hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)

১২৬
আল্লাহ বিস্মৃতি ও আত্মবিস্মৃতি
ঐ সব লোক যারা অন্য কোন জীবনে বিশ্বাসী নয়, ‘খাও-দাও, ফুর্তি কর, জীবনের স্বাদ লুটে নাও’ ছাড়া অন্য কোন জীবন-দর্শনে যাদের বিশ্বাস নেই কিংবা ব্যক্তিগত ও জাতীয় সমুন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি ছাড়া যারা আর কোন মহত্তর লক্ষ্যে বিশ্বাস রাখে না এবং আল্লাহর সঙ্গে এই নামকাওয়াস্তে এই সামান্য কিছু ছাড়া যাদের কোন সম্পর্ক নেই তাদের সম্বন্ধে এই আশা পোষণ করা কতটা সঠিক হবে যে, কোন বিপদ মুহূর্তে তাদের ভেতর সকাতর অনুনয়-বিনয় দেখা দেবে এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের অবস্থা সৃষ্টি হবে। কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে কুরআন বলেঃ তারা বিপদ-আপদের সময় কেবল আল্লাহকে ডেকে থাকে এবং এমনতরো মুহুর্তে কেবল আল্লাহর কথাই স্মরণ হয়। কিন্তু য়ুরোপের। বস্তুপূজারীরা বস্তুপূজার ক্ষেত্রে এতটা এগিয়ে যায় এবং বাহ্যিক উপায়-উপকরণ ও কার্যকারণ তাদের ওপর এতটা জেঁকে বসে, তাদের জীবনে আল্লাহবিমুখতা এবং হৃদয় এতটা কঠিন ও অনুভূতিশূন্য হয়ে গিয়েছিল যে, তারা এই আয়াতের প্রতিপাদ্যে পরিণত হয়।

( وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَاۤ إِلَىٰۤ أُمَم مِّن قَبۡلِكَ فَأَخَذۡنَـٰهُم بِٱلۡبَأۡسَاۤءِ وَٱلضَّرَّاۤءِ لَعَلَّهُمۡ یَتَضَرَّعُونَ ۝ فَلَوۡلَاۤ إِذۡ جَاۤءَهُم بَأۡسُنَا تَضَرَّعُوا۟ وَلَـٰكِن قَسَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَزَیَّنَ لَهُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ )

[Surah Al-An'am 42 - 43]

“তোমার পূর্বেও বহু জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি; তারপর তাদেরকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ- ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করেছি যাতে তারা বিনীত হয়। অনন্তর আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আপতিত হলো তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।” (সূরা আনআমঃ ৪২-৪৩)

অন্য সূরায়ঃ

( وَلَقَدۡ أَخَذۡنَـٰهُم بِٱلۡعَذَابِ فَمَا ٱسۡتَكَانُوا۟ لِرَبِّهِمۡ وَمَا یَتَضَرَّعُونَ )

[Surah Al-Mu'minun 76]

“আমি ওদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু ওরা ওদের প্রতিপালকের প্রতি বিনীত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।” (মু'মিনুনঃ ৭৬)

অনন্তর আপনি যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তেও এবং সঙ্গীনতম সময়ও আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ, বিনীত অবস্থা, দিলের ভঙ্গুরতা, নমনীয়তা ও বান্দাসুলভ মানসিকতা তাদের ভেতর দেখতে পাবেন না। তেমনি জাতির আচার-আচরণ, কার্যকলাপ, ক্রীড়া- কৌতুক ও হাসি-তামাশার ভেতরও আপনি কোনরূপ পার্থক্য দেখবেন না। পাশ্চাত্যের দার্শনিক ও চিন্তাশীল মহল, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এ নিয়ে গর্ব করে থাকে এবং একেই তারা মানসিক স্থৈর্য ও দৃঢ়তা, প্রশংসনীয় মনোবল এবং জাতীয় মর্যাদাবোধ বলে অভিহিত করে থাকে। প্রাচ্যের আল্লাহ পূজারী এবং মুসলমানদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা হৃদয়হীনতা, গাফিলতি ও ক্রীড়া-কৌতুকে মেতে থাকা, সংজ্ঞাহীনতা ও আত্মবিস্মৃতি বৈ কিছু নয়।

“লন্ডনে একরাত” শিরোনামে লন্ডনেই বসবাসকারী জনৈক ভারতীয় (পরে পাকিস্তানী) ১৯৪০-৪১ সালের বিশ্বযুদ্ধকালীন বিমান হামলার সময়কার ঘটনা তার নিজের আত্মজীবনীতে এভাবে পেশ করেছেন।

“আমরা সেই রাত্রে সমস্ত বন্ধু-বান্ধব কয়েক দিন কয়েক রাত উপপরি বিমান হামলার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে এক অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ সম্মলিত ইংরেজ-ভারতীয় খানাপিনার আয়োজনে মেতে উঠলাম। গৃহকত্রী যিনি ছিলেন তিনি তার বাবুর্চিখানা ও তার যাবতীয় সামান আমাদের সোপর্দ করলেন এবং উপরতলার বড় কামরাটিও নাচের জন্য খালি করে দিলেন। আমরা জনা পঁচিশেক নারী-পুরুষ সবাই মিলে নিজের হাতে রান্না করলাম। এরপর খানাপিনা শেষে নাচ-গান শুরু করলাম। এমন সময় অকস্মাৎ বিমান হামলার বিপদ সংকেত হিসাবে সাইরেন বেজে উঠল। প্রথমে তো আমরা সবাই একদম নিচ্চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের নাচ অব্যাহত রইল। এমত অবস্থায় একজন বলে উঠল, এখন কি করতে চাও? Go on' (চালিয়ে যাও) এই ছিল জনৈক মহিলার উত্তর। তারপর নাচগান পূর্বের মতই অব্যাহত রইল। আমরা নাচতে থাকলাম। আর আমাদের নাচগান ও অট্টহাসির শব্দে বাড়ি তো বাড়ি গোটা মহল্লাটাই কেঁপে উঠতে লাগল।"

উদ্ধৃত অংশেরই কিছু ওপরে তিনি লিখছেনঃ

“অল্প দিন পরই এটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলো যে, প্রতি দিনই সন্ধ্যা ৭-৮ টার দিকে সাইরেন বাজত। শত্রু বিমানের প্রপেলারের ঘর ঘর আওয়াজ শোনা যেত। সার্চ লাইটের জ্বলন্ত জাল আসমানে নিভে যেত। আর এ দিকে বিমান বিধ্বংসী কামানের আওয়াজে কানে তালা লাগার জোগাড়। হতো। আসমান-যমীন কেঁপে উঠত থরথর করে। সে সময় সিনেমা হলগুলোতে সিনেমা প্রদর্শন অব্যাহত থাকলে ছবি কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যেত এবং পর্দায় নিম্নোক্ত নির্দেশ ভেসে উঠত।

“এখন বিমান হামলা শুরু হয়েছে। কিন্তু তদ্সত্ত্বেও ছবি প্রদর্শন অব্যাহত থাকবে। যেসব দর্শক আশ্রয় কেন্দ্রের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চান যেতে পারেন। নিচে বাম দিকেই যাবার পথ রয়েছে।

“কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, একজনও তার আসন ছেড়ে উঠত না, সবাই যার যার আসনে বসে থাকত, এরপর যথানিয়মে ছবি প্রদর্শন শুরু হয়ে যেত।”১

[১. আগা মুহাম্মদ আশরাফ দেহলভী এম.এ. কৃত “হাওয়াই হামলা”, পৃ.৭১। ]

“ক্রীড়া-কৌতুক ও খেল-তামাশার মধ্যে এ ধরনের নিমগ্নতা ও আত্মবিস্মৃতির দৃষ্টান্ত প্রাচীন গ্রীস ও রোমেই কেবল দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাসে বর্ণিত আছে, যে ঐতিহাসিক পম্পেই নগরীর আগ্নেয়গিরিতে যখন বিস্ফোরণ ঘটে এবং আকাশ থেকে যখন অগ্নি শিখা ও জ্বলন্ত অঙ্গার বর্ষিত হয় এবং মাটিতে ভূমিকম্প দেখা দেয় তখন ছিল দিনের বেলা। লোকজন এমফি থিয়েটারে (যেখানে একই সঙ্গে বিশ হাজার দর্শক উপবেশন করতে পারত) বসে সার্কাস দেখছিল যেখানে হিংস্র প্রাণী খাঁচার মধ্যে জীবন্ত মানুষকে ছিড়ে ফেড়ে ও কামড়ে খাচ্ছিল। ঠিক এমনি এক নিষ্ঠুর ও ললামহর্ষক খেলতামাশা চলাকালেই ভূমিকম্প শুরু হয়, শুরু হয় আকাশ থেকে অগ্নি বৃষ্টি। যে যেখানে ছিল সেখানে জ্বলে ভস্মীভূত হয়ে যায়। যারা বাইরে বেরিয়ে ছিল তারাও প্রচণ্ড অন্ধকারে পরস্পরের ধাক্কাধাক্কিতে আহত ও নিহত হয়। এভাবে আহত-নিহতদের সংখ্যা যে কত ছিল কে তা নিরূপণ করবে? অল্প সংখ্যক সৌভাগ্যবান লোকই কেবল এই মহাদুর্যোগের হাত থেকে নৌকা ও জাহাজযোগে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল। আঠার শশা বছর যাবত এই শহর পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগেই কেবল জানা যায়, শহরটি একেবারে হারিয়ে যায় নি, বরং মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। খনন কাজ শুরু হয় এবং কয়েক বছরের নিরন্তর চেষ্টার পর সবক হাসিলের উপকরণরূপী মিউজিয়াম হিসাবে অবিকল শহরটি গোটাই আবিষ্কৃত হয়।”

( أَوَأَمِنَ أَهۡلُ ٱلۡقُرَىٰۤ أَن یَأۡتِیَهُم بَأۡسُنَا ضُح ى وَهُمۡ یَلۡعَبُونَ )

[Surah Al-A'raf 98]

“তবে কি জনপদের অধিবাসীরা ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের ওপর আসবে পূর্বাহ্নে যখন তারা থাকবে ক্রীড়ারত?” (সূরা আল-আ'রাফঃ ৯৮)।

আল্লাহ পূজারী, আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে যারা অবহিত তাদের কর্মপন্থা, জীবনধারা, চরিত্র ও ব্যবহার, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বিপদ মুহূর্তে উপরিউক্ত কর্মপন্থার চাইতে কতটা ভিন্ন ও বিরোধী তার পরিমাপ কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতের সঙ্গেও করা যেতে পারে।

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِذَا لَقِیتُمۡ فِئَة فَٱثۡبُتُوا۟ وَٱذۡكُرُوا۟ ٱللَّهَ كَثِیر ا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ )

[Surah Al-Anfal 45]

“হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের মুখখামুখি হবে তখন অবিচলিত থাকবে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করবে যাতে করে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা আনফালঃ ৪৫)

সাহাবায়ে কিরাম (রা) বলেন, যখনই কোন সমসা-সংকুল ও সংকটজনক। পরিস্থিতি এসে পড়ত অমনি রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। বদর যুদ্ধের সময় নবী করীম (ﷺ) কাতার সোজ। করেন সাহাবায়ে কিরাম (রা)-কে কাফিরদের মুকাবিলায় দাঁড় করিয়ে দেন এবং নিজে তাঁবুতে গিয়ে আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে গিয়ে মুনাজাত ও ফরিয়াদ করতে শুরু করেন। এ সময় তিনি বলছিলেনঃ হে আল্লাহ! এই দলটি যদি আজ ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে দুনিয়ার বুকে তোমার ইবাদত-বন্দেগী করার মত আর কেউই থাকবে না।”

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন