মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
যুরোপিয়ানরা এদেশে যখন প্রথমে বণিক, অতঃপর বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করল তার বেশ কিছুকাল আগে থেকেই এখানে অধঃপতন শুরু হয়ে গেছে। প্রাচ্যের ও ইসলামী সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলো হয় তো পতনের দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান অথবা এর মধ্যে বাড়াবাড়ি ও বিকৃতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপরও এমন কতকগুলো নৈতিক বৈশিষ্ট্য এতে পাওয়া যেত এবং এতে এমন উন্নতি হয়েছিল যার কল্পনা করাও এ যুগে দুরূহ। প্রাচ্যের লোকেরা কতক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যকে উন্নত করতে করতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, তা একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করেছে এবং এর মধ্যে এমন সূক্ষ্মতা ও পেলবতা দান করেছিল পাশ্চাত্যে যা কেবল কাব্য, সাহিত্য ও শিল্পকলারই অংশ।
মুসলিম প্রাচ্যে সমাজের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এতটা দৃঢ়, মযবুত, স্থায়ী ও গভীর ছিল আজকে তা কল্পনা করাও কঠিন। পিতামাতার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা, সন্তানের ও ছোটদের প্রতি পিতামাতা ও গুরুজনদের বাৎসল্য ও স্নেহ, বড়দের প্রতি ছোটদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, নারীদের সতীত্ব, সমবোধ, স্বামীর আনুগত্য ও তার প্রতি বিশ্বস্ততা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমানতদারী ও নেমক হালালী, যুবকদের চারিত্রিক সততা ও দৃঢ়তা, অভিজাত ও শরীফ লোেকদের আচার-আচরণ, ব্যবহার, আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা, দেখা-সাক্ষাত, সময়ানুবর্তিতা, নিয়মিত আমলসমূহ আদায়, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সাম্য ও বৈশিষ্ট্য রক্ষা, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য ত্যাগ, কুরবানী ও সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। এর এক একটি শিরোনামের আওতায় এত ব্যাপক ও বিস্তৃত ঘটনা বর্ণিত আছে যা কালের বিবর্তনে আজ সহজে বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও এর এত প্রচুর কারণ রয়েছে যে, বিশ্বাস না করে উপায় থাকে।
পিতার প্রতি সন্তানের আনুগত্যবোধ মুসলিম প্রাচ্যে এই কিছুকাল আগে পর্যন্ত (এবং কোথাও কোথাও এখন পর্যন্ত) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -র নির্দেশ পালনার্থে বিদ্যমান ছিল, যে নির্দেশ তিনি জনৈক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন আর তা ছিল এই (আরবি) ‘তুমি ও তোমার সম্পদের মালিক তোমার পিতা'। পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং তাদের প্রাপ্য হক আদায়ের এই প্রেরণা পিতামাতা জীবিত থাকা পর্যন্তই সীমিত ছিল না, বরং তাদের মৃত্যুর পরও তা অব্যাহত থাকত। পিতামাতার বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত একান্ত জনদের প্রতি আচার-ব্যবহার, সাহায্য-সহযোগিতা, উপহার-উপঢৌকন ও হাদিয়া-তোহফা . প্রদানের মাধ্যমে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করা সৌভাগ্যবান সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্গত ছিল। বস্তুতপক্ষে এটাও ছিল নববী তালীমেরই ফলশ্রুতি। এই তালীমে বলা হয়েছিলঃ
من ابرء البر حلة الرجل اهل ابيه بعدان یوفی ۔
“সর্বোত্তম নেকীর আমলসমূহের অন্যতম হল পিতার ইনতিকালের পর তার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও উত্তম আচরণ করা” (আল-হাদীস)
অপর দিকে সন্তান-সন্ততির প্রতি পিতামাতার আচরণও ছিল বিশুদ্ধ কল্যাণ কামনার ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের এই আচরণ ছিল মুসলিম প্রাচ্যের ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রকৃষ্টতম নমুনা। সন্তানের কল্যাণ কামনায় তারা নিজেদের জীবনের যাবতীয় স্বাদ-আহ্লাদ, আনন্দ, সুখ-শান্তি ও চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিতেন এবং তাদের সুশিক্ষা ও বিশুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া তাদের মৌলিক কর্তব্য জ্ঞান করতেন। তাদের সুশিক্ষা, নৈতিক সতর্কতা ও উস্তাদ কর্তৃক প্রয়োজনীয় শাস্তি প্রদানের সময় পিতামাতা তাদের দিলকে পাথর বানিয়ে নিতেন। এমত ক্ষেত্রগুলোতে সন্তানের পক্ষ গ্রহণ ও উস্তাদের গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশকে আভিজাত্য ও ভদ্রতার পরিপন্থী মনে করা হতো যার জন্য কোন শরীফ পিতাই প্রস্তুত হতেন না, এমন কি এক্ষেত্রে অনেক সময় অশিক্ষিত পিতামাতা পর্যন্ত উস্তাদের বাড়াবাড়িকে সমর্থন করতেন এবং সন্তানকেই বরং উল্টো ধমক দিতেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করতেন। সাধারণত সকল পিতামাতার মুখেই একথা ফিরত, “উস্তাদের হক পিতামাতার চাইতে বেশী।”
মুসলিম সমাজে বড়-ছোটর সম্পর্ক এই হাদীসের আলোকে নির্ণীত হতোঃ (আরবি) “যে ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের কেউ নয়।”
প্রাচ্যের নৈতিকতা ও সভ্যতার মূল সম্পদ হলো এর স্থিরচিত্ততা, দৃঢ়তা ও জীবন-যিন্দেগীর একই রকম হওয়া। বিগত যুগে এই পতনোখ সমাজেও এ সম্পর্কিত অত্যাশ্চর্য সব দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যে লোক একবার যে কাজ শুরু করত বছরের পর বছর সেই কাজ করত। যে পেশা একবার নির্ধারণ করে নিত তা মৌসুমী পরিবর্তন, স্বাস্থ্যগত উত্থান-পতন সত্ত্বেও এতে এতটুকু ফাঁক-ফোকর, মামুলী সুযোগ ও অলসতাবশত পার্থক্য সৃষ্টি হতে দিত না। যার সঙ্গে যেমনতরো ব্যবসায়িক লেনদেন শুরু করা হতো শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা হতো, তা এতে যা-ই কিছু ঘটুক না কেন এবং অবস্থার যতই পরিবর্তন সাধিত হোক না কেন।
সে যুগে খান্দানী ও গোত্রীয় জীবনে ব্যক্তির সম্মান-শ্রদ্ধা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মাপকাঠি ও সম্পর্কের যোগসূত্রের শর্ত কেবল ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যই ছিল না। একই খান্দান ও একই পরিবারে বিভিন্ন সদস্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা স্তরের হয়ে থাকে। কেউ হয় ধনী, কেউ হয় নিঃস্ব গরীব। কিন্তু পারিবারিক সমাবেশ ও মিলন মেলাগুলোতে কারোর এ ক্ষমতা বা দুঃসাহস হতো না যে, আর্থিক পার্থক্যের কারণে একই খান্দান ও পরিবারের লোকদের মাঝে আচার-ব্যবহারে পার্থক্য করবে। কদাচিৎ এ ধরনের ভুল হয়ে গেলে এর বিরুদ্ধে সমগ্র খান্দান ও গোটা পরিবার প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠত। কখনো তা সম্পর্ক ছেদের পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে গড়াত। একজন গরীব অভিজাত পরিবারের সন্তান অন্য সচ্ছল ভাইয়ের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে স্বচ্ছন্দে কথা বলত এবং সচ্ছল ভাইও গরীব ভাইয়ের সঙ্গে তার পারিবারিক আভিজাত্য ও আত্মীয়তার দরুন সমান আচরণ করত। এ ব্যাপারেও সযত্ন প্রয়াস চালানো হতো যাতে করে দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতার কথা নিকটতম ও ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়-স্বজন ছাড়া বাইরের লোকেরা জানতে না পারে, অন্যের সামনে যেন তা প্রকাশ না পায়।
ইসলামী পরিবেশের শেষ যুগ পর্যন্ত অভিজাত, ভদ্র ও নীতিবান লোকদের বিবেক তার সম্মান-সম্ভ্রম, তথা ইজ্জত-আব্রু ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মতই এমন এক সম্পদ মনে করা হতো যা বিক্রয়যোগ্য নয়, এমন কি এর বিনিময়ে যত মূল্যই প্রদান করা হোক না কেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিপ্লবের আগে পিছে মুসলিম অভিজাতদের অনেক দৃষ্টান্ত মিলবে যেখানে তারা নিজদের মৃত্যুকে কবুল করে নিয়েছে, কিন্তু বিবেককে খুন করা পসন্দ করে নি। তারা এজন্য গুলী খেয়েছে কিংবা ফাঁসি কাষ্ঠে জীবন দিয়েছে, তবুও মিথ্যা বলতে রাজী হয় নি। তার সামনে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, মিথ্যা বলে সে নিজেকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে পারে এবং সে এই বিপ্লবে যোগ দেয়নি কিংবা কোনভাবেই সে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না, এই বলে সাফাই পেশ করে সে মৃত্যদণ্ডের হাত থেকে অব্যাহতি পেতে পারে। কিন্তু না, তা তারা করে নি। কেননা তা ছিল প্রকৃত সত্যের পরিপন্থী এবং তার বিবেকের বিরোধী।
মিল্লাত ও জাতির স্বার্থেও সে এভাবে নিজেকে সাচ্চা ও সত্যবাদী প্রমাণ করত যেভাবে প্রমাণ করত ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বার্থের ক্ষেত্রে। জাতীয় ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থপূজার যে নগ্ন হাওয়া আজ পাশ্চাত্যের জাতিগুলোর মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তখন পর্যন্ত তা এদেশে দেখা দেয় নি। তারা জাতির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে তেমনি পাপ ও অপরাধ মনে করত যেমন মনে করত নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে। শরীয়তের হুকুম-আহকামকে তারা ব্যক্তিগত ও জাতীয় সকল বিষয়ে ও সমস্ত ব্যাপারে সমভাবে প্রযোজ্য ভাবত। তাদের সামনে ছিল কুরআন মজীদের নিমোক্ত হেদায়েতসমূহঃ
“হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায় ও ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাও যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতামাতা ও আত্মীয়-পরিজনের বিরুদ্ধেও হয়।”( সূরা নিসাঃ ১৩৫)।
“যখন তোমরা কথা বল তখন ইনসাফের ভিত্তিতে বল, যদি তা তোমাদের আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও যায়।” (সূরা আনআমঃ ১৫৩)
ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকের ঘটনা। মুজাফফর নগর জেলার কান্দেলা নামক কসবার এক স্থানে একটি জায়গা নিয়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, জায়গাটি হিন্দুদের মন্দিরের, নাকি মুসলমানদের মসজিদের। ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মুসলমানদের কিছু লোককে একান্তে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! হিন্দুদের মধ্যে কি এমন কোন লোক আছে যার সত্যবাদিতার ওপর আপনারা আস্থা রাখতে পারেন এবং যার সাক্ষ্যের। ওপর ফয়সালা দেওয়া যায়? তারা জানাল, তাদের নজরে এমন কোন লোক নেই। এরপর তিনি হিন্দুদের ডেকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, বড় মুশকিলের ব্যাপার। কেননা ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। তারপরও মুসলমানদের মধ্যে একজন বুযুর্গ আছেন যিনি কখনো মিথ্যা বলেন না। আমাদের বিশ্বাস, এ সময়ও তিনি সত্যই বলবেন।
এই বুযুর্গ ছিলেন হযরত শাহ আবদুল আযীয দেহলভীর শাগরিদ এবং সাইয়েদ আহমদ শহীদ (র.)-এর খলীফা মুফতী ইলাহী বখশ সাহেবের খান্দানের। ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট বুযুর্গের খেদমতে চাপরাশী পাঠিয়ে তাঁকে আদালতে ডেকে পাঠালেন। বুযুর্গ বললেন, আমি কসম খেয়েছি কখনো ইংরেজের মুখ দেখব না। ম্যাজিস্ট্রেট এরপর বলে পাঠালেন, আমার মুখ দেখার দরকার নেই। তবুও আপনি মেহেরবানী করে আসুন। ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি না আসলে ফয়সালা হচ্ছে না।
অবশেষে বুযুর্গ এলেন এবং ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে গেলেন। গোটা বিষয়টি বুযুর্গের সামনে পেশ করা হলো এবং এ বিষয়ে তিনি যা জানেন তা বলতে বলা হলো। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকের দৃষ্টি বুযুর্গের প্রতি নিবদ্ধ এবং সকলের কান তাঁর জওয়াব শোনার জন্য উদগ্রীব যেই জওয়াবের ওপর এই গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সংঘাতপূর্ণ বিষয়টির ফয়সালা নির্ভর করছে। এমন সময় বুযুর্গ বললেন, আসল কথা হলো, জায়গাটা হিন্দুদের। মুসলমানদের এই জায়গার সঙ্গে আদৌ কোন সম্বন্ধ নেই। ব্যস! আদালতের ফয়সালা হয়ে গেল। জায়গা হিন্দুরা পেল আর মুসলমানরা মোকদ্দমায় গেল হেরে। কিন্তু মুসলমানরা হারলেও ইসলামের নৈতিক বিজয় হলো। সত্যবাদিতা ও ইসলামী আখলাক প্রকাশ কয়েক হাত মাটি হারিয়ে বহু অমুসলিমের বিবেক-বিবেচনা ও মন-মস্তিষ্ক জিতে নেয়। অনেক হিন্দু সেদিনই বুযুর্গের হাতে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়।
বিবেক-বুদ্ধি ছাড়াও জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মেধাশক্তিকে এমন এক পবিত্র ও মূল্যবান সম্পদ মনে করা হতো যা ইতর-ভদ্র-নির্বিশেষে যে কোন মানুষের কাছে বিক্রি করা হতো না। যারা এ ব্যাপারে সমুন্নত মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তারা কোনক্রমেই তা বিক্রয় করা পসন্দ করতেন না এবং একে আল্লাহতাআলার মূল্যবান অনুগ্রহ ও আমানত মনে করতেন। বিশেষত তা কুফর ও পাপকর্মে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতায় ও শক্তি বৃদ্ধিতে একে কাজে লাগানো কিংবা কোনরূপ ভ্রান্ত মতাদর্শের ধারক-বাহক সাজাকে বড় রকমের খেয়ানত ও ঈমান বিক্রয় মনে করতেন।
এই একই মানসিকতা ও চরিত্রের বুযুর্গ ছিলেন মাওলানা আবদুর রহীম রামপুরী (মূ, ১২৩৪ হি.)। রোহিলা খণ্ডের ইংরেজ শাসক মি. হকিন্স তাকে বেরেলী কলেজে (প্রভাষক হিসেবে) অধ্যাপনার জন্য প্রস্তাব দেন এবং মাসে ২৫০ টাকা বেতন দেওয়া হবে বলে জানান (আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর পূর্বের ২৫০ টাকার বর্তমান মান যে কয়েক হাজার টাকা হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়) এবং অল্পদিনেই উল্লিখিত বেতন বৃদ্ধি করা হবে বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তিনি এই বলে তাঁর ওর পেশ করেন, রামপুর রাজ্য সরকার থেকে তাকে প্রতি মাসে যে দশ টাকা মাসোহারা দেওয়া হয় তা বন্ধ হয়ে যাবে। মি, হকিন্স তাকে বলে পাঠান, আপনি রাজ্য সরকার থেকে যা পান আমি তো তার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি বেতন দিতে চাচ্ছি। অতএব, এই বিরাট অংকের বেতনের মুকাবিলায় রাজ্য সরকারের মাসোহারা তো নিতান্তই তুচ্ছ! এরপর মাওলানা আবদুর রহীম পরবর্তী ওযর পেশ করলেন, আমার বাড়িতে একটি কুল গাছ আছে। এর ফল খুব মিষ্টি যা আমি খুব পসন্দ করি। বেরেলী গেলে আমি কুল খেতে পারব না। বোঝা যায়, ইংরেজ শাসক তখনও মাওলানার মনের কথাটি ধরতে পারেন নি। তিনি বললেন, রামপুর থেকে কুল আনাবার ব্যবস্থা করা হবে। আপনি বেরেলীতে বসেই আপনার বাড়ির ফল খেতে পারবেন। এবার মাওলানা বললেন, আমার আরেকটি অসুবিধা আছে। আমার যেসব ছাত্র রামপুরে আমার কাছে পড়ে তারা মাহরূম হবে এবং আমিও তাদের খেদমত থেকে মাহরূম হব। ইংরেজ শাসক এরপরও হার মানতে রাজী নন। তিনি বললেন, আপনার ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। ফলে তারা বেরেলীতে আপনার কাছে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এবার মুসলমান আলেম এমন তীর নিক্ষেপ করলেন যার জওয়াব ইংরেজ শাসক মি, হকিন্সের কাছে ছিল না। মাওলানা বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু আমি যদি লেখাপড়া শেখাবার বিনিময়ে বেতন গ্রহণ করি তবে কাল কেয়ামতে যখন আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে তখন আল্লাহর দরবারে কী জওয়াব দেব? ভারতবর্ষ বিজেতা ইংরেজ শাসককে অবশেষে হার মানতে হলো। অপর দিকে মাওলানা আবদুর রহীম রামপুরী রামপুর রাজ্যের শাসক নওয়াব আহমদ আলী খান প্রদত্ত দশ টাকা মাসোহারার ওপর তার অবশিষ্ট জীবন কাটিয়ে দেন। আল্লাহ্ পাক মরহুমের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (নুযহাতুল খাওয়াতির)
এই নৈতিক শক্তি ও কীর্তির মুকাবিলা এ যুগের বিদ্যাবুদ্ধি বিক্রির সঙ্গে করুন। এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি, মেধা ও যোগ্যতাকে নিলামে চড়িয়েছে। যে সর্বোচ্চ দাম দিতে স্বীকৃত হবে তার হাতে বিক্রি করবে। যদি কোন ইসলামী কিংবা মুসলিম প্রতিষ্ঠান এক শ' টাকা দেয়, পক্ষান্তরে কোন খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান এর মুকাবিলায় ১০৫ টাকা দিতে রাযী থাকে, তখুনি সে তার ওখানে চলে যাবে। আবার কোন য়াহুদী রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান যদি আরও পাঁচ টাকা। বাড়িয়ে দেয় অমনি সে তার হাতেই নিজেকে বিক্রি করে দেবে। সে এটা দেখবে প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার মন-মানসিকতা, রুচি-প্রকৃতি ও বিষয়ের মিল আছে কিনা। অবস্থা যদি অনুমতি দেয় তবে দেখা যাবে, শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা কেবল নামকাওয়াস্তে প্রমোশন কিংবা বর্ধিত বেতনের নিশ্চয়তা পেয়ে পুলিশ বিভাগে অথবা নৌচলাচল বিভাগে হৃষ্ট চিত্তে বদলি হয়ে যাবে। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি যিনি কোন জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন, তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত বিষয়ে যিনি গবেষণামূলক নিবন্ধ লিখে থাকেন, একদিন হঠাৎ করেই শুনতে পারেন, তিনি সামান্য উচ্চ বেতনের লোভে এমন এক সামরিক কিংবা প্রশাসনিক চাকরীতে যোগ দিয়েছেন যার সঙ্গে তার মানসিক ও জ্ঞানগত আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।
আজ কোন নিবন্ধকার এতে আদৌ কোন কষ্ট অনুভব করে না যে, সে যেই কলম দিয়ে কীর্তিমান মহাপুরুষের জীবন-চরিত লিখছে, আগামীকাল সেই একই কলম দিয়ে একজন জাতীয় বেঈমান ও গাদ্দারের প্রশংসা গাঁথা লিখছে।
জনৈক গ্রন্থ প্রেমিক উচ্চ মূল্যে যখন কোন দুর্লভ পুস্তক ক্রয় করতেন তখন আনন্দের আতিশয্যে নিম্নোক্ত কবিতাটি পাঠ করতেন। কিছুটা সংশোধন করে আজও তা পাঠ করা যায়ঃ
جمادے چند دادم جاں خریدم
بسے نازاں کوبس ارزان خریدم
“কয়েকটি কড়ির মূল্যে আমি জীবন খরিদ করলাম; নগণ্য জিনিসের বিনিময়ে আমি মূল্যবান জিনিস খরিদ করলাম।”
এখানে “জীবন”-এর পরিবর্তে যদি “ঈমান” পাঠ করা হয় তাহলে বাস্তবতার নিরিখে তা ভুল হবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এও যে, সে সবের বুনিয়াদ সাধারণ অবস্থায় অধিকাংশই অবস্তুবাদী এবং নির্ভেজাল বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক কিংবা আত্মিক হতো এবং সে সবের মধ্যে নিজের স্বার্থ ও কামনা-বাসনার নাম-গন্ধ খুব কমই থাকত। এর ফলে কোন কোন সময় এমন সম্পর্কেরও সন্ধান মিলত এবং এর শেকড় দিল ও দিমাগের এত গভীরে গ্রোথিত হতো যার কোন বস্তুগত ও বাণিজ্যিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। উস্তাদ-শাগরিদের সম্পর্ক এমন ছিল যার সামনে এ যুগের পিতা-পুত্রের ও প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কও গৌণ ও নিষ্প্রভ। বর্তমান যুগের মানুষ এটা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হবে যে, ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম ও খ্যাতনামা উস্তাদ দরসে নিজামীর প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা নিজামুদ্দীন লাখনবী (মৃ. ১১৬১ হি.)-র ইনতিকালের খবর শুনে শোকাহত হয়ে তদীয় শাগরিদ সাইয়েদ কামালুদ্দীন আযীমাবাদী ইনতিকাল করেন এবং অপর শাগরিদ সাইয়েদ যরীফ আযীমাবাদী কাঁদতে কাঁদতে চোখ নষ্ট করে ফেলেন। অবশ্য পরে জানা যায়, ইনতিকালের খবর সঠিক ছিল না।১
[১. নুযহাতুল খাওয়াতির, ৬ষ্ঠ খণ্ড ]
য়ুরোপে ভোগ-বিলাস তথা আনন্দ-ফুর্তি ও ফায়দা হাসিলের দু'টো নৈতিক দর্শন ও চিন্তাধারা ফলে-ফুলে বিকশিত হতে থাকে। প্রাচ্যীয় ও ইসলামী নৈতিকতার ওপর দুটোরই প্রভাব পড়েছে। প্রাচ্যের ইসলামের নৈতিক দর্শন এই উভয় দর্শন ও চিন্তাধারার চেয়ে অনেক উন্নত। উদ্দেশ্য, অভিসন্ধি ও স্বার্থপরতা, সুবিধাবাদী মানসিকতা ও ধ্যান-ধারণা থেকেও তা মুক্ত। ]
খ্রি. ১৭শ শতাব্দী থেকে লাভালাভের ধারণা প্রবল হতে থাকে। পাশ্চাত্যের নীতিশাস্ত্রবিদগণ বুক ফুলিয়ে বলতে শুরু করলেন, নৈতিকতার মধ্য থেকে যে বস্তুর উপকারিতা বা লাভ প্রকাশ পাবে না তা বিবেচনাযোগ্য নয়। তার প্রতি ক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই লাভ বা উপকারিতার সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য যেই মানসিকতা তুলাদণ্ডের ভূমিকা পালন করত, দুঃখের বিষয়, তা আগাগোড়া বস্তুবাদী ধারণায় রূপ লাভ করে চলেছিল। এর কাঠামো ও অনুর্বর ভূমি দিনকে দিন এমন হতে চলেছিল যে, কোন অবস্তুবাদী ও অপার্থিব লাভের ধারণা করতেও তা অক্ষম ছিল এবং এ ব্যাপারে তাদের অনুভূতি ও মেধা ছিল সীমিত ও নির্ধারিত। ফল হলো, এই নৈতিকতার সীমা নির্ধারণ ও লাভের রূপ বা প্রকৃতি নির্বাচন থেকে কৃত এই নাযুক কাজই বিচারক ও সালিশের কাছে সোপর্দ করা হলে তিনি তার প্রকৃতিগত পতিত মেয়াজের কারণে কোন অবস্তুবাদী ও অপার্থিব লাভকে মেনে নেবার যোগ্যই ছিলেন না। এভাবেই লাভের সীমা নির্ধারণ স্বাভাবিক ও অবচেতনভাবেই বস্তুবাদী হয়ে যায় এবং কার্যত নৈতিক দর্শন বা নীতিশাস্ত্রের এমন কোন বস্তুর সঙ্গে আদৌ কোন সম্বন্ধই রইল না যার কোন বস্তুগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য লাভ নেই। ক্রমান্বয়ে এই বস্তুবাদী মানসিকতা ও লাভের ধারণা গোটা জীবনকেই ছেয়ে ফেলে।
বিগত শতাব্দীগুলোতে য়ুরোপের সাহিত্যে যেসব শব্দ সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়েছে এবং যেসব শব্দ য়ুরোপের জন্য সর্বাধিক আকর্ষণীয় সেসব শব্দের অন্যতম “ফিতরত তথা প্রকৃতি। কিন্তু যেসব জিনিস বা বস্তুর মুকাবিলায় এবং যেসব মওকায় এই শব্দটি বলা হতো তা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, প্রকৃতি বলতে একান্তই পশু প্রকৃতি বোঝানো হয়েছে যা সর্বপ্রকার সূক্ষ্ম অনুভূতি, নৈতিক বিবেক, প্রশান্ত হৃদয় ও বুদ্ধি এই উভয়টি থেকে মুক্ত, যা সব ধরনের বাধ্যবাধ্যকতা ও সীমারেখাকে ভয় পায় যার দাবি হলো কেবল ‘খাও, দাও, ফুর্তি কর, বাধা-বন্ধনহীন মুক্ত জীবন যাপন কর’। এজন্য কোন প্রকার হক বা অধিকার, দাবি ও মানবীয় দায়িত্ব বা কর্তব্য নেই। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মানুষের উৎস বা উৎপত্তি সম্পর্কে যে গবেষণা করা হয় এবং যে মতবাদ সাধারণভাবে সকলেই মেনে নিয়েছ (অর্থাৎ জীববিজ্ঞানী ডারউইনের Theory of Evolution বা বিবর্তনবাদতত্ত্ব পরবর্তীকালে যা অসার বা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।-অনুবাদক) তা জীবনের সকল শাখাকে প্রভাবিত করে, নৈতিকতার ওপরও এর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও ইন্দ্রিয়াতীত প্রভাব পড়ে।
অতঃপর ঐ যুগে য়ুরোপে যান্ত্রিক যুগ শুরু হয়। মানুষের ধ্যান-ধারণা নির্ভেজাল জড়বাদী হয়ে যায়। ফলে যেই ছিটেফোঁটা নমনীয়তা ও জীবন-যিন্দেগী পশুসুলভ ধ্যান-ধারণাতেও অবশিষ্ট ছিল এ যুগে তাও বিদায় নেয়।
প্রখ্যাত য়ুরোপীয় নও মুসলিম মুহাম্মদ আসাদ য়ুরোপের এই নৈতিক ও চারিত্রিক পরিবর্তনের ওপর গভীর ও বিবেচনাপ্রসূত পর্যালোচনা পেশ করেছেন। যদি প্রাচ্যের ওপর পাশ্চাত্যের এই মানসিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য এভাবেই বজায় থাকে এবং খোদ য়ুরোপের বুকেই যদি বড় রকমের কোন বিপ্লব না সাধিত হয় তাহলে আজ পাশ্চাত্য সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে আগামী কাল প্রাচ্য সম্পর্কেও, তাই বাস্তব হয়ে দেখা দেবে এবং এর লক্ষণও এখন থেকেই দেখা যাচ্ছে। জীবনের প্রতিটি শাখা ও বিভাগের ন্যায় প্রাচ্যের নৈতিকতাও আধুনিক পাশ্চাত্য ছাচে রূপ নিতে যাচ্ছে। যে মহলটি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতা-সংস্কৃতি দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত, তাদের নৈতিকতা পাশ্চাত্য নৈতিক দর্শন ও চিন্তা-চেতনার সর্বোত্তম নমুনা। মুহাম্মদ আসাদ লিখছেনঃ
“(য়ুরোপে) মানুষের এমন একটি দল সৃষ্টি হয়ে গেছে যাদের নীতিবোধ ও নৈতিকতা নিছক উপযোগবাদের প্রশ্নে সীমাবদ্ধ, যাদের কাছে ভাল-মন্দের সর্বোচ্চ মাপকাঠি হচ্ছে একমাত্র বস্তুবাদী সাফল্য।
“পশ্চিমের সামাজিক জীবনে বর্তমানে যেই নিগূঢ় পরিবর্তন ঘটছে তাতে দিনের পর দিন উপযোগবাদী নীতিবোধ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারিগরী যোগ্যতা, দেশাত্মবোধ, জাতীয়বাদী দলীয় বোধের মত বস্তুবাদী সমাজ কল্যাণের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্ট সকল দিককে দেয়া হচ্ছে উচ্চ মর্যাদা এবং কখনো কখনো তার মূল্য অহেতুক অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে; সন্তান বাৎসল্য বা দাম্পত্য। জীবনের বিশ্বস্ততার মত যেসব গুণকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত নিছক নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করা হতো সে সবের গুরুত্ব দ্রুত লোপ পেয়ে যাচ্ছে। কারণ সমাজের ওপর সেসবের নিদিষ্ট বস্তুবাদী কল্যাণ দেখা যাচ্ছে না। শ্রেণী বা গোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য বলিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধনের চূড়ান্ত প্রয়োজন অনুভূত হতো যে যুগে, আধুনিক পাশ্চাত্যে তার স্থান অধিকার করেছে ব্যাপকতরো শিরোনামযুক্ত এক নতুন সমাজ সংহতির যুগ। যে সমাজ অপরিহার্যরূপে শিল্প বিজ্ঞান প্রভাবিত এবং যা দ্রুত ক্রমবর্ধমান গতিতে স্রেফ যান্ত্রিক ধারায় গড়ে উঠছে, সেখানে পিতার প্রতি পুত্রের আচরণের কোন বিশেষ সামাজিক গুরুত্ব থাকতে পারে না, যতক্ষণ ব্যক্তি বিশেষ তার আচরণে পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্কে সমাজের নির্ধারিত সাধারণ শালীনতার সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে। ফলে পাশ্চাত্যের পিতা প্রতিদিন। পুত্রের ওপর তার কর্তৃত্ব ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে এবং সম্পূর্ণ ন্যায়সংগতভাবে পুত্র পিতার প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। যে যান্ত্রিক সমাজের অন্তর্নিহিত প্রবণতা রয়েছে ব্যক্তি বিশেষের ওপর অপরের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা লোপ করার, তার বিধান তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ধীরে ধীরে প্রাধান্য বিস্তার করছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাকে অচল করে দিচ্ছে। কারণ উপরিউক্ত ধারণার ন্যায়সঙ্গত বিকাশের খাতিরে পারিবারিক সম্পর্কের সুযোগ-সুবিধাও লোপ পেতে বাধ্য।”১
[1. Islana at the Crossroads, the tragedy of Europe, (অনুবাদ সংঘাতের মুখে ইসলাম মক পুস্তক থেকে গৃহীত, পৃ. ৩১, ইফাবা প্রকাশিত, তৃতীয় মুদ্রণ। অনুবাদঃ আবদুল মান্নান সৈয়দ। ]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/788/149
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।