hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১৪১
প্রযুক্তিগত আবিষ্কার-উদ্ভাবন ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
আমাদের মতে এসব তাত্ত্বিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার-উদ্ভাবনের সঠিক লক্ষ্য হলো, মানুষকে জীবনের স্বাভাবিক চলার পথে নিজের অজ্ঞতা ও দুর্বলতার কারণে যেসব বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সঠিক ও বিশুদ্ধ লক্ষ্যের আওতাধীনে (যার মধ্যে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা ও ফেতনা-ফাসাদ অন্তর্ভুক্ত নয়) আল্লাহর অপার কুদরতের সেই সব শক্তি ও সম্পদ থেকে উপকৃত ও লাভবান হওয়া যা এই বিশ্ব জগতে ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাচীনকালে মানুষ পায়ে হেঁটে চলত। এরপর তার উপলব্ধিতে ধরা পড়ল, সে জীব-জানোয়ার থেকে উপকৃত হবে। এ উদ্দেশে সে গরুর গাড়ি কাজে লাগাল। এরপর চলার ক্ষেত্রে তার গতিকে সে আরও দ্রুত করতে চাইল। সে বায়ুর গতিবেগসম্পন্ন ঘোড়ার সাহায্যে দিনের পথ ঘণ্টায়। অতিক্রম করল। মানব প্রকৃতিতে অল্পে তুষ্টি নেই, তৃপ্তি নেই। প্রতিযোগিতার আবেগ তাকে নির্দিষ্ট কোন মনযিলে থাকতে দেয় না। এছাড়া তার প্রয়োজনও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরাম ও দ্রুততার মানও উন্নত থেকে সমুন্নততর হয়ে চলেছে এবং ক্রমান্বয়ে এমন সব বাহনের উদ্ভব ঘটেছে যার ভেতর প্রতিটিই আগের তুলনায় অধিক দ্রুতগতিসম্পন্ন। সামুদ্রিক সফরে সে বায়ু চালিত পালের নৌকা থেকে স্টীম গ্যাসচালিত জাহাজ পর্যন্ত উন্নতি করেছে। স্থল ও আকাশ পথের পরিবহন যন্ত্রপাতি ও উপায়-উপকরণও এই পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে, আগেকার যুগের লোকদের তা স্বপ্নেরও অগোচর ছিল। যদি সঠিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে এ থেকে ফায়দা হাসিল করা হয়, অনাবশ্যক কষ্ট ও শ্রম, সময় ও শক্তির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার থেকে বেঁচে এগুলোকে আরও কোন উত্তম ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটা অবশ্যই আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে সফরের এই আরাম, সহজসাধ্যতা ও দ্রুততাকে পুরস্কার হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং একে মানুষের ওপর তার এমন এক অনুগ্রহ বলে অভিহিত করেছেন যে, সে এসব দ্বারা অর্থাৎ আল্লাহ্র অপরাপর সৃষ্টির মাধ্যমে সফর ও পরিবহনের বড় বড় কষ্টকর পরিশ্রমের হাত থেকে বেঁচে যায় এবং একে তার আরাম ও করুণার এক নিদর্শন ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি (আল্লাহ পাক) বলেনঃ

( وَٱلۡأَنۡعَـٰمَ خَلَقَهَاۖ لَكُمۡ فِیهَا دِفۡء وَمَنَـٰفِعُ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ ۝ وَلَكُمۡ فِیهَا جَمَالٌ حِینَ تُرِیحُونَ وَحِینَ تَسۡرَحُونَ ۝ وَتَحۡمِلُ أَثۡقَالَكُمۡ إِلَىٰ بَلَد لَّمۡ تَكُونُوا۟ بَـٰلِغِیهِ إِلَّا بِشِقِّ ٱلۡأَنفُسِۚ إِنَّ رَبَّكُمۡ لَرَءُوف رَّحِیم ۝ وَٱلۡخَیۡلَ وَٱلۡبِغَالَ وَٱلۡحَمِیرَ لِتَرۡكَبُوهَا وَزِینَة ۚ وَیَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ )

[Surah An-Nahl 5 - 8]

“তিনি আনআম (অর্থাৎ উট, গরু, মেষ, ছাগল, অন্যান্য অহিংস্র ও রোমন্থনকারী জন্তু, যথাঃ হরিণ, নীল গাঙ্গু, মহিষ ইত্যাদি) সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য ওতে শীতনিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং ওগুলো থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক এবং তোমরা যখন গোধূলি বেলায় ওদেরকে চারণভূমি থেকে ঘরে নিয়ে আস এবং ভোরবেলা যখন ওদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা সৌন্দর্য উপভোগ কর এবং ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে যেখানে প্রাণান্তকর কষ্ট-ক্লেশ ব্যতিরেকে তোমরা পৌঁছুতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই দয়ার্ল, পরম দয়ালু। তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর, গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও।” (সূরা নাহলঃ ৫-৮)

( ۞ وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِیۤ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَـٰهُمۡ فِی ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَـٰهُم مِّنَ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَفَضَّلۡنَـٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِیر مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِیل ࣰا)

[Surah Al-Isra' 70]

“আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে চলাচলের বাহন দিয়েছি; ওদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর ওদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” (বনী ইসরাঈল, ৭০)

( وَٱلَّذِی خَلَقَ ٱلۡأَزۡوَ  ٰ⁠ جَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلۡفُلۡكِ وَٱلۡأَنۡعَـٰمِ مَا تَرۡكَبُونَ ۝ لِتَسۡتَوُۥا۟ عَلَىٰ ظُهُورِهِۦ ثُمَّ تَذۡكُرُوا۟ نِعۡمَةَ رَبِّكُمۡ إِذَا ٱسۡتَوَیۡتُمۡ عَلَیۡهِ وَتَقُولُوا۟ سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِی سَخَّرَ لَنَا هَـٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِینَ ۝ وَإِنَّاۤ إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ )

[Surah Az-Zukhruf 12 - 14]

“যিনি যুগলসমূহের প্রতিটিকে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও আনআম যাতে তোমরা আরোহণ কর, যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা ওর ওপর স্থির হয়ে বস; এবং বল, পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।" (সূরা যুখরুফঃ ১২-১৪)

হযরত সুলায়মান (আ)-এর ওপর আপন অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেনঃ

( وَلِسُلَیۡمَـٰنَ ٱلرِّیحَ غُدُوُّهَا شَهۡر وَرَوَاحُهَا شَهۡر ۖ وَأَسَلۡنَا لَهُۥ عَیۡنَ ٱلۡقِطۡرِۖ وَمِنَ ٱلۡجِنِّ مَن یَعۡمَلُ بَیۡنَ یَدَیۡهِ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَمَن یَزِغۡ مِنۡهُمۡ عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِیرِ )

[Surah Saba' 12]

“আমি সুলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ অতিক্রম করত এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত।” (সূরা সাবা, ১২)

( فَسَخَّرۡنَا لَهُ ٱلرِّیحَ تَجۡرِی بِأَمۡرِهِۦ رُخَاۤءً حَیۡثُ أَصَابَ )

[Surah Sad 36]

“তখন আমি তার অধীন করে দিলাম বায়ুকে, যা তার আদেশে, সে যেখানে ইচ্ছা করত, সেখানে মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত হতো।” (সূরা সাদঃ ৩৬)

কিন্তু এই সব নেয়ামত ও আরামপ্রদ সুযোগ-সুবিধা থেকে ফায়দা হাসিলের জ্ঞাত ও আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞ লোকের মন-মানসিকতার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। একজন মু'মিন ও বিশ্বাসী বান্দাকে এর জন্য হেদায়েত দেওয়া হয়েছে এবং তার কাছে আশা করা হয়েছে, সে এসব নেয়ামত থেকে উপকৃত হবার সময় একথা সব সময় ও সদা সর্বদা মনে রাখবে, এ শুধুই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত পুরস্কার ও তাঁর দান। তিনি এই মুক্ত ও লাগামহীন পশুগুলোকে (অথবা অনুভূতিহীন ও চলচ্ছক্তিহীন লোহা ও কাষ্ঠ-খণ্ডকে) এভাবে তার অনুগত, অধীন ও হাতিয়ার বানিয়ে দিয়েছেন, সে তার হুকুমে ও ইচ্ছায় প্রবাহিত হয় যেখানে সে ইচ্ছা করে মৃদুমন্দ গতিতে। যদি তার প্রদত্ত জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশল ও শক্তি-সামর্থ্য তার সহগামী না হতো তাহলে এটা তার সাধ্যায়ত্ত ছিল না।

( لِتَسۡتَوُۥا۟ عَلَىٰ ظُهُورِهِۦ ثُمَّ تَذۡكُرُوا۟ نِعۡمَةَ رَبِّكُمۡ إِذَا ٱسۡتَوَیۡتُمۡ عَلَیۡهِ وَتَقُولُوا۟ سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِی سَخَّرَ لَنَا هَـٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِینَ )

[Surah Az-Zukhruf 13]

“যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা ওদের ওপর স্থির হয়ে বস এবং বল, পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে” (যুখরুফঃ ১৩) এবং ঠিক উপকার লাভের অবস্থায় একথা যেন চোখের সামনে থাকে, সেই শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বস্তুসামগ্রীর আসল স্রষ্টা ও এই বিশ্বজগতের মালিকের দরবারে সে হাজির হতে বাধ্য এবং তাকে একদিন এসবের হিসাব দিতে হবে, সে এসব নেয়ামত থেকে, আল্লাহ্র অনুগ্রহরাজি থেকে কি উপকার পেয়েছে, এগুলোকে সে কোথায় ব্যবহার করেছে, কাজে লাগিয়েছে এবং এসবের কী হক সে আদায় করেছে। অনন্তর আয়াতের শেষাংশে বলেছেনঃ (আরবি) “আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।” (যুখরুফঃ ১৪) একজন মু'মিন তথা বিশ্বাসী বান্দা এসব নেয়ামতকে শুধুই আলাহর অবদান, অনুগ্রহ ও পুরস্কার এবং কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার পরীক্ষা মনে করে। হযরত সুলায়মান (আ)-এর ভাষায়ঃ

( قَالَ ٱلَّذِی عِندَهُۥ عِلۡم مِّنَ ٱلۡكِتَـٰبِ أَنَا۠ ءَاتِیكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن یَرۡتَدَّ إِلَیۡكَ طَرۡفُكَۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسۡتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَـٰذَا مِن فَضۡلِ رَبِّی لِیَبۡلُوَنِیۤ ءَأَشۡكُرُ أَمۡ أَكۡفُرُۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا یَشۡكُرُ لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّی غَنِیّ كَرِیم ࣱ)

[Surah An-Naml 40]

“এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ, না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা করে নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।" (সূরা নামলঃ ৪০)

মু'মিন ও গায়র মু'মিন তথা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে একটি পার্থক্য এই, মু’মিন ঐসব হাতিয়ার ও শক্তিকে যথাস্থানে ব্যবহার করে এবং ঐসবের সাহায্যে আল্লাহর দীন ও সত্য-সুন্দর ব্যবস্থার সাহায্য-সহযোগিতার কাজ নেয় যা ঐসব বস্তুসামগ্রী সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ও আসল উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেনঃ

( لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِٱلۡبَیِّنَـٰتِ وَأَنزَلۡنَا مَعَهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡمِیزَانَ لِیَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَأَنزَلۡنَا ٱلۡحَدِیدَ فِیهِ بَأۡس شَدِید وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِیَعۡلَمَ ٱللَّهُ مَن یَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِٱلۡغَیۡبِۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِیٌّ عَزِیز ࣱ)

[Surah Al-Hadid 25]

“আমি লোহাও দিয়েছি যাতে রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ এজন্য যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দেবেন কে প্রত্যক্ষ না করেও তাঁকে ও তাঁর রসূলকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” (সূরা হাদীদঃ ২৫)

আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে যিনি জানেন এবং যিনি আল্লাহভীরু মানুষ, তিনি আল্লাহপ্রদত্ত শক্তি ও আনআমকে পাপীদের সহযোগী ও সাহায্যের উপকরণ বানান না। হযরত মূসা (আ) বলেনঃ

( قَالَ رَبِّ بِمَاۤ أَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ فَلَنۡ أَكُونَ ظَهِیر ا لِّلۡمُجۡرِمِینَ )

[Surah Al-Qasas 17]

“হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।” (সূরা কাসাসঃ ১৭)

অনন্তর সহীহ-শুদ্ধ দীন তাই যা আল্লাহ্র পরিচয়, জ্ঞান ও আল্লাহর ভয়ভীতি সৃষ্টি করে, যা গোটা সৃষ্টি জগতের আসল স্রষ্টা এবং বিশ্বজাহানের প্রকৃত শাসকের পরিচয় জ্ঞাপন করে এবং বলে, মানুষ ঐসব শক্তি ও সম্পদের আমানতদার মাত্র। তাকে তার সামনে হাযির হতে হবে এবং ঐসব শক্তি ও সম্পদ সে কোথায় ব্যয় করেছে সে সম্পর্কে তাকে জওয়াব দিতে হবে। ধর্ম তথা দীন তো তাই যা মানুষকে শক্তির নেশায় মত্ত, আপন ক্ষমতা ও এখতিয়ারাধীন শক্তিদৃষ্টে আত্মহারা হতে দেয় না। দীন তো তাই যা ঐসব বস্তুসামগ্রীকে বৈধ, অনুমোদিত ও যথাযথ স্থানে ব্যবহার ও নিয়োগের রাস্তা বাতলে দেয়। সে ঐসব জিনিসকে কার্যকর, মানব জাতির জন্য উপকারী এবং দুনিয়ার অনুকূলে কল্যাণ ও বরকতের হেতু বানায়। দীন তো তাই যা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, তার শক্তি ও তার আখলাকের মধ্যে ভারসাম্য কায়েম রাখে। একমাত্র দীন তথা ধর্মই মানুষের ব্যক্তিগত উপকারিতা ও কল্যাণ চিন্তাকে সমষ্টিগত উপকারিতা ও কল্যাণ চিন্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। ধর্মই মানুষের মধ্যে আপন শক্তি ও এখতিয়ারসমূহকে পর্যবেক্ষণ ও অনুভবের সময় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যপূর্ণ এবং গর্ব ও অহংকারের পরিবর্তে নম্রতা, বিনয় ও বান্দাসুলভ শান সৃষ্টি করে। কুরআন মজীদ দু'ধরনের নমুনাই পেশ করেছে। হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম ঠিক ক্ষমতার মসনদে পরিপূর্ণ দাপটের সঙ্গে আসীন থাকাকালে বলেছিলেনঃ

( رَبِّ قَدۡ ءَاتَیۡتَنِی مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِی مِن تَأۡوِیلِ ٱلۡأَحَادِیثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَـٰوَ  ٰ⁠ تِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِیِّۦ فِی ٱلدُّنۡیَا وَٱلۡـَٔاخِرَةِۖ تَوَفَّنِی مُسۡلِم ا وَأَلۡحِقۡنِی بِٱلصَّـٰلِحِینَ )

[Surah Yusuf 101]

“হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করেছ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ। হে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎ কর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত কর” (সূরা ইউসুফ, ১০১)।

হযরত সুলায়মান আলায়হিস সালামের যখন আপন ক্ষমতা, শক্তি, শৌর্য-বীর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিকে চোখ পড়ল অমনি তার মুবারক যবান থেকে বেরিয়ে পড়ল।

( فَتَبَسَّمَ ضَاحِك ا مِّن قَوۡلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِیۤ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِیۤ أَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَعَلَىٰ وَ  ٰ⁠ لِدَیَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَـٰلِح ا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِی بِرَحۡمَتِكَ فِی عِبَادِكَ ٱلصَّـٰلِحِینَ )

[Surah An-Naml 19]

“হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎ কর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত কর।” (সূরা নামলঃ ১৯)

পক্ষান্তরে যারা ছিল দীন-ধর্মরূপ সম্পদ থেকে মাহরূম এবং আল্লাহুবিস্মৃত, তারা আপন ক্ষমতা, শক্তি ও সম্পদ নিয়েই গর্বিত আর তারা তাদের চাইতে আর কাউকে বড় বলে মনে করত না।

( فَأَمَّا عَاد فَٱسۡتَكۡبَرُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّ وَقَالُوا۟ مَنۡ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةًۖ أَوَلَمۡ یَرَوۡا۟ أَنَّ ٱللَّهَ ٱلَّذِی خَلَقَهُمۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُمۡ قُوَّة ۖ وَكَانُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا یَجۡحَدُونَ )

[Surah Fussilat 15]

“আর আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার হলো, ওরা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলত, আমাদের চাইতে শক্তিশালী কে আছে? ওরা কি তবে লক্ষ্য করে নি, আল্লাহ যিনি ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি ওদের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী? অথচ ওরা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত” (সূরা হামীম আস-সাজদা, ১৫)।

কুরআন পাক আমাদেরকে অতীত কালের এক বিরাট ধনাঢ্য ব্যক্তির (কারূনের) কাহিনী শুনিয়েছে যাকে কিছু বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোক বলেছিল, নিজের ধন-সম্পদ নিয়ে বেশি দম্ভ কর না, আপন ধন-সম্পদ দিয়ে পরকালের পাথেয় সঞ্চয় কর এবং আল্লাহ্ তোমার যেই উপকার করেছেন তুমি প্রত্যুপকার দ্বারা তার বিনিময় দাও। আর যমীনে ফেতনা-ফাসাদ করো না।

( إِنَّ قَـٰرُونَ كَانَ مِن قَوۡمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَیۡهِمۡۖ وَءَاتَیۡنَـٰهُ مِنَ ٱلۡكُنُوزِ مَاۤ إِنَّ مَفَاتِحَهُۥ لَتَنُوۤأُ بِٱلۡعُصۡبَةِ أُو۟لِی ٱلۡقُوَّةِ إِذۡ قَالَ لَهُۥ قَوۡمُهُۥ لَا تَفۡرَحۡۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا یُحِبُّ ٱلۡفَرِحِینَ ۝ وَٱبۡتَغِ فِیمَاۤ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡـَٔاخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِیبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡیَاۖ وَأَحۡسِن كَمَاۤ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَیۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِی ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِینَ )

[Surah Al-Qasas 76 - 77]

“স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ কর না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পসন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর। দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলো না পরোপকার কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না।” (সূরা কাসাস, ৭৬-৭৭)।

কারূন এর উত্তরে বলল, আমি এই ধন-সম্পদের ব্যাপারে কারুর অনুগ্রহের। কাছে ঋণী নই। এতো কেবল আমার জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার ফসল। (আরবি) “সে বলল, এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে পেয়েছি।”

আপন শক্তির ধারণা ও অনুভূতি এবং নিজের ওপর আর কোন সত্তা ও উধ্বতর শক্তির অস্বীকার করার পরিণাম শক্তির সেই নেশা যা মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয় এবং যাকে কোন নৈতিক পথ-নির্দেশনা ও শিক্ষা, মানবতার কোন প্রেরণা ও উপযোগিতাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। মানুষ তার লৌহ শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে অসহায় ও বন্দী থাকে এবং দুর্বল জাতিগুলো তার পদতলে সবুজ ঘাসের ন্যায় পিষ্ট হতে থাকে। আদ সম্প্রদায়কে তাদের পয়গম্বর বলেছিলেনঃ

( وَإِذَا بَطَشۡتُم بَطَشۡتُمۡ جَبَّارِینَ )

[Surah Ash-Shu'ara 130]

“আর তোমরা যখন আঘাত হান তখন আঘাত হেনে থাক কঠোরভাবে (সূরা শুআরাঃ ১৩০)। বিদ্রোহ, অহংকার, ফেতনা-ফাসাদ, মানুষকে কষ্ট দেওয়া ও হত্যা করা এরই অনিবার্য পরিণতি।

( إِنَّ فِرۡعَوۡنَ عَلَا فِی ٱلۡأَرۡضِ وَجَعَلَ أَهۡلَهَا شِیَع ا یَسۡتَضۡعِفُ طَاۤىِٕفَة مِّنۡهُمۡ یُذَبِّحُ أَبۡنَاۤءَهُمۡ وَیَسۡتَحۡیِۦ نِسَاۤءَهُمۡۚ إِنَّهُۥ كَانَ مِنَ ٱلۡمُفۡسِدِینَ )

[Surah Al-Qasas 4]

“ফেরাউন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে ওদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; ওদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত এবং নারীদেরকে সে জীবিত রাখত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।” (সূরা কাসাসঃ ৪)।

বিশুদ্ধ ধর্মের গভীর প্রভাব ও নৈতিক প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকে যখন শক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প উন্নতি করে তখন তার স্বাভাবিক পরিণতি তাই হয় যা ওপরে বর্ণিত হলো।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন