hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৪০
ব্যবহারিক হিসাবে মালিকানা লাভের উপায়
প্রাকৃতিক সম্পদের সহিত যখনই মানুষের পরিশ্রমের যোগ হয়, ইসলামী অর্থনীতে তখনই হয় ব্যক্তি মালিকানা অধিকারের সূচনা। স্বভাব জাত কোন উপাদানকে যদি কেহ নিজের পরিশ্রমের সাহায্যে ব্যবহারোপযোগী করিয়া তোলে- কেহ যতি কোন কাঁচা মালকে নিজের শ্রমের বদৌলতে শিল্পপণ্যে পরিণত করে, তবে সে উহার মালিক হইবে। সে উহাকে নিজের দখলে অধিকার রাখিয়া তাহা ভোগ ও ব্যবহার করিতে পারিবে, উহাকে দান করিতে ও বিক্রয় করিতে পারিবে, উহার সাহায্যে আরও অধিক অর্থ উপার্জন ও উৎপাদন করিতে পারিবে। ইসলামের নির্দিষ্ট সীমা ও আইনের মধ্যে থাকিয়া এই অধিকারসমূহ সে ভোগ করিতে পারিবে। বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ ও সম্পত্তির উপর মানুষের খিলাফত অধিকারের আওতার মধ্যে ইহাই মালিকানা অধিকার। ইহার অধিক অন্য কোন প্রকারের মানবীয় মালিকানা ইসলামে স্বীকৃত নয়। মালিকানার বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে ইন্‌সাইক্লোপিডিয়া বৃটানিকার ভাষ্য হেইল:

Common Property and common enjoyment of it, common prorerty and private enjoyment, private property and private enjoyment.

‘সমষ্টিগত মালিকানা এবং ইহার সমষ্টিগত ভোগ ও ব্যবহার; সমষ্টিগত মালিকানা ও ব্যক্তিগত ভোগ-ব্যবহার; আর ব্যক্তিগত মালিকানা ও ব্যক্তিগত ভোগাধিকার’। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে মালিকানার এই সবকয়টি পন্থাই ত্রুটিপূর্ণ ও মারাত্মক। ইহার শেষেরটি বর্তমানেরপুঁজিবাদ, দ্বিতীয়টি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং প্রথমটির কোন বাস্তব রূপ কোথাও আছে কিনা জানা নাই। তবে ইসলামের নীতির সহিত ইহার কিছুটা সাদৃশ্য আছে বলিয়া মনে করা যায়। কেননা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পদের ক্ষেত্রে সকলেই উহার খলীফ। তবে ভোগ-ব্যবহারের ব্যক্তিগত অধিকার সকলের জন্যই স্বীকৃত। ব্যক্তির নিকট রক্ষিত সম্পদে যেমন সকলেই অধিকার, তেমনি সমষ্টির নিকট রক্ষিত সম্পদেও ব্যক্তির অধিকার স্বীকৃত। তবে তাহা ব্যক্তি ও সমষ্টির অনুমতিক্রমেই লাভ করা সম্ভব। ইসলামের এই মালিকানা-দর্শনের বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট। মালিকানা সম্পর্কে ইসামের এই আদর্শের দরুন-ই স্ত্রী-পুরুষ সকলকেই উপার্জনের ও উপার্জিত সম্পদের মালিকানা হওয়ার অধিকার দেওয়া হইয়াছে, যদিও উহা সমষ্টির নিকট হইতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ীই পাইতে হয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেন:

(আরবী)

পুরুষগণ যাহা উপার্জন করে তাহা তাহাদের মালিকানা এবং স্ত্রী-লোকেরা যাহা উপার্জন করে তাহার মালিক তাহারাই।

নদীর পানি প্রাকৃতিক অবদান, ইহা সকল মানুষের জন্য সমান অধিকারের বস্তু; কিন্তু সেই পানি যদি কেহ মশকে ভরিয়া বাজারে বা ঘরে ঘরে বিক্রয়ার্থে লইয়া যয়, তবে সে উহার মালিক বলিয়া বিবেচিত হইবে। এই পানি বিক্রয় করার- ইহা বিনিময়ে মূল্য আদায় করার- তাহা পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। কারণ, সে উহাতে নিজের শ্রম যোগ করিয়অ উহাকে ব্যবহারোযোগী করিয়া তুলিয়াছে, মানুষের পরিশ্রমের সংযোগই হইয়অছে উহার ব্যবহারিক মূল্য Use Value । ঠিক এই জন্যই পড়ো ও অনাবাদী জমিকে যে ব্যক্তি নিজ শ্রমের দ্বারা উর্বর, আবার ও শস্যোৎপাদনের উপযোগী করিয়া তুলিবে, ইতিপূর্বে সে জমির কেহ মালিক না থাকিলে সেই ব্যক্তিই ইহার মালিক হইবে। নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করিয়াছেন:

পড়ো জমি- যাহার কেহ মালিক নাই, আল্লাহ এবং তাঁহার রাসুলই উহার মালিক। অতঃপর তাহা সকল মানুষেরই সমানাধিকারে বস্তু। কিন্তু উহার ভোগ ও ব্যবহারাধিকার সেই ব্যক্তিই লাভ করিতে পারিবে যে উহা আবাদ করিবে- চাষোপযোগী ও শস্যোৎপাদক করিয়া তুলিবে।

অপর একটি হাদীসে নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

যদি কেহ এমন কোন ‘পানি’র নিকট পৌছায় যেখানে ইতিপূর্বে আর কেহই পৌঁছায় নাই, তবে উক্ত ‘পানি’র উপরই তাহারই মালিকানা স্থাপিত হইবে।

এখানে পানি অর্থ কূপ ও জলাশয় সমন্বিত জমি-ক্ষেত। কারণ শুধু পানির উপর কাহারোই ব্যক্তিগত মালিকানা স্থাপিত হইতে পারে না।

কিন্তু বিশেষভাবে মনে রাখিতে হইবে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে মালিকানা লাভ করার জন্য শ্রমই একমাত্র উপায় নয়। ‘মানুষ পরিশ্রম করিয়া যাহা উপার্জন করিবে একমাত্র উহার উপর তাহার মালিকানা স্বত্ব স্বীকৃত হইবে, এতদ্ব্যতীত মালিকানা লাভ করার আর কোনই উপায় নাই’ ইসলামী অর্থনীতিতে এই কথাটি মোটেই সত্য নয়। Labour can make value – ‘একমাত্র শ্রমই মূল্যউৎপাদন করিতে পারে’ –কথাটি কার্ল মার্কসের। আর এই কথাটি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অবাস্তব, তাহা বহু পূর্বেই প্রমাণিত হইয়াছে। কারণ এই কথাটি সত্য হইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের যাবতীয় প্রয়োজন একমাত্র নিজের শ্রম দ্বারাই পূর্ণ করিতে হয়’ কিন্তু মানব সমাজের ঐতিহাসিক যুগে ইহা কোনদিনই সম্ভবপর ছিল না, আর কোনদিন তাহা সম্ভবপর হইতেও পারে না। মানুষ সামাজিক জীবন যাপন করিতে বাধ্য হয় এই জন্য যে, তাহার কোন প্রয়োজেই সে একাকী পূর্ণ করিতে সক্ষম হয় না। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কার্ল মার্কসের এই উক্তির অবৈজ্ঞানিকতা সুস্পষ্ট। আর ইসলাম এই মত কিছুতেই স্বীকার করিতে পারে না। কারণ, তাহাকে ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময়, দান-উপহার-উপঢৌকন, ভাড়া দেওয়া ও নেওয়া, মূলধন ও মুনাফার অংশীদারিত্বে ব্যবসায়, মীরাস বন্টন ও অসীয়ত প্রভৃতি মানব সকামের হাজার হাজার কাজ একেবারে হারাম হইয়া পড়ে, অথচ ইসলাম এই সকল কাজকে সম্পূল্ণ সঙ্গত বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে। কাজেই ‘শ্রম’ ইসলামী অর্থনীতে মালিকানা লাবের একমাত্র সূত্র নয়। ইসলামী অর্থনীতে ব্যক্তিগত মালিকানা লাভের সঙ্গত উপায় মোটামুটিভাবে সাতটি:

১. প্রথম দখল: প্রাকৃতির উপায়-উপাদানের মধ্যে যে যে দ্রব্য ও উপাদানের উপর এখনো কাহারো মালিকানা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নাই, তাহা সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি দখল করিয়া লইবে উহার উপর তাহারই মালিকানা স্বীকৃত হইবে। অবশ্য এই মালিকানা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত হইতে হইবে। বস্তুত মালিকবিহীন জমি বন্টনের অধিকার সরকারেরই রহিয়াছে। ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ বলিয়াছেন:

(আরবী)

পড়ো জমি কিংবা যাহা কাহারো মালিকানাধীন নয়, যাহার উপর কাহারোই দখল নাই সেই জমি লোকদের মধ্যে বন্টন করার একমাত্র অধিকার রাষ্ট্রপ্রধানের (অর্থাৎ সরকারের)

২. আবিষ্কার-উদ্ভাবন: মানসিক শক্তি ও প্রতিভার সাহায্যে কোন জিনিস আবিষ্কার করা, কোন যন্ত্র প্রস্তুত করা- তাহা কোন আকস্মিক ঘটনার মধ্য দিয়া হইলেও- ব্যক্তিগত মালিকানা লাভের দ্বিতীয় উপায়। এই উপায়ে উদ্ভাবিত সকল জিনিসই উহার মালিক। উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে সে উহা বিক্রয় করিতে ও হস্তান্তর করিতে পারিবে।

৩. ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারের অনুসৃত বন্টনরীতি অনুযায়ী অংশ লাভ” সরকার কর্তৃক কাহাকেও কোন সম্পত্তি দান। ইসলামের দৃষ্টিতে মালিকানা লাভের ইহাও একটি উপায়। ইহা শুধু একটি উপায়ই নয়। ইহা অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তবে শর্ত এই যে, ঠিক যে উদ্দেশ্যে তাহা দেওয়া হইবে তাহা তাহাতেই প্রয়োগ করিতে হইবে।

৪. শ্রম: ব্যক্তির পরিশ্রমও মালিকানা লাভের একটি উপায়। অতএব মানুষ পরিশ্রম করিয়া এমন সব কাচামাল দ্বারা কোন জিনিস প্রস্তুত করিলে- যাহার উপর ইতিপূর্বে কাহারো ব্যক্তিগত মালিকান স্থাপিত হয় নাই- মেহনতী ব্যক্তি উহার মালিক হইবে। এই কারণে শ্রম ও (Labour) মানুষের ক্রয় ও বিক্রয় যোগ্য একটি সম্পদ। তাই পরিশ্রমলব্ধ অর্থ বা সম্পদের উপর ব্যক্তির মালিকানা স্বীকৃত হইবে। নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করিয়াছেন:

(আরবী)

ব্যক্তির নিজের কাজের ফলে উপার্জিত হয় তাহা তাহার অতীব উত্তম ও পবিত্রতম উপার্জন।[সাধারণ ফিকহ্‌বিদদের মতে পড়ো ও মালিকবিহীন জমি যে লোকই দখল করিয়া আবাদ করিবে, রাষ্ট্র-সরকার অনুমতি দান করুক না-ই করুক, সে উহার মালিক হইবে। অবশ্য ইমাম আবূ হানীফার মতে সরকারের অনুমতি অবশ্যই পাইতে হইবে। অন্যথায় কাহারো মালিকানা স্বীকৃত হইবে না। তিনি ইহার দলীলরূপে এই হাদীসটির উল্লেখ করিয়াছেন:

(আরবী) যে লোক কোন পড়ো জমি আবাদ করিবে সে উহার মালিক হইবে- যদি রাষ্ট্র উহার অনুমতি দেয়।]

অপর হাদিসে বলা হইয়াছে: (আরবী)

যে লোক কোন জমি আবাদ করিবে, তাহা কাহারও মালিকানা নয়, তাহা পাইবার বেশী অধিকার তাহার।

৫. উত্তরাধিকার নীতি: উত্তরাধিকার সূত্রে এক এক ব্যক্তি যে সম্পদ ও সম্পত্তি লাভ করে, তাহার উপর সেই ব্যক্তির মালিকানা স্বীকৃত হইবে। শ্রম-মেহনতই যে মালিকানা লাভের একমাত্র উপায় নয়- ইসলামের এই উত্তরাধিকার নীতিই উহার অকাট্য প্রমাণ।

৬. ক্রয় বা বিনিময়: উপযুক্ত মূল্য দিয়া কোন কিছু ক্রয় করা এবং দুইটি পণ্যের পারস্পরিক বিনিময় করাও- এক কথায় ব্যবসায়-বাণিজ্য করাও মালিকানা লাভের সঙ্গত উপায়। ইসলামী ফিকাহ ইহার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা হইয়াছে:

(আরবী)

কোন বস্তুকে জীবিতাবস্থায় কোন কিছুর বিনিময়ে অপরের মালিকানায় হস্তান্তরিত করকেই ক্রয়-বিক্রয় বলে।

৭. উপহার-উপঢৌকন : ইসলামী সমাজে পরস্পরের মধ্যে অর্থ ও উপহার উপঢৌকনের আদান-প্রদান এবং ভালবাসার উপহারও মালিকানা লাভের অন্যতম উপায়। নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

তোমরা পরস্পর উপহার-উপঢৌকনের আদান-প্রদান কর। ইহার ফলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা দৃঢ় ও স্থায়ী হইবে।

ফিকাহর পরিভাষায় এই ধরনের দান ও উপঢৌকনকে বলা হয় ‘হেবা’। যাহার জন্য ‘হেবা’ করা হইবে সে উহার মালিক হইবে।

অসীয়ত সূত্রে পাওয়া সম্পদ ও সম্পত্তিতেও ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত এবং মালিকানা লাভের ইহাও একটি উপায়। কেননা ‘অসীয়ত’ বলা হয় অন্য লোককে কোন কিছুর মালিক বানাইয়া দেওয়াকে। কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী মালিক তাহার মোট সম্পদ ও সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পর্কে অসীয়ত করিতে পারে। কাজেই যাহার জন্য অসীয়ত করা হইবে সে উহার মালিক হএব। ফিকাহ্‌র কিতাবের অসীয়তের সংজ্হা বলা হইয়াছে:

(আরবী)

মালিকৈর মৃত্যুর পর তাহার নিজের কোন সম্পদ বা সম্পত্তিকে অপর কাহাকেও দিয়া দেওয়ার কথা মৃত্যুর পূর্বে বলিয়া ও সেই হিসাবে তাহাকে মালিক বানাইয়া দেওয়াই অসীয়ত। ইহার ফলে মূল সম্পদ ও সম্পত্তি এবং উহার মুনাফা সবকিছুর-ই মালিক হইবে সে, যাহাকে উহার মালিক বানাইয়া দেওয়া হইয়াছে।

অতএব এইসব উপয়ে এক ব্যক্তি যে যে জিনিস লাভ করিবে, তাহা সবই তাহার সঙ্গত মালিকানাভুক্ত হইবে।

(আরবী)

হেবা যাহার জন্য করা হিইবে হেবার জিনিসের উপর তাহার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হইবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন