hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৫৪
মজুর ও মালিকের সাম্য
ইসলামী অর্থনীতি শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে ভ্রাতৃ-সম্পর্ক স্থাপন করিয়া তাহাদের মধ্যে পরিপূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে্ পূর্বোল্লিখিত মূল নীতির ভিত্তিতে যে সমাজ গঠিত হইয়াছিল, তাহাতে এই সাম্য পুরাপুর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। সেই সমাজের আমীরুল মুমিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধান এবং দেশের জনগণের সাধারণ জীবন ধারায় জীবনযাত্রার মানে বিশেষ কোন পার্থক্র ছিল না।

উতবা ইবনে ফরকাদ্‌ আজার বাইজান (বর্তমান রুশীয় তুর্কীস্থানে অন্তর্ভুক্ত) জয় করিয়া তথা হইতে উত্তম মিষ্টদ্রব্য আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা)-এর জন্য পাঠাইয়াছিলেন। তিনি উহার স্বাদ গ্রহণ করিয়া বিশেষ প্রীত হইলেন। এই মিষ্টদ্রব্য সকল মুহাজিরও খাইয়া পরিতৃপ্ত হইয়াছে কিনা তাহা জানিতে চাহিলে তিনি জানিতে পারিলেন যে, ইহা কেবল আমীরুল মুমিনীনের জন্যই প্রেরণ করা হইয়াছে, অন্য কাহাকেও ইহা দেওয়া হয় নাই। এই কথা শুনিয়া খলীফা উমর (রা) উতবাকে লিখিয়া পাঠাইলেন: ‘এই মিষ্টিদ্রব্য তোমার নিজের শ্রম ও মেহনতের ফল নয়, তোমার মা-বাবার চেষ্টাও ইহাও তৈরী হয় নাই। যে বস্তু সর্বসাধারণ মুসলমান খাইতে পায় না, আমরা তাহা কিছুতেই আহার করিতে পারি না।

পরবর্তীকালে এই উতবাকে কোন এক দেশের শাসনকর্তা থাকাকালে হযরত উমর (রা) কে অতি সাধারণ খাদ্য আহার করিতে দেখিয়া বিস্ময় করিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন: আমিরুল মুমিনীন কি ময়দা নামক কোন বস্তু খাদ্য- হিসাবে গ্রহণ করেন না? খলীফা বলিলেন- ‘আমার অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এখানে কেহ নাই; কিন্তু জিজ্ঞাসা করি ময়দা কি সব মুসলমানই খাইতে পায়?’

হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতকালে একবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় জনসাধারণ প্রয়োজন পরিমাণ গোশত পাইত না বলিয়া খলীফাও গোশ্‌ত খাওয়া বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন এবং ঘৃতের বদলে তৈল ব্যবহার করিতে শুরু করিয়াছিলেন। ইহাতে খলীফার চেহারা বিবর্ণ হইয়া গিয়াছিল।

ইরানের যুদ্ধে সেনাপতি হযরত আবূ উবায়দা বিন জররাহ্‌ (রা) ইরানীদের জাকজমকপূর্ণ নিমন্ত্রণ শুধু এই জন্যই প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন যে, তাঁহাকে সাধারণ সৈনিকদের অনুরূপ ভোজ দেওয়া হয় নাই। তিনি বলিয়াছিলেন: আল্লাহর শপথ, আল্লাহর দেওয়া দ্রব্য-সামগ্রী হইতে আবূ উবায়দা কেবল সেই জিনিসই আহার করিতে পারে, সাহা সর্বসাধরণ মুসলমান খাইতে পায়।

উল্লেখযোগ্য যে, হযরত উমর (রা) দুর্ভিক্ষের সময় রেশন-ব্যবস্থা প্রবর্তন করিয়াছিলেন। কিন্তু খাদ্য-বরাদ্দ করার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হইয়াছিল। তাহাতে প্রত্যেকেই প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করিতে পারিত। সেখানে কাহাকেও কালোবাজারী করিতে হইত না, গরীবদের শোষণ করিয়া ধন লুটিতে হইত না। আর ভুয়া ও অতিরিক্ত রেশন কার্ডও রাখিতে হইত না।

ইসলামী সমাজের লোকদের মধ্যে এইরূপ সাম্য কেবল খাদ্যের ব্যাপারই কার‌্যকর ছিল না, পোশাক-পরিচ্ছদের দিক দিয়াও তথায় পূর্ণ সমতা রক্ষা করা হইত। এইজন্যই সেখানে কে মজুর আর কে মালিক, তাহার বিশেষ কোন বাহ্যিক প্রমাণ পাওয়া যাইত না। ইহা শ্রেণী-পার্থক্যের মূল কারণকে চূর্ণ করিয়াছে, কাজেই তথায় কোন দিনই শ্রেণী-সংগাম দেখা দেয় নাই।

শ্রমিক ও মজুরগণ মজুরী উপার্জন করিবার উদ্দেশ্যেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করিয়া থাকে। কারণ তাহাদের পরিবারবর্গের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করিবার জন্য এই মজুরীই হইতেছে তাহাদের একমাত্র উপায়। কিন্তু পরিশ্রম করিয়অও যদি মজুরী না পায়,ম যদি প্রয়োজন অপেক্ষা কম পায়, কিংবা নির্দিষ্ট সময়-মত প্রাপ্য না পায়, তবে মজুরের দুঃখের অবদি থাকে না। দুঃখ এবং হতাশায় তাহাদের হৃদয়-মন পূর্ণ ও ভারাক্রান্ত হইয়া পড়ে। তাহাদের অপরিহার্য প্রয়োজন পূর্ণ না হইলে জীবন ও সমাজের প্রতি তাহাদের মন বীতশ্রদ্ধা ও বিতৃষ্ণার ভাব সৃষ্টি হওয়া এবং নিজেদের জীবন সম্পর্কে নৈরাশ্য জাগিয়া ওঠা স্বাভাবিক। ইসলামী অর্থব্রবস্থা এই ধরনের সকল সমস্যার নির্দিষ্ট ও স্থায়ী সমাধান করিয়া দিয়াছে। নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগ উত্থপন করিবেন, তন্মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হইতেছে :

(আরবী)

একজনকে মজুর হিসাবে খাটাইয়অ ও তাহার দ্বারা পূর্ণ কাজ আদায় করিয়াও যে লোক তাহার পারিশ্রমিক আদায় করে নাই…

অপর একটি হাদীস হইতে জাা যায়, নবী করীম (ﷺ) নিজেও এই তিন জনের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী হইয়া দাড়াইবেন। (ইবনে মাজাহ)

এ সম্পর্কে কেবল পরকালীন শাস্তির ভয় দেখাইয়াই ক্ষান্ত করা হয় নাই। বরং কাজ সম্পন্ন হওয়া বা নির্দিষ্ট সময় উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মজুরের মজুরী আদায় করার জন্য স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ইসলামী রাষ্ট্র এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করিবার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকিবে। নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

মজুরের মজুরী তাহার গায়েল ঘাম শুষ্ক হইবার পূর্বেই আদায় কর।

অপর হাদীসের শেষ অংশ এইরূপ: (আরবী)

শ্রমিকের কাজ বা কাজের মেয়াদ শেষ হইলেই তাহার মজুরী পুরাপুরি আদায় করিয়া দিতে হইবে।

ইমাম শাওকানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেন:

(আরবী)

এই হাদীসে এ কথার দলীল রহিয়াছে যে, মজুরী পাওয়ার অধিকার জন্মে কাজ করা। সম্পন্ন হইয়অ গেলে এবং মালিকানা নির্দিষ্ট হয় সরকারী বিলি-বন্টনের সাহায্যে।

শ্রমিক ও (কারখানা) মালিকদের মধ্যে দৈনন্দিন যেসব ঝগড়া-বিবাধ হইয়া থঅকে, তাহার শতকরা ৭৫ ভাগ হয় মজুরী লইয়া। এই জন্যই ইসলামী অর্থনীতিতে মজুরকে কাজে নিযুক্ত করার পূর্বেই তাহার মজুরী নির্ধারিত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, শ্রমিক-মজুরের মজুরী দানের ব্যাপারে নবী করীম (ﷺ)-এর নীতি ছিল স্পষ্ট। হাদীসে বলা হইয়াছে।

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) মজুর-শ্রমিকের মজুরী দানের ব্যাপারে কোনরূপ জুলুম করিতেন না, জুলূমের প্রশ্রয় দিতেন না।

(আরবী)

মজুরের মজুরী নির্ধারণ না করিয়া তাহাকে কাজে নিযুক্ত করিতে নবী করীম (ﷺ) স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করিয়াছেন।

অপর এক হাদীসে বলা হইয়াছে: (আরবী)

তুমি যখন কোন মজুর নিয়োগ করিবে তখন তাহাকে মজুরী কত হইবে অবশ্যই জানাইয়া দিবে।

বস্তুত এই সব মূলনীতির ভিত্তিতে আজিকার শ্রমিক-মালিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যাইতে পারে। উভয়ের মধ্যে মধঘুর ও সুবিচারপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন