দিবসে অনেক মানুষের মিযানের পাল্লা ভারী হওয়া সত্ত্বেও হালকা হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতীদের কথা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এদেরকে তুমি সৎ আমল করার উপদেশ দেবে।

পাশাপাশি মন্দ ও অসৎ কর্ম বর্জন করতে নির্দেশ দিবে। আর যখন তুমি এদেরকে উপদেশ দিবে তখন বলবে যে, নিশ্চয় আমার আশংকা হয় যে, না জানি আমি জান্নাতীদের থেকে দূরে সরে যাই। আর আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের কথাও আলোচনা করেছেন। সুতরাং তুমি এদেরকে মন্দ কর্মের ব্যাপারে সতর্ক করবে এবং উত্তম কাজে উৎসাহিত করবে। আর যখন তুমি এদেরকে উপদেশ দিবে তখন বলবে, আমি আশা করি যে, আমি জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করব না।

যেমন, একজন মুমিন বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা করে এবং তার গযবের ভয়ও করে। ফলে সে যেন আল্লাহর কাছে মিথ্যা কামনা-বাসনা করে না বসে এবং তার রহমত থেকে বঞ্চিত না হয়। তুমি যদি আমার ওসীয়তকে সংরক্ষণ কর তবে মরণের ভয় ও চিন্তা তোমার অন্তরে সবচেয়ে বেশি থাকবে যে সময়কে তুমি এগিয়ে নিতে পারবে না। কেননা, মরণ একদিন না একদিন তোমাকে পেয়েই বসবে। (সিফাতুস সাফওয়াহ-১/২৬৪)

১৫২
তোমার উপর রয়েছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দুই জন শহীদ
একদা নবী (সাঃ) উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করছিলেন। সাথে ছিলেন আবু বকর, ওমর ও উসমান। তখন পাহাড় কাঁপতে শুরু করল। ফলে রাসূল (সাঃ) এই পাহাড়কে পা দিয়ে আঘাত করলেন এবং বললেন, শান্ত হও হে উহুদ! তোমার উপর রয়েছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও ২জন শহীদ। (বুখারী-৩৬৮৬) এখানে সিদ্দীক হলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং দুজন শহীদ হলেন ওমর ও উসমান।

১৫৩
চির বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর অসুস্থতার সূচনা ঘটে এভাবে যে, তিনি গোসল করেন প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দিনে। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিণামে ১৫ দিন পর্যন্ত তিনি বাকরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। হঠাৎ তিনি নামাযে উপস্থিত হতে পারেননি। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে নামাযের আদেশ দিতেন। তবুও তিনি নামাযে উপস্থিত হতে পারতেন না।

তাকে দেখার জন্য সাহাবায়ে কেরাম দলে দলে আসতেন। তবে উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার অধিক কাছাকাছি থাকতেন। এরপর অসুস্থতা যখন বেশি বেড়ে গেল তখন সাহাবীরা বললেন, আমরা কি আপনার জন্য ডাক্তার নিয়ে আসব? তখন তিনি বললেন, ডাক্তার তো আমাকে দেখেছেন এবং বলেছেন, “আমি যা চাই তাই করি”। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আরো বলেন, শেষ সময় আবু বকর শুভেন্দু বললেন, খেলাফতের দায়িত্বে আসীন হওয়ার পরে আমার পূর্বের সম্পত্তি থেকে যা বৃদ্ধি পেয়েছে তা আমার পরবর্তী খলিফার নিকটে পৌঁছে দিও।

তখন আমরা হিসেব করে দেখলাম যে, যা কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে তা হলো তার কালো গোলাম যে তার শিশুকে কোলে নিত এবং একটি পাত্র যা দ্বারা তিনি বাগানে পানি দিতেন। সুতরাং আমরা এই দুটি পরবর্তী খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট পৌছিয়ে দিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছে মাল ফেরত দিলে তিনি কেঁদে উঠলেন এবং বললেন, আবু বকরের উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করুক। তিনি খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করে গেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আরো বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হলেন আমি তার নিকটে গেলাম। তখন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার উপক্রম ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি ভারাক্রান্ত মনে নিম্নের কবিতাটি আবৃত্তি করলাম যে,

“আপনার জীবনের কসম, যে দিন আপনি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, সেদিন কোন যুবককে তার প্রাচুর্যতা কোন ধরনের উপকার করতে পারবে না। এমনকি তার হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, তখন তিনি আমার দিকে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে বললেন, হে মুমিনদের মাতা! বিষয়টি এমন নয় বরং আল্লাহর কথাই সত্য। তিনি মহাগ্রন্থে উল্লেখ করেন

মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যি আসবেই; এটা সে জিনিস যা হতে তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ। (সূরা কাফ : আয়াত-১৯) এরপর তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমার পরিবারে তোমার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই। আর এ কারণেই আমি তোমাকে একটি বাগান দিয়ে ছিলাম। তবে আমার মনে এ ব্যাপারে কিছু সন্দেহ ও সংশয় রয়ে গেছে। সুতরাং তুমি এ সম্পদকে মীরাসের সাথে মিলিয়ে নিও। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন, তখনি আমি আমার বাগানকে মীরাসের সাথে সম্পৃক্ত করে দিলাম।

আমার পিতা আরো বলেন, যখন থেকে আমি মুসলমানদের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি, আমি তাদের কোন দিনার ও দিরহাম ভক্ষণ করিনি। কেবলমাত্র আমি তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সাধারণ খাবার খেতাম এবং সাধারণ পোশাক পরিধান করতাম। আর আমাদের নিকট এই হাবশী গোলাম, এই দুর্বল উট এবং এই জীর্ণশীর্ণ পোশাক ছাড়া মুসলমানদের কম বা বেশি আর কোন সম্পদ আমাদের কাছে নেই। যখন আমি মারা যাব তখন তুমি এগুলো নিয়ে উমরের কাছে যাবে এবং এগুলো থেকে দায় মুক্ত হবে।

পরে আমি তাই করলাম। অতঃপর বাহক যখন উমরের নিকট আসলেন, তখন তিনি কান্না করলেন। এমনকি তার চোখের পানি মাটিতে গিয়ে পড়ল। তখন তিনি বললেন, আবু বকরের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তার পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি, তার পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি, তার পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি। (তাবাকাতে ইবনে সায়াদ, ৩/১৪৬, ১৪৭)

১৫৪
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর গোসল ও দাফন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস তাকে গোসল দিয়েছিলেন। কেননা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে গোসল দেয়ার জন্য অসীয়ত করেছিলেন। রাসূল (সাঃ) এর পাশেই তাকে দাফন করা হয়

রাসূল (সাঃ) এর বগলের বরাবর তার মাথা রাখা হয়েছে। তার জানাযা পড়েন তার পরবর্তী খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তাকে কবরে নামান উমর, উসমান, তালহা এবং তার ছেলে আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কবরকে রাসূল (সাঃ) এর কবরের সাথে একেবারে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন