hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১৩৮
হেদায়েত অথবা তেজারত (ব্যবসা-বাণিজ্য)
ধর্মহীন রাষ্ট্র ও হুকুমতগুলো আদতে উন্নত, সুসংহত, সুশল, সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত এবং একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব হুকুমত মৌলিক ও নীতিগতভাবে মানুষের উপকারের নিমিত্ত নয়, বরং মানুষের থেকে ফায়দা লুটবার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই এবং আদতেই তারা কোন নৈতিক পয়গাম ও গঠনমূলক লক্ষ্য পোষণ করে না। তাদের সামনে দেশ কিংবা জাতির নৈতিক, চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি, মানুষের হেদায়েত এবং মানবতার প্রকৃত খেদমত ও কল্যাণ থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের আসল মনোযোগ থাকে আয়ের দরজা, মুনাফা লুটবার কৌশল এবং সরকারী রাজস্ব ও দাবিগুলোর দিকে। এজন্য তারা অবাধে ও নির্দ্বিধায় নীতি-নৈতিকতা ও সভ্যতা-ভব্যতার রীতি বিসর্জন দিয়ে দেয় এবং নৈতিক শিক্ষামালা ও কল্যাণবোধকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করে। যখনই কোথাও নীতি-নৈতিকতা ও স্বার্থের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয় সেখানে সব সময় এরা মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়। যে কোন ব্যাপারে এবং যে কোন বিষয়ে তাদের দৃষ্টি থাকে অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রতি। এই ধরনের রাষ্ট্রগুলো নীতি ও চরিত্রহীনতা ও নির্লজ্জতার অনেক প্রকারের মধ্যে কতককে কিছুটা বাধ্যবাধকতা ও শর্তসাপেক্ষে (যা অপরাধের দরজা বন্ধ করে না, বরং সেগুলোকে আইন-শৃংখলা ও বিধি-বিধানের আওতায় আনা হয় মাত্র) জায়েয তথা অনুমোদিত বলে ঘোষণা দেয়। পতিতাবৃত্তি এসব রাষ্ট্রে আইনত অনুমোদিত। এরা স্বয়ং বিশাল আকারে সুসংগঠিত ও সুশৃংখল পন্থায় সুদী কারবার করে থাকে। সভ্য নামের আড়ালে এরা জুয়ার অনুমতি দেয়, নামের পরিবর্তন এবং এমন কতিপয় শর্তসাপেক্ষে যেগুলো রাষ্ট্রের স্বার্থকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখে। বহু নৈতিক ও চারিত্রিক অপরাধ এদের কাছে বৈধ ও অনুমোদিত বিবেচিত হয়। মদের কেবল অনুমোদনই দেওয়া হয় না, বরং কোন কোন সময় সরকার মদের। ব্যবসা নিজের হাতে রাখে এবং এর বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, সোচ্চার প্রতিবাদ তোলে তাদেরকে শাস্তি দেয়।

ফিল্ম নির্মাণ ও চলচ্চিত্র শিল্পকে যা বর্তমান আকারে চলছে তা সর্বপ্রকার অন্যায়-অপকর্মের ও অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু এবং জাতির মধ্যে চরিত্রহীনতা ও যৌন উজ্জ্বংলতা সৃষ্টির প্রধান হাতিয়ার, আজ সরকারের রাজস্ব ও আয়ের বিরাট বড় উৎস মনে করা হয় এবং এর কুফল ও নৈতিক ক্ষতি দেখেও এবং জানা থাকা সত্ত্বেও সরকার একে রুখতে পারে না, পারে না প্রতিরোধ করতে। রেডিও টেলিভিশনসহ সরকারী তথ্য বিভাগ জাতির নৈতিক ও চারিত্রিক দিক-নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণের পরিবর্তে আমোদ-প্রমোেদ ও চিত্তবিনোদনের সেবায় নিয়োজিত থাকে এবং জাতির মধ্যে গাম্ভীর্য রক্ষা ও বিশুদ্ধ রুচি সৃষ্টির পরিবর্তে তার মধ্যে বিকৃত রুচি ও ভাসাভাসা তথা হাল্কা মেজ সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে, বরং নিজস্ব প্রোগ্রামের মাধ্যমে ক্রীড়া-কৌতুকের মানসিকতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষা দান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যম হবার পরিবর্তে ক্রীড়া-কৌতুকের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রকাশনা-মুদ্রণ সংক্রান্ত বিধান ও সরকারী প্রশাসন বিভাগ যেখানে রাজনীতি ও প্রশাসনিক স্বার্থের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, বুদ্ধিমান ও কঠোর হয়ে থাকে এবং সামান্যতম সমালোচনাও যেখানে কোন কোন সময় সহ্য করা হয় না, সেখানে নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রগত বিষয়ে তারা অত্যন্ত উদার, মুক্ত ও দরাজদিল হয়ে থাকে। দায়িত্বহীন সাংবাদিক, অশ্লীল চরিত্রের সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিকেরা তাদের নিকৃষ্টতম বস্তুগত স্বার্থের জন্য জাতির মধ্যে নৈতিক ও চারিত্রিক প্লেগরূপ মহামারীর বিস্তার ঘটায়। কিন্তু যতক্ষণ তা সীমা ছাড়িয়ে না যায় সরকারী প্রশাসন যন্ত্র সক্রিয় ও তৎপর হয় না। এই ধরনের রাষ্ট্রে নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রের সাথে নাগরিকদের স্বাস্থ্যও নিরাপদ থাকে না। কোন কোন বাণিজ্যিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তাদের অসুস্থ ও ক্ষতিকর শিল্প-পণ্যের দ্বারা দেশবাসীর সাধারণ স্বাস্থ্যকে অব্যাহতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে এবং ভবিষ্যত বংশধরদেরকে অসুস্থ ও দুর্বল বানাতে থাকে। কিন্তু শাসকদেরকে তারা ঘুষ দিয়ে কিংবা সরকারী ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিরাট অংকের আর্থিক সাহায্য প্রদান করে সরকারী চাপ ও অসন্তোষের হাত থেকে বেঁচে যায়। এসব এজন্য হয়, সরকারের দৃষ্টিকোণ ও তাদের চিন্তাধারা নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্র এবং হেদায়েত ও ইসলাহ (সংস্কার ও সংশোধন) নয়, বরং তাদের লক্ষ্য থাকে আর্থিক মুনাফা ও বাহ্যিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি।

এ ধরনের রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি হলো, দেশের সাধারণ মানুষের নৈতিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে এগুতে থাকে। এক ভয়াবহ ও বিপজ্জনক নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। গোটা জাতির মধ্যে ও জাতির প্রতিটি শ্রেণীর মধ্যে বেনিয়াসুলভ মুনাফাখখারী ও সুযোগ সন্ধানী মানসিকতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ লুটপাটের বাজার গরম হয়ে ওঠে। সকলেই একে অন্যকে কতটা লুটপাট ও শোষণ করতে পারে তার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং নীতি-নৈতিকতা ও চারিত্রিক বিষয়গুলো মানুষের দৃষ্টি থেকে হারিয়ে যায়।

পক্ষান্তরে যেসব সরকার ও হুকুমত ‘মিনহাজুন নুবুওয়া' তথা নববী ধারায় প্রতিষ্ঠিত, তার বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয় তেজারতের পরিবর্তে হেদায়েতের ওপর। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল আবদুল আযীযের একজন গভর্নরকে (যিনি তাঁর সরকারী কর্মপন্থার দরুন রাজস্ব হ্রাস ও হুকুমতের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন) বলেছিলেন, “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম “হাদী' তথা পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন, তহশীলদার তথা ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে নয়।” এই সংক্ষিপ্ত বাক্যের মধ্যে ধর্মীয় হুকুমতের সমগ্র রাষ্ট্রনীতির মৌল নীতিমালা ও শাসন পদ্ধতি এসে গেছে।

ধর্মীয় হুকুমতের বৃহত্তর মনোযোগ সাধারণ গণমানুষের ধর্ম, নৈতিক চরিত্র ও তাদের পারলৌকিক লাভ-ক্ষতির চিন্তায় নিবিষ্ট থাকে। তার আসল কাজ রাজস্ব আদায় ও টোল বৃদ্ধি নয়। এগুলো হয় একেবারেই সাময়িক প্রকৃতির ও দ্বিতীয় পর্যায়ের এবং শুধুই সংস্কার ও সংশোধনমূলক ও ধর্মীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের পূর্ণতা সাধন ও সরকারী ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার হিসেবে। এই সরকার রাজনৈতিক ও আর্থিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে থাকে। ধর্মীয় ও নৈতিক মৌল নীতিমালাগুলোকে বস্তুগত লাভ ও স্বার্থের মুকাবিলায় অগ্রাধিকার দেয়। তার রাষ্ট্রীয় চতুঃসীমার মধ্যে সুদ, জুয়া, মদ, ব্যভিচার, অন্যায়-অনাচার, পাপাচার ও সর্বপ্রকার অশ্লীলতা ও এসবের যাবতীয় প্রেরণাদায়ক বিষয় এবং এমন সব আর্থিক ব্যাপার যদ্বারা ব্যক্তির লাভ হলেও সমাজ সমষ্টির ক্ষতি হয়, নিষিদ্ধ ও বেআইনী ঘোষিত হয়, যদিও এর দরুন রাষ্ট্রকে বিরাট আর্থিক ক্ষতি বরদাশত করতে হয় এবং সরকারকে বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের সংস্কার ও সংশোধনমূলক কর্মের প্রচলন ঘটায়। সে জাতির কেবল কর্মের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে না, বরং তার প্রবণতা ও মানসিকতার প্রতিও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এজন্য যে, নৈতিক ও চারিত্রিক প্রবণতাই। কর্মের জন্ম দেয়। যদি নৈতিক ও চারিত্রিক প্রবণতাই সহীহ-শুদ্ধ না হয় তাহলে কর্মের সংস্কার-সংশোধন, অপরাধ ও নীতি-নৈতিকতাহীন কাজের উৎসাদন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই সে সেসব বস্তুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যেগুলো জাতির মধ্যে নীতি-নৈতিকতাবিরোধী, আইন ভঙ্গকারী, আত্মপূজা ও ভোগ-বিলাসপ্রিয়তার প্রবণতা সৃষ্টি করে এবং সেই সমস্ত লোককে অপরাধী ও রাষ্ট্রের দুশমন হিসেবে আখ্যায়িত করে যারা মানুষের মধ্যে নির্লজ্জতা ও অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি করে, চাই কি তারা শিল্পী, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী অথবা কৃষিজীবীই হন না কেন। এই সরকার শান্তি ও নিরাপত্তা কায়েম এবং সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে নৈতিক চরিত্রের দেখাশোনা ও আত্মশুদ্ধির সযত্ন প্রয়াস নেয়। এজন্য এই রাষ্ট্র ও সরকারের অবস্থানগত মর্যাদা কেবল পুলিশ ও চৌকিদারের নয়, বরং একজন স্নেহশীল মুরুব্বী ও অভিভাবকেরও হয়ে থাকে।

এ ধরনের সরকার ও রাষ্ট্রের স্বাভাবিক পরিণতি হয় তাই যা কুরআন মজীদে প্রথম যুগের মুহাজিরদের আলোচনায় ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে উল্লিখিত হয়েছেঃ

( ٱلَّذِینَ إِن مَّكَّنَّـٰهُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُوا۟ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡا۟ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَـٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ )

[Surah Al-Hajj 41]

“(এসব মজলুম মুসলমান তো তারাই) যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে।" (সূরা হজ্জঃ ৪১}

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন