hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কিতাবুস্ সালাত

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৩০
ফরয সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিত মুনাজাত
নবী ﷺ কখনো ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করেছেন এমন কোন বর্ণনা কোন হাদীসে নেই। বিশুদ্ধ হাদীস তো দূরের কথা, কোন দুর্বল কিংবা বানোয়াট হাদীসেও তার কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। হাদীস গ্রন্থসমূহের কোন একটিতেও পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতের কোন অধ্যায় বা কোন পরিচ্ছেদ পাওয়া যায়নি। এমনকি ফিকহের কিতাবসমূহের কোথাও উক্ত মুনাজাতের কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয়। কেননা দু‘আর মধ্যে সুন্নাত হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।

কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরুতেই বলেন, ‘‘আল্লা-হু ম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষ বাক্য। তাই ‘‘আল্লা-হুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা, আল্লা-হুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু..’’ বলে শেষ করা এটাও সুন্নাতের পরিপন্থী।

এ দু‘আ সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত :

(১) শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) কে ফরয সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদআত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/১২৫৮।] আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ।

(২) শাইখ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদআত। কারণ এরূপ দু‘আ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগেও ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধিতা করে।

ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। ফরয সালাত আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ কী আমল করতেন তা সুস্পষ্ট আছে। চার খলীফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশনা ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৩৩।] কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মু্ক্তাদীগণ হাত তুলে আমীন আমীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথা (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হলে) তা পরিত্যাজ্য। [হায়াতু কিরাবিল ওলামা ১/২৫৭ পৃঃ।]

আমার জানা মতে, ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা- না রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, না সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। ফরয সালাতের পর যারা হাত তুলে দু‘আ করে, তাদের এ কাজ সুস্পষ্ট বিদআত। এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার এ দ্বীনে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৫; ইবনে হিববান, হা/২৭; বায়হাকী, হা/২০১৫৮; দার কুতনী, হা/৪৫৯০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯; মিশকাত, হা/১৪০।]

(৩) শাইখ সালেহ আল উছাইমিন (রহ.) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা এমন বিদআত, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণ থেকেও নেই। মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। [ফাতাওয়া উসাইমিন, পৃঃ১২০।]

(৪) আল্লামা আবদুল হাই (রহ.) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত যে প্রথা, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলে, এ প্রথা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না। [ফতয়ায়ে আবদুল হাই, ১/১০০ পৃঃ।]

(৫) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। [এমাদুদ্দীন, পৃঃ ৩৯৭।]

(৬) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রথা অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটি সহীহ অথবা দুর্বল হাদীসও নেই। [যাদুল মা‘আদ, ১/৬৬ পৃঃ।]

(৭) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায়নি। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করাই উত্তম এবং করা বিদআত। [মাদখাল, ২/৮৩ পৃঃ।]

(৮) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ্ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সালাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। [এস্তেহবাবুদ দাওয়াহ।]

(৯) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না বুঝে আমীন-আমীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩/৫৭৭ পৃঃ।]

তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ হতে এবং মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থার পরিপন্থী। [আহকামুদ দু‘আ, পৃঃ ১৩।]

প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার পক্ষে মতামত দিলেও বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। কারণ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে দু‘আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমগণও করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদআত।

পর্যালোচনা :

যারা ফরয সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা পালন করে যাচ্ছেন তারা সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, এটা সালাতের কোন অংশ নয় এবং এভাবে দু‘আ করা জরুরিও নয় আর তা না করলে সালাতের কোন ক্ষতিও হয় না।

এখন কথা হলো, যে কাজটি জরুরি নয় এবং না করলে কোন ক্ষতি হয় না, সে কাজটিকে আমল বানিয়ে যারা নিয়মিত পালন করেন তারা বড়জোর এটাকে উত্তম বলতে পারেন। কিন্তু যে কাজটির বিপক্ষে বিশ্বমানের অনেক আলেম অবস্থান করেন এবং এটাকে স্পষ্ট বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এমন একটি কাজকে নিয়মিত পালন করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কারণ এটা পালন না করলে কোন গোনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না। কিন্তু যদি এটা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে এ আমলকারীর পরিণতি কত যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু বিদআতির আমল কবুল হয় না এবং পরকালে বিদআতিকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করেনি এমন একটি কাজকে উত্তম আমল মনে করে পালন করার চেয়ে পরিত্যাগ করাই উত্তম।

সম্মানিত ইমাম সাহেবদের প্রতি বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা মুসল্লিদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই মেনে নেবে। কেননা আমরাও এ বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর মুসল্লিদেরকে বুঝিয়েছি এবং এটা ছেড়ে দিয়েছি।

অনেকেই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিরা কী বলবে বা একটা ফিতনা সৃষ্টি হবে- এ ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু এমনটি করা উলামায়ে কেরামদের জন্য ঠিক নয়। কারণ উলামায়ে কেরাম এবং ইমামরা হচ্ছেন জাতির অভিভাবক। তারাই যদি সঠিক জিনিসটি জাতির সামনে তুলে না ধরেন তাহলে এ জাতি কখনোই সঠিক পথ পাবে না এবং এর দায় শুধু মুসল্লিদের নয়, আলেম-উলামাদের উপরেও বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হক বুঝার এবং হকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন