মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
পুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যে অর্থব্যবস্থা মানবসমাজে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে, তাহা কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র। পুঁজিবাদি সমাজর মজলুম শোষিত মানুষকে বুঝ দেওয়া হইয়াছে যে, ব্যক্তিমালিাকানাই সকল প্রকার বিপর্যয়ের মূল কারণ। ইহার উচ্ছেদেই সকল অশান্তি ও শোষণ নির্যাতনের চির অবসান ঘটিবে। এইজন্য কমিউনিজমের অর্থনীতিতে প্রথম পদক্ষেপেই ব্যক্তিগিতমালিকানা অধিকার অস্বীকার করা হইয়াছে এবং অর্থ উৎপাদনের সমস্ত উপায়-উপাদান ও যন্ত্রপাতি Means and Instruments of Production জাতীয় মালিকানা বলিয়া নির্দিষ্ট করা হইয়াছে।[বলা বাহুল্য, কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পরিবাষা ছাড়া মূল উদ্দেশ্যের দিক দিযা কোনই পার্থক্য নেই।] ফলে কমিউনিস্ট সমাজে জাতীয় অর্তোৎপাদনের উপায়-উপাদানের উপর রাষ্ট্রপচিারক মুষ্টিমেয় শাসক-গোষ্টির নিরংকুল কর্তৃত্ব স্থাপিত হইয়াছে। তাহারা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিশেষপ্লান-প্রোগ্রাম ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সকধল উপায় উপাদান ব্যবহার করিয়া থাকে। তাহাদের নির্ধারিত নীতি অবনত সম্তকে মানিয়া লইতে একান্তভাবে বাধ্য হয় সে সমাজের কোটি কোটি মানুষ।
কমিউনিস্ট অর্থব্যবস্থা বাস্তাবায়িত করার জন্য গোড়াতেই রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পথ অবলম্বনকরা অপরিহার্য এবং ইহাকে স্থায়ী ও চালু রাখা এক সর্বাত্মক ডিক্টেটরী শাসনে উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। আর বস্তুতই এই দুইটি উপায় কমিউনিস্ট অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্যও বটে।
১৯৭১ সনে রাশিয়ার এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্য দিয়া এই অর্থব্যবস্থা স্থাপিত হইয়াছে। কিন্তু এহা এই সময়ের মধ্যেই যে তিক্ত ফল দুনিয়া সম্মুখে পেশ করিয়াছে, তাহা সকল দিক দিয়াই ভয়াবহ। একদিকে তাহা মানুষের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করিয়াছে, অপরদিকে সাধারণ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখ সুবিধার গাল-ভরা দাবি পুঁজিবাদীকে দেশের মতই অপূর্ণ ও অবাস্তব হইয়া রহিয়াছে। স্বয়ং রাশিয়ার সরকারী সূত্র হইতে জানা যায়, সে দেশেজনগণের আয়ের হারে পাঁচশত ও তিন লক্ষের পার্থক্য বিদ্যমান। [soviet Income Tax Shedule soviet ও Economic Sustem গ্রন্থ দ্রঃ] অনুরূপভাবে একথাও আজ প্রমাণিত হইয়াছে যে, সোভিয়েত রাশিয়ার বর্তমানেও অসংখ্র অন্নবস্ত্রহীন মানুষ বাস করে। রাশিয়ার ভিক্ষুকদের বিপুলতা দেখিয়া তথাকার এক যুব প্রতিষ্টান সম্প্রতি তীব্র প্রতিবাদের আওযাজ তোলে এবং অবিলম্বে উহার প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি করে। এ দেশের যে সকল প্রতিনিধি রাশিয়া ভ্রমণ করিয়া আসিয়াছেন, তাহাদের বিবৃতি ও রটনাবলী হইতে প্রমাণিত হয় যে, কমিউনিজমের যাবতীয ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হইয়াছে এবং যে অলৌকিক ভূস্বর্গ রচনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছিল, যে রঙীন ও চিত্তাকর্ষক চিত্র দ্বারা জন মানুষের লোভাতুর করিয়া এক রক্তক্ষীয় সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা হইয়াছিল মূলত তাহা সবই আকাশ কুসুমে পরিণত হইয়াছে। বাস্তব দুনিয়ায় উহার কোন অস্তিত্বই খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। উপরন্তু কমিউনিজম ও পুঁজিবাদ- উভয়িই খোদাহীনতা ও ধর্মহীনতা (Secularism) গর্ভ হইতে উদ্ভূত বলিয়া উভয় সমাজের মানুষই মনুষ্যত্বের মহান গুণ-গরিমা হইতে বঞ্চিত হইয়াছে, উহা মানুষকে নিতান্ত পশুর স্তরে নামাইয়া দিয়াছে।মানুষ আকৃতি বিশিষ্ট এই ‘পশু’গণ তাই আজ পরস্পরের সহিত শ্রেণী-সংগ্রামে লিপ্ত হইয়াছে। বর্তমান সমযের দুইটি বৃহত সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়া ও চীনের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ঝগড়া বিবাদ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিগ্রহ সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের অন্তঃসারশূন্যতা বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছে। বস্তুত সমাজতান্ত্রিক দেশ মানুষের বাসোপযোগী নহে। সমাজতান্ত্রিকতার নামে সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতা চিরতরে হরণকরিয়া লওয়াহইয়াছে। ব্যক্তির কোনই মূল্য সেখানে স্বীকৃত নয়। সমাজস্বার্থকে সেখানে সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক রূপে দেওয়া হইয়াছে। ব্যক্তিকে সমাজ ও সমষ্টিস্বার্থের বেদীমূলে বলিদান করা হইয়াছে। বস্তুত কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থার মানুষ সামষ্টিক যন্ত্রের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তাহার নিজের প্রকৃতি বা প্রয়োজন অনুসারে কোন কাজ করার বিন্দু মাত্র অধিকার তাহার নাই।
উপরে বলিয়াছি, কমিউনিস্ট সমাজ ও উহার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, কোন সর্বগ্রাসী ও কঠোর ডিক্টেটরী শাসন-ব্যবস্থার নিরঙ্কুষ কর্তৃত্ব ব্যতীত মাত্রই স্থাপিত হইতে এবং কিছু সময়ের জন্যও তাহাচরিতে পারে না। লেনিন ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ গ্রন্থে লিখিয়াছেন, ‘পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা উৎখাত করিয়াকমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখল করাএক কঠিন ও ধ্বংসাত্মক বিপ্লব ব্যতীত মাত্রই সম্ভব নয়”। কমিউনিজমের তৃতীয পিতা’স্ট্যালিন-ও ইহারই প্রতিধ্বনি করিয়া বলিয়াছেন:
“এক কঠিন ও কঠোর সর্বাত্মক বিপ্লব ব্যতীত বুর্জোয়া সমাজে কোনরূপ মৌলিক পরিবর্তন সৃষ্টি করা কি সম্ভব?….. প্রোলেটারিযানদের ডিক্টেটরী শাসন-কর্তৃত্ব ব্যতী?….. নিশ্চয় নয়। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সীমার মধ্যে থাকিয়া শান্তিপূর্ণভাবে এইরূপ কোন বিপ্লব-সৃষ্টি সম্ভব বলিয়া যদি কেহ মনে করে, তবে হয় তাহার মস্তিস্কে বিকৃত ঘটিয়াছে, অন্যথায় মানুষের সাধারণ বুদ্ধি হইতেও সে বঞ্চিত।”
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা হইতে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে পুঁজিবাদ ও কমিউনিজম কোনটিই মানুষকে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ, উন্নত, মানুষ্যত্বের মর্যাদা স্থাপনকারী এবং সখ ও সমৃদ্ধিপূর্ণ অর্থব্যবস্থা দান করিতে মাত্রই সমর্থ হয় না। এই উভয় অর্থব্যবস্থায় কোনটিই মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করিতে পারে নাই। বরং ব্যাপারটিকে ইহারা আরো অথিকতর জটিল করিয়া তুলিয়াছে। অসংখ্য পুঞ্জীভূত আবর্জার অতল তলে মুল বিষয়টির চাপা দিয়া মানবজাতিকে এক দুঃসহ দুঃখ ব্যথা ও ব্যর্থা বঞ্চনায় জর্জরিত করিয়া তুলিয়াছে। পৃথিবী আজ এই দুই প্রকার অর্থ-ব্যবস্থার-ধনতন্ত্র ওসমাজতন্ত্র-নির্মম ও সর্বগ্রাসী নিষ্পেষণে অতিষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। বিশ্বমানব আজ এই উভয় প্রকার সমাজ ও অর্থব্যবস্থা হইতে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়, এক তৃতীয়-অর্থ-ব্যবস্থার সন্ধানে বিশ্বমানবে আজ নিঃসীম ব্যাকুলতায় উদগ্রীব। আমাদের মতে বিশ্বমানবের সঠিক কল্যাণ করিতে পারে একমাত্র ইসলামী আদর্শ ও ইসলামী অর্থব্যবস্থা। অতঃপর দুনিয়ার মানুষেরসম্মুখে আমরা তাহাই পেশ করিব।
ইসলামী জীবনব্যবস্থার ভিত্তি
বিশ্বমানবের স্থায়ী শান্তিদাতা ও কল্যাণকামী অর্থব্যবস্থা হইতেছে ইসলামী অর্থনীতি। একমাত্র ইসলামী অর্থনীতিই দুনিয়ার মানুষের প্রকৃত মনুষ্যত্বের উন্নত মর্যাদায় অভিষিক্ত করিতে পারে, পারে মানুষের সকল প্রকার সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করিতে। ইসলামী অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ কাঠামো পেশ করার পূর্বে উহার দার্শনিক ভিত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা আবশ্যক।
এ সম্পর্কে প্রথমে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাকিতে হইবে। ইসলামের অর্থ-দর্শন উহার জীবন দর্শন হইতে বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ কোন জিনিস নয়। মূলতঃ উহা ইসলামের ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থারই একটি অপরিহার্য অংশ মাত্র। কোন বস্তুর একটি অংশকে উহার সমষ্টির ও গোটা বস্তুরমধ্যে রাখিয়া বিচার বা যাচাইনা করিলে সেই অংশটির প্রকৃত মূল্য ও অবস্থা নির্ভুলভাবে অনুধাবন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। ইহা এক বৈজ্ঞানিক ও অনস্বীকার্য সত্য। এই সত্য উপেক্ষা করা বা ইহা অনুধাবন করিতে অসমর্থ হওয়ার দরুনই পাশ্চাত্যের অর্থনীতিবিদগণ মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার কোন সুষ্ঠুও কল্যাণকর সমাধান বাহির করতে সক্ষম হয় নাই। আর এই একদেশদর্শী দৃষিটর কারণেই আধুনিক সমাজের লোকদের মনে ইসলাম ও ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে ইসলামের পূর্ণাঙ্গা জীবন-ব্যবস্থার মূল ভিত্তিসমূহের উল্লেখ করা অপরিহার্য বলিয়া মনে করি। তাহা হইতে একদিকে মেযন মানব জীবনে অর্থ-ব্যবস্থার স্থান ও গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা সহজ হইবে, অপরদিকে ইসলামী জীবন-ব্যবস্থায় উহার অর্থনীতির গুরুত্ব এবং স্থানওসকলের সম্মুখে সুস্পষ্ট হইয়া উঠিবে। ইহার পরই অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইসলামের পথ-নির্দেশ এবং উহার ব্যাপক নীতি-ব্যবস্থার যৌক্তিকতা ও উহার আন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য সকলের নিকট উজ্জ্বল হইয়া উঠিতে পারিবে।
১. ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার মৌলিক ধারণা বিশ্বাসের প্রথম ভিত্তি হইতেছে উহার বিশ্ব-দর্শন। ইসলাম সর্বপ্রথম ঘোষণা করে যে, পৃথিবী এই বিশ্বজগত- এইটি আকস্মিক দুর্ঘটনা সৃষ্ট বস্তু নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে এক সর্বজ্ঞ ও শক্তিমান মহান সত্তা বিশেষ এক উদ্দেশ্য সম্মুখে রাখিয়া ও বিশেষ পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইহা সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনিই একমাত্র মালিক, একচ্ছত্র শাসক ও নিরংকুশ প্রভুত্বের অধিকারী। একমাত্র তাঁহারই আইন ও বিধান নিখিল সৃষ্টির পরতে –পরতে চালূ হইয়া আছে এবং মনুষ্য-জগতেও একমাত্র তাহারই আইন চালু হওয়া বাঞ্ছনীয়। মানুষ এই দুনিয়ায় আল্লাহর খলীফঅ-প্রতিনিধি, আল্লাহর বিধান অনুসরে কাজ করাই তাহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। পরন্তু দুনিয়ার এই জীবনইচূড়ান্ত নয়, ইহার পর আর একটি অবিনশ্বর জীবন আসিবে, যখন মানুষকে আল্লাহর সম্মুখে ইহ-জীবনের সকল কাজের ও প্রত্যেকটি খুটিনাটি বিষয়ের পর্যন্ত হিসাব দিতে হইবে এবং সেই অনুযায়ী মানুষ পুরষ্কার কিংবা শাস্তি লাভ করিতে বাধ্যহইবেঠ।
২. কেবল পেটের দাবি পূরণ করা, নিছক জটর জ্বালা নিবৃত্ত করা এবং প্রবৃত্তির লালসা চরিতার্থ করাই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।মানব জীবনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য এতদাপেক্ষা বহু উন্নত, মানুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব অনেক বেশীবিরাট। মানুষ একটি অর্থণৈতিক জীব মাত্র নয়, মানুষ ‘আশরাফল মাখলুকাত’। এই পৃথিবীতে সত্যের, ন্যায়ের এবং পুণ্যের বাণী প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র স্থাপন করা আর অন্যায়, পাপ ও জুলূমের বিলোপ সাধন করাই মানব জীবনের পরম উদ্দেশ্য ও কর্তব্য। কুরআন মজীদ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছে:
(আরবী)
তোমরাই সর্বোত্তমজাতি, সমগ্র মানব সমাজের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই তোমাদিগকে সৃষ্টি করা হইয়াছে। তোমরা ন্যায়, সত্য ও পুণ্যময় কাজের আদেশ কর এবং অন্যায়, পাপ ও মন্দ কাজ হইতে লোকদেরকে বিরত রাখ- আর আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখ।
৩.ইসরাম মানব সমাজের শুধু বাহ্যিক সংশোধন-সংস্কার করিয়াই ক্ষান্ত হয় না- মানুষের জীবনকে সর্বোতোভাবে উন্নত ও ক্রমবিকাশমানরূপে গড়িয়াতুলিবার জন্য কেবল উহাকেই যথেষ্ট মনে করে না। ইসলাম মানুষের বাহ্যিক জীবনের যতখান্তি সংস্কার বা সংশোধন করিতে চাহে, ব্যক্তি মন, চিন্তা ও জীবন সংশোধন করাকেও ততখানিই অপরিহার্য বলিয়া ঘোষনা করে। কারণ, ব্যক্তির মাঝে উন্নত, সততাপূর্ণ ও পবিত্র নৈতিক চত্রি এবং মহন ভাবধারাসুপরিস্ফুট না হইলে উন্নত ও আদর্শ সমাজ গঠিত হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু পাশ্চাত্যদেশের সংস্কারকামী রোক সমাজের কেবল বাহ্যিক সংশোধনের উপরই গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে সংশোধিত ও পরিশুদ্ধ করিয়া তুলিবার প্রয়োজনীয়তা তাহারা বোধ করে নাই। সমষ্টির উপর একদেশদর্শী দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কারণে লোকদের ব্যক্তিগত জীবনকে তথায় উপেক্ষা করা হইয়াছে। আর তাহারই ফলে সমগ্রমানব সমাজই চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইতে বাধ্য হইয়াছে। পাশ্চাত্যে চিন্তানায়কদের ইহা যে এক মারাত্মক বিভ্রান্তি ও ত্রুটি এবং চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে চরম দৈন্যের প্রমাণ, তাহাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।
৪. ইসলাম এক চিরন্তন ও শাশ্বত জীবনব্যবস্থা বলিয়া উহার উপর স্থাপিত রীতি-নীতি ও আদর্শ সমাজ-জীবন পুনর্গঠনের জন্য চিরকালীন মৌলিক ব্যবস্থা-তাহার কোনটিই সাময়িকবা ক্ষণিক নহে। উদ্দেশ্য, নীতি ও লক্ষ্যেই উহার নিকট সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাহা লাভ করার উপায় উপাদন ও সাজসরঞ্জাম সম্পর্কে কোন স্থায়ী নির্দেশ কোন ক্ষেত্রেই দেওয়া হয় নাই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দ্বীন-ইসলামের দুশমনদের সহিত লড়াই সংগ্রাম করিতে গিয়া তাহাতে বন্দুক ব্যবহার রা হইবে, নাকামান, তীর ব্যবহার করিতে হইবে না তরবারী- ইসলাম সে সম্পর্কে কিছুই বলে নাই।
ইসলাম শুধু যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য, লক্ষ ও নিয়ম-নীতর উপরেই বিশেষ গুরুত্ব আরোপ কর। অনুরূপভাবে ভূমি চাষের জন্য লাঙ্গল ব্যবহার করা হইবে বনা, ট্রাক্টর; শিল্পোৎপাদনের জন্যহস্তচালিত যন্ত্র ব্যবহার করা হইবে, না আধুনিক আবিষ্কৃত বিরাট যন্ত্রোশক্তি, ইসলাম এ সম্পর্কে কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নাই।
বরং জমি লাভ, কারখানা স্থাপন- এই উভয় ক্ষেত্র ও উপায়ের ব্যবহার পদধতি এবং এই উভয় ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিক-মজুরদের অধিকার সংরক্ষণ ও উৎপন্ন ফসল ও পণ্যের সুবিচারপণ্য বন্টনের উপরই ইসলাম অধিকগুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। কারণ, পৃথিবীর বাহ্যিক আবরণে- উপায়-উপাদানে, তথা যন্ত্র ও কল-কব্জার পরিবর্তন ও ক্রমবিকাশ সূচিতহওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই ব্যাপারে কোন ‘চিরস্থায়ী সত্য’ কথা বলা সমীচীন নয়। -তাহা বলিলে ইসলাম চিরকালের ও সকল দেশের মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্তা হওয়ার মর্যাদা লাভ করিতে পারিত না। পরন্তু নৈতিকনিয়ম এবং মানুষের বাস্তব কর্মজীবনের জন্যপ্রদত্ত বিধান ও ব্যবস্থা চিরন্তন, শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়- যেমন অপরিবর্তনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। এইজন্য ইসলাম এই ক্ষেত্রের জন্য চূড়ান্ত ও স্থায়ী মূলনীতি এবং কর্মপদ্ধতি উপস্থাপিত করিয়াছে।
ইসলাম প্রদত্ত ব্যবস্থার এই মূলভিত্তির উপরই উহার বিরাট জীবন প্রাসাদ স্থাপিতহইয়াছে। ইসলামের অর্থনীতি এই বিরাট ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থারই একটি অংশ মাত্র। কাজেই উহাকে এই পূর্ণ জীবন ব্যবস্থার অভ্যন্তরে রাখিয়াই বিচার করিতে হইবে: যষনই উহার আলোচনা-সমালোচনা বা সে সম্পর্কে গবেষণার সময় আসিবে ইসলামের মূলগত ব্যবস্থা ও ভাবধারার সহিত মিলাইয়াই তাহাকরিতে হইবে। উহাকে বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করিতে গেলেমারাত্মক ভুল হওযা স্বাভাবিক। মুলত মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাকে মানবজীবনের অন্যান্য অসংখ্য সমস্যাহিইতে স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন মনে করা এবং সেইদৃষ্টিতে উহার সমাধান লাবের চেষ্টা করা যেমন বৈজ্ঞানক ভুল অনুরূপভাবে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধীও। এই পন্থা যাহারা অবলম্বন করিয়াছে, বৈজ্ঞানিকদৃষ্টিতে তাহারা চরম অবৈজ্ঞানিকতার প্রমাণ দিয়াছে এবং ইসলমের নামেতাহারা ইসলাম বিরোধী অর্থনৈতিক মতাদর্শ উপস্থাপিত করিতে চেষ্টা করিয়াছে। বস্তুত ইসলাম মানুষের সমাজ ও উহার পরিবেশের অন্তর্নিহিত গতি-প্রকৃতি এবং নিয়ম কানুন বিশ্লেষণ করার একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী। সৃষ্টিকরাত যে উদ্দেশ্যে মানুষ ও সমাজ সৃষ্টি করিয়াছেন, সমাজকে-ব্যস্টি এবং সমষ্টি উভয়কেই-সেই চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে লিইয়অ যাওয়ার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত পথ-নির্দেশ। এককথায়, ইকলাম মানব-সমাজ ও বিশ্বপ্রতৃকি বিশ্লেষণকর রূপে গড়িয়া তোলারজন্য একটি সক্রিয় হাতিয়ার। জগত ওজীবনেরগতিধারা বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গীর নাম জীবন-দর্শন; আর মানুষের কৃস্টি, ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবলীর নাম জীবন-সমস্যা। জীবন-সমস্যার আয়তন, গভীরতা ও জটিলতা প্রভৃতির দিক দিয়া পরিবর্তন অনিবার্য। কিন্তুজীবন-দর্শন-জীবন-সমস্যার বিশ্লেষণ করার বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী- স্থায়ী ও অপারিবর্তনীয়।জীবন-দর্শন সাধারণ সূত্র। সাধারণ সূত্রের সাহায্যেই সাধরণ সূত্রের উপর ভিত্তি করিয়াই- বিশেষ অবস্থার বিশ্লেষণকরিতে এবং বিশেষ সিদ্ধান্তে ও বিশেষ উপনীতহইতে হয়। অতএব সাধারণ সূত্র সর্বকালের, সর্বত্র ও সর্বব্যাপারে প্রযোজ্যএবং অপরিবর্তনীয়। ইহা এক বৈজ্ঞানিক যুক্তি-ভিত্তিক অকাট্য সত্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/12
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।