hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৪৭
যৌথ কারবার
যৌথ কারবার মুলধন বিনিয়োগের এক গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। দুনিয়ার মানব সমাজের চিরদিনই এই যৌথ কারবার(Partnership of Contract) প্রচলিত ছিল। বিরাট কোন ব্যবসায় বা শিল্প কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রম ও মূলধন সঞ্চয় করা এক ব্যক্তির পক্ষে অনেক সময় সম্ভব নাও হইতে পারে। এইজন্য একাধিক লোকের মিলিত পুঁজিও শ্রমের পারস্পরিক মিলনে এই কাজ সম্পন্ন করা খুবই সঙ্গত এবং বাঞ্ছনীয়, সন্দেহ নাই। বর্তমান দুনিয়ার অর্থনীতিতে ইহা পারস্পরিক ব্যবসায়ের এক সুদৃঢ় ভিত্তি হইয়া দাড়াইয়অছে।[মার্শাল: প্রিন্সিপাল্‌স অব ইকনমিক্স, ৩০১ পৃঃ।] ইহাতে একাধিক লোক মিলিত হইয়া মুলদন সংগ্রহ করে এবং সকলেই লাভ-লোকসানের অংশীদার হয়। এইরূপ ব্যবসায় ইসলামী অর্থনতিতে সম্পূর্ণরূপে বিধিসম্মত।

যৌথ কারবার পারস্পরিক চুক্তির ফলেই সম্ভব হয়।কাজেই ইহার অংশীদার হইতে ইচ্ছুক এমন সকল লোকরই তাহাতে সম্মত হওয়া অপরিহার্য এবং এই চুক্তি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাপারের যাবতীয় শর্তাদি সকলের সম্মুখে স্পষ্টভাবে লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় ইহা পরস্পরের মধ্যে কোন এক স ময় এবং কোন খুঁটিনাটি ব্যাপার লইয়অ ঝগড়া-বিবাদ, মত-বিরোধ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি করিতে পারে। এই জন্যই কুরআন মজীদে আল্লাহর নির্দেশশ উক্ত হইয়াছে:

(আরবী)

হে মুসলমানগণ, কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যখন তোমরা কোন লেনদেন বা কারবার করিবার চুক্তি করিবে, তখন তাহা অবশ্যই লিখিয়া লইবে।

বস্তুত কাহার কত মূলধন নিয়োগ (Invest) করা হইর এবং এই ব্যাপারে কি কি শর্ত নির্ধারিত হইল তাহা সবই সুস্পষ্ট ভাষায় লিখিত না হইলে ভয়ানক অসুবিধা ও গন্ডগোলের কারণ হইতে পারে। এইজন্য ইসলামী রাষ্ট্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা লাভের উদ্দেশ্যে তাহা রেজিস্ট্রিও করিয়া লওয়া যাইতে পারে।

যৌথ কারবার কেবল নগদ টাকার মুলধনের ভিত্তিতেই হয় না, নিছক শ্রম-মেহনতকে কেন্দ্র করিয়াও একাধিক লোক যৌথ নীতিতে কারবার ও আয়-উপার্জনের কাজ করিতে পরে। বিশেষতঃ নগত মুলধনহীন শ্রমজীবী লোকদের পক্ষেই ইহাই হইতেছে অর্থোৎপাদনের উত্তম পন্থা।এই নিয়ম অনুসারে সকলেই মিলিতভাবে কাজ করিবে এবং লব্ধ মুনাফা মজুরী নির্দিষ্ট হারে সকলেই ভাগ করিয়া লইবে।

যৌথ নীতিতে খনিজ সম্পদ উদ্ধার করা এবং তাহা লইয়া কারবার করাও ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েয। পরিবহন বা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীও যৌথ নীতিতে স্থপিত ও পরিচালিত হইতে পারে।

মূলধনের একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করতঃ তাহাকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা এবং তাহা লোকদের মধ্যে বন্টন ও বিক্রয় করিয়া নির্দিষ্ট মুলধন সংগ্রহ করার নীতি বর্তমান যুগে খুব বেশী প্রচলন লাভ করিয়াছে। বিরাটাকারে কোন ব্যবসায় বা শিল্প-সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিমাণ পুঁজির আবশ্যক, তাহা ব্যক্তিগতভাবে কেবল একজন লোকের পক্ষে সংগ্র করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। অথচ এইসব কাজ ব্যতী জাতীয় অর্থনীতির উন্নতি অসম্ভব এবং জাতীয় পুনর্গঠন ও শিল্পায়নের প্রচেষ্টা কিছুতেই সাফল্য লাভ করিতে পারে না। এই জন্য অসংখ্য লোকের অংশীদারিত্বে বিপুল পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা অপরিহার্য হইয়া পড়ে। এইরূপে যেসব শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্টিত হয, তাহার প্রতি অন্ততঃ অংশদিারদের আন্তরিক আগ্রহ ও মনের টান বর্তমান থাকা স্বাভাবিক। ফলে ইহাতে বিশেষ উৎকর্ষ লাভও সহজ হইয়া পড়ে। এইভাবে শিল্প, কৃষি, ব্যবসায় এবং অন্যান্য নানাবিধ কারবার শুরু করা এবং উহার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনতির পুনর্গঠন সম্ভব হয়।

এইরূপ লিমিডেট কোম্পানীর পুঁজি মালিক- অন্য কথায় উহার অংশীদারগণ-প্রত্যেকেই তাহার নিজ অংশের মূলধনের এইমূলধন ব্যবহারকারী বা ব্যবসায় পরিচালকগণ তাহাদের সংগঠনকার্য ও দক্ষতা প্রয়োগের জন্য লাভ্যাংশ পাইতে পারে। অপরদিকে মজুর-শ্রমিকগণ- উহার নানা কার্যে নিযুক্ত হইতে অসংখ্য কর্মচারীগণও- মজুরী ও বেতন পাইবার অধিকারী হইবে।

কোম্পানীর পরিচালক বা সংগঠকগণ প্রত্যেক অংশীদারের পক্ষ হইতে আমানতদার ও কোম্পানীর পরিচালক বা সংগঠকগণ প্রত্যেক অংশীদারের পক্ষ হইতে আমানতদার ও প্রতিনিধি হিসাবে কারবার পরিচালনা এবং উহার দেখাশুনা ও সংরক্ষণ করিয়া থাকে। এই জন্য নিছক সাংগঠনিক কাজের দরুন মুনাফার অংশ এবং বেতন লাভ করার তাহাদের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে।

এই ধরনের কোম্পানীতে একশ্রেণীর লোকের পক্ষে অত্যদিক পুঁজির বলে সর্বাধিক মুনাফা লুটিবার সুযোগ থাকা কিছুতেই সঙ্গত নয়। এইরূপ সুযোগ প্রথম দিকেই বন্ধ করিয়া দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কোম্পানীর সর্বাত্মক অংশীদার হইতে বা সর্বাপেক্ষা বেশী অংশ খরিদ করিতে কাহাকেও দেওয়া যাইতে পারে না। সেজন্য কম মূল্যের অংশ প্রচুর পরিমাণে জনগণের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়াই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। তাহাতে অধিকসংখ্যক লোকের পক্ষে উহার অংশ খরিদ করার এবং তাহা হইতে বা সর্বাপেক্ষা বেশী অংশ খরিদ করিতে কাহাকেও দেওয়া যাইতে পারে না। সেজন্য কম মূল্যের অংশ প্রচুর পরিমাণে জনগণের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়াই অধিকতর যুক্তযুক্ত। তাহাতে অধিকসংখ্যক লোকের পক্ষে উহর অংশ খরিদ করার এবং তাহা হইতে লভ্যাংশ লাভ করার সুযোগ হইতে পারে। ইসলামী অর্থনীতিতে যে সম্পদ এককেন্দ্রীভূত হওয়া(Accumultionn of wealth) নিষিদ্ধ তাহা এই উপায়েই কার্যকর হওয়া সম্ভব।

মোটকথা অর্থোৎপাদনের জন্য যে কোন সৎব্যবসায় হউক না কেন তাহাতে যদি লভ্যাংশ কাহারো জন্য পূর্ব হইতে নির্দিষ্ট না হয়, -এইভাবে যে, তাহাকে শতকরা এত টাকা মুনাফা দেওয়া হইবে, তবে ইসলামী অর্থনীতি অনুসারে তাহা সম্পূর্ণ জায়েয। কিন্তু বর্তমান যুগে লোকেরা নিতান্ত বুদ্ধিহীনতার দরুন এই হালাল উপার্জনকেই- জাতীয় পুনর্গঠনমূলক এই সৎব্যবসায়কে একটু সামান্য কারণে হারাম করিয়া তুলিয়াছে। অসংখ্য লোকের পুঁজি মিলিত হইয়া বিশেষ কোন কাজ নিয়োগ হইলে যে তাহাতে মুনাফা হইবে এবং পূর্ব-নির্দিষ্ট হারে তাহা বন্টন করা যাইবে এ কথা কোন কালের কোন দেশের মানুষেই নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারে না। তাহা নিশ্চয় করিয়া বলিলেই এবং শতকরা নির্দিষ্ট হারে ‘মুনাফা’ (সুদ) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেই সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে অবৈধ ও শোষণমূলক উপায় অবলম্বন করিতে হইবে। কারণ যদি তাহাতেহ মোটেই লাভ ভ না হয়- যদি লোকসান হয়, তবে সুদ বাবাদ দেয় টাকা কোথা হইতে আসিবে? যদি মুনাফা হয়, কিন্তু দেয় সুদের সমান পরিমাণে না হয় তাহা হইলে অবশিষ্ট টাকা যে কোন রকমেই হউক, সংগ্রহ তো করিতে হইবে; কিন্তু তাহা কিরূপে এবং কোথা হইতে আসিবে? আর তাহাতে যুদি প্রচুর লাভ হয় তবে প্রত্যেকের অংশ মূল্যের মাথাপিছু যাহা লাভ হইল, তাহার বাবদ সেই পরিমাণ লাভ না দিয়া দেওয়া হইবে নির্দিষ্ট হারে সুদ- যাহা লভ্যাংশের অনেক কম। প্রকৃতপক্ষেই ইহাই হইতেছে শোষণ, ইহাই হইতেছে পরস্বাপহরণ এবং ইহাই হইতেছে সর্বগ্রাসী পুঁজিবাদের মূল ভিত্তি। উপরন্তু এই ধরনের কারবাররের প্রতি জনগণের একবিন্দু সহানুভূতি ও সহৃদয়তা থাকিতে পারে না।

ইসলামী অর্থনীতি এই সকল জুলুম-শোষণ ও পুঁজিবাদের এই পথ চিরতরে বন্ধ করিয়া দিয়াছে। এই ধরনের মূলধনভিত্তিক কারবারে কাহাকেও নির্দিষ্ট মুনাফার নামে ‘সুদ’ দেওয়া যাইতে পারে না- ইহা সম্পূর্ণরূপে হারাম। বরং ইসলামী সমাজে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দেওয়ার শর্তেই এ ধরনের কারবার হইতে পারে- আর তাহাতে জুলুম ও শোষণমূলক কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়া মোটেই সম্ভব নয়।

প্রথমপুঁজির অংশ অনুযায়ী লভ্যাংশ বন্টন করা অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা একমাত্র সহজ পন্থা। ইহার প্রতি জনগণের আন্তরিক অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ এই উপায়েই সম্ভব হইতে পারে। কারণ, জনগণ মনে করে যে, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে বিপুল অর্থসম্পদ উপার্জিত হইবে তাহা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতির পকেটে কুক্ষিগত হইয়া যাইবে না, তাহা অসংখ্য লোকের মধ্যে বিস্তৃত হইয়া পড়িবে।

দ্বিতীযত এইরূপ প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শ্রমিক ও মজুরের কাজ করার সুযোগ হয় এবং তাহারা ইহা হইতে নিজেদের জীবিকা-নির্বাহের উপায় লাভ করিতে পারে। এই পর্যায়ে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি স্মরণীয়, তিনি বলিয়াছেন:

(আরবী)

ব্যবসায়ী মাত্রই কিয়ামতের দিন অপরাধী হিসাবে পুনরুত্থিত হইবে। তবে তাহারা নয়, যাহারা ব্যবসায় কার্যে আল্লাহকে পূর্ণমাত্রায় ভয় করিয়াছে, সংশ্লিষ্ট জনগণের প্রতি কল্যাণপূর্ণ ব্যবহার এবং ব্যবসায় ক্ষেত্রে পূর্ণ সততা রক্ষা করিয়াছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন