hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৪৬
মূলধন বিনিয়োগের পন্থা
ইসলামী সমাজে ব্যক্তির হাতে মূলধন সঞ্চিত হইতে পারে, ব্যক্তিগতভাবে উহার প্রয়োগ ও বিনিয়োগ হইতে পারে, তাহাতে কোনরূপ আপত্তি করা চলে না। ব্যক্তিগতভাবে মূলধন বিনিয়োগগের প্রথম পন্থা এই যে, ব্যক্তি নিজেই নিজের মূলধন খাটাইয়া ব্যবসায় করিবে, বাণিজ্য করিবে, শিল্পোৎপাদনের কাজে টাকা খাটাইয়া কারখানা স্থাপন করিবে এবং সেজন্য শ্রমিক নিযুক্ত করিবে। বস্তুত, ব্যবসায় বাণিজ্য ইসলামী সমাজে চিরদিনই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা লাভ করিয়াছে। আজিও ব্যক্তিগত মালিকানার সূত্রে ব্যবসায় কিংবা শিল্পোৎপাদনের কাজে মূলধন বিনিয়োগ হইতে পারে, তাহা হইতে মুনাফা লাভ কিংবা প্রচুর পরিমাণ পণ্যদ্রব্যের উৎপাদন করা যাইতে পারে এবং সমষ্টিগতভাবে গোটা সমাজ ও জাতি তাহা হইতে উপকৃত ও লাভবান হইতে পারে।

ব্যক্তিবিশেষ নিজের তত্ত্বাবধানে মজুর শ্রমিক দ্বারা কাজ করাইতেহ পারে। এইভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক অসংখ্য কারখানা ও পণ্যোৎপাদনকারী যন্ত্র সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত হইতে পারে। ইসলামী সমাজ-ইতিহাসের স্বর্ণযুগে এইরূপ কাজ করাইতে কোনরূপ বাধা-বিঘ্ন ছিল না, আজও থাকিতে পারে না।

ব্যক্তিগত মূলধন বিনিয়োগের আর একটি পন্থা হইতেছে, একজনের মূলধন অপরজনের শ্রমের সহিত যুক্ত হইয়া কোন অর্থকরী কাজের সুচনা করা। আরবী ভাষার এইরূপকাজকে ‘কিরাজ’ বা ‘মুজারিবাত’ (আরবী) বলা হয়, আর ইংরেজীতে বলা হয় Sleeping Partnership. এইরূপ কাজে একজন মূলধন দেয়, অপর জন সেই মূলধন লইয়া শ্রম করে, অর্থোৎপাদনের চেষ্টা করে। এইভাবে কাজ করার পর যে সম্পদ মুনাফা হিসাবে লাভ হয়, তাহা পূর্বনির্ধারিত অংশ ও হার অনুযায়ী নিয়মিতভাবে উভয়ের মধ্যে বন্টন করা হয়। ইসলামী অর্থনীতিবিদদের মতে ‘কিরাজের’ ইহাই সর্ববাদী সম্মত সংজ্ঞা।

মূলধন বিনিয়োগের উল্লিখিত দুইটি পন্থার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রহিয়াছে। প্রথম প্রকার পন্থায় শ্রমিকের নির্দিষ্ট মজুরী যথাসময় আদায় করা পুঁজি মালিকের দায়িত্ব। তাহার নিজের লাভ হউক, লোকসান হউক, কম লাভ হউক কি বেশী হউক, শ্রমিকের মজুরী নির্দিষ্ট পরিমাণে তাহাকে অবশ্যই দিতে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার কাজে- ‘কিরাজ’ বা ‘মুজারিবাত এ শ্রমিকের মজুরীর পরিমাণ নির্দিষ্ট হার অনুসারেই তাহার তাহা পাইবে: আর লাভ না হইলে কিছুই পাইবে না।

মূলধন বলিতে কেবল নগদ টাকা বুঝায় না, প্রত্যেক উৎপাদক শক্তি ও যন্ত্রই মুলধন বলিয়া অভিহিত হইতে পারে। অততএব চাষের জমি, কারখানা কোন যন্ত্রপাতিকে কেন্দ্র করিয়াও অর্থোৎপাদনের উল্লিখিত পন্থায় কাজ হইতে পারে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তাহা নাজায়েয হইবে না।

খয়বর বিজয়ের পর নবী করীম (ﷺ) তথাকার বিজিত জমি-ক্ষেত স্থানীয় প্রাচীণ অধিবাসীদের নিকট এই শর্তে রাখিয়া দিয়াছিলেন যে, তাহারা এই জমিতে চাষাবাদ করিবে, ফসল উৎপাদন করিবে এবং ফসলের অর্ধেক তাহারা মজুরী হিসাবে গ্রহণ করিবে।

এই কর্মনীতির আলোকে বর্তমান যুগের ইসলামী সমাজে একটি প্রেস, একটি কারখানা, একটি আড়ত, একটি মোটরগাড়ী ইত্যাদিকে ভিত্তি করিয়া অনুরূপভাবে অর্থোৎপাদনের কাজ হইতে পারে এবং তৎলব্ধ মুনাফা উৎপাদনে যন্ত্রের মালিকক ও শ্রমিকের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে বন্টনও হইতে পারে।

নবী করীম (ﷺ)-এর সাহাবায়ে কিরামও অনুরূপভাবে কাজ করিয়াছেন। হযরত উসমান (রা) কোন কোন লোককে নগদ টাকা বা কোন উৎপাদন যন্ত্র উক্তরূপ নিয়ম অনুযায়ী দিয়াছিলেন এবং নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ ভাগ করিয়া লইয়াছিলেন।

এই ধরনের পুঁজি-বিনিয়োগ ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পূর্ণ সংগত। ইসলামের ইতিহাসে এই ব্যাপারে কোনদিনই দ্বিমত দেখা দেয় নাই। কারণ মূলত ইহা দুই ব্যক্তি বা পক্ষের মধ্যে এক প্রকারের স্বেচ্ছামূলক চুক্তি বিশেষ। এক ব্যক্তিপুঁজি সংগ্রহ করে, অপরজন তাহাতে নিজের শ্রম, মেহনত, কর্মক্ষমতা ও সংগঠন প্রতিভা প্রয়োগ করে। এইজন্য উভয়ই তাহা হইতে মুনাফা লাভ করিবার অধিকারী। পুঁজিবাদী সমাজ-ব্যবস্থায় এই ধরনের ব্যবসায়ে যত শোষণ ও জুলুমের অবকাশ থাকে, ইসামী সমাজে তাহার কোন সুযোগই থাকিতে পারেনা। কাজেই ইসলামী সমাজে এইরূপ ব্যবসায় নাজায়েয হওয়ার কোনই কারণ নাই।

সমাজে এমন লোক থাকিতে পারে- থাকা অপরাধ নয়- যাহাদের নিকট মূলধন রহিয়াছে, কিংবা তাহা প্রয়োগ করিবার মত অপরিহার্য শ্রমশক্তি নাই- ব্যবসায়ী বুদ্ধির অভাব কিংবা কোন শরীয়তী প্রতিবন্ধকতার কারণে এই কাজ করার তাহার সুযোগ অথবা সাধ্য নাই (যথা স্ত্রীলোক, শিশু, বৃদ্ধ, পংগু, অক্ষম) অন্যদিকে মূলধনবিহীন অথচ প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তি এবং শ্রম করিয়া অর্থোৎপাদনের মত বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা সম্পন্ন বহুলোক সমাজে থাকিতে পারে, প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের লোকদেরও কোন অপরাধ নাই। যেমন একজন চিন্তাবিদ মনীষী একখানি মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করিলেন, কিন্তু উহা প্রকাশ করিবার মত মূলধন ও ব্যবস্থপাপনা তাঁহার নাই। তখন অপর একজন মূলধদন ও ব্যবস্থঅপনা নিয়োগ করিয়া উহা প্রকাশ করিতে পারে। ইহাতে জনগণের বিপুল কল্যাণ সাধিত হইতে পারে এবং গ্রন্থকার ও মুলধন বিনিয়োগকারী উভয়ই হার মত কিংবা ইনসাফভিত্তিক রেওয়াজ অনুযায়ী মুনাফা ভাগ করিয়া লইতে পারে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে শুধু মূলধনের যেমন কোন ব্যবহারিক মূল্য হইতে পারে না, অনুরূপভঅবে নিছক শ্রমশক্তিও এককভাবে কিছুমাত্র অর্থোৎপাদন করিতে সমর্থ নয়। এমতাবস্থায় শ্রম ও মূলধনের সংমিশ্রণ বা সম্মিলনের মাধ্যমে উৎপাদনের কাজ সম্পন্ন করা হইতেছে। ফলে প্রত্যেক শ্রমিকই সরকারী কারখানা বা পারিবারিক চাকুরী- সকল ক্ষেত্রেই বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সহিত কাজ করিতেছে, উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে। [চীনা কমিউনিজম, অধিকৃত এলাকার অবস্থা-আলস্‌ নিংটন।]

আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় মুলধনবিহীন কোটি কোটি লোক নিছকমজুরীর বিনিময়ে কাজ করিতেছে। ইহারা অসহায় দিন-মজুর মাত্র; অপরের প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাহাদিগকেমুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হয় ফলে একদিকে যেমন সকল শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পায় না-বেকার সমস্যা মাথাচাড়া দিয়া উঠে, অপরদিকে (যাহারা কোন কারখানায় নিযুক্ত হয়, তাহরা শেমনি নিজেদের সকল প্রকার স্বাধীনতা হইতে বঞ্চিত হয়। এই দিক দিয়াও একজনের মূলধন লইয়া অপর জনের শ্রম-বিনিয়োগের ইসলাম-সম্মত পন্থার সুযোগ থাকা একান্ত আবশ্যক। তাহাতে প্রত্যেকেই নিজের নিজের স্বাধীনতা রক্ষা করিয়অ কাজ করিতে পারে এবং মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ লাভ করিয়া নিজের প্রয়োজন পূরণ করিতে সমর্থ। পূর্ব হইতেই নির্ধারিত হইয়া থাকে। শ্রমিক নিজের শ্রমের বিনিময়ে মজুরী লাভ ক রিতে পারিবে। একজন মূলধন দিবে, অপরজন উহা লইয়া ব্যবসায় ও বাণিজ্য করিবে এবং মুনাফার পূর্ব নির্ধারিত শর্তানুযায়ী অংশ গ্রহণ করিবে। ফিকাহর পরিভাষায় ইহাকে () কিরাজ বলা হয। ইমাম কুরতবী বলিয়াছেন:

(আরবী)

কিরাজ ব্যবসায় জায়েয হওয়া সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে কোন মত-পার্থক্য নাই।

এইরূপ ব্যবসায়ে শ্রমদানকারীর নিকট ব্যবসায়ের পুঁজি আমাত স্বরূপ থাকিবে। কোন বাহ্যিক কারণে তাহা নষ্ট হইয়া গেলে শ্রমিক সেজন্য কিছু মাত্র দায়ী হইবে না। বস্তুত, এই ক্ষেত্রে মজুরের প্রতি কোন প্রকার জুলুম ও শোষণ হওয়ার কোন সুযোগও থাকিতে পারিবেনা।

নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন: (আরবী)

নির্দিষ্ট বেতনে নির্দিস্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত মজুরের হাতে কোন জিনিস নষ্ট হইয়া গেলে তাহাকে সেজন্য কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা যাইবে না- যদি না তাহা ইচ্ছাপূর্বক হইয়া থাকে।

ইমাম কুরতুবি লিখিয়াছেন: (আরবী)

নির্দিষ্ট বেতনে নিযুক্ত কর্মচারী যদি ইচ্ছাপূর্ব মূলধনের ক্ষতি না করিয়া থাকে, উহা অন্য কোন কারণে বিনষ্ট বা ক্ষতি হইয়া থাকিলে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে কর্মচারীকে বাধ্য করা যাইবে না।

মূলধন বিনিয়োগের আর একটি পন্থা কমিশনের বিনিময়ে কাজ করিবার সুযোগ দান। পণ্য-মালিক যদি কাহাকেও এই শর্তে পণ্য দেয় যে, সে নির্দিষ্ট পাইকারী মুল্যের অধিক যে কোন মূল্যে যত পণ্যই বিক্রয় করিবে, তাহা তাহার প্রাপ্য হইবে, অথবা শতকরা বা টাকা প্রতি সে এত কমিশন পাইবে; তবে ইহা ইসলামী অর্থনীতির দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ শরীয়ত-সম্মত কারবার। এইরূপ কারবারে মুলধন-বিহীন শ্রমজীবিদের পক্ষে অর্থোৎপাদনের বিশেষ সুযোগ ঘটে। ইসলামী সমাজে এইরূপ কাজের যথেষ্ট অবকাশ রহিয়াছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছে: ‘আমার এই কাপড় বিক্রয় করিয়া দাও, ইহাতে আমার নির্দিষ্ট মূল্যের অধিক যাহাই পাইবে, তাহা তোমার হইবে- এইরূপে শর্তে কোন ব্যক্তিকে কমিশন এজেন্ট নিযুক্ত করায় ইসালামী অর্থনতিতে কোন বাধা নাই’। [বুখারী শরীফ।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন