hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১৪২
য়ুরোপে শক্তি ও নৈতিকতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মের ভারসাম্যহীনতা
দুর্ভাগ্যের বিষয়, য়ুরোপে শক্তি ও নীতিনেতিকতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে যে ভারসাম্য থাকা দরকার ছিল, কয়েক শতাব্দী থেকে তা বিগড়ে আছে। রেনেসার পর থেকে বস্তুগত শক্তি ও বাহ্যিক জ্ঞান-বিজ্ঞান বড় দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে থাকে এবং ধর্ম ও নৈতিক চরিত্রের দ্রুত অবনতি হতে থাকে। কিছু কাল পর এ দুয়ের মধ্যে কোনরূপ ভারসাম্য অবশিষ্ট থাকে নি এবং এমন এক প্রজন্ম জন্মলাভ করে যাদের দাড়ির এক পাল্লা আসমানের সাথে কথা বলে আর অপর পাল্লা যমীনে (অর্থাৎ তারা এতটা অহংকারী যে, আকাশ ফেড়ে মাথা তুলতে চায়, পক্ষান্তরে নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রের দিক দিয়ে এতটাই অধঃপতিত যে, তারা সাত-তবক যমীনের নিচে হারিয়ে গেছে)। এই প্রজন্ম একদিকে নিজেদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি-অগ্রগতি এবং নিজেদের অস্বাভাবিক অভ্যাস ও কর্মকাণ্ডের দিক দিয়ে , অধিকন্তু বস্তুগত ও প্রাকৃতিক শক্তিসমূহকে আয়ত্তাধীন ও বশে আনার ব্যাপারে মনুষ্য-উর্ধ্ব সত্তা তথা ‘অতি মানব মনে হয়। অপর দিকে আপন নৈতিক চরিত্র ও কর্ম, লোভ-লালসা, হৃদয়হীনতা ও নিষ্ঠুরতার দিক দিয়ে সে চতুষ্পদ জন্তু ও হিংস্র প্রাণী থেকে আদৌ ভিন্নতর কিছু নয়। তাদের কাছে জীবনের সর্ববিধ উপকরণই বিদ্যমান কিন্তু। তথাপি তাদের বাচা হচ্ছে না। তাদের জীবনের চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ জ্ঞান ও সমস্যাদি জানা আছে, কিন্তু তারা মনুষ্য জীবন, সংস্কৃতি ও নীতি- নৈতিকতার প্রাথমিক নীতি ও ধারণাটুকু পর্যন্ত রাখে না। তাদের জ্ঞানগত ও প্রযুক্তিগত সমুন্নতি এবং নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের মধ্যে একেবারেই কোন সামঞ্জস্য নেই। প্রাকৃতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান তাকে যেই বিরাট শক্তি দান করেছে তার ব্যবহারের নিয়ম-রীতি সে জানে না।

অধ্যাপক জোড যথাযথ বলেছেনঃ

প্রকৃতি বিজ্ঞান আমাদেরকে দেবতাসুলভ শক্তি দান করেছে, কিন্তু আমরা তা শিশু ও বন্য অসভ্যদের মস্তিষ্ক দিয়ে ব্যবহার করছি।

অন্য এক জায়গায় তিনি লিখেছেনঃ

“শিল্পে আমাদের বিস্ময়কর উন্নতি, অগ্রগতি এবং নৈতিক ও চারিত্রিক ক্ষেত্রে আমাদের লজ্জাজনক ছেলেমিপনা ও বালখিল্যতার মাঝে যে দুস্তর ব্যবধান তার সঙ্গে আমাদের প্রতিটি বাকেই মুখোমুখি হতে হয়। একদিকে শিল্প ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতির অবস্থা হলো, আমরা ঘরে বসেই সমুদ্রের অপর পার থেকে এবং এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশের লোকের সঙ্গে অবলীলায় কথা বলতে পারি। সমুদ্রের ওপর ও যমীনের নিচে আমরা দৌড়ে বেড়াচ্ছি। রেডিওর সাহায্যে শ্রীলঙ্কায় বসে লন্ডনের বৃহত্তম ঘন্টার (Big Ben) আওয়াজ শুনছি। শিশুরা টেলিফোনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে। বৈদ্যুতিক ছবি আসা শুরু হয়েছে। শব্দহীন টাইপ রাইটার চুপচাপ তার কাজ করছে। কোনরূপ কষ্ট ও ব্যথা-বেদনা ছাড়াই দাঁত ফিলিং করা যাচ্ছে। বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না-বান্না চলছে। রাবারের সড়ক নির্মিত হচ্ছে। এক্স-রে-এর সাহায্যে আমরা আমাদের শরীরের ভেতরের অংশ উঁকি দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। ছবি কথা বলছে, গান গাচ্ছে। ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপের সাহায্যে অপরাধী ও খুনি-ঘাতকের সন্ধান বের করা যাচ্ছে। বৈদ্যুতিক তরঙ্গের সাহায্যে চুল কোঁকড়ানো হচ্ছে। সামুদ্রিক জাহাজ উত্তর মেরু পর্যন্ত এবং উড়োজাহাজ দক্ষিণ মেরু অবধি উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও আমাদের দ্বারা এতটুকু হতে পারে যে, আমরা বড় বড় শহরে এমন কোন মাঠ বানাই যেখানে দরিদ্র শিশুরা আরামে নিরাপদে খেলতে পারে। ফলে বছরে প্রায় দু'হাজার শিশুকে আমরা হত্যা এবং প্রায় নব্বই হাজার শিশুকে যখম করছি।

“একবার একজন ভারতীয় দার্শনিকের সঙ্গে নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিস্ময়কর সব বস্তুর প্রশংসা করছিলাম। সে সময় একজন মোটরচালক Pending Sands-এর ওপর দিয়ে তিন কিংবা চার শ' মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল অথবা কোন উড়োজাহাজ চালক মস্কো থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত দূরত্ব, আমার ঠিক মনে নেই, বিশ কিংবা পঞ্চাশ ঘণ্টায় অতিক্রম করেছিল। আমি যখন সব বলে শেষ করলাম তখন সেই ভারতীয় দার্শনিক বললেন, যা, যা বললে তা সবই ঠিক, তোমরা পাখির মত বাতাসে ভর দিয়ে উড়ছ এবং পানিতে মাছের মত সাঁতার কাটছ, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাটির ওপর দিয়ে কেমন করে মানুষের মত হাঁটতে হয় তা তোমাদের জানা হয়ে ওঠেনি।১

[১. Guide to modern wickedness, p. 263-63. ]

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প এবং নীতি- নৈতিকতা ও মানবতার মাঝে যে বিরাট ব্যবধান বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং বর্তমান সভ্যতা তার লক্ষ্য হাসিলে এবং মানবতার সঠিক খেদমত আঞ্জাম দিতে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে এর ওপর মতামত পেশ করতে গিয়ে অপর পাশ্চাত্য মনীষী ননাবেল বিজয়ী ফরাসী সার্জন ড, এ্যালেক্সিস ক্যারল তাঁর Man the Unknown নামক গ্রন্থে বলেনঃ

“বর্তমান জীবন মানুষকে সম্ভাব্য যে কোনভাবে সম্পদ অর্জন ও আহরণ করতে উৎসাহিত করে। সম্পদ আহরণের এ সব উপায়-উপকরণ মানুষকে সম্পদের লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছায় না। এটা মানুষের মধ্যে এক নিরন্তর উত্তেজনা ও জৈবিক কামনা-বাসনা পরিতৃপ্তির একটি ভাসাভাসা আবেগ সৃষ্টি করে। এসবের প্রভাবে ও প্রতিক্রিয়ায় মানুষ ধৈর্য ও সংযম হারিয়ে ফেলে এবং এমন সব কাজ থেকে সে অনীহা প্রকাশ করতে থাকে যা কিছুটা কষ্টকর ও আরামসাপেক্ষ। মনে হয়, আধুনিক সভ্যতা এমন মানুষ সৃষ্টিই করতে পারে না, যাদের ভেতর শৈল্পিক সৃষ্টিকুশলতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহস আছে। প্রতিটি দেশের ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণীর মধ্যে, যাদের হাতে ক্ষমতার চাবিকাঠি রয়েছে মানসিক ও নৈতিক যোগ্যতার দৃশ্যমান অবনতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা অনুভব করছি, আধুনিক সভ্যতা সেই সব বড় বড় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি যা মানবতা তার প্রতি পোষণ করেছিল এবং সে সেই সমস্ত লোক জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছে যারা মেধা ও সাহসিকতার অধিকারী হবে এবং সভ্যতাকে সেই কষ্টকর ও দুরতিক্রম্য রাস্তায় নিরাপদ শান্তির সাথে নিয়ে যেতে পারে যার ওপর সে আজ ঠোকর খাচ্ছে। আসল ব্যাপার, ব্যক্তি ততটা দ্রুততার সাথে উন্নতি করেনি যতটা দ্রুততার সাথে করেছে ঐ মনুষ্য মস্তিষ্কপ্রসূত প্রতিষ্ঠানগুলো। এ মূলত রাজনৈতিক নেতাদের মস্তিষ্কজাত ও নৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিণাম ফল এবং তাদের এই মূর্খতা বর্তমানে জাতিগোষ্ঠীসমূহকে সঙ্কটের মুখে নিক্ষেপ করেছে। প্রাকৃতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মানুষের জন্য যেই পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা মনুষ্য উপযোগী নয় এজন্য যে, তা সুপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত নয় এবং তার ভেতর মানুষের সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়নি। এই পরিবেশ যা শুধুই আমাদের মেধা ও আবিষ্কার-উদ্ভাবনের ফসল, আমাদের আকার-আয়তন ও আমাদের আকার-আকৃতি মুতাবিক নয়। আমরা খুশি নই। আমরা এক অব্যাহত নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অধঃপতনের মাঝে নিপতিত। যেসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তিগত সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেছে এবং চরম উন্নতি লাভ করেছে তারা আগের তুলনায় খুবই দুর্বল এবং খুবই দ্রুততার সাথে অসভ্যতা ও বর্বরতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু তাদের এ অনুভূতি নেই। তাদেরকে এই মুহূর্তে সেই বিদ্রোহী মানবতার দুশমন পরিবেশ থেকে কোন শক্তিই বাঁচাতে পারে না যা প্রাকৃতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান তার চারপাশে বেষ্টনীর মত টেনে দিয়েছে।

“বাস্তবতা হলো, আমাদের সভ্যতা বিগত সভ্যতাগুলোর মত জীবন-যিন্দেগীর নিমিত্ত এমন সব শর্ত আরোপ করে দিয়েছে যেগুলো (কতক অজ্ঞাত কারণে) জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। আমরা বস্তুবাদ সম্পর্কে যতটা জানি এর তুলনায় জীবনের জ্ঞান এবং এ সম্পর্কে যে, মানুষকে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করা দরকার, খুবই কম জানি এবং আমাদের জ্ঞান এ সম্পর্কে এখন, পর্যন্ত খুবই পেছনে পড়ে রয়েছে আর এই কম জানার ফলে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি-এর ফলে আমরাই ভুগছি।”১

“আবিষ্কার-উদ্ভাবন যেই দ্রুততার সাথে অগ্রসর হচ্ছে এবং যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর থেকে উপকার গ্রহণ করা হচ্ছে না। পদার্থ বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদানের দ্বারা কোন লাভ নেই। আরামপ্রিয়তা, বিলাসিতা, সৌন্দর্য, আকার-আয়তন ও জীবনের কৃত্রিম বিলাস-ব্যসনের বৃদ্ধি ও উন্নতি দ্বারা কী লাভ যখন আমাদের দুর্বলতা আমাদেরকে এর থেকে ফায়দা হাসিল করতে দেয় না এবং আমরা একে সঠিক পথে লাগাতে পারি না? এমন জীবন-ব্যবস্থাকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করার দ্বারা কী লাভ যার থেকে নৈতিক দিক একেবারেই বের করে দেওয়া হয় এবং মহান জাতিগোষ্ঠীগুলোর গুণগুলোকে ফেলে দেওয়া হয়? আমাদের জন্য তো এটাই সমীচীন ছিল, দ্রুতগামী জাহাজ, অধিক আরামদায়ক মোটর কার, সুলভ মূল্যের রেডিও ও আধুনিকতম মান-মন্দিরের পরিবর্তে আমরা নিজের দিকে অধিকতর মনোনিবেশ করব, মনোযোগ দেব। যান্ত্রিক, প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধ্যের ভেতর এটা নেই যে, সে আমাদেরকে মেধা ও বুদ্ধিমত্তা দান করতে পারে, দান করতে পারে নৈতিক শৃংখলা ও চারিত্রিক বিধান, স্বাস্থ্য, স্নায়বিক ভারসাম্য, শান্তি ও নিরাপত্তা।”২

[১. Man, the unknown, pp, ৩৮-৩৯, ; ]

[২. প্রাগুক্ত, ৫০-৫১ পৃ. ]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন