hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠন

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

১০৪
বউ শাশুড়ী সমস্যা ও তার সমাধান
এই আর্টিকলটি পড়ার আগে আমরা যেন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। কেউ কাউকে যেন ভুল না বুঝি। এখানে কাউকেই ছোট করা হচ্ছে না সেদিকেও যেন খেয়াল রাখি। এটা আমাদের নিজেদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে একপ্রকার আত্মসমালোচনা। আলহামদুলিল্লাহ অনেক পরিবারেই বউ শাশুড়ীর মধ্যে খুবই ভাল সুসম্পর্ক বিদ্যমান, তবে এই আর্টিকলটিতে শুধু নেগেটিভ দিক নিয়েই বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সমস্যা :

আমাদের সমাজে বউ শাশুড়ী সমস্যা শুরু হয়ে যায় মোটামুটি বিয়ের পর থেকেই। বিশেষ করে যারা যৌথ পরিবারে বসবাস করে থাকেন তাদের সমস্যাটি খুবই প্রকোট। যেমন শাশুড়ী বউকে পর মনে করে আর সহ্য করতে পারেন না আবার বউ শাশুড়ীকে পর মনে করে এবং এক সময় সহ্য করতে পারেন না। বিয়ের পর থেকে কিছু দিনের মধ্যেই কেমন যেন দুজন দুজনের শত্রু হয়ে যান। কোন কোন পরিবারে এই শত্রতা আরো প্রকট আকার ধারণ করার জন্য অথবা কমিয়ে আনার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের অন্য আর একজন ভুমিকা রাখেন, তিনি হচ্ছেন ননদ বা নোনাশ। হয় সে আগুন আরো দাউ দাউ করে জ্বলার জন্য তাতে কেরোসিন ঢেলে দেয় অথবা আগুন নিভানোর জন্য পানি ঢেলে দেন। এক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্যরা যেমন স্বামী, শুশুর, দেবর বা ভাশুর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপারগ হিসেবে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন। তার বিষয়টা বুঝেন কিন্তু সঠিক সমাধান কীভাবে হবে তার কোন কুল কিনারা করে উঠতে পারেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে শয়তানের প্ররোচনায় পরে নিজেরাও এই গৃহ যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। আমাদের সমাজে বউ শাশুড়ীর চারিত্রিক ব্যবহারের কিছু নমুনা নিয়ে লক্ষ্য করি:

সমস্যার কিছু নমুনা

বিয়ের পর থেকে দু'জনের মধ্যে দিন দিন ব্যবহারের পরিবর্তন হতে থাকে, হাসি মুখ দেখাই যায় না।

একজন আরেকজনের দিকে ঠিক মতো তাকিয়ে দেখে না।

একজন আরেকজনের সাথে ভাল ব্যবহার করে না।

উভয়েই সব সময় মুখ গোমড়া করে রাখে।

একে অপরকে ঠিকমত সম্মান করে না।

একজন আরেকজনকে খুব বেশী পারিবারিকভাবে সময় দেয় না।

বাসায় ঢুকে একে অপরকে সালাম দেয় না।

বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার সময়ও একে অপরকে সালাম দেয় না।

একে অপরের সাথে প্রায়ই ঝাজি মেরে কথা বলে।

একে অপরকে সব সময় কেমন যেন দূর্ব্যবহারের ভয়ে ভয়ে থাকে।

সুযোগ পেলেই কথা দিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করে বসে।

একে অপরের সাথে সাধারণতঃ এক সাথে বসে খাবার খায় না।

রান্নার ব্যাপারে কোন প্রকার মন্তব্যই করা যায় না, করলে ক্ষেপে উঠে।

একজন অপরজনকে সাধারণতঃ গুরুত্ব দেয় না।

মনে হয় কোন কারণে মেজাজ সবসময় খিটমিটে থাকে।

দু'জন দুই দিকে বা দুই ঘরে একা একা সময় কাটায়, খুব কমই এক সাথে বসে সময় কাটায়।

কেউ কাউকে কাছে ডেকে নিয়ে বসে কথা-বার্তা বা গল্প করে না।

শাশুড়ীর সেবা যত্ন যা করা হয় তা up to the mark নয়।

সব সময় একে অপরের ভুল ধরার জন্য প্রস্তুত থাকে।

একে অপরকে সবসময় খোটা দিয়ে কথা বলে।

একজন আরেকজনের বদনাম পরিবারের অন্যান্যদের নিকট বা বাইরের লোকের কাছে করে থাকে।

মনে হয় একজন আরেকজনের পিছনে সবসময় লেগে থাকে।

এখন এই সমস্যার কারণগুলো কী? কেন সমস্যা তৈরী হচ্ছে? ব্যাপারটা এমন নয় যে দুজনের মধ্যে কোটি টাকার বনিবনা হচ্ছে না। আসলে সংসারের খুব সামান্য বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আর এভাবেই দিন দিন তা বাড়তে থাকে।

১. কেউ কাউকে ক্ষমার চোখে দেখে না।

২. দু’জনের মধ্যে মতের সেকরিফাইসের (ত্যাগের অভাব ঘটে।

৩. প্রতিশোধ নেয়ার মতো একটা প্রবণতা কাজ করে।

৪. প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন করে না অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় পায় না।

সমস্যার বিশ্লেষণ

বাস্তবে দেখা গেছে যে, নিজ ছেলে তার বউকে খুব ভালোবাসলে, তাকে কিছু উপহার দিলে শাশুড়ী মনে কষ্ট পান, হিংসায় জ্বলে পুড়ে যান। আবার একইভাবে ছেলে মাকে (শাশুড়ীকে) খুব ভালোবাসলে, কিছু উপহার দিলে বউ মনে কষ্ট পান এবং হিংসা করেন। শাশুড়ী মনে করে আমার ছেলে তার বউকে এতো সময় দেয় কেন? আবার বউ মনে করে আমার স্বামী তার মাকে এতো সময় দেয় কেন? ক্যানাডা-আমেরিকায় এমনও দেখা গেছে যে বউ-শাশুড়ীর বনিবনা না হওয়ায় ঝগড়া-ঝাটির জের হিসেবে ছেলেকে যেতে হয়েছে জেল হাজতে, খেতে হয়েছে পুলিশের পানিশমেন্ট। অনেক শাশুড়ী আবার নিজের জীবনের প্রতিশোধ নেন (অবশ্য এটা খুবই কম ক্ষেত্রে) কারণ তিনি যখন বউ ছিলেন তখন তার শাশুড়ীও তাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছিল, উঠতে বসতে তার ভুল ধরতো, তাকে খোটা দিত। তাই সেও এই সিনরিওগুলো ভুলতে পারেন না এবং সে এটাকে ট্রেডিশন হিসেবে তার ছেলের বউয়ের সাথেও একই আচরণ করে থাকেন।

শাশুড়ীর নিজের মেয়ে কোন ভুল করে ফেললে বা কোন অন্যায় করে ফেললে যে চোখে দেখেন বা যেভাবে অতি সহজে ক্ষমা করে দেন তা ছেলের বউয়ের ক্ষেত্রে পারেন না। এর কারণ হচ্ছে তিনি ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন না। তিনি সবসময় মনে করেন বউ অন্য বাড়ির মেয়ে এবং সবসময় পরপর ভাবেন, কিছুতেই আপন করে নিতে পারেন না। তিনি এভাবে ভাবেন না যে তার নিজের মেয়ে ও একদিন অন্য বাড়ির বউ হয়ে যাবে বা গেছে এবং সেখানে যদি তার মেয়ের শাশুড়ী তার মেয়ের সাথে একই আচরণ করেন তাহলে তার কেমন কষ্ট লাগবে! তাহলে আমি কেন আমার ছেলের বউয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি না। আবার অনেক শাশুড়ী নিজ ছেলের বউয়ের উপর বদ-দু’আ দিয়ে থাকেন। তিনি চিন্তা করেন না যে এ তো আমারই পেটে ধরা ছেলের বউ, আমি যদি তার ক্ষতির জন্য বদ-দুআ করি তাহলে তো আমার ছেলের পরিবারেরই ক্ষতি হবে, আমার নাতী-নাতনীরই ক্ষতি হবে।

একইভাবে ছেলের বউও অনেক ক্ষেত্রে শাশুড়ীর অনেক বিষয় সহজভাবে দেখেন না। সে চিন্তা করে না যে আমি এ যুগের একজন আধুনিক শিক্ষিতা মেয়ে কিন্তু আমার শাশুড়ীর বয়স হয়ে গেছে, তিনি আমার চেয়ে কম শিক্ষিতা, পুরোনো যুগের মানুষ, হয়তো অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না, ঠিক মতো বিচার-বিবেচনা করতে পারেন না। মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে শিশুর মতো হয়ে যান, শিশুদের মতোই ভুল করেন। এই সকল কারণে আমার চিন্তা-ভাবনা ধ্যান ধারণা এবং আমার শাশুড়ীর চিন্তা-ভাবনা ধ্যান-ধারণার মধ্যে একটা গ্যাপ থাকাই স্বাভাবিক। আরো একটু গভীরে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, আমিও একদিন আমার শাশুড়ীর মতো বৃদ্ধ হবো, বার্ধক্যজনিত সমস্যা আমার মধ্যেও তখন তৈরী হবে, আমিও হয়তো আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে ছেলের বউ ঘরে আনবো, তখন আমার ছেলের বউ আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে আমার কেমন কষ্ট লাগবে! আবার আমি যদি শাশুড়ীর জায়গায় আমার নিজ জন্মদাত্রী মায়ের কথা চিন্তা করি যে তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং তিনি আমার নিজ মায়ের মতোই। অথবা আমার ভাইয়ের বউ যদি আমার মায়ের সাথে এমন আচরণ করেন তাহলে আমার কেমন কষ্ট লাগবে! বৃদ্ধা মার বিষয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা এতো গুরুত্ব দিয়েছেন যে পবিত্র কুরআনে এবং সহীহ হাদীসে বহু জায়গায় এর উল্লেখ আছে, বিষয়টি খুবই করুণ।

“আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” (সূরা লুকমান : ১৪)

উপরের আয়াত দু'টি পড়লে একজন সন্তানের চোখে পানি এসে যায়। নিজ সন্তানের সামনে যদি তার বউ তার মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তার। জন্য কতটা কষ্টের ব্যাপার তা একমাত্র মহান আল্লাহই হয়তো বুঝতে পারেন।

স্বভাবগত সমস্যা :

১. দেখা গেছে কিছু কিছু মেয়ে প্রকৃতিগতভাবে খুব চুপচাপ, সবসময় নিরবতা পছন্দ করে, একা একা থাকতে পছন্দ করে, প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা-বার্তা বলে না, আগ বাড়িয়ে কখনো কোন কথা বলে না, অনেক কথার জবাবও পুরোপুরি দেয় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

২. আবার দেখা গেছে কিছু কিছু মেয়ে প্রকৃতিগতভাবে কর্কশ স্বরে কথা বলে, পরিবারের লোকদের সাথে যখন কথা বলে তখন মনে হয় সে খুব বিরক্ত। এতে অন্যেরা অতি সহজেই ভুল বুঝে।

৩. আবার দেখা গেছে কিছু কিছু মেয়ে প্রকৃতিগতভাবে ঝাঝি মেরে কথা বলে। যখন কোন কথার উত্তর দেয় বা কাউকে কিছু সংশোধন করতে যায় তখন মনে হয় সে এভাবে আদব ছাড়া কথা বলছে কেন। এতেও অন্যের ভুল বুঝে এবং অপর পক্ষের মনে খুবই আঘাত লাগে।

এই তিনটি স্বাভাব যার মধ্যে আছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সে নিজে এটা বুঝতে পারে না যে এধরণের আচরণের কারণে অন্যেরা মনে কষ্ট পাচ্ছে বা অন্যেরা তাকে ভুল বুঝছে। এটা তার জন্মগত স্বভাব, সে এভাবেই বড় হয়েছে, এভাবে দীর্ঘ ২০-২৫ বছর বাবা-মার বাড়িতে পার করে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে। কিন্তু তার শাশুড়ীতো আর তার স্বভাব সম্পর্কে জানেন না। এটা বুঝে উঠতে উঠতেই শুরু হয়ে যায় সংসারে ভুল বুঝাবুঝি। শাশুড়ী মনে করেন বউ মুড মারে, আমাকে গুরুত্ব দেয় না, আমার সাথে বেআদবের মতো আচরণ করে আমাকে অবহেলা করে বা আমাকে অপছন্দ করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে দুই পক্ষের। মধ্যে দিন দিন একটা বড় ধরণের communication gap সৃষ্টি হতে থাকে আর তা সংসারে অশান্তির জন্য বড় ধরণের ক্ষতির দিকে মোর নিতে থাকে।

নিজেদের সংসারে সুখের জন্য এই ক্ষেত্রে বউয়ের একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। একটু খেয়াল করলেই নিজের প্রকৃত ভুলগুলো ধরা সম্ভব। তাকে এই বিষয়ে আরো স্মার্ট হওয়া উচিত। নিজেদের কল্যাণের জন্যই অবস্থা বুঝে স্বভাব পরিবর্তন করা উচিত। হ্যাঁ স্বভাব পরিবর্তন এতোটা সহজ নয়। কিন্তু জীবনতো নিজের, সংসারও তো নিজের তাই কষ্ট হলেও তা পরিবর্তনের চেষ্টা করা উচিত। কুরআনের ভাষায়’হিকমত’ অবলম্বন করা উচিত। শাশুড়ীর সাথে প্রয়োজনে অভিনয় করা যেতে পারে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থেকে দূরে থাকার জন্যে। এভাবে অভিনয় করতে করতে হয়তো একদিন নিজের স্বভাবও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। শাশুড়ী যেন মনে করেন আমার বউমার মতো মেয়েই হয় না, সে হচ্ছে এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সফল বউ। আবার বিপরীত যদি চিন্তা করি তাহলে শাশুড়ী যদি এমন কোন প্রাকৃতিক স্বভাব চরিত্রের মধ্যে থাকে তাহলে একই উপায়ে তার সমাধানের জন্য চেষ্টা করা উচিত।

তবে বাস্তবে দেখা গেছে যে, শাশুড়ী যদি জোয়ান হন তাহলে কাজটি যতটা সহজ কিন্তু মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে আর খুব সহজে দীর্ঘ দিনের স্বভাব পরিবর্তন করতে পারেন না, আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এর উপর বৃদ্ধ হওয়ার কারণে আরো কিছু নতুন নতুন স্বভাব তার সাথে যোগ হয়, সেটাও আল্লাহর বিধান। তাই আমাদেরকেই সহশীলতা আরো বাড়াতে হবে। তাদেরকে ক্ষমার চোখে দেখতে হবে। তাদের দুআ কুড়াতে হবে। তাদের মন জয় করে চলতে হবে। তাদের মনে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন