hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১২৩
য়ুরোপের বস্তুবাদ
সে যা-ই হোক, যা আশংকা করা গিয়েছিল অবশেষে তাই ঘটল। য়ুরোপ বস্তুবাদের দিকে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ল। ধ্যান-ধারণা, দৃষ্টিকোণ, মন-মস্তিষ্ক ও মানসিকতা, আচার-আচরণ ও সামাজিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য, সরকার ও রাজনীতি, মোট কথা, জীবনের সকল শাখা-প্রশাখায় বস্তুবাদ জেঁকে বসল ও বিজয়ী হলো, যদিও তা হঠাৎ করে নয়, বরং ক্রমান্বয়ে। প্রথম দিকে এর গতি ছিল শ্লথ, কিন্তু পরবর্তীতে অত্যন্ত জোরেশোরে ও দ্রুত গতিতে য়ুরোপ বস্তুবাদের। দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল। সমাজ বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী সৃষ্টিজগত নিয়ে এভাবে চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা করতে শুরু করল যেন এর কোন স্রষ্টা। নেই, নেই কোন পরিচালক ও ব্যবস্থাপক এবং এই প্রকৃতি ও বস্তুর উর্ধ্বে এমন কোন শক্তি নেই যিনি এই জগতে হস্তক্ষেপ করেন এবং এর শান্তি-শৃংখলা বিধানে ভূমিকা পালন করেন। তারা প্রকৃতি জগত ও এর বাহ্যিক অবয়বসমূহ ও প্রভাবের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নির্ভেজাল যান্ত্রিক পন্থায় করতে লাগল। আর তারা এর নাম দিল বৈজ্ঞানিক ও গবেষণামূলক পদ্ধতি এবং এমন প্রতিটি আলোচনা ও দৃষ্টিভঙ্গি যার। ভিত্তি আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর বিশ্বাসের ওপর স্থাপিত, অন্ধ আনুগত্যমূলক ও অবৈজ্ঞানিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে লাগল। তারা একে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করতে থাকল। আর এ পথের মনযিল ছিল এই যে, তারা চলতে চলতে শক্তি (Energy) ও বস্তু ভিন্ন আর সব কিছুই তারা অস্বীকার করল ও প্রত্যাখ্যান করে বসল এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন প্রতিটি বস্তু মানতে আপত্তি জানাল যা ওজন, পরিমাণ ও পরিসংখ্যানের বাইরে। এর স্বাভাবিক ও যৌক্তিক পরিণতি দাঁড়াল এই, আল্লাহর অস্তিত্ব ও বুদ্ধির অগম্য সব কিছুই কল্পনা হিসাবে ঠাই পেল যেগুলো জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা সমর্থিত হতো না।

তারা দীর্ঘ দিন যাবত আল্লাহকে অস্বীকার করেনি এবং ধর্মের বিরুদ্ধেও সুস্পষ্টভাবে ও খোলাখুলি যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। আসলে তারা সকলেই নাস্তিকও ছিল না, ছিল না ধর্মের দুশমন। কিন্তু যে চিন্তাধারা ও আলোচনার যেই পথ তারা এখতিয়ার করেছিল, যেই অবস্থান তারা গ্রহণ করেছিল তা এমন ধর্মের সঙ্গে খাপ খেতে পারত না যার গোটা প্রাসাদই ঈমান বিল-গায়ব তথা অদৃশ্যে বিশ্বাস, ওহী ও নুকূওয়াতের ভিত্তির ওপর স্থাপিত এবং যা পারলৌকিক জীবনের ওপর এতটা জোর দেয় আর এর ভেতর কোনটাই অভিজ্ঞতা ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যের আওতায় আসে এবং ওজন, পরিমাপ ও পরিসংখ্যান দ্বারাও তার সত্যতা সমর্থন করা যায় না। এজন্য প্রতিদিনই তাদের ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসে সন্দেহ-সংশয় এবং এসব মেনে নিতে দোদুল্যমানতা সৃষ্টি হতে থাকে।

য়ুরোপে রেনেসাঁ তথা পুনর্জাগরণের পরের লোকেরা দীর্ঘকাল পর্যন্ত বস্তুগত দৃষ্টিকোণ ও বস্তুগত জীবন এবং ধর্মীয় কাজকর্ম ও প্রথাগুলোকে একত্র ও সমন্বিত করার প্রয়াস চালাতে থাকে। ধর্মের প্রতি আনুগত্য থেকে তারা তখনও পুরোপুরি ভাবে মুক্ত ও স্বাধীন হয় নি এবং খ্রিস্টান বিশ্বে ধর্মীয় পরিবেশ তখনও অবশিষ্ট ছিল, একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। নৈতিক ও সামাজিক স্বার্থেরও দাবি ছিল যে, নামকাওয়াস্তে হলেও ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে এবং তা থাকা দরকারও বটে, যা জাতির লোকদের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করবে এবং দেশকে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈতিক অরাজকতার হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু বস্তুবাদী সভ্যতার গতি এত দ্রুত ছিল যে, ধর্ম ও তার প্রথাগুলো (রুসূম) তার সাথী হতে পারেনি। বস্তুবাদ ও আধ্যাত্মিক ধর্মের একত্র ও সমন্বিতকরণের মাঝে কষ্ট, লৌকিকতা ও সময়ের অপচয় ছিল। ফলে সে কিছুদিন পর এই লৌকিকতাকেও বিসর্জন দিল এবং পরিষ্কার ও খোলাখুলি ধর্মহীনতা ও বস্তুবাদকে গ্রহণ করল।

ঠিক এ যুগেই য়ুরোপের প্রতিটি দেশে ও প্রতিটি অঞ্চলে এক বিপুল সংখ্যক এমন সব লেখক, সাহিত্যিক, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেন যারা বস্তুদের শিঙ্গায় ফু দিলেন এবং দেশের জনগণের মন-মস্তিষ্কে বস্তুপূজার বীজ বপন করলেন। নীতিশাস্ত্রবিদগণ নীতি-নৈতিকতার বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দান করতেন। তারা কখনো-বা উপযোগিতাবাদের দর্শন পেশ করতেন, আবার কখনো বা পেশ করতেন “খাও, দাও, ফুর্তি কর”-এর দর্শন। মেকিয়াভেলী (১৪৬৯-১৫২৭) ইতিপূর্বেই ‘ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা এই দর্শন পেশ করেছিলেন এবং নীতি-নৈতিকতাকে দু'ভাগে ভাগ করেছিলেন। একটি হলো সরকারী আর আরেকটি ব্যক্তিগত। তিনি তার সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছিলেন যে, যদি ধর্মের প্রয়োজন থাকেই তাহলে তা থাকবে কেবল মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে যার সঙ্গে রাজনীতির কোনই সম্পর্ক থাকবে না। রাষ্ট্র থাকবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সব কিছুর মুকাবিলায় তার থাকবে অগ্রাধিকার। সে সব কিছুর থেকে অধিক মূল্যবান বলে বিবেচিত হবে। খ্রিস্ট ধর্মের সম্পর্ক থাকবে কেবল অপার্থিব তথা পারলৌকিক জীবনের সঙ্গে। আমাদের এই পার্থিব ও জাগতিক জীবনের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মভীরু ও সৎ লোকের কোন প্রয়োজন রাষ্ট্রের নেই, এমন কোন উপকারিতাও এর নেই। এজন্য যে, তারা হয় ধর্মের ও ধর্মীয় বিধি-বিধানের অনুসারী ও অনুগত এবং তারা প্রয়োজনে নৈতিক নীতিমালা ও ঔচিত্যবোধকে উপেক্ষা করতে পারে না। রাজা-বাদশাহ ও প্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে শৃগালের মত ধূর্ত হতে হয় এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও রাজনৈতিক স্বার্থের গরজে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ, মিথ্যা কথন, ধোকা ও প্রতারণা, খেয়ানত ও মুনাফিকীর মত নীতিহীন কাজ করতে হয়। এ ব্যাপারে তাকে দ্বিধান্বিত হলে চলে না, হওয়া উচিত নয়। মেকিয়াভেলীর এই আহ্বান পুরোপুরি কার্যকর হলো, সফল হলো। ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদী দর্শন (যা প্রাচীন ধর্মের স্থান দখল করছিল) এই মতবাদকে পুরোপুরি সহায়তা প্রদান করে।

লেখক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের যাদুকরী বক্তৃতা, লেখনী ও সম্মোহন সৃষ্টিকারী বাগ্মিতা ও কাব্যের মাধ্যমে প্রাচীন নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে এক বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। তারা অন্যায় ও পাপকে মনোজ্ঞ ও চিত্তাকর্ষক বানিয়ে পেশ করে। মনুষ্য প্রকৃতি ও মানবীয় স্বভাবকে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত, মানুষকে তার দায়িত্ব, কর্তব্য ও জওয়াবদিহিতার হাত থেকে স্বাধীন তথা একেবারে বন্ধুহীন ও বাধা-বন্ধনহীন মুক্ত বিহঙ্গ হবার প্রচার-পোপাগান্ডা চালায়। জীবনের মজা লুটবার, প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনার যাবতীয় চাহিদার পূর্ণ পরিতৃপ্তির ও ভোগ-বিলাসের প্রকাশ্য আহ্বান জানায় এবং এই জীবনের মূল্যায়নে বিরাট বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনের সহায়তা নেয় এবং নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকীর খাতা শূন্য থাক’-এর দর্শন মাফিক নগদ প্রাপ্তি এবং বাহ্যিক ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুগত স্বার্থ ব্যতিরেকে আর সব কিছুকেই প্রত্যাখ্যান ও উপেক্ষা করে।

আর এভাবেই ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্য জীবন প্রতিমা পূজারী গ্রীস ও রোমের জাহিলী যিন্দেগীর প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়। এ ছিল যেন তার নতুন সংস্করণ যা ঊনবিংশ শতাব্দীতে নতুনভাবে সযত্ন প্রয়াস সহকারে তৈরি করা হয়েছিল। গ্রীস ও রোমের যেসব ছবি প্রাচ্য খ্রিস্ট ধর্ম হাল্কা ও ফিকে করে দিয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর চিত্রকররা তাকে পুনরায় উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল করে তোলে। এতে আশ্চর্যের কিছু ছিল না। আজকের পশ্চিমা জাতিগুলো ঐসব গ্রীক, রোমান ও পশ্চিমা জাতিগোষ্ঠীরই সুযোগ্য উত্তরাধিকারী। বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে নিকট সাদৃশ্য পাওয়া যায়। য়ুরোপের বর্তমান ধর্মীয় জীবনও আধ্যাত্মিকতা থেকে তেমনি শূন্য যেমনটি ছিল গ্রীকদের ধর্ম। এই দুর্বলতা, ভয়-ভক্তিমিশ্রিত বিনয় ও ধর্মীয় গাম্ভীর্যের ঘাটতি, জীবনে ক্রীড়া- কৌতুক তথা খেল-তামাশার আধিক্যেরও সেই একই সব অবস্থা যা গ্রীসে ছিল। এটা ছিল সে সব প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণার পরিণতি যা য়ুরোপে পূর্ণ জনপ্রিয়তা ও প্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং তাই দীন-ধর্মের স্থান দখল করে নেয়। ঠিক তেমনি আজ জীবনের কামনা-বাসনা, ভোগের চাহিদা ও স্বাদ গ্রহণ এবং দুনিয়ার বুকে অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণের অবস্থাও ঠিক তাই যা সক্রেটিস তার যুগের গণতান্ত্রিক যুবকের বলে বর্ণনা করেছেন দার্শনিক প্লেটোর রিপাবলিক' নামক গ্রন্থে। অধিকন্তু ধর্মীয় সন্দেহ-সংশয় ও দ্বিধা-সংকোচ, ধর্মীয় আইন-কানুন ও শৃঙ্খলা, ধর্মীয় দায়িত্ব-কর্তব্য ও প্রথাসমূহের অমর্যাদা করার ক্ষেত্রেও আজকের য়ুরোপ গ্রীস ও রোম থেকে পিছিয়ে নেই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন