hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

৭৭
মুসলমানদের নেতাসুলভ বৈশিষ্ট্যাবলী
মুসলমানরা কর্মক্ষেত্রে অবতরণ করল। দুনিয়ার নেতৃত্বের বাগডোর তারা নিটেজদের হাতে তুলে নিল এবং নেতৃত্বের আসনে জেঁকে বসা অসুস্থ ও পীড়িত জাতিগোষ্ঠীকে অপসারণ করল যেই নেতৃত্ব তারা কখনোই সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। মুসলমানরা পৃথিবীর মানুষদেরকে নিজেদের সাথে নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক গতিতে সহীহ মনযিলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল। তাদের মধ্যে সেই সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল যা ঐসব জাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্বের মহান পদমর্যাদার যোগ্য পাত্র বলে প্রমাণ করত এবং তাদের তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে তাবৎ জাতিগোষ্ঠীর কল্যাণ ও সৌভাগ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করত। তাদের সে বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল এরূপঃ

১. তাঁদের কাছে ছিল আসমানী কিতাব ও খোদায়ী শরীয়ত। এজন্য তাঁদের অনুমাননির্ভর হবার কিংবা নিজেদের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়নের যেমন দরকার ছিল না, তেমনি তারা মূর্খতা ও অজ্ঞতা, প্রতিদিনের আইনগত পরিবর্তন-পরিবর্ধন সংস্কার এবং মারাত্মক রকমের ভ্রান্তি ও অনাচার থেকে মুক্ত ও নিরাপদ ছিল। নিজেদের রাজনীতি ও পারস্পরিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে দিকভ্রান্তভাবে চলা ও। অন্ধকারে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতেও তারা বাধ্য ছিল না। তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহী ছিল, ছিল খোদায়ী শরীয়তের প্রদীপ্ত রৌশনী যার ওপর নির্ভর করে তারা পথ চলত এবং যার সাহায্যে জীবনের সমস্ত রাস্তা ও তার বাকসমূহ তাঁদের জন্য আলোকিত ছিল। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই আলোতে গিয়ে পড়ত এবং মনযিলে মকসূদ তাঁদের পরিষ্কার দৃষ্টিগোচর হতো।

( أَوَمَن كَانَ مَیۡت ا فَأَحۡیَیۡنَـٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُور ا یَمۡشِی بِهِۦ فِی ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِی ٱلظُّلُمَـٰتِ لَیۡسَ بِخَارِج مِّنۡهَاۚ كَذَ  ٰ⁠ لِكَ زُیِّنَ لِلۡكَـٰفِرِینَ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ )

[Surah Al-An'am 122]

“যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলবার জন্য আলোক দিয়েছি সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেখান থেকে বের হবার নয়?” (সূরা আনআমঃ ১২২)

তাঁদের কাছে খোদায়ী কানূন ছিল যে অনুসারে তারা লোকের মধ্যে ফয়সালা করত। তাঁদেরকে হক ও ইনসাফের তথা সত্য ও ন্যায়ের পতাকাবাহী বানানো হয়েছিল এবং তাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর উস্কানি ও উত্তেজনা এবং শত্রুতা ও অপ্রসন্ন অবস্থায়ও ইনসাফ ও সততার আঁচল হাতছাড়া করতে ও প্রবৃত্তির চাহিদা মাফিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّ  ٰ⁠ مِینَ لِلَّهِ شُهَدَاۤءَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا یَجۡرِمَنَّكُمۡ شَنَـَٔانُ قَوۡمٍ عَلَىٰۤ أَلَّا تَعۡدِلُوا۟ۚ ٱعۡدِلُوا۟ هُوَ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِیرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ )

[Surah Al-Ma'idah 8]

“হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্য দানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত। না করে; সুবিচার করবে। এটাই তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।”(সূরা মায়িদাঃ ৮)

২. তাঁরা হুকুমত ও নেতৃত্বের পদে সুদৃঢ় নৈতিক ও চারিত্রিকি প্রশিক্ষণ এবং পূর্ণাঙ্গ আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের পর সমাসীন হয়েছিলেন। তাঁরা দুনিয়ার সাধারণ শাসক জাতিগোষ্ঠী ও ক্ষমতাসীন লোেকদের ন্যায় নিজেদের সব রকমের নৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ নিচ থেকে ওপরের দিকে লাফ দেয়নি, বরং দীর্ঘকাল যাবত আসমানী প্রত্যাদেশ (ওহী-এ-ইলাহী) তাঁদের সংস্কার-সংশোধন ও

প্রশিক্ষণ দান করেছিল এবং বছরের পর বছর ধরে তারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর। পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান ও শিক্ষাধীনে ছিল। তিনি তাঁদের তাযকিয়া তথা আত্মিক পরিশুদ্ধি করতে থাকেন এবং তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ দান করেন। যুহূদ (পার্থিব ভোগ-বিলাসের প্রতি অনাসক্তি ও নির্লিপ্ততা) ও পরহেযগারীর সংযমী জীবনে তাঁদেরকে অভ্যস্ত করেন। সচ্চরিত্রতা, শালীনতা, আমানতদারী, অন্যের মুকাবিলায় নিজের স্বার্থ ত্যাগ, কুরবানী, আল্লাহর ভয় ইত্যাদিতে অভ্যস্ত বানান। হুকুমত ও পদের প্রতি লোভ বা মোহ তাঁদের দি থেকে বের করে দেন। স্বয়ং তাঁর ইরশাদ ছিল, আল্লাহর কসম! আমি কোন পদ এমন কোন লোককে সমর্পণ করব না যে এর প্রার্থী কিংবা এর প্রতি আগ্রহী।১ ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ ও ফেতনা-ফাসাদের প্রতি আকাক্ষা থেকে তাদের দিল একেবারেই মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের কানে রাত-দিন কুরআন মজীদের এই আয়াত গুঞ্জরিত হতোঃ

( تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡـَٔاخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِینَ لَا یُرِیدُونَ عُلُوّ ا فِی ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فَسَاد اۚ وَٱلۡعَـٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِینَ )

[Surah Al-Qasas 83]

“এটা আখেরাতের সেই আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” (সূরা কাসাসঃ ৮৩)

[১. বুখারী ও মুসলিম। ]

এজন্যই তারা হুকুমতের পদসমূহের ওপর পতঙ্গের মত ঝাপিয়ে পড়ত না, বরং তাঁরা এসব গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করত এবং এর যিম্মাদারী তাদেরকে শংকিত করে তুলত। তাঁদের প্রত্যেকেই পিছু হটত এবং নিজেকে এই বোঝা বহনের অনুপযুক্ত মনে করত। নিজে যেচে পদপ্রার্থী হবে, এজন্য নিজের নাম পেশ করবে, নিজের মুখেই নিজের প্রশংসা গাইবে, নিজের সপক্ষে প্রচার-প্রোপাগাণ্ডায় নামবে, সে তো আরও অকল্পনীয়। এরপরও যখন তারা কোন যিম্মাদারী নিজের হাতে তুলে নিত তখন তাকে লুটের মাল ভাবত না এবং তা গ্রাস করার জন্য এগিয়ে যেত না, বরং একে নিজের যিম্মায় অর্পিত এক পবিত্র আমানত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ মনে করত এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর সামনে তাকে একদিন হাযির হতে হবে এবং দৃঢ়ভাবে। ছোট-বড় সব কিছুর জওয়াব দিতে হবে। তারা সব সময় চোখের সামনে রাখত;

( ۞ إِنَّ ٱللَّهَ یَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّوا۟ ٱلۡأَمَـٰنَـٰتِ إِلَىٰۤ أَهۡلِهَا وَإِذَا حَكَمۡتُم بَیۡنَ ٱلنَّاسِ أَن تَحۡكُمُوا۟ بِٱلۡعَدۡلِۚ إِنَّ ٱللَّهَ نِعِمَّا یَعِظُكُم بِهِۦۤۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ سَمِیعَۢا بَصِیر ࣰا)

[Surah An-Nisa' 58]

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ইনসাফের সাথে বিচার করবে।” (সূরা নিসাঃ ৫৮)

অধিকন্তু থাকত আল্লাহর এই বাণীঃ

( وَهُوَ ٱلَّذِی جَعَلَكُمۡ خَلَـٰۤىِٕفَ ٱلۡأَرۡضِ وَرَفَعَ بَعۡضَكُمۡ فَوۡقَ بَعۡض دَرَجَـٰت لِّیَبۡلُوَكُمۡ فِی مَاۤ ءَاتَىٰكُمۡۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِیعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُور رَّحِیمُۢ )

[Surah Al-An'am 165]

“তিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশে তোমাদের কতককে কতকের ওপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন। তোমার প্রতিপালক তো শাস্তি প্রদানে দ্রুত আর তিনি অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়াময়।” (সূরা আনআমঃ ১৬৫)

৩. তারা কোন জাতিগোষ্ঠীর সেবাদাস কিংবা কোন রাজবংশের ও দেশের প্রতিনিধি ছিল না যাদের সামনে কেবল তাদের সুখ-শান্তি, প্রাচুর্য, উন্নতি ও। সমৃদ্ধিই একমাত্র লক্ষ্য, যারা কেবল সেই জাতিগোষ্ঠীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে এবং অবশিষ্ট সমস্ত জাতিগোষ্ঠী শাসিত হবার জন্যই পয়দা করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। তারা আরব ভূখণ্ড থেকে এজন্য বের হয়নি, দুনিয়ার বুকে আরবশাহীর বুনিয়াদ স্থাপন করবে এবং তার ছায়ায় আরাম-আয়েশের জীবন কাটাবে আর এর সমর্থনে অন্যদের ওপর গর্ব ও অহংকার করবে। এজন্যও নয় যে, লোকদের রোমান ও পারসিকদের গোলামি থেকে বের করে আরবদের ও তাদের নিজেদের গোলামিতে নিয়োজিত করবে। তারা কেবল এজন্য বেরিয়েছিল যে, তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের মত সমস্ত মানুষের গোলামি থেকে মুক্ত করে কেবল লা-শারীক আল্লাহর গোলামি ও বন্দেগীতে স্থাপন করবে। মুসলিম দূত হযরত রিবঈ ইবন আমের (রা) পারস্য সম্রাট ইয়াযদাগিদের ভরা দরবারে এই সত্যেরই ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ

“আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এজন্যই পাঠিয়েছেন যাতে আমরা মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহ্র গোলামি ও বন্দেগীর দিকে, দুনিয়ার সংকীর্ণ কাল-কুঠরি থেকে মুক্তি দিয়ে তার প্রশস্ততা ও বিস্তৃতির দিকে এবং নানা ধর্মের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে নাজাত দিয়ে ইসলামের আদল ইনসাফে নিয়ে যাই।”১

[১. ইবনে কাছীরকৃত আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খ, ৭, পৃ. ৪০। ]

অনন্তর দুনিয়ার তাবৎ জাতিগোষ্ঠী তামাম মানব সম্প্রদায় তাঁদের দৃষ্টিতে একই মর্যাদাভুক্ত ছিল। যদি পার্থক্য থেকে থাকে তবে তা ছিল দীনদারীর পার্থক্য। রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর এই ইরশাদের ওপর তাদের পরিপূর্ণ আমল ছিলঃ।

الناس كلهم من ادم وادم من تراب لا فضل لعربي على عجمي ولا العجمي على عربي الا بالتقوى

“মানুষ মাত্রই আদমের বংশধর আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। কোন আরবের কোন অনারবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি কোন অনারবের কোন আরবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই একমাত্র তাকওয়া ছাড়া।”২

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَـٰكُم مِّن ذَكَر وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَـٰكُمۡ شُعُوب ا وَقَبَاۤىِٕلَ لِتَعَارَفُوۤا۟ۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِیمٌ خَبِیر ࣱ)

[Surah Al-Hujurat 13]

“হে লোকেরা! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মুত্তাকী।” (সূরা হুজুরাতঃ ১৩)।

মিসরের শাসনকর্তা হযরত আমর ইবনুল-আসের পুত্র একবার এক মিসরীয়কে বেত্রাঘাত করে এবং স্বীয় বাপ-দাদার নামে গর্ব করে। হযরত ওমর (রা) এই ঘটনা জানতে পেরে উক্ত মিসরীয়কে অভিযুক্ত থেকে বদলা নেবার নির্দেশ দেন এবং আমর ইবনুল-আসকে বলেনঃ তোমরা কবে থেকে লোকদের গোলাম বানিয়ে নিয়েছ, অথচ তাদের মায়েরা স্বাধীন অবস্থায় তাদের জন্ম দিয়েছিল?

ঐসব বিজেতা ও শাসক দীন-ধর্ম, ইলম তথা জ্ঞান ও সভ্যতা বিলাবার ক্ষেত্রে কখনো কার্পণ্য করেন নি কিংবা সংকীর্ণচিত্ততার পরিচয় দেন নি এবং রাষ্ট্রীয় কোন ব্যাপারে বা পারিতোষিক প্রদানের ক্ষেত্রে কখনো তারা দেশ-এলাকা-অঞ্চল ও বর্ণ-বংশের কথা বিবেচনা করেন নি। তারা ছিলেন দয়ামায়ার মেঘমালার মত যা ছিল সমগ্র জগত জুড়ে বিস্তৃত। তাঁদের স্নেহ-ভালবাসা ও অনুগ্রহ-আনুকূল্য সর্বসাধারণের জন্য ছিল উন্মুক্ত যা গোটা জগতকেই প্লাবিত করেছে। যমীনের সকল অংশই তাদের জন্য দোআ করেছে এবং সৃষ্টিজগত আপন আপন যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুসারে এর থেকে উপকৃত হয়েছে।

رهى اس محروم ابى نه خاكى

هرى هوگئ سارى كهيى خدا كى

এর থেকে জল ও স্থল কোনটাই বঞ্চিত থাকে নি,

‘আল্লাহর যমীনের সকল ক্ষেত-খামারই সবুজ শ্যামল হয়ে গেছে।'

[১.বিস্তারিত জানার জন্যে দ্র. ইবনুল জওহী কৃত তারীখে উমর ইবনুল খাত্তাব। ]

[২. হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) হুমূর আকরাম (ﷺ) -এর থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলা যেই হেদায়েত ও ইলুম সহকারে আমাকে প্রেরণ করেছেন তার দৃষ্টান্ত এমন যে, কোন ভূমি খণ্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হল। এর একটি অংশ নরম ও পরিষ্কার ছিল। সে পানি চুষে নিল। ফলে সেখানে বিরাট সবুজ ও তরতাজা ঘাস জন্মাল। কিছু অংশ ছিল কংকরময়, প্রস্তর সংকুল ও অনুর্বর। সে পানি ধরে রাখল এবং লোকে সেই সংরক্ষিত মজুদ পানি থেকে উপকৃত হল। নিজেরা সে পানি পান করল এবং অপরকেও পান করাল। এক অংশ ছিল একেবারেই সমতুল ময়দান। সে যেমন পানি ধরে রাখতে পারে না, তেমনি পানি শোষণও করতে পারে না যার ফলে সেখানে ঘাস-পাতা ও গাছপালা জন্মাবে। এ দৃষ্টান্ত তাদের যারা দীনের সমঝ লাভ করেছে এবং আল্লাহ আমাকে যে বস্তুসহ পাঠিয়েছেন তার দ্বারা তারা লাভবান হয়েছে। তারা নিজেরাও শিখেছে, শিখিয়েছে এবং শেষ উদাহরণ তার যে মাথা তুলে দেখেও নি যে আমি কি এনেছি এবং আল্লাহর সেই হেদায়েত কবুল করে নি যা দিয়ে আমাদের পাঠানো হয়েছে (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইলম)।]

ঐসব লোকের ছায়ায় ও শাসনাধীনে দুনিয়ার তামাম জাতিগোষ্ঠী, জাতি-ধর্ম, বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সভ্যতা-সংস্কৃতি বিনির্মাণে ও সরকারী প্রশাসনে নিজ নিজ পরিপূর্ণ অংশ গ্রহণে এবং আরবদের সঙ্গে পৃথিবীর পুনর্গঠনে শরীক হবার পূর্ণ। সুযোগ লাভ করে বরং তাদের অনেক লোক বহু বিষয়ে আরবদেরও অতিক্রম। করে যায়। তাদের মধ্যে এমন সব ফকীহ ও মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেন যারা স্বয়ং আরবদেরও মাথার তাজ ও মুসলমানদের গর্বের ধন। ইবনে খালদূনের ভাষায়। এ এক আশ্চর্য ঐতিহাসিক সত্য যে,মুসলিম মিল্লাতের ইম তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক-বাহকদের হাতে গোণা কয়েক জন ব্যতিরেকে অধিকাংশই অনারব। কী উলুমে শরঈয়ার ক্ষেত্রেই হোক, কী বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের ক্ষেত্রেই হোক, সর্বক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। যদি তাঁদের মধ্যে কেউ আরবীয় রক্তের হয়েও থাকেন, তবুও ভাষা, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষকগণ অনারব, যদিও তাদের ধর্ম আরবীয় এবং তাঁদের শরীয়ত নিয়ে যেই পয়গম্বর এসেছিলেন তিনিও আরবই ছিলেন।১ পরবর্তী শতাব্দীগুলোতেও ঐসব অনারব মুসলমানদের মধ্যে এমন সব নেতৃস্থানীয় শাসক, মন্ত্রী, জ্ঞানী-গুণী, মনীষী ও বুযুর্গ জন্মগ্রহণ করেন যারা ছিলেন পৃথিবীর সৌন্দর্য ও মানবতার নক্ষত্রসদৃশ এবং যারা ব্যক্তিত্ব, আত্মার উৎকর্ষ, যোগ্যতা, প্রতিভা ও সামর্থে, তদুপরি দীনদারী ও ইলমের ময়দানে ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। এঁদের সংখ্যা এত বিপুল ছিল যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই তাদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না।

[ ১. মুকাদ্দিমা ইবনে খলদূন, মিসর সং ৪৯৯৯ পৃ.।]

৪. মানুষ দেহ ও আত্মা, হৃদয় ও বুদ্ধিবৃত্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বিত রূপ। মানুষ প্রকৃত সৌভাগ্য ও কল্যাণ ততক্ষণ পর্যন্ত লাভ করতে পারে না এবং মানবতার ভারসাম্যময় উন্নতি ততক্ষণ পর্যন্ত হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের এই সমস্ত শক্তি পরীক্ষিতভাবে ক্রমোন্নত ও বিকশিত হবে। পৃথিবীতে সৎ ও সুস্থ সংস্কৃতি ততক্ষণ পর্যন্ত অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এমন এক ধর্মীয়, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও বস্তুগত পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে মানুষের জন্য খুব সহজে মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হবে এবং অভিজ্ঞতা এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এটা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না জীবনের দিক-নির্দেশনা ও সংস্কৃতির পরিচালনা ভার ঐ সমস্ত লোকের হাতে অর্পিত হবে যারা আধ্যাত্মিকতা ও বস্তুবাদের উভয়টির প্রবক্তা, ধর্মীয় আদর্শ ও নৈতিকতার পরিপূর্ণ নমুনা এবং, সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি ও বিশুদ্ধ জ্ঞান দ্বারা মণ্ডিত। তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও প্রশিক্ষণের মধ্যে যদি সামান্যতমও ফঁক-ফোকর কিংবা দাগ থাকে তবে তা তাদের প্রতিষ্ঠিত সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং বিভিন্নরূপে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। আর যদি এমন কোন দল বিজয়ী হয় যারা কেবলই বস্তুর পূজারী, বস্তুগত আনন্দ-উপভোগে বিশ্বাসী, যারা এই পার্থিব জীবন ব্যতিরেকে আর কোন জীবনে বিশ্বাস করে না এবং ইন্দ্রিয়াতীত কোন সত্যেও যাদের প্রত্যয় নেই, তবে তাদের মেযাজ-এর মূলনীতি ও প্রবণতার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির ওপর পড়া অনিবার্য। উক্ত সভ্যতা-সংস্কৃতির বিশেষ ছাঁচে সে নিজেকে ঢেলে সাজাবেই এবং এর ওপর তার ছাপ সর্বদা স্থায়ী থাকবেই। ফল হবে এই যে, মানবতার একাংশে প্রাচুর্য উপচে পড়বে আর অন্যদিকে বিশাল এক অংশ রিক্ত হয়ে পড়বেই। সভ্যতা-সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ইট, পাথর, কাগজ, কাপড়, লোহা ও সীসায়। যুদ্ধের ময়দান, কোর্ট-কাছারী, খেলাধুলা ও বিনোদন বিলাসিতার আসরগুলো হবে তাদের কেন্দ্র এবং এসব কেন্দ্রে তারা তাদের আসর জাকিয়ে বসবে এবং নরক গুলার করবে। হৃদয় ও আত্মা, মানুষের নৈতিক চরিত্র, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেন তাদের প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকবে। সেখানে তাদের ও পশুর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য থাকবে না। সভ্যতা-সংস্কৃতির অবস্থা হবে সেই দেহের ন্যায় যার ভেতর অস্বাভাবিক সুলত্ব থাকবে অর্থাৎ শরীর হবে ফোলা মাংসের স্কুপের ন্যায় যার দরুন তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যত সুন্দর ও স্বাস্থ্যবানই মনে হোক না কেন, ভেতরগত দিক দিয়ে তা হবে নানা রকম রোগ-ব্যাধির আখড়া এবং বিভিন্ন প্রকার কষ্ট ও যন্ত্রণার শিকার। তার হৃদয় হবে দুর্বল ও শোকার্ত এবং তার স্বাস্থ্য হবে ভারসাম্যহীন।

এর বিপরীতে যদি সেই দল বিজয়ী হয় যারা আদপেই বস্তুবাদকে স্বীকার করে না, এর প্রতি উদাসীন ও নির্বিকার, কেবল আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতি-পরবর্তী সত্যের প্রবক্তা, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ জীবনবিমুখ ও নেতিবাচক তাহলে সভ্যতা-সংস্কৃতি তার সতেজ ও মানুষ তার প্রকৃতিগত সাম্য হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যাবে। এরূপ নেতাদের প্রভাবে মানুষ প্রান্তরবাসী ও গুহাবাসী জীবন এখতিয়ার করবে। নাগরিক জীবনের ওপর গুহাবাসের জীবনকে, তার অবিবাহিত জীবনকে দাম্পত্য জীবন যাপনের ওপর প্রাধান্য দেবে। এমতাবস্তায় আত্মনিপীড়ন প্রশংসনীয় বিবেচিত হয় যাতে দেহ দুর্বল এবং আত্মা পবিত্র ও সবল হয়ে যায়। লোকে জীবনের ওপর মৃত্যুকে অগ্রাধিকার দেয় যাতে করে বস্তুবাদের কোলাহল থেকে বেরিয়ে রূহানিয়াত তথা আধ্যাত্মিকতার শান্ত সমাহিত অঞ্চলে পৌঁছে যায় এবং সেখানে পূর্ণতার শিখরে উপনীত হয়। এজন্য যে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস মতে এই বস্তুজগতে মানুষের পক্ষে পূর্ণতা লাভ করা সম্ভব নয়। এর স্বাভাবিক পরিণতি হয় এই যে, সভ্যতা-সংস্কৃতির ওপর মরণদশা চেপে বসে, শহর-বন্দর বিরান এলাকায় পরিণত হতে থাকে এবং জীবনের শৃঙ্খলা বিশৃঙ্খলা ও বিক্ষিপ্ততায় রূপ নেয়। কেননা এই মূলনীতি ও আকীদা-বিশ্বাস মানব প্রকৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেজন্য মানব-প্রকৃতি থেকে থেকেই এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে এবং এর প্রতিশোধে এমন পাশবিক বস্তুবাদী পন্থা গ্রহণ করে যার ভেতর রূহানিয়াত তথা আধ্যাত্মিকতা ও আখলাক-চরিত্রের সঙ্গে কোনরূপ উদারতা প্রদর্শন করা হয় না। ফলশ্রুতিতে মনুষ্যত্ব ও মানবতার জায়গায় পশুত্ব কিংবা বিকৃত মানবতার আবির্ভাব ঘটে। কখনো এমন হয় যে, এই সংসারবিরাগী দলের ওপর কোন শক্তিশালী বস্তুবাদী দল আক্রমণোদ্যত হয় এবং প্রথমোক্ত দল নিজেদের স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত দুর্বলতার কারণে এর মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে শেষাবধি আক্রমণোদ্যত দলের সামনে আত্মসমর্পণ করে বসে। অথবা। সংসারবিরাগী দল স্বয়ং নিজেরাই জাগতিক ও পার্থিব ব্যাপারগুলো সামলানোর মধ্যে ঝামেলা অনুভব করে বস্তুবাদ কিংবা বস্তুবাদী দলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং যাবতীয় রাজনৈতিক বিষয় তাদের নিকট সমর্পণ করে নিজেরা ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মীয় প্রথা-পর্ব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। ধর্ম ও রাজনীতির বিচ্ছিন্নতা মতবাদ জন্মলাভ করতে থাকে। ফলে রূহানিয়াত ও আখলাক-চরিত্র। দিন দিন প্রভাব শূন্য ও কর্মমুখর জীবন থেকে বিদায় নিতে থাকে, এমন কি মনুষ্য সমাজ এর নিয়ন্ত্রণ থেকে একেবারেই মুক্ত ও স্বাধীন হয়ে যায়। জীবন নির্ভেজাল বস্তুবাদী জীবনে পরিণত হয়ে যায় এবং ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা কেবল একটি ছায়াসর্বস্ব বস্তুতে পরিণত হয় কিংবা ভুল দর্শন হিসেবে অবশিষ্ট থেকে যায়। দুনিয়ার খুব কম সংখ্যক দলই (যারা মানব সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়েছে , দিয়েছে পথ-নির্দেশনা) এই দোষ থেকে মুক্ত ছিল। হয়তো তারা নিরেট বস্তুবাদী ছিল অথবা ছিল নির্ভেজাল সংসারবিরাগী। এজন্য মানব সভ্যতা তার অধিকাংশ সময় পাশবিক বস্তুবাদ ও সংসারবিরাগী- আধ্যাত্মিকতার মাঝে দ্যোদুল্যমান। থেকেছে এবং মানুষের জীবন-তরণী দুই চরম প্রান্তিকতার মাঝে ঘড়ির পেণ্ডুলামের মত দোল খেয়েছে। কখনো বস্তুবাদ হয়েছে বিজয়ী, আবার কখনো বিজয় লাভ করেছে আধ্যাত্মিকতা তথা রূহানিয়াত। মানবতার ভাগ্যে ভারসাম্য ও সামগ্রিকতা জুটেছে খুব কমই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন