hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

৭৩
আনুগত্য ও তাবেদারী
আনুগত্য ও তাঁবেদারী প্রেম ও ভালবাসার অনিবার্য ও অপরিহার্য ফসল। সাহাবায়ে কিরাম (রা) যখন প্রেম ও ভালবাসার সম্পদে ধন্য হলেন তখন তাঁরা তাঁদের সকল শক্তি তাঁর আনুগত্যের পেছনে ব্যয় করলেন। আর এর সর্বোত্তম উদাহরণ হযরত সা'দ ইবন মুআয (রা)-এর সেই বিখ্যাত উক্তি যা তিনি আনসারদের পক্ষ থেকে বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে করেছিলেনঃ

“আমি আনসারদের পক্ষ থেকে খোলা মন নিয়ে বলছি এবং তাদের পক্ষ থেকে জওয়াবও দিচ্ছি। আপনি যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করুন, যার সঙ্গে চান সম্পর্ক স্থাপন করুন এবং যার সঙ্গে খুশি সম্পর্ক ছিন্ন করুন, আমাদের ধন-সম্পদ যা ইচ্ছা ও যতটা ইচ্ছা গ্রহণ করুন এবং যা খুশি বিলিয়ে দিন। আপনি আমাদের থেকে যা গ্রহণ করবেন তা অনেক বেশি প্রিয় ও পছন্দনীয় হবে তা থেকে যা আপনি রেখে যাবেন। যে ব্যাপারে যা কিছু আপনি হুকুম করবেন আমরা তা অবনত মস্তকে মেনে নেব এবং তার প্রতি অনুগত থাকব। আল্লাহর কসম! আপনি যদি বার্ক-এ গামাদান পর্যন্ত চলে যান আমরাও আপনার অনুগমন করব এবং আল্লাহর কসম করে বলছি, আপনি যদি ঘোড়াসহ সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়েন তাহলে কালবিলম্ব না করে আপনার পেছনে আমরাও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।”১

[১. যাদুল মা আদ, পৃ. ১৩০। ]

তাঁদের আনুগত্যের আরেকটি উদাহরণ নিন! রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সেই তিনজন সাহাবীর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন যারা তবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তখনও সাহাবায়ে কিরাম (রা) সেই নির্দেশ মাথা পেতে নিয়েছিলেন। মদীনা উল্লিখিত তিনজনের জন্য একটি নির্জন পুরীতে পরিণত হয় যেখানে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি জনপ্রাণীও ছিল না, ছিল না তাদের কথার জওয়াব দেবার মত একজন মানুষও (তাঁদের একজন)।

কা'ব (রা) বলেনঃ

“রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের তিনজনের (যথাক্রমে হযরত কা'ব, হেলাল ইবন উমাইয়া ও মারারা ইবন রবীআ) সঙ্গে কথা বলতে সকলকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। লোকেরা আমাদেরকে এরপর থেকে এড়িয়ে চলতে লাগল এবং আমাদের সম্পর্কে তাদের নজরই যেন বদলে গেল, এমন কি গোটা দুনিয়াটাই বিশাল ও বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও আমার জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল। যে জগৎটাকে আমি জানতাম ও চিনতাম এ যেন সেই জগত নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগত। এমন কি আমাদের সম্পর্কে লোকের উপেক্ষা যখন আরও বৃদ্ধি পেল তখন একদিন আমি পথে বেরিয়ে পড়লাম এবং আবু কাতাদার প্রাচীর টপকে তার বাগানে ঢুকে পড়লাম। এই আবু কাতাদা আর কেউ নয়, আমারই চাচাতো ভাই, ছিল সর্বাধিক প্রিয়জন। আমি তাকে দেখা মাত্রই সালাম করলাম, অথচ কী আশ্চর্য! আল্লাহর কসম করে বলছি, সে আমার সালামের উত্তরটা পর্যন্ত দিল। আমি তাকে বললাম যে, আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহ্র দোহাই দিয়ে বলছি, তুমি তো জান, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -কে ভালবাসি। সে চুপ করে থাকল। আমি আমার কথার পুনরাবৃত্তি করলাম এবং তাকে আল্লাহর দোহাই দিলাম, কিন্তু তারপরও সে চুপ রইল। আমার কথার উত্তর দিল না। আমি আবারও সেই একই কথা বললাম এবং তাকে আল্লাহর দোহাই দিলাম। তখন সে কেবল এতটুকু বলল, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রসূল বেশি জানেন। আমার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম এবং দেওয়াল টপকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।”১

তাঁর আনুগত্যের আরেকটি দৃষ্টান্ত এও যে, তিনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অসন্তোষ ও উপেক্ষার শিকার ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে আল্লাহর রসূলের দূত এল এবং বলল, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বললেন, আমি কি আমার স্ত্রীকে তালাক দেব? দূত বলল, “না, বরং আলাদা থাকবেন, কাছে যাবেন না।” এরপর তিনি তার স্ত্রীকে বলে দিলেন সে যেন তার পিতৃগৃহে চলে যায় এবং সেখানেই থাকে যতক্ষণ না আল্লাহ তা'আলা তাদের ব্যাপারে একটা ফয়সালা করেন।২

[১. বুখারী ও মুসলিম। ]

[২. বুখারী ও মুসলিম। ]

রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সঙ্গে তার প্রেম ও ভালবাসার সম্পর্কের অবস্থা ছিল এই যে, সকলের ওপর তিনি তাঁকে (আল্লাহর রসূলকে) অগ্রাধিকার দিতেন। ঠিক বয়কট চলাকালেই গাসসান অধিপতি তাঁদের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি জ্ঞাপন করে পত্র প্রেরণ করে এবং তাঁকে তার দরবারে আগমনের আহ্বান জানায়। উপেক্ষা ও ভসনার এই সময়টা আসলেই খুব কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত ছিল। কিন্তু তদ্সত্ত্বেও তিনি এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, আমি মদীনার বাজারে ঘোরাফেরা করছিলাম। এমন সময় জনৈক সিরীয় নাবাতীয় যে খাদ্যশস্য বিক্রয়ের উদ্দেশে মাঝে-মধ্যে মদীনায় আগমন করত, উপস্থিত লোকদের কাছে আমার সন্ধান জানতে চায়। লোকেরা আমাকে ইশারায় দেখিয়ে দিলে সে কাছে এসে গাসসান অধিপতির একটি পত্র আমার হাতে তুলে দেয়। আমি লেখাপড়া জানতাম। পত্র পড়লাম। পত্র ছিল নিম্নরূপঃ

“আমরা জানতে পেরেছি তোমাদের মনিব তোমাদের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করছেন। আল্লাহ তাআলা তোমাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননার জন্য রাখেন নি এবং তোমাকে নষ্ট করতে চান না। ব্যস! তুমি আমাদের কাছে চলে এস। আমরা তোমার প্রতি খেয়াল রাখব এবং যথোপযুক্ত মর্যাদা দেব।”

চিঠি পড়া মাত্রই আমি বুঝতে পারলাম এও এক পরীক্ষা। এরপর আমি পত্রটা নিকটস্থ একটি জ্বলন্ত চুলায় নিক্ষেপ করলাম।১

আনুগত্য ও নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে তা পালনের আরেকটি উদাহরণ নিন যা মদ পান হারাম ঘোষিত হবার সময় দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। হযরত আবু বুরদা তাঁর পিতার বরাতে বর্ণনা করেনঃ

“আমরা মজলিসে বসে মদ পান করছিলাম। তারপর আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর খেদমতে হাযির হওয়া ও তাকে সালাম দেয়ার নিমিত্ত উঠে পড়লাম। এদিকে ইতিমধ্যেই মদ পান হারাম হবার ঘোষণা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়ে গিয়েছিল।

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَیۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَـٰمُ رِجۡس مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّیۡطَـٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ۝ إِنَّمَا یُرِیدُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ أَن یُوقِعَ بَیۡنَكُمُ ٱلۡعَدَ  ٰ⁠ وَةَ وَٱلۡبَغۡضَاۤءَ فِی ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَیۡسِرِ وَیَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ )

[Surah Al-Ma'idah 90 - 91]

“হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শক্রতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না ?” (সূরা মায়িদা, ৯০-৯১ আয়াত)

আমি আমার সাথীদের কাছে এলাম এবং আমি এই আয়াত (আরবি) পর্যন্ত পড়ে তাদেরকে শুনিয়ে দিলাম। তিনি বলেন যে, সঙ্গী-সাথীদের ভেতর কারো কারো হাতে মদপূর্ণ পেয়ালা ছিল। কিছুটা পান করেছে আর পেয়ালায়ও কিছুটা অবশিষ্ট আছে, এমন কি ঠোট মদ স্পর্শ করেছে, এমতাবস্থায়ও তারা তক্ষুণি তা থুক করে ফেলে দিয়েছেন (আর পেয়ালাগুলো দূরে ছুঁড়ে ফেলেছেন)।”২

[১. বুখারী ও মুসলিম। ]

[২. তফসীর ইবনে জরীর, ৭ম খণ্ড। ]

রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর আনুগত্য ও নিজের ওপর, পরিবারের সদস্যদের ওপর এবং বংশের লোকজনের ওপর তাঁকে অগ্রাধিকার প্রদানের একটি অনন্য ও অভূতপূর্ব উদাহরণ হলো এই যে, (কুখ্যাত মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবন। উবাই ইবন সলুলের পুত্র আবদুল্লাহকে একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ শুনেছ, তোমার পিতা কী বলছেঃআবদুল্লাহ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার ওপর কুরবান হোক। তিনি কি বলছেন? আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেনঃ বলছে, যদি মদীনায় ফিরি তো যারা সম্মানিত তারা লাঞ্ছিতদের বের করে দেবে। আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি সত্যি কথাই বলেছেন। আল্লাহর কসম! আপনি সম্মানিত এবং তিনি লাঞ্ছিত ও অবমানিত। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি মদীনায় তশরীফ নিন। ইয়াছরিববাসী জানে, সেখানে আমার চেয়ে আমার পিতার সর্বাধিক অনুগত ও বাধ্য আর কেউ নেই। যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল চান, আমি তার মাথাটা (কেটে) নিয়ে আসি তাহলে তার জন্যও আমি প্রস্তুত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) এতে অসম্মতি প্রকাশ করে বললেন, না, আমি তা চাই না।

এরপর লোকে মদীনায় পৌঁছুলে আবদুল্লাহ মদীনার প্রবেশমুখে তলোয়ার হাতে তাঁর পিতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর পিতা সে পথে মদীনায় প্রবেশ করতে গিয়ে পুত্র আবদুল্লাহ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হলেন। তিনি পিতাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ

আপনি বলেছেন যে, মদীনায় গিয়ে যিনি সম্মানিত তিনি লাঞ্ছিতকে বের করে দেবেন? আপনি এখনই জানতে পারবেন, সম্মানিত কে। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুমতি ব্যতিরেকে আপনি মদীনায় থাকতে পারবেন না।

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তখন চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলঃ

ওহে, খাযরাজ বংশীয় লোকেরা! তোমরা দেখ, আমার ছেলে আমাকে আমার ঘরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ওহে খাযরাজের লোকেরা! আমার ছেলে আমার ঘরে যেতে আমাকে বাধা দিচ্ছে। আমাকে আমার বাড়ি যেতে দিচ্ছে না।

লোকজন একত্র হতেই তিনি বলে উঠলেনঃ

আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূলের অনুমতি ছাড়া তিনি মদীনার ভেতর এক। পাও ফেলতে পারবেন না।

লোকে তাকে বোঝাতে লাগল। কিন্তু তিনি তাঁর কথায় অনড় ও অটল। তিনি বলেই চললেনঃ না, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুমতি ছাড়া তিনি এক পাও অগ্রসর হতে পারবেন না।

অবশেষে সকলেই নবী করীম (ﷺ) -এর কাছে ছুটে গেলেন এবং তাঁকে ব্যাপারটা বললেন। তিনি তখন বলে পাঠালেন, যাও! আবদুল্লাহকে গিয়ে বল, সে যেন তার পিতাকে মদীনায় প্রবেশের অনুমতি দেয়।

লোকে ফিরে এসে বলতেই তিনি বলে উঠলেন, হ্যা, এখন নবী করীম (ﷺ) -এর অনুমতি পাওয়ার পর তিনি মদীনায় প্রবেশ করতে পারেন।১

[১. তফসীরে তাবারী, ২৮ তম খন্ড.।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন