hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

৪৪
কৃত্রিম সমাজ ও ভোগ-বিলাসপূর্ণ জীবন
রোম ও পারস্যে উভয় স্থানেই সাধারণভাবে লোকের কাধে ভোগ-বিলাসিতার এক ভূত চেপে বসেছিল। কৃত্রিম সভ্যতা ও প্রতারণাপূর্ণ জীবনের এক সর্বগ্রাসী প্লাবন জেঁকে বসেছিল—যার ভেতর তারা আপাদমস্তক নিমজ্জিত ছিল। রোম ও পারস্যের সম্রাট এবং তাদের আমীর-উমারা ও অমাত্যবর্গ অলস ঘুমে ছিল বিভোর। মজা ওড়াও, ফুর্তি কর, এ ছাড়া আর কোন চিন্তা-ভাবনা তাদের মস্তিষ্কে ঠাই পেত না। ভোগ-বিলাসিতার এমন এক স্বর্গরাজ্য তারা কায়েম করেছিল যেখানে কল্পনার পাখাও গিয়ে পৌঁছুতে পারবে না। চাকচিক্য ও জৌলুসপূর্ণ। জীবন, ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশের প্রাচুর্যে ছিল ভরপুর এবং এসব এত সূক্ষ্ম ও কারুকার্যময় ছিল যে, তাতে বুদ্ধিবিভ্রম ঘটা আদৌ বিচিত্র ছিল না।১ পার্সী ঐতিহাসিক শাহীন ম্যাকারিয়-এর বর্ণনা মুতাবিক, পারস্য সম্রাট খসরু পারভেযের মহলে বারো হাজার রমণী ছিল, পঞ্চাশ হাজার ছিল উৎকৃষ্ট জাতের ঘোড়া, অগণিত মহল, নগদ অর্থ, হীরা জওয়াহেরাত ও নানাবিধ ভোগ-বিলাস সামগ্রী যার পরিমাপ করাও ছিল কঠিন। তার মহল আপন শান-শওকতে ও জৌলুস বৈচিত্র্যে ছিল তুলনাহীন।২ ঐতিহাসিক ম্যাকারিয়স বলেনঃ ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না যে, কোন বাদশাহ পারস্য সম্রাটদের মত বিলাসিতার। স্রোতে এভাবে গা ভাসিয়েছেন যাদের কাছে উপহার-উপঢৌকন ও রাজস্বের অর্থ মধ্যপ্রাচ্য ও দূর প্রাচ্যের শহরসমূহ থেকে আসত।৩ মুসলিম বিজয়ের পর যখন ইরানীরা ইরাক থেকে উৎখাত হয় তখন তারা যেসব মহামূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী পেছনে ফেলে গিয়েছিল তার মূল্য নির্ণয় করাও কঠিন। পরিত্যক্ত সামগ্রীর মধ্যে মূল্যবান জড়োয়া সেট, স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্র, রূপচর্চা সামগ্রী ও সুগন্ধি দ্রব্য প্রধান। তাবারীর বর্ণনা মুতাবিক আরবরা মাদায়েন জয়ের পর এমন সব তাঁবু পেয়েছিল যেগুলো মোহরাংকিত সাজপূর্ণ ছিল। আরবরা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম এর ভেতর বুঝি খাবারসামগ্রী আছে। খোলার পর জানতে পারলাম ওগুলো স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্র।৪

[১. বিস্তারিত দ্র. সাসানী আমলে ইরান, ]

[২. তারীখে ইরান, শাহীন ম্যাকারিয়সকৃত, মিসর সং ১৮৯৮, পৃ. ৯০। ]

[৩, প্রাগুক্ত, ২১১ পৃ. ]

[৪. তারীখে তাবারী। ]

ঐতিহাসিকগণ একটি কার্পেটের বর্ণনা দিয়েছেন যার ওপর বসে রাজসভাসদ ও অমাত্যবর্গ বসন্ত মৌসুমে মদ পান করত। এ প্রসঙ্গে তাঁরা লিখেছেনঃ

‘এর আয়তন ছিল ষাট বর্গ গজ। প্রায় এক একর জমির ওপর তা বিছানো যেতো। এর যমীন ছিল স্বর্ণের যার জায়গায় জায়গায় হীরা-জওয়াহেরাত ও মণি-মুক্তার পুষ্প অংকিত ছিল। পুষ্প উদ্যান ছিল যার ভেতর ফুলযুক্ত ও ফলবান বৃক্ষ অবস্থিত ছিল। বৃক্ষের শাখা ছিল স্বর্ণের আর পাতা ছিল রেশমের। ফুলের কলি ছিল স্বর্ণ-রৌপ্যের আর ফল ছিল হীরা-জওয়াহেরাতের। এর চতুম্পার্শ্ব ছিল হীরার ঝালরযুক্ত আর মাঝখানে বানানো হয়েছিল বীথিকা ও আঁকাবাঁকা নহর। আর এর সবই ছিল হীরা-জওয়াহেরাতের। হেমন্তকালে সাসানী বংশের রাজমুকুটধারিগণ এই হৈমন্তিক নিরসতাবিহীন উদ্যানে বসে শরাব পান করত এবং বিত্ত-সম্পদের এক বিস্ময়কর মনোহর দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হতো যা ইতিপূর্বে কেউ কখনো কোথাও দেখেনি।১

রোমান শাসনামলে সিরিয়া ও এর কেন্দ্রীয় শহরগুলোরও ঐ একই অবস্থা ছিল। এই উভয় হুকুমত বিলাসপ্রিয়তা ও সূক্ষ্ম শিল্পকলার ক্ষেত্রে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় ছিল লিপ্ত। রোমক সম্রাটগণ, তাদের সিরীয় নেতৃবর্গ ও প্রশাসকবৃন্দ খোলাখুলি ও প্রকাশ্যভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাদের আলীশান মহল, দীওয়ানখানা, মদ্য পান ও নৃত্যগীতের মাহফিলগুলো বিলাস উপকরণ, সম্পদ ও প্রাচুর্যের আসবাব দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। ইতিহাস ও কিংবদন্তী থেকে জানা যায় যে, এই সব লোক বিলাসপ্রিয়তা ও আয়েশী বেশভূষার ক্ষেত্রে বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। হযরত হাসসান ইবন ছাবিত (রা) যিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সিরিয়ার গাসসানী আমীর-উমারার দরবারে গিয়েছিলেন, জাবালা ইবনুল আয়হামের এ জাতীয় মজলিসের ছবি এঁকেছেন এভাবেঃ

“আমি দশজন দাসী দেখলাম, যাদের পাঁচজনই ছিল রোমের। তারা এক প্রকার বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে গান গাইছিল। আর বাকি পাঁচজন হীরার। তারা স্থানীয় সুরে গাইছিল যাদেরকে আরব সর্দার ইয়াস ইবন কুবায়সা উপঢৌকনস্বরূপ পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া আরব এলাকা, মক্কা প্রভৃতি থেকেও গায়ক-গায়িকাদের দল যেত। জাবালা যখন শরাব পানের জন্য বসত, তখন তার বসার ফরাশের ওপর নানা রকমের ফুলচামেলী, জুই প্রভৃতি বিছিয়ে দেওয়া হতো এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত পাত্রে মিশৃক ও আম্বর পরিবেশিত হতো। রৌপ্যের তশতরীতে বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল কস্তুরী নিয়ে আসা হতো। শীতকালে সুগন্ধ চন্দন কাঠ জ্বালানো হতো। আর গ্রীষ্মকাল হলে বরফ বিছানো হতো এবং তার ও তার সাথীদের জন্য গ্রীষ্মের বিশেষ পোশাক নিয়ে আসা হতো যা দিয়ে তারা শরীর ঢাকত। শীতকালে মূল্যবান পশমী ও চর্মবস্ত্রাদি হাজির করা হতো।২

[১. তারীখে ইসলাম, মওলভী আবদুল হালীম শররকৃত, ১ম খণ্ড, ৩৫৪ পৃ, তারীখে তাবারী থেকে গৃহীত। ]

[২, তারীখে তাবারী , ৪র্থ খণ্ড, ১৭৮ পৃ.। ]

বিভিন্ন প্রদেশ ও রাজ্যের গভর্নর, শাহযাদা, আমীর-উমারা ও উচ্চবিত্ত অভিজাত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা বাদশাহর পদাংক অনুসরণ করে চলত এবং পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবনযাত্রায় তাদের অনুকরণ করতে চেষ্টা করত। জীবনমান খুবই উঁচু এবং সমাজ খুবই জটিল হয়ে গিয়েছিল। মানুষ তার নিজের জন্য, নিজ বসন-ভূষণের কোন একটি অংশের জন্য এত বেশি পরিমাণে খরচ করত যা একটি গোটা গ্রাম, মহল্লা কিংবা একটা গোটা বস্তির ভরণ-পোষণ ও লজ্জা নিবারণের ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট হতো। আর এমনটি করা সমাজ নিন্দা ও অবমাননার ভয়ে প্রত্যেক বিশিষ্ট ও শরীফ লোকের জন্য অবশ্য করণীয় ছিল, এমন কি এও জীবনের এক অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয় প্রয়োজনে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। শাবী বলেন, ইরানের লোকেরা তাদের মাথায় যেই টুপি পরিধান করত তা হতো তাদের গোত্রীয় ও অবস্থানগত মর্যাদা মাফিক। গোত্রের শীর্ষস্থানীয় অভিজাত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিটির টুপি হতো এক লক্ষ দিরহাম মূল্যের। এদেরই অন্যতম ছিলেন হরমু। হীরা-জওয়াহেরাত-খচিত তাঁর শিরোপার মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম।১ আভিজাত্যের মাপকাঠি ছিল এই যে, তিনি ইরানের সাতটি শীর্ষস্থানীয় খান্দানের কোন একটির সদস্য হবেন। পারস্য সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হীরার গভর্নর ছিলেন আদিয়া (যাদওয়ায়হ)। সামাজিক অবস্থানগত মর্যাদার দিক দিয়ে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের। এজন্য তার শিরোপার মূল্য ছিল ৫০ হাজার দিরহাম।২ রুস্তমের মাথায় যে শিরোপা স্থান পেত তা সত্তর হাজার দিরহাম মূল্যে বিক্রী হয়েছিল আর এর প্রকৃত মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম।৩

[১. তারীখে তাবারী, ৪র্থ খণ্ড, ৬ পৃ.। ]

[২, প্রাগুক্ত, ১১ পৃঃ ]

[৩, প্রাগুক্ত, ১৩৪ পৃ.। ]

লোকে এই চরমপন্থী সমাজ ও এর ধ্বংসাত্মক ঠাটবাটে এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল এবং এই সংস্কৃতি তাদের শিরা-উপশিরায় ও অস্থিমজ্জায় এমনভাবে মিশে গিয়েছিল যে, এই কৃত্রিম লৌকিকতা ও আচার-অনুষ্ঠান তাদের দ্বিতীয় স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল এবং এর থেকে সরে আসা তাদের জন্য অসম্ভবপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। নাযুক থেকে নায়কতর মুহূর্তেও এবং কঠিনতর আপতকালেও সহজ সরল জীবন যাপন ও সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসা তাদের পক্ষে ছিল অসম্ভব। মুসলমানদের হাতে মাদায়েনের পতনের মুহুর্তে পারস্যের শেষ সম্রাট ইয়াযদাগির্দকে কী অসহায় অবস্থায় রাজধানী ছেড়ে পালাতে হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এরূপ তাড়াহুড়া ও পেরেশান অবস্থায়ও তিনি তাঁর সাথে যে পরিমাণ দ্রব্যসম্ভার নিয়ে গিয়েছিলেন তা থেকেই উক্তরূপ মানসিকতা ও সাংস্কৃতিক মাপকাঠি সম্পর্কে পরিমাপ করা যাবে। সাসানী আমলে ইরান’ নামক গ্রন্থের লেখক বলেন।

“ইয়াযদাগির্দ তাঁর সাথে এক হাজার বাবুচি এক হাজার গায়ক, এক হাজার চিতা বাঘের রক্ষক, এক হাজার বাদ্যবাদক, এক হাজার বাজ পক্ষীপালক এবং আরও বহু লোক নিয়েছিলেন। আর এ সংখ্যাও তাঁর মতে তার মর্যাদার তুলনায় খুবই কম ছিল।”১

পরাজয়ের পর হরমুযান যখন প্রথমবারের মত মদীনায় আগমন করল এবং হযরত ওমর (রা)-এর মজলিসে হাজির হলো তখন সে পানি চায়। একটা মোটা পেয়ালায় পানি আনা হলে সে বলেছিলঃআমি পিপাসায় মারা যাই সেও ভাল, কিন্তু এই বিশ্রী পেয়ালায় পানি পান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে অন্য পাত্রে পানি আনা হলে সে তা পান করে।২

এই দুটো ঘটনা থেকেই পরিমাপ করা যাবে যে, ইরানীদের অভ্যাস কতটা বিকৃত, কৃত্রিম জীবন ও লৌকিকতায় তারা কতটা অভ্যস্ত এবং প্রকৃতিসম্মত সহজ সরল জীবনযাত্রা থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছিল!

[১. সাসানী আমলে ইরান, ৬৮১ পৃষ্ঠা; ]

[২. তাবারীর ইতিহাস, ৪র্থ, ১৬১ পৃ.। ]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন