hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১৪৪
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি
পেছনে বর্ণিত বিভিন্ন অবস্থা ও কার্যকারণের প্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে আগ্রহ ও ভালোর দিকে প্রবণতা কমে গেছে এবং নৈতিক চরিত্র ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সহীহ-শুদ্ধ নীতিমালা ও সূত্র গ্রন্থি তাদের হাত থেকে ছুটে গেছে। দায়িত্বহীন সাহিত্য হৃদয়-মানসে বক্রতা এবং খোদাদ্রোহী দর্শন স্বভাব ও প্রকৃতিতে বিকৃতি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, যেভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত বা ওলাওঠা মহামারী জাতীয় রোগে ভাল থেকে ভাল খাবারও রোগীর পেটে গিয়ে বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার-উদ্ভাবন ও উন্নতি-অগ্রগতি য়ুরোপে স্বয়ং য়ুরোপের লোকদের জন্যেই কেবল নয়, মানব সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মি, ইডেন ১৯৩৮ সালে প্রদত্ত তাঁর এক বক্তৃতায় কী চমৎকারই না বলেছিলেনঃ

“যতদিন না কিছু করা হচ্ছে, এই পৃথিবীর অধিবাসীরা এই শতাব্দীর শেষভাগে আদিম গুহাবাসী ও বন্য লোকদের জীবনধারায় ফিরে যাবে। কী আশ্চর্যের ব্যাপার, পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্র এমন একটি অস্ত্রের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে যার ভয়ে সবাই ভীত, কিন্তু তা আয়ত্তে আনতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেউ রাজী নয়! কোন কোন সময় আমি বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবি, যদি অন্য কোন গ্রহ থেকে কোন ভ্রমণকারী পর্যটক আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহে নেমে আসে তাহলে আমাদের পৃথিবী দেখে কি বলবে? সে দেখবে, আমরা সকলে মিলে আমাদেরই ধ্বংসের উপকরণ তৈরি করছি, এমন কি আমরা একে অপরকে তার ব্যবহার পদ্ধতিও বাৎলে দিচ্ছি।”

যে সময় মি, এন্থনী ইডেন একথা বলেছিলেন তখন তাঁর কল্পনায়ও হয়তো আসে নি যে, এই যুদ্ধ চলাকালেই ধর্মের নিয়ন্ত্রণমুক্ত সভ্য মানুষ যাদের নেতৃত্বে কর্তৃত্বে রয়েছে বিশ্বশান্তির প্রবক্তা সভ্যতার ধ্বজাধারী ও নতুন বিশ্বের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি ও শিল্পের ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তি ও শিল্পের ধ্বংসাত্মক বিজ্ঞান ও মানুষের জীবন হরণকারী ক্ষমতা এই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে যে, স্বয়ং বিজ্ঞানীও তা কল্পনা করতে সক্ষম হবে না।

কয়েক বছরের অবিরাম চেষ্টা-সাধনা ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকা পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারে সক্ষম হয় যার ওপর এই যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ভর করছিল এবং ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই তারিখে সাড়ে পাঁচটার সময় এর শক্তি ও সামর্থ্যের পরীক্ষা করা হয়।

মার্কিনীরা প্রথমে নিউমেক্সিকোর প্রান্তরে, তার পরে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকীর মানব সন্তানদের ওপর বর্ষণ করে এর কার্যকারিতার পরীক্ষা চালায়। পারমাণবিক বোমা নিক্ষিপ্ত হতেই হিরোশিমা শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জীবন্ত কোন প্রাণীই অবশিষ্ট ছিল না আর না ছিল নিষ্প্রাণ কোন কিছু। চোখের পলকে মানুষ, পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গ, দালানকোঠা একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তীব্র বিস্ফোরণের ফলে বাতাসের চাপ বৃদ্ধি পায়। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর নিচে চাপা পড়ে গোটা শহর। সে এক অবর্ণনীয় কেয়ামতসদৃশ দৃশ্য! উৎক্ষিপ্ত ধূলি-বালির ঝলসাননা কুণ্ডলীকৃত ও চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত মাইলের পর মাইল সুউচ্চ এক পাহাড় যেন আর এই পাহাড়ের নিচে জাহান্নামসদৃশ আগুনের কুণ্ডলী যা মুহূর্তে সব কিছুকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়। যেই বিমান থেকে এই বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেই বিমানের চালক বোম নিক্ষেপের পর পরই দ্রুত নিজের নিরাপত্তার জন্য সেখান থেকে পালিয়ে যায়; নইলে সেও বাঁচতে পারত না, ধ্বংস হয়ে যেত। বিস্ফোরণ এত ভয়ংকর ও তীব্র ছিল যে, বোমা নিক্ষেপকারীদেরও হুশ-জ্ঞান ছিল। ভয়-ভীতি ও আতংকে তাদের অবস্থা হয়েছিল এমন যে, সকলের মুখ থেকে তখন ‘ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী’ অর্থাৎ ‘হায় আল্লাহ! আমার কি হবে আওয়াজ বের হচ্ছিল। কিন্তু তারা যখন তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যায় তখন মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে আনন্দ ও খুশীর বন্যা বয়ে যায় এবং এসব দেশে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয় এবং বাহবা দেয়া হয়।১

[১. হিরোশিমার মিউনিসিপ্যালিটির সভাপতি ১৯৪৯ সালের ২০শে আগস্ট তারিখের ঘোষণায় বলেন যে, ৪৫ সালের ৬ই আগস্ট তারিখে যারা মারা গিয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ১০ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে। ]

স্টুয়ার্ট গিল্ডার (Stuart Guilder) তাঁর এক নিবন্ধে এটম তথা পারমাণবিক বোমার বিপজ্জনক ও ধ্বংসকারী ক্ষমতা সম্পর্কে অভিমত দিতে গিয়ে লিখছেনঃ

“যদিও সমগ্র ব্যাপারটির খুঁটিনাটি ও বিস্তারিত জানাশোনা ছিল না, কিন্তু মোটের ওপর পারমাণবিক বোমার উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানীরা এতটুকু অবশ্যই জানতেন, তারা যেই সমরাস্ত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তার পরবর্তী পরিণতি হবে, মানুষ ধ্বংস হবার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। এর পরবর্তী পরিণতি ও ফলাফল সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানতে হয় তাহলে হিরোশিমা শহরের সেসব বিপোর্ট যা বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টাররা লিখেছিলেন তা দেখতে হবে। রিপোের্টাররা তাদের Atomic plague তথা “পারমাণবিক বোমার মহামারী” শীর্ষক রিপোর্টে লিখেছেনঃ

“অনেক লোকই যারা বাহ্যত বোমা বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি কিংবা এর আগুনে ও তাপে মারা যায় নি বা অব্যাহতভাবে মরছে না বটে, তবে তাদের এই মৃত্যুর কারণ হল, তাদের রক্ত জীর্ণ ও মিশ্রিত হয়ে যায়। প্রথম প্রথম তাদের রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর পালা আসে লোহিত কণিকার। তাদের চুল ঝরে যায়। এরপর তারা যতদিন বাঁচে তাদের শরীরের হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। এরপর একদিন সে মারা যায়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে কিছুটা তেজস্ক্রিয়া থেকে যায় এবং মানুষের চামড়া তা টেনে নেয় কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সেগুলো ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছে।”

এই গ্ৰন্থ উদ্ধৃত করবার পর এই নিবন্ধকার স্টুয়ার্ট গিল্ডারই লিখছেনঃ

“এই খবর সমগ্র বিশ্বকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য যথেষ্ট। বিশ্ব আজও এই ভয়াবহ বোমা সম্পর্কে জানত না এবং বোমার তেজস্ক্রিয়াধারী ধাতব পদার্থ সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল ছিল না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা তিরিশ বছর আগে থেকেই জানত, এটা এমন এক অস্ত্র হবে যার প্রতিষেধক কোথাও নেই এবং এটা সমগ্র মানবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

“জানা গেছে, জাপানীরা এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য ঘরে তৈরী নেকাব ব্যবহার করে। সম্ভবত এগুলো সেই নেকাব যেগুলো জাপানের লোকেরা ভীষণ ঠাণ্ডা ও তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করত। কিন্তু এটা এতটাই অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে যতটা আবিসিনিয়ার সৈনিকদের সেই সব কাপড় ব্যর্থ ও নিষ্ফল প্রমাণিত হয়েছে যা তারা মুসোলিনীর বোমারু বিমান থেকে তাদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপের সময় তাদের নাকের চারপাশে জড়িয়ে নিত।

“পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের কাজে যে সব বৈমানিক শরীক ছিল তাদের বক্তব্য এই যে, বোমা নিক্ষেপের পর ধোয়া ও ধুলোর মেঘ ন'মাইল পর্যন্ত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। অধ্যাপক প্লেচ (Plesch)-এর অভিমত হলো, যে জায়গায় বোমা বিস্ফোরিত হয় তার আশেপাশে শত মাইল এলাকার লোকজনের বৈজ্ঞানিক পন্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার এবং তাদের শারীরিক ও দৈহিক অবস্থা খুব গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখা উচিত যে, তাদের ওপর এর কোনরকম আছর তো পড়ল না!

“এটা আদৌ অসম্ভব নয়, পৃথিবী একদিন সকালে উঠে পত্রিকার পাতায় এই খবর পড়বে, সে সব লোক যারা জাপান থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বাস করত তাদের ভেতর সেই সব আলামত ছড়িয়ে পড়েছে যা পারমাণবিক বোমার মহামারীতে দেখা যায়। যদি ছোট্ট একটি পারমাণবিক বোমা নয় মাইল পর্যন্ত বাতাসকে ধূলো ও ধুয়া দ্বারা দূষিত ও বিষাক্ত করে তুলতে পারে তাহলে এটা উপলব্ধি করা অত্যন্ত সঙ্গত হবে, এর থেকে বৃহদাকারের একটি বোমা এর চাইতে কয়েক গুণ বেশি বিস্তৃত জায়গা প্রভাবিত করবে।”১

[১. The Statesman, Septen her, 16, 1945. ]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন