hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১০২
তুর্কী জাতির স্থবিরতা ও পশ্চাদপদতা
সবচে' বড় যে রোগটি তুর্কীদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তা হল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে জড়তা ও স্থবিরতা এবং সমরশাস্ত্র, সামরিক সংগঠন ও উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে তারা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল কুরআন মজীদের আয়াতঃ

( وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّة وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَیۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ وَءَاخَرِینَ مِن دُونِهِمۡ لَا تَعۡلَمُونَهُمُ ٱللَّهُ یَعۡلَمُهُمۡۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِن شَیۡء فِی سَبِیلِ ٱللَّهِ یُوَفَّ إِلَیۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ )

[Surah Al-Anfal 60]

“তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে; এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এ ছাড়া অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন।” (সূরা আনফালঃ ৬০)

এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের এই বাণীও যেন তাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। (আরবি) “প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদঃ যেখানে তা পাবে সেই হবে তার সর্বাধিক হকদার।"১ এমতাবস্থায় যখন তারা য়ুরোপের প্রতিদ্বন্দী রাষ্ট্রসমূহ ও জাতি-গোষ্ঠীগুলোর মাঝে ঘেরাও অবস্থায় ছিল তখন তাদের মিসর বিজয়ী হযরত আমর ইবনুল-আস (রা)-এর সেই উপদেশ সব সময় স্মরণ রাখা দরকার ছিল যা তিনি মিসরের মুসলমানদের দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা কখনো এ কথা ভুলবে না, তোমরা কিয়ামত অবধি বিপদের মুখোমুখী অবস্থায় রয়েছে এবং এক গুরুত্বপূর্ণ পথের প্রান্তদেশের ওপর দাঁড়িয়ে আছ। এজন্য তোমাদেরকে সব সময় হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সদাসতর্ক থাকতে হবে, সশস্ত্র অবস্থায় থাকতে হবে। কেননা তোমাদের চতুর্দিকে শত্রু। তাদের শ্যেন দৃষ্টি রয়েছে তোমাদের ওপর, তোমাদের দেশের ওপর।"

[ ১. তিরমিযী-ইলমঃ হাদীস ২৮২৭। ]

কিন্তু নিতান্তই আফসোসের বিষয়, তুর্কীরা নিশ্চিন্তে বসে রইল। স্বস্থানে নিশ্চেষ্ট গয়ে আসন গেড়ে রইল। অপর দিকে য়ুরোপীয় জাতিগোষ্ঠী কোথা থেকে কোথায় গিয়ে পৌঁছল।

প্রখ্যাত তুর্কী মনীষী খালেদা এদীব খানম তুর্কীদের এই জ্ঞান ও শিক্ষারাজ্যের স্থবিরতা সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বিবৃত করেছেন। তিনি বলেনঃ

“পৃথিবীর ওপর যতদিন মুতাকাল্লিম (কালামশাস্ত্রবিদ)-দের দর্শনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ছিল তুরস্কের জ্ঞানী-গুণী ও উলামায়ে কিরাম নিজেদের কাজ নেহায়েত সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিতে থাকেন। সুলায়মানিয়া মাদরাসা ও সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ মাদরাসা সে সময় প্রচলিত সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিষয় শাস্ত্রের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু পাশ্চাত্য জগত কালাম শাস্ত্রের শেকল ভেঙে নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করল যা দুনিয়ার জীবনে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল তখন আলিম-উলামা সম্প্রদায় শিক্ষকতার দায়িত্বপালনের আর যোগ্য রইলো না। তারা মনে করতেন যে, এয়োদশ শতাব্দীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান যেই অবস্থানে ছিল সেখান থেকে তা আর এক-কদমও সামনে অগ্রসর হয়নি। এ ধরনের ধারণা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জেঁকে বসে থাকে। তুরস্ক এবং অপরাপর মুসলিম দেশগুলোর আলিম-উলামার এ ধরনের ধ্যান-ধারণা ইসলামী প্রেরণার সঙ্গে কোনরূপ সম্বন্ধ রাখে না। কালাম শাস্ত্রীয় দর্শন কিংবা ইলমে কালাম চাই তা খ্রিস্টানদের হোক অথবা মুসলমানদের- গ্রীক দর্শনের ওপর স্থাপিত। এর ওপর কমবেশি এরিস্টোটলের চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারণা প্রভাব জাকিয়ে আছে। এরিস্টোটলের এই দর্শন ছিল পৌঁত্তলিক দর্শন। এখানে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে খ্রিস্টান পণ্ডিত ও মুসলিম আলিম-উলামার চিন্তাধারা ও পদ্ধতির পারস্পরিক তুলনার প্রয়োজন অনুভব করছি।

“কুরআনুল করীমে প্রাকৃতিক জগত সৃষ্টি সম্পর্কে কোথাও বিস্তারিতভাবে আলোচনা নেই। এর শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নৈতিক ও সামাজিক জীবনের ওপর। এর বিশেষ লক্ষ্য হল ভাল-মন্দ এবং কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে প্রভেদ তুলে ধরা। কুরআনুল করীম পৃথিবীর মানুষদের জন্য একটি কর্ম বিধান একটি জীবন-বিধান নিয়ে এসেছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবন ও আধ্যাত্মিক বিষয়াদি সম্পর্কে যা কিছু এতে বলা হয়েছে সেখানেও কোন প্রকার জটিলতা কিংবা ঘোরপ্যাচ নেই। এর বুনিয়াদী শিক্ষা হলো তৌহীদের শিক্ষা, একত্ববাদের শিক্ষা। আর এজন্যই ইসলাম অত্যন্ত সহজ সরল ধর্ম এবং ইসলামে অপর ধর্মের তুলনায় প্রকৃতিগত সম্পর্কে নতুন চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার অনেক বেশি অবকাশ ছিল। কিন্তু অনাড়ম্বর, সহজ সারল্য ও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি যা নতুন জ্ঞানগত গবেষণার জন্য এতটা অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের মধ্যে বেশি দিন থাকতে পারে নি। নবম শতাব্দীর আলিম-উলামা ও কালামশাস্ত্রবিদগণ কেবল ফিকহ শাস্ত্রকেই নয় বরং ঐশী দর্শন তথা ধর্মতত্ত্বকেও মূলনীতি ও আইনের শেকলে বেঁধে ফেলে। ফলে গবেষণা ও ইজতিহাদের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ঠিক সে সময় মুসলিম দর্শনের মধ্যে এরিস্টোটলীয় দর্শন ও ধ্যান-ধারণা অনুপ্রবিষ্ট হয়।

“এর বিপরীতে খ্রিস্ট ধর্মে যাকে ঈসা মসীহ (আ)র ধর্ম না বলে সেন্ট পলের ধর্ম বলাই অধিকতর সঙ্গত- পৃথিবী সৃষ্টির ভেতর প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা বর্তমান। খ্রিস্টানরা একে আল্লাহর বাণী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল। এজন্য তাদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তাত যে, এই বিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখ্যার সত্যতা তারা প্রমাণ করবে। এই মনগড়া ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ লব্ধ সত্য তাদের ব্যাখ্যা সমর্থন করত না। এ জন্যই তাদেরকে প্রমাণপঞ্জীর সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। দার্শনিক এরিস্টোটলের দ্বারস্থ তাদেরকে এ জন্যই হতে হয় যে, তাদের যুক্তি ইন্দ্রজালের বেশি কিছু ছিল না।

“পাশ্চাত্য জগত যখন প্রকৃতির অধ্যয়ন পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে করতে শুরু করল তখন গির্জার পোপ-পাদরীদের হুশ-জ্ঞান লোপ পাবার দশা। এদিকে নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রক্রিয়ার সাদৃশ্য বড় বড় আবিষ্কার-উদ্ভাবন হতে লাগল আর ওদিকে খ্রিস্টান পণ্ডিতদের মনে ভীতির সৃষ্টি হলো যে, এবার গির্জার রাজত্ব শেষ হবার পালা।

অনন্তর পাশ্চাত্য জগতে এমন এক যুগের সূচনা হলো যে যুগে বড় বড় বিজ্ঞানী যারা প্রকৃতি জগতের গণ্ডীর মধ্যে থেকে গবেষণায় মগ্ন ছিলেন- হত্যা করা হতো।

ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টান গির্জাকেই আপোষকামিতার আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। গির্জা তার স্কুল ও ধর্মীয় পাঠশালা গুলোর সিলেবাসে বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যা আগে একেবারেই ইসলামী মাদরাসাগুলোর মতই ছিল বিজ্ঞান ও আধুনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার কেন্দ্রে পরিণত হয়। কিন্তু এরই সাথে সাথে সে ইন্দ্রিয়াতীত দর্শনকেও পরিত্যাগ করেনি। ফল হলো এই যে, গির্জার প্রভাব শিক্ষিত শ্রেণীর ওপর মনতম পক্ষে একটি অংশের ওপর বহাল থাকে। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট পাদরীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই নতুন শাখাগুলোতে পারদর্শী হতেন এবং নতুন যুগের যুবকদের সঙ্গে যে কোন বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন।

“উছমানীদের এখানে আলিম-উলামার অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। তারা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষা লাভের প্রতি আদৌ দৃকপাত করে নি বরং নতুন চিন্তাধারা ও ধ্যানধারণা তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি। যতদিন পর্যন্ত মুসলিম মিল্লাতের শিক্ষার চাবিকাঠি তাদের হাতে ছিল ততদিন সাধ্য কিয়ে নতুন কোন কিছু এর কাছে ঘেষে। ফল দাঁড়াল এই যে, তাদের জ্ঞানের ওপর স্থবিরতা ও জড়তা জেঁকে বসে। এদিকে পতন যুগে তাদের রাজনৈতিক ব্যস্ততা এতটা বৃদ্ধি পায় যে, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার ঝামেলায় জড়াবার মত তাদের ফুরসত ছিল না। সোজা প্রেসক্রিপশন ছিল এই যে, এরিস্টোটলের দর্শনের ওপর আসল গেড়ে বস এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বুনিয়াদ দলীল-প্রমাণের ওপর থাকতে দাও। অনন্তর ইসলামী মাদরাসাগুলোর উনবিংশ শতাব্দীতেও সেই রঙই টিকে থাকে যা ছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে।”

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন