HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কিতাবুস্ সালাত
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
কিতাবুস্ সালাত
বইটিতে সালাত আদায়ের পদ্ধতির বিবরণসহ আরো রয়েছে-
পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
সালাতে প্রচলিত ভুল-ত্রুটির সংশোধন।
মনোযোগ দিয়ে সালাত আদায়ের নিয়ম।
সালাতে পঠিত দু‘আসমূহের শাব্দিক অর্থসহ পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ।
কুরআন মাজীদের শেষ ১০টি সূরার শানে নুযূল ও শিক্ষাসহ তাফসীর।
সালাতের স্থায়ী সময়সূচী (বইয়ের শেষে)।
সংকলন
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
বইটিতে সালাত আদায়ের পদ্ধতির বিবরণসহ আরো রয়েছে-
পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
সালাতে প্রচলিত ভুল-ত্রুটির সংশোধন।
মনোযোগ দিয়ে সালাত আদায়ের নিয়ম।
সালাতে পঠিত দু‘আসমূহের শাব্দিক অর্থসহ পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ।
কুরআন মাজীদের শেষ ১০টি সূরার শানে নুযূল ও শিক্ষাসহ তাফসীর।
সালাতের স্থায়ী সময়সূচী (বইয়ের শেষে)।
সংকলন
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘‘কিতাবুস্ সালাত’’ বইটি বের করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুক্রিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
সালাত হলো ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় ভিত্তি। মুসলিম, বালেগ, নারী-পুরুষ সকলের জন্য যতক্ষণ পর্যমত্ম তার জ্ঞান-বুদ্ধি ঠিক আছে ততক্ষণ পর্যমত্ম পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা তার উপর ফরয। আর সালাত সেভাবেই আদায় করতে হবে, যেভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ আদায় করেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
صَلُّوْا كَمَا رَاَيْتُمُوْنِيْ اُصَلِّيْ
তোমরা ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৭২৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৯৭)
তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে সালাত আদায় করেছেন তা জানা সকলের দায়িত্ব। যার সালাত যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী হবে তার সালাত তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে।
সালাত আল্লাহর স্মরণেই আদায় করতে হয়। সূরা ত্বা-হা এর ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার স্মরণেই সালাত কায়েম করো।’’ কিন্তু সালাতে দাঁড়ালে নানা বিষয় মনে পড়তে থাকে। মনোযোগ দিয়ে সালাত আদায়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে বইটিতে।
বাজারে নামায শিক্ষা বইয়ের অভাব নেই। কিমত্মু সালাতের সঠিক নিয়ম-কানুন সম্বলিত বই খুব কমই আছে। অনেকে নির্দিষ্ট কোন দল বা মতামতের অনুসরণ করেই সালাতের বই লিখেছেন। এর ফলে সালাত সংক্রামত্ম অনেক সহীহ হাদীসের উপর আমল বাদ পড়েছে। আবার তাতে এমন অনেক নিয়ম-কানুন লিখা হয়েছে, যার কোন ভিত্তি নেই।
সেজন্য সরাসরি হাদীসগ্রন্থ থেকে হাদীসের তাহকীক (সনদ যাচাই) করে মাকতাবাতুশ শামেলা এর নাম্বার অনুযায়ী মূল হাদীস গ্রন্থের নাম্বার দিয়ে দলীলসহ এ গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে। যেসব মাসআলায় মতভেদ রয়েছে সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিক সহীহ হাদীসের আলোকে গৃহীত মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
সালাত আদায়ের সঠিক নিয়ম-কানুন এবং সালাতে প্রচলিত ভুলত্রুটিসমূহের আলোচনাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এ বইটিতে সংযোজন করা হয়েছে । সেই সাথে গ্রন্থের শুরুতে ‘কিতাবুত তাহারাত’ নামে পবিত্রতা সংক্রামত্ম জরুরি বিষয়সমূহের আলোচনা সম্বলিত একটি অধ্যায়ও সংযোজন করা হয়েছে। আশা করি পাঠক ভাই ও বোনেরা এ বইটির মাধ্যমে সহীহ-শুদ্ধভাবে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকৃত হবেন। ইনশা-আল্লাহ।
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
‘‘কিতাবুস্ সালাত’’ বইটি বের করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুক্রিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
সালাত হলো ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় ভিত্তি। মুসলিম, বালেগ, নারী-পুরুষ সকলের জন্য যতক্ষণ পর্যমত্ম তার জ্ঞান-বুদ্ধি ঠিক আছে ততক্ষণ পর্যমত্ম পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা তার উপর ফরয। আর সালাত সেভাবেই আদায় করতে হবে, যেভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ আদায় করেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
صَلُّوْا كَمَا رَاَيْتُمُوْنِيْ اُصَلِّيْ
তোমরা ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৭২৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৯৭)
তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে সালাত আদায় করেছেন তা জানা সকলের দায়িত্ব। যার সালাত যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী হবে তার সালাত তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে।
সালাত আল্লাহর স্মরণেই আদায় করতে হয়। সূরা ত্বা-হা এর ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার স্মরণেই সালাত কায়েম করো।’’ কিন্তু সালাতে দাঁড়ালে নানা বিষয় মনে পড়তে থাকে। মনোযোগ দিয়ে সালাত আদায়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে বইটিতে।
বাজারে নামায শিক্ষা বইয়ের অভাব নেই। কিমত্মু সালাতের সঠিক নিয়ম-কানুন সম্বলিত বই খুব কমই আছে। অনেকে নির্দিষ্ট কোন দল বা মতামতের অনুসরণ করেই সালাতের বই লিখেছেন। এর ফলে সালাত সংক্রামত্ম অনেক সহীহ হাদীসের উপর আমল বাদ পড়েছে। আবার তাতে এমন অনেক নিয়ম-কানুন লিখা হয়েছে, যার কোন ভিত্তি নেই।
সেজন্য সরাসরি হাদীসগ্রন্থ থেকে হাদীসের তাহকীক (সনদ যাচাই) করে মাকতাবাতুশ শামেলা এর নাম্বার অনুযায়ী মূল হাদীস গ্রন্থের নাম্বার দিয়ে দলীলসহ এ গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে। যেসব মাসআলায় মতভেদ রয়েছে সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিক সহীহ হাদীসের আলোকে গৃহীত মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
সালাত আদায়ের সঠিক নিয়ম-কানুন এবং সালাতে প্রচলিত ভুলত্রুটিসমূহের আলোচনাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এ বইটিতে সংযোজন করা হয়েছে । সেই সাথে গ্রন্থের শুরুতে ‘কিতাবুত তাহারাত’ নামে পবিত্রতা সংক্রামত্ম জরুরি বিষয়সমূহের আলোচনা সম্বলিত একটি অধ্যায়ও সংযোজন করা হয়েছে। আশা করি পাঠক ভাই ও বোনেরা এ বইটির মাধ্যমে সহীহ-শুদ্ধভাবে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকৃত হবেন। ইনশা-আল্লাহ।
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلطَّهَارَةُ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
আর পারিভাষিক অর্থে তাহারাত হচ্ছে, যে অপবিত্রতা সালাত আদায় করতে বাধা প্রদান করে তা দূর করা।
পবিত্রতা দু’প্রকার। একটি হলো আত্মিক পবিত্রতা, অপরটি হলো শারীরিক পবিত্রতা।
১. আত্মিক পবিত্রতা :
আত্মার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধমূলক কার্যাবলি হতে আত্মাকে পবিত্র করার মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। যেমন- শিরকী ও বিদ‘আতী আকীদাহ পোষণ করা, সন্দেহ পোষণ করা, মুনাফিকী করা, রিয়া বা লোক দেখানো মনোভাব পোষণ করা, অহংকার করা, হাসাদ বা হিংসা করা, শত্রুতা পোষণ করা এবং কৃপণতা করা ইত্যাদি।
শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদাত করা, আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির সাথে অপরকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা, কুরবানী করা, মান্নত করা, সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। শিরক থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, পরিপূর্ণভাবে তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নেয়া।
বিদ‘আত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অথবা সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত বর্জন করে নতুনভাবে কোন ইবাদাত আবিষ্কার করা। সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে বিদ‘আত থেকে বাঁচা যায়। আর সুন্নাতের অনুসরণ বর্জন করলে মানুষ বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে যায়।
সন্দেহ হলো ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহের উপর পরিপূর্ণ দৃঢ়তা না থাকা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, ঈমানের বিষয়সমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
নিফাক বা মুনাফিকী হলো বাহ্যিকভাবে ঈমান প্রকাশ করা কিন্তু অন্তরে কুফরী গোপন রাখা। এ রোগ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, বাহ্যিক ও আভ্যমত্মরীণভাবে ইসলামের সকল বিধিবিধান মেনে নেয়া এবং সত্যতার সাথে তা গ্রহণ করা।
রিয়া হলো মানুষের প্রশংসা লাভের আশায় কোন ইবাদাত করা অথবা মানুষের সমালোচনার ভয়ে কোন ইবাদাত ত্যাগ করা। আর এসব ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রতিকার হলো, ইখলাস তথা আমত্মরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করা।
অহংকার হলো গোঁড়ামিবশত সত্যকে গ্রহণ না করা, মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা ও নিজেকে বড় মনে করা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা।
হাসাদ হলো অপরের সাথে হিংসা করা, মুসলিমদের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ করা এবং তাদের অকল্যাণ কামনা করা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও আমত্মরিকতা বজায় রাখা।
এ সকল অপরাধমূলক বিষয় হতে আত্মাকে মুক্ত রাখতে পারলে আত্মার পবিত্রতা অর্জিত হবে। আত্মা যখন পবিত্র হবে তখনই ইবাদাতের স্বাদ অনুভব করা যাবে এবং সালাতের মাহাত্ম্য বুঝা যাবে। আর তখনই সালাত বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযোগী করে তুলবে। অপরদিকে এ সকল পাপ কাজ করতে থাকলে অন্তর কলুষিত হয়ে যায়। ইবাদাত-বন্দেগীতে আকর্ষণ থাকে না এবং ইবাদাতের স্বাদও পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলের আত্মাকে পবিত্র রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন!
যে সকল পাপ মানুষের আত্মাকে অপবিত্র করে এবং ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়, সে সম্পর্কে বিসত্মারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রসত্ম হয়।’’
২. শারীরিক পবিত্রতা :
বাহ্যিক নাপাকী হতে শরীরকে পবিত্র করার মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। আর এ নাপাকী দু’প্রকার :
ছোট নাপাকী, যা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য অযু করতে হয়।
বড় নাপাকী, যা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করতে হয়।
আর কেউ যদি অযু ও গোসল করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তাকে তায়াম্মুম করতে হয়।
শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি :
ইসলামে শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি তিনটি। আর তা হলো,
১. গোসল করা।
২. অযু করা এবং
৩. তায়াম্মুম করা।
আর পারিভাষিক অর্থে তাহারাত হচ্ছে, যে অপবিত্রতা সালাত আদায় করতে বাধা প্রদান করে তা দূর করা।
পবিত্রতা দু’প্রকার। একটি হলো আত্মিক পবিত্রতা, অপরটি হলো শারীরিক পবিত্রতা।
১. আত্মিক পবিত্রতা :
আত্মার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধমূলক কার্যাবলি হতে আত্মাকে পবিত্র করার মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। যেমন- শিরকী ও বিদ‘আতী আকীদাহ পোষণ করা, সন্দেহ পোষণ করা, মুনাফিকী করা, রিয়া বা লোক দেখানো মনোভাব পোষণ করা, অহংকার করা, হাসাদ বা হিংসা করা, শত্রুতা পোষণ করা এবং কৃপণতা করা ইত্যাদি।
শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদাত করা, আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির সাথে অপরকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা, কুরবানী করা, মান্নত করা, সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। শিরক থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, পরিপূর্ণভাবে তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নেয়া।
বিদ‘আত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অথবা সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত বর্জন করে নতুনভাবে কোন ইবাদাত আবিষ্কার করা। সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে বিদ‘আত থেকে বাঁচা যায়। আর সুন্নাতের অনুসরণ বর্জন করলে মানুষ বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে যায়।
সন্দেহ হলো ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহের উপর পরিপূর্ণ দৃঢ়তা না থাকা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, ঈমানের বিষয়সমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
নিফাক বা মুনাফিকী হলো বাহ্যিকভাবে ঈমান প্রকাশ করা কিন্তু অন্তরে কুফরী গোপন রাখা। এ রোগ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, বাহ্যিক ও আভ্যমত্মরীণভাবে ইসলামের সকল বিধিবিধান মেনে নেয়া এবং সত্যতার সাথে তা গ্রহণ করা।
রিয়া হলো মানুষের প্রশংসা লাভের আশায় কোন ইবাদাত করা অথবা মানুষের সমালোচনার ভয়ে কোন ইবাদাত ত্যাগ করা। আর এসব ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রতিকার হলো, ইখলাস তথা আমত্মরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করা।
অহংকার হলো গোঁড়ামিবশত সত্যকে গ্রহণ না করা, মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা ও নিজেকে বড় মনে করা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা।
হাসাদ হলো অপরের সাথে হিংসা করা, মুসলিমদের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ করা এবং তাদের অকল্যাণ কামনা করা। এ থেকে অমত্মরকে পবিত্র করার উপায় হলো, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও আমত্মরিকতা বজায় রাখা।
এ সকল অপরাধমূলক বিষয় হতে আত্মাকে মুক্ত রাখতে পারলে আত্মার পবিত্রতা অর্জিত হবে। আত্মা যখন পবিত্র হবে তখনই ইবাদাতের স্বাদ অনুভব করা যাবে এবং সালাতের মাহাত্ম্য বুঝা যাবে। আর তখনই সালাত বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযোগী করে তুলবে। অপরদিকে এ সকল পাপ কাজ করতে থাকলে অন্তর কলুষিত হয়ে যায়। ইবাদাত-বন্দেগীতে আকর্ষণ থাকে না এবং ইবাদাতের স্বাদও পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলের আত্মাকে পবিত্র রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন!
যে সকল পাপ মানুষের আত্মাকে অপবিত্র করে এবং ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়, সে সম্পর্কে বিসত্মারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রসত্ম হয়।’’
২. শারীরিক পবিত্রতা :
বাহ্যিক নাপাকী হতে শরীরকে পবিত্র করার মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। আর এ নাপাকী দু’প্রকার :
ছোট নাপাকী, যা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য অযু করতে হয়।
বড় নাপাকী, যা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করতে হয়।
আর কেউ যদি অযু ও গোসল করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তাকে তায়াম্মুম করতে হয়।
শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি :
ইসলামে শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি তিনটি। আর তা হলো,
১. গোসল করা।
২. অযু করা এবং
৩. তায়াম্মুম করা।
তাহারাত তথা পবিত্রতা অর্জন করা অত্যমত্ম জরুরি। একজন মুমিনের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো ঈমানদার হওয়া। কোন ব্যক্তি যখন ঈমানদার হয় তখন তার উপর সালাত আদায় করা ফরয হয়ে যায়। কিমত্মু সালাত আদায়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা। এজন্য পবিত্রতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুমিনের একামত্ম কর্তব্য। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ﴾
আর আপনার পোশাক পবিত্র করুন। (সূরা মুদ্দাস্সির- ৪)
এ আয়াতে সকল মুসলিমকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেক :
عَنْ أَبِيْ مَالِكٍ اَ لْأَشْعَرِيِّ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ
আবু মালিক আল আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধাংশ। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৫৩; দারেমী, হা/৬৫৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৯; মিশকাত, হা/২৮১।]
পবিত্রতা অর্জন না করলে সালাত কবুল হয় না :
عَنْ أَنَسِ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ ، وَلَا صَدَقَةً مِنْ غُلُوْلٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল করেন না এবং চুরির মালের সাদাকাও কবুল করেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৩।]
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, পবিত্রতা অর্জন না করলে কোন ব্যক্তির সালাত শুদ্ধ হয় না। অথচ সালাত হচ্ছে ঈমানের একটি মূল ভিত্তি। যার উপর কোন ব্যক্তির মুসলিম হওয়া নির্ভর করে। আর তা সম্পাদন করতে যেহেতু পবিত্রতা অর্জন করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা থেকে অতি সহজেই বুঝা যায় যে, পবিত্রতা অর্জন করা অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتّٰى يَتَوَضَّأَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অপবিত্র হবে সে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৪; মিশকাত, হা/৩০০।]
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন :
কুবার অধিবাসী মুসলিমগণ ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করত। তাই তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿فِيْهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ﴾
তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন,
﴿اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
অপবিত্র থাকা কবরের শাস্তির কারণ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, এ কবর দুটির মধ্যে শাসিত্ম হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন অপরাধের জন্য শাসিত্ম ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবের সময় পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ﴾
আর আপনার পোশাক পবিত্র করুন। (সূরা মুদ্দাস্সির- ৪)
এ আয়াতে সকল মুসলিমকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেক :
عَنْ أَبِيْ مَالِكٍ اَ لْأَشْعَرِيِّ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ
আবু মালিক আল আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধাংশ। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৫৩; দারেমী, হা/৬৫৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৯; মিশকাত, হা/২৮১।]
পবিত্রতা অর্জন না করলে সালাত কবুল হয় না :
عَنْ أَنَسِ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ ، وَلَا صَدَقَةً مِنْ غُلُوْلٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল করেন না এবং চুরির মালের সাদাকাও কবুল করেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৩।]
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, পবিত্রতা অর্জন না করলে কোন ব্যক্তির সালাত শুদ্ধ হয় না। অথচ সালাত হচ্ছে ঈমানের একটি মূল ভিত্তি। যার উপর কোন ব্যক্তির মুসলিম হওয়া নির্ভর করে। আর তা সম্পাদন করতে যেহেতু পবিত্রতা অর্জন করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা থেকে অতি সহজেই বুঝা যায় যে, পবিত্রতা অর্জন করা অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتّٰى يَتَوَضَّأَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অপবিত্র হবে সে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৪; মিশকাত, হা/৩০০।]
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন :
কুবার অধিবাসী মুসলিমগণ ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করত। তাই তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿فِيْهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ﴾
তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন,
﴿اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
অপবিত্র থাকা কবরের শাস্তির কারণ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, এ কবর দুটির মধ্যে শাসিত্ম হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন অপরাধের জন্য শাসিত্ম ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবের সময় পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
এমন কিছু বসত্মু রয়েছে, যা নাপাক। এসব কাপড়ে বা শরীরে লাগলে তা পরিষ্কার করে শরীর বা কাপড় পাক করতে হয়। তাই এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি। নিচে নাপাক বসত্মুসমূহের বিবরণ তুলে ধরা হলো :
১. মানুষের প্রস্রাব-পায়খানা :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক বেদুঈন মসজিদে এসে প্রস্রাব করতে শুরু করল। ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তাকে বাধা দিতে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! (ফলে তারা থেমে গেলেন)। অতঃপর লোকটির প্রস্রাব করা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এক বালতি পানি আনালেন এবং তার প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬০২৫; নাসাঈ, হা/৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/৫২৮।]
২. মযী :
মযী নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গ থেকে তা নির্গত হয়। তা হলো সাদা আঠালো পানি, যা সহবাসের ইচ্ছা করার সময় নির্গত হয়। এটা সজোরে নির্গত হয় না। এটা নাপাক। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মযী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, সে তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে এবং অযু করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮০৬; নাসাঈ, হা/৪৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৬।]
৩. ওদী :
ওদী এক ধরনের সাদা ঘন পানি, যা প্রস্রাবের পর নির্গত হয়। আর হাদীসে এটিকেও নাপাক বসত্মু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মনী, মযী ও ওদীর হুকুম হলো, মনী (বীর্য) নির্গত হলে গোসল করতে হবে। আর ওদী ও মযী বের হলে লজ্জাস্থান ধৌত করতে হবে ও সালাতের জন্য অযু করতে হবে। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮৩২।]
৪. হায়েযের রক্ত :
হায়েয শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত হওয়া। আর পরিভাষায় হায়েয ঐ রক্তকে বলে, যা মহিলাদের জরায়ু থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বের হয়ে থাকে। কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে তা ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৭৭; বায়হাকী, হা/৩৮৮৬।]
৫. গোবর :
ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর তিনি আমাকে ৩টি পাথর আনতে বললেন। কিমত্মু আমি দুটি পাথর ও গাধার একখন্ড শুকনো গোবর পেলাম। তিনি পাথর দুটি রেখে গোবরখন্ড ফেলে দিলেন এবং বললেন, এটা অপবিত্র। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৯৮১৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৬৫৫।]
৬. শুকরের গোশত ও প্রবাহিত রক্ত :
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّاۤ اَجِدُ فِيْ مَاۤ اُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُهٗ اِلَّاۤ اَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً اَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَإِنَّهٗ رِجْسٌ﴾
বলো, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর উপর কোন হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত হয়, (কারণ) নিশ্চয় তা অপবিত্র। (সূরা আনআম- ১৪৫)
৭. কুকুরের উচ্ছিষ্ট :
কুকুরের উচ্ছিষ্ট নাপাক। সুতরাং কুকুর যদি কোন পাত্রে খায় বা পান করে তবে অবশিষ্ট অংশ অপবিত্র হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৭; আবু দাউদ, হা/৭১; তিরমিযী, হা/৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৫০৭।]
৮. হারাম প্রাণীর উচ্ছিষ্ট :
পান করার পর পাত্রে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তাকে উচ্ছিষ্ট বলে। যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয নয় সেসব প্রাণীর উচ্ছিষ্ট নাপাক।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এমন পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যা বিরান ভূমিতে থাকে এবং যা হতে চতুষ্পদ জমত্মু ও হিংস্র প্রাণী ব্যবহার করে- সে পানির হুকুম কী? তিনি বললেন, যখন উক্ত পানি দু’কুল্লা (৪০ বালতীর অনুরূপ) পরিমাণ হবে তখন তা অপবিত্র হবে না। [আবু দাউদ, হা/৬৩; তিরমিযী, হা/৬৭; নাসাঈ, হা/৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৮০৩।]
এ হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, পানি যদি দু’কুল্লার কম হয় আর হিংস্র প্রাণী তাতে মুখ লাগায় তবে সে পানি পাক থাকে না।
তবে বিড়ালের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। কেননা বিড়ালের গোশত খাওয়া যদিও হারাম, কিমত্মু সে সব সময় মানুষের খাবারের জায়গায় ঘোরাফেরা করে বিধায় তার উচ্ছিষ্ট থেকে বেঁচে থাকা কষ্টকর। হাদীসে এসেছে,
কাবশা বিনতে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। যিনি ছিলেন আবু কাতাদা (রাঃ) এর কোন এক ছেলের স্ত্রী। তিনি বলেন, একদা আমি আবু কাতাদা (রাঃ) এর জন্য অযুর পানি রাখলাম। অতঃপর একটি বিড়াল এসে তা হতে পান করতে লাগল। তখন তিনি পাত্রটি তার দিকে হেলিয়ে দিলেন। ফলে আমি সেদিকে লক্ষ্য করলাম। এটা দেখে আবু কাতাদা (রাঃ) বললেন, হে আমার ভাতিজী (পুত্রবধু)! তুমি এতে আশ্চর্যান্বিত হয়েছ? অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বিড়ালের উচ্ছিষ্ট নাপাক নয়। কারণ তা সবসময় তোমাদের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২; আবু দাউদ, হা/৭৬; তিরমিযী, হা/৯২; নাসাঈ, হা/৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৭।]
৯. মানুষের রক্তের বিধান :
পশুর প্রবাহিত রক্ত ও হায়েযের রক্ত নাপাক। এ ব্যাপারে উলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মানুষের রক্ত পাক কি না- এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
কারো কারো মতে এটি অপবিত্র। এ মত পোষণকারীগণ মনে করেন, যেহেতু প্রবাহিত রক্ত হারাম করা হয়েছে, তাই তা নাপাকীই সাব্যসত্ম হবে।
আবার কারো কারো মতে, মানুষের রক্ত পবিত্র। কেননা প্রত্যেক বসত্মুই মূলত পবিত্র; যতক্ষণ না তা নাপাক হওয়ার উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ হায়েযের রক্ত ব্যতীত মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতস্থান থেকে অধিক রক্ত ঝরার পরও তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়নি। যদি রক্ত নাপাক হতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতেন।
তাছাড়া ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, মুসলিমরা জখমরত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন; অথচ তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকত। কিমত্মু এ থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে বা রক্ত ধৌত করে সালাত আদায় করতে হবে- এ মর্মে কোন হাদীস রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে কেউ বর্ণনা করেননি। যেমন-
(ক) একদা এক আনসারী সাহাবী রাতে সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় এক মুশরিক তাকে একটি তীর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, তারপর এভাবেই তিনি রুকূ সিজদা করে সমস্ত সালাত শেষ করলেন। এমতাবস্থায় তার শরীর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। [আবু দাউদ, হা/১৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৩৬।]
(খ) উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনাকেও এ মতের পক্ষে দলীল প্রদান করা হয়। কেননা এ ঘটনায় বলা হয়েছে যে, উমর (রাঃ) সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর জখম হতে তখনও রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮২; দার কুতনী, হা/১৭৫০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৪১; শারহুস সুন্নাহ, হা৩৩০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০৯৯৮।]
১. মানুষের প্রস্রাব-পায়খানা :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক বেদুঈন মসজিদে এসে প্রস্রাব করতে শুরু করল। ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তাকে বাধা দিতে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! (ফলে তারা থেমে গেলেন)। অতঃপর লোকটির প্রস্রাব করা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এক বালতি পানি আনালেন এবং তার প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬০২৫; নাসাঈ, হা/৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/৫২৮।]
২. মযী :
মযী নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গ থেকে তা নির্গত হয়। তা হলো সাদা আঠালো পানি, যা সহবাসের ইচ্ছা করার সময় নির্গত হয়। এটা সজোরে নির্গত হয় না। এটা নাপাক। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মযী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, সে তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে এবং অযু করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮০৬; নাসাঈ, হা/৪৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৬।]
৩. ওদী :
ওদী এক ধরনের সাদা ঘন পানি, যা প্রস্রাবের পর নির্গত হয়। আর হাদীসে এটিকেও নাপাক বসত্মু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মনী, মযী ও ওদীর হুকুম হলো, মনী (বীর্য) নির্গত হলে গোসল করতে হবে। আর ওদী ও মযী বের হলে লজ্জাস্থান ধৌত করতে হবে ও সালাতের জন্য অযু করতে হবে। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮৩২।]
৪. হায়েযের রক্ত :
হায়েয শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত হওয়া। আর পরিভাষায় হায়েয ঐ রক্তকে বলে, যা মহিলাদের জরায়ু থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বের হয়ে থাকে। কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে তা ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৭৭; বায়হাকী, হা/৩৮৮৬।]
৫. গোবর :
ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর তিনি আমাকে ৩টি পাথর আনতে বললেন। কিমত্মু আমি দুটি পাথর ও গাধার একখন্ড শুকনো গোবর পেলাম। তিনি পাথর দুটি রেখে গোবরখন্ড ফেলে দিলেন এবং বললেন, এটা অপবিত্র। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৯৮১৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৬৫৫।]
৬. শুকরের গোশত ও প্রবাহিত রক্ত :
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّاۤ اَجِدُ فِيْ مَاۤ اُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُهٗ اِلَّاۤ اَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً اَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَإِنَّهٗ رِجْسٌ﴾
বলো, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর উপর কোন হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত হয়, (কারণ) নিশ্চয় তা অপবিত্র। (সূরা আনআম- ১৪৫)
৭. কুকুরের উচ্ছিষ্ট :
কুকুরের উচ্ছিষ্ট নাপাক। সুতরাং কুকুর যদি কোন পাত্রে খায় বা পান করে তবে অবশিষ্ট অংশ অপবিত্র হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৭; আবু দাউদ, হা/৭১; তিরমিযী, হা/৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৫০৭।]
৮. হারাম প্রাণীর উচ্ছিষ্ট :
পান করার পর পাত্রে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তাকে উচ্ছিষ্ট বলে। যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয নয় সেসব প্রাণীর উচ্ছিষ্ট নাপাক।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এমন পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যা বিরান ভূমিতে থাকে এবং যা হতে চতুষ্পদ জমত্মু ও হিংস্র প্রাণী ব্যবহার করে- সে পানির হুকুম কী? তিনি বললেন, যখন উক্ত পানি দু’কুল্লা (৪০ বালতীর অনুরূপ) পরিমাণ হবে তখন তা অপবিত্র হবে না। [আবু দাউদ, হা/৬৩; তিরমিযী, হা/৬৭; নাসাঈ, হা/৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৮০৩।]
এ হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, পানি যদি দু’কুল্লার কম হয় আর হিংস্র প্রাণী তাতে মুখ লাগায় তবে সে পানি পাক থাকে না।
তবে বিড়ালের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। কেননা বিড়ালের গোশত খাওয়া যদিও হারাম, কিমত্মু সে সব সময় মানুষের খাবারের জায়গায় ঘোরাফেরা করে বিধায় তার উচ্ছিষ্ট থেকে বেঁচে থাকা কষ্টকর। হাদীসে এসেছে,
কাবশা বিনতে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। যিনি ছিলেন আবু কাতাদা (রাঃ) এর কোন এক ছেলের স্ত্রী। তিনি বলেন, একদা আমি আবু কাতাদা (রাঃ) এর জন্য অযুর পানি রাখলাম। অতঃপর একটি বিড়াল এসে তা হতে পান করতে লাগল। তখন তিনি পাত্রটি তার দিকে হেলিয়ে দিলেন। ফলে আমি সেদিকে লক্ষ্য করলাম। এটা দেখে আবু কাতাদা (রাঃ) বললেন, হে আমার ভাতিজী (পুত্রবধু)! তুমি এতে আশ্চর্যান্বিত হয়েছ? অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বিড়ালের উচ্ছিষ্ট নাপাক নয়। কারণ তা সবসময় তোমাদের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২; আবু দাউদ, হা/৭৬; তিরমিযী, হা/৯২; নাসাঈ, হা/৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৭।]
৯. মানুষের রক্তের বিধান :
পশুর প্রবাহিত রক্ত ও হায়েযের রক্ত নাপাক। এ ব্যাপারে উলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মানুষের রক্ত পাক কি না- এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
কারো কারো মতে এটি অপবিত্র। এ মত পোষণকারীগণ মনে করেন, যেহেতু প্রবাহিত রক্ত হারাম করা হয়েছে, তাই তা নাপাকীই সাব্যসত্ম হবে।
আবার কারো কারো মতে, মানুষের রক্ত পবিত্র। কেননা প্রত্যেক বসত্মুই মূলত পবিত্র; যতক্ষণ না তা নাপাক হওয়ার উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ হায়েযের রক্ত ব্যতীত মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতস্থান থেকে অধিক রক্ত ঝরার পরও তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়নি। যদি রক্ত নাপাক হতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতেন।
তাছাড়া ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, মুসলিমরা জখমরত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন; অথচ তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকত। কিমত্মু এ থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে বা রক্ত ধৌত করে সালাত আদায় করতে হবে- এ মর্মে কোন হাদীস রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে কেউ বর্ণনা করেননি। যেমন-
(ক) একদা এক আনসারী সাহাবী রাতে সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় এক মুশরিক তাকে একটি তীর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, তারপর এভাবেই তিনি রুকূ সিজদা করে সমস্ত সালাত শেষ করলেন। এমতাবস্থায় তার শরীর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। [আবু দাউদ, হা/১৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৩৬।]
(খ) উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনাকেও এ মতের পক্ষে দলীল প্রদান করা হয়। কেননা এ ঘটনায় বলা হয়েছে যে, উমর (রাঃ) সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর জখম হতে তখনও রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮২; দার কুতনী, হা/১৭৫০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৪১; শারহুস সুন্নাহ, হা৩৩০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০৯৯৮।]
১. দুগ্ধপায়ী শিশুর প্রস্রাব পাক করার পদ্ধতি :
আবু সাম্হ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মেয়ে শিশুদের প্রস্রাব ধৌত করতে হবে এবং ছেলে শিশুদের প্রস্রাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪০৭৭; মিশকাত, হা/৫০২।]
২. কুকুরের মুখ লাগানো জিনিস পাক করার পদ্ধতি :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর মুখ লাগিয়ে পান করবে তখন সে পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি হলো সাতবার তা ধুয়ে ফেলা। তবে প্রথমবার মাটি দিয়ে ঘষে নেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৭; আবু দাউদ, হা/৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৫০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৯৫।]
৩. হায়েযের রক্ত পাক করার পদ্ধতি :
আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো যদি কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে যায় তখন সে কী করবে? তিনি বললেন, রক্তের জায়গাটি ভালোভাবে রগড়াবে, তারপর ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। তারপর ঐ কাপড় পরে সালাত আদায় করতে পারবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৯৭৭২; দারেমী, হা/১০১৮।]
কোন মহিলা যদি হায়েযের রক্ত দূর করার জন্য খড়ি বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করে অথবা পানি, সাবান কিংবা পরিষ্কারক কোন বসত্মু ব্যবহার করে তবে তা উত্তম হবে।
৪. মৃত পশুর চামড়া পবিত্রকরণ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কাঁচা চামড়াকে দাবাগাত [পশুর চামড়া লবন এবং এ জাতীয় কিছু দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারের উপযোগী করাকে দাবাগাত বলে।] করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩৮; আবু দাউদ, হা/৪১২৫; দার কুতনী, হা/১১৪।]
৫. প্রস্রাব বা এ জাতীয় কিছু থেকে জমিন পবিত্র করার পদ্ধতি :
জমিনে প্রস্রাব বা এ জাতীয় কোন অপবিত্র জিনিস থাকলে তাতে পানি ঢেলে দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ জনৈক বেদুঈনের মসজিদে প্রস্রাব করার ফলে তাতে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯; বায়হাকী, হা/৪০৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৯২।] আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা আদেশ দিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি তা পরিষ্কার করার জন্য। তবে যদি পানি না ঢালা হয় তাহলে শুকানোর পর নাপাকের চিহ্ন বা অস্তিত্ব দূর হয়ে গেলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। কেননা জমিন মূলত পাক। কোন নাপাকী তার উপর পতিত হলে তা অপবিত্র হয়। কিমত্মু নাপাকীর চিহ্ন দূরীভূত হয়ে গেলে তা তার মূল অবস্থার দিকে ফিরে যায় অর্থাৎ পবিত্র হয়ে যায়।
৬. মনী বা বীর্য থেকে পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাকে মনীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাপড় থেকে ধৌত করতাম। অতঃপর তিনি সালাতে বের হতেন; এমতাবস্থায় তার কাপড়ে ধৌত করার চিহ্ন লেগে থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/২৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৬; নাসাঈ, হা/২৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৮১; মুসনাদে আবু আওয়ানা, হা/৫২৮; বায়হাকী, হা/৩৯৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৪৯৪।]
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়িয়ে/ঘর্ষণ করে ফেলে দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৫; নাসাঈ, হা/২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১০।]
৭. ঘি অথবা খাদ্যবসত্মুতে নাপাকী পতিত হলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি :
জমে থাকা ঘি অথবা অন্য কোন খাদ্যবসত্মুর মধ্যে ইঁদুর অথবা পোকামাকড় পড়ে গেলে চারপাশ থেকে কিছু খাদ্য ফেলে দিলে অবশিষ্ট খাদ্য খাওয়া যাবে। কিমত্মু যদি তা তরল হয় তাহলে সম্পূর্ণ ফেলে দিতে হবে।
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ঘি এর মধ্যে পতিত ইঁদুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন যে, ইঁদুরটি এবং তার আশেপাশের অংশ উঠিয়ে ফেলে দাও। তারপর তোমরা ঘি খাও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৪০; নাসাঈ, হা/৪২৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৬০।]
৮. মহিলাদের কাপড়ের নিচের ঝুলে থাকা অংশ :
যখন মহিলাদের কাপড়ের নিচের অংশ নাপাক হবে তখন পবিত্র জমিনে স্পর্শ করার ফলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। একদা এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি এমন এক মহিলা যে কাপড়ের নিচের অংশ ঝুলিয়ে রাখি। তিনি আরো বলেন, আমি নাপাক স্থানেও চলাফেরা করি। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পরবর্তী (পবিত্র) স্থান তা পবিত্র করে দেয়। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৫; আবু দাউদ, হা/৩৮৩; তিরমিযী, হা/১৪৩; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩১।]
৯. জুতার তলদেশ :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তার জুতা খুলে তা ভালোভাবে দেখে নিবে। যদি তাতে কোন অপবিত্র কিছু দেখে, তাহলে তা জমিনে মুছে নিবে। অতঃপর তা নিয়ে সালাত আদায় করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৫৫; দারেমী, হা/১৩৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৭৯৭৪।]
আবু সাম্হ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মেয়ে শিশুদের প্রস্রাব ধৌত করতে হবে এবং ছেলে শিশুদের প্রস্রাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪০৭৭; মিশকাত, হা/৫০২।]
২. কুকুরের মুখ লাগানো জিনিস পাক করার পদ্ধতি :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর মুখ লাগিয়ে পান করবে তখন সে পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি হলো সাতবার তা ধুয়ে ফেলা। তবে প্রথমবার মাটি দিয়ে ঘষে নেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৭; আবু দাউদ, হা/৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৫০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৯৫।]
৩. হায়েযের রক্ত পাক করার পদ্ধতি :
আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো যদি কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে যায় তখন সে কী করবে? তিনি বললেন, রক্তের জায়গাটি ভালোভাবে রগড়াবে, তারপর ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। তারপর ঐ কাপড় পরে সালাত আদায় করতে পারবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৯৭৭২; দারেমী, হা/১০১৮।]
কোন মহিলা যদি হায়েযের রক্ত দূর করার জন্য খড়ি বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করে অথবা পানি, সাবান কিংবা পরিষ্কারক কোন বসত্মু ব্যবহার করে তবে তা উত্তম হবে।
৪. মৃত পশুর চামড়া পবিত্রকরণ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কাঁচা চামড়াকে দাবাগাত [পশুর চামড়া লবন এবং এ জাতীয় কিছু দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারের উপযোগী করাকে দাবাগাত বলে।] করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩৮; আবু দাউদ, হা/৪১২৫; দার কুতনী, হা/১১৪।]
৫. প্রস্রাব বা এ জাতীয় কিছু থেকে জমিন পবিত্র করার পদ্ধতি :
জমিনে প্রস্রাব বা এ জাতীয় কোন অপবিত্র জিনিস থাকলে তাতে পানি ঢেলে দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ জনৈক বেদুঈনের মসজিদে প্রস্রাব করার ফলে তাতে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯; বায়হাকী, হা/৪০৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৯২।] আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা আদেশ দিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি তা পরিষ্কার করার জন্য। তবে যদি পানি না ঢালা হয় তাহলে শুকানোর পর নাপাকের চিহ্ন বা অস্তিত্ব দূর হয়ে গেলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। কেননা জমিন মূলত পাক। কোন নাপাকী তার উপর পতিত হলে তা অপবিত্র হয়। কিমত্মু নাপাকীর চিহ্ন দূরীভূত হয়ে গেলে তা তার মূল অবস্থার দিকে ফিরে যায় অর্থাৎ পবিত্র হয়ে যায়।
৬. মনী বা বীর্য থেকে পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাকে মনীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাপড় থেকে ধৌত করতাম। অতঃপর তিনি সালাতে বের হতেন; এমতাবস্থায় তার কাপড়ে ধৌত করার চিহ্ন লেগে থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/২৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৬; নাসাঈ, হা/২৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৮১; মুসনাদে আবু আওয়ানা, হা/৫২৮; বায়হাকী, হা/৩৯৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৪৯৪।]
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়িয়ে/ঘর্ষণ করে ফেলে দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৫; নাসাঈ, হা/২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১০।]
৭. ঘি অথবা খাদ্যবসত্মুতে নাপাকী পতিত হলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি :
জমে থাকা ঘি অথবা অন্য কোন খাদ্যবসত্মুর মধ্যে ইঁদুর অথবা পোকামাকড় পড়ে গেলে চারপাশ থেকে কিছু খাদ্য ফেলে দিলে অবশিষ্ট খাদ্য খাওয়া যাবে। কিমত্মু যদি তা তরল হয় তাহলে সম্পূর্ণ ফেলে দিতে হবে।
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ঘি এর মধ্যে পতিত ইঁদুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন যে, ইঁদুরটি এবং তার আশেপাশের অংশ উঠিয়ে ফেলে দাও। তারপর তোমরা ঘি খাও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৪০; নাসাঈ, হা/৪২৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৬০।]
৮. মহিলাদের কাপড়ের নিচের ঝুলে থাকা অংশ :
যখন মহিলাদের কাপড়ের নিচের অংশ নাপাক হবে তখন পবিত্র জমিনে স্পর্শ করার ফলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। একদা এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি এমন এক মহিলা যে কাপড়ের নিচের অংশ ঝুলিয়ে রাখি। তিনি আরো বলেন, আমি নাপাক স্থানেও চলাফেরা করি। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পরবর্তী (পবিত্র) স্থান তা পবিত্র করে দেয়। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৫; আবু দাউদ, হা/৩৮৩; তিরমিযী, হা/১৪৩; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩১।]
৯. জুতার তলদেশ :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তার জুতা খুলে তা ভালোভাবে দেখে নিবে। যদি তাতে কোন অপবিত্র কিছু দেখে, তাহলে তা জমিনে মুছে নিবে। অতঃপর তা নিয়ে সালাত আদায় করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৫৫; দারেমী, হা/১৩৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৭৯৭৪।]
১. মাছ ও পঙ্গপাল:
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’প্রকার মৃত (প্রাণী) ও দু’প্রকার রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। মৃত (প্রাণী) দুটি হলো, মাছ ও পঙ্গপাল বা টিড্ডি। আর দু’প্রকার রক্ত হলো, যকৃত ও প্লীহা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৪১।]
২. প্রবাহিত রক্ত নেই এমন প্রাণী :
যেমন, মাছি, মৌমাছি ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের কারো পান পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দাও। অতঃপর তাকে ফেলে দাও। কারণ তার এক ডানায় থাকে রোগ-জীবাণু। আর অপর ডানায় থাকে তার প্রতিষেধক। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮২; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫০৫।]
৩. মৃত প্রাণীর হাড়, শিং, নখ, চুল ও পালক :
মৃত প্রাণীর হাড়, শিং, নখ, চুল, পালক এই জাতীয় সব কিছুই মূলত পাক। ইমাম যুহরী হাতী বা এরূপ প্রাণীর হাড্ডির ব্যাপারে বলেছেন, আমি প্রাচীন আলিমদের অনেককে এর চিরুনী দ্বারা চুল আঁচড়াতে ও এর তেল ব্যবহার করতে দেখেছি। তারা এতে কোন আপত্তিকর কিছু দেখেননি। হাম্মাদ (রহ.) বলেন, মৃত প্রাণীর পালক নাপাক নয়। [ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে (১/৩৪২) মুআল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেন।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’প্রকার মৃত (প্রাণী) ও দু’প্রকার রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। মৃত (প্রাণী) দুটি হলো, মাছ ও পঙ্গপাল বা টিড্ডি। আর দু’প্রকার রক্ত হলো, যকৃত ও প্লীহা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৪১।]
২. প্রবাহিত রক্ত নেই এমন প্রাণী :
যেমন, মাছি, মৌমাছি ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের কারো পান পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দাও। অতঃপর তাকে ফেলে দাও। কারণ তার এক ডানায় থাকে রোগ-জীবাণু। আর অপর ডানায় থাকে তার প্রতিষেধক। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮২; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫০৫।]
৩. মৃত প্রাণীর হাড়, শিং, নখ, চুল ও পালক :
মৃত প্রাণীর হাড়, শিং, নখ, চুল, পালক এই জাতীয় সব কিছুই মূলত পাক। ইমাম যুহরী হাতী বা এরূপ প্রাণীর হাড্ডির ব্যাপারে বলেছেন, আমি প্রাচীন আলিমদের অনেককে এর চিরুনী দ্বারা চুল আঁচড়াতে ও এর তেল ব্যবহার করতে দেখেছি। তারা এতে কোন আপত্তিকর কিছু দেখেননি। হাম্মাদ (রহ.) বলেন, মৃত প্রাণীর পালক নাপাক নয়। [ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে (১/৩৪২) মুআল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেন।]
স্বভাবজাত সুন্নাত হলো এমন কাজ, যা সকল নবী-রাসূল সম্পাদন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এসব সুন্নাত পালনকারীদেরকে ভালোবাসেন। আর তারা এর মাধ্যমে পূর্ণ গুণের অধিকারী হয় এবং আকৃতিগতভাবেও মর্যাদা পায়। এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়ত একমত যে, এগুলো হলো প্রাচীন সুন্নাত, যা সকল নবী-রাসূল পছন্দ করেছেন।
##স্বভাবজাত রীতি অনুসরণের মধ্যে দ্বীনী ও দুনিয়াবী অনেক কল্যাণ রয়েছে। এর ফলে দৈহিক গঠন সুন্দর থাকে এবং শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلْفِطْرَةُ خَمْسٌ الْخِتَانُ وَالْاِسْتِحْدَادُ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيْمُ الْأَظْفَارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, ফিতরাত হলো পাঁচটি জিনিস বা কাজ। আর তা হলো- খাতনা করা, নাভির নিচে ক্ষুর ব্যবহার করা (অর্থাৎ নাভির নীচের পশমগুলো মুন্ডানো), বগলের নিচের লোম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলা। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬২০; আবু দাউদ, হা/৪২০০; ইবনে মাজাহ, হা/২৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৬০; মিশকাত, হা/৪৪২০; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৯৮২।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الْأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ . قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ . زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيْعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الْاِسْتِنْجَاءَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত :
১. গোঁফ খাটো করা,
২. দাড়ি লম্বা করা,
৩. মিসওয়াক করা,
৪. পানি দিয়ে নাক ঝাড়া,
৫. নখ কাটা,
৬. আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া,
৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা,
৮. নাভির নীচের পশম মুন্ডন করা
৯. এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা।
যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। কুতায়বা আরো বাড়িয়ে বলেন, ওয়াকী বলেছেন, (দশমটি হচ্ছে) اِنْتِقَاصُ الْمَاءِ অর্থাৎ ইস্তিঞ্জা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৭; আবু দাউদ, হা/৫৩; তিরমিযী, হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৩।]
##স্বভাবজাত রীতি অনুসরণের মধ্যে দ্বীনী ও দুনিয়াবী অনেক কল্যাণ রয়েছে। এর ফলে দৈহিক গঠন সুন্দর থাকে এবং শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلْفِطْرَةُ خَمْسٌ الْخِتَانُ وَالْاِسْتِحْدَادُ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيْمُ الْأَظْفَارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, ফিতরাত হলো পাঁচটি জিনিস বা কাজ। আর তা হলো- খাতনা করা, নাভির নিচে ক্ষুর ব্যবহার করা (অর্থাৎ নাভির নীচের পশমগুলো মুন্ডানো), বগলের নিচের লোম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলা। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬২০; আবু দাউদ, হা/৪২০০; ইবনে মাজাহ, হা/২৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৬০; মিশকাত, হা/৪৪২০; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৯৮২।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الْأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ . قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ . زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيْعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الْاِسْتِنْجَاءَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত :
১. গোঁফ খাটো করা,
২. দাড়ি লম্বা করা,
৩. মিসওয়াক করা,
৪. পানি দিয়ে নাক ঝাড়া,
৫. নখ কাটা,
৬. আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া,
৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা,
৮. নাভির নীচের পশম মুন্ডন করা
৯. এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা।
যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। কুতায়বা আরো বাড়িয়ে বলেন, ওয়াকী বলেছেন, (দশমটি হচ্ছে) اِنْتِقَاصُ الْمَاءِ অর্থাৎ ইস্তিঞ্জা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৭; আবু দাউদ, হা/৫৩; তিরমিযী, হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৩।]
اَلْخِتَانُ এর পরিচয় ও তার হুকুম :
خَتَنٌ - এর আভিধানিক অর্থ হলো, কর্তন করা। পরিভাষায় পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ আবৃতকারী চামড়া ও নারীর যৌনাঙ্গের পর্দা কেটে ফেলাকে খাতনা বলে।
ইবনে কুদামা বলেন, খাতনা করা পুরুষের জন্য ওয়াজিব, আর মহিলাদের জন্য সম্মানজনক। এটা তাদের জন্য ওয়াজিব নয়। [মুগনি (১/৮৫)]
একদা এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন,
أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ
অর্থাৎ তুমি তোমার দেহ থেকে কুফরীর চিহ্ন দূর করো এবং খাতনা করো। [আবু দাউদ, হা/৩৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৪৭০; বায়হাকী, হা/৭৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯৭৭।]
খাতনা করা মুসলিমদের নিদর্শন। এটা মুসলিমদেরকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান থেকে পৃথককারী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আর বালেগ হওয়ার পূর্বেই বাচ্চাদের খাতনা করানো উত্তম।
خَتَنٌ - এর আভিধানিক অর্থ হলো, কর্তন করা। পরিভাষায় পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ আবৃতকারী চামড়া ও নারীর যৌনাঙ্গের পর্দা কেটে ফেলাকে খাতনা বলে।
ইবনে কুদামা বলেন, খাতনা করা পুরুষের জন্য ওয়াজিব, আর মহিলাদের জন্য সম্মানজনক। এটা তাদের জন্য ওয়াজিব নয়। [মুগনি (১/৮৫)]
একদা এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন,
أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ
অর্থাৎ তুমি তোমার দেহ থেকে কুফরীর চিহ্ন দূর করো এবং খাতনা করো। [আবু দাউদ, হা/৩৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৪৭০; বায়হাকী, হা/৭৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯৭৭।]
খাতনা করা মুসলিমদের নিদর্শন। এটা মুসলিমদেরকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান থেকে পৃথককারী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আর বালেগ হওয়ার পূর্বেই বাচ্চাদের খাতনা করানো উত্তম।
নখ কাটা, গোঁফ খাটো করা, বগলের লোম উপড়ানো ও নাভির নিচের লোম মুন্ডন করার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা বাধা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী তা পরিষ্কার করতে হবে। সুতরাং যে সময় তা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হবে, তখনই পরিষ্কার করবে। তবে ৪০ দিনের বেশি তা রেখে দেয়া উচিত নয়।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الْأَظْفَارِ وَنَتْفِ الْإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لَّا نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল- যাতে আমরা ৪০ দিনের বেশি দেরি না করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১১।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الْأَظْفَارِ وَنَتْفِ الْإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لَّا نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল- যাতে আমরা ৪০ দিনের বেশি দেরি না করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১১।]
اَلسِّوَاكُ শব্দের আভিধানিক অর্থ دَلَكٌ বা ঘষা, মাজা, মর্দন করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় দাঁতের ময়লা দূর করা এবং দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য গাছের ডাল বা শিকড় ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে।
নিম্নোক্ত সময়গুলোতে মিসওয়াক করা উত্তম :
১. অযুর সময় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِي ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ الْوُضُوْءِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি অযুর সময় তাদেরকে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৩১; বায়হাকী, হা/১৪৭।]
২. সালাতের সময় :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭।]
৩. কুরআন পাঠের সময় :
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ : أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ وَقَالَ : إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّى أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ خَلْفَه يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ وَيَدْنُوْ ، فَلَا يَزَالُ يَسْتَمِعُ وَيَدْنُو حَتّٰى يَضَعَ فَاهُ عَلٰى فِيْهِ ، فَلَا يَقْرَأُ آيَةً إِلَّا كَانَتْ فِى جَوْفِ الْمَلَكِ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যখন কোন বান্দা সালাতে দাঁড়ায় তখন তার কাছে ফেরেশতা এসে তার পেছনে দাঁড়ায় ও কুরআন পড়া শুনতে থাকে এবং তার নিকটবর্তী হতে থাকে। এমনকি ফেরেশতা তার মুখকে তিলাওয়াতকারীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রত্যেক আয়াত ফেরেশতার পেটের ভেতর প্রবেশ করে। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬০৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৬১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২১৩।]
৪. গৃহে প্রবেশের সময় :
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِىُّ -ﷺ - إِذَا دَخَلَ بَيْتَه قَالَتْ بِالسِّوَاكِ
মিকদাম ইবনে শুরাইহ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কোন কাজ করতেন? তিনি বললেন, মিসওয়াক করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৩; আবু দাউদ, হা/৫১; নাসাঈ, হা/৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৯০।]
৫. রাত্রে তাহাজ্জুদের জন্য উঠার পর :
عَنْ حُذَيْفَةَ : أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী ﷺ রাতে যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য জাগতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৬; আবু দাউদ, হা/৫৫; নাসাঈ, হা/৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৬।]
পরিভাষায় দাঁতের ময়লা দূর করা এবং দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য গাছের ডাল বা শিকড় ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে।
নিম্নোক্ত সময়গুলোতে মিসওয়াক করা উত্তম :
১. অযুর সময় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِي ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ الْوُضُوْءِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি অযুর সময় তাদেরকে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৩১; বায়হাকী, হা/১৪৭।]
২. সালাতের সময় :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭।]
৩. কুরআন পাঠের সময় :
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ : أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ وَقَالَ : إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّى أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ خَلْفَه يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ وَيَدْنُوْ ، فَلَا يَزَالُ يَسْتَمِعُ وَيَدْنُو حَتّٰى يَضَعَ فَاهُ عَلٰى فِيْهِ ، فَلَا يَقْرَأُ آيَةً إِلَّا كَانَتْ فِى جَوْفِ الْمَلَكِ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যখন কোন বান্দা সালাতে দাঁড়ায় তখন তার কাছে ফেরেশতা এসে তার পেছনে দাঁড়ায় ও কুরআন পড়া শুনতে থাকে এবং তার নিকটবর্তী হতে থাকে। এমনকি ফেরেশতা তার মুখকে তিলাওয়াতকারীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রত্যেক আয়াত ফেরেশতার পেটের ভেতর প্রবেশ করে। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬০৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৬১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২১৩।]
৪. গৃহে প্রবেশের সময় :
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِىُّ -ﷺ - إِذَا دَخَلَ بَيْتَه قَالَتْ بِالسِّوَاكِ
মিকদাম ইবনে শুরাইহ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কোন কাজ করতেন? তিনি বললেন, মিসওয়াক করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৩; আবু দাউদ, হা/৫১; নাসাঈ, হা/৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৯০।]
৫. রাত্রে তাহাজ্জুদের জন্য উঠার পর :
عَنْ حُذَيْفَةَ : أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী ﷺ রাতে যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য জাগতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৬; আবু দাউদ, হা/৫৫; নাসাঈ, হা/৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৬।]
দাড়ি লম্বা করার হুকুম :
পুরুষের জন্য দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব। এর কারণ হলো :
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ قَالَ : رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫; বায়হাকী, হা/৬৭২।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৭১; বায়হাকী, হা/৬৭৩।]
২. দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজক ও কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। যেমনটি পূর্বোল্লেখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৩. দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ ﴾
(শয়তান বলল) অবশ্যই আমি তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
৪. দাড়ি মুন্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর যেসব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫; তিরমিযী, হা/২৯৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৯০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৫১।]
এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছাঁটা জায়েয আছে কি না :
কতিপয় বিদ্বানের মতে, দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব। কেননা দাড়ি লম্বা করার ব্যাপারে হাদীসে যে শব্দগুলো এসেছে তা হলো - اَعْفُوْا তথা লম্বা হতে দাও, أَرْخُوْا তথা ছেড়ে দাও, وَفِّرُوْا তথা পূর্ণ বা বেশি হতে দাও, اَوْفُوْا তথা সম্পূর্ণ করো। এ সকল শব্দের মাধ্যমে সাধারণভাবে দাড়িকে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
আবার অনেকের মতে, এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকী অংশ কেটে ফেলা জায়েয আছে। তারা ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحٰى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلٰى لِحْيَتِه ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতায় দাড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ খাটো করো। (রাবী বলেন) আর আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্জ কিংবা উমরা করতেন, তখন দাড়ি মুঠ করে ধরতেন এবং মুঠের বাইরে যতটা বেশি হতো ততটা কেটে ফেলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৯৩।]
পুরুষের জন্য দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব। এর কারণ হলো :
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ قَالَ : رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫; বায়হাকী, হা/৬৭২।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৭১; বায়হাকী, হা/৬৭৩।]
২. দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজক ও কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। যেমনটি পূর্বোল্লেখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৩. দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ ﴾
(শয়তান বলল) অবশ্যই আমি তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
৪. দাড়ি মুন্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর যেসব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫; তিরমিযী, হা/২৯৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৯০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৫১।]
এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছাঁটা জায়েয আছে কি না :
কতিপয় বিদ্বানের মতে, দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব। কেননা দাড়ি লম্বা করার ব্যাপারে হাদীসে যে শব্দগুলো এসেছে তা হলো - اَعْفُوْا তথা লম্বা হতে দাও, أَرْخُوْا তথা ছেড়ে দাও, وَفِّرُوْا তথা পূর্ণ বা বেশি হতে দাও, اَوْفُوْا তথা সম্পূর্ণ করো। এ সকল শব্দের মাধ্যমে সাধারণভাবে দাড়িকে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
আবার অনেকের মতে, এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকী অংশ কেটে ফেলা জায়েয আছে। তারা ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحٰى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلٰى لِحْيَتِه ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতায় দাড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ খাটো করো। (রাবী বলেন) আর আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্জ কিংবা উমরা করতেন, তখন দাড়ি মুঠ করে ধরতেন এবং মুঠের বাইরে যতটা বেশি হতো ততটা কেটে ফেলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৯৩।]
১. পাক পানি :
যে পানির মৌলিক বৈশিষ্ট্য তথা রং, গন্ধ ও স্বাদ বজায় থাকে তা পবিত্র। এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হলো, নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি, বরফগলা পানি, তুষারের পানি এবং কুপের পানি। অনুরূপভাবে সাগরের পানিও পবিত্র। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه
অর্থাৎ সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল। [আবু দাউদ, হা/৮৩; তিরমিযী, হা/৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬।]
মহিলাদের ব্যবহারের পর অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ এবং পুরুষদের ব্যবহারের পর অতিরিক্ত পানি দ্বারা মহিলাদেরও পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُوْنَةَ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মাইমূনা (রাঃ) এর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪৬৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০৮; দার কুতনী, হা/১৪০।]
২. নাপাক পানি :
যে পানিতে নাপাক জিনিসের মিশ্রণ ঘটে এবং তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়, ফলে তার রং, গন্ধ অথবা স্বাদের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ নয়। কেননা এটা নিজেই নাপাক।
যে পানির মৌলিক বৈশিষ্ট্য তথা রং, গন্ধ ও স্বাদ বজায় থাকে তা পবিত্র। এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হলো, নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি, বরফগলা পানি, তুষারের পানি এবং কুপের পানি। অনুরূপভাবে সাগরের পানিও পবিত্র। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه
অর্থাৎ সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল। [আবু দাউদ, হা/৮৩; তিরমিযী, হা/৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬।]
মহিলাদের ব্যবহারের পর অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ এবং পুরুষদের ব্যবহারের পর অতিরিক্ত পানি দ্বারা মহিলাদেরও পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُوْنَةَ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মাইমূনা (রাঃ) এর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪৬৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০৮; দার কুতনী, হা/১৪০।]
২. নাপাক পানি :
যে পানিতে নাপাক জিনিসের মিশ্রণ ঘটে এবং তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়, ফলে তার রং, গন্ধ অথবা স্বাদের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ নয়। কেননা এটা নিজেই নাপাক।
ইসলাম মলমূত্র ত্যাগের ব্যাপারেও কিছু বিধিবিধান আরোপ করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করতে ইচ্ছা পোষণ করবে তার জন্য নিম্নোক্ত নিয়মসমূহ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
১. মানুষের আড়ালে যাওয়া :
عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ سَفَرٍ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَأْتِي الْبَرَازَ حَتّٰى يَتَغَيَّبَ فَلَا يُرٰى
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফরে বের হতাম। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের জন্য এতদূর যেতেন যে, তাকে কেউ দেখতে পেত না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২।]
২. আল্লাহর নাম লিখিত কোন জিনিস মলমূত্র ত্যাগ করার সময় সাথে না রাখা :
যেসব জিনিসে আল্লাহর নাম লিখিত রয়েছে অথবা যেসব জিনিসে কুরআনের আয়াত লিখা আছে সেসব জিনিস সাথে নিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করা যাবে না। কেননা এগুলো হচ্ছে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে এটা তার অন্তরে তাক্বওয়ার পরিচায়ক। (সূরা হজ্জ- ৩২)
আল্লাহর নাম খচিত বসত্মুটি যদি আবৃত করে রাখা সম্ভব হয় তাহলে তা নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করা বৈধ হবে। চাইলে তা হাতের তালু বা পকেটের মধ্যে রেখে দিবে। যদি বাইরে রাখলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে জরুরি প্রয়োজনে তা নিয়েই প্রবেশ করা বৈধ।
মলমূত্র ত্যাগের সময় হাঁচি আসলে মনে মনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। কিমত্মু মুখে উচ্চারণ করবে না।
মোবাইলের মেমোরিতে কুরআন থাকলে :
মোবাইলের মেমোরিতে কুরআন থাকলে তা চালু অবস্থায় টয়লেটে যাবে না। তবে তা বন্ধ থাকা অবস্থায় টয়লেটের সময় সাথে থাকলে কোন দোষ নেই।
উল্লেখ্য যে, অনেকে না বুঝে কুরআনের আয়াত বা সূরা রিংটোন বা এলার্ম হিসেবে ব্যবহার করে। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। কারণ কেউ যদি মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করে তবে তাতে কল আসলে অথবা এলার্মের সময় হলে কুরআনের আয়াত বেজে উঠবে।
তাছাড়া এর আরো একটি ক্ষতির দিক রয়েছে। আর তা হলো, কোন আয়াত পাঠ শুরু হলে বাক্য শেষ না হওয়া পর্যমত্ম তার অর্থ পূর্ণ হয় না। কিমত্মু মোবাইলে কল আসলে যে কোন সময় তা রিসিভ করা হয়। এমতাবস্থায় কুরআনের আয়াতকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। যা শুরু হয়েছিল তা সমাপ্ত হয় না। তাই রিংটোন হিসেবে কুরআনের আয়াত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
৩. টয়লেটে প্রবেশের সময় দু‘আ পড়া :
যখন কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগের ঘরে প্রবেশ করবে অথবা খোলা ময়দানে মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসতে যাবে তখন প্রথমে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে।
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : سِتْرُ مَا بَيْنَ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِيْ اٰدَمَ , إِذَا دَخَلَ الْكَنِيْفَ أَنْ يَقُوْلَ : بِسْمِ اللهِ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝে পর্দা হলো, যখন সে পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। [ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮৪৩।]
এর পর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি مِنَ الْخُبُثِ অপবিত্র পুরুষ জিন হতে وَالْخَبَائِثِ ও মহিলা জিন হতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র পুরুষ জিন ও মহিলা জিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। [সহীহ বুখারী, হা/ ১৪২, ৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/ ৮৫৭; তিরমিযী, হা/৬; নাসাঈ, হা/১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪০৭; মিশকাত, হা/৩৩৭।]
৪. জমিনের কাছাকাছি যেয়ে কাপড় উঠানো :
মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসার পূর্বে কাপড় উঠানো উচিত নয়। হাদীসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের সময় জমিনের কাছাকাছি না হওয়া পর্যমত্ম কাপড় উঠাতেন না। [তিরমিযী, হা/১৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৪৫।]
৫. মলমূত্র ত্যাগ করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে না রাখা :
عَنْ أَبِي أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوْهَا، وَلٰكِنْ شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তোমরা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থানে যাবে; তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না এবং কিবলার দিকে পিঠও দিবে না। বরং তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে মুখ (করে মলমূত্র ত্যাগ) করো। (এ হুকুম মক্কা হতে উত্তর ও দক্ষিণের অধিবাসীদের জন্য)।
আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) আরো বলেন, আমরা শাম দেশে এসে লক্ষ্য করলাম- সেখানকার টয়লেটগুলো কিবলার দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। তখন আমরা মলমূত্র ত্যাগের সময় একটু বাকা হয়ে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩২; আবু দাউদ, হা/৯; তিরমিযী, হা/৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬২৬।]
কিবলাকে সামনে বা পেছনে রাখার নিষেধাজ্ঞা সাধারণভাবে করা হয়েছে। তাই কাবাকে সামনে বা পেছনে না রাখা উচিত, চাই প্রাচীর বেষ্টিত ঘর হোক বা খোলা ময়দান হোক।
৬. প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা না বলা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، أَنَّ رَجُلًا، مَرَّ وَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَبُوْلُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন প্রস্রাব করছিলেন। এমতাবস্থায় সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিল, কিমত্মু তিনি তার জবাব দিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৯; মু‘জামূল আওসাত, হা/১৩৫০।]
সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রস্রাব করার সময় সালামের উত্তর দিলেন না। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, এ অবস্থায় কথা বলা উচিত নয়। তবে একান্ত জরুরি কথা বলা যাবে। যেমন- কোন ব্যক্তিকে পথের সন্ধান দেয়া, পানি চেয়ে নেয়া বা অনুরূপ কিছু।
৭. চলাফেরার রাস্তায় ও ছায়াদার বা ফলদার গাছের নিচে মলত্যাগ না করা :
যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ চলাফেরা করে এবং যেসব ছায়াযুক্ত গাছের নিচে লোকেরা আরাম করার জন্য বসে, সেসব গাছের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এসব জায়গায় প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। তাছাড়া এসব স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করলে এসব জায়গায় চলাফেরাকারী ব্যক্তি এবং এসব ছায়ায় আরাম গ্রহণকারী ব্যক্তিগণ কষ্ট অনুভব করে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِتَّقُوا اللَّعَّانَيْنِ . قَالُوْا : وَمَا اللَّعَّانَانِ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اَلَّذِي يَتَخَلّٰى فِي طَرِيْقِ النَّاسِ أَوْ فِيْ ظِلِّهِمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা লানতকৃত দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতকৃত সে কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, মানুষের চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪১৫।]
৮. গোসলখানায় প্রস্রাব না করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ يَّمْتَشِطَ أَحَدُنَا كُلَّ يَوْمٍ ، أَوْ يَبُوْلَ فِيْ مُغْتَسَلِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে [রাসূলুল্লাহ # প্রতিদিন চুল অআঁঁচড়াতে নিষেধ করেছেন এজন্য যে, যাতে কেউ চুল অআঁঁচড়ানোর ফ্যাশন নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে না পড়ে।] অথবা গোসলখানায় প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৯৬; আবু দাউদ, হা/২৮; নাসাঈ, হা/২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০৫৩।]
৯. আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করা :
যে স্থানে পানি জমা হয়ে থাকে সেসব স্থানে প্রস্রাব করা যাবে না। যেমন- বাথার অথবা গোসলের চৌবাচ্চা, কুপ, পুকুর, হাউস ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ أَنَّه نَهٰى أَنْ يُّبَالَ فِي الْمَاءِ الرَّاكِدِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১; নাসাঈ, হা/৩৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮৫৫।]
১০. প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকা :
প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে শরীর ও কাপড় অপবিত্র না হয়। বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব করবে না। নরম জায়গায় বা নিচু জায়গায় প্রস্রাব করবে, যাতে শরীরে ছিটা না আসে। কেননা এটা কবরে শাসিত্ম হওয়ার একটি কারণ।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - عَلٰى قَبْرَيْنِ فَقَالَ : إِنَّهُمَا يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيْرٍ أَمَّا هٰذَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ وفى رواية لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ الْبَوْلِ وَأَمَّا هٰذَا فَكَانَ يَمْشِىْ بِالنَّمِيْمَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কবর দুটির মধ্যে শাসিত্ম হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন বিষয়ের জন্য শাসিত্ম ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবে পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
১১ . দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - كَانَ يَبُوْلُ قَائِمًا فَلَا تُصَدِّقُوْهُ مَا كَانَ يَبُوْلُ إِلَّا قَاعِدًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করো না। কেননা তিনি বসা ব্যতিত কখনো প্রস্রাব করেন নাই। [তিরমিযী, হা/১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১; মিশকাত, হা/৩৬৫।]
কোন ওজর থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : أَتَى النَّبِيُّ ﷺ سُبَاطَةَ قَوْمٍ فَبَالَ قَائِمًا، ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ، فَجِئْتُه بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ কোন এক সম্প্রদায়ের ময়লা ফেলার স্থানে আসলেন। অতঃপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন, তারপর পানি নিয়ে আসতে বললেন। ফলে আমি তাঁর জন্য পানি নিয়ে আসলে তিনি অযু করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৪; তিরমিযী, হা/১৩; নাসাঈ, হা/২৬।]
১২. গর্তের মধ্যে প্রস্রাব না করা :
গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কেননা গর্তে সাপ-বিচ্ছু অথবা বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে।
১৩. মলমূত্র ত্যাগ করে বের হওয়ার পর দু‘আ বলা :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন,
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণ : গুফরা-নাকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। [তিরমিযী হা ৭; আবু দাউদ, হা/৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৬৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৯৩; সুনানে দারেমী, হা/৬৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৪৪; মিশকাত, হা/৩৫৯।]
১. মানুষের আড়ালে যাওয়া :
عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ سَفَرٍ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَأْتِي الْبَرَازَ حَتّٰى يَتَغَيَّبَ فَلَا يُرٰى
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফরে বের হতাম। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের জন্য এতদূর যেতেন যে, তাকে কেউ দেখতে পেত না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২।]
২. আল্লাহর নাম লিখিত কোন জিনিস মলমূত্র ত্যাগ করার সময় সাথে না রাখা :
যেসব জিনিসে আল্লাহর নাম লিখিত রয়েছে অথবা যেসব জিনিসে কুরআনের আয়াত লিখা আছে সেসব জিনিস সাথে নিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করা যাবে না। কেননা এগুলো হচ্ছে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে এটা তার অন্তরে তাক্বওয়ার পরিচায়ক। (সূরা হজ্জ- ৩২)
আল্লাহর নাম খচিত বসত্মুটি যদি আবৃত করে রাখা সম্ভব হয় তাহলে তা নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করা বৈধ হবে। চাইলে তা হাতের তালু বা পকেটের মধ্যে রেখে দিবে। যদি বাইরে রাখলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে জরুরি প্রয়োজনে তা নিয়েই প্রবেশ করা বৈধ।
মলমূত্র ত্যাগের সময় হাঁচি আসলে মনে মনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। কিমত্মু মুখে উচ্চারণ করবে না।
মোবাইলের মেমোরিতে কুরআন থাকলে :
মোবাইলের মেমোরিতে কুরআন থাকলে তা চালু অবস্থায় টয়লেটে যাবে না। তবে তা বন্ধ থাকা অবস্থায় টয়লেটের সময় সাথে থাকলে কোন দোষ নেই।
উল্লেখ্য যে, অনেকে না বুঝে কুরআনের আয়াত বা সূরা রিংটোন বা এলার্ম হিসেবে ব্যবহার করে। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। কারণ কেউ যদি মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করে তবে তাতে কল আসলে অথবা এলার্মের সময় হলে কুরআনের আয়াত বেজে উঠবে।
তাছাড়া এর আরো একটি ক্ষতির দিক রয়েছে। আর তা হলো, কোন আয়াত পাঠ শুরু হলে বাক্য শেষ না হওয়া পর্যমত্ম তার অর্থ পূর্ণ হয় না। কিমত্মু মোবাইলে কল আসলে যে কোন সময় তা রিসিভ করা হয়। এমতাবস্থায় কুরআনের আয়াতকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। যা শুরু হয়েছিল তা সমাপ্ত হয় না। তাই রিংটোন হিসেবে কুরআনের আয়াত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
৩. টয়লেটে প্রবেশের সময় দু‘আ পড়া :
যখন কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগের ঘরে প্রবেশ করবে অথবা খোলা ময়দানে মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসতে যাবে তখন প্রথমে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে।
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : سِتْرُ مَا بَيْنَ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِيْ اٰدَمَ , إِذَا دَخَلَ الْكَنِيْفَ أَنْ يَقُوْلَ : بِسْمِ اللهِ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝে পর্দা হলো, যখন সে পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। [ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮৪৩।]
এর পর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি مِنَ الْخُبُثِ অপবিত্র পুরুষ জিন হতে وَالْخَبَائِثِ ও মহিলা জিন হতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র পুরুষ জিন ও মহিলা জিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। [সহীহ বুখারী, হা/ ১৪২, ৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/ ৮৫৭; তিরমিযী, হা/৬; নাসাঈ, হা/১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪০৭; মিশকাত, হা/৩৩৭।]
৪. জমিনের কাছাকাছি যেয়ে কাপড় উঠানো :
মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসার পূর্বে কাপড় উঠানো উচিত নয়। হাদীসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের সময় জমিনের কাছাকাছি না হওয়া পর্যমত্ম কাপড় উঠাতেন না। [তিরমিযী, হা/১৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৪৫।]
৫. মলমূত্র ত্যাগ করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে না রাখা :
عَنْ أَبِي أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوْهَا، وَلٰكِنْ شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তোমরা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থানে যাবে; তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না এবং কিবলার দিকে পিঠও দিবে না। বরং তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে মুখ (করে মলমূত্র ত্যাগ) করো। (এ হুকুম মক্কা হতে উত্তর ও দক্ষিণের অধিবাসীদের জন্য)।
আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) আরো বলেন, আমরা শাম দেশে এসে লক্ষ্য করলাম- সেখানকার টয়লেটগুলো কিবলার দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। তখন আমরা মলমূত্র ত্যাগের সময় একটু বাকা হয়ে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩২; আবু দাউদ, হা/৯; তিরমিযী, হা/৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬২৬।]
কিবলাকে সামনে বা পেছনে রাখার নিষেধাজ্ঞা সাধারণভাবে করা হয়েছে। তাই কাবাকে সামনে বা পেছনে না রাখা উচিত, চাই প্রাচীর বেষ্টিত ঘর হোক বা খোলা ময়দান হোক।
৬. প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা না বলা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، أَنَّ رَجُلًا، مَرَّ وَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَبُوْلُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন প্রস্রাব করছিলেন। এমতাবস্থায় সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিল, কিমত্মু তিনি তার জবাব দিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৯; মু‘জামূল আওসাত, হা/১৩৫০।]
সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রস্রাব করার সময় সালামের উত্তর দিলেন না। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, এ অবস্থায় কথা বলা উচিত নয়। তবে একান্ত জরুরি কথা বলা যাবে। যেমন- কোন ব্যক্তিকে পথের সন্ধান দেয়া, পানি চেয়ে নেয়া বা অনুরূপ কিছু।
৭. চলাফেরার রাস্তায় ও ছায়াদার বা ফলদার গাছের নিচে মলত্যাগ না করা :
যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ চলাফেরা করে এবং যেসব ছায়াযুক্ত গাছের নিচে লোকেরা আরাম করার জন্য বসে, সেসব গাছের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এসব জায়গায় প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। তাছাড়া এসব স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করলে এসব জায়গায় চলাফেরাকারী ব্যক্তি এবং এসব ছায়ায় আরাম গ্রহণকারী ব্যক্তিগণ কষ্ট অনুভব করে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِتَّقُوا اللَّعَّانَيْنِ . قَالُوْا : وَمَا اللَّعَّانَانِ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اَلَّذِي يَتَخَلّٰى فِي طَرِيْقِ النَّاسِ أَوْ فِيْ ظِلِّهِمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা লানতকৃত দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতকৃত সে কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, মানুষের চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪১৫।]
৮. গোসলখানায় প্রস্রাব না করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ يَّمْتَشِطَ أَحَدُنَا كُلَّ يَوْمٍ ، أَوْ يَبُوْلَ فِيْ مُغْتَسَلِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে [রাসূলুল্লাহ # প্রতিদিন চুল অআঁঁচড়াতে নিষেধ করেছেন এজন্য যে, যাতে কেউ চুল অআঁঁচড়ানোর ফ্যাশন নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে না পড়ে।] অথবা গোসলখানায় প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৯৬; আবু দাউদ, হা/২৮; নাসাঈ, হা/২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০৫৩।]
৯. আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করা :
যে স্থানে পানি জমা হয়ে থাকে সেসব স্থানে প্রস্রাব করা যাবে না। যেমন- বাথার অথবা গোসলের চৌবাচ্চা, কুপ, পুকুর, হাউস ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ أَنَّه نَهٰى أَنْ يُّبَالَ فِي الْمَاءِ الرَّاكِدِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১; নাসাঈ, হা/৩৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮৫৫।]
১০. প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকা :
প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে শরীর ও কাপড় অপবিত্র না হয়। বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব করবে না। নরম জায়গায় বা নিচু জায়গায় প্রস্রাব করবে, যাতে শরীরে ছিটা না আসে। কেননা এটা কবরে শাসিত্ম হওয়ার একটি কারণ।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - عَلٰى قَبْرَيْنِ فَقَالَ : إِنَّهُمَا يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيْرٍ أَمَّا هٰذَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ وفى رواية لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ الْبَوْلِ وَأَمَّا هٰذَا فَكَانَ يَمْشِىْ بِالنَّمِيْمَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কবর দুটির মধ্যে শাসিত্ম হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন বিষয়ের জন্য শাসিত্ম ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবে পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
১১ . দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - كَانَ يَبُوْلُ قَائِمًا فَلَا تُصَدِّقُوْهُ مَا كَانَ يَبُوْلُ إِلَّا قَاعِدًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করো না। কেননা তিনি বসা ব্যতিত কখনো প্রস্রাব করেন নাই। [তিরমিযী, হা/১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১; মিশকাত, হা/৩৬৫।]
কোন ওজর থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : أَتَى النَّبِيُّ ﷺ سُبَاطَةَ قَوْمٍ فَبَالَ قَائِمًا، ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ، فَجِئْتُه بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ কোন এক সম্প্রদায়ের ময়লা ফেলার স্থানে আসলেন। অতঃপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন, তারপর পানি নিয়ে আসতে বললেন। ফলে আমি তাঁর জন্য পানি নিয়ে আসলে তিনি অযু করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৪; তিরমিযী, হা/১৩; নাসাঈ, হা/২৬।]
১২. গর্তের মধ্যে প্রস্রাব না করা :
গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কেননা গর্তে সাপ-বিচ্ছু অথবা বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে।
১৩. মলমূত্র ত্যাগ করে বের হওয়ার পর দু‘আ বলা :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন,
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণ : গুফরা-নাকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। [তিরমিযী হা ৭; আবু দাউদ, হা/৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৬৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৯৩; সুনানে দারেমী, হা/৬৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৪৪; মিশকাত, হা/৩৫৯।]
ইস্তিঞ্জার পরিচয় :
ইস্তিঞ্জার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, পরিত্রাণ পাওয়া। একে ইস্তিঞ্জা এজন্যই বলে যে, এর মাধ্যমে নাপাক দূরীভূত করা হয়।
পরিভাষায় : পানি, মাটি, পাথর, টিসু বা অনুরূপ কিছু দ্বারা দু’রাস্তা দিয়ে নির্গত নাপাকী দূর করাকে ইস্তিঞ্জা বলে।
ইস্তিঞ্জার হুকুম :
দু’রাস্তা দিয়ে স্বভাবগতভাবে যা নির্গত হয়, যেমন- মযী, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইস্তিঞ্জা করা ওয়াজিব।
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيْبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যায় তখন সে যেন তার সাথে তিনটি পাথর নিয়ে যায়, যা দ্বারা সে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট। [শাওয়াহেদের কারণে হাসান; আবু দাউদ, হা/৪০; নাসাঈ, হ১/১৮; মুসনাদে আহমাদ, ৬/১০৮-১৩৩।]
যেসব বসত্মু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা বৈধ :
১. জমাটবদ্ধ পদার্থ যেমন পাথর, মাটি, নেকড়া এবং টিসু ইত্যাদি যা দ্বারা নাপাকী দূর করা যায় এমনসব বসত্মু দ্বারা ইসিত্মঞ্জা করা বৈধ।
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قِيلَ لَهُ قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ -ﷺ - كُلَّ شَىْءٍ حَتّٰى الْخِرَاءَةَ . قَالَ فَقَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِيْنِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তোমাদের নবী ﷺ তোমাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এমনকি মলত্যাগের বিষয়ও। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, আমরা যেন ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা না করি, তিনটি পাথরের কমে যেন ইস্তিঞ্জা না করি এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা যেন ইস্তিঞ্জা না করি (এসব ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন)। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৯; আবু দাউদ, হা/৭; তিরমিযী, হা/১৬; নাসাঈ, হা/৪১।]
যদি তিনটি পাথর বা এ জাতীয় কোন কিছু দ্বারা নাপাকমুক্ত হওয়া যায় তবে তাই যথেষ্ট। কিমত্মু যদি এতে পাক না হয় তবে তিনটির বেশি নেয়া ওয়াজিব হবে, যতক্ষণ না নাপাকী দূরীভূত হবে।
২. পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা :
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي مَيْمُوْنَةَ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلَامٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পায়খানায় যেতেন, তখন আমি এবং ছোট এক বালক তাঁর জন্য পানির পাত্র এবং ‘আনাজাহ’ [‘আনাজাহ’ বলা হয় এমন লাঠিকে, যা লাঠি হতে বড় এবং বর্শা হতে ছোট, যার মাথায় ছিল বর্শার মতো লৌহ শলাকা।] নামক লাঠি নিয়ে যেতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৮৭।]
পাথর দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার চেয়ে পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাই উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার জন্য কুবাবাসীর প্রশংসা করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : نَزَلَتْ هٰذِهِ الْآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ ﴿ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَّتَطَهَّرُوْا﴾ قَالَ كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيْهِمْ هٰذِهِ الْآيَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ আয়াতটি কুবাবাসীদের প্রশংসায় বর্ণিত হয়েছে- ‘‘এখানে কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতাকে পছন্দ করে’’ [সূরা তাওবা- ১০৮।] তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। [আবু দাউদ, হা/৪৪; তিরমিযী, হা/৩১০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৭; সনদ যঈফ, তবে শাওয়াহেদের কারণে তা শক্তিশালী হয়েছে।]
ইস্তিঞ্জার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, পরিত্রাণ পাওয়া। একে ইস্তিঞ্জা এজন্যই বলে যে, এর মাধ্যমে নাপাক দূরীভূত করা হয়।
পরিভাষায় : পানি, মাটি, পাথর, টিসু বা অনুরূপ কিছু দ্বারা দু’রাস্তা দিয়ে নির্গত নাপাকী দূর করাকে ইস্তিঞ্জা বলে।
ইস্তিঞ্জার হুকুম :
দু’রাস্তা দিয়ে স্বভাবগতভাবে যা নির্গত হয়, যেমন- মযী, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইস্তিঞ্জা করা ওয়াজিব।
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيْبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যায় তখন সে যেন তার সাথে তিনটি পাথর নিয়ে যায়, যা দ্বারা সে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট। [শাওয়াহেদের কারণে হাসান; আবু দাউদ, হা/৪০; নাসাঈ, হ১/১৮; মুসনাদে আহমাদ, ৬/১০৮-১৩৩।]
যেসব বসত্মু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা বৈধ :
১. জমাটবদ্ধ পদার্থ যেমন পাথর, মাটি, নেকড়া এবং টিসু ইত্যাদি যা দ্বারা নাপাকী দূর করা যায় এমনসব বসত্মু দ্বারা ইসিত্মঞ্জা করা বৈধ।
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قِيلَ لَهُ قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ -ﷺ - كُلَّ شَىْءٍ حَتّٰى الْخِرَاءَةَ . قَالَ فَقَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِيْنِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তোমাদের নবী ﷺ তোমাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এমনকি মলত্যাগের বিষয়ও। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, আমরা যেন ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা না করি, তিনটি পাথরের কমে যেন ইস্তিঞ্জা না করি এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা যেন ইস্তিঞ্জা না করি (এসব ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন)। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৯; আবু দাউদ, হা/৭; তিরমিযী, হা/১৬; নাসাঈ, হা/৪১।]
যদি তিনটি পাথর বা এ জাতীয় কোন কিছু দ্বারা নাপাকমুক্ত হওয়া যায় তবে তাই যথেষ্ট। কিমত্মু যদি এতে পাক না হয় তবে তিনটির বেশি নেয়া ওয়াজিব হবে, যতক্ষণ না নাপাকী দূরীভূত হবে।
২. পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা :
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي مَيْمُوْنَةَ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلَامٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পায়খানায় যেতেন, তখন আমি এবং ছোট এক বালক তাঁর জন্য পানির পাত্র এবং ‘আনাজাহ’ [‘আনাজাহ’ বলা হয় এমন লাঠিকে, যা লাঠি হতে বড় এবং বর্শা হতে ছোট, যার মাথায় ছিল বর্শার মতো লৌহ শলাকা।] নামক লাঠি নিয়ে যেতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৮৭।]
পাথর দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার চেয়ে পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাই উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার জন্য কুবাবাসীর প্রশংসা করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : نَزَلَتْ هٰذِهِ الْآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ ﴿ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَّتَطَهَّرُوْا﴾ قَالَ كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيْهِمْ هٰذِهِ الْآيَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ আয়াতটি কুবাবাসীদের প্রশংসায় বর্ণিত হয়েছে- ‘‘এখানে কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতাকে পছন্দ করে’’ [সূরা তাওবা- ১০৮।] তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। [আবু দাউদ, হা/৪৪; তিরমিযী, হা/৩১০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৭; সনদ যঈফ, তবে শাওয়াহেদের কারণে তা শক্তিশালী হয়েছে।]
কোন প্রয়োজনে চিলিমচি বা অন্য কিছুতে ঘরের মধ্যে মলমূত্র করা জায়েয আছে তবে ঐ প্রস্রাব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। অনুরূপভাবে বাচ্চাদেরকে কমটে প্রস্রাব-পায়খানা করানো হয়। তাও তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা উচিত।
ইস্তিঞ্জা করার কিছু নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর তা হলো :
১. হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا تَسْتَنْجُوْا بِالرَّوْثِ ، وَلَا بِالْعِظَامِ ، فَإِنَّهٗ زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করো না। কেননা তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩৮১।]
২. ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: لَا يُمْسِكَنَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَه بِيَمِيْنِهٖ وَهُوَ يَبُوْلُ وَلَا يَتَمَسَّحْ مِنَ الْخَلَاءِ بِيَمِيْنِهٖ وَلَا يَتَنَفَّسْ فِى الْإِنَاءِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ না ধরে। পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৬।]
৩. ইস্তিঞ্জার পর মাটি অথবা সাবান বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ -ﷺ - إِذَا أَتَى الْخَلَاءَ أَتَيْتُه بِمَاءٍ فِى تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجٰى قَالَ أَبُو دَاو دَ فِى حَدِيْثِ وَكِيْعٍ ثُمَّ مَسَحَ يَدَه عَلَى الْأَرْضِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ পায়খানায় গমন করতেন তখন আমি তার জন্য পিতল বা চামড়ার পাত্রে পানি নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি তা দ্বারা ইসিত্মঞ্জা করতেন। আবু দাউদ (রহ.) বলেন, ওয়াকে (রাঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, অতঃপর তিনি মাটির উপর হাত মাজতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/৬৭৮; নাসাঈ, ১/৪৫; মিশকাত, হা/৩৬০।]
৪. সন্দেহ দূর করার জন্য অযুর পর পানি ছিটানো :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّأَ مَرَّةً مَرَّةً وَنَضَحَ فَرْجَهٗ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার করে অযু করতেন এবং তার লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিতেন। [দারেমী, হা/৭১১; বায়হাকী, ১/১৬১।]
৫. ঢিলা ব্যবহার করা অবস্থায় মানুষের সামনে চলাচল করা নির্লজ্জতা :
এমন অনেক লোক রয়েছেন, যারা প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবখানা থেকে বের হয়ে লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে জনসমক্ষে হাটাহাটি ও কাশাকাশি করতে থাকেন। অনেকে আবার লজ্জাস্থান ধরে এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে চাপ দেন। এগুলো অতি নির্লজ্জ কাজ। এগুলো কোনটাই সুন্নাত নয়। যদি কারো প্রস্রাবের ফোটা নির্গত হতে দেরি হয় বা সন্দেহ থাকে তবে ঐ ব্যক্তির জন্য উচিত হলো প্রস্রাবখানায় থাকা অবস্থায় একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করা।
ইস্তিঞ্জা করার কিছু নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর তা হলো :
১. হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا تَسْتَنْجُوْا بِالرَّوْثِ ، وَلَا بِالْعِظَامِ ، فَإِنَّهٗ زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করো না। কেননা তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩৮১।]
২. ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: لَا يُمْسِكَنَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَه بِيَمِيْنِهٖ وَهُوَ يَبُوْلُ وَلَا يَتَمَسَّحْ مِنَ الْخَلَاءِ بِيَمِيْنِهٖ وَلَا يَتَنَفَّسْ فِى الْإِنَاءِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ না ধরে। পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৬।]
৩. ইস্তিঞ্জার পর মাটি অথবা সাবান বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ -ﷺ - إِذَا أَتَى الْخَلَاءَ أَتَيْتُه بِمَاءٍ فِى تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجٰى قَالَ أَبُو دَاو دَ فِى حَدِيْثِ وَكِيْعٍ ثُمَّ مَسَحَ يَدَه عَلَى الْأَرْضِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ পায়খানায় গমন করতেন তখন আমি তার জন্য পিতল বা চামড়ার পাত্রে পানি নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি তা দ্বারা ইসিত্মঞ্জা করতেন। আবু দাউদ (রহ.) বলেন, ওয়াকে (রাঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, অতঃপর তিনি মাটির উপর হাত মাজতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/৬৭৮; নাসাঈ, ১/৪৫; মিশকাত, হা/৩৬০।]
৪. সন্দেহ দূর করার জন্য অযুর পর পানি ছিটানো :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّأَ مَرَّةً مَرَّةً وَنَضَحَ فَرْجَهٗ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার করে অযু করতেন এবং তার লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিতেন। [দারেমী, হা/৭১১; বায়হাকী, ১/১৬১।]
৫. ঢিলা ব্যবহার করা অবস্থায় মানুষের সামনে চলাচল করা নির্লজ্জতা :
এমন অনেক লোক রয়েছেন, যারা প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবখানা থেকে বের হয়ে লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে জনসমক্ষে হাটাহাটি ও কাশাকাশি করতে থাকেন। অনেকে আবার লজ্জাস্থান ধরে এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে চাপ দেন। এগুলো অতি নির্লজ্জ কাজ। এগুলো কোনটাই সুন্নাত নয়। যদি কারো প্রস্রাবের ফোটা নির্গত হতে দেরি হয় বা সন্দেহ থাকে তবে ঐ ব্যক্তির জন্য উচিত হলো প্রস্রাবখানায় থাকা অবস্থায় একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করা।
যে ব্যক্তি বহুমূত্র বা এ জাতীয় সমস্যায় ভুগবে, সে ইস্তিঞ্জা করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে। এরপর অন্য সালাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত যতটুকুই নির্গত হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। এটাই বিদ্বানদের সবচেয়ে বিশুদ্ধ মতামত। এর হুকুম মুস্তাহাযার হুকুমের ন্যায়। যেমন- হাদীসে এসেছে,
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ইস্তিহাযার রোগ আছে, যার কারণে আমি কখনো পবিত্র থাকতে পারি না। সুতরাং আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, না। তোমার এ রক্ত রগ থেকে আসে। এটা হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েয দেখা দেয় তখন সালাত ছেড়ে দিবে, আর যখন হায়েযের দিনগুলো শেষ হয়ে যাবে, তখন হায়েযের রক্ত ধুয়ে নিবে, তারপর সালাত আদায় করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৫; সহীহ বুখারী, হা/৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩; আবু দাউদ, হা/২৮২।]
বর্ণনাকারী হিশাম বলেন, আমার পিতা উরওয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন, তুমি প্রত্যেক সালাতের পূর্বে অযু করে নিবে। পুনরায় তোমার হায়েয দেখা দেয়া পর্যন্ত এমনিভাবে সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৮; দার কুতনী, হা/৮১৮; বায়হাকী, হা/১৫১৮।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ইস্তিহাযার রোগ আছে, যার কারণে আমি কখনো পবিত্র থাকতে পারি না। সুতরাং আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, না। তোমার এ রক্ত রগ থেকে আসে। এটা হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েয দেখা দেয় তখন সালাত ছেড়ে দিবে, আর যখন হায়েযের দিনগুলো শেষ হয়ে যাবে, তখন হায়েযের রক্ত ধুয়ে নিবে, তারপর সালাত আদায় করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৫; সহীহ বুখারী, হা/৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩; আবু দাউদ, হা/২৮২।]
বর্ণনাকারী হিশাম বলেন, আমার পিতা উরওয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন, তুমি প্রত্যেক সালাতের পূর্বে অযু করে নিবে। পুনরায় তোমার হায়েয দেখা দেয়া পর্যন্ত এমনিভাবে সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৮; দার কুতনী, হা/৮১৮; বায়হাকী, হা/১৫১৮।]
اَلْغُسْلُ এর আভিধানিক অর্থ হলো, কোন বসত্মুর উপর পানি প্রবাহিত করা। আর পরিভাষায় সমস্ত শরীরে পবিত্র পানি প্রবাহিত করাকে গোসল বলে। যেসব কারণে গোসল ফরয হয় তার কোনটি কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا﴾
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا﴾
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
নিম্নোক্ত কারণে গোসল ফরয হয় :
১. বীর্যপাত হলে :
নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন ঘুমের অবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায় হোক যে কোন অবস্থায় বীর্যপাত হলে তাকে গোসল করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ قَالَ : إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় পানির পরিবর্তে পানি। অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮০২; আবু দাউদ, হা/২১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬১।]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ أُمَّ سُلَيْمٍ قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحِيْ مِنَ الْحَقِّ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ غُسْلٌ إِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ نَعَمْ، إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা উম্মে সুলাইম এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আললাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (আমার প্রশ্ন হচ্ছে) মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলেও কি তাদেরকে গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যখন সে পানি দেখতে পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২১; মিশকাত, হা/৪৩৩।]
২. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে :
স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। চাই বীর্যপাত হোক অথবা না হোক। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর উপর বসে অতঃপর দুই লজ্জাস্থান মিলিত হয় তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০২।]
মাসআলা :
যদি পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যোনিতে প্রবেশ ছাড়াই শুধু স্পর্শ করে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের উপর গোসল ফরয হবে না।
স্ত্রীকে আলিঙ্গন করার ফলে বীর্যপাত হলে যার বীর্যপাত হবে কেবল তার উপর গোসল আবশ্যক হবে।
স্বামী-স্ত্রী মিলন করে স্ত্রী গোসল করার পর যদি তার যোনি থেকে স্বামীর বীর্য বের হতে দেখে, তাহলে তার উপর পুনরায় গোসল ওয়াজিব নয়। তবে এ ক্ষেত্রে তার উপর অযু করা আবশ্যক হবে।
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাসের জন্য ডাকে, তবে গোসল করার পানি না থাকার অজুহাতে তাকে সহবাসে বাধা দিবে না; বরং সহবাস করবে। এরপর যদি গোসল করতে সক্ষম হয় তাহলে গোসল করবে নতুবা তায়াম্মুম করবে এবং সালাত আদায় করবে।
৩. মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা হায়েযের সময় সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبِيَّ ﷺ عَنْ غُسْلِهَا مِنَ الْمَحِيضِ فَأَمَرَهَا كَيْفَ تَغْتَسِلُ قَالَ خُذِي فِرْصَةً مِنْ مِسْكٍ فَتَطَهَّرِي بِهَا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি হায়েয থেকে কীভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি (মিশক) মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
১. বীর্যপাত হলে :
নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন ঘুমের অবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায় হোক যে কোন অবস্থায় বীর্যপাত হলে তাকে গোসল করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ قَالَ : إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় পানির পরিবর্তে পানি। অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮০২; আবু দাউদ, হা/২১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬১।]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ أُمَّ سُلَيْمٍ قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحِيْ مِنَ الْحَقِّ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ غُسْلٌ إِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ نَعَمْ، إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা উম্মে সুলাইম এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আললাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (আমার প্রশ্ন হচ্ছে) মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলেও কি তাদেরকে গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যখন সে পানি দেখতে পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২১; মিশকাত, হা/৪৩৩।]
২. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে :
স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। চাই বীর্যপাত হোক অথবা না হোক। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর উপর বসে অতঃপর দুই লজ্জাস্থান মিলিত হয় তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০২।]
মাসআলা :
যদি পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যোনিতে প্রবেশ ছাড়াই শুধু স্পর্শ করে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের উপর গোসল ফরয হবে না।
স্ত্রীকে আলিঙ্গন করার ফলে বীর্যপাত হলে যার বীর্যপাত হবে কেবল তার উপর গোসল আবশ্যক হবে।
স্বামী-স্ত্রী মিলন করে স্ত্রী গোসল করার পর যদি তার যোনি থেকে স্বামীর বীর্য বের হতে দেখে, তাহলে তার উপর পুনরায় গোসল ওয়াজিব নয়। তবে এ ক্ষেত্রে তার উপর অযু করা আবশ্যক হবে।
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাসের জন্য ডাকে, তবে গোসল করার পানি না থাকার অজুহাতে তাকে সহবাসে বাধা দিবে না; বরং সহবাস করবে। এরপর যদি গোসল করতে সক্ষম হয় তাহলে গোসল করবে নতুবা তায়াম্মুম করবে এবং সালাত আদায় করবে।
৩. মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা হায়েযের সময় সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبِيَّ ﷺ عَنْ غُسْلِهَا مِنَ الْمَحِيضِ فَأَمَرَهَا كَيْفَ تَغْتَسِلُ قَالَ خُذِي فِرْصَةً مِنْ مِسْكٍ فَتَطَهَّرِي بِهَا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি হায়েয থেকে কীভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি (মিশক) মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
১. কোন মুসলিম মারা গেলে তাকে গোসল দেয়া :
উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যখন কোন মুসলিম মারা যায় তখন তাকে গোসল দেয়া ওয়াজিব। উম্মে আতীয়া (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর কন্যা মারা যাওয়ার পর আমরা যখন তাকে গোসল করাচ্ছিলাম তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বললেন,
اِغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذٰلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
অর্থাৎ তোমরা তাকে ৩ বার অথবা ৫ বার অথবা তোমরা যদি মনে কর এর চেয়ে বেশি সংখ্যক বার বরই পাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫২০; সহীহ বুখারী, হা/১২৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/২২১১; আবু দাউদ, হা/৩১৪৪।]
২. ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা :
যখন কোন কাফির ইসলাম গ্রহণ করে তখন তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ قَيْسِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ - أُرِيْدُ الْإِسْلَامَ فَأَمَرَنِىْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
কায়েস ইবনে আসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলাম। তখন তিনি আমাকে গোসল করার নির্দেশ দিলেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯২২৫।]
৩. জুমু‘আর দিন গোসল করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الْجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ জুমু‘আর দিন পাবে তখন সে যেন গোসল করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩১; সহীহ বুখারী, হা/৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৮; নাসাঈ, হা/১৩৭৬; মিশকাত, হা/৪১৫।]
৪. দুই ঈদের দিন গোসল করা :
উলামাগণ দুই ঈদের দিন গোসল করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ يَغْدُوَ إِلَى الْمُصَلّٰى
নাফে‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ঈদুল ফিতরের দিন গোসল করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৬; বায়হাকী, হা/৫৯২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৭৫৩।]
৫. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা :
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানের পর গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا ، فَلْيَغْتَسِلْ ، وَمَنْ حَمَلَهٗ ، فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে যেন গোসল করে নেয়। আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করবে সে যেন অযু করে নেয়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৬৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৬১; মিশকাত, হা/৫৪১।]
৬. ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা :
জমহুর উলামার নিকট হজ্জ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। [তিরমিযী, হা/৮৩৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৫৯৫।]
৭. মক্কায় প্রবেশ করার পর গোসল করা :
যে ব্যক্তি মক্কায় প্রবেশের ইচ্ছা পোষণ করবে তার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْدَمُ مَكَّةَ إِلَّا بَاتَ بِذِىْ طَوًى حَتّٰى يُصْبِحَ وَيَغْتَسِلَ ثُمَّ يَدْخُلُ مَكَّةَ نَهَارًا وَيَذْكُرُ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ فَعَلَهٗ
নাফে‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) মক্কায় প্রবেশের পূর্বে তুয়া উপত্যকায় রাত্রি যাপন করতেন। এমনকি সেখানে সকাল করে ফেলতেন। তারপর গোসল করে দিনে মক্কায় প্রবেশ করতেন। অতঃপর বলতেন, নবী ﷺ এরূপ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩১০৪; আবু দাউদ, হা/১৮৬৭; বায়হাকী, হা/৮৯৮১; মিশকাত, হা/২৫৬১।]
উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যখন কোন মুসলিম মারা যায় তখন তাকে গোসল দেয়া ওয়াজিব। উম্মে আতীয়া (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর কন্যা মারা যাওয়ার পর আমরা যখন তাকে গোসল করাচ্ছিলাম তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বললেন,
اِغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذٰلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
অর্থাৎ তোমরা তাকে ৩ বার অথবা ৫ বার অথবা তোমরা যদি মনে কর এর চেয়ে বেশি সংখ্যক বার বরই পাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫২০; সহীহ বুখারী, হা/১২৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/২২১১; আবু দাউদ, হা/৩১৪৪।]
২. ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা :
যখন কোন কাফির ইসলাম গ্রহণ করে তখন তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ قَيْسِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ - أُرِيْدُ الْإِسْلَامَ فَأَمَرَنِىْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
কায়েস ইবনে আসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলাম। তখন তিনি আমাকে গোসল করার নির্দেশ দিলেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯২২৫।]
৩. জুমু‘আর দিন গোসল করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الْجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ জুমু‘আর দিন পাবে তখন সে যেন গোসল করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩১; সহীহ বুখারী, হা/৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৮; নাসাঈ, হা/১৩৭৬; মিশকাত, হা/৪১৫।]
৪. দুই ঈদের দিন গোসল করা :
উলামাগণ দুই ঈদের দিন গোসল করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ يَغْدُوَ إِلَى الْمُصَلّٰى
নাফে‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ঈদুল ফিতরের দিন গোসল করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৬; বায়হাকী, হা/৫৯২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৭৫৩।]
৫. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা :
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানের পর গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا ، فَلْيَغْتَسِلْ ، وَمَنْ حَمَلَهٗ ، فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে যেন গোসল করে নেয়। আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করবে সে যেন অযু করে নেয়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৬৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৬১; মিশকাত, হা/৫৪১।]
৬. ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা :
জমহুর উলামার নিকট হজ্জ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। [তিরমিযী, হা/৮৩৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৫৯৫।]
৭. মক্কায় প্রবেশ করার পর গোসল করা :
যে ব্যক্তি মক্কায় প্রবেশের ইচ্ছা পোষণ করবে তার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْدَمُ مَكَّةَ إِلَّا بَاتَ بِذِىْ طَوًى حَتّٰى يُصْبِحَ وَيَغْتَسِلَ ثُمَّ يَدْخُلُ مَكَّةَ نَهَارًا وَيَذْكُرُ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ فَعَلَهٗ
নাফে‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) মক্কায় প্রবেশের পূর্বে তুয়া উপত্যকায় রাত্রি যাপন করতেন। এমনকি সেখানে সকাল করে ফেলতেন। তারপর গোসল করে দিনে মক্কায় প্রবেশ করতেন। অতঃপর বলতেন, নবী ﷺ এরূপ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩১০৪; আবু দাউদ, হা/১৮৬৭; বায়হাকী, হা/৮৯৮১; মিশকাত, হা/২৫৬১।]
গোসল করার সময় প্রথমে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করতে হবে। তারপর লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতে হবে। অতঃপর দু’পা ব্যতীত সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতে হবে। পরে মাথায় তিন বার পানি ঢেলে সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করতে হবে, যাতে শরীরের কোন জায়গা শুকনো না থাকে। সব শেষে দু’পা ধৌত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/২৪২।]
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরুরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৪৬; মিশকাত হা/৪৩৮।]
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরুরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৪৬; মিশকাত হা/৪৩৮।]
১. গোসলের জন্য নিয়ত করা :
গোসল হলো একটি ইবাদাত। এটা শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং গোসলের মধ্যে নিয়ত শর্ত। আর এ ব্যাপারে নিয়ত হলো, আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ বাস্তবায়ন ও পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে গোসল করার জন্য সংকল্প করা। আর ইখলাছ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সংকল্প করা এবং মুমিন বান্দার উপর যা ফরয হয়েছে তা আদায়ের জন্য ইচ্ছা পোষণ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, প্রত্যেকটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর গোসলও এই আমলের অন্তর্ভুক্ত।
২. পাত্রে হাত প্রবেশের পূর্বেই দু’হাত ধৌত করা :
عَنْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ قَالَتْ وَضَعْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ غُسْلًا وَسَتَرْتُه فَصَبَّ عَلٰى يَدِه فَغَسَلَهَا مَرَّةً ، أَوْ مَرَّتَيْنِ
মাইমূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং তাকে আড়াল করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’হাতের কব্জি দু’বার অথবা তিন বার ধৌত করলেন। এরপর পাত্রে হাত প্রবেশ করালেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
৩. গুপ্তাঙ্গ ধৌত করার পর মাটি বা সাবান জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
ثُمَّ أَفْرَغَ بِه عَلٰى فَرْجِه وَغَسَلَه بِشِمَالِه ثُمَّ ضَرَبَ بِشِمَالِهِ الْأَرْضَ فَدَلَكَهَا دَلْكًا شَدِيْدًا
অতঃপর লজ্জাস্থানের উপর পানি ঢাললেন এবং বাম হাত দ্বারা তা ধৌত করলেন। তারপর বাম হাত মাটিতে ভালো করে ঘষলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৮; নাসাঈ, হা/২৫৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪১।]
৪. গোসলের সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার হুকুম :
প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী গোসলের মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব। কেননা গোসলে সর্বাঙ্গ ধৌত করা ওয়াজিব। আর মুখমন্ডল শরীরেরই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কুলি করা ও নাকে পানি দেয়াও জরুরি।
৫. দুই পা কখন ধৌত করবে?
গোসল করার স্থানটি যদি পরিষ্কার না হয় তাহলে পরে পা ধৌত করবে। আর যদি স্থান পরিষ্কার হয় তাহলে অযুর সাথে পা ধৌত করলেও চলবে। হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’পা গোসল সম্পন্ন করার পর ধৌত করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৮; নাসাঈ, হা/২৫৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪১।]
৬. গোসলের সময় দাড়ি খিলাল করা প্রসঙ্গে :
যদি চামড়া বা ত্বকে পানি পৌঁছে তাহলে দাড়ি খিলাল করা মুস্তাহাব। নতুবা দাড়ির গোড়ায় বা ত্বকে পানি পৌঁছানোর জন্য দাড়ি খিলাল করা ওয়াজিব হবে। কেননা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আমভাবে বলা হয়েছে যে, নবী ﷺ চুলের গোঁড়া খিলাল করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/৪২০।]
৭. কতবার পানি ঢালবে?
গোসলের সময় কতবার শরীরে পানি ঢালতে হবে- এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা করা হয়নি। সুতরাং ধরে নেয়া যায় যে, এর সর্বনিম্ন সংখ্যা হলো একবার। সর্বাঙ্গ ধৌত করার ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) বলেন,
ثُمَّ يُفِيْضُ الْمَاءَ عَلٰى جِلْدِه كُلِّه
অর্থাৎ তারপর তার সারা দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৯৬।]
তবে শাইখুল ইসলাম ও অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী তিনবার পানি ঢালা মুস্তাহাব। [ফাতহুল বারী, ১/৪৩৯।]
৮. গোসলের অঙ্গগুলো কচলানো :
অঙ্গ কচলানো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছে,
وَكَانَ اٰخِرَ ذٰلكَ أَنْ أَعْطَى الَّذِي أَصَابَتْهُ الْجَنَابَةُ إِنَاءً مِنْ مَاءٍ، قَالَ : اذْهَبْ، فَأَفْرِغْهُ عَلَيْكَ
অপর এক ব্যক্তি যিনি জুনুবী হয়েছিলেন, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ পানি নিয়ে যাও এবং শরীরে ঢেলে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৯১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩০১।]
উপরোক্ত হাদীসে গোসলের নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শরীরের উপর পানি ঢেলে দিতে হবে। কিমত্মু এখানে কচলানোর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ থেকে বুঝা যায় যে, কচলানো উত্তম কিমত্মু জরুরি নয়। তবে লক্ষ্য করতে হবে যে, শরীরের সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর জন্য ভিজা হাত বুলিয়ে নেয়া জরুরি।
৯. জনসমক্ষে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা বৈধ নয় :
জনসমক্ষে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা বৈধ নয়, কিমত্মু বাথরুমের ভেতরে যেখানে কেউ দেখতে পাবে না সেখানে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা প্রয়োজনে জায়েয আছে। তবে নির্জন স্থানে হলেও উলঙ্গ হয়ে গোসল না করা উচিত।
অপর হাদীসে এসেছে, জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। [নাসাঈ, হা/৪০১; তিরমিযী, হা/২৮০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৫৮; মুসত্মাদরাকে হাকে, হা/৭৭৭৯।]
১০. পর্দা করে গোসল করা উত্তম :
পোশাক পরিহিত অবস্থায় জনসমক্ষে গোসল করা জায়েয আছে। তবে সম্ভব হলে পর্দার আড়ালে গোসল করা উত্তম। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ مَيْمُوْنَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ قَالَتْ وَضَعْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ غُسْلًا وَسَتَرْتُه
মাইমূনা বিনতে হারেস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পানি রেখে তাকে পর্দা করে দিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
উল্লেখ্য যে, অনেক জায়গায় বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে দেখা যায় যে, অনেক নারী-পুরুষ একসাথে মিলে পুকুরে অথবা নদীর ঘাটে গোসল করে। এটা কোনভাবেই জায়েয নয়। কেননা গোসলের সময় কাপড় ভিজার পর তার শরীরে একেবারে লেগে যাওয়ার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গই প্রকাশ পেয়ে যায়। এজন্য বেগানা নারী-পুরুষদের আলাদাভাবে গোসল করা একামত্ম জরুরি।
১১. জানাবাতের গোসল দ্রুত করা উত্তম :
জুনুবী ব্যক্তির জন্য দেরীতে গোসল করা বৈধ তবে দ্রুত গোসল করা উত্তম ও অত্যাধিক পবিত্রতার পরিচায়ক।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ لَقِيَه فِي بَعْضِ طَرِيْقِ الْمَدِينَةِ وَهُوَ جُنُبٌ، فَانْخَنَسْتُ مِنْهُ، فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟ قَالَ : كُنْتُ جُنُبًا، فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ وَأَنَا عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ . فَقَالَ : سُبْحَانَ اللهِ، إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা মদিনার রাস্তায় নবী ﷺ এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো, তখন তিনি জুনুবী অবস্থায় ছিলেন। (আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন), তখন আমি নিজেকে অপবিত্র মনে করে কেটে পড়লাম। এরপর তিনি বাড়ীতে চলে গেলেন এবং গোসল সেরে নবী ﷺ-এর কাছে আসলেন। (আসা মাত্রই) তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি অপবিত্র ছিলাম। তাই অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে বসা অসমীচীন মনে করেছি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! মুসলিম কখনো অপবিত্র হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫০; নাসাঈ, হা/২৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৪।]
১২. জুনুবী ব্যক্তি গোসলের পূর্বে অযু করে ঘুমাতে পারে :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَنَامَ وَهُوَ جُنُبٌ، غَسَلَ فَرْجَه ، وَتَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি রাতে জুনুবী অবস্থায় নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করলে প্রথমে লজ্জাস্থান ধুয়ে তারপর সালাতের অযুর মতো অযু করে নিতেন (তারপর ঘুমাতেন)। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৫; আবু দাউদ, হা/২২২।]
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিতর সম্বন্ধে আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি (তৎবিষয়ে) একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নাপাকির সময় কি ঘুমানোর আগে গোসল করতেন, না গোসল করার আগে ঘুমাতেন? তিনি বললেন, সবই করতেন। কখনো গোসল করে ঘুমাতেন আবার কখনো অযু করে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর যিনি সব কাজেই অবকাশ রেখেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩১; তিরমিযী, হা/২৯২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৪৩।]
১৩. গোসলের পর পুনরায় অযু আবশ্যক নয় :
যে ব্যক্তি শরয়ী পন্থায় গোসল করবে এবং সালাত আদায়ের নিয়ত করবে তার জন্য পরে পুনরায় অযু করা আবশ্যক নয়। এমনকি যদি সে গোসল করার সময় অযু নাও করে। কেননা জানাবাত থেকে পবিত্রতা অর্জন করলে ক্ষুদ্রতর নাপাকী থেকেও পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ مِنَ الْجَنَابَةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জানাবাতের গোসলের পর আর অযু করতেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/৫৭৯; বায়হাকী, হা/৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৪৯।]
গোসল হলো একটি ইবাদাত। এটা শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং গোসলের মধ্যে নিয়ত শর্ত। আর এ ব্যাপারে নিয়ত হলো, আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ বাস্তবায়ন ও পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে গোসল করার জন্য সংকল্প করা। আর ইখলাছ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সংকল্প করা এবং মুমিন বান্দার উপর যা ফরয হয়েছে তা আদায়ের জন্য ইচ্ছা পোষণ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, প্রত্যেকটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর গোসলও এই আমলের অন্তর্ভুক্ত।
২. পাত্রে হাত প্রবেশের পূর্বেই দু’হাত ধৌত করা :
عَنْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ قَالَتْ وَضَعْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ غُسْلًا وَسَتَرْتُه فَصَبَّ عَلٰى يَدِه فَغَسَلَهَا مَرَّةً ، أَوْ مَرَّتَيْنِ
মাইমূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং তাকে আড়াল করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’হাতের কব্জি দু’বার অথবা তিন বার ধৌত করলেন। এরপর পাত্রে হাত প্রবেশ করালেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
৩. গুপ্তাঙ্গ ধৌত করার পর মাটি বা সাবান জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
ثُمَّ أَفْرَغَ بِه عَلٰى فَرْجِه وَغَسَلَه بِشِمَالِه ثُمَّ ضَرَبَ بِشِمَالِهِ الْأَرْضَ فَدَلَكَهَا دَلْكًا شَدِيْدًا
অতঃপর লজ্জাস্থানের উপর পানি ঢাললেন এবং বাম হাত দ্বারা তা ধৌত করলেন। তারপর বাম হাত মাটিতে ভালো করে ঘষলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৮; নাসাঈ, হা/২৫৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪১।]
৪. গোসলের সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার হুকুম :
প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী গোসলের মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব। কেননা গোসলে সর্বাঙ্গ ধৌত করা ওয়াজিব। আর মুখমন্ডল শরীরেরই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কুলি করা ও নাকে পানি দেয়াও জরুরি।
৫. দুই পা কখন ধৌত করবে?
গোসল করার স্থানটি যদি পরিষ্কার না হয় তাহলে পরে পা ধৌত করবে। আর যদি স্থান পরিষ্কার হয় তাহলে অযুর সাথে পা ধৌত করলেও চলবে। হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’পা গোসল সম্পন্ন করার পর ধৌত করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৮; নাসাঈ, হা/২৫৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪১।]
৬. গোসলের সময় দাড়ি খিলাল করা প্রসঙ্গে :
যদি চামড়া বা ত্বকে পানি পৌঁছে তাহলে দাড়ি খিলাল করা মুস্তাহাব। নতুবা দাড়ির গোড়ায় বা ত্বকে পানি পৌঁছানোর জন্য দাড়ি খিলাল করা ওয়াজিব হবে। কেননা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আমভাবে বলা হয়েছে যে, নবী ﷺ চুলের গোঁড়া খিলাল করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/৪২০।]
৭. কতবার পানি ঢালবে?
গোসলের সময় কতবার শরীরে পানি ঢালতে হবে- এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা করা হয়নি। সুতরাং ধরে নেয়া যায় যে, এর সর্বনিম্ন সংখ্যা হলো একবার। সর্বাঙ্গ ধৌত করার ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) বলেন,
ثُمَّ يُفِيْضُ الْمَاءَ عَلٰى جِلْدِه كُلِّه
অর্থাৎ তারপর তার সারা দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৯৬।]
তবে শাইখুল ইসলাম ও অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী তিনবার পানি ঢালা মুস্তাহাব। [ফাতহুল বারী, ১/৪৩৯।]
৮. গোসলের অঙ্গগুলো কচলানো :
অঙ্গ কচলানো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছে,
وَكَانَ اٰخِرَ ذٰلكَ أَنْ أَعْطَى الَّذِي أَصَابَتْهُ الْجَنَابَةُ إِنَاءً مِنْ مَاءٍ، قَالَ : اذْهَبْ، فَأَفْرِغْهُ عَلَيْكَ
অপর এক ব্যক্তি যিনি জুনুবী হয়েছিলেন, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ পানি নিয়ে যাও এবং শরীরে ঢেলে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৯১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩০১।]
উপরোক্ত হাদীসে গোসলের নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শরীরের উপর পানি ঢেলে দিতে হবে। কিমত্মু এখানে কচলানোর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ থেকে বুঝা যায় যে, কচলানো উত্তম কিমত্মু জরুরি নয়। তবে লক্ষ্য করতে হবে যে, শরীরের সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর জন্য ভিজা হাত বুলিয়ে নেয়া জরুরি।
৯. জনসমক্ষে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা বৈধ নয় :
জনসমক্ষে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা বৈধ নয়, কিমত্মু বাথরুমের ভেতরে যেখানে কেউ দেখতে পাবে না সেখানে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা প্রয়োজনে জায়েয আছে। তবে নির্জন স্থানে হলেও উলঙ্গ হয়ে গোসল না করা উচিত।
অপর হাদীসে এসেছে, জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। [নাসাঈ, হা/৪০১; তিরমিযী, হা/২৮০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৫৮; মুসত্মাদরাকে হাকে, হা/৭৭৭৯।]
১০. পর্দা করে গোসল করা উত্তম :
পোশাক পরিহিত অবস্থায় জনসমক্ষে গোসল করা জায়েয আছে। তবে সম্ভব হলে পর্দার আড়ালে গোসল করা উত্তম। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ مَيْمُوْنَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ قَالَتْ وَضَعْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ غُسْلًا وَسَتَرْتُه
মাইমূনা বিনতে হারেস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পানি রেখে তাকে পর্দা করে দিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
উল্লেখ্য যে, অনেক জায়গায় বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে দেখা যায় যে, অনেক নারী-পুরুষ একসাথে মিলে পুকুরে অথবা নদীর ঘাটে গোসল করে। এটা কোনভাবেই জায়েয নয়। কেননা গোসলের সময় কাপড় ভিজার পর তার শরীরে একেবারে লেগে যাওয়ার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গই প্রকাশ পেয়ে যায়। এজন্য বেগানা নারী-পুরুষদের আলাদাভাবে গোসল করা একামত্ম জরুরি।
১১. জানাবাতের গোসল দ্রুত করা উত্তম :
জুনুবী ব্যক্তির জন্য দেরীতে গোসল করা বৈধ তবে দ্রুত গোসল করা উত্তম ও অত্যাধিক পবিত্রতার পরিচায়ক।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ لَقِيَه فِي بَعْضِ طَرِيْقِ الْمَدِينَةِ وَهُوَ جُنُبٌ، فَانْخَنَسْتُ مِنْهُ، فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟ قَالَ : كُنْتُ جُنُبًا، فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ وَأَنَا عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ . فَقَالَ : سُبْحَانَ اللهِ، إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা মদিনার রাস্তায় নবী ﷺ এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো, তখন তিনি জুনুবী অবস্থায় ছিলেন। (আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন), তখন আমি নিজেকে অপবিত্র মনে করে কেটে পড়লাম। এরপর তিনি বাড়ীতে চলে গেলেন এবং গোসল সেরে নবী ﷺ-এর কাছে আসলেন। (আসা মাত্রই) তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি অপবিত্র ছিলাম। তাই অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে বসা অসমীচীন মনে করেছি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! মুসলিম কখনো অপবিত্র হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫০; নাসাঈ, হা/২৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৪।]
১২. জুনুবী ব্যক্তি গোসলের পূর্বে অযু করে ঘুমাতে পারে :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَنَامَ وَهُوَ جُنُبٌ، غَسَلَ فَرْجَه ، وَتَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি রাতে জুনুবী অবস্থায় নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করলে প্রথমে লজ্জাস্থান ধুয়ে তারপর সালাতের অযুর মতো অযু করে নিতেন (তারপর ঘুমাতেন)। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৫; আবু দাউদ, হা/২২২।]
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিতর সম্বন্ধে আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি (তৎবিষয়ে) একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নাপাকির সময় কি ঘুমানোর আগে গোসল করতেন, না গোসল করার আগে ঘুমাতেন? তিনি বললেন, সবই করতেন। কখনো গোসল করে ঘুমাতেন আবার কখনো অযু করে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর যিনি সব কাজেই অবকাশ রেখেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩১; তিরমিযী, হা/২৯২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৪৩।]
১৩. গোসলের পর পুনরায় অযু আবশ্যক নয় :
যে ব্যক্তি শরয়ী পন্থায় গোসল করবে এবং সালাত আদায়ের নিয়ত করবে তার জন্য পরে পুনরায় অযু করা আবশ্যক নয়। এমনকি যদি সে গোসল করার সময় অযু নাও করে। কেননা জানাবাত থেকে পবিত্রতা অর্জন করলে ক্ষুদ্রতর নাপাকী থেকেও পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ مِنَ الْجَنَابَةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জানাবাতের গোসলের পর আর অযু করতেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/৫৭৯; বায়হাকী, হা/৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৪৯।]
মহিলাদের গোসলের নিয়ম সম্পূর্ণ পুরুষের গোসলের মতোই। নারীদের খোপা খোলা জরুরি নয়, তবে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো আবশ্যক।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّى امْرَأَةٌ أَشُدُّ ضَفْرَ رَأْسِى فَأَنْقُضُه لِغُسْلِ الْجَنَابَةِ قَالَ : لَا إِنَّمَا يَكْفِيْكِ أَنْ تَحْثِى عَلٰى رَأْسِكِ ثَلَاثَ حَثَيَاتٍ ثُمَّ تُفِيضِيْنَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطْهُرِيْنَ
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মাথায় চুলের বেনী গেঁথে থাকি। সুতরাং অপবিত্রতার গোসলের সময় কি আমি তা খুলব? তিনি বললেন, না। বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার ওপর তিন আঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে দিয়ে পবিত্র হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; আবু দাউদ, হা/২৫১; তিরমিযী, হা/১০৫; নাসাঈ, হা/২৪১; ইবনে মাজাহ, হা/৬০৩।]
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রে গোসল করা বৈধ :
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ، ﷺ مِنْ إِنَاءٍ بَيْنِيْ وَبَيْنَه وَاحِدٍ فَيُبَادِرُنِيْ حَتّٰى أَقُوْلَ دَعْ لِيْ دَعْ لِيْ . قَالَتْ وَهُمَا جُنُبَانِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমার এবং তাঁর মাঝখানে থাকত। তিনি আমার থেকে আগে তাড়াতাড়ি করে ফেলতেন। তখন আমি বলতাম, আমার জন্য একটু রেখে দিন, আমার জন্য একটু রেখে দিন। তিনি [আয়েশা (রাঃ)] বলেন যে, তখন তাঁরা উভয়েই অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮; নাসাঈ, হা/২৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪২৬; বায়হাকী, হা/৮৫২।]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّى امْرَأَةٌ أَشُدُّ ضَفْرَ رَأْسِى فَأَنْقُضُه لِغُسْلِ الْجَنَابَةِ قَالَ : لَا إِنَّمَا يَكْفِيْكِ أَنْ تَحْثِى عَلٰى رَأْسِكِ ثَلَاثَ حَثَيَاتٍ ثُمَّ تُفِيضِيْنَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطْهُرِيْنَ
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মাথায় চুলের বেনী গেঁথে থাকি। সুতরাং অপবিত্রতার গোসলের সময় কি আমি তা খুলব? তিনি বললেন, না। বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার ওপর তিন আঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে দিয়ে পবিত্র হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; আবু দাউদ, হা/২৫১; তিরমিযী, হা/১০৫; নাসাঈ, হা/২৪১; ইবনে মাজাহ, হা/৬০৩।]
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রে গোসল করা বৈধ :
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ، ﷺ مِنْ إِنَاءٍ بَيْنِيْ وَبَيْنَه وَاحِدٍ فَيُبَادِرُنِيْ حَتّٰى أَقُوْلَ دَعْ لِيْ دَعْ لِيْ . قَالَتْ وَهُمَا جُنُبَانِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমার এবং তাঁর মাঝখানে থাকত। তিনি আমার থেকে আগে তাড়াতাড়ি করে ফেলতেন। তখন আমি বলতাম, আমার জন্য একটু রেখে দিন, আমার জন্য একটু রেখে দিন। তিনি [আয়েশা (রাঃ)] বলেন যে, তখন তাঁরা উভয়েই অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮; নাসাঈ, হা/২৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪২৬; বায়হাকী, হা/৮৫২।]
হায়েয ও নিফাসের গোসল জানাবাতের গোসলের মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে বর্ধিত কিছু কাজ রয়েছে। যেমন-
১. সুগন্ধিজাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা :
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। মহিলা বলল, আমি কীভাবে এর দ্বারা পবিত্রতা লাভ করব? তিনি পুনরায় বললেন, তুমি তা দিয়ে পবিত্রতা লাভ করো। তারপরও মহিলা বলল, কীভাবে আমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সুব্হানাল্লাহ! তুমি পবিত্রতা অর্জন করো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমি ঐ মহিলাকে টেনে নিয়ে এসে বললাম, তোমার হায়েযের রক্ত যে যে স্থানে লেগেছে খোঁজ করবে এবং মিশক (সুগন্ধি) যুক্ত কাপড়ের টুকরা দিয়ে সে স্থানে মালিশ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
১. সুগন্ধিজাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা :
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। মহিলা বলল, আমি কীভাবে এর দ্বারা পবিত্রতা লাভ করব? তিনি পুনরায় বললেন, তুমি তা দিয়ে পবিত্রতা লাভ করো। তারপরও মহিলা বলল, কীভাবে আমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সুব্হানাল্লাহ! তুমি পবিত্রতা অর্জন করো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমি ঐ মহিলাকে টেনে নিয়ে এসে বললাম, তোমার হায়েযের রক্ত যে যে স্থানে লেগেছে খোঁজ করবে এবং মিশক (সুগন্ধি) যুক্ত কাপড়ের টুকরা দিয়ে সে স্থানে মালিশ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
১. অযুর মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়:
عَنْ عَبْدِ اللهِ الصُّنَابِحِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - - قَالَ : اِذَا تَوَضَّاَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ فَتَمَضْمَضَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ فِيْهِ وَاِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ اَنْفِهٖ فَاِذَا غَسَلَ وَجْهَهٗ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِهٖ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَاِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ يَدَيْهِ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَظْفَارِ يَدَيْهِ فَاِذَا مَسَحَ بِرَأْسِهٖ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رَّأْسِهٖ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ اُذُنَيْهِ فَاِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رِّجْلَيْهِ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَظْفَارِ رِجْلَيْهِ - قَالَ - ثُمَّ كَانَ مَشْيُهٗ اِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهٗ نَافِلَةً لَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে সুনাবিহী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুমিন বান্দা অযু করে, অতঃপর যখন সে কুলি করে তখন কুলি করার সাথে সাথে তার মুখের গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে নাক পরিষ্কার করে তখন তার নাক থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়। যখন সে তার চেহারা ধৌত করে তখন চেহারা থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার চোখের ভেতরের গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার হাত ধৌত করে তখন তার হাত হতেও সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার নখের নিচে লুকিয়ে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার কান হতেও গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা ধৌত করে তখন তার দু’পা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার পায়ের নখের নিচে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারপর সে যখন পায়ে হেটে মসজিদে যায় এবং সালাত আদায় করে তখন সে গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে সালাত আদায় করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬১; নাসাঈ, হা/১০৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৫৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৩৫; মিশকাত, হা/২৯৭।]
২. অযুর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلٰى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ . قَالُوْا بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِه وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذٰلِكُمُ الرِّبَاطُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন কাজ সম্পর্কে জানাব না, যা করলে আল্লাহ তা‘আলা (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, (১) অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অযু করা, (২) মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা করা এবং (৩) এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০; তিরমিযী, হা/৫১; নাসাঈ, হা/১৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০০৮।]
‘সীমান্ত প্রহরা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কোন ব্যক্তি ইসলামের উপর অটল থাকা এবং ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রসত্মুত থাকা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া।
৩. এর দ্বারা হাশরের ময়দানে উম্মতকে পৃথক করা হবে :
عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ قَالَ رَقِيْتُ مَعَ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَلٰى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ فَتَوَضَّاَ فَقَالَ اِنِّيْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ : اِنَّ اُمَّتِيْ يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِيْنَ مِنْ اٰثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ اَنْ يُطِيْلَ غُرَّتَهٗ فَلْيَفْعَلْ
নু‘আইম আল মুজমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠি। তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) অযু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতদেরকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের অযুর অঙ্গসমূহ উজ্জ্বল থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাদের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সক্ষম সে যেন তা বাড়িয়ে নেয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০৮৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
৪. অযু কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য জ্যোতি হবে :
عَنْ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ كُنْتُ خَلْفَ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ فَكَانَ يَمُدُّ يَدَه حَتّٰى تَبْلُغَ إِبْطَه فَقُلْتُ لَه يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا هٰذَا الْوُضُوْءُ فَقَالَ يَا بَنِيْ فَرُّوْخَ أَنْتُمْ هَا هُنَا لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ هَا هُنَا مَا تَوَضَّأْتُ هٰذَا الْوُضُوْءَ سَمِعْتُ خَلِيْلِيْ ﷺ يَقُوْلُ : تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوْءُ
আবু হাযেম (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর পেছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি সালাতের জন্য অযু করছেন। যখন তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন তখন আমি তাকে বললাম, হে আবু হুরায়রা! এটা কেমন ধরনের অযু? তিনি অবাক হয়ে বললেন, হে বনী ফার্রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের অযু করতাম না। আমি আমার বন্ধু (রাসূলুল্লাহ ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অযুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৬৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১৪২; বায়হাকী, হা/২৬০।]
৫. অযু শয়তানের গ্রন্থি খুলে দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ اَحَدِكُمْ اِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلٰى مَكَانِ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ، فَاِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَاَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَاِلَّا اَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় যে, তোমার সম্মুখে আছে লম্বা রাত, অতএব তুমি ঘুমিয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি সজাগ হয়ে আল্লাহকে মনে করে, একটি গিঁট খুলে যায়, পরে অযু করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর সালাত পড়লে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে ভোরে উঠে অপবিত্র মন নিয়ে ও আলস্য সহকারে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২, ৩২৬৯; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৪; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯২০; মিশকাত, হা/১২১৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ الصُّنَابِحِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - - قَالَ : اِذَا تَوَضَّاَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ فَتَمَضْمَضَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ فِيْهِ وَاِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ اَنْفِهٖ فَاِذَا غَسَلَ وَجْهَهٗ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِهٖ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَاِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ يَدَيْهِ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَظْفَارِ يَدَيْهِ فَاِذَا مَسَحَ بِرَأْسِهٖ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رَّأْسِهٖ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ اُذُنَيْهِ فَاِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رِّجْلَيْهِ حَتّٰى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ اَظْفَارِ رِجْلَيْهِ - قَالَ - ثُمَّ كَانَ مَشْيُهٗ اِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهٗ نَافِلَةً لَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে সুনাবিহী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুমিন বান্দা অযু করে, অতঃপর যখন সে কুলি করে তখন কুলি করার সাথে সাথে তার মুখের গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে নাক পরিষ্কার করে তখন তার নাক থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়। যখন সে তার চেহারা ধৌত করে তখন চেহারা থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার চোখের ভেতরের গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার হাত ধৌত করে তখন তার হাত হতেও সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার নখের নিচে লুকিয়ে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার কান হতেও গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা ধৌত করে তখন তার দু’পা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার পায়ের নখের নিচে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারপর সে যখন পায়ে হেটে মসজিদে যায় এবং সালাত আদায় করে তখন সে গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে সালাত আদায় করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬১; নাসাঈ, হা/১০৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৫৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৩৫; মিশকাত, হা/২৯৭।]
২. অযুর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلٰى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ . قَالُوْا بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِه وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذٰلِكُمُ الرِّبَاطُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন কাজ সম্পর্কে জানাব না, যা করলে আল্লাহ তা‘আলা (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, (১) অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অযু করা, (২) মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা করা এবং (৩) এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০; তিরমিযী, হা/৫১; নাসাঈ, হা/১৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০০৮।]
‘সীমান্ত প্রহরা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কোন ব্যক্তি ইসলামের উপর অটল থাকা এবং ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রসত্মুত থাকা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া।
৩. এর দ্বারা হাশরের ময়দানে উম্মতকে পৃথক করা হবে :
عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ قَالَ رَقِيْتُ مَعَ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَلٰى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ فَتَوَضَّاَ فَقَالَ اِنِّيْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ : اِنَّ اُمَّتِيْ يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِيْنَ مِنْ اٰثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ اَنْ يُطِيْلَ غُرَّتَهٗ فَلْيَفْعَلْ
নু‘আইম আল মুজমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠি। তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) অযু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতদেরকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের অযুর অঙ্গসমূহ উজ্জ্বল থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাদের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সক্ষম সে যেন তা বাড়িয়ে নেয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০৮৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
৪. অযু কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য জ্যোতি হবে :
عَنْ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ كُنْتُ خَلْفَ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ فَكَانَ يَمُدُّ يَدَه حَتّٰى تَبْلُغَ إِبْطَه فَقُلْتُ لَه يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا هٰذَا الْوُضُوْءُ فَقَالَ يَا بَنِيْ فَرُّوْخَ أَنْتُمْ هَا هُنَا لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ هَا هُنَا مَا تَوَضَّأْتُ هٰذَا الْوُضُوْءَ سَمِعْتُ خَلِيْلِيْ ﷺ يَقُوْلُ : تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوْءُ
আবু হাযেম (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর পেছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি সালাতের জন্য অযু করছেন। যখন তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন তখন আমি তাকে বললাম, হে আবু হুরায়রা! এটা কেমন ধরনের অযু? তিনি অবাক হয়ে বললেন, হে বনী ফার্রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের অযু করতাম না। আমি আমার বন্ধু (রাসূলুল্লাহ ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অযুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৬৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১৪২; বায়হাকী, হা/২৬০।]
৫. অযু শয়তানের গ্রন্থি খুলে দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ اَحَدِكُمْ اِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلٰى مَكَانِ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ، فَاِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَاَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَاِلَّا اَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় যে, তোমার সম্মুখে আছে লম্বা রাত, অতএব তুমি ঘুমিয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি সজাগ হয়ে আল্লাহকে মনে করে, একটি গিঁট খুলে যায়, পরে অযু করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর সালাত পড়লে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে ভোরে উঠে অপবিত্র মন নিয়ে ও আলস্য সহকারে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২, ৩২৬৯; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৪; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯২০; মিশকাত, হা/১২১৯।]
অযুর শুরুতে হাত ধৌত করা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী অযুর শুরুতে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন যে, হাতে সাধারণত ময়লা ও জীবাণু থাকে। মুখে পানি দেয়ার পূর্বে যদি ভালো করে তা পরিষ্কার করা হয়, তাহলে সে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে না।
মিসওয়াক করা : দন্ত রোগের ডাক্তারগণ বলেন, দন্ত রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যাংশ। এর মাধ্যমে জীবাণু তার বংশ বিস্তার করে দাঁত ও দাঁতের মাড়ীর চরম ক্ষতি সাধন করে। আমরা মুসলিম, আমাদের কাছে রয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রেরিত দূত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ ﷺ এর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে দ্বীন-দুনিয়ার কামিয়াবী। রাসূলুল্লাহ ﷺ মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। কেননা মিসওয়াক একদিকে মুখকে পবিত্র করে। অপরদিকে এর দ্বারা আল্লাহর সমত্মুষ্টিও অর্জিত হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মিসওয়াক মুখকে পবিত্র রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনয়ন করে। [নাসায়ী, হা/৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৪৯; ইবনে খুযাইমা, হা/১৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৬৭; দারেমী, হা/৬৮৪।]
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ অযু করার সময় কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন। এমনকি নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করতেন। আবার গরগরা করে কুলি করেও অযু সম্পন্ন করতেন।
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ قَالَ اُتِىَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - بِوَضُوْءٍ فَتَوَضَّاَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا
মিকদাম ইবনে মা‘দিকারাব (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য অযুর পানি আনা হলো। অতঃপর তিনি অযুর শুরুতে প্রথমে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। তারপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। [আবু দাউদ, হা/১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২২৭।]
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, গড়গড়া করে কুলি করার মাধ্যমে টনসিলসহ গলার অসংখ্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নাক মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী নাক পরিষ্কার করলে স্থায়ী সর্দি কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয় না।
American council for beauty সংস্থার সদস্য লেডী হীচার বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রাসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তারা ইসলামী পন্থায় অযু দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়।
জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল (Eye-Water-Health) ‘‘চক্ষু-পানি-সুস্থতা’’। উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েকবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে; নতুবা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। অথচ ইসলাম এমনসব বিধিবিধান নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সর্বযুগের মানবজাতির সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ।
মিসওয়াক করা : দন্ত রোগের ডাক্তারগণ বলেন, দন্ত রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যাংশ। এর মাধ্যমে জীবাণু তার বংশ বিস্তার করে দাঁত ও দাঁতের মাড়ীর চরম ক্ষতি সাধন করে। আমরা মুসলিম, আমাদের কাছে রয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রেরিত দূত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ ﷺ এর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে দ্বীন-দুনিয়ার কামিয়াবী। রাসূলুল্লাহ ﷺ মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। কেননা মিসওয়াক একদিকে মুখকে পবিত্র করে। অপরদিকে এর দ্বারা আল্লাহর সমত্মুষ্টিও অর্জিত হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মিসওয়াক মুখকে পবিত্র রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনয়ন করে। [নাসায়ী, হা/৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৪৯; ইবনে খুযাইমা, হা/১৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৬৭; দারেমী, হা/৬৮৪।]
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ অযু করার সময় কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন। এমনকি নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করতেন। আবার গরগরা করে কুলি করেও অযু সম্পন্ন করতেন।
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ قَالَ اُتِىَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - بِوَضُوْءٍ فَتَوَضَّاَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا
মিকদাম ইবনে মা‘দিকারাব (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য অযুর পানি আনা হলো। অতঃপর তিনি অযুর শুরুতে প্রথমে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। তারপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। [আবু দাউদ, হা/১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২২৭।]
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, গড়গড়া করে কুলি করার মাধ্যমে টনসিলসহ গলার অসংখ্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নাক মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী নাক পরিষ্কার করলে স্থায়ী সর্দি কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয় না।
American council for beauty সংস্থার সদস্য লেডী হীচার বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রাসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তারা ইসলামী পন্থায় অযু দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়।
জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল (Eye-Water-Health) ‘‘চক্ষু-পানি-সুস্থতা’’। উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েকবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে; নতুবা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। অথচ ইসলাম এমনসব বিধিবিধান নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সর্বযুগের মানবজাতির সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ।
অযু সংক্রান্ত হাদীসগুলো একত্রিত করলে অযু করার নিয়ম নিম্নরূপে প্রতিফলিত হয় :
(১) প্রথমে মনে মনে অযুর নিয়ত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
নিয়তের স্থান হলো ক্বলব বা অন্তর। সুতরাং নিয়ত মুখে পাঠ করা শরীয়তসম্মত নয়। অযুকারী নিয়তের সময় সাধারণভাবে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্প করবে। আর এটাই তার জন্য নিয়ত হিসেবে সাব্যসত্ম হবে।
(২) তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৬০।]
(৩) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
(৪) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করতে হবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়তে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(৫) তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করতে হবে এবং দাড়ি খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নীচে দিতে হবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৪০৮।]
(৬) তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
(৭) তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করতে হবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
(৮) তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭।]
(৯) এভাবে অযু শেষে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেবে। [আবু দাউদ হা/১৬৮; নাসাঈ, হা/১৩৫; মিশকাত হা/৩৬১।]
অযুর শুরুতে কেবল বিসমিল্লাহ পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। এ সময় অন্য কোন দু‘আ পড়ার বর্ণনা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। তাছাড়া অনেক বই-পুসত্মকের মধ্যে অযুতে প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ লিখে দেয়া হয়েছে। এসব দু‘আ কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
অযু শেষে সূরা কদর পাঠ করার কথাও কিছু বই-পুসত্মকে পাওয়া যায়। কিমত্মু এরও কোন দলীল নেই।
(১) প্রথমে মনে মনে অযুর নিয়ত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
নিয়তের স্থান হলো ক্বলব বা অন্তর। সুতরাং নিয়ত মুখে পাঠ করা শরীয়তসম্মত নয়। অযুকারী নিয়তের সময় সাধারণভাবে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্প করবে। আর এটাই তার জন্য নিয়ত হিসেবে সাব্যসত্ম হবে।
(২) তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৬০।]
(৩) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
(৪) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করতে হবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়তে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(৫) তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করতে হবে এবং দাড়ি খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নীচে দিতে হবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৪০৮।]
(৬) তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
(৭) তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করতে হবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
(৮) তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭।]
(৯) এভাবে অযু শেষে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেবে। [আবু দাউদ হা/১৬৮; নাসাঈ, হা/১৩৫; মিশকাত হা/৩৬১।]
অযুর শুরুতে কেবল বিসমিল্লাহ পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। এ সময় অন্য কোন দু‘আ পড়ার বর্ণনা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। তাছাড়া অনেক বই-পুসত্মকের মধ্যে অযুতে প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ লিখে দেয়া হয়েছে। এসব দু‘আ কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
অযু শেষে সূরা কদর পাঠ করার কথাও কিছু বই-পুসত্মকে পাওয়া যায়। কিমত্মু এরও কোন দলীল নেই।
অযুর ফরয ৪টি। তা হলো :
(১) মুখমন্ডল ধৌত করা।
(২) দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
(৩) মাথা মাসাহ করা।
(৪) দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
(১) মুখমন্ডল ধৌত করা।
(২) দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
(৩) মাথা মাসাহ করা।
(৪) দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
১. অযুর পূর্বে মিসওয়াক করা :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক অযুর পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৫; সহীহ বুখারী, হা/৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৭।]
২. অঙ্গগুলো ডান দিক থেকে ধৌত করা :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِه وَتَرَجُّلِه وَطُهُوْرِه وَفي شَأْنِه كُلِّه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে কোন কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা নবী ﷺ এর পছন্দনীয় ছিল। যেমন জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন করা, এমনিভাবে সকল কাজ তিনি ডান দিক থেকে শুরু করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৮; বায়হাকী, হা/৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৮৬; বায়হাকী, হা/৪০৮।]
৩. অযুর অঙ্গসমূহ একটু বাড়িয়ে ধৌত করা :
মুস্তাহাব হলো, পরিপূর্ণভাবে অযু করা এবং মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত মুখমন্ডল বেশি করে ধৌত করা। এটাকে اِطَالَةُ الْغُرَّةِ তথা উজ্জ্বলতা দীর্ঘকরণ বলে। আর দু’কনুই ও পায়ের গিঁট বেশি করে ধৌত করা। এটাকে اِطَالَةُ التَّحْجِيْلِ তথা শুভ্রতা দীর্ঘকরণ বলে। আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৮৪, ১০৭৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৪৯; জামেউস সগীর, হা/৩৭৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
আবু হাযেম (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর পেছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি সালাতের জন্য অযু করছেন। তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! এটা কেমন ধরনের অযু? তিনি অবাক হয়ে বললেন, হে বনী ফার্রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের অযু করতাম না। আমি আমার বন্ধু (রাসূলুল্লাহ ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অযুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯; নাসাঈ, হা/১৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৬৭।]
৪. পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া :
عَنْ أَنَسٍ يَقُوْلُ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَغْسِلُ أَوْ كَانَ يَغْتَسِلُ بِالصَّاعِ إِلٰى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ، وَيَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো কখনো এক সা‘ হতে পাঁচ মুদ্দ [১ সা = ৪ মুদ, আর এক মুদ প্রায় আধা লিটারের সমান।] পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং এক মুদ্দ্ পানি দিয়ে অযু করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০১; বায়হাকী, হা/৮৮৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭৬।]
৫. প্রত্যেক অঙ্গে পানি পৌঁছানো :
অযুর প্রত্যেক অঙ্গে পানি পৌঁছানো অত্যাবশ্যক। যদি সামান্য পরিমাণ স্থানও শুষ্ক থাকে তবে অযু হবে না।
৬. চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো :
মুখমন্ডলের উপর গজানো সমস্ত চুল তথা দাড়ি, গোঁফ, ভ্রু ও দু’চোখের পশমসমূহ ঘন হওয়ার ফলে যদি মুখের চামড়া দেখা না যায়, তাহলে বাহ্যিকভাবে তা ধুয়ে ফেললেই চলবে। আর যদি চামড়া দেখা যায়, তাহলে দাড়ির সাথে চামড়াও ধুয়ে ফেলতে হবে।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অযু করতেন তখন তিনি এক অঞ্জলী পানি থুতনীর নিচে দিয়ে তা দ্বারা দাড়ি খিলাল করতেন। [আবু দাউদ, হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; মু‘জামুল আউসাত, হা/২৯৭৬।]
৭. সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা :
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মাথা মাসাহ করা ফরয। তবে কতটুকু মাসাহ করলে যথেষ্ট হবে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
১ম অভিমত : নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা ওয়াজিব।
২য় অভিমত : মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
তবে বিশুদ্ধ অভিমত হলো অযুতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ওয়াজিব। কারণ এর দলীল বেশি শক্তিশালী। আর এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান।
৮. কানদ্বয় মাসাহ করা :
মাথার সাথে কানদ্বয় মাসাহ করতে হবে। কেননা দু’কান মাথার অন্তর্ভুক্ত।
৯. তারতীব রক্ষা করা :
তারতীব বা ধারাবাহিকতা হলো অযুর অঙ্গসমূহকে ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে পবিত্র করা, যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে কারীমায় নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রথমে মুখমন্ডল, তারপর দু’হাত ধৌত করা, এরপর মাথা মাসাহ করা, এরপর দু’পা ধৌত করা। আলিমদের অনেকের মতে এটা মুস্তাহাব। আবার অনেকের মতে এটা ওয়াজিব।
১০. অযুর অঙ্গগুলো তাড়াতাড়ি ধৌত করা :
অযুর অঙ্গগুলো ধৌত করার সময় বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ধৌত করা জরুরি, যেন ধৌত করা অঙ্গটি পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করার আগেই শুকিয়ে না যায়। তবে অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে যদি সময়ের সামান্য ব্যবধান হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
১১. অযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে অযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২৮৯।]
২. উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করবে এবং উত্তমভাবে অযু করবে তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [নাসাঈ, হা/১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪০১।]
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‐ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্। আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীনা, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ التَّوَّابِيْنَ তাওবাকারীদের وَاجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫; মুজামুল আওসাত, হা/৪৮৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক অযুর পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৫; সহীহ বুখারী, হা/৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৭।]
২. অঙ্গগুলো ডান দিক থেকে ধৌত করা :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِه وَتَرَجُّلِه وَطُهُوْرِه وَفي شَأْنِه كُلِّه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে কোন কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা নবী ﷺ এর পছন্দনীয় ছিল। যেমন জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন করা, এমনিভাবে সকল কাজ তিনি ডান দিক থেকে শুরু করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৮; বায়হাকী, হা/৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৮৬; বায়হাকী, হা/৪০৮।]
৩. অযুর অঙ্গসমূহ একটু বাড়িয়ে ধৌত করা :
মুস্তাহাব হলো, পরিপূর্ণভাবে অযু করা এবং মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত মুখমন্ডল বেশি করে ধৌত করা। এটাকে اِطَالَةُ الْغُرَّةِ তথা উজ্জ্বলতা দীর্ঘকরণ বলে। আর দু’কনুই ও পায়ের গিঁট বেশি করে ধৌত করা। এটাকে اِطَالَةُ التَّحْجِيْلِ তথা শুভ্রতা দীর্ঘকরণ বলে। আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৮৪, ১০৭৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৪৯; জামেউস সগীর, হা/৩৭৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
আবু হাযেম (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর পেছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি সালাতের জন্য অযু করছেন। তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! এটা কেমন ধরনের অযু? তিনি অবাক হয়ে বললেন, হে বনী ফার্রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের অযু করতাম না। আমি আমার বন্ধু (রাসূলুল্লাহ ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অযুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯; নাসাঈ, হা/১৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৬৭।]
৪. পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া :
عَنْ أَنَسٍ يَقُوْلُ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَغْسِلُ أَوْ كَانَ يَغْتَسِلُ بِالصَّاعِ إِلٰى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ، وَيَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো কখনো এক সা‘ হতে পাঁচ মুদ্দ [১ সা = ৪ মুদ, আর এক মুদ প্রায় আধা লিটারের সমান।] পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং এক মুদ্দ্ পানি দিয়ে অযু করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০১; বায়হাকী, হা/৮৮৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭৬।]
৫. প্রত্যেক অঙ্গে পানি পৌঁছানো :
অযুর প্রত্যেক অঙ্গে পানি পৌঁছানো অত্যাবশ্যক। যদি সামান্য পরিমাণ স্থানও শুষ্ক থাকে তবে অযু হবে না।
৬. চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো :
মুখমন্ডলের উপর গজানো সমস্ত চুল তথা দাড়ি, গোঁফ, ভ্রু ও দু’চোখের পশমসমূহ ঘন হওয়ার ফলে যদি মুখের চামড়া দেখা না যায়, তাহলে বাহ্যিকভাবে তা ধুয়ে ফেললেই চলবে। আর যদি চামড়া দেখা যায়, তাহলে দাড়ির সাথে চামড়াও ধুয়ে ফেলতে হবে।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অযু করতেন তখন তিনি এক অঞ্জলী পানি থুতনীর নিচে দিয়ে তা দ্বারা দাড়ি খিলাল করতেন। [আবু দাউদ, হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; মু‘জামুল আউসাত, হা/২৯৭৬।]
৭. সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা :
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মাথা মাসাহ করা ফরয। তবে কতটুকু মাসাহ করলে যথেষ্ট হবে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
১ম অভিমত : নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা ওয়াজিব।
২য় অভিমত : মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
তবে বিশুদ্ধ অভিমত হলো অযুতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ওয়াজিব। কারণ এর দলীল বেশি শক্তিশালী। আর এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান।
৮. কানদ্বয় মাসাহ করা :
মাথার সাথে কানদ্বয় মাসাহ করতে হবে। কেননা দু’কান মাথার অন্তর্ভুক্ত।
৯. তারতীব রক্ষা করা :
তারতীব বা ধারাবাহিকতা হলো অযুর অঙ্গসমূহকে ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে পবিত্র করা, যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে কারীমায় নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রথমে মুখমন্ডল, তারপর দু’হাত ধৌত করা, এরপর মাথা মাসাহ করা, এরপর দু’পা ধৌত করা। আলিমদের অনেকের মতে এটা মুস্তাহাব। আবার অনেকের মতে এটা ওয়াজিব।
১০. অযুর অঙ্গগুলো তাড়াতাড়ি ধৌত করা :
অযুর অঙ্গগুলো ধৌত করার সময় বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ধৌত করা জরুরি, যেন ধৌত করা অঙ্গটি পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করার আগেই শুকিয়ে না যায়। তবে অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে যদি সময়ের সামান্য ব্যবধান হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
১১. অযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে অযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২৮৯।]
২. উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করবে এবং উত্তমভাবে অযু করবে তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [নাসাঈ, হা/১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪০১।]
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‐ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্। আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীনা, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ التَّوَّابِيْنَ তাওবাকারীদের وَاجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫; মুজামুল আওসাত, হা/৪৮৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করা :
অযুতে ধৌত করা প্রয়োজন এমন কোন অঙ্গে ক্ষত থাকলে, সে অঙ্গটি মাসাহ করে নিতে হবে। যদি ঐ ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ বা প্লাষ্টার করা থাকে, তাহলে ব্যান্ডেজ/প্লাষ্টারের উপর দিয়ে মাসাহ করা যাবে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তির ব্যান্ডেজ যুক্ত যখম থাকবে, সে অযুর সময় যখমের উপর শুধু মাসাহ করবে এবং ব্যান্ডেজের আশেপাশের জায়গা ধৌত করবে। [এ হাদীসের সনদ সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১/১২৬।] ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করা অযু ও গোসল উভয় অবস্থায় বৈধ। ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ এর কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। বরং যখন তা খুলে ফেলা হবে অথবা আক্রান্ত অংশ আরোগ্য পাবে তখন মাসাহ করা বৈধ হবে না।
নখের উপর প্রলেপ থাকলে :
নখের উপর যদি এমন নখপালিশ বা অন্য কিছু ব্যবহার করা হয়, যার ফলে ভেতরে পানি পৌঁছতে পারে না তাহলে অযু শুদ্ধ হবে না। কেননা এর ফলে যে সমস্ত স্থানে পানি পৌঁছানো ফরয, সে সমস্ত স্থানে তা পানি পৌঁছাতে বাধা প্রদান করে।
তবে শুধু রং যেমন মেহেদী বা অনুরূপ কিছু হলে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবুও খিযাব বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে সালাতের পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া উচিত। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : نِسَاؤُنَا يَخْتَضِبْنَ أَحْسَنَ خِضَابٍ ، يَخْتَضِبْنَ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَيَنْزِعْنَ قَبْلَ الْفَجْرِ .
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মহিলারা উত্তম খিযাব ব্যবহার করে। তারা এশার সালাতের পর খিযাব ব্যবহার করে এবং ফজরের পূর্বে তা খুলে ফেলে। [এর সনদ সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১২৯১।]
যারা কুমকুম ও আলতা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করেন তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা এসব বসত্মু নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি নাপাক হয় তাহলে এটা ব্যবহার করে সালাত আদায় করলে শুদ্ধ হবে না।
অযুর সময় পাগড়ীর উপর মাসাহ করা :
সাধারণভাবে অযুতে মাথার পরিবর্তে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা বৈধ। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে সাব্যস্ত। যেমন-
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَمْسَحُ عَلٰى عِمَامَتِه وَخُفَّيْه
জাফর ইবনে আমর (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে তাঁর পাগড়ী ও মোজার উপর মাসাহ করতে দেখেছি। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫; বায়হাকী, হা/১২০০।]
عَنِ مُغِيرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ وَمُقَدَّمِ رَأْسِه وَعَلٰى عِمَامَتِه
মুগীরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উভয় মোজার উপর এবং মাথার সম্মুখভাগ ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৭; আবু দাউদ, হা/১৫০।]
অনেকের মতে, শুধু পাগড়ীর উপর মাসাহ করা বৈধ নয়। বরং নাসিয়াহ তথা মাথার অগ্রভাগসহ মাসাহ করা বৈধ।
অযুর অঙ্গগুলো কতবার ধৌত করতে হয় :
অযুর অঙ্গগুলো কমপক্ষে একবার করে ধোয়া ফরয।
দু’বার করে ধোয়াও চলে।
তবে তিন বার করে ধোয়াই উত্তম। এরই উপর নবী করীম ﷺ এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আমল বেশি।
কিন্তু তিন বারের বেশি ধোয়া বাড়াবাড়ি এবং সীমালঙ্ঘন। সুতরাং তা করা বর্জনীয়। [আবু দাউদ হা/১৩৫; ইবনে মাজাহ হা/৪২২; নাসাঈ হা/৮১।]
অযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নাত :
عَنْ اَبِيْ حَيَّةَ ، قَالَ : رَاَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّاَ فَاَنْقٰى كَفَّيْهِ ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهٗ ثَلَاثًا وَّذِرَاعَيْهِ ثَلَاثًا ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهٖ ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَيْهِ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ، ثُمَّ قَامَ فَشَرِبَ فَضْلَ وَضُوْئِهٖ ، ثُمَّ قَالَ : اِنَّمَا اَرَدْتُّ اَنْ اُرِيَكُمْ طُهُوْرَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ
আবু হাইয়া (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি অযু করলেন। তারপর তিনি প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করলেন। তারপর তাঁর চেহারা ও দু’হাত তিনবার করে ধৌত করলেন। অতঃপর তাঁর মাথা মাসাহ করলেন। এরপর টাখনু পর্যন্ত তাঁর দু’পা ধৌত করলেন। অবশেষে দাঁড়িয়ে অযুর অতিরিক্ত পানিটুকু পান করলেন এবং বললেন, আমি ইচ্ছা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি তোমাদেরকে দেখাব। [নাসায়ী, হা/১৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৫১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১২১।]
অযুতে ঘাড় মাসাহ করা যাবে কি না :
অযুতে ঘাড় মাসাহ করার ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। ইমাম নববী (রহ.) একে বিদআত বলেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৯৩, আবু দাউদ, হা/১৩২।] ‘‘যে ব্যক্তি অযুতে ঘাড় মাসাহ করবে, কিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবে না’’- বলে যে হাদীস রয়েছে, সেটি মাওযু বা জাল। [আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ, হা/৭৪৪।]
অযুতে ধৌত করা প্রয়োজন এমন কোন অঙ্গে ক্ষত থাকলে, সে অঙ্গটি মাসাহ করে নিতে হবে। যদি ঐ ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ বা প্লাষ্টার করা থাকে, তাহলে ব্যান্ডেজ/প্লাষ্টারের উপর দিয়ে মাসাহ করা যাবে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তির ব্যান্ডেজ যুক্ত যখম থাকবে, সে অযুর সময় যখমের উপর শুধু মাসাহ করবে এবং ব্যান্ডেজের আশেপাশের জায়গা ধৌত করবে। [এ হাদীসের সনদ সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১/১২৬।] ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করা অযু ও গোসল উভয় অবস্থায় বৈধ। ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ এর কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। বরং যখন তা খুলে ফেলা হবে অথবা আক্রান্ত অংশ আরোগ্য পাবে তখন মাসাহ করা বৈধ হবে না।
নখের উপর প্রলেপ থাকলে :
নখের উপর যদি এমন নখপালিশ বা অন্য কিছু ব্যবহার করা হয়, যার ফলে ভেতরে পানি পৌঁছতে পারে না তাহলে অযু শুদ্ধ হবে না। কেননা এর ফলে যে সমস্ত স্থানে পানি পৌঁছানো ফরয, সে সমস্ত স্থানে তা পানি পৌঁছাতে বাধা প্রদান করে।
তবে শুধু রং যেমন মেহেদী বা অনুরূপ কিছু হলে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবুও খিযাব বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে সালাতের পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া উচিত। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : نِسَاؤُنَا يَخْتَضِبْنَ أَحْسَنَ خِضَابٍ ، يَخْتَضِبْنَ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَيَنْزِعْنَ قَبْلَ الْفَجْرِ .
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মহিলারা উত্তম খিযাব ব্যবহার করে। তারা এশার সালাতের পর খিযাব ব্যবহার করে এবং ফজরের পূর্বে তা খুলে ফেলে। [এর সনদ সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১২৯১।]
যারা কুমকুম ও আলতা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করেন তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা এসব বসত্মু নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি নাপাক হয় তাহলে এটা ব্যবহার করে সালাত আদায় করলে শুদ্ধ হবে না।
অযুর সময় পাগড়ীর উপর মাসাহ করা :
সাধারণভাবে অযুতে মাথার পরিবর্তে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা বৈধ। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে সাব্যস্ত। যেমন-
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَمْسَحُ عَلٰى عِمَامَتِه وَخُفَّيْه
জাফর ইবনে আমর (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে তাঁর পাগড়ী ও মোজার উপর মাসাহ করতে দেখেছি। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫; বায়হাকী, হা/১২০০।]
عَنِ مُغِيرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ وَمُقَدَّمِ رَأْسِه وَعَلٰى عِمَامَتِه
মুগীরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উভয় মোজার উপর এবং মাথার সম্মুখভাগ ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৭; আবু দাউদ, হা/১৫০।]
অনেকের মতে, শুধু পাগড়ীর উপর মাসাহ করা বৈধ নয়। বরং নাসিয়াহ তথা মাথার অগ্রভাগসহ মাসাহ করা বৈধ।
অযুর অঙ্গগুলো কতবার ধৌত করতে হয় :
অযুর অঙ্গগুলো কমপক্ষে একবার করে ধোয়া ফরয।
দু’বার করে ধোয়াও চলে।
তবে তিন বার করে ধোয়াই উত্তম। এরই উপর নবী করীম ﷺ এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আমল বেশি।
কিন্তু তিন বারের বেশি ধোয়া বাড়াবাড়ি এবং সীমালঙ্ঘন। সুতরাং তা করা বর্জনীয়। [আবু দাউদ হা/১৩৫; ইবনে মাজাহ হা/৪২২; নাসাঈ হা/৮১।]
অযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নাত :
عَنْ اَبِيْ حَيَّةَ ، قَالَ : رَاَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّاَ فَاَنْقٰى كَفَّيْهِ ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهٗ ثَلَاثًا وَّذِرَاعَيْهِ ثَلَاثًا ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهٖ ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَيْهِ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ، ثُمَّ قَامَ فَشَرِبَ فَضْلَ وَضُوْئِهٖ ، ثُمَّ قَالَ : اِنَّمَا اَرَدْتُّ اَنْ اُرِيَكُمْ طُهُوْرَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ
আবু হাইয়া (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি অযু করলেন। তারপর তিনি প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করলেন। তারপর তাঁর চেহারা ও দু’হাত তিনবার করে ধৌত করলেন। অতঃপর তাঁর মাথা মাসাহ করলেন। এরপর টাখনু পর্যন্ত তাঁর দু’পা ধৌত করলেন। অবশেষে দাঁড়িয়ে অযুর অতিরিক্ত পানিটুকু পান করলেন এবং বললেন, আমি ইচ্ছা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি তোমাদেরকে দেখাব। [নাসায়ী, হা/১৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৫১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১২১।]
অযুতে ঘাড় মাসাহ করা যাবে কি না :
অযুতে ঘাড় মাসাহ করার ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। ইমাম নববী (রহ.) একে বিদআত বলেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৯৩, আবু দাউদ, হা/১৩২।] ‘‘যে ব্যক্তি অযুতে ঘাড় মাসাহ করবে, কিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবে না’’- বলে যে হাদীস রয়েছে, সেটি মাওযু বা জাল। [আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ, হা/৭৪৪।]
اَلْمَسْحُ এর অর্থ :
مَسْحٌ শব্দটি مسح মাসদার হতে গৃহীত। কোন বসত্মুর উপর মৃদু হাত বুলানোকে মাসাহ বলে। আর মোজার উপর মাসাহ করা বলতে বুঝায়, অযুতে দু’পা ধোয়ার বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট মোজার উপর ভিজা হাত বুলানো।
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কোন ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে পবিত্রতা অর্জন করে মোজা পরিধান করার পর অযু নষ্ট হয়ে গেলে সে মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ করতে পারবে।
عَنْ هَمَّامٍ قَالَ بَالَ جَرِيرٌ ثُمَّ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلٰى خُفَّيْهِ فَقِيلَ تَفْعَلُ هٰذَا . فَقَالَ نَعَمْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - بَالَ ثُمَّ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلٰى خُفَّيْهِ
হাম্মাম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জারীর (রাঃ) প্রস্রাব করলেন, অতঃপর অযু করলেন এবং তার উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। তাঁকে বলা হলো, আপনি কি এ রকম করে থাকেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ-আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি তিনি প্রস্রাব করেছেন, তারপর অযু করেছেন এবং তাঁর উভয় মোজার উপর মাসাহ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫; তিরমিযী, হা/৯৩; ইবনে মাজাহ, হা/৫৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৯১।]
মোজার উপর মাসাহ করার নিয়ম :
পা ধুয়ে পূর্ণরূপে অযু করার পর মোজা পরতে হবে। এরপর আবার অযু করার সময় মোজার উপরিভাগে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুল পায়ের পাতা হতে টাখনু পর্যন্ত টেনে এনে একবার মাসাহ করতে হবে। মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ করতে দেখেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৭; দার কুতনী, হা/৭৩৮।]
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (বিবেক-বিবেচনা) উপর নির্ভরশীল হতো, তবে মোজার উপরের অংশে মাসাহ না করে নিম্নাংশে মাসাহ করার সিন্ধান্ত গৃহীত হতো। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ করতে দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/১৬২, দার কুতনী, হা/৭৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৪৩৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৯০৭; মিশকাত, হা/৫২৫।]
মাসাহ-এর সময়কাল :
মুক্বীম অবস্থায় এক দিন এক রাত ও মুসাফির অবস্থায় তিন দিন তিন রাত একটানা মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮; তিরমিযী হা/৯৫; আবু দাউদ হা/১৫৭; ইবনে মাজাহ হা/৫৪৫-৫৫৮।] তবে গোসল ফরয হলে অথবা মোজা খুলে ফেললে পুনরায় অযু করে মোজা পরতে হবে।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকারীদের জন্য তিন দিন ও তিন রাত, আর গৃহবাসীদের জন্য এক দিন ও এক রাত মোজার উপর মাসাহ-এর সময়সীমা নির্ধারিত করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮; তিরমিযী, হা/ ৯৫; আবু দাউদ, হা/ ১৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/ ৫৪৫-৫৫৮।]
কোন্ জাতীয় মোজার উপর মাসাহ করা যাবে :
জুতা ব্যতীত যে বস্তু দ্বারা সম্পূর্ণ পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে মোজা বলে। সেটা যে কোন ধরনের হতে পারে। যেমন, চামড়া, সুতা, পশম ইত্যাদি। তবে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হতে হবে।
যেসব কারণে মাসাহ নষ্ট হয় :
১. মাসাহ-এর নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে গেলে।
২. গোসল ফরয হলে।
৩. মাসাহ করার পর মোজা খুলে ফেললে।
مَسْحٌ শব্দটি مسح মাসদার হতে গৃহীত। কোন বসত্মুর উপর মৃদু হাত বুলানোকে মাসাহ বলে। আর মোজার উপর মাসাহ করা বলতে বুঝায়, অযুতে দু’পা ধোয়ার বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট মোজার উপর ভিজা হাত বুলানো।
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কোন ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে পবিত্রতা অর্জন করে মোজা পরিধান করার পর অযু নষ্ট হয়ে গেলে সে মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ করতে পারবে।
عَنْ هَمَّامٍ قَالَ بَالَ جَرِيرٌ ثُمَّ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلٰى خُفَّيْهِ فَقِيلَ تَفْعَلُ هٰذَا . فَقَالَ نَعَمْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - بَالَ ثُمَّ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلٰى خُفَّيْهِ
হাম্মাম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জারীর (রাঃ) প্রস্রাব করলেন, অতঃপর অযু করলেন এবং তার উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। তাঁকে বলা হলো, আপনি কি এ রকম করে থাকেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ-আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি তিনি প্রস্রাব করেছেন, তারপর অযু করেছেন এবং তাঁর উভয় মোজার উপর মাসাহ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫; তিরমিযী, হা/৯৩; ইবনে মাজাহ, হা/৫৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৯১।]
মোজার উপর মাসাহ করার নিয়ম :
পা ধুয়ে পূর্ণরূপে অযু করার পর মোজা পরতে হবে। এরপর আবার অযু করার সময় মোজার উপরিভাগে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুল পায়ের পাতা হতে টাখনু পর্যন্ত টেনে এনে একবার মাসাহ করতে হবে। মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ করতে দেখেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৭; দার কুতনী, হা/৭৩৮।]
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (বিবেক-বিবেচনা) উপর নির্ভরশীল হতো, তবে মোজার উপরের অংশে মাসাহ না করে নিম্নাংশে মাসাহ করার সিন্ধান্ত গৃহীত হতো। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসাহ করতে দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/১৬২, দার কুতনী, হা/৭৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৪৩৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৯০৭; মিশকাত, হা/৫২৫।]
মাসাহ-এর সময়কাল :
মুক্বীম অবস্থায় এক দিন এক রাত ও মুসাফির অবস্থায় তিন দিন তিন রাত একটানা মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮; তিরমিযী হা/৯৫; আবু দাউদ হা/১৫৭; ইবনে মাজাহ হা/৫৪৫-৫৫৮।] তবে গোসল ফরয হলে অথবা মোজা খুলে ফেললে পুনরায় অযু করে মোজা পরতে হবে।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকারীদের জন্য তিন দিন ও তিন রাত, আর গৃহবাসীদের জন্য এক দিন ও এক রাত মোজার উপর মাসাহ-এর সময়সীমা নির্ধারিত করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮; তিরমিযী, হা/ ৯৫; আবু দাউদ, হা/ ১৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/ ৫৪৫-৫৫৮।]
কোন্ জাতীয় মোজার উপর মাসাহ করা যাবে :
জুতা ব্যতীত যে বস্তু দ্বারা সম্পূর্ণ পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে মোজা বলে। সেটা যে কোন ধরনের হতে পারে। যেমন, চামড়া, সুতা, পশম ইত্যাদি। তবে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হতে হবে।
যেসব কারণে মাসাহ নষ্ট হয় :
১. মাসাহ-এর নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে গেলে।
২. গোসল ফরয হলে।
৩. মাসাহ করার পর মোজা খুলে ফেললে।
১. প্রস্রাব বা পায়খানার দু’রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হলে :
প্রস্রাব ও পায়খানার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ﴾
তোমাদের কেউ যদি পায়খানা থেকে আসে। (সূরা মায়েদা- ৬)
অত্র আয়াতে اَلْغَائِطُ শব্দ উল্লেখ করে মলমূত্র ত্যাগ তথা প্রস্রাব-পায়খানাকে বুঝানো হয়েছে। বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, দু’রাস্তা তথা সামনে ও পেছন দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানা নির্গত হওয়ার কারণে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
যদি প্রস্রাব-পায়খানা সামনে বা পেছনের রাস্তা দিয়ে বের না হয়ে অন্য স্থান দিয়ে বের হয় যেমন- মূত্রাশয় বা পেটের কোন স্থান যখম হয়ে নির্গত হয়- এ ক্ষেত্রেও অনেকের মতে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
বায়ু যদি পিছনের রাস্তা দিয়ে শব্দসহ বা শব্দবিহীন নির্গত হয়, তাহলে সকলের ঐক্যমতে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার অযু ভেঙ্গে গেছে সে পুনরায় অযু না করা পর্যন্ত তার সালাত হবে না। তখন হাজরামাউতের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হাদাস কী? উত্তরে তিনি বলেন, পায়খানার রাস্তা দিয়ে নিঃশব্দে বা সশব্দে হাওয়া বের হওয়া। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৫; তিরমিযী, হা/৩৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৪।]
যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার অযু নষ্ট হবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنُ زَيْدٍ قَالَ : شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ اَلرَّجُلُ يَجِدُ الشَّيْءَ فِي الصَّلَاةِ قَالَ : لَا يَنْصَرِفْ حَتّٰى يَجِدَ رِيْحًا أَوْ يَسْمَعَ صَوْتًا
আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে অভিযোগ করেন যে, সে সালাতের মধ্যে অনুভব করে যে, তার পিছনের রাস্তা হতে বায়ু নির্গত হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, যে পর্যন্ত কেউ বায়ু নির্গমনের শব্দ বা দুর্গন্ধ না পাবে ততক্ষণ পর্যমত্ম সালাত পরিত্যাগ করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩০; আবু দাউদ, হা/১৭৬; নাসাঈ, হা/১৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৫১৩।]
যদি বায়ু নির্গত হওয়া স্পষ্ট বুঝা যায়, তাহলে শব্দ হোক বা না হোক অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
মযী বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বলেন, আমার অধিক মযী বের হতো। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়ায় লজ্জার কারণে আমি একজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠালাম। ফলে তিনি প্রশণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন যে, তুমি অযু করো ও লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলো। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯; নাসাঈ, হা/১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১০৪।]
যে ব্যক্তি বহুমূত্র রোগে ভুগে অথবা অতিরিক্ত মযী নির্গত হয় কিংবা নাপাকী বারবার নির্গত হয়, যার ফলে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাহলে সে তার কাপড়ে ও শরীরে যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে এবং প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে।
২. ঘুমানো :
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তি, যে কোন কিছু বুঝতে পারে না- এমন ব্যক্তির অযু নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তা হাদাসের ধারণা সৃষ্টি করে। চায় সে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, রুকূ কিংবা সিজদা যে কোন অবস্থায় থাক না কেন। এগুলোর কোনটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
এছাড়া স্বল্প ঘুম যাকে তন্দ্রা বলে, যার কারণে মানুষ কিছু অনুধাবন করতে পারে তার ফলে অযু নষ্ট হবে না, সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন।
যেহেতু ঘুমের মাধ্যমে হাদাসের ধারণা সৃষ্টি হয়, সেহেতু অযু ভঙ্গের বিধানটা ঘুমের অবস্থাভেদে তার উপর প্রযোজ্য হবে এবং প্রবল ধারণাটাই বিবেচিত হবে। যদি সে সন্দেহ করে যে, ঘুমের কারণে তার অযু নষ্ট হয়েছে নাকি হয়নি, তাহলে অযু ভঙ্গ না হওয়ার বিধানই কার্যকর হবে। কেননা তার পূর্ব থেকেই নিশ্চিতভাবে পবিত্রতা সাব্যস্ত আছে। সুতরাং তা সন্দেহ দ্বারা দূর হবে না।
৩. জ্ঞানশূন্য হওয়া :
নেশাগ্রস্ত, জ্ঞানশূন্য কিংবা পাগল হওয়ার ফলে আকল নষ্ট হলে সর্বসম্মতিক্রমে অযু নষ্ট হবে। অযু ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে এ অবস্থাগুলোর কারণে স্মৃতি নষ্ট হওয়াটা ঘুমের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. লজ্জাস্থান স্পর্শ করা :
লজ্জাস্থান স্পর্শ করার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
১ম অভিমত : সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শের ফলে অযু নষ্ট হয় না :
তাদের দলীল : ত্বালক বিন আলী থেকে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি এমন অন্য এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, যিনি অযু করার পর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পুরুষাঙ্গ তো একটি গোশতের টুকরা অথবা গোশতের খন্ড মাত্র। [আবু দাউদ, হা/১৮২; তিরমিযী, হা/৮৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১১৯; দার কুতনী, হা/৫৪৩।]
২য় অভিমত : সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে :
তাদের দলীল :
عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ
বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন অযু করে। [আবু দাউদ, হা/১৮১; তিরমিযী, হা/৮২; নাসাঈ, হা/৪৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৩৩৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪৭৩।]
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ ، قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَنْ مَسَّ فَرْجَه ، فَلْيَتَوَضَّأْ
উম্মে হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন অযু করে। [নাসাঈ, হা/৪৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১১৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭৬২; দার কুতনী, হা/৫২৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪৭৯; মু‘জামূস সগীর, হা/১১৫০১।]
তবে কেউ যদি কাপড়ের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে তার অযু ভঙ্গ হবে না। কিমত্মু সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু করে নেবে।
৫. উটের গোশত খাওয়ার ফলে অযু নষ্ট হওয়ার বিধান :
যে ব্যক্তি কাঁচা, পাকানো বা ভোনা করা উটের গোশত ভক্ষণ করবে, তার অযু করা ওয়াজিব। যদিও অনেকে এর বিপরীত মত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম নববী (রহ.) মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, এই মতামতটিই দলীলের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি ছাগলের গোশত ভক্ষণ করলে অযু করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বললেন, চাইলে করতে পার অথবা না পার। তারপর সে আবার জিজ্ঞেস করল, আমি কি উটের গোশত ভক্ষণ করলে অযু করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বললেন, হ্যাঁ- উটের গোশত খেলে অযু করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৮২৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪৯৫; আবু দাউদ, হা/১৮৩; তিরমিযী, হা/৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭২৫; মিশকাত, হা/৩০৫।]
৬. মহিলাকে স্পর্শ করার বিধান :
সাধারণভাবে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হয় না। চাই তা কামনার সাথে হোক বা না হোক। তবে শর্ত হলো এ কারণে যেন লজ্জাস্থান দিয়ে কোন কিছু না বের হয়। নবী ﷺ কোন কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন এবং সালাত আদায় করতেন; কিন্তু অযু করতেন না। [নাসাঈ, হা/১৭০; দার কুতনী, হা/৪৮৪; মিশকাত, হা/৩২৩।]
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهَا قَالَتْ كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَرِجْلَايَ فِي قِبْلَتِه فَإِذَا سَجَدَ غَمَزَنِيْ فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا قَالَتْ وَالْبُيُوْتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيْحُ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা সংকুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সম্প্রসারিত করতাম। তিনি বলেন, সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৬; সহীহ বুখারী, হা/৩৮২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৩।]
৭. রক্তপ্রবাহিত হওয়ার বিধান :
শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে অযু ভঙ্গ হবে কি না এ ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। তবে সতর্কতামূলকভাবে অযু করে নেয়া ভালো।
কারো মতে রক্ত গড়ালে অযু নষ্ট হবে, না গড়ালে অযু নষ্ট হবে না। আবার কারো মতে রক্ত বেশি প্রবাহিত হলেও অযু নষ্ট হবে না।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে যাতুর রিকার যুদ্ধে বের হলাম। তখন এক ব্যক্তি মুশরিকদের এক মহিলার উপর আক্রমণ করলে মুশরিক ব্যক্তি শপথ করল যে, সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদের কারো রক্তপাত না করে খামত্ম হবে না। ফলে সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদের পদচিহ্ন অনুসরণ করল। এদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশ্রামের জন্য একটি স্থানে অবস্থান নিলেন। অতঃপর বললেন, কে আমাদেরকে পাহারা দেবে। তখন মুহাজিরদের মধ্যে একজন এবং আনসারদের মধ্যে একজন বললেন, আমরা পাহারা দেব। যখন তারা পাহারা দেয়ার স্থানে পৌঁছলেন তখন মুহাজির সাহাবী বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন এবং আনসার সাহাবী সালাত আদায় করতে শুরু করলেন। এমতাবস্থায় শত্রু পক্ষের ব্যক্তি সেখানে আগমন করে এবং মুসলিম বাহিনীর একজন গোয়েন্দা মনে করে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং তা আনসার সাহাবীর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি তা দেহ থেকে বের করে ফেলেন। মুশরিক ব্যক্তি এভাবে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি রুকূ সিজদা করে তাঁর সাথীকে জাগ্রত করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানে অনেক লোক আছে এবং তারা সতর্ক হয়ে গেছে মনে করে পালিয়ে যায়। পরে মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলেন, সুবহানাল্লাহ! শত্রু পক্ষের প্রথম তীর নিক্ষেপের সময় কেন আপনি আমাকে সতর্ক করেননি? জবাবে তিনি বলেন, আমি সালাতের মধ্যে এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে সালাত পরিত্যাগ করা পছন্দ করিনি। [আবু দাউদ, হা/১৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৩৬।]
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যাপারে জানার পরও উক্ত সাহাবীকে সালাত ছেড়ে দিতে বলেননি। যদি রক্ত অযু ভঙ্গের কারণ হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ সে সাহাবীকে বা সে যুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনা করতেন।
৯. বমি করার বিধান :
মুখ ভরে বমি করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَاءَ فَأَفْطَرَ فَتَوَضَّأَ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বমি করলেন। অতঃপর ইফতার করে অযু করলেন। [আবু দাউদ, হা/২৩৮৩; তিরমিযী, হা/৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৫৪।]
১০. সালাতে অট্টহাসি হাসার বিধান :
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সালাতের বাইরে হাসাহাসি করলে অযু নষ্ট হয় না। তবে কেউ কেউ বলেছেন সালাতের ভেতরে উচ্চৈঃস্বরে হাসলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল নেই।
১১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে এবং তাকে বহন করলে :
বিশুদ্ধ মতে যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে অথবা তাকে বহন করবে, তার অযু নষ্ট হবে না।
কতিপয় বিদ্বান বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে তার জন্য গোসল করা মুসত্মাহাব। আর যে তাকে বহন করবে তার জন্য অযু করা মুসত্মাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : مَنْ غَسَّلَ الْمَيِّتَ فَلْيَغْتَسِلْ وَمَنْ حَمَلَه فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল করবে। আর তাকে বহন করলে অযু করবে। [আবু দাউদ, হা/৩১৬৩; বায়হাকী, হা/১৩৪২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৯।]
প্রস্রাব ও পায়খানার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ﴾
তোমাদের কেউ যদি পায়খানা থেকে আসে। (সূরা মায়েদা- ৬)
অত্র আয়াতে اَلْغَائِطُ শব্দ উল্লেখ করে মলমূত্র ত্যাগ তথা প্রস্রাব-পায়খানাকে বুঝানো হয়েছে। বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, দু’রাস্তা তথা সামনে ও পেছন দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানা নির্গত হওয়ার কারণে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
যদি প্রস্রাব-পায়খানা সামনে বা পেছনের রাস্তা দিয়ে বের না হয়ে অন্য স্থান দিয়ে বের হয় যেমন- মূত্রাশয় বা পেটের কোন স্থান যখম হয়ে নির্গত হয়- এ ক্ষেত্রেও অনেকের মতে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
বায়ু যদি পিছনের রাস্তা দিয়ে শব্দসহ বা শব্দবিহীন নির্গত হয়, তাহলে সকলের ঐক্যমতে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার অযু ভেঙ্গে গেছে সে পুনরায় অযু না করা পর্যন্ত তার সালাত হবে না। তখন হাজরামাউতের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হাদাস কী? উত্তরে তিনি বলেন, পায়খানার রাস্তা দিয়ে নিঃশব্দে বা সশব্দে হাওয়া বের হওয়া। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৫; তিরমিযী, হা/৩৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৪।]
যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার অযু নষ্ট হবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنُ زَيْدٍ قَالَ : شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ اَلرَّجُلُ يَجِدُ الشَّيْءَ فِي الصَّلَاةِ قَالَ : لَا يَنْصَرِفْ حَتّٰى يَجِدَ رِيْحًا أَوْ يَسْمَعَ صَوْتًا
আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে অভিযোগ করেন যে, সে সালাতের মধ্যে অনুভব করে যে, তার পিছনের রাস্তা হতে বায়ু নির্গত হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, যে পর্যন্ত কেউ বায়ু নির্গমনের শব্দ বা দুর্গন্ধ না পাবে ততক্ষণ পর্যমত্ম সালাত পরিত্যাগ করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩০; আবু দাউদ, হা/১৭৬; নাসাঈ, হা/১৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৫১৩।]
যদি বায়ু নির্গত হওয়া স্পষ্ট বুঝা যায়, তাহলে শব্দ হোক বা না হোক অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
মযী বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বলেন, আমার অধিক মযী বের হতো। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়ায় লজ্জার কারণে আমি একজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠালাম। ফলে তিনি প্রশণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন যে, তুমি অযু করো ও লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলো। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯; নাসাঈ, হা/১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১০৪।]
যে ব্যক্তি বহুমূত্র রোগে ভুগে অথবা অতিরিক্ত মযী নির্গত হয় কিংবা নাপাকী বারবার নির্গত হয়, যার ফলে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাহলে সে তার কাপড়ে ও শরীরে যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে এবং প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে।
২. ঘুমানো :
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তি, যে কোন কিছু বুঝতে পারে না- এমন ব্যক্তির অযু নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তা হাদাসের ধারণা সৃষ্টি করে। চায় সে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, রুকূ কিংবা সিজদা যে কোন অবস্থায় থাক না কেন। এগুলোর কোনটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
এছাড়া স্বল্প ঘুম যাকে তন্দ্রা বলে, যার কারণে মানুষ কিছু অনুধাবন করতে পারে তার ফলে অযু নষ্ট হবে না, সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন।
যেহেতু ঘুমের মাধ্যমে হাদাসের ধারণা সৃষ্টি হয়, সেহেতু অযু ভঙ্গের বিধানটা ঘুমের অবস্থাভেদে তার উপর প্রযোজ্য হবে এবং প্রবল ধারণাটাই বিবেচিত হবে। যদি সে সন্দেহ করে যে, ঘুমের কারণে তার অযু নষ্ট হয়েছে নাকি হয়নি, তাহলে অযু ভঙ্গ না হওয়ার বিধানই কার্যকর হবে। কেননা তার পূর্ব থেকেই নিশ্চিতভাবে পবিত্রতা সাব্যস্ত আছে। সুতরাং তা সন্দেহ দ্বারা দূর হবে না।
৩. জ্ঞানশূন্য হওয়া :
নেশাগ্রস্ত, জ্ঞানশূন্য কিংবা পাগল হওয়ার ফলে আকল নষ্ট হলে সর্বসম্মতিক্রমে অযু নষ্ট হবে। অযু ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে এ অবস্থাগুলোর কারণে স্মৃতি নষ্ট হওয়াটা ঘুমের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. লজ্জাস্থান স্পর্শ করা :
লজ্জাস্থান স্পর্শ করার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
১ম অভিমত : সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শের ফলে অযু নষ্ট হয় না :
তাদের দলীল : ত্বালক বিন আলী থেকে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি এমন অন্য এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, যিনি অযু করার পর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পুরুষাঙ্গ তো একটি গোশতের টুকরা অথবা গোশতের খন্ড মাত্র। [আবু দাউদ, হা/১৮২; তিরমিযী, হা/৮৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১১৯; দার কুতনী, হা/৫৪৩।]
২য় অভিমত : সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে :
তাদের দলীল :
عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ
বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন অযু করে। [আবু দাউদ, হা/১৮১; তিরমিযী, হা/৮২; নাসাঈ, হা/৪৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৩৩৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪৭৩।]
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ ، قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَنْ مَسَّ فَرْجَه ، فَلْيَتَوَضَّأْ
উম্মে হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন অযু করে। [নাসাঈ, হা/৪৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১১৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭৬২; দার কুতনী, হা/৫২৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪৭৯; মু‘জামূস সগীর, হা/১১৫০১।]
তবে কেউ যদি কাপড়ের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে তার অযু ভঙ্গ হবে না। কিমত্মু সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু করে নেবে।
৫. উটের গোশত খাওয়ার ফলে অযু নষ্ট হওয়ার বিধান :
যে ব্যক্তি কাঁচা, পাকানো বা ভোনা করা উটের গোশত ভক্ষণ করবে, তার অযু করা ওয়াজিব। যদিও অনেকে এর বিপরীত মত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম নববী (রহ.) মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, এই মতামতটিই দলীলের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি ছাগলের গোশত ভক্ষণ করলে অযু করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বললেন, চাইলে করতে পার অথবা না পার। তারপর সে আবার জিজ্ঞেস করল, আমি কি উটের গোশত ভক্ষণ করলে অযু করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বললেন, হ্যাঁ- উটের গোশত খেলে অযু করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৮২৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪৯৫; আবু দাউদ, হা/১৮৩; তিরমিযী, হা/৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭২৫; মিশকাত, হা/৩০৫।]
৬. মহিলাকে স্পর্শ করার বিধান :
সাধারণভাবে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হয় না। চাই তা কামনার সাথে হোক বা না হোক। তবে শর্ত হলো এ কারণে যেন লজ্জাস্থান দিয়ে কোন কিছু না বের হয়। নবী ﷺ কোন কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন এবং সালাত আদায় করতেন; কিন্তু অযু করতেন না। [নাসাঈ, হা/১৭০; দার কুতনী, হা/৪৮৪; মিশকাত, হা/৩২৩।]
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهَا قَالَتْ كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَرِجْلَايَ فِي قِبْلَتِه فَإِذَا سَجَدَ غَمَزَنِيْ فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا قَالَتْ وَالْبُيُوْتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيْحُ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা সংকুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সম্প্রসারিত করতাম। তিনি বলেন, সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৬; সহীহ বুখারী, হা/৩৮২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৩।]
৭. রক্তপ্রবাহিত হওয়ার বিধান :
শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে অযু ভঙ্গ হবে কি না এ ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। তবে সতর্কতামূলকভাবে অযু করে নেয়া ভালো।
কারো মতে রক্ত গড়ালে অযু নষ্ট হবে, না গড়ালে অযু নষ্ট হবে না। আবার কারো মতে রক্ত বেশি প্রবাহিত হলেও অযু নষ্ট হবে না।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে যাতুর রিকার যুদ্ধে বের হলাম। তখন এক ব্যক্তি মুশরিকদের এক মহিলার উপর আক্রমণ করলে মুশরিক ব্যক্তি শপথ করল যে, সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদের কারো রক্তপাত না করে খামত্ম হবে না। ফলে সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদের পদচিহ্ন অনুসরণ করল। এদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশ্রামের জন্য একটি স্থানে অবস্থান নিলেন। অতঃপর বললেন, কে আমাদেরকে পাহারা দেবে। তখন মুহাজিরদের মধ্যে একজন এবং আনসারদের মধ্যে একজন বললেন, আমরা পাহারা দেব। যখন তারা পাহারা দেয়ার স্থানে পৌঁছলেন তখন মুহাজির সাহাবী বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন এবং আনসার সাহাবী সালাত আদায় করতে শুরু করলেন। এমতাবস্থায় শত্রু পক্ষের ব্যক্তি সেখানে আগমন করে এবং মুসলিম বাহিনীর একজন গোয়েন্দা মনে করে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং তা আনসার সাহাবীর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি তা দেহ থেকে বের করে ফেলেন। মুশরিক ব্যক্তি এভাবে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি রুকূ সিজদা করে তাঁর সাথীকে জাগ্রত করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানে অনেক লোক আছে এবং তারা সতর্ক হয়ে গেছে মনে করে পালিয়ে যায়। পরে মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলেন, সুবহানাল্লাহ! শত্রু পক্ষের প্রথম তীর নিক্ষেপের সময় কেন আপনি আমাকে সতর্ক করেননি? জবাবে তিনি বলেন, আমি সালাতের মধ্যে এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে সালাত পরিত্যাগ করা পছন্দ করিনি। [আবু দাউদ, হা/১৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৩৬।]
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যাপারে জানার পরও উক্ত সাহাবীকে সালাত ছেড়ে দিতে বলেননি। যদি রক্ত অযু ভঙ্গের কারণ হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ সে সাহাবীকে বা সে যুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনা করতেন।
৯. বমি করার বিধান :
মুখ ভরে বমি করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَاءَ فَأَفْطَرَ فَتَوَضَّأَ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বমি করলেন। অতঃপর ইফতার করে অযু করলেন। [আবু দাউদ, হা/২৩৮৩; তিরমিযী, হা/৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৫৪।]
১০. সালাতে অট্টহাসি হাসার বিধান :
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সালাতের বাইরে হাসাহাসি করলে অযু নষ্ট হয় না। তবে কেউ কেউ বলেছেন সালাতের ভেতরে উচ্চৈঃস্বরে হাসলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল নেই।
১১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে এবং তাকে বহন করলে :
বিশুদ্ধ মতে যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে অথবা তাকে বহন করবে, তার অযু নষ্ট হবে না।
কতিপয় বিদ্বান বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে তার জন্য গোসল করা মুসত্মাহাব। আর যে তাকে বহন করবে তার জন্য অযু করা মুসত্মাহাব। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : مَنْ غَسَّلَ الْمَيِّتَ فَلْيَغْتَسِلْ وَمَنْ حَمَلَه فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল করবে। আর তাকে বহন করলে অযু করবে। [আবু দাউদ, হা/৩১৬৩; বায়হাকী, হা/১৩৪২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৯।]
১. ঘুমানোর সময় :
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তার পূর্বে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিবে, তারপর ডান পাশে শুবে। এরপর বলবে-
اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اَللّٰهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ
হে আল্লাহ! আমি আমাকে আপনার হাতে সমর্পণ করলাম। যাবতীয় কার্যকলাপ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম, সকল আশা-ভরসা এবং ভয়-ভীতি সহকারে আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম। আপনি ব্যতীত আমার কোন আশ্রয়স্থল এবং পরিত্রাণস্থল নেই। হে আল্লাহ! আপনি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং যে নবী প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর আমি ঈমান গ্রহণ করলাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এ দু‘আ পাঠ করার পর যদি তুমি এ রাতেই মৃত্যুবরণ কর তাহলে তুমি ফিতরাত (দ্বীন) এর উপরই মৃত্যুবরণ করবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, উপরোক্ত দু‘আর বাক্যগুলো তুমি তোমার সব কথাবার্তা শেষে বলবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭; আবু দাউদ, হা/৫০৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/২১৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮০।]
২. জুনুবী ব্যক্তি যখন খাওয়া, পান করা বা ঘুমানোর ইচ্ছা করে :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ تَوَضَّأَ وُضُوْءَه لِلصَّلَاةِ .
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নাপাক থাকতেন তখন কিছু খেতে অথবা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৬; আবু দাউদ, হা/২২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২১৫।]
৩. জুনুবী ব্যক্তি যদি পুনরায় সহবাস করতে চায় :
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ " إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَه ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে তারপর আবার মিলিত হবার ইচ্ছা করবে সে যেন অযু করে নেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৩; তিরমিযী, হা/১৪১; ইবনে মাজাহ, হা/৫৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৪৩।]
৪. গোসল করার পূর্বে অযু করা :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ ثُمَّ يُفْرِغُ بِيَمِيْنِه عَلٰى شِمَالِه فَيَغْسِلُ فَرْجَه ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وُضُوْءَه لِلصَّلَاةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন প্রথমে দু’হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৪; নাসাঈ, হা/৪১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৪১।]
৫. প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুনভাবে অযু করা :
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - صَلَّى الصَّلَوَاتِ يَوْمَ الْفَتْحِ بِوُضُوْءٍ وَاحِدٍ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করতেন। তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একই অযু দ্বারা কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৭৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬।]
৬. কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় :
কাবাঘর তাওয়াফকারীর জন্য অযু করা মুসত্মাহাব। তবে অনেক আলেম তাওয়াফের জন্য অযু করাকে ওয়াজিব বলেছেন। এক্ষেত্রে তারা ইবনে আববাস (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। আর তা হলো-
اَلطَّوَافُ بِالْبَيْتِ صَلَاةٌ اِلَّا اِنَّ اللهَ اِبَاحَ فِيْهِ الْكَلَامَ
অর্থাৎ বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা এক প্রকার সালাত। তবে তাতে আল্লাহ কথা বলা বৈধ করেছেন। [মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১২১; নাসাঈ, হা/২৯২২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৬৮৬; বায়হাকী, হা/৯০৮৬; দারেমী, হা/১৮৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৩৬; জামেউস সগীর, হা/৭৩০১।]
মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করার সময় :
মুখসত্ম কুরআন পাঠের সময় অযু আবশ্যক নয়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তবে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার সময় অযু করার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।
১. অনেক বিদ্বানের মতে অযুবিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
﴿لَا يَمَسُّهٗۤ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ﴾
অর্থাৎ পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াকিয়া- ৭৯)
আমর বিন হাযম এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইয়ামানবাসীর নিকট একটি চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে বলা হয়েছিল,
لَا يَمَسُّ الْقُرْاٰنَ اِلَّا طَاهِرٌ
অর্থাৎ পবিত্র ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৬৯; দার কুতনী, হা/৪৩৭।]
২. কোন কোন আলেমের মতে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার সময় অযু করা জরুরি নয়; বরং মুসত্মাহাব বা উত্তম। তাদের মতে, বর্ণিত আয়াতে يَمَسُّه এর সর্বনামটি ‘সুরক্ষিত কিতাব’ এর দিকে প্রত্যাবর্তন হয়েছে, যা লাওহে মাহফূজে রয়েছে। আর اَ لْمُطَهَّرُوْنَ (পবিত্রগণ) বলতে এখানে ফেরেশতাগণ উদ্দেশ্য।
উপরোক্ত আয়াতটি মুশরিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে নাযিল হয়েছে। মুশরিকরা অভিযোগ করে বলত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যে ওহী আসে তা শয়তান চুরি করে আকাশ থেকে এনে তার কাছে দিয়ে যায়। আর তিনি এটা মানুষের কাছে প্রচার করেন।
তাদের এই অভিযোগের উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের ৩ জায়গায় আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন-
﴿وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ﴾
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা : ২১০-২১২)
উপরোক্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, এ কুরআন শয়তান আনেনি। এমনকি যেখানে এ কুরআন সংরক্ষিত আছে সে স্থান তারা স্পর্শও করতে পারে না। সেখানে পৌঁছতে পারে কেবল পবিত্র ফেরেশতারা। যারা এর লেখালেখির দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ ‐ مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ ‐ بِأَيْدِيْ سَفَرَةٍ ‐ كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ﴾
এটা আছে সম্মানিত সহীফাসমূহে। যা সমুন্নত, পবিত্র লেখকদের হাতে, যারা মহা সম্মানিত ও অনুগত। (সূরা আবাসা : ১৩-১৬)
অনুরূপভাবে এ প্রসঙ্গেই সূরা ওয়াকিয়ার এ আয়াতসমূহও নাযিল হয়েছে-
﴿إِنَّه لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ ‐ فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ ‐ لَا يَمَسُّهٗۤ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ﴾
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করে না পবিত্রগণ ছাড়া। (সূরা ওয়াকিয়া : ৭৭-৭৯)
তা ছাড়া কী কাজের জন্য অযু করতে হবে তা কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে সালাতে দাঁড়ানোর সময় অযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কুরআন স্পর্শ করার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক হতো তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এখানে সালাতের সাথে কুরআনের কথাও উল্লেখ করতেন। আবার কুরআন পাঠের সময় কী করতে হবে তাও আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে কুরআন মাজীদে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন পাঠের সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। অযু করতে বলেননি।
মুমিন ব্যক্তি যদিও বাহ্যিকভাবে অপবিত্র হয় তারপরও সে আভ্যমত্মরীণভাবে অপবিত্র হয় না। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ
অর্থাৎ মুমিন কখনো অপবিত্র হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫০; নাসাঈ, হা/২৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২১০।]
অপরদিকে মুশরিকরা বাহ্যিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করলেও তারা নাপাক থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا﴾
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তার পূর্বে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিবে, তারপর ডান পাশে শুবে। এরপর বলবে-
اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اَللّٰهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ
হে আল্লাহ! আমি আমাকে আপনার হাতে সমর্পণ করলাম। যাবতীয় কার্যকলাপ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম, সকল আশা-ভরসা এবং ভয়-ভীতি সহকারে আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম। আপনি ব্যতীত আমার কোন আশ্রয়স্থল এবং পরিত্রাণস্থল নেই। হে আল্লাহ! আপনি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং যে নবী প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর আমি ঈমান গ্রহণ করলাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এ দু‘আ পাঠ করার পর যদি তুমি এ রাতেই মৃত্যুবরণ কর তাহলে তুমি ফিতরাত (দ্বীন) এর উপরই মৃত্যুবরণ করবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, উপরোক্ত দু‘আর বাক্যগুলো তুমি তোমার সব কথাবার্তা শেষে বলবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭; আবু দাউদ, হা/৫০৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/২১৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮০।]
২. জুনুবী ব্যক্তি যখন খাওয়া, পান করা বা ঘুমানোর ইচ্ছা করে :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ تَوَضَّأَ وُضُوْءَه لِلصَّلَاةِ .
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নাপাক থাকতেন তখন কিছু খেতে অথবা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৬; আবু দাউদ, হা/২২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২১৫।]
৩. জুনুবী ব্যক্তি যদি পুনরায় সহবাস করতে চায় :
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ " إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَه ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ فَلْيَتَوَضَّأْ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে তারপর আবার মিলিত হবার ইচ্ছা করবে সে যেন অযু করে নেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৩; তিরমিযী, হা/১৪১; ইবনে মাজাহ, হা/৫৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৪৩।]
৪. গোসল করার পূর্বে অযু করা :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ ثُمَّ يُفْرِغُ بِيَمِيْنِه عَلٰى شِمَالِه فَيَغْسِلُ فَرْجَه ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وُضُوْءَه لِلصَّلَاةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন প্রথমে দু’হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৪; নাসাঈ, হা/৪১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৪১।]
৫. প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুনভাবে অযু করা :
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - صَلَّى الصَّلَوَاتِ يَوْمَ الْفَتْحِ بِوُضُوْءٍ وَاحِدٍ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করতেন। তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একই অযু দ্বারা কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৭৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬।]
৬. কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় :
কাবাঘর তাওয়াফকারীর জন্য অযু করা মুসত্মাহাব। তবে অনেক আলেম তাওয়াফের জন্য অযু করাকে ওয়াজিব বলেছেন। এক্ষেত্রে তারা ইবনে আববাস (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। আর তা হলো-
اَلطَّوَافُ بِالْبَيْتِ صَلَاةٌ اِلَّا اِنَّ اللهَ اِبَاحَ فِيْهِ الْكَلَامَ
অর্থাৎ বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা এক প্রকার সালাত। তবে তাতে আল্লাহ কথা বলা বৈধ করেছেন। [মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১২১; নাসাঈ, হা/২৯২২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৬৮৬; বায়হাকী, হা/৯০৮৬; দারেমী, হা/১৮৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৩৬; জামেউস সগীর, হা/৭৩০১।]
মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করার সময় :
মুখসত্ম কুরআন পাঠের সময় অযু আবশ্যক নয়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তবে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার সময় অযু করার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।
১. অনেক বিদ্বানের মতে অযুবিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
﴿لَا يَمَسُّهٗۤ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ﴾
অর্থাৎ পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াকিয়া- ৭৯)
আমর বিন হাযম এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইয়ামানবাসীর নিকট একটি চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে বলা হয়েছিল,
لَا يَمَسُّ الْقُرْاٰنَ اِلَّا طَاهِرٌ
অর্থাৎ পবিত্র ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৬৯; দার কুতনী, হা/৪৩৭।]
২. কোন কোন আলেমের মতে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার সময় অযু করা জরুরি নয়; বরং মুসত্মাহাব বা উত্তম। তাদের মতে, বর্ণিত আয়াতে يَمَسُّه এর সর্বনামটি ‘সুরক্ষিত কিতাব’ এর দিকে প্রত্যাবর্তন হয়েছে, যা লাওহে মাহফূজে রয়েছে। আর اَ لْمُطَهَّرُوْنَ (পবিত্রগণ) বলতে এখানে ফেরেশতাগণ উদ্দেশ্য।
উপরোক্ত আয়াতটি মুশরিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে নাযিল হয়েছে। মুশরিকরা অভিযোগ করে বলত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যে ওহী আসে তা শয়তান চুরি করে আকাশ থেকে এনে তার কাছে দিয়ে যায়। আর তিনি এটা মানুষের কাছে প্রচার করেন।
তাদের এই অভিযোগের উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের ৩ জায়গায় আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন-
﴿وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ﴾
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা : ২১০-২১২)
উপরোক্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, এ কুরআন শয়তান আনেনি। এমনকি যেখানে এ কুরআন সংরক্ষিত আছে সে স্থান তারা স্পর্শও করতে পারে না। সেখানে পৌঁছতে পারে কেবল পবিত্র ফেরেশতারা। যারা এর লেখালেখির দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ ‐ مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ ‐ بِأَيْدِيْ سَفَرَةٍ ‐ كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ﴾
এটা আছে সম্মানিত সহীফাসমূহে। যা সমুন্নত, পবিত্র লেখকদের হাতে, যারা মহা সম্মানিত ও অনুগত। (সূরা আবাসা : ১৩-১৬)
অনুরূপভাবে এ প্রসঙ্গেই সূরা ওয়াকিয়ার এ আয়াতসমূহও নাযিল হয়েছে-
﴿إِنَّه لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ ‐ فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ ‐ لَا يَمَسُّهٗۤ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ﴾
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করে না পবিত্রগণ ছাড়া। (সূরা ওয়াকিয়া : ৭৭-৭৯)
তা ছাড়া কী কাজের জন্য অযু করতে হবে তা কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে সালাতে দাঁড়ানোর সময় অযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কুরআন স্পর্শ করার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক হতো তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এখানে সালাতের সাথে কুরআনের কথাও উল্লেখ করতেন। আবার কুরআন পাঠের সময় কী করতে হবে তাও আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে কুরআন মাজীদে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন পাঠের সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। অযু করতে বলেননি।
মুমিন ব্যক্তি যদিও বাহ্যিকভাবে অপবিত্র হয় তারপরও সে আভ্যমত্মরীণভাবে অপবিত্র হয় না। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ
অর্থাৎ মুমিন কখনো অপবিত্র হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫০; নাসাঈ, হা/২৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৫৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২১০।]
অপরদিকে মুশরিকরা বাহ্যিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করলেও তারা নাপাক থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا﴾
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
যে ব্যক্তি অপবিত্র রয়েছে এবং সালাত আদায়ের ইচ্ছা করে তার জন্য অযু করা ফরয। চাই তা ফরয সালাত হোক বা নফল সালাত হোক কিংবা জানাযার সালাত হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى الْمَلِيْحِ عَنْ أَبِيْهِ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : لَا يَقْبَلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ صَدَقَةً مِنْ غُلُوْلٍ وَلَا صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ
আবু মালীহ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা গনীমত থেকে চুরীর মালের সাদাকা গ্রহণ করবেন না এবং পবিত্রতা ছাড়া সালাতও কবুল করবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ خَرَجَ مِنَ الخَلَاءِ فَقُدِّمَ إِلَيْهِ طَعَامٌ فَقَالُوْا : أَلَا نَأْتِيْكَ بِوَضُوْءٍ فَقَالَ : إِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوْءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ টয়লেট থেকে বের হলেন। অতঃপর তার সামনে খাবার পেশ করা হলো। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি আপনার জন্য অযুর পানি আনব? তিনি বললেন, আমি কেবল সালাতের জন্য অযু করতে আদিষ্ট হয়েছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬২; তিরমিযী, হা/১৮৪৭; নাসাঈ, হা/১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫; বায়হাকী, হা/১৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৩৫; জামেউস সগীর, হা/৪১০২; মিশকাত, হা/৪২০৯।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى الْمَلِيْحِ عَنْ أَبِيْهِ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : لَا يَقْبَلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ صَدَقَةً مِنْ غُلُوْلٍ وَلَا صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ
আবু মালীহ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা গনীমত থেকে চুরীর মালের সাদাকা গ্রহণ করবেন না এবং পবিত্রতা ছাড়া সালাতও কবুল করবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ خَرَجَ مِنَ الخَلَاءِ فَقُدِّمَ إِلَيْهِ طَعَامٌ فَقَالُوْا : أَلَا نَأْتِيْكَ بِوَضُوْءٍ فَقَالَ : إِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوْءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ টয়লেট থেকে বের হলেন। অতঃপর তার সামনে খাবার পেশ করা হলো। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি আপনার জন্য অযুর পানি আনব? তিনি বললেন, আমি কেবল সালাতের জন্য অযু করতে আদিষ্ট হয়েছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬২; তিরমিযী, হা/১৮৪৭; নাসাঈ, হা/১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫; বায়হাকী, হা/১৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৩৫; জামেউস সগীর, হা/৪১০২; মিশকাত, হা/৪২০৯।]
اَلتَّيَمُّمُ (তায়াম্মুম) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা।
আর পারিভাষিক অর্থে পানি না পাওয়া গেলে অযু বা গোসলের পরিবর্তে পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে।
এটা উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষত্ব। মহান আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ - مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ﴾
যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক কিংবা (প্রস্রাব) পায়খানা ও স্ত্রী মিলনের পর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - ﷺ : فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثٍ جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلَائِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সকল মানুষের উপর আমাদেরকে ৩ টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. আমাদের সালাতে দাঁড়ানোর কাতার করা হয়েছে ফেরেশতাদের কাতারের মতো।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমাদের জন্য সালাতের স্থান করে দেয়া হয়েছে।
৩. যখন আমরা পানি পাব না তখন মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৯৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৬৪; বায়হাকী, হা/১০০১; মিশকাত, হা/৫২৬।]
অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ فَضَّلَنِىْ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ أَوْ قَالَ : أُمَّتِىْ عَلَى الْأُمَمِ بِأَرْبَعٍ : أَرْسَلَنِىْ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَجَعَلَ الْأَرْضَ كُلَّهَا لِىْ وَلِأُمَّتِىْ طَهُوْرًا وَمَسْجِدًا فَأَيْنَمَا أَدْرَكَتِ الرَّجُلَ مِنْ أُمَّتِىْ الصَّلَاةُ فَعِنْدَه مَسْجِدُه وَعِنْدَه طَهُوْرُه وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ يَسِيْرُ بَيْنَ يَدَىَّ مَسِيْرَةَ شَهْرٍ يُقْذَفُ فِى قُلُوْبِ أَعْدَائِىْ ، وَأُحِلَّتْ لِى الْغَنَائِمُ
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অন্য বর্ণনায় আমার উম্মতকে অন্যান্য সকল উম্মতের উপর চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন।
১. আমাকে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমার এবং আমার উম্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি যেখানেই সালাতের সময় পাবে সে স্থানই তার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতার মাধ্যম হবে।
৩. ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। এক মাসের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা আমাকে ভয় করে।
৪. গনীমতের মালকে আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।]
যেসব কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
নিম্নোক্ত কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
(১) যদি পবিত্র পানি না পাওয়া যায়।
(২) পানি পেতে গেলে যদি সালাত কাযা হওয়ার ভয় থাকে।
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে।
(৪) পানি ব্যবহারে যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে। [সূরা মায়েদা ৫/৬; মিশকাত, হা/৫২৭, ৫৩০।]
আর পারিভাষিক অর্থে পানি না পাওয়া গেলে অযু বা গোসলের পরিবর্তে পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে।
এটা উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষত্ব। মহান আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ - مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ﴾
যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক কিংবা (প্রস্রাব) পায়খানা ও স্ত্রী মিলনের পর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - ﷺ : فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثٍ جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلَائِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সকল মানুষের উপর আমাদেরকে ৩ টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. আমাদের সালাতে দাঁড়ানোর কাতার করা হয়েছে ফেরেশতাদের কাতারের মতো।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমাদের জন্য সালাতের স্থান করে দেয়া হয়েছে।
৩. যখন আমরা পানি পাব না তখন মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৯৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৬৪; বায়হাকী, হা/১০০১; মিশকাত, হা/৫২৬।]
অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ فَضَّلَنِىْ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ أَوْ قَالَ : أُمَّتِىْ عَلَى الْأُمَمِ بِأَرْبَعٍ : أَرْسَلَنِىْ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَجَعَلَ الْأَرْضَ كُلَّهَا لِىْ وَلِأُمَّتِىْ طَهُوْرًا وَمَسْجِدًا فَأَيْنَمَا أَدْرَكَتِ الرَّجُلَ مِنْ أُمَّتِىْ الصَّلَاةُ فَعِنْدَه مَسْجِدُه وَعِنْدَه طَهُوْرُه وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ يَسِيْرُ بَيْنَ يَدَىَّ مَسِيْرَةَ شَهْرٍ يُقْذَفُ فِى قُلُوْبِ أَعْدَائِىْ ، وَأُحِلَّتْ لِى الْغَنَائِمُ
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অন্য বর্ণনায় আমার উম্মতকে অন্যান্য সকল উম্মতের উপর চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন।
১. আমাকে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমার এবং আমার উম্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি যেখানেই সালাতের সময় পাবে সে স্থানই তার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতার মাধ্যম হবে।
৩. ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। এক মাসের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা আমাকে ভয় করে।
৪. গনীমতের মালকে আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।]
যেসব কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
নিম্নোক্ত কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
(১) যদি পবিত্র পানি না পাওয়া যায়।
(২) পানি পেতে গেলে যদি সালাত কাযা হওয়ার ভয় থাকে।
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে।
(৪) পানি ব্যবহারে যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে। [সূরা মায়েদা ৫/৬; মিশকাত, হা/৫২৭, ৫৩০।]
১. প্রথমে নিয়ত করতে হবে এবং বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
২. দু’হাত মাটিতে বা বালিতে বা দেয়ালে বা ধূলামিশ্রিত পাথরের উপর মারতে হবে; এরপর ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিতে হবে।
৩. এরপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল মাসাহ করতে হবে।
৪. এরপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত কব্জি পর্যন্ত এবং ডান হাত দিয়ে বাম হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
فَضَرَبَ النَّبِيُّ ﷺ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهٗ وَكَفَّيْهِ
নবী ﷺ দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৮; ইবনে মাজাহ, হা/৫৬৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে যে, তোমরা দু’হাত মাটিতে মেরে ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিবে, তারপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৫; আবু দাউদ, হা/৩২৪।]
কোন্ মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা বৈধ?
সাধারণত পৃথিবীর উপরিভাগ তথা বালু ও মাটি ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।] তবে ধূলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইলস ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না। তবে এসবের সাথে যদি ধূলা-বালি মিশ্রিত থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।
২. দু’হাত মাটিতে বা বালিতে বা দেয়ালে বা ধূলামিশ্রিত পাথরের উপর মারতে হবে; এরপর ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিতে হবে।
৩. এরপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল মাসাহ করতে হবে।
৪. এরপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত কব্জি পর্যন্ত এবং ডান হাত দিয়ে বাম হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
فَضَرَبَ النَّبِيُّ ﷺ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهٗ وَكَفَّيْهِ
নবী ﷺ দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৮; ইবনে মাজাহ, হা/৫৬৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে যে, তোমরা দু’হাত মাটিতে মেরে ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিবে, তারপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৫; আবু দাউদ, হা/৩২৪।]
কোন্ মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা বৈধ?
সাধারণত পৃথিবীর উপরিভাগ তথা বালু ও মাটি ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।] তবে ধূলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইলস ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না। তবে এসবের সাথে যদি ধূলা-বালি মিশ্রিত থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।
বিদ্বানদের বিশুদ্ধ অভিমতে, সাধারণভাবে তায়াম্মুম পানির স্থলাভিষিক্ত। পানি দ্বারা যা বৈধ হয় তায়াম্মুম দ্বারাও তা বৈধ হবে। পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের সময় পেরিয়ে গেলেও যেমন পবিত্রতা বাকী থাকে, তায়াম্মুমের ক্ষেত্রেও সময় চলে যাওয়ার পরও তায়াম্মুমের পবিত্রতা অবশিষ্ট থাকে। যদি নফল সালাতের জন্য তায়াম্মুম করা হয় তাহলে তা দ্বারা ফরয সালাতও আদায় করা যায়।
যেসব কারণে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায়।
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে :
কোন জুনুবী (যার উপর গোসল ফরয) সেও যদি রোগবৃদ্ধি কিংবা মৃত্যুর ভয় করে তাহলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে।
عَنْ عِمْرَانِ بْنِ حُصَيْنٍ الْخُزَاعِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ رَأٰى رَجُلًا مُعْتَزِلًا لَمْ يُصَلِّ فِي الْقَوْمِ فَقَالَ : يَا فُلَانُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ فِي الْقَوْمِ . فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلَا مَاءَ . قَالَ : عَلَيْكَ بِالصَّعِيْدِ فَإِنَّه يَكْفِيْكَ
ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে মানুষদের থেকে দূরে একাকী অবস্থায় দেখতে পেলেন যে, সে তাদের সাথে সালাত আদায় করেনি। তিনি (লোকটিকে ডেকে) বললেন, হে অমুক! তোমাকে সম্প্রদায়ের সাথে সালাত আদায় করতে কীসে বিরত রেখেছে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে নাপাকী পেয়েছে, অথচ পানি নেই। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার কর্তব্য পবিত্র মাটি ব্যবহার করা। কেননা তোমার জন্য ওটাই যথেষ্ট। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৮; নাসাঈ, হা/৩২১; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৯১২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৭১।]
জানাবাত দূর করার নিয়তে তায়াম্মুম করলে তা ছোট নাপাকী দূর করার জন্য অর্থাৎ অযুর জন্য যথেষ্ট হবে।
যে ব্যক্তির দেহে যখম রয়েছে তার করণীয় :
যদি অধিকাংশ শরীর যখম হয় তাহলে বাকী সুস্থ অঙ্গ ধৌত করা ছাড়াই তায়াম্মুম করবে। আর যদি অধিকাংশ অঙ্গ সুস্থ হয়, তাহলে সুস্থ অঙ্গ ধৌত করবে এবং যখমকৃত অঙ্গ ধৌত করবে না; বরং এর উপর মাসাহ করবে।
যার কাছে অল্প পরিমাণ পানি আছে :
কোন ব্যক্তির কাছে যদি অযু বা গোসলের অঙ্গ ধৌত করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করবে।
কোন ব্যক্তির কাছে যদি অযু বা গোসলের অঙ্গ ধৌত করার মতো পানি থাকে, কিমত্মু তা ব্যবহার করলে নিজের অথবা সঙ্গীর কিংবা চতুষ্পদ জমত্মুর পিপাসার আশঙ্কা করে তাহলে পান করার জন্য পানি রেখে দিবে এবং তায়াম্মুম করবে।
আরোগ্য লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা হলে :
অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, জীবননাশের আশঙ্কার কারণেই শুধু রুগ্ন ব্যক্তি তায়াম্মুম করবে- এমন কোন শর্ত নেই। বরং যদি রুগ্ন ব্যক্তি পানি ব্যবহারের ফলে রোগ বৃদ্ধি বা আরোগ্য লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলেও সে তায়াম্মুম করতে পারবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের সহজ করতে চান এবং কঠিন করতে চান না। (সূরা বাকারা- ১৮৫)
পানি অধিক ঠান্ডা হলে :
যদি পানি ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ব্যবহারে জীবননাশের আশঙ্কা থাকে তাহলে জানাবাতের কারণে তায়াম্মুম করা বৈধ। কেননা এটা অসুস্থতার স্থলাভিষিক্ত। এটা অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। তাদের দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
﴿وَلَا تَقْتُلُوْاۤ أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
আর তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত যে, তায়াম্মুমের বিধান ঠান্ডার কারণে দেয়া হয়নি। বরং পানি ব্যবহারে অক্ষম হলেই তায়াম্মুম করা বৈধ।
সালাত আরম্ভ করার পূর্বে পানি পেলে :
কোন ব্যক্তি যদি পানির সন্ধান করার পর পানি না পাওয়ার ফলে তায়াম্মুম করে। অতঃপর সালাত আরম্ভ হওয়ার পূর্বে পানি পেয়ে যায়, তাহলে তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে।
সালাত আরম্ভ বা সমাপ্ত করার পর পানি পেলে :
কোন ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সালাত আরম্ভ করল, অতঃপর সালাতরত অবস্থায় পানি উপস্থিত হলো, তাহলে সে সালাত পূর্ণ করবে।
বিদ্বানদের বিশুদ্ধ অভিমতে, যে ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করল, অতঃপর সালাতের সময় অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় পানি উপস্থিত হলো, তাহলে তাকে পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে না। তবে সময় থাকা অবস্থায় পানি পাওয়া গেলে পুনরায় সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِى سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلَانِ فِى سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِى الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلَاةَ وَالْوُضُوْءَ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - فَذَكَرَا ذٰلِكَ لَه فَقَالَ لِلَّذِى لَمْ يُعِدْ : أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلَاتُكَ . وَقَالَ لِلَّذِى تَوَضَّأَ وَأَعَادَ : لَكَ الْأَجْرُ مَرَّتَيْنِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দু’ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে সালাতের সময় উপস্থিত হয় আর তারা পানি না পাওয়ায় তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে। অতঃপর উক্ত সালাতের সময়ের মধ্যে পানি পাওয়াতে তাদের একজন অযু করে পুনরায় সালাত আদায় করে এবং অপর ব্যক্তি সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে। অতঃপর উভয়ই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে। তখন তিনি বলেন, তোমাদের যে ব্যক্তি সালাত পুনরায় আদায় করেনি সে সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি অযু করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে তার সম্পর্কে বলেন, তুমি দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হয়েছ। [আবু দাউদ, হা/৩৩৮; নাসাঈ, হা/৪৩৩; দার কুতনী, হা/৭২৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৬৩২; মিশকাত, হা/৫৩৩।]
পানি ও মাটি কোনটিই না পাওয়া গেলে :
পানি ও মাটি কোনটিই না পাওয়া গেলে সে অবস্থায়ই সময়মতো সালাত আদায় করে নিবে। তাকে আর পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৪৪।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا﴾
আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। (সূরা বাকারা- ২৮৬)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর জন্য পানি না পাওয়া গেলে :
পানি পাওয়া না গেলে মৃত ব্যক্তিকেও তায়াম্মুম করানো যাবে। কেননা তাকে গোসল করানো ফরয। আর পানির অনুপস্থিতিতে গোসলের বিকল্প হচ্ছে তায়াম্মুম।
যেসব কারণে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায়।
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে :
কোন জুনুবী (যার উপর গোসল ফরয) সেও যদি রোগবৃদ্ধি কিংবা মৃত্যুর ভয় করে তাহলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে।
عَنْ عِمْرَانِ بْنِ حُصَيْنٍ الْخُزَاعِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ رَأٰى رَجُلًا مُعْتَزِلًا لَمْ يُصَلِّ فِي الْقَوْمِ فَقَالَ : يَا فُلَانُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ فِي الْقَوْمِ . فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلَا مَاءَ . قَالَ : عَلَيْكَ بِالصَّعِيْدِ فَإِنَّه يَكْفِيْكَ
ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে মানুষদের থেকে দূরে একাকী অবস্থায় দেখতে পেলেন যে, সে তাদের সাথে সালাত আদায় করেনি। তিনি (লোকটিকে ডেকে) বললেন, হে অমুক! তোমাকে সম্প্রদায়ের সাথে সালাত আদায় করতে কীসে বিরত রেখেছে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে নাপাকী পেয়েছে, অথচ পানি নেই। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার কর্তব্য পবিত্র মাটি ব্যবহার করা। কেননা তোমার জন্য ওটাই যথেষ্ট। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৮; নাসাঈ, হা/৩২১; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৯১২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৭১।]
জানাবাত দূর করার নিয়তে তায়াম্মুম করলে তা ছোট নাপাকী দূর করার জন্য অর্থাৎ অযুর জন্য যথেষ্ট হবে।
যে ব্যক্তির দেহে যখম রয়েছে তার করণীয় :
যদি অধিকাংশ শরীর যখম হয় তাহলে বাকী সুস্থ অঙ্গ ধৌত করা ছাড়াই তায়াম্মুম করবে। আর যদি অধিকাংশ অঙ্গ সুস্থ হয়, তাহলে সুস্থ অঙ্গ ধৌত করবে এবং যখমকৃত অঙ্গ ধৌত করবে না; বরং এর উপর মাসাহ করবে।
যার কাছে অল্প পরিমাণ পানি আছে :
কোন ব্যক্তির কাছে যদি অযু বা গোসলের অঙ্গ ধৌত করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করবে।
কোন ব্যক্তির কাছে যদি অযু বা গোসলের অঙ্গ ধৌত করার মতো পানি থাকে, কিমত্মু তা ব্যবহার করলে নিজের অথবা সঙ্গীর কিংবা চতুষ্পদ জমত্মুর পিপাসার আশঙ্কা করে তাহলে পান করার জন্য পানি রেখে দিবে এবং তায়াম্মুম করবে।
আরোগ্য লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা হলে :
অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, জীবননাশের আশঙ্কার কারণেই শুধু রুগ্ন ব্যক্তি তায়াম্মুম করবে- এমন কোন শর্ত নেই। বরং যদি রুগ্ন ব্যক্তি পানি ব্যবহারের ফলে রোগ বৃদ্ধি বা আরোগ্য লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলেও সে তায়াম্মুম করতে পারবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের সহজ করতে চান এবং কঠিন করতে চান না। (সূরা বাকারা- ১৮৫)
পানি অধিক ঠান্ডা হলে :
যদি পানি ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ব্যবহারে জীবননাশের আশঙ্কা থাকে তাহলে জানাবাতের কারণে তায়াম্মুম করা বৈধ। কেননা এটা অসুস্থতার স্থলাভিষিক্ত। এটা অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। তাদের দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
﴿وَلَا تَقْتُلُوْاۤ أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
আর তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত যে, তায়াম্মুমের বিধান ঠান্ডার কারণে দেয়া হয়নি। বরং পানি ব্যবহারে অক্ষম হলেই তায়াম্মুম করা বৈধ।
সালাত আরম্ভ করার পূর্বে পানি পেলে :
কোন ব্যক্তি যদি পানির সন্ধান করার পর পানি না পাওয়ার ফলে তায়াম্মুম করে। অতঃপর সালাত আরম্ভ হওয়ার পূর্বে পানি পেয়ে যায়, তাহলে তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে।
সালাত আরম্ভ বা সমাপ্ত করার পর পানি পেলে :
কোন ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সালাত আরম্ভ করল, অতঃপর সালাতরত অবস্থায় পানি উপস্থিত হলো, তাহলে সে সালাত পূর্ণ করবে।
বিদ্বানদের বিশুদ্ধ অভিমতে, যে ব্যক্তি তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করল, অতঃপর সালাতের সময় অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় পানি উপস্থিত হলো, তাহলে তাকে পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে না। তবে সময় থাকা অবস্থায় পানি পাওয়া গেলে পুনরায় সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِى سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلَانِ فِى سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِى الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلَاةَ وَالْوُضُوْءَ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - فَذَكَرَا ذٰلِكَ لَه فَقَالَ لِلَّذِى لَمْ يُعِدْ : أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلَاتُكَ . وَقَالَ لِلَّذِى تَوَضَّأَ وَأَعَادَ : لَكَ الْأَجْرُ مَرَّتَيْنِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দু’ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে সালাতের সময় উপস্থিত হয় আর তারা পানি না পাওয়ায় তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে। অতঃপর উক্ত সালাতের সময়ের মধ্যে পানি পাওয়াতে তাদের একজন অযু করে পুনরায় সালাত আদায় করে এবং অপর ব্যক্তি সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে। অতঃপর উভয়ই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে। তখন তিনি বলেন, তোমাদের যে ব্যক্তি সালাত পুনরায় আদায় করেনি সে সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি অযু করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে তার সম্পর্কে বলেন, তুমি দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হয়েছ। [আবু দাউদ, হা/৩৩৮; নাসাঈ, হা/৪৩৩; দার কুতনী, হা/৭২৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৬৩২; মিশকাত, হা/৫৩৩।]
পানি ও মাটি কোনটিই না পাওয়া গেলে :
পানি ও মাটি কোনটিই না পাওয়া গেলে সে অবস্থায়ই সময়মতো সালাত আদায় করে নিবে। তাকে আর পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৪৪।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا﴾
আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। (সূরা বাকারা- ২৮৬)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর জন্য পানি না পাওয়া গেলে :
পানি পাওয়া না গেলে মৃত ব্যক্তিকেও তায়াম্মুম করানো যাবে। কেননা তাকে গোসল করানো ফরয। আর পানির অনুপস্থিতিতে গোসলের বিকল্প হচ্ছে তায়াম্মুম।
اَلْحَيْضُ (আল হায়যু) শব্দের অর্থ হলো প্রবাহিত হওয়া। মহিলাদের জরায়ু থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে রক্ত বের হয় তাকে হায়েয বলে।
মহিলাদের লজ্জাস্থান দিয়ে সাধারণত ৩ প্রকার রক্ত নির্গত হয়। যথা :
১. হায়েযের রক্ত।
২. নিফাসের রক্ত।
৩. ইস্তিহাযার রক্ত।
হায়েযের রক্ত :
এটা দুর্গন্ধযুক্ত, ঘন ও কালো রঙের রক্ত, যা নির্দিষ্ট সময়ে মহিলাদের জরায়ু থেকে বের হয়। আল্লাহ তা‘আলা বনী আদমের প্রত্যেক নারীর উপর এটা আবশ্যক করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
إِنَّ هٰذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা হায়েযের রক্তকে প্রত্যেক আদম কন্যার জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৬।]
হায়েযের সময়সীমা :
হায়েযের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোন সময়সীমা নেই। সুতরাং প্রত্যেক নারীর হায়েযের নিয়মের উপর তার সময়সীমা নির্ধারিত হবে। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ও বিশ্লেষণ আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহের মধ্যে পাওয়া যায় না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নির্ভরতা নির্দিষ্ট সময়ের উপর নয়, বরং নির্ভরতা হচ্ছে হায়েযের অস্তিত্বের উপর। যা বিদ্যমান থাকা ও না থাকার উপর শরীয়তের বিধানসমূহ সম্পৃক্ত।
হায়েযের শুরু ও শেষ :
১. হায়েযের শুরু বুঝা যায়, সম্ভাব্য সময়ে লজ্জাস্থান থেকে দুর্গন্ধময় ও কালো রক্ত নির্গত হওয়া দ্বারা।
২. হায়েযের শেষ সময় বুঝা যায়, লজ্জাস্থান থেকে সাধারণ রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধের দ্বারা। অর্থাৎ লজ্জাস্থানে তুলা বা ন্যাকড়া প্রবেশ করানোর পর তা শুষ্ক বের হলে হায়েযের সময় শেষ হয়েছে বলে ধরে নিবে।
মাসআলা :
লজ্জাস্থান থেকে রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধ হওয়ার পর সাদা পানি বা হলুদ রঙের কিছু বের হলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। এ অবস্থায় সে সালাত, সিয়াম, সহবাস প্রভৃতি বৈধ কাজ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উম্মে আতিয়্যার হাদীসটি প্রাধান্যযোগ্য। তিনি বলেন,
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
অর্থাৎ রক্তস্রাব হতে পবিত্রতার পর মেটে ও হলুদ রংকে আমরা হায়েয হিসেবে ধর্তব্য মনে করতাম না। [আবু দাউদ, হা/৩০৭; নাসাঈ, ১/১৮৬; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪৭।]
মাসআলা :
কোন মহিলার যদি প্রত্যেক মাসে নিয়মিত ৬ দিন ঋতুস্রাব হয়। কিমত্মু ঘটনাক্রমে কোন কোন মাসে যদি ৭ দিন, ৮ দিন বা ১০ দিন ঋতুস্রাব হয়, তাহলে সে প্রথমে যথাসাধ্য হায়েযের রক্ত ও অন্য রক্তের মাঝে পার্থক্য করার চেষ্টা করবে। এ অবস্থায় যদি দেখে যে লজ্জাস্থান থেকে নির্গত রক্তের রং, গন্ধ ও বৈশিষ্ট্য হায়েযের রক্তের ন্যায়, তাহলে সালাত, সিয়াম ও সহবাস থেকে বিরত থাকবে। আর যদি এ রক্ত হায়েযের রক্তের সাথে না মিলে, তাহলে সে গোসল করে সালাত আদায় করে নেবে।
আর যদি নির্গত রক্ত পার্থক্য করা সম্ভব না হয়- যা কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাহলে সে এ রক্তকে হায়েযের রক্ত মনে করে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত সালাত, সিয়াম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকবে।
হায়েযের নির্ধারিত সময়ের মাঝখানে রক্ত বন্ধ হয়ে পুনরায় দেখা দিলে করণীয় :
কোন মহিলার কোন মাসে একটানা দু’দিন ঋতুস্রাব হয়ে ৩য় দিন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আবার ৪র্থ দিন হায়েযের রক্ত দেখা দিল। এমতাবস্থায় বিশুদ্ধ মতানুযায়ী করণীয় হলো, হায়েযের নিয়মিত সময়ের মধ্যে অল্প সময় রক্ত বন্ধ হলেও তা হায়েয বলে বিবেচিত হবে।
মহিলাদের লজ্জাস্থান দিয়ে সাধারণত ৩ প্রকার রক্ত নির্গত হয়। যথা :
১. হায়েযের রক্ত।
২. নিফাসের রক্ত।
৩. ইস্তিহাযার রক্ত।
হায়েযের রক্ত :
এটা দুর্গন্ধযুক্ত, ঘন ও কালো রঙের রক্ত, যা নির্দিষ্ট সময়ে মহিলাদের জরায়ু থেকে বের হয়। আল্লাহ তা‘আলা বনী আদমের প্রত্যেক নারীর উপর এটা আবশ্যক করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
إِنَّ هٰذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা হায়েযের রক্তকে প্রত্যেক আদম কন্যার জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৬।]
হায়েযের সময়সীমা :
হায়েযের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোন সময়সীমা নেই। সুতরাং প্রত্যেক নারীর হায়েযের নিয়মের উপর তার সময়সীমা নির্ধারিত হবে। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ও বিশ্লেষণ আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহের মধ্যে পাওয়া যায় না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নির্ভরতা নির্দিষ্ট সময়ের উপর নয়, বরং নির্ভরতা হচ্ছে হায়েযের অস্তিত্বের উপর। যা বিদ্যমান থাকা ও না থাকার উপর শরীয়তের বিধানসমূহ সম্পৃক্ত।
হায়েযের শুরু ও শেষ :
১. হায়েযের শুরু বুঝা যায়, সম্ভাব্য সময়ে লজ্জাস্থান থেকে দুর্গন্ধময় ও কালো রক্ত নির্গত হওয়া দ্বারা।
২. হায়েযের শেষ সময় বুঝা যায়, লজ্জাস্থান থেকে সাধারণ রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধের দ্বারা। অর্থাৎ লজ্জাস্থানে তুলা বা ন্যাকড়া প্রবেশ করানোর পর তা শুষ্ক বের হলে হায়েযের সময় শেষ হয়েছে বলে ধরে নিবে।
মাসআলা :
লজ্জাস্থান থেকে রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধ হওয়ার পর সাদা পানি বা হলুদ রঙের কিছু বের হলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। এ অবস্থায় সে সালাত, সিয়াম, সহবাস প্রভৃতি বৈধ কাজ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উম্মে আতিয়্যার হাদীসটি প্রাধান্যযোগ্য। তিনি বলেন,
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
অর্থাৎ রক্তস্রাব হতে পবিত্রতার পর মেটে ও হলুদ রংকে আমরা হায়েয হিসেবে ধর্তব্য মনে করতাম না। [আবু দাউদ, হা/৩০৭; নাসাঈ, ১/১৮৬; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪৭।]
মাসআলা :
কোন মহিলার যদি প্রত্যেক মাসে নিয়মিত ৬ দিন ঋতুস্রাব হয়। কিমত্মু ঘটনাক্রমে কোন কোন মাসে যদি ৭ দিন, ৮ দিন বা ১০ দিন ঋতুস্রাব হয়, তাহলে সে প্রথমে যথাসাধ্য হায়েযের রক্ত ও অন্য রক্তের মাঝে পার্থক্য করার চেষ্টা করবে। এ অবস্থায় যদি দেখে যে লজ্জাস্থান থেকে নির্গত রক্তের রং, গন্ধ ও বৈশিষ্ট্য হায়েযের রক্তের ন্যায়, তাহলে সালাত, সিয়াম ও সহবাস থেকে বিরত থাকবে। আর যদি এ রক্ত হায়েযের রক্তের সাথে না মিলে, তাহলে সে গোসল করে সালাত আদায় করে নেবে।
আর যদি নির্গত রক্ত পার্থক্য করা সম্ভব না হয়- যা কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাহলে সে এ রক্তকে হায়েযের রক্ত মনে করে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত সালাত, সিয়াম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকবে।
হায়েযের নির্ধারিত সময়ের মাঝখানে রক্ত বন্ধ হয়ে পুনরায় দেখা দিলে করণীয় :
কোন মহিলার কোন মাসে একটানা দু’দিন ঋতুস্রাব হয়ে ৩য় দিন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আবার ৪র্থ দিন হায়েযের রক্ত দেখা দিল। এমতাবস্থায় বিশুদ্ধ মতানুযায়ী করণীয় হলো, হায়েযের নিয়মিত সময়ের মধ্যে অল্প সময় রক্ত বন্ধ হলেও তা হায়েয বলে বিবেচিত হবে।
সন্তান প্রসবের কারণে নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত রক্তকে নিফাস বলে।
নিফাসের সময়সীমা :
নিফাসের সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা নেই। সকল ইসলামী বিদ্বানের মতে, ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি কোন নারী নিফাস থেকে পবিত্র হয়, তাহলে সে গোসল করার মাধ্যমে সালাত আদায় ও স্বামীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে।
অধিকাংশ আলিমের অভিমত হলো, নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিন। এরপর গোসল করবে এবং সালাত আদায় করবে- যদিও রক্ত চলমান থাকে। ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন,
وَقَدْ أَجْمَعَ أَهْلُ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -ﷺ - وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ عَلٰى أَنَّ النُّفَسَاءَ تَدَعُ الصَّلَاةَ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا إِلَّا أَنْ تَرَى الطُّهْرَ قَبْلَ ذٰلِكَ فَإِنَّهَا تَغْتَسِلُ وَتُصَلِّى . فَإِذَا رَأَتِ الدَّمَ بَعْدَ الْأَرْبَعِيْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ الْعِلْمِ قَالُوْا لَا تَدَعُ الصَّلَاةَ بَعْدَ الْأَرْبَعِيْنَ وَهُوَ قَوْلُ أَكْثَرِ الْفُقَهَاءِ
অর্থাৎ নবী ﷺ এর সাহাবী ও তাবেঈনসহ পরবর্তী উলামাগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নিফাসগ্রসত্ম মহিলা ৪০ দিন পর্যমত্ম সালাত ত্যাগ করতে পারবে। তবে এর মধ্যে যদি সে রক্ত প্রবাহিত হওয়া থেকে পবিত্র হয়ে যায় তবে সে গোসল করে সালাত আদায় করবে। যদি ৪০ দিনের অধিক সময় পর্যমত্ম রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে তবে অধিকাংশ আলিমের মতামত হচ্ছে সে সালাত আদায় করবে। [তিরমিযী, হা/১৩৯।]
নিফাসের সময়সীমা :
নিফাসের সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা নেই। সকল ইসলামী বিদ্বানের মতে, ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি কোন নারী নিফাস থেকে পবিত্র হয়, তাহলে সে গোসল করার মাধ্যমে সালাত আদায় ও স্বামীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে।
অধিকাংশ আলিমের অভিমত হলো, নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিন। এরপর গোসল করবে এবং সালাত আদায় করবে- যদিও রক্ত চলমান থাকে। ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন,
وَقَدْ أَجْمَعَ أَهْلُ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -ﷺ - وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ عَلٰى أَنَّ النُّفَسَاءَ تَدَعُ الصَّلَاةَ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا إِلَّا أَنْ تَرَى الطُّهْرَ قَبْلَ ذٰلِكَ فَإِنَّهَا تَغْتَسِلُ وَتُصَلِّى . فَإِذَا رَأَتِ الدَّمَ بَعْدَ الْأَرْبَعِيْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ الْعِلْمِ قَالُوْا لَا تَدَعُ الصَّلَاةَ بَعْدَ الْأَرْبَعِيْنَ وَهُوَ قَوْلُ أَكْثَرِ الْفُقَهَاءِ
অর্থাৎ নবী ﷺ এর সাহাবী ও তাবেঈনসহ পরবর্তী উলামাগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নিফাসগ্রসত্ম মহিলা ৪০ দিন পর্যমত্ম সালাত ত্যাগ করতে পারবে। তবে এর মধ্যে যদি সে রক্ত প্রবাহিত হওয়া থেকে পবিত্র হয়ে যায় তবে সে গোসল করে সালাত আদায় করবে। যদি ৪০ দিনের অধিক সময় পর্যমত্ম রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে তবে অধিকাংশ আলিমের মতামত হচ্ছে সে সালাত আদায় করবে। [তিরমিযী, হা/১৩৯।]
১. সালাত আদায় করা :
হায়েয ও নিফাস অবস্থায় ফরয, নফলসহ সকল ধরনের সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে পবিত্র হওয়ার পর ফরয সালাতসমূহের কাযা আদায় না করার ব্যাপারেও বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَعِيْدٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ فَذٰلِكَ نُقْصَانُ دِينِهَا
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? দ্বীনের ক্ষেত্রে এটা তাদের একটা ঘাটতি। [সহীহ বুখারী, হা/১৯৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৮০।]
حَدَّثَتْنِيْ مُعَاذَةُ أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ لِعَائِشَةَ أَتَجْزِيْ إِحْدَانَا صَلَاتَهَا إِذَا طَهُرَتْ فَقَالَتْ أَحَرُوْرِيَّةٌ أَنْتِ كُنَّا نَحِيْضُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فَلَا يَأْمُرُنَا بِه ، أَوْ قَالَتْ فَلَا نَفْعَلُه
মুয়ায (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের জন্য হায়েযকালীন কাযা সালাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে চলবে কি না? আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি কি হারূরিয়্যা? [খারিজীদের একটি দল, যারা ঋতুবতীর জন্য সালাতের কাযা ওয়াজিব মনে করত।] আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় ঋতুবতী হতাম, কিমত্মু তিনি আমাদেরকে সালাত কাযা করার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি বললেন, আমরা কাযা আদায় করতাম না। [সহীহ বুখারী, হা/৩২১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৮৭; আবু দাউদ, হা/২৬২; তিরমিযী, হা/১৩০; নাসাঈ, হা/৩৮২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৪৯।]
২. সিয়াম রাখা :
নারীরা হায়েয ও নিফাসের সময় সিয়াম রাখা বন্ধ রাখবে। তবে রমাযানের সিয়াম পরবর্তীতে কাযা আদায় করে নিবে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হায়েয হলে সিয়াম কাযা করা ও সালাত কাযা না করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৬।]
৩. তাওয়াফ করা :
হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ করা বৈধ নয়। কেননা আয়েশা (রাঃ) হজ্জের সময় ঋতুবতী হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বলেছিলেন, হাজীদের মতো হজ্জের সকল কার্যাদি সম্পাদন করো। তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করো না। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৩৫; দারেমী, হা/১৮৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৯১৪।]
৪. সহবাস করা :
হায়েয অবস্থায় সহবাস করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং হায়েযের সময় তোমরা সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা (মাসিক থেকে) পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
اِصْنَعُوْا كُلَّ شَىْءٍ إِلَّا النِّكَاحَ
অর্থাৎ এ অবস্থায় তোমরা সহবাস ব্যতীত তাদের সাথে সবকিছু করতে পার। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/ ১২৩৭৬]
যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি হায়েয অবস্থায় সহবাস করা হালাল মনে করে, তাহলে সে কাফির ও মুরতাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে যদি কেউ ভুলবশত বা হায়েয হয়নি মনে করে সহবাস করে ফেলে, তাহলে গোনাহ হবে না।
কিন্তু যদি হায়েয হয়েছে জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করে, তাহলে সে কবীরা গোনাহগার হবে এবং তার উপর তাওবা করা আবশ্যক হবে। কিমত্মু কাফফারা আবশ্যক হবে কিনা- এ ব্যাপারে অধিকাংশের অভিমত হলো, তার উপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। কাফফারা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে ইবনে আববাস (রাঃ) হতে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা দুর্বল হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। [যঈফ আবু দাউদ, হা/২৬৪; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪০।]
ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস ব্যতীত সবকিছু বৈধ। মাসরুক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি আয়েশা (রাঃ) কে বলেছিলেন, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। কিমত্মু আপনাকে তা বলতে লজ্জা করে। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তোমার মায়ের মতো এবং তুমি আমার ছেলের মতো। অতঃপর মাসরুক (রাঃ) বললেন, হায়েয অবস্থায় পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের সাথে কীরূপে মেলামেশা করবে? জবাবে তিনি বললেন, লজ্জাস্থান উপভোগ করা ব্যতীত তার সাথে সবকিছু করতে পারবে। [তাফসীরে তাবারানী, ৪/৩৭৮।]
কোন মহিলার হায়েয বন্ধ হওয়ার পর উত্তম হলো সে আগে গোসল করবে; তারপর স্বামী তার সাথে মিলিত হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, فَاِذَا تَطَهَّرْنَ এর অর্থ হলো, যখন তারা পানি দ্বারা পবিত্র হবে তখন তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতের তাফসীর প্রস&&ঙ্গ।]
তালাক :
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া স্বামীর জন্য হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ﴾
হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে তালাক দাও এবং ইদ্দত গণনা করো। (সূরা ত্বালাক- ১)
অর্থাৎ এমন সময় তালাক দিতে হবে, যেন তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই মহিলা ইদ্দত পালন করতে পারে। আর এটা গর্ভাবস্থা অথবা যৌনসম্ভোগহীন পবিত্রাবস্থা ব্যতীত সম্ভব নয়। কেননা যদি হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়া হয়, তাহলে মহিলা প্রাথমিক অবস্থায় ইদ্দত পালন করতে পারবে না। আর যদি যৌনসম্ভোগের পর ঐ তুহুরে (পবিত্রাবস্থায়) তালাক দেয়া হয়, তবে এই মিলনে গর্ভবতী হয়েছে কি না, তা জানা যায় না। ফলে তার ইদ্দত হায়েয ধরা হবে, নাকি সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ধরা হবে- এ বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যায়। তাই বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেয়া স্বামীর প্রতি হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّه طَلَّقَ اِمْرَأَتَه وَهِيَ حَائِضٌ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَسَأَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنْ ذٰلِكَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لِيُمْسِكْهَا حَتّٰى تَطْهُرَ ثُمَّ تَحِيْضَ ثُمَّ تَطْهُرَ ثُمَّ إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ بَعْدُ وَإِنْ شَاءَ طَلَّقَ قَبْلَ أَنْ يَّمَسَّ فَتِلْكَ الْعِدَّةُ الَّتِيْ أَمَرَ اللهُ أَنْ تُطَلَّقَ لَهَا النِّسَاءُ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে একদা তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলেন। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উক্ত বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জানালেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকে আদেশ করো যেন সে তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত স্বীয় স্ত্রীত্বে রাখে। তারপর হায়েয শেষে পুনরায় পবিত্র হওয়ার পর ইচ্ছে করলে রেখে দেবে। অন্যথায় যৌনসম্ভোগের পূর্বে তালাক দেবে। এটাই সেই ইদ্দত, যার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদেরকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৫১; আবু দাউদ, হা/২১৮১; নাসাঈ, হা/৩৩৮৯।]
অতএব কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয় তবে সে গোনাহগার হবে। এমতাবস্থায় তাকে অবশ্যই আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অতঃপর তাকে যে হায়েযের মধ্যে তালাক দিয়েছিল তা থেকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিবে। তারপর ইচ্ছা হলে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী তালাক প্রদান করবে। এরপর যখন পুনরায় হায়েয হতে পবিত্র হবে তখন ইচ্ছা করলে বহাল রাখবে নতুবা যৌনসম্ভোগের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে।
তবে নিম্নের বর্ণিত অবস্থায় হায়েয চলাকালীন সময়ও তালাক দেয়া যাবে :
১. যদি বিবাহের পর মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয় তবে কোন দোষ নেই। কেননা এমতাবস্থায় তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে না।
২. যদি গর্ভাবস্থায় হায়েয হয় তাহলে এমতাবস্থায় তালাক দেয়াতে দোষ নেই। কেননা গর্ভবতী মহিলার ইদ্দতের সময় নির্ধারিত। আর তা হলো সমত্মান প্রসব হওয়া।
হায়েয অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে কোন দোষ নেই। এটা নিষেধ হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নেই। কিমত্মু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত হায়েয অবস্থায় স্বামী তার সাথে মিলিত হতে পারবে না।
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ওয়াজিব :
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করা ওয়াজিব। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ أَبِي حُبَيْشٍ كَانَتْ تُسْتَحَاضُ فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ ذٰلِكِ عِرْقٌ وَلَيْسَتْ بِالْحَيْضَةِ فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশ (রাঃ) এর ইসিত্মহাযা হতো। ফলে তিনি একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, এটা (রগ থেকে আসা) রক্ত; হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েয দেখা দিবে তখন সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়েযের দিনগুলো শেষ হয়ে যাবে তখন সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৭৮২; আবু দাউদ, হা/২৮৮।]
হায়েয ও নিফাস অবস্থায় ফরয, নফলসহ সকল ধরনের সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে পবিত্র হওয়ার পর ফরয সালাতসমূহের কাযা আদায় না করার ব্যাপারেও বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَعِيْدٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ فَذٰلِكَ نُقْصَانُ دِينِهَا
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? দ্বীনের ক্ষেত্রে এটা তাদের একটা ঘাটতি। [সহীহ বুখারী, হা/১৯৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৮০।]
حَدَّثَتْنِيْ مُعَاذَةُ أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ لِعَائِشَةَ أَتَجْزِيْ إِحْدَانَا صَلَاتَهَا إِذَا طَهُرَتْ فَقَالَتْ أَحَرُوْرِيَّةٌ أَنْتِ كُنَّا نَحِيْضُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فَلَا يَأْمُرُنَا بِه ، أَوْ قَالَتْ فَلَا نَفْعَلُه
মুয়ায (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের জন্য হায়েযকালীন কাযা সালাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে চলবে কি না? আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি কি হারূরিয়্যা? [খারিজীদের একটি দল, যারা ঋতুবতীর জন্য সালাতের কাযা ওয়াজিব মনে করত।] আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় ঋতুবতী হতাম, কিমত্মু তিনি আমাদেরকে সালাত কাযা করার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি বললেন, আমরা কাযা আদায় করতাম না। [সহীহ বুখারী, হা/৩২১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৮৭; আবু দাউদ, হা/২৬২; তিরমিযী, হা/১৩০; নাসাঈ, হা/৩৮২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৪৯।]
২. সিয়াম রাখা :
নারীরা হায়েয ও নিফাসের সময় সিয়াম রাখা বন্ধ রাখবে। তবে রমাযানের সিয়াম পরবর্তীতে কাযা আদায় করে নিবে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হায়েয হলে সিয়াম কাযা করা ও সালাত কাযা না করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৬।]
৩. তাওয়াফ করা :
হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ করা বৈধ নয়। কেননা আয়েশা (রাঃ) হজ্জের সময় ঋতুবতী হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বলেছিলেন, হাজীদের মতো হজ্জের সকল কার্যাদি সম্পাদন করো। তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করো না। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৩৫; দারেমী, হা/১৮৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৯১৪।]
৪. সহবাস করা :
হায়েয অবস্থায় সহবাস করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং হায়েযের সময় তোমরা সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা (মাসিক থেকে) পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
اِصْنَعُوْا كُلَّ شَىْءٍ إِلَّا النِّكَاحَ
অর্থাৎ এ অবস্থায় তোমরা সহবাস ব্যতীত তাদের সাথে সবকিছু করতে পার। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/ ১২৩৭৬]
যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি হায়েয অবস্থায় সহবাস করা হালাল মনে করে, তাহলে সে কাফির ও মুরতাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে যদি কেউ ভুলবশত বা হায়েয হয়নি মনে করে সহবাস করে ফেলে, তাহলে গোনাহ হবে না।
কিন্তু যদি হায়েয হয়েছে জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করে, তাহলে সে কবীরা গোনাহগার হবে এবং তার উপর তাওবা করা আবশ্যক হবে। কিমত্মু কাফফারা আবশ্যক হবে কিনা- এ ব্যাপারে অধিকাংশের অভিমত হলো, তার উপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। কাফফারা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে ইবনে আববাস (রাঃ) হতে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা দুর্বল হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। [যঈফ আবু দাউদ, হা/২৬৪; ইবনে মাজাহ, হা/৬৪০।]
ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস ব্যতীত সবকিছু বৈধ। মাসরুক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি আয়েশা (রাঃ) কে বলেছিলেন, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। কিমত্মু আপনাকে তা বলতে লজ্জা করে। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তোমার মায়ের মতো এবং তুমি আমার ছেলের মতো। অতঃপর মাসরুক (রাঃ) বললেন, হায়েয অবস্থায় পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের সাথে কীরূপে মেলামেশা করবে? জবাবে তিনি বললেন, লজ্জাস্থান উপভোগ করা ব্যতীত তার সাথে সবকিছু করতে পারবে। [তাফসীরে তাবারানী, ৪/৩৭৮।]
কোন মহিলার হায়েয বন্ধ হওয়ার পর উত্তম হলো সে আগে গোসল করবে; তারপর স্বামী তার সাথে মিলিত হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, فَاِذَا تَطَهَّرْنَ এর অর্থ হলো, যখন তারা পানি দ্বারা পবিত্র হবে তখন তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতের তাফসীর প্রস&&ঙ্গ।]
তালাক :
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া স্বামীর জন্য হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ﴾
হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে তালাক দাও এবং ইদ্দত গণনা করো। (সূরা ত্বালাক- ১)
অর্থাৎ এমন সময় তালাক দিতে হবে, যেন তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই মহিলা ইদ্দত পালন করতে পারে। আর এটা গর্ভাবস্থা অথবা যৌনসম্ভোগহীন পবিত্রাবস্থা ব্যতীত সম্ভব নয়। কেননা যদি হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়া হয়, তাহলে মহিলা প্রাথমিক অবস্থায় ইদ্দত পালন করতে পারবে না। আর যদি যৌনসম্ভোগের পর ঐ তুহুরে (পবিত্রাবস্থায়) তালাক দেয়া হয়, তবে এই মিলনে গর্ভবতী হয়েছে কি না, তা জানা যায় না। ফলে তার ইদ্দত হায়েয ধরা হবে, নাকি সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ধরা হবে- এ বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যায়। তাই বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেয়া স্বামীর প্রতি হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّه طَلَّقَ اِمْرَأَتَه وَهِيَ حَائِضٌ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَسَأَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنْ ذٰلِكَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لِيُمْسِكْهَا حَتّٰى تَطْهُرَ ثُمَّ تَحِيْضَ ثُمَّ تَطْهُرَ ثُمَّ إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ بَعْدُ وَإِنْ شَاءَ طَلَّقَ قَبْلَ أَنْ يَّمَسَّ فَتِلْكَ الْعِدَّةُ الَّتِيْ أَمَرَ اللهُ أَنْ تُطَلَّقَ لَهَا النِّسَاءُ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে একদা তিনি তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিলেন। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উক্ত বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জানালেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকে আদেশ করো যেন সে তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত স্বীয় স্ত্রীত্বে রাখে। তারপর হায়েয শেষে পুনরায় পবিত্র হওয়ার পর ইচ্ছে করলে রেখে দেবে। অন্যথায় যৌনসম্ভোগের পূর্বে তালাক দেবে। এটাই সেই ইদ্দত, যার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদেরকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৫১; আবু দাউদ, হা/২১৮১; নাসাঈ, হা/৩৩৮৯।]
অতএব কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয় তবে সে গোনাহগার হবে। এমতাবস্থায় তাকে অবশ্যই আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অতঃপর তাকে যে হায়েযের মধ্যে তালাক দিয়েছিল তা থেকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিবে। তারপর ইচ্ছা হলে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী তালাক প্রদান করবে। এরপর যখন পুনরায় হায়েয হতে পবিত্র হবে তখন ইচ্ছা করলে বহাল রাখবে নতুবা যৌনসম্ভোগের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে।
তবে নিম্নের বর্ণিত অবস্থায় হায়েয চলাকালীন সময়ও তালাক দেয়া যাবে :
১. যদি বিবাহের পর মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেয় তবে কোন দোষ নেই। কেননা এমতাবস্থায় তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে না।
২. যদি গর্ভাবস্থায় হায়েয হয় তাহলে এমতাবস্থায় তালাক দেয়াতে দোষ নেই। কেননা গর্ভবতী মহিলার ইদ্দতের সময় নির্ধারিত। আর তা হলো সমত্মান প্রসব হওয়া।
হায়েয অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে কোন দোষ নেই। এটা নিষেধ হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নেই। কিমত্মু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত হায়েয অবস্থায় স্বামী তার সাথে মিলিত হতে পারবে না।
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ওয়াজিব :
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করা ওয়াজিব। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ أَبِي حُبَيْشٍ كَانَتْ تُسْتَحَاضُ فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ ذٰلِكِ عِرْقٌ وَلَيْسَتْ بِالْحَيْضَةِ فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশ (রাঃ) এর ইসিত্মহাযা হতো। ফলে তিনি একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, এটা (রগ থেকে আসা) রক্ত; হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েয দেখা দিবে তখন সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়েযের দিনগুলো শেষ হয়ে যাবে তখন সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৭৮২; আবু দাউদ, হা/২৮৮।]
১. যিকির করা, দরূদ পাঠ করা, তাসবীহ পাঠ করা, দু‘আ পাঠ করা :
হায়েয ও নিফাস অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো মহিলারা করতে পারবে। তারা এ অবস্থায় আল্লাহকে ভুলে যাবে না। বরং যিকির-আযকার করবে, নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। তারা কুরআনের তাফসীর, হাদীসের গ্রন্থ ও অন্যান্য ইসলামী বই-পুসত্মক পড়ে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
২. হায়েয অবস্থায় কুরআন পাঠের বিধান :
অনেক আলিমের মতে হায়েয এবং নিফাসগ্রস্ত মহিলারা মুখে উচ্চারণ করে কুরআন পড়বে না, তবে একান্ত প্রয়োজন হলে পড়তে পারবে। যেমন- শিক্ষিকা কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং ছাত্রীরা কুরআন শিক্ষা করার জন্য হায়েয অবস্থায়ও কুরআন পড়তে পারবে।
তবে এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী হায়েয এবং নিফাস অবস্থায়ও মহিলারা স্বাভাবিকভাবে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন পাঠ করতে পারবে। এমনকি তারা কুরআন স্পর্শও করতে পারবে। কেননা হায়েয অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ মর্মে কোন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও অনেক বিদ্বান হায়েয অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ মনে করেন না।
আল্লামা ইবনে হাযম (রহ.) তাঁর মুহাল্লা গ্রন্থে বলেন, কুরআন তিলাওয়াত, তিলাওয়াতের সিজদা, মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা ও আল্লাহর যিকির করা উত্তম কাজ। যিকিরকারী আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পাবে। এখন কেউ যদি এগুলোকে কোন কোন অবস্থায় বৈধ নয় বলে দাবী করে, তবে সে ক্ষেত্রে তাকে প্রমাণ উপস্থিত করতে হবে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, হায়েযগ্রসত্ম মহিলাকে কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে মূলত কোন সুন্নাহ নেই। [আল ফাতাওয়া মাজমূআতু ইবনুল কাসেম ২৬ খন্ড, ১৯১ পৃঃ।]
একটি হাদীসে এসেছে,
لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِّنَ الْقُرْاٰنِ
অর্থাৎ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত এবং (যার প্রতি গোসল ফরয হয়েছে এমন) নাপাক ব্যক্তি কুরআন থেকে কিছুই পাঠ করবে না। [যঈফ - তিরমিযী, হা/১৩১।]
এ হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে হাদীস বিশারদগণ একমত। ইমাম তিরমিযী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (ইমাম বুখারী রহ.) কে বলতে শুনেছি যে, এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন ইসমাঈল ইবনে আইয়াশ। তিনি হিজায এবং ইরাকবাসীদের থেকে অনেক মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে অনেক দুর্বলতা। শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন, এই হাদীসটি মুনকার তথা পরিত্যাজ্য।
ইমাম বায়হাকী এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, لَيْسَ هٰذَا بِالْقَوِىِّ অর্থাৎ এ হাদীসটি শক্তিশালী নয়। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫৩৫।]
শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে,
وَجَوَّزَ مَالِكٌ لِلْحَائِضِ قِرَاءَةَ الْقُرْاٰنِ ، لِأنَّ زَمَانَ حَيْضُهَا قَدْ يَطُوْلُ ، فَتَنْسَى الْقُرْاٰنَ
ইমাম মালেক (রহ.) হায়েযগ্রসত্ম মহিলার জন্য কুরআন পাঠ করাকে জায়েয বলেছেন। কেননা হায়েযের সময়টি অনেক দীর্ঘায়িত হয়। ফলে সে কুরআন ভুলে যেতে পারে। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে মহিলাদের হায়েয হতো। এতে কুরআন পাঠ করা যদি তাদের প্রতি সালাতের ন্যায় হারাম হতো, তাহলে তিনি নিশ্চয় উম্মতের জন্য তা বর্ণনা করতেন এবং উম্মুল মুমিনীনদেরকে শিক্ষা দিতেন। যেহেতু এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কেউ নিষিদ্ধ বর্ণনা করেননি, সেহেতু এটাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলা যাবে না। যেহেতু হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর যুগে মহিলাদেরকে কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেননি সেহেতু বুঝা গেল যে, তা হারাম বা অবৈধ নয়।
৩. সিজদার আয়াত শ্রবণে সিজদা করা :
ঋতুবতী মহিলার সিজদার আয়াত শ্রবণ করে সিজদা করতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কেননা সালাত ও তিলাওয়াতে সিজদা এক নয়। আর এ সিজদার ক্ষেত্রে পবিত্রতাও শর্ত নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ سَجَدَ بِالنَّجْمِ وَسَجَدَ مَعَهُ الْمُسْلِمُونَ وَالْمُشْرِكُونَ وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা নাজম পড়ে সিজদা দিলেন। এ সময় তার সাথে সকল মুসলিম, মুশরিক ও জিনজাতি সিজদা করেছিল। [সহীহ বুখারী, হা/১০৭১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩৮৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৬৩; তিরমিযী, হা/৫৭৫; মিশকাত, হা/১০২৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/ ৪২৭৫।]
এ হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত শুনে উপস্থিত সবাই সিজদা করেছে। কিমত্মু এ সময় কেউ পবিত্রতা অর্জন করতে গেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। আবার এটাও অসম্ভব যে, তখন সবাই পবিত্র ছিল।
৪. ঋতুবতী মহিলার কোলে মাথা রেখে পুরুষের কুরআন তিলাওয়াত করা :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ وَرَأْسُه فِي حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৪৯; সহীহ মুসলিম, ২৪৬ পৃঃ।]
৫. মসজিদে প্রবেশ করা :
ঋতুবতী মহিলা একামত্ম প্রয়োজনে মসজিদের ভেতর দিয়ে যেতে পারবে এবং প্রয়োজন মিটাতে পারবে। তবে সে মসজিদে অবস্থান করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋতুবতী মহিলাদেরকে ঈদগাহে যেতে বলেছেন, কিমত্মু তাদেরকে সালাত আদায়ের স্থান ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৪; আবু দাউদ, হা/১১৩৯।]
৭. ঋতুবতী মহিলার স্বামীর খেদমত করা :
ঋতুবতী মহিলা তার স্বামীর সেবা করতে পারবে। যেমন- স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া, চুল আঁচড়িয়ে দেয়া, কোথাও বের হওয়ার সময় স্বামীকে প্রসত্মুত করে দেয়া ইত্যাদি। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথা আঁচড়িয়ে দিতাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭।]
৮. ঋতুবতী মহিলার স্বামীর সাথে একই লেপের মধ্যে ঘুমানো :
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েয দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পড়ে নিলাম। তিনি বললেন, তোমার কি হায়েয দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমি তাঁর সাথে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৮;সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯।]
হায়েয ও নিফাস অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো মহিলারা করতে পারবে। তারা এ অবস্থায় আল্লাহকে ভুলে যাবে না। বরং যিকির-আযকার করবে, নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। তারা কুরআনের তাফসীর, হাদীসের গ্রন্থ ও অন্যান্য ইসলামী বই-পুসত্মক পড়ে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
২. হায়েয অবস্থায় কুরআন পাঠের বিধান :
অনেক আলিমের মতে হায়েয এবং নিফাসগ্রস্ত মহিলারা মুখে উচ্চারণ করে কুরআন পড়বে না, তবে একান্ত প্রয়োজন হলে পড়তে পারবে। যেমন- শিক্ষিকা কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং ছাত্রীরা কুরআন শিক্ষা করার জন্য হায়েয অবস্থায়ও কুরআন পড়তে পারবে।
তবে এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী হায়েয এবং নিফাস অবস্থায়ও মহিলারা স্বাভাবিকভাবে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন পাঠ করতে পারবে। এমনকি তারা কুরআন স্পর্শও করতে পারবে। কেননা হায়েয অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ মর্মে কোন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও অনেক বিদ্বান হায়েয অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ মনে করেন না।
আল্লামা ইবনে হাযম (রহ.) তাঁর মুহাল্লা গ্রন্থে বলেন, কুরআন তিলাওয়াত, তিলাওয়াতের সিজদা, মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা ও আল্লাহর যিকির করা উত্তম কাজ। যিকিরকারী আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পাবে। এখন কেউ যদি এগুলোকে কোন কোন অবস্থায় বৈধ নয় বলে দাবী করে, তবে সে ক্ষেত্রে তাকে প্রমাণ উপস্থিত করতে হবে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, হায়েযগ্রসত্ম মহিলাকে কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে মূলত কোন সুন্নাহ নেই। [আল ফাতাওয়া মাজমূআতু ইবনুল কাসেম ২৬ খন্ড, ১৯১ পৃঃ।]
একটি হাদীসে এসেছে,
لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِّنَ الْقُرْاٰنِ
অর্থাৎ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত এবং (যার প্রতি গোসল ফরয হয়েছে এমন) নাপাক ব্যক্তি কুরআন থেকে কিছুই পাঠ করবে না। [যঈফ - তিরমিযী, হা/১৩১।]
এ হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে হাদীস বিশারদগণ একমত। ইমাম তিরমিযী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (ইমাম বুখারী রহ.) কে বলতে শুনেছি যে, এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন ইসমাঈল ইবনে আইয়াশ। তিনি হিজায এবং ইরাকবাসীদের থেকে অনেক মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে অনেক দুর্বলতা। শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন, এই হাদীসটি মুনকার তথা পরিত্যাজ্য।
ইমাম বায়হাকী এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, لَيْسَ هٰذَا بِالْقَوِىِّ অর্থাৎ এ হাদীসটি শক্তিশালী নয়। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫৩৫।]
শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে,
وَجَوَّزَ مَالِكٌ لِلْحَائِضِ قِرَاءَةَ الْقُرْاٰنِ ، لِأنَّ زَمَانَ حَيْضُهَا قَدْ يَطُوْلُ ، فَتَنْسَى الْقُرْاٰنَ
ইমাম মালেক (রহ.) হায়েযগ্রসত্ম মহিলার জন্য কুরআন পাঠ করাকে জায়েয বলেছেন। কেননা হায়েযের সময়টি অনেক দীর্ঘায়িত হয়। ফলে সে কুরআন ভুলে যেতে পারে। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে মহিলাদের হায়েয হতো। এতে কুরআন পাঠ করা যদি তাদের প্রতি সালাতের ন্যায় হারাম হতো, তাহলে তিনি নিশ্চয় উম্মতের জন্য তা বর্ণনা করতেন এবং উম্মুল মুমিনীনদেরকে শিক্ষা দিতেন। যেহেতু এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কেউ নিষিদ্ধ বর্ণনা করেননি, সেহেতু এটাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলা যাবে না। যেহেতু হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর যুগে মহিলাদেরকে কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেননি সেহেতু বুঝা গেল যে, তা হারাম বা অবৈধ নয়।
৩. সিজদার আয়াত শ্রবণে সিজদা করা :
ঋতুবতী মহিলার সিজদার আয়াত শ্রবণ করে সিজদা করতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কেননা সালাত ও তিলাওয়াতে সিজদা এক নয়। আর এ সিজদার ক্ষেত্রে পবিত্রতাও শর্ত নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ سَجَدَ بِالنَّجْمِ وَسَجَدَ مَعَهُ الْمُسْلِمُونَ وَالْمُشْرِكُونَ وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা নাজম পড়ে সিজদা দিলেন। এ সময় তার সাথে সকল মুসলিম, মুশরিক ও জিনজাতি সিজদা করেছিল। [সহীহ বুখারী, হা/১০৭১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩৮৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৬৩; তিরমিযী, হা/৫৭৫; মিশকাত, হা/১০২৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/ ৪২৭৫।]
এ হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত শুনে উপস্থিত সবাই সিজদা করেছে। কিমত্মু এ সময় কেউ পবিত্রতা অর্জন করতে গেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। আবার এটাও অসম্ভব যে, তখন সবাই পবিত্র ছিল।
৪. ঋতুবতী মহিলার কোলে মাথা রেখে পুরুষের কুরআন তিলাওয়াত করা :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ وَرَأْسُه فِي حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৪৯; সহীহ মুসলিম, ২৪৬ পৃঃ।]
৫. মসজিদে প্রবেশ করা :
ঋতুবতী মহিলা একামত্ম প্রয়োজনে মসজিদের ভেতর দিয়ে যেতে পারবে এবং প্রয়োজন মিটাতে পারবে। তবে সে মসজিদে অবস্থান করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋতুবতী মহিলাদেরকে ঈদগাহে যেতে বলেছেন, কিমত্মু তাদেরকে সালাত আদায়ের স্থান ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৪; আবু দাউদ, হা/১১৩৯।]
৭. ঋতুবতী মহিলার স্বামীর খেদমত করা :
ঋতুবতী মহিলা তার স্বামীর সেবা করতে পারবে। যেমন- স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া, চুল আঁচড়িয়ে দেয়া, কোথাও বের হওয়ার সময় স্বামীকে প্রসত্মুত করে দেয়া ইত্যাদি। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথা আঁচড়িয়ে দিতাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭।]
৮. ঋতুবতী মহিলার স্বামীর সাথে একই লেপের মধ্যে ঘুমানো :
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েয দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পড়ে নিলাম। তিনি বললেন, তোমার কি হায়েয দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমি তাঁর সাথে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৮;সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯।]
হায়েয ও নিফাসের সময় ছাড়া অন্য সময় প্রবাহিত রক্তস্রাবকে ইস্তিহাযা বলে। এটা তাদের অভ্যাসগত রক্ত প্রবাহ নয় বরং এটা বিচ্ছিন্ন রক্তপাত। অন্য ভাষায় এটাকে রক্তক্ষরণও বলে।
ইস্তিহাযার সময়সীমা :
ইসিত্মহাযার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কারণ এটা রোগজনিত বিষয়। কার কত দিন বহাল থাকে তার কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
ইসিত্মহাযা যদি হায়েয ও নিফাসের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে করণীয় :
এ ধরনের নারীর চারটি অবস্থা হতে পারে।
১. কোন মহিলার ঋতুস্রাবের সময়সীমা ও অভ্যাস জানা থাকলে সে ঐ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে ধরে নিবে এবং পরবর্তী সময় প্রবাহিত রক্তকে ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ إِنَّ أُمَّ حَبِيْبَةَ سَأَلَتْ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الدَّمِ فَقَالَتْ عَائِشَةُ رَأَيْتُ مِرْكَنَهَا مَلَاٰنَ دَمًا فَقَالَ لَهَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَمْكُثِيْ قَدْرَ مَا كَانَتْ تَحْبِسُكِ حَيْضَتُكِ ثُمَّ اغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এরপর আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তার পাত্র দেখেছি রক্তে পরিপূর্ণ। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার হায়েয যে কয়দিন হয়, সে কয়দিন পরিমাণ তুমি অপেক্ষা করো। তারপর গোসল করে ফেলো এবং সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯০১।]
২. কোন মহিলার যদি ঋতুস্রাবের অভ্যাস বা সময়সীমা নির্ধারিত না থাকে আর উক্ত মহিলা হায়েযের রক্ত ও ইসিত্মহাযার রক্তের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে তাহলে হায়েযের রক্তের সময়কে হায়েয ধরবে এবং বাকী সময়গুলো ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّي امْرَأَةٌ أُسْتَحَاضُ فَلَا أَطْهُرُ أَفَأَدَعُ الصَّلَاةَ فَقَالَ : َلَا إِنَّمَا ذٰلِكِ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالْحَيْضَةِ فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবূ হুবাইশ (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারী। আমি কখনো এ রোগ থেকে মুক্ত হই না। তাই আমি সালাত আদায় করা কি ছেড়ে দিব? রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, না- তুমি সালাত আদায় করা ছাড়বে না। কেননা, এটা হায়েয না বরং এটি শিরা থেকে নিঃসৃত রক্ত। তাই যখন হায়েয দেখা দিবে কেবল তখনই সালাত আদায় করবে না। আর যখন হায়েয ভালো হয়ে যাবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলে গোসল করে পবিত্র হয়ে সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪০।]
৩. কোন মেয়ে যদি মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ইসিত্মহাযা রুগে আক্রামত্ম হয় তাহলে এমতাবস্থায় সে অন্যান্য মহিলাদের স্বাভাবিক হায়েযের সময়সীমাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করবে। যেমন- ৬ দিন বা ৭ দিন। আর এর পরবর্তী সময়ের রক্তকে ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
৪. যে মহিলা তার ঋতুস্রাবের সময়সীমা বা অভ্যাসের কথা ভুলে গেছে এবং হায়েযের রক্ত ও ঋতুস্রাবের রক্তের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না তার বিধানও উপরোক্ত বিধানের মতোই হবে। অর্থাৎ সে প্রতি মাসের ৬ থেকে ৭ দিন হায়েয হিসেবে গণ্য করবে এবং বাকী দিনগুলো ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে। যেমন- হামনা বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর ইসিত্মহাযা হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন,
فَتَحَيَّضِىْ سِتَّةَ أَيَّامٍ أَوْ سَبْعَةَ أَيَّامٍ فِى عِلْمِ اللهِ ثُمَّ اغْتَسِلِىْ حَتّٰى إِذَا رَأَيْتِ أَنَّكِ قَدْ طَهُرْتِ وَاسْتَنْقَأْتِ فَصَلِّىْ ثَلَاثًا وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً أَوْ أَرْبَعًا وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً وَأَيَّامَهَا وَصُوْمِىْ فَإِنَّ ذٰلِكَ يُجْزِئُكِ وَكَذٰلِكَ فَافْعَلِىْ فِى كُلِّ شَهْرٍ كَمَا تَحِيْضُ النِّسَاءُ وَكَمَا يَطْهُرْنَ مِيْقَاتَ حَيْضِهِنَّ وَطُهْرِهِنَّ
অর্থাৎ (এ অবস্থায়) তুমি প্রতি মাসের ৬ বা ৭ দিন হায়েয হিসেবে গণ্য করবে। অতঃপর গোসল করবে এবং যখন বুঝতে পারবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ, তখন তুমি প্রত্যেক মাসের ২৩/২৪ দিন নিয়মিতভাবে সালাত আদায় করবে এবং সিয়াম পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। তুমি প্রত্যেক মাসে এরূপ করবে, যেরূপ অন্যান্য মহিলারা হায়েয হতে পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে করে থাকে। [আবু দাউদ, হা/২৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৬২২; তিরমিযী, হা/২০৫।]
ইস্তিহাযার সময়সীমা :
ইসিত্মহাযার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কারণ এটা রোগজনিত বিষয়। কার কত দিন বহাল থাকে তার কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
ইসিত্মহাযা যদি হায়েয ও নিফাসের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে করণীয় :
এ ধরনের নারীর চারটি অবস্থা হতে পারে।
১. কোন মহিলার ঋতুস্রাবের সময়সীমা ও অভ্যাস জানা থাকলে সে ঐ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে ধরে নিবে এবং পরবর্তী সময় প্রবাহিত রক্তকে ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ إِنَّ أُمَّ حَبِيْبَةَ سَأَلَتْ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الدَّمِ فَقَالَتْ عَائِشَةُ رَأَيْتُ مِرْكَنَهَا مَلَاٰنَ دَمًا فَقَالَ لَهَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَمْكُثِيْ قَدْرَ مَا كَانَتْ تَحْبِسُكِ حَيْضَتُكِ ثُمَّ اغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এরপর আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তার পাত্র দেখেছি রক্তে পরিপূর্ণ। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার হায়েয যে কয়দিন হয়, সে কয়দিন পরিমাণ তুমি অপেক্ষা করো। তারপর গোসল করে ফেলো এবং সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯০১।]
২. কোন মহিলার যদি ঋতুস্রাবের অভ্যাস বা সময়সীমা নির্ধারিত না থাকে আর উক্ত মহিলা হায়েযের রক্ত ও ইসিত্মহাযার রক্তের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে তাহলে হায়েযের রক্তের সময়কে হায়েয ধরবে এবং বাকী সময়গুলো ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّي امْرَأَةٌ أُسْتَحَاضُ فَلَا أَطْهُرُ أَفَأَدَعُ الصَّلَاةَ فَقَالَ : َلَا إِنَّمَا ذٰلِكِ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالْحَيْضَةِ فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবূ হুবাইশ (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারী। আমি কখনো এ রোগ থেকে মুক্ত হই না। তাই আমি সালাত আদায় করা কি ছেড়ে দিব? রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, না- তুমি সালাত আদায় করা ছাড়বে না। কেননা, এটা হায়েয না বরং এটি শিরা থেকে নিঃসৃত রক্ত। তাই যখন হায়েয দেখা দিবে কেবল তখনই সালাত আদায় করবে না। আর যখন হায়েয ভালো হয়ে যাবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলে গোসল করে পবিত্র হয়ে সালাত আদায় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪০।]
৩. কোন মেয়ে যদি মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ইসিত্মহাযা রুগে আক্রামত্ম হয় তাহলে এমতাবস্থায় সে অন্যান্য মহিলাদের স্বাভাবিক হায়েযের সময়সীমাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করবে। যেমন- ৬ দিন বা ৭ দিন। আর এর পরবর্তী সময়ের রক্তকে ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে।
৪. যে মহিলা তার ঋতুস্রাবের সময়সীমা বা অভ্যাসের কথা ভুলে গেছে এবং হায়েযের রক্ত ও ঋতুস্রাবের রক্তের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না তার বিধানও উপরোক্ত বিধানের মতোই হবে। অর্থাৎ সে প্রতি মাসের ৬ থেকে ৭ দিন হায়েয হিসেবে গণ্য করবে এবং বাকী দিনগুলো ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য করবে। যেমন- হামনা বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর ইসিত্মহাযা হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন,
فَتَحَيَّضِىْ سِتَّةَ أَيَّامٍ أَوْ سَبْعَةَ أَيَّامٍ فِى عِلْمِ اللهِ ثُمَّ اغْتَسِلِىْ حَتّٰى إِذَا رَأَيْتِ أَنَّكِ قَدْ طَهُرْتِ وَاسْتَنْقَأْتِ فَصَلِّىْ ثَلَاثًا وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً أَوْ أَرْبَعًا وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً وَأَيَّامَهَا وَصُوْمِىْ فَإِنَّ ذٰلِكَ يُجْزِئُكِ وَكَذٰلِكَ فَافْعَلِىْ فِى كُلِّ شَهْرٍ كَمَا تَحِيْضُ النِّسَاءُ وَكَمَا يَطْهُرْنَ مِيْقَاتَ حَيْضِهِنَّ وَطُهْرِهِنَّ
অর্থাৎ (এ অবস্থায়) তুমি প্রতি মাসের ৬ বা ৭ দিন হায়েয হিসেবে গণ্য করবে। অতঃপর গোসল করবে এবং যখন বুঝতে পারবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ, তখন তুমি প্রত্যেক মাসের ২৩/২৪ দিন নিয়মিতভাবে সালাত আদায় করবে এবং সিয়াম পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। তুমি প্রত্যেক মাসে এরূপ করবে, যেরূপ অন্যান্য মহিলারা হায়েয হতে পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে করে থাকে। [আবু দাউদ, হা/২৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৬২২; তিরমিযী, হা/২০৫।]
ইসিত্মহাযাগ্রসত্ম মহিলার হুকুম স্বাভাবিক মহিলার মতোই। এ সময়
১. সে সালাত আদায় করবে।
২. সিয়াম পালন করবে।
৩. স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারবে।
৪. ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীর জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে তাঁর কোন এক স্ত্রী ইতিকাফ করছিলেন। যখন তিনি রক্ত ও হলদে পানি বের হতে দেখতেন তখন তিনি নীচে একটা পাত্র বসিয়ে রাখতেন এবং সে অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩১০; আবু দাউদ, হা/২৪৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫০৪২; বায়হাকী, হা/১৪৫৬।]
৫. ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীর প্রত্যেক সালাতে অযু করা উত্তম। আর সে যদি গোসল করতে সক্ষম হয় তাহলে আরো উত্তম। উম্মে হাবীবা (রাঃ) ৭ বছর যাবৎ ইস্তিহাযা রোগে ভুগছিলেন। ফলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন। অতঃপর বললেন, এটি শিরা থেকে নিঃসৃত রক্ত। ফলে তিনি প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৬২।]
ইসিত্মহাযাগ্রসত্ম মহিলা যখন সালাত আদায় করতে চাইবে তখন সে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধবে; তারপর অযু করে সালাত আদায় করবে। এ অযু দ্বারা ঐ ওয়াক্তে ফরয-নফল যা ইচ্ছা আদায় করতে পারবে।
১. সে সালাত আদায় করবে।
২. সিয়াম পালন করবে।
৩. স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারবে।
৪. ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীর জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে তাঁর কোন এক স্ত্রী ইতিকাফ করছিলেন। যখন তিনি রক্ত ও হলদে পানি বের হতে দেখতেন তখন তিনি নীচে একটা পাত্র বসিয়ে রাখতেন এবং সে অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩১০; আবু দাউদ, হা/২৪৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫০৪২; বায়হাকী, হা/১৪৫৬।]
৫. ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীর প্রত্যেক সালাতে অযু করা উত্তম। আর সে যদি গোসল করতে সক্ষম হয় তাহলে আরো উত্তম। উম্মে হাবীবা (রাঃ) ৭ বছর যাবৎ ইস্তিহাযা রোগে ভুগছিলেন। ফলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন। অতঃপর বললেন, এটি শিরা থেকে নিঃসৃত রক্ত। ফলে তিনি প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৬২।]
ইসিত্মহাযাগ্রসত্ম মহিলা যখন সালাত আদায় করতে চাইবে তখন সে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধবে; তারপর অযু করে সালাত আদায় করবে। এ অযু দ্বারা ঐ ওয়াক্তে ফরয-নফল যা ইচ্ছা আদায় করতে পারবে।
১. গর্ভবতীর সাধারণত ঋতুস্রাব আসে না। এই ঋতুস্রাব গর্ভজাত সন্তানের জন্য খাদ্য হিসেবে কাজ করে। কিমত্মু কিছু কিছু মহিলার গর্ভধারণের সময়ও ঋতুস্রাব চলতে দেখা যায়। এই ঋতুস্রাবও প্রকৃত ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভাবস্থার কারণে তার ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব পড়েনি।
গর্ভধারিণীর রক্ত দু’ধরনের। এক ধরনের রক্ত ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে। আর তা হচ্ছে, যেটা এখনও চলছে, যেমনিভাবে গর্ভধারণের পূর্বেও চলছিল। এ ক্ষেত্রে ঐ রক্ত যদি রং, গন্ধ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে হায়েযের রক্তের সাথে মিলে যায় এবং নিয়মিত সময়ের মধ্যে হয় তাহলে এটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।
আরেক ধরনের রক্ত গর্ভধারিণীর নিকট হঠাৎ আসে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে হোক বা কোন কিছু বহনের কারণে হোক অথবা কোন কিছু থেকে পড়ে গিয়ে হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। যদি গর্ভবতীদের নির্গত এ রক্তের বৈশিষ্ট্য হায়েযের রক্তের সাথে না মিলে তবে সেটা ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য হবে। হায়েয অবস্থায় তার উপর যেসব কাজ নিষিদ্ধ এমতাবস্থায় সেগুলো তার উপর নিষিদ্ধ হবে না।
২. গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায় এবং তার সাথে প্রসব বেদনা থাকে তাহলে তা ইস্তিহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
৩. ঋতুবতী নারী আসরের সময় পবিত্র হলে তাকে কেবল আসরের সালাত আদায় করতে হবে। কেননা তার উপর যোহরের সালাত ওয়াজিব হওয়ার দলীল নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক‘আত পেল সে পুরো আসরের সালাত পেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৩, ৬০৮।]
৪. অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি যোহরের সালাতের সময় শুরু হওয়ার পর ঋতুবতী হয়, তাহলে তাকে কেবল যোহরের সালাতের কাযা আদায় করতে হবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ এশার সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে কেবল এশার সালাত আদায় করতে হবে।
৫. কোন মহিলা রোযা থাকা অবস্থায় যদি তার ঋতুর রক্ত আসে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. ফজরের পরপরই কোন মহিলা ঋতুস্রাবমুক্ত হলে সেদিনের রোযা তার জন্য শুদ্ধ নয়। ঐ দিনের বাকী অংশে সে খানাপিনা থেকে বিরত থাক বা না থাক তাকে পরবর্তীতে ঐ দিনের কাযা আদায় করতেই হবে।
৭. ঋতুবতী মহিলা যদি ফজরের এক মিনিট আগে হলেও নিশ্চিতভাবে ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত হয়, তাহলে রমাযান মাস হলে তাকে ঐ দিনের রোযা আদায় করতে হবে এবং তাকে কাযা করতে হবে না। ফজরের পূর্বে গোসল করার সুযোগ না পেলেও সমস্যা নেই। যেমনিভাবে কোন পুরুষ সহবাস জনিত কারণে অথবা স্বপ্নদোষের কারণে যদি অপবিত্র থাকে এবং ঐ অবস্থায় সাহরী করে নেয়, তাহলে ফজরের আগে গোসল না করলেও তার রোযা শুদ্ধ হবে।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সহবাসজনিত কারণে ফজরের সময় আরম্ভ হওয়ার পর গোসল করতেন এবং রোযা রাখতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৯৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৫, ১১০৯।]
৮. সন্তান প্রসবকারিণী নারী ৪০ দিনের আগে যখনই পবিত্র হবে তখনই তার উপর রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে- যদি তখন রমাযান মাস চলে। অনুরূপভাবে তার উপর সালাত আদায়ও ওয়াজিব হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করাও বৈধ হবে।
৯. কোন মহিলা যদি রক্ত দেখতে পায় কিমত্মু সে নিশ্চিত নয় যে, সেটা ঋতুস্রাবের রক্ত। তাহলে তার ঐ দিনের রোযা শুদ্ধ হবে।
গর্ভধারিণীর রক্ত দু’ধরনের। এক ধরনের রক্ত ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে। আর তা হচ্ছে, যেটা এখনও চলছে, যেমনিভাবে গর্ভধারণের পূর্বেও চলছিল। এ ক্ষেত্রে ঐ রক্ত যদি রং, গন্ধ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে হায়েযের রক্তের সাথে মিলে যায় এবং নিয়মিত সময়ের মধ্যে হয় তাহলে এটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।
আরেক ধরনের রক্ত গর্ভধারিণীর নিকট হঠাৎ আসে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে হোক বা কোন কিছু বহনের কারণে হোক অথবা কোন কিছু থেকে পড়ে গিয়ে হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। যদি গর্ভবতীদের নির্গত এ রক্তের বৈশিষ্ট্য হায়েযের রক্তের সাথে না মিলে তবে সেটা ইসিত্মহাযা হিসেবে গণ্য হবে। হায়েয অবস্থায় তার উপর যেসব কাজ নিষিদ্ধ এমতাবস্থায় সেগুলো তার উপর নিষিদ্ধ হবে না।
২. গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায় এবং তার সাথে প্রসব বেদনা থাকে তাহলে তা ইস্তিহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
৩. ঋতুবতী নারী আসরের সময় পবিত্র হলে তাকে কেবল আসরের সালাত আদায় করতে হবে। কেননা তার উপর যোহরের সালাত ওয়াজিব হওয়ার দলীল নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক‘আত পেল সে পুরো আসরের সালাত পেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৩, ৬০৮।]
৪. অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি যোহরের সালাতের সময় শুরু হওয়ার পর ঋতুবতী হয়, তাহলে তাকে কেবল যোহরের সালাতের কাযা আদায় করতে হবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ এশার সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে কেবল এশার সালাত আদায় করতে হবে।
৫. কোন মহিলা রোযা থাকা অবস্থায় যদি তার ঋতুর রক্ত আসে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. ফজরের পরপরই কোন মহিলা ঋতুস্রাবমুক্ত হলে সেদিনের রোযা তার জন্য শুদ্ধ নয়। ঐ দিনের বাকী অংশে সে খানাপিনা থেকে বিরত থাক বা না থাক তাকে পরবর্তীতে ঐ দিনের কাযা আদায় করতেই হবে।
৭. ঋতুবতী মহিলা যদি ফজরের এক মিনিট আগে হলেও নিশ্চিতভাবে ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত হয়, তাহলে রমাযান মাস হলে তাকে ঐ দিনের রোযা আদায় করতে হবে এবং তাকে কাযা করতে হবে না। ফজরের পূর্বে গোসল করার সুযোগ না পেলেও সমস্যা নেই। যেমনিভাবে কোন পুরুষ সহবাস জনিত কারণে অথবা স্বপ্নদোষের কারণে যদি অপবিত্র থাকে এবং ঐ অবস্থায় সাহরী করে নেয়, তাহলে ফজরের আগে গোসল না করলেও তার রোযা শুদ্ধ হবে।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সহবাসজনিত কারণে ফজরের সময় আরম্ভ হওয়ার পর গোসল করতেন এবং রোযা রাখতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৯৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৫, ১১০৯।]
৮. সন্তান প্রসবকারিণী নারী ৪০ দিনের আগে যখনই পবিত্র হবে তখনই তার উপর রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে- যদি তখন রমাযান মাস চলে। অনুরূপভাবে তার উপর সালাত আদায়ও ওয়াজিব হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করাও বৈধ হবে।
৯. কোন মহিলা যদি রক্ত দেখতে পায় কিমত্মু সে নিশ্চিত নয় যে, সেটা ঋতুস্রাবের রক্ত। তাহলে তার ঐ দিনের রোযা শুদ্ধ হবে।
সালাত সর্বকালীন ইবাদাত :
সালাত এবং যাকাত সকল নবীর যুগে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ﴾
আমি ওহীর মাধ্যমে সকল নবীদেরকে ভালো কাজ করার, সালাত কায়েম করার ও যাকাত আদায় করার আদেশ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পরিবারকে সালাতের দাওয়াত দিতেন :
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا ‐ - وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا﴾
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى ‐ - اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ﴾
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
লুকমান (আঃ) তাঁর ছেলেকে সালাতের অসীয়ত করেছিলেন :
﴿يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ﴾
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুকমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) সারা জীবন সালাতের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
﴿قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا - وَّجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকিনা কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩১)
বনী ইসরাঈল ও আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
﴿وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِي الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ﴾
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আললাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে আর তোমরা ছিলে বিমুখ। (সূরা বাকারা- ৮৩)
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর উম্মতের উপরও সালাতের বিধান দেয়া হয়েছে :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথমাংশে সালাত কায়েম করো। অবশ্যই সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। এটা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।
(সূরা হূদ- ১১৪)
মহিলাদেরকেও পৃথকভাবে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
﴿وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ﴾
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং পূর্বের অন্ধকার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না; তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
উপরের এসব কুরআনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে যে, সালাত সর্বযুগে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদাত ছিল।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় হলো সালাত কায়েম করা :
﴿اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ -‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তারাই সত্যিকার ঈমানদার। তাদের রবের নিকট তাদের জন্য অনেক মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা রয়েছে। (সূরা আনফাল- ৩, ৪)
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা কিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায় ব্যক্তির ঈমান আনা সত্য কি না। যদি সে সালাত আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সে সত্যিই ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা- ১৫৩)
সকল কাজেই আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। আর সে সাহায্য লাভের মাধ্যম হলো ধৈর্য ও সালাত।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِىُّ ﷺ اِذَا حَزَبَهٗ اَمْرٌ صَلّٰى
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তিনি যখনই কোন সমস্যায় পড়তেন তখনই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। [আবু দাঊদ, হা/১৩২১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৯১৩; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩২; মিশকাত, হা/১৩২৫।]
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ﴾
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা তাঁকে নানা ধরনের কষ্ট দিত। তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত। এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
﴿كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক- ১৯)
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - قَالَ : اَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَّبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَاَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় যখন সে সিজদার মধ্যে থাকে। অতএব তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১১; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯২৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৭; মিশকাত, হা/৮৯৪।]
সালাতের মাধ্যমে রুযীতে বরকত হয় :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَ لُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى﴾
আর তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, রিযিক আমিই দেব। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে কেন্দ্র করে তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদাতের দিকে উৎসাহিত করেছেন। আর বান্দা যখন সালাত ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করে, তখন তার রুযী-রোযগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দেন।
সালাত শরীয়তের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
সূরা মু’মিনূন এর শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। সূরা মা‘আরিজের ২২-৩৪ আয়াত পর্যন্ত একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
সালাত মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে :
﴿اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ﴾
ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশলীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। সালাতের চাহিদাও এটাই। আর সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। সুতরাং যদি কেউ জানতে চায় যে, তার সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না, তাহলে তার লক্ষ্য করা উচিত যে, তার সালাত তাকে কতটুকু পাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছে। যদি দেখা যায় যে, সে সালাতের ফলে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে তার সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
সালাত আদায়করীরাই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করবে :
﴿قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى﴾
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আলা- ১৪, ১৫)
সালাত এবং যাকাত সকল নবীর যুগে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ﴾
আমি ওহীর মাধ্যমে সকল নবীদেরকে ভালো কাজ করার, সালাত কায়েম করার ও যাকাত আদায় করার আদেশ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পরিবারকে সালাতের দাওয়াত দিতেন :
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا ‐ - وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا﴾
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى ‐ - اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ﴾
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
লুকমান (আঃ) তাঁর ছেলেকে সালাতের অসীয়ত করেছিলেন :
﴿يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ﴾
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুকমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) সারা জীবন সালাতের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
﴿قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا - وَّجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকিনা কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩১)
বনী ইসরাঈল ও আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
﴿وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِي الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ﴾
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আললাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে আর তোমরা ছিলে বিমুখ। (সূরা বাকারা- ৮৩)
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর উম্মতের উপরও সালাতের বিধান দেয়া হয়েছে :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথমাংশে সালাত কায়েম করো। অবশ্যই সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। এটা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।
(সূরা হূদ- ১১৪)
মহিলাদেরকেও পৃথকভাবে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
﴿وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ﴾
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং পূর্বের অন্ধকার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না; তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
উপরের এসব কুরআনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে যে, সালাত সর্বযুগে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদাত ছিল।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় হলো সালাত কায়েম করা :
﴿اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ -‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তারাই সত্যিকার ঈমানদার। তাদের রবের নিকট তাদের জন্য অনেক মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা রয়েছে। (সূরা আনফাল- ৩, ৪)
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা কিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায় ব্যক্তির ঈমান আনা সত্য কি না। যদি সে সালাত আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সে সত্যিই ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা- ১৫৩)
সকল কাজেই আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। আর সে সাহায্য লাভের মাধ্যম হলো ধৈর্য ও সালাত।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِىُّ ﷺ اِذَا حَزَبَهٗ اَمْرٌ صَلّٰى
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তিনি যখনই কোন সমস্যায় পড়তেন তখনই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। [আবু দাঊদ, হা/১৩২১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৯১৩; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩২; মিশকাত, হা/১৩২৫।]
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ﴾
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা তাঁকে নানা ধরনের কষ্ট দিত। তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত। এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
﴿كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক- ১৯)
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - قَالَ : اَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَّبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَاَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় যখন সে সিজদার মধ্যে থাকে। অতএব তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১১; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯২৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৭; মিশকাত, হা/৮৯৪।]
সালাতের মাধ্যমে রুযীতে বরকত হয় :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَ لُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى﴾
আর তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, রিযিক আমিই দেব। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে কেন্দ্র করে তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদাতের দিকে উৎসাহিত করেছেন। আর বান্দা যখন সালাত ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করে, তখন তার রুযী-রোযগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দেন।
সালাত শরীয়তের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
সূরা মু’মিনূন এর শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। সূরা মা‘আরিজের ২২-৩৪ আয়াত পর্যন্ত একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
সালাত মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে :
﴿اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ﴾
ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশলীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। সালাতের চাহিদাও এটাই। আর সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। সুতরাং যদি কেউ জানতে চায় যে, তার সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না, তাহলে তার লক্ষ্য করা উচিত যে, তার সালাত তাকে কতটুকু পাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছে। যদি দেখা যায় যে, সে সালাতের ফলে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে তার সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
সালাত আদায়করীরাই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করবে :
﴿قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى﴾
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আলা- ১৪, ১৫)
সালাত ইসলামের দ্বিতীয় মূল স্তম্ভ :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ পালন করা এবং (৫) রমাযান মাসে রোযা রাখা। [সহীহ বুখারী, হা/৮, সহীহ মুসলিম, হা/১২১; তিরমিযী, হা/২৬০৯; নাসাঈ, হা/৫০০১।]
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে :
عَنْ حُرَيْثِ بْنِ قَبِيْصَةَ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِيْنَةَ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ يَسِّرْ لِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا . قَالَ : فَجَلَسْتُ اِلٰى اَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ : اِنِّىْ سَاَلْتُ اللهَ اَنْ يَّرْزُقَنِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا فَحَدِّثْنِىْ بِحَدِيْثٍ سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - لَعَلَّ اللهَ اَنْ يَنْفَعَنِىْ بِهٖ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ اَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهٖ صَلَاتُهٗ فَاِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ اَفْلَحَ وَاَنْجَحَ وَاِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَاِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيْضَتِهٖ شَىْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا هَلْ لِعَبْدِىْ مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيْضَةِ ثُمَّ يَكُوْنُ سَائِرُ عَمَلِهٖ عَلٰى ذٰلِكَ
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসায়ী হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
সালাত জান্নাত লাভের উপায় :
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِيَّ ، يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ يَوْمَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ : اُعْبُدُوْا رَبُّكُمْ ، وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ ، وَصُوْمُوْا شَهْرِكُمْ ، وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ ، وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ
আবু উমামা আল বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, (রমাযান) মাসের রোযা রাখো, সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমীরের আনুগত্য করো; তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২১৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯; তিরমিযী, হা/৬১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৬৭।]
সালাত কিয়ামতের দিন নূর ও নাজাতের দলীল হবে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا ؟ كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا ، وَبُرْهَانًا ، وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ ، وَلَا بُرْهَانٌ ، وَلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ ، وَفِرْعَوْنَ ، وَهَامَانَ ، وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
সালাত সর্বোত্তম ইবাদাত :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ - قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اِسْتَقِيْمُوْا وَلَنْ تُحْصُوْا وَاعْلَمُوْا اَنَّ خَيْرَ اَعْمَالِكُمْ اَلصَّلَاةُ وَلَا يُحَافِظُ عَلَى الْوُضُوْءِ اِلَّا مُؤْمِنٌ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) অটল থাকো, অবশ্য তোমরা সকল কাজে ঠিক থাকতে পারবে না। তবে জেনে রেখো! তোমাদের সকল কাজের মধ্যে সালাত হচ্ছে সর্বোত্তম। (সুতরাং সালাত সঠিকভাবে আদায় করবে) আর মু’মিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ অযুর নিয়ম রক্ষা করে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৩৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৪৭; মুজামুল আওসাত, হা/৭০১৯; দারেমী, হা/৬৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৭; মিশকাত, হা/২৯২।]
সালাত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদাত :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَاَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ اَيُّ الْعَمَلِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ - قَالَ الصَّلَاةُ عَلٰى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ اَيٌّ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ اَيٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ قَالَ : حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهٗ لَزَادَنِي
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- কোন্ কাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। পুনরায় আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমাকে এ কথাগুলো বললেন। আমি যদি আরো অধিক জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরো অধিক বলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৪; নাসাঈ, হা/৬১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৯০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৯৭।]
সালাত ত্যাগ না করার জন্য নবী ﷺ এর উপদেশ :
عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : اَوْصَانِيْ خَلِيلِيْ ﷺ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا ، وَاِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ ، وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا ، فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا ، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ ، وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ ، فَاِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে উপদেশ দিয়েছেন,
১. তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ডবিখন্ড করা হয় অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২. ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করবে না। যে ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করবে, তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তা উঠে যাবে।
৩. মদ্য পান করবে না, এটি সমস্ত মন্দের চাবিকাঠি। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/৫৮০।]
মাঠে-ঘাটে সালাত আদায়কারীর ফযীলত :
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : يَعْجَبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِى غَنَمٍ فِىْ رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّى فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اُنْظُرُوْا اِلٰى عَبْدِىْ هٰذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّى فَقَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِى وَاَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমার রব খুশি হন সেই ছাগল-ভেড়ার রাখালের প্রতি, যে একাকী পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে আযান দেয় এবং সালাত পড়ে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য করো! সে আযান দেয় ও সালাত কায়েম করে। সে আমার শাস্তিকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষী থাকো! আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। [আবূ দাঊদ, হা/১২০৫, নাসায়ী, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/১৪০৬২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪১।]
সন্তানদেরকে সালাতে অভ্যস্ত করার কঠোর নির্দেশ :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا﴾
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অনড় থাকো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
عَنْ سَبْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ -ﷺ -: مُرُوا الصَّبِىَّ بِالصَّلَاةِ اِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِيْنَ وَاِذَا بَلَغَ عَشْرَ سِنِيْنَ فَاضْرِبُوْهُ عَلَيْهَا
সাবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বৎসরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে সালাতের জন্য আদেশ করবে আর তাদের বয়স যখন দশ বৎসরে পৌঁছবে, তখন সালাত না পড়লে তাদেরকে প্রহার করবে। [আবূ দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
উক্ত আয়াত এবং হাদীসের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ فَالْاِمَامُ الَّذِيْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ وَالْمَرْاَةُ رَاعِيَةٌ عَلٰى اَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهٖ وَهِيَ مَسْؤُوْلَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلٰى مَالِ سَيِّدِهٖ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْهُ اَلَا فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা সাবধান হও! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল। সুতরাং তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষও তার পরিবারের দায়িত্বশীল। সুতরাং তাকেও এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীও তার স্বামীর পরিবার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ঐ দিন তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি কোন ব্যক্তির গোলাম বা দাস তার প্রভুর সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকেও ঐ দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৩০; তিরমিযী, হা/১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২০৬; মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৮৫।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ পালন করা এবং (৫) রমাযান মাসে রোযা রাখা। [সহীহ বুখারী, হা/৮, সহীহ মুসলিম, হা/১২১; তিরমিযী, হা/২৬০৯; নাসাঈ, হা/৫০০১।]
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে :
عَنْ حُرَيْثِ بْنِ قَبِيْصَةَ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِيْنَةَ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ يَسِّرْ لِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا . قَالَ : فَجَلَسْتُ اِلٰى اَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ : اِنِّىْ سَاَلْتُ اللهَ اَنْ يَّرْزُقَنِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا فَحَدِّثْنِىْ بِحَدِيْثٍ سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - لَعَلَّ اللهَ اَنْ يَنْفَعَنِىْ بِهٖ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ اَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهٖ صَلَاتُهٗ فَاِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ اَفْلَحَ وَاَنْجَحَ وَاِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَاِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيْضَتِهٖ شَىْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا هَلْ لِعَبْدِىْ مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيْضَةِ ثُمَّ يَكُوْنُ سَائِرُ عَمَلِهٖ عَلٰى ذٰلِكَ
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসায়ী হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
সালাত জান্নাত লাভের উপায় :
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِيَّ ، يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ يَوْمَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ : اُعْبُدُوْا رَبُّكُمْ ، وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ ، وَصُوْمُوْا شَهْرِكُمْ ، وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ ، وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ
আবু উমামা আল বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, (রমাযান) মাসের রোযা রাখো, সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমীরের আনুগত্য করো; তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২১৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯; তিরমিযী, হা/৬১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৬৭।]
সালাত কিয়ামতের দিন নূর ও নাজাতের দলীল হবে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا ؟ كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا ، وَبُرْهَانًا ، وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ ، وَلَا بُرْهَانٌ ، وَلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ ، وَفِرْعَوْنَ ، وَهَامَانَ ، وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
সালাত সর্বোত্তম ইবাদাত :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ - قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اِسْتَقِيْمُوْا وَلَنْ تُحْصُوْا وَاعْلَمُوْا اَنَّ خَيْرَ اَعْمَالِكُمْ اَلصَّلَاةُ وَلَا يُحَافِظُ عَلَى الْوُضُوْءِ اِلَّا مُؤْمِنٌ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) অটল থাকো, অবশ্য তোমরা সকল কাজে ঠিক থাকতে পারবে না। তবে জেনে রেখো! তোমাদের সকল কাজের মধ্যে সালাত হচ্ছে সর্বোত্তম। (সুতরাং সালাত সঠিকভাবে আদায় করবে) আর মু’মিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ অযুর নিয়ম রক্ষা করে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৩৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৪৭; মুজামুল আওসাত, হা/৭০১৯; দারেমী, হা/৬৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৭; মিশকাত, হা/২৯২।]
সালাত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদাত :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَاَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ اَيُّ الْعَمَلِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ - قَالَ الصَّلَاةُ عَلٰى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ اَيٌّ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ اَيٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ قَالَ : حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهٗ لَزَادَنِي
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- কোন্ কাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। পুনরায় আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমাকে এ কথাগুলো বললেন। আমি যদি আরো অধিক জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরো অধিক বলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৪; নাসাঈ, হা/৬১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৯০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৯৭।]
সালাত ত্যাগ না করার জন্য নবী ﷺ এর উপদেশ :
عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : اَوْصَانِيْ خَلِيلِيْ ﷺ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا ، وَاِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ ، وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا ، فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا ، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ ، وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ ، فَاِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে উপদেশ দিয়েছেন,
১. তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ডবিখন্ড করা হয় অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২. ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করবে না। যে ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করবে, তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তা উঠে যাবে।
৩. মদ্য পান করবে না, এটি সমস্ত মন্দের চাবিকাঠি। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/৫৮০।]
মাঠে-ঘাটে সালাত আদায়কারীর ফযীলত :
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : يَعْجَبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِى غَنَمٍ فِىْ رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّى فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اُنْظُرُوْا اِلٰى عَبْدِىْ هٰذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّى فَقَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِى وَاَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমার রব খুশি হন সেই ছাগল-ভেড়ার রাখালের প্রতি, যে একাকী পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে আযান দেয় এবং সালাত পড়ে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য করো! সে আযান দেয় ও সালাত কায়েম করে। সে আমার শাস্তিকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষী থাকো! আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। [আবূ দাঊদ, হা/১২০৫, নাসায়ী, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/১৪০৬২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪১।]
সন্তানদেরকে সালাতে অভ্যস্ত করার কঠোর নির্দেশ :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا﴾
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অনড় থাকো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
عَنْ سَبْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ -ﷺ -: مُرُوا الصَّبِىَّ بِالصَّلَاةِ اِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِيْنَ وَاِذَا بَلَغَ عَشْرَ سِنِيْنَ فَاضْرِبُوْهُ عَلَيْهَا
সাবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বৎসরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে সালাতের জন্য আদেশ করবে আর তাদের বয়স যখন দশ বৎসরে পৌঁছবে, তখন সালাত না পড়লে তাদেরকে প্রহার করবে। [আবূ দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
উক্ত আয়াত এবং হাদীসের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ فَالْاِمَامُ الَّذِيْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ وَالْمَرْاَةُ رَاعِيَةٌ عَلٰى اَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهٖ وَهِيَ مَسْؤُوْلَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلٰى مَالِ سَيِّدِهٖ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْهُ اَلَا فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা সাবধান হও! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল। সুতরাং তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষও তার পরিবারের দায়িত্বশীল। সুতরাং তাকেও এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীও তার স্বামীর পরিবার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ঐ দিন তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি কোন ব্যক্তির গোলাম বা দাস তার প্রভুর সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকেও ঐ দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৩০; তিরমিযী, হা/১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২০৬; মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৮৫।]
সালাত গোনাহের কাফফারা স্বরূপ :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : الصَّلَاةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ اِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবীরা গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৪৮৬।]
পানি যেমন ময়লা দূর করে, সালাত তেমন গোনাহ মিটিয়ে দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَرَاَيْتُمْ لَوْ اَنَّ نَهَرًا بِبَابِ اَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيْهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا مَا تَقُوْلُ ذٰلِكَ يُبْقِيْ مِنْ دَرَنِهٖ؟ قَالُوْا : لَا يُبْقِيْ مِنْ دَرَنِهٖ شَيْئًا قَالَ فَذٰلِكَ مِثْلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهَا الْخَطَايَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সালাতের উদাহরণও অনুরূপ। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৮, সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৪; তিরমিযী, হা/২৮৬৮; নাসাঈ, হা/৪৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৬; দারেমী, হা/১২২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৫২; মিশকাত, হা/৫৬৫।]
গাছের শুকনো পাতার ন্যায় সালাত আদায়কারীর গোনাহ ঝরে পড়ে :
عَنْ اَبِيْ ذَرٍّ ، اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، فَاَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ ، قَالَ : فَجَعَلَ ذٰلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، قَالَ : فَقَالَ : يَا اَبَا ذَرٍّ قُلْتُ : لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اِنَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ يُرِيْدُ بِهَا وَجْهَ اللهِ ، فَتَهَافَتُ عَنْهُ ذُنُوْبُهٗ كَمَا يَتَهَافَتُ هٰذَا الْوَرَقُ عَنْ هٰذِهِ الشَّجَرَةِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একদিন শীতকালে বাইরে বের হলেন। তখন গাছের (শুকনো) পাতা ঝরছিল। এ সময় তিনি গাছ হতে দুটি ডাল ভেঙ্গে নিলেন। এতে পাতাগুলো আরো অধিক ঝরতে লাগল। তখন নবী ﷺ বললেন, হে আবু যর! আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সালাত আদায় করে, তখন তার গোনাহসমূহ ঐভাবে ঝরতে থাকে যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৬।]
সালাতের মাধ্যমে গোনাহ মাফ হওয়ার দৃষ্টান্ত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন একজন অপরিচিতা নারীকে চুম্বন করে ফেলে। তারপর সে নবী ﷺ এর কাছে এসে তার কৃতকর্মের কথা জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন-
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
আর তুমি দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে সালাত কায়েম করো; নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি মহা উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ উপহার কি শুধু আমার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমার উম্মতের সকলের জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭১৭৭; তিরমিযী, হা/৩১১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৩; দারেমী, হা/৪৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৯; মিশকাত, হা/৫৭৫।]
এ হাদীসে যার কথা বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার লোক। স্বেচ্ছায় তিনি কোন পাপ কাজ করতেন না। তারপরও মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় একদিন পথিমধ্যে একটি পাপকর্ম করে ফেলেন। এ পাপকর্ম ঘটে যাওয়ার পর তার অনুভূতি ফিরে এল। তিনি তীব্র অনুশোচনা করতে লাগলেন। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার উপায় বের করার আশায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে বললেন, আমি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে শাস্তি দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাপের বিবরণ শুনে সূরা হুদের এ আয়াতটি পাঠ করে শোনালেন। আয়াতের মধ্যে মুমিন ব্যক্তিকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েমের হুকুম দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকে মিটিয়ে দেয়।’’ এ কথা শোনার পর তাঁর মনে শান্তি ফিরে এল এবং উদ্বেগ দূর হয়ে গেল।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَجَاءَهٗ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّيْ اَصَبْتُ حَدًّا فَاَقِمْهُ عَلَيَّ قَالَ وَلَمْ يَسْاَلْهُ عَنْهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلّٰى مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ ﷺ الصَّلَاةَ قَامَ اِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّيْ اَصَبْتُ حَدًّا فَاَقِمْ فِيَّ كِتَابَ اللهِ قَالَ اَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَاِنَّ اللهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ ، اَوْ قَالَ حَدَّكَ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শাস্তিযোগ্য অপরাধ) করে ফেলেছি, সুতরাং আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। এ সময় সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। নবী করীম ﷺ যখন সালাত শেষ করলেন, তখন সে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ এর কাজ করে ফেলেছি। আমার প্রতি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; মিশকাত, হা/৫৬৭।]
এসব হাদীস দ্বারা এটা পরিমাপ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাগণকে কত উঁচু মানের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যার ফলে তারা কোন পাপকাজ করে ফেললে অস্থির হয়ে যেতেন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : الصَّلَاةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ اِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবীরা গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৪৮৬।]
পানি যেমন ময়লা দূর করে, সালাত তেমন গোনাহ মিটিয়ে দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَرَاَيْتُمْ لَوْ اَنَّ نَهَرًا بِبَابِ اَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيْهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا مَا تَقُوْلُ ذٰلِكَ يُبْقِيْ مِنْ دَرَنِهٖ؟ قَالُوْا : لَا يُبْقِيْ مِنْ دَرَنِهٖ شَيْئًا قَالَ فَذٰلِكَ مِثْلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهَا الْخَطَايَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সালাতের উদাহরণও অনুরূপ। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৮, সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৪; তিরমিযী, হা/২৮৬৮; নাসাঈ, হা/৪৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৬; দারেমী, হা/১২২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৫২; মিশকাত, হা/৫৬৫।]
গাছের শুকনো পাতার ন্যায় সালাত আদায়কারীর গোনাহ ঝরে পড়ে :
عَنْ اَبِيْ ذَرٍّ ، اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، فَاَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ ، قَالَ : فَجَعَلَ ذٰلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، قَالَ : فَقَالَ : يَا اَبَا ذَرٍّ قُلْتُ : لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اِنَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ يُرِيْدُ بِهَا وَجْهَ اللهِ ، فَتَهَافَتُ عَنْهُ ذُنُوْبُهٗ كَمَا يَتَهَافَتُ هٰذَا الْوَرَقُ عَنْ هٰذِهِ الشَّجَرَةِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একদিন শীতকালে বাইরে বের হলেন। তখন গাছের (শুকনো) পাতা ঝরছিল। এ সময় তিনি গাছ হতে দুটি ডাল ভেঙ্গে নিলেন। এতে পাতাগুলো আরো অধিক ঝরতে লাগল। তখন নবী ﷺ বললেন, হে আবু যর! আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সালাত আদায় করে, তখন তার গোনাহসমূহ ঐভাবে ঝরতে থাকে যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৬।]
সালাতের মাধ্যমে গোনাহ মাফ হওয়ার দৃষ্টান্ত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন একজন অপরিচিতা নারীকে চুম্বন করে ফেলে। তারপর সে নবী ﷺ এর কাছে এসে তার কৃতকর্মের কথা জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন-
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
আর তুমি দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে সালাত কায়েম করো; নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি মহা উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ উপহার কি শুধু আমার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমার উম্মতের সকলের জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭১৭৭; তিরমিযী, হা/৩১১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৩; দারেমী, হা/৪৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৯; মিশকাত, হা/৫৭৫।]
এ হাদীসে যার কথা বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার লোক। স্বেচ্ছায় তিনি কোন পাপ কাজ করতেন না। তারপরও মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় একদিন পথিমধ্যে একটি পাপকর্ম করে ফেলেন। এ পাপকর্ম ঘটে যাওয়ার পর তার অনুভূতি ফিরে এল। তিনি তীব্র অনুশোচনা করতে লাগলেন। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার উপায় বের করার আশায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে বললেন, আমি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে শাস্তি দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাপের বিবরণ শুনে সূরা হুদের এ আয়াতটি পাঠ করে শোনালেন। আয়াতের মধ্যে মুমিন ব্যক্তিকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েমের হুকুম দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকে মিটিয়ে দেয়।’’ এ কথা শোনার পর তাঁর মনে শান্তি ফিরে এল এবং উদ্বেগ দূর হয়ে গেল।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَجَاءَهٗ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّيْ اَصَبْتُ حَدًّا فَاَقِمْهُ عَلَيَّ قَالَ وَلَمْ يَسْاَلْهُ عَنْهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلّٰى مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ ﷺ الصَّلَاةَ قَامَ اِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّيْ اَصَبْتُ حَدًّا فَاَقِمْ فِيَّ كِتَابَ اللهِ قَالَ اَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَاِنَّ اللهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ ، اَوْ قَالَ حَدَّكَ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শাস্তিযোগ্য অপরাধ) করে ফেলেছি, সুতরাং আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। এ সময় সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। নবী করীম ﷺ যখন সালাত শেষ করলেন, তখন সে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ এর কাজ করে ফেলেছি। আমার প্রতি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; মিশকাত, হা/৫৬৭।]
এসব হাদীস দ্বারা এটা পরিমাপ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাগণকে কত উঁচু মানের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যার ফলে তারা কোন পাপকাজ করে ফেললে অস্থির হয়ে যেতেন।
১. সালাত ছেড়ে দেয়া কুফ্রী কাজ :
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না সে যদি সালাতকে অস্বীকারপূর্বক এমনটি করে থাকে তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর সালাত ফরয হওয়াকে স্বীকৃতি দানের পর যদি কেউ সালাত আদায় না করে তাহলেও সে আমলগতভাবে কুফরী কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তাওবা করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তাওবা- ১১)
এ দুটি আয়াতে সালাত কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তা এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না সে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হচ্ছে সালাত :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফ্রীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো সালাত আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
অর্থাৎ সালাত ত্যাগ করলে তার কুফ্রীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। সালাত হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীরস্বরূপ।
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে সালাতে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
عَنْ بُرَيْدَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো সালাত। সুতরাং যে সালাত ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
২. সাহাবীরা সালাত ত্যাগ করাকে কুফ্রী মনে করতেন :
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - ﷺ - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْاَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ সালাত ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهٗ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যার সালাত নেই তার ঈমান নেই। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না, তার নিজেকে মুমিন বলে দাবী করা শোভা পায় না।
৩. সালাত ত্যাগকারীর মুক্তি পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই :
عَنْ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ قال : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ اَحْسَنَ وُضُوْءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَاَتَمَّ رُكُوْعَهُنَّ وَخُشُوْعَهُنَّ كَانَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اَنْ يَّغْفِرَ لَهٗ وَمَنْ لَّمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهٗ وَاِنْ شَاءَ عَذَّبَهٗ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করবে, সময়মতো সালাত আদায় করবে, সালাতের রুকূসমূহ পূর্ণ করবে এবং তাতে বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি এমনটি করবে না তার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি তাকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মুজামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
৪. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও। অর্থাৎ সালাত আদায় করো, তখন তারা মাথা নত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
৫. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে না অর্থাৎ সালাত আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
৬. সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَهَامَانَ وَفِرْعَوْنَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
বে-নামাযী কিয়ামতের দিন কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭... ঐ।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
৭. সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবেন, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবেন। জানণাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা উত্তর দেবে, আমরা দুনিয়াতে সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে সালাত না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া পরস্পরকে দেখতে পারবে এবং কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা ওয়াস্সাফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না সে যদি সালাতকে অস্বীকারপূর্বক এমনটি করে থাকে তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর সালাত ফরয হওয়াকে স্বীকৃতি দানের পর যদি কেউ সালাত আদায় না করে তাহলেও সে আমলগতভাবে কুফরী কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তাওবা করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তাওবা- ১১)
এ দুটি আয়াতে সালাত কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তা এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না সে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হচ্ছে সালাত :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফ্রীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো সালাত আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
অর্থাৎ সালাত ত্যাগ করলে তার কুফ্রীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। সালাত হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীরস্বরূপ।
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে সালাতে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
عَنْ بُرَيْدَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো সালাত। সুতরাং যে সালাত ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
২. সাহাবীরা সালাত ত্যাগ করাকে কুফ্রী মনে করতেন :
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - ﷺ - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْاَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ সালাত ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهٗ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যার সালাত নেই তার ঈমান নেই। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না, তার নিজেকে মুমিন বলে দাবী করা শোভা পায় না।
৩. সালাত ত্যাগকারীর মুক্তি পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই :
عَنْ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ قال : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ اَحْسَنَ وُضُوْءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَاَتَمَّ رُكُوْعَهُنَّ وَخُشُوْعَهُنَّ كَانَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اَنْ يَّغْفِرَ لَهٗ وَمَنْ لَّمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهٗ وَاِنْ شَاءَ عَذَّبَهٗ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করবে, সময়মতো সালাত আদায় করবে, সালাতের রুকূসমূহ পূর্ণ করবে এবং তাতে বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি এমনটি করবে না তার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি তাকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মুজামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
৪. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও। অর্থাৎ সালাত আদায় করো, তখন তারা মাথা নত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
৫. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে না অর্থাৎ সালাত আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
৬. সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَهَامَانَ وَفِرْعَوْنَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
বে-নামাযী কিয়ামতের দিন কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭... ঐ।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
৭. সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবেন, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবেন। জানণাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা উত্তর দেবে, আমরা দুনিয়াতে সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে সালাত না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া পরস্পরকে দেখতে পারবে এবং কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা ওয়াস্সাফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
মুনাফিকরা সালাতে গাফলতি করে :
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, তারা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। আর তারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কি পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের সালাতে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য।
এশা ও ফজরের সালাতে উপস্থিত হতে তাদের বেশি কষ্ট হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِنَّ اَثْقَلَ الصَّلَاةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ ، وَصَلَاةُ الْفَجْرِ ، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا , لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী সালাত হচ্ছে এশা ও ফজরের সালাত। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কি পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত সালাতদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা সালাতকে নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয় :
عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِىْ دَارِهٖ بِالْبَصْرَةِ حِيْنَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهٗ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ اَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهٗ اِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ . قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ . فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتّٰى اِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا اَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهَا اِلَّا قَلِيْلًا
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের সালাত আদায় করছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের সালাত আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যোহরের সালাত আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের সালাত আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের সালাত আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন- ঐ সালাত হলো মুনাফিকের সালাত, যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, তারা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। আর তারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কি পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের সালাতে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য।
এশা ও ফজরের সালাতে উপস্থিত হতে তাদের বেশি কষ্ট হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِنَّ اَثْقَلَ الصَّلَاةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ ، وَصَلَاةُ الْفَجْرِ ، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا , لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী সালাত হচ্ছে এশা ও ফজরের সালাত। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কি পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত সালাতদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা সালাতকে নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয় :
عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِىْ دَارِهٖ بِالْبَصْرَةِ حِيْنَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهٗ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ اَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهٗ اِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ . قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ . فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتّٰى اِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا اَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهَا اِلَّا قَلِيْلًا
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের সালাত আদায় করছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের সালাত আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যোহরের সালাত আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের সালাত আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের সালাত আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন- ঐ সালাত হলো মুনাফিকের সালাত, যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিয়মিত সালাত আদায় করে না। মাঝে মধ্যে সালাত পড়ে। যেমন- সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে একদিন পড়ে আর বাকী ছয় দিন পড়ে না, তাও আবার পাঁচ ওয়াক্ত নয়, শুধু জুমু‘আর সালাতটা। বৎসরে বারটি মাসের মধ্যে সে এগার মাস সালাত পড়ে না। একমাস পড়ে, তাও আবার অনেকে ঐ মাসেও পাঁচ ওয়াক্ত পড়ে না। বরং তারাবীর সালাতটা পড়ার জন্য এশার জামাআতে গিয়ে শরীক হয়। অথচ তারাবীর সালাত একটি নফল সালাত। আর অধিকাংশ সময়ই তাদের কাছে ফরয সালাতের চেয়ে নফল সালাত বেশি প্রাধান্য পায়।
এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না এবং জান্নাতও পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তোলা সকল মুসলিমের উপর ফরয। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসী লোকদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ﴾
আর যারা তাদের সালাতসমূহের হেফাযত করে। (সূরা মু’মিনূন- ৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ﴾
আর যারা দাইমী সালাত আদায় করে। অর্থাৎ সর্বদা বিনয় ও স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মাআরিজ- ২৩)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، اَنَّهَا قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ ﷺ اَيُّ الْاَعْمَالِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ قَالَ اَدْوَمُهَا وَاِنْ قَلَّ وَقَالَ اكْلَفُوْا مِنَ الْاَعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হয়- যদিও তা (পরিমাণে) কম হয়। তিনি আরো বললেন, তোমার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ নিজের উপর টেনে নিও না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৬।]
অতএব উপরের আলোচনা থেকে এটাই বুঝা যায় যে, সালাত শুধু পড়লেই হয় না। সালাতের হক আদায় করে যথানিয়মে যথাসময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে।
এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না এবং জান্নাতও পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তোলা সকল মুসলিমের উপর ফরয। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসী লোকদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ﴾
আর যারা তাদের সালাতসমূহের হেফাযত করে। (সূরা মু’মিনূন- ৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ﴾
আর যারা দাইমী সালাত আদায় করে। অর্থাৎ সর্বদা বিনয় ও স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মাআরিজ- ২৩)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، اَنَّهَا قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ ﷺ اَيُّ الْاَعْمَالِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ قَالَ اَدْوَمُهَا وَاِنْ قَلَّ وَقَالَ اكْلَفُوْا مِنَ الْاَعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হয়- যদিও তা (পরিমাণে) কম হয়। তিনি আরো বললেন, তোমার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ নিজের উপর টেনে নিও না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৬।]
অতএব উপরের আলোচনা থেকে এটাই বুঝা যায় যে, সালাত শুধু পড়লেই হয় না। সালাতের হক আদায় করে যথানিয়মে যথাসময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে।
প্রত্যেকটি কাজ করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর সালাত ফরয করেছেন এবং মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে তা আদায় করতে বলেছেন। বিশেষ কল্যাণ ও উপকারিতার দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তা‘আলা এ বিধান দিয়েছেন। নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা জামাআতে সালাত কায়েম করতেন। আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদের প্রশংসা করে বলেন,
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ - رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
যে সকল ঘরকে আল্লাহ তা‘আলা সমুন্নত করার এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এমনসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে এমন একটি দিনকে যে দিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উলটপালট (বিপর্যস্ত) হয়ে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের কঠিন দিনকে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
জামাআতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সবাই মসজিদে গিয়ে একত্র হয় এবং একে অপরকে দেখতে পায়। পরস্পরের খবরাখবর জানতে পারে। এর ফলে সাম্যের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু সবাই একই কাতারে দাঁড়ায়। জামাআতে সালাত পড়লে সালাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং সালাতে ভুলত্রুটি কম হয়। অনেক সময় সালাতের পরে দ্বীনী আলোচনা হয়, এতে করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এছাড়াও দুনিয়া-আখিরাতের অগণিত কল্যাণ রয়েছে জামাআতে সালাত আদায়ের মধ্যে। জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوْا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। অর্থাৎ জামাআতে সালাত আদায় করো। (সূরা বাকারা- ৪৩)
যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ﴾
(হে নবী!) তুমি যখন (জিহাদের ময়দানে) তোমার সাথীদের সাথে থাকবে এবং তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সাথে দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১০২)
এ আয়াতে যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন চিন্তা করুন, যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকলে, অন্য সময় তা আরো কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ - رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
যে সকল ঘরকে আল্লাহ তা‘আলা সমুন্নত করার এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এমনসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে এমন একটি দিনকে যে দিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উলটপালট (বিপর্যস্ত) হয়ে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের কঠিন দিনকে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
জামাআতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সবাই মসজিদে গিয়ে একত্র হয় এবং একে অপরকে দেখতে পায়। পরস্পরের খবরাখবর জানতে পারে। এর ফলে সাম্যের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু সবাই একই কাতারে দাঁড়ায়। জামাআতে সালাত পড়লে সালাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং সালাতে ভুলত্রুটি কম হয়। অনেক সময় সালাতের পরে দ্বীনী আলোচনা হয়, এতে করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এছাড়াও দুনিয়া-আখিরাতের অগণিত কল্যাণ রয়েছে জামাআতে সালাত আদায়ের মধ্যে। জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوْا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। অর্থাৎ জামাআতে সালাত আদায় করো। (সূরা বাকারা- ৪৩)
যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ﴾
(হে নবী!) তুমি যখন (জিহাদের ময়দানে) তোমার সাথীদের সাথে থাকবে এবং তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সাথে দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১০২)
এ আয়াতে যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন চিন্তা করুন, যুদ্ধের সময়ও জামাআতে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকলে, অন্য সময় তা আরো কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
১. জামাআত বর্জনকারীরা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত হবে :
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ - وَّقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন পায়ের গোছা প্রকাশ পাবে (কিয়ামতের কঠিন মুসিবত আসবে) এবং মানুষকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, তখন তারা সিজদা করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হয়ে যাবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কারণ দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো; কিন্তু তারা নিরাপদ থাকা সত্ত্বেও সাড়া দিত না। (সূরা কালাম- ৪২, ৪৩)
قَالَ الْمُفَسِّرُوْنَ : يَسْجُدُ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ لِلّٰهِ سَجْدَةً وَاحِدَةً ، وَيَبْقَى الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُوْنَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّسْجُدُوْا فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ؛ لِأَنَّ أَصْلَابَهُمْ تَيَبَّسَتْ فَلَا تَلِيْنُ لِلسُّجُوْدِ
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেছেন, (হাশরের ময়দানে) আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাকে সিজদা করবে; কিন্তু কাফির এবং মুনাফিকরা সিজদা করতে পারবে না। তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু সক্ষম হবে না। কেননা সেদিন তাদের মেরুদন্ড কাঠের মতো শক্ত হয়ে যাবে, সুতরাং তা সিজদার জন্য ঝুঁকতে পারবে না। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৭/২৮৯।]
২. জামাআত বর্জনকারীদের প্রতি নবীর ক্ষোভ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَقَدْ هَمَمْتُ اَنْ اٰمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ ثُمَّ اٰمُرَ بِالصَّلَاةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا ثُمَّ اٰمُرَ رَجُلًا فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ اُخَالِفَ اِلٰى رِجَالٍ فَاُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَوْ يَعْلَمُ اَحَدُهُمْ اَنَّهٗ يَجِدُ عَرْقًا سَمِيْنًا ، اَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الْعِشَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি ইচ্ছা করছি, জ্বালানী কাঠ একত্র করার আদেশ করব। তারপর আদেশ করব যাতে সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়। তারপর কোন ব্যক্তিকে আদেশ করব, সে যেন লোকদের ইমামতি করে। তারপর আমি বাড়িতে অবস্থানকারী ঐ সকল লোকের কাছে যাব (যারা জামাআতে হাযির হয়নি)। তারপর তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেব। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের কেউ এ কথা জানত যে, সে হাড্ডির সাথে সংযুক্ত মোটাতাজা মজাদার গোশ্ত পাবে, অথবা বকরীর উত্তম দুটি খুর পাবে, তাহলে তারা অবশ্যই এশার সালাতের জামাআতে হাযির হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৯০; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৪; মুসলিম, হা/১৫১৩; আবু দাউদ, হা/৫৪৮; নাসাঈ, হা/৮৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪১৯৬।]
একজন রহমতের নবী হয়েও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। জামাআতে সালাত আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে নবী ﷺ এরকম ইচ্ছা পোষণ করতেন না। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মানুষের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে যত ক্ষতি হয়; তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জামাআতের সাথে সালাত না আদায় করার কারণে।
আফসোস এ যুগের মুসলিমদের জন্য, যারা জামাআতে সালাত আদায় করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং যারা অনুধাবন করতে পারছে না যে, তারা জামাআত ছেড়ে কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
৩. অন্ধকেও ছাড় দেয়া হয়নি :
عَنِ ابْنِ اُمِّ مَكْتُومٍ اَنَّهٗ سَاَلَ النَّبِىَّ -ﷺ - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّىْ رَجُلٌ ضَرِيْرُ الْبَصَرِ شَاسِعُ الدَّارِ وَلِى قَائِدٌ لَا يُلَائِمُنِىْ فَهَلْ لِىْ رُخْصَةٌ اَنْ اُصَلِّىَ فِىْ بَيْتِىْ قَالَ : هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ ؟ قَالَ نَعَمْ . قَالَ : لَا اَجِدُ لَكَ رُخْصَةً
আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। আমি বাড়িতে অবস্থান করি। আমার এমন কোন লোক নেই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। অতএব আমার জন্য এমন কোন ছাড় আছে কি যে, আমি আমার বাড়িতেই সালাত আদায় করতে পারব? তখন তিনি বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে আমি তোমার জন্য কোন ছাড় দিতে পারছি না। [আবু দাউদ, হা/৫৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯০৩।]
নবী ﷺ এর এ বাণী শোনার পর সাহাবীরা যেভাবেই হোক মসজিদে এসে উপস্থিত হতেন এবং জামাআতে সালাত পড়তেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধ লোককেও বাড়িতে সালাত আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। এখন যারা সুস্থ্য, দেখতে পায়, চলতে পারে তারা কীভাবে বাড়িতে সালাত আদায় করতে পারে?
৪. ওজর ছাড়া জামাআত ত্যাগ করা যাবে না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - : مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِىَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِن اِتِّبَاعِهٖ عُذْرٌ . قَالُوْا وَمَا الْعُذْرُ؟ قَالَ : خَوْفٌ اَوْ مَرَضٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِى صَلّٰى
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে কোন ওজর ব্যতীত মসজিদে না গিয়ে একাকী সালাত আদায় করে, তার এ সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না। লোকেরা বলল, ওজর বলতে কী বুঝায়? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ভয় ও রোগ। [আবূ দাঊদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; সুনানে বায়হাকী, হা/৪৮২৬।]
ভয় অর্থ হলো প্রাণের ভয়। দুশমন, হিংস্র জন্তু অথবা বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কারণে এ ভয় হতে পারে। আর রোগের অর্থ হলো এমন রোগ, যে রোগের কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৫. একাকী সালাত আদায়কারীর উপর শয়তান চেপে বসে :
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - يَقُولُ : مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِىْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلَاةُ اِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَاِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন গ্রাম বা জনপদে যদি তিনজন লোক থাকে এবং সেখানে জামাআতের সাথে সালাত কায়েম না হয়, তবে বুঝতে হবে যে, তাদের উপর শয়তানের আধিপত্য রয়েছে। অতএব তোমরা জামাআতকে আঁকড়ে ধরো। কারণ নেকড়ে বাঘ বিচ্ছিন্ন মেষকেই শিকার করে থাকে। [আবূ দাঊদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৫৮, সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১০১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৫; মিশকাত, হা/১০৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তাহযীব, হা/৪২৭।]
৬. জামাআত বর্জনকারীরা পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا فَلْيُحَافِظْ عَلٰى هٰؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادٰى بِهِنَّ فَاِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ -ﷺ - سُنَنَ الْهُدٰى وَاِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدٰى وَلَوْ اَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِى بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّى هٰذَا الْمُتَخَلِّفُ فِى بَيْتِهٖ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَعْمِدُ اِلٰى مَسْجِدٍ مِنْ هٰذِهِ الْمَسَاجِدِ اِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهٗ بِكُلِّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعُهٗ بِهَا دَرَجَةً وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَلَقَدْ رَاَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا اِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتٰى بِهٖ يُهَادٰى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتّٰى يُقَامَ فِى الصَّفِّ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেছেন। আর জামাআতে সালাত আদায় করাও হেদায়াতের একটি পথ। সুতরাং যদি তোমরা জামাআতে উপস্থিত না হয়ে বাড়িতে সালাত আদায় করে থাক, যেভাবে পেছনে থাকা লোকেরা তাদের বাড়িতে সালাত আদায় করে নেয়, তাহলে তোমরা হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবে যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর, তাহলে অবশ্যই হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে।
কোন ব্যক্তি যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সালাত আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ মোচন করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাআতে সালাত আদায় করা ছেড়ে দিত না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এমন ব্যক্তিও জামাআতে উপস্থিত হতো, যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এনে সালাতের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২০; নাসাঈ, হা/৪৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৮৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০৪; মিশকাত, হা/১০৭২।]
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ - وَّقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন পায়ের গোছা প্রকাশ পাবে (কিয়ামতের কঠিন মুসিবত আসবে) এবং মানুষকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, তখন তারা সিজদা করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হয়ে যাবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কারণ দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো; কিন্তু তারা নিরাপদ থাকা সত্ত্বেও সাড়া দিত না। (সূরা কালাম- ৪২, ৪৩)
قَالَ الْمُفَسِّرُوْنَ : يَسْجُدُ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ لِلّٰهِ سَجْدَةً وَاحِدَةً ، وَيَبْقَى الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُوْنَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّسْجُدُوْا فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ؛ لِأَنَّ أَصْلَابَهُمْ تَيَبَّسَتْ فَلَا تَلِيْنُ لِلسُّجُوْدِ
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেছেন, (হাশরের ময়দানে) আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাকে সিজদা করবে; কিন্তু কাফির এবং মুনাফিকরা সিজদা করতে পারবে না। তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু সক্ষম হবে না। কেননা সেদিন তাদের মেরুদন্ড কাঠের মতো শক্ত হয়ে যাবে, সুতরাং তা সিজদার জন্য ঝুঁকতে পারবে না। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৭/২৮৯।]
২. জামাআত বর্জনকারীদের প্রতি নবীর ক্ষোভ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَقَدْ هَمَمْتُ اَنْ اٰمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ ثُمَّ اٰمُرَ بِالصَّلَاةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا ثُمَّ اٰمُرَ رَجُلًا فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ اُخَالِفَ اِلٰى رِجَالٍ فَاُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَوْ يَعْلَمُ اَحَدُهُمْ اَنَّهٗ يَجِدُ عَرْقًا سَمِيْنًا ، اَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الْعِشَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি ইচ্ছা করছি, জ্বালানী কাঠ একত্র করার আদেশ করব। তারপর আদেশ করব যাতে সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়। তারপর কোন ব্যক্তিকে আদেশ করব, সে যেন লোকদের ইমামতি করে। তারপর আমি বাড়িতে অবস্থানকারী ঐ সকল লোকের কাছে যাব (যারা জামাআতে হাযির হয়নি)। তারপর তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেব। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের কেউ এ কথা জানত যে, সে হাড্ডির সাথে সংযুক্ত মোটাতাজা মজাদার গোশ্ত পাবে, অথবা বকরীর উত্তম দুটি খুর পাবে, তাহলে তারা অবশ্যই এশার সালাতের জামাআতে হাযির হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৯০; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৪; মুসলিম, হা/১৫১৩; আবু দাউদ, হা/৫৪৮; নাসাঈ, হা/৮৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪১৯৬।]
একজন রহমতের নবী হয়েও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। জামাআতে সালাত আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে নবী ﷺ এরকম ইচ্ছা পোষণ করতেন না। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মানুষের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে যত ক্ষতি হয়; তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জামাআতের সাথে সালাত না আদায় করার কারণে।
আফসোস এ যুগের মুসলিমদের জন্য, যারা জামাআতে সালাত আদায় করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং যারা অনুধাবন করতে পারছে না যে, তারা জামাআত ছেড়ে কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
৩. অন্ধকেও ছাড় দেয়া হয়নি :
عَنِ ابْنِ اُمِّ مَكْتُومٍ اَنَّهٗ سَاَلَ النَّبِىَّ -ﷺ - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّىْ رَجُلٌ ضَرِيْرُ الْبَصَرِ شَاسِعُ الدَّارِ وَلِى قَائِدٌ لَا يُلَائِمُنِىْ فَهَلْ لِىْ رُخْصَةٌ اَنْ اُصَلِّىَ فِىْ بَيْتِىْ قَالَ : هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ ؟ قَالَ نَعَمْ . قَالَ : لَا اَجِدُ لَكَ رُخْصَةً
আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। আমি বাড়িতে অবস্থান করি। আমার এমন কোন লোক নেই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। অতএব আমার জন্য এমন কোন ছাড় আছে কি যে, আমি আমার বাড়িতেই সালাত আদায় করতে পারব? তখন তিনি বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে আমি তোমার জন্য কোন ছাড় দিতে পারছি না। [আবু দাউদ, হা/৫৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯০৩।]
নবী ﷺ এর এ বাণী শোনার পর সাহাবীরা যেভাবেই হোক মসজিদে এসে উপস্থিত হতেন এবং জামাআতে সালাত পড়তেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধ লোককেও বাড়িতে সালাত আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। এখন যারা সুস্থ্য, দেখতে পায়, চলতে পারে তারা কীভাবে বাড়িতে সালাত আদায় করতে পারে?
৪. ওজর ছাড়া জামাআত ত্যাগ করা যাবে না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - : مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِىَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِن اِتِّبَاعِهٖ عُذْرٌ . قَالُوْا وَمَا الْعُذْرُ؟ قَالَ : خَوْفٌ اَوْ مَرَضٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِى صَلّٰى
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে কোন ওজর ব্যতীত মসজিদে না গিয়ে একাকী সালাত আদায় করে, তার এ সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না। লোকেরা বলল, ওজর বলতে কী বুঝায়? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ভয় ও রোগ। [আবূ দাঊদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; সুনানে বায়হাকী, হা/৪৮২৬।]
ভয় অর্থ হলো প্রাণের ভয়। দুশমন, হিংস্র জন্তু অথবা বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কারণে এ ভয় হতে পারে। আর রোগের অর্থ হলো এমন রোগ, যে রোগের কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৫. একাকী সালাত আদায়কারীর উপর শয়তান চেপে বসে :
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - يَقُولُ : مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِىْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلَاةُ اِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَاِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন গ্রাম বা জনপদে যদি তিনজন লোক থাকে এবং সেখানে জামাআতের সাথে সালাত কায়েম না হয়, তবে বুঝতে হবে যে, তাদের উপর শয়তানের আধিপত্য রয়েছে। অতএব তোমরা জামাআতকে আঁকড়ে ধরো। কারণ নেকড়ে বাঘ বিচ্ছিন্ন মেষকেই শিকার করে থাকে। [আবূ দাঊদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৫৮, সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১০১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৫; মিশকাত, হা/১০৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তাহযীব, হা/৪২৭।]
৬. জামাআত বর্জনকারীরা পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا فَلْيُحَافِظْ عَلٰى هٰؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادٰى بِهِنَّ فَاِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ -ﷺ - سُنَنَ الْهُدٰى وَاِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدٰى وَلَوْ اَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِى بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّى هٰذَا الْمُتَخَلِّفُ فِى بَيْتِهٖ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَعْمِدُ اِلٰى مَسْجِدٍ مِنْ هٰذِهِ الْمَسَاجِدِ اِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهٗ بِكُلِّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعُهٗ بِهَا دَرَجَةً وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَلَقَدْ رَاَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا اِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتٰى بِهٖ يُهَادٰى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتّٰى يُقَامَ فِى الصَّفِّ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেছেন। আর জামাআতে সালাত আদায় করাও হেদায়াতের একটি পথ। সুতরাং যদি তোমরা জামাআতে উপস্থিত না হয়ে বাড়িতে সালাত আদায় করে থাক, যেভাবে পেছনে থাকা লোকেরা তাদের বাড়িতে সালাত আদায় করে নেয়, তাহলে তোমরা হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবে যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর, তাহলে অবশ্যই হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে।
কোন ব্যক্তি যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সালাত আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ মোচন করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাআতে সালাত আদায় করা ছেড়ে দিত না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এমন ব্যক্তিও জামাআতে উপস্থিত হতো, যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এনে সালাতের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২০; নাসাঈ, হা/৪৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৮৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০৪; মিশকাত, হা/১০৭২।]
১. জামাআতে সালাত আদায়ের সওয়াব অনেক বেশি :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : صَلَاةُ الرَّجُلِ فِى الْجَمَاعَةِ تَزِيْدُ عَلٰى صَلَاتِهٖ وَحْدَهٗ سَبْعًا وَّعِشْرِيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে সালাত আদায় করার সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬১০; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৮।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : فَضْلُ صَلَاةِ الْجَمِيْعِ عَلٰى صَلَاةِ الْوَاحِدِ خَمْسٌ وَّعِشْرُوْنَ دَرَجَةً وَّتَجْتَمِعُ مَلَائِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النَّهَارِ فِيْ صَلَاةِ الصُّبْحِ يَقُوْلُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : اِقْرَؤُوْا اِنْ شِئْتُمْ ﴿وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, জামাআতে সালাত আদায়ের ফযীলত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। আর রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ ফজরের সালাতের সময় মিলিত হয়ে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) আরো বলতেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। ‘‘আর ফজরের সালাতের কুরআন পাঠ (করলে), নিশ্চয় এতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১৭ সহীহ মুসলিম, হা/১৫০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৫১।]
২. যত বেশি দূর থেকে আসবে তত বেশি সওয়াব হবে :
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ اَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ اَنْ يَّتَحَوَّلُوْا اِلٰى قُرْبِ الْمَسْجِدِ فَكَرِهَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَنْ تُعْرَى الْمَدِيْنَةُ وَقَالَ يَا بَنِيْ سَلِمَةَ اَلَا تَحْتَسِبُوْنَ اٰثَارَكُمْ فَاَقَامُوْا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা (মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে) মসজিদে নববীর কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার ঐ এলাকা পরিত্যাগ করা অপছন্দ করলেন। ফলে তিনি বনু সালিমার লোকদেরকে বললেন, হে বনু সালিমা! তোমরা কি মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের পদচারণার অর্থাৎ পায়ে হেঁটে আসার সওয়াব কামনা করো না? এরপর বনু সালিমা তাদের স্থানে অবস্থান করল। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৯৬।]
৩. প্রত্যেক কদমে গোনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : صَلَاةُ الْجَمِيْعِ تَزِيْدُ عَلٰى صَلَاتِهٖ فِيْ بَيْتِهٖ وَصَلَاتِهٖ فِيْ سُوْقِهٖ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا تَوَضَّاَ فَاَحْسَنَ وَاَتَى الْمَسْجِدَ لَا يُرِيْدُ اِلَّا الصَّلَاةَ لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً اِلَّا رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْهُ خَطِيْئَةً حَتّٰى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ ، وَاِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِيْ صَلَاةٍ مَا كَانَتْ تَحْبِسُهٗ وَتُصَلِّيْ ، يَعْنِيْ عَلَيْهِ - الْمَلَائِكَةُ مَا دَامَ فِيْ مَجْلِسِهِ الَّذِيْ يُصَلِّيْ فِيْهِ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) সালাত আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহমত করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৪; জামেউস সগীর, হা/৭২৭১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৭০২।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : كُلُّ سُلَامٰى عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ يُعِيْنُ الرَّجُلَ فِيْ دَابَّتِهٖ يُحَامِلُهٗ عَلَيْهَا ، اَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهٗ صَدَقَةٌ وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ وَكُلُّ خَطْوَةٍ يَمْشِيْهَا اِلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ وَدَلُّ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মানুষের) শরীরের প্রতি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদাকা ওয়াজিব হয়। কোন ব্যক্তিকে তার সওয়ারীর উপর আরোহণ করতে সাহায্য করা অথবা তার মালপত্র উঠিয়ে দেয়া সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। আর উত্তম কথা বলা এবং সালাতের উদ্দেশ্যে যাতায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। পথিককে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১৬৮।]
৪. মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকে :
عَنْ اَبِى اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ - -قَالَ : ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ رَجُلٌ خَرَجَ غَازِيًا فِى سَبِيْلِ اللهِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ اَوْ يَرُدَّهٗ بِمَا نَالَ مِنْ اَجْرٍ وَغَنِيْمَةٍ وَرَجُلٌ رَاحَ اِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ اَوْ يَرُدَّهٗ بِمَا نَالَ مِنْ اَجْرٍ وَغَنِيْمَةٍ وَرَجُلٌ دَخَلَ بَيْتَهٗ بِسَلَامٍ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
আবু উমাম আল বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছেন।
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে বের হয়েছে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সওয়াব ও গনীমত সহকারে ফিরিয়ে আনেন।
(২) যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করেছে অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে অথবা সওয়াব নিয়ে ফিরে এসেছে; সে আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে।
(৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [আবূ দাঊদ, হা/২৪৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪০০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২১; মিশকাত, হা/৭২৭।]
৫. মসজিদে গেলে ফেরেশতাদের দু‘আ পাওয়া যায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّيْ عَلٰى اَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِيْ مُصَلَّاهُ الَّذِيْ صَلّٰى فِيْهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুললাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যতক্ষণ সালাত আদায়ের পর স্বস্থানে অযু অবস্থায় অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির জন্য এভাবে দু‘আ করতে থাকেন- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো এবং তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো।’’ [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮০; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৭৩।]
৬. মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম স্থান :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : اَحَبُّ الْبِلَادِ اِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا وَاَبْغَضُ الْبِلَادِ اِلَى اللهِ اَسْوَاقُهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদসমূহ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থান হলো বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬০; ইবনে খুযায়মা, হা/১২৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬০০; জামেউস সগীর, হা/১৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৬৯৬।]
৭. সকাল-বিকাল মসজিদে যাওয়ার বিশেষ পুরস্কার :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ غَدَا اِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ اَعَدَّ اللهُ لَهٗ نُزُلَهٗ مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا ، اَوْ رَاحَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার প্রত্যেক বারের আসা-যাওয়ার পরিবর্তে জান্নাতে একটি করে মেহমানদারী (আপ্যায়ন) প্রস্তুত করে রাখবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৬১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৬; জমেউস সগীর, হা/১১৩৪৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৪; মিশকাত, হা/৬৯৮।]
৮. অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদেরকে নূর দেয়া হবে :
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِى الظُّلَمِ اِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
বুরাইদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়, তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। [তিরমিযী, হা/২২৩; আবূ দাঊদ, হা/৫৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮১; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৫; মিশকাত, হা/৭২১।]
৯. ফজর ও এশার জামাআতের বিশেষ ফযীলত :
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ --: ﷺ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِى جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِى جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার সালাত জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধরাত্রি সালাত পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি সালাত আদায় করল। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২৩; আবু দাউদ, হা/৫৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪১৫; মিশকাত, হা/৬৩০।]
১০. প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْاَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا اِلَّا اَنْ يَّسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لَاسْتَبَقُوْا اِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে সালাতে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৯; জামেউস সগীর, হা/৯৪৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
১১. জামাআতে সালাত আদায়কারীরা হাশরের দিন আল্লাহর ছায়ায় স্থান পাবে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهٖ يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهٗ اَلْاِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَاَ فِيْ عِبَادَةِ رَبِّهٖ وَرَجُلٌ قَلْبُهٗ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَاَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ اِنِّيْ اَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ اَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهٗ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهٗ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তারা একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৬; মিশকাত, হা/৭০১।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : صَلَاةُ الرَّجُلِ فِى الْجَمَاعَةِ تَزِيْدُ عَلٰى صَلَاتِهٖ وَحْدَهٗ سَبْعًا وَّعِشْرِيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে সালাত আদায় করার সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬১০; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৮।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : فَضْلُ صَلَاةِ الْجَمِيْعِ عَلٰى صَلَاةِ الْوَاحِدِ خَمْسٌ وَّعِشْرُوْنَ دَرَجَةً وَّتَجْتَمِعُ مَلَائِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النَّهَارِ فِيْ صَلَاةِ الصُّبْحِ يَقُوْلُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : اِقْرَؤُوْا اِنْ شِئْتُمْ ﴿وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, জামাআতে সালাত আদায়ের ফযীলত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। আর রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ ফজরের সালাতের সময় মিলিত হয়ে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) আরো বলতেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। ‘‘আর ফজরের সালাতের কুরআন পাঠ (করলে), নিশ্চয় এতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১৭ সহীহ মুসলিম, হা/১৫০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৫১।]
২. যত বেশি দূর থেকে আসবে তত বেশি সওয়াব হবে :
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ اَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ اَنْ يَّتَحَوَّلُوْا اِلٰى قُرْبِ الْمَسْجِدِ فَكَرِهَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَنْ تُعْرَى الْمَدِيْنَةُ وَقَالَ يَا بَنِيْ سَلِمَةَ اَلَا تَحْتَسِبُوْنَ اٰثَارَكُمْ فَاَقَامُوْا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা (মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে) মসজিদে নববীর কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার ঐ এলাকা পরিত্যাগ করা অপছন্দ করলেন। ফলে তিনি বনু সালিমার লোকদেরকে বললেন, হে বনু সালিমা! তোমরা কি মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের পদচারণার অর্থাৎ পায়ে হেঁটে আসার সওয়াব কামনা করো না? এরপর বনু সালিমা তাদের স্থানে অবস্থান করল। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৯৬।]
৩. প্রত্যেক কদমে গোনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : صَلَاةُ الْجَمِيْعِ تَزِيْدُ عَلٰى صَلَاتِهٖ فِيْ بَيْتِهٖ وَصَلَاتِهٖ فِيْ سُوْقِهٖ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا تَوَضَّاَ فَاَحْسَنَ وَاَتَى الْمَسْجِدَ لَا يُرِيْدُ اِلَّا الصَّلَاةَ لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً اِلَّا رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْهُ خَطِيْئَةً حَتّٰى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ ، وَاِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِيْ صَلَاةٍ مَا كَانَتْ تَحْبِسُهٗ وَتُصَلِّيْ ، يَعْنِيْ عَلَيْهِ - الْمَلَائِكَةُ مَا دَامَ فِيْ مَجْلِسِهِ الَّذِيْ يُصَلِّيْ فِيْهِ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) সালাত আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহমত করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৪; জামেউস সগীর, হা/৭২৭১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৭০২।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : كُلُّ سُلَامٰى عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ يُعِيْنُ الرَّجُلَ فِيْ دَابَّتِهٖ يُحَامِلُهٗ عَلَيْهَا ، اَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهٗ صَدَقَةٌ وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ وَكُلُّ خَطْوَةٍ يَمْشِيْهَا اِلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ وَدَلُّ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মানুষের) শরীরের প্রতি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদাকা ওয়াজিব হয়। কোন ব্যক্তিকে তার সওয়ারীর উপর আরোহণ করতে সাহায্য করা অথবা তার মালপত্র উঠিয়ে দেয়া সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। আর উত্তম কথা বলা এবং সালাতের উদ্দেশ্যে যাতায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। পথিককে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১৬৮।]
৪. মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকে :
عَنْ اَبِى اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ - -قَالَ : ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ رَجُلٌ خَرَجَ غَازِيًا فِى سَبِيْلِ اللهِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ اَوْ يَرُدَّهٗ بِمَا نَالَ مِنْ اَجْرٍ وَغَنِيْمَةٍ وَرَجُلٌ رَاحَ اِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ اَوْ يَرُدَّهٗ بِمَا نَالَ مِنْ اَجْرٍ وَغَنِيْمَةٍ وَرَجُلٌ دَخَلَ بَيْتَهٗ بِسَلَامٍ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
আবু উমাম আল বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছেন।
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে বের হয়েছে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সওয়াব ও গনীমত সহকারে ফিরিয়ে আনেন।
(২) যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করেছে অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে অথবা সওয়াব নিয়ে ফিরে এসেছে; সে আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে।
(৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [আবূ দাঊদ, হা/২৪৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪০০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২১; মিশকাত, হা/৭২৭।]
৫. মসজিদে গেলে ফেরেশতাদের দু‘আ পাওয়া যায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّيْ عَلٰى اَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِيْ مُصَلَّاهُ الَّذِيْ صَلّٰى فِيْهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুললাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যতক্ষণ সালাত আদায়ের পর স্বস্থানে অযু অবস্থায় অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির জন্য এভাবে দু‘আ করতে থাকেন- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো এবং তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো।’’ [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮০; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৭৩।]
৬. মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম স্থান :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - قَالَ : اَحَبُّ الْبِلَادِ اِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا وَاَبْغَضُ الْبِلَادِ اِلَى اللهِ اَسْوَاقُهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদসমূহ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থান হলো বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬০; ইবনে খুযায়মা, হা/১২৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬০০; জামেউস সগীর, হা/১৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৬৯৬।]
৭. সকাল-বিকাল মসজিদে যাওয়ার বিশেষ পুরস্কার :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ غَدَا اِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ اَعَدَّ اللهُ لَهٗ نُزُلَهٗ مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا ، اَوْ رَاحَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার প্রত্যেক বারের আসা-যাওয়ার পরিবর্তে জান্নাতে একটি করে মেহমানদারী (আপ্যায়ন) প্রস্তুত করে রাখবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৬১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৬; জমেউস সগীর, হা/১১৩৪৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৪; মিশকাত, হা/৬৯৮।]
৮. অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদেরকে নূর দেয়া হবে :
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِى الظُّلَمِ اِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
বুরাইদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়, তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। [তিরমিযী, হা/২২৩; আবূ দাঊদ, হা/৫৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮১; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৫; মিশকাত, হা/৭২১।]
৯. ফজর ও এশার জামাআতের বিশেষ ফযীলত :
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ --: ﷺ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِى جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِى جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার সালাত জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধরাত্রি সালাত পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি সালাত আদায় করল। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২৩; আবু দাউদ, হা/৫৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪১৫; মিশকাত, হা/৬৩০।]
১০. প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْاَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا اِلَّا اَنْ يَّسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لَاسْتَبَقُوْا اِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে সালাতে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৯; জামেউস সগীর, হা/৯৪৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
১১. জামাআতে সালাত আদায়কারীরা হাশরের দিন আল্লাহর ছায়ায় স্থান পাবে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهٖ يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهٗ اَلْاِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَاَ فِيْ عِبَادَةِ رَبِّهٖ وَرَجُلٌ قَلْبُهٗ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَاَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ اِنِّيْ اَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ اَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهٗ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهٗ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তারা একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৬; মিশকাত, হা/৭০১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনায় হিজরতের পূর্বে নবুয়াতের ১২ বা ১৩তম বছরে ‘মিরাজ’ এর মাধ্যমে আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সান্নিধ্য লাভ করেন। এ সময়েই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উম্মতের জন্য সালাত আদায় ফরয করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হলেও বিশেষ অনুরোধের মাধ্যমে নবী করীম ﷺ তাঁর উম্মতের জন্য ৫ ওয়াক্ত ধার্য করে নিয়ে আসেন। তবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ আশ্বাসও দিলেন যে, যদি তার কোন উম্মত এই ৫ ওয়াক্ত সালাত সুন্দরভাবে আদায় করে তবে তিনি তার জন্য ৫০ ওয়াক্তেরই সওয়াব প্রদান করবেন।
সালাত ফরয হওয়ার শুরম্নতে ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতগুলো দু’দু’ রাক‘আত করেই ফরয ছিল। পরে যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনায় হিজরত করলেন তখন যোহর, আসর এবং এশার সালাত ২ রাক‘আত বাড়িয়ে ৪ রাক‘আত করা হলো। তবে সফরের সালাত আগের মতো বহাল থাকল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫০; মুসনাদে আহমাদ হা/ ৪৫৩; নাসাঈ হা/৪৫৬।]
সালাত ফরয হওয়ার শুরম্নতে ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতগুলো দু’দু’ রাক‘আত করেই ফরয ছিল। পরে যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনায় হিজরত করলেন তখন যোহর, আসর এবং এশার সালাত ২ রাক‘আত বাড়িয়ে ৪ রাক‘আত করা হলো। তবে সফরের সালাত আগের মতো বহাল থাকল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫০; মুসনাদে আহমাদ হা/ ৪৫৩; নাসাঈ হা/৪৫৬।]
কুরআন এবং হাদীসে আমাদেরকে সালাত কায়েম করতে বলা হয়েছে। সুতরাং সালাত আদায় করাই যথেষ্ট নয়; সালাত কায়েম করা জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
সালাত কায়েম হবে তখন, যখন সালাত আদায়কারী বাহ্যিকভাবে সালাতের যাবতীয় আরকান-আহকাম, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি পালন করবে এবং তার আধ্যাত্মিক বিষয়াবলি প্রতিষ্ঠা করে মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করবে। নিজের সালাত তো আদায় করবেই- সেই সাথে নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র সালাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। যাতে মুসলিমদের মধ্যে কেউ সালাত ত্যাগকারী না থাকে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তাঁর হুকুম পালনার্থে, তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরাগ, ভক্তি ও প্রেম প্রকাশার্থে, তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের আশায়, তাঁর আযাবের ভয়ে এবং তাঁর সওয়াব ও ক্ষমার প্রত্যাশায় সালাত পড়তে হবে। তখনই সেই সালাত সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনবে এবং সালাত আদায়কারীকে পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখবে।
﴿فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
সালাত কায়েম হবে তখন, যখন সালাত আদায়কারী বাহ্যিকভাবে সালাতের যাবতীয় আরকান-আহকাম, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি পালন করবে এবং তার আধ্যাত্মিক বিষয়াবলি প্রতিষ্ঠা করে মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করবে। নিজের সালাত তো আদায় করবেই- সেই সাথে নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র সালাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। যাতে মুসলিমদের মধ্যে কেউ সালাত ত্যাগকারী না থাকে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তাঁর হুকুম পালনার্থে, তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরাগ, ভক্তি ও প্রেম প্রকাশার্থে, তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের আশায়, তাঁর আযাবের ভয়ে এবং তাঁর সওয়াব ও ক্ষমার প্রত্যাশায় সালাত পড়তে হবে। তখনই সেই সালাত সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনবে এবং সালাত আদায়কারীকে পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখবে।
সালাতে মনোযোগ দেয়া অর্থাৎ খুশু ও খুযূর সাথে সালাত আদায় করা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এটা না থাকলে সালাতটা প্রাণহীন দেহের মতো হয়ে যায়। সালাত হলো বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে মুনাজাত বা গোপন কথোপকথন। সালাতে আমি আল্লাহর কাছে কী আবেদন করলাম আর আল্লাহ আমাকে কী বললেন তা বুঝে বুঝে সালাত আদায় করাই হলো সালাতের প্রাণশক্তি। সালাতের বাহ্যিক কাঠামোর সাথে প্রাণের সংযোগ না থাকলে সেই সালাত যথার্থ হয় না। আর সালাতের বাহ্যিক কাঠামোর সাথে প্রাণের সংযোগ দিতে হলে ‘হুজূরে ক্বল্ব’ তথা মনের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। মন উপস্থিত রেখে একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করাই সালাতের মূল বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ﴾
মু’মিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে; যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন ১, ২)
হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ الرَّجُلَ لَيَنْصَرِفُ وَمَا كُتِبَ لَهٗ اِلَّا عُشْرُ صَلَاتِهٖ تُسْعُهَا ثُمُنُهَا سُبُعُهَا سُدُسُهَا خُمُسُهَا رُبُعُهَا ثُلُثُهَا نِصْفُهَا
আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় কোন ব্যক্তি সালাত সমাপ্ত করে, কিন্তু তার জন্য ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, ৩ ভাগের ১ ভাগ অথবা ২ ভাগের ১ ভাগ মাত্র লিপিবদ্ধ হয়। [আবূ দাঊদ, হা/৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯১৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৬১৫; জামেউস সগীর, হা/২৫০৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৩৭।]
সুতরাং যার সালাত যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী হবে তার সালাত তত বেশি পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ হবে। অন্যথায় সেই কমতি অনুসারে সওয়াবও কম হতে থাকবে।
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ﴾
মু’মিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে; যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন ১, ২)
হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِنَّ الرَّجُلَ لَيَنْصَرِفُ وَمَا كُتِبَ لَهٗ اِلَّا عُشْرُ صَلَاتِهٖ تُسْعُهَا ثُمُنُهَا سُبُعُهَا سُدُسُهَا خُمُسُهَا رُبُعُهَا ثُلُثُهَا نِصْفُهَا
আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় কোন ব্যক্তি সালাত সমাপ্ত করে, কিন্তু তার জন্য ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, ৩ ভাগের ১ ভাগ অথবা ২ ভাগের ১ ভাগ মাত্র লিপিবদ্ধ হয়। [আবূ দাঊদ, হা/৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯১৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৬১৫; জামেউস সগীর, হা/২৫০৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৩৭।]
সুতরাং যার সালাত যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী হবে তার সালাত তত বেশি পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ হবে। অন্যথায় সেই কমতি অনুসারে সওয়াবও কম হতে থাকবে।
সালাতের মধ্যে বান্দার মন কোথা হতে কোথায় বিচরণ করে সালাত আদায়কারী তা টেরও পায় না। তার কারণ হলো মানব মন কল্পনার রাজ্যে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে অভ্যস্ত। মনকে গভীর মনোযোগের সাথে কোন কাজে নিয়োজিত না রাখলে তা স্থির থাকে না। তাছাড়া শয়তান মানুষের চিরশত্রু, সে বান্দার সালাত নষ্ট করার জন্য বিভিনণ বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়। হাদীসে এসেছে-
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ اَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهٗ ضُرَاطٌ حَتّٰى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِيْنَ فَاِذَا قَضَى النِّدَاءَ اَقْبَلَ حَتّٰى اِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ اَدْبَرَ حَتّٰى اِذَا قَضَى التَّثْوِيْبَ اَقْبَلَ حَتّٰى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهٖ يَقُوْلُ اُذْكُرْ كَذَا اُذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتّٰى يَظَلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِيْ كَمْ صَلّٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যাতে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে, পরে যখন ইকামত হয় তখন আবার পালিয়ে যায়। ইকামত শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে এবং বান্দার মনে নানা সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে বলতে থাকে- ‘‘এটা মনে করো, ঐটা মনে করো’’ অথচ এ সকল বিষয় সালাতে দাঁড়ানোর আগে মনে ছিল না, শেষ পর্যন্ত বান্দা কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তাও মনে থাকে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫২; সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; আবু দাউদ, হা/৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৬৫৫।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنَ اَبِى الْعَاصِ اَتَى النَّبِىَّ -ﷺ - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ صَلَاتِىْ وَقِرَاءَتِىْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ -: ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهٗ خِنْزِبٌ فَاِذَا اَحْسَسْتَهٗ فَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا ‐ قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَاَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّىْ
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার সালাত এবং কিরাআতের মাঝে গোলমাল সৃষ্টি করে। (বাঁচার উপায় কী?) নবী বললেন, ওটা হলো ‘খিনযাব’ নামক শয়তান। তুমি ঐরূপ অনুভব করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলবে।’’ উসমান (রাঃ) বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার নিকট থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯২৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫১৪; মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৮২৮৩; মিশকাত, হা/৭৭।]
অতএব মনের স্বাধীন বিচরণ এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে সালাতে মনোযোগ আসে না। তবে সালাতে মনকে আঁকড়ে ধরে রাখা একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ ‐ - الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْ رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾
তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর এটি কষ্টকর কাজ, তবে যারা বিনয়ী তাদের জন্য কঠিন নয়। (বিনয়ী তারা) যারা এ কথা মনে করে যে, তাদের রবের সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা- ৪৫, ৪৬)
সুতরাং এ রোগের ঔষধ অনুযায়ী যারা খুশু-খুযূ ও মনের স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করে এবং এ জন্য কিছুটা চেষ্টা সাধনা করে তাদের পক্ষে সালাতে মনকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব। মানুষের মন একসাথে দুটি কাজ করতে পারে না, একটি কাজ করলে সে অন্যটি ছাড়তে বাধ্য। তাই সালাতে দাঁড়ালে তাকে একটি কাজ করতে হবে। আর সে কাজ হলো সালাত আদায়কারী সালাতের মধ্যে যা কিছু পড়বে- মন তা বুঝবে।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ اَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهٗ ضُرَاطٌ حَتّٰى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِيْنَ فَاِذَا قَضَى النِّدَاءَ اَقْبَلَ حَتّٰى اِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ اَدْبَرَ حَتّٰى اِذَا قَضَى التَّثْوِيْبَ اَقْبَلَ حَتّٰى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهٖ يَقُوْلُ اُذْكُرْ كَذَا اُذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتّٰى يَظَلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِيْ كَمْ صَلّٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যাতে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে, পরে যখন ইকামত হয় তখন আবার পালিয়ে যায়। ইকামত শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে এবং বান্দার মনে নানা সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে বলতে থাকে- ‘‘এটা মনে করো, ঐটা মনে করো’’ অথচ এ সকল বিষয় সালাতে দাঁড়ানোর আগে মনে ছিল না, শেষ পর্যন্ত বান্দা কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তাও মনে থাকে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫২; সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; আবু দাউদ, হা/৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৬৫৫।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنَ اَبِى الْعَاصِ اَتَى النَّبِىَّ -ﷺ - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ صَلَاتِىْ وَقِرَاءَتِىْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ -: ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهٗ خِنْزِبٌ فَاِذَا اَحْسَسْتَهٗ فَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا ‐ قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَاَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّىْ
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার সালাত এবং কিরাআতের মাঝে গোলমাল সৃষ্টি করে। (বাঁচার উপায় কী?) নবী বললেন, ওটা হলো ‘খিনযাব’ নামক শয়তান। তুমি ঐরূপ অনুভব করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলবে।’’ উসমান (রাঃ) বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার নিকট থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯২৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫১৪; মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৮২৮৩; মিশকাত, হা/৭৭।]
অতএব মনের স্বাধীন বিচরণ এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে সালাতে মনোযোগ আসে না। তবে সালাতে মনকে আঁকড়ে ধরে রাখা একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ ‐ - الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْ رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾
তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর এটি কষ্টকর কাজ, তবে যারা বিনয়ী তাদের জন্য কঠিন নয়। (বিনয়ী তারা) যারা এ কথা মনে করে যে, তাদের রবের সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা- ৪৫, ৪৬)
সুতরাং এ রোগের ঔষধ অনুযায়ী যারা খুশু-খুযূ ও মনের স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করে এবং এ জন্য কিছুটা চেষ্টা সাধনা করে তাদের পক্ষে সালাতে মনকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব। মানুষের মন একসাথে দুটি কাজ করতে পারে না, একটি কাজ করলে সে অন্যটি ছাড়তে বাধ্য। তাই সালাতে দাঁড়ালে তাকে একটি কাজ করতে হবে। আর সে কাজ হলো সালাত আদায়কারী সালাতের মধ্যে যা কিছু পড়বে- মন তা বুঝবে।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ এর সাহাবীদের ইবাদাতের আগ্রহ বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর সাথে এক যুদ্ধে বের হলাম। অভিযানের এক পর্যায়ে মুসলিমদের এক ব্যক্তি এক মুশরিক মহিলাকে হত্যা করে ফেললে তার স্বামী প্রতিজ্ঞা করল যে, মুহাম্মাদের সঙ্গীদের মধ্যে কারো রক্তপাত না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হবে না। এ সংকল্প নিয়ে সে সাহাবাদের খোঁজে বের হলো। এদিকে নবী ﷺ এক মঞ্জিলে বিশ্রাম নিতে অবতরণ করলেন এবং বললেন, কে আমাদের (নিরাপত্তার) জন্য পাহারা দেবে? তখন মুহাজিরদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এবং আনসারদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি পাহারা দিতে প্রস্তুত হলেন। তাদেরকে নবী ﷺ বললেন, তোমরা এই উপত্যাকার মুখে অবস্থান করো। অতঃপর তারা দু’জন যখন উপত্যকার মুখে পৌঁছলেন, তখন মুহাজির (বিশ্রামের জন্য) শয়ন করলেন এবং আনসার উঠে সালাত পড়তে শুরু করলেন। এমতাবস্থায় উক্ত মুশরিক লোকটি কাছাকাছি এসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, তিনি সালাতেই মশগুল থাকলেন। এভাবে পরপর তিনটি তীর খেয়েও তিনি সালাত সম্পন্ন করলেন। অতঃপর যখন তার সঙ্গী মুহাজির জেগে উঠলেন তখন মুশরিকটি পালিয়ে গেল। এরপর আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত দেহের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম বার যখন তীর মারল তখনই আমাকে জাগিয়ে দাওনি কেন? তিনি উত্তরে বললেন,
كُنْتُ فِي سُورَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ قَدِ افْتَتَحْتُهَا اُصَلِّي بِهَا ، فَكَرِهْتُ اَنْ اَقْطَعَهَا
আমি একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে ছাড়তে পছন্দ করলাম না! [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯০৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯৬; দার কুতনী, হা/৭৬৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৫৭।]
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরীন (রহ.) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন আল্লাহর ভয়ে তাঁর চেহারা শুকিয়ে যেত। [কিতাবুস সালাত অমায়্যালমাযু ফীহা ২০ পৃঃ।]
ইবনে যুবায়ের (রহ.) যখন সিজদা দিতেন তখন চড়ুই পাখিরা তার পিঠে নেমে আসতো এবং তারা মনে করতে যে, এটা কোন দেয়ালের খুঁটি। [সিফাতুস সাফআহ ২/৩২২।]
উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, সাধ্যমতো বুঝেসুঝে সালাত আদায় করতে হবে। সেজন্য সালাতের নিয়মকানুন ভালো করে শিখতে হবে এবং সূরা ও দু‘আগুলোর অর্থও জানার চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ সালাত আদায়কারীর সালাত সঠিক হয় না। যার কারণে এর ফলাফলও দেখতে পাওয়া যায় না। মুরগীর খাবার খাওয়ার মতো সালাত আদায় করলে সালাতের সুফল পাওয়া যাবে না। তাই ধীরে-সুস্থে, ভীত ও বিনয়চিত্তে খুশু-খুযূ সহকারে সালাত আদায় করতে হবে।
كُنْتُ فِي سُورَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ قَدِ افْتَتَحْتُهَا اُصَلِّي بِهَا ، فَكَرِهْتُ اَنْ اَقْطَعَهَا
আমি একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে ছাড়তে পছন্দ করলাম না! [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯০৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯৬; দার কুতনী, হা/৭৬৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৫৭।]
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরীন (রহ.) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন আল্লাহর ভয়ে তাঁর চেহারা শুকিয়ে যেত। [কিতাবুস সালাত অমায়্যালমাযু ফীহা ২০ পৃঃ।]
ইবনে যুবায়ের (রহ.) যখন সিজদা দিতেন তখন চড়ুই পাখিরা তার পিঠে নেমে আসতো এবং তারা মনে করতে যে, এটা কোন দেয়ালের খুঁটি। [সিফাতুস সাফআহ ২/৩২২।]
উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, সাধ্যমতো বুঝেসুঝে সালাত আদায় করতে হবে। সেজন্য সালাতের নিয়মকানুন ভালো করে শিখতে হবে এবং সূরা ও দু‘আগুলোর অর্থও জানার চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ সালাত আদায়কারীর সালাত সঠিক হয় না। যার কারণে এর ফলাফলও দেখতে পাওয়া যায় না। মুরগীর খাবার খাওয়ার মতো সালাত আদায় করলে সালাতের সুফল পাওয়া যাবে না। তাই ধীরে-সুস্থে, ভীত ও বিনয়চিত্তে খুশু-খুযূ সহকারে সালাত আদায় করতে হবে।
আমরা জানতে পেরেছি যে, সালাতে মনোযোগ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন আমাদেরকে জানতে হবে কোন্ কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করলে সালাতে মনোযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করতে হবে।
১. সালাত আরম্ভ করার সময় একান্ত প্রয়োজনীয় কোন কাজ থাকলে তা আগে সেরে নেয়া ভালো, তাহলে সালাতের মধ্যে সেদিকে মন যাবে না। এজন্য শরীয়তের নির্দেশ হলো, কারো যদি বেশি ক্ষুধা লাগে আর খানা তৈরি হয়ে যায় অথবা প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হয়, তবে আগে এসব কাজ সেরে নিতে হবে। তার কারণ হলো, বান্দা একটি অবসর মন নিয়ে সালাত শুরু করবে, তাহলেই সে সালাতের হক আদায় করতে পারবে।
২. হাট-বাজারে বা সফরে থাকলে সাথের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে এসব হারানোর চিন্তায় না পড়তে হয়।
৩. ওঠা-বসা কষ্টকর হয় এমন টাইট-ফিট পোশাক পরে সালাত আদায় করা উচিৎ নয়। সালাতরত অবস্থায় পোশাক যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা সালাতে মন থাকার পরিবর্তে পোশাক ঠিক করার দিকে মন থাকবে।
৪. মহিলাদেরকে সালাত আদায়কারী হওয়ার সাথে সাথে পর্দাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ বেপর্দা মহিলারা যখন মাথায় কাপড় পরে সালাত আদায় করে তখন তারা তাড়াতাড়ি সালাত শেষ করে চাদর খুলতে চেষ্টা করে। এজন্য সালাতে মন বসে না।
৫. সালাতের সময় ঘুম এলে যথাসম্ভব তা দূর করে সালাত আদায় করতে হবে।
عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا نَعَسَ اَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّيْ فَلْيَرْقُدْ حَتّٰى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا صَلّٰى وَهُوَ نَاعِسٌ لَا يَدْرِيْ لَعَلَّهٗ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبَّ نَفْسَهٗ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যদি সালাতে ঝিমাতে থাকে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে, যাতে তার নিদ্রার ভাব কেটে যায়। নতুবা যখন কেউ ঝিমানো অবস্থায় সালাত আদায় করবে তখন সে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৭; সহীহ বুখারী, হা/২১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৭১; আবু দাউদ, হা/১৩১২; তিরমিযী, হা/৩৫৫; ইবনে মাজাহ হা/১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪১; মিশকাত, হা/১২৪৫।]
عَنْ اَنَسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِذَا نَعَسَ اَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَنَمْ حَتّٰى يَعْلَمَ مَا يَقْرَاُ
আনাস (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ সালাতে ঝিমাতে থাকবে তখন সে যেন ঘুমিয়ে নেয়। যতক্ষণ না সে যা পড়ছে তা বুঝতে পারে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪২।]
অবশ্য এমন ঘুম বৈধ নয়, যার ফলে সালাতের সময় পার হয়ে যায়।
৬. যথাসম্ভব নিরব জায়গায় সালাত আদায় করা উচিত, কোন বড় জায়গায় সালাত আদায় করতে হলে সামনে সুতরা/লাঠি বা অন্য কিছু রেখে অথবা খুঁটি/দেয়ালের কাছাকাছি গিয়ে সালাত শুরু করা আবশ্যক। এতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৭. এমন কোন জিনিস সামনে রেখে সালাতে দাঁড়ানো ঠিক নয় যার দিকে মনোযোগ চলে যায়।
عَنْ اَنَسٍ كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهٖ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ اَمِيْطِيْ عَنَّا قِرَامَكِ هٰذَا ، فَاِنَّهٗ لَا تَزَالُ تَصَاوِيْرُهٗ تَعْرِضُ فِيْ صَلَاتِيْ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) এর একখানা হালকা পাতলা পশমী রঙ্গিন নকশাওয়ালা পর্দার কাপড় ছিল, যা দ্বারা তিনি হুজরার এক কিনারায় পর্দা করেছিলেন। নবী ﷺ তাঁকে বললেন, তোমার এ পর্দা আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও। কেননা তার নকশাগুলো সালাতে বার বার আমার সামনে পড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৩; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৮. খুব তাড়াহুড়া না করে ধীর-স্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রুকনের হক আদায় করতে হবে। দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কতইনা মনোযোগ দিয়ে করি, কত সময় এতে ব্যয় করি আর সালাতের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেব- এটা কি ঠিক হবে?
৯. সালাতের কারণে কাজে যে বিরতি দেব তাতে ক্ষতি হয়ে গেল মনে করব না বরং মনে করব- আমি যদি সালাতের জন্য সময় ব্যয় করি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমার সকল কাজে বরকত দেবেন। সময় আমাকে আল্লাহই দিয়েছেন; সুতরাং যিনি সময় দিয়েছেন, তাঁর কাজে সময় ব্যয় না করলে আর কোথায় করব?
১০. সালাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করে সালাতে দাঁড়াব। চিন্তা করব যে, এ সালাত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য এক বিরাট নিয়ামত। এর দ্বারা আমি আমার মালিকের নৈকট্য লাভ করব এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলব। সুন্দর করে সালাত আদায় করতে পারলে এর সওয়াব আমি নিজেই পাব আর একে নষ্ট করলে আমাকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
১১. সালাতে দাঁড়িয়ে খেয়াল করব আমি একজন অপরাধী- ক্ষমা নিতে এসেছি। আমি অসহায়- সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমি পীড়িত- নিরাপত্তা ও নিরাময়ের ভিখারী, রুযীহীন- রুযীর ভিখারী। এসব ভিক্ষা আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পাব না। তাই তো আমি প্রত্যেক রাক‘আতে বলে থাকি, আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতিহা- ৪)
১২. সালাত হবে আমার চক্ষু শীতলকারী, মন প্রশান্তকারী, সকল প্রকার ব্যথা ও বেদনার উপশমকারী।
عَنْ اَنَسٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : حُبِّبَ اِلَيَّ النِّسَاءُ ، وَالطِّيبُ ، وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِيْ فِي الصَّلَاةِ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আমার নিকট নারী ও সুগন্ধীকে পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর সালাতকে আমার চক্ষু শীতলতার কারণ বানানো হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩১৫; নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৭৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩২৪৮; মুজামুল আওসাত, হা/৫২০৩; মিশকাত, হা/৫২৬১।]
عَنْ سَالِمِ بْنِ اَبِى الْجَعْدِ .... فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : يَا بِلَالُ اَقِمِ الصَّلَاةَ اَرِحْنَا بِهَا
সালিম ইবনে আবু যা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, হে বিলাল! সালাতের ইকামতের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্তি দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১৩৭।]
১৩. আমি আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব করছি। এই দাসত্ব ঠিকমত হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। সুতরাং নিজের ত্রুটি স্বীকার করে মনকে ভীতি দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ﴾
যারা তাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে ভয়ের সাথে দান করে তারাই দ্রুত কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কি তারা, যারা মদ খায়, চুরি করে এবং ব্যভিচার করে? নবী ﷺ বললেন, না- হে সিদ্দীকের কন্যা! বরং (আল্লাহ এখানে তাদের কথা বলেছেন) যারা রোযা রাখে, সালাত আদায় করে এবং দান-খয়রাত করে, কিমুত এসব কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে তারা ভীত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩১৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৪৮৬; মিশকাত, হা/৫৩৫০।]
আমাদের আরো ভয় করতে হবে যে, আমরা যতই ইবাদাত করি না কেন, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। জান্নাতের মূল্য তো অবশ্যই নয়।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَنْ يُّنَجِّيَ اَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهٗ قَالُوْا ، وَلَا اَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ، وَلَا اَنَا اِلَّا اَنْ يَّتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ، سَدِّدُوْا وَقَارِبُوْا وَاغْدُوْا وَرُوْحُوْا وَشَيْءٌ مِّنَ الدُّلْجَةِ وَالْقَصْدَ الْقَصْدَ تَبْلُغُوا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের দ্বারা মুক্তি পাবে না। লোকেরা বলল, আপনিও (আপনার কাজের দ্বারা মুক্তি) পাবেন না? তিনি বললেন, না- আমিও না। তবে আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল-বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদাত করো। (এসব কাজে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, মধ্যমপন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৪৩০; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬১; মিশকাত, হা/২৩৭১।]
১৪. সালাতে যখন দাঁড়াব তখন অবস্থাটা এমন হবে যে, কোন গোলাম তার মালিকের সাথে বেআদবী করে পলায়ন করেছিল। অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তার মালিকের কাছে লজ্জিত অবস্থায় ফিরে আসল এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে লাগল। একজন মিসকীনের মতো নিজের ভুলের ক্ষমার জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে মনে ধারণা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি আমার আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, আর এতটুকু সম্ভব না হলে এ কথা অবশ্যই মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আমার সবকিছু দেখছেন, আমার সালাত আদায় করা দেখছেন। বান্দার কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। আমি সালাতের মধ্যে যা কিছু করব ও পড়ব তিনি তা দেখবেন ও শুনবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহসানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন,
اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করো, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে অন্তত এ ধারণা রাখো যে, নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ হা/৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭২; মিশকাত, হা/২।]
১৫. সালাতে দাঁড়ালে মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সাথে একান্ত নিরালায় আলাপ করছি। সুতরাং কারো সাথে কানে-কানে কথা বলার সময় মন ও খেয়াল কি অন্য দিকে থাকতে পারে?
عَنِ الْبَيَاضِيِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ خَرَجَ عَلَى النَّاسِ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ ، وَقَدْ عَلَتْ اَصْوَاتُهُمْ بِالْقِرَاءَةِ ، فَقَالَ : اِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِيْ رَبَّهٗ ، فَلْيَنْظُرْ بِمَا يُنَاجِيْهِ بِهٖ ، وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَعْضٍ بِالْقُرْاٰنِ
বায়াযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তখন লোকেরা সালাত আদায় করছিল এবং উচ্চ আওয়াজে কিরাআত পাঠ করছিল। তখন তিনি বললেন, অবশ্যই সালাত আদায়কারী তার প্রভুর সাথে নির্জনে আলাপ করে। সুতরাং তার লক্ষ্য করা উচিত- সে নির্জনে কী আলাপ করে? আর তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের সময় একে অপরের উপর আওয়াজকে উচ্চ করো না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮০৩৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬০৩; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৬. সালাতে দাঁড়িয়ে ধরে নেব যে, এটা আমার জীবনের শেষ সালাত। এরপর হয়তো আর সালাতের সুযোগ পাব না। যেন আমি আমার প্রিয়তমের নিকট থেকে বিদায়কালে শেষ সাক্ষাৎ করছি, শেষ কথা বলছি ও শেষ আবেদন জানিয়ে নিচ্ছি। এমন মুহূর্তে মন কি অন্য দিকে যেতে পারে?
عَنْ اَبِيْ اَيُّوْبَ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِيِّ ﷺ ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، عَلِّمْنِيْ ، وَاَوْجِزْ ، قَالَ : اِذَا قُمْتَ فِيْ صَلَاتِكَ فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ ، وَلَا تَكَلَّمْ بِكَلَامٍ تَعْتَذِرُ مِنْهُ ، وَاَجْمِعِ الْيَأْسَ عَمَّا فِيْ اَيْدِي النَّاسِ
আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে তখন শেষ সালাত আদায়ের ন্যায় সালাত পড়বে। এমন কথা বলো না, যা বললে ক্ষমা চাইতে হয়। আর লোকদের হাতে যা আছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাও। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০১; মিশকাত, হা/৫২২৬।]
১৭. সালাতে দাঁড়িয়ে মনে করব, আমাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে এবং ফিরে যেতে হবে সেই মহান বাদশার নিকট, যাঁর সামনে আমি দন্ডায়মান হয়েছি। তাঁর কাছে সকল কাজের হিসাবও দিতে হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ মানুষ যখন তার সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার সালাতকে সুন্দর করে। আর তুমি ঐ ব্যক্তির ন্যায় সালাত আদায় করো, যে ধারণা করে যে, সে আর সালাত আদায় করার সুযোগ পাবে না। আর তুমি এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকবে, যা করার পর তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। [জামেউস সগীর, হা/৮৫১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪২১।]
এ সকল উপদেশ মেনে চললে ইনশা-আল্লাহ সালাতে রূহ আসবে এবং তা কায়েম হবে, আর এ সালাতই হবে সালাত আদায়কারীকে মন্দ কাজ হতে বিরতকারী।
১. সালাত আরম্ভ করার সময় একান্ত প্রয়োজনীয় কোন কাজ থাকলে তা আগে সেরে নেয়া ভালো, তাহলে সালাতের মধ্যে সেদিকে মন যাবে না। এজন্য শরীয়তের নির্দেশ হলো, কারো যদি বেশি ক্ষুধা লাগে আর খানা তৈরি হয়ে যায় অথবা প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হয়, তবে আগে এসব কাজ সেরে নিতে হবে। তার কারণ হলো, বান্দা একটি অবসর মন নিয়ে সালাত শুরু করবে, তাহলেই সে সালাতের হক আদায় করতে পারবে।
২. হাট-বাজারে বা সফরে থাকলে সাথের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে এসব হারানোর চিন্তায় না পড়তে হয়।
৩. ওঠা-বসা কষ্টকর হয় এমন টাইট-ফিট পোশাক পরে সালাত আদায় করা উচিৎ নয়। সালাতরত অবস্থায় পোশাক যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা সালাতে মন থাকার পরিবর্তে পোশাক ঠিক করার দিকে মন থাকবে।
৪. মহিলাদেরকে সালাত আদায়কারী হওয়ার সাথে সাথে পর্দাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ বেপর্দা মহিলারা যখন মাথায় কাপড় পরে সালাত আদায় করে তখন তারা তাড়াতাড়ি সালাত শেষ করে চাদর খুলতে চেষ্টা করে। এজন্য সালাতে মন বসে না।
৫. সালাতের সময় ঘুম এলে যথাসম্ভব তা দূর করে সালাত আদায় করতে হবে।
عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا نَعَسَ اَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّيْ فَلْيَرْقُدْ حَتّٰى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا صَلّٰى وَهُوَ نَاعِسٌ لَا يَدْرِيْ لَعَلَّهٗ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبَّ نَفْسَهٗ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যদি সালাতে ঝিমাতে থাকে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে, যাতে তার নিদ্রার ভাব কেটে যায়। নতুবা যখন কেউ ঝিমানো অবস্থায় সালাত আদায় করবে তখন সে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৭; সহীহ বুখারী, হা/২১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৭১; আবু দাউদ, হা/১৩১২; তিরমিযী, হা/৩৫৫; ইবনে মাজাহ হা/১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪১; মিশকাত, হা/১২৪৫।]
عَنْ اَنَسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِذَا نَعَسَ اَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَنَمْ حَتّٰى يَعْلَمَ مَا يَقْرَاُ
আনাস (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ সালাতে ঝিমাতে থাকবে তখন সে যেন ঘুমিয়ে নেয়। যতক্ষণ না সে যা পড়ছে তা বুঝতে পারে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪২।]
অবশ্য এমন ঘুম বৈধ নয়, যার ফলে সালাতের সময় পার হয়ে যায়।
৬. যথাসম্ভব নিরব জায়গায় সালাত আদায় করা উচিত, কোন বড় জায়গায় সালাত আদায় করতে হলে সামনে সুতরা/লাঠি বা অন্য কিছু রেখে অথবা খুঁটি/দেয়ালের কাছাকাছি গিয়ে সালাত শুরু করা আবশ্যক। এতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৭. এমন কোন জিনিস সামনে রেখে সালাতে দাঁড়ানো ঠিক নয় যার দিকে মনোযোগ চলে যায়।
عَنْ اَنَسٍ كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهٖ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ اَمِيْطِيْ عَنَّا قِرَامَكِ هٰذَا ، فَاِنَّهٗ لَا تَزَالُ تَصَاوِيْرُهٗ تَعْرِضُ فِيْ صَلَاتِيْ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) এর একখানা হালকা পাতলা পশমী রঙ্গিন নকশাওয়ালা পর্দার কাপড় ছিল, যা দ্বারা তিনি হুজরার এক কিনারায় পর্দা করেছিলেন। নবী ﷺ তাঁকে বললেন, তোমার এ পর্দা আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও। কেননা তার নকশাগুলো সালাতে বার বার আমার সামনে পড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৩; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৮. খুব তাড়াহুড়া না করে ধীর-স্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রুকনের হক আদায় করতে হবে। দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কতইনা মনোযোগ দিয়ে করি, কত সময় এতে ব্যয় করি আর সালাতের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেব- এটা কি ঠিক হবে?
৯. সালাতের কারণে কাজে যে বিরতি দেব তাতে ক্ষতি হয়ে গেল মনে করব না বরং মনে করব- আমি যদি সালাতের জন্য সময় ব্যয় করি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমার সকল কাজে বরকত দেবেন। সময় আমাকে আল্লাহই দিয়েছেন; সুতরাং যিনি সময় দিয়েছেন, তাঁর কাজে সময় ব্যয় না করলে আর কোথায় করব?
১০. সালাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করে সালাতে দাঁড়াব। চিন্তা করব যে, এ সালাত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য এক বিরাট নিয়ামত। এর দ্বারা আমি আমার মালিকের নৈকট্য লাভ করব এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলব। সুন্দর করে সালাত আদায় করতে পারলে এর সওয়াব আমি নিজেই পাব আর একে নষ্ট করলে আমাকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
১১. সালাতে দাঁড়িয়ে খেয়াল করব আমি একজন অপরাধী- ক্ষমা নিতে এসেছি। আমি অসহায়- সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমি পীড়িত- নিরাপত্তা ও নিরাময়ের ভিখারী, রুযীহীন- রুযীর ভিখারী। এসব ভিক্ষা আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পাব না। তাই তো আমি প্রত্যেক রাক‘আতে বলে থাকি, আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতিহা- ৪)
১২. সালাত হবে আমার চক্ষু শীতলকারী, মন প্রশান্তকারী, সকল প্রকার ব্যথা ও বেদনার উপশমকারী।
عَنْ اَنَسٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : حُبِّبَ اِلَيَّ النِّسَاءُ ، وَالطِّيبُ ، وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِيْ فِي الصَّلَاةِ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আমার নিকট নারী ও সুগন্ধীকে পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর সালাতকে আমার চক্ষু শীতলতার কারণ বানানো হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩১৫; নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৭৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩২৪৮; মুজামুল আওসাত, হা/৫২০৩; মিশকাত, হা/৫২৬১।]
عَنْ سَالِمِ بْنِ اَبِى الْجَعْدِ .... فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : يَا بِلَالُ اَقِمِ الصَّلَاةَ اَرِحْنَا بِهَا
সালিম ইবনে আবু যা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, হে বিলাল! সালাতের ইকামতের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্তি দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১৩৭।]
১৩. আমি আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব করছি। এই দাসত্ব ঠিকমত হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। সুতরাং নিজের ত্রুটি স্বীকার করে মনকে ভীতি দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ﴾
যারা তাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে ভয়ের সাথে দান করে তারাই দ্রুত কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কি তারা, যারা মদ খায়, চুরি করে এবং ব্যভিচার করে? নবী ﷺ বললেন, না- হে সিদ্দীকের কন্যা! বরং (আল্লাহ এখানে তাদের কথা বলেছেন) যারা রোযা রাখে, সালাত আদায় করে এবং দান-খয়রাত করে, কিমুত এসব কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে তারা ভীত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩১৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৪৮৬; মিশকাত, হা/৫৩৫০।]
আমাদের আরো ভয় করতে হবে যে, আমরা যতই ইবাদাত করি না কেন, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। জান্নাতের মূল্য তো অবশ্যই নয়।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَنْ يُّنَجِّيَ اَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهٗ قَالُوْا ، وَلَا اَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ، وَلَا اَنَا اِلَّا اَنْ يَّتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ، سَدِّدُوْا وَقَارِبُوْا وَاغْدُوْا وَرُوْحُوْا وَشَيْءٌ مِّنَ الدُّلْجَةِ وَالْقَصْدَ الْقَصْدَ تَبْلُغُوا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের দ্বারা মুক্তি পাবে না। লোকেরা বলল, আপনিও (আপনার কাজের দ্বারা মুক্তি) পাবেন না? তিনি বললেন, না- আমিও না। তবে আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল-বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদাত করো। (এসব কাজে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, মধ্যমপন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৪৩০; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬১; মিশকাত, হা/২৩৭১।]
১৪. সালাতে যখন দাঁড়াব তখন অবস্থাটা এমন হবে যে, কোন গোলাম তার মালিকের সাথে বেআদবী করে পলায়ন করেছিল। অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তার মালিকের কাছে লজ্জিত অবস্থায় ফিরে আসল এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে লাগল। একজন মিসকীনের মতো নিজের ভুলের ক্ষমার জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে মনে ধারণা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি আমার আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, আর এতটুকু সম্ভব না হলে এ কথা অবশ্যই মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আমার সবকিছু দেখছেন, আমার সালাত আদায় করা দেখছেন। বান্দার কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। আমি সালাতের মধ্যে যা কিছু করব ও পড়ব তিনি তা দেখবেন ও শুনবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহসানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন,
اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করো, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে অন্তত এ ধারণা রাখো যে, নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ হা/৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭২; মিশকাত, হা/২।]
১৫. সালাতে দাঁড়ালে মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সাথে একান্ত নিরালায় আলাপ করছি। সুতরাং কারো সাথে কানে-কানে কথা বলার সময় মন ও খেয়াল কি অন্য দিকে থাকতে পারে?
عَنِ الْبَيَاضِيِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ خَرَجَ عَلَى النَّاسِ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ ، وَقَدْ عَلَتْ اَصْوَاتُهُمْ بِالْقِرَاءَةِ ، فَقَالَ : اِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِيْ رَبَّهٗ ، فَلْيَنْظُرْ بِمَا يُنَاجِيْهِ بِهٖ ، وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَعْضٍ بِالْقُرْاٰنِ
বায়াযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তখন লোকেরা সালাত আদায় করছিল এবং উচ্চ আওয়াজে কিরাআত পাঠ করছিল। তখন তিনি বললেন, অবশ্যই সালাত আদায়কারী তার প্রভুর সাথে নির্জনে আলাপ করে। সুতরাং তার লক্ষ্য করা উচিত- সে নির্জনে কী আলাপ করে? আর তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের সময় একে অপরের উপর আওয়াজকে উচ্চ করো না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮০৩৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬০৩; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৬. সালাতে দাঁড়িয়ে ধরে নেব যে, এটা আমার জীবনের শেষ সালাত। এরপর হয়তো আর সালাতের সুযোগ পাব না। যেন আমি আমার প্রিয়তমের নিকট থেকে বিদায়কালে শেষ সাক্ষাৎ করছি, শেষ কথা বলছি ও শেষ আবেদন জানিয়ে নিচ্ছি। এমন মুহূর্তে মন কি অন্য দিকে যেতে পারে?
عَنْ اَبِيْ اَيُّوْبَ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِيِّ ﷺ ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، عَلِّمْنِيْ ، وَاَوْجِزْ ، قَالَ : اِذَا قُمْتَ فِيْ صَلَاتِكَ فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ ، وَلَا تَكَلَّمْ بِكَلَامٍ تَعْتَذِرُ مِنْهُ ، وَاَجْمِعِ الْيَأْسَ عَمَّا فِيْ اَيْدِي النَّاسِ
আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে তখন শেষ সালাত আদায়ের ন্যায় সালাত পড়বে। এমন কথা বলো না, যা বললে ক্ষমা চাইতে হয়। আর লোকদের হাতে যা আছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাও। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০১; মিশকাত, হা/৫২২৬।]
১৭. সালাতে দাঁড়িয়ে মনে করব, আমাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে এবং ফিরে যেতে হবে সেই মহান বাদশার নিকট, যাঁর সামনে আমি দন্ডায়মান হয়েছি। তাঁর কাছে সকল কাজের হিসাবও দিতে হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ মানুষ যখন তার সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার সালাতকে সুন্দর করে। আর তুমি ঐ ব্যক্তির ন্যায় সালাত আদায় করো, যে ধারণা করে যে, সে আর সালাত আদায় করার সুযোগ পাবে না। আর তুমি এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকবে, যা করার পর তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। [জামেউস সগীর, হা/৮৫১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪২১।]
এ সকল উপদেশ মেনে চললে ইনশা-আল্লাহ সালাতে রূহ আসবে এবং তা কায়েম হবে, আর এ সালাতই হবে সালাত আদায়কারীকে মন্দ কাজ হতে বিরতকারী।
সালাতে মনোযোগ তৈরি করার জন্য সালাতে যা পড়া হয় তার অর্থ জানা একান্ত প্রয়োজন। অর্থ জানা থাকলে যখন যা পড়া হবে তখন তার অর্থের দিকে মনোযোগ দেয়া সহজ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা-৪৩)
কোন বাক্যের অর্থ বুঝার জন্য সেই ভাষা জানা আবশ্যক। আমরা সালাতের দু‘আ কালাম আরবি ভাষায় পাঠ করি কিন্তু অধিকাংশই আরবি ভাষা জানি না; অথচ নবী ﷺ এর ভাষা আরবি, কুরআন-হাদীসের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষাও হবে আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা শিক্ষা করা উচিত। মনে রাখার জন্য শাব্দিক অর্থ জানা প্রয়োজন। শাব্দিক অর্থ জানা থাকলে পড়ার সময় মজা পাওয়া যায়। সেজন্য এ বইয়ে সালাতের প্রয়োজনীয় সূরা ও দু‘আসমূহের শাব্দিক অনুবাদও দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা-৪৩)
কোন বাক্যের অর্থ বুঝার জন্য সেই ভাষা জানা আবশ্যক। আমরা সালাতের দু‘আ কালাম আরবি ভাষায় পাঠ করি কিন্তু অধিকাংশই আরবি ভাষা জানি না; অথচ নবী ﷺ এর ভাষা আরবি, কুরআন-হাদীসের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষাও হবে আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা শিক্ষা করা উচিত। মনে রাখার জন্য শাব্দিক অর্থ জানা প্রয়োজন। শাব্দিক অর্থ জানা থাকলে পড়ার সময় মজা পাওয়া যায়। সেজন্য এ বইয়ে সালাতের প্রয়োজনীয় সূরা ও দু‘আসমূহের শাব্দিক অনুবাদও দেয়া হয়েছে।
আযান হচ্ছে জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য এক অতুলনীয় আহবান এবং ইসলাম ধর্মের অন্যতম একটি প্রতীক। আযানের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে জানানো হয় যে, এখন জামাআতের সাথে ফরয সালাত আদায়ের সময় হয়েছে। তাই আযান শোনার পর পরই সারা বিশ্বের মুমিন বান্দাগণ সব কাজ ফেলে রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে ছুটে যান।
যখন সালাতের সময় হয়, তখন প্রত্যেক মসজিদে মুয়াজ্জিন কী কথাগুলো উচ্চারণ করেন- তা একটু লক্ষ্য করুন। আযানের শুরুতেই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়- ‘ আল্লা-হু আকবার’ ‘ আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়)। আল্লাহ যখন বড় তখন তার তাওহীদের ঘোষণা দেয়া হয় এভাবে- ‘আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই)। তারপর নবী ﷺ এর রিসালাতের ঘোষণা দেয়া হয়- ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল)। তারপর কত সুন্দরভাবে মানুষকে সালাতের দিকে ডাকা হয়! ‘হাইয়া ‘আলাস সালাহ্’ (সালাতের দিকে আসো)। তারপর মানুষকে সফলতার দিকে আহবান করা হয়- ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ (কল্যাণের দিকে আসো)। সবশেষে আবার আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দিয়ে এ আহবান শেষ করা হয়।
আযানের শব্দগুলোর প্রথমেই আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর তাওহীদের কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তারপর তাঁর রিসালাতের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারপর সালাতের দিকে আহবান করা হয়েছে। তারপর কল্যাণ তথা সফলতার দিকে আহবান করা হয়েছে। কেননা প্রকৃত সফলতা এ কয়েকটি কাজের মধ্যেই নিহিত। প্রত্যেক মানুষ জীবনে সফলতা চায়। আর এ সফলতা অর্জনের জন্যই সারাজীবন সাধনা করে। এজন্য যাদের ঈমান আছে এবং যারা প্রকৃত সফলতা লাভ করতে চায়, তারা এ ডাক শুনে আর থেমে থাকতে পারে না। অফিসার অফিসে থাকতে পারে না, দোকানদার দোকানে বসে থাকতে পারে না, কাজের লোক আর কাজ করতে পারে না। পুরুষরা ছুটে চলে মসজিদের পানে, আর মহিলারা চলে যায় সালাতের স্থানে। কারণ তারা জানে যে, এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়’ তাঁর সামনে গিয়ে আমাকে হাযিরা দিতে হবে। আমি যদি এখন কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি, তবে আমার কাজকে বড় বানিয়ে নিলাম, এটা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না। আর আল্লাহর ডাকে সাড়া না দিয়ে দুনিয়া অর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকার মধ্যে কোন সফলতা থাকতে পারে না। প্রকৃত সফলতাই হচ্ছে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া। যখন আযান শুরু হয় তখন শয়তান পালিয়ে যায়। মানুষের জীবনের অনেক পাপকর্ম থেমে যায়। তাছাড়া এর বাক্যগুলোও খুবই শ্রুতিমধুর। এর প্রতিটি বাক্য মানবজাতিকে এক অজানা আকর্ষণে আকর্ষিত করে। কবি বলেন,
‘‘মর্মে মর্মে সেই সুর
বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনি
কী মধুর আযানের ধ্বনি।’’
যখন সালাতের সময় হয়, তখন প্রত্যেক মসজিদে মুয়াজ্জিন কী কথাগুলো উচ্চারণ করেন- তা একটু লক্ষ্য করুন। আযানের শুরুতেই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়- ‘ আল্লা-হু আকবার’ ‘ আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়)। আল্লাহ যখন বড় তখন তার তাওহীদের ঘোষণা দেয়া হয় এভাবে- ‘আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই)। তারপর নবী ﷺ এর রিসালাতের ঘোষণা দেয়া হয়- ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল)। তারপর কত সুন্দরভাবে মানুষকে সালাতের দিকে ডাকা হয়! ‘হাইয়া ‘আলাস সালাহ্’ (সালাতের দিকে আসো)। তারপর মানুষকে সফলতার দিকে আহবান করা হয়- ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ (কল্যাণের দিকে আসো)। সবশেষে আবার আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দিয়ে এ আহবান শেষ করা হয়।
আযানের শব্দগুলোর প্রথমেই আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর তাওহীদের কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তারপর তাঁর রিসালাতের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারপর সালাতের দিকে আহবান করা হয়েছে। তারপর কল্যাণ তথা সফলতার দিকে আহবান করা হয়েছে। কেননা প্রকৃত সফলতা এ কয়েকটি কাজের মধ্যেই নিহিত। প্রত্যেক মানুষ জীবনে সফলতা চায়। আর এ সফলতা অর্জনের জন্যই সারাজীবন সাধনা করে। এজন্য যাদের ঈমান আছে এবং যারা প্রকৃত সফলতা লাভ করতে চায়, তারা এ ডাক শুনে আর থেমে থাকতে পারে না। অফিসার অফিসে থাকতে পারে না, দোকানদার দোকানে বসে থাকতে পারে না, কাজের লোক আর কাজ করতে পারে না। পুরুষরা ছুটে চলে মসজিদের পানে, আর মহিলারা চলে যায় সালাতের স্থানে। কারণ তারা জানে যে, এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়’ তাঁর সামনে গিয়ে আমাকে হাযিরা দিতে হবে। আমি যদি এখন কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি, তবে আমার কাজকে বড় বানিয়ে নিলাম, এটা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না। আর আল্লাহর ডাকে সাড়া না দিয়ে দুনিয়া অর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকার মধ্যে কোন সফলতা থাকতে পারে না। প্রকৃত সফলতাই হচ্ছে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া। যখন আযান শুরু হয় তখন শয়তান পালিয়ে যায়। মানুষের জীবনের অনেক পাপকর্ম থেমে যায়। তাছাড়া এর বাক্যগুলোও খুবই শ্রুতিমধুর। এর প্রতিটি বাক্য মানবজাতিকে এক অজানা আকর্ষণে আকর্ষিত করে। কবি বলেন,
‘‘মর্মে মর্মে সেই সুর
বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনি
কী মধুর আযানের ধ্বনি।’’
মুসলিমগণ যখন মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিযরত করলেন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার মুসলিমগণকে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে জামাআতবদ্ধভাবে সালাত আদায় করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। এজন্য একদিন তিনি সাহাবীদের সাথে বসে কীভাবে সবাইকে সঠিক সময়ে সালাতে আহবান করা যায় সেই পন্থা নির্ণয়ের জন্য পরামর্শ করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খৃষ্টানদের ঘণ্টা বাজিয়ে চার্চে যাওয়ার আহবানের মতো ঘণ্টা ব্যবহারের যুক্তি দেন; কেউবা বলেন, ইয়াহুদিদের মতো শিঙ্গা ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কেউ কেউ ঝান্ডা উড়ানোর পরামর্শও দেন।
এ সময় উমর (রাঃ) বললেন, কিছু লোককে গলিতে গলিতে পাঠিয়ে সালাতের জন্য আহবান জানানো যেতে পারে। এই প্রেক্ষিতে নবী ﷺ বিলাল (রাঃ) কে এ পদ্ধতিতে সালাতের আহবান জানানোর জন্য নির্বাচিত করেন। বিভিন্ন হাদীস সূত্রে জানা যায় যে, এই পদ্ধতিটি সন্তোষজনক ছিল না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘নাকূশ’’ (শিঙ্গা জাতীয় এক বস্তু), যা খৃষ্টানদের ঘণ্টা বাজিয়ে আহবানের পদ্ধতির কাছাকাছি তা ব্যবহারে রাজী হলেন, কিন্তু ব্যাপারটি তার কাছে একেবারেই পছন্দ হচ্ছিল না।
অতঃপর সে দিনই আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) একটি স্বপ্ন দেখেন যে, এক ব্যক্তি একটি ‘‘নাকূশ’’ হাতে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এটি আমার কাছে বিক্রি করবে? লোকটি প্রশ্ন করলেন, এটা নিয়ে তুমি কী করবে? জবাবে তিনি বললেন, ওটা দিয়ে আমরা লোকদেরকে সালাতের দিকে আহবান জানাব। তখন লোকটি বললো, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দেব? আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, অবশ্যই। তখন ঐ ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) কে আযানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দিল এবং কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, যখন লোকজন জামাআতে সমবেত হয়ে যাবে তখন এই বাক্যগুলো ইকামত হিসেবে বলবে।
এভাবে ঐ ব্যক্তিটি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) কে আলাদা-আলাদাভাবে ‘‘আযান’’ এবং ‘‘ইকামত’’ এর বাক্যসমূহ শিখিয়ে দিয়েছিল।
অতঃপর সকাল হওয়া মাত্র, আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের কথা খুলে বললেন। সব শুনে নবী ﷺ বললেন, এটা সত্য স্বপ্ন; ইনশা-আল্লাহ্- এখন তুমি বিলাল (রাঃ) এর কাছে যাও এবং স্বপ্নে যেভাবে শুনেছ, ঠিক সেভাবে বিলাল (রাঃ) কে শিখিয়ে দাও। অতঃপর সে ঐ বাক্যগুলো ব্যবহার করে সবাইকে সালাতের জন্য একত্রিত করুক। কারণ বিলাল (রাঃ) এর কণ্ঠস্বর তোমার চেয়েও উচ্চ।
অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) এর স্বপ্নেপ্রাপ্ত আযানের বাক্যগুলো বিলাল (রাঃ) কে শিখালেন এবং বিলাল (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে প্রথম আযান শুরু করলেন।
এদিকে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) নিজের বাড়িতে থাকা অবস্থায় আযানের ঐ বাক্যগুলো শুনতে পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট পৌঁছে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনার মাধ্যমে সত্যকে পাঠিয়েছেন, আমিও ঐ বাক্যগুলো কিছুদিন আগে স্বপ্নে শুনেছি, যা এখন শুনতে পাচ্ছি। এ কথা শুনে নবী ﷺ বললেন, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই। [ইবনে মাজাহ, হা/৭০৬; তিরমিযী, হা/১৮৯; আবু দাউদ, ৪৯৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬৩।]
আর সেই দিন থেকে এখন পর্যন্ত আযানের মধ্য দিয়ে মুসলিমগণকে জামাআতে ফরয সালাত আদায়ের আহবান জানানো হচ্ছে।
আযান দেয়ার জন্য নবী ﷺ এর নির্দেশ :
মালিক ইবনে হুয়াইরিস (রাঃ) বর্ণিত। আমি এক সময় আমার সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তির সাথে নবী ﷺ এর কাছে আসলাম। অতঃপর আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং নম্র। পরিবারস্থ লোকদের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখতে পেয়ে তিনি বললেন, তোমরা বাড়িতে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে বসবাস করতে থাকো। তাদেরকে শরীয়তের আহকাম শিক্ষা প্রদান করো এবং সালাত আদায় করো। যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মাঝে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তোমাদের সালাতের ইমামতি করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৮; নাসাঈ, হা/৬৩৫।]
আযান দেয়ার ফযীলত ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْاَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا اِلَّا اَنْ يَّسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لَاسْتَبَقُوْا اِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানত, আর লটারী ছাড়া তা অর্জন করার জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে এজন্য তারা অবশ্যই লটারী করত। আর যোহরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। তদ্রূপ এশা ও ফজরের সালাতে কী (ফযীলত) নিহিত রয়েছে যদি মানুষ তা জানত, তাহলে তারা অবশ্যই উক্ত সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৫৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট হবেন :
عَنْ مُعَاوِيَةُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اَلْمُؤَذِّنُوْنَ اَطْوَلُ النَّاسِ اَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট হবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৯; জামেউস সগীর, হা/১১৫৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪২; মিশকাত, হা/৬৫৪।]
সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদেরকে দেখে সবাই চিনে নিবে যে, এরা দুনিয়াতে মুয়াজ্জিন ছিল। তারা আল্লাহর তাওহীদ ঘোষণা করত এবং মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করত। ফলে সেখানে তারা আলাদা সম্মান লাভ করবে এবং আল্লাহও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন।
যারা আযানের শব্দ শুনবে তারা প্রত্যেকেই মুয়াজ্জিনের জন্য সাক্ষ্য দেবে :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِيْ صَعْصَعَةَ اَلْاَنْصَارِيِّ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّ اَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ لَهٗ اِنِّيْ اَرَاكَ تُحِبُّ الْغَنَمَ وَالْبَادِيَةَ فَاِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِكَ ، اَوْ بَادِيَتِكَ فَاَذَّنْتَ بِالصَّلَاةِ فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ ، فَاِنَّهٗ لَا يَسْمَعُ مَدٰى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ ، وَلَا اِنْسٌ ، وَلَا شَيْءٌ اِلَّا شَهِدَ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ اَبُو سَعِيْدٍ سَمِعْتُهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ
আবদুর রহমান ইবনে আবী সা‘সা‘ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, একদা আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁকে বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি বকরী চরানোকে এবং মরুভূমিকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন তোমার বকরীর পালের কাছে অথবা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন তোমার আযানের শব্দ উঁচু করো। কারণ আযানের শব্দ যতদূর যাবে এবং সে স্থানে জিন, ইনসান ও অন্যান্য যা কিছু থাকবে, প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথাগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট শুনেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫১; সহীহ বুখারী, হা/৬০৯; নাসাঈ, হা/৬৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬১; জামেউস সগীর, হা/৪২১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩২; মিশকাত, হা/৬৫৬।]
এ সময় উমর (রাঃ) বললেন, কিছু লোককে গলিতে গলিতে পাঠিয়ে সালাতের জন্য আহবান জানানো যেতে পারে। এই প্রেক্ষিতে নবী ﷺ বিলাল (রাঃ) কে এ পদ্ধতিতে সালাতের আহবান জানানোর জন্য নির্বাচিত করেন। বিভিন্ন হাদীস সূত্রে জানা যায় যে, এই পদ্ধতিটি সন্তোষজনক ছিল না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘নাকূশ’’ (শিঙ্গা জাতীয় এক বস্তু), যা খৃষ্টানদের ঘণ্টা বাজিয়ে আহবানের পদ্ধতির কাছাকাছি তা ব্যবহারে রাজী হলেন, কিন্তু ব্যাপারটি তার কাছে একেবারেই পছন্দ হচ্ছিল না।
অতঃপর সে দিনই আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) একটি স্বপ্ন দেখেন যে, এক ব্যক্তি একটি ‘‘নাকূশ’’ হাতে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এটি আমার কাছে বিক্রি করবে? লোকটি প্রশ্ন করলেন, এটা নিয়ে তুমি কী করবে? জবাবে তিনি বললেন, ওটা দিয়ে আমরা লোকদেরকে সালাতের দিকে আহবান জানাব। তখন লোকটি বললো, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দেব? আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, অবশ্যই। তখন ঐ ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) কে আযানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দিল এবং কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, যখন লোকজন জামাআতে সমবেত হয়ে যাবে তখন এই বাক্যগুলো ইকামত হিসেবে বলবে।
এভাবে ঐ ব্যক্তিটি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) কে আলাদা-আলাদাভাবে ‘‘আযান’’ এবং ‘‘ইকামত’’ এর বাক্যসমূহ শিখিয়ে দিয়েছিল।
অতঃপর সকাল হওয়া মাত্র, আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের কথা খুলে বললেন। সব শুনে নবী ﷺ বললেন, এটা সত্য স্বপ্ন; ইনশা-আল্লাহ্- এখন তুমি বিলাল (রাঃ) এর কাছে যাও এবং স্বপ্নে যেভাবে শুনেছ, ঠিক সেভাবে বিলাল (রাঃ) কে শিখিয়ে দাও। অতঃপর সে ঐ বাক্যগুলো ব্যবহার করে সবাইকে সালাতের জন্য একত্রিত করুক। কারণ বিলাল (রাঃ) এর কণ্ঠস্বর তোমার চেয়েও উচ্চ।
অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) এর স্বপ্নেপ্রাপ্ত আযানের বাক্যগুলো বিলাল (রাঃ) কে শিখালেন এবং বিলাল (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে প্রথম আযান শুরু করলেন।
এদিকে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) নিজের বাড়িতে থাকা অবস্থায় আযানের ঐ বাক্যগুলো শুনতে পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট পৌঁছে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনার মাধ্যমে সত্যকে পাঠিয়েছেন, আমিও ঐ বাক্যগুলো কিছুদিন আগে স্বপ্নে শুনেছি, যা এখন শুনতে পাচ্ছি। এ কথা শুনে নবী ﷺ বললেন, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই। [ইবনে মাজাহ, হা/৭০৬; তিরমিযী, হা/১৮৯; আবু দাউদ, ৪৯৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬৩।]
আর সেই দিন থেকে এখন পর্যন্ত আযানের মধ্য দিয়ে মুসলিমগণকে জামাআতে ফরয সালাত আদায়ের আহবান জানানো হচ্ছে।
আযান দেয়ার জন্য নবী ﷺ এর নির্দেশ :
মালিক ইবনে হুয়াইরিস (রাঃ) বর্ণিত। আমি এক সময় আমার সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তির সাথে নবী ﷺ এর কাছে আসলাম। অতঃপর আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং নম্র। পরিবারস্থ লোকদের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখতে পেয়ে তিনি বললেন, তোমরা বাড়িতে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে বসবাস করতে থাকো। তাদেরকে শরীয়তের আহকাম শিক্ষা প্রদান করো এবং সালাত আদায় করো। যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মাঝে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তোমাদের সালাতের ইমামতি করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৮; নাসাঈ, হা/৬৩৫।]
আযান দেয়ার ফযীলত ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْاَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا اِلَّا اَنْ يَّسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لَاسْتَبَقُوْا اِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানত, আর লটারী ছাড়া তা অর্জন করার জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে এজন্য তারা অবশ্যই লটারী করত। আর যোহরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। তদ্রূপ এশা ও ফজরের সালাতে কী (ফযীলত) নিহিত রয়েছে যদি মানুষ তা জানত, তাহলে তারা অবশ্যই উক্ত সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৫৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট হবেন :
عَنْ مُعَاوِيَةُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : اَلْمُؤَذِّنُوْنَ اَطْوَلُ النَّاسِ اَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট হবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৯; জামেউস সগীর, হা/১১৫৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪২; মিশকাত, হা/৬৫৪।]
সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদেরকে দেখে সবাই চিনে নিবে যে, এরা দুনিয়াতে মুয়াজ্জিন ছিল। তারা আল্লাহর তাওহীদ ঘোষণা করত এবং মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করত। ফলে সেখানে তারা আলাদা সম্মান লাভ করবে এবং আল্লাহও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন।
যারা আযানের শব্দ শুনবে তারা প্রত্যেকেই মুয়াজ্জিনের জন্য সাক্ষ্য দেবে :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِيْ صَعْصَعَةَ اَلْاَنْصَارِيِّ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّ اَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ لَهٗ اِنِّيْ اَرَاكَ تُحِبُّ الْغَنَمَ وَالْبَادِيَةَ فَاِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِكَ ، اَوْ بَادِيَتِكَ فَاَذَّنْتَ بِالصَّلَاةِ فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ ، فَاِنَّهٗ لَا يَسْمَعُ مَدٰى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ ، وَلَا اِنْسٌ ، وَلَا شَيْءٌ اِلَّا شَهِدَ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ اَبُو سَعِيْدٍ سَمِعْتُهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ
আবদুর রহমান ইবনে আবী সা‘সা‘ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, একদা আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁকে বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি বকরী চরানোকে এবং মরুভূমিকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন তোমার বকরীর পালের কাছে অথবা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন তোমার আযানের শব্দ উঁচু করো। কারণ আযানের শব্দ যতদূর যাবে এবং সে স্থানে জিন, ইনসান ও অন্যান্য যা কিছু থাকবে, প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথাগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট শুনেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫১; সহীহ বুখারী, হা/৬০৯; নাসাঈ, হা/৬৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬১; জামেউস সগীর, হা/৪২১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩২; মিশকাত, হা/৬৫৬।]
আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) স্বপ্নে আযানের বাক্যগুলো যেভাবে শুনেছেন তা হালোঃ
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’ -৪ বার
(আল্লাহ সবচেয়ে বড় )
اَشْهَدُاَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’-২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই )
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهُ
‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’-২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল )
حَىَّ عَلَى الصَّلٰوةِ
‘‘হাইয়া আলাস সালাহ্’’-২ বার
(সালাতের জন্য এসো )
حَىَّ عَلَى الْفَلَاحُ
‘‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’’-২ বার
(কল্যাণের জন্য এসো)
اَللهُ اَ كْبَر
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২ বার
(আল্লাহ সবচেয়ে বড় )
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১ বার
(আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন প্রভু নেই) [আবু দাউদ, হা/৪৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৫২৪।]
ফজরের প্রথম আযানে ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’’ বলার পর ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ (ঘুম হতে নামাজ উত্তম) বলা জমহুর উলামাগণের নিকট সুন্নাত।
উল্লেখ্য যে, ফজরের আযানের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু’জন মুয়াজ্জিন ছিলেন। তাদের একজন হলেন বিলাল (রাঃ)। তিনি আযানের সময় ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ বলতেন। আর দ্বিতীয়জন হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তিনি ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ বলতেন বলে কোন প্রমাণ নেই। বিলাল (রাঃ) এর আযান ছিল প্রথম আযান, যা তাহাজ্জুদ ও সাহরীর জন্য দেয়া হতো। আর ফজরের ওয়াক্ত হলে আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) আযান দিতেন। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৫০ পৃঃ।]
আযান দেয়ার পদ্ধতি :
১। আযান শুরু করার আগে মুয়াজ্জিন কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। [ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/ ২৫০।]
২। দু’শাহাদাত আঙ্গুলের ডগা দু’কানের মধ্যে ঢুকিয়ে যথাসম্ভব উচ্চৈঃস্বরে আযান দেবেন। [তিরমিযী, হা/১৯৭; মুসনাদ আহমাদ, হা/১৮৭৮১।]
৩। যখন মুয়াজ্জিন ‘‘হাইয়্যা আলাস সালাহ্’’ বলবেন, তখন ডান দিকে মুখ ফিরাবেন এবং যখন ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’’ বলবেন, তখন বাম দিকে মুখ ফিরাবেন। [নাসাঈ, হা/৬৪৬; তিরমিযী, হা/১৯৭; আবু দাউদ, হা/৫২০।]
৪। সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেয়া।
মাসআলা :
১। রেকর্ড করা আযান ওয়াক্তের আযানের জন্য শুদ্ধ নয়। কেননা আযান একটি ইবাদাত। আর এই ইবাদাত সরাসরি সম্পাদন করতে হয়।
২। আযান ও ইকামতের মধ্যে কথা বলা মাকরূহ।
৩। মুয়াজ্জিনের উচিত পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই আল্লাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আযান দেয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। একদা তিনি উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) কে বলেন, তুমি এমন একজন মুয়াজ্জিন গ্রহণ করো যে তার আযানের বিনিময়ে (পার্থিব কোন কিছু) গ্রহণ করে না। [আবু দাউদ, হা/৫৩১; নাসাঈ, হা/৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩১৪।]
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’ -৪ বার
(আল্লাহ সবচেয়ে বড় )
اَشْهَدُاَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’-২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই )
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهُ
‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’-২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল )
حَىَّ عَلَى الصَّلٰوةِ
‘‘হাইয়া আলাস সালাহ্’’-২ বার
(সালাতের জন্য এসো )
حَىَّ عَلَى الْفَلَاحُ
‘‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’’-২ বার
(কল্যাণের জন্য এসো)
اَللهُ اَ كْبَر
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২ বার
(আল্লাহ সবচেয়ে বড় )
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১ বার
(আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন প্রভু নেই) [আবু দাউদ, হা/৪৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৫২৪।]
ফজরের প্রথম আযানে ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’’ বলার পর ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ (ঘুম হতে নামাজ উত্তম) বলা জমহুর উলামাগণের নিকট সুন্নাত।
উল্লেখ্য যে, ফজরের আযানের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু’জন মুয়াজ্জিন ছিলেন। তাদের একজন হলেন বিলাল (রাঃ)। তিনি আযানের সময় ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ বলতেন। আর দ্বিতীয়জন হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তিনি ‘‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’’ বলতেন বলে কোন প্রমাণ নেই। বিলাল (রাঃ) এর আযান ছিল প্রথম আযান, যা তাহাজ্জুদ ও সাহরীর জন্য দেয়া হতো। আর ফজরের ওয়াক্ত হলে আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) আযান দিতেন। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৫০ পৃঃ।]
আযান দেয়ার পদ্ধতি :
১। আযান শুরু করার আগে মুয়াজ্জিন কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। [ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/ ২৫০।]
২। দু’শাহাদাত আঙ্গুলের ডগা দু’কানের মধ্যে ঢুকিয়ে যথাসম্ভব উচ্চৈঃস্বরে আযান দেবেন। [তিরমিযী, হা/১৯৭; মুসনাদ আহমাদ, হা/১৮৭৮১।]
৩। যখন মুয়াজ্জিন ‘‘হাইয়্যা আলাস সালাহ্’’ বলবেন, তখন ডান দিকে মুখ ফিরাবেন এবং যখন ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’’ বলবেন, তখন বাম দিকে মুখ ফিরাবেন। [নাসাঈ, হা/৬৪৬; তিরমিযী, হা/১৯৭; আবু দাউদ, হা/৫২০।]
৪। সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেয়া।
মাসআলা :
১। রেকর্ড করা আযান ওয়াক্তের আযানের জন্য শুদ্ধ নয়। কেননা আযান একটি ইবাদাত। আর এই ইবাদাত সরাসরি সম্পাদন করতে হয়।
২। আযান ও ইকামতের মধ্যে কথা বলা মাকরূহ।
৩। মুয়াজ্জিনের উচিত পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই আল্লাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আযান দেয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। একদা তিনি উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) কে বলেন, তুমি এমন একজন মুয়াজ্জিন গ্রহণ করো যে তার আযানের বিনিময়ে (পার্থিব কোন কিছু) গ্রহণ করে না। [আবু দাউদ, হা/৫৩১; নাসাঈ, হা/৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩১৪।]
عَنْ اَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - فَقَامَ بِلَالٌ يُنَادِىْ فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - : مَنْ قَالَ مِثْلَ هٰذَا يَقِيْنًا دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় সালাতের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসায়ী, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
তাওহীদের বাণী সম্বলিত বাক্যগুলো বিশ্বাস করার পর যে ব্যক্তি তা মুখেও উচ্চারণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বাক্য উচ্চারণ করার কথাও বলা হয়েছে। [নাসায়ী, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আযান শোনার পর দরূদ ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ اَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِىَّ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَاِنَّهٗ مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَاِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِىْ اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَاَرْجُو اَنْ اَكُوْنَ اَنَا هُوَ فَمَنْ سَاَلَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/৩২৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
আযান শোনার পর দু‘আ :
১. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর নীচের দু‘আ পড়বে, তার জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّ তুমিই রব هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ এই পরিপূর্ণ আহবানের وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের। اٰتِ مُحَمَّدَنِ মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো اَلْوَسِيْلَةَ অসীলা নামক স্থান وَالْفَضِيْلَةَ এবং মর্যাদা। وَابْعَثْهُ আর তাকে অধিষ্ঠিত করো مَقَامًا مَّحْمُوْدًا সেই প্রশংসিত স্থানে اَلَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই রব। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো অসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪; আবু দাউদ, হা/৫২৯; তিরমিযী, হা/২১১; ইবনে মাজাহ, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩; মিশকাত, হা/৬৫৯।]
২. সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলাও ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।
শাব্দিক অর্থ : أَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, أَنْ لَّا إِلٰهَ কোন মাবূদ নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَأَنَّ مُحَمَّدًا এবং মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল। رَضِيْتُ আমি সন্তুষ্ট হয়েছি بِاللهِ رَبًّا আল্লাহকে রব হিসেবে, وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব, মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৭; আবু দাউদ, হা/৫২৫; তিরমিযী, হা/২১০।]
আযানের দু‘আর শব্দে বাড়াবাড়ি ঠিক নয় :
আযানের দু‘আর ক্ষেত্রে সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী যে শব্দগুলো এসেছে তার মধ্যে ‘ওয়া‘আত্তাহ্’ পর্যমত্মই দু‘আ সমাপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু ‘ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী‘আদ’ এ অংশটি ইমাম বায়হাকী তার সুনানুল কুবরা গ্রন্থে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০০৯।]
আবার অনেকে আযানের দু‘আর মধ্যে নিজেদের থেকে কিছু শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। যেমন- ‘‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আহ্, ওয়ার যুক্বনা শাফা-‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ্’’ ইত্যাদি। এ শব্দগুলো হাদীসে নেই। যেখানে নবী ﷺ থেকে স্পষ্ট বর্ণনা আছে সেখানে দু‘আর মধ্যে শব্দ বৃদ্ধি করে বলা ঠিক নয়। যেভাবে নবী ﷺ শিখিয়েছেন সেভাবেই পড়া উচিত।
আযানের সময় নবী ﷺ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বিদআত :
অনেকে আযানের সময় মুয়াজ্জিন যখন ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলে থাকেন তখন আঙ্গুলে চুমু খায় এবং এ সময় দরূদ পাঠ করে। এ আমল হাদীস সম্মত নয়। হাদীসের আমল হচ্ছে, মুয়াজ্জিন যা বলেন, উত্তরে তাই বলতে হবে। বিধায়, ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলার সময় এই শব্দটি বলতে হবে। এ সময় দরূদ পাঠ করা যাবে না। বরং হাদীসে আযানের শেষে দরূদ পড়ার কথা বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় সালাতের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসায়ী, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
তাওহীদের বাণী সম্বলিত বাক্যগুলো বিশ্বাস করার পর যে ব্যক্তি তা মুখেও উচ্চারণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বাক্য উচ্চারণ করার কথাও বলা হয়েছে। [নাসায়ী, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আযান শোনার পর দরূদ ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ اَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِىَّ -ﷺ - يَقُوْلُ : اِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَاِنَّهٗ مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَاِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِىْ اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَاَرْجُو اَنْ اَكُوْنَ اَنَا هُوَ فَمَنْ سَاَلَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/৩২৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
আযান শোনার পর দু‘আ :
১. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর নীচের দু‘আ পড়বে, তার জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّ তুমিই রব هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ এই পরিপূর্ণ আহবানের وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের। اٰتِ مُحَمَّدَنِ মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো اَلْوَسِيْلَةَ অসীলা নামক স্থান وَالْفَضِيْلَةَ এবং মর্যাদা। وَابْعَثْهُ আর তাকে অধিষ্ঠিত করো مَقَامًا مَّحْمُوْدًا সেই প্রশংসিত স্থানে اَلَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই রব। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো অসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪; আবু দাউদ, হা/৫২৯; তিরমিযী, হা/২১১; ইবনে মাজাহ, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩; মিশকাত, হা/৬৫৯।]
২. সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলাও ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।
শাব্দিক অর্থ : أَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, أَنْ لَّا إِلٰهَ কোন মাবূদ নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَأَنَّ مُحَمَّدًا এবং মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল। رَضِيْتُ আমি সন্তুষ্ট হয়েছি بِاللهِ رَبًّا আল্লাহকে রব হিসেবে, وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব, মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৭; আবু দাউদ, হা/৫২৫; তিরমিযী, হা/২১০।]
আযানের দু‘আর শব্দে বাড়াবাড়ি ঠিক নয় :
আযানের দু‘আর ক্ষেত্রে সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী যে শব্দগুলো এসেছে তার মধ্যে ‘ওয়া‘আত্তাহ্’ পর্যমত্মই দু‘আ সমাপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু ‘ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী‘আদ’ এ অংশটি ইমাম বায়হাকী তার সুনানুল কুবরা গ্রন্থে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০০৯।]
আবার অনেকে আযানের দু‘আর মধ্যে নিজেদের থেকে কিছু শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। যেমন- ‘‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আহ্, ওয়ার যুক্বনা শাফা-‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ্’’ ইত্যাদি। এ শব্দগুলো হাদীসে নেই। যেখানে নবী ﷺ থেকে স্পষ্ট বর্ণনা আছে সেখানে দু‘আর মধ্যে শব্দ বৃদ্ধি করে বলা ঠিক নয়। যেভাবে নবী ﷺ শিখিয়েছেন সেভাবেই পড়া উচিত।
আযানের সময় নবী ﷺ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বিদআত :
অনেকে আযানের সময় মুয়াজ্জিন যখন ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলে থাকেন তখন আঙ্গুলে চুমু খায় এবং এ সময় দরূদ পাঠ করে। এ আমল হাদীস সম্মত নয়। হাদীসের আমল হচ্ছে, মুয়াজ্জিন যা বলেন, উত্তরে তাই বলতে হবে। বিধায়, ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলার সময় এই শব্দটি বলতে হবে। এ সময় দরূদ পাঠ করা যাবে না। বরং হাদীসে আযানের শেষে দরূদ পড়ার কথা বলা হয়েছে।
সালাত ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আযান দেয়ার বৈধতা রয়েছে। যেমন-
সাহরীর সময় আযান দেয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বিলাল (রাঃ) ফজরের পূর্বে অর্থাৎ সাহরী খাওয়ার সময় আযান দিয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা উম্মে মাকতুম (রাঃ) এর আযান না শুনা পর্যমত্ম খাও এবং পান করো। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৯০; তিরমিযী, হা/২০৩; নাসাঈ, হা/৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৪৭৩।]
সমত্মান ভূমিষ্ঠ হলে আযান দেয়া :
কারো সমত্মান ভূমিষ্ঠ হলে তার কানে আযান দেয়া সুন্নাত। হাসান ইবনে আলী (রাঃ) যখন ভূমিষ্ঠ হন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কানে আযান দিয়েছিলেন। [তিরমিযী, হা/১৫১৪; আবু দাউদ, হা/৫১০৭; মিশকাত, হা/৪১৫৭।]
উল্লেখ্য যে, নবজাতকের ডান কানে আযান দেয়ার পর বাম কানে ইকামত দেয়ার কোন সহীহ দলীল নেই। এ মর্মে যেসব বর্ণনা এসেছে তা নিতামত্মই যঈফ। কেউ কেউ বলেছেন, মাওযু বা বানোয়াট। [সিলসিলা যঈফাহ, হা/৩২১।]
ঝড়-তুফানের সময় আযান দেয়া :
অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, ঝড়-তুফানের সময় আযান দেয়া হয়। কিমত্মু এর কোন দলীল নেই।
সাহরীর সময় আযান দেয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বিলাল (রাঃ) ফজরের পূর্বে অর্থাৎ সাহরী খাওয়ার সময় আযান দিয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা উম্মে মাকতুম (রাঃ) এর আযান না শুনা পর্যমত্ম খাও এবং পান করো। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৯০; তিরমিযী, হা/২০৩; নাসাঈ, হা/৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৪৭৩।]
সমত্মান ভূমিষ্ঠ হলে আযান দেয়া :
কারো সমত্মান ভূমিষ্ঠ হলে তার কানে আযান দেয়া সুন্নাত। হাসান ইবনে আলী (রাঃ) যখন ভূমিষ্ঠ হন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কানে আযান দিয়েছিলেন। [তিরমিযী, হা/১৫১৪; আবু দাউদ, হা/৫১০৭; মিশকাত, হা/৪১৫৭।]
উল্লেখ্য যে, নবজাতকের ডান কানে আযান দেয়ার পর বাম কানে ইকামত দেয়ার কোন সহীহ দলীল নেই। এ মর্মে যেসব বর্ণনা এসেছে তা নিতামত্মই যঈফ। কেউ কেউ বলেছেন, মাওযু বা বানোয়াট। [সিলসিলা যঈফাহ, হা/৩২১।]
ঝড়-তুফানের সময় আযান দেয়া :
অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, ঝড়-তুফানের সময় আযান দেয়া হয়। কিমত্মু এর কোন দলীল নেই।
ইকামত হচ্ছে সালাত আদায়ের জন্য দ্বিতীয় আহবান। জামাআতে সালাত আরম্ভ করার ঠিক আগে ইকামত দেয়া হয়।
ইকামতের শব্দাবলি :
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২বার,
(আল্লাহ সবচেয়ে মহান )
اَشْهَدُاَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই )
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ
‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’-১বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল)
حَىَّ عَلَى الصَّلٰوةِ
‘‘হাইয়া আলাস সালাহ্’’-১বার
(সালাতের জন্য এসো)
حَىَّ عَلَى الْفَلَاحِ
‘‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’’-১বার
(কল্যাণের জন্য এসো)
قَدْ قَامَتِ الصَّلٰوةُ
‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’-২বার
(সালাত শুরু হয়েছে )
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২বার
(আল্লাহ সবচেয়ে মহান)
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১ বার
(আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নাই)
ইকামতের শব্দাবলি :
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২বার,
(আল্লাহ সবচেয়ে মহান )
اَشْهَدُاَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই )
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ
‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’-১বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল)
حَىَّ عَلَى الصَّلٰوةِ
‘‘হাইয়া আলাস সালাহ্’’-১বার
(সালাতের জন্য এসো)
حَىَّ عَلَى الْفَلَاحِ
‘‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’’-১বার
(কল্যাণের জন্য এসো)
قَدْ قَامَتِ الصَّلٰوةُ
‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’-২বার
(সালাত শুরু হয়েছে )
اَللهُ اَ كْبَرُ
‘‘ আল্লা-হু আকবার’’-২বার
(আল্লাহ সবচেয়ে মহান)
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
‘‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-১ বার
(আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নাই)
আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে আযান ও ইকামতের যে শব্দগুলো দেখেছিলেন তাতে ইকামতের শব্দগুলো ১ বার করেই বলা হয়েছে। তাছাড়া এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন-
عَنْ عَمَّارِ بْنِ سَعْدٍ , مُؤَذِّنِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، أَنَّ أَذَانَ بِلَالٍ كَانَ مَثْنٰى مَثْنٰى ، وَإِقَامَتَهٗ مُفْرَدَةٌ
রাসূলুললাহ ﷺ এর মুয়াজ্জিন আম্মার ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) এর আযান ছিল দু’দু’ শব্দ বিশিষ্ট এবং ইকামত ছিল এক-এক শব্দ বিশিষ্ট। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৭৩১।]
عَنْ أَبِي رَافِعٍ ، قَالَ : رَأَيْتُ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مَثْنٰى مَثْنٰى ، وَيُقِيْمُ وَاحِدَةً
আবু রাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে আযানের প্রতিটি বাক্য দু’বার করে এবং ইকামতের বাক্য একবার করে বলতে শুনেছি। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৩২; দার কুতনী, হা/৯৩৪।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ إِنَّمَا كَانَ الْأَذَانُ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَالْإِقَامَةُ مَرَّةً مَرَّةً غَيْرَ أَنَّهٗ يَقُوْلُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় আযানের শব্দ দু’বার করে এবং ইকামতের শব্দ একবার বলা হতো। কিন্তু ইকামতের মধ্যে ‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’ শব্দটি দু’বার বলা হতো। [আবু দাউদ, হা/৫১০; নাসাঈ, হা/৬৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৫৬৯।]
৪. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
أُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَّشْفَعَ الْأَذَانَ ، وَأَنْ يُّوْتِرَ الْإِقَامَةَ إِلَّا الْإِقَامَةَ
বিলাল (রাঃ) কে আযানের শব্দগুলো জোড়ায়-জোড়ায় এবং ‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’ বাক্যটি ব্যতীত ইকামতের শব্দ বেজোড় সংখ্যায় অর্থাৎ একবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; আবু দাউদ, হা/ ৫০৮; তিরমিযী, হা/১৯৩; নাসাঈ, হা/৬২৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৯৪।]
কিছু হাদীস থেকে ইকামতের শব্দগুলো আযানের ন্যায় দু’বার করে বলা প্রমাণিত থাকলেও ১ বার করে বলাই উত্তম। কেননা উপরের বর্ণিত হাদীসগুলো ব্যাপক এবং অধিক শক্তিশালী।
ইকামত কে দেবেন :
উত্তম হলো যিনি আযান দেবেন ইকামতও তিনি দেবেন। তবে অন্য কেউ ইকামত দিলেও তা জায়েয আছে।
ইকামতের জবাব :
ইকামতকেও হাদীসে আযান বলা হয়েছে বিধায় ইকামতেরও জবাব দেওয়া যায়। ইকামতের জবাবে ‘‘ক্বাদক্বামাতিস সালাহ্’’ বলার সময় ‘‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’’ বলার হাদীসটি যঈফ। [যঈফ আবু দাউদ, নাসিরুদ্দীন আলবানী, হা/৮৪।] তাই এ সময়ও ‘‘ক্বাদক্বামাতিস সালাহ’’ বলতে হবে।
عَنْ عَمَّارِ بْنِ سَعْدٍ , مُؤَذِّنِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، أَنَّ أَذَانَ بِلَالٍ كَانَ مَثْنٰى مَثْنٰى ، وَإِقَامَتَهٗ مُفْرَدَةٌ
রাসূলুললাহ ﷺ এর মুয়াজ্জিন আম্মার ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) এর আযান ছিল দু’দু’ শব্দ বিশিষ্ট এবং ইকামত ছিল এক-এক শব্দ বিশিষ্ট। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৭৩১।]
عَنْ أَبِي رَافِعٍ ، قَالَ : رَأَيْتُ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مَثْنٰى مَثْنٰى ، وَيُقِيْمُ وَاحِدَةً
আবু রাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে আযানের প্রতিটি বাক্য দু’বার করে এবং ইকামতের বাক্য একবার করে বলতে শুনেছি। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৩২; দার কুতনী, হা/৯৩৪।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ إِنَّمَا كَانَ الْأَذَانُ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَالْإِقَامَةُ مَرَّةً مَرَّةً غَيْرَ أَنَّهٗ يَقُوْلُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় আযানের শব্দ দু’বার করে এবং ইকামতের শব্দ একবার বলা হতো। কিন্তু ইকামতের মধ্যে ‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’ শব্দটি দু’বার বলা হতো। [আবু দাউদ, হা/৫১০; নাসাঈ, হা/৬৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৫৬৯।]
৪. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
أُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَّشْفَعَ الْأَذَانَ ، وَأَنْ يُّوْتِرَ الْإِقَامَةَ إِلَّا الْإِقَامَةَ
বিলাল (রাঃ) কে আযানের শব্দগুলো জোড়ায়-জোড়ায় এবং ‘‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্’’ বাক্যটি ব্যতীত ইকামতের শব্দ বেজোড় সংখ্যায় অর্থাৎ একবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; আবু দাউদ, হা/ ৫০৮; তিরমিযী, হা/১৯৩; নাসাঈ, হা/৬২৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৯৪।]
কিছু হাদীস থেকে ইকামতের শব্দগুলো আযানের ন্যায় দু’বার করে বলা প্রমাণিত থাকলেও ১ বার করে বলাই উত্তম। কেননা উপরের বর্ণিত হাদীসগুলো ব্যাপক এবং অধিক শক্তিশালী।
ইকামত কে দেবেন :
উত্তম হলো যিনি আযান দেবেন ইকামতও তিনি দেবেন। তবে অন্য কেউ ইকামত দিলেও তা জায়েয আছে।
ইকামতের জবাব :
ইকামতকেও হাদীসে আযান বলা হয়েছে বিধায় ইকামতেরও জবাব দেওয়া যায়। ইকামতের জবাবে ‘‘ক্বাদক্বামাতিস সালাহ্’’ বলার সময় ‘‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’’ বলার হাদীসটি যঈফ। [যঈফ আবু দাউদ, নাসিরুদ্দীন আলবানী, হা/৮৪।] তাই এ সময়ও ‘‘ক্বাদক্বামাতিস সালাহ’’ বলতে হবে।
দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। সালাত আদায় না করার যত শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে সবই এই ফরয সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قال : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالٰى مَنْ اَحْسَنَ وُضُوْءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَاَتَمَّ رُكُوْعَهُنَّ وَخُشُوْعَهُنَّ كَانَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اَنْ يَّغْفِرَ لَهٗ وَمَنْ لَّمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهٗ وَاِنْ شَاءَ عَذَّبَهٗ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করবে এবং সময় অনুযায়ী সালাত আদায় করবে, রুকূ পূর্ণভাবে করবে এবং বিনয়ের সাথে (খুশু-খুযূসহ) সালাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি সালাত আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোন প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মুজামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
পাঁচ ওয়াক্তে সর্বমোট ১৭ রাক‘আত সালাত ফরয। শুক্রবারে যোহরের চার রাক‘আত ফরযের পরিবর্তে জুমু‘আর দুটি খুৎবা শুনতে হয় এবং দু’রাক‘আত ফরয আদায় করতে হয়।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قال : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالٰى مَنْ اَحْسَنَ وُضُوْءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَاَتَمَّ رُكُوْعَهُنَّ وَخُشُوْعَهُنَّ كَانَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اَنْ يَّغْفِرَ لَهٗ وَمَنْ لَّمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهٗ عَلَى اللهِ عَهْدٌ اِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهٗ وَاِنْ شَاءَ عَذَّبَهٗ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করবে এবং সময় অনুযায়ী সালাত আদায় করবে, রুকূ পূর্ণভাবে করবে এবং বিনয়ের সাথে (খুশু-খুযূসহ) সালাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি সালাত আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোন প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মুজামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
পাঁচ ওয়াক্তে সর্বমোট ১৭ রাক‘আত সালাত ফরয। শুক্রবারে যোহরের চার রাক‘আত ফরযের পরিবর্তে জুমু‘আর দুটি খুৎবা শুনতে হয় এবং দু’রাক‘আত ফরয আদায় করতে হয়।
সংক্ষেপে একটি ছক এখানে দেয়া হলো, বিস্তারিত পরে আসছে- ইনশা-আল্লাহ।
ওয়াক্ত
আগের সুন্নাত
ফরয
পরের সুন্নাত
ফজর
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা/ জরুরি)
২ রাক‘আত
নেই
যোহর
২ অথবা ৪ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
৪ রাক‘আত
২ রাক‘আত, চাইলে ৪ রাক‘আতও পড়া যাবে (মুয়াক্কাদা)
আসর
২ রাক‘আত (যে পড়তে চায়)
৪ রাক‘আত
নেই
মাগরিব
২ রাক‘আত
(যে পড়তে চায়)
৩ রাক‘আত
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
এশা
২ রাক‘আত
(যে পড়তে চায়)
৪ রাক‘আত
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
জুমু‘আ
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে ২ রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ;
তারপর খুৎবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যা ইচ্ছা নফল পড়তে পারে।
২ রাক‘আত
মসজিদে আদায় করলে দু’সালামে ৪ রাক‘আত আর বাড়িতে আদায় করলে ২ রাক‘আত।
ওয়াক্ত
আগের সুন্নাত
ফরয
পরের সুন্নাত
ফজর
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা/ জরুরি)
২ রাক‘আত
নেই
যোহর
২ অথবা ৪ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
৪ রাক‘আত
২ রাক‘আত, চাইলে ৪ রাক‘আতও পড়া যাবে (মুয়াক্কাদা)
আসর
২ রাক‘আত (যে পড়তে চায়)
৪ রাক‘আত
নেই
মাগরিব
২ রাক‘আত
(যে পড়তে চায়)
৩ রাক‘আত
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
এশা
২ রাক‘আত
(যে পড়তে চায়)
৪ রাক‘আত
২ রাক‘আত (মুয়াক্কাদা)
জুমু‘আ
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে ২ রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ;
তারপর খুৎবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যা ইচ্ছা নফল পড়তে পারে।
২ রাক‘আত
মসজিদে আদায় করলে দু’সালামে ৪ রাক‘আত আর বাড়িতে আদায় করলে ২ রাক‘আত।
১. সালাতের নিয়তে পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে কান বা কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়ে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে বুকের উপর হাত বাঁধবে।
২. তারপর ছানা পড়ে ‘আ‘উযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম’ এবং ‘বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম’ পড়বে।
৩. তারপর সূরা ফাতিহা পড়ে অন্য একটি সূরা বা কিছু আয়াত পড়বে।
৪. কিরাআত শেষ করার পর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে রুকূতে যাবে। রুকূতে যাওয়ার সময় রাফউল ইয়াদাইন করবে তথা কান বা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে।
৫. এরপর রুকূতে যেয়ে ৩ বার ‘‘সুবহা-না রাবিবয়াল ‘আযীম’’ পড়ে ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলে রুকূ থেকে সোজা হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে ‘রাববানা লাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ’ বলবে এবং রাফউল ইয়াদাইন তথা দু‘হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উত্তোলন করবে।
৬. তারপর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে সিজদায় যাবে। সিজদায় যাওয়ার পর ৩ বার ‘সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা’ পড়ে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে বসবে। অতঃপর স্থির হয়ে বসে দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ পড়ে দ্বিতীয় সিজদা করে দাঁড়িয়ে যাবে।
৭. এরপর পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় রাক‘আত আদায় করার পর বসে তাশাহহুদ পড়বে, তারপর দরূদে ইব্রাহীম ও দু‘আয়ে মাসূরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।
৮. তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতের প্রথম দু’রাক‘আত শেষ করে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বে। তারপর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে দাঁড়িয়ে বাকী সালাত নিয়মানুসারে আদায় করবে।
২. তারপর ছানা পড়ে ‘আ‘উযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম’ এবং ‘বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম’ পড়বে।
৩. তারপর সূরা ফাতিহা পড়ে অন্য একটি সূরা বা কিছু আয়াত পড়বে।
৪. কিরাআত শেষ করার পর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে রুকূতে যাবে। রুকূতে যাওয়ার সময় রাফউল ইয়াদাইন করবে তথা কান বা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে।
৫. এরপর রুকূতে যেয়ে ৩ বার ‘‘সুবহা-না রাবিবয়াল ‘আযীম’’ পড়ে ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলে রুকূ থেকে সোজা হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে ‘রাববানা লাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ’ বলবে এবং রাফউল ইয়াদাইন তথা দু‘হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উত্তোলন করবে।
৬. তারপর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে সিজদায় যাবে। সিজদায় যাওয়ার পর ৩ বার ‘সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা’ পড়ে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে বসবে। অতঃপর স্থির হয়ে বসে দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ পড়ে দ্বিতীয় সিজদা করে দাঁড়িয়ে যাবে।
৭. এরপর পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় রাক‘আত আদায় করার পর বসে তাশাহহুদ পড়বে, তারপর দরূদে ইব্রাহীম ও দু‘আয়ে মাসূরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।
৮. তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতের প্রথম দু’রাক‘আত শেষ করে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বে। তারপর ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে দাঁড়িয়ে বাকী সালাত নিয়মানুসারে আদায় করবে।
তাড়াহুড়া না করে ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে প্রবেশ করছিলেন, এ সময় তাঁর পেছনে পেছনে এক সাহাবীও মসজিদে প্রবেশ করেন এবং তিনি সালাত আদায় করা শুরু করেন। অতঃপর তিনি সালাত শেষে নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম জানান। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার সালামের জবাব দিয়ে তাকে বলেন, যাও! তুমি সালাত আদায় করো, কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। ফলে সাহাবী আবার সালাতে দাঁড়ালেন এবং আগের মতোই সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম জানালেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে আবারও বললেন, যাও! আবার সালাত আদায় করো, কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিন বার একই ঘটনা সংঘটিত হয়। তারপর উক্ত সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে রাসূলুল্লাহ ﷺ! যিনি আপনার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর শপথ! আমি এর চেয়ে ভালো সালাত আদায় করতে পারি না। দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে ভালো করে অযু করবে, কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বলবে, এরপর কুরআন থেকে কিছু অংশ যা তোমার মুখস্থ আছে, তা তেলাওয়াত করবে, এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকূতে যাবে, এরপর মাথা ও কোমর সোজা করে স্থির হয়ে দাঁড়াবে। এরপর মাথা উঠিয়ে বসবে, যতক্ষণ না শরীরের সব হাড়ের জোড়া নিজ নিজ স্থানে বসে যায়। এভাবে সব সালাতই আদায় করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯; ইবনে মাজাহ, হা/১০৬০।]
নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে হবে :
﴿ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا﴾
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে।
(সূরা নিসা- ১০৩)
প্রতিটি সালাতই সঠিক সময়ে আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- আল্লাহর কাছে বান্দার কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি প্রিয়? তিনি বললেন, নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে সালাত আদায় করা। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭; সহীহ মুসলিম, হা/৯৬১; আবু দাউদ, হা/৪৩০।]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ﴾
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
এ আয়াতে যোহর এবং তার পরবর্তী সালাতসমূহের ধারণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى﴾
হে নবী! তারা যাই বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
এ আয়াতে ফজর, আসর ও এশার সালাতের কথা বলা হয়েছে। আবার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ﴾
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
এ আয়াতে মাগরিব, ফজর, আসর ও যোহরের সালাতের কথা বলা হয়েছে।
জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ কে সালাতের ওয়াক্ত শিখিয়ে দিয়েছেন :
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, উঠে দাঁড়ান- যোহরের সালাত আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তখন সূর্য ঠিক মাথার উপর থেকে ঢলে পড়া শুরু করেছিল এবং ছায়ার পরিমাণ ছিল চামড়ার পাতলা ফালির মতো। এরপর জিবরাঈল (আঃ) আবার এলেন এবং বললেন, এবার আসরের সালাত আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান সমান ছিল। অতঃপর মাগরিব পড়ালেন যখন রোযাদার ইফতার করে ফেলেছিল অর্থাৎ সূর্যাস্তের সাথে সাথে। এরপর এশার সালাত আদায় করলেন যখন রাত্রির এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করল এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন যখন ভোরের আলো বিকশিত হলো অর্থাৎ রোযাদারের পানাহার হারাম হয়ে গিয়েছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৯; আবু দাউদ, ৩৯৩।]
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে সালাতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে জবাব দিলেন না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, ঊষার আগমনের সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের সালাত আদায় করলেন। তখনও অন্ধকার এতটা ছিল যে, লোকজন একে অপরকে দেখে চিনতে পারছিল না। এরপর তিনি আযান দিতে আদেশ করলেন এবং লোকজন বলাবলি করছিল যে, দুপুর হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশি অবহিত। তারপর তিনি আসরের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় আসরের সালাত আদায় করলেন যখন সূর্য আকাশের বেশ উপরের দিকে ছিল। অতঃপর তিনি মাগরিবের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় সালাত আদায় করলেন যখন সবেমাত্র সূর্যাস্ত হয়েছে। এরপর তিনি এশার আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় এশার সালাত আদায় করলেন যখন সন্ধ্যাকালীন দিগন্ত লালিমা সবেমাত্র অস্তমিত হয়েছে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ পরের দিন সকালে ফজরের সালাত দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, যখন সালাত শেষ করলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল- সূর্যোদয় ঘটেছে বা সূর্যোদয়ের উপক্রম হয়েছে। এরপর যোহরের সালাত এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, গত দিনের আসরের সালাত যে সময় আদায় করেছিলেন প্রায় সে সময় এসে গেল। অতঃপর আসরের সালাতটাও এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, সালাত শেষ করলে লোকজন বলাবলি করতে লাগল- সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তারপর মাগরিবের সালাতও দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করলেন যে, সন্ধ্যাকালীন লালিমা তখন অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছিল। এরপর এশার সালাতও দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে গেল অথবা অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলো।
তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল বেলা প্রশ্নকারীকে ডেকে বললেন, এ দুটি সময়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই সালাতসমূহের সময় (অর্থাৎ- দু’দিনে আমি একই সময়ে সালাত আদায় না করে একই সালাতের সময়ের মধ্যে কিছু তারতম্য করে আদায় করলাম। এ উভয় সময়ের মধ্যকার সময়টুকুই প্রত্যেক ওয়াক্তের সময়)। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪২৪; আবু দাউদ, হা/৩৯৫; নাসাঈ, হা/৫১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৪৮।]
শেষ ওয়াক্তে সালাত আদায় যদিও শুদ্ধ, তবুও আওয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে সালাত আদায় অতি উত্তম আমল। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি বলেছেন, আওয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। [তিরমিযী, হা/১৭০; আবু দাউদ, হা/৪২৬।]
ফজর :
ফজরের সালাতের সময় শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে। এর শেষ সময় হলো সূর্যোদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুবহে সাদেক বলা হয় সেই সময়কে, যে সময় ভোরের আভা পূর্ব দিকের আকাশে উত্তর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অবস্থায় দেখা যায়।
ফজরের সালাত কিছুটা অন্ধকার থাকতেই আদায় করা মুস্তাহাব :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বেশ কিছুটা অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮; আবু দাউদ, হা/৩৯৭; ইবনে মাজাহ, ৬৪১।]
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ফজরের সালাত শুরু করতেন তখন কিছু সংখ্যক মুমিন মহিলা যথারীতি পর্দা বজায় রেখে সেই সালাতে যোগ দিতেন এবং তারা সালাত শেষে বাড়ি ফেরাকালীনও অন্ধকারের কারণে তাদের চেনা যেত না। [ইবনে মাজাহ, ৬৬৯/ সহীহ বুখারী, হা/৩৭২; আবু দাউদ, হা/ ৯৫৩।]
যোহর :
যোহর শুরু হয় যখন সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে পড়তে শুরু করে। আর শেষ হয় কোন বস্তুর ছায়া যখন তার সমান সমান হয়।
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার সাথে সাথে যোহরের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ত তখনই রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৮; আবু দাউদ, হা/৪০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭৩।] তবে প্রচন্ড গরমের দিনে একটু দেরি করে যোহরের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে তখন তোমরা তাড়াতাড়ি যোহরের সালাত আদায় করবে। আর যখন গরম বেশি হয় তখন একটু দেরীতে পড়বে। [সহীহ বুখারী, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫।]
আসর :
আসরের সালাতের সময় শুরু হয় যখন কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হয়। আর সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত বাকী থাকে। যদিও সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত আসরের সালাত আদায়ের অনুমতি রয়েছে তবুও সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার আগেই আসরের সালাত শেষ করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকরাই শেষ মুহূর্তে আসরের সালাত আদায় করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৯১৭; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০।]
একটু তাড়াতাড়ি আসরের সালাত আদায় করে নেয়া উত্তম। আনাস (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আসরের সালাত আদায় করতেন তখন কেউ কেউ মদিনার বিভিন্ন প্রান্তে চলে যেতেন। যার দূরত্ব প্রায় ৪ মাইল ছিল। তখনও সূর্য উপরেই থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১।]
রাফি‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আসরের সালাত আদায় করতাম। তারপর আমরা উট জবাই করতাম। অতঃপর তা দশভাগ করতাম। তারপর তা রান্না করে খেতাম। কিমত্মু তখনও সূর্য ডুবত না। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫।]
মাগরিব :
মাগরিবের সালাতের সময় সূর্য ডোবার পর থেকে আকাশে লালিমা থাকা পর্যন্ত। হাদীসে এসেছে,
সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ মাগরিব আদায় করতেন যখন সূর্য ডুবে গিয়ে আঁধারে নামা শুরু হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৬৪; আবু দাউদ, হা/৪১৭।]
মাগরিবের সালাত সূর্য ডোবার সাথে সাথে আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এবং রাফি ইবনে খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম। এরপর কেউ যদি তীর নিক্ষেপ করত, তাহলে ঐ তীর পতিত হওয়ার স্থান আমাদের যে কেউ দেখতে পেত। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৬৮৭; আবু দাউদ, হা/৪১৬।]
এশা :
এশার সালাত আদায়ের সময় আকাশে লালিমা দূর হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে মধ্যরাতের আগেই আদায় করা উত্তম। বিশেষ কারণ থাকলে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত তা আদায় করা যাবে।
যদিও সকল সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা উত্তম তবুও এশার জামাআত একটু দেরি করে পড়া মুস্তাহাব। কেননা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ও হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্ট মনে না করতাম তবে এশার সালাত অর্ধরাত্রি পর্যন্ত দেরি করে আদায় করতাম। [তিরমিযী, হা/১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯১।]
এশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং এশার পরে কথা বলা রাসূলুল্লাহ ﷺ অপছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৭।] এর কারণ হলো, এশার পূর্বে ঘুমালে এশার জামাআত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এশার পর বেশিক্ষণ দেরি করে ঘুমালে তাহাজ্জুদের সময় উঠা কষ্টকর হয়ে যায়।
মাসআলা :
১. কোন ব্যক্তি যদি সালাতের ওয়াক্তের শেষ সময় এক রাক‘আত সালাত আদায়ের সুযোগ পায় তবে তার সালাত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক‘আত পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই পেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৭।]
২. কেউ যদি কোন কারণবশত আসরের সালাত সময়মতো আদায় করতে না পারে এবং সূর্য ডোবার পূর্বে অন্তত এক রাক‘আত পড়ার সুযোগ পায় তাহলেও তার আসরের সালাত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার আগে আসরের এক রাক‘আত পেল সে আসর পেয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৩, ৬০৮।]
৩. অনুরূপভাবে ফজরের সালাতের ক্ষেত্রেও কেউ যদি সূর্যোদয়ের আগে এক রাক‘আত সালাত আদায় করার সুযোগ পায় তবে সে তা আদায় করে নেবে। এমতাবস্থায় তার জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫; সহীহ বুখারী, হা/৫৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৪০৮।]
সালাতের সময় নির্ধারণের হিকমত :
মানুষ জড় বস্তুর মতো এক স্থানে স্থির থাকতে পারে না। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে নড়া-চড়া করতে হয়। মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নড়া-চড়ার মধ্যেই নিহিত। এটা না হলে শরীরে নানা রোগ-ব্যাধি জন্ম নেয়। আর এ নড়াচড়া বারবার হওয়াই বাঞ্ছণীয়। এর বাস্তব নমুনা আমরা সালাত থেকে পাই। ইসলাম সারা দিনের সালাতকে একত্রে আদায় করার নির্দেশ না দিয়ে, পাঁচটি সময়ে তা ভাগ করে দিয়েছে। অন্যদিকে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে, বান্দা একবার আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করেই ভুলে যাবে না; বরং কিছুক্ষণ পর পর আল্লাহর স্মরণকে তাজা করে নেবে। যাতে সে তার দৈনন্দিন যাবতীয় কাজকর্ম আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পালন করতে পারে।
﴿ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا﴾
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে।
(সূরা নিসা- ১০৩)
প্রতিটি সালাতই সঠিক সময়ে আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- আল্লাহর কাছে বান্দার কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি প্রিয়? তিনি বললেন, নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে সালাত আদায় করা। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭; সহীহ মুসলিম, হা/৯৬১; আবু দাউদ, হা/৪৩০।]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ﴾
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
এ আয়াতে যোহর এবং তার পরবর্তী সালাতসমূহের ধারণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى﴾
হে নবী! তারা যাই বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
এ আয়াতে ফজর, আসর ও এশার সালাতের কথা বলা হয়েছে। আবার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ﴾
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
এ আয়াতে মাগরিব, ফজর, আসর ও যোহরের সালাতের কথা বলা হয়েছে।
জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ কে সালাতের ওয়াক্ত শিখিয়ে দিয়েছেন :
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, উঠে দাঁড়ান- যোহরের সালাত আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তখন সূর্য ঠিক মাথার উপর থেকে ঢলে পড়া শুরু করেছিল এবং ছায়ার পরিমাণ ছিল চামড়ার পাতলা ফালির মতো। এরপর জিবরাঈল (আঃ) আবার এলেন এবং বললেন, এবার আসরের সালাত আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান সমান ছিল। অতঃপর মাগরিব পড়ালেন যখন রোযাদার ইফতার করে ফেলেছিল অর্থাৎ সূর্যাস্তের সাথে সাথে। এরপর এশার সালাত আদায় করলেন যখন রাত্রির এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করল এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন যখন ভোরের আলো বিকশিত হলো অর্থাৎ রোযাদারের পানাহার হারাম হয়ে গিয়েছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৯; আবু দাউদ, ৩৯৩।]
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে সালাতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে জবাব দিলেন না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, ঊষার আগমনের সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের সালাত আদায় করলেন। তখনও অন্ধকার এতটা ছিল যে, লোকজন একে অপরকে দেখে চিনতে পারছিল না। এরপর তিনি আযান দিতে আদেশ করলেন এবং লোকজন বলাবলি করছিল যে, দুপুর হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশি অবহিত। তারপর তিনি আসরের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় আসরের সালাত আদায় করলেন যখন সূর্য আকাশের বেশ উপরের দিকে ছিল। অতঃপর তিনি মাগরিবের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় সালাত আদায় করলেন যখন সবেমাত্র সূর্যাস্ত হয়েছে। এরপর তিনি এশার আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় এশার সালাত আদায় করলেন যখন সন্ধ্যাকালীন দিগন্ত লালিমা সবেমাত্র অস্তমিত হয়েছে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ পরের দিন সকালে ফজরের সালাত দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, যখন সালাত শেষ করলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল- সূর্যোদয় ঘটেছে বা সূর্যোদয়ের উপক্রম হয়েছে। এরপর যোহরের সালাত এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, গত দিনের আসরের সালাত যে সময় আদায় করেছিলেন প্রায় সে সময় এসে গেল। অতঃপর আসরের সালাতটাও এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, সালাত শেষ করলে লোকজন বলাবলি করতে লাগল- সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তারপর মাগরিবের সালাতও দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করলেন যে, সন্ধ্যাকালীন লালিমা তখন অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছিল। এরপর এশার সালাতও দেরি করে আদায় করলেন এবং এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে গেল অথবা অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলো।
তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল বেলা প্রশ্নকারীকে ডেকে বললেন, এ দুটি সময়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই সালাতসমূহের সময় (অর্থাৎ- দু’দিনে আমি একই সময়ে সালাত আদায় না করে একই সালাতের সময়ের মধ্যে কিছু তারতম্য করে আদায় করলাম। এ উভয় সময়ের মধ্যকার সময়টুকুই প্রত্যেক ওয়াক্তের সময়)। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪২৪; আবু দাউদ, হা/৩৯৫; নাসাঈ, হা/৫১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৪৮।]
শেষ ওয়াক্তে সালাত আদায় যদিও শুদ্ধ, তবুও আওয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে সালাত আদায় অতি উত্তম আমল। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি বলেছেন, আওয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। [তিরমিযী, হা/১৭০; আবু দাউদ, হা/৪২৬।]
ফজর :
ফজরের সালাতের সময় শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে। এর শেষ সময় হলো সূর্যোদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুবহে সাদেক বলা হয় সেই সময়কে, যে সময় ভোরের আভা পূর্ব দিকের আকাশে উত্তর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অবস্থায় দেখা যায়।
ফজরের সালাত কিছুটা অন্ধকার থাকতেই আদায় করা মুস্তাহাব :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বেশ কিছুটা অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮; আবু দাউদ, হা/৩৯৭; ইবনে মাজাহ, ৬৪১।]
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ফজরের সালাত শুরু করতেন তখন কিছু সংখ্যক মুমিন মহিলা যথারীতি পর্দা বজায় রেখে সেই সালাতে যোগ দিতেন এবং তারা সালাত শেষে বাড়ি ফেরাকালীনও অন্ধকারের কারণে তাদের চেনা যেত না। [ইবনে মাজাহ, ৬৬৯/ সহীহ বুখারী, হা/৩৭২; আবু দাউদ, হা/ ৯৫৩।]
যোহর :
যোহর শুরু হয় যখন সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে পড়তে শুরু করে। আর শেষ হয় কোন বস্তুর ছায়া যখন তার সমান সমান হয়।
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার সাথে সাথে যোহরের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ত তখনই রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৮; আবু দাউদ, হা/৪০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭৩।] তবে প্রচন্ড গরমের দিনে একটু দেরি করে যোহরের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে তখন তোমরা তাড়াতাড়ি যোহরের সালাত আদায় করবে। আর যখন গরম বেশি হয় তখন একটু দেরীতে পড়বে। [সহীহ বুখারী, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫।]
আসর :
আসরের সালাতের সময় শুরু হয় যখন কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হয়। আর সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত বাকী থাকে। যদিও সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত আসরের সালাত আদায়ের অনুমতি রয়েছে তবুও সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার আগেই আসরের সালাত শেষ করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকরাই শেষ মুহূর্তে আসরের সালাত আদায় করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৯১৭; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০।]
একটু তাড়াতাড়ি আসরের সালাত আদায় করে নেয়া উত্তম। আনাস (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আসরের সালাত আদায় করতেন তখন কেউ কেউ মদিনার বিভিন্ন প্রান্তে চলে যেতেন। যার দূরত্ব প্রায় ৪ মাইল ছিল। তখনও সূর্য উপরেই থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১।]
রাফি‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আসরের সালাত আদায় করতাম। তারপর আমরা উট জবাই করতাম। অতঃপর তা দশভাগ করতাম। তারপর তা রান্না করে খেতাম। কিমত্মু তখনও সূর্য ডুবত না। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫।]
মাগরিব :
মাগরিবের সালাতের সময় সূর্য ডোবার পর থেকে আকাশে লালিমা থাকা পর্যন্ত। হাদীসে এসেছে,
সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ মাগরিব আদায় করতেন যখন সূর্য ডুবে গিয়ে আঁধারে নামা শুরু হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৬৪; আবু দাউদ, হা/৪১৭।]
মাগরিবের সালাত সূর্য ডোবার সাথে সাথে আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এবং রাফি ইবনে খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম। এরপর কেউ যদি তীর নিক্ষেপ করত, তাহলে ঐ তীর পতিত হওয়ার স্থান আমাদের যে কেউ দেখতে পেত। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৬৮৭; আবু দাউদ, হা/৪১৬।]
এশা :
এশার সালাত আদায়ের সময় আকাশে লালিমা দূর হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে মধ্যরাতের আগেই আদায় করা উত্তম। বিশেষ কারণ থাকলে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত তা আদায় করা যাবে।
যদিও সকল সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা উত্তম তবুও এশার জামাআত একটু দেরি করে পড়া মুস্তাহাব। কেননা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ও হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্ট মনে না করতাম তবে এশার সালাত অর্ধরাত্রি পর্যন্ত দেরি করে আদায় করতাম। [তিরমিযী, হা/১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯১।]
এশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং এশার পরে কথা বলা রাসূলুল্লাহ ﷺ অপছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৭।] এর কারণ হলো, এশার পূর্বে ঘুমালে এশার জামাআত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এশার পর বেশিক্ষণ দেরি করে ঘুমালে তাহাজ্জুদের সময় উঠা কষ্টকর হয়ে যায়।
মাসআলা :
১. কোন ব্যক্তি যদি সালাতের ওয়াক্তের শেষ সময় এক রাক‘আত সালাত আদায়ের সুযোগ পায় তবে তার সালাত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক‘আত পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই পেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৭।]
২. কেউ যদি কোন কারণবশত আসরের সালাত সময়মতো আদায় করতে না পারে এবং সূর্য ডোবার পূর্বে অন্তত এক রাক‘আত পড়ার সুযোগ পায় তাহলেও তার আসরের সালাত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার আগে আসরের এক রাক‘আত পেল সে আসর পেয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৩, ৬০৮।]
৩. অনুরূপভাবে ফজরের সালাতের ক্ষেত্রেও কেউ যদি সূর্যোদয়ের আগে এক রাক‘আত সালাত আদায় করার সুযোগ পায় তবে সে তা আদায় করে নেবে। এমতাবস্থায় তার জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫; সহীহ বুখারী, হা/৫৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৪০৮।]
সালাতের সময় নির্ধারণের হিকমত :
মানুষ জড় বস্তুর মতো এক স্থানে স্থির থাকতে পারে না। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে নড়া-চড়া করতে হয়। মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নড়া-চড়ার মধ্যেই নিহিত। এটা না হলে শরীরে নানা রোগ-ব্যাধি জন্ম নেয়। আর এ নড়াচড়া বারবার হওয়াই বাঞ্ছণীয়। এর বাস্তব নমুনা আমরা সালাত থেকে পাই। ইসলাম সারা দিনের সালাতকে একত্রে আদায় করার নির্দেশ না দিয়ে, পাঁচটি সময়ে তা ভাগ করে দিয়েছে। অন্যদিকে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে, বান্দা একবার আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করেই ভুলে যাবে না; বরং কিছুক্ষণ পর পর আল্লাহর স্মরণকে তাজা করে নেবে। যাতে সে তার দৈনন্দিন যাবতীয় কাজকর্ম আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পালন করতে পারে।
৩টি সময় সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ :
১. সূর্যোদয়ের সময় তথা সূর্যোদয়ের শুরু হতে সূর্যোদয় শেষ হওয়া পর্যন্ত।
২. সূর্যাস্তের সময় তথা সূর্যাস্ত যাওয়ার শুরু হতে সূর্য পরিপূর্ণভাবে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
৩. মধ্যাহ্নে তথা সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য তাঁর স্থান হতে পশ্চিম দিকে হেলে না পড়বে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬; মিশকাত হা/১০৩৯-৪০।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় ইচ্ছা করে সালাত আদায়ের চেষ্টা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮২; নাসাঈ, হা/৫৬৮।]
নফল সালাতের নিষিদ্ধ সময় :
১. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, ফজরের সালাতের পর সূর্য পূর্ণভাবে না উঠা পর্যন্ত কোন সালাত আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬০; আবু দাউদ, হা/১২৭৮; নাসাঈ, হা/৫৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০।]
২. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। আসরের সালাতের পর সূর্য পূর্ণভাবে অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত কোন সালাত আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬..... ঐ।]
এ সময়গুলোতে কেবল নফল সালাত আদায় করা নিষেধ; কিন্তু ছুটে যাওয়া ফরয সালাতের কাযা আদায় করা জায়েয আছে। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের সালাত আদায়ের পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছিলেন। অতঃপর এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আবদুল কায়েস গোত্রের কতক লোক আমার কাছে আগমনের ফলে যোহরের পরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আমি আদায় করতে পারিনি। এখন এ দু’রাক‘আত আদায় করলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৪৩৭০; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১০৪৩।]
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে অনেক আলেম নিষিদ্ধ সময়গুলোতে কারণবিশিষ্ট সালাতসমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিয়্যাতুল মসজিদ, তাহিয়্যাতুল অযু, সূর্য গ্রহণের সালাত ইত্যাদি। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।] জুমু‘আর সালাত ঠিক দুপুরের সময়ও জায়েয আছে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ..... ঐ] এমনিভাবে কাবাগৃহে দিবারাত্রি সবসময় সালাত ও তাওয়াফ করা জায়েয আছে। [তিরমিযী, হা/৮৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৫৩; মিশকাত হা/১০৪৫।]
৩. ফরয সালাতের ‘ইকামত’ দেয়ার পর কোন নফল/সুন্নাত সালাত আদায় করা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, ইকামত দেয়া হয়ে গেলে তারপর আর নফল বা সুন্নাত কোন সালাতই আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, ‘‘সালাতে দন্ডায়মান হওয়া ও ফরয সালাতের পর কোন সালাত নাই’’ অধ্যায়; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১; নাসাঈ, হা/৮৬৮; তিরমিযী, হা/৪২১; আবু দাউদ, হা/১২৬৬।]
১. সূর্যোদয়ের সময় তথা সূর্যোদয়ের শুরু হতে সূর্যোদয় শেষ হওয়া পর্যন্ত।
২. সূর্যাস্তের সময় তথা সূর্যাস্ত যাওয়ার শুরু হতে সূর্য পরিপূর্ণভাবে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
৩. মধ্যাহ্নে তথা সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য তাঁর স্থান হতে পশ্চিম দিকে হেলে না পড়বে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬; মিশকাত হা/১০৩৯-৪০।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় ইচ্ছা করে সালাত আদায়ের চেষ্টা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮২; নাসাঈ, হা/৫৬৮।]
নফল সালাতের নিষিদ্ধ সময় :
১. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, ফজরের সালাতের পর সূর্য পূর্ণভাবে না উঠা পর্যন্ত কোন সালাত আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬০; আবু দাউদ, হা/১২৭৮; নাসাঈ, হা/৫৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০।]
২. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। আসরের সালাতের পর সূর্য পূর্ণভাবে অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত কোন সালাত আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৬..... ঐ।]
এ সময়গুলোতে কেবল নফল সালাত আদায় করা নিষেধ; কিন্তু ছুটে যাওয়া ফরয সালাতের কাযা আদায় করা জায়েয আছে। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের সালাত আদায়ের পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছিলেন। অতঃপর এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আবদুল কায়েস গোত্রের কতক লোক আমার কাছে আগমনের ফলে যোহরের পরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আমি আদায় করতে পারিনি। এখন এ দু’রাক‘আত আদায় করলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৪৩৭০; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১০৪৩।]
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে অনেক আলেম নিষিদ্ধ সময়গুলোতে কারণবিশিষ্ট সালাতসমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিয়্যাতুল মসজিদ, তাহিয়্যাতুল অযু, সূর্য গ্রহণের সালাত ইত্যাদি। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।] জুমু‘আর সালাত ঠিক দুপুরের সময়ও জায়েয আছে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ..... ঐ] এমনিভাবে কাবাগৃহে দিবারাত্রি সবসময় সালাত ও তাওয়াফ করা জায়েয আছে। [তিরমিযী, হা/৮৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৫৩; মিশকাত হা/১০৪৫।]
৩. ফরয সালাতের ‘ইকামত’ দেয়ার পর কোন নফল/সুন্নাত সালাত আদায় করা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, ইকামত দেয়া হয়ে গেলে তারপর আর নফল বা সুন্নাত কোন সালাতই আদায় করা যাবে না। [সহীহ বুখারী, ‘‘সালাতে দন্ডায়মান হওয়া ও ফরয সালাতের পর কোন সালাত নাই’’ অধ্যায়; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১; নাসাঈ, হা/৮৬৮; তিরমিযী, হা/৪২১; আবু দাউদ, হা/১২৬৬।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সমগ্র পৃথিবীই সিজদার স্থান। কেবল কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত। [আবু দাউদ, হা/৪২৯; তিরমিযী, হা/৩১৭; মিশকাত, হা/৭৩৭।]
তাছাড়া দুর্গন্ধময় ও আবর্জনাপূর্ণ স্থান, উট বাঁধার স্থান এবং মানুষের চলাচলের রাস্তার উপর সালাত আদায় করা উচিত নয়।
তাছাড়া দুর্গন্ধময় ও আবর্জনাপূর্ণ স্থান, উট বাঁধার স্থান এবং মানুষের চলাচলের রাস্তার উপর সালাত আদায় করা উচিত নয়।
সালাতের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ﴾
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
সালাতে দাঁড়ানোর সময় সামর্থ্যানুযায়ী পরিপূর্ণ ও ভালো পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং অন্তত এতটুকু মহত্তর মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়।
পুরুষদের পোশাক :
১. একজন পুরুষকে তার সামর্থ্যানুযায়ী শালীনতাপূর্ণ পোশাক পরতে হবে- এটাই বিধান। যে কোন পোশাক যা সামাজিকভাবে শোভনীয় তা সালাতের জন্যও গ্রহণীয়।
২. সালাতের সময় উভয় কাঁধ ঢাকা জরুরি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫; আবু দাউদ, হা/৬২০।]
৩. এত টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে শরীরের ভাঁজ ফুটে উঠে এবং বসতে ও সালাত পড়তে কষ্ট হয়।
৪. পুরুষের পোশাক যেন মহিলাদের পোশাকের অনুরূপ না হয়।
৫. পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৬. সুন্দর পোশাক পরিধানে কোন আপত্তি নেই, কারণ আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তবে এরূপ পোশাক পরিধান করে অহংকার প্রকাশ করলে তার পরিণাম ভালো নয়। নবী ﷺ বলেছেন, হালালের মধ্যে যা ইচ্ছা খাও, যেমন ইচ্ছা পরিধান করো, তবে তাতে যেন দুটি জিনিস না থাকে, অপচয় এবং অহংকার। [সহীহ বুখারী, কিতাবুল লিবাস; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬০৫।]
৭. সাজ-সজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানের পোশাকও পরবে না।
৮. অমুসলিমদের সাদৃশ্য হয় এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না। [আবু দাউদ, হা/৪০৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭২৩; মিশকাত হা/৪৩৪৭।]
৯. পুরুষদের জন্য রেশমের পোশাক পরিধান করা হারাম । [সহীহ বুখারী, হা/৫৮২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫১০; মিশকাত হা/৪৩২১, ৪৩৮১।]
১০. পুরুষদের জন্য যে কোন পোশাক টাখনুর নীচে পরাও হারাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭; নাসাঈ, হা/৫৩৩১;মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩০৮।]
মহিলাদের পোশাক :
১. মহিলাদের পোশাক এমন হতে হবে, যাতে হাতের কব্জি ও পায়ের টাখনুর নিচের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর আবৃত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنٰۤى أَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাঁদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (সূরা আহযাব- ৫৯)
২. মাথা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছাড়া অর্থাৎ চুল সম্পূর্ণ না ঢাকলে সাবালিকা মহিলার সালাত কবুল হয় না।
৩. মহিলাদের পোশাক যেন পুরুষের পোষাকের অনুরূপ না হয়।
৪. এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা শরীরের সাথে একদম লেগে থাকে এবং শরীরের উঁচু-নীচু প্রকাশ পায়।
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ﴾
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
সালাতে দাঁড়ানোর সময় সামর্থ্যানুযায়ী পরিপূর্ণ ও ভালো পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং অন্তত এতটুকু মহত্তর মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়।
পুরুষদের পোশাক :
১. একজন পুরুষকে তার সামর্থ্যানুযায়ী শালীনতাপূর্ণ পোশাক পরতে হবে- এটাই বিধান। যে কোন পোশাক যা সামাজিকভাবে শোভনীয় তা সালাতের জন্যও গ্রহণীয়।
২. সালাতের সময় উভয় কাঁধ ঢাকা জরুরি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫; আবু দাউদ, হা/৬২০।]
৩. এত টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে শরীরের ভাঁজ ফুটে উঠে এবং বসতে ও সালাত পড়তে কষ্ট হয়।
৪. পুরুষের পোশাক যেন মহিলাদের পোশাকের অনুরূপ না হয়।
৫. পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৬. সুন্দর পোশাক পরিধানে কোন আপত্তি নেই, কারণ আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তবে এরূপ পোশাক পরিধান করে অহংকার প্রকাশ করলে তার পরিণাম ভালো নয়। নবী ﷺ বলেছেন, হালালের মধ্যে যা ইচ্ছা খাও, যেমন ইচ্ছা পরিধান করো, তবে তাতে যেন দুটি জিনিস না থাকে, অপচয় এবং অহংকার। [সহীহ বুখারী, কিতাবুল লিবাস; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬০৫।]
৭. সাজ-সজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানের পোশাকও পরবে না।
৮. অমুসলিমদের সাদৃশ্য হয় এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না। [আবু দাউদ, হা/৪০৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭২৩; মিশকাত হা/৪৩৪৭।]
৯. পুরুষদের জন্য রেশমের পোশাক পরিধান করা হারাম । [সহীহ বুখারী, হা/৫৮২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫১০; মিশকাত হা/৪৩২১, ৪৩৮১।]
১০. পুরুষদের জন্য যে কোন পোশাক টাখনুর নীচে পরাও হারাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭; নাসাঈ, হা/৫৩৩১;মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩০৮।]
মহিলাদের পোশাক :
১. মহিলাদের পোশাক এমন হতে হবে, যাতে হাতের কব্জি ও পায়ের টাখনুর নিচের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর আবৃত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنٰۤى أَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাঁদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (সূরা আহযাব- ৫৯)
২. মাথা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছাড়া অর্থাৎ চুল সম্পূর্ণ না ঢাকলে সাবালিকা মহিলার সালাত কবুল হয় না।
৩. মহিলাদের পোশাক যেন পুরুষের পোষাকের অনুরূপ না হয়।
৪. এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা শরীরের সাথে একদম লেগে থাকে এবং শরীরের উঁচু-নীচু প্রকাশ পায়।
সালাতের জন্য সতর ঢাকার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটিকে সালাতের শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সতর সালাত ছাড়াও সর্বদা ঢেকে রাখা ফরয। পুরুষদের সতর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। তবে সালাতের সময় তাদেরকে উভয় কাঁধও ঢেকে রাখতে হবে। আর মহিলাদের সতর হাতের কব্জি ও পায়ের টাখনুর নিচের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর। অনেকের মতে তারা মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারবে, তবে ঢেকে রাখা উত্তম; কিন্তু মাথা, চুল ও গলা খোলা রাখলে গোনাহগার হবে। তবে সালাতের মধ্যে তারা মুখ ঢাকবে না।
যদি কারো সতর ঢাকার মতো কোন কাপড় না থাকে, তবে যতটুকু সম্ভব ততটুকু ঢাকবে এবং সে অবস্থাতেই সালাত আদায় করে নেবে।
যদি কারো সতর ঢাকার মতো কোন কাপড় না থাকে, তবে যতটুকু সম্ভব ততটুকু ঢাকবে এবং সে অবস্থাতেই সালাত আদায় করে নেবে।
সুতরা অর্থ আড়াল করা। মুসল্লি কোন কিছু পুঁতে রেখে তার সিজদার জায়গা পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে- এটাকে সুতরা বলা হয়। মুসল্লির সামনে সুতরা রাখা সুন্নাত। এর দিকে মুখ করে সে সালাত পড়বে, চাই সে ইমাম হোক অথবা একাকী সালাত আদায়কারী হোক।
মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে কত বড় পাপ রয়েছে, তাহলে সে সেখানে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চেয়ে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৫১০; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬।]
ইমাম ও সুতরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীসে শয়তান বলে অভিহিত করা হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫৭; আবু দাউদ, হা/৭০০; মিশকাত হা/৭৭৭।] এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যে কোন বস্তু দ্বারা মুসল্লির সম্মুখে সুতরা বা আড়াল করতে হয়। তবে জামাআত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬৬; সহীহ বুখারী, হা/৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫২; মিশকাত হা/৭৮০।] সিজদার স্থান হতে সুতরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মতো ফাঁকা রাখা আবশ্যক। [সহীহ বুখারী, হা/৪৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪।] অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুসল্লির সিজদার স্থান হতে একটি বকরী যাওয়ার মতো দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সুতরা সামনে না রেখে সালাতে দাঁড়িয়ো না এবং কাউকে তোমার সামনে দিয়ে পার হতে দিও না, এরপরও যদি কেউ পার হতে চায়, তবে বাধা দাও; কারণ তার সাথে শয়তান আছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬২; সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খোলা ময়দানে সালাতে দাঁড়াতেন এবং সুতরা হিসেবে ব্যবহার করার মতো কিছুই না পেতেন তখন তিনি নিজের সামনে একটি বর্শা পুঁতে নিতেন এবং সেটিকে সুতরা বানিয়ে সালাতে দাঁড়াতেন। অতঃপর সাহাবীগণও তাঁর পেছনে সালাতে দাঁড়াতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭২।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কখনো নবী ﷺ তাঁর নিজ বাহনকেই আড়াআড়িভাবে রেখে তাকে সুতরা বানিয়ে সালাতে দাঁড়িয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৪৫।]
ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট :
জামাআতে সালাত আদায়ের সময় ইমামই মুক্তাদীদের সুতরা। তবে অবশ্যই ইমামের সামনে একটি সুতরা থাকতে হবে। নবী ﷺ ঈদের দিন খোলা ময়দানে সালাত আদায়কালে তাঁর সামনে একটা বর্শা পুঁততে বলতেন এবং ওটাকেই তিনি সুতরা বানিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং অন্যান্য লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে (বিনা সুতরায়) সালাত আদায় করত। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭২।]
মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে কত বড় পাপ রয়েছে, তাহলে সে সেখানে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চেয়ে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৫১০; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬।]
ইমাম ও সুতরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীসে শয়তান বলে অভিহিত করা হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫৭; আবু দাউদ, হা/৭০০; মিশকাত হা/৭৭৭।] এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যে কোন বস্তু দ্বারা মুসল্লির সম্মুখে সুতরা বা আড়াল করতে হয়। তবে জামাআত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬৬; সহীহ বুখারী, হা/৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫২; মিশকাত হা/৭৮০।] সিজদার স্থান হতে সুতরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মতো ফাঁকা রাখা আবশ্যক। [সহীহ বুখারী, হা/৪৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪।] অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুসল্লির সিজদার স্থান হতে একটি বকরী যাওয়ার মতো দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সুতরা সামনে না রেখে সালাতে দাঁড়িয়ো না এবং কাউকে তোমার সামনে দিয়ে পার হতে দিও না, এরপরও যদি কেউ পার হতে চায়, তবে বাধা দাও; কারণ তার সাথে শয়তান আছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৬২; সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খোলা ময়দানে সালাতে দাঁড়াতেন এবং সুতরা হিসেবে ব্যবহার করার মতো কিছুই না পেতেন তখন তিনি নিজের সামনে একটি বর্শা পুঁতে নিতেন এবং সেটিকে সুতরা বানিয়ে সালাতে দাঁড়াতেন। অতঃপর সাহাবীগণও তাঁর পেছনে সালাতে দাঁড়াতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭২।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কখনো নবী ﷺ তাঁর নিজ বাহনকেই আড়াআড়িভাবে রেখে তাকে সুতরা বানিয়ে সালাতে দাঁড়িয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৪৫।]
ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট :
জামাআতে সালাত আদায়ের সময় ইমামই মুক্তাদীদের সুতরা। তবে অবশ্যই ইমামের সামনে একটি সুতরা থাকতে হবে। নবী ﷺ ঈদের দিন খোলা ময়দানে সালাত আদায়কালে তাঁর সামনে একটা বর্শা পুঁততে বলতেন এবং ওটাকেই তিনি সুতরা বানিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং অন্যান্য লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে (বিনা সুতরায়) সালাত আদায় করত। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭২।]
সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিবলামুখী হওয়া অন্যতম শর্ত। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ﴾
তুমি যেখান থেকেই বের হও মসজিদুল হারাম (কাবার) দিকে মুখ ফিরাও।
(সূরা বাকারা- ১৫০)
সারা বিশ্বের মুসলিমদের দেহ-মুখ একই গৃহের অভিমুখী হয়। এতে রয়েছে মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহতির বহিঃপ্রকাশ এবং তাদের সকল বিষয়ে একাত্মতা অবলম্বন করার প্রতি ইঙ্গিত।
মানুষের চেহারাকে কিবলামুখী করতে হলে যেমন অন্যান্য দিক হতে তাকে কিবলার দিকে ফিরাতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে অন্তরটাকে আল্লাহমুখী করতে হলে তাকে অন্যসব বিষয় হতে মুক্ত করে আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত করতে হবে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্য তো এটাই। কেননা তিনি বান্দার মনের দিকে লক্ষ্য রাখেন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - : اِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ اِلٰى صُوَرِكُمْ وَاَمْوَالِكُمْ وَلٰكِنْ يَنْظُرُ اِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদের দিকে দৃষ্টি দেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে দৃষ্টি দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৪৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৯৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫৬; মিশকাত, হা/৫৩১৪।]
কা‘বা যাদের দৃষ্টির সামনে থাকে তাদের জন্য হুবহু কা‘বার প্রতি মুখ ফেরানো জরুরি। পক্ষান্তরে যারা কা‘বা দেখতে পাচ্ছে না, তাদের জন্য হুবহু কা‘বার প্রতি মুখ ফেরানো সম্ভব নয়। কিমত্মু তাদেরকে দিক নির্দেশনার সাহায্যে যতটুকু সম্ভব কাবার দিকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরে থাকাকালে নিজের বাহনের উপর বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। তখন উক্ত বাহন যে দিকে মুখ করে চলতো তিনি সে দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন, কিন্তু ফরয সালাত আদায়ের সময় উট থেকে নেমে কিবলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৯৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৪৫।]
যেসব অবস্থায় কিবলামুখী না হলেও সালাত শুদ্ধ হয় :
১. যদি কোন অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তি কিবলার দিকে মুখ করতে না পারে এবং তাকে ফিরিয়ে দেয়ার মতো কেউ না থাকে তবে সে যে দিকেই মুখ করে সালাত পড়বে তাঁর সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কাউকে তার সাধ্যের বাইরে বোঝা বহন করার ভার দেন না। [সূরা বাকারা- ২৮৬।]
২. যুদ্ধ চলাকালীন সময় সালাতে কিবলামুখী হওয়া জরুরি নয়। শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তাদের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا﴾
অর্থাৎ যদি তোমরা (শত্রুর) ভয় কর তাহলে পথচারী অথবা আরোহী অবস্থায় (সালাত পড়ে নাও)। (সূরা বাকারা- ২৩৯)
৩. সফরে উট, ঘোড়া বা গাড়ি ইত্যাদির উপর নফল সালাত আদায় করার সময় কিবলামুখী হওয়া জরুরি নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ সওয়ারী অবস্থায় নফল সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে উটনীসহ কিবলামুখী হয়ে তাকবীর দিতেন। তারপর বাকী সালাত নিজের সওয়ারীর পথ অভিমুখেই সম্পন্ন করতেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৮৯; বায়হাকী, হা/২০৪২।] অবশ্য ফরয সালাতের সময় সওয়ারী থেকে নেমে কিবলামুখী হয়েও সালাত আদায় করতেন।
নবী করীম ﷺ সওয়ারীতে থাকা অবস্থায় মাথা নিচু করে রুকূ এবং সিজদা করতেন, এমতাবস্থায় সিজদাতে মাথা রুকূর চেয়েও বেশি নোয়াতেন। [আবু দাউদ, হা/১২২৭; দার কুতনী, হা/১৪৭৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২২৯৭।]
কিবলার দিক বুঝতে না পারলে :
কোন অজানা স্থানে যাওয়ার কারণে বা অন্ধকারের কারণে বা অন্য কোন কারণে কিবলার দিক নির্ণয় করতে না পারলে এবং এজন্য কোন সুযোগও না থাকলে মন যে দিকে ঝুঁকবে সে দিকে ফিরে সালাত আদায় করতে হবে। সালাতরত অবস্থায় যে কোন উপায়ে কিবলার সঠিক দিক সম্পর্কে অবগত হলে বাকী সালাত সেদিকে ফিরেই আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا بَيْنَمَا النَّاسُ فِي الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ جَاءَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ قُرْاٰنٌ وَأُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ أَلاَ فَاسْتَقْبِلُوهَا ، وَكَانَ وَجْهُ النَّاسِ إِلَى الشَّامِ فَاسْتَدَارُوا بِوُجُوهِهِمْ إِلَى الْكَعْبَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। লোকজন মসজিদে কুবায় ফজরের সালাত আদায়কালে এক ব্যক্তি আগমন করল এবং বলল, নিশ্চয় এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি যেন কাবার দিকে মুখ ফিরান। সুতরাং তোমরা সবাই কাবার দিকে মুখ ফিরাও। তখন তাদের চেহারা শামের দিকে ছিল। অতঃপর তারা কাবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১২০৬; মুস্তাখরাজে ইবনে আওয়ানা, হা/৯১২।]
সালাত সম্পন্ন করার পর যদি জানতে পারে যে, কিবলা অন্য দিকে ছিল তবুও সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না। [তিরমিযী, হা/৩৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০২০; দার কুতনী, হা/১০৬৫।]
﴿وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ﴾
তুমি যেখান থেকেই বের হও মসজিদুল হারাম (কাবার) দিকে মুখ ফিরাও।
(সূরা বাকারা- ১৫০)
সারা বিশ্বের মুসলিমদের দেহ-মুখ একই গৃহের অভিমুখী হয়। এতে রয়েছে মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহতির বহিঃপ্রকাশ এবং তাদের সকল বিষয়ে একাত্মতা অবলম্বন করার প্রতি ইঙ্গিত।
মানুষের চেহারাকে কিবলামুখী করতে হলে যেমন অন্যান্য দিক হতে তাকে কিবলার দিকে ফিরাতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে অন্তরটাকে আল্লাহমুখী করতে হলে তাকে অন্যসব বিষয় হতে মুক্ত করে আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত করতে হবে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্য তো এটাই। কেননা তিনি বান্দার মনের দিকে লক্ষ্য রাখেন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - : اِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ اِلٰى صُوَرِكُمْ وَاَمْوَالِكُمْ وَلٰكِنْ يَنْظُرُ اِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদের দিকে দৃষ্টি দেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে দৃষ্টি দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৪৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৯৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫৬; মিশকাত, হা/৫৩১৪।]
কা‘বা যাদের দৃষ্টির সামনে থাকে তাদের জন্য হুবহু কা‘বার প্রতি মুখ ফেরানো জরুরি। পক্ষান্তরে যারা কা‘বা দেখতে পাচ্ছে না, তাদের জন্য হুবহু কা‘বার প্রতি মুখ ফেরানো সম্ভব নয়। কিমত্মু তাদেরকে দিক নির্দেশনার সাহায্যে যতটুকু সম্ভব কাবার দিকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরে থাকাকালে নিজের বাহনের উপর বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। তখন উক্ত বাহন যে দিকে মুখ করে চলতো তিনি সে দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন, কিন্তু ফরয সালাত আদায়ের সময় উট থেকে নেমে কিবলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৯৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৪৫।]
যেসব অবস্থায় কিবলামুখী না হলেও সালাত শুদ্ধ হয় :
১. যদি কোন অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তি কিবলার দিকে মুখ করতে না পারে এবং তাকে ফিরিয়ে দেয়ার মতো কেউ না থাকে তবে সে যে দিকেই মুখ করে সালাত পড়বে তাঁর সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কাউকে তার সাধ্যের বাইরে বোঝা বহন করার ভার দেন না। [সূরা বাকারা- ২৮৬।]
২. যুদ্ধ চলাকালীন সময় সালাতে কিবলামুখী হওয়া জরুরি নয়। শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তাদের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا﴾
অর্থাৎ যদি তোমরা (শত্রুর) ভয় কর তাহলে পথচারী অথবা আরোহী অবস্থায় (সালাত পড়ে নাও)। (সূরা বাকারা- ২৩৯)
৩. সফরে উট, ঘোড়া বা গাড়ি ইত্যাদির উপর নফল সালাত আদায় করার সময় কিবলামুখী হওয়া জরুরি নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ সওয়ারী অবস্থায় নফল সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে উটনীসহ কিবলামুখী হয়ে তাকবীর দিতেন। তারপর বাকী সালাত নিজের সওয়ারীর পথ অভিমুখেই সম্পন্ন করতেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৮৯; বায়হাকী, হা/২০৪২।] অবশ্য ফরয সালাতের সময় সওয়ারী থেকে নেমে কিবলামুখী হয়েও সালাত আদায় করতেন।
নবী করীম ﷺ সওয়ারীতে থাকা অবস্থায় মাথা নিচু করে রুকূ এবং সিজদা করতেন, এমতাবস্থায় সিজদাতে মাথা রুকূর চেয়েও বেশি নোয়াতেন। [আবু দাউদ, হা/১২২৭; দার কুতনী, হা/১৪৭৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২২৯৭।]
কিবলার দিক বুঝতে না পারলে :
কোন অজানা স্থানে যাওয়ার কারণে বা অন্ধকারের কারণে বা অন্য কোন কারণে কিবলার দিক নির্ণয় করতে না পারলে এবং এজন্য কোন সুযোগও না থাকলে মন যে দিকে ঝুঁকবে সে দিকে ফিরে সালাত আদায় করতে হবে। সালাতরত অবস্থায় যে কোন উপায়ে কিবলার সঠিক দিক সম্পর্কে অবগত হলে বাকী সালাত সেদিকে ফিরেই আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا بَيْنَمَا النَّاسُ فِي الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ جَاءَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ قُرْاٰنٌ وَأُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ أَلاَ فَاسْتَقْبِلُوهَا ، وَكَانَ وَجْهُ النَّاسِ إِلَى الشَّامِ فَاسْتَدَارُوا بِوُجُوهِهِمْ إِلَى الْكَعْبَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। লোকজন মসজিদে কুবায় ফজরের সালাত আদায়কালে এক ব্যক্তি আগমন করল এবং বলল, নিশ্চয় এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি যেন কাবার দিকে মুখ ফিরান। সুতরাং তোমরা সবাই কাবার দিকে মুখ ফিরাও। তখন তাদের চেহারা শামের দিকে ছিল। অতঃপর তারা কাবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১২০৬; মুস্তাখরাজে ইবনে আওয়ানা, হা/৯১২।]
সালাত সম্পন্ন করার পর যদি জানতে পারে যে, কিবলা অন্য দিকে ছিল তবুও সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না। [তিরমিযী, হা/৩৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০২০; দার কুতনী, হা/১০৬৫।]
সালাত শুরু করার পূর্বে জায়নামাযে বা সালাতের জায়গায় দাঁড়িয়ে ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ...... এ দু‘আ পাঠ করার কোন দলীল নেই। তাই এটা পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শুরু করার পূর্বে সালাতের জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে তাকবীর বলতেন। কিন্তু এর আগে কোন কিছু পড়েছেন বলে কোন হাদীসে প্রমাণ নেই।
অনেকে যে দু‘আটি জায়নামাযের দু‘আ হিসেবে পাঠ করে সেটি মূলত সূরা আন‘আমের ৮০ নং আয়াত। নবী ﷺ এ আয়াতের সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ একত্র করে তাকবীরে তাহরীমার পর সানা হিসেবে পাঠ করতেন। এটি সানা পড়ার বর্ণনায় আলোচনা করা হবে -ইনশাআল্লাহ।
অনেকে যে দু‘আটি জায়নামাযের দু‘আ হিসেবে পাঠ করে সেটি মূলত সূরা আন‘আমের ৮০ নং আয়াত। নবী ﷺ এ আয়াতের সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ একত্র করে তাকবীরে তাহরীমার পর সানা হিসেবে পাঠ করতেন। এটি সানা পড়ার বর্ণনায় আলোচনা করা হবে -ইনশাআল্লাহ।
যে কোন আমলের জন্য নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত ছাড়া কোন আমল শুদ্ধ হয় না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
অর্থাৎ প্রত্যেক আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। [সহীহ বুখারী হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২২৭; মিশকাত, হা/১।]
নিয়ত অর্থ হচ্ছে সংকল্প করা। মুসল্লি যেখানেই অবস্থান করুক না কেন প্রথমে সে কিবলামুখী হবে। তারপর মনে মনে সংকল্প করবে যে, সে এখন কোন্ সালাত পড়তে যাচ্ছে- এটাও সংকল্প করবে যে, এখন যে ইবাদাতটি করতে যাচ্ছে তা কেবল আল্লাহর জন্যই করছে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। কাউকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্যও নয়। এভাবে সালাতসহ অন্যান্য সকল ইবাদাতের পূর্বে নিজের নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে।
অনেকে সালাত আদায় করতে বা অন্য কোন আমল করতে গিয়ে মুখে নিয়ত পাঠ করে। অথচ এ ধরনের মৌখিক উচ্চারণ করে নিয়ত করার ব্যাপারে শরীয়তে কোন হুকুম নেই বরং এটা বিদআত। সহীহ ফিকহুস সুন্নায় রয়েছে।
فَمَنْ قَالَ ذٰلِكَ فَقَدْ خَالَفَ سٌنَّةُ الرَّسُوْلِ اللهِ ﷺ وَإِجْمَاعُ الْاَئِمَّةِ الْاَرَبَعَةِ وَغَيْرِهِمْ .... وَقَائِلٌ هٰذَا يَسْتَتَابُ، فَاِنْ تَابَ وَاِلَّا عُوْقِبَ بِمَا يَسْتَحِفَّهٗ ..... يُضَافُ اِلٰى هٰذَا مَا فِى الْجَهْرِ بِالنِّيَةِ مِنَ التَّشْوِيْشِ عَلَى الْمُصَلِّيْنَ، وَهُوَ حَرَامٌ
সুতরাং যে ব্যক্তি এটা (মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার কথা) বলল সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং চার ইমাম ও অন্যান্যদের ঐক্যমতের বিরোধিতা করল। আর যে ব্যক্তি বলবে যে, এটা মুস্তাহাব তার তওবা করা উচিত। নতুবা সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। তাছাড়া এই নিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করতে মুসল্লিদের কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। অথচ সালাত আদায়কারীকে কষ্টের মুখোমুখি করা হারাম। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৭০ পৃঃ।]
اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
অর্থাৎ প্রত্যেক আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। [সহীহ বুখারী হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২২৭; মিশকাত, হা/১।]
নিয়ত অর্থ হচ্ছে সংকল্প করা। মুসল্লি যেখানেই অবস্থান করুক না কেন প্রথমে সে কিবলামুখী হবে। তারপর মনে মনে সংকল্প করবে যে, সে এখন কোন্ সালাত পড়তে যাচ্ছে- এটাও সংকল্প করবে যে, এখন যে ইবাদাতটি করতে যাচ্ছে তা কেবল আল্লাহর জন্যই করছে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। কাউকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্যও নয়। এভাবে সালাতসহ অন্যান্য সকল ইবাদাতের পূর্বে নিজের নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে।
অনেকে সালাত আদায় করতে বা অন্য কোন আমল করতে গিয়ে মুখে নিয়ত পাঠ করে। অথচ এ ধরনের মৌখিক উচ্চারণ করে নিয়ত করার ব্যাপারে শরীয়তে কোন হুকুম নেই বরং এটা বিদআত। সহীহ ফিকহুস সুন্নায় রয়েছে।
فَمَنْ قَالَ ذٰلِكَ فَقَدْ خَالَفَ سٌنَّةُ الرَّسُوْلِ اللهِ ﷺ وَإِجْمَاعُ الْاَئِمَّةِ الْاَرَبَعَةِ وَغَيْرِهِمْ .... وَقَائِلٌ هٰذَا يَسْتَتَابُ، فَاِنْ تَابَ وَاِلَّا عُوْقِبَ بِمَا يَسْتَحِفَّهٗ ..... يُضَافُ اِلٰى هٰذَا مَا فِى الْجَهْرِ بِالنِّيَةِ مِنَ التَّشْوِيْشِ عَلَى الْمُصَلِّيْنَ، وَهُوَ حَرَامٌ
সুতরাং যে ব্যক্তি এটা (মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার কথা) বলল সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং চার ইমাম ও অন্যান্যদের ঐক্যমতের বিরোধিতা করল। আর যে ব্যক্তি বলবে যে, এটা মুস্তাহাব তার তওবা করা উচিত। নতুবা সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। তাছাড়া এই নিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করতে মুসল্লিদের কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। অথচ সালাত আদায়কারীকে কষ্টের মুখোমুখি করা হারাম। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৭০ পৃঃ।]
নিয়ত কোন পড়ার বিষয় নয়, বরং এটি সংকল্প করার বিষয়। নিয়তের জন্য পৃথক কোন দু‘আর বর্ণনা হাদীসে পাওয়া যায় না। এটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন আবিষ্কার।
নিয়ত হলো মনের ব্যাপার। সুতরাং সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যে ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে চাচ্ছে তা মনে মনে ভেবে নিবে। তারপর তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের জন্য দাঁড়িয়েই ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৬৮।] কিমত্মু এর পূর্বে তিনি কিছুই পড়তেন না। পড়লে সাহাবারা তা বর্ণনা করতেন।
যারা বলেন, নিয়ত মনে মনে করতে হয় ঠিক, তবে আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় বলা উত্তম- একথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম যা উত্তম মনে করেননি উম্মতের অন্য কারো জন্য তা উত্তম মনে করা ঠিক নয়।
নিয়তের জটিলতার কারণে অনেকে সালাত শিখতেও ভয় পায়। আর মুখস্থ করলেও ঐ অনর্থক বিষয়ে সময় ব্যয় করা হয় মাত্র। আবার অনেকে নিয়তের কোন অর্থই বুঝে না। অথচ অর্থ না বুঝলে নিয়ত অর্থহীন। সুতরাং যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ নয় তার পেছনে আমরা অযথা কেন ছুটব?
নিয়ত হলো মনের ব্যাপার। সুতরাং সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যে ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে চাচ্ছে তা মনে মনে ভেবে নিবে। তারপর তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের জন্য দাঁড়িয়েই ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৬৮।] কিমত্মু এর পূর্বে তিনি কিছুই পড়তেন না। পড়লে সাহাবারা তা বর্ণনা করতেন।
যারা বলেন, নিয়ত মনে মনে করতে হয় ঠিক, তবে আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় বলা উত্তম- একথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম যা উত্তম মনে করেননি উম্মতের অন্য কারো জন্য তা উত্তম মনে করা ঠিক নয়।
নিয়তের জটিলতার কারণে অনেকে সালাত শিখতেও ভয় পায়। আর মুখস্থ করলেও ঐ অনর্থক বিষয়ে সময় ব্যয় করা হয় মাত্র। আবার অনেকে নিয়তের কোন অর্থই বুঝে না। অথচ অর্থ না বুঝলে নিয়ত অর্থহীন। সুতরাং যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ নয় তার পেছনে আমরা অযথা কেন ছুটব?
রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয এবং নফল উভয় প্রকার সালাতই দাঁড়িয়ে আদায় করতেন। সালাতে দাঁড়ানোর সময় পা দুটি কিবলামুখী করে দাঁড়াতে হবে। জামাআতে সালাত আদায়ের সময় দু’জনের মধ্যখানে ফাঁক না রেখে উভয়ের কাঁধ ও পা মিলিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। সালাতে দাঁড়ালে নড়াচড়া না করে স্থিরভাবে বিনয়ের সাথে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ﴾
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের। আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও। (সূরা বাকারা- ২৩৮)
﴿حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ﴾
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের। আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও। (সূরা বাকারা- ২৩৮)
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি অর্শ্বরোগে ভুগছিলাম, তাই আমি নবী ﷺ কে সালাত আদায় করার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করো; না পারলে বসে আদায় করো; আর তাও না পারলে শুয়ে আদায় করো। [আবু দাউদ, হা/৯৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১২২৩।]
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) আরো বলেন, আমি তাঁকে বসে সালাত আদায় করার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় হচ্ছে উত্তমপন্থা। যদি কেউ বসে আদায় করে, তাহলে দাঁড়িয়ে আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক ফযীলত পাবে। আর যদি কেউ শোয়া অবস্থায় বা হেলান দেয়া অবস্থায় সালাত আদায় করে, তাহলে সে বসে আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক ফযীলত পাবে। [আবু দাউদ, হা/৯৫১; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩১।]
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) আরো বলেন, আমি তাঁকে বসে সালাত আদায় করার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় হচ্ছে উত্তমপন্থা। যদি কেউ বসে আদায় করে, তাহলে দাঁড়িয়ে আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক ফযীলত পাবে। আর যদি কেউ শোয়া অবস্থায় বা হেলান দেয়া অবস্থায় সালাত আদায় করে, তাহলে সে বসে আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক ফযীলত পাবে। [আবু দাউদ, হা/৯৫১; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩১।]
১. সফরে বাহনের উপর বসে নফল সালাত আদায় করা জায়েয আছে।
২. বসতে পারে এমন ব্যক্তির জন্য শুয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয়।
৩. নফল সালাত ওজর ছাড়াও বসে পড়া যায়, তবে সওয়াব অর্ধেক পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/১১১৫; তিরমিযী, হা/৩৭১; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩১।]
৪. দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে সওয়াব কমানো হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৯৪; বায়হাকী, হা/৬৩৩৯।]
৫. প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করা ব্যক্তি আংশিক সালাত বসে আদায় করতে পারবে। আবার বসে সালাত আদায় করা ব্যক্তি আংশিক সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করতে পারবে।
৬. কেউ বসে সালাত আদায় করতে চাইলে সুন্নাত হলো সে তাশাহ্হুদে বসার ন্যায় বসবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া চারজানু হয়ে বা পা সামনের দিকে বের করে দিয়ে বসবে না।
৭. যে শুয়ে সালাত আদায় করবে তার জন্য সুন্নাত হলো ডান কাতে শুয়ে মুখকে কিবলার দিকে রেখে শয়ন করবে এবং ইশারায় রুকূ-সিজদা করবে।
৮. বিমান, ট্রেন, গাড়ি বা নৌকায় ফরয সালাত আদায়ের সময় দাঁড়ানো সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে; অন্যথায় বসে সালাত আদায় করবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড ২৭৯ পৃঃ।]
৯. কোন ওজরের কারণে কেউ যদি দেয়াল, লাঠি কিংবা অন্য কিছুতে ভর দিয়ে দাঁড়ায় তবে জায়েয আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ﴾
তোমরা তোমাদের সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা তাগাবুন- ১৬)
চেয়ারে বসে সালাত আদায় :
দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে সালাত আদায় করবে; কিমত্মু দাঁড়াতে সক্ষম হলে চেয়ারে বসে সালাত আদায় করা যাবে না। কোন ব্যক্তি যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় কিমত্মু সে রুকূ-সিজদা করতে পারে না- এমন ব্যক্তি দাঁড়িয়েই সূরা কিরাআত পড়বে এবং চেয়ারে বসে রুকূ-সিজদা করতে পারবে। একান্ত প্রয়োজনে চেয়ারে বসে সালাত আদায় করতে চাইলে যদি শুরু থেকে চেয়ার ব্যবহার করতে হয় তবে চেয়ার থাকবে কাতারের বরাবর। আর যদি রুকূ-সিজদার সময় চেয়ার ব্যবহার করতে হয় তবে মুসল্লি কাতারের বরাবর দাঁড়াবে এবং চেয়ার রাখবে পেছনে।
২. বসতে পারে এমন ব্যক্তির জন্য শুয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয়।
৩. নফল সালাত ওজর ছাড়াও বসে পড়া যায়, তবে সওয়াব অর্ধেক পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/১১১৫; তিরমিযী, হা/৩৭১; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩১।]
৪. দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে সওয়াব কমানো হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৯৪; বায়হাকী, হা/৬৩৩৯।]
৫. প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করা ব্যক্তি আংশিক সালাত বসে আদায় করতে পারবে। আবার বসে সালাত আদায় করা ব্যক্তি আংশিক সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করতে পারবে।
৬. কেউ বসে সালাত আদায় করতে চাইলে সুন্নাত হলো সে তাশাহ্হুদে বসার ন্যায় বসবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া চারজানু হয়ে বা পা সামনের দিকে বের করে দিয়ে বসবে না।
৭. যে শুয়ে সালাত আদায় করবে তার জন্য সুন্নাত হলো ডান কাতে শুয়ে মুখকে কিবলার দিকে রেখে শয়ন করবে এবং ইশারায় রুকূ-সিজদা করবে।
৮. বিমান, ট্রেন, গাড়ি বা নৌকায় ফরয সালাত আদায়ের সময় দাঁড়ানো সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে; অন্যথায় বসে সালাত আদায় করবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড ২৭৯ পৃঃ।]
৯. কোন ওজরের কারণে কেউ যদি দেয়াল, লাঠি কিংবা অন্য কিছুতে ভর দিয়ে দাঁড়ায় তবে জায়েয আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ﴾
তোমরা তোমাদের সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা তাগাবুন- ১৬)
চেয়ারে বসে সালাত আদায় :
দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে সালাত আদায় করবে; কিমত্মু দাঁড়াতে সক্ষম হলে চেয়ারে বসে সালাত আদায় করা যাবে না। কোন ব্যক্তি যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় কিমত্মু সে রুকূ-সিজদা করতে পারে না- এমন ব্যক্তি দাঁড়িয়েই সূরা কিরাআত পড়বে এবং চেয়ারে বসে রুকূ-সিজদা করতে পারবে। একান্ত প্রয়োজনে চেয়ারে বসে সালাত আদায় করতে চাইলে যদি শুরু থেকে চেয়ার ব্যবহার করতে হয় তবে চেয়ার থাকবে কাতারের বরাবর। আর যদি রুকূ-সিজদার সময় চেয়ার ব্যবহার করতে হয় তবে মুসল্লি কাতারের বরাবর দাঁড়াবে এবং চেয়ার রাখবে পেছনে।
তাকবীরে তাহরীমা সালাতের ফরয বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। সিজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রেখে ( اَللهُ اَكْبَرُ ) ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তাকবীরে তাহরীমা বলতে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সালাতের চাবিকাঠি হলো পবিত্রতা (গোসল-অযু), (সালাতে প্রবেশ করে পার্থিব কর্ম ও কথাবার্তা ইত্যাদি) হারাম করার শব্দ হলো তাকবীর। আর (সালাত শেষ করে সেসব) হালাল করার শব্দ হলো সালাম। [আবু দাউদ, হা/৬১; তিরযিমী, হা/৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তাকবীরে তাহরীমার সময় ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ শব্দ বলা; অন্য কোন শব্দ নয়। আর তাঁর নিকট হতে কেউই এ শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দে তাকবীর বর্ণনা করেননি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তাকবীরে তাহরীমার সময় ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ শব্দ বলা; অন্য কোন শব্দ নয়। আর তাঁর নিকট হতে কেউই এ শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দে তাকবীর বর্ণনা করেননি।
তাকবীর বলার সময় উভয় হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁধ বরাবর দু’হাত তুলতেন, [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৫, ৭৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৯।] আবার কখনো কানের লতি বরাবর তুলতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১।]
আল্লামা আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (রহ.) বলেন, তাকবীরে তাহরীমার সময় কানের লতি ছোঁয়ানো সুন্নাত নয়। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ হাত তোলার সময় আঙ্গুলগুলো খোলা ও সোজা রাখতেন এবং হাতের তালু কিবলার দিকে করতেন। [যাদুল মা‘আদ, ১ম খন্ড, ২০২ পৃঃ।]
‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে বাম হাত নীচে ও ডান হাত উপরে রেখে বাঁধতে হবে। ‘আল্লা-হু আকবার’ এ কথা মুখে বলার সময় অন্তরে অন্য জিনিসের খেয়াল থাকবে না। আল্লাহ বড় ও মহান তার চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলার কথাই মনে রাখতে হবে।
আল্লামা আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (রহ.) বলেন, তাকবীরে তাহরীমার সময় কানের লতি ছোঁয়ানো সুন্নাত নয়। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ হাত তোলার সময় আঙ্গুলগুলো খোলা ও সোজা রাখতেন এবং হাতের তালু কিবলার দিকে করতেন। [যাদুল মা‘আদ, ১ম খন্ড, ২০২ পৃঃ।]
‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে বাম হাত নীচে ও ডান হাত উপরে রেখে বাঁধতে হবে। ‘আল্লা-হু আকবার’ এ কথা মুখে বলার সময় অন্তরে অন্য জিনিসের খেয়াল থাকবে না। আল্লাহ বড় ও মহান তার চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলার কথাই মনে রাখতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করতেন। এ ব্যাপারে অনেক হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنٰى عَلٰى ذِرَاعِهِ الْيُسْرٰى فِي الصَّلَاةِ . قَالَ أَبُو حَازِمٍ لَا أَعْلَمُهٗ إِلَّا يَنْمِيْ ذٰلِكَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো যেন তারা সালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের যেরার উপর রাখে। আবু হাযেম (রহ.) বলেন, সাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৭৬; সহীহ বুখারী, হা/৭৪০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৪১৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫৬৮।]
‘যেরা‘ ( ذراع ) অর্থ কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত। এ কথা স্পষ্ট যে, বাম হাতের যেরার উপর ডান হাত রাখলে তা স্বাভাবিকভাবে বুকের উপরেই চলে আসে।
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلٰى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلٰى صَدْرِه
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপর ডান হাত স্বীয় বুকের উপর রাখলেন। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৭৯।]
عَنْ طَاوُسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنٰى عَلٰى يَدِهِ الْيُسْرٰى ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلٰى صَدْرِهٖ وَهُوَ فِى الصَّلَاةِ
ত্বাউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন। অতঃপর দু’হাত শক্ত করে বুকের উপর বাঁধতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৫৯।]
ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, হাত বাঁধার বিষয়ে সহীহ ইবনে খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসের চেয়ে বিশুদ্ধতম কোন হাদীস নেই। [নায়নুল আওতার, ১/২০৪]
নাভির নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে যে কয়টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, মুহাদ্দীসগণ বলেছেন, এ সকল হাদীসের চেয়ে বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীসের সনদ অধিক শক্তিশালী বিধায় বুকের উপর হাত বাঁধা উত্তম।
সালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে ও পুরুষের জন্য নাভির নীচে হাত বাঁধার যে প্রচলন আছে, হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং এটাই সুন্নাত যে, সালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাতসমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে। তবে কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে যা সামনে আলোচনা করা হবে- ইনশা-আল্লাহ।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنٰى عَلٰى ذِرَاعِهِ الْيُسْرٰى فِي الصَّلَاةِ . قَالَ أَبُو حَازِمٍ لَا أَعْلَمُهٗ إِلَّا يَنْمِيْ ذٰلِكَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো যেন তারা সালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের যেরার উপর রাখে। আবু হাযেম (রহ.) বলেন, সাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৭৬; সহীহ বুখারী, হা/৭৪০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৪১৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫৬৮।]
‘যেরা‘ ( ذراع ) অর্থ কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত। এ কথা স্পষ্ট যে, বাম হাতের যেরার উপর ডান হাত রাখলে তা স্বাভাবিকভাবে বুকের উপরেই চলে আসে।
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلٰى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلٰى صَدْرِه
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপর ডান হাত স্বীয় বুকের উপর রাখলেন। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৭৯।]
عَنْ طَاوُسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنٰى عَلٰى يَدِهِ الْيُسْرٰى ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلٰى صَدْرِهٖ وَهُوَ فِى الصَّلَاةِ
ত্বাউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন। অতঃপর দু’হাত শক্ত করে বুকের উপর বাঁধতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৫৯।]
ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, হাত বাঁধার বিষয়ে সহীহ ইবনে খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসের চেয়ে বিশুদ্ধতম কোন হাদীস নেই। [নায়নুল আওতার, ১/২০৪]
নাভির নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে যে কয়টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, মুহাদ্দীসগণ বলেছেন, এ সকল হাদীসের চেয়ে বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীসের সনদ অধিক শক্তিশালী বিধায় বুকের উপর হাত বাঁধা উত্তম।
সালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে ও পুরুষের জন্য নাভির নীচে হাত বাঁধার যে প্রচলন আছে, হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং এটাই সুন্নাত যে, সালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাতসমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে। তবে কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে যা সামনে আলোচনা করা হবে- ইনশা-আল্লাহ।
সালাতের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি থাকবে এবং বসা অবস্থায় ডান হাতের আঙ্গুলের ইশারার দিকে দৃষ্টি রাখবে। এদিক-সেদিক তাকাবে না। চোখ ঘুরিয়েও কিছু দেখা উচিত নয়। কারণ এটা শয়তানের কাজ।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الْاِلْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ هُوَ اخْتِلَاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কোন একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি সালাতরত অবস্থায় এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি। জবাবে তিনি বলেন, এটা (শয়তানের) থাবা; বান্দার সালাতের মধ্যে শয়তান এ থাবা দিয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫১; আবু দাউদ, হা/৯১১।]
বান্দা যদি সালাতে এদিক-সেদিক দৃষ্টি না ফিরায় তাহলে আল্লাহ তার সালাতের প্রতি মনোনিবেশ করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সালাতের দিকে মনোনিবেশ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে অমনোযোগী না হয়। যখন সে অন্য মনষ্ক হয় তখন আল্লাহর দৃষ্টি সরে যায়। [আবু দাউদ, হা/৯১০; নাসাঈ, হা/১১৯৫।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الْاِلْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ هُوَ اخْتِلَاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কোন একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি সালাতরত অবস্থায় এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি। জবাবে তিনি বলেন, এটা (শয়তানের) থাবা; বান্দার সালাতের মধ্যে শয়তান এ থাবা দিয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫১; আবু দাউদ, হা/৯১১।]
বান্দা যদি সালাতে এদিক-সেদিক দৃষ্টি না ফিরায় তাহলে আল্লাহ তার সালাতের প্রতি মনোনিবেশ করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সালাতের দিকে মনোনিবেশ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে অমনোযোগী না হয়। যখন সে অন্য মনষ্ক হয় তখন আল্লাহর দৃষ্টি সরে যায়। [আবু দাউদ, হা/৯১০; নাসাঈ, হা/১১৯৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকবীর বলার পর কিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় নিরব থাকতেন। এ সময় তিনি সানা পড়তেন। তিনি একেক সময় একেকটি সানা পাঠ করতেন। নিম্নে সেসব সানাগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :
اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‐ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ ‐ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাস সাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াস্সালজি ওয়াল বারাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ ও শিশির দিয়ে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]
২. আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [তিরমিযী, হা/২৪২; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মা-লিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা-বিকা ওয়া ইলাইক, তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
শাব্দিক অর্থ : وَجَّهْتُ আমি মুখ ফিরালাম وَجْهِيَ আমার মুখ لِلَّذِيْ ঐ সত্তার দিকে, فَطَرَ যিনি সৃষ্টি করেছেন السَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضَ ও জমিন حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে; وَّمَا اَنَا আর আমি অন্তর্ভুক্ত নই مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের । قُلْ বলো, اِنَّ صَلَاتِيْ নিশ্চয় আমার সালাত, وَنُسُكِيْ আমার কুরবানী, وَمَحْيَايَ আমার জীবন, وَمَمَاتِيْ আমার মরণ لِلّٰهِ ঐ আল্লাহর জন্য رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারাবিশ্বের পালনকর্তা। لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ আর আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ الْمَلِكُ তুমিই বাদশাহ, لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া । اَنْتَ رَبِّىْ তুমি আমার রব وَاَنَا عَبْدُكَ এবং আমি তোমার দাস। ظَلَمْتُ আমি অনেক অন্যায় করেছি نَفْسِىْ নিজের উপর وَاعْتَرَفْتُ এবং আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি بِذَنْبِىْ আমার পাপের। فَاغْفِرْ لِىْ সুতরাং তুমি আমার জন্য ক্ষমা করে দাও ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا আমার সকল গোনাহ। اِنَّهٗ প্রকৃতপক্ষে لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاهْدِنِىْ আর তুমি আমাকে দান করো لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ সবচেয়ে উত্তম চরিত্র। لَا يَهْدِىْ কেননা আর কেউ দান করতে পারে না لِاَحْسَنِهَا উত্তম চরিত্র اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاصْرِفْ আর তুমি বাঁচিয়ে রাখো عَنِّىْ আমার হতে سَيِّئَهَا খারাপ চরিত্রকে। لَا يَصْرِفُ কেননা কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না سَيِّئَهَا মন্দ চরিত্র থেকে اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া । لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ (হে আল্লাহ!) আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ সকল কল্যাণ فِىْ يَدَيْكَ তোমারই হাতে। وَالشَّرُّ অমঙ্গল لَيْسَ اِلَيْكَ তোমার দিক থেকে নয়। اَنَا بِكَ আমি তোমার সাহায্যে وَاِلَيْكَ এবং তোমার দিকেই (মনোনিবেশ) করি। تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ (হে আল্লাহ!) তুমি বরকতময় এবং মহান। اَسْتَغْفِرُكَ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]
এবার মনোযোগ দিয়ে একটু লক্ষ্য করি, আমরা এখানে কী পড়লাম! আমি যখন বললাম, وَجَّهْتُ وَجْهِيَ ‘আমি আল্লাহমুখী হলাম’ তখন যদি আমার অন্তর আল্লাহমুখী না থাকে, তবে আমার এ কথাটি সম্পূর্ণ সত্য হলো না। আর সালাতের শুরুতে এ রকম হলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে।
আমি যখন বললাম, وَمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘‘আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ তখন আমাকে গোপন শির্ক থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। আর তা হলো আমার সালাত লোক দেখানোর জন্য হবে না, কারো প্রশংসা পাওয়ার জন্য হবে না। কারণ এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের প্রশংসা কামনা করত। তার ব্যাপারে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ- ১১০)
আমি যখন বলব وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘‘আমি মুসলিমদের একজন’’ তখন নবী ﷺ এর এ হাদীসটি আমার উপর প্রযোজ্য হচ্ছে কি না তা চিন্তা করতে হবে, তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ [সহীহ বুখারী, হা/ ১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১।]
এখন যদি আমি হাত অথবা মুখ দ্বারা কোন মুসলিমকে কষ্ট দেই অথবা তার কোন ক্ষতি করি তবে ‘আমি মুসলিম’ এ কথাটি সত্য হবে না ।
আমরা আরো বলি وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘‘আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।’’ একটু লক্ষ্য করুন! কী কথা আমরা বলেছি। ‘আমার সারাটি জীবন আল্লাহর জন্য’ এ কথাটি ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে, যে মনে করবে যে, আমার হাত, পা, চক্ষু ও কান এগুলো আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমানত রেখেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন। তিনি আমাকে একটি জীবন দিয়েছেন; যদি ইচ্ছা করেন তবে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু দিয়ে আমার দুনিয়ার জীবনটা শেষ করে দিতে পারেন। অতএব তিনি যখন আমাকে সুস্থ রেখেছেন, সময় দিয়েছেন তখন আমার এ জীবনটি তাঁর মর্জি অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। আমি গোটা জীবনে যা কিছু করব সবকিছুর উদ্দেশ্য হবে একটাই, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন আমার গোটা জীবনটা আল্লাহর জন্য কীভাবে করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
১। আমি জ্ঞানার্জন করব এ উদ্দেশ্যে নয় যে, আমি বুযুর্গ হব। মানুষ আমাকে আগে সালাম দেবে, হাদিয়া উপঢৌকন পাঠাবে; বরং এর উদ্দেশ্য হবে আমি জ্ঞানার্জন করে আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করব, ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব। এতে আমার শিক্ষাজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
২। আমার রুযী-উপার্জন কেবল নিজের জন্য হবে না। এতটুকু তো পশু-পাখিরাও করে থাকে। আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দরিদ্র মানুষের সাহায্য করে, দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল দায়িত্ব আদায় ও বেতন উদ্ধার করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য থাকবে আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, তারা দেশের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। এতে আমার ব্যবসায় ও চাকুরী এক কথায় গোটা কর্মজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৩। বিয়ে-শাদি করব কেবল মনের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য নয়। এ চাহিদা পশুরাও পূর্ণ করে; কিন্তু মানুষ অন্যান্য জীবের মতো নয়; তার রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিয়ে করতে হবে এজন্য যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। এতে আমার বৈবাহিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৪। আমার ভালোবাসা কেবল আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার ভালোবাসা হবে সকলের জন্য ব্যাপক। আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করব- আমার অপর মুসলিম ভাই-বোনদের জন্যও তা পছন্দ করব। আর আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করি না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করব না। আমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হব, বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়াব। এজন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
তোমরাই উত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
৫। রাজনীতি করব শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয় এবং দলের কাছ থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে আমার রাজনৈতিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
এভাবে সালাত মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করে। শুয়াইব (আঃ) তার জাতিকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর গোলামী করার দাওয়াত দিলেন, তখন জাতির লোকেরা বলল-
﴿يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِيْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ﴾
হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যার ইবাদাত করত আমরা তা ছেড়ে দেব? আর আমাদের ধন-সম্পদ যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবহার করতে পারব না? (সূরা হূদ- ৮৭)
এ থেকে বুঝা গেল যে, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে।
এখন সালাতের শুরুতেই যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আক্বীদা-বিশ্বাসের এ বিরাট প্রশিক্ষণ হয়, তাহলে গোটা সালাত তাকে কেমন মানুষ তৈরি করে ছাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :
اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‐ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ ‐ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাস সাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াস্সালজি ওয়াল বারাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ ও শিশির দিয়ে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]
২. আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [তিরমিযী, হা/২৪২; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মা-লিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা-বিকা ওয়া ইলাইক, তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
শাব্দিক অর্থ : وَجَّهْتُ আমি মুখ ফিরালাম وَجْهِيَ আমার মুখ لِلَّذِيْ ঐ সত্তার দিকে, فَطَرَ যিনি সৃষ্টি করেছেন السَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضَ ও জমিন حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে; وَّمَا اَنَا আর আমি অন্তর্ভুক্ত নই مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের । قُلْ বলো, اِنَّ صَلَاتِيْ নিশ্চয় আমার সালাত, وَنُسُكِيْ আমার কুরবানী, وَمَحْيَايَ আমার জীবন, وَمَمَاتِيْ আমার মরণ لِلّٰهِ ঐ আল্লাহর জন্য رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারাবিশ্বের পালনকর্তা। لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ আর আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ الْمَلِكُ তুমিই বাদশাহ, لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া । اَنْتَ رَبِّىْ তুমি আমার রব وَاَنَا عَبْدُكَ এবং আমি তোমার দাস। ظَلَمْتُ আমি অনেক অন্যায় করেছি نَفْسِىْ নিজের উপর وَاعْتَرَفْتُ এবং আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি بِذَنْبِىْ আমার পাপের। فَاغْفِرْ لِىْ সুতরাং তুমি আমার জন্য ক্ষমা করে দাও ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا আমার সকল গোনাহ। اِنَّهٗ প্রকৃতপক্ষে لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاهْدِنِىْ আর তুমি আমাকে দান করো لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ সবচেয়ে উত্তম চরিত্র। لَا يَهْدِىْ কেননা আর কেউ দান করতে পারে না لِاَحْسَنِهَا উত্তম চরিত্র اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاصْرِفْ আর তুমি বাঁচিয়ে রাখো عَنِّىْ আমার হতে سَيِّئَهَا খারাপ চরিত্রকে। لَا يَصْرِفُ কেননা কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না سَيِّئَهَا মন্দ চরিত্র থেকে اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া । لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ (হে আল্লাহ!) আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ সকল কল্যাণ فِىْ يَدَيْكَ তোমারই হাতে। وَالشَّرُّ অমঙ্গল لَيْسَ اِلَيْكَ তোমার দিক থেকে নয়। اَنَا بِكَ আমি তোমার সাহায্যে وَاِلَيْكَ এবং তোমার দিকেই (মনোনিবেশ) করি। تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ (হে আল্লাহ!) তুমি বরকতময় এবং মহান। اَسْتَغْفِرُكَ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]
এবার মনোযোগ দিয়ে একটু লক্ষ্য করি, আমরা এখানে কী পড়লাম! আমি যখন বললাম, وَجَّهْتُ وَجْهِيَ ‘আমি আল্লাহমুখী হলাম’ তখন যদি আমার অন্তর আল্লাহমুখী না থাকে, তবে আমার এ কথাটি সম্পূর্ণ সত্য হলো না। আর সালাতের শুরুতে এ রকম হলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে।
আমি যখন বললাম, وَمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘‘আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ তখন আমাকে গোপন শির্ক থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। আর তা হলো আমার সালাত লোক দেখানোর জন্য হবে না, কারো প্রশংসা পাওয়ার জন্য হবে না। কারণ এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের প্রশংসা কামনা করত। তার ব্যাপারে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ- ১১০)
আমি যখন বলব وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘‘আমি মুসলিমদের একজন’’ তখন নবী ﷺ এর এ হাদীসটি আমার উপর প্রযোজ্য হচ্ছে কি না তা চিন্তা করতে হবে, তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ [সহীহ বুখারী, হা/ ১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১।]
এখন যদি আমি হাত অথবা মুখ দ্বারা কোন মুসলিমকে কষ্ট দেই অথবা তার কোন ক্ষতি করি তবে ‘আমি মুসলিম’ এ কথাটি সত্য হবে না ।
আমরা আরো বলি وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘‘আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।’’ একটু লক্ষ্য করুন! কী কথা আমরা বলেছি। ‘আমার সারাটি জীবন আল্লাহর জন্য’ এ কথাটি ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে, যে মনে করবে যে, আমার হাত, পা, চক্ষু ও কান এগুলো আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমানত রেখেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন। তিনি আমাকে একটি জীবন দিয়েছেন; যদি ইচ্ছা করেন তবে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু দিয়ে আমার দুনিয়ার জীবনটা শেষ করে দিতে পারেন। অতএব তিনি যখন আমাকে সুস্থ রেখেছেন, সময় দিয়েছেন তখন আমার এ জীবনটি তাঁর মর্জি অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। আমি গোটা জীবনে যা কিছু করব সবকিছুর উদ্দেশ্য হবে একটাই, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন আমার গোটা জীবনটা আল্লাহর জন্য কীভাবে করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
১। আমি জ্ঞানার্জন করব এ উদ্দেশ্যে নয় যে, আমি বুযুর্গ হব। মানুষ আমাকে আগে সালাম দেবে, হাদিয়া উপঢৌকন পাঠাবে; বরং এর উদ্দেশ্য হবে আমি জ্ঞানার্জন করে আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করব, ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব। এতে আমার শিক্ষাজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
২। আমার রুযী-উপার্জন কেবল নিজের জন্য হবে না। এতটুকু তো পশু-পাখিরাও করে থাকে। আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দরিদ্র মানুষের সাহায্য করে, দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল দায়িত্ব আদায় ও বেতন উদ্ধার করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য থাকবে আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, তারা দেশের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। এতে আমার ব্যবসায় ও চাকুরী এক কথায় গোটা কর্মজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৩। বিয়ে-শাদি করব কেবল মনের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য নয়। এ চাহিদা পশুরাও পূর্ণ করে; কিন্তু মানুষ অন্যান্য জীবের মতো নয়; তার রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিয়ে করতে হবে এজন্য যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। এতে আমার বৈবাহিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৪। আমার ভালোবাসা কেবল আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার ভালোবাসা হবে সকলের জন্য ব্যাপক। আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করব- আমার অপর মুসলিম ভাই-বোনদের জন্যও তা পছন্দ করব। আর আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করি না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করব না। আমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হব, বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়াব। এজন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
তোমরাই উত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
৫। রাজনীতি করব শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয় এবং দলের কাছ থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে আমার রাজনৈতিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
এভাবে সালাত মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করে। শুয়াইব (আঃ) তার জাতিকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর গোলামী করার দাওয়াত দিলেন, তখন জাতির লোকেরা বলল-
﴿يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِيْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ﴾
হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যার ইবাদাত করত আমরা তা ছেড়ে দেব? আর আমাদের ধন-সম্পদ যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবহার করতে পারব না? (সূরা হূদ- ৮৭)
এ থেকে বুঝা গেল যে, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে।
এখন সালাতের শুরুতেই যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আক্বীদা-বিশ্বাসের এ বিরাট প্রশিক্ষণ হয়, তাহলে গোটা সালাত তাকে কেমন মানুষ তৈরি করে ছাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সালাত মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। বিশেষ করে বান্দা সিজদায় গেলে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। শয়তান এটা সহ্য করতে পারে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে তাকে সম্মানিত করার জন্য ফেরেশতা ও জিনদেরকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শয়তান এতে রাজী হয়নি। এই একটি সিজদার হুকুম অস্বীকার করার কারণে আল্লাহ তাকে তাড়িয়ে দেন এবং চির জাহান্নামী করে দেন। এখন মানুষকে সালাতে দেখলে শয়তানের হিংসা বেড়ে যায়। বান্দা আল্লাহকে সিজদা করুক- এটা সে চায় না। তাছাড়া বান্দার সালাত নষ্ট করার জন্য সে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলে, ‘‘এটা মনে করো, ওটা মনে করো’’। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫২।] এজন্য আল্লাহ তা‘আলা শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার আদেশ দিয়ে বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
তুমি যখন কুরআন পড়, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (সূরা নাহল- ৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন। যেমন-
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই, بِاللهِ আল্লাহর কাছে, مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে।
অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে নিম্নের বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন।
أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হিস সামী‘ইল ‘আলীমি মিনাশ্ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।
শাব্দিক অর্থ : أَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِاللهِ আল্লাহর নিকট السَّمِيْعِ যিনি সবকিছু শ্রবণ করেন الْعَلِيْمِ সবকিছু জানেন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে مِنْ هَمْزِهٖ তার কুমন্ত্রণা হতে, وَنَفْخِهٖ তার ফুঁৎকার হতে وَنَفْثِهٖ এবং তার প্ররোচনা হতে।
অর্থ : আমি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা আল্লাহর নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা, ফুঁৎকার ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৭৫; তিরমিযী, হা/২৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৮০৭; মিশকাত, হা/১২১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭৯; দার কুতনী, হা/১১৫৪; বায়হাকী, হা/২১৮৫।]
মনে রাখতে হবে যে, শয়তান থেকে বাঁচতে হলে কেবল ‘আউযুবিল্লাহ’ মুখে পড়াই যথেষ্ট নয়। যেসকল কাজকর্মে শয়তান খুশী হয়, সেসব কাজকর্মও ছাড়তে হবে এবং আল্লাহর পছন্দনীয় কাজসমূহ পালন করতে হবে। যেমন- একজন লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে সামনে তার দুশমন উপস্থিত হলো যে তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এখন যদি লোকটি না পালায় ঐ স্থানে থেকে বলে, ‘‘আমি আশ্রয় চাই’’ তবে সে বাঁচতে পারবে না। তাই শয়তান যেসব কাজের নির্দেশ দেয় তা করতে নেই। আর শয়তান যেদিকে ডাকবে সেদিকে যেতে নেই। এটা করতে পারলেই ‘‘আঊযুবিল্লাহ’’ পড়া সার্থক হবে।
﴿فَاِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
তুমি যখন কুরআন পড়, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (সূরা নাহল- ৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন। যেমন-
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই, بِاللهِ আল্লাহর কাছে, مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে।
অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে নিম্নের বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন।
أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হিস সামী‘ইল ‘আলীমি মিনাশ্ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।
শাব্দিক অর্থ : أَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِاللهِ আল্লাহর নিকট السَّمِيْعِ যিনি সবকিছু শ্রবণ করেন الْعَلِيْمِ সবকিছু জানেন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে مِنْ هَمْزِهٖ তার কুমন্ত্রণা হতে, وَنَفْخِهٖ তার ফুঁৎকার হতে وَنَفْثِهٖ এবং তার প্ররোচনা হতে।
অর্থ : আমি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা আল্লাহর নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা, ফুঁৎকার ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৭৫; তিরমিযী, হা/২৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৮০৭; মিশকাত, হা/১২১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭৯; দার কুতনী, হা/১১৫৪; বায়হাকী, হা/২১৮৫।]
মনে রাখতে হবে যে, শয়তান থেকে বাঁচতে হলে কেবল ‘আউযুবিল্লাহ’ মুখে পড়াই যথেষ্ট নয়। যেসকল কাজকর্মে শয়তান খুশী হয়, সেসব কাজকর্মও ছাড়তে হবে এবং আল্লাহর পছন্দনীয় কাজসমূহ পালন করতে হবে। যেমন- একজন লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে সামনে তার দুশমন উপস্থিত হলো যে তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এখন যদি লোকটি না পালায় ঐ স্থানে থেকে বলে, ‘‘আমি আশ্রয় চাই’’ তবে সে বাঁচতে পারবে না। তাই শয়তান যেসব কাজের নির্দেশ দেয় তা করতে নেই। আর শয়তান যেদিকে ডাকবে সেদিকে যেতে নেই। এটা করতে পারলেই ‘‘আঊযুবিল্লাহ’’ পড়া সার্থক হবে।
জাহেলী যুগে আরবের মুশরিকরা প্রত্যেক কাজ তাদের দেব-দেবীর নামে শুরু করত। এ প্রথা রহিত করার জন্য ওহী নাযিলের শুরুতেই বলা হয়েছে,
﴿اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক- ১)
তাই প্রথমে আল্লাহর নামে পড়া শুরু করতে হয়। কারণ সকল কাজই তাঁর সাহায্য ও করুণা দ্বারা সমাপ্ত হয়। তাই আউযুবিল্লাহ পাঠ করার পর বলতে হয়,
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
মাসআলা :
১. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ নীরবেই পড়তে হবে।
২. ফরয, সুন্নাত, নফল প্রভৃতি সালাতে শুধু প্রথম রাক‘আতে সানা ও আঊযুবিল্লাহ পড়তে হবে। আর বিসমিল্লাহ প্রত্যেক সূরা পাঠের শুরুতে পড়তে হবে।
﴿اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক- ১)
তাই প্রথমে আল্লাহর নামে পড়া শুরু করতে হয়। কারণ সকল কাজই তাঁর সাহায্য ও করুণা দ্বারা সমাপ্ত হয়। তাই আউযুবিল্লাহ পাঠ করার পর বলতে হয়,
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
মাসআলা :
১. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ নীরবেই পড়তে হবে।
২. ফরয, সুন্নাত, নফল প্রভৃতি সালাতে শুধু প্রথম রাক‘আতে সানা ও আঊযুবিল্লাহ পড়তে হবে। আর বিসমিল্লাহ প্রত্যেক সূরা পাঠের শুরুতে পড়তে হবে।
সকল সালাতের প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা পাঠ করা আবশ্যক। কোন সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা না হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যে সকল সালাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পড়তে হয় যেমন মাগরিব, এশা ও ফজর- সে সকল সালাতে ইমাম সূরা ফাতিহা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করবেন। তবে মুক্তাদীগণ তা নীরবে পাঠ করবে। আর বাকী সকল অবস্থাতেই ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ই নীচু স্বরে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন সালাতই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; ইবনে মাজাহ হা/৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৬; দার কুতনী, হা/১২২৫; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছিলাম- যেন আমরা সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং (কুরআন থেকে) যা সহজ মনে হয় (তা পাঠ করি)। [আবু দাউদ, হা/৮১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৯০।]
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন সালাতই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; ইবনে মাজাহ হা/৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৬; দার কুতনী, হা/১২২৫; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছিলাম- যেন আমরা সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং (কুরআন থেকে) যা সহজ মনে হয় (তা পাঠ করি)। [আবু দাউদ, হা/৮১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৯০।]
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠের ব্যাপারে বিদ্বানদের ৩টি অভিমত রয়েছে।
১. সিররী অথবা যেহরী কোন সালাতেই ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে না।
২. যেহরী সালাতে পড়া যাবে না তবে সিররী সালাতে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
৩. সিররী অথবা যেহরী যে কোন সালাতই হোক সর্বাবস্থায় ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য সকল প্রকার সালাতে প্রতি রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীলসমূহ উল্লেখ করা হলো :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : مَنْ صَلّٰى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيْهَا بِأُمِّ الْقُرْاٰنِ فَهِىَ خِدَاجٌ - ثَلَاثًا - غَيْرُ تَمَامٍ . فَقِيْلَ لِأَبِى هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الْإِمَامِ . فَقَالَ اِقْرَأْ بِهَا فِى نَفْسِكَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - يَقُوْلُ : قَالَ اللهُ تَعَالٰى قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার ঐ সালাত বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে থাকি, তখন কীভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন, তুমি তা চুপে চুপে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগ করে নিয়েছি। আর আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন আল্লাহ তাকে দেবেন। আর আমরা সবাই জানি যে, সূরা ফাতিহা হচ্ছে দু‘আ। এখন বান্দা যদি দু‘আ না করে তাহলে আল্লাহ তাকে কীভাবে দেবেন!
খিদাজ ( خِدَاج ) এর অর্থ : সময় আসার পূর্বেই যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, যদিও সে পূর্ণাঙ্গ হয় আরবরা ঐ বাচ্চাকে খিদাজ বলে যা রক্তপিন্ড আকারে অসময়ে গর্ভচ্যুত হয় ও যার আকৃতি চেনা যায় না। আবু ওবায়েদ বলেন, খিদাজ হলো গর্ভচ্যুত মৃত সন্তান, যা কাজে আসে না। [তিরমিযী, হা/২৪৭; আবু দাউদ, হা/৮০৬।] অতএব সূরা ফাতিহা বিহীন সালাত প্রাণহীন অপূর্ণাঙ্গ বাচ্চার ন্যায়, যা কোন কাজে লাগে না।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِى صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ : لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ . قُلْنَا نَعَمْ هٰذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهٗ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের জামাআতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে ছিলাম। এমন সময় মুক্তাদীদের কেউ সরবে কিছু পাঠ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কিরাআত পাঠ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে কিছু পড়ে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করো না। কেবল সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে না তার সালাত শুদ্ধ হয় না। [আবু দাউদ, হা/৮২৩; তিরমিযী, হা/৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭১; মিশকাত, হা/৮৫৪।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ صَلّٰى بِأَصْحَابِه ، فَلَمَّا قَضٰى صَلَاتَهٗ ، أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ ، فَقَالَ : أَتَقْرَءُوْنَ فِي صَلَاتِكُمْ خَلْفَ الْإِمَامِ ، وَالْإِمَامُ يَقْرَأُ ؟ فَسَكَتُوْا ، فَقَالَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ، فَقَالَ قَائِلٌ ، أَوْ قَائِلُوْنَ : إِنَّا لَنَفْعَلُ ، قَالَ : فَلَا تَفْعَلُوْا ، وَلْيَقْرَأْ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِي نَفْسِهٖ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর যখন সালাত শেষ করলেন তখন তাদের দিকে মুখ করলেন এবং বললেন, ইমাম কিরাআত পাঠ করা অবস্থায় তোমরা সালাতে ইমামের পেছনে কিরাআত পাঠ করেছ কি? কিমত্মু তারা চুপ থাকলেন। এভাবে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাদের একজন বা সকলে বললেন, হ্যাঁ-আমরা পাঠ করেছি। তখন তিনি বললেন, তোমরা এমনটি করো না। তবে তোমরা নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৪১; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৬৮০; দার কুতনী, হা/১২৮৮।]
শাইখ আলবানী বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ লিগায়রিহী। মুহাক্কীক সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ তথা উত্তম।
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهٗ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الْإِمَامِ فَقَالَ اِقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ
ইয়াযীদ ইবনে শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি উমর (রাঃ) কে ইমামের পেছনে কিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করো। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হন? তিনি বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে কিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে কিরাআত পাঠ করি। [দার কুতনী, হা/১২১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩০৪৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৩।]
উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ইমাম সূরা ফাতিহা স্বশব্দে বা নীরবে যেভাবেই পড়ুক না কেন, মুক্তাদীগণকে অবশ্যই ইমামের পেছনে নীরবে তা পড়তে হবে।
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে না বলে যারা অভিমত পোষণ করেন তাদের দলীল হলো; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَأَنْصِتُوْا ﴾
যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থাকো। (সূরা আরাফ- ২০৪)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু কুরআন তিলাওয়াত করার সময় চুপ থাকতে বলেছেন সেহেতু তারা যে কোন ধরনের কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকার পক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরা তাকবীর বলো। তিনি যখন কিরাআত পাঠ করেন, তখন তোমরা চুপ থাকো। [নাসাঈ, হা/৯২১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৪৬; মিশকাত, হা/ ৮৫৭।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, যখন ইমাম কিরাআত পাঠ করবে তখন তোমরা নীরব থাকো।
জ্ঞাতব্য :
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে যেসব দলীল পেশ করা হয় তা আম বা ব্যাপক হুকুম সম্বলিত। অন্য হাদীসের মাধ্যমে সূরা ফাতিহাকে এ হুকুম থেকে খাস করা হয়েছে। একই রাবী (আবু হুরায়রা রাঃ) এর ইতিপূর্বের বর্ণনায় এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে সূরা ফাতিহাকে খাসভাবে চুপে চুপে পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব ইমামের পেছনে চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করলে উভয় হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়।
ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় আয়াত শেষে যখন বিরতি দেবেন তখন মুক্তাদীরা চুপে চুপে পড়ে নেবে। আর ইমাম যখন আস্তে পড়েন তখন মুক্তাদীরা কিছুই শুনতে পায় না। এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতে কোন সমস্যা নেই।
মুক্তাদীরা যেন সূরা ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ পায়- সেজন্য ইমামগণের খেয়াল রাখা কর্তব্য। তাই সূরা ফাতিহা পাঠের সময় তাড়াহুড়া না করে প্রতি আয়াতে বিরতি দেবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বিরতি দিয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। আর মুক্তাদীদের উচিত হলো, ইমাম যখন পড়বেন তখন তারা শুনার দিকে মনোযোগ দিবেন। আর ইমাম যখন বিরতি দেবেন তখন চুপি চুপি ঐ আয়াতটি পড়ে নেবেন। তাহলে কুরআন শুনার উপরও আমল হবে, সেই সাথে ঐসব হাদীসের উপরও আমল হয়ে যাবে যেসব হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইমামের পেছনে চুপি চুপি সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
১. সিররী অথবা যেহরী কোন সালাতেই ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে না।
২. যেহরী সালাতে পড়া যাবে না তবে সিররী সালাতে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
৩. সিররী অথবা যেহরী যে কোন সালাতই হোক সর্বাবস্থায় ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য সকল প্রকার সালাতে প্রতি রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীলসমূহ উল্লেখ করা হলো :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - قَالَ : مَنْ صَلّٰى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيْهَا بِأُمِّ الْقُرْاٰنِ فَهِىَ خِدَاجٌ - ثَلَاثًا - غَيْرُ تَمَامٍ . فَقِيْلَ لِأَبِى هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الْإِمَامِ . فَقَالَ اِقْرَأْ بِهَا فِى نَفْسِكَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - يَقُوْلُ : قَالَ اللهُ تَعَالٰى قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার ঐ সালাত বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে থাকি, তখন কীভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন, তুমি তা চুপে চুপে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগ করে নিয়েছি। আর আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন আল্লাহ তাকে দেবেন। আর আমরা সবাই জানি যে, সূরা ফাতিহা হচ্ছে দু‘আ। এখন বান্দা যদি দু‘আ না করে তাহলে আল্লাহ তাকে কীভাবে দেবেন!
খিদাজ ( خِدَاج ) এর অর্থ : সময় আসার পূর্বেই যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, যদিও সে পূর্ণাঙ্গ হয় আরবরা ঐ বাচ্চাকে খিদাজ বলে যা রক্তপিন্ড আকারে অসময়ে গর্ভচ্যুত হয় ও যার আকৃতি চেনা যায় না। আবু ওবায়েদ বলেন, খিদাজ হলো গর্ভচ্যুত মৃত সন্তান, যা কাজে আসে না। [তিরমিযী, হা/২৪৭; আবু দাউদ, হা/৮০৬।] অতএব সূরা ফাতিহা বিহীন সালাত প্রাণহীন অপূর্ণাঙ্গ বাচ্চার ন্যায়, যা কোন কাজে লাগে না।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِى صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ : لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ . قُلْنَا نَعَمْ هٰذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهٗ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের জামাআতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে ছিলাম। এমন সময় মুক্তাদীদের কেউ সরবে কিছু পাঠ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কিরাআত পাঠ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে কিছু পড়ে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করো না। কেবল সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে না তার সালাত শুদ্ধ হয় না। [আবু দাউদ, হা/৮২৩; তিরমিযী, হা/৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭১; মিশকাত, হা/৮৫৪।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ صَلّٰى بِأَصْحَابِه ، فَلَمَّا قَضٰى صَلَاتَهٗ ، أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ ، فَقَالَ : أَتَقْرَءُوْنَ فِي صَلَاتِكُمْ خَلْفَ الْإِمَامِ ، وَالْإِمَامُ يَقْرَأُ ؟ فَسَكَتُوْا ، فَقَالَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ، فَقَالَ قَائِلٌ ، أَوْ قَائِلُوْنَ : إِنَّا لَنَفْعَلُ ، قَالَ : فَلَا تَفْعَلُوْا ، وَلْيَقْرَأْ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِي نَفْسِهٖ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর যখন সালাত শেষ করলেন তখন তাদের দিকে মুখ করলেন এবং বললেন, ইমাম কিরাআত পাঠ করা অবস্থায় তোমরা সালাতে ইমামের পেছনে কিরাআত পাঠ করেছ কি? কিমত্মু তারা চুপ থাকলেন। এভাবে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাদের একজন বা সকলে বললেন, হ্যাঁ-আমরা পাঠ করেছি। তখন তিনি বললেন, তোমরা এমনটি করো না। তবে তোমরা নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৪১; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৬৮০; দার কুতনী, হা/১২৮৮।]
শাইখ আলবানী বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ লিগায়রিহী। মুহাক্কীক সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ তথা উত্তম।
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهٗ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الْإِمَامِ فَقَالَ اِقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ
ইয়াযীদ ইবনে শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি উমর (রাঃ) কে ইমামের পেছনে কিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করো। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হন? তিনি বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে কিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে কিরাআত পাঠ করি। [দার কুতনী, হা/১২১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩০৪৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৩।]
উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ইমাম সূরা ফাতিহা স্বশব্দে বা নীরবে যেভাবেই পড়ুক না কেন, মুক্তাদীগণকে অবশ্যই ইমামের পেছনে নীরবে তা পড়তে হবে।
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে না বলে যারা অভিমত পোষণ করেন তাদের দলীল হলো; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَأَنْصِتُوْا ﴾
যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থাকো। (সূরা আরাফ- ২০৪)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু কুরআন তিলাওয়াত করার সময় চুপ থাকতে বলেছেন সেহেতু তারা যে কোন ধরনের কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকার পক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরা তাকবীর বলো। তিনি যখন কিরাআত পাঠ করেন, তখন তোমরা চুপ থাকো। [নাসাঈ, হা/৯২১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৪৬; মিশকাত, হা/ ৮৫৭।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, যখন ইমাম কিরাআত পাঠ করবে তখন তোমরা নীরব থাকো।
জ্ঞাতব্য :
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে যেসব দলীল পেশ করা হয় তা আম বা ব্যাপক হুকুম সম্বলিত। অন্য হাদীসের মাধ্যমে সূরা ফাতিহাকে এ হুকুম থেকে খাস করা হয়েছে। একই রাবী (আবু হুরায়রা রাঃ) এর ইতিপূর্বের বর্ণনায় এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে সূরা ফাতিহাকে খাসভাবে চুপে চুপে পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব ইমামের পেছনে চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করলে উভয় হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়।
ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় আয়াত শেষে যখন বিরতি দেবেন তখন মুক্তাদীরা চুপে চুপে পড়ে নেবে। আর ইমাম যখন আস্তে পড়েন তখন মুক্তাদীরা কিছুই শুনতে পায় না। এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতে কোন সমস্যা নেই।
মুক্তাদীরা যেন সূরা ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ পায়- সেজন্য ইমামগণের খেয়াল রাখা কর্তব্য। তাই সূরা ফাতিহা পাঠের সময় তাড়াহুড়া না করে প্রতি আয়াতে বিরতি দেবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বিরতি দিয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। আর মুক্তাদীদের উচিত হলো, ইমাম যখন পড়বেন তখন তারা শুনার দিকে মনোযোগ দিবেন। আর ইমাম যখন বিরতি দেবেন তখন চুপি চুপি ঐ আয়াতটি পড়ে নেবেন। তাহলে কুরআন শুনার উপরও আমল হবে, সেই সাথে ঐসব হাদীসের উপরও আমল হয়ে যাবে যেসব হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইমামের পেছনে চুপি চুপি সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআন পড়ার সময় থেমে থেমে পড়তেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ ، اَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهٗ اٰيَةً اٰيَةً : ﴿بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক আয়াতে ওয়াক্ফ করতেন এবং লম্বা করে তারতীলের সাথে পড়তেন। যেমন ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন, তারপর ‘‘আলহামদুলিল্লা-হি রাবিবল আ-লামীন’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘আর রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ বলে থামতেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/ ২৬৬২৫, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১।]
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ ، اَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهٗ اٰيَةً اٰيَةً : ﴿بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক আয়াতে ওয়াক্ফ করতেন এবং লম্বা করে তারতীলের সাথে পড়তেন। যেমন ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন, তারপর ‘‘আলহামদুলিল্লা-হি রাবিবল আ-লামীন’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘আর রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ বলে থামতেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/ ২৬৬২৫, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‐ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ‐ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‐ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ
উচ্চারণ : আল্-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল্‘আ-লামীন। আর্ রাহ্মা-নির রাহীম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তা‘ঈন। ইহ্দিনাস্ সিরা-ত্বাল্ মুস্তাক্বীম। সিরা-ত্বাল্লাযীনা আন্ আম্তা ‘আলাইহিম। গাইরিল্ মাগ্যূবি ‘আলাইহিম্। ওয়ালায্যো-ল্লীন।
শাব্দিক অর্থ : اَلْحَمْدُ সকল প্রশংসা لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য (যিনি), رَبِّ الْعَالَمِيْنَ বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ খুবই দয়ালু ও অতিশয় মেহেরবান। مَالِكِ মালিক, يَوْمِ الدِّيْنِ বিচার দিনের। اِيَّاكَ কেবল তোমারই, نَعْبُد আমরা ইবাদাত করি, وَاِيَّاكَ আর কেবল তোমারই কাছে نَسْتَعِيْنُ আমরা সাহায্য চাই। اِهْدِنَا আমাদেরকে দেখিয়ে দিন, اَلصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ সরল-সঠিক পথ, صِرَاطَ الَّذِيْنَ ওদের পথ, اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন, غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ ওদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন وَلَا الضَّالِّيْنَ এবং ওদের পথও নয় যারা বিপথগামী হয়েছে।
অর্থ :
১. পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
২. সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
৩. যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু।
৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক।
৫. আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।
৬. আমাদেরকে সরলসঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট।
উচ্চারণ : আল্-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল্‘আ-লামীন। আর্ রাহ্মা-নির রাহীম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তা‘ঈন। ইহ্দিনাস্ সিরা-ত্বাল্ মুস্তাক্বীম। সিরা-ত্বাল্লাযীনা আন্ আম্তা ‘আলাইহিম। গাইরিল্ মাগ্যূবি ‘আলাইহিম্। ওয়ালায্যো-ল্লীন।
শাব্দিক অর্থ : اَلْحَمْدُ সকল প্রশংসা لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য (যিনি), رَبِّ الْعَالَمِيْنَ বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ খুবই দয়ালু ও অতিশয় মেহেরবান। مَالِكِ মালিক, يَوْمِ الدِّيْنِ বিচার দিনের। اِيَّاكَ কেবল তোমারই, نَعْبُد আমরা ইবাদাত করি, وَاِيَّاكَ আর কেবল তোমারই কাছে نَسْتَعِيْنُ আমরা সাহায্য চাই। اِهْدِنَا আমাদেরকে দেখিয়ে দিন, اَلصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ সরল-সঠিক পথ, صِرَاطَ الَّذِيْنَ ওদের পথ, اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন, غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ ওদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন وَلَا الضَّالِّيْنَ এবং ওদের পথও নয় যারা বিপথগামী হয়েছে।
অর্থ :
১. পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
২. সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
৩. যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু।
৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক।
৫. আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।
৬. আমাদেরকে সরলসঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট।
সূরা ফাতিহা হলো কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ সূরাটি মূলত একটি দু‘আ। তাই এ সূরার অপর একটি নাম হচ্ছে سُوْرَةُ الدُّعَاءِ অর্থাৎ দু‘আর সূরা। আর সালাতটাও মূলত দু‘আ ও মুনাজাত, এজন্য সালাতের প্রত্যেক রাক‘আতে এ সূরাটি পড়তে হয়।
আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার আদব হলো- প্রথমে তাঁর গুণগান ও প্রশংসা করা, তারপর নিজের প্রয়োজনের কথা বলা। তাই এ সূরাটি আরম্ভ হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে। যেমন-
﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴾
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব জাহানের (রব) পালনকর্তা।
‘রব’ বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছিয়ে দেন। ‘আ-লামীন’ অর্থ বিশ্বজগত, এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি কেবল কোন বিশেষ জিনিস, প্রাণী বা দেশের রব নন। আমরা যা দেখি এবং যা দেখি না, গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে, তিনি হলেন সবকিছুর মালিক, প্রতিপালক, ও ব্যবস্থাপক। আমি যখন মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছিলাম, তখন আমার অবস্থা বড়ই নাজুক ছিল। তিনি আমাকে ধীরে ধীরে জ্ঞান-বুদ্ধি ও শারীরিক দিক দিয়ে উন্নত করেছেন, তাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তিনিই হতে পারেন। এজন্য অন্তর দিয়েই তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে হয়।
আল্লাহ শুধুমাত্র রবই নন তিনি হলেন-
﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾
বড়ই মেহেরবান, অশেষ দয়াময়।
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা শুরু করলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহ্ল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন। তিনি এসবের কোন বিনিময় কারও কাছ থেকে নেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহের গুণে এসব নিয়ামত দান করে যাচ্ছেন। সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা যদি কেবল আমাদের শরীরটার দিকে তাকাই, তবে মনে হবে- এটি যেন নিয়ামতের একটি জগত। চিকিৎসাবিদরা বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শরীরে পাঁচ হাজার প্রকারের উপাদান রেখেছেন। মানুষের চুলগুলো উদ্ভিদের মতো, হাড়গুলো পাহাড়ের মতো, রক্ত চলাচলকারী শিরাগুলো নদী-নালার মতো। মানুষের শরীরে তিন শতাধিক জোড়া রয়েছে। গড়ে ৬০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত মানুষ এগুলো নাড়াচাড়া করে তবুও এগুলো ক্ষয় হয় না, কোন মেরামতেরও প্রয়োজন হয় না। আখিরাতে আল্লাহর রহমত কেবল মুসলিমরা পাবে; কিন্তু এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে- কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাই প্রাপ্ত হয়। সবাইকে তিনি রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন। এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত তিনি কেমন রহমান, কেমন রহীম।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ﴾
অর্থাৎ তিনি বিচার দিনের মালিক।
এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিন আসছে। এর নাম হলো কিয়ামতের দিন। সে দিনের একমাত্র বিচারক হবেন আল্লাহ তা‘আলা। আর তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হয়েছে, তাদেরকে তিনি জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে। দুনিয়ার কোন রাজা-বাদশার কর্তৃত্ব সেখানে থাকবে না। পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ﴾
হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
যে আল্লাহ অতীত হতে সবকিছুর লালন-পালন করে আসছেন, বর্তমানেও যার অশেষ রহমত ও দয়া সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে, মৃত্যুর পর আবার যার কাছে ফিরে যেতে হবে, তিনিই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন।
গোটা কুরআনের সারমর্ম হলো- সূরা ফাতিহা। আর সূরা ফাতিহার সারমর্ম হলো- এ আয়াত। ইখলাসের সাথে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং সকল কাজকর্মে তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়া- এটাই হলো তাওহীদের মূলকথা। ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ বলার পর আবার ‘ওয়া ইয়্যাকা নাসত্মা‘ঈন’ এজন্য বলি যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন মানুষ ভালো কাজ করতে পারে না। যেহেতু তিনি আমাকে সালাতের মতো এত মহান এক ইবাদাত পালনের তাওফীক দিয়েছেন, আমাকে তাঁর খাদিম হিসেবে নির্বাচন করেছেন, এজন্য আমি তাঁরই সাহায্য কামনা করছি; যাতে তিনি এমনভাবে আমাকে আমল করার তাওফীক দান করেন, যেভাবে আমল করলে তাঁর কাছে কবুল হয় এবং দুনিয়া-আখিরাতে এর ফলাফল আমি পাই। প্রতিটি কাজেই আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনিই প্রকৃত সাহায্যকারী, অন্য কেউ নয়।
তারপর বলা হয়েছে,
﴿اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ - صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মানুষের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার যা কিছু আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো- ‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ অর্থাৎ সৎপথের সন্ধান পাওয়া। আমরা আল্লাহর গুণগান গেয়ে আমাদের সেই সবচেয়ে বড় দু‘আটি আল্লাহর দরবারে পেশ করি। সেই পথ কোন্টি, তা ব্যাখ্যা করে বলি তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তারা হলেন নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তারা হলো- ঐ সকল লোক, যারা দ্বীনের বিধিবিধান জেনে বুঝেও তা পালন করে না, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করতেও তারা পরওয়া করে না। ইয়াহুদিদের অভ্যাস এমনই ছিল।
আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা ঐ সকল লোক যাদের ধর্মীয় জ্ঞান না থাকাতে, না বুঝে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে। এতে তারা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়িও করেছে। নাসারাদের এরকম অভ্যাস ছিল। সুতরাং আমরা আপনার কাছে এমন সহজ-সরল পথ চাই, যার মধ্যে না আছে কোন বাড়াবাড়ি, আর না আছে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি।
যারা এভাবে সূরা ফাতিহা বুঝে বুঝে পড়বে, তাদের ব্যাপারে নিচের হাদীসে কুদ্সীটি প্রযোজ্য হবে-
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল কিন্তু তাতে উম্মুল কিতাব তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ হলো না। এ কথা তিনি তিনবার বললেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে সালাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সালাতকে অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দা যখন বলে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আবার যখন বলে اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। তখন আল্লাহ বলেন اَثْنٰى عَلَىَّ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। আবার যখন বলে مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণনা করেছে। আবার বান্দা যখন বলে اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এ কথাটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। অর্থাৎ ইবাদাত আমার জন্য আর সাহায্য আমার বান্দার জন্য- আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। আর বান্দা যখন বলে اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এটা আমার বান্দার, আর আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তা দান করব। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৯০৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; আবু দাউদ, হা/৮২১; তিরমিযী, হা/২৯৫৩; নাসাঈ, হা/৯০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৮৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৪; দার কুতনী, হা/১১৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৫; মিশকাত, হা/৮২৩।]
আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার আদব হলো- প্রথমে তাঁর গুণগান ও প্রশংসা করা, তারপর নিজের প্রয়োজনের কথা বলা। তাই এ সূরাটি আরম্ভ হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে। যেমন-
﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴾
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব জাহানের (রব) পালনকর্তা।
‘রব’ বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছিয়ে দেন। ‘আ-লামীন’ অর্থ বিশ্বজগত, এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি কেবল কোন বিশেষ জিনিস, প্রাণী বা দেশের রব নন। আমরা যা দেখি এবং যা দেখি না, গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে, তিনি হলেন সবকিছুর মালিক, প্রতিপালক, ও ব্যবস্থাপক। আমি যখন মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছিলাম, তখন আমার অবস্থা বড়ই নাজুক ছিল। তিনি আমাকে ধীরে ধীরে জ্ঞান-বুদ্ধি ও শারীরিক দিক দিয়ে উন্নত করেছেন, তাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তিনিই হতে পারেন। এজন্য অন্তর দিয়েই তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে হয়।
আল্লাহ শুধুমাত্র রবই নন তিনি হলেন-
﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾
বড়ই মেহেরবান, অশেষ দয়াময়।
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা শুরু করলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহ্ল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন। তিনি এসবের কোন বিনিময় কারও কাছ থেকে নেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহের গুণে এসব নিয়ামত দান করে যাচ্ছেন। সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা যদি কেবল আমাদের শরীরটার দিকে তাকাই, তবে মনে হবে- এটি যেন নিয়ামতের একটি জগত। চিকিৎসাবিদরা বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শরীরে পাঁচ হাজার প্রকারের উপাদান রেখেছেন। মানুষের চুলগুলো উদ্ভিদের মতো, হাড়গুলো পাহাড়ের মতো, রক্ত চলাচলকারী শিরাগুলো নদী-নালার মতো। মানুষের শরীরে তিন শতাধিক জোড়া রয়েছে। গড়ে ৬০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত মানুষ এগুলো নাড়াচাড়া করে তবুও এগুলো ক্ষয় হয় না, কোন মেরামতেরও প্রয়োজন হয় না। আখিরাতে আল্লাহর রহমত কেবল মুসলিমরা পাবে; কিন্তু এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে- কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাই প্রাপ্ত হয়। সবাইকে তিনি রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন। এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত তিনি কেমন রহমান, কেমন রহীম।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ﴾
অর্থাৎ তিনি বিচার দিনের মালিক।
এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিন আসছে। এর নাম হলো কিয়ামতের দিন। সে দিনের একমাত্র বিচারক হবেন আল্লাহ তা‘আলা। আর তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হয়েছে, তাদেরকে তিনি জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে। দুনিয়ার কোন রাজা-বাদশার কর্তৃত্ব সেখানে থাকবে না। পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ﴾
হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
যে আল্লাহ অতীত হতে সবকিছুর লালন-পালন করে আসছেন, বর্তমানেও যার অশেষ রহমত ও দয়া সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে, মৃত্যুর পর আবার যার কাছে ফিরে যেতে হবে, তিনিই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন।
গোটা কুরআনের সারমর্ম হলো- সূরা ফাতিহা। আর সূরা ফাতিহার সারমর্ম হলো- এ আয়াত। ইখলাসের সাথে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং সকল কাজকর্মে তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়া- এটাই হলো তাওহীদের মূলকথা। ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ বলার পর আবার ‘ওয়া ইয়্যাকা নাসত্মা‘ঈন’ এজন্য বলি যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন মানুষ ভালো কাজ করতে পারে না। যেহেতু তিনি আমাকে সালাতের মতো এত মহান এক ইবাদাত পালনের তাওফীক দিয়েছেন, আমাকে তাঁর খাদিম হিসেবে নির্বাচন করেছেন, এজন্য আমি তাঁরই সাহায্য কামনা করছি; যাতে তিনি এমনভাবে আমাকে আমল করার তাওফীক দান করেন, যেভাবে আমল করলে তাঁর কাছে কবুল হয় এবং দুনিয়া-আখিরাতে এর ফলাফল আমি পাই। প্রতিটি কাজেই আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনিই প্রকৃত সাহায্যকারী, অন্য কেউ নয়।
তারপর বলা হয়েছে,
﴿اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ - صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মানুষের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার যা কিছু আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো- ‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ অর্থাৎ সৎপথের সন্ধান পাওয়া। আমরা আল্লাহর গুণগান গেয়ে আমাদের সেই সবচেয়ে বড় দু‘আটি আল্লাহর দরবারে পেশ করি। সেই পথ কোন্টি, তা ব্যাখ্যা করে বলি তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তারা হলেন নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তারা হলো- ঐ সকল লোক, যারা দ্বীনের বিধিবিধান জেনে বুঝেও তা পালন করে না, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করতেও তারা পরওয়া করে না। ইয়াহুদিদের অভ্যাস এমনই ছিল।
আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা ঐ সকল লোক যাদের ধর্মীয় জ্ঞান না থাকাতে, না বুঝে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে। এতে তারা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়িও করেছে। নাসারাদের এরকম অভ্যাস ছিল। সুতরাং আমরা আপনার কাছে এমন সহজ-সরল পথ চাই, যার মধ্যে না আছে কোন বাড়াবাড়ি, আর না আছে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি।
যারা এভাবে সূরা ফাতিহা বুঝে বুঝে পড়বে, তাদের ব্যাপারে নিচের হাদীসে কুদ্সীটি প্রযোজ্য হবে-
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল কিন্তু তাতে উম্মুল কিতাব তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ হলো না। এ কথা তিনি তিনবার বললেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে সালাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সালাতকে অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দা যখন বলে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আবার যখন বলে اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। তখন আল্লাহ বলেন اَثْنٰى عَلَىَّ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। আবার যখন বলে مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণনা করেছে। আবার বান্দা যখন বলে اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এ কথাটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। অর্থাৎ ইবাদাত আমার জন্য আর সাহায্য আমার বান্দার জন্য- আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। আর বান্দা যখন বলে اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এটা আমার বান্দার, আর আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তা দান করব। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৯০৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; আবু দাউদ, হা/৮২১; তিরমিযী, হা/২৯৫৩; নাসাঈ, হা/৯০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৮৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৪; দার কুতনী, হা/১১৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৫; মিশকাত, হা/৮২৩।]
اٰمِيْن শব্দের অর্থ হচ্ছে, اَللّٰهُمَّ اسْتَجِبْ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি কবুল করো।
আমীনের শব্দ শুনে ইয়াহুদিরা হিংসা করে :
عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ ، قَالَ : مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ ، مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِينِ
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইয়াহুদিরা তোমাদের অন্য কোন বিষয়ে এত বেশি হিংসা করে না যতটকু হিংসা করে তোমাদের সালাম ও আমীন বলার কারণে। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৬; জামেউস সগীর, হা/১০৫৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৮৮।]
আমীন বললে গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا قَالَ الْاِمَامُ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾ فَقُوْلُوْا اٰمِيْنَ ، فَاِنَّهٗ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهٗ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। (কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন।) আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮২, সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৫; আবু দাউদ, হা/৯৩৬; নাসাঈ, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪; দারেমী, হা/১২৪৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৪; মিশকাত, হা/৮২৫।]
ইমামকেও আমীন বলতে হবে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِذَا قَالَ الْإِِمَامُ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّينَ﴾ فَقُوْلُوْا : اٰمِيْنَ ؛ فَإِنَّ الْمَلَآئِكَةَ تَقُوْلُ : اٰمِيْنَ ، وَالْإِِمَامُ يَقُوْلُ : اٰمِيْنَ ، فَمَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهٗ تَأْمِيْنَ الْمَلَآئِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন, আর তখন ইমামও ‘আমীন’ বলে থাকেন। আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا ، فَإِنَّهٗ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهٗ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলাটা আসমানে ফেরেশতাদের আমীন-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪; আবু দাউদ, হা/৯৩৭; তিরমিযী, হা/ ২৫০; নাসাঈ, হা/৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮৩।]
আমীনের শব্দ শুনে ইয়াহুদিরা হিংসা করে :
عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ ، قَالَ : مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ ، مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِينِ
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইয়াহুদিরা তোমাদের অন্য কোন বিষয়ে এত বেশি হিংসা করে না যতটকু হিংসা করে তোমাদের সালাম ও আমীন বলার কারণে। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৬; জামেউস সগীর, হা/১০৫৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৮৮।]
আমীন বললে গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِذَا قَالَ الْاِمَامُ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾ فَقُوْلُوْا اٰمِيْنَ ، فَاِنَّهٗ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهٗ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। (কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন।) আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮২, সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৫; আবু দাউদ, হা/৯৩৬; নাসাঈ, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪; দারেমী, হা/১২৪৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৪; মিশকাত, হা/৮২৫।]
ইমামকেও আমীন বলতে হবে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِذَا قَالَ الْإِِمَامُ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّينَ﴾ فَقُوْلُوْا : اٰمِيْنَ ؛ فَإِنَّ الْمَلَآئِكَةَ تَقُوْلُ : اٰمِيْنَ ، وَالْإِِمَامُ يَقُوْلُ : اٰمِيْنَ ، فَمَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهٗ تَأْمِيْنَ الْمَلَآئِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন, আর তখন ইমামও ‘আমীন’ বলে থাকেন। আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا ، فَإِنَّهٗ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهٗ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলাটা আসমানে ফেরেশতাদের আমীন-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪; আবু দাউদ, হা/৯৩৭; তিরমিযী, হা/ ২৫০; নাসাঈ, হা/৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮৩।]
যেহরী সালাতে ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম-মুক্তাদী সকলে জোরে আমীন বলবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - إِذَا قَرَأَ ﴿ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ قَالَ ﴿ اٰمِينَ ﴾ . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ‘ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলার পর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতে শুনেছি। [আবু দাউদ, হা/৯৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৫; নাসাঈ, হা/৯৩২; তিরমিযী, হা/২৪৮।]
এসব হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শব্দ করে আমীন বলেছেন। সুতরাং নবী করীম ﷺ নির্দেশিত পথ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য শ্রেয়।
এজন্য ইমাম বুখারী (রহ.) তার ‘‘সহীহ বুখারী’’ কিতাবে এভাবে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,
بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ . وَقَالَ عَطَاءٌ : اٰمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ ، وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتّٰى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً
ইমাম উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হলো দু‘আ। ইবনে যুবাইর এবং তার পেছনের লোকেরা এমন জোরে আমীন বলতেন যাতে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। [বুখারী তালীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী, হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ- ১১১।]
তারপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন -
بَابٌ جَهَرَ الْمَأمُوْمِ بِالتَّأمِيْنِ
অর্থাৎ মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ।
নীরবে আমীন বলার হাদীস সম্পর্কে মমত্মব্য :
নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে বর্ণনা এসেছে তা হলো :
عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - قَرَأَ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ فَقَالَ : اٰمِينَ . وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ
আলকামা ইবনে ওয়ায়েল (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করেন। যখন তিনি ‘‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায্যো-ল্লীন’’ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আমীন বললেন। তিনি তা নিম্নস্বরে আওয়ায করলেন। [তিরমিযী, হা/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৪৭২।]
قَالَ أَبُوْ عِيسٰى وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ فِى هٰذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِى مَوَاضِعَ مِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِى الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنٰى أَبَا السَّكَنِ . وَزَادَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهٗ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهٗ .
ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ানের হাদীস শু‘বার হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। এই হাদীসে শু‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন, হুজর বিন আনবাস। তার উপাধি আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলকামা বিন ওয়ায়েল। অথচ তাতে আলকামা নেই। মূলত তা হবে ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, তিনি নিম্নস্বরে বলেন। অথচ তা হবে তিনি তার স্বর উচ্চ করেন।
এ হাদীসে - وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهٗ যার অর্থ আমীন বলার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আওয়ায নিম্নস্বরে হতো। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ান সাওরী থেকে এসেছে رَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ যার অর্থ আমীন বলার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হতো। হাদীস বিশারদগণের নিকট নিম্নস্বরে আমীন বলার হাদীসটি মুযত্বারিব অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নাম ও শব্দগত ভুল রয়েছে। উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার হাদীস এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে এর উপর আমল করাই উত্তম। [দার কুতনী, হা/১২৫৬; আর রাওয়াতুন নাদিয়াহ ১/২৭২; আন নাওলুল আওত্বার ৩/৭৫।]
তাছাড়া উপরের আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, ইয়াহুদিরা মুসলিমদের আমীন শব্দ শুনতে পায় এবং এ কারণে তারা হিংসা করে। সুতরাং এখন যদি উচ্চৈঃস্বরে আমীন না বলা হয় তবে তারা শুনবে কী করে? আর না শুনতে পেলে হিংসা করবে কী করে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলাই সুন্নাত।
অপর হাদীসে বলা হয়েছে যে, ইমাম যখন আমীন বলেন তখন তোমরা আমীন বলো। এতে অতি সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে, ইমামকে জোরে আমীন বলতে হবে। তাহলেই মুক্তাদীরা ইমামের আমীন শুনতে পাবে এবং তারা ইমামের সাথে আমীন বলবে। এখন যদি ইমাম আস্তে আমীন বলেন, তাহলে মুক্তাদীরা তা শুনতে পাবে না। এতে করে সবার আমীন একসাথে হবে না এবং সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হতে হবে। তাই সহীহ হাদীসের উপর আমল করার লক্ষ্যে ইমাম এবং মুক্তাদী সকলেরই জোরে আমীন বলা উচিত।
আমীন কখন বলবে :
উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে মুক্তাদীদের আমীন বলার ব্যাপারে দুটি নিয়ম পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
(এক) ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়।
(দুই) ইমাম যখন ‘‘ওয়ালায্যো-ল্লীন’’ বলা শেষ করবেন তখন মুক্তাদীগণ আমীন বলবে।
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ - إِذَا قَرَأَ ﴿ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ قَالَ ﴿ اٰمِينَ ﴾ . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ‘ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলার পর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতে শুনেছি। [আবু দাউদ, হা/৯৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৫; নাসাঈ, হা/৯৩২; তিরমিযী, হা/২৪৮।]
এসব হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শব্দ করে আমীন বলেছেন। সুতরাং নবী করীম ﷺ নির্দেশিত পথ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য শ্রেয়।
এজন্য ইমাম বুখারী (রহ.) তার ‘‘সহীহ বুখারী’’ কিতাবে এভাবে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,
بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ . وَقَالَ عَطَاءٌ : اٰمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ ، وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتّٰى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً
ইমাম উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হলো দু‘আ। ইবনে যুবাইর এবং তার পেছনের লোকেরা এমন জোরে আমীন বলতেন যাতে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। [বুখারী তালীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী, হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ- ১১১।]
তারপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন -
بَابٌ جَهَرَ الْمَأمُوْمِ بِالتَّأمِيْنِ
অর্থাৎ মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ।
নীরবে আমীন বলার হাদীস সম্পর্কে মমত্মব্য :
নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে বর্ণনা এসেছে তা হলো :
عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ -ﷺ - قَرَأَ ﴿غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ فَقَالَ : اٰمِينَ . وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ
আলকামা ইবনে ওয়ায়েল (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করেন। যখন তিনি ‘‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায্যো-ল্লীন’’ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আমীন বললেন। তিনি তা নিম্নস্বরে আওয়ায করলেন। [তিরমিযী, হা/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৪৭২।]
قَالَ أَبُوْ عِيسٰى وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ فِى هٰذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِى مَوَاضِعَ مِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِى الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنٰى أَبَا السَّكَنِ . وَزَادَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهٗ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهٗ .
ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ানের হাদীস শু‘বার হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। এই হাদীসে শু‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন, হুজর বিন আনবাস। তার উপাধি আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলকামা বিন ওয়ায়েল। অথচ তাতে আলকামা নেই। মূলত তা হবে ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, তিনি নিম্নস্বরে বলেন। অথচ তা হবে তিনি তার স্বর উচ্চ করেন।
এ হাদীসে - وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهٗ যার অর্থ আমীন বলার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আওয়ায নিম্নস্বরে হতো। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ান সাওরী থেকে এসেছে رَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ যার অর্থ আমীন বলার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হতো। হাদীস বিশারদগণের নিকট নিম্নস্বরে আমীন বলার হাদীসটি মুযত্বারিব অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নাম ও শব্দগত ভুল রয়েছে। উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার হাদীস এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে এর উপর আমল করাই উত্তম। [দার কুতনী, হা/১২৫৬; আর রাওয়াতুন নাদিয়াহ ১/২৭২; আন নাওলুল আওত্বার ৩/৭৫।]
তাছাড়া উপরের আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, ইয়াহুদিরা মুসলিমদের আমীন শব্দ শুনতে পায় এবং এ কারণে তারা হিংসা করে। সুতরাং এখন যদি উচ্চৈঃস্বরে আমীন না বলা হয় তবে তারা শুনবে কী করে? আর না শুনতে পেলে হিংসা করবে কী করে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলাই সুন্নাত।
অপর হাদীসে বলা হয়েছে যে, ইমাম যখন আমীন বলেন তখন তোমরা আমীন বলো। এতে অতি সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে, ইমামকে জোরে আমীন বলতে হবে। তাহলেই মুক্তাদীরা ইমামের আমীন শুনতে পাবে এবং তারা ইমামের সাথে আমীন বলবে। এখন যদি ইমাম আস্তে আমীন বলেন, তাহলে মুক্তাদীরা তা শুনতে পাবে না। এতে করে সবার আমীন একসাথে হবে না এবং সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হতে হবে। তাই সহীহ হাদীসের উপর আমল করার লক্ষ্যে ইমাম এবং মুক্তাদী সকলেরই জোরে আমীন বলা উচিত।
আমীন কখন বলবে :
উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে মুক্তাদীদের আমীন বলার ব্যাপারে দুটি নিয়ম পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
(এক) ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়।
(দুই) ইমাম যখন ‘‘ওয়ালায্যো-ল্লীন’’ বলা শেষ করবেন তখন মুক্তাদীগণ আমীন বলবে।
সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ অন্য একটি সূরা বা কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করতেন। যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করতেন। আর শেষ রাক‘আতসমূহে সূরা ফাতিহার সাথে কখনো অন্য সূরা মিলাতেন আবার কখনো মিলাতেন না। [সহীহ মুসলিম; হা/১০৪২; সহীহ আবু দাউদ, হা/৮০৩; নাসাঈ, হা/৪৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৫৮।]
যেহরী সালাতের প্রথম দু’রাক‘আতে ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে কোন সূরা পাঠ করবেন। মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আর কিছুই না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দুটি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। অনুরূপভাবে আসরেও করতেন।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৬; মিশকাত হা/৮২৮।]
প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলা সুন্নাত। কেননা এটা এক সূরাকে অপর সূরা থেকে পৃথক করে। [আবু দাউদ, হা/৭৮৮; বায়হাকী, হা/২২০৮; মিশকাত, হা/২২১৮।]
যেহরী সালাতের প্রথম দু’রাক‘আতে ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে কোন সূরা পাঠ করবেন। মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আর কিছুই না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দুটি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। অনুরূপভাবে আসরেও করতেন।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৬; মিশকাত হা/৮২৮।]
প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলা সুন্নাত। কেননা এটা এক সূরাকে অপর সূরা থেকে পৃথক করে। [আবু দাউদ, হা/৭৮৮; বায়হাকী, হা/২২০৮; মিশকাত, হা/২২১৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে যখন কুরআন পাঠ করতেন তখন ধীরে ধীরে পাঠ করতেন। কোন তাসবীর আয়াত পাঠ করলে তাসবীহ পাঠ করতেন, কোন প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে প্রার্থনা করতেন এবং কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
বিশেষ বিশেষ আয়াতের এসকল জবাব ফরয ও নফল সকল সালাতেই বলা বৈধ।
তিনি সূরা কিয়ামাহ এর শেষ আয়াত ﴿ أَلَيْسَ ذٰلِكَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰى﴾ (অর্থাৎ যিনি এত কিছু করেন তিনি কি মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নন?) পাঠ করলে জবাবে বলতেন, ﴿سُبْحَانَكَ فَبَلٰى﴾ অর্থাৎ তুমি পবিত্র, অবশ্যই সক্ষম।
সূরা আলার প্রথম আয়াত ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلٰى﴾ অর্থাৎ তোমার প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ঘোষণা করো’’ পাঠ করলে জবাবে বলতেন, ﴿ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلٰى ﴾ অর্থাৎ আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। [আবু দাউদ, হা/৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৬৬; মিশকাত, হা/৮৫৯।]
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের নিকট সূরা আর-রহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ নীরবে বসে তিলাওয়াত শুনছিলেন। তিনি বললেন, যে রাত্রে আমার নিকট জিনের দল আসে, সে রাত্রে আমি উক্ত সূরা পাঠ করলে ওরা সুন্দর জবাব দিচ্ছিল। যখনই আমি পাঠ করছিলাম,
فَبِأَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
তখন তারাও এর জবাবে বলছিল,
لَا بِشَئٍ مِّنْ نِّعْمَةٍ رَبَّنَا نُكَذِّبُ، فَلَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : লা বিশায়ইম মিন নি‘মাতিন রাববানা নুকাযযিবু, ফালাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : لَا بِشَئٍ এমন কোন কিছু নেই مِّنْ نِّعْمَةٍ তোমার নিয়ামতসমূহের মধ্যে رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক نُكَذِّبُ যা আমরা অস্বীকার করি। فَلَكَ অতএব আপনারই জন্য الْحَمْدُ সমসত্ম প্রশংসা।
অর্থ : তোমার নিয়ামতসমূহের কোন কিছুকেই আমরা অস্বীকার করি না হে আমাদের প্রতিপালক। অতএব সমসত্ম প্রশংসা আপনারই জন্য। [তিরমিযী, হা/৩২৯১; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/ ২১৫০।]
মাসআলা :
১. কিরাআত সালাতে হোক বা তার বাইরে, ফরযে হোক বা নফলে সর্বক্ষেত্রে উক্ত জবাব দেয়া যাবে।
২. ইমাম ঐ সমস্ত দু‘আ পাঠ করলে এবং মুক্তাদীরা ফাঁক পেলে তারাও তা পাঠ করতে পারবে। নতুবা ইমামের কিরাআত চলাকালে ঐ সমস্ত জবাব দেবে না। কারণ কিরাআতের সময় ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করার অনুমতি নেই।
৩. অনেক মুসল্লি বিভিন্ন আয়াতের জবাবগুলো জোড়ে পড়ে থাকেন। এটা সঠিক নয়। তা নীরবে পড়তে হবে। যাতে অন্য কোন মুসল্লির ব্যাঘাত না হয়।
বিশেষ বিশেষ আয়াতের এসকল জবাব ফরয ও নফল সকল সালাতেই বলা বৈধ।
তিনি সূরা কিয়ামাহ এর শেষ আয়াত ﴿ أَلَيْسَ ذٰلِكَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰى﴾ (অর্থাৎ যিনি এত কিছু করেন তিনি কি মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নন?) পাঠ করলে জবাবে বলতেন, ﴿سُبْحَانَكَ فَبَلٰى﴾ অর্থাৎ তুমি পবিত্র, অবশ্যই সক্ষম।
সূরা আলার প্রথম আয়াত ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلٰى﴾ অর্থাৎ তোমার প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ঘোষণা করো’’ পাঠ করলে জবাবে বলতেন, ﴿ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلٰى ﴾ অর্থাৎ আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। [আবু দাউদ, হা/৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৬৬; মিশকাত, হা/৮৫৯।]
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের নিকট সূরা আর-রহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ নীরবে বসে তিলাওয়াত শুনছিলেন। তিনি বললেন, যে রাত্রে আমার নিকট জিনের দল আসে, সে রাত্রে আমি উক্ত সূরা পাঠ করলে ওরা সুন্দর জবাব দিচ্ছিল। যখনই আমি পাঠ করছিলাম,
فَبِأَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
তখন তারাও এর জবাবে বলছিল,
لَا بِشَئٍ مِّنْ نِّعْمَةٍ رَبَّنَا نُكَذِّبُ، فَلَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : লা বিশায়ইম মিন নি‘মাতিন রাববানা নুকাযযিবু, ফালাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : لَا بِشَئٍ এমন কোন কিছু নেই مِّنْ نِّعْمَةٍ তোমার নিয়ামতসমূহের মধ্যে رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক نُكَذِّبُ যা আমরা অস্বীকার করি। فَلَكَ অতএব আপনারই জন্য الْحَمْدُ সমসত্ম প্রশংসা।
অর্থ : তোমার নিয়ামতসমূহের কোন কিছুকেই আমরা অস্বীকার করি না হে আমাদের প্রতিপালক। অতএব সমসত্ম প্রশংসা আপনারই জন্য। [তিরমিযী, হা/৩২৯১; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/ ২১৫০।]
মাসআলা :
১. কিরাআত সালাতে হোক বা তার বাইরে, ফরযে হোক বা নফলে সর্বক্ষেত্রে উক্ত জবাব দেয়া যাবে।
২. ইমাম ঐ সমস্ত দু‘আ পাঠ করলে এবং মুক্তাদীরা ফাঁক পেলে তারাও তা পাঠ করতে পারবে। নতুবা ইমামের কিরাআত চলাকালে ঐ সমস্ত জবাব দেবে না। কারণ কিরাআতের সময় ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করার অনুমতি নেই।
৩. অনেক মুসল্লি বিভিন্ন আয়াতের জবাবগুলো জোড়ে পড়ে থাকেন। এটা সঠিক নয়। তা নীরবে পড়তে হবে। যাতে অন্য কোন মুসল্লির ব্যাঘাত না হয়।
কুরআনের বিন্যাস অনুযায়ী সালাতে কিরাআত পড়া অপরিহার্য নয় বরং উত্তম। কেউ যদি কুরআনের বিন্যাস অনুসরণ না করে সালাতে কুরআন পাঠ করে তবে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না। আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ﴾
সুতরাং তোমরা কুরআনের যেখান থেকে পাঠ করা সহজ মনে কর সেখান থেকে পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
যে কোন রাক‘আতে পূর্ণ একটি সূরা অথবা একটি সূরার কিছু অংশ অথবা একই সালাতে একই সূরা একাধিক বারও পড়া যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, একই সূরা প্রত্যেক রাক‘আতে পাঠ করা জায়েয আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ সাহাবীকে এমনটি করতে নিষেধ করেননি।
﴿فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ﴾
সুতরাং তোমরা কুরআনের যেখান থেকে পাঠ করা সহজ মনে কর সেখান থেকে পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
যে কোন রাক‘আতে পূর্ণ একটি সূরা অথবা একটি সূরার কিছু অংশ অথবা একই সালাতে একই সূরা একাধিক বারও পড়া যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, একই সূরা প্রত্যেক রাক‘আতে পাঠ করা জায়েয আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ সাহাবীকে এমনটি করতে নিষেধ করেননি।
সূরাসমূহের সত্মর বিন্যাস :
১. সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুরসালাত পর্যন্ত অংশকে ‘‘ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল’’ (দীর্ঘ পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
২. সূরা নাবা থেকে সূরা লাইল পর্যন্ত অংশকে ‘‘আউসাতে মুফাস্সাল’’ (মাঝারি পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
৩. আর সূরা যুহা থেকে শেষ সূরা পর্যন্ত অংশকে ‘‘ক্বিসারে মুফাস্সাল’’ (ছোট পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
ফজরের সালাতে ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল -এর সূরাগুলো হতে; যোহর, আসর ও এশার সালাতে আউসাতে মুফাসসাল -এর সূরাগুলো হতে এবং মাগরিবের সালাতে ক্বিসারে মুফাস্সাল -এর সূরাগুলো হতে পাঠ করা উত্তম। আবার কখনো কখনো এগুলোর বিপরীত আমলও করা ভালো।
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক সালাতে সময় ও সুযোগ মতো কিরাআত দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত করতেন।
ফজর :
আবু বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ভোরের (ফজরের) সালাতে ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫৯; মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হা/৭৩২৯; বায়হাকী, হা/৩৮২৫;]
আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা ফজরের সালাতে সূরা মু‘মিনূন পাঠ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫০; আবু দাউদ, হা/৬৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৪৩২; বায়হাকী, হা/৩৮২৪; মিশকাত, হা/৮৩৭।]
আমর ইবনে হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ফজরের সালাতে সূরা তাকভীর পাঠ করতে শুনেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৬০; বায়হাকী, হা/৩৮২০; মিশকাত, হা/৮৩৬।]
যোহর ও আসর :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যোহর ও আসরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে আরো দুটি সূরা পাঠ করতেন। তিনি যোহরের প্রথম রাক‘আত দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আত সংক্ষিপ্ত করতেন। ফজরের সালাতেও তিনি এরূপ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৪০; আবু দাউদ, হা/৭৯৮।]
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহর এবং আসরের সালাতে সূরা বুরূজ, সূরা তারেক এবং এর অনুরূপ সূরাসমূহ পাঠ করতেন। [আবু দাউদ, হা/৮০৫; তিরমিযী, হা/৩০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৮৬।]
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাতে সূরা লাইল পাঠ করতেন এবং আসরের সালাতেও অনুরূপ কোন সূরা পাঠ করতেন। ফজরের সালাতে তিনি এর চেয়ে দীর্ঘ সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০০০; মিশকাত, হা/৮৩০।]
মাগরিব :
মুহাম্মাদ ইবনে জুবায়ের ইবনে মুত‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মাগরিবের সালাতে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১; সহীহ বুখারী, হা/৪০২৩; সহীহ মুসলিম, হা/১০৬৩; আবু দাউদ, হা/৭১১; নাসাঈ, হা/৯৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৮২৯।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ মাগরিবের সালাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করেছেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৩৩।]
এশা :
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এশার সালাতে সূরা তীন পাঠ করতে শুনেছি। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কণ্ঠের চেয়ে এত সুন্দর কণ্ঠ আর কখনো শুনিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭০৩; মিশকাত, হা/৮৩৪।]
জুমু‘আ ও ঈদ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২৮; আবু দাউদ, হা/১০৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮০০।]
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই ঈদে এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা আ‘লা এবং সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। এমনকি যদি কখনো ঈদ ও জুমু‘আ একই দিনে হত তবে তিনি ঈদ ও জুমু‘আর উভয় সালাতেই এ দুটি সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৮১।]
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত। একদা উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আবু ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে কী কিরাআত পাঠ করতেন? আবু ওয়াক্বিদ (রাঃ) বললেন, তিনি এতে সূরা ক্বাফ এবং সূরা ক্বামার পাঠ করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯২; আবু দাউদ, হা/১১৫৬; মিশকাত, হা/৮৪১।]
উল্লেখ্য যে, কোন সালাতের জন্য কোন সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট নেই যে, এ সূরা না পড়লে উক্ত সালাত আদায় হবে না। মুসল্লি তার সুবিধামতো কুরআন মাজীদের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশেষ বিশেষ সালাতে যে সকল সূরা পাঠ করেছেন সেগুলো পাঠ করা উত্তম। আবার মাঝে-মধ্যে এর ব্যতিক্রমও করা উচিত, যাতে কেউ এ ধারণা করতে না পারে যে, অমুক সূরা ছাড়া অমুক সালাত হয় না।
১. সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুরসালাত পর্যন্ত অংশকে ‘‘ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল’’ (দীর্ঘ পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
২. সূরা নাবা থেকে সূরা লাইল পর্যন্ত অংশকে ‘‘আউসাতে মুফাস্সাল’’ (মাঝারি পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
৩. আর সূরা যুহা থেকে শেষ সূরা পর্যন্ত অংশকে ‘‘ক্বিসারে মুফাস্সাল’’ (ছোট পরিচ্ছেদবহুল অংশ) বলা হয়।
ফজরের সালাতে ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল -এর সূরাগুলো হতে; যোহর, আসর ও এশার সালাতে আউসাতে মুফাসসাল -এর সূরাগুলো হতে এবং মাগরিবের সালাতে ক্বিসারে মুফাস্সাল -এর সূরাগুলো হতে পাঠ করা উত্তম। আবার কখনো কখনো এগুলোর বিপরীত আমলও করা ভালো।
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক সালাতে সময় ও সুযোগ মতো কিরাআত দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত করতেন।
ফজর :
আবু বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ভোরের (ফজরের) সালাতে ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫৯; মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হা/৭৩২৯; বায়হাকী, হা/৩৮২৫;]
আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা ফজরের সালাতে সূরা মু‘মিনূন পাঠ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫০; আবু দাউদ, হা/৬৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৪৩২; বায়হাকী, হা/৩৮২৪; মিশকাত, হা/৮৩৭।]
আমর ইবনে হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ফজরের সালাতে সূরা তাকভীর পাঠ করতে শুনেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৬০; বায়হাকী, হা/৩৮২০; মিশকাত, হা/৮৩৬।]
যোহর ও আসর :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যোহর ও আসরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে আরো দুটি সূরা পাঠ করতেন। তিনি যোহরের প্রথম রাক‘আত দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আত সংক্ষিপ্ত করতেন। ফজরের সালাতেও তিনি এরূপ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৪০; আবু দাউদ, হা/৭৯৮।]
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহর এবং আসরের সালাতে সূরা বুরূজ, সূরা তারেক এবং এর অনুরূপ সূরাসমূহ পাঠ করতেন। [আবু দাউদ, হা/৮০৫; তিরমিযী, হা/৩০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৮৬।]
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাতে সূরা লাইল পাঠ করতেন এবং আসরের সালাতেও অনুরূপ কোন সূরা পাঠ করতেন। ফজরের সালাতে তিনি এর চেয়ে দীর্ঘ সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০০০; মিশকাত, হা/৮৩০।]
মাগরিব :
মুহাম্মাদ ইবনে জুবায়ের ইবনে মুত‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মাগরিবের সালাতে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১; সহীহ বুখারী, হা/৪০২৩; সহীহ মুসলিম, হা/১০৬৩; আবু দাউদ, হা/৭১১; নাসাঈ, হা/৯৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৮২৯।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ মাগরিবের সালাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করেছেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৩৩।]
এশা :
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এশার সালাতে সূরা তীন পাঠ করতে শুনেছি। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কণ্ঠের চেয়ে এত সুন্দর কণ্ঠ আর কখনো শুনিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭০৩; মিশকাত, হা/৮৩৪।]
জুমু‘আ ও ঈদ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২৮; আবু দাউদ, হা/১০৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮০০।]
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই ঈদে এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা আ‘লা এবং সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। এমনকি যদি কখনো ঈদ ও জুমু‘আ একই দিনে হত তবে তিনি ঈদ ও জুমু‘আর উভয় সালাতেই এ দুটি সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৮১।]
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত। একদা উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আবু ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে কী কিরাআত পাঠ করতেন? আবু ওয়াক্বিদ (রাঃ) বললেন, তিনি এতে সূরা ক্বাফ এবং সূরা ক্বামার পাঠ করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯২; আবু দাউদ, হা/১১৫৬; মিশকাত, হা/৮৪১।]
উল্লেখ্য যে, কোন সালাতের জন্য কোন সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট নেই যে, এ সূরা না পড়লে উক্ত সালাত আদায় হবে না। মুসল্লি তার সুবিধামতো কুরআন মাজীদের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশেষ বিশেষ সালাতে যে সকল সূরা পাঠ করেছেন সেগুলো পাঠ করা উত্তম। আবার মাঝে-মধ্যে এর ব্যতিক্রমও করা উচিত, যাতে কেউ এ ধারণা করতে না পারে যে, অমুক সূরা ছাড়া অমুক সালাত হয় না।
আমরা সূরা ফাতিহার মধ্যে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিন। এখন মনে করি যে, আল্লাহ আমাদের সে মুনাজাত কবুল করেছেন এবং সৎ পথ কোন্টি তা জানার জন্য তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদ উপহার দিয়েছেন।
এবার তিনি যেন বলছেন, হে আমার বান্দা! তোমার দু‘আ আমি মঞ্জুর করে এ ৩০ পারা কুরআন তোমার কাছে দিয়েছি। এখন সূরা ফাতিহা থেকে নিয়ে সূরা নাস পর্যন্ত পূর্ণ কুরআনে আমি কী বললাম তা পড়ো এবং বুঝো; এটা বুঝে পড়লে কোন্টি সত্য, কোন্টি মিথ্যা, কোন্টি হক, কোন্টি বাতিল এবং কোন্টি তোমার জন্য ভালো, কোন্টি তোমার জন্য মন্দ তা তুমি ভালো করে জানতে পারবে। আমার এ বাণীসমূহ তোমাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ কুরআন হলো হেদায়াতের কিতাব-
﴿يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ﴾
এটা মানুষকে সঠিক এবং সোজা পথ দেখায়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
﴿ اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ﴾
নিশ্চয় এ কুরআন নির্ভুল ও সোজা পথটি দেখায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
অতএব আমরা কুরআন থেকে যা কিছু পড়ব তার হক আদায় করতে হবে। কুরআনের একটি আয়াতও এমন নেই; যাতে শিক্ষণীয় কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো, কুরআনের হক আমরা কীভাবে আদায় করব? হক আদায়ের নিয়ম হলো :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
এবার তিনি যেন বলছেন, হে আমার বান্দা! তোমার দু‘আ আমি মঞ্জুর করে এ ৩০ পারা কুরআন তোমার কাছে দিয়েছি। এখন সূরা ফাতিহা থেকে নিয়ে সূরা নাস পর্যন্ত পূর্ণ কুরআনে আমি কী বললাম তা পড়ো এবং বুঝো; এটা বুঝে পড়লে কোন্টি সত্য, কোন্টি মিথ্যা, কোন্টি হক, কোন্টি বাতিল এবং কোন্টি তোমার জন্য ভালো, কোন্টি তোমার জন্য মন্দ তা তুমি ভালো করে জানতে পারবে। আমার এ বাণীসমূহ তোমাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ কুরআন হলো হেদায়াতের কিতাব-
﴿يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ﴾
এটা মানুষকে সঠিক এবং সোজা পথ দেখায়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
﴿ اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ﴾
নিশ্চয় এ কুরআন নির্ভুল ও সোজা পথটি দেখায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
অতএব আমরা কুরআন থেকে যা কিছু পড়ব তার হক আদায় করতে হবে। কুরআনের একটি আয়াতও এমন নেই; যাতে শিক্ষণীয় কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো, কুরআনের হক আমরা কীভাবে আদায় করব? হক আদায়ের নিয়ম হলো :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
প্রিয় ভাই-বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি রহম করুন। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন, যারা কুরআন পড়ে বা শুনে খুবই প্রভাবিত হতেন। যারা কুরআনের মর্ম বুঝে তিলাওয়াত করেন বা শুনেন তাদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা একটু লক্ষ্য করি।
عَنْ جُبَيْرِ بن مُطْعِمٍ ، قَالَ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ ، لَاُكَلِّمَهٗ فِي اُسَارَى بَدْرٍ ، فَوَافَقْتُهٗ ، وَهُوَ يُصَلِّي بِاَصْحَابِهِ الْمَغْرِبَ ، اَوِ الْعِشَاءَ ، فَسَمِعْتُهٗ ، وَهُوَ يَقُولُ ، اَوْ يَقْرَاُ ، وَقَدْ خَرَجَ صَوْتُهٗ مِنَ الْمَسْجِدِ ﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾ فَكَاَنَّمَا صُدِعُ قَلْبِيْ
(১) জুবায়ের ইবনে মুত্‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুসলিম হওয়ার আগে বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনার জন্য মদিনায় গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সূরা তূর দিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করছিলেন। এমনকি বাহির থেকে কিরাআতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি যখন এ আয়াত পড়লেন -
﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ ‐ - مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾
তোমার পালনকর্তার আযাব অবশ্যই আসবে; একে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। (সূরা তূর- ৭, ৮)
তখন আমি এমন ভয় পেলাম, যেন আমার অন্তর ফেটে যাচ্ছে; আমি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল যেন এ স্থান ত্যাগ করার আগেই আমি আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হয়ে যাব। [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮১; মুজামুস সগীর, হা/১১৪১; কিতাবুল আমওয়াল, হা/৩০২; মা‘রেফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার, হা/১২৯৯।]
(২) আলী ইবনে ফুযাইল নরম মনের একজন যুবক ছিলেন। তার সামনে জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু ও কবরের আলোচনা হলে তিনি কান্না শুরু করতেন। তার পিতা এক মসজিদে ইমামতি করতেন। পিতা যখন জানতেন, তার ছেলে সালাতে উপস্থিত, তখন তিনি হৃদয় বিদারক কোন সূরা বা আয়াত পড়তেন না। একদিন ছেলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পিতা তাকে অনুপস্থিত মনে করে সালাতে সূরা মু’মিনূন তিলাওয়াত শুরু করলেন। যখন তিনি এ আয়াতগুলোতে পৌঁছলেন-
﴿اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ ‐ - قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ ‐ - رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ ‐ - قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ ‐ - اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ - فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤى اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ ‐ - اِنِّيْ جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوْاۤ اَنَّهُمْ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
তখন আলী বেহুশ হয়ে পড়লেন। পরে লোকেরা তার মাথায় পানি দিলে তার হুশ ফিরে আসে। [কিতাবুত্ তাও্ওয়াবীন লিইবনে কুদাম।]
আয়াতগুলোর সারমর্ম হলো, অপরাধীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদেরকে কেউ আমার আয়াত পড়ে শোনায়নি? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে। তখন তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের দুর্গতি আমাদের উপর প্রবল হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। এখন আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমরা যদি আবার আপনার নাফরমানী করি, তবে আমরা গোনাহগার হব। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা এখানে পড়ে থাকো। আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের একটি দল দুনিয়াতে আমার উপর ঈমান আনত এবং বলত, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর আপনিই উত্তম রহমত বর্ষণকারী’’। তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে, এমনকি তোমরা আমার স্মরণ থেকে বিমুখ ছিলে। আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছি। কারণ তারাই সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১১১)
(৩) মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) মৃত্যুর সময় খুবই হা-হুতাশ করছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতকে ভয় করছি সেটি হলো-
﴿وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِه مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ﴾
যদি গোনাহ্গারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে আরো অনুরূপ থাকে, তবে কিয়ামতের দিন সবকিছুই মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে। আর তারা এমন শাস্তির সম্মুখীন হবে যা কল্পনাও করেনি অথবা তাদের সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পাবে যাকে তারা গোনাহ মনে করেনি। (সূরা যুমার- ৪৭)
এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমার সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পেতে পারে যা আমি হিসাব করিনি। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর- ৬/২৯৩।]
তারতীলের সাথে কুরআন পাঠ করতে হবে :
মহান আল্লাহ তারতীলের সাথে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাজভীদের নিয়মাবলি আদায় করে সুন্দর করে পড়াকে তারতীল বলা হয়। তবে বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করে এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হলো আসল তারতীল। হাসান বসরী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا﴾
তুমি তারতীলসহ কুরআন পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিটি আয়াতকে পৃথক করে অর্থের দিকে মনোনিবেশ করে পাঠ করাই হচ্ছে এ তারতীলের উদ্দেশ্য। [তাফসীরে সীরাজুম মুনীর- ৩/১৩।]
عَنْ جُبَيْرِ بن مُطْعِمٍ ، قَالَ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ ، لَاُكَلِّمَهٗ فِي اُسَارَى بَدْرٍ ، فَوَافَقْتُهٗ ، وَهُوَ يُصَلِّي بِاَصْحَابِهِ الْمَغْرِبَ ، اَوِ الْعِشَاءَ ، فَسَمِعْتُهٗ ، وَهُوَ يَقُولُ ، اَوْ يَقْرَاُ ، وَقَدْ خَرَجَ صَوْتُهٗ مِنَ الْمَسْجِدِ ﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾ فَكَاَنَّمَا صُدِعُ قَلْبِيْ
(১) জুবায়ের ইবনে মুত্‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুসলিম হওয়ার আগে বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনার জন্য মদিনায় গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সূরা তূর দিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করছিলেন। এমনকি বাহির থেকে কিরাআতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি যখন এ আয়াত পড়লেন -
﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ ‐ - مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾
তোমার পালনকর্তার আযাব অবশ্যই আসবে; একে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। (সূরা তূর- ৭, ৮)
তখন আমি এমন ভয় পেলাম, যেন আমার অন্তর ফেটে যাচ্ছে; আমি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল যেন এ স্থান ত্যাগ করার আগেই আমি আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হয়ে যাব। [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮১; মুজামুস সগীর, হা/১১৪১; কিতাবুল আমওয়াল, হা/৩০২; মা‘রেফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার, হা/১২৯৯।]
(২) আলী ইবনে ফুযাইল নরম মনের একজন যুবক ছিলেন। তার সামনে জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু ও কবরের আলোচনা হলে তিনি কান্না শুরু করতেন। তার পিতা এক মসজিদে ইমামতি করতেন। পিতা যখন জানতেন, তার ছেলে সালাতে উপস্থিত, তখন তিনি হৃদয় বিদারক কোন সূরা বা আয়াত পড়তেন না। একদিন ছেলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পিতা তাকে অনুপস্থিত মনে করে সালাতে সূরা মু’মিনূন তিলাওয়াত শুরু করলেন। যখন তিনি এ আয়াতগুলোতে পৌঁছলেন-
﴿اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ ‐ - قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ ‐ - رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ ‐ - قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ ‐ - اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ - فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤى اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ ‐ - اِنِّيْ جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوْاۤ اَنَّهُمْ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
তখন আলী বেহুশ হয়ে পড়লেন। পরে লোকেরা তার মাথায় পানি দিলে তার হুশ ফিরে আসে। [কিতাবুত্ তাও্ওয়াবীন লিইবনে কুদাম।]
আয়াতগুলোর সারমর্ম হলো, অপরাধীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদেরকে কেউ আমার আয়াত পড়ে শোনায়নি? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে। তখন তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের দুর্গতি আমাদের উপর প্রবল হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। এখন আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমরা যদি আবার আপনার নাফরমানী করি, তবে আমরা গোনাহগার হব। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা এখানে পড়ে থাকো। আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের একটি দল দুনিয়াতে আমার উপর ঈমান আনত এবং বলত, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর আপনিই উত্তম রহমত বর্ষণকারী’’। তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে, এমনকি তোমরা আমার স্মরণ থেকে বিমুখ ছিলে। আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছি। কারণ তারাই সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১১১)
(৩) মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) মৃত্যুর সময় খুবই হা-হুতাশ করছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতকে ভয় করছি সেটি হলো-
﴿وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِه مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ﴾
যদি গোনাহ্গারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে আরো অনুরূপ থাকে, তবে কিয়ামতের দিন সবকিছুই মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে। আর তারা এমন শাস্তির সম্মুখীন হবে যা কল্পনাও করেনি অথবা তাদের সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পাবে যাকে তারা গোনাহ মনে করেনি। (সূরা যুমার- ৪৭)
এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমার সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পেতে পারে যা আমি হিসাব করিনি। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর- ৬/২৯৩।]
তারতীলের সাথে কুরআন পাঠ করতে হবে :
মহান আল্লাহ তারতীলের সাথে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাজভীদের নিয়মাবলি আদায় করে সুন্দর করে পড়াকে তারতীল বলা হয়। তবে বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করে এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হলো আসল তারতীল। হাসান বসরী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا﴾
তুমি তারতীলসহ কুরআন পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিটি আয়াতকে পৃথক করে অর্থের দিকে মনোনিবেশ করে পাঠ করাই হচ্ছে এ তারতীলের উদ্দেশ্য। [তাফসীরে সীরাজুম মুনীর- ৩/১৩।]
কিরাআত পড়া শেষ হলে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে রুকূতে যেতে হবে। কোমর, পিঠ ও মাথা বরাবর থাকবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে হাঁটু ধরতে হবে। তারপর রুকূতে গিয়ে কিছু সময় থামতে হবে। মাথা একটু ঝুঁকানোর পরেই তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে গেলে রুকূর হক আদায় হবে না।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بن مُغَفَّلٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ :ﷺ اَسْرَقُ النَّاسِ مَنْ يَسْرِقُ صَلَاتَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَكَيْفَ يَسْرِقُ صَلَاتَهٗ؟ قَالَ : لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهَا، وَلَا سُجُوْدَهَا
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হলো সে ব্যক্তি, যে সালাতের মধ্যে চুরি করে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাতের মধ্যে আবার চুরি হয় কীভাবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে সালাতের রুকূ এবং সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না সে সালাতের মধ্যে চুরি করে। [মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১৬৬০; মুজামুস সগীর, হা/৩৩৫; জামেউস সগীর, হা/৯৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৫।]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সালাত আদায়কারীর সালাত যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদা হতে পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৮২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২২; জামেউস সগীর, হা/১৩১৮০; মিশকাত, হা/৮৭৮।]
কারো সামনে মাথা নত করার অর্থ হলো নিজেকে ছোট মনে করে তাকে সম্মানিত করা। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদেরকে সম্মান দেয়ার জন্য তাদের প্রজারা মাথা নত করে থাকে। কিন্তু মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাথা নত করে সম্মান দেয়া ইসলামে জায়েয নেই। রুকূর মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহকে সম্মান দেয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
فَاَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَاَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِى الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ اَنْ يُّسْتَجَابَ لَكُمْ
তোমরা রুকূর মধ্যে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং সিজদার মধ্যে অধিক হারে দু‘আয় মনোনিবেশ করো। আশা করা যায় তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৪৫; দারেমী, হা/১৩৬৪; জমেউস সগীর, হা/৪৫১২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
আমরা রুকূ দিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার এক নগণ্য বান্দা। আপনি হলেন মহান। তাই আমি এতক্ষণ আপনার সামনে দাঁড়িায়ে ছিলাম, এখন দাসত্বের আরো এক ধাপ এগিয়ে আমার মাথাকে আপনার সামনে নত করে দিলাম। তাসবীহ পড়ে মুখের দ্বারাও এ স্বীকৃতি দিচ্ছি।
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় ﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ﴾ অর্থাৎ আপনার মহান প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ করুন। [সূরা ওয়াকিয়া- ৯৬।] তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা রুকূর তাসবীহ বানিয়ে নাও। অতঃপর যখন নাযিল হয় ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى﴾ অর্থাৎ আপনার সুউচ্চ মর্যাদাবান প্রতিপালকের নামে তাসবীহ পাঠ করুন। তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা সিজদার তাসবীহ বানিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৮৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮;মিশকাত, হা/৮৭৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بن مُغَفَّلٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ :ﷺ اَسْرَقُ النَّاسِ مَنْ يَسْرِقُ صَلَاتَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَكَيْفَ يَسْرِقُ صَلَاتَهٗ؟ قَالَ : لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهَا، وَلَا سُجُوْدَهَا
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হলো সে ব্যক্তি, যে সালাতের মধ্যে চুরি করে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাতের মধ্যে আবার চুরি হয় কীভাবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে সালাতের রুকূ এবং সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না সে সালাতের মধ্যে চুরি করে। [মুজামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১৬৬০; মুজামুস সগীর, হা/৩৩৫; জামেউস সগীর, হা/৯৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৫।]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সালাত আদায়কারীর সালাত যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদা হতে পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৮২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২২; জামেউস সগীর, হা/১৩১৮০; মিশকাত, হা/৮৭৮।]
কারো সামনে মাথা নত করার অর্থ হলো নিজেকে ছোট মনে করে তাকে সম্মানিত করা। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদেরকে সম্মান দেয়ার জন্য তাদের প্রজারা মাথা নত করে থাকে। কিন্তু মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাথা নত করে সম্মান দেয়া ইসলামে জায়েয নেই। রুকূর মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহকে সম্মান দেয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
فَاَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَاَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِى الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ اَنْ يُّسْتَجَابَ لَكُمْ
তোমরা রুকূর মধ্যে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং সিজদার মধ্যে অধিক হারে দু‘আয় মনোনিবেশ করো। আশা করা যায় তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৪৫; দারেমী, হা/১৩৬৪; জমেউস সগীর, হা/৪৫১২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
আমরা রুকূ দিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার এক নগণ্য বান্দা। আপনি হলেন মহান। তাই আমি এতক্ষণ আপনার সামনে দাঁড়িায়ে ছিলাম, এখন দাসত্বের আরো এক ধাপ এগিয়ে আমার মাথাকে আপনার সামনে নত করে দিলাম। তাসবীহ পড়ে মুখের দ্বারাও এ স্বীকৃতি দিচ্ছি।
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় ﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ﴾ অর্থাৎ আপনার মহান প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ করুন। [সূরা ওয়াকিয়া- ৯৬।] তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা রুকূর তাসবীহ বানিয়ে নাও। অতঃপর যখন নাযিল হয় ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى﴾ অর্থাৎ আপনার সুউচ্চ মর্যাদাবান প্রতিপালকের নামে তাসবীহ পাঠ করুন। তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা সিজদার তাসবীহ বানিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৮৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮;মিশকাত, হা/৮৭৯।]
নবী ﷺ রুকূ অবস্থায় যেসব দু‘আ পাঠ করতেন সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করেন। আর তখন তিনি রুকূতে এ দু‘আ পাঠ করেন-
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি (তিনবার)। [আবু দাঊদ, হা/৮৭১; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; তিরমিযী, হা/২৬১; নাসাঈ, হা/১০০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪২; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৯২৩।]
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। সে সালাতে তিনি সূরা বাকারা পড়ার পরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন-
سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি ذِى (সেই মহান সত্তার) যিনি মালিক الْجَبَرُوْتِ প্রতাপের, وَالْمَلَكُوْتِ রাজত্বের, وَالْكِبْرِيَاءِ বড়ত্বের وَالْعَظْمَةِ ও মহত্বের ।
অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। [আবূ দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসায়ী হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
৫। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন-
اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَ لَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَ مُخِّىْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশা‘আ লাকা সাম্য়ী ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘আয্মী ওয়া ‘আসাবী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ رَكَعْتُ আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, وَ لَكَ اَسْلَمْتُ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। خَشَعَ لَكَ আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে سَمْعِىْ আমার কান, وَبَصَرِىْ আমার চোখ, وَمُخِّىْ আমার মগজ, وَعَظْمِىْ আমার হাড় وَعَصَبِىْ এবং আমার শিরা-উপশিরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং শিরা-উপশিরা সবই আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১০৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬০; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৭; ইবনে হিববান, হা/১৯০১; মুসনাদে বাযযার, হা/৫৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৪; দার কুতনী, হা/১২৯৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৫২; সুনানে সুগরা লি বায়হাকী, হা/২৬৭।]
১। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করেন। আর তখন তিনি রুকূতে এ দু‘আ পাঠ করেন-
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি (তিনবার)। [আবু দাঊদ, হা/৮৭১; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; তিরমিযী, হা/২৬১; নাসাঈ, হা/১০০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪২; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৯২৩।]
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। সে সালাতে তিনি সূরা বাকারা পড়ার পরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন-
سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি ذِى (সেই মহান সত্তার) যিনি মালিক الْجَبَرُوْتِ প্রতাপের, وَالْمَلَكُوْتِ রাজত্বের, وَالْكِبْرِيَاءِ বড়ত্বের وَالْعَظْمَةِ ও মহত্বের ।
অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। [আবূ দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসায়ী হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
৫। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন-
اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَ لَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَ مُخِّىْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশা‘আ লাকা সাম্য়ী ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘আয্মী ওয়া ‘আসাবী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ رَكَعْتُ আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, وَ لَكَ اَسْلَمْتُ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। خَشَعَ لَكَ আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে سَمْعِىْ আমার কান, وَبَصَرِىْ আমার চোখ, وَمُخِّىْ আমার মগজ, وَعَظْمِىْ আমার হাড় وَعَصَبِىْ এবং আমার শিরা-উপশিরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং শিরা-উপশিরা সবই আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১০৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬০; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৭; ইবনে হিববান, হা/১৯০১; মুসনাদে বাযযার, হা/৫৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৪; দার কুতনী, হা/১২৯৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৫২; সুনানে সুগরা লি বায়হাকী, হা/২৬৭।]
রুকূ হতে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নাম কাওমা। পিঠ সোজা করে না দাঁড়িয়ে মাথা সামান্য উপরে তুলে সিজদায় চলে গেলে সালাতের ওয়াজিব তরক হবে, তাই ভালোভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ كَانَ سُجُوْدُ النَّبِيِّ ﷺ وَرُكُوْعُهٗ وَقُعُوْدُهٗ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ قَرِيْبًا مِنَ السَّوَاءِ
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সিজদা, রুকূ ও দু’সিজদার মাঝখানে বসা প্রায় সমান (সময়ের) হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
রুকূ হতে উঠার সময় নবী ﷺ বলতেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ
উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্।
শাব্দিক অর্থ : سَمِعَ اللهُ আল্লাহ শোনেন, لِمَنْ حَمِدَهٗ যে তার প্রশংসা করে (তার কথা)।
অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১।]
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ كَانَ سُجُوْدُ النَّبِيِّ ﷺ وَرُكُوْعُهٗ وَقُعُوْدُهٗ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ قَرِيْبًا مِنَ السَّوَاءِ
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সিজদা, রুকূ ও দু’সিজদার মাঝখানে বসা প্রায় সমান (সময়ের) হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
রুকূ হতে উঠার সময় নবী ﷺ বলতেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ
উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্।
শাব্দিক অর্থ : سَمِعَ اللهُ আল্লাহ শোনেন, لِمَنْ حَمِدَهٗ যে তার প্রশংসা করে (তার কথা)।
অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১।]
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইমাম যখন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’ বলবে, তখন তোমরা নিচের বাক্যটি বলবে- কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৭; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪০।]
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : রাববানা লাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! لَكَ আপনার জন্যই الْحَمْدُ সকল প্রশংসা।
অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা।
উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ এর স্থলে رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮।]
২. রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা একবার নবী ﷺ এর পেছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে দাঁড়ালেন, তখন পেছন থেকে এক ব্যক্তি নিচের দু‘আটি পাঠ করল। অতঃপর সালাত শেষ হলে নবী ﷺ বললেন, একটু আগে এ কথাগুলো কে বলেছে? তখন ঐ লোকটি বলল, আমি বলেছি। এবার নবী ﷺ বললেন, আমি ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতাকে দেখেছি তারা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন যে, কে কার আগে এর সওয়াব লিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে পৌঁছাবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাউদ, হা/৭৭০।]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ
উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের প্রভু, وَلَكَ الْحَمْدُ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, حَمْدًا এমন প্রশংসা যা, كَثِيْرًا অনেক, طَيِّبًا পবিত্র, مُبَارَكًا فِيْهِ যাতে রয়েছে বরকত।
অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ।
৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রুকূ হতে দাঁড়ানোর পর নিচের দু‘আ পড়ে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৬; আবু দাউদ, হা/৮৪৭; নাসাঈ, হা/১০৬৮।]
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمٰوَاتِ وَ مِلْءَ الْاَرْضِ وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ اَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَ كُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ لَامَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ وَ لَامُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَالْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শায়ইন বা‘দু আহলাছ ছানা-ই ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা-ক্বা-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন। আল্লা-হুম্মা লা-মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থঃ اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক لَكَ الْحَمْدُ তোমার প্রশংসায় مِلْءَ السَّمٰوَاتِ আসমানসমূহ পরিপূর্ণ, وَ مِلْءَ الْاَرْضِ এবং জমিনও পরিপূর্ণ, وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ আপনি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। اَحَقُّ তুমি বেশি হকদার مَا قَالَ الْعَبْدُ (তোমার প্রশংসায়) বান্দা যা বলে। وَ كُلُّنَا আর আমরা সকলেই لَكَ عَبْدٌ তোমার গোলাম। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَامَانِعَ বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দান কর তা। وَ لَامُعْطِىَ আর দেয়ার মতোও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ তুমি যা দিতে চাও না তা। وَلَا يَنْفَعُ আর কোন উপকারে আসবে না ذَالْجَدِّ কোন সম্পদশালী مِنْكَ তোমার (আযাব) হতে الْجَدُّ তার সম্পদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিপালক, আসমান এবং জমিন সবই তোমার প্রশংসায় পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা বলবে তুমি তার চেয়ে বেশি পাওয়ার হকদার। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি কাউকে যা দান কর তা বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কাউকে যা দিতে চাও না তা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার আযাব হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : রাববানা লাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! لَكَ আপনার জন্যই الْحَمْدُ সকল প্রশংসা।
অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা।
উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ এর স্থলে رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮।]
২. রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা একবার নবী ﷺ এর পেছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে দাঁড়ালেন, তখন পেছন থেকে এক ব্যক্তি নিচের দু‘আটি পাঠ করল। অতঃপর সালাত শেষ হলে নবী ﷺ বললেন, একটু আগে এ কথাগুলো কে বলেছে? তখন ঐ লোকটি বলল, আমি বলেছি। এবার নবী ﷺ বললেন, আমি ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতাকে দেখেছি তারা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন যে, কে কার আগে এর সওয়াব লিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে পৌঁছাবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাউদ, হা/৭৭০।]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ
উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের প্রভু, وَلَكَ الْحَمْدُ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, حَمْدًا এমন প্রশংসা যা, كَثِيْرًا অনেক, طَيِّبًا পবিত্র, مُبَارَكًا فِيْهِ যাতে রয়েছে বরকত।
অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ।
৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রুকূ হতে দাঁড়ানোর পর নিচের দু‘আ পড়ে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৬; আবু দাউদ, হা/৮৪৭; নাসাঈ, হা/১০৬৮।]
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمٰوَاتِ وَ مِلْءَ الْاَرْضِ وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ اَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَ كُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ لَامَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ وَ لَامُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَالْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শায়ইন বা‘দু আহলাছ ছানা-ই ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা-ক্বা-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন। আল্লা-হুম্মা লা-মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থঃ اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক لَكَ الْحَمْدُ তোমার প্রশংসায় مِلْءَ السَّمٰوَاتِ আসমানসমূহ পরিপূর্ণ, وَ مِلْءَ الْاَرْضِ এবং জমিনও পরিপূর্ণ, وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ আপনি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। اَحَقُّ তুমি বেশি হকদার مَا قَالَ الْعَبْدُ (তোমার প্রশংসায়) বান্দা যা বলে। وَ كُلُّنَا আর আমরা সকলেই لَكَ عَبْدٌ তোমার গোলাম। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَامَانِعَ বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দান কর তা। وَ لَامُعْطِىَ আর দেয়ার মতোও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ তুমি যা দিতে চাও না তা। وَلَا يَنْفَعُ আর কোন উপকারে আসবে না ذَالْجَدِّ কোন সম্পদশালী مِنْكَ তোমার (আযাব) হতে الْجَدُّ তার সম্পদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিপালক, আসমান এবং জমিন সবই তোমার প্রশংসায় পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা বলবে তুমি তার চেয়ে বেশি পাওয়ার হকদার। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি কাউকে যা দান কর তা বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কাউকে যা দিতে চাও না তা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার আযাব হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
রাফউল ইয়াদাইনের গুরুত্ব ও ফযীলত :
رَفْعُ الْيَدَيْنِ (রাফউল ইয়াদাইন) অর্থ দু’হাত উঁচু করা। এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাফউল ইয়াদাইন হলো সালাতের সৌন্দর্য।
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَأَى رَجُلًا لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَكَعَ , وَإِذَا رَفَعَ رَمَاهُ بِالْحَصٰى
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করছে না তখন তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপ করতেন। [আউনুল মা‘বূদ, ২/৪০৭, ৬১৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
وَقَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ اَلْجُهَنِيْ صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ : اِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ ، وَعِنْدَ رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ ، فَلَهٗ بِكُلِّ إِشَارَةٍ عَشَرَ حَسَنَاتٍ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবী উকবা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) বলেন, যখন মুসল্লি রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করবে তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে। [মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাকী, হা/৮৪২।]
ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন,
فَإِنَّهٗ لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدِ مِنْهُمْ تَرْكَهٗ قَالَ وَلَا أَسَانِيْدَ أَصَحَّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ
অর্থাৎ কোন সাহাবী রাফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিয়েছেন বলে প্রমাণিত নয়। আর রাফউল ইয়াদাইন-এর হাদীস সমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই। [ফতহুল বারী, ২/২৫৭ পৃঃ, হা/৭৩৬-এর ব্যাখ্যা, আযান অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৮৪; মিরআতুল মাফাতীহ, ৭৯৯ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে চার খলীফা, আশারায়ে মুবাশশারাসহ অনেক সাহাবী থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বিদ্বানগণ রাফউল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির (যা ব্যাপকভাবে ও অবিরত ধারায় বর্ণিত) পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন। [তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬ পৃঃ।]
কত জায়গায় রাফউল ইয়াদাইন করতে হবে :
তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে মোট চারস্থানে রাফউল ইয়াদাইন করতে হয়।
(১) তাকবীরে তাহরীমার সময়।
(২) রুকূতে যাওয়ার সময়।
(৩) রুকূ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় এবং
(৪) ৩য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়।
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ :
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ رَفَعَهُمَا كَذٰلِكَ أَيْضًا وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ، وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذٰلِكَ فِي السُّجُوْدِ
সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত শুরু করতেন তখন স্বীয় দু’হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উপরের দিকে উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূর জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখনো অনুরূপভাবে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উপরের দিকে উঠাতেন আর ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্, রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ’’ বলতেন, কিন্তু সিজদাতে তিনি এমনটি করতেন না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬৭৪।]
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى تَكُوْنَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ ، وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ
আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ফরয সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাকবীর দিতেন এবং দু’হাত তাঁর দু’কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। অতঃপর যখন তিনি দু’সিজদা শেষ করে দন্ডায়মান হতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৬৪; আবু দাউদ, হা/৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৭।]
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهٗ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِى الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ وَإِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَيَرْفَعُ ذٰلِكَ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ -
নাফে‘ (রহ,) হতে বর্ণিত। তিনি ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’। অতঃপর যখন তিনি দু’রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। আর তিনি এ কাজগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ করতেন বলে সাব্যস্ত করতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৪১।]
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ بْنُ رِبْعِيٍّ ، قَالَ : أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا قَامَ فِي الصَّلَاةِ ، اِعْتَدَلَ قَائِمًا ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ , ثُمَّ قَالَ : اَللهُ أَكَبْرُ , وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ ، رَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ، فَإِذَا قَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، اِعْتَدَلَ ، فَإِذَا قَامَ مِنَ الثِّنْتَيْنِ ، كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ، كَمَا صَنَعَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ
আবু কাতাদা ইবনে রাবয়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত শিক্ষা দেব। (আর সেটা হলো) যখন তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং তাঁর দু’হাত দু’কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। তারপর বলতেন, আল্লা-হু আকবার। তারপর যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’ বলতেন তখনও হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন যেমনিভাবে সালাত শুরু করার সময় করেছিলেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৬২; তিরমিযী, হা/৩০৪।]
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে প্রসিদ্ধতম হাদীসমূহের মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ فَقَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه ، فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ
মালিক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন তাঁর দু’হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। অতঃপর যখন রুকূতে যেতেন তখনও তিনি দু’হাত কান পর্যমত্ম উত্তোলন করতেন। তারপর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেন, ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’ এবং এ সময়ও তিনি পূর্বের ন্যায় হাত উত্তোলন করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১; নাসাঈ, হা/৫০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৩৮; মিশকাত, হা/৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৬৩।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে তাকবীরে তাহরিমার সময়, রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে মাথা তোলার সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, তবে সিজদার সময় এরূপ (রাফউল ইয়াদাইন) করতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১; নাসাঈ, হা/৮৭৭; তিরমিযী, হা/২৫৫; আবু দাউদ, হা/৭২১।]
জ্ঞাতব্য :
তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে যেসব হাদীস রয়েছে তন্মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। যেমন আলকামা (রহ.) বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আমাদেরকে বলেন,
أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - قَالَ فَصَلّٰى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا مَرَّةً مَعَ تَكْبِيْرَةِ الْاِفْتِتَاحِ
অর্থাৎ আমি কি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস বর্ণনা করব না? এই বলে তিনি সালাত আদায় করেন। কিমত্মু তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার ব্যতীত আর কোন সময় রাফউল ইয়াদাইন করলেন না। [আবু দাউদ, হা/৭৪৮; তিরমিযী, হা/২৫৭; নাসাঈ, হা/১০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৮১; দারেমী, হা/১৩০৪; মিশকাত, হা/৮০৯।]
এ হাদীস সম্পর্কে ইবনে হিববান (রহ.) বলেন,
هٰذَا أَحْسَنُ خَبَرٍ رُوِيَ لِأَهْلِ الْكُوْفَةِ فِي نَفْيِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرَّفْعِ مِنْهُ ، وَهُوَ فِي الْحَقِيْقَةِ أَضْعَفُ شَيْءٍ يُعَوَّلُ عَلَيْهِ ؛ لِأَنَّ لَهُ عِلَلًا تُبْطِلُهُ اِنْتَهٰى
অর্থাৎ রুকূতে যাওয়া এবং রুকূ হতে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটি সবচেয়ে সুন্দর দলীল হলেও বাস্তবে এটি সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল, যার উপর নির্ভর করা হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে, যা একে বাতিল হিসেবে গণ্য করে। [মিরআতুল মাফাতীহ, ৩/৮৪ পৃঃ; আউনুল মা‘বূদ, ২/৪৪৬, হা/৬৩৯-এর ব্যাখ্যা; ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৮।]
শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বলেন, যে মুসল্লি রাফউল ইয়াদাইন করে, সে আমার নিকট অধিক প্রিয় ঐ মুসল্লির চাইতে যে রাফউল ইয়াদাইন করে না। কেননা রাফউল ইয়াদাইনের হাদীস সংখ্যায় বেশি ও অধিকতর মজবুত। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২/১০ পৃঃ।]
যারা রাফউল ইয়াদাইন করেন না তারা বলে থাকেন যে, ইসলামের প্রথম দিকে মুসলিমরা যখন মসজিদে যেতেন তখন তারা বগলে মূর্তি নিয়ে আসতেন। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে হাত তুলতে বলতেন। যাতে ঐ মূর্তিগুলো পড়ে যায়।
উপরোক্ত কথার কোন ভিত্তি নেই। এটা সাহাবায়ে কেরামের উপর একটি অপবাদ- বিধায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবাদের উপর এমন মিথ্যা অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ তারা মূর্তিপূজা ত্যাগ করেই ইসলামে প্রবেশ করেছিলেন। মূর্তি সাথে নিয়ে ইসলামে প্রবেশ করেননি।
رَفْعُ الْيَدَيْنِ (রাফউল ইয়াদাইন) অর্থ দু’হাত উঁচু করা। এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাফউল ইয়াদাইন হলো সালাতের সৌন্দর্য।
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَأَى رَجُلًا لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَكَعَ , وَإِذَا رَفَعَ رَمَاهُ بِالْحَصٰى
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করছে না তখন তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপ করতেন। [আউনুল মা‘বূদ, ২/৪০৭, ৬১৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
وَقَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ اَلْجُهَنِيْ صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ : اِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ ، وَعِنْدَ رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ ، فَلَهٗ بِكُلِّ إِشَارَةٍ عَشَرَ حَسَنَاتٍ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবী উকবা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) বলেন, যখন মুসল্লি রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করবে তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে। [মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাকী, হা/৮৪২।]
ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন,
فَإِنَّهٗ لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدِ مِنْهُمْ تَرْكَهٗ قَالَ وَلَا أَسَانِيْدَ أَصَحَّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ
অর্থাৎ কোন সাহাবী রাফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিয়েছেন বলে প্রমাণিত নয়। আর রাফউল ইয়াদাইন-এর হাদীস সমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই। [ফতহুল বারী, ২/২৫৭ পৃঃ, হা/৭৩৬-এর ব্যাখ্যা, আযান অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৮৪; মিরআতুল মাফাতীহ, ৭৯৯ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে চার খলীফা, আশারায়ে মুবাশশারাসহ অনেক সাহাবী থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বিদ্বানগণ রাফউল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির (যা ব্যাপকভাবে ও অবিরত ধারায় বর্ণিত) পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন। [তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬ পৃঃ।]
কত জায়গায় রাফউল ইয়াদাইন করতে হবে :
তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে মোট চারস্থানে রাফউল ইয়াদাইন করতে হয়।
(১) তাকবীরে তাহরীমার সময়।
(২) রুকূতে যাওয়ার সময়।
(৩) রুকূ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় এবং
(৪) ৩য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়।
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ :
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ رَفَعَهُمَا كَذٰلِكَ أَيْضًا وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ، وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذٰلِكَ فِي السُّجُوْدِ
সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত শুরু করতেন তখন স্বীয় দু’হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উপরের দিকে উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূর জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখনো অনুরূপভাবে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উপরের দিকে উঠাতেন আর ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্, রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ’’ বলতেন, কিন্তু সিজদাতে তিনি এমনটি করতেন না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬৭৪।]
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى تَكُوْنَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ ، وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ
আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ফরয সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাকবীর দিতেন এবং দু’হাত তাঁর দু’কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। অতঃপর যখন তিনি দু’সিজদা শেষ করে দন্ডায়মান হতেন তখনও তিনি এরূপ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৬৪; আবু দাউদ, হা/৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৭।]
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهٗ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِى الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ وَإِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَيَرْفَعُ ذٰلِكَ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ -
নাফে‘ (রহ,) হতে বর্ণিত। তিনি ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি রুকূ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’। অতঃপর যখন তিনি দু’রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। আর তিনি এ কাজগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ করতেন বলে সাব্যস্ত করতেন। [আবু দাউদ, হা/৭৪১।]
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ بْنُ رِبْعِيٍّ ، قَالَ : أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ، كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا قَامَ فِي الصَّلَاةِ ، اِعْتَدَلَ قَائِمًا ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ , ثُمَّ قَالَ : اَللهُ أَكَبْرُ , وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ ، رَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ، فَإِذَا قَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، اِعْتَدَلَ ، فَإِذَا قَامَ مِنَ الثِّنْتَيْنِ ، كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، حَتّٰى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ، كَمَا صَنَعَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ
আবু কাতাদা ইবনে রাবয়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত শিক্ষা দেব। (আর সেটা হলো) যখন তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং তাঁর দু’হাত দু’কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। তারপর বলতেন, আল্লা-হু আকবার। তারপর যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। তারপর যখন তিনি ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’ বলতেন তখনও হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন যেমনিভাবে সালাত শুরু করার সময় করেছিলেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৬২; তিরমিযী, হা/৩০৪।]
রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে প্রসিদ্ধতম হাদীসমূহের মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّٰى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ مِنَ الرُّكُوْعِ فَقَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه ، فَعَلَ مِثْلَ ذٰلِكَ
মালিক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন তাঁর দু’হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। অতঃপর যখন রুকূতে যেতেন তখনও তিনি দু’হাত কান পর্যমত্ম উত্তোলন করতেন। তারপর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেন, ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’’ এবং এ সময়ও তিনি পূর্বের ন্যায় হাত উত্তোলন করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১; নাসাঈ, হা/৫০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৩৮; মিশকাত, হা/৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৬৩।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে তাকবীরে তাহরিমার সময়, রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে মাথা তোলার সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, তবে সিজদার সময় এরূপ (রাফউল ইয়াদাইন) করতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১; নাসাঈ, হা/৮৭৭; তিরমিযী, হা/২৫৫; আবু দাউদ, হা/৭২১।]
জ্ঞাতব্য :
তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে যেসব হাদীস রয়েছে তন্মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। যেমন আলকামা (রহ.) বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আমাদেরকে বলেন,
أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ -ﷺ - قَالَ فَصَلّٰى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا مَرَّةً مَعَ تَكْبِيْرَةِ الْاِفْتِتَاحِ
অর্থাৎ আমি কি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস বর্ণনা করব না? এই বলে তিনি সালাত আদায় করেন। কিমত্মু তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার ব্যতীত আর কোন সময় রাফউল ইয়াদাইন করলেন না। [আবু দাউদ, হা/৭৪৮; তিরমিযী, হা/২৫৭; নাসাঈ, হা/১০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৮১; দারেমী, হা/১৩০৪; মিশকাত, হা/৮০৯।]
এ হাদীস সম্পর্কে ইবনে হিববান (রহ.) বলেন,
هٰذَا أَحْسَنُ خَبَرٍ رُوِيَ لِأَهْلِ الْكُوْفَةِ فِي نَفْيِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرَّفْعِ مِنْهُ ، وَهُوَ فِي الْحَقِيْقَةِ أَضْعَفُ شَيْءٍ يُعَوَّلُ عَلَيْهِ ؛ لِأَنَّ لَهُ عِلَلًا تُبْطِلُهُ اِنْتَهٰى
অর্থাৎ রুকূতে যাওয়া এবং রুকূ হতে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটি সবচেয়ে সুন্দর দলীল হলেও বাস্তবে এটি সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল, যার উপর নির্ভর করা হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে, যা একে বাতিল হিসেবে গণ্য করে। [মিরআতুল মাফাতীহ, ৩/৮৪ পৃঃ; আউনুল মা‘বূদ, ২/৪৪৬, হা/৬৩৯-এর ব্যাখ্যা; ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৮।]
শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বলেন, যে মুসল্লি রাফউল ইয়াদাইন করে, সে আমার নিকট অধিক প্রিয় ঐ মুসল্লির চাইতে যে রাফউল ইয়াদাইন করে না। কেননা রাফউল ইয়াদাইনের হাদীস সংখ্যায় বেশি ও অধিকতর মজবুত। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২/১০ পৃঃ।]
যারা রাফউল ইয়াদাইন করেন না তারা বলে থাকেন যে, ইসলামের প্রথম দিকে মুসলিমরা যখন মসজিদে যেতেন তখন তারা বগলে মূর্তি নিয়ে আসতেন। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে হাত তুলতে বলতেন। যাতে ঐ মূর্তিগুলো পড়ে যায়।
উপরোক্ত কথার কোন ভিত্তি নেই। এটা সাহাবায়ে কেরামের উপর একটি অপবাদ- বিধায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবাদের উপর এমন মিথ্যা অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ তারা মূর্তিপূজা ত্যাগ করেই ইসলামে প্রবেশ করেছিলেন। মূর্তি সাথে নিয়ে ইসলামে প্রবেশ করেননি।
কাওমার সময় কেউ কেউ বুকের উপর হাত বাঁধেন, আবার অনেকে হাত ছেড়ে দেন। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
فَقَالَ أَبُوْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ أَنَا كُنْتُ أَحْفَظَكُمْ لِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ رَأَيْتُهٗ إِذَا كَبَّرَ جَعَلَ يَدَيْهِ حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ ، وَإِذَا رَكَعَ أَمْكَنَ يَدَيْهِ مِنْ رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ هَصَرَ ظَهْرَهٗ فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتّٰى يَعُوْدَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهٗ ....
হুমাইদী আস সা‘দী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে সালাত আদায় করতেন আমি তা আয়ত্ত করে নিয়েছি। আমি তাকে দেখেছি যে, যখন তিনি তাকবীর দিতেন তখন তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূ করতেন তখন দু’হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। অতঃপর রুকূ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দন্ডায়মান হতেন, যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্বস্ব স্থানে ফিরে আসত। [সহীহ বুখারী, হা/৮২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৪৩; বায়হাকী, হা/২৪৫৫; মিশকাত, হা/৭৯২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে সালাত শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,
حَتّٰى تَرْجِعَ الْعِظَامُ إِلٰى مَفَاصِلِهَا
অর্থাৎ যতক্ষণ না অস্থিসমূহ স্ব স্ব জোড়ায় ফিরে আসে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫৫৪; জামেউস সগীর, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৮০৪।]
যারা কাওমার সময় বুকে হাত বাঁধার কথা বলেন তাদের কথা হলো, দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা সুন্নাত- বিধায় কাওমার সময়ও যেহেতু দাঁড়াতে হয় তাই ঐসব হাদীসের উপর কিয়াস করে এ সময়ও হাত বাঁধতে হবে।
আর যারা হাত ছেড়ে দেন তাদের কথা হলো- উপরোক্ত হাদীসগুলো রুকূ পরবর্তী কাওমার অবস্থা সম্পর্কে খাসভাবে বর্ণিত হয়েছে। বুকে হাত বাঁধা হাতের স্বাভাবিক অবস্থা নয়। তাই মেরুদন্ডসহ দেহের অন্যান্য অস্থিসমূহকে স্বস্ব জোড়ায় ফিরে আসতে হলে কাওমার সময় হাতকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে।
فَقَالَ أَبُوْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ أَنَا كُنْتُ أَحْفَظَكُمْ لِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ رَأَيْتُهٗ إِذَا كَبَّرَ جَعَلَ يَدَيْهِ حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ ، وَإِذَا رَكَعَ أَمْكَنَ يَدَيْهِ مِنْ رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ هَصَرَ ظَهْرَهٗ فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتّٰى يَعُوْدَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهٗ ....
হুমাইদী আস সা‘দী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে সালাত আদায় করতেন আমি তা আয়ত্ত করে নিয়েছি। আমি তাকে দেখেছি যে, যখন তিনি তাকবীর দিতেন তখন তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূ করতেন তখন দু’হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। অতঃপর রুকূ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দন্ডায়মান হতেন, যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্বস্ব স্থানে ফিরে আসত। [সহীহ বুখারী, হা/৮২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৪৩; বায়হাকী, হা/২৪৫৫; মিশকাত, হা/৭৯২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে সালাত শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,
حَتّٰى تَرْجِعَ الْعِظَامُ إِلٰى مَفَاصِلِهَا
অর্থাৎ যতক্ষণ না অস্থিসমূহ স্ব স্ব জোড়ায় ফিরে আসে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫৫৪; জামেউস সগীর, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৮০৪।]
যারা কাওমার সময় বুকে হাত বাঁধার কথা বলেন তাদের কথা হলো, দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা সুন্নাত- বিধায় কাওমার সময়ও যেহেতু দাঁড়াতে হয় তাই ঐসব হাদীসের উপর কিয়াস করে এ সময়ও হাত বাঁধতে হবে।
আর যারা হাত ছেড়ে দেন তাদের কথা হলো- উপরোক্ত হাদীসগুলো রুকূ পরবর্তী কাওমার অবস্থা সম্পর্কে খাসভাবে বর্ণিত হয়েছে। বুকে হাত বাঁধা হাতের স্বাভাবিক অবস্থা নয়। তাই মেরুদন্ডসহ দেহের অন্যান্য অস্থিসমূহকে স্বস্ব জোড়ায় ফিরে আসতে হলে কাওমার সময় হাতকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে।
সুন্নাত হলো সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাত রাখা এবং পরে হাঁটু রাখা। এ মর্মে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ : أَنَّهٗ كَانَ إِذَا سَجَدَ بَدَأَ بِوَضْعِ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ , وَكَانَ يَقُوْلُ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَصْنَعُ ذٰلِكَ
নাফে‘ (রহ.) ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন সিজদা করতেন তখন দু’হাঁটু রাখার পূর্বে দু’হাত রাখতেন। আর তিনি বলতেন, নবী ﷺ এমনটি করতেন। [সহীহ বুখারী, ৪৬ নং অধ্যায় (তাকবীর দিয়ে সিজদা দেয়া); সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২১।]
ইমাম হাকেম, যাহাবী, আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দীস উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তাছাড়া ইমাম বুখারী হাদীসটিকে বাবের সাথে নিয়ে এসেছেন।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ : إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيْرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সিজদাতে যাবে তখন সে যেন উটের মতো না বসে, বরং সে যেন তার দু’হাঁটুর আগে তার হাত দুটি মাটিতে স্থাপন করে। [আবু দাউদ, হা/৮৪০; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৭৩৯; জামেউস সগীর, হা/৫৯৬; মিশকাত, হা/৮৯৯।]
সিজদায় যাওয়ার সময় হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার ব্যাপারে যে বর্ণনা এসেছে তা হলো :
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ -ﷺ - إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সিজদা করতেন তখন তাকে দেখেছি তিনি দু’হাত রাখার আগে দু’হাঁটু রাখতেন এবং যখন তিনি উঠতেন তখন হাঁটুর আগে দু’হাত উঠাতেন। [আবু দাউদ, হা/৮৩৮; তিরমিযী, হা/২৬৮; নাসাঈ, হা/১০৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮২; দার কুতনী, হা/১৩০৭; মিশকাত, হা/৮৯৮।]
ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান এবং গরীব। এ হাদীসটি ‘শারীক’ ব্যতীত অন্য কারো কাছে পাওয়া যায়নি। [তিরমিযী, ৮৩৮ নং হাদীসের মন্তব্য।] তাছাড়া শাইখ আলবানী (রহ.) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। [তিরমিযী, ৮৩৮ নং হাদীসের তাহকীক।]
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, অন্য হাদীসের বিপরীতে প্রথমে দু’হাত রাখার হাদীসটি বেশি সহীহ। কারণ ঐ হাদীসের সমর্থনে ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদীসটি পাওয়া যায়। যাকে ইবনে খুযায়মা (রহ.) সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারীও এটাকে বর্ণনা করেছেন। [বুলূগুল মারাম, হা/৩১২।] সুতরাং এর উপর আমল করাই উত্তম।
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ : أَنَّهٗ كَانَ إِذَا سَجَدَ بَدَأَ بِوَضْعِ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ , وَكَانَ يَقُوْلُ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَصْنَعُ ذٰلِكَ
নাফে‘ (রহ.) ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন সিজদা করতেন তখন দু’হাঁটু রাখার পূর্বে দু’হাত রাখতেন। আর তিনি বলতেন, নবী ﷺ এমনটি করতেন। [সহীহ বুখারী, ৪৬ নং অধ্যায় (তাকবীর দিয়ে সিজদা দেয়া); সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২১।]
ইমাম হাকেম, যাহাবী, আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দীস উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তাছাড়া ইমাম বুখারী হাদীসটিকে বাবের সাথে নিয়ে এসেছেন।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ : إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيْرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সিজদাতে যাবে তখন সে যেন উটের মতো না বসে, বরং সে যেন তার দু’হাঁটুর আগে তার হাত দুটি মাটিতে স্থাপন করে। [আবু দাউদ, হা/৮৪০; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৭৩৯; জামেউস সগীর, হা/৫৯৬; মিশকাত, হা/৮৯৯।]
সিজদায় যাওয়ার সময় হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার ব্যাপারে যে বর্ণনা এসেছে তা হলো :
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ -ﷺ - إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সিজদা করতেন তখন তাকে দেখেছি তিনি দু’হাত রাখার আগে দু’হাঁটু রাখতেন এবং যখন তিনি উঠতেন তখন হাঁটুর আগে দু’হাত উঠাতেন। [আবু দাউদ, হা/৮৩৮; তিরমিযী, হা/২৬৮; নাসাঈ, হা/১০৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮২; দার কুতনী, হা/১৩০৭; মিশকাত, হা/৮৯৮।]
ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান এবং গরীব। এ হাদীসটি ‘শারীক’ ব্যতীত অন্য কারো কাছে পাওয়া যায়নি। [তিরমিযী, ৮৩৮ নং হাদীসের মন্তব্য।] তাছাড়া শাইখ আলবানী (রহ.) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। [তিরমিযী, ৮৩৮ নং হাদীসের তাহকীক।]
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, অন্য হাদীসের বিপরীতে প্রথমে দু’হাত রাখার হাদীসটি বেশি সহীহ। কারণ ঐ হাদীসের সমর্থনে ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদীসটি পাওয়া যায়। যাকে ইবনে খুযায়মা (রহ.) সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারীও এটাকে বর্ণনা করেছেন। [বুলূগুল মারাম, হা/৩১২।] সুতরাং এর উপর আমল করাই উত্তম।
সিজদার অর্থ ইবাদাতের উদ্দেশ্যে চেহারা মাটিতে রাখা। রুকূ হতে ওঠে কাওমার দু‘আ শেষে اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলে সিজদায় যেতে হবে। নাক, কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগসহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবে। সিজদার সময় হাত দুটি কিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে এবং কনুই ও বগল থেকে আলগ রাখবে। হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দেবে না। সিজদায় দু’কনুই উঁচু করে রাখবে এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মতো মাটিতে বিছিয়ে দেয়া যাবে না। সিজদার সময় উভয় পায়ের আঙ্গুলি কিবলার দিকে রাখবে। দু’পায়ের গোড়ালী একত্রে মিলিয়ে রাখবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দা যখন সিজদা করে, তখন তার সঙ্গে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে, তার মুখমন্ডল, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২৮; আবু দাউদ, হা/৮৯১; তিরমিযী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/১০৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৫।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিজদায় স্থিরতা অবলম্বন করো এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে কুকুরের মতো না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৭০; বায়হাকী, হা/২৫৩১; জামেউস সগীর, হা/১৯২২; মিশকাত, হা/৮৮৮।]
সিজদার মধ্যে স্থিরতা অবলম্বন করা:
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা সিজদার মধ্যে তা‘দীল করো। অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। তোমাদের মধ্যে কোন লোক যেন সিজদায় তার বাহুদ্বয় কুকুরের বাহুদ্বয়ের মতো (মাটিতে) বিছিয়ে না দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; তিরমিযী, হা/২৭৬।]
সিজদা হলো দাসত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। বান্দা যতবেশি সিজদা দিতে থাকে, ততবেশি সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
তুমি সিজদা করো এবং আমার নিকটবর্তী হও। (সূরা আলাক- ১৯)
সিজদার স্বরূপ :
আমরা সিজদায় গিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আপনার কুদরতের সামনে আমি একেবারে তুচ্ছ। গর্ব-অহংকার করার মতো আমার কিছুই নেই। আমি রুকূতে থাকতে আপনার সামনে মাথা নত করেছিলাম। এখন আমি গোলামীর আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে আমার শরীরের সবচেয়ে সম্মানিত অঙ্গ কপালকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পা, হাঁটু, হাত, নাক ও কপাল আপনাকে সিজদা করছে। আমি নিজেকে আপনার মাহাত্ম্যের সামনে বিলীন করে দিলাম। কারণ আপনি হলেন মহান বাদশা, আমার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক।
সিজদার গুরুত্ব :
সিজদা সালাতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বাদ গেলে উক্ত সালাত বাতিল হয়ে যায়। এর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُوْدِ لِلّٰهِ فَاِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلّٰهِ سَجْدَةً اِلَّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيْئَةً
তোমার উচিত আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা করা। কেননা তুমি যখন একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৫; মিশকাত, হা/৮৯৭।]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
অর্থাৎ সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় অধিক দু‘আ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৯৭০; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৮; বায়হাকী, হা/২৫১৭; মিশকাত, হা/৮৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দা যখন সিজদা করে, তখন তার সঙ্গে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে, তার মুখমন্ডল, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২৮; আবু দাউদ, হা/৮৯১; তিরমিযী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/১০৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৫।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিজদায় স্থিরতা অবলম্বন করো এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে কুকুরের মতো না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৭০; বায়হাকী, হা/২৫৩১; জামেউস সগীর, হা/১৯২২; মিশকাত, হা/৮৮৮।]
সিজদার মধ্যে স্থিরতা অবলম্বন করা:
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা সিজদার মধ্যে তা‘দীল করো। অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। তোমাদের মধ্যে কোন লোক যেন সিজদায় তার বাহুদ্বয় কুকুরের বাহুদ্বয়ের মতো (মাটিতে) বিছিয়ে না দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; তিরমিযী, হা/২৭৬।]
সিজদা হলো দাসত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। বান্দা যতবেশি সিজদা দিতে থাকে, ততবেশি সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
তুমি সিজদা করো এবং আমার নিকটবর্তী হও। (সূরা আলাক- ১৯)
সিজদার স্বরূপ :
আমরা সিজদায় গিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আপনার কুদরতের সামনে আমি একেবারে তুচ্ছ। গর্ব-অহংকার করার মতো আমার কিছুই নেই। আমি রুকূতে থাকতে আপনার সামনে মাথা নত করেছিলাম। এখন আমি গোলামীর আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে আমার শরীরের সবচেয়ে সম্মানিত অঙ্গ কপালকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পা, হাঁটু, হাত, নাক ও কপাল আপনাকে সিজদা করছে। আমি নিজেকে আপনার মাহাত্ম্যের সামনে বিলীন করে দিলাম। কারণ আপনি হলেন মহান বাদশা, আমার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক।
সিজদার গুরুত্ব :
সিজদা সালাতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বাদ গেলে উক্ত সালাত বাতিল হয়ে যায়। এর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُوْدِ لِلّٰهِ فَاِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلّٰهِ سَجْدَةً اِلَّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيْئَةً
তোমার উচিত আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা করা। কেননা তুমি যখন একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৫; মিশকাত, হা/৮৯৭।]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
অর্থাৎ সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় অধিক দু‘আ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৯৭০; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৮; বায়হাকী, হা/২৫১৭; মিশকাত, হা/৮৯৩।]
(১) سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى
উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা (তিন বার)। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; তিরমিযী, হা/২৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯০।]
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْاَعْلٰى আমার মহান রবের।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালনক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈলসহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রুকূ-সিজদা করার সময় এ দু‘আ পাঠ করলেন।
سُبْحَانَ ذِىْ الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসায়ী হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
(৫) اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! لَكَ আপনার জন্য سَجَدْتُّ আমি সিজদা করছি। وَبِكَ আপনার প্রতি اٰمَنْتُ আমি ঈমান এনেছি وَلَكَ اَسْلَمْتُ এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। سَجَدَ সিজদা করছে وَجْهِىَ আমার চেহারা لِلَّذِىْ ঐ সত্তাকে যিনি خَلَقَهٗ তাকে সৃষ্টি করেছেন وَشَقَّ এবং তাতে স্থাপন করেছেন سَمْعَهٗ তার কান ও وَبَصَرَهٗ তার চক্ষু । تَبَارَكَ اللهُ বরকতময় সেই মহান সত্তা, اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১১২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫৪।]
৬। নবী ﷺ সিজদায় গিয়ে এ দু‘আ পড়তেন-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু ওয়া আলা-নিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لِىْ আমাকে ক্ষমা করে দাও ذَنْبِىْ كُلَّهٗ আমার সকল প্রকার গোনাহ دِقَّهٗ ছোট গোনাহ, وَجِلَّهٗ বড় গেনাহ وَاَوَّلَهٗ আগের গোনাহ وَاٰخِرَهٗ পরের গোনাহ, وَعَلَانِيَّتَهٗ প্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ وَسِرَّهٗ এবং অপ্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ।
অর্থ : হে আললাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাউদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১।]
৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমি রাসূল ﷺ এর কাছে আসলাম এবং আমি মসজিদ স্পর্শ করলাম। তখন তিনি সিজদারত অবস্থায় ছিলেন এবং তাঁর দু’পা একত্রিত ছিল। আর তখন তিনি এ দু‘আ পাঠ করছিলেন।
اَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَاَعُوْذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لَا اُحْصِىْ ثَنَاءً عَلَيْكَ اَنْتَ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ
উচ্চারণ : আউযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া আঊযু বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা ওয়া আঊযু বিকা মিনকা লা-উহ্সী ছানা-আন আলাইকা আনতা কামা- আছনাইতা ‘আলা নাফসিকা।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِرِضَاكَ তোমার সমত্মুষ্টির মাধ্যমে مِنْ سَخَطِكَ তোমার অসমত্মুষ্টি হতে। وَاَعُوْذُ আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِمُعَافَاتِكَ তোমার ক্ষমার মাধ্যমে مِنْ عُقُوْبَتِكَ তোমার শাস্তি হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। لَا اُحْصِىْ আমি শেষ করতে পারব না ثَنَاءً عَلَيْكَ তোমার প্রশংসা করে। اَنْتَ তুমি তেমনি আছ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ যেভাবে তুমি তোমার নিজের প্রশংসা করেছ ।
অর্থ : আমি তোমার সমত্মুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসমত্মুষ্টি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার ক্ষমার মাধ্যমে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না। তুমি যেভাবে তোমার নিজের প্রশংসা করেছ তেমনি আছ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৮; আবু দাউদ, হা/৮৭৯; তিরমিযী, হা/৩৪৯৩; নাসাঈ, হা/১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৬৯৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৫৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩৩।]
সিজদার সময় অন্যান্য দু‘আও পাঠ করা যাবে :
উপরোক্ত দু‘আ ছাড়াও সিজদার সময় আরো অন্যান্য দু‘আ করা যাবে। কেননা নবী ﷺ বলেছেন :
أَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ
অর্থাৎ তোমরা রুকূতে তোমাদের প্রতিপালকের মহত্ব বর্ণনা করো এবং সিজদাতে দু‘আর ব্যাপারে প্রচেষ্টা করো। তাহলে তোমাদের আহবানে সাড়া দেয়া হবে। [সহীহ মুসলিম হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, সিজদার মধ্যে নিজের জন্য এবং অন্যান্য মুসলমানের জন্য আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা যাবে।
উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা (তিন বার)। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; তিরমিযী, হা/২৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯০।]
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْاَعْلٰى আমার মহান রবের।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালনক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈলসহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রুকূ-সিজদা করার সময় এ দু‘আ পাঠ করলেন।
سُبْحَانَ ذِىْ الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসায়ী হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
(৫) اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! لَكَ আপনার জন্য سَجَدْتُّ আমি সিজদা করছি। وَبِكَ আপনার প্রতি اٰمَنْتُ আমি ঈমান এনেছি وَلَكَ اَسْلَمْتُ এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। سَجَدَ সিজদা করছে وَجْهِىَ আমার চেহারা لِلَّذِىْ ঐ সত্তাকে যিনি خَلَقَهٗ তাকে সৃষ্টি করেছেন وَشَقَّ এবং তাতে স্থাপন করেছেন سَمْعَهٗ তার কান ও وَبَصَرَهٗ তার চক্ষু । تَبَارَكَ اللهُ বরকতময় সেই মহান সত্তা, اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১১২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫৪।]
৬। নবী ﷺ সিজদায় গিয়ে এ দু‘আ পড়তেন-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু ওয়া আলা-নিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لِىْ আমাকে ক্ষমা করে দাও ذَنْبِىْ كُلَّهٗ আমার সকল প্রকার গোনাহ دِقَّهٗ ছোট গোনাহ, وَجِلَّهٗ বড় গেনাহ وَاَوَّلَهٗ আগের গোনাহ وَاٰخِرَهٗ পরের গোনাহ, وَعَلَانِيَّتَهٗ প্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ وَسِرَّهٗ এবং অপ্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ।
অর্থ : হে আললাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাউদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১।]
৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমি রাসূল ﷺ এর কাছে আসলাম এবং আমি মসজিদ স্পর্শ করলাম। তখন তিনি সিজদারত অবস্থায় ছিলেন এবং তাঁর দু’পা একত্রিত ছিল। আর তখন তিনি এ দু‘আ পাঠ করছিলেন।
اَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَاَعُوْذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لَا اُحْصِىْ ثَنَاءً عَلَيْكَ اَنْتَ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ
উচ্চারণ : আউযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া আঊযু বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা ওয়া আঊযু বিকা মিনকা লা-উহ্সী ছানা-আন আলাইকা আনতা কামা- আছনাইতা ‘আলা নাফসিকা।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِرِضَاكَ তোমার সমত্মুষ্টির মাধ্যমে مِنْ سَخَطِكَ তোমার অসমত্মুষ্টি হতে। وَاَعُوْذُ আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِمُعَافَاتِكَ তোমার ক্ষমার মাধ্যমে مِنْ عُقُوْبَتِكَ তোমার শাস্তি হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। لَا اُحْصِىْ আমি শেষ করতে পারব না ثَنَاءً عَلَيْكَ তোমার প্রশংসা করে। اَنْتَ তুমি তেমনি আছ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ যেভাবে তুমি তোমার নিজের প্রশংসা করেছ ।
অর্থ : আমি তোমার সমত্মুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসমত্মুষ্টি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার ক্ষমার মাধ্যমে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না। তুমি যেভাবে তোমার নিজের প্রশংসা করেছ তেমনি আছ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৮; আবু দাউদ, হা/৮৭৯; তিরমিযী, হা/৩৪৯৩; নাসাঈ, হা/১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৬৯৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৫৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩৩।]
সিজদার সময় অন্যান্য দু‘আও পাঠ করা যাবে :
উপরোক্ত দু‘আ ছাড়াও সিজদার সময় আরো অন্যান্য দু‘আ করা যাবে। কেননা নবী ﷺ বলেছেন :
أَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ
অর্থাৎ তোমরা রুকূতে তোমাদের প্রতিপালকের মহত্ব বর্ণনা করো এবং সিজদাতে দু‘আর ব্যাপারে প্রচেষ্টা করো। তাহলে তোমাদের আহবানে সাড়া দেয়া হবে। [সহীহ মুসলিম হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, সিজদার মধ্যে নিজের জন্য এবং অন্যান্য মুসলমানের জন্য আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা যাবে।
সালাতের শেষ বৈঠকে এবং সিজদার মধ্যে দু‘আ কবুল হয়। এ দুটি স্থান দু‘আ কবুলের উপযু্ক্ত সময়। এ সময় মাসনূন দু‘আ যা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্য থেকে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন দু‘আ পাঠ করতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে দু‘আগুলো পড়েছেন, সেগুলো পাঠ করা সুন্নাত। আর এ দু‘আগুলোর ভাষা হচ্ছে আরবি।
তবে নফল সালাতের মধ্যে কেউ যদি নিজের ভাষায় এ দুটি স্থানে দু‘আ করতে চায় তবে তা জায়েয আছে বলে অনেক উলামায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
তবে নফল সালাতের মধ্যে কেউ যদি নিজের ভাষায় এ দুটি স্থানে দু‘আ করতে চায় তবে তা জায়েয আছে বলে অনেক উলামায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
দু’সিজদার মধ্যখানে একবার বসতে হয়, একে জলসা বলা হয়। সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব। এ সময় ডান পা খাড়া রেখে বাম পা মাটিতে বিছিয়ে উহার উপর বসতে হয়। যথাসম্ভব আঙ্গুলের মাথা কিবলার দিকে রাখতে হয়। হাতের আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে হাঁটুর উপর রাখতে হয়। এ সময় হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়া সুন্নাত। অনেক ইমাম এক সিজদা দিয়ে এত তাড়াতাড়ি অপর সিজদায় চলে যান যে, কোন দু‘আ পড়ার সুযোগই থাকে না। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ যতক্ষণ সিজদায় থাকতেন ততক্ষণ দু’সিজদার মধ্যখানে বসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, وَارْحَمْنِيْ আমার প্রতি দয়া করুন, وَاهْدِنِيْ আর আমাকে সঠিক পথ দেখান, وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপদ রাখুন, وَارْزُقْنِيْ এবং আমাকে রিযিক দান করুন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [আবু দাউদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৪; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০।]
(২) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : রবিবগ ফিরলী, রবিবগ ফিরলী ।
শাব্দিক অর্থ : رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন। رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; নাসাঈ, হা/১০৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩; বায়হাকী, হা/২৫৮২; মিশকাত, হা/১২০০।]
এবার দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর- এভাবেই আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে বাকী রাক‘আতগুলোও পড়তে হবে।
দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, وَارْحَمْنِيْ আমার প্রতি দয়া করুন, وَاهْدِنِيْ আর আমাকে সঠিক পথ দেখান, وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপদ রাখুন, وَارْزُقْنِيْ এবং আমাকে রিযিক দান করুন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [আবু দাউদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৪; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০।]
(২) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : রবিবগ ফিরলী, রবিবগ ফিরলী ।
শাব্দিক অর্থ : رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন। رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; নাসাঈ, হা/১০৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩; বায়হাকী, হা/২৫৮২; মিশকাত, হা/১২০০।]
এবার দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর- এভাবেই আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে বাকী রাক‘আতগুলোও পড়তে হবে।
বালিশ অথবা সিজদার জায়গা স্বাভাবিক হতে উঁচু করে বিকল্প হিসেবে অন্য কোন কিছুর উপর সিজদা করা যাবে না। যেহেতু সিজদা দিতে অক্ষম হলে রুকূ হতে একটু বেশি ঝুঁকে সিজদা করার বিধান রয়েছে। তাই সেভাবেই সিজদা করতে হবে। জাবির (রাঃ) বলেন, একদা নবী ﷺ এক রোগীকে বালিশের উপর সালাত আদায় করতে দেখে বালিশটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং তাকে বললেন, যদি তুমি পার তাহলে জমিনের উপর সালাত আদায় করো। যদি তা না পার তবে রুকূর চেয়ে সিজদায় একটু বেশি ঝুঁকে যেও। [বুলুগুল মারাম- ২৪ পৃঃ।]
২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময় দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসা মুস্তাহাব। একে জলসায়ে ইস্তেরাহাত বা সস্তির বৈঠক বলে।
মালিক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বেজোড় রাক‘আত শেষ করতেন, তখন স্থির হয়ে না বসা পর্যন্ত দাঁড়াতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৮২৩; আবু দাউদ, হা/৮৪৪; তিরযিমী, হা/২৮৭; নাসাঈ, হা/১১৫২; মিশকাত হা/৭৯৬।]
মালিক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বেজোড় রাক‘আত শেষ করতেন, তখন স্থির হয়ে না বসা পর্যন্ত দাঁড়াতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৮২৩; আবু দাউদ, হা/৮৪৪; তিরযিমী, হা/২৮৭; নাসাঈ, হা/১১৫২; মিশকাত হা/৭৯৬।]
প্রথম রাক‘আত শেষ হলে দ্বিতীয় রাক‘আত সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। প্রথম রাক‘আতের ন্যায় হাত বাঁধতে হবে। দ্বিতীয় রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা বা প্রারম্ভিক দু‘আ (সানা) নেই। এ রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়তে হয়। এরপর রুকূ-সিজদা করে দ্বিতীয় রাক‘আত পূর্ণ করতে হবে।
তৃতীয় রাক‘আত :
৩ বা ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাত হলে ২ রাক‘আত শেষ করার পর বসে তাশাহ্হুদ পাঠ করে উঠে আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আগের মতো হাত বাঁধতে হবে। হাত বাঁধার আগে রাফউল ইয়াদাইন করতে হবে। অতঃপর আগের মতো সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। এই রাক‘আতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়তে হয় না। তবে সুন্নাত বা নফল সালাত হলে প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর যথারীতি রুকূ-সিজদা সম্পন্ন করতে হবে।
সালাত তিন রাক‘আত বিশিষ্ট হলে তৃতীয় রাক‘আতে সিজদা দেয়ার পর বসতে হবে এবং আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।
চতুর্থ রাক‘আত :
সালাত চার রাক‘আত বিশিষ্ট হলে তৃতীয় রাক‘আত শেষ করে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তাকবীর দিয়ে চতুর্থ রাক‘আত আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে। চতুর্থ রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে আবার আগের মতো হাত বেঁধে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। এরপর যথারীতি রুকূ-সিজদা দেয়ার পর তাশাহ্হুদে বসতে হবে। আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ, দু‘আ মাসূরা ও অন্যান্য দু‘আ পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।
তৃতীয় রাক‘আত :
৩ বা ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাত হলে ২ রাক‘আত শেষ করার পর বসে তাশাহ্হুদ পাঠ করে উঠে আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আগের মতো হাত বাঁধতে হবে। হাত বাঁধার আগে রাফউল ইয়াদাইন করতে হবে। অতঃপর আগের মতো সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। এই রাক‘আতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়তে হয় না। তবে সুন্নাত বা নফল সালাত হলে প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর যথারীতি রুকূ-সিজদা সম্পন্ন করতে হবে।
সালাত তিন রাক‘আত বিশিষ্ট হলে তৃতীয় রাক‘আতে সিজদা দেয়ার পর বসতে হবে এবং আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।
চতুর্থ রাক‘আত :
সালাত চার রাক‘আত বিশিষ্ট হলে তৃতীয় রাক‘আত শেষ করে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তাকবীর দিয়ে চতুর্থ রাক‘আত আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে। চতুর্থ রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে আবার আগের মতো হাত বেঁধে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। এরপর যথারীতি রুকূ-সিজদা দেয়ার পর তাশাহ্হুদে বসতে হবে। আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ, দু‘আ মাসূরা ও অন্যান্য দু‘আ পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।
দ্বিতীয় রাক‘আতের উভয় সিজদা শেষ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন দু’সিজদার মাঝের বৈঠকের মতো বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখতেন এবং আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে রাখতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮২৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৫; আবু দাউদ, হা/ ৯৫৮; নাসাঈ, হা/১২৬৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদে বসে ডান উরুর উপর ডান হাত এবং বাম উরুর উপর বাম হাত রাখতেন। [আবু দাউদ, হা/ ৯৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৭০।]
তাশাহ্হুদের গুরুত্ব :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - يُعَلِّمُنَا التَّشَهُّدَ كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّوْرَةَ مِنَ الْقُرْاٰنِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাদেরকে ঐভাবে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৯২৯; নাসাঈ, হা/১১৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৯০২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদে বসে ডান উরুর উপর ডান হাত এবং বাম উরুর উপর বাম হাত রাখতেন। [আবু দাউদ, হা/ ৯৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৭০।]
তাশাহ্হুদের গুরুত্ব :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ - يُعَلِّمُنَا التَّشَهُّدَ كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّوْرَةَ مِنَ الْقُرْاٰنِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাদেরকে ঐভাবে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৯২৯; নাসাঈ, হা/১১৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৯০২।]
اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্ব তবায়্যিবা-ত, আসসালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহ। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ।
শাব্দিক অর্থ : اَلتَّحِيَّاتُ সকল সম্মান, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, وَالصَّلَوَاتُ সকল প্রার্থনা, وَالطَّيِّبَاتُ সকল পবিত্র বাণীসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য), اَلسَّلَامُ শান্তি, عَلَيْكَ আপনার প্রতি (বর্ষিত হোক), اَيُّهَا النَّبِىُّ হে নবী! وَرَحْمَةُ اللهِ এবং আল্লাহর রহমত, وَبَرَكَاتُهٗ এবং তাঁর বরকত (আপনার উপর বর্ষিত হোক), اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর, وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ আর আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَاَشْهَدُ আমি আরো সাক্ষ্য দিচিছ, اَنَّ مُحَمَّدًا অবশ্যই মুহাম্মাদ, عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা, وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল।
অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪; তিরমিযী, হা/২৮৯; নাসাঈ, হা/১১৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৯; মিশকাত, হা/৯০৯; আবু দাউদ, হা/৯৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০০৬; ।]
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বিনয়ের সাথে বসে প্রথমে আল্লাহর গুণগান করতে হয় এভাবে اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ‘‘(আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ সবই আল্লাহর জন্য।’’ এরপর নবী ﷺ এর কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি সালাম জানাই এভাবে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ ‘‘হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি (বর্ষিত হোক), আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।’’ এরপর আমরা নিজেদের প্রতি এবং সকল সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতি সালাম পেশ করি : اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘‘শান্তি নাযিল হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের প্রতি।’’ নবী ﷺ বলেন, এ দু‘আ আসমান ও জমিনে যত নেক বান্দা আছেন, সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪।]
তারপর আমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও নবী ﷺ এর নবুওতের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের ঈমানকে তাজা করি - اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্ব তবায়্যিবা-ত, আসসালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহ। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ।
শাব্দিক অর্থ : اَلتَّحِيَّاتُ সকল সম্মান, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, وَالصَّلَوَاتُ সকল প্রার্থনা, وَالطَّيِّبَاتُ সকল পবিত্র বাণীসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য), اَلسَّلَامُ শান্তি, عَلَيْكَ আপনার প্রতি (বর্ষিত হোক), اَيُّهَا النَّبِىُّ হে নবী! وَرَحْمَةُ اللهِ এবং আল্লাহর রহমত, وَبَرَكَاتُهٗ এবং তাঁর বরকত (আপনার উপর বর্ষিত হোক), اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর, وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ আর আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَاَشْهَدُ আমি আরো সাক্ষ্য দিচিছ, اَنَّ مُحَمَّدًا অবশ্যই মুহাম্মাদ, عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা, وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল।
অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪; তিরমিযী, হা/২৮৯; নাসাঈ, হা/১১৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৯; মিশকাত, হা/৯০৯; আবু দাউদ, হা/৯৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০০৬; ।]
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বিনয়ের সাথে বসে প্রথমে আল্লাহর গুণগান করতে হয় এভাবে اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ‘‘(আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ সবই আল্লাহর জন্য।’’ এরপর নবী ﷺ এর কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি সালাম জানাই এভাবে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ ‘‘হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি (বর্ষিত হোক), আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।’’ এরপর আমরা নিজেদের প্রতি এবং সকল সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতি সালাম পেশ করি : اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘‘শান্তি নাযিল হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের প্রতি।’’ নবী ﷺ বলেন, এ দু‘আ আসমান ও জমিনে যত নেক বান্দা আছেন, সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪।]
তারপর আমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও নবী ﷺ এর নবুওতের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের ঈমানকে তাজা করি - اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
তাশাহ্হুদ হলো জীবন পরিচালনা করার নীতি নির্ধারণী ঘোষণা এবং এ নীতি অনুযায়ী চলার প্রকাশ্য ওয়াদা। যার মর্মার্থ হলো, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সবসময় আল্লাহকে একমাত্র হুকুমকর্তা ও মনীব মেনে চলব এবং আল্লাহর হুকুমের বিরোধী কারো হুকুম মানব না। আর মুহাম্মাদ ﷺ কে একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে মানব এবং তাঁর আদর্শ ছাড়া অন্য কারো আদর্শের অনুসরণ করব না।
এ জন্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতে আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জীবন শুরু হবে ফজরের সালাত দিয়ে এবং শেষ হবে এশার সালাত দিয়ে। মধ্যখানে আরো ৩ বার সকল কাজকর্ম মুলতবী রেখে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। ২৪ ঘণ্টার রুটিন সালাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কাজের জন্য সালাতকে মুলতবী করা যাবে না; বরং সালাতের জন্যই কাজকে মুলতবী রাখতে হবে।
বান্দা যতক্ষণ সালাতে থাকবে ততক্ষণ তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন-মগজকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী ব্যবহার করবে। সালাতে নিজের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী কিছু বলা ও করা যাবে না। এভাবেই সালাতের মাধ্যমে দেহ ও মনকে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ব্যবহার করার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
এ জন্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতে আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জীবন শুরু হবে ফজরের সালাত দিয়ে এবং শেষ হবে এশার সালাত দিয়ে। মধ্যখানে আরো ৩ বার সকল কাজকর্ম মুলতবী রেখে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। ২৪ ঘণ্টার রুটিন সালাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কাজের জন্য সালাতকে মুলতবী করা যাবে না; বরং সালাতের জন্যই কাজকে মুলতবী রাখতে হবে।
বান্দা যতক্ষণ সালাতে থাকবে ততক্ষণ তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন-মগজকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী ব্যবহার করবে। সালাতে নিজের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী কিছু বলা ও করা যাবে না। এভাবেই সালাতের মাধ্যমে দেহ ও মনকে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ব্যবহার করার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান হাতের তর্জনী অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুল ছাড়া বাকী আঙ্গুলগুলো বন্ধ করে ফেলতেন। তারপর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৮।]
বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে। [মির‘আত ৩/২২৯; মিশকাত হা/৯০৬-এর টীকা।] মিরআতের লেখক ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ.) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয়া হয়। [মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ।] ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো উচিত নয়, যা পাশের মুসল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবে বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই।
বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে। [মির‘আত ৩/২২৯; মিশকাত হা/৯০৬-এর টীকা।] মিরআতের লেখক ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ.) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয়া হয়। [মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ।] ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো উচিত নয়, যা পাশের মুসল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবে বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই।
দরূদের গুরুত্ব ও ফযীলত :
সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ার পর আমরা দরূদ পড়ি। দরূদ পড়ার সময় এ নিয়তে দরূদ পড়তে হবে যে, আমার এ দরূদ নবী ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হবে এবং এ দরূদের সওয়াব আমি নিজে পাব। নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০ মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلّٰى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً ، صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيْئَاتٍ ، وَرُفِعَتْ لَهٗ عَشْرُ دَرَجَاتٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। [নাসাঈ, হা/১৩০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৭, ১৩৭৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯০৪; আবু দাউদ, হা/১৫৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৫৬; মিশকাত, হা/৯২২।]
বানোয়াট দরূদ পড়া যাবে না :
বিদআতী ও শিরকী আক্বীদা পোষণকারী লোকেরা অনেক দরূদ তৈরি করেছে, যেমন দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, দরূদে লাখী, দু‘আয়ে গাঞ্জিল আরশ ইত্যাদি। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এগুলোর ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। এগুলোর মধ্যে অনেক শিরকী শব্দ রয়েছে। তাই এসব দরূদ হতে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে।
সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ার পর আমরা দরূদ পড়ি। দরূদ পড়ার সময় এ নিয়তে দরূদ পড়তে হবে যে, আমার এ দরূদ নবী ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হবে এবং এ দরূদের সওয়াব আমি নিজে পাব। নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০ মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلّٰى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً ، صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيْئَاتٍ ، وَرُفِعَتْ لَهٗ عَشْرُ دَرَجَاتٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। [নাসাঈ, হা/১৩০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৭, ১৩৭৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯০৪; আবু দাউদ, হা/১৫৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৫৬; মিশকাত, হা/৯২২।]
বানোয়াট দরূদ পড়া যাবে না :
বিদআতী ও শিরকী আক্বীদা পোষণকারী লোকেরা অনেক দরূদ তৈরি করেছে, যেমন দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, দরূদে লাখী, দু‘আয়ে গাঞ্জিল আরশ ইত্যাদি। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এগুলোর ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। এগুলোর মধ্যে অনেক শিরকী শব্দ রয়েছে। তাই এসব দরূদ হতে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে।
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতি কীভাবে দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, এভাবে পড়বে-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ صَلِّ হে আল্লাহ! আপনি রহমত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا صَلَّيْتَ যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর, اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, حَمِيْدٌ প্রশংসিত, مَّجِيْدٌ মহিমান্বিত, اَللّٰهُمَّ بَارِكْ হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا بَارَكْتَ যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর। اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮।]
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ صَلِّ হে আল্লাহ! আপনি রহমত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا صَلَّيْتَ যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর, اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, حَمِيْدٌ প্রশংসিত, مَّجِيْدٌ মহিমান্বিত, اَللّٰهُمَّ بَارِكْ হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا بَارَكْتَ যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর। اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তাশাহ্হুদ শেষ হলে তোমরা তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬২২; সুনানুস সগীর লিল বায়হাকী, হা/৩৩৯; শারহুল মা‘আনী, হা/১৪১৭।] নিম্নে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদের পর যেসব দু‘আ পাঠ করতেন সেগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বব্র, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়ালমামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরাম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি, اَعُوْذُ بِكَ আপনার কাছে আশ্রয় চাই, مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের শাস্তি হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ আর আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই, مِنَ الْمَأْثَمِ পাপ থেকে, وَالْمَغْرَمِ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাউদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯।]
২. আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি সালাতের মধ্যে পাঠ করতে পারব। তখন তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে-
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও ওয়ালা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ্ফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি, ظَلَمْتُ অন্যায় করেছি, نَفْسِيْ আমার নিজের উপর, ظُلْمًا كَثِيْرًا অনেক অন্যায়, وَّ لَا يَغْفِرُ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না, اَلذُّنُوْبَ গোনাহসমূহ, اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া, فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন, مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ নিজ ক্ষমা দ্বারা, وَارْحَمْنِيْ আর আমার উপর দয়া করুন, اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনি, اَلْغَفُوْرُ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, اَلرَّحِيْمُ অত্যন্ত দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; তিরমিযী, হা/৩৫৩১; নাসাঈ, হা/১৩০২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৮৪৬।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদ ও সালাম ফিরানোর মাঝখানে এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ وَمَا اَسْرَفْتُ وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِهٖ مِنِّىْ اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়ামা-আখ্খারতু ওয়ামা-আস্সরারতু ওয়ামা-আ‘লানতু ওয়ামা- আস্রাফতু ওয়ামা-আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী আন্তাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখ্খিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِغْفِرْ لِىْ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও مَا قَدَّمْتُ যা (যেসব গোনাহ) আমি পূর্বে প্রেরণ করেছি وَمَا اَخَّرْتُ এবং যা আমি পরে প্রেরণ করেছি। وَمَا اَسْرَرْتُ যা আমি গোপনে করেছি وَمَا اَعْلَنْتُ এবং যা আমি প্রকাশ্যে করেছি। وَمَا اَسْرَفْتُ আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি (তাও ক্ষমা করে দাও)। وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِه مِنِّىْ আর যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান, যা আমার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে (তাও ক্ষমা করে দাও)। اَنْتَ الْمُقَدِّمُ তুমিই প্রথম وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ এবং তুমিই শেষ, لَا اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপন এবং প্রকাশ্য সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই প্রথম এবং তুমিই শেষ, তুমি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/১৫১১; তিরমিযী, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯।]
৪. মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরলেন এবং বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি; আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না।
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّىْ আপনি আমাকে সাহায্য করুন عَلٰى ذِكْرِكَ আপনার স্মরণের ব্যাপারে, وَشُكْرِكَ আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং আপনার উত্তম ইবাদাত করতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার স্মরণের ব্যাপারে, আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে এবং আপনার উত্তম ইবাদাত করতে সাহায্য করুন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২।]
৫. মুস‘আব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাদ (রাঃ) ৫টি বিষয়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তা স্মরণ রাখতেন। আর এ দু‘আগুলো তিনি নবী ﷺ থেকে শিখেছেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আঊযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আঊযুবিকা আন উরাদ্দা ইলা-আরযালিল উমুরি ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযাবিল ক্বাব্র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আললাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি اَعُوْذُ بِكَ আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ الْبُخْلِ কৃপণতা হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ الْجُبْنِ কাপুরুষতা থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ অধিক বার্ধক্য হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا দুনিয়ার ফিতনা হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের ফিতনা হতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হতে, কাপুরুষতা থেকে, অধিক বার্ধক্য হতে, দুনিয়ার ফিতনা হতে এবং কবরের ফিতনা হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬৫; নাসাঈ, হা/৫৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮৫; ইবনে খুযায়মা, হা/৭৪৬।]
৬. আবু সালেহ (রহ.) কতক সাহাবী হতে বর্ণনা করেন, নবী ﷺ এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কী পাঠ কর? সে বলল, আমি তাশাহ্হুদের পর এ দু‘আ পাঠ করি-
اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَسْاَلُكَ الْجَنَّةَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আঊযুবিকা মিনান্না-র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّى اَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি الْجَنَّةَ জান্নাত وَاَعُوْذُ بِكَ এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ النَّارِ আগুন তথা জাহান্নাম থেকে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৩৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৫।]
৭. আত্বা ইবনে সায়েব (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং খুব সংক্ষিপ্ত করলেন। তখন কেউ কেউ বলল, তুমি তো অনেক সংক্ষেপে সালাত আদায় করেছ। তখন তিনি বললেন, তবে শুনো! আমি এ সালাতে এমন দু‘আ পাঠ করেছি, যা আমি নবী ﷺ হতে শুনেছি। এরপর তারা সে দু‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ দু‘আ পাঠ করে শুনালেন-
اَللّٰهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ ، وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ ، اَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، وَتَوَفَّنِيْ اِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، اَللّٰهُمَّ وَاَسْاَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، وَاَسْاَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ ، وَاَسْاَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنٰى ، وَاَسْاَلُكَ نَعِيْمًا لَّا يَنْفَدُ ، وَاَسْاَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَّا تَنْقَطِعُ ، وَاَسْاَلُكَ الرِّضَاءَ بَعْدَ الْقَضَاءِ ، وَاَسْاَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ ، وَاَسْاَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ اِلٰى وَجْهِكَ ، وَالشَّوْقَ اِلٰى لِقَائِكَ فِيْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ ، وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ ، اَللّٰهُمَّ زَيِّنَّا بِزِيْنَةِ الْاِيْمَانِ ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গাইব, ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল খাল্ক, আহইনী মা-‘আলিমতাল হায়াতা খাইরাল্লী, ওয়াতাওয়াফফানী ইযা ‘আলিমতাল ওয়াফা-তা খাইরাল্লী। আল্লা-হুম্মা ওয়া আসআলুকা খাশইয়াতাকা ফীল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাহ, ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফীর রিযা ওয়াল গাযাব, ওয়া আসআলুকাল ক্বাসদা ফীল ফাক্বরি ওয়া গিনা, ওয়া আসআলুকা না‘ইমাল লা-ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকা কুররাতা ‘আইনিল লা- তানক্বাত্বিউ, ওয়া আসআলুকার রিযা-আ বা‘দাল ক্বাযা-আ, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশী বা‘আদাল মাওত, ওয়া আসআলুকা লাযযাতান নাযারি ইলা-ওয়াজহিকা ওয়াশ শাওক্বা ইলা লিক্বাইকা ফী গাইরি যাররা-আ মুযিররাতিন ওয়ালা- ফিতনাতিন মুযিল্লাহ। আল্লা-হুম্মা যাইয়িন্না- বিযীনাতিল ঈমা-নি ওয়াজ‘আলনা হুদাতাম মুহতাদীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! (আমি প্রার্থনা করছি) بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে وَقُدْرَتِكَ এবং তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে عَلَى الْخَلْقِ যা (তোমার) সৃষ্টির উপর (পরিব্যপ্ত) اَحْيِنِيْ তুমি আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত জীবিত রাখো مَا عَلِمْتَ যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি মনে কর الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ আমার জীবিত থাকা কল্যাণকর। وَتَوَفَّنِيْ আর তুমি আমাকে মৃত্যু দাও, اِذَا عَلِمْتَ যখন তুমি মনে কর যে, الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! وَاَسْاَلُكَ আমি প্রার্থনা করছি خَشْيَتَكَ ভয় করার فِي الْغَيْبِ অপ্রকাশ্যে وَالشَّهَادَةِ ও প্রকাশ্যে وَاَسْاَلُكَ এবং আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি كَلِمَةَ الْحَقِّ সঠিক কথা বলার فِي الرِّضَا সন্তুষ্টি অবস্থায় وَالْغَضَبِ এবং অসন্তুষ্টি অবস্থায়। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি الْقَصْدَ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার فِي الْفَقْرِ অসচ্ছল অবস্থায় وَالْغِنٰى ও সচ্ছল অবস্থায়। وَاَسْاَلُكَ আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি نَعِيْمًا এমন নিয়ামতের لَّا يَنْفَدُ যা কখনো শেষ হবে না। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি قُرَّةَ عَيْنٍ চোখের এমন শীতলতা لَّا تَنْقَطِعُ যা কখনো ফুরাবে না। وَاَسْاَلُكَ الرِّضَاءَ আমি তোমার কাছে সন্তুষ্ট থাকার প্রার্থনা করছি بَعْدَ الْقَضَاءِ কোন কিছু ঘটে যাওয়ার পর (অর্থাৎ তাকদীরের উপর)। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি بَرْدَ الْعَيْشِ শান্তিময় জীবন بَعْدَ الْمَوْتِ মৃত্যুর পর। وَاَسْاَلُكَ আমি প্রার্থনা করছি لَذَّةَ النَّظَرِ اِلٰى وَجْهِكَ তোমার সাক্ষাতের স্বাদ লাভ করার وَالشَّوْقَ এবং আগ্রহ প্রকাশ করছি اِلٰى لِقَائِكَ তোমার সাক্ষাতের فِيْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়া وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ এবং এমন ফিতনা ছাড়া, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! زَيِّنَّا তুমি আমাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করো بِزِيْنَةِ الْاِيْمَانِ ঈমানের সৌন্দর্য দ্বারা وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ এবং আমাদেরকে হোদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে এবং সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখো, যতক্ষণ আমার জীবিত থাকাকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। আর আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার মৃত্যুকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। হে আল্লাহ! আমি প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তোমাকে ভয় করার প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থায় সঠিক কথা বলতে। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে। আর আমি তোমার কাছে এমন নিয়ামত প্রার্থনা করছি, যা কখনো শেষ হবে না। আমি তোমার কাছে চোখের এমন শীতলতা প্রার্থনা করছি, যা কখনো ফুরাবে না। আমি তোমার কাছে তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকার প্রার্থনা করছি। মৃত্যুর পর শান্তিময় জীবন প্রার্থনা করছি। পরকালে তোমার সাক্ষাতের স্বাদ লাভ করার প্রার্থনা করছি এবং তোমার সাক্ষাৎ কামনা করছি। আমি প্রার্থনা করছি, যাতে আমার দ্বারা কারো ক্ষতি না হয় এবং আমি এমন ফিতনায় না পড়ি, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ঈমান দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করো এবং হোদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো। [নাসাঈ, হা/১৩০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৭১; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৩৯১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯২৩; জামেউস সগীর, হা/২১৮১; মিশকাত, হা/২৪৯৭।]
৮. মিহজান ইবনে আদরা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি সালাত শেষ করছিল এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করা অবস্থায় ছিল। আর তখন সে এ দু‘আ পাঠ করছিল। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এটা তিনি তিনবার বললেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ يَا اَللهُ بِاَنَّكَ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ الصَّمَدُ ، اَ لَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ، اَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ ، اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইয়া আল্লা-হু বিআন্নাকাল ওয়া-হিদুল আহাদুস সামাদু। আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইঊলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। আন তাগফিরলী যুনূবী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। يَا اَللهُ হে আল্লাহ! بِاَنَّكَ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ নিশ্চয় তুমি এক الصَّمَدُ ও অমুখাপেক্ষী। اَ لَّذِيْ لَمْ يَلِدْ যিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তার সমতুল্য কেউ নেই। اَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ তুমি আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় তুমি الْغَفُوْرُ অতি ক্ষমাশীল الرَّحِيْمُ এবং দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি এক ও অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই। তুমি আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি অতি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু। [নাসাঈ, হা/১৩০১; আবু দাউদ, হা/৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৯৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৮৫।]
৯. আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন দেখলেন যে এক লোক সালাত পড়ছে এবং এভাবে দু‘আ করছে- এ দু‘আ শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর কসম! সে ইসমে আ‘জম নিয়ে দু‘আ করছে- যার মাধ্যমে চাইলে দান করা হয় এবং দু‘আ করলে কবুল করা হয়।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ بِاَنِّيْ اُشْهِدُكَ اَنَّكَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ الْاَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নী উশহিদুকা আন্নাকা লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْاَلُكَ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। بِاَنِّيْ اُشْهِدُكَ আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنَّكَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। الْاَحَدُ الصَّمَدُ আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ যিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং জন্মলাভ করেননি, وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্মলাভ করেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। [আবু দাঊদ, হা/১৪৯৫; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; মিশকাত, হা/২২৮৩।]
১০. আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে যেভাবে কুরআন মাজীদের সূরা শিখাতেন ঠিক সেভাবে এ দু’আটিও শিখাতেন।
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না- না‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবর, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিত্নাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-ত।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنَّا نَعُوْذُ بِكَ আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের আযাব থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে وَاَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, মাসহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০১; আবু দাউদ, হা/৯৮৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৮।]
উল্লেখ্য যে, উক্ত দু‘আগুলো ছাড়াও কুরআন ও হাদীসের যে কোন দু‘আ পাঠ করা যাবে।
১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বব্র, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়ালমামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরাম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি, اَعُوْذُ بِكَ আপনার কাছে আশ্রয় চাই, مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের শাস্তি হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ আর আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই, مِنَ الْمَأْثَمِ পাপ থেকে, وَالْمَغْرَمِ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাউদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯।]
২. আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি সালাতের মধ্যে পাঠ করতে পারব। তখন তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে-
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও ওয়ালা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ্ফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি, ظَلَمْتُ অন্যায় করেছি, نَفْسِيْ আমার নিজের উপর, ظُلْمًا كَثِيْرًا অনেক অন্যায়, وَّ لَا يَغْفِرُ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না, اَلذُّنُوْبَ গোনাহসমূহ, اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া, فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন, مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ নিজ ক্ষমা দ্বারা, وَارْحَمْنِيْ আর আমার উপর দয়া করুন, اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনি, اَلْغَفُوْرُ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, اَلرَّحِيْمُ অত্যন্ত দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; তিরমিযী, হা/৩৫৩১; নাসাঈ, হা/১৩০২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮; ইবনে খুযায়মা, হা/৮৪৬।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদ ও সালাম ফিরানোর মাঝখানে এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ وَمَا اَسْرَفْتُ وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِهٖ مِنِّىْ اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়ামা-আখ্খারতু ওয়ামা-আস্সরারতু ওয়ামা-আ‘লানতু ওয়ামা- আস্রাফতু ওয়ামা-আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী আন্তাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখ্খিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِغْفِرْ لِىْ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও مَا قَدَّمْتُ যা (যেসব গোনাহ) আমি পূর্বে প্রেরণ করেছি وَمَا اَخَّرْتُ এবং যা আমি পরে প্রেরণ করেছি। وَمَا اَسْرَرْتُ যা আমি গোপনে করেছি وَمَا اَعْلَنْتُ এবং যা আমি প্রকাশ্যে করেছি। وَمَا اَسْرَفْتُ আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি (তাও ক্ষমা করে দাও)। وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِه مِنِّىْ আর যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান, যা আমার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে (তাও ক্ষমা করে দাও)। اَنْتَ الْمُقَدِّمُ তুমিই প্রথম وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ এবং তুমিই শেষ, لَا اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপন এবং প্রকাশ্য সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই প্রথম এবং তুমিই শেষ, তুমি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/১৫১১; তিরমিযী, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯।]
৪. মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরলেন এবং বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি; আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না।
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّىْ আপনি আমাকে সাহায্য করুন عَلٰى ذِكْرِكَ আপনার স্মরণের ব্যাপারে, وَشُكْرِكَ আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং আপনার উত্তম ইবাদাত করতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার স্মরণের ব্যাপারে, আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে এবং আপনার উত্তম ইবাদাত করতে সাহায্য করুন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২।]
৫. মুস‘আব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাদ (রাঃ) ৫টি বিষয়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তা স্মরণ রাখতেন। আর এ দু‘আগুলো তিনি নবী ﷺ থেকে শিখেছেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আঊযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আঊযুবিকা আন উরাদ্দা ইলা-আরযালিল উমুরি ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযাবিল ক্বাব্র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আললাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি اَعُوْذُ بِكَ আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ الْبُخْلِ কৃপণতা হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ الْجُبْنِ কাপুরুষতা থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ অধিক বার্ধক্য হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا দুনিয়ার ফিতনা হতে। وَاَعُوْذُ بِكَ আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের ফিতনা হতে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হতে, কাপুরুষতা থেকে, অধিক বার্ধক্য হতে, দুনিয়ার ফিতনা হতে এবং কবরের ফিতনা হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬৫; নাসাঈ, হা/৫৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮৫; ইবনে খুযায়মা, হা/৭৪৬।]
৬. আবু সালেহ (রহ.) কতক সাহাবী হতে বর্ণনা করেন, নবী ﷺ এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কী পাঠ কর? সে বলল, আমি তাশাহ্হুদের পর এ দু‘আ পাঠ করি-
اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَسْاَلُكَ الْجَنَّةَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আঊযুবিকা মিনান্না-র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّى اَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি الْجَنَّةَ জান্নাত وَاَعُوْذُ بِكَ এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি مِنَ النَّارِ আগুন তথা জাহান্নাম থেকে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৩৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৫।]
৭. আত্বা ইবনে সায়েব (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং খুব সংক্ষিপ্ত করলেন। তখন কেউ কেউ বলল, তুমি তো অনেক সংক্ষেপে সালাত আদায় করেছ। তখন তিনি বললেন, তবে শুনো! আমি এ সালাতে এমন দু‘আ পাঠ করেছি, যা আমি নবী ﷺ হতে শুনেছি। এরপর তারা সে দু‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ দু‘আ পাঠ করে শুনালেন-
اَللّٰهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ ، وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ ، اَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، وَتَوَفَّنِيْ اِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، اَللّٰهُمَّ وَاَسْاَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، وَاَسْاَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ ، وَاَسْاَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنٰى ، وَاَسْاَلُكَ نَعِيْمًا لَّا يَنْفَدُ ، وَاَسْاَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَّا تَنْقَطِعُ ، وَاَسْاَلُكَ الرِّضَاءَ بَعْدَ الْقَضَاءِ ، وَاَسْاَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ ، وَاَسْاَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ اِلٰى وَجْهِكَ ، وَالشَّوْقَ اِلٰى لِقَائِكَ فِيْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ ، وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ ، اَللّٰهُمَّ زَيِّنَّا بِزِيْنَةِ الْاِيْمَانِ ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গাইব, ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল খাল্ক, আহইনী মা-‘আলিমতাল হায়াতা খাইরাল্লী, ওয়াতাওয়াফফানী ইযা ‘আলিমতাল ওয়াফা-তা খাইরাল্লী। আল্লা-হুম্মা ওয়া আসআলুকা খাশইয়াতাকা ফীল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাহ, ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফীর রিযা ওয়াল গাযাব, ওয়া আসআলুকাল ক্বাসদা ফীল ফাক্বরি ওয়া গিনা, ওয়া আসআলুকা না‘ইমাল লা-ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকা কুররাতা ‘আইনিল লা- তানক্বাত্বিউ, ওয়া আসআলুকার রিযা-আ বা‘দাল ক্বাযা-আ, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশী বা‘আদাল মাওত, ওয়া আসআলুকা লাযযাতান নাযারি ইলা-ওয়াজহিকা ওয়াশ শাওক্বা ইলা লিক্বাইকা ফী গাইরি যাররা-আ মুযিররাতিন ওয়ালা- ফিতনাতিন মুযিল্লাহ। আল্লা-হুম্মা যাইয়িন্না- বিযীনাতিল ঈমা-নি ওয়াজ‘আলনা হুদাতাম মুহতাদীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! (আমি প্রার্থনা করছি) بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে وَقُدْرَتِكَ এবং তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে عَلَى الْخَلْقِ যা (তোমার) সৃষ্টির উপর (পরিব্যপ্ত) اَحْيِنِيْ তুমি আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত জীবিত রাখো مَا عَلِمْتَ যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি মনে কর الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ আমার জীবিত থাকা কল্যাণকর। وَتَوَفَّنِيْ আর তুমি আমাকে মৃত্যু দাও, اِذَا عَلِمْتَ যখন তুমি মনে কর যে, الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! وَاَسْاَلُكَ আমি প্রার্থনা করছি خَشْيَتَكَ ভয় করার فِي الْغَيْبِ অপ্রকাশ্যে وَالشَّهَادَةِ ও প্রকাশ্যে وَاَسْاَلُكَ এবং আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি كَلِمَةَ الْحَقِّ সঠিক কথা বলার فِي الرِّضَا সন্তুষ্টি অবস্থায় وَالْغَضَبِ এবং অসন্তুষ্টি অবস্থায়। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি الْقَصْدَ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার فِي الْفَقْرِ অসচ্ছল অবস্থায় وَالْغِنٰى ও সচ্ছল অবস্থায়। وَاَسْاَلُكَ আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি نَعِيْمًا এমন নিয়ামতের لَّا يَنْفَدُ যা কখনো শেষ হবে না। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি قُرَّةَ عَيْنٍ চোখের এমন শীতলতা لَّا تَنْقَطِعُ যা কখনো ফুরাবে না। وَاَسْاَلُكَ الرِّضَاءَ আমি তোমার কাছে সন্তুষ্ট থাকার প্রার্থনা করছি بَعْدَ الْقَضَاءِ কোন কিছু ঘটে যাওয়ার পর (অর্থাৎ তাকদীরের উপর)। وَاَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি بَرْدَ الْعَيْشِ শান্তিময় জীবন بَعْدَ الْمَوْتِ মৃত্যুর পর। وَاَسْاَلُكَ আমি প্রার্থনা করছি لَذَّةَ النَّظَرِ اِلٰى وَجْهِكَ তোমার সাক্ষাতের স্বাদ লাভ করার وَالشَّوْقَ এবং আগ্রহ প্রকাশ করছি اِلٰى لِقَائِكَ তোমার সাক্ষাতের فِيْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়া وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ এবং এমন ফিতনা ছাড়া, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! زَيِّنَّا তুমি আমাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করো بِزِيْنَةِ الْاِيْمَانِ ঈমানের সৌন্দর্য দ্বারা وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ এবং আমাদেরকে হোদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে এবং সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখো, যতক্ষণ আমার জীবিত থাকাকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। আর আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার মৃত্যুকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। হে আল্লাহ! আমি প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তোমাকে ভয় করার প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থায় সঠিক কথা বলতে। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে। আর আমি তোমার কাছে এমন নিয়ামত প্রার্থনা করছি, যা কখনো শেষ হবে না। আমি তোমার কাছে চোখের এমন শীতলতা প্রার্থনা করছি, যা কখনো ফুরাবে না। আমি তোমার কাছে তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকার প্রার্থনা করছি। মৃত্যুর পর শান্তিময় জীবন প্রার্থনা করছি। পরকালে তোমার সাক্ষাতের স্বাদ লাভ করার প্রার্থনা করছি এবং তোমার সাক্ষাৎ কামনা করছি। আমি প্রার্থনা করছি, যাতে আমার দ্বারা কারো ক্ষতি না হয় এবং আমি এমন ফিতনায় না পড়ি, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ঈমান দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করো এবং হোদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো। [নাসাঈ, হা/১৩০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৭১; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৩৯১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯২৩; জামেউস সগীর, হা/২১৮১; মিশকাত, হা/২৪৯৭।]
৮. মিহজান ইবনে আদরা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি সালাত শেষ করছিল এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করা অবস্থায় ছিল। আর তখন সে এ দু‘আ পাঠ করছিল। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এটা তিনি তিনবার বললেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ يَا اَللهُ بِاَنَّكَ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ الصَّمَدُ ، اَ لَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ، اَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ ، اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইয়া আল্লা-হু বিআন্নাকাল ওয়া-হিদুল আহাদুস সামাদু। আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইঊলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। আন তাগফিরলী যুনূবী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْاَلُكَ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। يَا اَللهُ হে আল্লাহ! بِاَنَّكَ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ নিশ্চয় তুমি এক الصَّمَدُ ও অমুখাপেক্ষী। اَ لَّذِيْ لَمْ يَلِدْ যিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তার সমতুল্য কেউ নেই। اَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ তুমি আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় তুমি الْغَفُوْرُ অতি ক্ষমাশীল الرَّحِيْمُ এবং দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি এক ও অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই। তুমি আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি অতি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু। [নাসাঈ, হা/১৩০১; আবু দাউদ, হা/৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৯৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৮৫।]
৯. আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন দেখলেন যে এক লোক সালাত পড়ছে এবং এভাবে দু‘আ করছে- এ দু‘আ শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর কসম! সে ইসমে আ‘জম নিয়ে দু‘আ করছে- যার মাধ্যমে চাইলে দান করা হয় এবং দু‘আ করলে কবুল করা হয়।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ بِاَنِّيْ اُشْهِدُكَ اَنَّكَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ الْاَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নী উশহিদুকা আন্নাকা লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْاَلُكَ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। بِاَنِّيْ اُشْهِدُكَ আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنَّكَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। الْاَحَدُ الصَّمَدُ আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ যিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং জন্মলাভ করেননি, وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্মলাভ করেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। [আবু দাঊদ, হা/১৪৯৫; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; মিশকাত, হা/২২৮৩।]
১০. আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে যেভাবে কুরআন মাজীদের সূরা শিখাতেন ঠিক সেভাবে এ দু’আটিও শিখাতেন।
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না- না‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবর, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিত্নাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-ত।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنَّا نَعُوْذُ بِكَ আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের আযাব থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে وَاَعُوْذُ بِكَ আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে। وَاَعُوْذُ بِكَ আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, মাসহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০১; আবু দাউদ, হা/৯৮৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৮।]
উল্লেখ্য যে, উক্ত দু‘আগুলো ছাড়াও কুরআন ও হাদীসের যে কোন দু‘আ পাঠ করা যাবে।
সালাতের সর্বশেষ স্তর হলো সালাম। তাশাহ্হুদ, দরূদ এবং অন্যান্য দু‘আসমূহ পড়ার পর প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে হবে, ‘‘আস্সালা-মু ‘আলাইকুম্ ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হ’’। এরপর বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরূপ বলতে হবে। এই সালাম ফিরানোর মধ্য দিয়েই সালাত শেষ হয়। সালাত শুরু হয় ‘‘ আল্লা-হু আকবার’’ অর্থাৎ আল্লাহর মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে আর শেষ হয় ‘‘রাহমাতুল্লাহ’’ অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহ কামনার মধ্য দিয়ে।
ডান-বামের মুসল্লি এবং ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ সালাম দিতে হয়। ইমাম সাহেব মুক্তাদীদের উদ্দেশ্য করে আর মুক্তাদীরা ইমামের সালামের জবাব হিসেবে সালাম দিবেন। আর একাকী সালাত আদায়কারী ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন।
ডান-বামের মুসল্লি এবং ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ সালাম দিতে হয়। ইমাম সাহেব মুক্তাদীদের উদ্দেশ্য করে আর মুক্তাদীরা ইমামের সালামের জবাব হিসেবে সালাম দিবেন। আর একাকী সালাত আদায়কারী ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন।
ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর নবী ﷺ যেসব দু‘আ পাঠ করতেন তা হাদীসের সকল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই দু‘আগুলো বাদ দিয়ে প্রচলিত মুনাজাত করার কারণে অনেকেই ঐ দু‘আগুলো শিখেন না বা আমল করেন না। এজন্য উচিত হলো সালাম ফিরানোর পর হাদীসে বর্ণিত ঐ দু‘আগুলো এককভাবে পাঠ করা। দু‘আগুলো নিম্নরূপ :
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলা :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর সালাত শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : اَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা চাই اللهَ আল্লাহর কাছে।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ السَّلَامُ আপনি শান্তি, - وَمِنْكَ السَّلَامُ আপনার থেকেই শান্তি আসে। تَبَارَكْتَ আপনি বরকতময় يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। لَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَ لَا قُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই اِلَّا بِاللهِ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত। لَا اِلٰهَ আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَ لَا نَعْبُدُ আমরা আর কারো ইবাদাত করি না اِلَّا اِيَّاهُ আল্লাহ ছাড়া। لَهُ النِّعْمَةُ সকল নিয়ামত তাঁরই وَلَهُ الْفَضْلُ সকল অনুগ্রহ তাঁরই এবং وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতে সালাম ফিরানোর পর এ দু‘আটি পাঠ করতেন। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا مَانِعَ বাধা দেয়ার কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দিতে চাও তা وَلَا مُعْطِيَ এবং তা দেয়ারও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ যা তুমি বাধা দাও। وَلَا يَنْفَعُ প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই ذَا الْجَدِّ প্রচেষ্টাকারীর مِنْكَ الْجَدُّ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয সালাতের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّيْ আমাকে সাহায্য করো عَلٰى ذِكْرِكَ তোমার যিকিরের ক্ষেত্রে, وَشُكْرِكَ তোমার শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তার কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ সমস্ত রাজত্ব তার জন্য وَلَهُ الْحَمْدُ এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ আর তিনি عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর উপর قَدِيْرٌ ক্ষমতাবান।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللهُ আল্লাহ তিনি, لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। اَلْحَيُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ ও চিরস্থায়ী। لَا تَأْخُذُه তাঁকে গ্রাস করতে পারে না سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোন কিছুই। لَهٗ সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন مَا فِي السَّمَاوَاتِ যা কিছু আছে আসমানসমূহে وَمَا فِي الْاَرْضِ ও যা কিছু আছে জমিনে। مَنْ ذَا الَّذِيْ এমন কে আছে, যে يَشْفَعُ সুপারিশ করতে পারে عِنْدَهٗ তাঁর নিকট اِلَّا بِاِذْنِه তাঁর হুকুম ব্যতীত? يَعْلَمُ তিনি জানেন مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে وَمَا خَلْفَهُمْ ও যা কিছু আছে তাদের পেছনে । وَلَا يُحِيْطُوْنَ তারা আয়ত্ব করতে পারে না بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه তাঁর জ্ঞান হতে কোন কিছুই اِلَّا بِمَا شَآءَ তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। وَسِعَ বেষ্টন করে আছে كُرْسِيُّهُ তার সিংহাসন اَلسَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ আসমানসমূহ ও জমিনকে। وَلَا يَئُوْدُهٗ আর তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না حِفْظُهُمَا সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। وَهُوَ আর তিনি اَلْعَلِيُّ সর্বোচ্চ اَلْعَظِيْمُ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ قَرَاَ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলা :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর সালাত শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : اَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা চাই اللهَ আল্লাহর কাছে।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ السَّلَامُ আপনি শান্তি, - وَمِنْكَ السَّلَامُ আপনার থেকেই শান্তি আসে। تَبَارَكْتَ আপনি বরকতময় يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। لَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَ لَا قُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই اِلَّا بِاللهِ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত। لَا اِلٰهَ আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَ لَا نَعْبُدُ আমরা আর কারো ইবাদাত করি না اِلَّا اِيَّاهُ আল্লাহ ছাড়া। لَهُ النِّعْمَةُ সকল নিয়ামত তাঁরই وَلَهُ الْفَضْلُ সকল অনুগ্রহ তাঁরই এবং وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতে সালাম ফিরানোর পর এ দু‘আটি পাঠ করতেন। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا مَانِعَ বাধা দেয়ার কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দিতে চাও তা وَلَا مُعْطِيَ এবং তা দেয়ারও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ যা তুমি বাধা দাও। وَلَا يَنْفَعُ প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই ذَا الْجَدِّ প্রচেষ্টাকারীর مِنْكَ الْجَدُّ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয সালাতের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّيْ আমাকে সাহায্য করো عَلٰى ذِكْرِكَ তোমার যিকিরের ক্ষেত্রে, وَشُكْرِكَ তোমার শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তার কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ সমস্ত রাজত্ব তার জন্য وَلَهُ الْحَمْدُ এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ আর তিনি عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর উপর قَدِيْرٌ ক্ষমতাবান।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللهُ আল্লাহ তিনি, لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। اَلْحَيُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ ও চিরস্থায়ী। لَا تَأْخُذُه তাঁকে গ্রাস করতে পারে না سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোন কিছুই। لَهٗ সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন مَا فِي السَّمَاوَاتِ যা কিছু আছে আসমানসমূহে وَمَا فِي الْاَرْضِ ও যা কিছু আছে জমিনে। مَنْ ذَا الَّذِيْ এমন কে আছে, যে يَشْفَعُ সুপারিশ করতে পারে عِنْدَهٗ তাঁর নিকট اِلَّا بِاِذْنِه তাঁর হুকুম ব্যতীত? يَعْلَمُ তিনি জানেন مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে وَمَا خَلْفَهُمْ ও যা কিছু আছে তাদের পেছনে । وَلَا يُحِيْطُوْنَ তারা আয়ত্ব করতে পারে না بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه তাঁর জ্ঞান হতে কোন কিছুই اِلَّا بِمَا شَآءَ তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। وَسِعَ বেষ্টন করে আছে كُرْسِيُّهُ তার সিংহাসন اَلسَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ আসমানসমূহ ও জমিনকে। وَلَا يَئُوْدُهٗ আর তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না حِفْظُهُمَا সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। وَهُوَ আর তিনি اَلْعَلِيُّ সর্বোচ্চ اَلْعَظِيْمُ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ قَرَاَ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
হুমাইযা বিনতে ইয়াসীর (রহ.) তার দাদী হতে বর্ণনা করেন। যিনি ছিলেন মুহাজিরদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা তাসবীহসমূহ আঙ্গুলে গণনা করো। কেননা আঙ্গুলসমূহ কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেসিত হবে এবং তারা কথা বলবে। [আবু দাউদ, হা/১৫০৩; তিরমিযী, হা/৩৫৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১৩৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৪২; জামেউস সগীর, হা/৭৫৩৬; মিশকাত হা/২৩১৬।]
প্রচলিত তাসবীহ বা অন্য কিছু দ্বারা তাসবীহ গণনা করাতে রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেজন্য আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করাই উত্তম।
তাসবীহ ডান হাতে গণনা করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল পবিত্র কাজ ডান হাতে করতেন। [আবু দাউদ হা/৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৩২৬; মিশকাত হা/৩৪৮।] আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি। [আবু দাউদ হা/১৫০২; বায়হাকী, হা/৩১৮৫।]
প্রচলিত তাসবীহ বা অন্য কিছু দ্বারা তাসবীহ গণনা করাতে রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেজন্য আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করাই উত্তম।
তাসবীহ ডান হাতে গণনা করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল পবিত্র কাজ ডান হাতে করতেন। [আবু দাউদ হা/৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৩২৬; মিশকাত হা/৩৪৮।] আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি। [আবু দাউদ হা/১৫০২; বায়হাকী, হা/৩১৮৫।]
নবী ﷺ কখনো ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করেছেন এমন কোন বর্ণনা কোন হাদীসে নেই। বিশুদ্ধ হাদীস তো দূরের কথা, কোন দুর্বল কিংবা বানোয়াট হাদীসেও তার কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। হাদীস গ্রন্থসমূহের কোন একটিতেও পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতের কোন অধ্যায় বা কোন পরিচ্ছেদ পাওয়া যায়নি। এমনকি ফিকহের কিতাবসমূহের কোথাও উক্ত মুনাজাতের কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয়। কেননা দু‘আর মধ্যে সুন্নাত হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরুতেই বলেন, ‘‘আল্লা-হু ম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষ বাক্য। তাই ‘‘আল্লা-হুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা, আল্লা-হুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু..’’ বলে শেষ করা এটাও সুন্নাতের পরিপন্থী।
এ দু‘আ সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত :
(১) শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) কে ফরয সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদআত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫৮।] আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ।
(২) শাইখ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদআত। কারণ এরূপ দু‘আ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগেও ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধিতা করে।
ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। ফরয সালাত আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ কী আমল করতেন তা সুস্পষ্ট আছে। চার খলীফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশনা ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৩৩।] কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মু্ক্তাদীগণ হাত তুলে আমীন আমীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথা (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হলে) তা পরিত্যাজ্য। [হায়াতু কিরাবিল ওলামা ১/২৫৭ পৃঃ।]
আমার জানা মতে, ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা- না রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, না সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। ফরয সালাতের পর যারা হাত তুলে দু‘আ করে, তাদের এ কাজ সুস্পষ্ট বিদআত। এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার এ দ্বীনে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৫; ইবনে হিববান, হা/২৭; বায়হাকী, হা/২০১৫৮; দার কুতনী, হা/৪৫৯০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯; মিশকাত, হা/১৪০।]
(৩) শাইখ সালেহ আল উছাইমিন (রহ.) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা এমন বিদআত, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণ থেকেও নেই। মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। [ফাতাওয়া উসাইমিন, পৃঃ১২০।]
(৪) আল্লামা আবদুল হাই (রহ.) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত যে প্রথা, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলে, এ প্রথা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না। [ফতয়ায়ে আবদুল হাই, ১/১০০ পৃঃ।]
(৫) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। [এমাদুদ্দীন, পৃঃ ৩৯৭।]
(৬) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রথা অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটি সহীহ অথবা দুর্বল হাদীসও নেই। [যাদুল মা‘আদ, ১/৬৬ পৃঃ।]
(৭) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায়নি। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করাই উত্তম এবং করা বিদআত। [মাদখাল, ২/৮৩ পৃঃ।]
(৮) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ্ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সালাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। [এস্তেহবাবুদ দাওয়াহ।]
(৯) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না বুঝে আমীন-আমীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩/৫৭৭ পৃঃ।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ হতে এবং মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থার পরিপন্থী। [আহকামুদ দু‘আ, পৃঃ ১৩।]
প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার পক্ষে মতামত দিলেও বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। কারণ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে দু‘আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমগণও করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদআত।
পর্যালোচনা :
যারা ফরয সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা পালন করে যাচ্ছেন তারা সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, এটা সালাতের কোন অংশ নয় এবং এভাবে দু‘আ করা জরুরিও নয় আর তা না করলে সালাতের কোন ক্ষতিও হয় না।
এখন কথা হলো, যে কাজটি জরুরি নয় এবং না করলে কোন ক্ষতি হয় না, সে কাজটিকে আমল বানিয়ে যারা নিয়মিত পালন করেন তারা বড়জোর এটাকে উত্তম বলতে পারেন। কিন্তু যে কাজটির বিপক্ষে বিশ্বমানের অনেক আলেম অবস্থান করেন এবং এটাকে স্পষ্ট বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এমন একটি কাজকে নিয়মিত পালন করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কারণ এটা পালন না করলে কোন গোনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না। কিন্তু যদি এটা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে এ আমলকারীর পরিণতি কত যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু বিদআতির আমল কবুল হয় না এবং পরকালে বিদআতিকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করেনি এমন একটি কাজকে উত্তম আমল মনে করে পালন করার চেয়ে পরিত্যাগ করাই উত্তম।
সম্মানিত ইমাম সাহেবদের প্রতি বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা মুসল্লিদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই মেনে নেবে। কেননা আমরাও এ বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর মুসল্লিদেরকে বুঝিয়েছি এবং এটা ছেড়ে দিয়েছি।
অনেকেই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিরা কী বলবে বা একটা ফিতনা সৃষ্টি হবে- এ ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু এমনটি করা উলামায়ে কেরামদের জন্য ঠিক নয়। কারণ উলামায়ে কেরাম এবং ইমামরা হচ্ছেন জাতির অভিভাবক। তারাই যদি সঠিক জিনিসটি জাতির সামনে তুলে না ধরেন তাহলে এ জাতি কখনোই সঠিক পথ পাবে না এবং এর দায় শুধু মুসল্লিদের নয়, আলেম-উলামাদের উপরেও বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হক বুঝার এবং হকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয়। কেননা দু‘আর মধ্যে সুন্নাত হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরুতেই বলেন, ‘‘আল্লা-হু ম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষ বাক্য। তাই ‘‘আল্লা-হুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা, আল্লা-হুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু..’’ বলে শেষ করা এটাও সুন্নাতের পরিপন্থী।
এ দু‘আ সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত :
(১) শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) কে ফরয সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদআত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫৮।] আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ।
(২) শাইখ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদআত। কারণ এরূপ দু‘আ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগেও ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধিতা করে।
ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। ফরয সালাত আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ কী আমল করতেন তা সুস্পষ্ট আছে। চার খলীফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশনা ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৩৩।] কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মু্ক্তাদীগণ হাত তুলে আমীন আমীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথা (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হলে) তা পরিত্যাজ্য। [হায়াতু কিরাবিল ওলামা ১/২৫৭ পৃঃ।]
আমার জানা মতে, ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা- না রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, না সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। ফরয সালাতের পর যারা হাত তুলে দু‘আ করে, তাদের এ কাজ সুস্পষ্ট বিদআত। এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার এ দ্বীনে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৫; ইবনে হিববান, হা/২৭; বায়হাকী, হা/২০১৫৮; দার কুতনী, হা/৪৫৯০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯; মিশকাত, হা/১৪০।]
(৩) শাইখ সালেহ আল উছাইমিন (রহ.) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা এমন বিদআত, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণ থেকেও নেই। মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। [ফাতাওয়া উসাইমিন, পৃঃ১২০।]
(৪) আল্লামা আবদুল হাই (রহ.) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত যে প্রথা, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলে, এ প্রথা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না। [ফতয়ায়ে আবদুল হাই, ১/১০০ পৃঃ।]
(৫) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। [এমাদুদ্দীন, পৃঃ ৩৯৭।]
(৬) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রথা অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটি সহীহ অথবা দুর্বল হাদীসও নেই। [যাদুল মা‘আদ, ১/৬৬ পৃঃ।]
(৭) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায়নি। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করাই উত্তম এবং করা বিদআত। [মাদখাল, ২/৮৩ পৃঃ।]
(৮) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ্ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সালাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। [এস্তেহবাবুদ দাওয়াহ।]
(৯) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না বুঝে আমীন-আমীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩/৫৭৭ পৃঃ।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ হতে এবং মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থার পরিপন্থী। [আহকামুদ দু‘আ, পৃঃ ১৩।]
প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার পক্ষে মতামত দিলেও বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। কারণ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে দু‘আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমগণও করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদআত।
পর্যালোচনা :
যারা ফরয সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা পালন করে যাচ্ছেন তারা সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, এটা সালাতের কোন অংশ নয় এবং এভাবে দু‘আ করা জরুরিও নয় আর তা না করলে সালাতের কোন ক্ষতিও হয় না।
এখন কথা হলো, যে কাজটি জরুরি নয় এবং না করলে কোন ক্ষতি হয় না, সে কাজটিকে আমল বানিয়ে যারা নিয়মিত পালন করেন তারা বড়জোর এটাকে উত্তম বলতে পারেন। কিন্তু যে কাজটির বিপক্ষে বিশ্বমানের অনেক আলেম অবস্থান করেন এবং এটাকে স্পষ্ট বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এমন একটি কাজকে নিয়মিত পালন করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কারণ এটা পালন না করলে কোন গোনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না। কিন্তু যদি এটা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে এ আমলকারীর পরিণতি কত যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু বিদআতির আমল কবুল হয় না এবং পরকালে বিদআতিকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করেনি এমন একটি কাজকে উত্তম আমল মনে করে পালন করার চেয়ে পরিত্যাগ করাই উত্তম।
সম্মানিত ইমাম সাহেবদের প্রতি বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা মুসল্লিদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই মেনে নেবে। কেননা আমরাও এ বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর মুসল্লিদেরকে বুঝিয়েছি এবং এটা ছেড়ে দিয়েছি।
অনেকেই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিরা কী বলবে বা একটা ফিতনা সৃষ্টি হবে- এ ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু এমনটি করা উলামায়ে কেরামদের জন্য ঠিক নয়। কারণ উলামায়ে কেরাম এবং ইমামরা হচ্ছেন জাতির অভিভাবক। তারাই যদি সঠিক জিনিসটি জাতির সামনে তুলে না ধরেন তাহলে এ জাতি কখনোই সঠিক পথ পাবে না এবং এর দায় শুধু মুসল্লিদের নয়, আলেম-উলামাদের উপরেও বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হক বুঝার এবং হকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
ফরয সালাতের আগে ও পরে নবী ﷺ প্রতিদিন ১২ রাক‘আত সুন্নাত পড়তেন। এ সালাতকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (তাকিদপূর্ণ সুন্নাত) বলে। এ সালাতের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ حَبِيْبَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلّٰهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيْضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَه بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ
নবী ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যদি কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয সালাত ব্যতীত ১২ রাক‘আত নফল সালাত (যাকে আমরা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলি) আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫।]
এ বার রাক‘আত সালাত হচ্ছে,
১. ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত।
২. যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দু’রাক‘আত।
৩. মাগরিবের পর দু’রাক‘আত এবং
৪. এশার পর দু’রাক‘আত।
ফজরের সুন্নাত
সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ সুন্নাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। এমনকি সফর অবস্থায়ও তিনি এ সুন্নাত ছাড়তেন না। তিনি বলেন, ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত দুনিয়া এবং দুনিয়ার মাঝখানে যা কিছু রয়েছে সবকিছু থেকে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২১; তিরমিযী, হা/৪১৬; নাসাঈ, হা/১৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৩২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭১; জামেউস সগীর, হা/৫৮৩০; মিশকাত, হা/১১৬৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত হালকাভাবে আদায় করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৪; সহীহ বুখারী, হা/৬১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১১; মিশকাত, হা/১১৬০।] রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতের প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮; তিরমিযী, হা/৮৬৯; নাসাঈ, হা/৯৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১৭২৭; মিশকাত, হা/৮৩২।]
ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার পর ডান কাতে শয়ন করে একটু বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে দীর্ঘক্ষণ তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। শেষে যখন ফজরের সময় হতো তখন ফজরের সুন্নাত আদায় করে ডান কাতে শয়ন করে একটু বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন ইকামত দিতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬২; সহীহ বুখারী, হা/৬২৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১; আবু দাউদ, হা/১৩৩৮; নাসাঈ, হা/৬৮৫; মিশকাত, হা/১১৮৮।]
যারা ঘরে সুন্নাত পড়বে তাদের জন্য এই আমল। মসজিদে সুন্নাত আদায় করে শয়ন করার প্রমাণ নেই।
ফজরের সুন্নাত ফরয সালাতের পর আদায় করা যায় :
বিশুদ্ধমতে ফজরের ফরয আদায়ের পর পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা শরীয়তসম্মত। এটা ফজরের পর সালাত আদায়ের নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সুযোগ থাকলে এবং ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে তা আদায় করার জন্য সূর্য উঠার পর পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফঃ নং/২৮৫।]
যোহরের সুন্নাত :
যোহরের পূর্বে কোন বর্ণনায় এসেছে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত। আবার কোন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত পড়তেন এবং পরে দু’রাক‘আত পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৬৯; নাসাঈ, হা/১৭৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭৫৮।]
এজন্য কোন সময় দু’রাক‘আত এবং কোন সময় চার রাক‘আত পড়ে দু’হাদীসের উপর আমল করা যায়।
কেউ যদি যোহরের পূর্বে সুন্নাত আদায় করতে না পারে তবে ফরযের পর তা আদায় করতে পারবে। [তিরমিযী, হা/৪২৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৯০।]
আসরের সুন্নাত :
আসরের পূর্বে কোন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নেই। তবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যে সালাত আছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেক আযান এবং ইকামতের মধ্যে কমপক্ষে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৪; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩৮।]
আসরের ফরয আদায়ের পর কোন সুন্নাত বা নফল সালাত নেই।
মাগরিবের সুন্নাত :
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করবে সে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়তে পারবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা মাগরিবের পূর্বে সালাত আদায় করো, তোমরা মাগরিবের পূর্বে সালাত আদায় করো। তৃতীয়বারে বললেন, যে চায় তার জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/১১২৯; আবু দাউদ, হা/১২৮১।]
তাছাড়া অন্য হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সালাত রয়েছে। এ হাদীস দ্বারাও মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত সালাত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ সালাতে প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। [তিরমিযী, হা/৪৩১; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬৬।]
এশার সুন্নাত :
পূর্বের উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এশার সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব এবং এশার পরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত।
সুন্নাত সালাত আদায় করার জন্য স্থান পরিবর্তন করা উত্তম :
মু‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন এক সালাতের সাথে অন্য সালাতকে মিলিয়ে না দেই। যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭৯; আবু দাউদ, হা/১১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৫৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৪৩৫।]
এ হাদীস থেকে আলেমগণ বলেন, ফরয ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলা বা স্থান পরিবর্তন করা উচিত। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফঃ নং/২৮৮।]
সুন্নাতের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে তা পরে আদায় করা যায় :
যদি সুন্নাত সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে তা পরে আদায় করা যায়।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের ফরযের পর ব্যস্ততার কারণে দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে, আসরের পর তা আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০; আবু দাউদ, হা/১২৭৫; জামেউস সগীর, হা/১৩৮৫৪; মিশকাত, হা/১০৪৩।]
নফল বা সুন্নাত সালাত আদায়কালে ইকামত হয়ে গেলে করণীয় :
ইকামত দেয়ার সময় যদি কেউ নফল বা সুন্নাত সালাতের শেষ রাক‘আতে থাকে তবে সে হালকা করে সেই রাক‘আত পূর্ণ করে নেবে। আর যদি সালাত বেশি বাকী থাকে তবে সালাত ছেড়ে দিতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন সালাতের ইকামত দেয়া হয় তখন উক্ত ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৮-৭৯; আবু দাউদ, হা/১২৬৮; তিরমিযী, হা/৪২১; নাসাঈ, হা/৮৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৬১; মিশকাত, হা/১০৫৮।]
عَنْ أُمِّ حَبِيْبَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - يَقُوْلُ : مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلّٰهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيْضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَه بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ
নবী ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যদি কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয সালাত ব্যতীত ১২ রাক‘আত নফল সালাত (যাকে আমরা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলি) আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫।]
এ বার রাক‘আত সালাত হচ্ছে,
১. ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত।
২. যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দু’রাক‘আত।
৩. মাগরিবের পর দু’রাক‘আত এবং
৪. এশার পর দু’রাক‘আত।
ফজরের সুন্নাত
সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ সুন্নাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। এমনকি সফর অবস্থায়ও তিনি এ সুন্নাত ছাড়তেন না। তিনি বলেন, ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত দুনিয়া এবং দুনিয়ার মাঝখানে যা কিছু রয়েছে সবকিছু থেকে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২১; তিরমিযী, হা/৪১৬; নাসাঈ, হা/১৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৩২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭১; জামেউস সগীর, হা/৫৮৩০; মিশকাত, হা/১১৬৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত হালকাভাবে আদায় করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৪; সহীহ বুখারী, হা/৬১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১১; মিশকাত, হা/১১৬০।] রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতের প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮; তিরমিযী, হা/৮৬৯; নাসাঈ, হা/৯৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১৭২৭; মিশকাত, হা/৮৩২।]
ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার পর ডান কাতে শয়ন করে একটু বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে দীর্ঘক্ষণ তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। শেষে যখন ফজরের সময় হতো তখন ফজরের সুন্নাত আদায় করে ডান কাতে শয়ন করে একটু বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন ইকামত দিতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬২; সহীহ বুখারী, হা/৬২৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১; আবু দাউদ, হা/১৩৩৮; নাসাঈ, হা/৬৮৫; মিশকাত, হা/১১৮৮।]
যারা ঘরে সুন্নাত পড়বে তাদের জন্য এই আমল। মসজিদে সুন্নাত আদায় করে শয়ন করার প্রমাণ নেই।
ফজরের সুন্নাত ফরয সালাতের পর আদায় করা যায় :
বিশুদ্ধমতে ফজরের ফরয আদায়ের পর পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা শরীয়তসম্মত। এটা ফজরের পর সালাত আদায়ের নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সুযোগ থাকলে এবং ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে তা আদায় করার জন্য সূর্য উঠার পর পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফঃ নং/২৮৫।]
যোহরের সুন্নাত :
যোহরের পূর্বে কোন বর্ণনায় এসেছে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত। আবার কোন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত পড়তেন এবং পরে দু’রাক‘আত পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৬৯; নাসাঈ, হা/১৭৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭৫৮।]
এজন্য কোন সময় দু’রাক‘আত এবং কোন সময় চার রাক‘আত পড়ে দু’হাদীসের উপর আমল করা যায়।
কেউ যদি যোহরের পূর্বে সুন্নাত আদায় করতে না পারে তবে ফরযের পর তা আদায় করতে পারবে। [তিরমিযী, হা/৪২৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৯০।]
আসরের সুন্নাত :
আসরের পূর্বে কোন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নেই। তবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যে সালাত আছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেক আযান এবং ইকামতের মধ্যে কমপক্ষে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৪; সহীহ মুসলিম, হা/৮৩৮।]
আসরের ফরয আদায়ের পর কোন সুন্নাত বা নফল সালাত নেই।
মাগরিবের সুন্নাত :
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করবে সে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়তে পারবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা মাগরিবের পূর্বে সালাত আদায় করো, তোমরা মাগরিবের পূর্বে সালাত আদায় করো। তৃতীয়বারে বললেন, যে চায় তার জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/১১২৯; আবু দাউদ, হা/১২৮১।]
তাছাড়া অন্য হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সালাত রয়েছে। এ হাদীস দ্বারাও মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত সালাত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ সালাতে প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। [তিরমিযী, হা/৪৩১; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬৬।]
এশার সুন্নাত :
পূর্বের উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এশার সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব এবং এশার পরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত।
সুন্নাত সালাত আদায় করার জন্য স্থান পরিবর্তন করা উত্তম :
মু‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন এক সালাতের সাথে অন্য সালাতকে মিলিয়ে না দেই। যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭৯; আবু দাউদ, হা/১১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৫৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৪৩৫।]
এ হাদীস থেকে আলেমগণ বলেন, ফরয ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলা বা স্থান পরিবর্তন করা উচিত। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফঃ নং/২৮৮।]
সুন্নাতের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে তা পরে আদায় করা যায় :
যদি সুন্নাত সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে তা পরে আদায় করা যায়।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের ফরযের পর ব্যস্ততার কারণে দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে, আসরের পর তা আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০; আবু দাউদ, হা/১২৭৫; জামেউস সগীর, হা/১৩৮৫৪; মিশকাত, হা/১০৪৩।]
নফল বা সুন্নাত সালাত আদায়কালে ইকামত হয়ে গেলে করণীয় :
ইকামত দেয়ার সময় যদি কেউ নফল বা সুন্নাত সালাতের শেষ রাক‘আতে থাকে তবে সে হালকা করে সেই রাক‘আত পূর্ণ করে নেবে। আর যদি সালাত বেশি বাকী থাকে তবে সালাত ছেড়ে দিতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন সালাতের ইকামত দেয়া হয় তখন উক্ত ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৮-৭৯; আবু দাউদ, হা/১২৬৮; তিরমিযী, হা/৪২১; নাসাঈ, হা/৮৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৬১; মিশকাত, হা/১০৫৮।]
নিম্নোক্ত কারণসমূহের জন্য সালাত বাতিল হয়ে যায়।
১. সালাতরত অবস্থায় সজ্ঞানে কথা বলা। তবে যদি সে ব্যক্তি এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকে অথবা ভুলে যায়, তবে তার সালাত বাতিল হবে না।
২. সালাতের মধ্যে অধিক হাসলে। তবে হঠাৎ মুচকি হাসি-হাসলে সালাত বাতিল হবে না।
৩. সালাতরত অবস্থায় কোন কিছু আহার বা পান করলে।
৪. অযু ভঙ্গ হয়ে গেলে।
৫. সালাতরত অবস্থায় আমলে কাসির তথা সালাত বর্হিভুত কোন কাজ করলে।
৬. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে সালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা হলে।
১. সালাতরত অবস্থায় সজ্ঞানে কথা বলা। তবে যদি সে ব্যক্তি এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকে অথবা ভুলে যায়, তবে তার সালাত বাতিল হবে না।
২. সালাতের মধ্যে অধিক হাসলে। তবে হঠাৎ মুচকি হাসি-হাসলে সালাত বাতিল হবে না।
৩. সালাতরত অবস্থায় কোন কিছু আহার বা পান করলে।
৪. অযু ভঙ্গ হয়ে গেলে।
৫. সালাতরত অবস্থায় আমলে কাসির তথা সালাত বর্হিভুত কোন কাজ করলে।
৬. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে সালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা হলে।
১. সিজদার জায়গা হতে কিছু সরানো :
প্রয়োজনে সিজদার জায়গা হতে ধুলা, পাথর বা অন্যকিছু সরাতে পারবে। তবে তা একবার সুযোগ রয়েছে, বার বার নয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২০৭; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৬২।]
২. হাই উঠলে তা বন্ধ করা :
সালাতে হাই উঠলে মুখে হাত রেখে যথাসাধ্য তা বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এটা শয়তানের কাজ। শয়তান এরূপ দেখে হাসতে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২২৬; আবু দাউদ, হা/৫০২৮; ইবনে মাজাহ, হা/৯৬৮।]
৩. মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা :
সালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে বা মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে গেলে তা বন্ধ করা যাবে।
৪. কাঁদা :
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এলাম। তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। আর তাঁর ভেতর থেকে চুলোর উপর হাঁড়িতে পানি ফোটার মতো কান্নার শব্দ বের হচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, যাতার শব্দের মতো কান্নার শব্দ বের হচ্ছিল। [আবু দাউদ, হা/৯০৪; নাসাঈ, হা/১২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫; মিশকাত, হা/১০০০।]
৫. থুথু ফেলা :
যদি সালাতরত অবস্থায় থুথু ওঠে, তবে তা বাম পায়ের নীচে ফেলতে হবে এবং সালাম ফিরানোর পর তা মুছে ফেলতে হবে। অথবা রুমালে থুথু ফেলে পকেটেও রেখে দেয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে যেন তার সম্মুখ দিকে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ সালাতে থাকে ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে। আর তার ডান দিকেও যেন থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নিচে ফেলে, যা সে পরে দাফন করে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪১২; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০৫; আবু দাউদ, হা/৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৮৯৮।]
৬. চুলকানো :
দেহে অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হলে সালাত আদায় করা অবস্থাতেও চুলকানো বৈধ। কারণ না চুলকালে সালাত আদায়কারীর একাগ্রতা নষ্ট হয়।
৭. প্রয়োজনবোধে চলা :
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজ গৃহে দরজার খিল বন্ধ করে নফল সালাত আদায় করছিলেন। তখন আয়েশা (রাঃ) এসে খুলতে বললে তিনি চলে গিয়ে তার জন্য দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর পুনরায় নিজের মুসাল্লায় ফিরে গেলেন। অবশ্য দরজা ছিল কিবলার দিকেই। [তিরমিযী, হা/৬০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৭৩; মিশকাত, হা/১০০৫।]
৮. শিশুকে কোলে নিয়ে সালাত আদায় করা :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে আসলেন। তখন আবুল আসের শিশুকন্যা উমামা তাঁর কাঁধে ছিল। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি রুকূ করতেন, তখন তাকে নিচে নামিয়ে নিতেন। আবার যখন তিনি সিজদা থেকে উঠতেন, তখন তাকে কাঁধে তুলে নিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৯৬; নাসাঈ, হা/১২০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮৫০৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৯৮৪।]
৯. শিশুদের ঝগড়া থামানো :
আবুস সাহবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা বনী মুত্তালিবের দুটি ছোট্ট মেয়ে মারামারি করতে করতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে এসে তাঁর হাঁটু ধরে ফেলল। তিনি সালাত পড়ছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি উভয়কে দুদিকে সরিয়ে দিলেন। [আবু দাউদ, হা/৭১৬, ৭১৭; নাসাঈ, হা/৭২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৯৫।]
১০. খোঁচা দিয়ে কাউকে সরে যেতে ইঙ্গিত করা :
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাতরত অবস্থায় তাঁর সামনে কিবলার দিকে পা মেলে শুয়ে থাকতেন। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন খোঁচা দিয়ে তার পা সরিয়ে নিতে ইঙ্গিত করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৬; সহীহ বুখারী, হা/৩৮২, ১২০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৩।]
১১. ইমামের কিরাআত সংশোধন করা :
ইমাম সাহেব যদি কোন আয়াত ভুলে যান বা থেমে যান অথবা ভুল পড়েন তাহলে লোকমা দিয়ে তা মনে করিয়ে দেয়া বা সংশোধন করে দেয়া যাবে। ইমাম সাহেবকে সতর্ক করতে পুরুষদের জন্য ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা এবং মহিলাদের জন্য হাতে শব্দ করা জায়েয রয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/১২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬; আবু দাউদ, হা/৯৪১; মিশকাত, হা/৯৮৮।]
১২. প্রয়োজনে কাপড় বা পাগড়ীর উপর সিজদা করা :
অতি গ্রীষ্ম বা শীতের সময় সিজদার স্থানে কপাল রাখা কষ্টকর হলে চাদর, আস্তীন বা পাগড়ীর বাড়তি অংশ ঐ স্থানে রেখে সিজদা করা বৈধ। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৮৬; আবু দাউদ, হা/২৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬৩।।]
১৩. জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করা :
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খালি পায়ে ও জুতা পায়ে উভয় অবস্থাতেই সালাত আদায় করতে দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৬৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯২৮।]
অবশ্য জুতায় ময়লা বা নাপাকী লেগে থাকলে তা পরিধান করে সালাত হয় না।
১৪. মাসহাফ হাতে রেখে দেখে কুরআন পাঠ করা :
নফল সালাতে দীর্ঘ কিয়ামের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সূরা মুখস্ত না থাকলে অথবা তারাবীর সালাত পড়ানোর জন্য হাফেজ না থাকলে কুরআন দেখে পাঠ করা যায়। [সহীহ বুখারী, কৃতদাসের ইমামত অধ্যায়, ১/১৭৮।]
প্রয়োজনে সিজদার জায়গা হতে ধুলা, পাথর বা অন্যকিছু সরাতে পারবে। তবে তা একবার সুযোগ রয়েছে, বার বার নয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২০৭; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৬২।]
২. হাই উঠলে তা বন্ধ করা :
সালাতে হাই উঠলে মুখে হাত রেখে যথাসাধ্য তা বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এটা শয়তানের কাজ। শয়তান এরূপ দেখে হাসতে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২২৬; আবু দাউদ, হা/৫০২৮; ইবনে মাজাহ, হা/৯৬৮।]
৩. মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা :
সালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে বা মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে গেলে তা বন্ধ করা যাবে।
৪. কাঁদা :
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এলাম। তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। আর তাঁর ভেতর থেকে চুলোর উপর হাঁড়িতে পানি ফোটার মতো কান্নার শব্দ বের হচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, যাতার শব্দের মতো কান্নার শব্দ বের হচ্ছিল। [আবু দাউদ, হা/৯০৪; নাসাঈ, হা/১২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫; মিশকাত, হা/১০০০।]
৫. থুথু ফেলা :
যদি সালাতরত অবস্থায় থুথু ওঠে, তবে তা বাম পায়ের নীচে ফেলতে হবে এবং সালাম ফিরানোর পর তা মুছে ফেলতে হবে। অথবা রুমালে থুথু ফেলে পকেটেও রেখে দেয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে যেন তার সম্মুখ দিকে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ সালাতে থাকে ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে। আর তার ডান দিকেও যেন থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নিচে ফেলে, যা সে পরে দাফন করে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪১২; সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০৫; আবু দাউদ, হা/৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৮৯৮।]
৬. চুলকানো :
দেহে অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হলে সালাত আদায় করা অবস্থাতেও চুলকানো বৈধ। কারণ না চুলকালে সালাত আদায়কারীর একাগ্রতা নষ্ট হয়।
৭. প্রয়োজনবোধে চলা :
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজ গৃহে দরজার খিল বন্ধ করে নফল সালাত আদায় করছিলেন। তখন আয়েশা (রাঃ) এসে খুলতে বললে তিনি চলে গিয়ে তার জন্য দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর পুনরায় নিজের মুসাল্লায় ফিরে গেলেন। অবশ্য দরজা ছিল কিবলার দিকেই। [তিরমিযী, হা/৬০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৭৩; মিশকাত, হা/১০০৫।]
৮. শিশুকে কোলে নিয়ে সালাত আদায় করা :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে আসলেন। তখন আবুল আসের শিশুকন্যা উমামা তাঁর কাঁধে ছিল। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি রুকূ করতেন, তখন তাকে নিচে নামিয়ে নিতেন। আবার যখন তিনি সিজদা থেকে উঠতেন, তখন তাকে কাঁধে তুলে নিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৯৬; নাসাঈ, হা/১২০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮৫০৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৯৮৪।]
৯. শিশুদের ঝগড়া থামানো :
আবুস সাহবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা বনী মুত্তালিবের দুটি ছোট্ট মেয়ে মারামারি করতে করতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে এসে তাঁর হাঁটু ধরে ফেলল। তিনি সালাত পড়ছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি উভয়কে দুদিকে সরিয়ে দিলেন। [আবু দাউদ, হা/৭১৬, ৭১৭; নাসাঈ, হা/৭২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৯৫।]
১০. খোঁচা দিয়ে কাউকে সরে যেতে ইঙ্গিত করা :
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাতরত অবস্থায় তাঁর সামনে কিবলার দিকে পা মেলে শুয়ে থাকতেন। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন খোঁচা দিয়ে তার পা সরিয়ে নিতে ইঙ্গিত করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৬; সহীহ বুখারী, হা/৩৮২, ১২০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭৩।]
১১. ইমামের কিরাআত সংশোধন করা :
ইমাম সাহেব যদি কোন আয়াত ভুলে যান বা থেমে যান অথবা ভুল পড়েন তাহলে লোকমা দিয়ে তা মনে করিয়ে দেয়া বা সংশোধন করে দেয়া যাবে। ইমাম সাহেবকে সতর্ক করতে পুরুষদের জন্য ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা এবং মহিলাদের জন্য হাতে শব্দ করা জায়েয রয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/১২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬; আবু দাউদ, হা/৯৪১; মিশকাত, হা/৯৮৮।]
১২. প্রয়োজনে কাপড় বা পাগড়ীর উপর সিজদা করা :
অতি গ্রীষ্ম বা শীতের সময় সিজদার স্থানে কপাল রাখা কষ্টকর হলে চাদর, আস্তীন বা পাগড়ীর বাড়তি অংশ ঐ স্থানে রেখে সিজদা করা বৈধ। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৮৬; আবু দাউদ, হা/২৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬৩।।]
১৩. জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করা :
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খালি পায়ে ও জুতা পায়ে উভয় অবস্থাতেই সালাত আদায় করতে দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৬৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯২৮।]
অবশ্য জুতায় ময়লা বা নাপাকী লেগে থাকলে তা পরিধান করে সালাত হয় না।
১৪. মাসহাফ হাতে রেখে দেখে কুরআন পাঠ করা :
নফল সালাতে দীর্ঘ কিয়ামের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সূরা মুখস্ত না থাকলে অথবা তারাবীর সালাত পড়ানোর জন্য হাফেজ না থাকলে কুরআন দেখে পাঠ করা যায়। [সহীহ বুখারী, কৃতদাসের ইমামত অধ্যায়, ১/১৭৮।]
১. এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখা :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, লোকেরা যেন অবশ্যই সালাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকানো হতে বিরত হয়, নচেৎ তাদের চক্ষু ছিনিয়ে নেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৮৯; মিশকাত, হা/৯৮৩।]
২. চোখ বন্ধ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর দৃষ্টি থাকত সিজদার জায়গায়। তাশাহ্হুদে বসা অবস্থায় তিনি তর্জনী আঙ্গুলের উপর নজর রাখতেন। এ ছাড়া তিনি চোখ খুলে রাখতেন বলেই আয়েশা (রাঃ) এর দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিযুক্ত পর্দা তাঁর সম্মুখ থেকে সরিয়ে নিতে বলেছিলেন। সুতরাং সুন্নাত হলো, চোখ খোলা রেখে সালাত আদায় করা।
তবে যদি একান্ত প্রয়োজন পড়ে; যেমন সামনে এমন কোন জিনিস থাকে, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে অথবা মনোযোগ কেড়ে নেয় তাহলে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা জায়েয আছে।
৩. কোন ছবি, মূর্তি সামনে রাখা :
কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি, মূর্তি সামনে রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। কারণ এতে শিরকের গন্ধ থাকে এবং অমুসলিমদের সাদৃশ্য হয়ে যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) আয়েশা (রাঃ) এর একটি (দরজার) পর্দা ছিল, যার দ্বারা তিনি ঘরকে আড়াল করতেন । নবী ﷺ ej‡jb, †n Av‡qkv! G c`©vwU Ly‡j †d‡jv| †Kbbv Gi Qwe¸‡jv mvjv‡Zi g‡a¨ Avgvi bh‡i c‡o| [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪০৫৪; জামেউস সগীর, হা/২২৮৫; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৪. প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে সালাত আদায় করা :
কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি অঙ্কিত কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করা নিষেধ।
৫. আঙ্গুলসমূহকে তাশবীক করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যখন সুন্দরভাবে অযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন সে যেন অবশ্যই তার (দুই হাতের) আঙ্গুলসমূহকে পরস্পরের মধ্যে না ঢুকায়। কারণ তখন সে সালাত অবস্থায় থাকে। [আবু দাউদ, হা/৫৬২; তিরমিযী, হা/৩৮৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/২০৬; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, হা/৩৩৩৪।]
৬. আঙ্গুল ফুটানো :
সালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো মাকরূহ। কারণ, এটি একটি বাজে ও নিরর্থক কাজ এবং অপর সালাত আদায়কারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
৭. কোমরে হাত রাখা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করার সময় কোমরে হাত রাখতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২১৯, ১২২০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৫; মিশকাত, হা/৯৮১।]
৮. কুকুরের মতো বসা :
দুই পায়ের নলা খাড়া রেখে, হাত দুটিকে মাটিতে রেখে এবং দু’নিতম্বের উপর ভর করে কুকুরের মতো বসা নিষিদ্ধ।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন সালাতের মধ্যে কুকুরের ন্যায় হাত মাটিতে রেখে না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০।]
৯. টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা :
পুরুষদের জন্য তাদের কাপড়, লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট প্রভৃতি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। তাছাড়া মহান বাদশাহর সামনে সালাতে দাঁড়িয়ে অহংকারীদের মতো এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা অধিকভাবে নিষিদ্ধ।
১০. মুখ ঢাকা :
সালাতরত অবস্থায় নারী-পুরুষ সকলেরই মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতরত অবস্থায় মুখ ঢাকতে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৬৪৩; ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হা/৭৬৪।]
১১. কাপড় গুটানো :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি ৭ অঙ্গ দ্বারা সিজদা করি এবং কাপড় ও চুল যেন না গুটাই। [সহীহ বুখারী, হা/৮১২; সহীহ মুসলিম, হা/১১২৪; নাসাঈ, হা/১১১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৮২।]
অবশ্য কাপড় খুলে গেলে তা পরিধান করা উক্ত নিষেধের আওতাভুক্ত নয়।
সালাত পড়তে পড়তে খুব শীত লাগলে এবং পাশে কাপড় থাকলে সালাত আদায়কারী সালাতের মধ্যেই তা গায়ে জড়িয়ে নিতে পারবে। কারণ না পরলে তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে। অনুরূপ খুব গরম লাগলেও অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কাপড় সালাতরত অবস্থাতেই খুলে ফেলতে পারবে।
১২. কাঁধ খোলা রাখা :
কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উম্মে সালামা (রাঃ) এর ঘরে একই কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যার দু’মাথা কাঁধের উপর ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৮০।]
১৩. ইমামের পেছনে জোরে কিছু পাঠ করা :
অনেকে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা, দু‘আ ইত্যাদি পড়ার সময় গুনগুন করে বা ফিসফিস করে। এটা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, অবশ্যই সালাত আদায়কারী তার প্রতিপালকের সাথে নিরালায় আলাপ করে। সুতরাং সে কী নিয়ে আলাপ করছে তা যেন লক্ষ্য করে (অর্থের প্রতি লক্ষ্য রাখে)। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের পাশে কুরআন জোরে না পড়ে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯২৮; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৪. খাবার সামনে রেখে সালাত আদায় করা :
খাবার সামনে উপস্থিত থাকলে এবং খাওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা থাকলে তা খেয়ে সালাত আদায় করা উচিত। নতুবা সালাতে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি রাতের খাবার উপস্থিত করা হয় এবং সালাতের সময় উপস্থিত হয়ে যায় তাহলে আগে খাবার শেষ করে নাও। তারপর সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১২৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬৬।]
১৫. প্রস্রাব-পায়খানা আটকে রেখে সালাত আদায় করা :
প্রস্রাব-পায়খানার চাপ থাকলে সেই অবস্থায় সালাত আদায় করা মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, খাবার সামনে রেখে সালাত নেই। আর যাকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ পেয়েছে তারও সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১২৭৩; সহীহ ইবণে খুযায়মা, হা/৯৩৩; বায়হাকী, হা/৪৮১৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১০১৫; জামেউস সগীর, হা/১৩৪৬৬; মিশকাত, হা/১০৫৭।]
১৬. তন্দ্রা অবস্থায় সালাত আদায় করা :
ঘুমের ভাব থাকলে সালাত আদায় করা উচিত নয়। বরং একটু ঘুমিয়ে নিয়ে সালাত আদায় করা উচিত। অবশ্য ফরয সালাতের ক্ষেত্রে জামাআত ও নির্দিষ্ট সময় খেয়াল রাখা একান্ত জরুরি।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, লোকেরা যেন অবশ্যই সালাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকানো হতে বিরত হয়, নচেৎ তাদের চক্ষু ছিনিয়ে নেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৮৯; মিশকাত, হা/৯৮৩।]
২. চোখ বন্ধ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর দৃষ্টি থাকত সিজদার জায়গায়। তাশাহ্হুদে বসা অবস্থায় তিনি তর্জনী আঙ্গুলের উপর নজর রাখতেন। এ ছাড়া তিনি চোখ খুলে রাখতেন বলেই আয়েশা (রাঃ) এর দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিযুক্ত পর্দা তাঁর সম্মুখ থেকে সরিয়ে নিতে বলেছিলেন। সুতরাং সুন্নাত হলো, চোখ খোলা রেখে সালাত আদায় করা।
তবে যদি একান্ত প্রয়োজন পড়ে; যেমন সামনে এমন কোন জিনিস থাকে, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে অথবা মনোযোগ কেড়ে নেয় তাহলে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা জায়েয আছে।
৩. কোন ছবি, মূর্তি সামনে রাখা :
কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি, মূর্তি সামনে রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। কারণ এতে শিরকের গন্ধ থাকে এবং অমুসলিমদের সাদৃশ্য হয়ে যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) আয়েশা (রাঃ) এর একটি (দরজার) পর্দা ছিল, যার দ্বারা তিনি ঘরকে আড়াল করতেন । নবী ﷺ ej‡jb, †n Av‡qkv! G c`©vwU Ly‡j †d‡jv| †Kbbv Gi Qwe¸‡jv mvjv‡Zi g‡a¨ Avgvi bh‡i c‡o| [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪০৫৪; জামেউস সগীর, হা/২২৮৫; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৪. প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে সালাত আদায় করা :
কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি অঙ্কিত কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করা নিষেধ।
৫. আঙ্গুলসমূহকে তাশবীক করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যখন সুন্দরভাবে অযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন সে যেন অবশ্যই তার (দুই হাতের) আঙ্গুলসমূহকে পরস্পরের মধ্যে না ঢুকায়। কারণ তখন সে সালাত অবস্থায় থাকে। [আবু দাউদ, হা/৫৬২; তিরমিযী, হা/৩৮৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/২০৬; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, হা/৩৩৩৪।]
৬. আঙ্গুল ফুটানো :
সালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো মাকরূহ। কারণ, এটি একটি বাজে ও নিরর্থক কাজ এবং অপর সালাত আদায়কারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
৭. কোমরে হাত রাখা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করার সময় কোমরে হাত রাখতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২১৯, ১২২০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৫; মিশকাত, হা/৯৮১।]
৮. কুকুরের মতো বসা :
দুই পায়ের নলা খাড়া রেখে, হাত দুটিকে মাটিতে রেখে এবং দু’নিতম্বের উপর ভর করে কুকুরের মতো বসা নিষিদ্ধ।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন সালাতের মধ্যে কুকুরের ন্যায় হাত মাটিতে রেখে না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০।]
৯. টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা :
পুরুষদের জন্য তাদের কাপড়, লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট প্রভৃতি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। তাছাড়া মহান বাদশাহর সামনে সালাতে দাঁড়িয়ে অহংকারীদের মতো এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা অধিকভাবে নিষিদ্ধ।
১০. মুখ ঢাকা :
সালাতরত অবস্থায় নারী-পুরুষ সকলেরই মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতরত অবস্থায় মুখ ঢাকতে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৬৪৩; ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হা/৭৬৪।]
১১. কাপড় গুটানো :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি ৭ অঙ্গ দ্বারা সিজদা করি এবং কাপড় ও চুল যেন না গুটাই। [সহীহ বুখারী, হা/৮১২; সহীহ মুসলিম, হা/১১২৪; নাসাঈ, হা/১১১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৮২।]
অবশ্য কাপড় খুলে গেলে তা পরিধান করা উক্ত নিষেধের আওতাভুক্ত নয়।
সালাত পড়তে পড়তে খুব শীত লাগলে এবং পাশে কাপড় থাকলে সালাত আদায়কারী সালাতের মধ্যেই তা গায়ে জড়িয়ে নিতে পারবে। কারণ না পরলে তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে। অনুরূপ খুব গরম লাগলেও অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কাপড় সালাতরত অবস্থাতেই খুলে ফেলতে পারবে।
১২. কাঁধ খোলা রাখা :
কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উম্মে সালামা (রাঃ) এর ঘরে একই কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যার দু’মাথা কাঁধের উপর ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১৮০।]
১৩. ইমামের পেছনে জোরে কিছু পাঠ করা :
অনেকে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা, দু‘আ ইত্যাদি পড়ার সময় গুনগুন করে বা ফিসফিস করে। এটা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, অবশ্যই সালাত আদায়কারী তার প্রতিপালকের সাথে নিরালায় আলাপ করে। সুতরাং সে কী নিয়ে আলাপ করছে তা যেন লক্ষ্য করে (অর্থের প্রতি লক্ষ্য রাখে)। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের পাশে কুরআন জোরে না পড়ে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯২৮; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৪. খাবার সামনে রেখে সালাত আদায় করা :
খাবার সামনে উপস্থিত থাকলে এবং খাওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা থাকলে তা খেয়ে সালাত আদায় করা উচিত। নতুবা সালাতে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি রাতের খাবার উপস্থিত করা হয় এবং সালাতের সময় উপস্থিত হয়ে যায় তাহলে আগে খাবার শেষ করে নাও। তারপর সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১২৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬৬।]
১৫. প্রস্রাব-পায়খানা আটকে রেখে সালাত আদায় করা :
প্রস্রাব-পায়খানার চাপ থাকলে সেই অবস্থায় সালাত আদায় করা মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, খাবার সামনে রেখে সালাত নেই। আর যাকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ পেয়েছে তারও সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১২৭৩; সহীহ ইবণে খুযায়মা, হা/৯৩৩; বায়হাকী, হা/৪৮১৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১০১৫; জামেউস সগীর, হা/১৩৪৬৬; মিশকাত, হা/১০৫৭।]
১৬. তন্দ্রা অবস্থায় সালাত আদায় করা :
ঘুমের ভাব থাকলে সালাত আদায় করা উচিত নয়। বরং একটু ঘুমিয়ে নিয়ে সালাত আদায় করা উচিত। অবশ্য ফরয সালাতের ক্ষেত্রে জামাআত ও নির্দিষ্ট সময় খেয়াল রাখা একান্ত জরুরি।
১. বিশেষ তিন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ اٰذَانَهُمُ الْعَبْدُ الْاٰبِقُ حَتّٰى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهٗ كَارِهُوْنَ
আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কান অতিক্রম করে না।
(ক) পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে,
(খ) এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করেছে,
(গ) সেই ইমাম! যাকে (তার মন্দকর্মের কারণে) লোকেরা অপছন্দ করে। [তিরমিযী, হা/৩৬০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবরানী, হা/৮০১৬; বায়হাকী, হা/৫১২৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৪১৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৮৭; জামেউস সগীর, হা/৫৩৬৮; মিশকাত, হা/১১২২।]
২. আরো বিশেষ তিন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ، وَلَا عَدْلٌ : عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোকের ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করেন না- (১) মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, (২) দান করে খোটাদানকারী ও (৩) তাকদীর অস্বীকারকারী। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪২৫; জামেউস সগীর, হা/৫৩৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫১৩; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৭৮৫।]
৩. গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ اَزْوَاجِ النَّبِىِّ ﷺ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : مَنْ اَتٰى عَرَّافًا فَسَاَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
সাফিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় স্ত্রী হতে বর্ণনা করেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসবে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তির চল্লিশ রাত-(দিনের) সালাত কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৮৯; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৯৫২।]
৪. মদ্যপানকারীর সালাত কবুল হয় না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْخَمْرُ اُمُّ الْخَبَائِثِ وَمَنْ شَرِبَهَا لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فَاِنْ مَاتَ وَهِىَ فِىْ بَطْنِهٖ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল খবীসের মা। যে মদ পান করে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। তার পেটে মদ থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহেলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করবে। [দারেমী, হা/৪৬৬৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৮৫৪।]
৫. রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে পিঠ সোজা না করলে সালাত কবুল হয় না :
عَنْ أَبِى مَسْعُوْدٍ الْبَدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: لَا تُجْزِئُ صَلَاةُ الرَّجُلِ حَتّٰى يُقِيْمَ ظَهْرَهٗ فِى الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ
আবু মাসঊদ আল বাদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সে ব্যক্তির সালাত সঠিক হয় না, যে ব্যক্তি রুকূ ও সিজদাতে নিজের পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৮১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৪।]
৬. অকারণে একাকী সালাত আদায়কারীর সালাত কবুল হয় না :
জামাআতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এই ওয়াজিব ত্যাগ করলে তার সালাত কবুল নাও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামাআতে এসে সালাত আদায় করে না, কোন ওজর না থাকলে সে ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না। [আবু দাউদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫২৪৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; জামেউস সগীর, হা/১২৪০৯। ইমাম নববী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, হাদীসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।]
৭. অপর মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারী ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهٖ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হয়, তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না। [আবু দাউদ, হা/৪২৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬২৮২।]
৮. পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না :
عَنِ ابْنَ عُمَرَ . قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না এবং খিয়ানতের সম্পদ থেকেও সাদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৮; ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
৯. জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنِ الْحَارِثَ الْأَشْعَرِىَّ ...... قَالَ النَّبِىُّ : وَأَنَا اٰمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِىْ بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيْدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِه إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنِ ادَّعٰى دَعْوٰى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهٗ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ قَالَ : وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ فَادْعُوْا بِدَعْوٰى اللهِ الَّذِىْ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ عِبَادَ اللهِ
হারেস আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি জিনিসের নির্দেশ দিচ্ছি, যেগুলোর নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দিয়েছেন। সেগুলো হলো- আমীরের কথা শ্রবণ করা, তার আনুগত্য করা, জিহাদ করা, হিজরত করা এবং মুসলিম জামা‘আতের সাথে থাকা। কেননা যে ব্যক্তি মুসলিম জামাআত থেকে এক বিগত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলে- যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের মতাদর্শের দিকে আহবান করল, সে জাহান্নামের দিকে আহবান করল। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। তোমরা আল্লাহর আহবানে সাড়া দাও, যিনি তোমাদের নাম মুমিন-মুসলিম রেখেছেন- হে আল্লাহর বান্দারা! [তিরমিযী, হা/২৮৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৯৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫; জামেউস সগীর, হা/২৬০৪।]
১০. বিদআতকারীর সালাত কবুল হয় না :
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮৯; সহীহ বুখারী, হা/১৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৭; জামেউস সগীর, হা/১১৬৩১।]
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ اٰذَانَهُمُ الْعَبْدُ الْاٰبِقُ حَتّٰى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهٗ كَارِهُوْنَ
আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কান অতিক্রম করে না।
(ক) পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে,
(খ) এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করেছে,
(গ) সেই ইমাম! যাকে (তার মন্দকর্মের কারণে) লোকেরা অপছন্দ করে। [তিরমিযী, হা/৩৬০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবরানী, হা/৮০১৬; বায়হাকী, হা/৫১২৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৪১৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৮৭; জামেউস সগীর, হা/৫৩৬৮; মিশকাত, হা/১১২২।]
২. আরো বিশেষ তিন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ، وَلَا عَدْلٌ : عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোকের ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করেন না- (১) মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, (২) দান করে খোটাদানকারী ও (৩) তাকদীর অস্বীকারকারী। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪২৫; জামেউস সগীর, হা/৫৩৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫১৩; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৭৮৫।]
৩. গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ اَزْوَاجِ النَّبِىِّ ﷺ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : مَنْ اَتٰى عَرَّافًا فَسَاَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
সাফিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় স্ত্রী হতে বর্ণনা করেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসবে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তির চল্লিশ রাত-(দিনের) সালাত কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৮৯; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৯৫২।]
৪. মদ্যপানকারীর সালাত কবুল হয় না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْخَمْرُ اُمُّ الْخَبَائِثِ وَمَنْ شَرِبَهَا لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فَاِنْ مَاتَ وَهِىَ فِىْ بَطْنِهٖ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল খবীসের মা। যে মদ পান করে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। তার পেটে মদ থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহেলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করবে। [দারেমী, হা/৪৬৬৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৮৫৪।]
৫. রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে পিঠ সোজা না করলে সালাত কবুল হয় না :
عَنْ أَبِى مَسْعُوْدٍ الْبَدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -ﷺ -: لَا تُجْزِئُ صَلَاةُ الرَّجُلِ حَتّٰى يُقِيْمَ ظَهْرَهٗ فِى الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ
আবু মাসঊদ আল বাদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সে ব্যক্তির সালাত সঠিক হয় না, যে ব্যক্তি রুকূ ও সিজদাতে নিজের পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৮১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৪।]
৬. অকারণে একাকী সালাত আদায়কারীর সালাত কবুল হয় না :
জামাআতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এই ওয়াজিব ত্যাগ করলে তার সালাত কবুল নাও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামাআতে এসে সালাত আদায় করে না, কোন ওজর না থাকলে সে ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না। [আবু দাউদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫২৪৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; জামেউস সগীর, হা/১২৪০৯। ইমাম নববী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, হাদীসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।]
৭. অপর মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারী ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهٖ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হয়, তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না। [আবু দাউদ, হা/৪২৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬২৮২।]
৮. পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না :
عَنِ ابْنَ عُمَرَ . قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না এবং খিয়ানতের সম্পদ থেকেও সাদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৮; ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
৯. জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় না :
عَنِ الْحَارِثَ الْأَشْعَرِىَّ ...... قَالَ النَّبِىُّ : وَأَنَا اٰمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِىْ بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيْدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِه إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنِ ادَّعٰى دَعْوٰى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهٗ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ قَالَ : وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ فَادْعُوْا بِدَعْوٰى اللهِ الَّذِىْ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ عِبَادَ اللهِ
হারেস আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি জিনিসের নির্দেশ দিচ্ছি, যেগুলোর নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দিয়েছেন। সেগুলো হলো- আমীরের কথা শ্রবণ করা, তার আনুগত্য করা, জিহাদ করা, হিজরত করা এবং মুসলিম জামা‘আতের সাথে থাকা। কেননা যে ব্যক্তি মুসলিম জামাআত থেকে এক বিগত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলে- যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের মতাদর্শের দিকে আহবান করল, সে জাহান্নামের দিকে আহবান করল। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। তোমরা আল্লাহর আহবানে সাড়া দাও, যিনি তোমাদের নাম মুমিন-মুসলিম রেখেছেন- হে আল্লাহর বান্দারা! [তিরমিযী, হা/২৮৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৯৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫; জামেউস সগীর, হা/২৬০৪।]
১০. বিদআতকারীর সালাত কবুল হয় না :
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮৯; সহীহ বুখারী, হা/১৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৭; জামেউস সগীর, হা/১১৬৩১।]
পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগতভাবে কোন পার্থক্য নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা সেভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৫৮; মিশকাত হা/৬৮৩।]
মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আ আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত হা/৯৪৮, ১৪০৯।]
ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর সাহীহুল বুখারীতে ‘‘তাশাহ্হুদে বসার পদ্ধতি’’ নামক বাবের পর উল্লেখ করেন,
وَكَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِيْ صَلَاتِهَا جَلْسَةً الرَّجُلِ وَكَانَتْ فَقِيْهَةً
অর্থাৎ উম্মুদ দারদা (রাঃ) সালাতে পুরুষদের ন্যায় বসতেন। আর তিনি ছিলেন একজন ফকীহা তথা মাসআলার ব্যাপারে অভিজ্ঞ।
নারীদের রুকূ করার সময় মাথা সামান্য নীচু করা ও সিজদার সময় হাত ও পেট একত্রে জড়িয়ে রাখার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। [বায়হাকী, হা/৩০১৬; সিলসিলা যঈফাহ, হা/২৬৫২ পৃঃ।]
অনুরূপ নারীরা বুকে হাত বাঁধবে আর পুরুষরা নাভির নীচে হাত বাঁধবে- এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায়নি। বরং সহীহ হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের আলোকে নারী-পুরুষ সকলেই বুকের উপর হাত বাঁধবে।
অনেকের ধারণা পুরুষদের সালাত শেষ হওয়ার আগে ঘরে মহিলাদের সালাত হবে না। এ ধারণা সঠিক নয়। সালাতের সময় হলেই মহিলারা সালাত আদায় করতে পারবে।
পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো :
১. জামাআতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জন্য জামাআতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু মহিলাদের জন্য তা ওয়াজিব নয়। সুতরাং তারা ইচ্ছা করলে জামাআতে উপস্থিত হতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে উপস্থিত নাও হতে পারে। কিমত্মু তারা যদি জামাআতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মসজিদে গমন করতে চায় তবে তাদেরকে বাধা দেয়া নিষেধ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৬৫; সহীহ বুখারী, হা/৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৮; আবু দাউদ, হা/৫৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬৫৫।]
২. লোকমা দেয়ার ক্ষেত্রে :
ইমাম সালাতের মধ্যে ভুল করলে পুরুষরা ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ বলে লোকমা দেবে। কিমত্মু মহিলারা হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করবে।
৩. কাতার করার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো প্রথম কাতার। পক্ষান্তরে মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো পেছনের কাতার।
৩. সতর ঢাকার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জন্য সালাতের মধ্যে নাভি থেকে হাঁটু পর্যমত্ম এবং উভয় কাঁধ ঢেকে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে নারীদের ক্ষেত্রে তাদের মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি ব্যতীত শরীরের অন্যান্য সকল অঙ্গ ঢেকে রাখতে হবে।
৪. নির্জনতার ক্ষেত্রে :
পুরুষরা ফরয সালাত প্রকাশ্যে মসজিদে আদায় করবে। কিমত্মু মহিলাদের জন্য যথাসম্ভব নির্জনতা অবলম্বন করাই উত্তম।
৫. আযান ও ইকামতের ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জামাআতের উদ্দেশ্যে আযান ও ইকামত দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে ইকামত দেয়ার অনুমতি রয়েছে।
৬. ইমামের দাঁড়ানোর স্থানের ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জামাআতে প্রথম কাতারের সামনে মাঝ বরাবর ইমামকে একাকী দাঁড়াতে হয়। আর মহিলাদের জামাআতে ইমামকে প্রথম কাতারের মাঝখানে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে, পুরুষের মতো একাকী নয়।
৭. কাতারে একাকী দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে :
পুরুষ একজন হলে ইমামের সাথে ডান পার্শ্বে দাঁড়াতে হয়; কিমত্মু মহিলা একজন হলে ইমামের পেছনে দাঁড়াতে হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৭; নাসাঈ, হা/৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১০২; বায়হাকী, হা/৫০০৩; মিশকাত, হা/১১০৮।]
মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আ আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত হা/৯৪৮, ১৪০৯।]
ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর সাহীহুল বুখারীতে ‘‘তাশাহ্হুদে বসার পদ্ধতি’’ নামক বাবের পর উল্লেখ করেন,
وَكَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِيْ صَلَاتِهَا جَلْسَةً الرَّجُلِ وَكَانَتْ فَقِيْهَةً
অর্থাৎ উম্মুদ দারদা (রাঃ) সালাতে পুরুষদের ন্যায় বসতেন। আর তিনি ছিলেন একজন ফকীহা তথা মাসআলার ব্যাপারে অভিজ্ঞ।
নারীদের রুকূ করার সময় মাথা সামান্য নীচু করা ও সিজদার সময় হাত ও পেট একত্রে জড়িয়ে রাখার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। [বায়হাকী, হা/৩০১৬; সিলসিলা যঈফাহ, হা/২৬৫২ পৃঃ।]
অনুরূপ নারীরা বুকে হাত বাঁধবে আর পুরুষরা নাভির নীচে হাত বাঁধবে- এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায়নি। বরং সহীহ হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের আলোকে নারী-পুরুষ সকলেই বুকের উপর হাত বাঁধবে।
অনেকের ধারণা পুরুষদের সালাত শেষ হওয়ার আগে ঘরে মহিলাদের সালাত হবে না। এ ধারণা সঠিক নয়। সালাতের সময় হলেই মহিলারা সালাত আদায় করতে পারবে।
পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো :
১. জামাআতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জন্য জামাআতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু মহিলাদের জন্য তা ওয়াজিব নয়। সুতরাং তারা ইচ্ছা করলে জামাআতে উপস্থিত হতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে উপস্থিত নাও হতে পারে। কিমত্মু তারা যদি জামাআতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মসজিদে গমন করতে চায় তবে তাদেরকে বাধা দেয়া নিষেধ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৬৫; সহীহ বুখারী, হা/৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৮; আবু দাউদ, হা/৫৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬৫৫।]
২. লোকমা দেয়ার ক্ষেত্রে :
ইমাম সালাতের মধ্যে ভুল করলে পুরুষরা ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ বলে লোকমা দেবে। কিমত্মু মহিলারা হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করবে।
৩. কাতার করার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো প্রথম কাতার। পক্ষান্তরে মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো পেছনের কাতার।
৩. সতর ঢাকার ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জন্য সালাতের মধ্যে নাভি থেকে হাঁটু পর্যমত্ম এবং উভয় কাঁধ ঢেকে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে নারীদের ক্ষেত্রে তাদের মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি ব্যতীত শরীরের অন্যান্য সকল অঙ্গ ঢেকে রাখতে হবে।
৪. নির্জনতার ক্ষেত্রে :
পুরুষরা ফরয সালাত প্রকাশ্যে মসজিদে আদায় করবে। কিমত্মু মহিলাদের জন্য যথাসম্ভব নির্জনতা অবলম্বন করাই উত্তম।
৫. আযান ও ইকামতের ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জামাআতের উদ্দেশ্যে আযান ও ইকামত দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে ইকামত দেয়ার অনুমতি রয়েছে।
৬. ইমামের দাঁড়ানোর স্থানের ক্ষেত্রে :
পুরুষদের জামাআতে প্রথম কাতারের সামনে মাঝ বরাবর ইমামকে একাকী দাঁড়াতে হয়। আর মহিলাদের জামাআতে ইমামকে প্রথম কাতারের মাঝখানে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে, পুরুষের মতো একাকী নয়।
৭. কাতারে একাকী দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে :
পুরুষ একজন হলে ইমামের সাথে ডান পার্শ্বে দাঁড়াতে হয়; কিমত্মু মহিলা একজন হলে ইমামের পেছনে দাঁড়াতে হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৭; নাসাঈ, হা/৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১০২; বায়হাকী, হা/৫০০৩; মিশকাত, হা/১১০৮।]
যদি মহিলারা মসজিদের জামাআতে শরীক হয়ে সালাত আদায় করতে চায় তাহলে তাতে অনুমতি আছে। অবশ্য এর জন্য কয়েকটি শর্ত আছে :
১. মসজিদের পথে যেন কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকে।
২. মহিলারা যেন পর্দার সাথে আসে।
৩. তারা যেন কোন ধরনের সুগন্ধি লাগিয়ে না আসে।
৪. এতে যেন তার স্বামীর অনুমতি থাকে।
স্বামীর জন্যও উচিত হলো, তার স্ত্রী যদি মসজিদে যেতে অনুমতি চায় তাহলে তাকে বাধা না দেয়া। মহিলাগণ মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুমিন মহিলারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করার জন্য দেহে চাদর জড়িয়ে হাযির হতেন। অতঃপর সালাত শেষ হলে তারা নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন, তখন অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৯১; আবু দাউদ, হা/৪২৩; তিরমিযী, হা/১৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৬৯।]
তাছাড়া মহিলারা মসজিদে গেলে জুমু‘আর খুৎবা এবং অন্যান্য দ্বীনি আলোচনা শ্রবণ করা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। এতে তাদের ঈমান ও আমলের উন্নতি হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে রাত্রে মসজিদে আসার অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও। [সহীহ বুখারী, অন্ধকার ও রাত্রে মহিলাদের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সম্পর্কে অনুচ্ছেদ; সহীহ মুসলিম, হা/১০২০; আবু দাউদ, হা/৫৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৫৬৯।]
অপর হাদীসে তিনি বলেন, তোমাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৪৭১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৫; আবু দাউদ, হা/৫৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪।]
যে মহিলারা জামাআতে হাযির হবে তাদের জন্য জরুরি হলো, ইমামের সালাম ফেরানোর সাথে সাথে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া। যাতে পুরুষদের সাথে মসজিদের দরজায় বা পথে কোন ভিড় করতে না হয়। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে মহিলারা ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে চলে যেত। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাথে অন্যান্য লোকেরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠে যেতেন তখন অন্যান্য লোকেরাও উঠে যেত। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত, হা/৯৪৮।]
অবশ্য যদি মহিলাদের সালাত আদায়ের জন্য অথবা তাদের যাতায়াতের জন্য পর্দাযুক্ত পৃথক কোন ব্যবস্থা থাকে, তবে তাড়াতাড়ি মসজিদ হতে উঠে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
১. মসজিদের পথে যেন কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকে।
২. মহিলারা যেন পর্দার সাথে আসে।
৩. তারা যেন কোন ধরনের সুগন্ধি লাগিয়ে না আসে।
৪. এতে যেন তার স্বামীর অনুমতি থাকে।
স্বামীর জন্যও উচিত হলো, তার স্ত্রী যদি মসজিদে যেতে অনুমতি চায় তাহলে তাকে বাধা না দেয়া। মহিলাগণ মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুমিন মহিলারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করার জন্য দেহে চাদর জড়িয়ে হাযির হতেন। অতঃপর সালাত শেষ হলে তারা নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন, তখন অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৯১; আবু দাউদ, হা/৪২৩; তিরমিযী, হা/১৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৬৯।]
তাছাড়া মহিলারা মসজিদে গেলে জুমু‘আর খুৎবা এবং অন্যান্য দ্বীনি আলোচনা শ্রবণ করা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। এতে তাদের ঈমান ও আমলের উন্নতি হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে রাত্রে মসজিদে আসার অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও। [সহীহ বুখারী, অন্ধকার ও রাত্রে মহিলাদের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সম্পর্কে অনুচ্ছেদ; সহীহ মুসলিম, হা/১০২০; আবু দাউদ, হা/৫৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৫৬৯।]
অপর হাদীসে তিনি বলেন, তোমাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৪৭১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৫; আবু দাউদ, হা/৫৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪।]
যে মহিলারা জামাআতে হাযির হবে তাদের জন্য জরুরি হলো, ইমামের সালাম ফেরানোর সাথে সাথে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া। যাতে পুরুষদের সাথে মসজিদের দরজায় বা পথে কোন ভিড় করতে না হয়। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে মহিলারা ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে চলে যেত। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাথে অন্যান্য লোকেরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠে যেতেন তখন অন্যান্য লোকেরাও উঠে যেত। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত, হা/৯৪৮।]
অবশ্য যদি মহিলাদের সালাত আদায়ের জন্য অথবা তাদের যাতায়াতের জন্য পর্দাযুক্ত পৃথক কোন ব্যবস্থা থাকে, তবে তাড়াতাড়ি মসজিদ হতে উঠে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
১. ফরয সালাতের জন্য জামাআত ওয়াজিব। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত, ঈদ, ইস্তিস্কা ও তারাবীর সালাতের জন্য জামাআত সুন্নাত। কাযা সালাতও জামাআতে আদায় করা যায়। রমাযান মাসে তাহাজ্জুদ ও বিতরের সালাতও জামাআতে আদায় করা যায়। আবার অতিরিক্ত নফল সালাতও জামাআত করে পড়া যায়।
২. জামাআতে হাযির হওয়ার জন্য বাসা থেকে অযু করে বের হওয়া ভালো। কারণ বাসা থেকে অযু করে সালাতে যাওয়ার ফযীলত হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৮৭; জামেউস সগীর, হা/১১১২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২।]
৩. এ সময় সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা কর্তব্য। শরীর থেকে সর্বপ্রকার দুর্গন্ধ দূর করে নেওয়া জরুরি। সেই সাথে পোশাকের, মুখের, ঘামের, কাঁচা পিঁয়াজ ও রসূনের দুর্গন্ধ দূর করে নেয়া আবশ্যক। যাতে সে গন্ধে ফেরেশতা ও পাশের সালাত আদায়কারী কষ্ট না পান এবং ঐ গন্ধওয়ালার প্রতি সালাত আদায়কারীদের মনে ঘৃণা সৃষ্টি না হয়।
উল্লেখ্য যে, ধূমপান করা ইসলামী শরীয়তে হারাম। তারপরও অনেকে ধূমপান করে থাকে। এ ব্যাপারে কুরআন এবং হাদীসের অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ﴾
আর তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিসকে হালাল করা হয়েছে এবং অপবিত্র জিনিসকে হারাম করা হয়েছে। (সূরা আরাফ- ১৫৭)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করেছেন। ধূমপান পবিত্র খাদ্যবসত্মুর মধ্যে পড়ে না- বিধায় ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপদেশ মানে তার জন্য কুরআনের একটি আয়তই যথেষ্ট। কিমত্মু যে উপদেশ মানে না তার জন্য একটি বইও যথেষ্ট নয়।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, অনেক সালাত আদায়কারী ব্যক্তিও ধূমপান করে থাকে। কিমত্মু তারা এটাকে হারাম মনে না করলেও মাকরূহ মনে করে থাকে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো অনেক লোক ধূমপান করেই মসজিদে সালাত পড়তে চলে যায়। অথচ মুখে থাকে বিড়ি-সিগারেটের দুর্গন্ধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেখানে কাঁচা পিয়াজ খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন সেখানে ধূমপান করে মসজিদে যাওয়া কেমন হবে। আল্লাহ ধূমপায়ীদেরকে হেদায়াত দান করুন। আমীন
৪. ধীরে-সুস্থে জামাআতে শরীক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা যাবে না।
৫. ইমাম ছাড়া কমপক্ষে একজন সালাত আদায়কারী হলে জামাআত গঠিত হবে; চাই সে সালাত আদায়কারী জ্ঞানসম্পন্ন শিশু হোক অথবা মহিলা। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) কে নিয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; আবু দাউদ, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/১১০৬।] অপর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরে যেতে ইচ্ছুক দু’জন লোককে বলেছিলেন, সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৮০; আবু দাউদ, হা/৫৮৯; তিরমিযী, হা/২০৫; নাসাঈ, হা/৬৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/৯৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৩০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৯৩; মিশকাত, হা/৬৮২।]
৬. জামাআত করার মতো লোক থাকলেও শেষ রাক‘আতে রুকূর পর বা শেষ তাশাহ্হুদে জামাআতে শামিল না হয়ে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দ্বিতীয় জামাআত করা উত্তম নয়। উত্তম হলো ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই জামাআতে অংশগ্রহণ করা।
৭. মসজিদের জামাআত ছুটে গেলে বা জামাআত শেষ হওয়ার পর মসজিদে এলে যদি অন্য লোক থাকে তাহলে তাদের সাথে মিলে একজন ইমাম হয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করা যাবে।
৮. যদি আর কোন লোকের আশা না থাকে তবে একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করা উত্তম। কিমত্মু বাড়িতে জামাআত করার মতো লোক না থাকলে ফরয সালাত মসজিদে পড়াই উত্তম।
যথাসময়ে জামাআতে দাঁড়ানো :
ইকামত শুরু হয়ে গেলে এবং ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুক্তাদীদের বসে থাকা অথবা তিলাওয়াত করা বা মুনাজাতে মশগুল থাকা অথবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত নয়। বরং অতিসত্ত্বর উঠে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে সালাত শুরু করার জন্য প্রসত্মুতি নেয়া উচিত।
ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমায় অংশগ্রহণ করার একটি পৃথক মর্যাদা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ৪০ দিন জামাআতে সালাত আদায় করবে এবং তাতে তাহরীমার তাকবীরও পাবে সেই ব্যক্তির জন্য দুটি মুক্তি লিখা হয়; (একটি হচ্ছে) জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (আর অপরটি হচ্ছে) মুনাফিকী থেকে মুক্তি। [তিরমিযী, হা/২৪১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৬১৫; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৯; জামেউস সগীর, হা/১১৩১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৯৭৯; মিশকাত, হা/১১৪৪।]
ইমাম থাকতে তার জায়গায় তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং কেউ যেন কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে না বসে। [তিরমিযী, হা/২৭৭২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৪; আবু দাউদ, হা/৫৮২; নাসাঈ, হা/৭৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/৯৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫১৬; মিশকাত, হা/১১১৭।]
অবশ্য ইমাম দেরি করলে মুক্তাদীদের জামাআত করার অধিকার আছে। কেউ একা বাড়িতে সালাত আদায় করার পর যদি মসজিদে এসে দেখে যে, জামাআত শুরু হবে বা জামাআত চলছে তখন তার জন্য মুস্তাহাব হলো জামাআতের ফযীলত লাভের জন্য সালাতে শরীক হওয়া। আর এটা তার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে।
জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত পড়া যাবে না :
জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত সালাতে মশগুল থাকাও বৈধ নয়। ফজরের সুন্নাত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া যাবে না।
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের সালাত পড়াচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে জামাআতে শামিল হলো। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার সালাত কোনটা? যেটা আমাদের সাথে পড়লে সেটা, নাকি যেটা তুমি একা পড়লে সেটা? [নাসাঈ, হা/৮৬৮; আবু দাউদ, হা/১২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৭৯৬, সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৯১; বায়হাকী, হা/৪৩২১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১০৭০।]
কারো সুন্নাত পড়ার সময় যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। সালাত ছাড়ার সময় সালাম ফিরানোর প্রয়োজন নেই। বরং নিয়ত বাতিল করলেই সালাত থেকে বের হওয়া যাবে।
২. জামাআতে হাযির হওয়ার জন্য বাসা থেকে অযু করে বের হওয়া ভালো। কারণ বাসা থেকে অযু করে সালাতে যাওয়ার ফযীলত হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৮৭; জামেউস সগীর, হা/১১১২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২।]
৩. এ সময় সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা কর্তব্য। শরীর থেকে সর্বপ্রকার দুর্গন্ধ দূর করে নেওয়া জরুরি। সেই সাথে পোশাকের, মুখের, ঘামের, কাঁচা পিঁয়াজ ও রসূনের দুর্গন্ধ দূর করে নেয়া আবশ্যক। যাতে সে গন্ধে ফেরেশতা ও পাশের সালাত আদায়কারী কষ্ট না পান এবং ঐ গন্ধওয়ালার প্রতি সালাত আদায়কারীদের মনে ঘৃণা সৃষ্টি না হয়।
উল্লেখ্য যে, ধূমপান করা ইসলামী শরীয়তে হারাম। তারপরও অনেকে ধূমপান করে থাকে। এ ব্যাপারে কুরআন এবং হাদীসের অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ﴾
আর তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিসকে হালাল করা হয়েছে এবং অপবিত্র জিনিসকে হারাম করা হয়েছে। (সূরা আরাফ- ১৫৭)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করেছেন। ধূমপান পবিত্র খাদ্যবসত্মুর মধ্যে পড়ে না- বিধায় ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপদেশ মানে তার জন্য কুরআনের একটি আয়তই যথেষ্ট। কিমত্মু যে উপদেশ মানে না তার জন্য একটি বইও যথেষ্ট নয়।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, অনেক সালাত আদায়কারী ব্যক্তিও ধূমপান করে থাকে। কিমত্মু তারা এটাকে হারাম মনে না করলেও মাকরূহ মনে করে থাকে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো অনেক লোক ধূমপান করেই মসজিদে সালাত পড়তে চলে যায়। অথচ মুখে থাকে বিড়ি-সিগারেটের দুর্গন্ধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেখানে কাঁচা পিয়াজ খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন সেখানে ধূমপান করে মসজিদে যাওয়া কেমন হবে। আল্লাহ ধূমপায়ীদেরকে হেদায়াত দান করুন। আমীন
৪. ধীরে-সুস্থে জামাআতে শরীক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা যাবে না।
৫. ইমাম ছাড়া কমপক্ষে একজন সালাত আদায়কারী হলে জামাআত গঠিত হবে; চাই সে সালাত আদায়কারী জ্ঞানসম্পন্ন শিশু হোক অথবা মহিলা। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) কে নিয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; আবু দাউদ, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/১১০৬।] অপর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরে যেতে ইচ্ছুক দু’জন লোককে বলেছিলেন, সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৮০; আবু দাউদ, হা/৫৮৯; তিরমিযী, হা/২০৫; নাসাঈ, হা/৬৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/৯৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৩০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৯৩; মিশকাত, হা/৬৮২।]
৬. জামাআত করার মতো লোক থাকলেও শেষ রাক‘আতে রুকূর পর বা শেষ তাশাহ্হুদে জামাআতে শামিল না হয়ে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দ্বিতীয় জামাআত করা উত্তম নয়। উত্তম হলো ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই জামাআতে অংশগ্রহণ করা।
৭. মসজিদের জামাআত ছুটে গেলে বা জামাআত শেষ হওয়ার পর মসজিদে এলে যদি অন্য লোক থাকে তাহলে তাদের সাথে মিলে একজন ইমাম হয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করা যাবে।
৮. যদি আর কোন লোকের আশা না থাকে তবে একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাআত করে সালাত আদায় করা উত্তম। কিমত্মু বাড়িতে জামাআত করার মতো লোক না থাকলে ফরয সালাত মসজিদে পড়াই উত্তম।
যথাসময়ে জামাআতে দাঁড়ানো :
ইকামত শুরু হয়ে গেলে এবং ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুক্তাদীদের বসে থাকা অথবা তিলাওয়াত করা বা মুনাজাতে মশগুল থাকা অথবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত নয়। বরং অতিসত্ত্বর উঠে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে সালাত শুরু করার জন্য প্রসত্মুতি নেয়া উচিত।
ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমায় অংশগ্রহণ করার একটি পৃথক মর্যাদা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সমত্মুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ৪০ দিন জামাআতে সালাত আদায় করবে এবং তাতে তাহরীমার তাকবীরও পাবে সেই ব্যক্তির জন্য দুটি মুক্তি লিখা হয়; (একটি হচ্ছে) জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (আর অপরটি হচ্ছে) মুনাফিকী থেকে মুক্তি। [তিরমিযী, হা/২৪১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৬১৫; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৯; জামেউস সগীর, হা/১১৩১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৯৭৯; মিশকাত, হা/১১৪৪।]
ইমাম থাকতে তার জায়গায় তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং কেউ যেন কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে না বসে। [তিরমিযী, হা/২৭৭২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৪; আবু দাউদ, হা/৫৮২; নাসাঈ, হা/৭৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/৯৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫১৬; মিশকাত, হা/১১১৭।]
অবশ্য ইমাম দেরি করলে মুক্তাদীদের জামাআত করার অধিকার আছে। কেউ একা বাড়িতে সালাত আদায় করার পর যদি মসজিদে এসে দেখে যে, জামাআত শুরু হবে বা জামাআত চলছে তখন তার জন্য মুস্তাহাব হলো জামাআতের ফযীলত লাভের জন্য সালাতে শরীক হওয়া। আর এটা তার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে।
জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত পড়া যাবে না :
জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত সালাতে মশগুল থাকাও বৈধ নয়। ফজরের সুন্নাত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া যাবে না।
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের সালাত পড়াচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে জামাআতে শামিল হলো। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার সালাত কোনটা? যেটা আমাদের সাথে পড়লে সেটা, নাকি যেটা তুমি একা পড়লে সেটা? [নাসাঈ, হা/৮৬৮; আবু দাউদ, হা/১২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৭৯৬, সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৯১; বায়হাকী, হা/৪৩২১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১০৭০।]
কারো সুন্নাত পড়ার সময় যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। সালাত ছাড়ার সময় সালাম ফিরানোর প্রয়োজন নেই। বরং নিয়ত বাতিল করলেই সালাত থেকে বের হওয়া যাবে।
পথের ধারে বা বাজারের মসজিদে বারবার জামাআত হওয়াতেও দোষের কিছু নেই। বরং যারা যখন আসবে তারা তখনই জামাআত সহকারে সালাত আদায় করবে।
মসজিদ ছোট হওয়ার কারণে প্রথম জামাআতে বিরাট সংখ্যক মানুষের এক সাথে সালাত আদায় করা সম্ভব না হলে, জামাআত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় জামাআত করাও বৈধ।
মসজিদের নির্ধারিত ইমামের ইমামতিতে জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ার পর জামাআত হওয়ার মতো লোক মসজিদে এলে জামাআতের ফযীলত নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের দ্বিতীয় জামাআত করা বৈধ।
একদা জামাআত হয়ে গেলে এক ব্যক্তি মসজিদে এল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, কে আছে যে এর জন্য সাদাকা করবে? (এর সওয়াব বর্ধন করবে?) এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে সালাত আদায় করল। [আবু দাউদ, হা/৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৮; দারেমী, হা/১৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/৪৪১৭; মিশকাত, হা/১১৪৬।]
তবে প্রথম জামাআতে উপস্থিত হওয়াতে অলসতা করা সমীচীন নয়। কারণ আযান শোনামাত্র মসজিদে উপস্থিত হওয়ার জন্য তৎপর হওয়া ওয়াজিব।
মসজিদ ছোট হওয়ার কারণে প্রথম জামাআতে বিরাট সংখ্যক মানুষের এক সাথে সালাত আদায় করা সম্ভব না হলে, জামাআত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় জামাআত করাও বৈধ।
মসজিদের নির্ধারিত ইমামের ইমামতিতে জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ার পর জামাআত হওয়ার মতো লোক মসজিদে এলে জামাআতের ফযীলত নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের দ্বিতীয় জামাআত করা বৈধ।
একদা জামাআত হয়ে গেলে এক ব্যক্তি মসজিদে এল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, কে আছে যে এর জন্য সাদাকা করবে? (এর সওয়াব বর্ধন করবে?) এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে সালাত আদায় করল। [আবু দাউদ, হা/৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৮; দারেমী, হা/১৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/৪৪১৭; মিশকাত, হা/১১৪৬।]
তবে প্রথম জামাআতে উপস্থিত হওয়াতে অলসতা করা সমীচীন নয়। কারণ আযান শোনামাত্র মসজিদে উপস্থিত হওয়ার জন্য তৎপর হওয়া ওয়াজিব।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদ নির্মাণের অনেক ফযীলত রয়েছে। মসজিদ নির্মাণের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১২১৭, ১২১৮, ৭৬৬১, ৭৬৬২; তিরমিযী, হা/৩১৮; নাসাঈ, হা/৬৮৮; আবু দাউদ, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩৪; জামেউস সগীর, হা/১১০৭৫।] মসজিদ বেশি কারুকার্য করা মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এটাকে কিয়ামতের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪৪৯; নাসাঈ, হা/৬৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৩১।] মসজিদের কতিপয় আদব নিচে উল্লেখ করা হলো :
মসজিদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা :
মসজিদকে সবসময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ﴾
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তেকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা :
মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডানদিক থেকে শুরু করা উত্তম। ইবনে উমর (রাঃ) মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে শুরু করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪০; আবু দাউদ, হা/৪১৪২; মিশকাত, হা/৬০৮; নাসাঈ, হা/৪২১; ইবনে মাজাহ, হা/৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৭১; মিশকাত, হা/৪০০।]
মসজিদে প্রবেশ করার সময় দু‘আ পাঠ করা :
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা প্রথমে রেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সব দু‘আ পাঠ করতেন তার মধ্যে একটি হলো -
اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রাহমাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِفْتَحْ لِىْ তুমি আমার জন্য খুলে দাও أَبْوَابَ দরজাসমূহ رَحْمَتِكَ তোমার রহমতের।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৫; তিরমিযী, হা/৩১৫; নাসাঈ, হা/৭২৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৫৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৫২।]
এছাড়াও মসজিদে প্রবেশের একাধিক দু‘আ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসসমূহ একত্রিত করলে মসজিদে প্রবেশের দু‘আ হবে নিম্নরূপ-
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ : আঊযুবিল্লা-হিল আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালা-তু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্। আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আব্ওয়া-বা রাহমাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাচ্ছি بِاللهِ আল্লাহর কাছে الْعَظِيْمِ যিনি মহান। وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান থেকে। بِسْمِ اللهِ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ আল্লাহর রাসূলের প্রতি। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! افْتَحْ لِىْ তুমি আমার জন্য খুলে দাও أَبْوَابَ দরজাসমূহ رَحْمَتِكَ তোমার রহমতের।
অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৬৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬০৬; মিশকাত, হা/৭৪৯।]
প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া :
মসজিদে ঢুকে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নিতে হবে, কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
মসজিদে বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা করা :
একজন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যমত্ম মসজিদে সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ পর্যমত্ম সে সালাতরত আছে বলে গণ্য হবে। কেউ মসজিদে বসে থাকলে অযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতারা দু‘আ করতে থাকেন এ বলে যে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! তার উপর রহম করুন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮৩; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫, ৪৭৭, ৬৫৯, ৩২২৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৪০, ১৫৪৩; তিরমিযী, হা/৩৩০; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৯।]
মসজিদ ত্যাগ করার সময় দু‘আ করা :
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রেখে বের হতে হবে এবং সে সময় নিম্নলিখিত দু‘আসমূহ পাঠ করতে হবে :
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إِنِّى أَسْأَلُكَ নিশ্চয় আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি مِنْ فَضْلِكَ তোমার অনুগ্রহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মিশকাত, হা/৭০৩।]
অন্য হাদীসে নিম্নের দু‘আটির কথাও বর্ণিত হয়েছে,
بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি ওয়াস্সালা-তু ওয়াস্সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিনফাযলিক, আল্লা-হুম্মা আ‘ছিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ (বের হওয়া) শুরু করছি اللهِ আল্লাহর নামে। وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ আল্লাহর রাসূলের উপর। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إِنِّىْ أَسْأَلُكَ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি مِنْ فَضْلِكَ তোমার অনুগ্রহ। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعْصِمْنِىْ আমাকে হেফাযত করুন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান থেকে।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর। হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৩; জামেউস সগীর, হা/৫১৫।]
মসজিদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা :
মসজিদকে সবসময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ﴾
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তেকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা :
মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডানদিক থেকে শুরু করা উত্তম। ইবনে উমর (রাঃ) মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে শুরু করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪০; আবু দাউদ, হা/৪১৪২; মিশকাত, হা/৬০৮; নাসাঈ, হা/৪২১; ইবনে মাজাহ, হা/৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৭১; মিশকাত, হা/৪০০।]
মসজিদে প্রবেশ করার সময় দু‘আ পাঠ করা :
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা প্রথমে রেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সব দু‘আ পাঠ করতেন তার মধ্যে একটি হলো -
اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রাহমাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِفْتَحْ لِىْ তুমি আমার জন্য খুলে দাও أَبْوَابَ দরজাসমূহ رَحْمَتِكَ তোমার রহমতের।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৫; তিরমিযী, হা/৩১৫; নাসাঈ, হা/৭২৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৫৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৫২।]
এছাড়াও মসজিদে প্রবেশের একাধিক দু‘আ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসসমূহ একত্রিত করলে মসজিদে প্রবেশের দু‘আ হবে নিম্নরূপ-
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ : আঊযুবিল্লা-হিল আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালা-তু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্। আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আব্ওয়া-বা রাহমাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাচ্ছি بِاللهِ আল্লাহর কাছে الْعَظِيْمِ যিনি মহান। وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান থেকে। بِسْمِ اللهِ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ আল্লাহর রাসূলের প্রতি। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! افْتَحْ لِىْ তুমি আমার জন্য খুলে দাও أَبْوَابَ দরজাসমূহ رَحْمَتِكَ তোমার রহমতের।
অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৬৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬০৬; মিশকাত, হা/৭৪৯।]
প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া :
মসজিদে ঢুকে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নিতে হবে, কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
মসজিদে বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা করা :
একজন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যমত্ম মসজিদে সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ পর্যমত্ম সে সালাতরত আছে বলে গণ্য হবে। কেউ মসজিদে বসে থাকলে অযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতারা দু‘আ করতে থাকেন এ বলে যে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! তার উপর রহম করুন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৮৩; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫, ৪৭৭, ৬৫৯, ৩২২৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৪০, ১৫৪৩; তিরমিযী, হা/৩৩০; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৯।]
মসজিদ ত্যাগ করার সময় দু‘আ করা :
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রেখে বের হতে হবে এবং সে সময় নিম্নলিখিত দু‘আসমূহ পাঠ করতে হবে :
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إِنِّى أَسْأَلُكَ নিশ্চয় আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি مِنْ فَضْلِكَ তোমার অনুগ্রহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মিশকাত, হা/৭০৩।]
অন্য হাদীসে নিম্নের দু‘আটির কথাও বর্ণিত হয়েছে,
بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি ওয়াস্সালা-তু ওয়াস্সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিনফাযলিক, আল্লা-হুম্মা আ‘ছিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ (বের হওয়া) শুরু করছি اللهِ আল্লাহর নামে। وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ আল্লাহর রাসূলের উপর। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إِنِّىْ أَسْأَلُكَ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি مِنْ فَضْلِكَ তোমার অনুগ্রহ। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعْصِمْنِىْ আমাকে হেফাযত করুন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান থেকে।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর। হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৩; জামেউস সগীর, হা/৫১৫।]
মসজিদে হারানো বসত্মু তালাশ করা :
মসজিদে হারানো বসত্মু তালাশ করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন লোককে মসজিদে কোন হারানো বসত্মু (উচ্চৈঃস্বরে) তালাশ করতে শুনবে, তখন সে বলবে, আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন। কেননা মসজিদ এজন্য তৈরি হয়নি। [তিরমিযী, হা/১৩২১; জামেউস সগীর, হা/৫৭৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৩৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৬৭; মিশকাত, হা/৩৯৯।]
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা ও ঝগড়া করা :
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এই দুই কাজ আল্লাহর যিকিরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মসজিদে তর্ক বিতর্ক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ও ঝগড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাতে শব্দ উচ্চ হয় এবং ঝগড়াকারীদের মুখ দিয়ে এমন কথাও বেরিয়ে যায়, যা মসজিদের আদবের পরিপন্থী।
মসজিদে থুথু ফেলা নিষেধ :
মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গোনাহ। আর কাফফারা হলো তা মুছে ফেলা। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫৯; আবু দাউদ, হা/৪৭৫; তিরমিযী, হা/৫৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪৫৮; জামেউস সগীর, হা/৫১৯৬; মিশকাত, হা/৭০৮।]
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা :
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা উচিত নয়। তবে ইলিম বা সদুপদেশের ক্ষেত্রে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা যাবে।
মসজিদে হারানো বসত্মু তালাশ করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন লোককে মসজিদে কোন হারানো বসত্মু (উচ্চৈঃস্বরে) তালাশ করতে শুনবে, তখন সে বলবে, আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন। কেননা মসজিদ এজন্য তৈরি হয়নি। [তিরমিযী, হা/১৩২১; জামেউস সগীর, হা/৫৭৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৩৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৬৭; মিশকাত, হা/৩৯৯।]
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা ও ঝগড়া করা :
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এই দুই কাজ আল্লাহর যিকিরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মসজিদে তর্ক বিতর্ক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ও ঝগড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাতে শব্দ উচ্চ হয় এবং ঝগড়াকারীদের মুখ দিয়ে এমন কথাও বেরিয়ে যায়, যা মসজিদের আদবের পরিপন্থী।
মসজিদে থুথু ফেলা নিষেধ :
মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গোনাহ। আর কাফফারা হলো তা মুছে ফেলা। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫৯; আবু দাউদ, হা/৪৭৫; তিরমিযী, হা/৫৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪৫৮; জামেউস সগীর, হা/৫১৯৬; মিশকাত, হা/৭০৮।]
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা :
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা উচিত নয়। তবে ইলিম বা সদুপদেশের ক্ষেত্রে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা যাবে।
কবরকে কেন্দ্র করে যে মসজিদ নির্মাণ করা হয় বা বিভিন্ন মাজারকে কেন্দ্র করে যেসব মসজিদ নির্মিত হয় এবং মাজার হতে প্রাপ্ত সম্পদ দিয়ে যেসব মসজিদ পরিচালিত হয় সেসব মসজিদে সালাত আদায় করা জায়েয হবে না। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের প্রতি লানত বর্ষণ করুন। কেননা তারা নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩০, ১৩৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১২১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২২১; নাসাঈ, হা/২০৪৭; জামেউস সগীর, হা/৯২৩৯; মিশকাত, হা/৭১২।]
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মৃত্যুর ৫ দিন পূর্বে বলতে শুনেছি যে, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা নবী ও সৎ লোকদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা আমার কবরকে মসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলাম। [আবু দাউদ, হা/২০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৯০; মিশকাত, হা/৯২৬।]
মসজিদে কবর থাকলে সেখানে সালাত আদায় করা :
কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদগুলোকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় :
প্রথম শ্রেণি : প্রথমে কবর ছিল, পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা। সম্ভব হলে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা।
দ্বিতীয় শ্রেণি : প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, পরে সেখানে কোন মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে কবর খনন করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উঠিয়ে কোন মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা। কিমত্মু এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে সালাত আদায় করা জায়েয। তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ কবরের দিকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অথবা কবরস্থান ও মসজিদের মাঝে কোন অন্তরাল বিদ্যমান থাকে। কিমত্মু এ অন্তরালের ক্ষেত্রে মসজিদের দেয়াল যথেষ্ট নয়। কেননা তা মসজিদেরই অন্তর্ভুক্ত। বরং সেখানে পৃথকভাবে ইট অথবা টিন জাতীয় কোন কিছু দ্বারা অন্তরাল তৈরি করতে হবে। আর মসজিদ ও কবরস্থানে প্রবেশের দরজা একই হওয়া যাবে না।
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মৃত্যুর ৫ দিন পূর্বে বলতে শুনেছি যে, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা নবী ও সৎ লোকদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা আমার কবরকে মসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলাম। [আবু দাউদ, হা/২০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৯০; মিশকাত, হা/৯২৬।]
মসজিদে কবর থাকলে সেখানে সালাত আদায় করা :
কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদগুলোকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় :
প্রথম শ্রেণি : প্রথমে কবর ছিল, পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা। সম্ভব হলে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা।
দ্বিতীয় শ্রেণি : প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, পরে সেখানে কোন মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে কবর খনন করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উঠিয়ে কোন মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা। কিমত্মু এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে সালাত আদায় করা জায়েয। তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ কবরের দিকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অথবা কবরস্থান ও মসজিদের মাঝে কোন অন্তরাল বিদ্যমান থাকে। কিমত্মু এ অন্তরালের ক্ষেত্রে মসজিদের দেয়াল যথেষ্ট নয়। কেননা তা মসজিদেরই অন্তর্ভুক্ত। বরং সেখানে পৃথকভাবে ইট অথবা টিন জাতীয় কোন কিছু দ্বারা অন্তরাল তৈরি করতে হবে। আর মসজিদ ও কবরস্থানে প্রবেশের দরজা একই হওয়া যাবে না।
কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অংশ এবং সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। কাতার সোজা না করলে আল্লাহ তা‘আলা মুসল্লিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেন। আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের শুরুতে আমাদের কাঁধগুলো হাত দিয়ে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করো এবং বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। নতুবা তোমাদের অন্তরগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০০০; নাসাঈ, হা/৮১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৩; মিশকাত হা/১০৮৮।]
সামনের কাতারগুলো আগে পূর্ণ করতে হবে। কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে এভাবেই কাতার করে থাকেন। [আবু দাউদ হা/৬৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২৮৯; বায়হাকী, হা/৪৯৭০।]
কাতার কীভাবে সোজা করবে :
কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করতে হবে। আর এভাবে কাতারে দাঁড়ালে খুব সহজেই কাতার সোজা হয়ে যায়। তাছাড়া কাতার সোজা করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এটা সুন্নাত। কিমত্মু বর্তমান সমাজে অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা নিজেদের দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁক করে কাতারে দাঁড়ান, পাশের মুসল্লির কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মিলান না। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল সব সময় একই জায়গায় চেপে রাখেন। এভাবে কাতারে দাঁড়ানোর কোন প্রমাণ সহীহ হাদীসসমূহে নেই। উপরমত্মু রাসূলুল্লাহ ﷺ মুক্তাদিগণকে সালাতে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানোর আদেশ দিয়েছেন। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; জামেউস সগীর, হা/২০৬৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৭৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫।]
মসজিদে কাতারের জন্য দাগ টানা থাকলে দাগের মাথায় বুড়ো আঙ্গুল না রেখে পায়ের গোড়ালি দাগের সাথে রাখলে কাতার সঠিকভাবে সোজা হবে।
সামনের কাতারগুলো আগে পূর্ণ করতে হবে। কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে এভাবেই কাতার করে থাকেন। [আবু দাউদ হা/৬৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২৮৯; বায়হাকী, হা/৪৯৭০।]
কাতার কীভাবে সোজা করবে :
কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করতে হবে। আর এভাবে কাতারে দাঁড়ালে খুব সহজেই কাতার সোজা হয়ে যায়। তাছাড়া কাতার সোজা করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এটা সুন্নাত। কিমত্মু বর্তমান সমাজে অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা নিজেদের দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁক করে কাতারে দাঁড়ান, পাশের মুসল্লির কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মিলান না। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল সব সময় একই জায়গায় চেপে রাখেন। এভাবে কাতারে দাঁড়ানোর কোন প্রমাণ সহীহ হাদীসসমূহে নেই। উপরমত্মু রাসূলুল্লাহ ﷺ মুক্তাদিগণকে সালাতে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানোর আদেশ দিয়েছেন। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; জামেউস সগীর, হা/২০৬৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৭৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫।]
মসজিদে কাতারের জন্য দাগ টানা থাকলে দাগের মাথায় বুড়ো আঙ্গুল না রেখে পায়ের গোড়ালি দাগের সাথে রাখলে কাতার সঠিকভাবে সোজা হবে।
কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো জরুরি; যাতে মাঝে কোন ফাঁক না থাকে। পার্শ্ববর্তী সালাত আদায়কারীর পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ও বাহুর সাথে বাহু লাগিয়ে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরীব, ছোট-বড় ও প্রভু-দাসের কোন ভেদাভেদ নেই এবং এতে কোন বে-আদবীও হয় না। সাহাবাগণ কাতারে পরস্পর এভাবেই দাঁড়াতেন। মনের সাথে মনের মিল থাকলে পায়ের সাথে পা মিলানো কঠিন কিছু নয়। মনের মাঝে অহংকার ও ঘৃণা-বিদ্বেষের ফলে অথবা ভুল বুঝাবুঝির ফলে এ আমলটি হচ্ছে না।
পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর অর্থ এ নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং পায়ের সাথে পা এবং বাহুর সাথে বাহু স্বাভাবিকভাবে মিলানোর চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই পা ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।
পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর অর্থ এ নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং পায়ের সাথে পা এবং বাহুর সাথে বাহু স্বাভাবিকভাবে মিলানোর চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই পা ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।
মুক্তাদী একজন হলে :
ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বামে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পেছনে আগপিছ হয়ে দাঁড়াবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) কে নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭, ৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৭; নাসাঈ, হা/৪৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২; দারেমী, হা/১২৫৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬২৬।] তাই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ রচনার সময় বলেন, দু’জন হলে ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৯, ১১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; আবু দাউদ, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/১১০৬।]
একক মুক্তাদীর ক্ষেত্রে ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নাত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো সালাত বাতিল হবে না।
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক হলে :
মুক্তাদী দুই বা তার চেয়ে বেশি (পুরুষ) হলে ইমামের পেছনে কাতার বাঁধবে। তবে তারা যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তাহলেও সালাত হয়ে যাবে। অবশ্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাধারণ সুন্নাত হলো, তিন জন হলে একজন ইমাম হিসেবে সামনে দাঁড়াবেন এবং অপর দু’জন পেছনে মুক্তাদী হিসেবে কাতার বাঁধবে। কিমত্মু যদি দু’টি কাতার করার মতো জায়গা না থাকে তবে ইমাম মুক্তাদী এক কাতারে দাঁড়িয়েই সালাত আদায় করে নেবে।
মুক্তাদী মহিলা হলে :
মুক্তাদী একজন মহিলা হলে সে ইমামের পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে তার পেছনে দাঁড়াবে। এমনকি যদি নিজের স্ত্রীও হয় তবুও পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে না।
মুক্তাদী পুরুষ-মহিলা উভয়ই হলে :
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ হলে এবং একজন মহিলা হলে ইমামের পেছনে পুরুষরা কাতার বাঁধবে এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে।
মুক্তাদী পুরুষ-মহিলা-শিশু সকলেই হলে :
মুক্তাদী একজন শিশু ও একজন বা একাধিক পুরুষ হলে শিশুও পুরুষদের কাতারের সাথে দাঁড়াবে।
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ, শিশু ও মহিলা হলে ইমামের পেছনে প্রথম কাতারে পুরুষরা অতঃপর শিশুরা এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো প্রথম কাতার এবং মন্দ কাতার হলো সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো সর্বশেষ কাতার এবং মন্দ কাতার হলো প্রথম কাতার। [সহীহ মুসলিম, হা/১০১৩; আবু দাউদ, হা/৬৭৮; তিরমিযী, হা/২২৪; নাসাঈ, হা/৮২০; ইবনে মাজাহ, হা/১০০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫০৮; মিশকাত, হা/১০৯২।]
কোন ছোট বাচ্চা যদি কাতারের মাঝে দাঁড়িয়ে যায় তবে তাকে সালাতরত অবস্থায় ঠেলে ঠেলে কাতারের পার্শ্বে নিতে থাকা অথবা পেছনের কাতারে ঠেলে দেয়া ঠিক নয়।
ইমামের পেছনে প্রথমে কারা দাঁড়াবে :
ইমামের ঠিক পেছনে আলেম বা জ্ঞানী লোক থাকা উত্তম, যাতে তাঁরা ইমামের ভুল ধরে দিতে পারেন এবং কোন কারণে ইমাম সালাত ছাড়তে বাধ্য হলে তাঁদের কেউ বাকী সালাত সম্পন্ন করতে পারেন।
পেছনে একাকী কাতার করা যাবে কি?
একদা এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে পুনরায় সালাত আদায় করতে বললেন। [আবু দাউদ, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/২৩১; ইবনে মাজাহ, হা/১০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮০৩১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২০১; মিশকাত, হা/১১০৫।]
যদি কোন ব্যক্তি জামাআতে এসে দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তাহলে কোথাও ফাঁক থাকলে সেখানে প্রবেশ করবে। নতুবা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কেউ এলে তার সঙ্গে কাতার করে দাঁড়াবে। এরপরও যদি কাউকে না পাওয়া যায় তবে বাধ্যগত কারণে পেছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে।
একজন মুক্তাদী ইমামের ডান পাশে দাঁড়ানো থাকলে পরে যদি আরেকজন আসে তাহলে উত্তম হলো সামনে জায়গা থাকলে ইমাম সামনে এগিয়ে যাবেন। আর যদি সামনে জায়গা না থাকে তবে মুক্তাদী পেছনে সরে দাঁড়াবে। আর একান্ত প্রয়োজনে বাম পাশে দাঁড়িয়ে তিনজন পাশাপাশি সালাত আদায় করলেও সালাত হয়ে যাবে।
ইমাম মুক্তাদী থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে না :
ইমাম মুক্তাদী থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে না। কারণ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন। [দার কুতনী, হা/১৮৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬১; মিশকাত, হা/১৬৯২।]
একদা হুযায়ফা (রাঃ) মাদায়েনের একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকদের ইমামতি করতে লাগলেন। তা দেখে আবু মাসউদ (রাঃ) তাঁর জামা ধরে টেনে নিচে নামিয়ে দিলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি হুযায়ফা (রাঃ) কে বললেন, আপনি কি জানেন না যে, এরূপ দাঁড়ানো নিষিদ্ধ? তিনি বললেন, জী-হ্যাঁ, যখনই আপনি আমাকে টান দিলেন তখনই আমার মনে পড়েছে। [আবু দাউদ, হা/৫৯৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫২৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৪৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬০।]
ইমামের বরাবর অথবা তার উপরে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হলে একান্ত প্রয়োজনে ইমামের চেয়ে নিচু জায়গায় সালাত আদায় করা যাবে। যেমন কোন মসজিদের দু’তলায় যদি ইমাম দাঁড়ান এবং দু’তলায় বা তার উপরে জায়গা না থাকে তাহলে নিচ তলায় সালাত আদায় করা যাবে।
মুক্তাদী ইমামের চেয়ে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে :
মুক্তাদী ইমাম থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে। যেমন- নিচ তলায় মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হলে উপরের তলাগুলোতে ইক্তেদা করা যাবে। তবে শর্ত হলো ইমামের আওয়াজ যাতে সকল তলায় পৌঁছে এবং মুসল্লিগণ ইমামের রুকূ সিজদা উপলব্ধি করতে পারেন।
ইমামের ডান-বামে লোক সমান-সমান থাকবে :
ইমামের ডান-বামে লোক যেন সমান-সমান হয়। অতএব কাতার বাঁধার সময় তা খেয়াল রাখা কর্তব্য বা সুন্নাত। একই কাতারে বিচ্ছিন্নভাবে কাতার বাঁধা যাবে না। কাতারের ঠিক মাঝ বরাবর থেকে কাতার বাঁধা শুরু করতে হবে।
দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করার বিধান :
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এ (খামের ফাঁকে কাতার বাঁধা) থেকে দূরে থাকতাম। [আবু দাউদ, হা/৬৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৬৮।]
এর কারণ হলো এই যে, মাঝে খাম হওয়ার ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইমাম বা একাকী সালাত আদায়কারীর জন্য দুই খামের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা নিষেধ নয়। অনুরূপভাবে অধিক ভিড়ের কারণে মসজিদে জায়গা না থাকলে ঐ জায়গাতেও কাতার বাঁধা বৈধ রয়েছে।
ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বামে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পেছনে আগপিছ হয়ে দাঁড়াবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) কে নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭, ৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৭; নাসাঈ, হা/৪৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২; দারেমী, হা/১২৫৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬২৬।] তাই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ রচনার সময় বলেন, দু’জন হলে ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৯, ১১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; আবু দাউদ, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/১১০৬।]
একক মুক্তাদীর ক্ষেত্রে ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নাত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো সালাত বাতিল হবে না।
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক হলে :
মুক্তাদী দুই বা তার চেয়ে বেশি (পুরুষ) হলে ইমামের পেছনে কাতার বাঁধবে। তবে তারা যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তাহলেও সালাত হয়ে যাবে। অবশ্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাধারণ সুন্নাত হলো, তিন জন হলে একজন ইমাম হিসেবে সামনে দাঁড়াবেন এবং অপর দু’জন পেছনে মুক্তাদী হিসেবে কাতার বাঁধবে। কিমত্মু যদি দু’টি কাতার করার মতো জায়গা না থাকে তবে ইমাম মুক্তাদী এক কাতারে দাঁড়িয়েই সালাত আদায় করে নেবে।
মুক্তাদী মহিলা হলে :
মুক্তাদী একজন মহিলা হলে সে ইমামের পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে তার পেছনে দাঁড়াবে। এমনকি যদি নিজের স্ত্রীও হয় তবুও পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে না।
মুক্তাদী পুরুষ-মহিলা উভয়ই হলে :
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ হলে এবং একজন মহিলা হলে ইমামের পেছনে পুরুষরা কাতার বাঁধবে এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে।
মুক্তাদী পুরুষ-মহিলা-শিশু সকলেই হলে :
মুক্তাদী একজন শিশু ও একজন বা একাধিক পুরুষ হলে শিশুও পুরুষদের কাতারের সাথে দাঁড়াবে।
মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ, শিশু ও মহিলা হলে ইমামের পেছনে প্রথম কাতারে পুরুষরা অতঃপর শিশুরা এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো প্রথম কাতার এবং মন্দ কাতার হলো সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হলো সর্বশেষ কাতার এবং মন্দ কাতার হলো প্রথম কাতার। [সহীহ মুসলিম, হা/১০১৩; আবু দাউদ, হা/৬৭৮; তিরমিযী, হা/২২৪; নাসাঈ, হা/৮২০; ইবনে মাজাহ, হা/১০০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫০৮; মিশকাত, হা/১০৯২।]
কোন ছোট বাচ্চা যদি কাতারের মাঝে দাঁড়িয়ে যায় তবে তাকে সালাতরত অবস্থায় ঠেলে ঠেলে কাতারের পার্শ্বে নিতে থাকা অথবা পেছনের কাতারে ঠেলে দেয়া ঠিক নয়।
ইমামের পেছনে প্রথমে কারা দাঁড়াবে :
ইমামের ঠিক পেছনে আলেম বা জ্ঞানী লোক থাকা উত্তম, যাতে তাঁরা ইমামের ভুল ধরে দিতে পারেন এবং কোন কারণে ইমাম সালাত ছাড়তে বাধ্য হলে তাঁদের কেউ বাকী সালাত সম্পন্ন করতে পারেন।
পেছনে একাকী কাতার করা যাবে কি?
একদা এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে পুনরায় সালাত আদায় করতে বললেন। [আবু দাউদ, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/২৩১; ইবনে মাজাহ, হা/১০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮০৩১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২০১; মিশকাত, হা/১১০৫।]
যদি কোন ব্যক্তি জামাআতে এসে দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তাহলে কোথাও ফাঁক থাকলে সেখানে প্রবেশ করবে। নতুবা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কেউ এলে তার সঙ্গে কাতার করে দাঁড়াবে। এরপরও যদি কাউকে না পাওয়া যায় তবে বাধ্যগত কারণে পেছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে।
একজন মুক্তাদী ইমামের ডান পাশে দাঁড়ানো থাকলে পরে যদি আরেকজন আসে তাহলে উত্তম হলো সামনে জায়গা থাকলে ইমাম সামনে এগিয়ে যাবেন। আর যদি সামনে জায়গা না থাকে তবে মুক্তাদী পেছনে সরে দাঁড়াবে। আর একান্ত প্রয়োজনে বাম পাশে দাঁড়িয়ে তিনজন পাশাপাশি সালাত আদায় করলেও সালাত হয়ে যাবে।
ইমাম মুক্তাদী থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে না :
ইমাম মুক্তাদী থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে না। কারণ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন। [দার কুতনী, হা/১৮৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬১; মিশকাত, হা/১৬৯২।]
একদা হুযায়ফা (রাঃ) মাদায়েনের একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকদের ইমামতি করতে লাগলেন। তা দেখে আবু মাসউদ (রাঃ) তাঁর জামা ধরে টেনে নিচে নামিয়ে দিলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি হুযায়ফা (রাঃ) কে বললেন, আপনি কি জানেন না যে, এরূপ দাঁড়ানো নিষিদ্ধ? তিনি বললেন, জী-হ্যাঁ, যখনই আপনি আমাকে টান দিলেন তখনই আমার মনে পড়েছে। [আবু দাউদ, হা/৫৯৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫২৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৪৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬০।]
ইমামের বরাবর অথবা তার উপরে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হলে একান্ত প্রয়োজনে ইমামের চেয়ে নিচু জায়গায় সালাত আদায় করা যাবে। যেমন কোন মসজিদের দু’তলায় যদি ইমাম দাঁড়ান এবং দু’তলায় বা তার উপরে জায়গা না থাকে তাহলে নিচ তলায় সালাত আদায় করা যাবে।
মুক্তাদী ইমামের চেয়ে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে :
মুক্তাদী ইমাম থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারবে। যেমন- নিচ তলায় মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হলে উপরের তলাগুলোতে ইক্তেদা করা যাবে। তবে শর্ত হলো ইমামের আওয়াজ যাতে সকল তলায় পৌঁছে এবং মুসল্লিগণ ইমামের রুকূ সিজদা উপলব্ধি করতে পারেন।
ইমামের ডান-বামে লোক সমান-সমান থাকবে :
ইমামের ডান-বামে লোক যেন সমান-সমান হয়। অতএব কাতার বাঁধার সময় তা খেয়াল রাখা কর্তব্য বা সুন্নাত। একই কাতারে বিচ্ছিন্নভাবে কাতার বাঁধা যাবে না। কাতারের ঠিক মাঝ বরাবর থেকে কাতার বাঁধা শুরু করতে হবে।
দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করার বিধান :
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এ (খামের ফাঁকে কাতার বাঁধা) থেকে দূরে থাকতাম। [আবু দাউদ, হা/৬৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৬৮।]
এর কারণ হলো এই যে, মাঝে খাম হওয়ার ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইমাম বা একাকী সালাত আদায়কারীর জন্য দুই খামের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা নিষেধ নয়। অনুরূপভাবে অধিক ভিড়ের কারণে মসজিদে জায়গা না থাকলে ঐ জায়গাতেও কাতার বাঁধা বৈধ রয়েছে।
১. ইকামতের পর কাতার সোজা করতে বলা :
অনেক ইমাম ইকামতের শেষে ডানে ও বামে তাকিয়ে প্রথম কাতার দেখে কিছু না বলেই তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করে দেন। এমনটি ঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের ইকামতের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাক্যে কাতার সোজা করার নির্দেশ দিতেন। যেমন-
أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا
উচ্চারণ : আক্বীমূ সুফূফাকুম ওয়া তারাস্সূ।
অর্থ : কাতার সোজা করো এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়াও। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৯; নাসাঈ, হা/৮১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৩০।]
رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ
উচ্চরণ : রুস্সূ সুফূফাকুম ওয়া ক্বারিবূ বাইনাহা ওয়া হা-যূ বিল আ‘নাক্ব।
অর্থ : তোমাদের কাতারসমূহ মিলিয়ে নাও এবং পাশাপাশি দাঁড়াও। আর তোমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৬৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬৬।]
أَقِيْمُوْا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِىْ إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ
উচ্চারণ : আক্বীমুস সুফূফা ওয়া হা-যূ বাইনাল মানা-কিবি ওয়া ছুদ্দুল খালালা ওয়া লীনূ বিআইদী ইখওয়ানিকুম ওয়ালা তাযারূ ফুরূজা-তিন লিশ শাইত্বান।
অর্থ : তোমরা কাতারসমূহ সোজা করো, কাঁধে কাঁধ মিলাও এবং ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দাও। অর্থাৎ পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নাও এবং তোমার ভাইয়ের প্রতি বিনম্র হও। আর তোমরা শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/১১০২।]
কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ اِسْتَوُوْا (ইসতাউ) ‘কাতার সোজা করো’ শব্দটি দুই বার অথবা তিন বার বলতেন। [নাসাঈ, হা/৮১৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৬৫; মিশকাত, হা/১১০০।]
আবার কোন কোন সময় বলতেন - اِسْتَوُوْا وَتَعَادَلُوْا (ইসতাউ ওয়া তা‘আদালূ)। ‘কাতার সোজা করো এবং সমতা বজায় রাখো’। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৮৯; দার কুতনী, হা/১১১৮।]
সুতরাং ইকামত সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর ইকামতের জবাব দিয়ে মুসল্লিদের কাতার সোজা হওয়ার পরই কেবল ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলা উচিত।
কাতারে কেউ আগে-পিছে সরে থাকলে তাকে বরাবর হতে বলা এমনকি নিজে কাছে গিয়ে কাতার সোজা করা ইমামের কর্তব্য। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না কাতার পূর্ণরূপে সোজা হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত শুরু করা উচিত নয়। তাড়াহুড়া করে সালাত শুরু করা সুন্নাতের খেলাফ।
২. ইকামত শেষ হওয়ার পূর্বে সালাত শুরু না করা :
অনেক ইমাম ইকামতে قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ (ক্বাদ ক্বা-মাতিস সালাহ্) বলার সাথে সাথে তাকবীরে তাহরীমা উচ্চারণ করে হাত বাঁধেন। অথচ ইকামত শেষ হওয়ার পূর্বে সালাত শুরু করা সমীচীন নয়। এমনকি প্রয়োজনে ইকামতের পর কিছুটা দেরি হলেও কোন অসুবিধা নেই। যেমন কাতার সোজা করা বা ইমামের কোন প্রয়োজন সেরে নেয়া। হাদীসে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায়ের জন্য বের হলেন, তখন ইকামত দেয়া হলো এবং কাতারও সোজা করা হলো। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তাকবীরের অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ ফিরে গেলেন এবং গোসল করে এসে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করলেন। তখন তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৯৭; আবু দাউদ, হা/২৩৩।]
৩. মুক্তাদীদের খেয়াল করে সালাত হাল্কা করে আদায় করা :
জামাআতে বিভিন্ন ধরনের লোক সালাত আদায় করতে আসে। ইমামের উচিত নিজের ইচ্ছামতো সালাত না পড়ানো; বরং তাদের খেয়াল রেখে রুকূ, সিজদা অথবা কিরাআত লম্বা করা উচিত। অবশ্য সালাত এমন হাল্কা করা উচিত নয়, যাতে স্থিরতার সাথে সালাতের রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি আদায় করা ব্যহত হয়।
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ إِنِّيْ لَأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيْلُ بِنَا . فَمَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ غَضِبَ فِيْ مَوْعِظَةٍ قَطُّ أَشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئِذٍ فَقَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِيْنَ فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوْجِزْ فَإِنَّ مِنْ وَرَائِه الْكَبِيْرَ وَالضَّعِيْفَ وَذَا الْحَاجَةِ
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বলল, অমুক লোকের কারণে আমি ফজরের সালাতে দেরিতে উপস্থিত হই। কারণ সে খুব লম্বা কিরাআত পাঠ করে। (তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগান্বিত হয়ে একটি ভাষণ দিলেন) আমি সেদিনকার মতো আর কোন দিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এতটা রাগান্বিত হতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা মানুষকে ভাগিয়ে দেয়। তোমাদের যে কেউ ইমামতি করে সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কেননা তার পিছনে বৃদ্ধ, দুর্বল এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত লোকও রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৩৭২৬।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمُ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فِيْهِمُ الصَّغِيْرَ وَالْكَبِيْرَ وَالضَّعِيْفَ وَالْمَرِيْضَ فَإِذَا صَلّٰى وَحْدَه فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যখন লোকদের ইমামতি করে তখন সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে বালক, বৃদ্ধ, দুর্বল এবং অসুস্থ ব্যক্তিরাও রয়েছে। আর সে যখন একাকী সালাত আদায় করবে, তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৭৪; তিরমিযী, হা/২৩৬; মিশকাত, হা/১১৩১।]
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يُوْجِزُ فِي الصَّلَاةِ وَيُتِمُّ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৮০; বায়হাকী, হা/৫০৪৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবি আওয়ানা, হা/১২৪৪।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ﷺ إِنِّي لَأَدْخُلُ الصَّلَاةَ أُرِيْدُ إِطَالَتَهَا فَأَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَأُخَفِّفُ مِنْ شِدَّةِ وَجْدِ أُمِّه بِه
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি সালাত শুরু করে তা দীর্ঘ করার ইচ্ছা করি। কিমত্মু যখন শিশুর কান্না শুনতে পাই তখন তার মায়ের অস্থিরতার কথা চিন্তা করে সালাত সংক্ষিপ্ত করে দেই। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৩; আবু দাউদ, হা/৭৮৯; নাসাঈ, হা/৮২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৯৯১।]
৪. দ্বিতীয় রাক‘আতের তুলনায় প্রথম রাক‘আত দীর্ঘ করা :
প্রথম রাক‘আত একটু লম্বা করে পড়া উত্তম। যাতে পেছনে থেকে যাওয়া মুসল্লিগণ প্রথম রাক‘আতেই অংশগ্রহণ করতে পারে।
৫. সালাম ফিরানোর পর ঘুরে বসা :
সালাম ফিরানোর পর ডান অথবা বাম দিকে ঘুরে মুক্তাদীদের প্রতি মুখ করে বসা ইমামের জন্য মুস্তাহাব। [সহীহ বুখারী, হা/৮৫২, মিশকাত, হা/৯৪৬।]
৬. যিকির আযকারের পর জায়গা বদল করে সুন্নাত পড়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইমাম যে জায়গায় ফরয সালাত আদায় করে সে যেন ঐ জায়গাতেই সুন্নাত না পড়ে। বরং সে যেন অন্য জায়গায় সরে যায়।
মুক্তাদীর জন্যও জায়গা বদল করে সুন্নাত পড়া মুস্তাহাব। উদ্দেশ্য হলো, সালাতের জায়গা বেশি করলে কিয়ামতের দিন ঐ সকল জায়গা আল্লাহর আনুগত্যের সাক্ষ্য দেবে। [আবু দাউদ, হা/৬১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯৯; বায়হাকী, হা/২৮৬৪; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৮৫; মিশকাত, হা/৯৫৩।]
অনেক ইমাম ইকামতের শেষে ডানে ও বামে তাকিয়ে প্রথম কাতার দেখে কিছু না বলেই তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করে দেন। এমনটি ঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের ইকামতের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাক্যে কাতার সোজা করার নির্দেশ দিতেন। যেমন-
أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا
উচ্চারণ : আক্বীমূ সুফূফাকুম ওয়া তারাস্সূ।
অর্থ : কাতার সোজা করো এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়াও। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৯; নাসাঈ, হা/৮১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৩০।]
رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ
উচ্চরণ : রুস্সূ সুফূফাকুম ওয়া ক্বারিবূ বাইনাহা ওয়া হা-যূ বিল আ‘নাক্ব।
অর্থ : তোমাদের কাতারসমূহ মিলিয়ে নাও এবং পাশাপাশি দাঁড়াও। আর তোমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৬৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬৬।]
أَقِيْمُوْا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِىْ إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ
উচ্চারণ : আক্বীমুস সুফূফা ওয়া হা-যূ বাইনাল মানা-কিবি ওয়া ছুদ্দুল খালালা ওয়া লীনূ বিআইদী ইখওয়ানিকুম ওয়ালা তাযারূ ফুরূজা-তিন লিশ শাইত্বান।
অর্থ : তোমরা কাতারসমূহ সোজা করো, কাঁধে কাঁধ মিলাও এবং ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দাও। অর্থাৎ পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নাও এবং তোমার ভাইয়ের প্রতি বিনম্র হও। আর তোমরা শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/১১০২।]
কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ اِسْتَوُوْا (ইসতাউ) ‘কাতার সোজা করো’ শব্দটি দুই বার অথবা তিন বার বলতেন। [নাসাঈ, হা/৮১৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৬৫; মিশকাত, হা/১১০০।]
আবার কোন কোন সময় বলতেন - اِسْتَوُوْا وَتَعَادَلُوْا (ইসতাউ ওয়া তা‘আদালূ)। ‘কাতার সোজা করো এবং সমতা বজায় রাখো’। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৮৯; দার কুতনী, হা/১১১৮।]
সুতরাং ইকামত সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর ইকামতের জবাব দিয়ে মুসল্লিদের কাতার সোজা হওয়ার পরই কেবল ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলা উচিত।
কাতারে কেউ আগে-পিছে সরে থাকলে তাকে বরাবর হতে বলা এমনকি নিজে কাছে গিয়ে কাতার সোজা করা ইমামের কর্তব্য। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না কাতার পূর্ণরূপে সোজা হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত শুরু করা উচিত নয়। তাড়াহুড়া করে সালাত শুরু করা সুন্নাতের খেলাফ।
২. ইকামত শেষ হওয়ার পূর্বে সালাত শুরু না করা :
অনেক ইমাম ইকামতে قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ (ক্বাদ ক্বা-মাতিস সালাহ্) বলার সাথে সাথে তাকবীরে তাহরীমা উচ্চারণ করে হাত বাঁধেন। অথচ ইকামত শেষ হওয়ার পূর্বে সালাত শুরু করা সমীচীন নয়। এমনকি প্রয়োজনে ইকামতের পর কিছুটা দেরি হলেও কোন অসুবিধা নেই। যেমন কাতার সোজা করা বা ইমামের কোন প্রয়োজন সেরে নেয়া। হাদীসে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায়ের জন্য বের হলেন, তখন ইকামত দেয়া হলো এবং কাতারও সোজা করা হলো। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তাকবীরের অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ ফিরে গেলেন এবং গোসল করে এসে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করলেন। তখন তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৯৭; আবু দাউদ, হা/২৩৩।]
৩. মুক্তাদীদের খেয়াল করে সালাত হাল্কা করে আদায় করা :
জামাআতে বিভিন্ন ধরনের লোক সালাত আদায় করতে আসে। ইমামের উচিত নিজের ইচ্ছামতো সালাত না পড়ানো; বরং তাদের খেয়াল রেখে রুকূ, সিজদা অথবা কিরাআত লম্বা করা উচিত। অবশ্য সালাত এমন হাল্কা করা উচিত নয়, যাতে স্থিরতার সাথে সালাতের রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি আদায় করা ব্যহত হয়।
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ إِنِّيْ لَأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيْلُ بِنَا . فَمَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ غَضِبَ فِيْ مَوْعِظَةٍ قَطُّ أَشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئِذٍ فَقَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِيْنَ فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوْجِزْ فَإِنَّ مِنْ وَرَائِه الْكَبِيْرَ وَالضَّعِيْفَ وَذَا الْحَاجَةِ
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বলল, অমুক লোকের কারণে আমি ফজরের সালাতে দেরিতে উপস্থিত হই। কারণ সে খুব লম্বা কিরাআত পাঠ করে। (তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগান্বিত হয়ে একটি ভাষণ দিলেন) আমি সেদিনকার মতো আর কোন দিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এতটা রাগান্বিত হতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা মানুষকে ভাগিয়ে দেয়। তোমাদের যে কেউ ইমামতি করে সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কেননা তার পিছনে বৃদ্ধ, দুর্বল এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত লোকও রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৩৭২৬।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمُ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فِيْهِمُ الصَّغِيْرَ وَالْكَبِيْرَ وَالضَّعِيْفَ وَالْمَرِيْضَ فَإِذَا صَلّٰى وَحْدَه فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যখন লোকদের ইমামতি করে তখন সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে বালক, বৃদ্ধ, দুর্বল এবং অসুস্থ ব্যক্তিরাও রয়েছে। আর সে যখন একাকী সালাত আদায় করবে, তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৭৪; তিরমিযী, হা/২৩৬; মিশকাত, হা/১১৩১।]
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يُوْجِزُ فِي الصَّلَاةِ وَيُتِمُّ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৮০; বায়হাকী, হা/৫০৪৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবি আওয়ানা, হা/১২৪৪।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ﷺ إِنِّي لَأَدْخُلُ الصَّلَاةَ أُرِيْدُ إِطَالَتَهَا فَأَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَأُخَفِّفُ مِنْ شِدَّةِ وَجْدِ أُمِّه بِه
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি সালাত শুরু করে তা দীর্ঘ করার ইচ্ছা করি। কিমত্মু যখন শিশুর কান্না শুনতে পাই তখন তার মায়ের অস্থিরতার কথা চিন্তা করে সালাত সংক্ষিপ্ত করে দেই। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৩; আবু দাউদ, হা/৭৮৯; নাসাঈ, হা/৮২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৯৯১।]
৪. দ্বিতীয় রাক‘আতের তুলনায় প্রথম রাক‘আত দীর্ঘ করা :
প্রথম রাক‘আত একটু লম্বা করে পড়া উত্তম। যাতে পেছনে থেকে যাওয়া মুসল্লিগণ প্রথম রাক‘আতেই অংশগ্রহণ করতে পারে।
৫. সালাম ফিরানোর পর ঘুরে বসা :
সালাম ফিরানোর পর ডান অথবা বাম দিকে ঘুরে মুক্তাদীদের প্রতি মুখ করে বসা ইমামের জন্য মুস্তাহাব। [সহীহ বুখারী, হা/৮৫২, মিশকাত, হা/৯৪৬।]
৬. যিকির আযকারের পর জায়গা বদল করে সুন্নাত পড়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইমাম যে জায়গায় ফরয সালাত আদায় করে সে যেন ঐ জায়গাতেই সুন্নাত না পড়ে। বরং সে যেন অন্য জায়গায় সরে যায়।
মুক্তাদীর জন্যও জায়গা বদল করে সুন্নাত পড়া মুস্তাহাব। উদ্দেশ্য হলো, সালাতের জায়গা বেশি করলে কিয়ামতের দিন ঐ সকল জায়গা আল্লাহর আনুগত্যের সাক্ষ্য দেবে। [আবু দাউদ, হা/৬১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯৯; বায়হাকী, হা/২৮৬৪; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৮৫; মিশকাত, হা/৯৫৩।]
ইমাম হওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন তিনি, যিনি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন এবং যার কুরআন তিলাওয়াত অধিক সহীহ। যদি কুরআন পাঠ করায় সকলে সমান হন, তাহলে যিনি হাদীসে বেশি জ্ঞানী তিনি ইমাম হবেন। এতেও সকলে সমান হলে, যিনি বয়সে বড় তিনি ইমাম হবেন।
উল্লেখ্য যে, স্থায়ীভাবে কাউকে ইমাম নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে ইমামের দ্বীনদারী ও আমানতদারীর বিষয়টিও দেখা উচিত। কারণ ইমাম হচ্ছেন নেতা। তার দায়িত্ব শুধু সালাত পড়ানো নয়। সমাজের মানুষকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়াও তার দায়িত্ব। ইমামের আকীদা যদি সহীহ না হয় এবং তিনি যদি শিরক-বিদআত থেকে মুক্ত না হন তাহলে ঐ ইমামের দ্বারা সমাজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। কারণ ইমামকে মানুষ শুধু সালাতের ক্ষেত্রে নয় বরং কমবেশি সকল ক্ষেত্রেই অনুসরণ করে থাকে। এজন্য ইলিম, আমল, আখলাক, ইমান-আকীদা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করেই ইমাম নিয়োগ দেয়া মুতাওয়াল্লীগণের দায়িত্ব।
উল্লেখ্য যে, স্থায়ীভাবে কাউকে ইমাম নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে ইমামের দ্বীনদারী ও আমানতদারীর বিষয়টিও দেখা উচিত। কারণ ইমাম হচ্ছেন নেতা। তার দায়িত্ব শুধু সালাত পড়ানো নয়। সমাজের মানুষকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়াও তার দায়িত্ব। ইমামের আকীদা যদি সহীহ না হয় এবং তিনি যদি শিরক-বিদআত থেকে মুক্ত না হন তাহলে ঐ ইমামের দ্বারা সমাজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। কারণ ইমামকে মানুষ শুধু সালাতের ক্ষেত্রে নয় বরং কমবেশি সকল ক্ষেত্রেই অনুসরণ করে থাকে। এজন্য ইলিম, আমল, আখলাক, ইমান-আকীদা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করেই ইমাম নিয়োগ দেয়া মুতাওয়াল্লীগণের দায়িত্ব।
শিরকে আকবার তথা বড় শিরকে লিপ্ত ব্যক্তির পেছনে সালাত হবে না :
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন অন্য কাউকে শরীক করে তার পেছনে সালাত শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
তোমার নিকট এবং তোমার পূর্ববর্তীদের নিকট ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক কর তবে তোমার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘যে কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’।
বিদআতীর পেছনে সালাত আদায় করা :
যদি কোন ইমাম এমন বিদআতী কাজে লিপ্ত হন যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না তবে ঐ ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব হলো ঐ ইমামকে উপদেশ দেয়া এবং বিদআতী কর্ম পরিত্যাগ করার জন্য দাওয়াত দেয়া। যতদিন ফায়দা না হবে ততদিন পর্যন্ত দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যেতে থাকবে।
একদা হাসান বসরী (রহ.) কে বিদআতীর পেছনে সালাত আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
صَلِّ وَعَلَيْهِ بِدْعَتُهٗ
অর্থাৎ তুমি তার পেছনে সালাত আদায় করো। কেননা বিদআতের গোনাহ তার উপরই বর্তাবে। [সহীহ বুখারী, ফিতনা ও বিদআতীর ইমামতি অধ্যায়; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০২; ইরওয়ালুল গালীল, হা/৫২৮।]
আর যদি কোন ইমাম এমন কোন বিদআতে লিপ্ত হন যা কুফরী পর্যায়ের, তাহলে ঐ ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয নয় । যেমন- আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দু‘আ করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে মান্নত করা, জবেহ করা ইত্যাদি। এগুলো কুফর ও শিরকী কাজ।
তাছাড়া কোন ইমাম যদি কুফরী আকীদায় বিশ্বাসী হন তাহলে তার পেছনেও সালাত আদায় করা জায়েয নয়। যেমন আউলিয়াদের ব্যাপারে অনেকে ধারণা করে থাকে যে, তারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান, তারা মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন ইত্যাদি।
সারকথা হলো, যখন কোন ইমামের মধ্যে কুফরের নিদর্শন পাওয়া যাবে তখন তার পেছনে সালাত আদায় করা যাবে না।
আর ইমাম যদি এমন বিদআতী কর্মে লিপ্ত থাকেন যা কুফরের পর্যায় নয়, তাহলে তার পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয হলেও যদি সহীহ আকীদা সম্পন্ন ইমামের পেছনে সালাত আদায় করার সুযোগ অন্য মসজিদে পাওয়া যায় তাহলে সেখানে সালাত আদায় করা উত্তম।
উল্লেখ্য যে, সহীহ আকীদা সম্পন্ন লোকদের উচিত হলো, তারা মাঝে মধ্যে বিদআতীদের সাথে সালাত আদায় করবে যাতে করে তাদেরকে উপদেশ দেয়া যায় এবং তাকওয়া ও কল্যাণের প্রতি সহযোগিতা করা যায়। কেননা কিছু বিদআতী রয়েছে যাদের বিদআত সম্পর্কে ধারণা নেই। যদি তাদেরকে সঠিক জ্ঞান দেওয়া যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবে এবং বিদআত বর্জন করবে। এটা ঈমানদারদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করা :
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করা মাকরূহ। তবে বাধ্যগত কারণে জায়েয আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَؤُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমামগণ তোমাদের সালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তারা সঠিকভাবে সালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে কেবল তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে, কিমত্মু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৪৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৭১৪; বায়হাকী, হা/৩৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/১১৩৩।]
এ বিষয়ে খলীফা উসমান (রাঃ) কে বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
اَلصَّلَاةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ فَإِذَا أَحْسَنَ النَّاسُ فَأَحْسِنْ مَعَهُمْ ، وَإِذَا أَسَاؤُوْا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ
অর্থাৎ মানুষের শ্রেষ্ঠ আমল হলো সালাত। অতএব যখন তারা ভালো কাজ করে তখন তুমি তাদের সাথী হও। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে তখন তুমি তাদের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৫; বায়হাকী, হা/৫০৯৪; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, হা/১৯৯১; জমেউস সগীর, হা/৩৩২১; মিশকাত, হা/৬২৩।]
ফাসিক হলো সেই ব্যক্তি যে হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে থাকে এবং ফরয বা ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কবীরা গোনাহ করে। ফাসিক ইমাম ব্যতীত অন্য ইমামের পেছনে সালাত আদায় করার জন্য চেষ্টা করা উচিত। কিমত্মু যদি কোন কারণে বাধ্য হয়ে তার পেছনে সালাত পড়তেই হয়, তাহলে সালাত হয়ে যাবে।
সাহাবীগণ ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করেছিলেন। যেমন- আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) মারওয়ানের পেছনে সালাত আদায় করেছেন। অথচ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও মারওয়ান উভয়েই সকল সাহাবার কাছে ফাসিক হিসেবে চিহ্নিত ছিল।
অশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতকারীর পেছনে সালাত :
যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে এমন ভুল করে, যার কারণে আয়াতের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তার পেছনে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে তার সালাত আদায় করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কোন ক্বারী ভুল কিরাআতকারীর পেছনে অজান্তে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ে নেয়, তাহলে তার সালাত হয়ে যাবে।
যারা অল্প বেতনে এমন ইমাম নিয়োগ দেন, যাদের কুরআন সহীহ নয় তাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
মুক্তাদীদের অপছন্দনীয় ব্যক্তির ইমামতি :
চরিত্রগত বা শিক্ষাগত কোন কারণে মুক্তাদীরা কোন ইমামকে অপছন্দ করলে ঐ ইমামের সালাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং জেনে শুনে তার ইমামতি করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কান অতিক্রম করে না :
(১) পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।
(২) এমন স্ত্রী, যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে (যতক্ষণ না সে রাজি হয়েছে অথবা যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচারণ করেছে, সে তার বাধ্য হওয়া পর্যন্ত) এবং
(৩) সেই সম্প্রদায়ের ইমাম, যাকে লোকেরা অপছন্দ করে। [তিরমিযী, হা/৩৬০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৮৯; মিশকাত, হা/১১২২।]
অবশ্য ব্যক্তিগত কোন কারণে কেউ কেউ ইমামকে অপছন্দ করলে দোষের কিছু নেই। অযথা কেউ তাকে অপছন্দ করলে অথবা বেশি সংখ্যক লোক পছন্দ এবং অল্প সংখ্যক লোক অপছন্দ করলে সালাতের কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষতি তার হয়, যে একজন নির্দোষ মানুষকে অকারণে অপছন্দ করে।
জ্ঞানী ইমামের উচিত, যে সমাজের অধিকাংশ লোক তাকে অপছন্দ করে, সে সমাজের ইমামতি ত্যাগ করা এবং তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হতে না দেয়া।
অতি তাড়াহুড়া প্রবণ ইমামের পেছনে সালাত :
যে ব্যক্তি এত দ্রুত সালাত পড়ে যে, মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করতে সক্ষম না হয়, রুকূ ও সিজদা থেকে উঠে পিঠ সোজা করতে না পারে, তার সালাত এবং তার পেছনে মুক্তাদীদেরও সালাত হয় না।
মহিলার পেছনে পুরুষের সালাত হবে না :
পুরুষের জন্য মহিলার ইমামতি বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সে জাতি কোন দিন সফল হবে না, যে জাতি তাদের কর্মভার একজন মহিলাকে সমর্পণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪২৫; তিরমিযী, হা/২২৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৫১৬; নাসাঈ, হা/৫৩৮৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৬০৮; মিশকাত, হা/৩৬৯৩।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। (সূরা নিসা- ৩৪)
ইমাম সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল না করলে যা করতে হবে :
ইমামের অনুসরণ হতে হবে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য। যেমন তাকবীর, রুকূ, ক্বিয়াম, সিজদা, সালাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইমাম সুন্নাত ছেড়ে দিলে মুক্তাদীকেও সুন্নাত ছেড়ে দিতে হবে। তাই ইমাম বুকে হাত না বাঁধলে বা উচ্চৈঃস্বরে আমীন না বললে বা রাফউল ইয়াদাইন না করলেও মুক্তাদী সহীহ হাদীস অনুযায়ী সেগুলো আমল করবে। এর ফলে তিনি সুন্নাত অনুসরণের নেকী পাবেন।
ইমাম খুব দেরীতে সালাত আদায় করলে যা করতে হবে :
আওয়াল ওয়াক্তে একাকী সালাত আদায়ের চাইতে একটু দেরীতে জামাআতসহ সালাত আদায় করা উত্তম। অবশ্য ইমাম যদি খুব দেরী করে সালাত আদায় করেন, তাহলে তার বিষয় ভিন্ন। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা আবু যর (রাঃ) কে বললেন, যখন তুমি এমন কিছু আমীর পাবে যারা যথাসময় থেকে দেরী করে সালাত পড়বে তখন তুমি কী করবে? আবু যর (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনি কী আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি তোমার সালাত যথাসময়ে আদায় করে নাও। অতঃপর যদি সেই সালাত তাদের সাথে পাও, তাহলে পুনরায় তাদের সাথে জামাআতে পড়ে নাও। এটা তোমার জন্য নফল হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৯৭-৯৯; আবু দাউদ, হা/৪৩১; তিরমিযী, হা/১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭১৯; জামেউস সগীর, হা/৮৭১৭; মিশকাত, হা/৬০০।]
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন অন্য কাউকে শরীক করে তার পেছনে সালাত শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
তোমার নিকট এবং তোমার পূর্ববর্তীদের নিকট ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক কর তবে তোমার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘যে কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’।
বিদআতীর পেছনে সালাত আদায় করা :
যদি কোন ইমাম এমন বিদআতী কাজে লিপ্ত হন যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না তবে ঐ ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব হলো ঐ ইমামকে উপদেশ দেয়া এবং বিদআতী কর্ম পরিত্যাগ করার জন্য দাওয়াত দেয়া। যতদিন ফায়দা না হবে ততদিন পর্যন্ত দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যেতে থাকবে।
একদা হাসান বসরী (রহ.) কে বিদআতীর পেছনে সালাত আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
صَلِّ وَعَلَيْهِ بِدْعَتُهٗ
অর্থাৎ তুমি তার পেছনে সালাত আদায় করো। কেননা বিদআতের গোনাহ তার উপরই বর্তাবে। [সহীহ বুখারী, ফিতনা ও বিদআতীর ইমামতি অধ্যায়; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০২; ইরওয়ালুল গালীল, হা/৫২৮।]
আর যদি কোন ইমাম এমন কোন বিদআতে লিপ্ত হন যা কুফরী পর্যায়ের, তাহলে ঐ ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয নয় । যেমন- আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দু‘আ করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে মান্নত করা, জবেহ করা ইত্যাদি। এগুলো কুফর ও শিরকী কাজ।
তাছাড়া কোন ইমাম যদি কুফরী আকীদায় বিশ্বাসী হন তাহলে তার পেছনেও সালাত আদায় করা জায়েয নয়। যেমন আউলিয়াদের ব্যাপারে অনেকে ধারণা করে থাকে যে, তারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান, তারা মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন ইত্যাদি।
সারকথা হলো, যখন কোন ইমামের মধ্যে কুফরের নিদর্শন পাওয়া যাবে তখন তার পেছনে সালাত আদায় করা যাবে না।
আর ইমাম যদি এমন বিদআতী কর্মে লিপ্ত থাকেন যা কুফরের পর্যায় নয়, তাহলে তার পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয হলেও যদি সহীহ আকীদা সম্পন্ন ইমামের পেছনে সালাত আদায় করার সুযোগ অন্য মসজিদে পাওয়া যায় তাহলে সেখানে সালাত আদায় করা উত্তম।
উল্লেখ্য যে, সহীহ আকীদা সম্পন্ন লোকদের উচিত হলো, তারা মাঝে মধ্যে বিদআতীদের সাথে সালাত আদায় করবে যাতে করে তাদেরকে উপদেশ দেয়া যায় এবং তাকওয়া ও কল্যাণের প্রতি সহযোগিতা করা যায়। কেননা কিছু বিদআতী রয়েছে যাদের বিদআত সম্পর্কে ধারণা নেই। যদি তাদেরকে সঠিক জ্ঞান দেওয়া যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবে এবং বিদআত বর্জন করবে। এটা ঈমানদারদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করা :
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করা মাকরূহ। তবে বাধ্যগত কারণে জায়েয আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَؤُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমামগণ তোমাদের সালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তারা সঠিকভাবে সালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে কেবল তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে, কিমত্মু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৪৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৭১৪; বায়হাকী, হা/৩৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/১১৩৩।]
এ বিষয়ে খলীফা উসমান (রাঃ) কে বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
اَلصَّلَاةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ فَإِذَا أَحْسَنَ النَّاسُ فَأَحْسِنْ مَعَهُمْ ، وَإِذَا أَسَاؤُوْا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ
অর্থাৎ মানুষের শ্রেষ্ঠ আমল হলো সালাত। অতএব যখন তারা ভালো কাজ করে তখন তুমি তাদের সাথী হও। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে তখন তুমি তাদের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৫; বায়হাকী, হা/৫০৯৪; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, হা/১৯৯১; জমেউস সগীর, হা/৩৩২১; মিশকাত, হা/৬২৩।]
ফাসিক হলো সেই ব্যক্তি যে হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে থাকে এবং ফরয বা ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কবীরা গোনাহ করে। ফাসিক ইমাম ব্যতীত অন্য ইমামের পেছনে সালাত আদায় করার জন্য চেষ্টা করা উচিত। কিমত্মু যদি কোন কারণে বাধ্য হয়ে তার পেছনে সালাত পড়তেই হয়, তাহলে সালাত হয়ে যাবে।
সাহাবীগণ ফাসিকের পেছনে সালাত আদায় করেছিলেন। যেমন- আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) মারওয়ানের পেছনে সালাত আদায় করেছেন। অথচ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও মারওয়ান উভয়েই সকল সাহাবার কাছে ফাসিক হিসেবে চিহ্নিত ছিল।
অশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতকারীর পেছনে সালাত :
যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে এমন ভুল করে, যার কারণে আয়াতের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তার পেছনে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে তার সালাত আদায় করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কোন ক্বারী ভুল কিরাআতকারীর পেছনে অজান্তে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ে নেয়, তাহলে তার সালাত হয়ে যাবে।
যারা অল্প বেতনে এমন ইমাম নিয়োগ দেন, যাদের কুরআন সহীহ নয় তাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
মুক্তাদীদের অপছন্দনীয় ব্যক্তির ইমামতি :
চরিত্রগত বা শিক্ষাগত কোন কারণে মুক্তাদীরা কোন ইমামকে অপছন্দ করলে ঐ ইমামের সালাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং জেনে শুনে তার ইমামতি করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কান অতিক্রম করে না :
(১) পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।
(২) এমন স্ত্রী, যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে (যতক্ষণ না সে রাজি হয়েছে অথবা যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচারণ করেছে, সে তার বাধ্য হওয়া পর্যন্ত) এবং
(৩) সেই সম্প্রদায়ের ইমাম, যাকে লোকেরা অপছন্দ করে। [তিরমিযী, হা/৩৬০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৩৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৮৯; মিশকাত, হা/১১২২।]
অবশ্য ব্যক্তিগত কোন কারণে কেউ কেউ ইমামকে অপছন্দ করলে দোষের কিছু নেই। অযথা কেউ তাকে অপছন্দ করলে অথবা বেশি সংখ্যক লোক পছন্দ এবং অল্প সংখ্যক লোক অপছন্দ করলে সালাতের কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষতি তার হয়, যে একজন নির্দোষ মানুষকে অকারণে অপছন্দ করে।
জ্ঞানী ইমামের উচিত, যে সমাজের অধিকাংশ লোক তাকে অপছন্দ করে, সে সমাজের ইমামতি ত্যাগ করা এবং তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হতে না দেয়া।
অতি তাড়াহুড়া প্রবণ ইমামের পেছনে সালাত :
যে ব্যক্তি এত দ্রুত সালাত পড়ে যে, মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করতে সক্ষম না হয়, রুকূ ও সিজদা থেকে উঠে পিঠ সোজা করতে না পারে, তার সালাত এবং তার পেছনে মুক্তাদীদেরও সালাত হয় না।
মহিলার পেছনে পুরুষের সালাত হবে না :
পুরুষের জন্য মহিলার ইমামতি বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সে জাতি কোন দিন সফল হবে না, যে জাতি তাদের কর্মভার একজন মহিলাকে সমর্পণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪২৫; তিরমিযী, হা/২২৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৫১৬; নাসাঈ, হা/৫৩৮৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৬০৮; মিশকাত, হা/৩৬৯৩।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। (সূরা নিসা- ৩৪)
ইমাম সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল না করলে যা করতে হবে :
ইমামের অনুসরণ হতে হবে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য। যেমন তাকবীর, রুকূ, ক্বিয়াম, সিজদা, সালাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইমাম সুন্নাত ছেড়ে দিলে মুক্তাদীকেও সুন্নাত ছেড়ে দিতে হবে। তাই ইমাম বুকে হাত না বাঁধলে বা উচ্চৈঃস্বরে আমীন না বললে বা রাফউল ইয়াদাইন না করলেও মুক্তাদী সহীহ হাদীস অনুযায়ী সেগুলো আমল করবে। এর ফলে তিনি সুন্নাত অনুসরণের নেকী পাবেন।
ইমাম খুব দেরীতে সালাত আদায় করলে যা করতে হবে :
আওয়াল ওয়াক্তে একাকী সালাত আদায়ের চাইতে একটু দেরীতে জামাআতসহ সালাত আদায় করা উত্তম। অবশ্য ইমাম যদি খুব দেরী করে সালাত আদায় করেন, তাহলে তার বিষয় ভিন্ন। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা আবু যর (রাঃ) কে বললেন, যখন তুমি এমন কিছু আমীর পাবে যারা যথাসময় থেকে দেরী করে সালাত পড়বে তখন তুমি কী করবে? আবু যর (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনি কী আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি তোমার সালাত যথাসময়ে আদায় করে নাও। অতঃপর যদি সেই সালাত তাদের সাথে পাও, তাহলে পুনরায় তাদের সাথে জামাআতে পড়ে নাও। এটা তোমার জন্য নফল হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৯৭-৯৯; আবু দাউদ, হা/৪৩১; তিরমিযী, হা/১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭১৯; জামেউস সগীর, হা/৮৭১৭; মিশকাত, হা/৬০০।]
সালাতের কিছু অংশ ইমামের সাথে এবং অবশিষ্ট অংশ একাকী আদায় করাকে মাসবূক সালাত বলা হয়। এ ক্ষেত্রে মুসল্লি ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সেই অবস্থায়ই সালাতে যোগদান করবে। আর এতেই সে জামাআতের পূর্ণ নেকী পেয়ে যাবে।
চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে ইমামের সাথে তিন রাক‘আত ছুটে গেলে এবং এক রাক‘আত পেলে সালাম ফিরানোর পর পরবর্তী রাক‘আত হবে তার জন্য ২য় রাক‘আত। সুতরাং এ রাক‘আতে ১ম তাশাহ্হুদের জন্য সে বসবে।
তেমনিভাবে তিন রাক‘আত বিশিষ্ট সালাত তথা মাগরিবের সালাতে ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে এবং দুই রাক‘আত ছুটে গেলে সালাম ফিরানোর পর পরবর্তী রাক‘আতটি হবে তার জন্য ২য় রাক‘আত। এ রাক‘আতেও তাশাহ্হুদের জন্য বসতে হবে।
ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে :
ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকূতে শরীক হতে হবে। তাহলে উক্ত রাক‘আতটি রাক‘আত হিসেবে গণনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে সানা পাঠ করার প্রয়োজন নেই। কেননা সানা হচ্ছে সালাত শুরুর দু‘আ, যা সালাতের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু মাসবূক ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার সাথে তথা জামাআতের শুরু হতে উপস্থিত হতে পারেনি সেহেতু তার জন্য সানা পাঠ করার কোন প্রয়োজন নেই।
কিমত্মু যদি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেয়েও সূরা ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ না হয় তাহলে উক্ত রাক‘আতটি রাক‘আত হিসেবে গণনা করা হবে কিনা এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
একটি মত হচ্ছে, সূরা ফাতিহা পড়ার সুযোগ না পেলে ঐ রাক‘আতটি গণ্য হবে না। কারণ সূরা ফাতিহা পাঠ করা সালাতের একটি ওয়াজিব। এই ওয়াজিব আদায় করতে না পারার কারণে রাক‘আতটি গণ্য হবে না।
আরেকটি মত হচ্ছে, সূরা ফাতিহা পাঠ করতে না পারলেও অথবা আংশিক পাঠ করতে পারলেও রাক‘আতটি গণ্য হবে। কারণ এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِذَا جِئْتُمْ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا ، وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমরা (সালাতে) এসে দেখবে যে, আমরা সিজদারত তখন তোমরা সিজদায় চলে যাবে। কিমত্মু রাক‘আত গণ্য করবে না। আর যে রুকূ পাবে সে পূর্ণ সালাতই পেল। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬২২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১২।]
জমহুর উলামা, চার ইমাম এবং অন্যান্যরাও এ মতটিকে প্রধান্য দিয়েছেন।
এ হাদীস থেকে আরো একটি বিষয়ের দলীল পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি যখন মসজিদে আসবে এবং দেখবে যে জামাআত শুরু হয়ে গেছে তখন সে ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই জামাআতে শরীক হয়ে যাবে। তখন থেকেই সে সওয়াব পেতে থাকবে। কিমত্মু অনেক লোককেই দেখা যায় যে, যদি রুকূ না পায় তাহলে অপেক্ষা করতে থাকে এবং ইমাম দাঁড়ালে জামাআতে শরীক হয়। এটা সঠিক নয়।
মাসআলা :
১. রাক‘আত ধরার জন্য কাতারে পৌঁছার আগে সালাত শুরু করা উচিত নয়। একদা আবু বকর (রাঃ) কাতারে পৌঁছার আগেই রুকূতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৩; আবু দাউদ, হা/৬৭৩।]
২. রাক‘আত গণ্য হওয়ার জন্য ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে মুক্তাদী রুকূতে গিয়ে কিছুটা স্থিরতা অবলম্বন করার মতো সময় পাওয়া জরুরি। মুক্তাদী রুকূতে যেতে না যেতে যদি ইমাম রুকূ থেকে উঠে যান তবে আর রাক‘আত গণ্য হবে না।
৩. শুধু তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকূতে চলে যাওয়া জায়েয আছে। তবে উত্তম হলো প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর আরেকটি তাকবীর দিয়ে রুকূতে যাবে। যদি তাকবীর বলার আগে মাথা নীচু করে ফেলে তাহলে সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলা সালাতের একটি রুকন।
৪. ইমামের উচিত হলো প্রথম রাক‘আত একটু দীর্ঘায়িত করা। যাতে পেছনে থাকা মুসল্লিগণ প্রথম রাক‘আতে শামিল হতে পারে। ইমামের রুকূতে চলে যাওয়ার পর তিনি যদি অনুভব করতে পারেন যে, পেছনে কেউ সালাত ধরার জন্য আসছে তবে সামান্য দেরি করা দোষণীয় নয়। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪৯৪ পৃঃ।]
চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে ইমামের সাথে তিন রাক‘আত ছুটে গেলে এবং এক রাক‘আত পেলে সালাম ফিরানোর পর পরবর্তী রাক‘আত হবে তার জন্য ২য় রাক‘আত। সুতরাং এ রাক‘আতে ১ম তাশাহ্হুদের জন্য সে বসবে।
তেমনিভাবে তিন রাক‘আত বিশিষ্ট সালাত তথা মাগরিবের সালাতে ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে এবং দুই রাক‘আত ছুটে গেলে সালাম ফিরানোর পর পরবর্তী রাক‘আতটি হবে তার জন্য ২য় রাক‘আত। এ রাক‘আতেও তাশাহ্হুদের জন্য বসতে হবে।
ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে :
ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকূতে শরীক হতে হবে। তাহলে উক্ত রাক‘আতটি রাক‘আত হিসেবে গণনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে সানা পাঠ করার প্রয়োজন নেই। কেননা সানা হচ্ছে সালাত শুরুর দু‘আ, যা সালাতের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু মাসবূক ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার সাথে তথা জামাআতের শুরু হতে উপস্থিত হতে পারেনি সেহেতু তার জন্য সানা পাঠ করার কোন প্রয়োজন নেই।
কিমত্মু যদি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেয়েও সূরা ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ না হয় তাহলে উক্ত রাক‘আতটি রাক‘আত হিসেবে গণনা করা হবে কিনা এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
একটি মত হচ্ছে, সূরা ফাতিহা পড়ার সুযোগ না পেলে ঐ রাক‘আতটি গণ্য হবে না। কারণ সূরা ফাতিহা পাঠ করা সালাতের একটি ওয়াজিব। এই ওয়াজিব আদায় করতে না পারার কারণে রাক‘আতটি গণ্য হবে না।
আরেকটি মত হচ্ছে, সূরা ফাতিহা পাঠ করতে না পারলেও অথবা আংশিক পাঠ করতে পারলেও রাক‘আতটি গণ্য হবে। কারণ এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِذَا جِئْتُمْ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا ، وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমরা (সালাতে) এসে দেখবে যে, আমরা সিজদারত তখন তোমরা সিজদায় চলে যাবে। কিমত্মু রাক‘আত গণ্য করবে না। আর যে রুকূ পাবে সে পূর্ণ সালাতই পেল। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬২২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১২।]
জমহুর উলামা, চার ইমাম এবং অন্যান্যরাও এ মতটিকে প্রধান্য দিয়েছেন।
এ হাদীস থেকে আরো একটি বিষয়ের দলীল পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি যখন মসজিদে আসবে এবং দেখবে যে জামাআত শুরু হয়ে গেছে তখন সে ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই জামাআতে শরীক হয়ে যাবে। তখন থেকেই সে সওয়াব পেতে থাকবে। কিমত্মু অনেক লোককেই দেখা যায় যে, যদি রুকূ না পায় তাহলে অপেক্ষা করতে থাকে এবং ইমাম দাঁড়ালে জামাআতে শরীক হয়। এটা সঠিক নয়।
মাসআলা :
১. রাক‘আত ধরার জন্য কাতারে পৌঁছার আগে সালাত শুরু করা উচিত নয়। একদা আবু বকর (রাঃ) কাতারে পৌঁছার আগেই রুকূতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৩; আবু দাউদ, হা/৬৭৩।]
২. রাক‘আত গণ্য হওয়ার জন্য ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে মুক্তাদী রুকূতে গিয়ে কিছুটা স্থিরতা অবলম্বন করার মতো সময় পাওয়া জরুরি। মুক্তাদী রুকূতে যেতে না যেতে যদি ইমাম রুকূ থেকে উঠে যান তবে আর রাক‘আত গণ্য হবে না।
৩. শুধু তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকূতে চলে যাওয়া জায়েয আছে। তবে উত্তম হলো প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর আরেকটি তাকবীর দিয়ে রুকূতে যাবে। যদি তাকবীর বলার আগে মাথা নীচু করে ফেলে তাহলে সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলা সালাতের একটি রুকন।
৪. ইমামের উচিত হলো প্রথম রাক‘আত একটু দীর্ঘায়িত করা। যাতে পেছনে থাকা মুসল্লিগণ প্রথম রাক‘আতে শামিল হতে পারে। ইমামের রুকূতে চলে যাওয়ার পর তিনি যদি অনুভব করতে পারেন যে, পেছনে কেউ সালাত ধরার জন্য আসছে তবে সামান্য দেরি করা দোষণীয় নয়। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪৯৪ পৃঃ।]
ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় কেবল তাঁর অনুসরণ করার জন্য। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩০৪; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬০১; মিশকাত হা/১১৩৯।] সুতরাং মুক্তাদীগণ ইমামের পেছনে পেছনে তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে।
বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সিজদায় গিয়ে মাটিতে চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পিঠ ঝুঁকাত না। [সহীহ বুখারী, হা/৮১১; সহীহ মুসলিম, হা/১০৯০; বায়হাকী, হা/২৪২৭; মিশকাত হা/১১৩৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মুক্তাদী যদি ইমামের আগে মাথা উঠায় (অর্থাৎ রুকূ-সিজদা থেকে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়), তবে (কিয়ামতের দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথার ন্যায় (অর্থাৎ তার সালাত কবুল হবে না)। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৯৯১; আবু দাউদ, হা/৬২৩; তিরমিযী, হা/৫৮২; ইবনে মাজাহ, হা/৯৬১; মিশকাত হা/১১৪১, ১১৩৮।]
ইমামের পেছনে যারা থাকবে তারা ইমামের সমস্ত কাজ অনুসরণ করে চলবে। ইমাম রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তারা রুকূতে যাবে না। ইমাম মাথা না উঠানো পর্যন্ত তারা মাথা উঠাবে না।
বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সিজদায় গিয়ে মাটিতে চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পিঠ ঝুঁকাত না। [সহীহ বুখারী, হা/৮১১; সহীহ মুসলিম, হা/১০৯০; বায়হাকী, হা/২৪২৭; মিশকাত হা/১১৩৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মুক্তাদী যদি ইমামের আগে মাথা উঠায় (অর্থাৎ রুকূ-সিজদা থেকে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়), তবে (কিয়ামতের দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথার ন্যায় (অর্থাৎ তার সালাত কবুল হবে না)। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৯৯১; আবু দাউদ, হা/৬২৩; তিরমিযী, হা/৫৮২; ইবনে মাজাহ, হা/৯৬১; মিশকাত হা/১১৪১, ১১৩৮।]
ইমামের পেছনে যারা থাকবে তারা ইমামের সমস্ত কাজ অনুসরণ করে চলবে। ইমাম রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তারা রুকূতে যাবে না। ইমাম মাথা না উঠানো পর্যন্ত তারা মাথা উঠাবে না।
সাহু সিজদা এর অর্থ হলো ভুলের জন্য সিজদা করা। সালাত আদায়কালে কোন ভুল করে ফেললে, ঐ ভুল সংশোধন করার জন্য দুটি সিজদা করাকে সাহু সিজদা বলে।
যেসব ভুলের জন্য সাহু সিজদা করা প্রয়োজন :
১. যদি নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে বেশি আদায় করা হয়।
২. যদি নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে কম আদায় করা হয়।
৩. কত রাক‘আত সালাত আদায় করা হয়েছে সে সম্পর্কে যদি সন্দেহ থাকে।
৪. সালাতের কোন ওয়াজিব যদি বাদ পড়ে যায়।
সালাতের মধ্যে যদি কোন ফরয কাজ (আরকান বা আহকাম) ছুটে যায় তাহলে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কিমত্মু কোন সুন্নাত ছুটে গেলে সাহু সিজদারও প্রয়োজন হয় না।
সাহু সিজদার নিয়ম :
সাহু সিজদা দেয়ার দুটি নিয়ম রয়েছে-
১. সালাতের শেষ বৈঠকে সবকিছু পাঠ করার পর সালাম ফিরানোর আগে দুটি সিজদা করতে হবে, তারপর সালাম ফিরাতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত পড়ালেন এবং প্রথম দু’রাক‘আতের পর না বসেই অর্থাৎ তাশাহ্হুদ না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুক্তাদীগণও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি যখন সালাত প্রায় পূর্ণ করে ফেলেছেন আর মুক্তাদীগণও সালাম ফিরানোর জন্য অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন তিনি সালাম ফিরানোর আগে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম, হা/১২৯৭।]
২. সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত পড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? সাহাবী বললেন, আপনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালামের পর দুটি সাহু সিজদা করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৬; আবু দাউদ, হা/১০২১; তিরমিযী, হা/৩৯২; নাসাঈ, হা/১২৫৫।]
নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে বেশি আদায় করলে :
সালাত আদায়কালে ভুলবশত ১ রাক‘আত বেশি আদায় করলে বা ১টি সিজদা বেশি হয়ে গেলে, সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সিজদা করে আবার সালাম ফিরাতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত আদায় করলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাতে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন, সেটা কী? সাহাবাগণ বললেন, আপনি ৫ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দুটি সাহু সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, সালাতে যদি নতুন কিছু হতো তবে তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিতাম। তবে আমিও একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল কর, আমারও তেমন ভুল হয়। অতএব আমি যদি ভুল করি, তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয়, তাহলে তখন তোমার যা সঠিক মনে হবে তার ভিত্তিতে সালাত পূর্ণ করবে। তারপর দুটি সাহু সিজদা দিবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০১; সহীহ মুসলিম, হা/১৩০২; আবু দাউদ, হা/১০২২।]
নির্ধারিত রাক‘আতের কম আদায় করলে :
ভুলবশত ১ অথবা ২ রাক‘আত সালাত কম আদায় করে সালাম ফিরানোর পরই যদি মনে পড়ে, তাহলে সালাত আদায়কারী তার বাকী রাক‘আতগুলো আদায় করে সালাম ফিরাবে। এরপর তাকবীর দিয়ে দুটি সাহু সিজদা করবে। এরপর আর সালাম ফিরাতে হবে না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিয়ে যোহরের বা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং দুই রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন এবং উঠে অন্য জায়গায় দাঁড়ালেন। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো সালাত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। আর সেখানে আবু বকর ও উমর (রাঃ)ও ছিলেন। কিন্তু কেউই কোন কথা বলতে সাহস করলেন না। এ সময় এক ব্যক্তি, যাকে যুলইয়াদাইন নামে ডাকা হতো, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রশ্ন করে বসলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এর কোনটিই হয়নি। যুলইয়াদাইন বললেন, যে কোনও একটি অবশ্যই হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, যুলইয়াদাইন কি সত্য বলছে? তারা বললো, হ্যাঁ- দুই রাক‘আত আদায় করা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, এরপর তাকবীর দিয়ে মাথা উঠালেন, আবার তাকবীর বলে সিজদা করলেন, এরপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৩।]
রাক‘আতের ব্যাপারে সন্দেহ হলে :
সালাত আদায়কালে কত রাক‘আত আদায় করা হয়েছে- এ সন্দেহ হলে যে কয় রাক‘আত আদায় করা হয়েছে বলে মন সায় দেবে, তার উপর ভিত্তি করে সালাত শেষ করে সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাহু সিজদা করবে, এরপর সালাম ফিরাবে।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে সন্দেহ করে যে- সে তিন রাক‘আত না চার রাক‘আত আদায় করেছে, তখন সে সন্দেহ পরিত্যাগ করবে এবং যে কয় রাক‘আতের ব্যাপারে মন দৃঢ়ভাবে সায় দিচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে সালাত সম্পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাহু সিজদা করবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭৯৯; দার কুতনী, হা/১৩৯৮।]
ইমাম ভুল করলে করণীয় :
যদি ইমাম সালাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন অথবা লোকমা দিয়ে মুক্তাদীগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পরপর দুটি সাহু সিজদা দেবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩০০; নাসাঈ, হা/১২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭০৭; মিশকাত হা/১০১৫।]
যদি রাক‘আত বেশি পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন, অতঃপর ভুল ধরা পড়ে, তখন (পূর্বের ন্যায় বসে) তাকবীর দিয়ে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪০১; সহীহ মুসলিম, হা/১৩০২; আবু দাউদ, হা/১০২২; মিশকাত হা/১০১৬।]
যদি রাক‘আত কম করে সালাম ফিরিয়ে নেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে বাকী সালাত আদায় করবেন এবং সালাম ফিরাবেন। অতঃপর দুটি সাহু সিজদা দেবেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৯; আবু দাউদ, হা/১০১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২০০; মিশকাত হা/১০১৭।]
ইমামকে কীভাবে লোকমা দেবে :
ইমামের ভুল হলে পুরুষ মুক্তাদী উচ্চৈঃস্বরে ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ বলবে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতের পিঠে হাত মেরে শব্দ করে লোকমা দেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬; আবু দাউদ, হা/৯৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৫৩; মিশকাত হা/৯৮৮।] অর্থাৎ ভুল স্মরণ করিয়ে দেবে। এখানে নারী ও পুরুষের লোকমা দানের পৃথক পদ্ধতির কারণ হলো এই যে, নারীদের কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত। যা প্রকাশ পেলে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি হতে পারে।
সাহু সিজদার পর তাশাহ্হুদ পড়া :
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত থাকলেও সহীহ মত হচ্ছে, সাহু সিজদা দেয়ার পর আবার নতুন করে তাশাহ্হুদ, দরূদ ইত্যাদি পড়তে হবে না। কেননা তা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়নি।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে হাদীসে সাহু সিজদা করার পর তাশাহ্হুদ পড়ার কথা বলা হয়েছে সেটি শায (বিরল) এবং সহীহ নয়। সুতরাং সহীহ হাদীসের বিপরীতে এ হাদীসের উপর আমল করা যাবে না। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪১৫ পৃঃ।]
একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা :
অনেকে কেবল ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে থাকেন। একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দেয়ার কথা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা করাকে বিদআত বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, ১/২২২ পৃঃ।] সুতরাং দু’দিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে অথবা পরে সাহু সিজদা করাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত।
যেসব ভুলের জন্য সাহু সিজদা করা প্রয়োজন :
১. যদি নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে বেশি আদায় করা হয়।
২. যদি নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে কম আদায় করা হয়।
৩. কত রাক‘আত সালাত আদায় করা হয়েছে সে সম্পর্কে যদি সন্দেহ থাকে।
৪. সালাতের কোন ওয়াজিব যদি বাদ পড়ে যায়।
সালাতের মধ্যে যদি কোন ফরয কাজ (আরকান বা আহকাম) ছুটে যায় তাহলে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কিমত্মু কোন সুন্নাত ছুটে গেলে সাহু সিজদারও প্রয়োজন হয় না।
সাহু সিজদার নিয়ম :
সাহু সিজদা দেয়ার দুটি নিয়ম রয়েছে-
১. সালাতের শেষ বৈঠকে সবকিছু পাঠ করার পর সালাম ফিরানোর আগে দুটি সিজদা করতে হবে, তারপর সালাম ফিরাতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত পড়ালেন এবং প্রথম দু’রাক‘আতের পর না বসেই অর্থাৎ তাশাহ্হুদ না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুক্তাদীগণও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি যখন সালাত প্রায় পূর্ণ করে ফেলেছেন আর মুক্তাদীগণও সালাম ফিরানোর জন্য অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন তিনি সালাম ফিরানোর আগে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম, হা/১২৯৭।]
২. সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত পড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? সাহাবী বললেন, আপনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালামের পর দুটি সাহু সিজদা করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৬; আবু দাউদ, হা/১০২১; তিরমিযী, হা/৩৯২; নাসাঈ, হা/১২৫৫।]
নির্ধারিত রাক‘আতের চেয়ে বেশি আদায় করলে :
সালাত আদায়কালে ভুলবশত ১ রাক‘আত বেশি আদায় করলে বা ১টি সিজদা বেশি হয়ে গেলে, সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সিজদা করে আবার সালাম ফিরাতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত আদায় করলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাতে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন, সেটা কী? সাহাবাগণ বললেন, আপনি ৫ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দুটি সাহু সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, সালাতে যদি নতুন কিছু হতো তবে তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিতাম। তবে আমিও একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল কর, আমারও তেমন ভুল হয়। অতএব আমি যদি ভুল করি, তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয়, তাহলে তখন তোমার যা সঠিক মনে হবে তার ভিত্তিতে সালাত পূর্ণ করবে। তারপর দুটি সাহু সিজদা দিবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০১; সহীহ মুসলিম, হা/১৩০২; আবু দাউদ, হা/১০২২।]
নির্ধারিত রাক‘আতের কম আদায় করলে :
ভুলবশত ১ অথবা ২ রাক‘আত সালাত কম আদায় করে সালাম ফিরানোর পরই যদি মনে পড়ে, তাহলে সালাত আদায়কারী তার বাকী রাক‘আতগুলো আদায় করে সালাম ফিরাবে। এরপর তাকবীর দিয়ে দুটি সাহু সিজদা করবে। এরপর আর সালাম ফিরাতে হবে না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিয়ে যোহরের বা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং দুই রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন এবং উঠে অন্য জায়গায় দাঁড়ালেন। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো সালাত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। আর সেখানে আবু বকর ও উমর (রাঃ)ও ছিলেন। কিন্তু কেউই কোন কথা বলতে সাহস করলেন না। এ সময় এক ব্যক্তি, যাকে যুলইয়াদাইন নামে ডাকা হতো, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রশ্ন করে বসলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এর কোনটিই হয়নি। যুলইয়াদাইন বললেন, যে কোনও একটি অবশ্যই হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, যুলইয়াদাইন কি সত্য বলছে? তারা বললো, হ্যাঁ- দুই রাক‘আত আদায় করা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, এরপর তাকবীর দিয়ে মাথা উঠালেন, আবার তাকবীর বলে সিজদা করলেন, এরপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৩।]
রাক‘আতের ব্যাপারে সন্দেহ হলে :
সালাত আদায়কালে কত রাক‘আত আদায় করা হয়েছে- এ সন্দেহ হলে যে কয় রাক‘আত আদায় করা হয়েছে বলে মন সায় দেবে, তার উপর ভিত্তি করে সালাত শেষ করে সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাহু সিজদা করবে, এরপর সালাম ফিরাবে।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে সন্দেহ করে যে- সে তিন রাক‘আত না চার রাক‘আত আদায় করেছে, তখন সে সন্দেহ পরিত্যাগ করবে এবং যে কয় রাক‘আতের ব্যাপারে মন দৃঢ়ভাবে সায় দিচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে সালাত সম্পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাহু সিজদা করবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭৯৯; দার কুতনী, হা/১৩৯৮।]
ইমাম ভুল করলে করণীয় :
যদি ইমাম সালাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন অথবা লোকমা দিয়ে মুক্তাদীগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পরপর দুটি সাহু সিজদা দেবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩০০; নাসাঈ, হা/১২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭০৭; মিশকাত হা/১০১৫।]
যদি রাক‘আত বেশি পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন, অতঃপর ভুল ধরা পড়ে, তখন (পূর্বের ন্যায় বসে) তাকবীর দিয়ে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪০১; সহীহ মুসলিম, হা/১৩০২; আবু দাউদ, হা/১০২২; মিশকাত হা/১০১৬।]
যদি রাক‘আত কম করে সালাম ফিরিয়ে নেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে বাকী সালাত আদায় করবেন এবং সালাম ফিরাবেন। অতঃপর দুটি সাহু সিজদা দেবেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৯; আবু দাউদ, হা/১০১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২০০; মিশকাত হা/১০১৭।]
ইমামকে কীভাবে লোকমা দেবে :
ইমামের ভুল হলে পুরুষ মুক্তাদী উচ্চৈঃস্বরে ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ বলবে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতের পিঠে হাত মেরে শব্দ করে লোকমা দেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬; আবু দাউদ, হা/৯৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৫৩; মিশকাত হা/৯৮৮।] অর্থাৎ ভুল স্মরণ করিয়ে দেবে। এখানে নারী ও পুরুষের লোকমা দানের পৃথক পদ্ধতির কারণ হলো এই যে, নারীদের কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত। যা প্রকাশ পেলে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি হতে পারে।
সাহু সিজদার পর তাশাহ্হুদ পড়া :
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত থাকলেও সহীহ মত হচ্ছে, সাহু সিজদা দেয়ার পর আবার নতুন করে তাশাহ্হুদ, দরূদ ইত্যাদি পড়তে হবে না। কেননা তা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়নি।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে হাদীসে সাহু সিজদা করার পর তাশাহ্হুদ পড়ার কথা বলা হয়েছে সেটি শায (বিরল) এবং সহীহ নয়। সুতরাং সহীহ হাদীসের বিপরীতে এ হাদীসের উপর আমল করা যাবে না। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪১৫ পৃঃ।]
একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা :
অনেকে কেবল ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে থাকেন। একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দেয়ার কথা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা করাকে বিদআত বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, ১/২২২ পৃঃ।] সুতরাং দু’দিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে অথবা পরে সাহু সিজদা করাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত।
জুমু‘আ শব্দের অর্থ হচ্ছে সমবেত হওয়া, একত্রিত হওয়া। সপ্তাহের এ দিনে সকল মুসল্লি একত্রিত হয়ে এ সালাত আদায় করে বিধায় এ সালাতকে সালাতুল জুমু‘আ বলা হয়।
জুমু‘আর দিনের মর্যাদা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুনিয়াতে আমরা অন্যসব জাতির পরে এসেছি, কিন্তু হাশরের দিন আমরা হব সকলের অগ্রবর্তী, যদিও আমাদের আগে অন্যদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর এই জুমু‘আর দিনের সম্মান করা অন্যদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল কিন্তু তারা তাতে মতভেদ করেছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ ব্যাপারে পথ নির্দেশ দিলেন এবং আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করলেন। সুতরাং অন্যান্য সকল জাতিই এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে রয়ে গেছে। যেমনিভাবে ইয়াহুদিরা শনিবারকে তাদের পবিত্র দিন মনে করে এবং খৃষ্টানরা রবিবারকে তাদের পবিত্র দিন মনে করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/২০১৮; নাসাঈ, হা/১৩৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৯৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭২০; মিশকাত, হা/১৩৫৪।] অর্থাৎ তাদের মধ্যে পবিত্র দিনের ব্যাপারেই ঐক্য নেই। তাছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো তো আছেই।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যেসব দিনের সূচনা হয়, তার মধ্যে জুমু‘আর দিনই সর্বোত্তম। কারণ এ দিনেই আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, এ দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছে; আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪১; তিরমিযী, হা/২০১৪; আবু দাউদ, হা/১০৪৮; তিরমিযী, হা/ ৪৮৮; নাসাঈ, হা/১৩৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৯৯; মিশকাত, হা/১৩৫৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যত দিনের উপর সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৭৩।]
জুমু‘আর দিন গোনাহ ক্ষমা হওয়ার দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মুমিন বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন যে ব্যক্তি ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর মসজিদে এসে নীরবতা অবলম্বন করবে, ইমামের খুৎবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করবে, তার এ কাজ পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার গোনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৮৩; আবু দাউদ, হা/১১১৩; দারেমী, হা/১৫৪১।]
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুল হয় :
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুল হওয়ার দিন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, কোন মুসলিম বান্দা যদি সে বিশেষ সময়টি পায় এবং আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে তা দান করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ হাত দিয়ে ইশারা করে দেখান যে, মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। [সহীহ বুখারী, হা/৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১১৮২; তিরমিযী, হা/৪৯১; নাসাঈ, হা/১৪৩৫।]
অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কেবল দিনটির দিকে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। কিমত্মু নির্দিষ্টভাবে কোন কিছু বলেননি। তবে সালফে সালেহীনগণ এ ব্যাপারে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যেমন-
১. একদল বলেন, জুমু‘আর দিনের সেই বিশেষ সময়টি হচ্ছে, ইমামের মিম্বারে বসার পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত।
২. আবার আরেক দল বলেন, উক্ত সময়টি হচ্ছে, আসরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া :
জুমু‘আর সালাত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। জুমু‘আর সালাতে যোগদানের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিমদেরকে সব ধরনের কাজকর্ম ও ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রেখে মসজিদে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। অতঃপর যখন সালাত শেষ হয় তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। আর তোমরা আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ৯, ১০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ উপযুক্ত কারণ ছাড়া জুমু‘আর সালাত ত্যাগকারীদের উদ্দেশ্যে চরমভাবে সাবধানতার বাণী উচ্চারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। [নাসাঈ, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/৩৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭২১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১২২০; বায়হাকী, হা/৫৩৬৭; জামেউস সগীর, হা/৭৪৮৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছেন, লোকেরা যেন অবশ্যই জুমু‘আ ত্যাগ না করে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৩৯; নাসাঈ, হা/১৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯০।]
আবুল জা‘দ যামরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমু‘আর সালাত ত্যাগ করল, সে ব্যক্তি অবশ্যই ইসলামকে নিজের পেছনে ফেলে দিল। [আবু দাউদ, হা/ ১০৫২; তিরমিযী, হা/৫০০; নাসাঈ, হা/১৩৭২।]
জুমু‘আর সালাতের সময় :
জুমু‘আর সালাতের সময় আর যোহরের সালাতের সময় একই অর্থাৎ সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আ তখন আদায় করতেন, যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ত। [সহীহ বুখারী, হা/৯০৪; আবু দাউদ, হা/১০৮৪।]
জুমু‘আ যাদের জন্য অত্যাবশ্যক :
তারেক ইবনে শিহাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর সালাত আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের উপর আবশ্যক। তবে ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালক, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়। [আবু দাউদ, হা/১০৬৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫৭৮৭।]
উপরে বর্ণিতদের জুমু‘আ অবশ্য পালনীয় না হলেও, যোহরের সালাত ফরয।
জুমু‘আর দিনের মর্যাদা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুনিয়াতে আমরা অন্যসব জাতির পরে এসেছি, কিন্তু হাশরের দিন আমরা হব সকলের অগ্রবর্তী, যদিও আমাদের আগে অন্যদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর এই জুমু‘আর দিনের সম্মান করা অন্যদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল কিন্তু তারা তাতে মতভেদ করেছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ ব্যাপারে পথ নির্দেশ দিলেন এবং আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করলেন। সুতরাং অন্যান্য সকল জাতিই এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে রয়ে গেছে। যেমনিভাবে ইয়াহুদিরা শনিবারকে তাদের পবিত্র দিন মনে করে এবং খৃষ্টানরা রবিবারকে তাদের পবিত্র দিন মনে করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/২০১৮; নাসাঈ, হা/১৩৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৯৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭২০; মিশকাত, হা/১৩৫৪।] অর্থাৎ তাদের মধ্যে পবিত্র দিনের ব্যাপারেই ঐক্য নেই। তাছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো তো আছেই।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যেসব দিনের সূচনা হয়, তার মধ্যে জুমু‘আর দিনই সর্বোত্তম। কারণ এ দিনেই আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, এ দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছে; আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪১; তিরমিযী, হা/২০১৪; আবু দাউদ, হা/১০৪৮; তিরমিযী, হা/ ৪৮৮; নাসাঈ, হা/১৩৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৯৯; মিশকাত, হা/১৩৫৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যত দিনের উপর সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৭৩।]
জুমু‘আর দিন গোনাহ ক্ষমা হওয়ার দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মুমিন বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন যে ব্যক্তি ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর মসজিদে এসে নীরবতা অবলম্বন করবে, ইমামের খুৎবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করবে, তার এ কাজ পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার গোনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৮৩; আবু দাউদ, হা/১১১৩; দারেমী, হা/১৫৪১।]
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুল হয় :
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুল হওয়ার দিন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, কোন মুসলিম বান্দা যদি সে বিশেষ সময়টি পায় এবং আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে তা দান করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ হাত দিয়ে ইশারা করে দেখান যে, মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। [সহীহ বুখারী, হা/৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১১৮২; তিরমিযী, হা/৪৯১; নাসাঈ, হা/১৪৩৫।]
অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কেবল দিনটির দিকে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। কিমত্মু নির্দিষ্টভাবে কোন কিছু বলেননি। তবে সালফে সালেহীনগণ এ ব্যাপারে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যেমন-
১. একদল বলেন, জুমু‘আর দিনের সেই বিশেষ সময়টি হচ্ছে, ইমামের মিম্বারে বসার পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত।
২. আবার আরেক দল বলেন, উক্ত সময়টি হচ্ছে, আসরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া :
জুমু‘আর সালাত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। জুমু‘আর সালাতে যোগদানের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিমদেরকে সব ধরনের কাজকর্ম ও ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রেখে মসজিদে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। অতঃপর যখন সালাত শেষ হয় তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। আর তোমরা আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ৯, ১০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ উপযুক্ত কারণ ছাড়া জুমু‘আর সালাত ত্যাগকারীদের উদ্দেশ্যে চরমভাবে সাবধানতার বাণী উচ্চারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। [নাসাঈ, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/৩৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭২১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১২২০; বায়হাকী, হা/৫৩৬৭; জামেউস সগীর, হা/৭৪৮৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছেন, লোকেরা যেন অবশ্যই জুমু‘আ ত্যাগ না করে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৩৯; নাসাঈ, হা/১৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯০।]
আবুল জা‘দ যামরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমু‘আর সালাত ত্যাগ করল, সে ব্যক্তি অবশ্যই ইসলামকে নিজের পেছনে ফেলে দিল। [আবু দাউদ, হা/ ১০৫২; তিরমিযী, হা/৫০০; নাসাঈ, হা/১৩৭২।]
জুমু‘আর সালাতের সময় :
জুমু‘আর সালাতের সময় আর যোহরের সালাতের সময় একই অর্থাৎ সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আ তখন আদায় করতেন, যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ত। [সহীহ বুখারী, হা/৯০৪; আবু দাউদ, হা/১০৮৪।]
জুমু‘আ যাদের জন্য অত্যাবশ্যক :
তারেক ইবনে শিহাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর সালাত আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের উপর আবশ্যক। তবে ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালক, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়। [আবু দাউদ, হা/১০৬৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫৭৮৭।]
উপরে বর্ণিতদের জুমু‘আ অবশ্য পালনীয় না হলেও, যোহরের সালাত ফরয।
১. জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা সিজদা এবং সূরা দাহর পাঠ করা মুস্তাহাব। [সহীহ বুখারী, হা/৮৯১; সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৮; আবু দাউদ, হা/১০৭৬; তিরমিযী, হা/৫২০;ইবনে মাজাহ, হা/৮২১ নাসাঈ, হা/১৪২১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫০০৭; দারেমী, হা/১৫৪২; বায়হাকী, হা/১৫১৮।]
২. জুমু‘আর দিন বেশি বেশি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। [আবু দাউদ, হা/১০৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৫; নাসাঈ, হা/১৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৩৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০২৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৭২; মিশকাত, হা/১৩৬১।]
৩. জুমু‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত আল্লাহ তার জন্য নূর দান করবেন। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২; জামেউস সগীর, হা/১১৪১৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৭৬; মিশকাত, হা/২১৭৫।]
৪. জুমু‘আর দিন বেশি বেশি দু‘আ করা মুস্তাহাব। কেননা হাদীসে রয়েছে, জুমু‘আর দিন এমন একটি সময় রয়েছে, যাতে বান্দা কিছু চাইলে তাকে তা দান করা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৪; তিরমিযী, হা/৪৯১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪১; আবু দাউদ, হা/১০৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৫৫২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭২; মিশকাত, হা/১৩৬৩।]
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুলের ঐ সময়টির ব্যাপারে অনেক মতামত রয়েছে। তবে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জুমু‘আর দিন পরিচ্ছন্নতা :
যেহেতু এ সালাতে অনেক লোক এক সাথে অংশগ্রহণ করে, তাই এই সালাতে উপস্থিত হওয়ার আগে শারীরিক পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করল, নিজেকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন করল, ঘরে থাকা ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করল, যতদূর সম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করল, অতঃপর ধীর পদক্ষেপে মসজিদে প্রবেশ করল এবং আশেপাশের কোন মুসল্লিকে বিরক্ত না করল অর্থাৎ ধাক্কা-ধাক্কি করে কাউকে না সরিয়ে নিজের জায়গা করে নিল এবং নফল সালাত আদায় করে নিয়ে ইমামের খুৎবা শোনার জন্য চুপ করে বসল এবং খুৎবা শুনল, তার এ জুমু‘আহ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যকার যাবতীয় (ছোট) পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৯১০; দারেমী, হা/১৫৪১; ইবনে মাজাহ, হা/১০৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৫৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৩; মিশকাত, হা/১৩৮১।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন জুমু‘আর সালাতে আসবে, তখন সে যেন গোসল করে আসে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩১; সহীহ বুখারী, হা/৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৪০; তিরমিযী, হা/৪৯২; নাসাঈ, হা/১৩৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৮; মিশকাত, হা/৫৩৭।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন গোসল করা সকল সাবালক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২২৮, ২৩০; সহীহ বুখারী, হা/৮৫৮, ৮৭৯, ৮৫৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪১; নাসাঈ, হা/১৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৯; মিশকাত, হা/৫৩৮।]
জুমু‘আর সালাতে তাড়াতাড়ি উপস্থিত হওয়া :
শুক্রবার জুমু‘আর সালাতের জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফযীলত অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করল, অতঃপর মসজিদের দিকে রওয়ানা দিল এবং প্রথম পর্যায়ে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি কুরবানী করার সওয়াব পেল। এরপর যে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি গরু কুরবানী করার সওয়াব পেল। এরপর যে তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি ভেড়া কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর চতুর্থ পর্যায়ে যে প্রবেশ করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর যে ব্যক্তি পঞ্চম পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর যখন ইমাম বের হন তখন ফেরেশতাগণ (লিখা বন্ধ করে) খুৎবা শুনতে থাকেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২২৭; সহীহ বুখারী, হা/৮৮১; সহীহ মুসলিম, হা/২০০১; আবু দাউদ, হা/৩৫১; তিরমিযী, হা/৪৯৯।]
জুমু‘আর সালাতে পরে এসে মুসল্লিদের ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া উচিত নয় :
জুমু‘আর দিন মসজিদে পরে এসে মুসল্লিদের ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া উচিত নয়। বরং পেছনে যেখানেই জায়গা পাবে সেখানেই বসে পড়বে।
আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে বসা ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি বসে পড়ো। কারণ তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। [আবু দাউদ হা/১১২০; নাসাঈ, হা/১৩৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮১১।]
জুমু‘আর কিরাআত :
জুমু‘আর সালাতে ইমাম প্রথম রাক‘আতে সূরা জুমু‘আ অথবা সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা মুনাফিকূন অথবা সূরা গাশিয়াহ পাঠ করবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; ইবনে মাজাহ, হা/১১২০; মিশকাত হা/৮৪০।] জুমু‘আর দিন ফজরের ১ম রাক‘আতে সূরা সিজদা ও ২য় রাক‘আতে সূরা দাহর পাঠ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩২৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৩; মিশকাত হা/৮৩৮।] অন্য সূরাও পড়া যাবে। তবে এগুলো পাঠ করা সুন্নাত। কেননা এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায়ই পাঠ করতেন।
জুমু‘আর সালাত কত রাক‘আত :
জুমু‘আর ফরয সালাত হচ্ছে দু’রাক‘আত। জুমু‘আর খুৎবা শেষ হওয়ার পর ‘ইকামত’ দেয়া হয়, এরপর অন্য সালাত যেভাবে জামাআতে আদায় করা হয় সেভাবেই ইমাম মুসল্লিদেরকে নিয়ে দু’রাক‘আত জুমু‘আর ফরয সালাত আদায় করবেন।
জুমু‘আর দিন মহিলাদের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
মহিলা যদি মসজিদে গিয়ে ইমামের সাথে জুমু‘আর সালাত আদায় করে, তবে তাকে ইমামের অনুসরণ করে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে হবে। কিমত্মু যদি নিজ গৃহে সালাত আদায় করে, তাহলে তাকে চার রাক‘আত যোহরের সালাত আদায় করতে হবে।
জুমু‘আর দিন সুন্নাত সালাত :
জুমু‘আর সালাতে যোগদানকারী মসজিদে প্রবেশ করে ইমামের খুৎবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা নফল সালাত আদায় করতে পারবে। তবে যদি সময় কম থাকে, তবে অন্তত দু’রাক‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ আদায় করে নিতে হবে। তারপর বসে খুৎবা শুনতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
জুমু‘আর ফরয আদায়ের পর ৪ রাক‘আত সুন্নাত পড়বে। এ ৪ রাক‘আত সালাত এক সাথে আদায় না করে দুই সালামে আদায় করা উত্তম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর পরে সালাত আদায় করতে চায় সে যেন ৪ রাক‘আত আদায় করে। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭৫; আবু দাউদ, হা/১১৩৩; তিরমিযী, হা/৫২৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৭৪।]
তবে কেউ যদি মসজিদে সুন্নাত আদায় না করে বাড়িতে গিয়ে আদায় করে তবে সে দু’রাক‘আত পড়বে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে দু’রাক‘আত, যোহরের পর দু’রাক‘আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’রাক‘আত এবং এশার পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু‘আর দিন নিজের ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। ঘরে ফিরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৯৮; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/২০২৭; আবু দাউদ, হা/১২৫৪; নাসাঈ, হা/৮৭৩।]
এ হাদীসে জুমু‘আর সালাতের পূর্বে কোন সুন্নাত সালাত আদায়ের কথা উল্লেখ নেই।
আখেরী যোহর নামে জুমু‘আর সালাতের পরে পুনরায় যোহরের চার রাক‘আত একই ওয়াক্তে পড়া বিদআত। কেননা জুমু‘আর পর যোহর পড়ার কোন দলীল নেই। তাছাড়া যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাত আদায় করে, তার উপর থেকে যোহরের ফরযিয়াত উঠে যায়। কারণ জুমু‘আ হলো যোহরের স্থলাভিষিক্ত। বাধ্যগত কারণে জুমু‘আর সালাত পড়তে অপারগ হলে যোহর পড়ে নেবে। [ফিকহুস সুন্নাহ ১/২২৬-২৭।] জুমু‘আর সালাত ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে বাকী এক রাক‘আত পড়ে দু’রাক‘আত পূর্ণ করে নেবে। কিমত্মু যদি ইমামকে সিজদা অবস্থায় অথবা শেষ বৈঠকে পায় তাহলে সে পূর্ণ চার রাক‘আত যোহরের সালাত আদায় করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩৮; তিরমিযী, হা/৫২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৪৭২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৪৮১; বায়হাকী, ৩/২০৪; মিশকাত হা/১৪১২।]
২. জুমু‘আর দিন বেশি বেশি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। [আবু দাউদ, হা/১০৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৫; নাসাঈ, হা/১৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৩৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০২৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৭২; মিশকাত, হা/১৩৬১।]
৩. জুমু‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত আল্লাহ তার জন্য নূর দান করবেন। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২; জামেউস সগীর, হা/১১৪১৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৭৬; মিশকাত, হা/২১৭৫।]
৪. জুমু‘আর দিন বেশি বেশি দু‘আ করা মুস্তাহাব। কেননা হাদীসে রয়েছে, জুমু‘আর দিন এমন একটি সময় রয়েছে, যাতে বান্দা কিছু চাইলে তাকে তা দান করা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৪; তিরমিযী, হা/৪৯১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪১; আবু দাউদ, হা/১০৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৫৫২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭২; মিশকাত, হা/১৩৬৩।]
জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুলের ঐ সময়টির ব্যাপারে অনেক মতামত রয়েছে। তবে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জুমু‘আর দিন পরিচ্ছন্নতা :
যেহেতু এ সালাতে অনেক লোক এক সাথে অংশগ্রহণ করে, তাই এই সালাতে উপস্থিত হওয়ার আগে শারীরিক পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করল, নিজেকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন করল, ঘরে থাকা ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করল, যতদূর সম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করল, অতঃপর ধীর পদক্ষেপে মসজিদে প্রবেশ করল এবং আশেপাশের কোন মুসল্লিকে বিরক্ত না করল অর্থাৎ ধাক্কা-ধাক্কি করে কাউকে না সরিয়ে নিজের জায়গা করে নিল এবং নফল সালাত আদায় করে নিয়ে ইমামের খুৎবা শোনার জন্য চুপ করে বসল এবং খুৎবা শুনল, তার এ জুমু‘আহ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যকার যাবতীয় (ছোট) পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৯১০; দারেমী, হা/১৫৪১; ইবনে মাজাহ, হা/১০৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৭৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৫৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৩; মিশকাত, হা/১৩৮১।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন জুমু‘আর সালাতে আসবে, তখন সে যেন গোসল করে আসে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩১; সহীহ বুখারী, হা/৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৪০; তিরমিযী, হা/৪৯২; নাসাঈ, হা/১৩৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৮; মিশকাত, হা/৫৩৭।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন গোসল করা সকল সাবালক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২২৮, ২৩০; সহীহ বুখারী, হা/৮৫৮, ৮৭৯, ৮৫৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪১; নাসাঈ, হা/১৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৯; মিশকাত, হা/৫৩৮।]
জুমু‘আর সালাতে তাড়াতাড়ি উপস্থিত হওয়া :
শুক্রবার জুমু‘আর সালাতের জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফযীলত অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করল, অতঃপর মসজিদের দিকে রওয়ানা দিল এবং প্রথম পর্যায়ে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি কুরবানী করার সওয়াব পেল। এরপর যে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি গরু কুরবানী করার সওয়াব পেল। এরপর যে তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি ভেড়া কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর চতুর্থ পর্যায়ে যে প্রবেশ করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর যে ব্যক্তি পঞ্চম পর্যায়ে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করার সওয়াব পেল। অতঃপর যখন ইমাম বের হন তখন ফেরেশতাগণ (লিখা বন্ধ করে) খুৎবা শুনতে থাকেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২২৭; সহীহ বুখারী, হা/৮৮১; সহীহ মুসলিম, হা/২০০১; আবু দাউদ, হা/৩৫১; তিরমিযী, হা/৪৯৯।]
জুমু‘আর সালাতে পরে এসে মুসল্লিদের ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া উচিত নয় :
জুমু‘আর দিন মসজিদে পরে এসে মুসল্লিদের ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া উচিত নয়। বরং পেছনে যেখানেই জায়গা পাবে সেখানেই বসে পড়বে।
আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে বসা ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি বসে পড়ো। কারণ তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। [আবু দাউদ হা/১১২০; নাসাঈ, হা/১৩৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮১১।]
জুমু‘আর কিরাআত :
জুমু‘আর সালাতে ইমাম প্রথম রাক‘আতে সূরা জুমু‘আ অথবা সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা মুনাফিকূন অথবা সূরা গাশিয়াহ পাঠ করবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; ইবনে মাজাহ, হা/১১২০; মিশকাত হা/৮৪০।] জুমু‘আর দিন ফজরের ১ম রাক‘আতে সূরা সিজদা ও ২য় রাক‘আতে সূরা দাহর পাঠ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩২৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৩; মিশকাত হা/৮৩৮।] অন্য সূরাও পড়া যাবে। তবে এগুলো পাঠ করা সুন্নাত। কেননা এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায়ই পাঠ করতেন।
জুমু‘আর সালাত কত রাক‘আত :
জুমু‘আর ফরয সালাত হচ্ছে দু’রাক‘আত। জুমু‘আর খুৎবা শেষ হওয়ার পর ‘ইকামত’ দেয়া হয়, এরপর অন্য সালাত যেভাবে জামাআতে আদায় করা হয় সেভাবেই ইমাম মুসল্লিদেরকে নিয়ে দু’রাক‘আত জুমু‘আর ফরয সালাত আদায় করবেন।
জুমু‘আর দিন মহিলাদের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
মহিলা যদি মসজিদে গিয়ে ইমামের সাথে জুমু‘আর সালাত আদায় করে, তবে তাকে ইমামের অনুসরণ করে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে হবে। কিমত্মু যদি নিজ গৃহে সালাত আদায় করে, তাহলে তাকে চার রাক‘আত যোহরের সালাত আদায় করতে হবে।
জুমু‘আর দিন সুন্নাত সালাত :
জুমু‘আর সালাতে যোগদানকারী মসজিদে প্রবেশ করে ইমামের খুৎবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা নফল সালাত আদায় করতে পারবে। তবে যদি সময় কম থাকে, তবে অন্তত দু’রাক‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ আদায় করে নিতে হবে। তারপর বসে খুৎবা শুনতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
জুমু‘আর ফরয আদায়ের পর ৪ রাক‘আত সুন্নাত পড়বে। এ ৪ রাক‘আত সালাত এক সাথে আদায় না করে দুই সালামে আদায় করা উত্তম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর পরে সালাত আদায় করতে চায় সে যেন ৪ রাক‘আত আদায় করে। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৭৫; আবু দাউদ, হা/১১৩৩; তিরমিযী, হা/৫২৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৭৪।]
তবে কেউ যদি মসজিদে সুন্নাত আদায় না করে বাড়িতে গিয়ে আদায় করে তবে সে দু’রাক‘আত পড়বে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে দু’রাক‘আত, যোহরের পর দু’রাক‘আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’রাক‘আত এবং এশার পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু‘আর দিন নিজের ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। ঘরে ফিরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৯৮; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/২০২৭; আবু দাউদ, হা/১২৫৪; নাসাঈ, হা/৮৭৩।]
এ হাদীসে জুমু‘আর সালাতের পূর্বে কোন সুন্নাত সালাত আদায়ের কথা উল্লেখ নেই।
আখেরী যোহর নামে জুমু‘আর সালাতের পরে পুনরায় যোহরের চার রাক‘আত একই ওয়াক্তে পড়া বিদআত। কেননা জুমু‘আর পর যোহর পড়ার কোন দলীল নেই। তাছাড়া যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাত আদায় করে, তার উপর থেকে যোহরের ফরযিয়াত উঠে যায়। কারণ জুমু‘আ হলো যোহরের স্থলাভিষিক্ত। বাধ্যগত কারণে জুমু‘আর সালাত পড়তে অপারগ হলে যোহর পড়ে নেবে। [ফিকহুস সুন্নাহ ১/২২৬-২৭।] জুমু‘আর সালাত ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে বাকী এক রাক‘আত পড়ে দু’রাক‘আত পূর্ণ করে নেবে। কিমত্মু যদি ইমামকে সিজদা অবস্থায় অথবা শেষ বৈঠকে পায় তাহলে সে পূর্ণ চার রাক‘আত যোহরের সালাত আদায় করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩৮; তিরমিযী, হা/৫২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৪৭২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৫৪৮১; বায়হাকী, ৩/২০৪; মিশকাত হা/১৪১২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় জুমু‘আর সালাতে একটি খুৎবা শুরুর আগে একটি আযান ও একটি ইকামত হতো।
আযান শেষ হলে জুমু‘আর জন্য দুটি খুৎবা দেয়া সুন্নাত, যার মাঝখানে একবার বসতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯১৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৯৫২; বায়হাকী, হা/৫৫৬৪; দারেমী, হা/১৫৫৯; মিশকাত হা/১৪০৫।] ইমাম মিম্বারে বসার সময় প্রথমে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করবেন। [ইবনে মাজাহ হা/১১০৯; বায়হাকী, হা/৫৫৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৬৯; জামেউস সগীর, হা/৮৮৭৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৭৬।] এ সময় তিনি হাতে একটি লাঠি নেবেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৮৮৯।] নিতান্ত কষ্টদায়ক না হলে সর্বদা দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করবেন। ১ম খুৎবায় হামদ, দরূদ ও কিরাআত ছাড়াও সকলকে উপদেশ দান করবেন, অতঃপর বসবেন। ২য় খুৎবায় হামদ ও দরূদসহ সকল মুসলমানের জন্য দু‘আ করবেন। প্রয়োজনে এ সময়েও উপদেশ দেয়া যায়। [নাসাঈ হা/১৪১৭-১৮; তিরমিযী হা/৫০৬।]
খুৎবা কোন ভাষায় দিতে হবে :
খুৎবা মাতৃভাষায় এবং অধিকাংশ মুসল্লিদের বোধগম্য ভাষায় হওয়া জরুরি। কেননা খুৎবা অর্থ ভাষণ, যা শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক।
আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِه لِيُبَيِّنَ لَهُمْ﴾
আমি সকল রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষা-ভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন) ব্যাখ্যা করে দেন। [সূরা ইবরাহীম- ৪।]
অতএব বুঝা গেল যে, সকল নবী-রাসূলগণই তাদের জাতির কাছে তাদের ভাষা অনুযায়ী প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺও সে অনুযায়ীই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল আরবি এবং তিনি যাদেরকে শিক্ষা দিতেন তাদের ভাষাও ছিল আরবি, তাই তিনি আরবি ভাষায় খুৎবা দিতেন। আর আলেমরা যেহেতু তাঁর উত্তরাধিকারী, সেহেতু প্রত্যেকের উচিত অধিকাংশ শ্রোতারা যে ভাষা বুঝতে পারবে সে ভাষায় খুৎবা প্রদান করা। অন্যথায় খুৎবার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কোন যুক্তি দাড় করানো ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন মসজিদে কেবল আরবি খুৎবা পাঠের যে প্রচলন রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খুৎবার উদ্দেশ্য বিরোধী। বর্তমানে মূল খুৎবার পূর্বে মিম্বারে বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখার মাধ্যমে যে তৃতীয় আরেকটি খুৎবা চালু করা হয়েছে তা সুন্নাতের খেলাফ। কেননা জুমু‘আর জন্য নির্ধারিত খুৎবা হলো দুটি, তিনটি নয়। তাছাড়া মূল খুৎবার পূর্বের সময়টি মুসল্লিদের নফল সালাতের সময়। অতএব সুন্নাত হলো, মিম্বারে দাঁড়িয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তাদের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করা।
খুৎবা সালাতের মতো নয়। সালাতে অন্য ভাষা ব্যবহার করা যায় না, কিন্তু খুৎবা তা নয়। যেমন খুৎবা দিতে গিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানো যায় কিন্তু সালাতে তা সম্ভব নয়। অতএব খুৎবা স্থানীয় ভাষায় হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
খুৎবা শোনার গুরুত্ব :
১. জুমু‘আর খুৎবা শুরু হলে চুপচাপ তা শোনা অপরিহার্য। খুৎবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে উচিত হলো, দ্রুত দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে যাওয়া এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন লোকদের সামনে খুৎবা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছ? ঐ ব্যক্তি বলল, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দাঁড়াও! দু’রাক‘আত সালাত আদায় করো। [সহীহ বুখারী, হা/৯৩০; সহীহ মুসলিম, হা/২০৫৫, ২০৬১; আবু দাউদ, হা/১১১৭; তিরমিযী, হা/৫১০; নাসাঈ, হা/১৪০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫০২।]
২. খুৎবা চলাকালীন সময় কথা বলা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন ইমামের খুৎবা চলাকালীন সময় তুমি তোমার সাথীকে যদি বল ‘চুপ করো’ তবে তুমিও অনর্থক কাজ করলে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩২; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০০২; আবু দাউদ, হা/১১১৪; তিরমিযী, হা/৫১২; নাসাঈ, হা/১৪০১; ইবনে মাজাহ, হা/১১১০; মিশকাত, হা/১৩৮৫।]
৩. খুৎবার আযানের সময় মসজিদে ঢুকলে দাঁড়িয়ে থেকে আযানের উত্তর না দিয়ে, তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে খুৎবা শোনার জন্য বসে পড়বে। কেননা আযানের জবাব দেয়া হলো মুস্তাহাব। আর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা এবং খুৎবা শোনা হলো এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. জুমু‘আর খুৎবা শ্রবণকালে ঘুম আসলে জায়গা পরিবর্তন করে বসবে। [তিরমিযী, হা/৫২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/১৩৯৪।] এতে ঘুমের ভাব দূর হতে পারে।
আযান শেষ হলে জুমু‘আর জন্য দুটি খুৎবা দেয়া সুন্নাত, যার মাঝখানে একবার বসতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯১৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৯৫২; বায়হাকী, হা/৫৫৬৪; দারেমী, হা/১৫৫৯; মিশকাত হা/১৪০৫।] ইমাম মিম্বারে বসার সময় প্রথমে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করবেন। [ইবনে মাজাহ হা/১১০৯; বায়হাকী, হা/৫৫৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৬৯; জামেউস সগীর, হা/৮৮৭৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৭৬।] এ সময় তিনি হাতে একটি লাঠি নেবেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৮৮৯।] নিতান্ত কষ্টদায়ক না হলে সর্বদা দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করবেন। ১ম খুৎবায় হামদ, দরূদ ও কিরাআত ছাড়াও সকলকে উপদেশ দান করবেন, অতঃপর বসবেন। ২য় খুৎবায় হামদ ও দরূদসহ সকল মুসলমানের জন্য দু‘আ করবেন। প্রয়োজনে এ সময়েও উপদেশ দেয়া যায়। [নাসাঈ হা/১৪১৭-১৮; তিরমিযী হা/৫০৬।]
খুৎবা কোন ভাষায় দিতে হবে :
খুৎবা মাতৃভাষায় এবং অধিকাংশ মুসল্লিদের বোধগম্য ভাষায় হওয়া জরুরি। কেননা খুৎবা অর্থ ভাষণ, যা শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক।
আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِه لِيُبَيِّنَ لَهُمْ﴾
আমি সকল রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষা-ভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন) ব্যাখ্যা করে দেন। [সূরা ইবরাহীম- ৪।]
অতএব বুঝা গেল যে, সকল নবী-রাসূলগণই তাদের জাতির কাছে তাদের ভাষা অনুযায়ী প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺও সে অনুযায়ীই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল আরবি এবং তিনি যাদেরকে শিক্ষা দিতেন তাদের ভাষাও ছিল আরবি, তাই তিনি আরবি ভাষায় খুৎবা দিতেন। আর আলেমরা যেহেতু তাঁর উত্তরাধিকারী, সেহেতু প্রত্যেকের উচিত অধিকাংশ শ্রোতারা যে ভাষা বুঝতে পারবে সে ভাষায় খুৎবা প্রদান করা। অন্যথায় খুৎবার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কোন যুক্তি দাড় করানো ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন মসজিদে কেবল আরবি খুৎবা পাঠের যে প্রচলন রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খুৎবার উদ্দেশ্য বিরোধী। বর্তমানে মূল খুৎবার পূর্বে মিম্বারে বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখার মাধ্যমে যে তৃতীয় আরেকটি খুৎবা চালু করা হয়েছে তা সুন্নাতের খেলাফ। কেননা জুমু‘আর জন্য নির্ধারিত খুৎবা হলো দুটি, তিনটি নয়। তাছাড়া মূল খুৎবার পূর্বের সময়টি মুসল্লিদের নফল সালাতের সময়। অতএব সুন্নাত হলো, মিম্বারে দাঁড়িয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তাদের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করা।
খুৎবা সালাতের মতো নয়। সালাতে অন্য ভাষা ব্যবহার করা যায় না, কিন্তু খুৎবা তা নয়। যেমন খুৎবা দিতে গিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানো যায় কিন্তু সালাতে তা সম্ভব নয়। অতএব খুৎবা স্থানীয় ভাষায় হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
খুৎবা শোনার গুরুত্ব :
১. জুমু‘আর খুৎবা শুরু হলে চুপচাপ তা শোনা অপরিহার্য। খুৎবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে উচিত হলো, দ্রুত দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে যাওয়া এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন লোকদের সামনে খুৎবা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছ? ঐ ব্যক্তি বলল, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দাঁড়াও! দু’রাক‘আত সালাত আদায় করো। [সহীহ বুখারী, হা/৯৩০; সহীহ মুসলিম, হা/২০৫৫, ২০৬১; আবু দাউদ, হা/১১১৭; তিরমিযী, হা/৫১০; নাসাঈ, হা/১৪০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫০২।]
২. খুৎবা চলাকালীন সময় কথা বলা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন ইমামের খুৎবা চলাকালীন সময় তুমি তোমার সাথীকে যদি বল ‘চুপ করো’ তবে তুমিও অনর্থক কাজ করলে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩২; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০০২; আবু দাউদ, হা/১১১৪; তিরমিযী, হা/৫১২; নাসাঈ, হা/১৪০১; ইবনে মাজাহ, হা/১১১০; মিশকাত, হা/১৩৮৫।]
৩. খুৎবার আযানের সময় মসজিদে ঢুকলে দাঁড়িয়ে থেকে আযানের উত্তর না দিয়ে, তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে খুৎবা শোনার জন্য বসে পড়বে। কেননা আযানের জবাব দেয়া হলো মুস্তাহাব। আর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা এবং খুৎবা শোনা হলো এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. জুমু‘আর খুৎবা শ্রবণকালে ঘুম আসলে জায়গা পরিবর্তন করে বসবে। [তিরমিযী, হা/৫২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/১৩৯৪।] এতে ঘুমের ভাব দূর হতে পারে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সফরকারী মুসলিমদের জন্য সালাত আদায় করা সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন। সফরকালীন সময় কসর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বিশেষ এক অনুগ্রহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬০৫; আবু দাউদ, হা/১২০১; তিরমিযী, হা/৩০৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৬৫।]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বাড়ি বা সফরে উভয় অবস্থায় প্রথমে সালাত দু’রাক‘আত করে ফরয করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সফরের সালাত দু’রাক‘আত ঠিক রাখা হয়েছে এবং বাড়িতে অবস্থানকালে সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৩৫; সহীহ বুখারী, হা/৩৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৬০২।]
যখন কেউ সফরে থাকবে, তখন চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতসমূহ দু’রাক‘আত করে আদায় করবে।
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর, উমর, উসমান (রাঃ)- সকলের সঙ্গে সফর করেছি। তারা যোহর এবং আসরের সালাত দু’রাক‘আত করে আদায় করতেন। এর পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করতেন না। [তিরমিযী, হা/৫৪৪; নাসাঈ, হা/১৪৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১৮৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৪৭।]
কতদূর সফরে কসর করা যাবে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরের দূরত্বের কোন সীমারেখা নির্ধারণ করেননি। সাহাবীগণও কোন সীমারেখার কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। এজন্য সফরের দূরত্ব সম্পর্কে উলামাদের বিভিন্ন মত রয়েছে,
১. একটি মত হচ্ছে, কেউ যদি ৪৮ মাইল বা ৮৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে তবে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং ইবনে আববাস (রাঃ) ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল দূরত্বে কসর করতেন। [সহীহ বুখারী, ‘‘কতদূর গেলে কসর করবে’’ অধ্যায়; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫৬০৩; বায়হাকী, হা/৫১৮০।]
২. অনেকের মতে, সফরের নির্ধারিত কোন দূরত্ব নেই। যতটুকু জায়গা অতিক্রমকে সাধারণত সফর হিসেবে ধরা হয় এবং যেখানে যেতে মানুষ সাধারণত সফরের পাথেয় নিয়ে যায়, এ রকম দূরত্ব অতিক্রম করলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪২৪ পৃঃ।]
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াযীদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ) কে একটি প্রশ্ন করেন এবং তার জবাবে আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ (অর্থাৎ নয় মাইল) দূরে গেলে কসর আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৫; আবু দাউদ, হা/১২০৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৪৫।]
কসরের সময়সীমা :
কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সফরে বের হয়ে সেখানে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত থাকার নিয়ত না থাকলে অর্থাৎ কাজ সমাপ্ত হলেই ফিরে যাওয়ার নিয়ত থাকলে, যতদিন ঐ স্থানে থাকতে হবে ততদিন কসর করা যাবে। পক্ষান্তরে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে অথবা ব্যবসা, চাকুরী বা অধ্যয়নের জন্য থাকতে হলে কসর করা যাবে না।
যদি কেউ নির্ধারিত দিন সফরে থাকার নিয়ত করে তাহলে কতদিন থাকার নিয়ত করলে সে কসর করতে পারবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন- ৪ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা ১৯ দিন।
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা সফরে ১৯ দিন পর্যন্ত অবস্থানকালে সালাত কসর করেন। সেহেতু আমরাও ১৯ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চেয়ে অধিক হলে পূর্ণ সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১০৮০; বায়হাকী, হা/৫২৪৪।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মদিনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাক‘আত দু’রাক‘আত করে সালাত আদায় করেছেন। তখন তারা দশদিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৮; তিরমিযী, হা/৫৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৭।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় ১৭ দিন অবস্থান করেন এবং তিনি কসর আদায় করেন। [আবু দাউদ, হা/১২৩২।]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বাড়ি বা সফরে উভয় অবস্থায় প্রথমে সালাত দু’রাক‘আত করে ফরয করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সফরের সালাত দু’রাক‘আত ঠিক রাখা হয়েছে এবং বাড়িতে অবস্থানকালে সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৩৫; সহীহ বুখারী, হা/৩৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৬০২।]
যখন কেউ সফরে থাকবে, তখন চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতসমূহ দু’রাক‘আত করে আদায় করবে।
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর, উমর, উসমান (রাঃ)- সকলের সঙ্গে সফর করেছি। তারা যোহর এবং আসরের সালাত দু’রাক‘আত করে আদায় করতেন। এর পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করতেন না। [তিরমিযী, হা/৫৪৪; নাসাঈ, হা/১৪৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১৮৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৪৭।]
কতদূর সফরে কসর করা যাবে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরের দূরত্বের কোন সীমারেখা নির্ধারণ করেননি। সাহাবীগণও কোন সীমারেখার কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। এজন্য সফরের দূরত্ব সম্পর্কে উলামাদের বিভিন্ন মত রয়েছে,
১. একটি মত হচ্ছে, কেউ যদি ৪৮ মাইল বা ৮৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে তবে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং ইবনে আববাস (রাঃ) ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল দূরত্বে কসর করতেন। [সহীহ বুখারী, ‘‘কতদূর গেলে কসর করবে’’ অধ্যায়; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫৬০৩; বায়হাকী, হা/৫১৮০।]
২. অনেকের মতে, সফরের নির্ধারিত কোন দূরত্ব নেই। যতটুকু জায়গা অতিক্রমকে সাধারণত সফর হিসেবে ধরা হয় এবং যেখানে যেতে মানুষ সাধারণত সফরের পাথেয় নিয়ে যায়, এ রকম দূরত্ব অতিক্রম করলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৪২৪ পৃঃ।]
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াযীদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ) কে একটি প্রশ্ন করেন এবং তার জবাবে আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ (অর্থাৎ নয় মাইল) দূরে গেলে কসর আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৫; আবু দাউদ, হা/১২০৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৪৫।]
কসরের সময়সীমা :
কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সফরে বের হয়ে সেখানে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত থাকার নিয়ত না থাকলে অর্থাৎ কাজ সমাপ্ত হলেই ফিরে যাওয়ার নিয়ত থাকলে, যতদিন ঐ স্থানে থাকতে হবে ততদিন কসর করা যাবে। পক্ষান্তরে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে অথবা ব্যবসা, চাকুরী বা অধ্যয়নের জন্য থাকতে হলে কসর করা যাবে না।
যদি কেউ নির্ধারিত দিন সফরে থাকার নিয়ত করে তাহলে কতদিন থাকার নিয়ত করলে সে কসর করতে পারবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন- ৪ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা ১৯ দিন।
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা সফরে ১৯ দিন পর্যন্ত অবস্থানকালে সালাত কসর করেন। সেহেতু আমরাও ১৯ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চেয়ে অধিক হলে পূর্ণ সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১০৮০; বায়হাকী, হা/৫২৪৪।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মদিনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাক‘আত দু’রাক‘আত করে সালাত আদায় করেছেন। তখন তারা দশদিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৮; তিরমিযী, হা/৫৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৭।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় ১৭ দিন অবস্থান করেন এবং তিনি কসর আদায় করেন। [আবু দাউদ, হা/১২৩২।]
১. পরিবহনে কিবলামুখী হয়ে সালাত শুরু করা জরুরি। তারপর যদি বাহন অন্য দিকে ঘুরে যায় তবে অসুবিধা নেই।
২. যখন পরিবহনে রুকূ-সিজদা করা অসুবিধা মনে হবে, তখন কেবল তাকবীর দিয়ে ও মাথার ইশারায় সালাত আদায় করবে। সিজদার সময় মাথা রুকূর চেয়ে কিছুটা বেশি নীচু করবে।
৩. যখন কিবলা ঠিক করা সম্ভব হবে না কিংবা সন্দেহে পতিত হবে, তখন দৃঢ় ধারণার ভিত্তিতে একদিকে ফিরে সালাত আদায় করবে।
৪. পানি পথে চলার সময় যদি নৌকা অথবা জাহাজ ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকে তবে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারবে। তবে যে কোন পরিবহনে ভ্রমণ অবস্থায় দাঁড়াতে কষ্ট হলে কোন কিছুতে ঠেস দেয়া যাবে। অন্যথায় বসে সালাত আদায় করবে।
সফরে নফল সালাত :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকালীন সময় ‘বিতর’ এবং ফজরের সুন্নাত দু’রাক‘আত ছাড়া সাধারণত ফরয সালাতের আগে বা পরে সুন্নাত সালাত আদায় করতেন না।
হাফস ইবনে আসিম (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর সাথে মক্কার পথে সফর করছিলেন। পথে আবদুল্লাহ (রাঃ) যোহরের সালাতে ইমামতি করে দু’রাক‘আত ফরয সালাত আদায় করেন এবং নিজের তাবুতে ঢুকে যান। সেখান থেকে কিছু লোককে সালাতরত অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করলেন যে, ওরা কি করছে? হাফস (রহ.) উত্তর দেন, ওরা নফল আদায় করছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যদি সফরে নফলই আদায় করতে হয়, তাহলে তো ফরয সালাতই পুরোটা পড়া দরকার ছিল।
তিনি আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি। তিনি সফরকালে দু’রাক‘আতই আদায় করেছেন। আমি আরো সফর সঙ্গী হয়েছি আবু বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর। তারা সবাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মতোই সালাত আদায় করেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ মোতাবেক চলা বা তাঁকে অনুসরণ করাই উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/১১০২; সহীহ মুসলিম, হা/১২১১; আবু দাউদ, হা/১২২৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭১; নাসাঈ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/১৩৩৮।]
সফরে তাহাজ্জুদ পড়তে বাধা নেই :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর অবস্থায় বাহন যেদিকে যেত সেদিকে মুখ করেই নফল সালাত আদায় করতেন। [; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫৪; সহীহ বুখারী, হা/১০৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫১৮, ৪৯৫৬, ৫৪৪৭, ১৫০৮০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৬৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৩৬; মিশকাত, হা/১৩৪০।] রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর অবস্থায় তাহাজ্জুদ পড়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৭১০; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০৯০।]
২. যখন পরিবহনে রুকূ-সিজদা করা অসুবিধা মনে হবে, তখন কেবল তাকবীর দিয়ে ও মাথার ইশারায় সালাত আদায় করবে। সিজদার সময় মাথা রুকূর চেয়ে কিছুটা বেশি নীচু করবে।
৩. যখন কিবলা ঠিক করা সম্ভব হবে না কিংবা সন্দেহে পতিত হবে, তখন দৃঢ় ধারণার ভিত্তিতে একদিকে ফিরে সালাত আদায় করবে।
৪. পানি পথে চলার সময় যদি নৌকা অথবা জাহাজ ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকে তবে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারবে। তবে যে কোন পরিবহনে ভ্রমণ অবস্থায় দাঁড়াতে কষ্ট হলে কোন কিছুতে ঠেস দেয়া যাবে। অন্যথায় বসে সালাত আদায় করবে।
সফরে নফল সালাত :
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকালীন সময় ‘বিতর’ এবং ফজরের সুন্নাত দু’রাক‘আত ছাড়া সাধারণত ফরয সালাতের আগে বা পরে সুন্নাত সালাত আদায় করতেন না।
হাফস ইবনে আসিম (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর সাথে মক্কার পথে সফর করছিলেন। পথে আবদুল্লাহ (রাঃ) যোহরের সালাতে ইমামতি করে দু’রাক‘আত ফরয সালাত আদায় করেন এবং নিজের তাবুতে ঢুকে যান। সেখান থেকে কিছু লোককে সালাতরত অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করলেন যে, ওরা কি করছে? হাফস (রহ.) উত্তর দেন, ওরা নফল আদায় করছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যদি সফরে নফলই আদায় করতে হয়, তাহলে তো ফরয সালাতই পুরোটা পড়া দরকার ছিল।
তিনি আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি। তিনি সফরকালে দু’রাক‘আতই আদায় করেছেন। আমি আরো সফর সঙ্গী হয়েছি আবু বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর। তারা সবাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মতোই সালাত আদায় করেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ মোতাবেক চলা বা তাঁকে অনুসরণ করাই উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/১১০২; সহীহ মুসলিম, হা/১২১১; আবু দাউদ, হা/১২২৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭১; নাসাঈ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/১৩৩৮।]
সফরে তাহাজ্জুদ পড়তে বাধা নেই :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর অবস্থায় বাহন যেদিকে যেত সেদিকে মুখ করেই নফল সালাত আদায় করতেন। [; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫৪; সহীহ বুখারী, হা/১০৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫১৮, ৪৯৫৬, ৫৪৪৭, ১৫০৮০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৬৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৩৬; মিশকাত, হা/১৩৪০।] রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর অবস্থায় তাহাজ্জুদ পড়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৭১০; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০৯০।]
যেসব ওয়াক্তের সালাত একত্র করা যায় :
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকালীন সময় যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৬-১১০৯; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩২৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৭, ১৬৬৪, ১৬৬৭; আবু দাউদ, হা/১২০৮, ১২১৩; নাসাঈ, হা/৫৮৭, ৬০২; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭০।]
সালিম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দ্রুত সফর করতেন, তখন মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৬; নাসাঈ, হা/৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৫১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৬৫।]
উল্লেখ্য যে, এছাড়া অন্য কোন সালাতের সাথে দু’ওয়াক্ত একত্রে আদায় করা যায় না।
দুই ওয়াক্ত একত্রে আদায় করার নিয়ম :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি যখন সফরে দ্রুত পথ অতিক্রম করতে হতো, তখন তিনি মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)ও দ্রুত সফরকালে ঐ রকমই করতেন। তখন ইকামতের পর মাগরিব তিন রাক‘আত আদায় করতেন এবং সালাম ফিরাতেন। এরপর অল্প সময় অপেক্ষা করে এশার ইকামত দিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। এ দু’য়ের মাঝে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না এবং এশার পরেও না। এরপর মধ্যরাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৯; বায়হাকী, হা/৫৩২৬।]
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে,
১. যোহর ও আসরের সালাত একত্রে আদায় করার ক্ষেত্রে যোহরকে বিলম্বিত করে এবং আসরকে এগিয়ে নিয়ে মাঝামাঝি সময়ে একত্রে আদায় করতে হবে।
২. মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে আদায় করার ক্ষেত্রে মাগরিবকে বিলম্বিত করে এবং এশাকে এগিয়ে নিয়ে মাঝামাঝি সময়ে একত্রে আদায় করতে হবে।
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সফরকালীন সময় যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৬-১১০৯; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩২৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৭, ১৬৬৪, ১৬৬৭; আবু দাউদ, হা/১২০৮, ১২১৩; নাসাঈ, হা/৫৮৭, ৬০২; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭০।]
সালিম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দ্রুত সফর করতেন, তখন মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৫৬; নাসাঈ, হা/৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৫১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৬৫।]
উল্লেখ্য যে, এছাড়া অন্য কোন সালাতের সাথে দু’ওয়াক্ত একত্রে আদায় করা যায় না।
দুই ওয়াক্ত একত্রে আদায় করার নিয়ম :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি যখন সফরে দ্রুত পথ অতিক্রম করতে হতো, তখন তিনি মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)ও দ্রুত সফরকালে ঐ রকমই করতেন। তখন ইকামতের পর মাগরিব তিন রাক‘আত আদায় করতেন এবং সালাম ফিরাতেন। এরপর অল্প সময় অপেক্ষা করে এশার ইকামত দিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। এ দু’য়ের মাঝে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না এবং এশার পরেও না। এরপর মধ্যরাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৯; বায়হাকী, হা/৫৩২৬।]
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে,
১. যোহর ও আসরের সালাত একত্রে আদায় করার ক্ষেত্রে যোহরকে বিলম্বিত করে এবং আসরকে এগিয়ে নিয়ে মাঝামাঝি সময়ে একত্রে আদায় করতে হবে।
২. মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে আদায় করার ক্ষেত্রে মাগরিবকে বিলম্বিত করে এবং এশাকে এগিয়ে নিয়ে মাঝামাঝি সময়ে একত্রে আদায় করতে হবে।
১. বিশেষ কারণবশত কেউ যদি যথাসময়ে সালাত আদায় করতে না পারে তবে তার উপর ওয়াজিব হলো যখন স্মরণ হবে বা সুযোগ হবে কাযা আদায় করে নেবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কেউ ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা হলো ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণে আসার সাথে সাথে কাযা সালাত আদায় করা। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪০৬; সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮, ১৬০০; আবু দাউদ, হা/৪৪২; তিরমিযী, হা/১৭৮; নাসাঈ, হা/৬১৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৯১ মিশকাত, হা/৬০৩।]
২. কাযা সালাত দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
৩. কয়েকজনের সালাত একসাথে কাযা হয়ে গেলে সবাই মিলে জামাআত করে কাযা আদায় করতে পারবে। খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণ মাগরিবের পরে যোহর থেকে এশা পর্যন্ত চার ওয়াক্তের কাযা সালাত এক আযান ও চারটি পৃথক ইকামতে পরপর জামাআত সহকারে আদায় করেন। [সহীহ লি গাইরিহী, নাসাঈ হা/৬৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৫৫; তিরমিযী, হা/১৭৯; বায়হাকী, হা/১৭৫১।]
৪. কাযা সালাতের জন্য ওয়াক্তের অপেক্ষা করতে হবে না, বরং যখন সুযোগ হবে তখনই পড়ে নিবে। ফরয সালাতের কাযা পড়ার সময় আযান, ইকামত ইত্যাদি নিয়ম অনুসরণ করে আদায় করবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- ১/২৬৪।]
৫. সুন্নাতের কাযা আদায় করা যায়। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- ১/৩৭৫।]
৬. যে সালাত যে অবস্থায় কাযা হয়, সেই সালাতকে সেই অবস্থায় কাযা করতে হয়। সুতরাং রাতের সালাত দিনে কাযা আদায় করার সুযোগ হলে রাতের মতোই জোরে কিরাআত পাঠ করতে হবে।
অনুরূপভাবে দিনে ছুটে যাওয়া সালাত রাতে কাযা আদায় করার সুযোগ হলে দিনের মতোই চুপেচুপে কিরাআত পাঠ করে আদায় করতে হবে।
৭. মুসাফির অবস্থায় সালাত কাযা করে বাড়ি ফিরলে কাযা সালাত কসর করেই আদায় করবে। কারণ সফর অবস্থায় তার কসর সালাতই কাযা হয়েছে। আর বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন ছুটে যাওয়া সালাত সফরে মনে পড়লে বা কাযা পড়ার সুযোগ হলে তা পুরোপুরিই আদায় করতে হবে।
৮. কয়েক ওয়াক্তের সালাত এক সঙ্গে কাযা আদায় করতে হলে তারতীব অনুযায়ী প্রথমে ফজর, তারপর যোহর, তারপর আসর, তারপর মাগরিব এবং তারপর এশা- এই নিয়মে আদায় করতে হবে।
৯. যদি কেউ যোহরের সালাত কাযা রেখে আসরের ওয়াক্তে মসজিদে আসে, তাহলে সে প্রথমে আসরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে নেবে। পরে যোহরের কাযা আদায় করবে।
১০. কেউ আসরের সালাত কাযা রেখে মসজিদে এসে মাগরিবের জামাআত দাঁড়ানো দেখলে আগে জামাআতের সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করে নেবে। তারপর আসরের কাযা আদায় করবে।
১১. কেউ জুমু‘আর সালাত পড়তে এসে জামাআত দাঁড়ানো দেখে তার ফজরের সালাত কাযা থাকার কথা মনে পড়লে, সে জুমু‘আ পড়ার নিয়তেই জামাআতে শামিল হবে এবং তারপরই ফজরের সালাত কাযা আদায় করবে। কারণ জুমু‘আ একাকী বা দ্বিতীয় জামাআতে আদায় করার বিধান নেই।
১২. উপস্থিত সালাতের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তারতীব বিবেচ্য নয়। আগে ওয়াক্তের সালাত আদায় করে নেবে এবং পরে কাযা আদায় করবে।
১৩. উপস্থিত সালাত পড়তে শুরু করার পর পূর্বের সালাত কাযা আছে মনে পড়লে আর তারতীব বিবেচ্য নয়। উপস্থিত সালাত শেষ করে কাযা সালাত পড়ে নিতে হবে।
নিষিদ্ধ সময়ে কাযা আদায় করা :
ফজরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নফল সালাত আদায় করা নিষেধ। অনেক উলামা এ সময়ের মধ্যে কাযা সালাত আদায় করাকেও নিষেধের আওতাভুক্ত করেছেন। তবে অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এ সময়ে কাযা সালাত আদায় করাকে জায়েয বলেছেন। আর এ মতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৩৫ পৃঃ।]
উমরী কাযা বলতে কোন সালাত নেই :
১. যে ব্যক্তির সালাত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য কাযা আছে। তার মনে অবহেলা ও শৈথিল্য না থাকলে আল্লাহ তার কাযা গ্রহণ করবেন। কিমত্মু ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগ করলে সে সালাতের কাযা নেই। তাই উমরী কাযা বলে শরীয়তে কোন সালাত নেই। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২২৮ পৃঃ।]
২. বিনা ওজরে যথাসময়ে সালাত না পড়ে অন্য সময় কাযা পড়ায় কোন লাভ নেই। বরং যে ব্যক্তি এমন করে ফেলেছে তার উচিত বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করা।
৩. উমরী কাযা অর্থাৎ অতীত জীবনের কাযা সালাতসমূহ আদায় করার কোন বিধান ইসলামে নেই। এটি বর্তমান যুগের একটি বিদআতী প্রথা। [আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২।] খালেছভাবে তওবা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার বিগত সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। [সূরা ফুরক্বান- ৭১; সূরা যুমার- ৫৩।] অতএব এমতাবস্থায় উচিত হবে, বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা। কেননা ফরয ইবাদাতের ঘাটতি হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর হুকুমে নফল ইবাদাতের নেকী দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে। [আবু দাউদ, হা/৮৬৪; তিরমিযী, হা/৪১৩; নাসাঈ, হা/৪৬৫-৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৬৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৫; জামেউস সগীর, হা/৪৩৩৯; মিশকাত হা/১৩৩০।]
টাকা বা খাদ্য বসত্মু দিয়ে সালাতের কাফফারা দেয়ার কোন বিধান নেই :
কাযা আদায় করার সময় ও সুযোগ না পেলে কোন পাপ হয় না। তাই মরণের সময় অথবা পরে বে-নামাযী অথবা কিছু সালাত ত্যাগকারীর পক্ষ থেকে রাক‘আত হিসাব করে কাফফারাস্বরূপ কিছু দান-খয়রাত করার কোন দলীল নেই।
২. কাযা সালাত দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
৩. কয়েকজনের সালাত একসাথে কাযা হয়ে গেলে সবাই মিলে জামাআত করে কাযা আদায় করতে পারবে। খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণ মাগরিবের পরে যোহর থেকে এশা পর্যন্ত চার ওয়াক্তের কাযা সালাত এক আযান ও চারটি পৃথক ইকামতে পরপর জামাআত সহকারে আদায় করেন। [সহীহ লি গাইরিহী, নাসাঈ হা/৬৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৫৫; তিরমিযী, হা/১৭৯; বায়হাকী, হা/১৭৫১।]
৪. কাযা সালাতের জন্য ওয়াক্তের অপেক্ষা করতে হবে না, বরং যখন সুযোগ হবে তখনই পড়ে নিবে। ফরয সালাতের কাযা পড়ার সময় আযান, ইকামত ইত্যাদি নিয়ম অনুসরণ করে আদায় করবে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- ১/২৬৪।]
৫. সুন্নাতের কাযা আদায় করা যায়। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- ১/৩৭৫।]
৬. যে সালাত যে অবস্থায় কাযা হয়, সেই সালাতকে সেই অবস্থায় কাযা করতে হয়। সুতরাং রাতের সালাত দিনে কাযা আদায় করার সুযোগ হলে রাতের মতোই জোরে কিরাআত পাঠ করতে হবে।
অনুরূপভাবে দিনে ছুটে যাওয়া সালাত রাতে কাযা আদায় করার সুযোগ হলে দিনের মতোই চুপেচুপে কিরাআত পাঠ করে আদায় করতে হবে।
৭. মুসাফির অবস্থায় সালাত কাযা করে বাড়ি ফিরলে কাযা সালাত কসর করেই আদায় করবে। কারণ সফর অবস্থায় তার কসর সালাতই কাযা হয়েছে। আর বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন ছুটে যাওয়া সালাত সফরে মনে পড়লে বা কাযা পড়ার সুযোগ হলে তা পুরোপুরিই আদায় করতে হবে।
৮. কয়েক ওয়াক্তের সালাত এক সঙ্গে কাযা আদায় করতে হলে তারতীব অনুযায়ী প্রথমে ফজর, তারপর যোহর, তারপর আসর, তারপর মাগরিব এবং তারপর এশা- এই নিয়মে আদায় করতে হবে।
৯. যদি কেউ যোহরের সালাত কাযা রেখে আসরের ওয়াক্তে মসজিদে আসে, তাহলে সে প্রথমে আসরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে নেবে। পরে যোহরের কাযা আদায় করবে।
১০. কেউ আসরের সালাত কাযা রেখে মসজিদে এসে মাগরিবের জামাআত দাঁড়ানো দেখলে আগে জামাআতের সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করে নেবে। তারপর আসরের কাযা আদায় করবে।
১১. কেউ জুমু‘আর সালাত পড়তে এসে জামাআত দাঁড়ানো দেখে তার ফজরের সালাত কাযা থাকার কথা মনে পড়লে, সে জুমু‘আ পড়ার নিয়তেই জামাআতে শামিল হবে এবং তারপরই ফজরের সালাত কাযা আদায় করবে। কারণ জুমু‘আ একাকী বা দ্বিতীয় জামাআতে আদায় করার বিধান নেই।
১২. উপস্থিত সালাতের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তারতীব বিবেচ্য নয়। আগে ওয়াক্তের সালাত আদায় করে নেবে এবং পরে কাযা আদায় করবে।
১৩. উপস্থিত সালাত পড়তে শুরু করার পর পূর্বের সালাত কাযা আছে মনে পড়লে আর তারতীব বিবেচ্য নয়। উপস্থিত সালাত শেষ করে কাযা সালাত পড়ে নিতে হবে।
নিষিদ্ধ সময়ে কাযা আদায় করা :
ফজরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নফল সালাত আদায় করা নিষেধ। অনেক উলামা এ সময়ের মধ্যে কাযা সালাত আদায় করাকেও নিষেধের আওতাভুক্ত করেছেন। তবে অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এ সময়ে কাযা সালাত আদায় করাকে জায়েয বলেছেন। আর এ মতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২৩৫ পৃঃ।]
উমরী কাযা বলতে কোন সালাত নেই :
১. যে ব্যক্তির সালাত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য কাযা আছে। তার মনে অবহেলা ও শৈথিল্য না থাকলে আল্লাহ তার কাযা গ্রহণ করবেন। কিমত্মু ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগ করলে সে সালাতের কাযা নেই। তাই উমরী কাযা বলে শরীয়তে কোন সালাত নেই। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/২২৮ পৃঃ।]
২. বিনা ওজরে যথাসময়ে সালাত না পড়ে অন্য সময় কাযা পড়ায় কোন লাভ নেই। বরং যে ব্যক্তি এমন করে ফেলেছে তার উচিত বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করা।
৩. উমরী কাযা অর্থাৎ অতীত জীবনের কাযা সালাতসমূহ আদায় করার কোন বিধান ইসলামে নেই। এটি বর্তমান যুগের একটি বিদআতী প্রথা। [আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২।] খালেছভাবে তওবা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার বিগত সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। [সূরা ফুরক্বান- ৭১; সূরা যুমার- ৫৩।] অতএব এমতাবস্থায় উচিত হবে, বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা। কেননা ফরয ইবাদাতের ঘাটতি হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর হুকুমে নফল ইবাদাতের নেকী দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে। [আবু দাউদ, হা/৮৬৪; তিরমিযী, হা/৪১৩; নাসাঈ, হা/৪৬৫-৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৬৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৫; জামেউস সগীর, হা/৪৩৩৯; মিশকাত হা/১৩৩০।]
টাকা বা খাদ্য বসত্মু দিয়ে সালাতের কাফফারা দেয়ার কোন বিধান নেই :
কাযা আদায় করার সময় ও সুযোগ না পেলে কোন পাপ হয় না। তাই মরণের সময় অথবা পরে বে-নামাযী অথবা কিছু সালাত ত্যাগকারীর পক্ষ থেকে রাক‘আত হিসাব করে কাফফারাস্বরূপ কিছু দান-খয়রাত করার কোন দলীল নেই।
নফল শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত। কিয়ামতের দিন নফল সালাত মুমিন বান্দার বিরাট উপকারে আসতে পারে। বান্দার ফরয সালাতের ভুল-ত্রুটি নফল সালাত দ্বারা পূর্ণ করে দেয়া হবে। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
মূলত ফরয সালাত ব্যতীত বাকী সব সালাতই নফলের অন্তর্ভুক্ত। তবে গুরুত্বের দিক থেকে কোন সালাতকে সুন্নাত এবং কোনটিকে নফল বলা হয়ে থাকে। ফরয ব্যতীত আরো যে সকল সালাত নবী ﷺ আদায় করতেন, আমাদেরও সেগুলোর উপর আমল করা জরুরি। কেননা এসব সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ رَبِيْعَةَ بْنِ كَعْبٍ اَلْاَسْلَمِىِّ قَالَ كُنْتُ اَبِيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ - - فَاَتَيْتُهٗ بِوَضُوْئِهٖ وَحَاجَتِهٖ فَقَالَ لِىْ : سَلْ . فَقُلْتُ اَسْاَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِى الْجَنَّةِ . قَالَ : اَوَغَيْرَ ذٰلِكَ . قُلْتُ هُوَ ذَاكَ . قَالَ : فَاَعِنِّىْ عَلٰى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ
রাবী‘আহ ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি একদিন নবী ﷺ এর সাথে রাত্রি যাপন করলাম। এক সময় আমি তাঁর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসলাম। তখন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও! আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। নবী ﷺ বললেন, অন্য কিছু চাও। আমি বললাম, এ ছাড়া অন্য কিছু চাই না। এবার নবী ﷺ বললেন, তাহলে তুমি বেশি বেশি সিজদা করে (অর্থাৎ নফল সালাত আদায় করে) আমাকে সহযোগিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২২; আবু দাউদ, হা/১৩২২; নাসাঈ, হা/১১৩৮।]
মূলত ফরয সালাত ব্যতীত বাকী সব সালাতই নফলের অন্তর্ভুক্ত। তবে গুরুত্বের দিক থেকে কোন সালাতকে সুন্নাত এবং কোনটিকে নফল বলা হয়ে থাকে। ফরয ব্যতীত আরো যে সকল সালাত নবী ﷺ আদায় করতেন, আমাদেরও সেগুলোর উপর আমল করা জরুরি। কেননা এসব সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ رَبِيْعَةَ بْنِ كَعْبٍ اَلْاَسْلَمِىِّ قَالَ كُنْتُ اَبِيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ - - فَاَتَيْتُهٗ بِوَضُوْئِهٖ وَحَاجَتِهٖ فَقَالَ لِىْ : سَلْ . فَقُلْتُ اَسْاَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِى الْجَنَّةِ . قَالَ : اَوَغَيْرَ ذٰلِكَ . قُلْتُ هُوَ ذَاكَ . قَالَ : فَاَعِنِّىْ عَلٰى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ
রাবী‘আহ ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি একদিন নবী ﷺ এর সাথে রাত্রি যাপন করলাম। এক সময় আমি তাঁর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসলাম। তখন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও! আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। নবী ﷺ বললেন, অন্য কিছু চাও। আমি বললাম, এ ছাড়া অন্য কিছু চাই না। এবার নবী ﷺ বললেন, তাহলে তুমি বেশি বেশি সিজদা করে (অর্থাৎ নফল সালাত আদায় করে) আমাকে সহযোগিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২২; আবু দাউদ, হা/১৩২২; নাসাঈ, হা/১১৩৮।]
তাহাজ্জুদ শব্দটি جُهْدٌ (জুহদুন) শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে, পরিশ্রম করা, কষ্ট স্বীকার করা। জিহাদ শব্দটিও এ শব্দ থেকেই এসেছে। যেহেতু জিহাদ করতে হলে কষ্ট স্বীকার করতে হয় এবং পরিশ্রম করতে হয় এজন্য জিহাদকে জিহাদ বলা হয়। অনুরূপভাবে রাত্রের সালাতকে তাহাজ্জুদ নামকরণ করার কারণ হলো, এ সালাত আদায় করতে হলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়।
পারিভাষিক অর্থে ঘুম থেকে জেগে উঠে ফজরের সময় শুরু হওয়ার পূর্বে শেষ রাত্রে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ সালাত বলে।
পারিভাষিক অর্থে ঘুম থেকে জেগে উঠে ফজরের সময় শুরু হওয়ার পূর্বে শেষ রাত্রে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ সালাত বলে।
তাহাজ্জুদ সালাতের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। কুরআন মাজীদে ফরয সালাতের পর সবচেয়ে বেশি তাহাজ্জুদ সালাতের আলোচনা এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাহাজ্জুদ সালাতের নির্দেশ প্রদান করে বলেন,
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ عَسٰىۗ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরকবান- ৬৪)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
﴿تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদা- ১৬, ১৭)
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ - -قَالَ : سُئِلَ اَىُّ الصَّلَاةِ اَفْضَلُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ وَاَىُّ الصِّيَامِ اَفْضَلُ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَقَالَ : اَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ الصَّلَاةُ فِى جَوْفِ اللَّيْلِ وَاَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ صِيَامُ شَهْرِ اللهِ الْمُحَرَّمِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয সালাতের পর সবচেয়ে উত্তম সালাত কোনটি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
রাতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তানের গিঁঠ খুলে যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁঠ দেয়। প্রতিটি গিঁঠে সে এই বলে চাপড়ায়- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁঠ খুলে যায়। পরে অযু করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। অতঃপর সালাত আদায় করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষতা ও আলস্য সহকারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৪; সহীহ বুখারী, হা/১১৪২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৫; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; নাসাঈ, হা/১৬০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২১৯।]
পূর্ববর্তী সকল নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল তাহাজ্জুদের সালাত পড়া :
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ে অভ্যাসী হও। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল, তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, পাপ মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বিরতকারী আমল। [তিরমিযী, হা/৩৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৫।]
নবী ﷺ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালীন সালাতে এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পদযুগল বা পায়ের গোছা ফুলে যেত। একদা আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- কেন আপনি এতক্ষণ ধরে সালাত আদায় করছেন, অথচ আপনার পেছনের এবং সামনের সব গোনাহ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, তাই বলে কি আমি একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২-০৪; তিরমিযী, হা/৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮৮ মিশকাত, হা/১২২০।]
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগের এবং পরের সব গোনাহ আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও তিনি আবাসে-প্রবাসে কখনোই তাহাজ্জুদ সালাত আদায় থেকে বিরত থাকেননি। যদি কখনো কোন কারণে রাত্রে এ সালাত বাদ পড়ত, তাহলে তিনি তা দিনের বেলা আদায় করে নিতেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সকল মুসলিম তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হয়, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় না। সুতরাং নৈরাশ্য রোগের অন্যতম চিকিৎসা হলো তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হওয়া। উক্ত সময় যিকির-আযকার করা, সালাত আদায় করা, কুরআন বুঝে বুঝে পড়া, জ্ঞান চর্চা করা ইত্যাদি আমলসমূহের মধ্যে কত যে উপকার ও বরকত রয়েছে তা বাস্তবে আমল না করা পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না।
পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগানোর নির্দেশ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে বান্দা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও জাগ্রত করে। স্ত্রী যদি সালাত আদায় না করে তবে তার চেহারায় পানি ঢালে। আল্লাহ রহম করুন সেই মহিলার প্রতি, যে রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে এবং সে তার স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে তার চেহারায় পানি দেয়। [আবু দাউদ, হা/১৩০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৩৬; সহীহুল জামে, হা/৩৪৮৮।]
তাহাজ্জুদের সময় :
তাহাজ্জুদের সময় শুরু হয় এশার পর থেকে এবং শেষ হয় ফজরের আগে আগে। রাতের প্রথমাংশে, মধ্যরাতে অথবা শেষাংশে যেকোন সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা যায়।
তবে উত্তম সময় হলো, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। কারণ মানুষ তখন রাতের নিঝুম পরিবেশে আরামে ঘুমাতে চায়, আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সে তার ঐ সুখের নিদ্রা ত্যাগ করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্য শেষ রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে- আর এখানেই রয়েছে তাহাজ্জুদ সালাতের মাহাত্ম্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রতিপালক তাঁর বান্দার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হন। সুতরাং তুমি যদি ঐ সময় আল্লাহর যিকিরকারীদের দলভুক্ত হতে সক্ষম হও, তাহলে হয়ে যাও। [তিরমিযী, হা/৩৫৭৯; নাসাঈ, হা/৫৭২।]
আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম- রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে জেগে সালাত আদায় করতেন। এরপর বিছানায় যেতেন, মুয়াজ্জিন আযান দিলে উঠে পড়তেন। তখন প্রয়োজন থাকলে গোসল করতেন, নইলে অযু করে মসজিদে যেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫৯৩।]
তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত আদায় করা উচিত :
মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কোন আমলটি সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় ছিল? তিনি বললেন, নিয়মিত আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬৪; নাসাঈ, হা/১৬১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৩৩; মিশকাত, হা/১২০৭।]
তাহাজ্জুদ সালাতের রাক‘আত :
রাত্রিকালীন সালাতের নির্দিষ্ট কোন রাক‘আত সংখ্যা নেই। তাহাজ্জুদের সালাত দু’রাক‘আত করে যতটুকু সম্ভব পড়া যায়।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাতের সালাতের পদ্ধতি কী? তিনি বললেন, দু’দু রাক‘আত করে (সালাত আদায় করতে থাকবে)। অতঃপর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাক‘আত মিলিয়ে বিতর করে নেবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
আমির শা‘বী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললেন, ১৩ রাক‘আত। এর মধ্যে ৮ রাক‘আত তাহাজ্জুদ, ৩ রাক‘আত বিতর এবং ২ রাক‘আত ফজরের সুন্নাত। [ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬১।]
নবী ﷺ তাহাজ্জুদে লম্বা কিরাআত পাঠ করতেন :
হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে নবী ﷺ এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সূরা বাকারা পড়তে শুরু করলেন। আমি ভাবলাম হয়তো বা তিনি ১০০ আয়াত পাঠ করবেন। কিন্তু তিনি তা অতিক্রম করে গেলেন। তারপর ভাবলাম তিনি সূরাটিকে ২ রাক‘আতে পড়বেন। কিন্তু তিনি তাও অতিক্রম করে গেলেন। ভাবলাম তিনি হয়তো সূরাটি শেষ করে রুকূ করবেন। কিন্তু না, তা না করে তিনি সূরা নিসা শুরু করলেন। তাও পড়ে শেষ করলেন। এরপর সূরা আলে ইমরান ধরলেন এবং তাও পড়ে শেষ করলেন। তিনি ধীরে ধীরে আয়াত পাঠ করছিলেন। তাসবীহ এর আয়াত পাঠ করার সময় তাসবীহ পাঠ করছিলেন। প্রার্থনার আয়াতের সময় প্রার্থনা করছিলেন। আশ্রয় প্রার্থনার আয়াতের সময় আশ্রয় প্রার্থনা করছিলেন। অতঃপর রুকূ করলেন। [নাসাঈ কুবরা, হা/৭২৩; মুস্তাখরাজ আলাস সাহীহাইন, হা/১৭৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬০৯।]
একই সালাতে একই সূরা বার বার পড়া যায় :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে রাতে সালাতের মধ্যে বারবার সূরা ইখলাস পাঠ করতে শুনলেন। এরপর সকালে তিনি নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এক প্রতিবেশী রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে, কিন্তু ‘‘কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ’’ ছাড়া অন্য কিছু পড়ে না, এটাকেই সে বারবার ফিরিয়ে পড়ে। নবী ﷺ বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। ঐ সূরা এক তৃতীয়াংশ কুরআনের সমতুল্য। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; নাসাঈ, হা/৯৯৫।]
তাহাজ্জুদের কিরাআত উচ্চৈঃস্বরেও পড়া যায় আবার আস্তেও পড়া যায় :
একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালে বাইরে এলে তিনি দেখলেন যে, আবু বকর (রাঃ) নিম্নস্বরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করছেন। অতঃপর তিনি উমর (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি উচ্চৈঃস্বরে সালাত আদায় করছেন। অতঃপর যখন তারা উভয়ে তাঁর কাছে আসলেন, তখন তিনি বললেন, হে আবু বকর! আমি তোমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখলাম যে, তুমি নিম্নস্বরে সালাত আদায় করছ। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কেবল তাঁকে শুনিয়েছি, যার কাছে আমি মুনাজাত করেছি। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উমর (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে বললেন, আর তোমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখতে পেলাম যে, তুমি উচ্চৈঃস্বরে সালাত আদায় করছ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তন্দ্রাভিভূত লোকদের জাগিয়ে দেই এবং শয়তান বিতাড়ন করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আবু বকর! তোমার আওয়াজ একটু উঁচু করো। আর হে উমর! তোমার আওয়াজ একটু নীচু করো। [আবু দাউদ, হা/১৩২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৩; মু‘জামুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/৪৮৮৭।]
সামর্থ্য অনুযায়ী রাত্রিতে ইবাদাত করতে হবে :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন বনূ আসাদ গোত্রের এক মহিলা আমার নিকট উপস্থিত ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলা কে? আমি পরিচয় বললাম। আর এও বললাম যে, তিনি সারারাত না ঘুমিয়ে সালাত আদায় করেন। শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সাধ্য অনুযায়ী আমল করতে থাকাই তোমাদের কর্তব্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সওয়াব দানে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৮২।]
তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত কতিপয় করণীয় নিয়ম :
১. তাহাজ্জুদ পড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক কাজ করা। যেমন- দুপুরে একটু কায়লুলা [দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর কিছু সময় শোয়ে বিশ্রাম নেয়াকে কায়লুলা বলা হয়।] করা, রাত্রে বেশিক্ষণ জেগে না থাকা, প্রয়োজনে ঘড়ি বা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে শয়ন করা ইত্যাদি।
২. শোয়ার সময় তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়তে শয়ন করা। আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বিছানায় গিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়তে শয়ন করবে সে তাহাজ্জুদ না পড়তে পারলেও তার জন্য সওয়াব লেখা হয় এবং তার ঘুম আল্লাহর পক্ষ হতে সাদাকা স্বরূপ হয়ে যায়। [নাসাঈ, হা/১৭৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৭২; জামেউস সগীর, হা/১০৮৮৫।]
তাহাজ্জুদের জন্য উঠে যা করণীয় :
১. জাগ্রত হওয়ার পর প্রথমে চেহারা থেকে ঘুমের ভাব মুছে ফেলা। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৫; সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫।]
২. নীচের দু‘আটি পাঠ করা। উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি রাতে জেগে উঠে নীচের দু‘আটি পড়ে তারপর বলে, ‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন বা অন্য কোন দু‘আ করে, তার দু‘আ কবুল করা হয়। এরপর অযু করে সালাত আদায় করলে তার সালাত কবুল করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫৪; আবু দাউদ, হা/৫০৬২; তিরমিযী, হা/৩৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৮।]
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ-- وَسُبْحَانَ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লী শায়ইন ক্বাদীর। ওয়া সুবহানাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَحْدَهٗ তিনি একক। لَاشَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁরই। وَلَهُ الْحَمْدُ সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। وَسُبْحَانَ اللهِ আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। -- وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। وَلَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ সবচেয়ে বড়, وَلَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَلَا قُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই إِلَّا بِاللهِ আল্লাহ ছাড়া।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই, তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই।
৩. সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকূ পাঠ করা। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫।]
৪. মিসওয়াক করা।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ اِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৮; আবু দাউদ, হা/৫৫; নাসাঈ, হা/২; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৯০; ইবনে খুযায়মা, হা/১১৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৭২; জামেউ সগীর, হা/৮৮৯৫; মিশকাত, হা/৩৭৮।]
৫. প্রথমে হালকাভাবে দু’রাক‘আত সালাত দিয়ে তাহাজ্জুদ শুরু করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন রাতে তাহাজ্জুদ শুরু করতেন তখন প্রথমে হালকাভাবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৬৩; বায়হাকী, হা/৪৪৪৫; জামেউস সগীর, হা/৮৮৭৪; মিশকাত, হা/১১৯৩।]
৬. তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা পাঠ করা।
(ক) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দন্ডায়মান হতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ قَيِّمُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ . وَلَكَ الْحَمْدُ لَكَ مُلْكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اَللّٰهُمَّ لَكَ اَسْلَمْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ، وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ، اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়ালাকাল হামদু লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া লিকা-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রু হাক্কুন, ওয়ান্নাবিয়য়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়াবিকা খা-ছামতু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়া মা-আখখারতু, ওয়া মা-আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ الْحَمْدُ আপনারই জন্য সকল প্রশংসা, اَنْتَ قَيِّمُ আপনি ধারক السَّمٰوَاتِ আকাশের وَالْاَرْضِ পৃথিবীর وَمَنْ فِيْهِنَّ এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু বিদ্যমান সবকিছুর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, لَكَ مُلْكُ কর্তৃত্ব আপনারই السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আকাশসমূহ ও জমিনের وَمَنْ فِيْهِنَّ এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আপনি আসমান ও জমিনের নূর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা اَنْتَ الْحَقُّ আপনিই চির সত্য। وَوَعْدُكَ الْحَقُّ আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ আপনার সাক্ষাৎ সত্য, وَقَوْلُكَ حَقٌّ আপনার বাণী সত্য, وَالْجَنَّةُ حَقٌّ জান্নাত সত্য, وَالنَّارُ حَقٌّ জাহান্নাম সত্য, وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ নবীগণ সত্য, وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, وَالسَّاعَةُ حَقٌّ কিয়ামত সত্য। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ اَسْلَمْتُ আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করলাম; وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ আপনার উপরই ভরসা করলাম وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ এবং আপনার দিকেই রুজূ‘ করলাম। وَبِكَ خَاصَمْتُ আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই (কাফিরদের সাথে) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আপনি ক্ষমা করে দিন مَا قَدَّمْتُ যা আমি পূর্বে প্রেরণ করেছি وَمَا اَخَّرْتُ এবং যা আমি পরে প্রেরণ করেছি وَمَا اَسْرَرْتُ যা গোপনে সংঘটিত হয়েছে وَمَا اَعْلَنْتُ এবং যা প্রকাশ্যে সংঘটিত হয়েছে (সকল গোনাহ)। اَنْتَ الْمُقَدِّمُ আপনিই অগ্রগামী وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ এবং আপনিই পশ্চাদগামী। ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া (প্রকৃত) কোন উপাস্য নেই।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আকাশসমূহ, পৃথিবী ও এ দু’য়ের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর ধারক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আকাশ, জমিন এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান জমিনের নূর। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা আপনিই চির সত্য। আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরই ভরসা করলাম এবং আপনারই অভিমুখী হলাম। আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হই, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের এবং প্রকাশ্য ও গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই অগ্রগামী এবং পশ্চাদগামী। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৭; নাসাঈ, হা/১৬১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫১।]
(খ) আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়াতেন তখন কী পড়ে শুরু করতেন? আয়েশা (রাঃ) উত্তরে বললেন, নবী ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ اَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ اِهْدِنِىْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِكَ اِنَّكَ تَهْدِىْ مَنْ تَشَاءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা জিবরা-ঈল ও মী-কা-ঈল ওয়া ইসরা-ফীল ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি আনতা তাহকুমু বাইনা ‘ইবা-দিকা ফীমা-কা-নূ ফীহি ইয়াখ্তালিফূন। ইহদিনী লিমাখ্তুলিফা ফীহি মিনাল্হাক্কি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহ্দী মানতাশা-উ ইলা সিরা-ত্বিম মুস্তাক্বীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আললাহ! رَبَّ جِبْرَائِيْلَ জিবরাঈলের প্রতিপালক, وَمِيْكَائِيْلَ মিকাঈলের প্রতিপালক وَاِسْرَافِيْلَ ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, اَنْتَ تَحْكُمُ আপনি মীমাংসা করে দেবেন بَيْنَ عِبَادِكَ আপনার বান্দাদের মধ্যে فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। اِهْدِنِىْ আমাকে হেদায়াত দান করুন لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ মতভেদপূর্ণ বিষয়ে مِنَ الْحَقِّ সঠিক পথে بِاِذْنِكَ আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী। اِنَّكَ تَهْدِىْ নিশ্চয় আপনি পরিচালিত করেন مَنْ تَشَاءُ যাকে চান اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ সরল-সঠিক পথে।
অর্থ : হে আল্লাহ! জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের রব, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, আপনি আপনার বান্দাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিন। আপনি যাকে চান সঠিক পথে পরিচালিত করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৭।]
রাতে তাহাজ্জুদ ছুটে গেলে তা যোহর সালাতের আগে পড়ে নিতে পারবে :
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নির্ধারিত সালাত বা কিছু অংশ আদায় না করে ঘুমায় এবং ঠিক সময় উঠতে না পারে, তারপর সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা আদায় করে, সে যেন তা রাতেই আদায় করল- এরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৯; আবু দাউদ, হা/১৩১৫; তিরমিযী, হা/৫৮১; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৭১।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি অসুস্থতা বা ঘুমের কারণে কখনো রাতের সালাত আদায় করতে না পারতেন, তাহলে দিনে ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৭-৭৮; আবু দাউদ, হা/১৩৪৪; তিরমিযী, হা/৪৪৫; নাসাঈ, হা/১৭৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৬৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৪২০; জামেউস সগীর, হা/৮৯১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৪৭৪৩।]
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ عَسٰىۗ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরকবান- ৬৪)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
﴿تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদা- ১৬, ১৭)
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ - -قَالَ : سُئِلَ اَىُّ الصَّلَاةِ اَفْضَلُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ وَاَىُّ الصِّيَامِ اَفْضَلُ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَقَالَ : اَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ الصَّلَاةُ فِى جَوْفِ اللَّيْلِ وَاَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ صِيَامُ شَهْرِ اللهِ الْمُحَرَّمِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয সালাতের পর সবচেয়ে উত্তম সালাত কোনটি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
রাতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তানের গিঁঠ খুলে যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁঠ দেয়। প্রতিটি গিঁঠে সে এই বলে চাপড়ায়- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁঠ খুলে যায়। পরে অযু করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। অতঃপর সালাত আদায় করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষতা ও আলস্য সহকারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪২৪; সহীহ বুখারী, হা/১১৪২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৫; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; নাসাঈ, হা/১৬০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২১৯।]
পূর্ববর্তী সকল নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল তাহাজ্জুদের সালাত পড়া :
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ে অভ্যাসী হও। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল, তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, পাপ মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বিরতকারী আমল। [তিরমিযী, হা/৩৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৫।]
নবী ﷺ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালীন সালাতে এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পদযুগল বা পায়ের গোছা ফুলে যেত। একদা আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- কেন আপনি এতক্ষণ ধরে সালাত আদায় করছেন, অথচ আপনার পেছনের এবং সামনের সব গোনাহ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, তাই বলে কি আমি একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২-০৪; তিরমিযী, হা/৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮৮ মিশকাত, হা/১২২০।]
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগের এবং পরের সব গোনাহ আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও তিনি আবাসে-প্রবাসে কখনোই তাহাজ্জুদ সালাত আদায় থেকে বিরত থাকেননি। যদি কখনো কোন কারণে রাত্রে এ সালাত বাদ পড়ত, তাহলে তিনি তা দিনের বেলা আদায় করে নিতেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সকল মুসলিম তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হয়, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় না। সুতরাং নৈরাশ্য রোগের অন্যতম চিকিৎসা হলো তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হওয়া। উক্ত সময় যিকির-আযকার করা, সালাত আদায় করা, কুরআন বুঝে বুঝে পড়া, জ্ঞান চর্চা করা ইত্যাদি আমলসমূহের মধ্যে কত যে উপকার ও বরকত রয়েছে তা বাস্তবে আমল না করা পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না।
পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগানোর নির্দেশ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে বান্দা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও জাগ্রত করে। স্ত্রী যদি সালাত আদায় না করে তবে তার চেহারায় পানি ঢালে। আল্লাহ রহম করুন সেই মহিলার প্রতি, যে রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে এবং সে তার স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে তার চেহারায় পানি দেয়। [আবু দাউদ, হা/১৩০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৩৬; সহীহুল জামে, হা/৩৪৮৮।]
তাহাজ্জুদের সময় :
তাহাজ্জুদের সময় শুরু হয় এশার পর থেকে এবং শেষ হয় ফজরের আগে আগে। রাতের প্রথমাংশে, মধ্যরাতে অথবা শেষাংশে যেকোন সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা যায়।
তবে উত্তম সময় হলো, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। কারণ মানুষ তখন রাতের নিঝুম পরিবেশে আরামে ঘুমাতে চায়, আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সে তার ঐ সুখের নিদ্রা ত্যাগ করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্য শেষ রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে- আর এখানেই রয়েছে তাহাজ্জুদ সালাতের মাহাত্ম্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রতিপালক তাঁর বান্দার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হন। সুতরাং তুমি যদি ঐ সময় আল্লাহর যিকিরকারীদের দলভুক্ত হতে সক্ষম হও, তাহলে হয়ে যাও। [তিরমিযী, হা/৩৫৭৯; নাসাঈ, হা/৫৭২।]
আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম- রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে জেগে সালাত আদায় করতেন। এরপর বিছানায় যেতেন, মুয়াজ্জিন আযান দিলে উঠে পড়তেন। তখন প্রয়োজন থাকলে গোসল করতেন, নইলে অযু করে মসজিদে যেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫৯৩।]
তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত আদায় করা উচিত :
মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কোন আমলটি সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় ছিল? তিনি বললেন, নিয়মিত আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬৪; নাসাঈ, হা/১৬১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৩৩; মিশকাত, হা/১২০৭।]
তাহাজ্জুদ সালাতের রাক‘আত :
রাত্রিকালীন সালাতের নির্দিষ্ট কোন রাক‘আত সংখ্যা নেই। তাহাজ্জুদের সালাত দু’রাক‘আত করে যতটুকু সম্ভব পড়া যায়।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাতের সালাতের পদ্ধতি কী? তিনি বললেন, দু’দু রাক‘আত করে (সালাত আদায় করতে থাকবে)। অতঃপর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাক‘আত মিলিয়ে বিতর করে নেবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
আমির শা‘বী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললেন, ১৩ রাক‘আত। এর মধ্যে ৮ রাক‘আত তাহাজ্জুদ, ৩ রাক‘আত বিতর এবং ২ রাক‘আত ফজরের সুন্নাত। [ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬১।]
নবী ﷺ তাহাজ্জুদে লম্বা কিরাআত পাঠ করতেন :
হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে নবী ﷺ এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সূরা বাকারা পড়তে শুরু করলেন। আমি ভাবলাম হয়তো বা তিনি ১০০ আয়াত পাঠ করবেন। কিন্তু তিনি তা অতিক্রম করে গেলেন। তারপর ভাবলাম তিনি সূরাটিকে ২ রাক‘আতে পড়বেন। কিন্তু তিনি তাও অতিক্রম করে গেলেন। ভাবলাম তিনি হয়তো সূরাটি শেষ করে রুকূ করবেন। কিন্তু না, তা না করে তিনি সূরা নিসা শুরু করলেন। তাও পড়ে শেষ করলেন। এরপর সূরা আলে ইমরান ধরলেন এবং তাও পড়ে শেষ করলেন। তিনি ধীরে ধীরে আয়াত পাঠ করছিলেন। তাসবীহ এর আয়াত পাঠ করার সময় তাসবীহ পাঠ করছিলেন। প্রার্থনার আয়াতের সময় প্রার্থনা করছিলেন। আশ্রয় প্রার্থনার আয়াতের সময় আশ্রয় প্রার্থনা করছিলেন। অতঃপর রুকূ করলেন। [নাসাঈ কুবরা, হা/৭২৩; মুস্তাখরাজ আলাস সাহীহাইন, হা/১৭৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬০৯।]
একই সালাতে একই সূরা বার বার পড়া যায় :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে রাতে সালাতের মধ্যে বারবার সূরা ইখলাস পাঠ করতে শুনলেন। এরপর সকালে তিনি নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এক প্রতিবেশী রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে, কিন্তু ‘‘কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ’’ ছাড়া অন্য কিছু পড়ে না, এটাকেই সে বারবার ফিরিয়ে পড়ে। নবী ﷺ বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। ঐ সূরা এক তৃতীয়াংশ কুরআনের সমতুল্য। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; নাসাঈ, হা/৯৯৫।]
তাহাজ্জুদের কিরাআত উচ্চৈঃস্বরেও পড়া যায় আবার আস্তেও পড়া যায় :
একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালে বাইরে এলে তিনি দেখলেন যে, আবু বকর (রাঃ) নিম্নস্বরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করছেন। অতঃপর তিনি উমর (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি উচ্চৈঃস্বরে সালাত আদায় করছেন। অতঃপর যখন তারা উভয়ে তাঁর কাছে আসলেন, তখন তিনি বললেন, হে আবু বকর! আমি তোমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখলাম যে, তুমি নিম্নস্বরে সালাত আদায় করছ। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কেবল তাঁকে শুনিয়েছি, যার কাছে আমি মুনাজাত করেছি। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উমর (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে বললেন, আর তোমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখতে পেলাম যে, তুমি উচ্চৈঃস্বরে সালাত আদায় করছ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তন্দ্রাভিভূত লোকদের জাগিয়ে দেই এবং শয়তান বিতাড়ন করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আবু বকর! তোমার আওয়াজ একটু উঁচু করো। আর হে উমর! তোমার আওয়াজ একটু নীচু করো। [আবু দাউদ, হা/১৩২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৩; মু‘জামুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/৪৮৮৭।]
সামর্থ্য অনুযায়ী রাত্রিতে ইবাদাত করতে হবে :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন বনূ আসাদ গোত্রের এক মহিলা আমার নিকট উপস্থিত ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলা কে? আমি পরিচয় বললাম। আর এও বললাম যে, তিনি সারারাত না ঘুমিয়ে সালাত আদায় করেন। শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সাধ্য অনুযায়ী আমল করতে থাকাই তোমাদের কর্তব্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সওয়াব দানে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৮২।]
তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত কতিপয় করণীয় নিয়ম :
১. তাহাজ্জুদ পড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক কাজ করা। যেমন- দুপুরে একটু কায়লুলা [দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর কিছু সময় শোয়ে বিশ্রাম নেয়াকে কায়লুলা বলা হয়।] করা, রাত্রে বেশিক্ষণ জেগে না থাকা, প্রয়োজনে ঘড়ি বা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে শয়ন করা ইত্যাদি।
২. শোয়ার সময় তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়তে শয়ন করা। আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বিছানায় গিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়তে শয়ন করবে সে তাহাজ্জুদ না পড়তে পারলেও তার জন্য সওয়াব লেখা হয় এবং তার ঘুম আল্লাহর পক্ষ হতে সাদাকা স্বরূপ হয়ে যায়। [নাসাঈ, হা/১৭৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৭২; জামেউস সগীর, হা/১০৮৮৫।]
তাহাজ্জুদের জন্য উঠে যা করণীয় :
১. জাগ্রত হওয়ার পর প্রথমে চেহারা থেকে ঘুমের ভাব মুছে ফেলা। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৫; সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫।]
২. নীচের দু‘আটি পাঠ করা। উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি রাতে জেগে উঠে নীচের দু‘আটি পড়ে তারপর বলে, ‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন বা অন্য কোন দু‘আ করে, তার দু‘আ কবুল করা হয়। এরপর অযু করে সালাত আদায় করলে তার সালাত কবুল করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫৪; আবু দাউদ, হা/৫০৬২; তিরমিযী, হা/৩৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৮।]
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ-- وَسُبْحَانَ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লী শায়ইন ক্বাদীর। ওয়া সুবহানাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَحْدَهٗ তিনি একক। لَاشَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁরই। وَلَهُ الْحَمْدُ সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। وَسُبْحَانَ اللهِ আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। -- وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। وَلَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ সবচেয়ে বড়, وَلَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَلَا قُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই إِلَّا بِاللهِ আল্লাহ ছাড়া।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই, তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই।
৩. সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকূ পাঠ করা। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫।]
৪. মিসওয়াক করা।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ اِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৮; আবু দাউদ, হা/৫৫; নাসাঈ, হা/২; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৯০; ইবনে খুযায়মা, হা/১১৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৭২; জামেউ সগীর, হা/৮৮৯৫; মিশকাত, হা/৩৭৮।]
৫. প্রথমে হালকাভাবে দু’রাক‘আত সালাত দিয়ে তাহাজ্জুদ শুরু করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন রাতে তাহাজ্জুদ শুরু করতেন তখন প্রথমে হালকাভাবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৬৩; বায়হাকী, হা/৪৪৪৫; জামেউস সগীর, হা/৮৮৭৪; মিশকাত, হা/১১৯৩।]
৬. তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা পাঠ করা।
(ক) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দন্ডায়মান হতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ قَيِّمُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ . وَلَكَ الْحَمْدُ لَكَ مُلْكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اَللّٰهُمَّ لَكَ اَسْلَمْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ، وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ، اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়ালাকাল হামদু লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া লিকা-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রু হাক্কুন, ওয়ান্নাবিয়য়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়াবিকা খা-ছামতু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়া মা-আখখারতু, ওয়া মা-আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ الْحَمْدُ আপনারই জন্য সকল প্রশংসা, اَنْتَ قَيِّمُ আপনি ধারক السَّمٰوَاتِ আকাশের وَالْاَرْضِ পৃথিবীর وَمَنْ فِيْهِنَّ এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু বিদ্যমান সবকিছুর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, لَكَ مُلْكُ কর্তৃত্ব আপনারই السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আকাশসমূহ ও জমিনের وَمَنْ فِيْهِنَّ এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আপনি আসমান ও জমিনের নূর। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। وَلَكَ الْحَمْدُ আপনার জন্যই সকল প্রশংসা اَنْتَ الْحَقُّ আপনিই চির সত্য। وَوَعْدُكَ الْحَقُّ আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ আপনার সাক্ষাৎ সত্য, وَقَوْلُكَ حَقٌّ আপনার বাণী সত্য, وَالْجَنَّةُ حَقٌّ জান্নাত সত্য, وَالنَّارُ حَقٌّ জাহান্নাম সত্য, وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ নবীগণ সত্য, وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, وَالسَّاعَةُ حَقٌّ কিয়ামত সত্য। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ اَسْلَمْتُ আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করলাম; وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ আপনার উপরই ভরসা করলাম وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ এবং আপনার দিকেই রুজূ‘ করলাম। وَبِكَ خَاصَمْتُ আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই (কাফিরদের সাথে) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আপনি ক্ষমা করে দিন مَا قَدَّمْتُ যা আমি পূর্বে প্রেরণ করেছি وَمَا اَخَّرْتُ এবং যা আমি পরে প্রেরণ করেছি وَمَا اَسْرَرْتُ যা গোপনে সংঘটিত হয়েছে وَمَا اَعْلَنْتُ এবং যা প্রকাশ্যে সংঘটিত হয়েছে (সকল গোনাহ)। اَنْتَ الْمُقَدِّمُ আপনিই অগ্রগামী وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ এবং আপনিই পশ্চাদগামী। ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া (প্রকৃত) কোন উপাস্য নেই।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আকাশসমূহ, পৃথিবী ও এ দু’য়ের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর ধারক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আকাশ, জমিন এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান জমিনের নূর। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা আপনিই চির সত্য। আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরই ভরসা করলাম এবং আপনারই অভিমুখী হলাম। আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হই, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের এবং প্রকাশ্য ও গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই অগ্রগামী এবং পশ্চাদগামী। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৭; নাসাঈ, হা/১৬১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫১।]
(খ) আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়াতেন তখন কী পড়ে শুরু করতেন? আয়েশা (রাঃ) উত্তরে বললেন, নবী ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ اَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ اِهْدِنِىْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِكَ اِنَّكَ تَهْدِىْ مَنْ تَشَاءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা জিবরা-ঈল ও মী-কা-ঈল ওয়া ইসরা-ফীল ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি আনতা তাহকুমু বাইনা ‘ইবা-দিকা ফীমা-কা-নূ ফীহি ইয়াখ্তালিফূন। ইহদিনী লিমাখ্তুলিফা ফীহি মিনাল্হাক্কি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহ্দী মানতাশা-উ ইলা সিরা-ত্বিম মুস্তাক্বীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আললাহ! رَبَّ جِبْرَائِيْلَ জিবরাঈলের প্রতিপালক, وَمِيْكَائِيْلَ মিকাঈলের প্রতিপালক وَاِسْرَافِيْلَ ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, اَنْتَ تَحْكُمُ আপনি মীমাংসা করে দেবেন بَيْنَ عِبَادِكَ আপনার বান্দাদের মধ্যে فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। اِهْدِنِىْ আমাকে হেদায়াত দান করুন لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ মতভেদপূর্ণ বিষয়ে مِنَ الْحَقِّ সঠিক পথে بِاِذْنِكَ আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী। اِنَّكَ تَهْدِىْ নিশ্চয় আপনি পরিচালিত করেন مَنْ تَشَاءُ যাকে চান اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ সরল-সঠিক পথে।
অর্থ : হে আল্লাহ! জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের রব, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, আপনি আপনার বান্দাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিন। আপনি যাকে চান সঠিক পথে পরিচালিত করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৭।]
রাতে তাহাজ্জুদ ছুটে গেলে তা যোহর সালাতের আগে পড়ে নিতে পারবে :
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নির্ধারিত সালাত বা কিছু অংশ আদায় না করে ঘুমায় এবং ঠিক সময় উঠতে না পারে, তারপর সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা আদায় করে, সে যেন তা রাতেই আদায় করল- এরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৯; আবু দাউদ, হা/১৩১৫; তিরমিযী, হা/৫৮১; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৭১।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি অসুস্থতা বা ঘুমের কারণে কখনো রাতের সালাত আদায় করতে না পারতেন, তাহলে দিনে ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৭-৭৮; আবু দাউদ, হা/১৩৪৪; তিরমিযী, হা/৪৪৫; নাসাঈ, হা/১৭৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৬৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৪২০; জামেউস সগীর, হা/৮৯১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৪৭৪৩।]
বিতর শব্দের অর্থ হচ্ছে, বেজোড়। এশার সালাতের পর ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যমত্ম বেজোড় সংখ্যায় যে সালাত আদায় করা হয় তাকে বিতরের সালাত বলে।
বিতরের সালাত আদায় করার জন্য অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ اللهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ , فَأَوْتِرُوْا يَا أَهْلَ الْقُرْاٰنِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন; সুতরাং হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতরের সালাত আদায় করো। [ইবনে মাজাহ, হা/১১৭০; আবু দাউদ, হা/১৪১৮; তিরমিযী, হা/৪৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৪, ১২২৭; মিশকাত, হা/১২৬৬।]
বিতর সালাতের সময় :
বিতর সালাতের সময় এশার পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত। অনেকেই বিতর সালাতকে এশার সালাতের সাথে মিলিয়ে ফেলে। আসলে বিতর সম্পূর্ণ ভিন্ন সালাত। এই সালাত এশার পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করার আদেশ করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, বিতরের সময় অনুচ্ছেদ; নাসাঈ, হা/২৪০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৩৮।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা রাতের শেষ সালাতকে বিতর করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯১; আবু দাউদ, হা/১৪৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০৮২।]
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়েস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আয়েশা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিতরের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, কখনো প্রথম রাত্রিতে এবং কখনো শেষ রাত্রিতে। আমি বললাম, আল্লা-হু আকবার! সমসত্ম প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি দ্বীনের ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন। [আবু দাউদ, হা/১৪৩৯; তিরমিযী, হা/৪৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৫।]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সকল অংশে অর্থাৎ বিভিন্ন রাতে বিভিন্ন সময়ে বিতর আদায় করতেন। আর তাঁর বিতর শেষ হতো রাতের শেষ অংশে। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭০; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৬।]
যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের পরে বিতরের সালাত আদায় করা উত্তম।
বিতরের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
বিতরের সালাত ১, ৩, ৫, ৭ ও ৯ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়।
১ রাক‘আত বিতর :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাতের সালাত দু’রাক‘আত করে। অতঃপর কেউ যখন সালাত শেষ করতে চাইবে তখন সে উক্ত সালাতের সাথে বিতর হিসেবে এক রাক‘আত পড়ে নেবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
এক রাক‘আত বিতর সাধারণ সালাতের মতোই। নিয়ত করে সানা এবং সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর সিজদা করতে হবে, এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
৩ রাক‘আত বিতর :
তিন রাক‘আত বিতর দু’ভাবে আদায় করা যায়।
(এক) সাধারণ সালাতের মতো ২ রাক‘আত আদায় করে, ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। অতঃপর উঠে নতুন করে আরো এক রাক‘আত আদায় করে, আবার সালাম ফিরাতে হবে। [ফায়যুল বারী শরহুল বুখারী, ৩/১৮৮।]
(দুই) তিন রাক‘আত সালাত একটানা আদায় করে শেষ রাক‘আতে রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [নাসাঈ, হা/১৭০১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৪৬।]
৫ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৫ রাক‘আত পড়ে শেষ রাক‘আতে সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৭; আবু দাউদ, হা/১৩২৪; তিরমিযী, হা/৪৫৭।]
৭ ও ৯ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৬ বা ৮ রাক‘আত আদায় করে বসে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উঠে আরো ১ রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরাতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৩; আবু দাউদ, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/১৫২৭।]
বিতর আদায় করতে ভুলে গেলে :
কেউ যদি বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হলে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হতে জেগে ওঠার পরে সুযোগ মতো তা আদায় করে নেবে।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কেউ বিতর আদায় না করে ঘুমিয়ে যায় বা আদায় করতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র বা ফজরের সময় আদায় করে নেয়। [তিরমিযী, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৮; মিশকাত, হা/১২৭৯।]
সফরে বিতর আদায় :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয সালাত ছাড়া রাতের সালাত বাহনের উপরই আদায় করতেন, তা যে দিকেই ফিরুক না কেন। আর তিনি বাহনের উপরই বিতর আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০০০; তিরমিযী হা/৪৭২; নাসাঈ হা/ ১৬৮৯]
দু‘আ কুনূত কখন কীভাবে পড়বে :
কুনূত অর্থ বিনীত হওয়া। সাধারণত বিতর সালাতের শেষ রাক‘আতে দু‘আ কুনূত পড়া হয়। তাছাড়া মুসলমানদের উপর যখন কোন বিপদাপদ আসে তখন ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা হয়। নবী ﷺ ফজরের সালাতের শেষ রাক‘আতে রুকূর পর এ ধরনের কুনূত পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪০৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৮।] এ কুনূতকে কুনূতে নাযেলা বলা হয়।
কুনূত রুকূর আগে না পরে :
দু‘আ কুনূত রুকূর আগে ও পরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭১; তিরমিযী, হা/৪৫৬; ইবনে মাজাহ হা/১১৮৩-৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮০৩।] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কারো বিরুদ্ধে বা কারো পক্ষে দু‘আ করতেন, তখন রুকূর পরে কুনূত পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭২৮; মিশকাত হা/১২৮৮।] কুনূতে নাযেলা রুকূর পরে পাঠ করা উত্তম।
কুনূতে হাত উঠিয়ে দু‘আ করা :
বিতরের কুনূতে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তবে প্রসিদ্ধ সাহাবী ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ থেকে বিতরের কুনূতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দু‘আ করার কথা প্রমাণিত আছে। [বায়হাকী, হা/৪৬৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৩৯; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/২২৭৭।] ইমাম আহমদ (রহ.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, বিতরের কুনূত রুকূর পরে হবে নাকি পূর্বে হবে এবং এ সময় দু‘আ করার জন্য হাত উঠানো যাবে কিনা? তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকূর পরে এবং এ সময় হাত উঠিয়ে দু‘আ করবে। [মাসায়েলে ইমাম আহমদ, মাসআলা নং ৪১৭-২১।]
অতএব, কেউ যদি বিতরের কুনূতে হাত তুলে দু‘আ করতে চায় তবে এতে কোন আপত্তি নেই।
কুনূত পাঠের পর মুখে হাত বুলানো :
কুনূত পাঠের পর মুখে হাত বুলানোর ব্যাপারে কোন দলীল নেই। ইমাম বায়হাকী বলেন, কুনূতের পর চেহারায় হাত মুছার ব্যাপারে আমি সালফে সালেহীন থেকে কোন প্রমাণ পাইনি। [সুনানুল বায়হাকী, ২/২১২; সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, দারুত তাওফীক কাহেরা প্রকাশিত, ১/৩৪৭।] তাই দু‘আ করার পর হাত ছেড়ে দিতে হবে।
বিতরের সালাতের পর নীচের তাসবীহটি তিনবার পড়া মুস্তাহাব :
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ
উচ্চারণ : সুবহানাল মালিকিল কুদ্দূস।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা ঘোষণা করছি الْمَلِكِ মহান বাদশার الْقُدُّوْسِ যিনি পবিত্র।
অর্থ : আমি মহান পবিত্র বাদশার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৪৩২; নাসাঈ, হা/১৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৯০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৩৭৩; দার কুতনী, হা/১৬৫৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০০৯; মিশকাত, হা/১২৭৫।]
বিতরের সালাতের পর নফল প্রসঙ্গে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের সালাতকে শেষ সালাত বানাতে বলেছেন। তবে একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের পর দু’রাক‘আত নফল সালাত বসে আদায় করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩০০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫০১৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৯৯০; মিশকাত, হা/১২৮৭।]
মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ বলেছেন, এ সালাত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য খাস ছিল। তবে অনেকের মতে, কেউ যদি উক্ত দু’রাক‘আত সালাত নফল হিসেবে পড়তে চায় তবে পড়তে পারে।
বিতরের সালাত আদায় করার জন্য অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ اللهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ , فَأَوْتِرُوْا يَا أَهْلَ الْقُرْاٰنِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন; সুতরাং হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতরের সালাত আদায় করো। [ইবনে মাজাহ, হা/১১৭০; আবু দাউদ, হা/১৪১৮; তিরমিযী, হা/৪৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৪, ১২২৭; মিশকাত, হা/১২৬৬।]
বিতর সালাতের সময় :
বিতর সালাতের সময় এশার পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত। অনেকেই বিতর সালাতকে এশার সালাতের সাথে মিলিয়ে ফেলে। আসলে বিতর সম্পূর্ণ ভিন্ন সালাত। এই সালাত এশার পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করার আদেশ করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, বিতরের সময় অনুচ্ছেদ; নাসাঈ, হা/২৪০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৩৮।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা রাতের শেষ সালাতকে বিতর করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯১; আবু দাউদ, হা/১৪৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০৮২।]
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়েস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আয়েশা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিতরের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, কখনো প্রথম রাত্রিতে এবং কখনো শেষ রাত্রিতে। আমি বললাম, আল্লা-হু আকবার! সমসত্ম প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি দ্বীনের ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন। [আবু দাউদ, হা/১৪৩৯; তিরমিযী, হা/৪৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৫।]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সকল অংশে অর্থাৎ বিভিন্ন রাতে বিভিন্ন সময়ে বিতর আদায় করতেন। আর তাঁর বিতর শেষ হতো রাতের শেষ অংশে। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭০; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৬।]
যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের পরে বিতরের সালাত আদায় করা উত্তম।
বিতরের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
বিতরের সালাত ১, ৩, ৫, ৭ ও ৯ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়।
১ রাক‘আত বিতর :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাতের সালাত দু’রাক‘আত করে। অতঃপর কেউ যখন সালাত শেষ করতে চাইবে তখন সে উক্ত সালাতের সাথে বিতর হিসেবে এক রাক‘আত পড়ে নেবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
এক রাক‘আত বিতর সাধারণ সালাতের মতোই। নিয়ত করে সানা এবং সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর সিজদা করতে হবে, এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
৩ রাক‘আত বিতর :
তিন রাক‘আত বিতর দু’ভাবে আদায় করা যায়।
(এক) সাধারণ সালাতের মতো ২ রাক‘আত আদায় করে, ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। অতঃপর উঠে নতুন করে আরো এক রাক‘আত আদায় করে, আবার সালাম ফিরাতে হবে। [ফায়যুল বারী শরহুল বুখারী, ৩/১৮৮।]
(দুই) তিন রাক‘আত সালাত একটানা আদায় করে শেষ রাক‘আতে রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [নাসাঈ, হা/১৭০১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৪৬।]
৫ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৫ রাক‘আত পড়ে শেষ রাক‘আতে সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৭; আবু দাউদ, হা/১৩২৪; তিরমিযী, হা/৪৫৭।]
৭ ও ৯ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৬ বা ৮ রাক‘আত আদায় করে বসে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উঠে আরো ১ রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরাতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৩; আবু দাউদ, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/১৫২৭।]
বিতর আদায় করতে ভুলে গেলে :
কেউ যদি বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হলে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হতে জেগে ওঠার পরে সুযোগ মতো তা আদায় করে নেবে।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কেউ বিতর আদায় না করে ঘুমিয়ে যায় বা আদায় করতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র বা ফজরের সময় আদায় করে নেয়। [তিরমিযী, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৮৮; মিশকাত, হা/১২৭৯।]
সফরে বিতর আদায় :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয সালাত ছাড়া রাতের সালাত বাহনের উপরই আদায় করতেন, তা যে দিকেই ফিরুক না কেন। আর তিনি বাহনের উপরই বিতর আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০০০; তিরমিযী হা/৪৭২; নাসাঈ হা/ ১৬৮৯]
দু‘আ কুনূত কখন কীভাবে পড়বে :
কুনূত অর্থ বিনীত হওয়া। সাধারণত বিতর সালাতের শেষ রাক‘আতে দু‘আ কুনূত পড়া হয়। তাছাড়া মুসলমানদের উপর যখন কোন বিপদাপদ আসে তখন ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা হয়। নবী ﷺ ফজরের সালাতের শেষ রাক‘আতে রুকূর পর এ ধরনের কুনূত পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪০৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৮।] এ কুনূতকে কুনূতে নাযেলা বলা হয়।
কুনূত রুকূর আগে না পরে :
দু‘আ কুনূত রুকূর আগে ও পরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭১; তিরমিযী, হা/৪৫৬; ইবনে মাজাহ হা/১১৮৩-৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮০৩।] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কারো বিরুদ্ধে বা কারো পক্ষে দু‘আ করতেন, তখন রুকূর পরে কুনূত পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭২৮; মিশকাত হা/১২৮৮।] কুনূতে নাযেলা রুকূর পরে পাঠ করা উত্তম।
কুনূতে হাত উঠিয়ে দু‘আ করা :
বিতরের কুনূতে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তবে প্রসিদ্ধ সাহাবী ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ থেকে বিতরের কুনূতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দু‘আ করার কথা প্রমাণিত আছে। [বায়হাকী, হা/৪৬৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৩৯; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/২২৭৭।] ইমাম আহমদ (রহ.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, বিতরের কুনূত রুকূর পরে হবে নাকি পূর্বে হবে এবং এ সময় দু‘আ করার জন্য হাত উঠানো যাবে কিনা? তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকূর পরে এবং এ সময় হাত উঠিয়ে দু‘আ করবে। [মাসায়েলে ইমাম আহমদ, মাসআলা নং ৪১৭-২১।]
অতএব, কেউ যদি বিতরের কুনূতে হাত তুলে দু‘আ করতে চায় তবে এতে কোন আপত্তি নেই।
কুনূত পাঠের পর মুখে হাত বুলানো :
কুনূত পাঠের পর মুখে হাত বুলানোর ব্যাপারে কোন দলীল নেই। ইমাম বায়হাকী বলেন, কুনূতের পর চেহারায় হাত মুছার ব্যাপারে আমি সালফে সালেহীন থেকে কোন প্রমাণ পাইনি। [সুনানুল বায়হাকী, ২/২১২; সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, দারুত তাওফীক কাহেরা প্রকাশিত, ১/৩৪৭।] তাই দু‘আ করার পর হাত ছেড়ে দিতে হবে।
বিতরের সালাতের পর নীচের তাসবীহটি তিনবার পড়া মুস্তাহাব :
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ
উচ্চারণ : সুবহানাল মালিকিল কুদ্দূস।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা ঘোষণা করছি الْمَلِكِ মহান বাদশার الْقُدُّوْسِ যিনি পবিত্র।
অর্থ : আমি মহান পবিত্র বাদশার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৪৩২; নাসাঈ, হা/১৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৯০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৩৭৩; দার কুতনী, হা/১৬৫৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০০৯; মিশকাত, হা/১২৭৫।]
বিতরের সালাতের পর নফল প্রসঙ্গে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের সালাতকে শেষ সালাত বানাতে বলেছেন। তবে একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের পর দু’রাক‘আত নফল সালাত বসে আদায় করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩০০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৫০১৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৯৯০; মিশকাত, হা/১২৮৭।]
মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ বলেছেন, এ সালাত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য খাস ছিল। তবে অনেকের মতে, কেউ যদি উক্ত দু’রাক‘আত সালাত নফল হিসেবে পড়তে চায় তবে পড়তে পারে।
(১) اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ ‐ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ ‐ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ ‐ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أعْطَيْتَ ‐ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ ‐ إنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ ‐ وَإنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ ‐ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ‐ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ ‐ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ ‐ وَ صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া ‘আফিনী ফীমান্ ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা আ‘তাইত, ওয়াক্বিনী শার্রা মা কাযাইত, ইন্নাকা তাক্যী ওয়ালা ইয়ুক্যা ‘আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আদাইত, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আলাইত, নাসতাগফিরুকা ওয়ানাতূবু ইলাইক, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِهْدِنِيْ আমাকে হেদায়াত দান করুন فِيْمَنْ هَدَيْتَ যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপত্তা দিন فِيْمَنْ عَافَيْتَ যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। وَتَوَلَّنِيْ আর আমাকে সাহায্য করুন فِيْمَنْ تَوَلَيْتَ যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَبَارِكْ لِيْ আমাকে বরকত দিন فِيْمَا أَعْطَيْتَ যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে। وَقِنِيْ আর আমাকে রক্ষা করুন شَرَّ مَا قَضَيْتَ আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে, إنَّكَ تَقْضِيْ নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। وَإنَّهٗ لَا يَذِلُّ ঐ ব্যক্তি কখনো অপমানিত হয় না مَنْ وَّالَيْتَ আপনি যাকে সহায়তা দিয়েছেন। وَلَا يَعِزُّ আর ঐ ব্যক্তি কখনো সম্মান পায় না مَنْ عَادَيْتَ আপনি যাকে ত্যাগ করেছেন। تَبَارَكْتَ رَبَّنَا হে আমাদের মালিক! আপনি বরকতময় وَتَعَالَيْتَ আর আপনি মহান, نَسْتَغْفِرُكَ আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ আর আপনার দিকেই ফিরে আসি, وَ صَلَّى اللهُ আল্লাহ রহমত নাযিল করুন عَلَى النَّبِىِّ নবীর প্রতি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে নিরাপত্তা দিন, যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আর আমাকে সাহায্য করুন, যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর আমাকে রক্ষা করুন আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে। নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। আপনি যার সহায় সে কখনো অপমানিত হয় না। আর আপনি যাকে ত্যাগ করেন সে কখনো সম্মান পায় না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময় আর আপনি মহান, আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই। আর আমরা আপনার দিকেই ফিরে আসি, আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাযিল করুন।
ইমাম হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এ কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন- যা আমি বিতরের কুনূতে পড়ি। [আবু দাউদ, হা/১৪২৭; নাসাঈ, হা/১৭৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৭৮।]
(২) اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ - اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ইনুকা, ওয়া নাস্ তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতা ওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়ানুস্নী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাক্ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাত্রুকূ মাইয়াফজুরুকা, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওয়ানাস্জুদু ওয়া ইলাইকা নাস্আ ওয়া নাহ্ফিদু ওয়ানার্জূ রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা আযা-বাকা, ইন্না আযা-বাকা বিল্কুফ্ফা-রি মুলহিক্ব।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ আমরা আপনার সাহায্য চাই, وَ نَسْتَغْفِرُكَ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, وَنُؤْمِنُ بِكَ আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ আপনার উপর ভরসা করি, وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ আর আপনার উত্তম গুণগান করি, وَنَشْكُرُكَ আপনার শুকরিয়া আদায় করি, وَلَانَكْفُرُكَ আপনাকে অস্বীকার করি না, وَنَخْلَعُ আমরা ত্যাগ করি وَنَتْرُكُ এবং বর্জন করে চলি مَنْ يَّفْجُرُكَ যে আপনার নাফরমানী করে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إيَّاكَ نَعْبُدُ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, وَلَكَ نُصَلِّىْ আপনার জন্যই সালাত পড়ি, وَنَسْجُدُ আপনাকেই সিজদা করি, وَإلَيْكَ نَسْعٰى আর আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই, وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ আর আমরা আশা রাখি رَحْمَتَكَ আপনার রহমতের, وَنَخْشٰى আর আমরা ভয় করি عَذَابَكَ আপনার আযাবকে, إنَّ عَذَابَكَ নিশ্চয় আপনার আযাব بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ কাফিরদের জন্য অবধারিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, আপনার উপর ভরসা করি, আর আপনার উত্তম গুণগান বর্ণনা করি, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে আপনার নাফরমানী করে (গোনাহের কাজ করে) আমরা তাকে ত্যাগ করি ও বর্জন করে চলি। হে আল্লাহ! আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, আপনার জন্যই সালাত পড়ি, আপনাকেই সিজদা করি এবং আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই। আর আমরা আপনার রহমতের আশা রাখি, আর আপনার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় আপনার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত। [তাবারানী, হা/৭৫০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯৭০; শারহু মা‘আনিল আছার, হা/১৪৭৫।]
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া ‘আফিনী ফীমান্ ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা আ‘তাইত, ওয়াক্বিনী শার্রা মা কাযাইত, ইন্নাকা তাক্যী ওয়ালা ইয়ুক্যা ‘আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আদাইত, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আলাইত, নাসতাগফিরুকা ওয়ানাতূবু ইলাইক, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِهْدِنِيْ আমাকে হেদায়াত দান করুন فِيْمَنْ هَدَيْتَ যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপত্তা দিন فِيْمَنْ عَافَيْتَ যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। وَتَوَلَّنِيْ আর আমাকে সাহায্য করুন فِيْمَنْ تَوَلَيْتَ যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَبَارِكْ لِيْ আমাকে বরকত দিন فِيْمَا أَعْطَيْتَ যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে। وَقِنِيْ আর আমাকে রক্ষা করুন شَرَّ مَا قَضَيْتَ আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে, إنَّكَ تَقْضِيْ নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। وَإنَّهٗ لَا يَذِلُّ ঐ ব্যক্তি কখনো অপমানিত হয় না مَنْ وَّالَيْتَ আপনি যাকে সহায়তা দিয়েছেন। وَلَا يَعِزُّ আর ঐ ব্যক্তি কখনো সম্মান পায় না مَنْ عَادَيْتَ আপনি যাকে ত্যাগ করেছেন। تَبَارَكْتَ رَبَّنَا হে আমাদের মালিক! আপনি বরকতময় وَتَعَالَيْتَ আর আপনি মহান, نَسْتَغْفِرُكَ আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ আর আপনার দিকেই ফিরে আসি, وَ صَلَّى اللهُ আল্লাহ রহমত নাযিল করুন عَلَى النَّبِىِّ নবীর প্রতি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে নিরাপত্তা দিন, যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আর আমাকে সাহায্য করুন, যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর আমাকে রক্ষা করুন আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে। নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। আপনি যার সহায় সে কখনো অপমানিত হয় না। আর আপনি যাকে ত্যাগ করেন সে কখনো সম্মান পায় না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময় আর আপনি মহান, আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই। আর আমরা আপনার দিকেই ফিরে আসি, আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাযিল করুন।
ইমাম হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এ কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন- যা আমি বিতরের কুনূতে পড়ি। [আবু দাউদ, হা/১৪২৭; নাসাঈ, হা/১৭৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৭৮।]
(২) اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ - اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ইনুকা, ওয়া নাস্ তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতা ওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়ানুস্নী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাক্ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাত্রুকূ মাইয়াফজুরুকা, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওয়ানাস্জুদু ওয়া ইলাইকা নাস্আ ওয়া নাহ্ফিদু ওয়ানার্জূ রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা আযা-বাকা, ইন্না আযা-বাকা বিল্কুফ্ফা-রি মুলহিক্ব।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ আমরা আপনার সাহায্য চাই, وَ نَسْتَغْفِرُكَ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, وَنُؤْمِنُ بِكَ আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ আপনার উপর ভরসা করি, وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ আর আপনার উত্তম গুণগান করি, وَنَشْكُرُكَ আপনার শুকরিয়া আদায় করি, وَلَانَكْفُرُكَ আপনাকে অস্বীকার করি না, وَنَخْلَعُ আমরা ত্যাগ করি وَنَتْرُكُ এবং বর্জন করে চলি مَنْ يَّفْجُرُكَ যে আপনার নাফরমানী করে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إيَّاكَ نَعْبُدُ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, وَلَكَ نُصَلِّىْ আপনার জন্যই সালাত পড়ি, وَنَسْجُدُ আপনাকেই সিজদা করি, وَإلَيْكَ نَسْعٰى আর আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই, وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ আর আমরা আশা রাখি رَحْمَتَكَ আপনার রহমতের, وَنَخْشٰى আর আমরা ভয় করি عَذَابَكَ আপনার আযাবকে, إنَّ عَذَابَكَ নিশ্চয় আপনার আযাব بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ কাফিরদের জন্য অবধারিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, আপনার উপর ভরসা করি, আর আপনার উত্তম গুণগান বর্ণনা করি, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে আপনার নাফরমানী করে (গোনাহের কাজ করে) আমরা তাকে ত্যাগ করি ও বর্জন করে চলি। হে আল্লাহ! আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, আপনার জন্যই সালাত পড়ি, আপনাকেই সিজদা করি এবং আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই। আর আমরা আপনার রহমতের আশা রাখি, আর আপনার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় আপনার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত। [তাবারানী, হা/৭৫০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯৭০; শারহু মা‘আনিল আছার, হা/১৪৭৫।]
সালাতুয যোহাকে ইশরাক বা চাশতের সালাতও বলা হয়। اِشْرَاقٌ (ইশরাক) অর্থ চমকিত হওয়া। আর ضُحٰى (যোহা) অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এ সালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে সালাতুল ইশরাক বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে সালাতুয যোহা বা চাশতের সালাত বলা হয়।
সালাতুয যোহার গুরুত্ব ও ফযীলত :
এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে।
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهٗ كَاَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ قَالَ : يُصْبِحُ عَلٰى كُلِّ سُلَامٰى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذٰلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحٰى
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হাম্দুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাতই যথেষ্ঠ হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
সালাতুয যোহা কত রাক‘আত :
সালাতুয যোহা ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত সালাত পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত হা/১৩০৯।] এ সালাতে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম, তবে কেউ ইচ্ছা করলে প্রতি চার রাক‘আত পরও সালাম ফিরাতে পারে।
সালাতুয যোহার গুরুত্ব ও ফযীলত :
এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে।
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهٗ كَاَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ -ﷺ - أَنَّهٗ قَالَ : يُصْبِحُ عَلٰى كُلِّ سُلَامٰى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذٰلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحٰى
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হাম্দুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাতই যথেষ্ঠ হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
সালাতুয যোহা কত রাক‘আত :
সালাতুয যোহা ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত সালাত পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত হা/১৩০৯।] এ সালাতে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম, তবে কেউ ইচ্ছা করলে প্রতি চার রাক‘আত পরও সালাম ফিরাতে পারে।
তাহিয়্যা শব্দের অর্থ হচ্ছে উপঢৌকন। অযু করার পর অযুর উপহার হিসেবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলে। এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। এ আমলের প্রতিদানস্বরূপ রাসূলুল্লাহ ﷺ জান্নাতে বিলাল (রাঃ) এর পায়ের শব্দ শুনতে পান।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَا بِلَالُ حَدِّثْنِيْ بِاَرْجى عَمَلٍ عَمِلْتَهٗ فِي الْاِسْلَامِ فَاِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ - قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلًا اَرْجىْ عِنْدِيْ اَنِّي لَمْ اَتَطَهَّرْ طَهُوْرًا فِيْ سَاعَةِ لَيْلٍ اَوْ نَهَارٍ اِلَّا صَلَّيْتُ بِذٰلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ اَنْ اُصَلِّيَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের সালাতের পর বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই অযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন নফল সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِىِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : مَا مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ وَيُصَلِّىْ رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ بِقَلْبِه وَوَجْهِه عَلَيْهِمَا إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
উক্ববা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে অযু করবে এবং তার চেহারা ও অন্তর উভয়কে আল্লাহমুখী করে দু’রাক‘আত সালাত পড়বে, তার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [আবু দাউদ, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; নাসাঈ, হা/১৫১।]
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَا بِلَالُ حَدِّثْنِيْ بِاَرْجى عَمَلٍ عَمِلْتَهٗ فِي الْاِسْلَامِ فَاِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ - قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلًا اَرْجىْ عِنْدِيْ اَنِّي لَمْ اَتَطَهَّرْ طَهُوْرًا فِيْ سَاعَةِ لَيْلٍ اَوْ نَهَارٍ اِلَّا صَلَّيْتُ بِذٰلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ اَنْ اُصَلِّيَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের সালাতের পর বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই অযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন নফল সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِىِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : مَا مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ وَيُصَلِّىْ رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ بِقَلْبِه وَوَجْهِه عَلَيْهِمَا إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
উক্ববা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে অযু করবে এবং তার চেহারা ও অন্তর উভয়কে আল্লাহমুখী করে দু’রাক‘আত সালাত পড়বে, তার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [আবু দাউদ, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; নাসাঈ, হা/১৫১।]
তাওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা অর্থাৎ গোনাহ থেকে ফিরে আসা। মুমিন বান্দা অনেক সময় গোনাহ করে ফেলতে পারে। সেই গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করাকে সালাতুত তাওবা বলে।
মানুষ নিষ্পাপ হতে পারে না। যেহেতু শয়তান সর্বদা মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তার পেছনে লেগে থাকে। কিমত্মু মানুষের দায়িত্ব হলো, যদি হঠাৎ কোন পাপ হয়ে যায় তবে তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবা করা। আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী বান্দাদেরকে পছন্দ করেন।
তাওবার জন্য করণীয় হলো, বান্দা যে পাপ করে ফেলেছে তার জন্য লজ্জিত হবে, ঐ পাপ ভবিষ্যতে না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করবে, কারো হক নষ্ট করে থাকলে তা পরিশোধ করবে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার পাপ ক্ষমা করবেন। তাওবা সম্পর্কে আরো বিসত্মারিত জানতে পড়তে পারেন আমাদের বই- ‘‘গীবত থেকে বাঁচার উপায় ও তাওবা করার পদ্ধতি’’।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে অতঃপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৩; তিরমিযী, হা/৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭।]
তাওবার সালাতেরও বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত অথবা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। এ সালাতের সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে নিম্নের দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করবে :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : আসত্মাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহ।
শাব্দিক অর্থ : أَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি اَللهَ الَّذِىْ সেই আল্লাহর নিকট لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত। اَلْحَىُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ চিরস্থায়ী وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ আর আমি তার দিকেই ফিরে যাচ্ছি।
অর্থ : আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকট যিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তাওবা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৫১৯; তিরমিযী, হা/৩৫৭৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৮৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০৬৩; মিশকাত, হা/২৩৫৩।]
এক্ষেত্রে সাইয়্যেদুল ইসেত্মগফারও পাঠ করা যায়।
মানুষ নিষ্পাপ হতে পারে না। যেহেতু শয়তান সর্বদা মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তার পেছনে লেগে থাকে। কিমত্মু মানুষের দায়িত্ব হলো, যদি হঠাৎ কোন পাপ হয়ে যায় তবে তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবা করা। আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী বান্দাদেরকে পছন্দ করেন।
তাওবার জন্য করণীয় হলো, বান্দা যে পাপ করে ফেলেছে তার জন্য লজ্জিত হবে, ঐ পাপ ভবিষ্যতে না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করবে, কারো হক নষ্ট করে থাকলে তা পরিশোধ করবে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার পাপ ক্ষমা করবেন। তাওবা সম্পর্কে আরো বিসত্মারিত জানতে পড়তে পারেন আমাদের বই- ‘‘গীবত থেকে বাঁচার উপায় ও তাওবা করার পদ্ধতি’’।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে অতঃপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৩; তিরমিযী, হা/৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭।]
তাওবার সালাতেরও বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত অথবা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। এ সালাতের সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে নিম্নের দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করবে :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : আসত্মাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহ।
শাব্দিক অর্থ : أَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি اَللهَ الَّذِىْ সেই আল্লাহর নিকট لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত। اَلْحَىُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ চিরস্থায়ী وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ আর আমি তার দিকেই ফিরে যাচ্ছি।
অর্থ : আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকট যিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তাওবা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৫১৯; তিরমিযী, হা/৩৫৭৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৮৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০৬৩; মিশকাত, হা/২৩৫৩।]
এক্ষেত্রে সাইয়্যেদুল ইসেত্মগফারও পাঠ করা যায়।
হাজাত শব্দের অর্থ হচ্ছে, প্রয়োজন বা অভাব। বান্দা তার কোন প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য পাওয়ার লক্ষ্যে যে সালাত আদায় করে থাকে তাকে সালাতুল হাজাত বলে।
মানুষ সবসময়ই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। একজন মুমিন বান্দার উচিত হলো, তার যখন কোন প্রয়োজন দেখা দেবে অথবা সে কোন বিপদে পড়বে তখন সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য অথবা প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাওয়া। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এমন এক সত্তা, যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা যদি কাউকে সাহায্য করতে চান তবে সেই সাহায্য প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন প্রয়োজনে সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতেন। তাই আমরাও আল্লাহর নিকট এভাবে সাহায্য চাইব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও।
(সূরা বাকারা- ১৫৩)
সালাতুল হাজাতের বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য দু‘আ করবে, নিম্নোক্ত দু‘আটিও পাঠ করা যায়।
﴿رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾
উচ্চারণ : রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! اٰتِنَا আমাদেরকে দান করুন فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে حَسَنَةً কল্যাণ وَّ فِي اَلْاٰخِرَةِ এবং আখিরাতেও حَسَنَةً কল্যাণ (দান করুন) আর وَّ قِنَا আমাদেরকে রক্ষা করুন عَذَابَ النَّارِ জাহান্নামের আযাব হতে ।
অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। (সূরা বাকারা- ২০১)
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অধিকাংশ সময় এ দু‘আটি পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৭; আবু দাউদ, হা/১৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬০৫; মিশকাত, হা/২৪৮৭।]
মানুষ সবসময়ই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। একজন মুমিন বান্দার উচিত হলো, তার যখন কোন প্রয়োজন দেখা দেবে অথবা সে কোন বিপদে পড়বে তখন সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য অথবা প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাওয়া। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এমন এক সত্তা, যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা যদি কাউকে সাহায্য করতে চান তবে সেই সাহায্য প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন প্রয়োজনে সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতেন। তাই আমরাও আল্লাহর নিকট এভাবে সাহায্য চাইব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও।
(সূরা বাকারা- ১৫৩)
সালাতুল হাজাতের বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য দু‘আ করবে, নিম্নোক্ত দু‘আটিও পাঠ করা যায়।
﴿رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾
উচ্চারণ : রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! اٰتِنَا আমাদেরকে দান করুন فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে حَسَنَةً কল্যাণ وَّ فِي اَلْاٰخِرَةِ এবং আখিরাতেও حَسَنَةً কল্যাণ (দান করুন) আর وَّ قِنَا আমাদেরকে রক্ষা করুন عَذَابَ النَّارِ জাহান্নামের আযাব হতে ।
অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। (সূরা বাকারা- ২০১)
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অধিকাংশ সময় এ দু‘আটি পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৭; আবু দাউদ, হা/১৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬০৫; মিশকাত, হা/২৪৮৭।]
ইসিত্মখারা শব্দের অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ কামনা করা বা মঙ্গল চাওয়া। পরিভাষায় কোন বিষয়ে ভালো সিন্ধামেত্ম পৌঁছার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে সালাতুল ইসিত্মখারা বলে।
একজন মানুষ যতই জ্ঞানী হোক না কেন মানুষ হিসেবে সে দুর্বল এবং তার জ্ঞানও সীমিত। তাছাড়া ভবিষ্যতে কার ভাগ্যে কি আছে বা কীসে কল্যাণ আছে বা কীসে অকল্যাণ আছে এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। বান্দা অনেক সময় কোন কাজ করতে গিয়ে সেটা ভালো হবে না মন্দ হবে তা নির্ধারণ করতে পারে না। এমতাবস্থায় তার উচিত হলো আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। এজন্য যখন কেউ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সিন্ধামত্ম নেবে তখন সে কাজটা তার জন্য কল্যাণকর হবে কি হবে না সেটা নির্ণয় করার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সালাত আদায়ের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে। আর এটাই হচ্ছে সালাতুল ইসিত্মখারার মূল বিষয়।
একজন মানুষ যতই জ্ঞানী হোক না কেন মানুষ হিসেবে সে দুর্বল এবং তার জ্ঞানও সীমিত। তাছাড়া ভবিষ্যতে কার ভাগ্যে কি আছে বা কীসে কল্যাণ আছে বা কীসে অকল্যাণ আছে এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। বান্দা অনেক সময় কোন কাজ করতে গিয়ে সেটা ভালো হবে না মন্দ হবে তা নির্ধারণ করতে পারে না। এমতাবস্থায় তার উচিত হলো আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। এজন্য যখন কেউ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সিন্ধামত্ম নেবে তখন সে কাজটা তার জন্য কল্যাণকর হবে কি হবে না সেটা নির্ণয় করার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সালাত আদায়ের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে। আর এটাই হচ্ছে সালাতুল ইসিত্মখারার মূল বিষয়।
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন সেভাবে সকল কাজে ইস্তিখারা করার নিয়ম ও দু‘আ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোন কাজ করবে তখন সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে এবং এ দু‘আ পড়ে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَاَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَاِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا اَعْلَمُ وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ - اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِىْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ اَللّٰهُمَّ وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ شَرُّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِه
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়াআসতাক্বদিরুকা বিকুদ্রাতিকা ওয়াআস্আলুকা মিন ফাযলিকাল আযীম। ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা আক্বদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়ালা- আ‘লামু ওয়াআনতা আল্লা-মুল্ গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইনকুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খাইরুল্লী ফীদ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী ছুম্মা বা-রিক লী ফীহ। আল্লা-হুম্মা ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল্লী ফীদ্বীনী ওয়ামা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাস্রিফ্নী ‘আনহু ওয়াস্রিফ্হু ‘আন্নী ওয়াক্বদুরলিয়াল খাইরা হাইছু কা-না, ছুম্মা আরযিনী বিহ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْتَخِيْرُكَ আমি তোমার নিকট ভালো দিক জ্ঞাত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি بِعِلْمِكَ তোমারই জ্ঞানের সাহায্যে وَاَسْتَقْدِرُكَ এবং আমার ব্যাপারে নির্ধারিত বিষয়ে জ্ঞাত হওয়ার জন্য তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি بِقُدْرَتِكَ তোমার কুদরতের সাহায্যে وَاَسْاَلُكَ এবং আমি তোমার নিকট কামনা করছি مِنْ فَضْلِكَ اَلْعَظِيْمِ তোমার মহান অনুগ্রহ থেকে কিছু অনুগ্রহ। فَاِنَّكَ تَقْدِرُ নিশ্চয় তুমিই সক্ষম, وَلَا اَقْدِرُ আমি সক্ষম নই। وَتَعْلَمُ এবং তুমি জান, وَلَا اَعْلَمُ আমি জানি না। وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ আর তুমি অদৃশ্যের খবরও জান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ যদি মনে কর اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ নিশ্চয় এ বিষয়টি خَيْرٌ لِّيْ আমার জন্য ভালো হবে فِيْ دِيْنِيْ আমার দ্বীনের ব্যাপারে, وَمَعَاشِيْ আমার জীবন ধারণের ব্যাপারে وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ এবং পরিণামের ব্যাপারে, فَاقْدُرْهُ لِيْ তাহলে তুমি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দাও وَيَسِّرْهُ لِىْ এবং তা আমার জন্য সহজ করে দাও। ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ তারপর তুমি তাতে বরকত দান করো। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ যদি তুমি মনে কর اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ নিশ্চয় এ বিষয়টি شَرُّ لِّيْ আমার জন্য অকল্যাণকর হবে فِيْ دِيْنِيْ আমার দ্বীনের ব্যাপারে, وَمَعَاشِيْ আমার জীবন ধারণের ব্যাপারে وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ এবং পরিণামের ব্যাপারে, فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ তাহলে তুমি আমাকে তা হতে ফিরিয়ে রাখো وَاصْرِفْهُ عَنِّيْ এবং ওটাকেও আমার হতে ফিরিয়ে রাখো। وَاَقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করো حَيْثُ كَانَ তা যেখানেই হোক ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِهٖ এবং আমাকে ওটাতেই সন্তুষ্ট রাখো।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমারই জ্ঞান ও কুদরতের সাহায্যে এই বিষয়ের (যে বিষয়ের ব্যাপারে ইস্তিখারা করবে উহার) ভালো দিক জ্ঞাত হওয়া প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার নিকট অনুগ্রহ কামনা করছি। তুমি সক্ষম, আমি সক্ষম নই। তুমি জান, আমি জানি না। তুমি অদৃশ্যের খবর জান। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর এ বিষয়টি আমার দ্বীন, আমার জীবন ধারণ ও পরিণামের ব্যাপারে আমার জন্য ভালো হবে, তাহলে তুমি আমার জন্য তা নির্ধারণ করো। অতঃপর তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং তাতে বরকত দান করো। আর যদি মনে কর বিষয়টি আমার জন্য আমার দ্বীন, আমার জীবন ধারণ ও আমার পরিণামের ব্যাপারে অকল্যাণকর, তাহলে তুমি আমার হতে তা ফিরিয়ে রাখো এবং আমাকেও তা হতে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্য নির্ধারণ করো কল্যাণ তা যেখানেই হোক এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট রাখো। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৯০; আবু দাউদ, হা/১৫৪০; তিরমিযী, হা/৪৮০; নাসাঈ, হা/৩২৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৮; মিশকাত, হা/১৩২৩।]
ইসিত্মখারা করার নিয়ম :
কোন বিষয়ে স্থির সিদ্ধামত্ম না করে এবং কোন দিকে ঝুঁক না রেখে নিরপেক্ষ ও খোলা মনে ইসিত্মখারার নিয়তে সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে সেভাবেই কাজ করবে। এ সালাত দিনে বা রাতে যে কোন সময় পড়া যায়।
ইসিত্মখারার সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক শেখানো বিশেষ দু‘আটি পাঠ করতে হবে। দু‘আটি কখন পড়বে, সে বিষয়ে দুটি নিয়ম পাওয়া যায়। একটি হলো সালাম ফিরানোর পর দু‘আ করবে। কেননা জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত বুখারীর হাদীসে এসেছে, ثُمَّ لْيَقُلْ অতঃপর সে যেন বলে। এ শব্দ দ্বারা বুঝা যায় যে, সালাম ফিরানোর পর দু‘আ করবে।
আর দ্বিতীয়টি হলো, সালাতের মধ্যেই দু‘আ করবে। কেননা অপর হাদীসে এসেছে, وَلْيَقُلْ এবং সে যেন বলে। এ শব্দ দ্বারা বুঝা যায় যে, সালাতের মধ্যেই দু‘আ করবে। [মিরআত ৪/৭১৮।]
সালাতের মধ্যে পাঠ করলে সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর সালামের পূর্বে পাঠ করবে।
সুতরাং ইসিত্মখারার দু‘আটিও শেষ বৈঠকে বসে পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। আর যদি কেউ সালাম ফিরানোর পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতে চায় তাহলে বেশি দেরি না করে এবং অন্য কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি দু‘আ করবে এবং শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। যেমন- ‘‘আল হামদুলিল্লাহি রাবিবল আ-লামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম’’- এ অংশটি পাঠ করার পর দু‘আটি পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪৮৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৮২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৪০।]
ইসিত্মখারার পর যেদিকে মন ঝুঁকে, সেটাই করা উচিত। এজন্য তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং স্বপ্ন দেখা বা কাশফ হওয়া অর্থাৎ হৃদয় খুলে যাওয়া শর্ত নয়।
একই বিষয়ের জন্য একাধিকবার ইসিত্মখারা করার কথা স্পষ্টভাবে কোন হাদীসে নেই। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কোন বিষয়ে দু‘আ করলে একই সময়ে তিনবার করে দু‘আ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৫০; মিশকাত, হা/৫৮৪৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪৭২।] এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, একবার ইসিত্মখারা করার পর সিন্ধামেত্ম পৌঁছতে না পারলে এর বেশিও করতে পারবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَاَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَاِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا اَعْلَمُ وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ - اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِىْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ اَللّٰهُمَّ وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ شَرُّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِه
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়াআসতাক্বদিরুকা বিকুদ্রাতিকা ওয়াআস্আলুকা মিন ফাযলিকাল আযীম। ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা আক্বদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়ালা- আ‘লামু ওয়াআনতা আল্লা-মুল্ গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইনকুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খাইরুল্লী ফীদ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী ছুম্মা বা-রিক লী ফীহ। আল্লা-হুম্মা ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল্লী ফীদ্বীনী ওয়ামা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাস্রিফ্নী ‘আনহু ওয়াস্রিফ্হু ‘আন্নী ওয়াক্বদুরলিয়াল খাইরা হাইছু কা-না, ছুম্মা আরযিনী বিহ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ اَسْتَخِيْرُكَ আমি তোমার নিকট ভালো দিক জ্ঞাত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি بِعِلْمِكَ তোমারই জ্ঞানের সাহায্যে وَاَسْتَقْدِرُكَ এবং আমার ব্যাপারে নির্ধারিত বিষয়ে জ্ঞাত হওয়ার জন্য তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি بِقُدْرَتِكَ তোমার কুদরতের সাহায্যে وَاَسْاَلُكَ এবং আমি তোমার নিকট কামনা করছি مِنْ فَضْلِكَ اَلْعَظِيْمِ তোমার মহান অনুগ্রহ থেকে কিছু অনুগ্রহ। فَاِنَّكَ تَقْدِرُ নিশ্চয় তুমিই সক্ষম, وَلَا اَقْدِرُ আমি সক্ষম নই। وَتَعْلَمُ এবং তুমি জান, وَلَا اَعْلَمُ আমি জানি না। وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ আর তুমি অদৃশ্যের খবরও জান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ যদি মনে কর اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ নিশ্চয় এ বিষয়টি خَيْرٌ لِّيْ আমার জন্য ভালো হবে فِيْ دِيْنِيْ আমার দ্বীনের ব্যাপারে, وَمَعَاشِيْ আমার জীবন ধারণের ব্যাপারে وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ এবং পরিণামের ব্যাপারে, فَاقْدُرْهُ لِيْ তাহলে তুমি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দাও وَيَسِّرْهُ لِىْ এবং তা আমার জন্য সহজ করে দাও। ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ তারপর তুমি তাতে বরকত দান করো। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ যদি তুমি মনে কর اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ নিশ্চয় এ বিষয়টি شَرُّ لِّيْ আমার জন্য অকল্যাণকর হবে فِيْ دِيْنِيْ আমার দ্বীনের ব্যাপারে, وَمَعَاشِيْ আমার জীবন ধারণের ব্যাপারে وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ এবং পরিণামের ব্যাপারে, فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ তাহলে তুমি আমাকে তা হতে ফিরিয়ে রাখো وَاصْرِفْهُ عَنِّيْ এবং ওটাকেও আমার হতে ফিরিয়ে রাখো। وَاَقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করো حَيْثُ كَانَ তা যেখানেই হোক ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِهٖ এবং আমাকে ওটাতেই সন্তুষ্ট রাখো।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমারই জ্ঞান ও কুদরতের সাহায্যে এই বিষয়ের (যে বিষয়ের ব্যাপারে ইস্তিখারা করবে উহার) ভালো দিক জ্ঞাত হওয়া প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার নিকট অনুগ্রহ কামনা করছি। তুমি সক্ষম, আমি সক্ষম নই। তুমি জান, আমি জানি না। তুমি অদৃশ্যের খবর জান। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর এ বিষয়টি আমার দ্বীন, আমার জীবন ধারণ ও পরিণামের ব্যাপারে আমার জন্য ভালো হবে, তাহলে তুমি আমার জন্য তা নির্ধারণ করো। অতঃপর তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং তাতে বরকত দান করো। আর যদি মনে কর বিষয়টি আমার জন্য আমার দ্বীন, আমার জীবন ধারণ ও আমার পরিণামের ব্যাপারে অকল্যাণকর, তাহলে তুমি আমার হতে তা ফিরিয়ে রাখো এবং আমাকেও তা হতে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্য নির্ধারণ করো কল্যাণ তা যেখানেই হোক এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট রাখো। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৯০; আবু দাউদ, হা/১৫৪০; তিরমিযী, হা/৪৮০; নাসাঈ, হা/৩২৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৮; মিশকাত, হা/১৩২৩।]
ইসিত্মখারা করার নিয়ম :
কোন বিষয়ে স্থির সিদ্ধামত্ম না করে এবং কোন দিকে ঝুঁক না রেখে নিরপেক্ষ ও খোলা মনে ইসিত্মখারার নিয়তে সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে সেভাবেই কাজ করবে। এ সালাত দিনে বা রাতে যে কোন সময় পড়া যায়।
ইসিত্মখারার সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক শেখানো বিশেষ দু‘আটি পাঠ করতে হবে। দু‘আটি কখন পড়বে, সে বিষয়ে দুটি নিয়ম পাওয়া যায়। একটি হলো সালাম ফিরানোর পর দু‘আ করবে। কেননা জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত বুখারীর হাদীসে এসেছে, ثُمَّ لْيَقُلْ অতঃপর সে যেন বলে। এ শব্দ দ্বারা বুঝা যায় যে, সালাম ফিরানোর পর দু‘আ করবে।
আর দ্বিতীয়টি হলো, সালাতের মধ্যেই দু‘আ করবে। কেননা অপর হাদীসে এসেছে, وَلْيَقُلْ এবং সে যেন বলে। এ শব্দ দ্বারা বুঝা যায় যে, সালাতের মধ্যেই দু‘আ করবে। [মিরআত ৪/৭১৮।]
সালাতের মধ্যে পাঠ করলে সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর সালামের পূর্বে পাঠ করবে।
সুতরাং ইসিত্মখারার দু‘আটিও শেষ বৈঠকে বসে পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। আর যদি কেউ সালাম ফিরানোর পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতে চায় তাহলে বেশি দেরি না করে এবং অন্য কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি দু‘আ করবে এবং শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। যেমন- ‘‘আল হামদুলিল্লাহি রাবিবল আ-লামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম’’- এ অংশটি পাঠ করার পর দু‘আটি পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪৮৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৮২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৪০।]
ইসিত্মখারার পর যেদিকে মন ঝুঁকে, সেটাই করা উচিত। এজন্য তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং স্বপ্ন দেখা বা কাশফ হওয়া অর্থাৎ হৃদয় খুলে যাওয়া শর্ত নয়।
একই বিষয়ের জন্য একাধিকবার ইসিত্মখারা করার কথা স্পষ্টভাবে কোন হাদীসে নেই। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কোন বিষয়ে দু‘আ করলে একই সময়ে তিনবার করে দু‘আ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৫০; মিশকাত, হা/৫৮৪৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪৭২।] এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, একবার ইসিত্মখারা করার পর সিন্ধামেত্ম পৌঁছতে না পারলে এর বেশিও করতে পারবে।
তাসবীহ শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা। সালাতুত তাসবীহের মধ্যে একটি বিশেষ তাসবীহ অনেকবার পাঠ করা হয় বিধায় এ সালাতকে সালাতুত তাসবীহ বলা হয়।
সালাতুত তাসবীর অবস্থান :
সালাতুত তাসবীর হাদীসটি আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে এসেছে। এ বিষয়ের হাদীসগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ লক্ষ্য করা যায় :
প্রথম অভিমত : ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, এ বিষয়ের হাদীস মিথ্যা। ইবনুল জাওযী বলেন, যঈফ বা জাল। ইমাম আহমাদের প্রাচীন মতে এ সম্পর্কিত হাদীস সহীহ নয়। শাইখ আবদুল আযীয বিন বায ও শাইখ সালিহ আল উসাইমিন (রহ.) তারাও এ মতের সমর্থক।
দ্বিতীয় অভিমত : হাদীসটির যঈফ সূত্রগুলো পরস্পরকে শক্তিশালী করে মনে করে একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে হাসান বা সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। শাইখ আলবানী (রহ.) একাধিক সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত হওয়ায় স্বীয় সহীহ আবু দাউদের ১১৫২ নং হাদীসে এটাকে সংকলন করেছেন এবং ইবনে হাজার আসক্বালানী একে হাসান সত্মরে উন্নীত করেছেন।
সালাতুত তাসবীহ সংক্রামত্ম হাদীসের সনদের ব্যাপারে এ মতভেদ থাকার কারণে এ সালাতের হুকুম সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে। কারো মতে নফল হিসেবে এ সালাত আদায় করা যাবে। আবার কেউ বলেন, যেহেতু এর সনদ দুর্বল, আর দুর্বল সনদের উপর ভিত্তি করে কোন ইবাদাত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না- বিধায় তারা সালাতুত তাসবীহ না পড়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৩৭৬-৭৮ পৃঃ।]
সালাতুত তাসবীর অবস্থান :
সালাতুত তাসবীর হাদীসটি আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে এসেছে। এ বিষয়ের হাদীসগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ লক্ষ্য করা যায় :
প্রথম অভিমত : ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, এ বিষয়ের হাদীস মিথ্যা। ইবনুল জাওযী বলেন, যঈফ বা জাল। ইমাম আহমাদের প্রাচীন মতে এ সম্পর্কিত হাদীস সহীহ নয়। শাইখ আবদুল আযীয বিন বায ও শাইখ সালিহ আল উসাইমিন (রহ.) তারাও এ মতের সমর্থক।
দ্বিতীয় অভিমত : হাদীসটির যঈফ সূত্রগুলো পরস্পরকে শক্তিশালী করে মনে করে একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে হাসান বা সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। শাইখ আলবানী (রহ.) একাধিক সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত হওয়ায় স্বীয় সহীহ আবু দাউদের ১১৫২ নং হাদীসে এটাকে সংকলন করেছেন এবং ইবনে হাজার আসক্বালানী একে হাসান সত্মরে উন্নীত করেছেন।
সালাতুত তাসবীহ সংক্রামত্ম হাদীসের সনদের ব্যাপারে এ মতভেদ থাকার কারণে এ সালাতের হুকুম সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে। কারো মতে নফল হিসেবে এ সালাত আদায় করা যাবে। আবার কেউ বলেন, যেহেতু এর সনদ দুর্বল, আর দুর্বল সনদের উপর ভিত্তি করে কোন ইবাদাত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না- বিধায় তারা সালাতুত তাসবীহ না পড়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৩৭৬-৭৮ পৃঃ।]
ইসিত্মস্কা শব্দের অর্থ হচ্ছে, পানি প্রার্থনা করা। পারিভাষিক অর্থে অনাবৃষ্টিজনিত কারণে আল্লাহর নিকট পানি প্রার্থনা উপলক্ষে জামাআত সহকারে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে সালাতুল ইসিত্মস্কা বলে।
ইসিত্মস্কা সালাতের নিয়ম :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির অভাবে) ধনসম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং উপস্থিত লোকেরাও তাঁর সাথে হাত তুলে এভাবে দু‘আ করল,
اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا ، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا ، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আগিসনা, আল্লা-হুম্মা আগিসনা, আল্লা-হুম্মা আগিসনা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। (৩ বার) [সহীহ বুখারী, হা/১০১৪; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯৭; নাসাঈ, হা/১৫১৮।]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا ، اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا ، اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-, আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-, আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে পানি দান করুন। [সহীহ বুখারী, হা/১০১৩; নাসাঈ, হা/১৫১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৩।] (৩ বার)
আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! তখন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঘও নেই, মেঘের সামান্য অংশও নেই, এমনকি সাল‘আ পর্বতের আশপাশের ঘর-বাড়ি ও আমাদের মধ্যে কিছুই নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ সাল‘আ পর্বতের ওপাশ থেকে মেঘ উঠে এলো এবং আকাশের মাঝ বরাবর এসে তা বিস্তৃত হলো। তারপর খুব বৃষ্টি বর্ষণ হলো। (বৃষ্টি এত অধিক হলো যে) আল্লাহর কসম! আমরা এক সপ্তাহ পর্যন্ত সূর্য দেখতে পাইনি। এরপর পরবর্তী জুমু‘আয় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দাঁড়ানো অবস্থায় খুৎবা দিচ্ছিলেন। ব্যক্তিটি তাঁর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (অত্যধিক বৃষ্টির কারণে) ধনসম্পদ (বিশেষ করে গৃহপালিত পশু) নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে গেল। তাই আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, তিনি যেন বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দু’হাত তুললেন এবং উপস্থিত লোকেরাও তাঁর সাথে হাত তুলে দু‘আ করল,
اَللّٰهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا ، اَللّٰهُمَّ عَلَى الْاَ كَامِ وَ الظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الْاَوْدِيَةِ وَ مَنَابَةِ الشَّجَرَةِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লাইনা ওয়ালা- ‘আলাইনা, আল্লা-হুম্মা ‘আলাল আকা-মি ওয়ায্যিরা-বি ওয়াবুতূনিল আওদিয়াতি ওয়ামানা-বাতিশ শাজারাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! حَوَالَيْنَا আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন) وَلَا عَلَيْنَا আমাদের উপর নয়। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! عَلَى الْاَ كَامِ উঁচু ভূমিতে وَ الظِّرَابِ ও পাহাড়-পর্বতে, وَ بُطُوْنِ الْاَوْدِيَةِ উপত্যকা অঞ্চলে وَ مَنَابَةِ الشَّجَرَةِ এবং বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন), আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! উঁচু ভূমিতে ও পাহাড়-পর্বতে, উপত্যকা অঞ্চলে এবং বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)। [সহীহ বুখারী, হা/১০১৩; নাসাঈ, হা/১৫১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৮৮; মিশকাত, হা/৫৯০২।]
বর্ণনাকারী বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা রৌদ্রে চলাফেরা করতে শুরু করলাম। [সহীহ বুখারী, হা/১০২৯; বায়হাকী, হা/৬২৪২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকেরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি দিন নির্দিষ্ট করে সূর্যোদয়ের পর মিম্বার সহকারে ঈদগাহে গেলেন এবং মিম্বারে বসলেন, তারপর তিনি তাকবীর দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, তোমরা তোমাদের এলাকার দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করেছ। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাঁর কাছে দু‘আ করতে বলেন এবং তিনি তোমাদের দু‘আ কবুল করার ওয়াদা করেছেন। তারপর তিনি এ দু‘আ পাঠ করেন,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِىُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَّبَلَاغًا إِلٰى حِيْنٍ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হি রাবিবল আলামীন। আর রাহমা-নির রাহীম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ইয়াফ‘আলু মা-ইউরীদু, আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতাল গানীয়্যু ওয়া নাহনুল ফুকারা-উ, আনযিল আলাইনাল গায়সা ওয়াজ‘আল মা-আনযালতা লানা কূওয়াতাওঁ ওয়া বালা-গান ইলা-হীন।
শাব্দিক অর্থ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ সমসত্ম প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক। اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময় ও الرَّحِيْمِ অতীব দয়ালু। مٰلِكِ যিনি মালিক يَوْمِ الدِّيْنِ বিচার দিনের। لَا إِلٰهَ (প্রকৃতপক্ষে) কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। يَفْعَلُ তিনি তাই করেন مَا يُرِيْدُ যা তিনি ইচ্ছা করেন। اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! أَنْتَ اللهُ আপনিই আল্লাহ, لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا أَنْتَ আপনি ব্যতীত। الْغَنِىُّ আপনি পরমুখাপেক্ষীহীন وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ আর আমরা ফকীর, أَنْزِلْ عَلَيْنَا আপনি আমাদের উপর নাযিল করুন الْغَيْثَ বৃষ্টি وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا এবং যা নাযিল করবেন তাতে আমাদের জন্য বানিয়ে দিন قُوَّةً শক্তির উৎস وَبَلَاغًا এবং উপকারী إِلٰى حِيْنٍ এক যুগ পর্যমত্ম।
অর্থ : সমসত্ম প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক। যিনি অতীব দয়ালু ও করুণাময়। বিচার দিনের মালিক। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করেন। হে আল্লাহ! আপনিই আল্লাহ, আপনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। আপনি পরমুখাপেক্ষীহীন আর আমরা ফকীর-মিসকীন, আপনি আমাদের উপর বৃষ্টি নাযিল করুন এবং যা নাযিল করবেন তাতে আমাদের জন্য এক যুগ পর্যমত্ম শক্তির উৎস ও উপকারী বানিয়ে দিন।
দু‘আ পাঠ করার সময় দু’হাত এতটা তুললেন যে, তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যেতে লাগল। তারপর তিনি লোকদের দিকে পিঠ ফিরালেন এবং কিবলামুখী হয়ে নিজের চাঁদর উল্টালেন, তখনো তিনি দু’হাত উঠানো অবস্থায় ছিলেন। তারপর তিনি আবার লোকদের দিকে মুখ করলেন এবং মিম্বার হতে নেমে তাদেরকে নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, ফলে প্রচুর বৃষ্টি হলো। বৃষ্টির কারণে লোকদের ছুটাছুটি দেখে তিনি এত হাসলেন যে, তাঁর সামনের দাঁত বেরিয়ে পড়ল। [আবু দাউদ, হা/১১৭৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২২৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবু আওয়ানা, হা/২০২৭; বায়হাকী, হা/৬২০২; মিশকাত, হা/১৫০৮।]
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে জানা গেল যে,
১. ইসিত্মস্কার সালাত মসজিদে এবং মাঠে যে কোন স্থানে আদায় করা যায়।
২. ইসিত্মস্কার দু‘আ করার সময় কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ খুৎবা চলাকালীন সময় কিবলামুখী ছিলেন না। তবে অন্যান্য সময় কিবলামুখী হওয়াই উত্তম।
৩. ইসিত্মস্কার সালাত জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করতে হয়।
৪. ইসিত্মস্কার সালাতের জন্য দিন নির্ধারণ করা যায়।
৫. ইসিত্মস্কার সালাতে খুৎবা প্রদান করতে হয়।
৬. ইসিত্মস্কার সালাত ময়দানে আদায়কালে মিম্বার নিয়ে যাওয়া উত্তম।
৭. ইসিত্মস্কার দু‘আর সময় দু’হাত উত্তোলন করতে হয়।
৮. ইমাম সাহেবকে মিম্বারে উঠে ইসিত্মস্কার দু‘আ পাঠ করতে হয়।
৯. এ সালাতের জন্য কোন আযান-ইকামত নেই।
ইসিত্মস্কার আরো দুটি দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْىِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বি ইবা-দাকা ওয়া বাহাইমাকা ওয়ানশুর রাহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِسْقِ তুমি পানি পান করাও عِبَادَكَ তোমার বান্দাদেরকে وَبَهَائِمَكَ এবং তোমার জমত্মুদেরকে وَانْشُرْ এবং ছড়িয়ে দাও رَحْمَتَكَ তোমার রহমত। وَأَحْىِ আর (বৃষ্টি দ্বারা) জীবিত করে দাও بَلَدَكَ الْمَيِّتَ তোমার মৃত শহরকে ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে ও জমত্মুদেরকে পানি পান করাও এবং তোমার রহমত ছড়িয়ে দাও। আর তোমার মৃত শহরকে (বৃষ্টি দ্বারা) জীবিত করে দাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৯; আবু দাউদ, হা/১১৭৮; বায়হাকী, হা/৬২৩৪; জামেউস সগীর, হা/৮৭৯৫; মিশকাত, হা/১৫০৬।]
اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا نَّافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلًا غَيْرَ أٰجِلٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বিনা গাইছান মুগীছান মারীআম মারী‘আন্না-ফি‘আন, গাইরা যা-র্রিন ‘আ-জিলান গাইরা আ-জিল।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا তুমি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দাও, مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا যা ফসল উৎপাদনের উপযোগী, نَّافِعًا কল্যাণকর, غَيْرَ ضَارٍّ ক্ষতিকারক নয়, عَاجِلًا শীঘ্র আগমনকারী, غَيْرَ أٰجِلٍ বিলম্বকারী নয়।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দাও, যা ফসল উৎপাদনের উপযোগী, কল্যাণকর, ক্ষতিকারক নয়, শীঘ্র আগমনকারী ও বিলম্বকারী নয়। [আবু দাউদ, হা/১১৭১; সহীহ ইবনে খুযাইম, হা/১৪১৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২২২; মিশকাত, হা/১৫০৭।]
ইসিত্মস্কা সালাতের নিয়ম :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির অভাবে) ধনসম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং উপস্থিত লোকেরাও তাঁর সাথে হাত তুলে এভাবে দু‘আ করল,
اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا ، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا ، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আগিসনা, আল্লা-হুম্মা আগিসনা, আল্লা-হুম্মা আগিসনা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। (৩ বার) [সহীহ বুখারী, হা/১০১৪; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯৭; নাসাঈ, হা/১৫১৮।]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا ، اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا ، اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-, আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-, আল্লা-হুম্মাসক্বিনা-।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে পানি দান করুন। [সহীহ বুখারী, হা/১০১৩; নাসাঈ, হা/১৫১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৩।] (৩ বার)
আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! তখন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঘও নেই, মেঘের সামান্য অংশও নেই, এমনকি সাল‘আ পর্বতের আশপাশের ঘর-বাড়ি ও আমাদের মধ্যে কিছুই নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ সাল‘আ পর্বতের ওপাশ থেকে মেঘ উঠে এলো এবং আকাশের মাঝ বরাবর এসে তা বিস্তৃত হলো। তারপর খুব বৃষ্টি বর্ষণ হলো। (বৃষ্টি এত অধিক হলো যে) আল্লাহর কসম! আমরা এক সপ্তাহ পর্যন্ত সূর্য দেখতে পাইনি। এরপর পরবর্তী জুমু‘আয় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দাঁড়ানো অবস্থায় খুৎবা দিচ্ছিলেন। ব্যক্তিটি তাঁর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (অত্যধিক বৃষ্টির কারণে) ধনসম্পদ (বিশেষ করে গৃহপালিত পশু) নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে গেল। তাই আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, তিনি যেন বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন দু’হাত তুললেন এবং উপস্থিত লোকেরাও তাঁর সাথে হাত তুলে দু‘আ করল,
اَللّٰهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا ، اَللّٰهُمَّ عَلَى الْاَ كَامِ وَ الظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الْاَوْدِيَةِ وَ مَنَابَةِ الشَّجَرَةِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লাইনা ওয়ালা- ‘আলাইনা, আল্লা-হুম্মা ‘আলাল আকা-মি ওয়ায্যিরা-বি ওয়াবুতূনিল আওদিয়াতি ওয়ামানা-বাতিশ শাজারাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! حَوَالَيْنَا আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন) وَلَا عَلَيْنَا আমাদের উপর নয়। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! عَلَى الْاَ كَامِ উঁচু ভূমিতে وَ الظِّرَابِ ও পাহাড়-পর্বতে, وَ بُطُوْنِ الْاَوْدِيَةِ উপত্যকা অঞ্চলে وَ مَنَابَةِ الشَّجَرَةِ এবং বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন), আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! উঁচু ভূমিতে ও পাহাড়-পর্বতে, উপত্যকা অঞ্চলে এবং বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)। [সহীহ বুখারী, হা/১০১৩; নাসাঈ, হা/১৫১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৮৮; মিশকাত, হা/৫৯০২।]
বর্ণনাকারী বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা রৌদ্রে চলাফেরা করতে শুরু করলাম। [সহীহ বুখারী, হা/১০২৯; বায়হাকী, হা/৬২৪২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকেরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি দিন নির্দিষ্ট করে সূর্যোদয়ের পর মিম্বার সহকারে ঈদগাহে গেলেন এবং মিম্বারে বসলেন, তারপর তিনি তাকবীর দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, তোমরা তোমাদের এলাকার দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করেছ। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাঁর কাছে দু‘আ করতে বলেন এবং তিনি তোমাদের দু‘আ কবুল করার ওয়াদা করেছেন। তারপর তিনি এ দু‘আ পাঠ করেন,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِىُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَّبَلَاغًا إِلٰى حِيْنٍ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হি রাবিবল আলামীন। আর রাহমা-নির রাহীম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ইয়াফ‘আলু মা-ইউরীদু, আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতাল গানীয়্যু ওয়া নাহনুল ফুকারা-উ, আনযিল আলাইনাল গায়সা ওয়াজ‘আল মা-আনযালতা লানা কূওয়াতাওঁ ওয়া বালা-গান ইলা-হীন।
শাব্দিক অর্থ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ সমসত্ম প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক। اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময় ও الرَّحِيْمِ অতীব দয়ালু। مٰلِكِ যিনি মালিক يَوْمِ الدِّيْنِ বিচার দিনের। لَا إِلٰهَ (প্রকৃতপক্ষে) কোন উপাস্য নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। يَفْعَلُ তিনি তাই করেন مَا يُرِيْدُ যা তিনি ইচ্ছা করেন। اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! أَنْتَ اللهُ আপনিই আল্লাহ, لَا إِلٰهَ কোন উপাস্য নেই إِلَّا أَنْتَ আপনি ব্যতীত। الْغَنِىُّ আপনি পরমুখাপেক্ষীহীন وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ আর আমরা ফকীর, أَنْزِلْ عَلَيْنَا আপনি আমাদের উপর নাযিল করুন الْغَيْثَ বৃষ্টি وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا এবং যা নাযিল করবেন তাতে আমাদের জন্য বানিয়ে দিন قُوَّةً শক্তির উৎস وَبَلَاغًا এবং উপকারী إِلٰى حِيْنٍ এক যুগ পর্যমত্ম।
অর্থ : সমসত্ম প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক। যিনি অতীব দয়ালু ও করুণাময়। বিচার দিনের মালিক। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করেন। হে আল্লাহ! আপনিই আল্লাহ, আপনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। আপনি পরমুখাপেক্ষীহীন আর আমরা ফকীর-মিসকীন, আপনি আমাদের উপর বৃষ্টি নাযিল করুন এবং যা নাযিল করবেন তাতে আমাদের জন্য এক যুগ পর্যমত্ম শক্তির উৎস ও উপকারী বানিয়ে দিন।
দু‘আ পাঠ করার সময় দু’হাত এতটা তুললেন যে, তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যেতে লাগল। তারপর তিনি লোকদের দিকে পিঠ ফিরালেন এবং কিবলামুখী হয়ে নিজের চাঁদর উল্টালেন, তখনো তিনি দু’হাত উঠানো অবস্থায় ছিলেন। তারপর তিনি আবার লোকদের দিকে মুখ করলেন এবং মিম্বার হতে নেমে তাদেরকে নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, ফলে প্রচুর বৃষ্টি হলো। বৃষ্টির কারণে লোকদের ছুটাছুটি দেখে তিনি এত হাসলেন যে, তাঁর সামনের দাঁত বেরিয়ে পড়ল। [আবু দাউদ, হা/১১৭৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২২৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবু আওয়ানা, হা/২০২৭; বায়হাকী, হা/৬২০২; মিশকাত, হা/১৫০৮।]
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে জানা গেল যে,
১. ইসিত্মস্কার সালাত মসজিদে এবং মাঠে যে কোন স্থানে আদায় করা যায়।
২. ইসিত্মস্কার দু‘আ করার সময় কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ খুৎবা চলাকালীন সময় কিবলামুখী ছিলেন না। তবে অন্যান্য সময় কিবলামুখী হওয়াই উত্তম।
৩. ইসিত্মস্কার সালাত জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করতে হয়।
৪. ইসিত্মস্কার সালাতের জন্য দিন নির্ধারণ করা যায়।
৫. ইসিত্মস্কার সালাতে খুৎবা প্রদান করতে হয়।
৬. ইসিত্মস্কার সালাত ময়দানে আদায়কালে মিম্বার নিয়ে যাওয়া উত্তম।
৭. ইসিত্মস্কার দু‘আর সময় দু’হাত উত্তোলন করতে হয়।
৮. ইমাম সাহেবকে মিম্বারে উঠে ইসিত্মস্কার দু‘আ পাঠ করতে হয়।
৯. এ সালাতের জন্য কোন আযান-ইকামত নেই।
ইসিত্মস্কার আরো দুটি দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْىِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বি ইবা-দাকা ওয়া বাহাইমাকা ওয়ানশুর রাহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِسْقِ তুমি পানি পান করাও عِبَادَكَ তোমার বান্দাদেরকে وَبَهَائِمَكَ এবং তোমার জমত্মুদেরকে وَانْشُرْ এবং ছড়িয়ে দাও رَحْمَتَكَ তোমার রহমত। وَأَحْىِ আর (বৃষ্টি দ্বারা) জীবিত করে দাও بَلَدَكَ الْمَيِّتَ তোমার মৃত শহরকে ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে ও জমত্মুদেরকে পানি পান করাও এবং তোমার রহমত ছড়িয়ে দাও। আর তোমার মৃত শহরকে (বৃষ্টি দ্বারা) জীবিত করে দাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৯; আবু দাউদ, হা/১১৭৮; বায়হাকী, হা/৬২৩৪; জামেউস সগীর, হা/৮৭৯৫; মিশকাত, হা/১৫০৬।]
اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا نَّافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلًا غَيْرَ أٰجِلٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বিনা গাইছান মুগীছান মারীআম মারী‘আন্না-ফি‘আন, গাইরা যা-র্রিন ‘আ-জিলান গাইরা আ-জিল।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا তুমি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দাও, مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا যা ফসল উৎপাদনের উপযোগী, نَّافِعًا কল্যাণকর, غَيْرَ ضَارٍّ ক্ষতিকারক নয়, عَاجِلًا শীঘ্র আগমনকারী, غَيْرَ أٰجِلٍ বিলম্বকারী নয়।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দাও, যা ফসল উৎপাদনের উপযোগী, কল্যাণকর, ক্ষতিকারক নয়, শীঘ্র আগমনকারী ও বিলম্বকারী নয়। [আবু দাউদ, হা/১১৭১; সহীহ ইবনে খুযাইম, হা/১৪১৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২২২; মিশকাত, হা/১৫০৭।]
اَلْكُسُوْفُ শব্দের অর্থ হচ্ছে, সূর্য গ্রহণ। আর اَلْخُسُوْفُ অর্থ চন্দ্র গ্রহণ। পারিভাষিক অর্থে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হলে এ বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনামূলকভাবে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে সালাতুল কুসূফ ও সালাতুল খুসূফ বলে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু ও জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে তখন তা প্রকাশ হওয়া পর্যমত্ম আল্লাহর নিকট দু‘আ প্রার্থনা করো, তাকবীর বলো, সালাত আদায় করতে থাকো এবং দান-সাদাকা করো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৪; সহীহ বুখারী, হা/১০৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৭; নাসাঈ, হা/১৩৭২; মিশকাত, হা/১৪৮৩।]
এ সালাত আদায়ের নিয়ম :
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত জামা‘আতে পড়ার জন্য মানুষদেরকে ঘোষণা দিতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/২১৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৭৫; বায়হাকী, হা/৬০৯৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১৩৯।] জামাআত মসজিদ ও ঈদগাহ উভয় স্থানে পড়া যায়। [সহীহ বুখারী, হা/১০৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৯; আবু দাউদ, হা/১১৮২; নাসাঈ, হা/১৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৮৭।]
সালাত শুরু করে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করে রুকূ করতে হবে। রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে আবার সূরা ফাতিহাসহ কিরাআত অতঃপর ২য় রুকূ দিতে হবে। ২য় রুকূ থেকে উঠে যথাযথ নিয়মে সিজদার কাজ শেষ করে পুনরায় প্রথম রাক‘আতের ন্যায় দু‘রুকূ বিশিষ্ট (পূর্ব নিয়মে) ২য় রাক‘আত সমাপ্ত করে সালাম ফিরাতে হবে।
প্রথম রাক‘আতের তুলনায় ২য় রাক‘আত হালকা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৯; আবু দাউদ, হা/১১৮২; নাসাঈ, হা/১৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৮৭; ।] রাসূলুল্লাহ ﷺ এ সালাতের পর খুৎবা দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৬; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৭; নাসাঈ, হা/১৩৭২; মিশকাত, হা/১৪৮৩।] কিরআত স্বরবে পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/২১৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮৪৯; মিশকাত, হা/১৪৮১।]
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু ও জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে তখন তা প্রকাশ হওয়া পর্যমত্ম আল্লাহর নিকট দু‘আ প্রার্থনা করো, তাকবীর বলো, সালাত আদায় করতে থাকো এবং দান-সাদাকা করো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৪; সহীহ বুখারী, হা/১০৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৭; নাসাঈ, হা/১৩৭২; মিশকাত, হা/১৪৮৩।]
এ সালাত আদায়ের নিয়ম :
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত জামা‘আতে পড়ার জন্য মানুষদেরকে ঘোষণা দিতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/২১৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৭৫; বায়হাকী, হা/৬০৯৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১৩৯।] জামাআত মসজিদ ও ঈদগাহ উভয় স্থানে পড়া যায়। [সহীহ বুখারী, হা/১০৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৯; আবু দাউদ, হা/১১৮২; নাসাঈ, হা/১৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৮৭।]
সালাত শুরু করে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করে রুকূ করতে হবে। রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে আবার সূরা ফাতিহাসহ কিরাআত অতঃপর ২য় রুকূ দিতে হবে। ২য় রুকূ থেকে উঠে যথাযথ নিয়মে সিজদার কাজ শেষ করে পুনরায় প্রথম রাক‘আতের ন্যায় দু‘রুকূ বিশিষ্ট (পূর্ব নিয়মে) ২য় রাক‘আত সমাপ্ত করে সালাম ফিরাতে হবে।
প্রথম রাক‘আতের তুলনায় ২য় রাক‘আত হালকা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৯; আবু দাউদ, হা/১১৮২; নাসাঈ, হা/১৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৩৮৭; ।] রাসূলুল্লাহ ﷺ এ সালাতের পর খুৎবা দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৪৬; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৭; নাসাঈ, হা/১৩৭২; মিশকাত, হা/১৪৮৩।] কিরআত স্বরবে পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/১০৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/২১৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮৪৯; মিশকাত, হা/১৪৮১।]
খাওফ শব্দের অর্থ হচ্ছে ভয়। মুসলিমগণ যখন যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান করেন তখন সবাই সালাতে মশগুল হলে এ সুযোগে শত্রু পক্ষের আক্রমণের ভয় থাকে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের ময়দানে সালাত আদায়ের বিশেষ নিয়ম বর্ণনা করেছেন। এ সালাতকে সালাতুল খাওফ বলে।
মূলত সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা কোন অবস্থাতেই বান্দার উপর থেকে রহিত হয় না। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল জিহাদের ময়দানে যুদ্ধরত অবস্থায় থাকলেও সালাত ত্যাগ করা যাবে না। কিমত্মু যুদ্ধও চালিয়ে যেতে হবে। যেহেতু এর মধ্যেই রয়েছে ইসলামের বিজয়। আর সকল বাতিল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। এজন্য মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে, তারা জিহাদও করবে এবং সালাতও আদায় করবে। কিমত্মু জিহাদরত অবস্থায় সালাতে মশগুল হওয়ার কারণে শত্রুপক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা সালাত আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا﴾
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
সালাতুল খাওফের নিয়ম আদায় করার নিয়ম :
যুদ্ধের সময় কসর করার ব্যাপারে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকে মুখ করে আদায় করতে হবে। সওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। প্রয়োজন হলে সালাত আদায় করা অবস্থায় হাঁটতেও পারে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই ঐ পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবেন সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে। নিম্নে একটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো :
একটি নিয়ম হচ্ছে :
সেনাদলের এক অংশ ইমামের সাথে এক রাক‘আত আদায় করবে এবং ইমাম যখন দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াবে তখন মুক্তাদীরা নিজেরাই একা একা দ্বিতীয় রাক‘আত তাশাহ্হুদসহ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে চলে যাবে। তারপর দ্বিতীয় দল এসে এমন অবস্থায় ইমামের সাথে শামিল হবে যে ইমাম তখনো দ্বিতীয় রাক‘আতে থাকবেন। তারা বাকী সালাত ইমামের সাথে আদায় করার পর বাকী এক রাক‘আত নিজেরা ওঠে একা একা আদায় করে নেবে। এ অবস্থায় ইমামকে দ্বিতীয় রাক‘আতে দীর্ঘ কিয়াম করতে হবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ شُعَيْبٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ سَأَلْتُه هَلْ صَلَّى النَّبِيُّ ﷺ يَعْنِيْ صَلَاةَ الْخَوْفِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ سَالِمٌ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قِبَلَ نَجْدٍ، فَوَازَيْنَا الْعَدُوَّ فَصَافَفْنَا لَهُمْ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّيْ لَنَا فَقَامَتْ طَائِفَةٌ مَعَه تُصَلِّيْ، وَأَقْبَلَتْ طَائِفَةٌ عَلَى الْعَدُوِّ وَرَكَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِمَنْ مَعَه ، وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ، ثُمَّ انْصَرَفُوْا مَكَانَ الطَّائِفَةِ الَّتِيْ لَمْ تُصَلِّ، فَجَاءُوْا، فَرَكَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِهِمْ رَكْعَةً، وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ، فَقَامَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ فَرَكَعَ لِنَفْسِه رَكْعَةً وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ
শু‘আইব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যুহ্রী (রহ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী ﷺ কি সালাতুল খাওফ আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আমাকে সালিম (রহ.) জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে নাজ্দ এলাকায় যুদ্ধ করছিলাম। সেখানে আমরা শত্রু সৈন্যদের মুখোমুখি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সৈন্যদের এক অংশ তাঁর সাথে সালাতের জন্য দাঁড়ান এবং অন্য অংশ শত্রুদের মুখোমুখি অবস্থান করেন। অতঃপর যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ছিলেন তিনি তাদেরকে সাথে নিয়ে এক রুকূ ও দু’সিজদা করলেন। অতঃপর এ দলটি শত্রুদের মুখোমুখি অবস্থানরত দলের নিকট চলে গেলেন এবং শত্রুদের সম্মুখে দাঁড়ালেন। অতঃপর দ্বিতীয় দলটি এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এদেরকে নিয়ে রুকূ এবং দুটি সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর প্রত্যেক দলই নিজে নিজে রুকূ এবং দু’টি সিজদা করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৪২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৯৯; মিশকাত, হা/১৪২০।]
প্রয়োজনে আরোহী অবস্থায় ইশারাতেও সালাতুল খাওফ আদায় করা যাবে :
- وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ فَإِذَا كَانَ الْخَوْفُ أَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ فَصَلِّ رَاكِبًا أَوْ قَائِمًا تُوْمِئُ إِيْمَاءً
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যদি ভয় এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আরোহী অবস্থায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় সালাত আদায় করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬২৫৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবু আওয়ানা, হা/১৯৪১।]
বাধ্য হলে সালাত পিছিয়ে দেয়া যাবে :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : جَاءَ عُمَرُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، فَجَعَلَ يَسُبُّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ وَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا صَلَّيْتُ الْعَصْرَ حَتّٰى كَادَتِ الشَّمْسُ أَنْ تَغِيْبَ . فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ : وَأَنَا وَاللهِ مَا صَلَّيْتُهَا بَعْدُ . قَالَ : فَنَزَلَ إِلٰى بُطْحَانَ فَتَوَضَّأَ، وَصَلَّى الْعَصْرَ بَعْدَ مَا غَابَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ بَعْدَهَا
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) [রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট] আসেন এবং কুরাইশ কাফিরদেরকে তিরস্কার করতে লাগলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখনো আসরের সালাত পড়িনি, অথচ সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে। তখন নবী ﷺ তাঁকে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তো এখনো সালাত পড়িনি।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে বুত্হান এলাকায় অবতরণ করলেন এবং সেখানে অযু করেন। তারপর সূর্যাসেত্মর পর সাহাবীদেরকে নিয়ে প্রথমে আসর তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৬২; তিরমিযী, হা/১৮০; নাসাঈ, হা/১৩৬৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৯৫; বায়হাকী, হা/৩০০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৯৬।]
মূলত সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা কোন অবস্থাতেই বান্দার উপর থেকে রহিত হয় না। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল জিহাদের ময়দানে যুদ্ধরত অবস্থায় থাকলেও সালাত ত্যাগ করা যাবে না। কিমত্মু যুদ্ধও চালিয়ে যেতে হবে। যেহেতু এর মধ্যেই রয়েছে ইসলামের বিজয়। আর সকল বাতিল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। এজন্য মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে, তারা জিহাদও করবে এবং সালাতও আদায় করবে। কিমত্মু জিহাদরত অবস্থায় সালাতে মশগুল হওয়ার কারণে শত্রুপক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা সালাত আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا﴾
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
সালাতুল খাওফের নিয়ম আদায় করার নিয়ম :
যুদ্ধের সময় কসর করার ব্যাপারে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকে মুখ করে আদায় করতে হবে। সওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। প্রয়োজন হলে সালাত আদায় করা অবস্থায় হাঁটতেও পারে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই ঐ পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবেন সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে। নিম্নে একটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো :
একটি নিয়ম হচ্ছে :
সেনাদলের এক অংশ ইমামের সাথে এক রাক‘আত আদায় করবে এবং ইমাম যখন দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াবে তখন মুক্তাদীরা নিজেরাই একা একা দ্বিতীয় রাক‘আত তাশাহ্হুদসহ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে চলে যাবে। তারপর দ্বিতীয় দল এসে এমন অবস্থায় ইমামের সাথে শামিল হবে যে ইমাম তখনো দ্বিতীয় রাক‘আতে থাকবেন। তারা বাকী সালাত ইমামের সাথে আদায় করার পর বাকী এক রাক‘আত নিজেরা ওঠে একা একা আদায় করে নেবে। এ অবস্থায় ইমামকে দ্বিতীয় রাক‘আতে দীর্ঘ কিয়াম করতে হবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ شُعَيْبٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ سَأَلْتُه هَلْ صَلَّى النَّبِيُّ ﷺ يَعْنِيْ صَلَاةَ الْخَوْفِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ سَالِمٌ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قِبَلَ نَجْدٍ، فَوَازَيْنَا الْعَدُوَّ فَصَافَفْنَا لَهُمْ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّيْ لَنَا فَقَامَتْ طَائِفَةٌ مَعَه تُصَلِّيْ، وَأَقْبَلَتْ طَائِفَةٌ عَلَى الْعَدُوِّ وَرَكَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِمَنْ مَعَه ، وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ، ثُمَّ انْصَرَفُوْا مَكَانَ الطَّائِفَةِ الَّتِيْ لَمْ تُصَلِّ، فَجَاءُوْا، فَرَكَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِهِمْ رَكْعَةً، وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ، فَقَامَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ فَرَكَعَ لِنَفْسِه رَكْعَةً وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ
শু‘আইব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যুহ্রী (রহ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী ﷺ কি সালাতুল খাওফ আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আমাকে সালিম (রহ.) জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে নাজ্দ এলাকায় যুদ্ধ করছিলাম। সেখানে আমরা শত্রু সৈন্যদের মুখোমুখি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সৈন্যদের এক অংশ তাঁর সাথে সালাতের জন্য দাঁড়ান এবং অন্য অংশ শত্রুদের মুখোমুখি অবস্থান করেন। অতঃপর যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ছিলেন তিনি তাদেরকে সাথে নিয়ে এক রুকূ ও দু’সিজদা করলেন। অতঃপর এ দলটি শত্রুদের মুখোমুখি অবস্থানরত দলের নিকট চলে গেলেন এবং শত্রুদের সম্মুখে দাঁড়ালেন। অতঃপর দ্বিতীয় দলটি এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এদেরকে নিয়ে রুকূ এবং দুটি সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর প্রত্যেক দলই নিজে নিজে রুকূ এবং দু’টি সিজদা করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৪২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৯৯; মিশকাত, হা/১৪২০।]
প্রয়োজনে আরোহী অবস্থায় ইশারাতেও সালাতুল খাওফ আদায় করা যাবে :
- وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ فَإِذَا كَانَ الْخَوْفُ أَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ فَصَلِّ رَاكِبًا أَوْ قَائِمًا تُوْمِئُ إِيْمَاءً
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যদি ভয় এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আরোহী অবস্থায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় সালাত আদায় করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬২৫৫; মুসত্মাখরাজে ইবনে আবু আওয়ানা, হা/১৯৪১।]
বাধ্য হলে সালাত পিছিয়ে দেয়া যাবে :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : جَاءَ عُمَرُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، فَجَعَلَ يَسُبُّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ وَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا صَلَّيْتُ الْعَصْرَ حَتّٰى كَادَتِ الشَّمْسُ أَنْ تَغِيْبَ . فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ : وَأَنَا وَاللهِ مَا صَلَّيْتُهَا بَعْدُ . قَالَ : فَنَزَلَ إِلٰى بُطْحَانَ فَتَوَضَّأَ، وَصَلَّى الْعَصْرَ بَعْدَ مَا غَابَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ بَعْدَهَا
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) [রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট] আসেন এবং কুরাইশ কাফিরদেরকে তিরস্কার করতে লাগলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখনো আসরের সালাত পড়িনি, অথচ সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে। তখন নবী ﷺ তাঁকে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তো এখনো সালাত পড়িনি।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে বুত্হান এলাকায় অবতরণ করলেন এবং সেখানে অযু করেন। তারপর সূর্যাসেত্মর পর সাহাবীদেরকে নিয়ে প্রথমে আসর তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৬২; তিরমিযী, হা/১৮০; নাসাঈ, হা/১৩৬৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯৯৫; বায়হাকী, হা/৩০০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৯৬।]
এশার সালাতের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেসব নফল সালাত আদায় করা হয় তাকে কিয়ামুল লাইল বলা হয়। রমাযান মাসে কিয়ামুল লাইলকে ফকীহগণের পরিভাষায় সালাতুত তারাবীহ বা তারাবীর সালাত বলে।
তারাবীহ শব্দের অর্থ হচ্ছে, বিশ্রাম লওয়া, আরাম করা ইত্যাদি। যেহেতু এ সালাতে প্রতি চার রাক‘আত পর পর বিশ্রাম করতে হয় সে কারণে এ সালাতকে তারাবীর সালাত বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে তারাবীর সালাত নামে কোন সালাত নেই। হাদীসের মধ্যে এ সালাতকে কিয়ামুল লাইল বা রাত্রিজাগরণ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
তারাবীর সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত :
রমাযান মাসে কিয়ামুল লাইল আদায় করার গুরুত্ব অনেক। কেননা এর মধ্যে অনেক সওয়াব নিহিত রয়েছে। এ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে তারাবীর সালাত আদায় করবে তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪৯; সহীহ বুখারী, হা/২০০৯; মুসলিম, হা/১৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭৩; তিরমিযী, হা/৮০৮।]
তারাবীর সালাতের সূচনা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ অল্প কয়েক দিন এ সালাত আদায় করেছিলেন। প্রথম দিকে তিনি একা একা এ সালাত আদায় করতেন। তারপর এটা দেখে সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তা ত্যাগ করেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ صُمْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - رَمَضَانَ فَلَمْ يَقُمْ بِنَا شَيْئًا مِنَ الشَّهْرِ حَتّٰى بَقِىَ سَبْعٌ فَقَامَ بِنَا حَتّٰى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ فَلَمَّا كَانَتِ السَّادِسَةُ لَمْ يَقُمْ بِنَا فَلَمَّا كَانَتِ الْخَامِسَةُ قَامَ بِنَا حَتّٰى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَوْ نَفَّلْتَنَا قِيَامَ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ . قَالَ فَقَالَ : إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلٰى مَعَ الْإِمَامِ حَتّٰى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهٗ قِيَامُ لَيْلَةٍ . قَالَ فَلَمَّا كَانَتِ الرَّابِعَةُ لَمْ يَقُمْ فَلَمَّا كَانَتِ الثَّالِثَةُ جَمَعَ أَهْلَهٗ وَنِسَاءَهٗ وَالنَّاسَ فَقَامَ بِنَا حَتّٰى خَشِيْنَا أَنْ يَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ . قَالَ قُلْتُ مَا الْفَلَاحُ قَالَ السُّحُوْرُ ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا بَقِيَّةَ الشَّهْرِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক রমাযান মাসে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে রোযা রাখলাম। যখন উক্ত রমাযান মাসের ৭ দিন বাকী ছিল তখন তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাত্রিজাগরণ করলেন। আর সেদিন তিনি রাত্রির এক তৃতীয়াংশ পর্যমত্ম জাগরণ করেন। অতঃপর যখন রমাযান মাসের ৬ দিন বাকী ছিল সেদিন তিনি উঠলেন না। তবে যখন ৫ দিন বাকী ছিল তখন অর্ধরাত্রি পর্যমত্ম জাগরণ করলেন। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি এ রাত্রিজাগরণটা আমাদের জন্য নফল হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো! তখন তিনি বললেন, যখন কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যমত্ম সালাত আদায় করে তখন তার সেই সালাতকেই কিয়ামুল লাইল হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর যখন রমাযান মাসের ৪ দিন বাকী ছিল তখন রাত্রিজাগরণ করেননি। তবে যখন রমাযান মাসের ৩ দিন বাকী ছিল তখন তিনি তার পরিবার, স্ত্রী ও লোকদেরকে একত্রিত করলেন এবং আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। (আর তা এত দীর্ঘ করলেন) আমরা ভয় করলাম যে, ফালাহ হতে বঞ্চিত হয়ে যাব। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফালাহ কী? তিনি বললেন, সাহরীর সময় শেষ হয়ে যাবে। এরপর রমাযান মাসের বাকী দিনগুলোতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাত্রিজাগরণ করেননি। [তিরমিযী, হা/৮০৬; আবু দাউদ, হা/১৩৭৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৬৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২০৬।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَائِشَةَ قَالَ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ خَرَجَ ذَاتَ لَيْلَةٍ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ فَصَلّٰى فِي الْمَسْجِدِ فَصَلّٰى رِجَالٌ بِصَلَاتِه فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوْا فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ فَصَلَّوْا مَعَهٗ فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوْا فَكَثُرَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ فَخَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ فَصَلَّوْا بِصَلَاتِه فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الرَّابِعَةُ عَجَزَ الْمَسْجِدُ عَنْ أَهْلِه حَتّٰى خَرَجَ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ فَلَمَّا قَضَى الْفَجْرَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَتَشَهَّدَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ ، فَإِنَّهٗ لَمْ يَخْفَ عَلَيَّ مَكَانُكُمْ لَكِنِّيْ خَشِيْتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ فَتَعْجِزُوْا عَنْهَا ، فَتُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَالأَمْرُ عَلٰى ذٰلِكَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযানের রাতের মধ্যভাগে বের হলেন, অতঃপর মসজিদে সালাত আদায় করলেন এবং লোকজনও তাঁর পেছনে সালাত আদায় করল। পরে সকাল হলে লোকেরা এর চর্চা করল। দ্বিতীয় দিন এর চেয়ে বেশি মানুষ জামা‘আতে উপস্থিত হলো। রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করলেন। লোকেরাও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করল। অতঃপর সকাল হলে লোকেরা পরস্পর আলোচনা করল।
এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বের হলেন, (মসজিদে গিয়ে) তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করা হলো। তারপর যখন চতুর্থ রাত হলো, তখন মসজিদ তার ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। অতঃপর তিনি ফজরের সালাত আদায় করতে বের হলেন। সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, তিনি তাশাহ্হুদ বা খুৎবা পড়লেন, তারপর বললেন, তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে আমার নিকট কিছুই গোপন নেই। তবে আমি আশঙ্কা করছি, তোমাদের উপর (এ সালাত) ফরয হয়ে যায় কি না। আর তোমরা তা পালন করতে অপারগ হয়ে পড়বে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুবরণ করলেন আর ব্যাপারটি এমনই রয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৯২৪, ২০১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪০১; বায়হাকী, হা/৪৩৭৮।]
উমর (রাঃ) কর্তৃক জামা‘আতের প্রচলন :
তারপর থেকে সাহাবীগণ বিচ্ছিন্নভাবে তারাবীর সালাত আদায় করতেন। পরবর্তীতে উমর (রাঃ) মনে করলেন যে, এখন তো আর ফরয হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই তিনি একজন ইমামের পেছনে তারাবীর সালাত আদায় করার ব্যবস্থা করেন। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নের হাদীসটিতে রয়েছে :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ أَنَّهٗ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُوْنَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِه وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّيْ بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرٰى لَوْ جَمَعْتُ هٰؤُلَاءِ عَلٰى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلٰى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهٗ لَيْلَةً أُخْرٰى وَالنَّاسُ يُصَلُّوْنَ بِصَلَاةِ قَارِئِهِمْ قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه وَالَّتِيْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِيْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ اٰ خِرَ اللَّيْلِ ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهٗ
আবদুর রহমান ইবনে আবদুল ক্বারী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রমাযানের এক রাতে উমর ইবনুল খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম, বিভিন্নভাবে অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। কেউ একা একা সালাত আদায় করছে। আবার কোথাও এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং কিছু লোকও তার সঙ্গে সালাত আদায় করছে। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আমার মনে হয়, এদের সবাইকে একজন ক্বারীর সাথে জামাআতবন্দী করে দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। এরপর এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় সংকল্প হলেন এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) এর পেছনে জামাআতবন্দী করে দিলেন।
অতঃপর আমি আরেক রাতে আবার তাঁর সাথে বের হলাম। দেখলাম, লোকজন তাদের ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করছে। উমর (রাঃ) বললেন, এটি কতইনা উত্তম বিদ‘আত বা সুন্দর ব্যবস্থা। লোকেরা রাতের যে অংশে সালাত আদায় না করে ঘুমায় তা যে অংশে তারা সালাত আদায় করে তার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ রাতের প্রথম অংশের চেয়ে শেষ অংশের সালাত বেশি উত্তম- এটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। আর লোকেরা রাতের প্রথম অংশেই সালাত আদায় করত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫০; সহীহ বুখারী, হা/২০১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১০০; বায়হাকী, হা/৪৩৭৯; মিশকাত, হা/১৩০১।]
এখানে বুঝা গেল, তারাবীর সালাত নিয়মিতভাবে জামা‘আতের সাথে বর্তমানে যেটা চালু আছে এটা উমর (রাঃ) থেকে শুরু হয়েছে। এ হাদীসে ‘‘কতইনা সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা।’’ এ কথা দ্বারা বিদ‘আতীরা বিদ‘আতে হাসানার স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকে। অথচ এটা শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত বা নতুন ব্যবস্থা বলা হয়েছে।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ছিলেন ‘খোলাফায়ে রাশেদার’ অন্যতম একজন খলীফা। তাই তাদের আদর্শ অনুসরণ করাও আমাদের জন্য সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে আমার ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে গ্রহণ করা। তোমরা তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরো। আর তোমাদের উপর আরো আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয় হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩২৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৩৫; মিশকাত, হা/১৬৫।]
তারাবীর সালাত কত রাক‘আত :
তারাবীর সালাত কত রাক‘আত- এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে এ সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ যে হাদীসটি রয়েছে সেটি হচ্ছে,
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّه سَأَلَ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيْدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلَا فِي غَيْرِهَا عَلٰى إِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلَاثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوْتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ ، وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, রমাযানের রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে অথবা অন্য সময়ে নবী ﷺ ১১ রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার সৌন্দর্য এবং দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। তারপর এমন ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি ৩ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, আমি একদিন বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর আদায়ের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমার চক্ষু ঘুমালেও হৃদয় ঘুমায় না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/২০১৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭; আবু দাউদ, হা/১৩৪৩; তিরমিযী, হা/৪৩৯; নাসাঈ, হা/১৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১৯।]
উক্ত হাদীসের আলোকে এটা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসের রাতে বিতর সহ মোট ১১ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।
এ সম্পর্কে আরো বিসত্মারিত বিবরণ আমাদের বই ‘‘কিতাবুস সিয়াম’’ এর মধ্যে রয়েছে।
তারাবীহ শব্দের অর্থ হচ্ছে, বিশ্রাম লওয়া, আরাম করা ইত্যাদি। যেহেতু এ সালাতে প্রতি চার রাক‘আত পর পর বিশ্রাম করতে হয় সে কারণে এ সালাতকে তারাবীর সালাত বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে তারাবীর সালাত নামে কোন সালাত নেই। হাদীসের মধ্যে এ সালাতকে কিয়ামুল লাইল বা রাত্রিজাগরণ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
তারাবীর সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত :
রমাযান মাসে কিয়ামুল লাইল আদায় করার গুরুত্ব অনেক। কেননা এর মধ্যে অনেক সওয়াব নিহিত রয়েছে। এ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযান মাসে তারাবীর সালাত আদায় করবে তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৪৯; সহীহ বুখারী, হা/২০০৯; মুসলিম, হা/১৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭৩; তিরমিযী, হা/৮০৮।]
তারাবীর সালাতের সূচনা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ অল্প কয়েক দিন এ সালাত আদায় করেছিলেন। প্রথম দিকে তিনি একা একা এ সালাত আদায় করতেন। তারপর এটা দেখে সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তা ত্যাগ করেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ صُمْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - رَمَضَانَ فَلَمْ يَقُمْ بِنَا شَيْئًا مِنَ الشَّهْرِ حَتّٰى بَقِىَ سَبْعٌ فَقَامَ بِنَا حَتّٰى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ فَلَمَّا كَانَتِ السَّادِسَةُ لَمْ يَقُمْ بِنَا فَلَمَّا كَانَتِ الْخَامِسَةُ قَامَ بِنَا حَتّٰى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَوْ نَفَّلْتَنَا قِيَامَ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ . قَالَ فَقَالَ : إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلٰى مَعَ الْإِمَامِ حَتّٰى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهٗ قِيَامُ لَيْلَةٍ . قَالَ فَلَمَّا كَانَتِ الرَّابِعَةُ لَمْ يَقُمْ فَلَمَّا كَانَتِ الثَّالِثَةُ جَمَعَ أَهْلَهٗ وَنِسَاءَهٗ وَالنَّاسَ فَقَامَ بِنَا حَتّٰى خَشِيْنَا أَنْ يَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ . قَالَ قُلْتُ مَا الْفَلَاحُ قَالَ السُّحُوْرُ ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا بَقِيَّةَ الشَّهْرِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক রমাযান মাসে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে রোযা রাখলাম। যখন উক্ত রমাযান মাসের ৭ দিন বাকী ছিল তখন তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাত্রিজাগরণ করলেন। আর সেদিন তিনি রাত্রির এক তৃতীয়াংশ পর্যমত্ম জাগরণ করেন। অতঃপর যখন রমাযান মাসের ৬ দিন বাকী ছিল সেদিন তিনি উঠলেন না। তবে যখন ৫ দিন বাকী ছিল তখন অর্ধরাত্রি পর্যমত্ম জাগরণ করলেন। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি এ রাত্রিজাগরণটা আমাদের জন্য নফল হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো! তখন তিনি বললেন, যখন কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যমত্ম সালাত আদায় করে তখন তার সেই সালাতকেই কিয়ামুল লাইল হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর যখন রমাযান মাসের ৪ দিন বাকী ছিল তখন রাত্রিজাগরণ করেননি। তবে যখন রমাযান মাসের ৩ দিন বাকী ছিল তখন তিনি তার পরিবার, স্ত্রী ও লোকদেরকে একত্রিত করলেন এবং আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। (আর তা এত দীর্ঘ করলেন) আমরা ভয় করলাম যে, ফালাহ হতে বঞ্চিত হয়ে যাব। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফালাহ কী? তিনি বললেন, সাহরীর সময় শেষ হয়ে যাবে। এরপর রমাযান মাসের বাকী দিনগুলোতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাত্রিজাগরণ করেননি। [তিরমিযী, হা/৮০৬; আবু দাউদ, হা/১৩৭৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৬৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২০৬।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَائِشَةَ قَالَ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ خَرَجَ ذَاتَ لَيْلَةٍ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ فَصَلّٰى فِي الْمَسْجِدِ فَصَلّٰى رِجَالٌ بِصَلَاتِه فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوْا فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ فَصَلَّوْا مَعَهٗ فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوْا فَكَثُرَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ فَخَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ فَصَلَّوْا بِصَلَاتِه فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الرَّابِعَةُ عَجَزَ الْمَسْجِدُ عَنْ أَهْلِه حَتّٰى خَرَجَ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ فَلَمَّا قَضَى الْفَجْرَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَتَشَهَّدَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ ، فَإِنَّهٗ لَمْ يَخْفَ عَلَيَّ مَكَانُكُمْ لَكِنِّيْ خَشِيْتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ فَتَعْجِزُوْا عَنْهَا ، فَتُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَالأَمْرُ عَلٰى ذٰلِكَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযানের রাতের মধ্যভাগে বের হলেন, অতঃপর মসজিদে সালাত আদায় করলেন এবং লোকজনও তাঁর পেছনে সালাত আদায় করল। পরে সকাল হলে লোকেরা এর চর্চা করল। দ্বিতীয় দিন এর চেয়ে বেশি মানুষ জামা‘আতে উপস্থিত হলো। রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করলেন। লোকেরাও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করল। অতঃপর সকাল হলে লোকেরা পরস্পর আলোচনা করল।
এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বের হলেন, (মসজিদে গিয়ে) তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করা হলো। তারপর যখন চতুর্থ রাত হলো, তখন মসজিদ তার ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। অতঃপর তিনি ফজরের সালাত আদায় করতে বের হলেন। সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, তিনি তাশাহ্হুদ বা খুৎবা পড়লেন, তারপর বললেন, তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে আমার নিকট কিছুই গোপন নেই। তবে আমি আশঙ্কা করছি, তোমাদের উপর (এ সালাত) ফরয হয়ে যায় কি না। আর তোমরা তা পালন করতে অপারগ হয়ে পড়বে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুবরণ করলেন আর ব্যাপারটি এমনই রয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৯২৪, ২০১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪০১; বায়হাকী, হা/৪৩৭৮।]
উমর (রাঃ) কর্তৃক জামা‘আতের প্রচলন :
তারপর থেকে সাহাবীগণ বিচ্ছিন্নভাবে তারাবীর সালাত আদায় করতেন। পরবর্তীতে উমর (রাঃ) মনে করলেন যে, এখন তো আর ফরয হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই তিনি একজন ইমামের পেছনে তারাবীর সালাত আদায় করার ব্যবস্থা করেন। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নের হাদীসটিতে রয়েছে :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ أَنَّهٗ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُوْنَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِه وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّيْ بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرٰى لَوْ جَمَعْتُ هٰؤُلَاءِ عَلٰى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلٰى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهٗ لَيْلَةً أُخْرٰى وَالنَّاسُ يُصَلُّوْنَ بِصَلَاةِ قَارِئِهِمْ قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه وَالَّتِيْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِيْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ اٰ خِرَ اللَّيْلِ ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهٗ
আবদুর রহমান ইবনে আবদুল ক্বারী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রমাযানের এক রাতে উমর ইবনুল খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম, বিভিন্নভাবে অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। কেউ একা একা সালাত আদায় করছে। আবার কোথাও এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং কিছু লোকও তার সঙ্গে সালাত আদায় করছে। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আমার মনে হয়, এদের সবাইকে একজন ক্বারীর সাথে জামাআতবন্দী করে দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। এরপর এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় সংকল্প হলেন এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) এর পেছনে জামাআতবন্দী করে দিলেন।
অতঃপর আমি আরেক রাতে আবার তাঁর সাথে বের হলাম। দেখলাম, লোকজন তাদের ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করছে। উমর (রাঃ) বললেন, এটি কতইনা উত্তম বিদ‘আত বা সুন্দর ব্যবস্থা। লোকেরা রাতের যে অংশে সালাত আদায় না করে ঘুমায় তা যে অংশে তারা সালাত আদায় করে তার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ রাতের প্রথম অংশের চেয়ে শেষ অংশের সালাত বেশি উত্তম- এটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। আর লোকেরা রাতের প্রথম অংশেই সালাত আদায় করত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫০; সহীহ বুখারী, হা/২০১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১০০; বায়হাকী, হা/৪৩৭৯; মিশকাত, হা/১৩০১।]
এখানে বুঝা গেল, তারাবীর সালাত নিয়মিতভাবে জামা‘আতের সাথে বর্তমানে যেটা চালু আছে এটা উমর (রাঃ) থেকে শুরু হয়েছে। এ হাদীসে ‘‘কতইনা সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা।’’ এ কথা দ্বারা বিদ‘আতীরা বিদ‘আতে হাসানার স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকে। অথচ এটা শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত বা নতুন ব্যবস্থা বলা হয়েছে।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ছিলেন ‘খোলাফায়ে রাশেদার’ অন্যতম একজন খলীফা। তাই তাদের আদর্শ অনুসরণ করাও আমাদের জন্য সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে আমার ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে গ্রহণ করা। তোমরা তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরো। আর তোমাদের উপর আরো আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয় হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩২৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৩৫; মিশকাত, হা/১৬৫।]
তারাবীর সালাত কত রাক‘আত :
তারাবীর সালাত কত রাক‘আত- এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে এ সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ যে হাদীসটি রয়েছে সেটি হচ্ছে,
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّه سَأَلَ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيْدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلَا فِي غَيْرِهَا عَلٰى إِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلَاثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوْتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ ، وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, রমাযানের রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে অথবা অন্য সময়ে নবী ﷺ ১১ রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার সৌন্দর্য এবং দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। তারপর এমন ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি ৩ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, আমি একদিন বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর আদায়ের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমার চক্ষু ঘুমালেও হৃদয় ঘুমায় না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/২০১৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭; আবু দাউদ, হা/১৩৪৩; তিরমিযী, হা/৪৩৯; নাসাঈ, হা/১৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১৯।]
উক্ত হাদীসের আলোকে এটা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসের রাতে বিতর সহ মোট ১১ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।
এ সম্পর্কে আরো বিসত্মারিত বিবরণ আমাদের বই ‘‘কিতাবুস সিয়াম’’ এর মধ্যে রয়েছে।
ঈদ শব্দটি আরবি عَوْدٌ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে, বার বার ফিরে আসা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দুটি দিন প্রতি বছর একবার করে ফিরে আসে বিধায় এ দুটি দিনকে ইসলামী শরীয়তে ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের অপর অর্থ আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি। মুসলিম সমাজ এ দুটি দিনে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে এবং আনন্দ করে, তাই এ দিনগুলোকে ঈদের দিন বলা হয়।
মহানবী ﷺ মদিনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে প্রথম ঈদের সালাত আদায় করেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনাতে এলেন, তখন এখানকার বাসিন্দাদের দুটি উৎসব ছিল, যাতে তারা আনন্দ করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে প্রশ্ন করেন, এই দু’দিনে তোমরা কী কর? তারা বললো, আমরা ইসলাম আগমণের পূর্বে এ দু’দিন আনন্দ-উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ওগুলোর পরিবর্তে আরো উত্তম কিছু দান করেছেন। (একটি হলো) রোযা ভাঙ্গার আনন্দের দিন ‘‘ঈদুল ফিতর’’ এবং (অপরটি হলো) উৎসব বা ত্যাগের দিন ‘‘ঈদুল আযহা’’। [নাসাঈ, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৮৫০; বায়হাকী, হা/৫৯১৮।]
ঈদুল আযহার দিন প্রথমে সালাত, তারপর কুরবানী :
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খুৎবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘‘ঈদুল আযহা’’-এর দিনে প্রথমে আমরা সালাত আদায় করব। এরপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ করল সে আমাদের রীতি সঠিকভাবে পালন করল। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৫১৮৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯০৬; নাসাঈ, হা/১৫৬৩।]
ঈদুল আযহার দিন কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘ঈদুল ফিতর’’-এর দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮১৪; মিশকাত, হা/১৪৩৩।]
বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না এবং ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর পর কুরবানীর গোশ্ত দ্বারা আহার করতেন। [তিরমিযী, হা/৫৪২; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৫৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮১২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০৮৮; মিশকাত, হা/১৪৪০।]
ঈদের সালাতের স্থান :
ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নাত। বৃষ্টি বা অন্য কোন বিশেষ ওজর থাকলে মসজিদে পড়া যাবে।
ঈদের সালাতের সুতরা :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে একটি বর্শা পুঁতে দেয়া হতো। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; মিশকাত, হা/৭৭২।]
ঈদের সালাতের সময় :
সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে ঈদের সালাতের সময় আরম্ভ হয় এবং দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ সালাত আদায় করা যায়।
ঈদুল আযহার সালাত একটু আগে পড়া উত্তম। যেহেতু এরপর পশু কুরবানী করতে হয়। আর ঈদুল ফিতরের সালাত একটু দেরীতে পড়া উত্তম। যাতে লোকেরা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করে ঈদগাহে আসতে পারে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৫২৮।]
ঈদের সালাতের জন্য আযান দেয়া :
ঈদের সালাতের জন্য কোন আযান নেই এবং এতে কোন ইকামতও নেই। ইবনে আববাস (রাঃ) ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার সালাতে আযান বা ইকামত দেয়া হতো না। [সহীহ বুখারী, হা/৯৬০; সহীহ মুসলিম, হা/১১৯০; তিরমিযী, হা/৫৩২; আবু দাউদ, হা/১১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৭৪।]
ঈদের দিন গোসল :
ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করা সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৬২।]
ঈদের সালাত :
ঈদের সালাত দু’রাক‘আত। এই দু’রাক‘আত সালাত অন্যান্য সালাতের মতোই। তবে এতে উভয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীর রয়েছে।
ঈদের দিন মহিলাদেরকেও ঈদগাহে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এমনকি যাদের মাসিক চলছে তারাও ঈদগাহে যাবে। তবে তারা সালাতের স্থান থেকে আলাদা জায়গায় অবস্থান করবে এবং ইমাম সাহেবের খুৎবা শুনবে ও দু‘আয় অংশগ্রহণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫১; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৩; তিরমিযী, হা/৫৩৯; নাসাঈ, হা/১৫৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৮১৮; মিশকাত, হা/১৪৩১।]
ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টি :
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - كَانَ يُكَبِّرُ فِى الْفِطْرِ وَالْأَضْحٰى فِى الْأُوْلٰى سَبْعَ تَكْبِيْرَاتٍ وَفِى الثَّانِيَةِ خَمْسًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর দিলেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিলেন। [আবু দাউদ, হা/১১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৩৯; দার কুতনী, হা/১৭৩০; ইবনে মাজাহ, হা/১২৭৯।]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ أَبِيْهِ ، عَنْ جَدِّه : أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَبَّرَ فِي عِيْدٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ تَكْبِيْرَةً ، سَبْعًا فِي الْأُولٰى ، وَخَمْسًا فِي الْآخِرَةِ ، وَلَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا ، وَلَا بَعْدَهَا
আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তিনি তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী ﷺ ঈদের সালাতে ১২টি তাকবীর দিতেন। প্রথম রাক‘আতে ৭টি এবং শেষ রাক‘আতে ৫টি। আর তিনি এ সালাতের পূর্বে ও পরে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৫৭৪৩।]
উক্ত হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর হবে ১২টি এবং এর উপর আমল করাই উচিত।
ঈদের সালাতের পর খুৎবা প্রদান করা :
ঈদের দিন প্রথমে সালাত আদায় করতে হয় এবং পরে খুৎবা প্রদান করতে হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহাতে সালাত আদায় শেষ করার পর খুৎবা দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৬৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৪৩।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সকলেই খুৎবার আগে ঈদের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮৪; দারেমী, হা/১৬০৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৬২।]
ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল সালাত নেই :
রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করেননি। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। এর পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৯৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৪; তিরমিযী, হা/৫৩৭; নাসাঈ, হা/১৫৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/১২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৩।]
ঈদগাহে আসা ও যাওয়ার পথ পরিবর্তন করা :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ ঈদের সালাত আদায়ের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১০৮; জামেউস সগীর, হা/৮৯০৭; মিশকাত, হা/১৪৩৪।]
মহানবী ﷺ মদিনায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে প্রথম ঈদের সালাত আদায় করেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনাতে এলেন, তখন এখানকার বাসিন্দাদের দুটি উৎসব ছিল, যাতে তারা আনন্দ করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে প্রশ্ন করেন, এই দু’দিনে তোমরা কী কর? তারা বললো, আমরা ইসলাম আগমণের পূর্বে এ দু’দিন আনন্দ-উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ওগুলোর পরিবর্তে আরো উত্তম কিছু দান করেছেন। (একটি হলো) রোযা ভাঙ্গার আনন্দের দিন ‘‘ঈদুল ফিতর’’ এবং (অপরটি হলো) উৎসব বা ত্যাগের দিন ‘‘ঈদুল আযহা’’। [নাসাঈ, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৮৫০; বায়হাকী, হা/৫৯১৮।]
ঈদুল আযহার দিন প্রথমে সালাত, তারপর কুরবানী :
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খুৎবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘‘ঈদুল আযহা’’-এর দিনে প্রথমে আমরা সালাত আদায় করব। এরপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ করল সে আমাদের রীতি সঠিকভাবে পালন করল। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৫১৮৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯০৬; নাসাঈ, হা/১৫৬৩।]
ঈদুল আযহার দিন কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘ঈদুল ফিতর’’-এর দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮১৪; মিশকাত, হা/১৪৩৩।]
বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না এবং ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর পর কুরবানীর গোশ্ত দ্বারা আহার করতেন। [তিরমিযী, হা/৫৪২; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৫৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮১২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১০৮৮; মিশকাত, হা/১৪৪০।]
ঈদের সালাতের স্থান :
ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নাত। বৃষ্টি বা অন্য কোন বিশেষ ওজর থাকলে মসজিদে পড়া যাবে।
ঈদের সালাতের সুতরা :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে একটি বর্শা পুঁতে দেয়া হতো। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৭৩; মিশকাত, হা/৭৭২।]
ঈদের সালাতের সময় :
সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে ঈদের সালাতের সময় আরম্ভ হয় এবং দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ সালাত আদায় করা যায়।
ঈদুল আযহার সালাত একটু আগে পড়া উত্তম। যেহেতু এরপর পশু কুরবানী করতে হয়। আর ঈদুল ফিতরের সালাত একটু দেরীতে পড়া উত্তম। যাতে লোকেরা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করে ঈদগাহে আসতে পারে। [সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৫২৮।]
ঈদের সালাতের জন্য আযান দেয়া :
ঈদের সালাতের জন্য কোন আযান নেই এবং এতে কোন ইকামতও নেই। ইবনে আববাস (রাঃ) ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার সালাতে আযান বা ইকামত দেয়া হতো না। [সহীহ বুখারী, হা/৯৬০; সহীহ মুসলিম, হা/১১৯০; তিরমিযী, হা/৫৩২; আবু দাউদ, হা/১১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/১২৭৪।]
ঈদের দিন গোসল :
ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করা সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৬২।]
ঈদের সালাত :
ঈদের সালাত দু’রাক‘আত। এই দু’রাক‘আত সালাত অন্যান্য সালাতের মতোই। তবে এতে উভয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীর রয়েছে।
ঈদের দিন মহিলাদেরকেও ঈদগাহে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এমনকি যাদের মাসিক চলছে তারাও ঈদগাহে যাবে। তবে তারা সালাতের স্থান থেকে আলাদা জায়গায় অবস্থান করবে এবং ইমাম সাহেবের খুৎবা শুনবে ও দু‘আয় অংশগ্রহণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫১; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৩; তিরমিযী, হা/৫৩৯; নাসাঈ, হা/১৫৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৮১৮; মিশকাত, হা/১৪৩১।]
ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টি :
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -ﷺ - كَانَ يُكَبِّرُ فِى الْفِطْرِ وَالْأَضْحٰى فِى الْأُوْلٰى سَبْعَ تَكْبِيْرَاتٍ وَفِى الثَّانِيَةِ خَمْسًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর দিলেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিলেন। [আবু দাউদ, হা/১১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৩৯; দার কুতনী, হা/১৭৩০; ইবনে মাজাহ, হা/১২৭৯।]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ أَبِيْهِ ، عَنْ جَدِّه : أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَبَّرَ فِي عِيْدٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ تَكْبِيْرَةً ، سَبْعًا فِي الْأُولٰى ، وَخَمْسًا فِي الْآخِرَةِ ، وَلَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا ، وَلَا بَعْدَهَا
আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তিনি তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী ﷺ ঈদের সালাতে ১২টি তাকবীর দিতেন। প্রথম রাক‘আতে ৭টি এবং শেষ রাক‘আতে ৫টি। আর তিনি এ সালাতের পূর্বে ও পরে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৫৭৪৩।]
উক্ত হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর হবে ১২টি এবং এর উপর আমল করাই উচিত।
ঈদের সালাতের পর খুৎবা প্রদান করা :
ঈদের দিন প্রথমে সালাত আদায় করতে হয় এবং পরে খুৎবা প্রদান করতে হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহাতে সালাত আদায় শেষ করার পর খুৎবা দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৬৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৪৩।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সকলেই খুৎবার আগে ঈদের সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮৪; দারেমী, হা/১৬০৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৬২।]
ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল সালাত নেই :
রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করেননি। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। এর পূর্বে বা পরে কোন সালাত আদায় করতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৯৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০৯৪; তিরমিযী, হা/৫৩৭; নাসাঈ, হা/১৫৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/১২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৩।]
ঈদগাহে আসা ও যাওয়ার পথ পরিবর্তন করা :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ ঈদের সালাত আদায়ের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১০৮; জামেউস সগীর, হা/৮৯০৭; মিশকাত, হা/১৪৩৪।]
জানাযার সালাত হচ্ছে মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছে মাগফিরাত কামনা করে দু‘আ চাওয়া। একজন মুসলিম যখন মৃত্যুবরণ করে তখন এটা তার অধিকার যে, অন্যান্য মুসলিমগণ তার জন্য জানাযার সালাত আদায় করবে।
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৬টি হক আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা । [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৮৭; তিরমিযী, হা/২৭৩৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩; মিশকাত, হা/৪৬৪৩।]
প্রত্যেক মুসলিমের উপর জানাযার সালাত ফরযে কেফায়াহ। অর্থাৎ মুসলিমদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিমত্মু না পড়লে সবাই দায়ী থাকবে। জানাযার সালাতে কোন রুকূ-সিজদা বা বৈঠক নেই এবং এ সালাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্তও নেই। বরং দিনে-রাতে যে কোন সময় পড়া যায়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’কীরাত। জিজ্ঞেস করা হলো, দু’কীরাত কি? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য সওয়াব। [সহীহ বুখারী, হা/১৩২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২৩২; নাসাঈ, হা/১৯৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৮।]
জানাযা যেতে দেখলে দাঁড়ানো :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন জানাযা যেতে দেখবে, তখন যদি কেউ তার সহযাত্রী হতে নাও পার, তাহলে সে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না তা চলে যায় অথবা নামিয়ে না রাখা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩১০; সহীহ মুসলিম, হা/২২৬১; আবু দাউদ, হা/৩১৭৪; তিরমিযী, হা/১০৪৩।]
জানাযার পূর্বে মৃতের জন্য প্রথম করণীয় হলো তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। এজন্য তার সকল সম্পদ বিক্রি করে হলেও তা করতে হবে। যদি তার কিছুই না থাকে, তাহলে তার নিকটাত্মীয়, সমাজ, সংগঠন বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৪২; তিরমিযী, হা/১০৭০;নাসাঈ, হা/১৯৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৫; বায়হাকী, হা/১৩০৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৩; মিশকাত হা/২৯১৩।]
মৃত ব্যক্তি কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অসিয়ত করে গেলে তিনিই জানাযা পড়াবেন। নতুবা আমীর বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মৃত ব্যক্তির কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাকী আলেম জানাযার ইমামতি করবেন।
জানাযার সালাত আদায়ের পদ্ধতি :
১. জানাযার সালাত খোলা স্থানে আদায় করাই শ্রেয়। তবে বিশেষ কারণবশত মসজিদে আদায় করা যেতে পারে।
২. জানাযার সালাতের কাতার বেজোড় সংখ্যক হওয়া উত্তম। এ সালাতে মুক্তাদীগণ ইমামের পেছনে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৫; আবু দাউদ, হা/৬৬২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৮; বায়হাকী, হা/২১২১; মিশকাত, হা/১৬৫২, ৫৭, ৫৮।]
৩. জানাযার সালাতে জুতা খোলার কোন প্রয়োজন নেই। যদি তাতে নাপাকী থাকে, তবে তা মাটিতে ঘষে নিলেই যথেষ্ট হবে। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫-৮৭, তিরমিযী, হা/৪০০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০০; জামেউস সগীর, হা/৮৩৫; মিশকাত, হা/৫০৩।] এ সময় জুতা থেকে পা বের করে তার উপর দাঁড়ানোর কোন বিধান নেই।
৪. মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে ইমাম তার মাথা ও কাঁধ বরাবর দাঁড়াবেন [আবু দাউদ, হা/৩১৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩১৩৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১৭৩।] এবং মহিলা হলে তার শরীরের মাঝ বরাবর দাঁড়াবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩২, ১৩৩২; সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৯; আবু দাউদ, হা/৩১৯৭; তিরমিযী, হা/১০৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৪৬; মিশকাত, হা/১৬৫৭।]
৫. একাধিক মৃত ব্যক্তি পুরুষ ও নারী একত্রে হলে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি রাখবে। অতঃপর মহিলার লাশ থাকবে। আর যদি শিশু ও মহিলা হয়, তাহলে শিশুর লাশ প্রথমে ও মহিলার লাশ পরে থাকবে।
৬. জানাযার সালাত শুরুর আগে মনে মনে নিয়ত করে নিতে হবে। জানাযার সালাত চার তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩২৮, ৩৮৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/২২৫০।]
৭. জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীর দিয়ে ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম’’ পড়বে। এরপর ‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’ পড়বে। এরপর ইমামসহ জামাআতে দাঁড়ানো সবাই সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। ইমাম সূরা ফাতিহা উচ্চৈঃস্বরে বা নীরবে পাঠ করতে পারেন। তবে সালাতে অংশগ্রহণকারীরা নীরবে পাঠ করবে। তালহা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) একবার জানাযার সালাত আদায়কালে তাকবীরের পর উচ্চৈঃস্বরে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। এরপর বললেন, আমি এজন্য এরূপ করেছি যাতে তোমরা জানতে পার যে, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৮৭; আবু দাউদ, হা/৩২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৭১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৪২৭; মিশকাত, হা/১৬৫৪।]
৮. সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে দ্বিতীয় তাকবীর দিবেন এবং অন্যরা নীরবে তাকবীর দিবে। এ সময় হাত তোলা না তোলা উভয়ই জায়েয আছে। দ্বিতীয় তাকবীর বলার পর দরূদে ইবরাহীম পাঠ করতে হবে।
৯. দরূদ পাঠের পর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে তৃতীয় তাকবীর বলবেন এবং অন্যরা নীরবে বলবে। তৃতীয় তাকবীরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য উপস্থিত সবাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে দু‘আ করবেন এবং সেই সাথে সমগ্র মুসলিম যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের জন্যও মাগফিরাত চেয়ে দু‘আ করবেন। এ সময় ইমাম এক বা একাধিক দু‘আ পাঠ করতে পারবেন।
১০. অতঃপর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে চতুর্থ তাকবীর বলবেন এবং অন্যরা নীরবে বলবে। তারপর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবেন, অন্যরাও ইমামকে অনুসরণ করবে। এভাবেই জানাযার সালাত আদায় করতে হবে।
৩য় তাকবীর দিয়ে নিম্নোক্ত দু‘আসমূহ পাঠ করবে :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَ ذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا ‐ اَللّٰهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَأَحْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ -‐ اَللّٰهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهٗ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়াশা-হিদিনা ওয়াগা-‘ইবিনা ওয়াসাগীরিনা ওয়াকাবীরিনা ওয়াযাকারিনা ওয়াউনসা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহ্য়িহী ‘আলাল ইসলা-ম। ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু ‘আলাল ঈমা-ন। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তাফতিন্না বা‘দাহু।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِغْفِرْ তুমি ক্ষমা করে দাও لِحَيِّنَا আমাদের জীবিতদেরকে وَمَيِّتِنَا ও আমাদের মৃতদেরকে, وَشَاهِدِنَا আমাদের উপস্থিতদেরকে وَغَائِبِنَا আমাদের অনুপস্থিতদেরকে, وَصَغِيْرِنَا আমাদের ছোটদেরকে وَكَبِيْرِنَا ও আমাদের বড়দেরকে, وَذَكَرِنَا আমাদের পুরুষদেরকে وَأُنْثَانَا ও আমাদের মহিলাদেরকে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! مَنْ أَحْيَيْتَهٗ مِنَّا আমাদের মাঝে যাদেরকে জীবিত রাখ فَأَحْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا আর আমাদের মাঝে যাদেরকে মৃত্যু দান কর فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا تَحْرِمْنَا আমাদেরকে বঞ্চিত করো না أَجْرَهٗ তার নেকী হতে وَلَاتُضِلَّنَا এবং আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না بَعْدَهٗ তার (মৃত্যুর) পর।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারী সকলকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদেরকে জীবিত রাখ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান কর, তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার নেকী হতে বঞ্চিত করো না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না। [আবু দাউদ, হা/৩২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৮; তিরমিযী, হা/১০২৪; মুসত্মাখরাজে হাকেম, হা/১৩২৬; মিশকাত, হা/১৬৭৫।]
তারপর এ দু‘আ পাঠ করবে :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ وَارْحَمْهُ وَعَافِهٖ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهٗ وَوَسِّعْ مَدْخَلَهٗ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهٖ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهٖ وَأَهْلًا خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهٖ وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهٖ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু ওয়া‘আ-ফিহি ওয়া‘ফু ‘আনহু ওয়াআকরিম নুযুলাহু ওয়াওয়াস্সি‘ মাদখালাহু ওয়াগসিলহু বিলমা-ই ওয়াসসালজি ওয়ালবারাদি। ওয়ানাক্কিহী মিনাল খাত্বা-য়া কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাস। ওয়াআবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খাইরাম্ মিন যাওজিহী, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়াআ‘ইযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বিন্না-র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لَهٗ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, وَارْحَمْهُ তার উপর রহম করো, وَعَافِهٖ তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করো, وَاعْفُ عَنْهُ তাকে ক্ষমা করো, وَأَكْرِمْ আর মর্যাদাপূর্ণ করো نُزُلَهٗ তার আপ্যায়ণ وَوَسِّعْ প্রশস্ত করো مَدْخَلَهٗ তার বাসস্থান। وَاغْسِلْهُ তুমি তাকে ধৌত করে দাও بِالْمَاءِ পানি দ্বারা, وَالثَّلْجِ বরফ দ্বারা وَالْبَرَدِ ও শিশির দ্বারা। وَنَقِّهٖ তুমি তাকে পরিষ্কার করো مِنَ الْخَطَايَا পাপ হতে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পরিষ্কার করা হয় اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড় مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে । وَأَبْدِلْهُ তার জন্য পরিবর্তন করে দাও دَارًا বাড়ি خَيْرًا مِّنْ دَارِهٖ যা দুনিয়ার বাড়ির চেয়ে উত্তম। وَأَهْلًا এবং এমন পরিবার خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهٖ যা দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম وَزَوْجًا এবং এমন স্ত্রী خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهٖ যা দুনিয়ার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম وَأَدْخِلْهُ আর তুমি তাকে প্রবেশ করাও الْجَنَّةَ জান্নাতে। وَأَعِذْهُ আর তাকে বাঁচাও مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ এবং জাহান্নামের আযাব হতে ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করো, তাকে ক্ষমা করো, মর্যাদার সাথে তার আপ্যায়ণ করো, তার বাসস্থান প্রশস্ত করো। তুমি তাকে ধৌত করে দাও পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা। তুমি তাকে পাপ হতে এমনভাবে পরিষ্কার করো, যেমনভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করো। তাকে দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার দান করো এবং তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৬; নাসাঈ, হা/১৯৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২১; মিশকাত, হা/১৬৫৫।]
জানাযার সালাত সমাপ্তির পর আবার হাত তুলে দু‘আ করা বিদআত :
জানাযার সালাত প্রকৃতপক্ষে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আস্বরূপ। এর গঠন এমনই যে তৃতীয় তাকবীরের পর এক বা একাধিক দু‘আ পাঠ করা যায়। কাজেই সালাম ফিরানোর পর আবার হাত তুলে দু‘আ করার কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ অথবা সালফে সালেহীনদের থেকে কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় বিধায় এটি বিদআত।
মৃত ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয় হলো :
১. ধৈর্যধারণ করা।
২. তার জন্য দু‘আ করা।
৩. মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ কথা বলা যে, তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো।
৪. যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা।
৫. মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।
৬. মাতাপিতা মারা গেলে তাদের জন্য দু‘আ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মৃত্যুর পর মানুষের সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল ব্যতীত : (ক) সাদাকায়ে জারিয়া। (খ) এমন ইলিম, যার দ্বারা অন্যদের উপকার সাধিত হয়। (গ) সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করতে থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাউদ, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৩১; বায়হাকী, হা/১২৪১৫।]
কবর পাকা করা নিষেধ :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ কবর পাকা করতে, কবরের উপর বসতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১২০৯; নাসাঈ, হা/৭০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৯৭।]
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৬টি হক আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা । [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৮৭; তিরমিযী, হা/২৭৩৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩; মিশকাত, হা/৪৬৪৩।]
প্রত্যেক মুসলিমের উপর জানাযার সালাত ফরযে কেফায়াহ। অর্থাৎ মুসলিমদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিমত্মু না পড়লে সবাই দায়ী থাকবে। জানাযার সালাতে কোন রুকূ-সিজদা বা বৈঠক নেই এবং এ সালাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্তও নেই। বরং দিনে-রাতে যে কোন সময় পড়া যায়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’কীরাত। জিজ্ঞেস করা হলো, দু’কীরাত কি? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য সওয়াব। [সহীহ বুখারী, হা/১৩২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২৩২; নাসাঈ, হা/১৯৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৮।]
জানাযা যেতে দেখলে দাঁড়ানো :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন জানাযা যেতে দেখবে, তখন যদি কেউ তার সহযাত্রী হতে নাও পার, তাহলে সে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না তা চলে যায় অথবা নামিয়ে না রাখা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩১০; সহীহ মুসলিম, হা/২২৬১; আবু দাউদ, হা/৩১৭৪; তিরমিযী, হা/১০৪৩।]
জানাযার পূর্বে মৃতের জন্য প্রথম করণীয় হলো তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। এজন্য তার সকল সম্পদ বিক্রি করে হলেও তা করতে হবে। যদি তার কিছুই না থাকে, তাহলে তার নিকটাত্মীয়, সমাজ, সংগঠন বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৪২; তিরমিযী, হা/১০৭০;নাসাঈ, হা/১৯৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৫; বায়হাকী, হা/১৩০৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৩; মিশকাত হা/২৯১৩।]
মৃত ব্যক্তি কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অসিয়ত করে গেলে তিনিই জানাযা পড়াবেন। নতুবা আমীর বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মৃত ব্যক্তির কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাকী আলেম জানাযার ইমামতি করবেন।
জানাযার সালাত আদায়ের পদ্ধতি :
১. জানাযার সালাত খোলা স্থানে আদায় করাই শ্রেয়। তবে বিশেষ কারণবশত মসজিদে আদায় করা যেতে পারে।
২. জানাযার সালাতের কাতার বেজোড় সংখ্যক হওয়া উত্তম। এ সালাতে মুক্তাদীগণ ইমামের পেছনে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৫; আবু দাউদ, হা/৬৬২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৮; বায়হাকী, হা/২১২১; মিশকাত, হা/১৬৫২, ৫৭, ৫৮।]
৩. জানাযার সালাতে জুতা খোলার কোন প্রয়োজন নেই। যদি তাতে নাপাকী থাকে, তবে তা মাটিতে ঘষে নিলেই যথেষ্ট হবে। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫-৮৭, তিরমিযী, হা/৪০০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৫৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০০; জামেউস সগীর, হা/৮৩৫; মিশকাত, হা/৫০৩।] এ সময় জুতা থেকে পা বের করে তার উপর দাঁড়ানোর কোন বিধান নেই।
৪. মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে ইমাম তার মাথা ও কাঁধ বরাবর দাঁড়াবেন [আবু দাউদ, হা/৩১৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩১৩৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১৭৩।] এবং মহিলা হলে তার শরীরের মাঝ বরাবর দাঁড়াবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩২, ১৩৩২; সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৯; আবু দাউদ, হা/৩১৯৭; তিরমিযী, হা/১০৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৪৬; মিশকাত, হা/১৬৫৭।]
৫. একাধিক মৃত ব্যক্তি পুরুষ ও নারী একত্রে হলে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি রাখবে। অতঃপর মহিলার লাশ থাকবে। আর যদি শিশু ও মহিলা হয়, তাহলে শিশুর লাশ প্রথমে ও মহিলার লাশ পরে থাকবে।
৬. জানাযার সালাত শুরুর আগে মনে মনে নিয়ত করে নিতে হবে। জানাযার সালাত চার তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩২৮, ৩৮৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/২২৫০।]
৭. জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীর দিয়ে ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম’’ পড়বে। এরপর ‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’ পড়বে। এরপর ইমামসহ জামাআতে দাঁড়ানো সবাই সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। ইমাম সূরা ফাতিহা উচ্চৈঃস্বরে বা নীরবে পাঠ করতে পারেন। তবে সালাতে অংশগ্রহণকারীরা নীরবে পাঠ করবে। তালহা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) একবার জানাযার সালাত আদায়কালে তাকবীরের পর উচ্চৈঃস্বরে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। এরপর বললেন, আমি এজন্য এরূপ করেছি যাতে তোমরা জানতে পার যে, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৮৭; আবু দাউদ, হা/৩২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৭১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৪২৭; মিশকাত, হা/১৬৫৪।]
৮. সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে দ্বিতীয় তাকবীর দিবেন এবং অন্যরা নীরবে তাকবীর দিবে। এ সময় হাত তোলা না তোলা উভয়ই জায়েয আছে। দ্বিতীয় তাকবীর বলার পর দরূদে ইবরাহীম পাঠ করতে হবে।
৯. দরূদ পাঠের পর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে তৃতীয় তাকবীর বলবেন এবং অন্যরা নীরবে বলবে। তৃতীয় তাকবীরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য উপস্থিত সবাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে দু‘আ করবেন এবং সেই সাথে সমগ্র মুসলিম যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের জন্যও মাগফিরাত চেয়ে দু‘আ করবেন। এ সময় ইমাম এক বা একাধিক দু‘আ পাঠ করতে পারবেন।
১০. অতঃপর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে চতুর্থ তাকবীর বলবেন এবং অন্যরা নীরবে বলবে। তারপর ইমাম উচ্চৈঃস্বরে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবেন, অন্যরাও ইমামকে অনুসরণ করবে। এভাবেই জানাযার সালাত আদায় করতে হবে।
৩য় তাকবীর দিয়ে নিম্নোক্ত দু‘আসমূহ পাঠ করবে :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَ ذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا ‐ اَللّٰهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَأَحْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ -‐ اَللّٰهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهٗ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়াশা-হিদিনা ওয়াগা-‘ইবিনা ওয়াসাগীরিনা ওয়াকাবীরিনা ওয়াযাকারিনা ওয়াউনসা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহ্য়িহী ‘আলাল ইসলা-ম। ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু ‘আলাল ঈমা-ন। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তাফতিন্না বা‘দাহু।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِغْفِرْ তুমি ক্ষমা করে দাও لِحَيِّنَا আমাদের জীবিতদেরকে وَمَيِّتِنَا ও আমাদের মৃতদেরকে, وَشَاهِدِنَا আমাদের উপস্থিতদেরকে وَغَائِبِنَا আমাদের অনুপস্থিতদেরকে, وَصَغِيْرِنَا আমাদের ছোটদেরকে وَكَبِيْرِنَا ও আমাদের বড়দেরকে, وَذَكَرِنَا আমাদের পুরুষদেরকে وَأُنْثَانَا ও আমাদের মহিলাদেরকে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! مَنْ أَحْيَيْتَهٗ مِنَّا আমাদের মাঝে যাদেরকে জীবিত রাখ فَأَحْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا আর আমাদের মাঝে যাদেরকে মৃত্যু দান কর فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا تَحْرِمْنَا আমাদেরকে বঞ্চিত করো না أَجْرَهٗ তার নেকী হতে وَلَاتُضِلَّنَا এবং আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না بَعْدَهٗ তার (মৃত্যুর) পর।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারী সকলকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদেরকে জীবিত রাখ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান কর, তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার নেকী হতে বঞ্চিত করো না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না। [আবু দাউদ, হা/৩২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৮; তিরমিযী, হা/১০২৪; মুসত্মাখরাজে হাকেম, হা/১৩২৬; মিশকাত, হা/১৬৭৫।]
তারপর এ দু‘আ পাঠ করবে :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ وَارْحَمْهُ وَعَافِهٖ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهٗ وَوَسِّعْ مَدْخَلَهٗ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهٖ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهٖ وَأَهْلًا خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهٖ وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهٖ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু ওয়া‘আ-ফিহি ওয়া‘ফু ‘আনহু ওয়াআকরিম নুযুলাহু ওয়াওয়াস্সি‘ মাদখালাহু ওয়াগসিলহু বিলমা-ই ওয়াসসালজি ওয়ালবারাদি। ওয়ানাক্কিহী মিনাল খাত্বা-য়া কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাস। ওয়াআবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খাইরাম্ মিন যাওজিহী, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়াআ‘ইযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বিন্না-র।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لَهٗ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, وَارْحَمْهُ তার উপর রহম করো, وَعَافِهٖ তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করো, وَاعْفُ عَنْهُ তাকে ক্ষমা করো, وَأَكْرِمْ আর মর্যাদাপূর্ণ করো نُزُلَهٗ তার আপ্যায়ণ وَوَسِّعْ প্রশস্ত করো مَدْخَلَهٗ তার বাসস্থান। وَاغْسِلْهُ তুমি তাকে ধৌত করে দাও بِالْمَاءِ পানি দ্বারা, وَالثَّلْجِ বরফ দ্বারা وَالْبَرَدِ ও শিশির দ্বারা। وَنَقِّهٖ তুমি তাকে পরিষ্কার করো مِنَ الْخَطَايَا পাপ হতে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পরিষ্কার করা হয় اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড় مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে । وَأَبْدِلْهُ তার জন্য পরিবর্তন করে দাও دَارًا বাড়ি خَيْرًا مِّنْ دَارِهٖ যা দুনিয়ার বাড়ির চেয়ে উত্তম। وَأَهْلًا এবং এমন পরিবার خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهٖ যা দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম وَزَوْجًا এবং এমন স্ত্রী خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهٖ যা দুনিয়ার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম وَأَدْخِلْهُ আর তুমি তাকে প্রবেশ করাও الْجَنَّةَ জান্নাতে। وَأَعِذْهُ আর তাকে বাঁচাও مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ এবং জাহান্নামের আযাব হতে ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করো, তাকে ক্ষমা করো, মর্যাদার সাথে তার আপ্যায়ণ করো, তার বাসস্থান প্রশস্ত করো। তুমি তাকে ধৌত করে দাও পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা। তুমি তাকে পাপ হতে এমনভাবে পরিষ্কার করো, যেমনভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করো। তাকে দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার দান করো এবং তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৬; নাসাঈ, হা/১৯৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২১; মিশকাত, হা/১৬৫৫।]
জানাযার সালাত সমাপ্তির পর আবার হাত তুলে দু‘আ করা বিদআত :
জানাযার সালাত প্রকৃতপক্ষে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আস্বরূপ। এর গঠন এমনই যে তৃতীয় তাকবীরের পর এক বা একাধিক দু‘আ পাঠ করা যায়। কাজেই সালাম ফিরানোর পর আবার হাত তুলে দু‘আ করার কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ অথবা সালফে সালেহীনদের থেকে কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় বিধায় এটি বিদআত।
মৃত ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয় হলো :
১. ধৈর্যধারণ করা।
২. তার জন্য দু‘আ করা।
৩. মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ কথা বলা যে, তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো।
৪. যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা।
৫. মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।
৬. মাতাপিতা মারা গেলে তাদের জন্য দু‘আ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মৃত্যুর পর মানুষের সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল ব্যতীত : (ক) সাদাকায়ে জারিয়া। (খ) এমন ইলিম, যার দ্বারা অন্যদের উপকার সাধিত হয়। (গ) সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করতে থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাউদ, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৩১; বায়হাকী, হা/১২৪১৫।]
কবর পাকা করা নিষেধ :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ কবর পাকা করতে, কবরের উপর বসতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১২০৯; নাসাঈ, হা/৭০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৯৭।]
কতিপয় বিদ‘আতী লোক রয়েছে তারা নিজেদের বুযুর্গী প্রকাশ করার জন্য নতুন নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করে এবং মানুষের কাছে ঐসব আমল ছড়িয়ে দেয়। সরলমনা লোকজন তাদের এসব কথা বিশ্বাস করে ঐসব আমল করতে থাকে। কিমত্মু খুঁজে দেখে না যে, ঐসব আমল রাসূলুল্লাহ ﷺ অথবা তার সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত আছে কি না। তারা ১২ মাসের ১২ চাঁদের ফযীলত এসব নামে বই পুসত্মকও প্রকাশ করে থাকে এবং বিভিন্ন দিবস ও রাত উপলক্ষে মনগড়া যিকির, সালাত এবং সিয়াম ইত্যাদি পালন করার জন্য মানুষদেরকে আহবান করে। এসব বিদ‘আতী আমল থেকে মুসলিম জাতিকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। কেননা বিদ‘আতের পরিণাম অত্যমত্ম ভয়াবহ। যা সকলেরই জানা আছে। যেখানে বিদ‘আতীকে হাওজে কাওসার থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হবে সেখানে তার পরিণাম যে কত ভয়াবহ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব বিদ‘আতী আমল সম্পর্কে বিসত্মারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই- ‘‘যেসব কারণে ইবাদাত বরবাদ হয়’’। নিম্নে কিছু বিদ‘আতী সালাতের বিবরণ দেয়া হলো :
বিদ‘আতীদের সালাতুর রাগায়িব বা রজব মাসের সালাত :
কথিত আছে যে, রজব মাসের প্রথম জুমু‘আর দিন মাগরিব ও এশার মাঝখানে ১২ রাক‘আত সালাত পড়লে সমসত্ম গোনাহ মাফ হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, গাছের পাতা ও বালুকারাশির সমপরিমাণ হয়। এই সালাতের নাম সালাতুর রাগায়িব।
মূলত এ সালাত কোন সহীহ কিংবা হাসান অথবা যঈফ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত নয়। সুতরাং এটা বিদ‘আত।
বিদ‘আতীদের হাজারী সালাত বা শবে বরাতের সালাত :
কথিত আছে যে, ১৫ই শাবানের রাতে যদি কেউ ১০০ রাক‘আত সালাতে ১০০০ বার সূরা ইখলাস পড়ে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ৭০ বার দৃষ্টিপাত করবেন এবং প্রতি দৃষ্টিপাতে তার ৭০টি মনোবাসনা পূর্ণ করবেন।
এ সালাতেরও কোন প্রমাণ হাদীস থেকে পাওয়া যায়নি।
বিদ‘আতীদের সালাতুর রাগায়িব বা রজব মাসের সালাত :
কথিত আছে যে, রজব মাসের প্রথম জুমু‘আর দিন মাগরিব ও এশার মাঝখানে ১২ রাক‘আত সালাত পড়লে সমসত্ম গোনাহ মাফ হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, গাছের পাতা ও বালুকারাশির সমপরিমাণ হয়। এই সালাতের নাম সালাতুর রাগায়িব।
মূলত এ সালাত কোন সহীহ কিংবা হাসান অথবা যঈফ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত নয়। সুতরাং এটা বিদ‘আত।
বিদ‘আতীদের হাজারী সালাত বা শবে বরাতের সালাত :
কথিত আছে যে, ১৫ই শাবানের রাতে যদি কেউ ১০০ রাক‘আত সালাতে ১০০০ বার সূরা ইখলাস পড়ে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ৭০ বার দৃষ্টিপাত করবেন এবং প্রতি দৃষ্টিপাতে তার ৭০টি মনোবাসনা পূর্ণ করবেন।
এ সালাতেরও কোন প্রমাণ হাদীস থেকে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যেক সালাত আদায়কারীই সালাতের মধ্যে কুরআনের শেষ দিকের ছোট ছোট সূরাগুলো পড়ে থাকেন। সূরা পড়ার সময় সালাতে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এবং এসব সূরা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সূরাগুলোর অর্থ ও মৌলিক শিক্ষা জানা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণের জন্য এখানে কুরআনের শেষ দশটি সূরার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো :
নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট : এ সূরাটি মুহাম্মাদ ﷺ এর মক্কী জীবনের প্রথম দিকে নাযিল হয়েছে। মুহাম্মাদ ﷺ ইসলামের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করলেই মক্কার কাফির ও মুশরিকরা নবী ﷺ এর বিরোধিতা শুরু করে দেয়। তারা নবী ﷺ এর মিশনকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য নানা ধরনের কৌশল ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। এ কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এ সূরাটি নাযিল করেন।
সূরার আলোচ্য বিষয় : নবী ﷺ এর জন্মের বছর ইয়ামানের খৃষ্টান বাদশা আবরাহা বিশাল হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কার দিকে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অসীম শক্তি দিয়ে এ বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংক্ষেপে অত্র সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আলাম্তারা কাইফা ফা‘আলা রাববুকা বিআছ হা-বিল্ফীল। (২) আলাম্ ইয়াজ্আল্ কাইদাহুম্ ফী তায্ লীল। (৩) ওয়া আরসালা ‘আলাইহিম্ তোয়াইরান্ আবা-বীল। (৪) তারমীহিম্ বিহিজ্বা-রাতিম্ মিন সিজ্জীল। (৫) ফাজা‘আলাহুম কা‘আস্ফিম্ মা’কূল।
শাব্দিক অর্থ : ১. اَلَمْ تَرَ তুমি কি দেখনি, كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ তোমার প্রতিপালক কী রকম ব্যবহার করেছেন بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ হাতিওয়ালাদের সাথে? ২. اَلَمْ يَجْعَلْ তিনি কি করে দেননি كَيْدَهُمْ তাদের ষড়যন্ত্রসমূহকে فِيْ تَضْلِيْلٍ নস্যাৎ? ৩. وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ এবং তিনি তাদের উপর পাঠিয়েছেন طَيْرًا اَبَابِيْلَ আবাবীল পাখী। ৪. تَرْمِيْهِمْ তারা নিক্ষেপ করেছিল بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ পাথরের টুকরা। ৫. فَجَعَلَهُمْ অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দিলেন كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো।
অর্থ : ১. তুমি কি দেখনি, তোমার রব (কাবা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করেছেন? ২. তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি? ৩. এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল নামক (ঝাঁকে-ঝাঁকে) পাখী পাঠিয়েছেন। ৪. ঐ পাখীগুলো সেই সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেছিল। ৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো করে দিলেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, তোমার বিরোধীরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করছে, এতে তারা সফল হতে পারবে না; বরং শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।
(২) অপর দিকে ইসলাম বিরোধীদেরকে এ মর্মে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা নবী ﷺ এর সাথে যতই ষড়যন্ত্র কর না কেন, তোমরা সফল হতে পারবে না। লক্ষ্য করে দেখো! ইতিপূর্বে আবরাহার বাহিনী কাবাঘর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারেনি।
(৩) এ সূরা থেকে আজও আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, একদিন তারা পরাজিত হবেই। আর ইসলামপন্থীরাই একদিন বিজয়ী হবে, কারণ তাদের সাথে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য নামের এমন এক শক্তি, যা এসে গেলে সারা পৃথিবী একজোট হলেও তা ঠেকাতে পারবে না। যেমন আহযাবের যুদ্ধে গোটা আরবের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি একজোট হয়েও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
সূরার আলোচ্য বিষয় : নবী ﷺ এর জন্মের বছর ইয়ামানের খৃষ্টান বাদশা আবরাহা বিশাল হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কার দিকে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অসীম শক্তি দিয়ে এ বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংক্ষেপে অত্র সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আলাম্তারা কাইফা ফা‘আলা রাববুকা বিআছ হা-বিল্ফীল। (২) আলাম্ ইয়াজ্আল্ কাইদাহুম্ ফী তায্ লীল। (৩) ওয়া আরসালা ‘আলাইহিম্ তোয়াইরান্ আবা-বীল। (৪) তারমীহিম্ বিহিজ্বা-রাতিম্ মিন সিজ্জীল। (৫) ফাজা‘আলাহুম কা‘আস্ফিম্ মা’কূল।
শাব্দিক অর্থ : ১. اَلَمْ تَرَ তুমি কি দেখনি, كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ তোমার প্রতিপালক কী রকম ব্যবহার করেছেন بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ হাতিওয়ালাদের সাথে? ২. اَلَمْ يَجْعَلْ তিনি কি করে দেননি كَيْدَهُمْ তাদের ষড়যন্ত্রসমূহকে فِيْ تَضْلِيْلٍ নস্যাৎ? ৩. وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ এবং তিনি তাদের উপর পাঠিয়েছেন طَيْرًا اَبَابِيْلَ আবাবীল পাখী। ৪. تَرْمِيْهِمْ তারা নিক্ষেপ করেছিল بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ পাথরের টুকরা। ৫. فَجَعَلَهُمْ অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দিলেন كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো।
অর্থ : ১. তুমি কি দেখনি, তোমার রব (কাবা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করেছেন? ২. তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি? ৩. এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল নামক (ঝাঁকে-ঝাঁকে) পাখী পাঠিয়েছেন। ৪. ঐ পাখীগুলো সেই সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেছিল। ৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো করে দিলেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, তোমার বিরোধীরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করছে, এতে তারা সফল হতে পারবে না; বরং শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।
(২) অপর দিকে ইসলাম বিরোধীদেরকে এ মর্মে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা নবী ﷺ এর সাথে যতই ষড়যন্ত্র কর না কেন, তোমরা সফল হতে পারবে না। লক্ষ্য করে দেখো! ইতিপূর্বে আবরাহার বাহিনী কাবাঘর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারেনি।
(৩) এ সূরা থেকে আজও আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, একদিন তারা পরাজিত হবেই। আর ইসলামপন্থীরাই একদিন বিজয়ী হবে, কারণ তাদের সাথে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য নামের এমন এক শক্তি, যা এসে গেলে সারা পৃথিবী একজোট হলেও তা ঠেকাতে পারবে না। যেমন আহযাবের যুদ্ধে গোটা আরবের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি একজোট হয়েও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
নাযিলের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় :
এ সূরাটিও নবীর মক্কী জীবনের প্রথম দিকের একটি সূরা। ‘কুরাইশ’- মক্কার একটি বিখ্যাত গোত্রের নাম। আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশ বংশকে বিশেষ কিছু নিয়ামত দিয়ে গুণান্বিত করেছিলেন। যেমন- মুহাম্মাদ ﷺ এ গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেন, এ গোত্রের লোকেরাই হাজীদেরকে পানি পান করানোর সৌভাগ্য লাভ করেছিল, হস্তী বাহিনীর উপর তারা বিজয়ী হয়েছিল, আরবে যখন জান-মালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, তখন কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তাদের বিশেষ সম্মান ছিল, তারা নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত। তাদের প্রতি আল্লাহর এত অনুগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাদেরই বংশে জন্ম নেয়া নবী ﷺ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন তারা নবী ﷺ এর সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাঁর বিরোধিতা শুরু করে দিল- এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এ সূরা নাযিল করে তাদেরকে উপদেশ দিলেন যে, দেখ! আমার কতইনা অনুগ্রহ তোমরা ভোগ করছ। নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করছ। সুতরাং যে কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তোমাদের এত সম্মান এবং তোমরা যেজন্য গর্ববোধ করে থাক সেই কাবার মালিকের ইবাদাত করাই তোমাদের কর্তব্য। তাই আমার নবীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তোমাদের জন্য মোটেই সমীচীন নয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ ‐ اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ ‐ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ ‐ اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) লিইলা-ফি কুরাইশ, (২) ইলা-ফিহিম রিহ্লাতাশ্ শিতা-ই ওয়াস্ সায়ীফ, (৩) ফালইয়া‘বুদূ রাববাহাযাল্ বাইত, (৪) আল্লাযী আত্ব‘আমাহুম্ মিন্ জূ‘য়িওঁ ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ।
শাব্দিক অর্থ : ১. لِاِيْلَافِ অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। ২. اِيْلَافِهِمْ তাদের অনুকূল হওয়ার কারণে رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদাত করা উচিত رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের মালিকেরই। ৪. اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ যিনি তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِّنْ جُوْعٍ ক্ষুধার্ত অবস্থায় وَاٰمَنَهُمْ এবং যিনি তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مِّنْ خَوْفٍ ভয়-ভীতি থেকে।
অর্থ : ১. কুরাইশদের অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে। ২. অনুকূল হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদাত করা উচিত। ৪. যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সত্যকে জানার পরও সত্যের বিরোধিতা করাটা উচিত নয়।
(২) যার প্রতি আল্লাহর নিয়ামত যতবেশি হবে, তার ততবেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর শুকরিয়া আদায় করতে হবে আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে।
(৩) যে আন্তরিকতার সহিত আল্লাহর ইবাদাত করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যে আল্লাহর দাসত্ব থেকে দূরে থাকবে, সে উভয় জগতের শান্তি ও নিরাপত্তা হারাবে।
এ সূরাটিও নবীর মক্কী জীবনের প্রথম দিকের একটি সূরা। ‘কুরাইশ’- মক্কার একটি বিখ্যাত গোত্রের নাম। আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশ বংশকে বিশেষ কিছু নিয়ামত দিয়ে গুণান্বিত করেছিলেন। যেমন- মুহাম্মাদ ﷺ এ গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেন, এ গোত্রের লোকেরাই হাজীদেরকে পানি পান করানোর সৌভাগ্য লাভ করেছিল, হস্তী বাহিনীর উপর তারা বিজয়ী হয়েছিল, আরবে যখন জান-মালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, তখন কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তাদের বিশেষ সম্মান ছিল, তারা নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত। তাদের প্রতি আল্লাহর এত অনুগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাদেরই বংশে জন্ম নেয়া নবী ﷺ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন তারা নবী ﷺ এর সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাঁর বিরোধিতা শুরু করে দিল- এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এ সূরা নাযিল করে তাদেরকে উপদেশ দিলেন যে, দেখ! আমার কতইনা অনুগ্রহ তোমরা ভোগ করছ। নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করছ। সুতরাং যে কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তোমাদের এত সম্মান এবং তোমরা যেজন্য গর্ববোধ করে থাক সেই কাবার মালিকের ইবাদাত করাই তোমাদের কর্তব্য। তাই আমার নবীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তোমাদের জন্য মোটেই সমীচীন নয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ ‐ اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ ‐ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ ‐ اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) লিইলা-ফি কুরাইশ, (২) ইলা-ফিহিম রিহ্লাতাশ্ শিতা-ই ওয়াস্ সায়ীফ, (৩) ফালইয়া‘বুদূ রাববাহাযাল্ বাইত, (৪) আল্লাযী আত্ব‘আমাহুম্ মিন্ জূ‘য়িওঁ ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ।
শাব্দিক অর্থ : ১. لِاِيْلَافِ অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। ২. اِيْلَافِهِمْ তাদের অনুকূল হওয়ার কারণে رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদাত করা উচিত رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের মালিকেরই। ৪. اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ যিনি তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِّنْ جُوْعٍ ক্ষুধার্ত অবস্থায় وَاٰمَنَهُمْ এবং যিনি তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مِّنْ خَوْفٍ ভয়-ভীতি থেকে।
অর্থ : ১. কুরাইশদের অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে। ২. অনুকূল হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদাত করা উচিত। ৪. যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সত্যকে জানার পরও সত্যের বিরোধিতা করাটা উচিত নয়।
(২) যার প্রতি আল্লাহর নিয়ামত যতবেশি হবে, তার ততবেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর শুকরিয়া আদায় করতে হবে আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে।
(৩) যে আন্তরিকতার সহিত আল্লাহর ইবাদাত করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যে আল্লাহর দাসত্ব থেকে দূরে থাকবে, সে উভয় জগতের শান্তি ও নিরাপত্তা হারাবে।
শানে নুযূল : মক্কার কাফিররা পরকাল বিশ্বাস করত না। আবু জাহেল, আবু সুফিয়ান, আস ইবনে ওয়াইল এ জাতীয় বড় বড় কাফিররা এতীমের হক আদায় করত না, গরীব-মিসকীনদেরকে দান করত না। তাদের এ সকল অভ্যাসের নিন্দা করে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম তিনটি আয়াত নাযিল করেন। আর মদিনায় মুনাফিকী স্বভাবের কিছু লোক ছিল- তারা লোক দেখানো ইবাদাত করত, সালাতে অবহেলা করত, তাদেরকে সতর্ক করে শেষ চারটি আয়াত নাযিল হয়। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৬।]
সূরা মাউনের আলোচ্য বিষয় : আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে- এ বিশ্বাস যাদের নেই তারা যে কেমন খারাপ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে এ সূরায় সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং মুনাফিকী আচরণকারীদেরকে সতর্ক করে শাস্তির বাণী শোনানো হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ ‐ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আরাআইতাল্লাযী ইউকায্যিবু বিদ্দীন, (২) ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদুও্‘উল ইয়াতীম, (৩) ওয়ালা ইয়াহুয্যু আলা ত্ব‘আ-মিল মিসকীন, (৪) ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লীন, (৫) আল্লাযীনা হুম ‘আন্ সালাতিহিম্ সা-হূন, (৬) আল্লাযীনাহুম ইউরা-উন, (৭) ওয়াইয়াম্নাউনাল্ মা-উন।
শাব্দিক অর্থ : ১. اَرَاَيْتَ তুমি কি তাকে দেখনি اَلَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? ২. فَذٰلِكَ এ তো হচেছ সেই ব্যক্তি, اَلَّذِيْ يَدُعُّ যে গলা ধাক্কা দেয় اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। ৩. وَلَا يَحُضُّ সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না عَلٰى طَعَامِ খাবার দিতে اَلْمِسْكِيْنِ মিস্কীনদেরকে। ৪. فَوَيْلٌ (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে لِّلْمُصَلِّيْنَ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। ৫. اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা عَنْ صَلَاتِهِمْ নিজেদের সালাত থেকে سَاهُوْنَ উদাসীন থাকে। ৬. الَّذِيْنَ هُمْ যারা يُرَآءُوْنَ (যাবতীয় কাজকর্ম শুধু) প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. وَيَمْنَعُوْنَ এবং তারা বিরত থাকে اَلْمَاعُوْنَ ছোটখাটো জিনিসপত্র (সাহায্য দেয়া) দেয়া থেকে।
অর্থ : ১. তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ! যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে। ২. সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, ৩. মিস্কীনদের খাবার দিতে কখনো সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না, ৪. (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। ৫. যারা নিজেদের সালাত থেকে উদাসীন থাকে। ৬. তারা যাবতীয় কাজকর্ম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. এবং ছোটখাটো জিনিস পর্যন্ত (অন্যদেরকে) দেয়া থেকে বিরত থাকে।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) আখিরাতের হিসাব-নিকাশের বিশ্বাস এবং ভয় সকলেরই থাকতে হবে; নতুবা মানুষের চরিত্র সংশোধন হবে না।
(২) এতীমের হক আদায় করা অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গরীবদের হক আদায় করতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ কাজে একে অপরকে উৎসাহিত করতে হবে।
(৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে লোক দেখানো মনোভাব ও মুনাফিকী আচরণ পরিহার করতে হবে।
(৪) কৃপণতার অভ্যাস দূর করতে হবে। যাকাত, উশর ও ফিতরা এসব আদায় করতেই হবে- এছাড়াও মানবতার খাতিরে পরস্পরের মধ্যে যে সকল জিনিস আদান-প্রদান করতে হয় বা যেসব সহযোগিতা করতে হয় তাতেও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়।
সূরা মাউনের আলোচ্য বিষয় : আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে- এ বিশ্বাস যাদের নেই তারা যে কেমন খারাপ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে এ সূরায় সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং মুনাফিকী আচরণকারীদেরকে সতর্ক করে শাস্তির বাণী শোনানো হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ ‐ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আরাআইতাল্লাযী ইউকায্যিবু বিদ্দীন, (২) ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদুও্‘উল ইয়াতীম, (৩) ওয়ালা ইয়াহুয্যু আলা ত্ব‘আ-মিল মিসকীন, (৪) ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লীন, (৫) আল্লাযীনা হুম ‘আন্ সালাতিহিম্ সা-হূন, (৬) আল্লাযীনাহুম ইউরা-উন, (৭) ওয়াইয়াম্নাউনাল্ মা-উন।
শাব্দিক অর্থ : ১. اَرَاَيْتَ তুমি কি তাকে দেখনি اَلَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? ২. فَذٰلِكَ এ তো হচেছ সেই ব্যক্তি, اَلَّذِيْ يَدُعُّ যে গলা ধাক্কা দেয় اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। ৩. وَلَا يَحُضُّ সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না عَلٰى طَعَامِ খাবার দিতে اَلْمِسْكِيْنِ মিস্কীনদেরকে। ৪. فَوَيْلٌ (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে لِّلْمُصَلِّيْنَ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। ৫. اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা عَنْ صَلَاتِهِمْ নিজেদের সালাত থেকে سَاهُوْنَ উদাসীন থাকে। ৬. الَّذِيْنَ هُمْ যারা يُرَآءُوْنَ (যাবতীয় কাজকর্ম শুধু) প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. وَيَمْنَعُوْنَ এবং তারা বিরত থাকে اَلْمَاعُوْنَ ছোটখাটো জিনিসপত্র (সাহায্য দেয়া) দেয়া থেকে।
অর্থ : ১. তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ! যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে। ২. সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, ৩. মিস্কীনদের খাবার দিতে কখনো সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না, ৪. (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। ৫. যারা নিজেদের সালাত থেকে উদাসীন থাকে। ৬. তারা যাবতীয় কাজকর্ম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. এবং ছোটখাটো জিনিস পর্যন্ত (অন্যদেরকে) দেয়া থেকে বিরত থাকে।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) আখিরাতের হিসাব-নিকাশের বিশ্বাস এবং ভয় সকলেরই থাকতে হবে; নতুবা মানুষের চরিত্র সংশোধন হবে না।
(২) এতীমের হক আদায় করা অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গরীবদের হক আদায় করতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ কাজে একে অপরকে উৎসাহিত করতে হবে।
(৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে লোক দেখানো মনোভাব ও মুনাফিকী আচরণ পরিহার করতে হবে।
(৪) কৃপণতার অভ্যাস দূর করতে হবে। যাকাত, উশর ও ফিতরা এসব আদায় করতেই হবে- এছাড়াও মানবতার খাতিরে পরস্পরের মধ্যে যে সকল জিনিস আদান-প্রদান করতে হয় বা যেসব সহযোগিতা করতে হয় তাতেও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়।
শানে নুযূল : নবী ﷺ এর সকল পুত্র সন্তান ছোটকালেই মারা যায় এতে কুরাইশ বংশের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল - بَتِرَ مُحَمَّدٌ মুহাম্মাদ লেজকাটা (নির্বংশ) হয়ে গেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন। [ইবনে কাসীর, অত্র সূরা তাফসীরে দৃষ্টব্য।] অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী ﷺ এর পুত্র ইব্রাহীম মারা গেলে মক্কার মুশরিকরা একে অপরকে বলাবলি করতে লাগল, মুহাম্মাদ লেজকাটা হয়ে গেছে। মুশরিকদের এসকল অশালীন উক্তির কারণে নবী ﷺ কষ্ট পেতেন। যেখানে বিপদের সময় নিজের আত্মীয়-স্বজন পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে তারাই তাঁর কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাউসার নাযিল করে নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিলেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৭।]
সূরার আলোচ্য বিষয় : এ সূরায় নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আমি আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছি। তাই আপনি বিরোধীদের কথায় দুঃখিত হবেন না। আপনি সালাত ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করুন। পরিশেষে তারাই হবে লেজকাটা।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ‐ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‐ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম (১) ইন্না আ‘ত্বাইনা কাল্ কাওসার (২) ফাসাল্লি লিরাবিবকা ওয়ান্হার (৩) ইন্না শা-নিআকা হুয়াল্ আবতার।
শাব্দিক অর্থ : ১. اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে দান করেছি اَلْكَوْثَرَ কাওসার। ২. فَصَلِّ অতএব তুমি সালাত কায়েম করো لِرَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে وَانْحَرْ এবং কুরবানী করো। ৩. اِنَّ شَانِئَكَ নিশ্চয় তোমার নিন্দাকারীরাই হবে هُوَ الْاَبْتَرُ শিকড়-কাটা (অসহায়)।
অর্থ : ১. (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। ২. অতএব, (আমার স্মরণের জন্য) তুমি সালাত কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। ৩. নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দাকারীরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)।
সূরার হেদায়াত ও শিক্ষা :
(১) সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে।
(২) ইসলামের শত্রুদের আজে-বাজে কথায় ব্যথিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা ও অসীম সাহস নিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
(৩) যারা শত্রুতা করবে এর পরিণাম তারাই ভোগ করবে, কেননা যে খারাপ চক্রান্ত করে সেই চক্রান্তের জালে নিজেকেই পড়তে হয়। [সূরা ফাতির- ৪৩।]
সূরার আলোচ্য বিষয় : এ সূরায় নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আমি আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছি। তাই আপনি বিরোধীদের কথায় দুঃখিত হবেন না। আপনি সালাত ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করুন। পরিশেষে তারাই হবে লেজকাটা।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ‐ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‐ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম (১) ইন্না আ‘ত্বাইনা কাল্ কাওসার (২) ফাসাল্লি লিরাবিবকা ওয়ান্হার (৩) ইন্না শা-নিআকা হুয়াল্ আবতার।
শাব্দিক অর্থ : ১. اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে দান করেছি اَلْكَوْثَرَ কাওসার। ২. فَصَلِّ অতএব তুমি সালাত কায়েম করো لِرَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে وَانْحَرْ এবং কুরবানী করো। ৩. اِنَّ شَانِئَكَ নিশ্চয় তোমার নিন্দাকারীরাই হবে هُوَ الْاَبْتَرُ শিকড়-কাটা (অসহায়)।
অর্থ : ১. (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। ২. অতএব, (আমার স্মরণের জন্য) তুমি সালাত কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। ৩. নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দাকারীরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)।
সূরার হেদায়াত ও শিক্ষা :
(১) সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে।
(২) ইসলামের শত্রুদের আজে-বাজে কথায় ব্যথিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা ও অসীম সাহস নিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
(৩) যারা শত্রুতা করবে এর পরিণাম তারাই ভোগ করবে, কেননা যে খারাপ চক্রান্ত করে সেই চক্রান্তের জালে নিজেকেই পড়তে হয়। [সূরা ফাতির- ৪৩।]
ফযীলত : এ সূরাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। এর বিশেষ কিছু ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
১। রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাক‘আত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
২। হাদীসে এসেছে, সূরা কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশের মর্যাদা রাখে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৮।]
শানে নুযূল : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধন-সম্পদ দেব যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৮।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ ইয়া আইয়ুহাল কা-ফিরূন, (২) লা- আ‘বুদু মা- তা‘বুদূন, (৩) ওয়ালা আন্তুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৪) ওয়ালা আনা ‘আবিদুমমা ‘আবাত্তুম, (৫) ওয়ালা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৬) লাকুম দ্বী-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী!) তুমি বলে দাও, يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ হে কাফিররা! ২. لَاۤ اَعْبُدُ আমি তাদের ইবাদাত করি না مَا تَعْبُدُوْنَ তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। ৪. وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই - مَّا عَبَدْتُمْ যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। ৬. لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের পথ তোমাদের জন্য - وَلِيَ دِيْنِ আর আমার পথ আমার জন্য।
অর্থ : ১. (হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য- আর আমার দ্বীন আমার জন্য।
সূরার শিক্ষা ও মূল বিষয় : এ সূরায় এ কথাই বলা হয়েছে যে, ইসলাম ও কুফর এবং শির্ক ও তাওহীদ কোন দিনই এক সঙ্গে চলতে পারে না। একটি অপরটির বিপরীত। তাওহীদের মূল দাবী হলো শির্কের নিন্দা করা। যে আল্লাহর ইবাদাত করতে চায় সে অন্য কারো ইবাদাত করতে পারবে না। মুসলিমদেরকে চলতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধানের উপর। আর অমুসলিম ও মুশরিকরা চলে তাদের মনগড়া মতবাদের উপর।
১। রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাক‘আত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
২। হাদীসে এসেছে, সূরা কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশের মর্যাদা রাখে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৮।]
শানে নুযূল : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধন-সম্পদ দেব যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৮।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ ইয়া আইয়ুহাল কা-ফিরূন, (২) লা- আ‘বুদু মা- তা‘বুদূন, (৩) ওয়ালা আন্তুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৪) ওয়ালা আনা ‘আবিদুমমা ‘আবাত্তুম, (৫) ওয়ালা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৬) লাকুম দ্বী-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী!) তুমি বলে দাও, يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ হে কাফিররা! ২. لَاۤ اَعْبُدُ আমি তাদের ইবাদাত করি না مَا تَعْبُدُوْنَ তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। ৪. وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই - مَّا عَبَدْتُمْ যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। ৬. لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের পথ তোমাদের জন্য - وَلِيَ دِيْنِ আর আমার পথ আমার জন্য।
অর্থ : ১. (হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য- আর আমার দ্বীন আমার জন্য।
সূরার শিক্ষা ও মূল বিষয় : এ সূরায় এ কথাই বলা হয়েছে যে, ইসলাম ও কুফর এবং শির্ক ও তাওহীদ কোন দিনই এক সঙ্গে চলতে পারে না। একটি অপরটির বিপরীত। তাওহীদের মূল দাবী হলো শির্কের নিন্দা করা। যে আল্লাহর ইবাদাত করতে চায় সে অন্য কারো ইবাদাত করতে পারবে না। মুসলিমদেরকে চলতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধানের উপর। আর অমুসলিম ও মুশরিকরা চলে তাদের মনগড়া মতবাদের উপর।
নাযিলের সময়কাল : পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে নাযিলকৃত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে এটি। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের কিছু দিন পূর্বে নাযিল হয়। ইবনে আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন এটি কুরআনের সর্বশেষ সূরা। এর পরে আর কোন পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়নি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭৩১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৫৮৮।]
সূরার শানে নুযূল ও আলোচ্য বিষয় : মহান আল্লাহ বিশ্বনবী ﷺ কে যে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন, নবী ﷺ নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের বিজয় শুরু হতে লাগল। মক্কা বিজয়ের ফলে সমগ্র মক্কা ইসলামের দখলে আসল। আগে মানুষ একা একা ইসলামে দাখিল হতো- এখন তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাষ্ট্র প্রধান হলেন। লক্ষ লক্ষ সাহাবীকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জ পালন করলেন। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিলেন।
এবার আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, ঠিক এমন সময় তিনি এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের বিজয় হলে তারা উৎসব পালন করে, আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত হয়ে যায়; আর আপনার ব্যাপার কিন্তু আলাদা। আমি আপনাকে বিজয় দিয়েছি, এখন আপনি আমার প্রশংসা করুন- আর আমার কাছে ইস্তিগফার করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ ‐ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا ‐ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইযা জা-আ নাস্রুল্লাহি ওয়াল্ ফাত্হু, (২) ওয়ারা আইতান্নাসা ইয়াদ্খুলূনা ফী দ্বীনিল্লাহি আফ্ওয়াজা, (৩) ফাসাব্বিহ বিহাম্দি রাবিবকা ওয়াস্তাগ্ফিরহু ইন্নাহূ কানা তাও্ওয়াবা।
শাব্দিক অর্থ : ১. اِذَا جَآءَ যখন আসবে نَصْرُ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য وَالْفَتْحُ ও বিজয় । ২. وَرَاَيْتَ النَّاسَ তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, يَدْخُلُوْنَ তারা প্রবেশ করছে فِيْ دِيْنِ اللهِ আল্লাহর দ্বীনে اَفْوَاجًا দলে দলে। ৩. فَسَبِّحْ অতএব তুমি তাসবীহ পাঠ করো بِحَمْدِ প্রশংসার সাথে رَبِّكَ তোমার মালিকের وَاسْتَغْفِرْهُ এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; اِنَّهٗ অবশ্যই তিনি كَانَ تَوَّابًا তাওবা কবুলকারী।
অর্থ : ১. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। ২. তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। ৩. অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সফলতা ও বিজয় শুধুমাত্র শক্তি ও জনবলের মাধ্যমে অর্জিত হয় না; বরং আল্লাহর সাহায্য দ্বারাই অর্জিত হয়।
(২) আল্লাহ কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করলে সেজন্য গর্বিত না হয়ে বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
(৩) কোন ব্যক্তি ইসলামের যত বড় খেদমতই করুক না কেন- এজন্য তার পক্ষে গর্ব করা উচিত নয়; বরং একে আল্লাহর অনুগ্রহ জেনে তাঁর কাছে নত হয়ে থাকা ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করাই ইসলামের শিক্ষা।
(৪) এ সূরা নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ রুকূ ও সিজদায় ‘‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহাম্দিকা আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলী’’ বেশি বেশি পড়তেন। আমরাও এ দু‘আটির উপর আমল করব। [সহীহ বুখারী, হা/৮১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; নাসাঈ, হা/১০৪৭।]
সূরার শানে নুযূল ও আলোচ্য বিষয় : মহান আল্লাহ বিশ্বনবী ﷺ কে যে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন, নবী ﷺ নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের বিজয় শুরু হতে লাগল। মক্কা বিজয়ের ফলে সমগ্র মক্কা ইসলামের দখলে আসল। আগে মানুষ একা একা ইসলামে দাখিল হতো- এখন তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাষ্ট্র প্রধান হলেন। লক্ষ লক্ষ সাহাবীকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জ পালন করলেন। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিলেন।
এবার আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, ঠিক এমন সময় তিনি এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের বিজয় হলে তারা উৎসব পালন করে, আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত হয়ে যায়; আর আপনার ব্যাপার কিন্তু আলাদা। আমি আপনাকে বিজয় দিয়েছি, এখন আপনি আমার প্রশংসা করুন- আর আমার কাছে ইস্তিগফার করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ ‐ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا ‐ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইযা জা-আ নাস্রুল্লাহি ওয়াল্ ফাত্হু, (২) ওয়ারা আইতান্নাসা ইয়াদ্খুলূনা ফী দ্বীনিল্লাহি আফ্ওয়াজা, (৩) ফাসাব্বিহ বিহাম্দি রাবিবকা ওয়াস্তাগ্ফিরহু ইন্নাহূ কানা তাও্ওয়াবা।
শাব্দিক অর্থ : ১. اِذَا جَآءَ যখন আসবে نَصْرُ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য وَالْفَتْحُ ও বিজয় । ২. وَرَاَيْتَ النَّاسَ তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, يَدْخُلُوْنَ তারা প্রবেশ করছে فِيْ دِيْنِ اللهِ আল্লাহর দ্বীনে اَفْوَاجًا দলে দলে। ৩. فَسَبِّحْ অতএব তুমি তাসবীহ পাঠ করো بِحَمْدِ প্রশংসার সাথে رَبِّكَ তোমার মালিকের وَاسْتَغْفِرْهُ এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; اِنَّهٗ অবশ্যই তিনি كَانَ تَوَّابًا তাওবা কবুলকারী।
অর্থ : ১. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। ২. তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। ৩. অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সফলতা ও বিজয় শুধুমাত্র শক্তি ও জনবলের মাধ্যমে অর্জিত হয় না; বরং আল্লাহর সাহায্য দ্বারাই অর্জিত হয়।
(২) আল্লাহ কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করলে সেজন্য গর্বিত না হয়ে বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
(৩) কোন ব্যক্তি ইসলামের যত বড় খেদমতই করুক না কেন- এজন্য তার পক্ষে গর্ব করা উচিত নয়; বরং একে আল্লাহর অনুগ্রহ জেনে তাঁর কাছে নত হয়ে থাকা ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করাই ইসলামের শিক্ষা।
(৪) এ সূরা নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ রুকূ ও সিজদায় ‘‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহাম্দিকা আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলী’’ বেশি বেশি পড়তেন। আমরাও এ দু‘আটির উপর আমল করব। [সহীহ বুখারী, হা/৮১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; নাসাঈ, হা/১০৪৭।]
শানে নুযূল : এ সূরাটি নবুওয়াতের প্রথম দিকে মক্কায় অবতীর্ণ হয়। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ এর প্রতি যখন এ আয়াত নাযিল হয়-
﴿وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾
আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখান। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
তখন মহানবী ﷺ সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে চিৎকার করে বলেন, صَبَاحَاهْ يَا (হায়রে সকাল বেলার বিপদ!) সে সময় আরবের নিয়ম ছিল কোন গোত্রের উপর আক্রমণের ভয় হলে লোকেরা সকালে পাহাড়ে উঠে এ রকম চিৎকার দিত। এতে সবাই একস্থানে সমবেত হয়ে যেত।
নবীর এ শব্দ শুনে তারা পাহাড়ের পাশে এসে জমা হলে নবী ﷺ বললেন, হে বনু হাশেম! হে বনু আবদুল মুত্তালিব! হে অমুক...! আমি যদি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, পাহাড়ের ঐ পাশে এক শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য এসেছে তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? তারা বলল, করব। কারণ আমরা তোমাকে কোনদিন মিথ্যা বলতে শুনিনি। এরপর নবী ﷺ বললেন-
فَاِنِّىْ نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٌ
তাহলে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, আগামীতে কঠিন আযাব আসছে (তোমাদের শির্ক ও কুফ্রের কারণে)।
তখন আবু লাহাব বলে উঠল :
تَبًّا لَكَ اَلِهٰذَا جَمَعْتَنَا
তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি এ জন্য আমাদেরকে ডেকেছিলে? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬৩।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَّامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) তাব্বাত্ ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়া তাববা, (২) মা আগ্না-আন্হু মা-লুহূ ওয়ামা-কাসাব, (৩) সাইয়াস্লা না-রান্ যা-তা লাহাব, (৪) ওয়াম্রাআতুহূ হাম্মা-লাতাল হাত্বাব, (৫) ফী জীদিহা হাব্লুম মিম্ মাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. تَبَّتْ ধ্বংস হয়ে যাক يَدَا দু’হাতই اَبِيْ لَهَبٍ আবু লাহাবের, وَّتَبَّ সে নিজেও। ২. مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ তার কোন কাজে আসেনি مَالُهٗ তার ধন-সম্পদ وَمَا كَسَبَ ও যা সে আয়-উপার্জন করেছিল। ৩. سَيَصْلٰى অচিরেই সে প্রবেশ করবে نَارًا আগুনে ذَاتَ لَهَبٍ যা লেলিহান শিখা বিশিষ্ট। ৪. وَّامْرَاَتُهٗ সাথে থাকবে তার স্ত্রীও حَمَّالَةَ যে বহন করত اَلْحَطَبِ কাঠের বোঝা। ৫. فِيْ جِيْدِهَا তার গলায় থাকবে حَبْلٌ রশি مِّنْ مَّسَدٍ খেজুর পাতার পাকানো।
অর্থ : ১. আবু লাহাবের (দুনিয়া-আখিরাতে) দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও। ২. তার ধন-সম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। ৩. অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ৪. সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও। ৫. (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে।
সূরা লাহাবের হেদায়াত ও মৌলিক শিক্ষা :
(১) ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে দুশমনি করার পরিণাম হলো উভয় জগতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
(২) মাল আর সন্তান কোন কাজে আসবে না- যদি এসব আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার না করা হয়।
(৩) পাপ কাজে যারা একে অন্যের সহযোগী হয় কিয়ামতের দিন তাদের সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(৪) নিজের ঈমান ও আমল না থাকলে হাশরের দিনে আত্মীয়স্বজন কোন উপকারে আসবে না।
(৫) যারাই এ পৃথিবীতে ইসলামের বিরোধিতা করেছে, তারা কেউই এ দুনিয়া থেকে সম্মানে বিদায় নিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না, আর পরকালের শাস্তি তো আছেই।
﴿وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾
আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখান। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
তখন মহানবী ﷺ সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে চিৎকার করে বলেন, صَبَاحَاهْ يَا (হায়রে সকাল বেলার বিপদ!) সে সময় আরবের নিয়ম ছিল কোন গোত্রের উপর আক্রমণের ভয় হলে লোকেরা সকালে পাহাড়ে উঠে এ রকম চিৎকার দিত। এতে সবাই একস্থানে সমবেত হয়ে যেত।
নবীর এ শব্দ শুনে তারা পাহাড়ের পাশে এসে জমা হলে নবী ﷺ বললেন, হে বনু হাশেম! হে বনু আবদুল মুত্তালিব! হে অমুক...! আমি যদি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, পাহাড়ের ঐ পাশে এক শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য এসেছে তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? তারা বলল, করব। কারণ আমরা তোমাকে কোনদিন মিথ্যা বলতে শুনিনি। এরপর নবী ﷺ বললেন-
فَاِنِّىْ نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٌ
তাহলে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, আগামীতে কঠিন আযাব আসছে (তোমাদের শির্ক ও কুফ্রের কারণে)।
তখন আবু লাহাব বলে উঠল :
تَبًّا لَكَ اَلِهٰذَا جَمَعْتَنَا
তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি এ জন্য আমাদেরকে ডেকেছিলে? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬৩।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَّامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) তাব্বাত্ ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়া তাববা, (২) মা আগ্না-আন্হু মা-লুহূ ওয়ামা-কাসাব, (৩) সাইয়াস্লা না-রান্ যা-তা লাহাব, (৪) ওয়াম্রাআতুহূ হাম্মা-লাতাল হাত্বাব, (৫) ফী জীদিহা হাব্লুম মিম্ মাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. تَبَّتْ ধ্বংস হয়ে যাক يَدَا দু’হাতই اَبِيْ لَهَبٍ আবু লাহাবের, وَّتَبَّ সে নিজেও। ২. مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ তার কোন কাজে আসেনি مَالُهٗ তার ধন-সম্পদ وَمَا كَسَبَ ও যা সে আয়-উপার্জন করেছিল। ৩. سَيَصْلٰى অচিরেই সে প্রবেশ করবে نَارًا আগুনে ذَاتَ لَهَبٍ যা লেলিহান শিখা বিশিষ্ট। ৪. وَّامْرَاَتُهٗ সাথে থাকবে তার স্ত্রীও حَمَّالَةَ যে বহন করত اَلْحَطَبِ কাঠের বোঝা। ৫. فِيْ جِيْدِهَا তার গলায় থাকবে حَبْلٌ রশি مِّنْ مَّسَدٍ খেজুর পাতার পাকানো।
অর্থ : ১. আবু লাহাবের (দুনিয়া-আখিরাতে) দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও। ২. তার ধন-সম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। ৩. অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ৪. সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও। ৫. (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে।
সূরা লাহাবের হেদায়াত ও মৌলিক শিক্ষা :
(১) ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে দুশমনি করার পরিণাম হলো উভয় জগতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
(২) মাল আর সন্তান কোন কাজে আসবে না- যদি এসব আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার না করা হয়।
(৩) পাপ কাজে যারা একে অন্যের সহযোগী হয় কিয়ামতের দিন তাদের সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(৪) নিজের ঈমান ও আমল না থাকলে হাশরের দিনে আত্মীয়স্বজন কোন উপকারে আসবে না।
(৫) যারাই এ পৃথিবীতে ইসলামের বিরোধিতা করেছে, তারা কেউই এ দুনিয়া থেকে সম্মানে বিদায় নিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না, আর পরকালের শাস্তি তো আছেই।
নামকরণ : পবিত্র কুরআনের সূরাসমূহের নাম সাধারণত উক্ত সূরার কোন একটি শব্দ হতে নির্বাচন করা হয়, কিন্তু এ সূরাটি এর ব্যতিক্রম। اِخْلَاصٌ শব্দটি সূরার মধ্যে নেই। এ নাম দেয়া হয়েছে- কেবল সূরায় আলোচিত বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করে। ‘ইখলাস’ অর্থ- একনিষ্ঠ, খালিস। এ সূরায় একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল তাওহীদের কথা আলোচিত হয়েছে। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে সূরা ইখলাস।
শানে নুযূল : উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আপনার রবের বংশ-পরিচয় আমাদেরকে জানান। এ কথার উত্তরে সূরাটি নাযিল হয়। [তিরমিযী, হা/৩৩৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৯৮৭।]
সূরা ইখলাসের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত :
পবিত্র কুরআনের মূল আলোচনার বিষয় হলো তিনটি, তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত। আর এ সূরায় ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদকে খুবই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য নবী ﷺ এ সূরাটির বহুল প্রচার কামনা করতেন। প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে যেন এর বিষয়বস্তু গেঁথে যায়, এজন্য তিনি এ সূরা তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এ সূরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে রাত্রে বার বার সূরা ইখলাস পড়তে শুনলেন। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন সে ঘটনাটি নবী ﷺ কে জানালেন। সম্ভবত তিনি এ আমলকে হালকা মনে করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; তিরমিযী, হা/৯৯৫।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি রাত্রে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে না? সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার এ ক্ষমতা আছে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, জেনে রেখো, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক সাহাবীকে সফরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আত সূরা ইখলাস দ্বারা শেষ করতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এ সূরাতে রহমানের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই এ সূরাটি পাঠ করা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালোবাসেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৯৯৩।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; তিরমিযী, হা/২৯০১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৯৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ, (২) আল্লা-হুস্সামাদ, (৩) লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইউলাদ্, (৪) ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান্ আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, هُوَ اللهُ তিনি আল্লাহ, اَحَدٌ এক ও একক। ২. اَللهُ আল্লাহ اَلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী। ৩. لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ আর তাঁর জন্য নেই كُفُوًا اَحَدٌ কোন সমতুল্য।
অর্থ : ১. (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ এক ও একক। ২. তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই।
সূরা ইখলাসের মৌলিক শিক্ষা :
(১) আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। তাঁর সত্তা বা গড়ন-গঠন সম্পর্কে চিন্তা করতে নেই।
(২) মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
(৩) আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই আইন রচনা করেন এবং হুকুম জারি করেন। এজন্য আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানুষের তৈরি করা আইনের অনুসরণ করা শির্কের পর্যায়ে পড়ে।
(৪) শির্কের সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করে, খাঁটিভাবে তাওহীদবাদী হতে হবে- এটাই ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর।
শানে নুযূল : উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আপনার রবের বংশ-পরিচয় আমাদেরকে জানান। এ কথার উত্তরে সূরাটি নাযিল হয়। [তিরমিযী, হা/৩৩৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৯৮৭।]
সূরা ইখলাসের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত :
পবিত্র কুরআনের মূল আলোচনার বিষয় হলো তিনটি, তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত। আর এ সূরায় ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদকে খুবই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য নবী ﷺ এ সূরাটির বহুল প্রচার কামনা করতেন। প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে যেন এর বিষয়বস্তু গেঁথে যায়, এজন্য তিনি এ সূরা তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এ সূরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে রাত্রে বার বার সূরা ইখলাস পড়তে শুনলেন। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন সে ঘটনাটি নবী ﷺ কে জানালেন। সম্ভবত তিনি এ আমলকে হালকা মনে করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; তিরমিযী, হা/৯৯৫।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি রাত্রে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে না? সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার এ ক্ষমতা আছে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, জেনে রেখো, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক সাহাবীকে সফরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আত সূরা ইখলাস দ্বারা শেষ করতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এ সূরাতে রহমানের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই এ সূরাটি পাঠ করা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালোবাসেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৯৯৩।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; তিরমিযী, হা/২৯০১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৯৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ, (২) আল্লা-হুস্সামাদ, (৩) লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইউলাদ্, (৪) ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান্ আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, هُوَ اللهُ তিনি আল্লাহ, اَحَدٌ এক ও একক। ২. اَللهُ আল্লাহ اَلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী। ৩. لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ আর তাঁর জন্য নেই كُفُوًا اَحَدٌ কোন সমতুল্য।
অর্থ : ১. (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ এক ও একক। ২. তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই।
সূরা ইখলাসের মৌলিক শিক্ষা :
(১) আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। তাঁর সত্তা বা গড়ন-গঠন সম্পর্কে চিন্তা করতে নেই।
(২) মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
(৩) আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই আইন রচনা করেন এবং হুকুম জারি করেন। এজন্য আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানুষের তৈরি করা আইনের অনুসরণ করা শির্কের পর্যায়ে পড়ে।
(৪) শির্কের সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করে, খাঁটিভাবে তাওহীদবাদী হতে হবে- এটাই ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর।
সূরাদ্বয়ের ফযীলত : আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন বিছানায় আগমন করতেন, তখন দু’হাত একত্র করে ফুঁক দিয়ে প্রথমে মাথা, পরে মুখমন্ডল এবং যতটুকু সম্ভব হয় সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৫।]
উক্ববা ইবনে আমির (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি তাঁর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনরা কীভাবে মুক্তি পাবে? নবী ﷺ বললেন, হে উক্ববা! তুমি জিহবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি সময় তোমার ঘরে অবস্থান করবে (পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য)। আর তোমার গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবে। পরে নবী ﷺ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমার হাত ধরে বললেন, হে উক্ববা! আমি কি তোমাকে উত্তম তিনটি সূরার নাম বলব? যা তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন সব কিতাবে রয়েছে? আমি বললাম, বলুন! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! এরপর তিনি ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা আমাকে পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উক্ববা! এগুলো ভুলে যেও না এবং তুমি রাতে এগুলো না পড়ে নিদ্রা যেও না। এরপর হতে আমি এগুলো ভুলিনি এবং এগুলো না পড়ে আমি কোন দিন ঘুমাইনি।
এরপর আমি পুনরায় নবীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। নবীর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন আমলের কথা বলে দিন। তিনি বললেন, হে উক্ববা! যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথেও সম্পর্ক রাখবে। যে তোমাকে কিছু দেয় না, তুমি তাকেও দিবে। আর যে তোমার উপর অত্যাচার করবে, তুমি তাকে এড়িয়ে চলবে। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৭২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭২৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৯১।]
সূরা ফালাক ও নাস এর শানে নুযূল :
আল্লাহর নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন, তখন কাফির ও মুশরিকরা সবাই তাঁর শত্রু হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবী ﷺ এর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শির্ক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফ্র একসাথে চলতে পারে না। এতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবী ﷺ এর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবী ﷺ কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। মানুষ শয়তান আর জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে লাগল কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায়। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তাঁরই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাযতকারী।
বিপদের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাওয়া পূর্ববর্তী নবীদেরও নিয়ম ছিল। ফিরাউন যখন মূসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, যারা বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে না, সে সকল ঔদ্ধত্য ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হচ্ছি। [সূরা মু’মিন-২৭।]
নবী ﷺ এর উপর যাদুর ঘটনা : হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খাইবার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তার উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবী ﷺ এর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবী ﷺ এর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যাতে নবী ﷺ এর চুল লাগানো ছিল। লাবীদ, অন্য বর্ণনায় তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সুচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নীচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল।
নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমাদে আছে নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত চলছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর দরবারে পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, এর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হলো, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নীচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে।
নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপে গেলেন। পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন, জিবরাঈল এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দুটি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন।
এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সুচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসল এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। মনে হলো যেন আট-সাট করে বেঁধে রাখা একজন মানুষকে এই মাত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবী ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তখন কোন কোন সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নাস ও ফালাকের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
সূরা ফালাক ও নাস এর মূল আলোচ্য বিষয় :
এ দুনিয়ায় মানুষের অসংখ্য শত্রু রয়েছে। জিন-ইনসান ছাড়া অনেক জীবজমত্মুও মানুষের ক্ষতি করে থাকে। তবে প্রত্যেক মুমিন বান্দার এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতি আল্লাহর হাতে। তার হুকুম ব্যতীত কেউ কারো অণু পরিমাণ লাভ-ক্ষতি করতে পারে না। আর এ সূরা দুটিতে এ কথাই বলা হয়েছে যে, দুনিয়া-আখিরাতের বিপদাপদ হতে বাঁচার জন্য নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দিতে হবে এবং আমলের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল্ ফালাক্ব, (২) মিনশার্রিমা খালাক্ব, (৩) ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা-ওয়াক্বাব, (৪) ওয়ামিন শার্রিন্ নাফ্ফা-সা-তি ফিল্‘উক্বাদ, (৫) ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ الْفَلَقِ উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে। ২. مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ যা তিনি সৃষ্টি করেছেন ৩. وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ যা রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হয়, اِذَا وَقَبَ (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের। ৫. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও اِذَا حَسَدَ যখন সে হিংসা করে।
অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। ২. (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে ৩. আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। ৫. (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ اِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ আ‘ঊযু বিরাবিবন্ না-স, (২) মালিকিন্ না-স, (৩) ইলা-হিন্ না-স, (৪) মিন শার্রিল্ ওয়াসওয়া-সিল্ খান্না-স, (৫) আল্লাযী ইউওয়াসওয়িসু ফী সুদূরিন্না-স, (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ النَّاسِ মানুষের প্রতিপালকের কাছে। ২. مَلِكِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের প্রকৃত মালিকের কাছে। ৩. اِلٰهِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র মা‘বুদের কাছে। ৪. مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই) অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার, اَلْخَنَّاسِ কুমন্ত্রণাদানকারীর। ৫. اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ যে কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ মানুষের অন্তরে। ৬. مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে হোক وَالنَّاسِ বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের মালিকের কাছে। ২. আশ্রয় চাই মানুষের প্রকৃত বাদশাহের কাছে। ৩. আশ্রয় চাই মানুষের একমাত্র মা‘বুদের কাছে। ৪. আশ্রয় চাই কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। ৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। ৬. জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
সূরা ফালাক ও নাস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা :
১. যাদুর প্রভাব সত্য এবং তা মানুষের উপর আছর করতে পারে।
২. যাদু করে কারো ক্ষতি করা সুস্পষ্ট কুফরী এবং কবীরা গোনাহ।
৩. কারো উপর যাদুর প্রভাব পড়লে এ দুটি সূরা বেশি করে পড়া উচিত।
৪. বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ফকীর ও মাজারের আশ্রয় না নিয়ে আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। নবী ﷺ এর মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিকট হতে কেউ খালি হাতে ফিরে না।
৫. সত্যিকার অর্থে যারা ইসলামের দাওয়াত দেন, তাদের দুশমন অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
৬. ইসলামের স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, দুশমন থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তার প্রতি ক্ষমা ও উদারতার নীতি অবলম্বন করা উচিত। নবী ﷺ এমন আচরণ করতেন, তাঁর উদার মনোভাব দেখে লোকেরা সবচেয়ে বেশি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতো।
৭. হিংসা খুবই খারাপ জিনিস, এটা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অপরের হিতাকাঙ্খী হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
৮. শয়তান যেমন মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। কিছু মানুষও তেমনিভাবে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এজন্য যখনই দেখা যাবে যে, কোন মানুষ আমাকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখছে এবং খারাপ কাজের দিকে আকৃষ্ট করছে বা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, এ লোকটি শয়তানের সহযোগী হয়ে আমার কাছে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
উক্ববা ইবনে আমির (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি তাঁর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনরা কীভাবে মুক্তি পাবে? নবী ﷺ বললেন, হে উক্ববা! তুমি জিহবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি সময় তোমার ঘরে অবস্থান করবে (পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য)। আর তোমার গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবে। পরে নবী ﷺ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমার হাত ধরে বললেন, হে উক্ববা! আমি কি তোমাকে উত্তম তিনটি সূরার নাম বলব? যা তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন সব কিতাবে রয়েছে? আমি বললাম, বলুন! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! এরপর তিনি ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা আমাকে পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উক্ববা! এগুলো ভুলে যেও না এবং তুমি রাতে এগুলো না পড়ে নিদ্রা যেও না। এরপর হতে আমি এগুলো ভুলিনি এবং এগুলো না পড়ে আমি কোন দিন ঘুমাইনি।
এরপর আমি পুনরায় নবীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। নবীর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন আমলের কথা বলে দিন। তিনি বললেন, হে উক্ববা! যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথেও সম্পর্ক রাখবে। যে তোমাকে কিছু দেয় না, তুমি তাকেও দিবে। আর যে তোমার উপর অত্যাচার করবে, তুমি তাকে এড়িয়ে চলবে। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৭২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭২৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৯১।]
সূরা ফালাক ও নাস এর শানে নুযূল :
আল্লাহর নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন, তখন কাফির ও মুশরিকরা সবাই তাঁর শত্রু হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবী ﷺ এর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শির্ক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফ্র একসাথে চলতে পারে না। এতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবী ﷺ এর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবী ﷺ কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। মানুষ শয়তান আর জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে লাগল কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায়। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তাঁরই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাযতকারী।
বিপদের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাওয়া পূর্ববর্তী নবীদেরও নিয়ম ছিল। ফিরাউন যখন মূসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, যারা বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে না, সে সকল ঔদ্ধত্য ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হচ্ছি। [সূরা মু’মিন-২৭।]
নবী ﷺ এর উপর যাদুর ঘটনা : হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খাইবার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তার উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবী ﷺ এর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবী ﷺ এর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যাতে নবী ﷺ এর চুল লাগানো ছিল। লাবীদ, অন্য বর্ণনায় তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সুচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নীচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল।
নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমাদে আছে নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত চলছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর দরবারে পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, এর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হলো, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নীচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে।
নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপে গেলেন। পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন, জিবরাঈল এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দুটি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন।
এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সুচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসল এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। মনে হলো যেন আট-সাট করে বেঁধে রাখা একজন মানুষকে এই মাত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবী ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তখন কোন কোন সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নাস ও ফালাকের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
সূরা ফালাক ও নাস এর মূল আলোচ্য বিষয় :
এ দুনিয়ায় মানুষের অসংখ্য শত্রু রয়েছে। জিন-ইনসান ছাড়া অনেক জীবজমত্মুও মানুষের ক্ষতি করে থাকে। তবে প্রত্যেক মুমিন বান্দার এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতি আল্লাহর হাতে। তার হুকুম ব্যতীত কেউ কারো অণু পরিমাণ লাভ-ক্ষতি করতে পারে না। আর এ সূরা দুটিতে এ কথাই বলা হয়েছে যে, দুনিয়া-আখিরাতের বিপদাপদ হতে বাঁচার জন্য নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দিতে হবে এবং আমলের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল্ ফালাক্ব, (২) মিনশার্রিমা খালাক্ব, (৩) ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা-ওয়াক্বাব, (৪) ওয়ামিন শার্রিন্ নাফ্ফা-সা-তি ফিল্‘উক্বাদ, (৫) ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ الْفَلَقِ উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে। ২. مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ যা তিনি সৃষ্টি করেছেন ৩. وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ যা রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হয়, اِذَا وَقَبَ (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের। ৫. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও اِذَا حَسَدَ যখন সে হিংসা করে।
অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। ২. (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে ৩. আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। ৫. (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ اِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ আ‘ঊযু বিরাবিবন্ না-স, (২) মালিকিন্ না-স, (৩) ইলা-হিন্ না-স, (৪) মিন শার্রিল্ ওয়াসওয়া-সিল্ খান্না-স, (৫) আল্লাযী ইউওয়াসওয়িসু ফী সুদূরিন্না-স, (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
শাব্দিক অর্থ : ১. قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ النَّاسِ মানুষের প্রতিপালকের কাছে। ২. مَلِكِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের প্রকৃত মালিকের কাছে। ৩. اِلٰهِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র মা‘বুদের কাছে। ৪. مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই) অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার, اَلْخَنَّاسِ কুমন্ত্রণাদানকারীর। ৫. اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ যে কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ মানুষের অন্তরে। ৬. مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে হোক وَالنَّاسِ বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের মালিকের কাছে। ২. আশ্রয় চাই মানুষের প্রকৃত বাদশাহের কাছে। ৩. আশ্রয় চাই মানুষের একমাত্র মা‘বুদের কাছে। ৪. আশ্রয় চাই কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। ৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। ৬. জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
সূরা ফালাক ও নাস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা :
১. যাদুর প্রভাব সত্য এবং তা মানুষের উপর আছর করতে পারে।
২. যাদু করে কারো ক্ষতি করা সুস্পষ্ট কুফরী এবং কবীরা গোনাহ।
৩. কারো উপর যাদুর প্রভাব পড়লে এ দুটি সূরা বেশি করে পড়া উচিত।
৪. বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ফকীর ও মাজারের আশ্রয় না নিয়ে আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। নবী ﷺ এর মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিকট হতে কেউ খালি হাতে ফিরে না।
৫. সত্যিকার অর্থে যারা ইসলামের দাওয়াত দেন, তাদের দুশমন অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
৬. ইসলামের স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, দুশমন থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তার প্রতি ক্ষমা ও উদারতার নীতি অবলম্বন করা উচিত। নবী ﷺ এমন আচরণ করতেন, তাঁর উদার মনোভাব দেখে লোকেরা সবচেয়ে বেশি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতো।
৭. হিংসা খুবই খারাপ জিনিস, এটা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অপরের হিতাকাঙ্খী হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
৮. শয়তান যেমন মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। কিছু মানুষও তেমনিভাবে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এজন্য যখনই দেখা যাবে যে, কোন মানুষ আমাকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখছে এবং খারাপ কাজের দিকে আকৃষ্ট করছে বা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, এ লোকটি শয়তানের সহযোগী হয়ে আমার কাছে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ মুসলিম সালাত ছেড়ে দিয়েছে এবং এটাকে একটি বোঝা মনে করছে। তাদেরকে সালাত পড়তে বললে তারা নানা অযুহাত পেশ করে থাকে। শয়তানের শিখানো নানা অভিযোগ তুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সালাতকে অবহেলা করছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে যতটুকু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, সেটাকে একটু কাজে লাগান এবং নীচের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে কিছুটা ভাবুন।
১. সালাত কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. সালাত কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. সালাত কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. সালাত কি সাধারণ ব্যাপার? মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না।
৫. আল্লাহ কি বান্দার সালাতের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
একে একে উত্তর নিন :
১. না, হে ভাই-বোনেরা! সালাত কোন বোঝা নয়, এটা আপনার কাছে রাখা আল্লাহ তা‘আলার একটি আমানত। আপনি এই আমানতকে হেফাযত করলে তিনি আপনাকে একটি বিরাট পুরস্কার দেবেন।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল। যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. সালাত সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো সালাতটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে অনেক সময় এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে সালাতের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, সালাত পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. সালাত দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সালাত হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই সালাতই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে সালাত না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে সালাত না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. সালাত কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং সালাত হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। সালাত নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে। দেখুন, আপনি যদি চাকুরী করেন আর সময়মতো দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে কি আপনি বেতন পাবেন? আপনি ব্যবসায়ী; কিন্তু সারাদিন দোকান বন্ধ রাখলেন- এতে কি একটি পয়সাও লাভ হবে? তাহলে আপনি যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন আর আখিরাতের কোন ব্যবসা না করেন, তবে আপনি কীভাবে জান্নাতের নিয়ামত লাভ করবেন? সুতরাং সালাত ছাড়বেন না।
৫. আমাদের সালাত দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া সালাত আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন সালাতের প্রয়োজন। সালাতের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর সালাত ছাড়বেন না।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে যতটুকু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, সেটাকে একটু কাজে লাগান এবং নীচের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে কিছুটা ভাবুন।
১. সালাত কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. সালাত কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. সালাত কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. সালাত কি সাধারণ ব্যাপার? মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না।
৫. আল্লাহ কি বান্দার সালাতের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
একে একে উত্তর নিন :
১. না, হে ভাই-বোনেরা! সালাত কোন বোঝা নয়, এটা আপনার কাছে রাখা আল্লাহ তা‘আলার একটি আমানত। আপনি এই আমানতকে হেফাযত করলে তিনি আপনাকে একটি বিরাট পুরস্কার দেবেন।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল। যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. সালাত সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো সালাতটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে অনেক সময় এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে সালাতের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, সালাত পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. সালাত দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সালাত হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই সালাতই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে সালাত না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে সালাত না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. সালাত কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং সালাত হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। সালাত নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে। দেখুন, আপনি যদি চাকুরী করেন আর সময়মতো দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে কি আপনি বেতন পাবেন? আপনি ব্যবসায়ী; কিন্তু সারাদিন দোকান বন্ধ রাখলেন- এতে কি একটি পয়সাও লাভ হবে? তাহলে আপনি যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন আর আখিরাতের কোন ব্যবসা না করেন, তবে আপনি কীভাবে জান্নাতের নিয়ামত লাভ করবেন? সুতরাং সালাত ছাড়বেন না।
৫. আমাদের সালাত দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া সালাত আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন সালাতের প্রয়োজন। সালাতের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর সালাত ছাড়বেন না।
আপনি যদি মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সত্যবাদী হতে চান এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে চান তাহলে সালাত পড়ুন।
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে সালাত পড়ুন, সালাত আপনাকে এ সকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি সালাত পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি সালাত পড়ুন। এতে তারাও সালাত আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি সালাত না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে সালাত শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে সালাত না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই সালাত পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে সালাত পড়ুন। কারণ সালাত ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গজব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে সালাত পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো সালাত।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই সালাত ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে সালাত পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর সালাতের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে সালাত আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে সালাত ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে সালাত না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
আপনি যদি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন, তাহলে সালাত পড়ুন, কারণ কোন বুদ্ধিমানের উচিত নয়, সালাত ত্যাগ করা। তারপরও যারা বুঝে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاۤ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ﴾
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখতে পারে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করতে পারে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং আরো অধিক বিভ্রামত্ম এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে সালাত পড়ুন, সালাত আপনাকে এ সকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি সালাত পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি সালাত পড়ুন। এতে তারাও সালাত আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি সালাত না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে সালাত শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে সালাত না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই সালাত পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে সালাত পড়ুন। কারণ সালাত ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গজব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে সালাত পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো সালাত।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই সালাত ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে সালাত পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর সালাতের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে সালাত আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে সালাত ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে সালাত না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
আপনি যদি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন, তাহলে সালাত পড়ুন, কারণ কোন বুদ্ধিমানের উচিত নয়, সালাত ত্যাগ করা। তারপরও যারা বুঝে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاۤ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ﴾
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখতে পারে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করতে পারে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং আরো অধিক বিভ্রামত্ম এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
শয়তান যে সকল ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তিতে ফেলে মানুষকে সালাত থেকে বিরত রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অনেকে বলে, শুধু সালাতটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে সালাত আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফ্র ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন সালাত ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, সালাতের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর সালাত না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু সালাত না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। সালাত পড়লেই আপনি সালাত বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার সালাত পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। সালাত ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, সালাত পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি সালাত পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি সালাত পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে সালাতের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার সালাত নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি সালাত না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন সালাত পড়ে, এরপর আবার সালাত ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন সালাত পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা সালাত পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
অনেকে বলে, শুধু সালাতটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে সালাত আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফ্র ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন সালাত ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, সালাতের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর সালাত না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু সালাত না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। সালাত পড়লেই আপনি সালাত বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার সালাত পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। সালাত ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, সালাত পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি সালাত পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি সালাত পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে সালাতের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার সালাত নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি সালাত না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন সালাত পড়ে, এরপর আবার সালাত ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন সালাত পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা সালাত পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
সালাত নষ্ট না করার জন্য আল্লাহ কতইনা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। এজন্য যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের হুশ-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সালাত পড়তেই হবে। বিশেষ কোন অসুবিধার কারণে সালাত ছুটে গেলে কাযা পড়ে নেবেন। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে সালাতের সময় চলে গেলে জাগ্রত হওয়ার পরেই তা পড়ে নিন, তাহলে আপনি এই গোনাহের শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন।
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে সালাত পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয় তবে শুয়ে সালাত পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই সালাত পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা সালাত পড়ব না। আসলে ইসলামের বিধান পালন করা কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে সালাত পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয় তবে শুয়ে সালাত পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই সালাত পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা সালাত পড়ব না। আসলে ইসলামের বিধান পালন করা কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
﴿رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ﴾
উচ্চারণ : রবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও সালাত আদায়কারী বানাও। হে আমাদের রব! আপনি দু‘আ কবুল করুন। (সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
উচ্চারণ : রবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও সালাত আদায়কারী বানাও। হে আমাদের রব! আপনি দু‘আ কবুল করুন। (সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
অনেকেই আরবি পড়তে পারেন না। তাই কুরআন মাজীদ ও অন্যান্য দু‘আ পড়ার জন্য বাংলা উচ্চারণের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কিন্তু এভাবে বাংলায় উচ্চারণ করে আরবি পড়া সঠিক হয় না। আরবিতে দুটি কাফ আছে। এখন বাংলায় ‘ক’ দ্বারা কেবল নুক্তা ছাড়া (ك) ‘কাফ’ এর উচ্চারণ সম্ভব; কিন্তু নুক্তাযুক্ত (ق) ‘কাফ’ উচ্চারণের কোন অক্ষর বাংলা ভাষায় নেই।
এ ছাড়াও আরবি বর্ণমালায় এমন অনেক অক্ষর রয়েছে যেগুলোকে বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় সঠিকভাবে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। যেমন : ط - ‐ ث -‐ س - ‐ ص -‐ ش - ‐ ذ -‐ ز ইত্যাদি। এ সকল অক্ষরের মাখরাজ ও উচ্চারণের ভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতা বজায় না রাখলে অর্থের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এসে যায়। যেমন : নুক্তাযুক্ত ‘কাফ’ দিয়ে قُلْ (কুল) এর অর্থ হয় বলো। আর নুক্তা ছাড়া ‘কাফ’ দিয়ে كُلْ (কুল) এর অর্থ হয় খাও।
বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে অর্থের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কুরআন মাজীদ এবং সালাত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আরবি দু‘আগুলো বাংলা উচ্চারণের সাহায্য না নিয়ে মূল আরবি থেকে শেখা প্রত্যেকেরই একান্ত কর্তব্য।
সেই সাথে ছেলে-মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই আরবি ভাষা শিখানো এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করাও পিতামাতার একটি বড় দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন!!
﴿سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
সমাপ্ত
এ ছাড়াও আরবি বর্ণমালায় এমন অনেক অক্ষর রয়েছে যেগুলোকে বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় সঠিকভাবে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। যেমন : ط - ‐ ث -‐ س - ‐ ص -‐ ش - ‐ ذ -‐ ز ইত্যাদি। এ সকল অক্ষরের মাখরাজ ও উচ্চারণের ভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতা বজায় না রাখলে অর্থের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এসে যায়। যেমন : নুক্তাযুক্ত ‘কাফ’ দিয়ে قُلْ (কুল) এর অর্থ হয় বলো। আর নুক্তা ছাড়া ‘কাফ’ দিয়ে كُلْ (কুল) এর অর্থ হয় খাও।
বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে অর্থের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কুরআন মাজীদ এবং সালাত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আরবি দু‘আগুলো বাংলা উচ্চারণের সাহায্য না নিয়ে মূল আরবি থেকে শেখা প্রত্যেকেরই একান্ত কর্তব্য।
সেই সাথে ছেলে-মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই আরবি ভাষা শিখানো এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করাও পিতামাতার একটি বড় দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন!!
﴿سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন