hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

১০২
অর্থনৈতিক অসাম্য
বর্তমান দুনিয়অর সকল দেশ ও সকল সমাজে অর্থনৈতিক অসাম্য বিরাজিত। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে যেমন এই অসাম্য প্রচন্ড রূপ ধারণ করিয়াছে, অনুরূ অসাম্য রহিয়াছে সাম্যবাদী- তথা সমাজতান্ত্রিক সমাজেও। মানুষের কোন সমাজই ইহা হইতে মুক্ত নয়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ সাম্যবাদের মুখরোচক ও চিত্তহারী শ্লোগান তুলিয়া দুনিয়ার একশ্রেণীর শোষিত, ও বুভুক্ষ মানুষকে আলোড়িত ও উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছে। তাহারা অর্থনৈতিক অসাম্যকে অমানুষিক এবং সাম্যকে মানবিক ও স্বাভাবিক ব্যবস্থা বলিয়া প্রমাণ করিতে সচেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, অর্থতিক অসাম্য কি সত্যই অস্বাভাবিক এবং অর্থনৈতিক সাম্যই কি পরম স্বাভাবিক?

বস্তুত দুনিয়ার শুরু হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানব-সমাজে যে অর্থনৈতিক অসাম্য বিরাজিত, প্রকৃত পক্ষে তাহাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সহিত পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। মানুষের পরস্পরের রিযিকের দিক দিয়া এই পার্থক্য আল্লাহ তা’আলারই সৃষ্টি। তিনিই তাঁহার নিজস্ব বিশ্ব-পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এক শ্রেণীর মানুষকে অন্যান্য বিভিন্ন দিক দিয়া কয়েকগুণ বেশী শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য দান করিয়া থাকেন। ইহা এক বাস্তব সত্য। বিশ্ব-প্রকৃতির যে দিকেই দৃষ্টিপাত করা যাইবে, সেদিকেই এই পার্থক্য প্রকট রূপে লক্ষ্য করা যাইবে। এবং একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিবেচনা করিলে ইহার যথার্থতা ও গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করা সম্ভব হইবে।

বর্তমানে যদিও অর্থনৈতিক সাম্যবাদের আওয়াজে আকাশ-বাতাশ মুখরিত, এই এহেন স্বাভাবিক নীতির কথা বলাও যেন অনেকের পক্ষেই এক কঠিন লজ্জাষ্কর ব্যাপার। কিন্তু এই অসাম্যকে যতই অস্বীকার করা হউক না কেন, ইহাই যে সত্য ও স্বাভাবিক তাহাতে কোনই সন্দেহ নাই।

দুনিয়ার ইতিহাস, ভুয়োদর্শন, বিবেক-বুদ্ধি ও বাস্তব পর্যবেক্ষণ- সব-কিছুই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে মানুষের মধ্যে যে অর্থনৈতিক অসমতা হইয়া থাকে তাহা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। এই অসাম্য আল্লাহর বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তিতেই সৃষ্টি হইয়া থাকে। এই কারণে ইতিহাসের কোন পর্যায়েই আল্লাহর আদর্শবাদী বান্দহরা উহাকে আপত্তিকর বলিয়া মনে করেন নাই। উহাকে জোর পূর্বক খতম করিয়া কৃত্রিমভাবে পূর্ণ সমতা সৃষ্টির জন্য যত চেষ্টাই করা হউক না কেন, তাহা কখনও সফরকাম হইতে পারে না। বরং এই ধরনের সকল চেষ্টাই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হইয়া যাইতে বাধ্য। তাই কোন সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির মানুষই স্বাভাবিক অসাম্য দূর করিয়া পরিপূর্ণ সাম্য সৃস্টির জন্য চেষ্টিত হইতে পারে না। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক সাম্যকে অস্বাভাবিক উপায়ে খতম করিয়া কৃত্রিমভাবে অসাম্য সৃষ্টি করাও কখনই বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না। এক কথায় স্বাভাবিক সাম্য কৃত্রিম উপায়ে অসাশ্যে পরিণত করা এবং স্বাভাবিক অসাম্যকে কৃত্রিম উপায়ে ও জোর জবরদস্তির দ্বারা সাম্যে পরিণত করা মানব সভ্যতার পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক। এই অকাট্য প্রমাণ ছাড়াও এই পর্যায়ে অপর এক অনস্বীকার্য দলীল হইতেছে দুনিয়ার একমাত্র সত্য-গ্রন্থ কুরআনমজীদ। কুরআনেরকতিপয় আয়াতে ইঙ্গিতে ও স্পষ্ট ভাষায় বলা হইয়াছে যে, মানুষের পরস্পরের মধ্যে রিযকের দিক দিয়া যে পার্থক্য হইয়া থাকে, তাহা আল্লাহরই সৃষ্টি। এখানে কয়েকটি আয়াতে উদ্ধৃত করা যাইতেছে।

সূরা আন-আমের আয়াতে বলা হইয়াছে:

(আরবী)

সেই মহান আল্লাহ, যিনি তোমাদিগকে পৃথিবীতে খলীফা বানাইয়াছেন এবং তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের তুলনায় উচ্চ মর্যাদায় তুলিয়াদিয়াছেন যেন তিনি তোমাদিগকে যাহা কিছুদিয়াছেন তাহাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করিতে পারেন।

এই আয়অতে প্রথমতঃ বলা হইয়াছে, মানুষ এই দুনিয়ায় আল্লাহর প্রতিনিধি এবং তাঁহার খলীফা দ্বিতীয়তঃ বলা হইয়াছে, আল্লাহর এই প্রতিনিধিদের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়া পার্থক্র ও অসাম্য রহিয়াছে। মানুষের পরস্পরে বহুবিধ বিষয়ে পার্থক্য থাকা সম্পর্কে এই আয়াত অকাট্য, স্পষ্টভাষী। বিবেক-বুদ্ধি-প্রতিভা, রাজনৈতিক জ্ঞান –বিবেচনা, দূলদৃষ্টি প্রভৃতির দিক দিয়া মানুষের পরস্পরে অনেক পার্থক্র বিদ্যমান। কর্মক্ষমতা, যোগ্যতা ও কর্ম-কুশলতার দিক দিয়াও তাহাদের মধ্যে জন্মগতভাবেই পার্থক্য সুস্পষ্ট। আর এই কারণেই মানুষের উপার্জন পরিমাণে ও উপার্জিত সম্পদ সংরক্ষণেও পার্থক্য হওয়া অতি স্বাভাবিক। এই পার্থক্য আল্লাতহর সৃষ্টি-নীতিরই পরিণাম। অর্থনৈতিক দিক দিয়া মানুষের মধ্যে পার্থক্য হওয়ার কারণও ইহাতে বিধৃত রহিয়াছে। বস্তুতঃ বুদ্ধি, বিবেচনা, কর্মকুশলতার দিক দিয়া পার্থক্য হওয়াই অর্থনৈতিক পার্থক্যের ভিত্তি।

তৃতীয়তঃ বলা হইয়াছে,মানুষকে যাহাকিছু দেওয়া হইয়াছে তাহা সবই দেওয়া হইয়াছে শুধু পরীক্ষার উদ্দেশ্র।

সূরা নহল-এ বলা হইয়াছে: (আরবী)

আল্লাহ তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের তুলনায় রিযিকের দিক দিয়া প্রাধান্য ও আধিক্য দান করিয়াছেন।

পূর্বোক্ত সূরায় মানুষের পরস্পরের সমষ্টিগত অসাম্যের মাঝে অর্থনৈতিক অসমতার দিকেও ইঙ্গিত করা হইয়াছে। কিন্তু সূরা নাহলে এ আয়াতটিতে এক কথাটিকে স্বতন্ত্রভাবে স্পষ্ট করিয়া বলা হইয়াছে। ইহা হইতে নিঃসন্দেহে জানা গেল যে, জীবন-জীবিকায় মানুষের পরস্পরে যে পার্থক্য হয়, তাহা মূলগতভাবেই আল্লাহরসৃষ্টি। আল্লাহর বিশ্ব-পরিকল্পনারই একটি অপরিহার্য অংশ।

সূরা জুখরুফে বলা হইয়াছে:

(আরবী)

দুনিয়ার জীবনে আমরা তাহাদের মধ্য জীবিকার উপায়-উপকরণ বন্টন করিয়া দিয়াছি। এই বন্টনে আমরা তাহাদের পরস্পরের উপর কয়েকটি মাত্রায় প্রধান্য ও আধিক্য দান করিয়াছি, যেন তাহাদের কেহ অপর লোকদের দ্বারা কাজ করাইতে পারে।

জীবন-জীবিকা, রুজি-রোজগার ও জীবন যাপনের উপায়-উপকরণের দিক দিয়া মানুষের পরস্পরে যে পার্থক্য রহিয়াছে, এই বিষয়ে এই আয়াতটি অধিকতর সোচ্চার। এই পার্থক্য স্বয়ং আল্লাহরই সৃস্টি, মানুষের ইচ্ছাধীন নয়। এই আয়াতের শেষ বাক্যাংশে মানুষকে বিনা পারিশ্রমিকে খাটাইবার কাহারো অধিকার নাই বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। বরং মানুষ মাজ সম্পর্কে আল্লাহর পরিকল্পনার দিকে ইহাতে ইঙ্গিত করা হইয়াছে এবদ্দ অর্থনৈতিক দিক দিয়া যে পার্থক্য রহিয়অছে উহার মুল কারণ বুঝাইতে চাওয়া হইয়াছে। বস্তুত হাতের পাঁচটি আংগুলের আকার আকৃতি ও স্থাপনে যে জন্মগত পার্থক্য তাহা হাতের কার্য সম্পাদনে অত্যন্ত জরুরী। সেই আংগুলিগুলি কাটিয়া সমান-আকা করিয়া দিলে আংগুলির উদ্দেশ্যই ব্যাহত হইবে। অনুরূপভাবে দুই খর্হৃ দুই চোখের আকার ও আকৃতির যে সমতা তাহা নষ্ট করিয়া দিলে কান ও চোখের শোনা ও দেখার কাজই করিতে ব্যর্থ হইবে।

‘পরস্পরের দ্বারা কাজ করাইবে’ এ কথার অর্থ সামাজিক জীবনে মানুষ হইবে মানুষের প্রতি মুখাপেক্ষী, পরস্পর নির্ভরশীল- পারিবারিক রাজনৈতিক দিক দিয়াও যেমন, অর্থণৈতিক দিক দিয়াও তেমনি। এবং ইহার কারণে তাহাদের মধ্যে পারস্পরিক নিবিড় সমঝোতা, সম্পর্ক এবং ব্যাপক সহযোগিতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা গড়িয়া উঠিবে। আর ইহার ফলেই দুনিয়ায় রচিত হইবে মানুষের সমাজ, সভ্যতা, বৈষয়িক উন্নতি ও উৎকর্ষতা। মানুষ মানুষের সহিত গভীর ও নিবিড়ভাবে মিলিত হইয়া দুনিয়ার জীবনকে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, তৃপ্তি ও স্বার্থকতায় ভরিয়া তুলিবে, মানুষ হইবে মানুষের সহযোগী। 

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন