hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১১০
গ্রীক সভ্যতা
গ্রীক সভ্যতার চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সমালোচনা থেকে সেই সমস্ত অংশ বাদ দিয়ে যেগুলো মুখ্য নয়, বরং গৌণ ও ডালপালা পর্যায়ের ও নিছক দৃশ্যমান বস্তু এবং যেগুলো সাধারণ মানবীয় সভ্যতার মধ্যে সাজুয্যপূর্ণ তার একটি সুনির্দিষ্ট মেযাজের পরিচয় পাওয়া যায়। এর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

(১) যে সব ব্যাপার বা বিষয় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় সেগুলোর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ও সেসবের প্রতি সন্দেহ পোষণ;

(২) ধর্মীয় অনুভূতির অভাব ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে ঘাটতি;

(৩) ভোগবাদিতা ও পার্থিব আরাম-আয়েশের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ;

(৪) দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি।

আমরা এ সবের বিভিন্ন দিক ও শাখা-প্রশাখাকে যদি এক শব্দে প্রকাশ করতে চাই, তবে এর জন্য এককভাবে বস্তুবাদ' শব্দটিই যথেষ্ট হবে। অতএব গ্রীক সভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বস্তুবাদ। গ্রীকদের দর্শনশাস্ত্র, কাব্য, এমন কি ধর্ম পর্যন্ত সব কিছুই তাদের বস্তুবাদী স্পিরিটের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা আল্লাহর সিফাত তথা গুণাবলী ও তাঁর কুদরতের ধারণা বিভিন্ন দেবতার আকার-আকৃতি ব্যতিরেকে করতে পারেনি। তারা ঐ সব গুণের মূর্তি গড়েছে এবং সেসব দেবতার জন্য উপাসনালয় তৈরি করেছে যাতে করে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পন্থায় সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা যায়। জীবিকার জন্য তাদের ছিল এক দেবতা, দয়া-মায়া ও করুণার আরেক দেবতা, আর এক দেবতা ছিল আযাব ও গযবের তথা শাস্তির। এরপর তারা সেগুলোর দিকে বস্তুগত দেহের সমস্ত বৈশিষ্ট্য ও সম্পর্কযুক্ত বিষয় সম্পর্কিত করে এবং সে সবের চতুর্পার্শ্বে কিসসা-কাহিনীর জাল বিছিয়ে দেয়। তারা অঙ্গবিহীন আবেগ-অনুভূতিকে পর্যন্ত দৈহিক ও আঙ্গিক কাঠামোরূপে পেশ করে। তাদের মতে প্রেমের ছিল এক দেবতা আর আরেক দেবতা ছিল সৌন্দর্যের। এ্যারিস্টোটলের দর্শনে দশ প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি (Osic ০১e Ten kinds of Predication) ও নয় মহাশূন্যের যেই তালিকাসূচী পাওয়া যায় তাও এই বস্তুবাদী বুদ্ধিবৃত্তিরই বিস্ময় ও চমক্কাররিতু যার প্রভাব থেকে গ্রীক প্রকৃতি ও মানস কখনো মুক্তি পায়নি।

পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরাও গ্রীক সভ্যতায় বস্তুবাদের প্রাধান্যকে মেনে নিয়েছেন এবং তাদের লিখিত গ্রন্থ ও পুঁথি-পুস্তকে এবং তাত্ত্বিক আলোচনায় এর দিকে তারা অঙ্গুলি সংকেত করেছেন। কয়েক বছর আগে ড. হাস নামক জনৈক পাশ্চাত্য লেখক জেনেভায় What is European Civilization? শীর্ষক তিনটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তারই একটি উক্তি খালেদা এদিব খানমের সূত্রে নিম্নে উদ্ধৃত করা হচ্ছেঃ

“বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার কেন্দ্র ছিল প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা। তাদের দৃষ্টিতে আসল কথা হচ্ছে মানুষের সমগ্র শক্তির সুসমন্বিত বিকাশ এবং সবচেয়ে বড় আদর্শ হচ্ছে সুন্দর, সুঠাম ও সুডৌল দেহধারী মানুষ। স্পষ্টত এতে সবচে' বেশী জোর দেয়া হয়েছে অনুভূতির ওপর। দৈহিক প্রশিক্ষণ (Physical Education) বা শরীর চর্চা, খেলাধুলা, নৃত্য ইত্যাদির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো। মানসিক শিক্ষা যা কাব্য চর্চা, সঙ্গীত, নাটক, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি নির্ভর ছিল, একটি। বিশেষ সীমার বাইরে অগ্রসর হতে পারেনি যাতে করে মননশীলতার উন্নতি দৈহিক উন্নতির ক্ষতির কারণ হতে না পারে। গ্রীসের ধর্মে না আধ্যাত্মিকতার কোন উপাদান আছে আর না আছে ধর্মীয় বিদ্যা বা ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা আর না আছে ধর্মীয় নেতাদের কোন শ্রেণী।”১

[১. Halide Edib: The conflict of East and West in Turkey, p. 226-227. ]

অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত ও লেখক গ্রীকদের ধর্মীয় দুর্বলতা ও তাদের ওপর কর্মের প্রভাবহীনতা এবং ধর্মীয় কাজকর্ম ও প্রথার মধ্যে যথাযথ গুরুত্বের অভাব খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের আধিক্যের কথা উল্লেখ করেছেন। History of European Morals-এর লেখক Lecky বলেনঃ The Greek spirit was essentially rationalistic and eclectic, the Egyptian spirit was essentially mystical and devotional. অর্থাৎ গ্রীকদের স্পিরিট ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক ও মস্তিষ্কনির্ভর পক্ষান্তরে মিসরীয়দের গোটাটাই ছিল আধ্যাত্মিক ও আত্মিক। তিনি Apuleius-এর এই উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ

The Egyptian deities were chiefly honoured by lamentations and the Greek divinities by dances. অথাৎ মিসরীয় দেবতারা তুষ্ট ও সম্মানিত হয় কান্নকাটি ও আহাজারিতে আর গ্রীক দেবতারা খুশী হয় নৃত্যে।

এরপর লেখক বলেনঃ

The truth of that last part of this very significant remark appears in every page of Greek history. No nation has a richer collection of games and festivals growing out of its religious system; in none did a light, sportive and often licentious fancy play more fearlessly around, the popular creed in none was religiours terrorism more rare, The Divinity was seldom looked upon as holier than man, and a due observance of certain rites and ceremonies was demed an ample tribute to pay to him..

অর্থাৎ এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, এই উক্তির শেষ অংশের সত্যতা গ্রীসের ইতিহাসে পদে পদে পাওয়া যায়। বস্তুত কোন ধর্মের প্রথা-পদ্ধতি ও আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে আনন্দ উৎসব, ক্রীড়া-কৌতুক ও খেল-তামাশার এতটা মিশ্রণ পাওয়া যায় না যতটা পাওয়া যায় এতে। আবার তেমনি কোন ধর্মে ভয়-ভীতির উপাদান এত কম পাওয়া যায় না যতটা পাওয়া যায় এতে। এই ধর্মে আল্লাহর পবিত্রতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা সম্পর্কে এতটাই ধারণা পাওয়া যায় যতটুকু ধারণা মানুষ কোন বুযুর্গ সম্পর্কে পোষণ করে থাকে। ব্যস, এর বেশি নয় এবং আল্লাহকে কতকগুলো মামুলী প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠান সহকারে স্মরণ করা তাদের দৃষ্টিতে তার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য প্রকাশের জন্য ছিল যথেষ্ট।১

[১. W.E.H. Lecky: History of European Morals, London 1869. Vol-1.-P.344-45. ]

কিন্তু এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই। পাশ্চাত্যের বস্তুপূজারী ও অনুভূতিপ্রবণ মেযাজ ও প্রকৃতি ছাড়াও গ্রীকদের ধর্মীয় দর্শন ও তাদের আকীদা-বিশ্বাসের অবয়বটাই এমন ছিল যে, ভয়-ভীতিমিশ্রিত শ্রদ্ধা-ভক্তি ও বিনয়, আল্লাহমুখী হওয়ার প্রবণতা তাদের ভেতর জন্মই নিতে পারত না। আল্লাহর যাবতীয় সিফাত তথা গুণাবলী, সর্বপ্রকার এখতিয়ার, কর্ম, নির্বাহী ক্ষমতা, সৃষ্টি ও আদেশ দানের। ক্ষমতার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন এবং তাকে একেবারেই নিণ ও ক্ষমতা রহিত হিসাবে অভিহিত করা এবং এই বিশ্বজগতের সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনাকে নিজেদের মনগড়া ও কল্পিত সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তির দিকে সম্পৃক্ত করার স্বাভাবিক ও যৌক্তিক পরিণতি এটাই হতে পারে যে, জীবনে আল্লাহর কোন আবশ্যকতা এবং তার সঙ্গে কোনরূপ সম্পর্ক ও তাঁর প্রতি কোন আকর্ষণ কিংবা আগ্রহ থাকবে না, তার প্রতি থাকবে না কোন আশাবাদ, তেমনি থাকবে না তার সম্পর্কে কোন প্রকার ভয়, দিলে থাকবে না কোন ভীতি কিংবা ভালবাসা। প্রয়োজন মুহূর্তে ও বিপদের সময় তাঁর কাছে দোআ প্রার্থনা ও সকাতর অনুনয়-বিনয় করবে না, করার প্রয়োজন বোধও করবে না। কেননা এই দর্শন অনুসারে তিনি (আল্লাহ তা'আলা) এমন এক সত্তা যিনি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও নিষ্ক্রিয়। সমগ্র বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনায়। যার না কোন এখতিয়ার আছে আর না আছে কোন শক্তি ও ক্ষমতা। তিনি প্রথম বুদ্ধিবৃত্তি সৃষ্টি করার পর বিশ্বজগত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ও সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন পরিপূর্ণরূপে। এজন্য যারা এমন আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে তাদের জীবন কার্যত এমনভাবে অতিবাহিত হয় এবং অতিবাহিত হওয়া উচিত যেন আল্লাহ বলতে কিছু নেই এবং যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেন তাদের জীবন থেকে এই ঐতিহাসিক বর্ণনা-বিবৃতি ব্যতিরেকে যে, আল্লাহ তা'আলা কেবল প্রথম বুদ্ধি সৃষ্টি করেছেন আর এছাড়া তিনি অন্য কোন দিক দিয়ে বিশিষ্ট নন। অনন্তর আমরা যখন শুনি, গ্রীকদের মধ্যে ভয়-ভক্তিমিশ্রিত বিনয় ও শ্রদ্ধার ঘাটতি ছিল এবং তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ নিষ্প্রাণ এক কাঠামোের অতিরিক্ত আর কিছু ছিল না এবং যখন আমরা এও শুনি, তারা খোদা তথা পরম স্রষ্টাকে একজন শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বী বা বুযুর্গের চেয়ে বেশী মূল্য দিত না, সম্মান করত না, তখন আমাদের আদৌও বিস্মিত হওয়া ঠিক হবে না এজন্য যে, ইতিহাসে মানুষ শত শত শিল্পী, কারিগর ও আবিষ্কারকদের জীবনী পাঠ করে কিন্তু কখনো তাদের প্রতি তাদের মনে ভয়-ভক্তিমিশ্রিত বিনয় ও শ্রদ্ধা এবং তাদের সঙ্গে বন্দেগী ও দাসত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। বন্দেগীর সম্পর্ক তো সেই সময় সৃষ্টি হয় যখন মানুষ আল্লাহকে এই বিশ্বজগতের মালিক মুখতার তথা সর্বময় ক্ষমতার আধার মনে করে এবং নিজেকে তার মুখাপেক্ষী ভাবে।

পার্থিব জীবনের প্রতি পরম আগ্রহ ও ভালবাসা, এর প্রতি সম্মান ও গুরুত্ব প্রদানের ওপর অত্যধিক জোর প্রদান ও বাড়াবাড়ি প্রদর্শন, ভাস্কর্য ও মূর্তির প্রতি আকর্ষণ, সূর ও গান-বাজনার মধ্যে নিমগ্নতা ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা এবং সীমাহীন ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর সীমাতিরিক্ত জোর প্রদানের ফলে গ্রীসের নৈতিক চরিত্র ও সমাজ জীবনের ওপর খারাপ আছর পড়ে। নৈতিক ও চারিত্রিক বেলেল্লাপনা, সব রকমের আইন-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিত্য-দিনের ফ্যাশনে পরিণত হয়। প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনার আনুগত্য, যতটা বেশি পারা যায় জীবনের আনন্দ ও স্বাদ-আহলাদ লুটে নেয়া এবং নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’ অথবা ‘আজ মরলে কাল দু'দিন’ -অতএব পেছনের ভাবনা ভেবে নিজেকে বঞ্চিত না করে বর্তমানটাকে যতটা পারা যায় ভোগ করাকে মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীনতার সমার্থক ভাবা হতে থাকে। প্লেটো একজন গণতন্ত্রী যুবকের যেই জীবন-চরিত ও জীবন যাপন পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন সেই বর্ণনার সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর একজন মুক্ত বুদ্ধির অধিকারী টগবগে তরুণের আপাদমস্তক মিল রয়েছে। দুজনকে আদৌ ভিন্নতরো মনে হয় না।

“যদি তাকে বলা হয়, মানুষের সব রকমের আকাক্ষা ও কামনা-বাসনা একই রূপ সম্মান ও পূরণযোগ্য নয়। কিছু কিছু কামনা-বাসনা পসন্দনীয় ও সম্মানযোগ্য এবং সেগুলো পূরণ করায় কোন ক্ষতি নেই। আর কিছু কিছু আছে যেগুলো পসন্দনীয় নয়। এগুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম এবং এ সবের ওপর বাধা-নিষেধ ও বাধ্যবাধকতা আরোপ করা জরুরী, তখন সে এই সহী-শুদ্ধ আইন। কবুল করে না, মেনে নেয় না, এমন কি সে এ ধরনের কথা শোনার জন্যও তৈরি হয় না। যখন তার সামনে এ ধরনের যুক্তিসঙ্গত কথা রাখা হয় তখন সে পি ও উপহাসের ভঙ্গীতে মাথা নাড়ে এবং সজোরে এই বৃক্ততা দিতে শুরু করে যে, মানুষের সর্বপ্রকার আকাভক্ষা ও কামনা-বাসনাই একই রূপ সম্মানযোগ্য। সে মাফিক সে জীবন যাপন করে এবং তার সর্বপ্রকার প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনাকে পরিতৃপ্ত করে, তার প্রতিটি আকাঙ্ক্ষাই সে চরিতার্থ করে, পূরণ করতে থাকে এবং যখন তার মন যা চায় তাই সে করে। কখনো তাকে মাতালে অবস্থায় গান-বাজনায় মত্ত দেখতে পাওয়া যাবে, আবার কখনো খেয়াল চাপল তো পণ করে কেবল পানি পানকেই যথেষ্ট ভাববে। কখনো সামরিক প্রশিক্ষণ ও তার নিয়মাবলী শিখতে দেখা যাবে, আবার কখনো একেবারে বেকার ও অলস জীবন যাপন করতে পাওয়া যাবে এবং সব কিছুকেই তাকে তুলে রাখবে। কখনো দার্শনিকসুলভ জীবন যাপন করতে থাকবে, আবার অন্য সময় রাজনৈতিক জীবনেও অংশ গ্রহণ করবে, রাজনৈতিক কার্যক্রমে যোগ দেবে এবং সময়ের চাহিদা মেটাতে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে বৃক্ততা দিতেও দেখা যাবে, এমন কি তাকে সৈনিকদের প্রশংসা করতে শোনা যাবে এবং তাদের প্রতি তার আগ্রহ লক্ষ্য। করা যাবে। কখনো-বা সফল ব্যবসায়ীর প্রতি ঈর্ষাপরবশ হয়ে ব্যবসা শুরু করে। দেবে। মোটকথা, তার জীবনের কোন নিয়ম নেই, শৃঙ্খলা নেই, সুনির্দিষ্ট কোন বিধানের অনুসরণ নেই। মজার ব্যাপার হলো এই যে, সে এই জীবনকে খুবই আনন্দদায়ক, রসঘন ও অবাক মনে করে এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই সে জীবন কাটায়।”১

[১. প্লেটোর রিপাবলিক। ]

১৯৭ পাশ্চাত্যের স্বভাব ও প্রকৃতির আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ। এশিয়ার তুলনায় জাতীয়তাবাদী প্রেরণা য়ুরোপে অধিকতর শক্তিশালী ও ব্যাপক। এ ব্যাপারে কিছুটা ভৌগোলিক অবস্থানেরও ভূমিকা রয়েছে। এশিয়ায় প্রাকৃতিক এলাকা অধিক বিস্তৃত। বিভিন্ন প্রকারের আবহাওয়া, পাহাড়-পর্বত এবং মানুষের নানাবিধ কিসিমসংবলিত, অধিকতর উর্বর। তদুপরি জীবনোপকরণের ক্ষেত্রেও প্রাচুর্যের সমাহার। এশিয়া মহাদেশে রাজ্যের প্রবণতা স্বভাবতই বিস্তৃতি ও সাধারণ ব্যাপকতার দিকে এবং এশিয়া ভূখণ্ডে পৃথিবীর বিস্তৃততম সামাজ্য কায়েম হয়েছে। এর বিপরীতে য়ুরোপে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, অস্তিত্ব রক্ষার কঠিন সংগ্রাম ও সংঘর্ষ অব্যাহতভাবেই দেখতে পাওয়া যায়। এর জনবসতি ঘন, এলাকা সংকীর্ণ এবং জীবন-উপকরণ সীমিত। পাহাড়-পর্বত ও নদী-নালার প্রাকৃতিক সীমানা পাশ্চাত্য জাতিগোষ্ঠীগুলোকে স্থায়ীভাবে সংকীর্ণ প্রাকৃতিক বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ করে দিয়েছে, বিশেষত য়ুরোপের মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভাগ বিস্তৃত রাজ্যের লালন-পালন ও বিকাশের জন্য অনুকূল নয়। এজন্য প্রাচীন য়ুরোপেও রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা নগর-রাষ্ট্রের (City-state) ঊর্ধ্বে অগ্রসর হতে পারেনি যার আয়তন কয়েক মাইলের বেশী বিস্তৃত হতো না। তথাপি তা সম্পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসিত হতো। এর সর্বাপেক্ষা বড় নজীর গ্রীসে পাওয়া যাবে যেখানে প্রাচীন কাল থেকেই অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বায়ত্তশাসিত নগর-রাষ্ট্রের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়।

অতএব, এটা মোটেই বিস্ময়কর নয়, গ্রীসের লোকেরা জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিল। বিজ্ঞানী লেকী স্বীকার করেন এবং বলেন, সক্রেটিস ও Anaxagorias যে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রের ধ্যান-ধারণার কথা কখনো কখনো ব্যক্ত করেছেন গ্রীসে তা কখনোই জনপ্রিয় ধারণা ও মতবাদ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এবং সেখানে তাদের কোন সমর্থকও ছিল না। এরিস্টোটলের System of Ethics তথা নৈতিক বিধি-ব্যবস্থা গ্রীক ও অগ্রীক-এর ভেদ রেখার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। দার্শনিক ও পণ্ডিত মহলের সম্মিলিত চেষ্টায়। নৈতিকতার শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণাবলীর যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল তার শীর্ষে ছিল দেশপ্রেম। এরিস্টোটল তো এতদূর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে ছিলেন যে, গ্রীসের লোকেরা বিদেশীদের (অর্থাৎ যারা গ্রীক নগর রাষ্ট্রে অধিবাসী নয়) সাথে সেই রূপ ব্যবহার ও আচরণ করবে যা তারা পশু ও জীব-জন্তুর সাথে করে। এ জাতীয় চিন্তাধারা গ্রীসের লোকদের ভেতর এমন বদ্ধমুল হয়ে গিয়েছিল এবং এর প্রভাব এতদূর জেঁকে বসেছিল যে, যখন জনৈক দার্শনিক বললেন, আমার সহানুভূতির পরিধি কেবল আমার নিজের দেশের মধ্যেই সীমিত নয় বরং সমগ্র গ্রীসব্যাপী আবর্তিত তখন লোকে তাকে বিস্ময়ভরে দেখতে লাগল।১

[১. History of European Morals, London 1809, Vol. p. 243 ]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন