hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

৭২
অনুরাগ ও আত্মোৎসর্গ
হযরত আবু বকর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় একবার তার ওপর শত্রুরা আক্রমণ করে বসে। ওহ্বা ইবনে রবীআ তাঁকে নির্দয়ভাবে প্রহার। করেছিল। ফলে তার চেহারা এমনি ফুলে গিয়েছিল যে, তাঁকে দেখে চেনাই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। বনু তামীম তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে তার ঘরে পৌঁছে দেয়। তিনি যে তাতে নির্ঘাত মারা যাবেন এতে কারো মনে কোন সন্দেহ ছিল। বেলা ডোবার পর তিনি জ্ঞান ফিরে পান। তারপর প্রথমেই তিনি জিজ্ঞেস করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর খবর কি? তিনি কেমন আছেনঃলোকে তার একথা শুনতেই ক্রোধান্বিত হয়, এই অবস্থাতেও তিনি তারই কথা স্মরণ করছেন, যাঁর কারণে আজ তাঁর এই করুণ হাল! এজন্যে তারা তাঁকে ভৎসনা ও কটুকাটব্য করতে লাগল। তারা হযরত আবু বকর (রা)-এর মা উম্মুল-খায়রকে ডেকে বলল, দেখুন! তাঁর কিছু খানাপিনার ব্যবস্থা করুন। মা তাঁকে খাবার গ্রহণের জন্য অনেক পীড়াপীড়ি করলেন। কিন্তু তার মুখে সেই একই কথা, বল, আল্লাহর রসূল (ﷺ) কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথী সম্পর্কে কিছুই জানি না। তখন তিনি তার মাকে বললেন, আপনি খাত্তাব-কন্যা উম্মু জামীলের কাছে যান এবং তার কুশল জেনে এসে আমাকে জানান। তিনি উম্মু জামীলের কাছে গিয়ে বলেন, আবু বকর মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহর কুশল জানতে চাচ্ছে। উম্মু জামীল বললেন, আমি আবূ বকরকেও চিনি না আর মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকেও জানি না। আপনি যদি চান তাহলে আমি বরং আপনার সাথে গিয়ে আপনার ছেলেকে এক নজর দেখে আসতে পারি। তিনি সম্মতি জানিয়ে বললেন, ঠিক আছে, চলুন। এরপর উভয়ে একত্রে আবু বকর (রা)-এর ঘরে এসে তাঁকে ঐ অবস্থায় দেখতে পেলেন। উম্মু জামীল আবু বকর (রা)-এর একেবারে কাছাকাছি গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা দেখলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম! যে সম্প্রদায় আপনার সাথে এরূপ (নিষ্ঠুর ও নির্দয়) আচরণ করেছে তারা দুরাচার ও কাফির। আমি আশা করি আল্লাহ্ তাদের থেকে আপনার প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। হযরত আবু বকর (রা) তাকে বললেনঃ আগে বলুন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর অবস্থা কেমনঃতিনি কেমন আছেন? উম্মু জামীল বললেন, আপনার মা তো শুনতে পাচ্ছেন। তিনি বললেন, তার পক্ষ থেকে ভয় পাবার কিছু নেই। আপনি স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন। উম্মু জামীল তখন বললেন, তিনি ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি এখন কোথায়ঃবললেন, তিনি এখন আরকামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম! এখন আর আমি পানাহার করতে পারি না যতক্ষণ না আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর খেদমতে গিয়ে হাজির হই। এরপর তারা উভয়ে কিছুটা অপেক্ষা করলেন। রাত হলো এবং মানুষের চলাফেরা ও আনাগোনা যখন থেমে গেল তখন উম্মু জামীল আবু বকর (রা) কে নিয়ে আরকামের বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন এবং রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর খেদমতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি হুযূর আকরাম (ﷺ) -কে দেখামাত্রই যেন জীবন ফিরে পেলেন। এরপর তিনি পানাহার করেন।১

জনৈক আনসারী মহিলা, যার বাপ-ভাই ও স্বামী ওহুদ যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শাহাদত লাভ করেছিলেন, নিজ আবাস থেকে বেরিয়ে লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকেনঃ রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর খবর কি তিনি কেমন আছেনঃলোকেরা জওয়াবে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তিনি ভাল আছেন, সুস্থ আছেন যেমনটি তুমি চাও। মহিলাটি বলল, আমাকে দেখাও। আমি হুযূর (ﷺ) -কে দেখতে চাই। এরপর মহিলা হুযূর আকরাম (ﷺ) -কে দেখামাত্রই আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে দেখার পর আর সব বিপদ-আপদই তুচ্ছ।২

[১. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ইবনে কাছীর কৃত, ২য় খণ্ড, ৩০ পৃ.। ]

[২. ইবনে ইসহাক ও বায়হাকী। ]

হযরত খুবায়ব (রা)-কে শূলে চড়ানো হয়। শূলে চড়াবার পূর্বে তাঁর ঈমানী দৃঢ়তার পরীক্ষা নেবার উদ্দেশে কাফিররা বলেছিল, আমরা তোমাকে মুক্তি দিতে পারি যদি তুমি এতে রাজী থাক, আমরা তোমাকে মুক্তি দেই আর তোমার স্থলে মুহাম্মদ (ﷺ) -কে ফাসি দিই। একথা শুনতেই তিনি বলে ওঠেন, আল্লাহর কসম! আমি তো এও পছন্দ করি না, তার পায়ে একটা কাঁটা বিধুক আর আমি তার বিনিময়ে মুক্তি পাই। খুবায়র (রা)-এর কথায় তারা সকলেই হেসে ফেলে।১

হযরত যায়দ ইবন ছাবিত (রা) বলেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন আল্লাহ্র রসূল (ﷺ) আমাকে সা'দ ইবনুর বীর সন্ধানে পাঠালেন এবং আমাকে বললেন, যদি তুমি তাকে পাও তবে আমার সালাম বলবে এবং বলবে যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতে চেয়েছেন তুমি এখন কেমন বোধ করছ। যায়দ (রা) বলেন, আমি নিহতদের মধ্যে ঘুরতে লাগলাম। এর পর তাকে পেতেই গিয়ে দেখলাম, তার অন্তিম মুহূর্ত সমাগত। তাঁর শরীরে তীর, তলোয়ার ও বল্লমের সত্তরটির মত আঘাত। আমি তাকে বললামঃ সাদি! আল্লাহর রসূল (ﷺ) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং জানতে চেয়েছেন, আপনার অবস্থা এখন কেমন? আপনি কেমন বোধ করছেন? উত্তরে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে আমার সালাম বলবে এবং আরও বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জান্নাতের খোশবু পাচ্ছি। আর আমার সম্প্রদায় আনসারদের বলবে, যদি তোমাদের অনবধানতায় রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর কিছু হয়ে যায়, এমতাবস্থায় যদি তোমাদের একটি চোখও অক্ষত থাকে তাহলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের কোন ওযর থাকবে না। এর পরক্ষণেই তাঁর প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যায়।২

ওহুদ যুদ্ধের দিন সাহাবী হযরত আবু দুজানা (রা) কাফিরদের নিক্ষিপ্ত তীর-তলোয়ারের হাত থেকে রসূল (ﷺ) -কে বাঁচাতে আপন পৃষ্ঠদেশকে ঢালের ন্যায় পেতে দিয়েছিলেন। নিক্ষিপ্ত তীরগুলো তার পিঠে এসে লাগত আর তিনি এক চুলও নড়াচড়া করতেন না।৩ মালিক আল-খুদরী (রা) রসূল আকরাম (ﷺ) -এর ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত চুষে খেয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। যায়দ (রা) তাঁকে থুথু ফেলতে বলেন। কিন্তু তিনি এতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনোই থুথু ফেলব না।৪

[১. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ৪ খ. ৬৩ পৃ.। ]

[ ২. যাদুল-মাআদ, ২খ, ১৩৪। ]

[৩. প্রাগুক্ত, ১৩০ পৃ.। ]

[৪. প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড ১৩৬ পৃ.। ]

আবু সুফিয়ান যখন মদীনায় এসেছিলেন তখন তিনি তাঁর নিজ কন্যা উম্মুল-মুমিনীন হযরত উম্মু হাবীবা (রা)-এর ঘরে গিয়ে ওঠেন এবং রসূল আকরাম (ﷺ) -এর বিছানায় বসতে উদ্যত হন। উম্মু হাবীবা (রা) তৎক্ষণাৎ বিছানা উল্টিয়ে দেন। বিস্মিত আবু সুফিয়ান কন্যাকে বলেন, বেটি! আমি জানি , তুমি কি আমাকে এই বিছানার উপযুক্ত মনে করনিনাকি এই বিছানাই আমার উপযোগী নয় মনে করেছ। উম্মু হাবীবা (রা) বলেন , না, তা নয়, বরং এ বিছানা স্বয়ং আল্লাহর রসূলের আর আপনি মুশরিক বিধায় অপবিত্র (অতএব আপনি এ বিছানায় বসার উপযুক্ত নন)।১

ওরওয়া ইবন মাসউদ ছাকাফী হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আপন সঙ্গী-সাথীদের বলেছিলেন, লোক সকল! আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি রাজা-বাদশাহদের দরবারে গিয়েছি। পারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার ও আবিসিনিয়া অধিপতি সম্রাট নাজাশীর দরবারেও গিয়েছি, দেখেছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদের সাথীরা মুহাম্মদকে যতটা সম্মান ও সমীহ করে, ততটা সম্মান ও সমীহ কোন রাজা-বাদশাহর সাথীদেরকে তাদের রাজা-বাদশাহদেরকে করতে দেখিনি। আল্লাহর কসম করে বলছি, যখন তিনি থুথু ফেলেন তখন তা তাদেরই কারোর হাতের ওপর গিয়ে পড়ে। আর অমনি তাঁরা তা তাঁদের মুখমণ্ডল ও শরীরে মেখে নেয়। যখন তিনি কোন কাজের নির্দেশ দেন অমনি সেই নির্দেশ পালনে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তিনি যখন ওযু করেন তখন সেই গড়িয়ে পড়া পানি সংগ্রহের জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। তিনি যখন কথা বলেন, তখন তারা নিজেদের স্বর নিচু করে দেয় এবং অতিরিক্ত শ্রদ্ধাবশত তারা কখনই তার চেহারার দিকে গভীর ও পরিপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় না।২

[১. সীরাত ইবনে হিসাম। ]

[২. যাদুল মা'আদ, ২খ. ১২৫ পৃ.।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন