hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৩৭
জাতযি মালিকানা সাম্যবাদ
বস্তুত, সমস্ত উপার্জন উপায়কে সরকারী কর্তৃত্বে সোপর্দ করিয়া গোটা মানুষকে সরকারে দিন-মজুর বা বেতনভোগী চাকরে পরিণত করিয়া দিলেই মানুষ সুবিচার ও সর্ববিদ দিক দিযা সমান অধিকার লাভ করিবে- এইরূপ মনে করা চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছুই নয়। প্রথম মহাযুদ্ধের সর্বাত্মক ভাঙ্গনের সুযোগ লইয়া রাশিয়ায় ১৯১৭ সনে কমিউনিস্ট বিপ্লব সংঘটিত হইয়াছিল। ইহার ফলে দেশের সকল প্রকার ধন-সম্পদ ও উৎপাদন-উপায় নিরংকুশভাবে কমিউনিস্টদের কুক্ষিগত হইল। এইজন্য সোভিযেত সরকারকে প্রায় উনিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করিতে হইয়াছে। একমাত্র কোল খোজ (Kokho-Co-orerative farming) পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য ছোট জমিদার (Kullaks)-দিগকে যেভাবে হত্যা করা হইয়াছে, তাহা দেখিয়া পৃথিবীর রুশ-সমর্থক কমিউনিস্টরাও চীৎকার করিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু এই অমানুষিক জুলূম ও হত্যাকান্ডের পর যে রাষ্ট্রীয়করণ নীতি কার্যকর করা হইয়াছিল তাহার ফলে সকল মানুষের জন্য সমানাধিকার স্বীকৃত হওয়াই ছিল স্বাভাবিক এবং সুবিচারপূর্ণ ব্যবস্থা। কিন্তু কার্যত এই সাম্য ও সমানাধিকার সেখানে নিতান্ত মায়া-মরীচিকায় পরিণত হইয়াছে। সাম্যবাদের শ্রোগান এখানে সম্পর্ণরূপে ও নির্মমভাবে ব্যর্থ হইয়াছে। রাশিয়অয়- James Bwruhan-এর ভাষায় জাতীয় আয়ের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ শতকরা ১১-১২ জন উচ্চ শ্রেণীর শাসকগণই ভোগ করে। সাধারণ মানুষের মুখের গ্রাস কাড়িয়া লইয়া উচ্চ পর্যায়ের আমলাতের এই নিরংকুশ বোগ-সম্ভোগ কি চরম শোষণও দুর্ণীতির নির্লজ্জ পরাকাষ্ঠা নয়?

একজন প্রসিদ্ধ ফরাসী কমিউনিসট কমরেড Yovn রামিয়ার শ্রেণীগত পার্থক্যের বিবরণ নিম্নলিখিতরূপে পেশ করিয়াছেন:

গার্হস্থ্য মজুরদের বেতন পঞ্চাশ হইতে ষাট রুবল পর্যন্ত- আহার বাসস্থঅন ব্যতীত। সাধারণ মুজর একশত ত্রিশ হইতে দুইশত পঞ্চাশ রুবল পর্যন্ত লাভ করে। দায়িত্বসম্পন্ন ও উচ্চতরের অফিসার মাসিক পনেরো শত রুবল হইতে দশ হাজার রুবল পর্যন্ত এবং ফ্যাক্টরী ডিরেক্টর, শিল্পী, লেখক, অভিনেতা, অভিনেত্রী বিশ হাজার হইতে ত্রিশ হাজার রুবল পর্যন্ত অর্জন করে।

১৯৩৭ সনে রাশিয়ার বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিকদের জন্য মুজুরী চার্ট নিম্নোরূপ তৈয়ার করা হইয়াছিল:

সাধার শ্রমিক: ১১০ হইতে ৪০০ রুবেল মাসিক

মধ্যম মানের কেরানী : ৩০০ হইতে ১০০০ রুবেল মাসিক

উচ্চমানের অফিসার: ১০০০ হইতে ১০,০০০ রুবেল মাসিক

প্রথম মানের নাগরিক : ২০,০০০ হইতে ৩০,০০০ রুবেল মাসিক

রুশ পত্রিকা TRUD কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য হইতে জানা যায়, একটি খনিতে ১৫৩৫ জন শ্রমিক নিযুক্ত করা হয় এবং তাহাদের মজুরীর হার নিম্নোক্ত রূপ ধার্য করা হয়:

এক হাজার শ্রমিকের বেতন মাসিক ১২৫ রুবল হিসাবে। চারিশত শ্রমিকের বেতন মাসিক ৫০০ রুবল হইতে ৮০০ রুবল করিয়অ। ৭৫ জন শ্রমিকের বেতন প্রতিজন মাসিক ৮০০ হইতে ১০০০ রুবল। ৬০ জন শ্রমিকের বেতন মাথাপ্রতি মাসিক ১০০০ হইতে ৩৫,০০০ রুবল পর্যন্ত।

রাশিয়ার শ্রমিকদের বেতন যে আকাশ-পাতাল পার্থক্র বিরাজিত, তাহা বেতনের উপরোক্ত হার হইতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হইতেছে। এইরূপে বেতনকে কি কোন প্রকারে সাম্যবাদী আদর্শের অনুকুল বলিয়া মনে করা যাইতে পারে?

বস্তুত, রাশিয়ার শতকরা ৭.৯ জন লোক মাসিক ২৪০ রুবলের কম বেতন পায়। আর অবশিষ্ট শতকরা একুশ জন লোক ইহাদের-ই শ্রমলব্ধ মুনাফা দুই হাত শুঁষিয়া নেয় এবং বিলাসিতার পাহাড় সৃষ্টি করে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে বেতনের এই তারতম্য আরো মারাত্মক ধরনের। ১৯৪৩ সনে সাধারণ সৈনিক মাসে দশ রুবল বেতন পাইত। আর লেফ্‌টেন্যান্ট লাভ করিত এক হাজার রুবল এবং কর্ণের পাইত চব্বিশ শত রুবল। – Economist পত্রিকা ৩০শে জুলাই ১৯৪৩ সন।

‘নিউ ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকার প্রবন্ধকার লেভন সীডো লিখিয়াছেন, রাশিয়ার শ্রমিকদের পরস্পরের মধ্যে বেতনের দিক দিয়া যে পার্থক্য রহিয়াছে তাহা দুনিয়ার কোন সর্বোন্নত পুঁজিবাদী দেশেও বর্তমান নাই। সীডো এই পার্থক্যের যে হার বর্ণনা করিয়াচেন, তাহা হইল:

সাধারণ শ্রমিকের মধ্যে ১-২০

ট্রেনিংপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ১-৮০

সাধারণ মানুষে ও উচ্চ অফিসারদের মধ্যে ১-১০০ এরও অধিক পার্থক্য বিদ্যমান।

ডিকোস্টা তাঁহার ‘শয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি’ নামক গ্রন্থের ৮৬ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, রাশিয়ার মোট আয়ের অর্ধেক পরিমাণ অর্থ শতকরা ১১ কিংবা ১২ জন লোকের পকেটস্থ হয। আর অবশিষ্ট অর্থ শতকরা ৮৮ জন লোকের মধ্যে বন্টন করা হয়।

প্রখ্যাত সমাজতন্ত্রী নেতা ডগলাসস জে তাহার Socialism in the new Soviet নাম গ্রন্থ লিখিয়াছেন:

বর্তমানে রুশ সমাজে প্রকৃত আয়ে ট্যাক্‌স বাদ দেওয়ার পর উপর নীচে যে পার্থক্য রহিয়াছে, তাহা বৃটেন ও স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলি অপেক্ষা অধিক এবং সম্ভবত আমেরিকায় বিরাজমান পার্থক্যেরই সমান।

এসব যদিও অনেক দিন আগের কথা, বর্তমান অবস্থা এই যে, কারখনার ডাইরেক্টর ও ম্যানেজাররা কারখানায় লব্ধ মুনাফার অংশও লাভ করিয়া থাকে। আর ইহার অধিক মুনাফা লুটিবার উদ্দেশ্যে শ্রমিক-মজুরদের দ্বারা অমানুষিক ধররে শ্রম করায় অথচ নিতান্ত নগণ্য পরিমাণে মজুরী দেওয়া হয়।

সম্পত্তির রাষ্ট্রীয়করণের পর রাশিয়ার শ্রমিকদিগকে সরকার চালিত লংগরখানা হইতে খাবার গ্রহণ করিতে বাধ্য করা হইয়াছে। এইস লংগরখানা হইতে নিকৃষ্ট মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কসিগীন-ও এই কথা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন।

১৯৪৮ এবং ৪৯ সনে সরকারীভাবে প্রকাশ করা হইয়াছে যে, একজন খনি-শ্রমিক মাসে ১০ হাজার রুবল উপার্জন করে (৮ই ডিসেম্বর, ১৯৪৮ এ প্রাভ্‌দা এবং ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ এর ইজভেস্তিয়া দ্রষ্টব্য) সরকারী ও অন্যান্য প্রাধাণ্য সূত্র হইতে জানা যায় যে, একজন কলেজের অধ্যাক মাসিক ৪ হইতে ৫ হাজার রুবল এবং গবেষণাগারের কর্মকর্তাগণ মাসিক ৮ হাজার রুবল বেতন লাভ করে। একাডেমী এ সায়েন্সের সদস্যরাও উক্ত সংস্থার সদস্য হিসাবে মাসিক ৫ হাজার রুবল পাইয়া থাকে। একডেমী অব সায়েন্সের সদস্যরা উক্ত সংস্থার সদস্য হিসাবে মাসিক ৪ হাজার রুবল পাইয়া থাকে। একাডেমী অব সায়েন্সের সদ্যসরা সাধারণত বিভিন্ন গবেষণাগারের কর্মকর্তা বলিয়া তাহাদের মাসিক আয় ১৩ হাজার রুবলের কাছাকাছি পৌঁছায় (হ্যারি সোয়াট্‌স্‌ লিখিত রাশিয়ান সোভিয়েট ইকনমি, ৪৬৭ পৃষ্ঠ)’ ১৯৫২ সেনে ‘ইকনমিক উইকলিতে’ একজন সাংবাদিকের লিখিত এক প্রবন্ধে পরিবেশিত তথ্য হইতে জানা যায়, সোভিয়েট চেম্বার অব কমার্ষের সভাপতি মাসিক ১৬ হাজার রুবল, রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা মাসিক ২০ হাজার রুবল এবং একাডেমী অব সায়েন্সের সভাপতি মাসিক ৩০ হাজার রুবল বেতন পায়।

রাশিয়ার ‘মজুরদের’ বেতনের এই আকাশছোঁয়া পার্থক্য লক্ষ্য ক রিয়া এবং Webb এর ন্যায় অন্ধ রুশ-সমর্থকও স্বীকার করতে বাধ্য হইয়াছে।

‘ব্যক্তিগণের আমদানীর ক্ষেত্রে রাশিয়ায় যে বৈষম্য লক্ষ্য করা যাইতেছে, উহার চূড়ান্ত নমুনা Extreme instanc আমেরিকায় না হইলেও বৃটেনে নিশ্চয়ই পাওয়া যাইবে। ফল কথা এই যে, ব্যবসায় ও শিল্পের মুনাফঅ বর্তমান সোভিয়েত রাশিয়ার কেবল উঁচুদরের লোকদের মধ্যেই বিভক্ত হয়- পূর্বে যেমন মজুর ও বুর্জোয়া লোকদের মধ্যে বন্টন কর হইত। এই কথায় সত্যতা Soviet Economic System গ্রন্থে উল্লেখিত Income tax Schedule হইতেও সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। উক্ত গ্রন্থের ৩৮১ পৃষ্ঠা হইতে ৩৮৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উল্লেখিত হইয়াছে:

রাশিয়ার ১৯৪০ সনের ইনকাম ট্যাক্স শেডুল অনুসারে পাঁচশত রুবল হইতে শুরু করিয়া তিন লক্ষ রুবল পর্যন্ত আয়ের উপর ট্যাক্স ধার্য করা হয়। অর্থাৎ একজন লোকের নিকট তিন লক্ষ রুবল টাকা পুঞ্জীভূত হওয়া সেখানে কোন মতেই আইন বিরোধী নয়, যেখানে সাধারণ শ্রমিক মাসিক বেতন পায় মাত্র ৪ শত রুবল।

কমিউনিস্ট চীন দেশের অবস্থাও ইহা হইতে স্বতন্ত্র ও ভিন্নতর কিছু নয়। সেখানকার শ্রমিকরা মর্মান্তিকভাবে দরিদ্র। ছেঁড়া-ফাটা কাপড় তাহাদের লজ্জা নিবারণ করিতে পারে না। অথচ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে সেখানে শ্রমিকদিগকে দৈনিক আট ঘন্টা নয়, বারো ঘন্টা করিয়া হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করিতে বাধ্য করা হইয়াছে। কিন্তু মজুরী দেওয়া হইয়াছে খুবই কম পরিমাণ।

জাতীয়করণ নীতির চরম ব্যর্থতার এই মর্মান্তিক ইতিহাস পাঠ করিয়াও কি কেহ উহা সমর্থন করিতে এবং সাম্যবাদের শ্লোগান শুনিয়া অন্ধের ন্যায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হইয়া অনির্দিষ্টের পানে ছুটিতে পারে? [Soviet communism-A New Civili-ation, 12.70P.]

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির অবস্থাযদি এই হয়, সেখানেও যদি শ্রমিক কৃষকদের মাঝে চরম অসাম্য বিরাজ করে, এমনকি শ্রেষ্ঠ পুঁজিবাদী দেশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের অপেক্ষাও অনেক বেশী অসাম্য থাকে- নাই তাহা বলিবার সাহাস কাহারো আছে কি?- তাহা হইলে পুঁজিবাদের ন্যায় সমাজতন্ত্রকেও মানবতার জন্য মারাত্মক শোষণ ও অসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা মনে করা হইবে না কেন? এবং বিশ্ব-মানবতার কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদের ন্যায় সমাজতন্ত্রকেও খতম করার জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো হইবে না কোন্‌ কারণে?…. এই ধ্বংস হইতে বাঁচাইয়া তদপেক্ষাও অধিকতর ধ্বংসে নিরীহ মানবতাকে নিক্ষেপ করা কি কখনো মানবতাবাদী কাজ হইতে পারে?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন