hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৭২
পারস্পরিক কৃষি নীতি
কিন্তু ইসলামী অর্থনীতি, ভূমিস্বত্ব ভোগ করার কেবল এই একটিমাত্র পন্থাই সংগত বলিয়া ঘোষণা করে নাই। কোন লোক নিজে জমি চাষ করিতে না পারিলে- যেমন জমির মালিক যদি বৃদ্ধ, পংগু, শিশু বা স্ত্রীলোক হয়, কিংবা নিজে চাষ করিতে না চাহিলে, সে অন্যের দ্বারা তাহা চাষ করাইতে পারে। নবী করীম (ﷺ) অন্য একটি হাদীসে ইরশা করিয়াছেন:

(আরবী)

যাহার অতিরিক্ত জমি আছে, তাহা হয় সে নিজে চাষ করিবে, না হয় সে তাহার কোন ভাইয়ের দ্বারা চাষ করাইবে বা তাহাকে চাষ করিতে দিবে।

অপর এক হাদীসের ভাষায়: (আরবী)

সেই জমি নিজেরা চাষ কর কিংবা অন্যদের দ্বরা চাষ করাও।

এই পর্যায়ে রাফে ইবনে খাদী (রা) বর্ণিত অপর একটি হাদীসও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

তিনজন লোক কৃষিকাজ করে। এক, যাহার নিজের জমি আছে; সে নিজে উহা চাষাবাদ করিবে। দ্বিতীয়, যাহাকে জমি চাষ করিবার জন্য দান করা হইবে, সে তাহাই চাষাবাদ করিবে যাহা তাহাকে দেওয়া হইয়াছে এবং তৃতীয়, যে লোক নগদ টাকার বিনিময়ে জমি কেরায়া বা ইজারা লইয়াছে।

বস্তুত অপরের দ্বারা ভূমি চাষ করানো ইসলামী অর্থনীতির দৃষ্টিতে কিছুমাত্র নাজায়েয বা শোষণমূলক ব্যবস্থা নহে। সম্প্রতি এই যে ধুয়া উঠিয়াছে- লাঙ্গল যাহার জমি তাহার, ‘যে নিজ হাতে জমি চাষ করিবে না, জমির ফসলের উপর তাহার কোন অধিকার নাই’ এবং এইসব শ্লোগানের মাধ্যমে যে নূতন ভূমিনীতি প্রচার করা হইতেছে, তাহা আর যাহাই হউক, ইসলামী ভূমিনীতি যে নয়, তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। অপরের দ্বারা জমি চাষ করাইবার কাজ স্বয়ং নবী করীম (ﷺ) এবং তাঁহার অসংখ্য সাহাবী করিয়াছেন।

খায়বর বিজয়ের ইতিহাস উপরে সংক্ষেপে আলোচিত হইয়াছে। তাহা হইতে একথা জানা গিয়াছে যে, নবী করীম (ﷺ) খায়বরে বিজিত বিরাট এলাকার অর্ধেক জমি রাষ্ট্রায়ত্ব করিয়াছিলেন এবং বাকি অর্ধেক বিজয়ী মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিয়াছিলেন। মুজাহিদগণ নিজ নিজ অংশের মালিক ও দখলদার হইয়াছিলেন। অতঃপর এই উভয় ধরণের জমিকে খায়বরের বংশানুক্রমিক কৃষক (ইয়াহুদী)-দের নিকট পারস্পরিক ভূমি চাষের () শর্তে সোপর্দ করা হয়। নবী করীম (ﷺ) ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে তাহাদের সহিত সমস্ত ফসলের অর্ধেক দানের শর্তে ভূমি চাষের চুক্তি করিয়াছিলেন:

(আরবী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলিয়াছেন: নবী করীম (ﷺ) খায়বারবাসীদের সহিত অর্ধেক ফসল দানের শর্তে ভূমি-চাষের চুক্তি করিয়াছিলেন।[এই হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর ইহাম তিরমিযী লিখিয়াছেন:

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) –এর সাহাবীদের অনেকেই এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁহারা অর্ধেক, তিন ভাগের এক ভাগ কিংবা চার ভাগের এক ভাগ ফসলের বিনিময়ে পারস্পরিক কৃষি কাজ করায় কোন দোষ দেখিতে পাইতেন না।]

হযরত উমর ফারূক (রা) খায়বরে প্রাপ্ত তাঁহার নিজের অংশের জমি এই পারস্পরিক কৃষিনীতি () অনুসারেই ভোগ করিয়াছিলেন।

ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, খায়বরের যে সব জমি বিজয়ী মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করা হইয়াছিল, তাঁহারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ অংশের মালিক ছিলেন। ইতিহাস হইতে জানা যায়, তাঁহাদের প্রত্যেকের অংশের জমির সীমানাও নির্দিষ্ট ও চিহ্নিত করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। অথচ কোন মুজাহিদই নিজ অংশের জমি নিজে চাষ করন নাই। বরং এই সমস্ত জমিই তথাকার চাষী ইয়াহুদীদিগকে অর্ধেক ফসল দানের শর্তে চাষ করিতে দিয়াছিলেন।

শুধু খায়বরের ব্যাপারই নয়, হিজরতের পরে আনসারগণ যখন নিজেদের জায়গাজিমি মুহাজিরদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়ার প্রস্তাব করিয়াছিলেন, তখন স্বয়ং নবী করীম (ﷺ)-এ তাহা করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন। অতঃপর আনসারগণ মুহাজিরদের সহিত ‘পারস্পরিক কৃষিনীতি() অনুসারে কাজ করার চুক্তি করেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বুখারী শরীফ এই হাদীসটি বর্ণিত হইয়াছে:

(আরবী)

আনসারগণ নবী করীম (ﷺ)-কে বলিলেন- আমাদের খেজুরের বাগান আমাদের ও মুহাজির ভাইদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেন। নবী করীম (ﷺ) বলিলেন ‘না’। অতঃপর আনসারগণ মুহাজিরদিগকে বলিলেন- আপনারা আমাদের জমি-ক্ষেতে কাজ ও শ্রম করুন, আমরা আপনাদিগকে ফসলের অংশ দান করিব। এই কথায় মুহাজিরদের রাযী হইলেন।

‘পারস্পরিক কৃষিনীতি অনুযায়ী ভূমি চাষ করার প্রথা ইসলামী রাষ্ট্র মদীনায় বিশেষভাবে প্রচলিত ছিল। ইমাম বাকের (র) হইতে বুখারী শরীফে বর্ণিত হইয়াছে তিনি বলিয়াছেন:

(আরবী)

ফসলের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা এক চতুর্থাংশের বিনিময়ে জমি চাষ করার কাজ করিত না- মদীনায় মুহাজিরদের এমন কোন পরিবারই ছিল না।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা) বলিয়াছেন:

(আরবী)

তিনি নবী করীম (ﷺ) এবং হযরত আবূ বকর, উমর ও উসমান (রা)-এর আমলে তিন ভাগের এক ভাগ কিংবা চার ভাগের এক ভাগ ফসলের বিনিময়ে জমি কেরায়া দিয়াছেন। এখন পর্যন্ত তিনি এই নিয়মেই চাষাবাদের কাজ করাইতেছেন।

হযরত হাসান বসরী (তাবেয়ী) বলিয়াছেন:

(আরবী)

ইহাতে কোনই দোষ নাই যে, দুইজনের মধ্যে একজনের জমি হইবে এবং উভয়েই উহা হইতে ফসল ফলাইবার জন্য অর্থ ব্যয় করিবে, (কিংবা শ্রম করিবে) আর উহাতে যে ফসল ফলিবৈ, তাহাতে উভয়ই সমান অংশীদার হইবে।

তিনি আরো বলিয়াছেন, ‘ইমাম জুহরীও ইহা সংগত এবং জায়েয বলিয়া রায় প্রকাশ করিয়াছেন।

তাহাবী () নামক বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ কালীব-বিন ওয়ায়েল হইতে বর্ণনা উদ্ধৃত হইয়াছে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ বিন ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা করিলেন।

(আরবী)

এক ব্যক্তি আমার নিকট আসিল, তাহার নিকট জমি এবং উহার সেচের জন্য জলাশয় আছে; কিন্তু তাহার বীজ ও গরু বা কৃষিযন্ত্র নাই। আমি তাহার জমি অর্ধেক ফসল দেওয়ার বিনিময়ে গ্রহণ করিলাম এবং নিজের বীজ ও গরু দিয়া কৃষিকার্য সম্পন্ন করিলাম। অবশেষে উহার ফসল আমরা উভয়ই আধা-আধি ভাগ করিয়া লইলাম। (এইকাজ সংগত হইল কিনা জিজ্ঞাসা করা হইল) উত্তরে হযরত আবদুল্লাহ বলিলেন () ‘উত্তম’।

বস্তুত ফসলের কোন নির্দিষ্ট অংশের ভিত্তিতে পারস্পরিক কৃষিকাজ সম্পূর্ণ জায়েয। তবে ইহাতে কোন এক পক্ষের উপরই কোনরূপ জুলুম হইতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেন:

(আরবী)

পাস্পরিক কৃষিকাজকে নবী করীম (ﷺ) নিষিদ্ধ করেন নাই; বরং তিনি পরস্পরের প্রতি দয়াবান ও সহানুভূতি সম্পন্ন হইবার নির্দেশ দিয়াছেন।

উপরের দীর্ঘ আলোচনা হইতে নিঃসন্দেহে জানা গেল যে, পারস্পরিক কৃষিনীতি () ইসলামে সম্পূর্ণরূপে জায়েয। ফিকাহ শাস্ত্রের ইমামগণ ইহাকে সমর্থন করিয়াছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রা) হইতে এ সম্পর্কে নিষেধ ও নেতিবাচক যে উক্তি করিয়াছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রা) হইতে এ সম্পর্কে নিষেধ ও নেতিবাচক যে উক্তি বিভিন্ন কিতাবে উল্লিখিত হইয়াছে তাহা তাঁহার সাধারণ নীতি নয়। তিনি কেবল ইরাকের শস্য-শ্যামল উর্বর ভূমির ক্ষেত্রেই পারস্পরিক কৃষিনীতিকে সমর্থন করেন নাই। তাহার কারণ এই যে, তিনি নীতিগতভাবেই ইহাকে সংগত মনে করিতেন না বরং ইহার প্রকৃত কারণ এই যে, উল্লিখিত ভূমিগুলি রাষ্ট্রয় সম্পত্তি ছিল না। সেখানকার জিম্মিদের মালিকানার জমি ছিল, তাহা অনিশ্চিত ছিল এবং সে সম্পর্কে বিশেষ মতভেদ দেখা দিয়াছিল। কাজেই তাহা কোন ব্যক্তির পক্ষে খরীদ করা এবং অপরের দ্বারা চাষ করানোকে তিনি সমর্থন করিতে পারেন নাই। অন্যথায় মূলত অপরের দ্বারা জমি চাষ করানোকে তিনি কখনই নিষিদ্ধ বলিয়া মত প্রকাশ করেন নাই।

দ্বিতীয় কথা এইরূপ কৃষিনীতি হযরত নবী করীমের (ﷺ) সময় হইতেই খুলাফঅয়ে রাশেদুনের কাল পর্যন্ত দ্বিধা-সংকোচহীনভাবে সকল মুসলমানের মধ্যেই প্রচলিত ছিল কেহই এইরূপ কাজকে নিষিদ্ধ মনে করেন নাই। কাজেই আজ ইহা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনই কারণ থাকিতে পারে না। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম লিখিয়াছেন:

(আরবী)

যে নিয়মে রাসূলে করীম (ﷺ) খুলাফায়ে রাশেদুন এবং সাহাবায়ে কিরাম ভূমির ব্যবস্থা করিয়াছেন তাহা নিঃসন্দেহে ও পুরাপুরিভাবে সুবিচারপূর্ণ ব্যবস্থা। উহা জায়েয হওয়ার কোনই সন্দেইহ থাকিতে পারে না।

ইবনে আবূ লাইলা, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মদ সকল মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদ –ইমাম আহমাদ, ইবনে খুজাইমা, ইবনে শুরাইহ প্রমুখ ফিকাহবিদগণ বলিয়াছেন: ‘পারস্পরিক জমি সেচ ও পারস্পরিক কৃষিকাজ সমবেতভাবে সম্পন্ন করা যেমন জায়েয, অনুরূপভাবে এককভাবেও ইহা করা জায়েয। খায়বর সংক্রান্ত হাদীসের বাহিত্য তাৎপর্য হইতে ইহাই প্রমাণিত হয় এবং ইহাই সর্বজন গ্রহীত নীতি। খায়বরে পারস্পরিক কৃষিনীতি জায়েয হইয়াছিল শুধু পানি সেচের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে, এইরূপ দাবি করা কিছুতেই সংগত হইতে পারে না বরং উহা হইতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, স্বতন্ত্রভাবেও পারস্পরিক কৃষিনীতি সম্পূর্ণ জায়েয।

ফিকাহবিদদের মতে নিম্নলিীখত চারভাবে পারস্পরিক কৃষিকার্য জায়েয:

(ক) জমি ও বীজ জমি-মালিক দিবে এবং কৃষিযন্ত্র ও শ্রম দিবে চাষী।

(খ) জমি, কৃষি-যন্ত্র ও বীজ সবই দিবে জমি-মালিক আর চাষী শুধু শ্রম করিবে ও ফসল ফলাইবে।

(গ) জমি-মালিক শুধু জমি দিবে এবং অন্যান্য সবকিছু দিবে চাষী।

(ঘ) জমি ও কৃষি যন্ত্র জমির মালিক দিবে এবং বীজ ও শ্রম দিবে চাষী।[(আরবী)]

শেষোক্ত ধরনের পারস্পরিক কৃষিকার্য সম্পর্কে কোন কোন ফিকাহবিদ আপত্তি জানাইলে ইমাম আবূ ইউসুফ উহাকে বৈধ ঘোষণা করিয়াছেন।

তৃতীয় কথা, ইসলামী অর্থনীতি ব্যক্তি-মালিকানার ব্যাপারে জমি বা নগদ টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়া দেয় নাই। সংগত উপায়ে এক জনের হাতে যত পরিমাণ জমিরই সমাবেশ হউক না কেন, ইসলাম তাহা নিষেধ করে নাই। এই জমি সে নিজে চাষ করিবে, অপরকে ফসলের নির্দিষ্ট ভাগের বিনিময়ে চাষ করিতে দিবে, নগদ মজুরী দিয়া দিন মজুরের দ্বারা জমিতে কাজ করাইবে ফসল উৎপন্ন করিবে, অথবা নগদ টাকা লইয়া অপরকে এক ফসলের বা এক বৎসরের জন্য চাষ করিতে দিবে-ইসলামী কৃষিনীতিতে ইহার প্রত্যেকটি পন্থাই সংগত, তাহাতে সন্দেহ নাই। এই পর্যায়ে ইসলামের অর্থনীতি বিশারদ ও সর্বজনমান্য মনীষীদের মতও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

বস্তুত ইসলামী অর্থনীতি যখন বৃদ্ধ, পংগু, অন্ধ, শিশু এবং স্ত্রীলোক- যাহারা নিজ হাতে জমি চাষ করিতে পারে না তাহাদিগকেও জমির মালিক হওয়ার অধিকার দেয়, তখন অন্যের দ্বারা ভূমি চাষ না করাইতে পারিলে তহারা মালিকানা কিরূপে কার্যকর হইবে? তাহারা নিজেদের জমি নিজেরা চাষ করিতে পারে না শুধু এতটুকু কারণে তাহাদের মালিকানা কাড়িয়া লইতে হইবে?….. ইসলাম তাহা কিছুতেই বরদাশ তততরিতে পারে না।

স্বর্ণ রৌপ্য বা নগদ টাকার বিনিময়ে একজনকে জমি চাষ করিতে দেওয়া বা অন্যের জমি চাষ করিবার জন্য গ্রহণ করায় কোনই বাধা নাই। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেন:

(আরবী)

শুন্য জমি স্বর্ণ রৌপ্যের (নগদ টাকা) বিনিময়ে ইজারা লওয়া তোমাদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা

ইহা হইতে সকল জমি নগদ মূল্যে ভাড়ায় দেওয়া ও নেওয়া জায়েয প্রমাণিত হয়।

সহী মুসলিম শরীফে উল্লেখিত হইয়াছে, হিঞ্জিলা ইবনে কায়সুল আনসারী বলেন:

(আরবী)

আমি রাফে’ ইবনে খাদীস(রা)-কে সোনা-চাঁদির (নগদ টাকার) বিনিময়ে জমি ভাড়ায় লওয়া বা দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তিনি উত্তরে বলিয়াছিলেন: ‘তাহাতে কোন দোষ নাই’।

অপর এক হাদীসে বলা হইয়াছে, জমি কেরায়া লাগানোকে লোকেরা খুব মন্দ কাজ মনে করিতেছে বলিয়া যখন হযরত ইবনে আব্বাস (রা) শুনিতে পাইলেন, তখন তিনি বললেন:

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) তো বলিয়াছেন যে, তোমাদের একজন তাহার ভাইতে চাষের জন্য জমি দেয় না কেন? কিন্তু তিনি জমি ভাড়ায় লাগাইতে তো নিষেধ করেন নাই।

ইসলামী সমাজে যুগ যুগ ধরিয়া এইসব পদ্ধতিতেই জমি চাষ করার কাজ চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু পতনযুগের সূচনায় এবং বর্তমানের পতন যুগের চূড়ান্ত পর্যায়ে আসিয়া এক শ্রেণীর জাতীয়করণবাদী কর্তৃক এই সব পন্থাকেই অসংগত প্রমাণ করিবার চেষ্টা চালাইয়াছে। সাধারণতঃ তাহারা এই জন্য মার্কসসীয় যুক্তিধারারই আশ্রয় লইয়া থাকে। কিন্তু তাহারা এতটুকু লক্ষ্য করে না যে, মার্কস যে শোষণ ও বঞ্চনার তান্ডব নৃত্য দেখিয়া অন্যান্য উৎপাদন উপায়ের সঙ্গে সঙ্গ জমিরও ব্যক্তিগত মালিকানাকে অস্বীকার করিয়াছেন, তাহা জায়গীরদারী, জমিদারী সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজেই সম্ভব- মার্কস-ও এইসব সমাজেই তাহা দেখিয়াছিলেন। কিন্তু ইসলামের সুবিচারপূর্ণ অর্থনীতিতে- তথা ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে- অনুরূপে শোষণ ও বঞ্চনার কোন অবকাশ থাকিতে পারে না। তথায় অপরর জমি চাষ করিয়া কোন চাষী সমস্ত ফসল মালিকের বাড়ি পৌঁছাইয়া দিয়া শুন্য হস্তে বাড়ি ফিরিয়া যাইতে বাধ্য হয় না, মোটা অংশ সে নিজের ঘরে নিশ্চয়ই লইয়া যাইতে পারে। আর তাহাতেও তাহার মৌলিক প্রয়োজন পূর্ণ না হইলে ইসলামী রাষ্ট্র তাহা পরিপূরণের জন্য দায়ী থাকে। কাজেই মার্কসীয় মতবাদের ভিত্তিই এখানে বর্তমান তাকিবে না এবং জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ও পারস্পরিক কৃষিনীতিকেও নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিবে না।

সম্পত্তির জাতীয়করণবাদীরা কেবল মার্কসীয় দর্শন পেশ করিয়াই ক্ষান্ত হয় না, দু-একটি হাদীসও যে তাহারা নিজেদের দাবির অনুকূলে পেশ করে না, এমন নয়। যথা হযরত রফে ইবনে খাদীস-বর্ণিত নিম্নলিখিত হাদীসটি:

(আরবী)

রাসূলে করীম (ﷺ) আমাদের একটি উপকারী কাজ হইতে বিরত থাকিতে বলিয়াছেন। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে কাহারো জমি থাকিলে তাহা উৎপন্ন ফসলের অংশ বা নগদ টাকার বিনিময়ে অপরকে চাষ করিতে দিতে নিষেধ করিয়াছেন।

কিন্তু এই হাদীসটি উহার বর্তমান শব্দসমূহ সহকরে কিছুতেই গ্রহণ করা যাইতে পারে না। কারণ উল্লিখিত হাদীসটি একে দীর্ঘ ও বিস্তারিত হাদীসের একটি অংশ মাত্র। কাজেই উহাকে উহার মুল হাদীসের সহিত মিলাইয়া দেখিতে হইবে। সেই পূর্ণ হাদীসটি এইরূপ: হিঞ্জিলা ইবনে কায়সুল আনসারী বলেন, ‘আমি রাফে’ ইবনে খাদীস (রা)-কে “সোনা-চাদির” বিনিময়ে জমি ভাড়া দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, ‘ইহাতে কোন দোষ নাই।’ অতঃপর তিনি আরো বলেন:

(আরবী)

আসল ব্যাপর এই যে, নবী করীম (ﷺ)-এর প্রাথমিক সময়ে লোকেরা খালের তীরে অবস্থিত জমির বিশেষ কোন অংশে যে ফসল জন্মিবে, উহার অংশ দেওয়ার বিনিময়ে অপরকে জমি চাষ করিতে দিত- ভূমি চাষ করিতে দেওয়ার ইহাই ছিল তখন সাধারণ নিয়ম। কিন্তু পরিনামে উহার এই অংশের ফসল নষ্ট হইয়া যাইত। ফলে চাষী বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইত এবং নিজ শ্রমের ফল হইতে বঞ্চিত হইত। এই জন্য নবী করীম (ﷺ) এই কাজ হইতে মুসলমানদিগকে বিরত থাকিতে আদেশ করিয়াছেন।

পূর্ণ হাদীসটি হইতে জানা গেল যে, অপরের দ্বরা জমি চাষ করানোকে নবী করীম (ﷺ) নিষিদ্ধ করেন নাই; বরং আরবের তৎকালীন প্রচলিত অবিচার ও শোষণমূল শর্তে চাষ করানোকে তিনি নিষেধ করিয়াছিলেন মাত্র। কারণ এইরূপ শর্তে উভয়ের মধ্যে একজনের লোকসান হওয়া নিশ্চিত ছিল। এই কারণে ইহা সুদের অন্তর্ভুক্ত হইয়া পড়িতেছিল ও শোষণের কারণ হইয়াছিল।

এতদ্বীত রাফে’ ইবনে খদীজের বিভিন্নভাবে বর্ণিত ‘নিষেধ বাণী’ই মূলত সত্য নহে। কারণ হযরত রাফে’ নবী করীমের নিকট যখন এই নিষেধবাণী শুনিয়াছিলেন তখন আসলে সাধারণভাবে এই কাজকেই নিষিদ্ধ করা হয় নাই; বরং বিশেষ অবস্থার দরুনই নিষিদ্ধ করা হইয়াছিল। ইহাতে প্রমাণ এই যে, আবূ দাউদ ইবনে মাজাহ্‌ ও নাসায়ী গ্রন্থে ওরওয়া কর্তৃক বর্ণিত হইয়াছে, হযরত যায়দ বিন সাবিত (রা) বলিয়াছেন:

(আরবী)

‘আল্লাহ রাফে’কে ক্ষমা করুন। আল্লাহর শপথ, এই নিষেধমূলক হাদীস সম্পর্কে রাফে অপেক্ষা আমিই অধিক ভাল জানি। কারণ, প্রকৃত ব্যাপার এই ছিল যে, দুই ব্যক্তি (জমি লইয়া)পরস্পর রক্তারক্তি করিয়া নবী করীমের খিদমতে হাজির হইয়াছিল, ইহা দেখিয়া (এবং সমস্ত ব্যাপার জানিতে পারিয়া) তিনি বলিলেন: ‘ইহাই যদি তোমাদের অবস্থা হইয়া থাকে, তাহা হইলে তোমরা জমি’ কেরায়া’ দেওয়া বন্ধ করিয়া দাও’ কিন্তু রাফে’ পূর্বের কথা কিছুতেই শুনিতে পান নাই। তিনি শুধু শেষ কথাটি ‘জমি কেরায়া দেওয়া বন্ধ করিয়া দাও’ শুনিতে পাইয়াছিলেন।

স্বয়ং হযরত রাফে’র নিম্ন লিখিত কথা হইতেও ইহাই প্রমাণিত হয় যে, তদানীন্তন আরব-সমাজের প্রচলিত ভুল ও জুলুম-মূলক রীতির কারণেই নবী করীম (ﷺ) উক্ত ভুল পন্থায় জমির চাষাবাদ করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন। রাফে’ ইবনে খাদীজ বলেন:

(আরবী)

আমরা মদীনার অধিকাংশ অধিবাসী কৃষিজীবি ছিলাম, আমাদের কেহ যখন জমি কেরায়া দিত, তখন সে বলিত, জমির এই খন্ডের ফসল আমার আর ঐ খন্ডের ফসল তোমার। কিন্তু অনৈক সময় দেখা যাইত যে, ঐ জমির একখন্ডে হয়ত ফসল জন্মিয়াছে; আর অপর খন্ডে কিছুই জন্মে নাই। তখন নবী করীম (ﷺ) এইভাবে জমি চাষ করিতে নিষেধ করিলেন।

কাজেই এই নিষেধমূলক হাদীস মূলতঃ একটি বিশেষ অবস্থা বা অবাঞ্ছনীয় ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট- উহা সাধারণ নিষেধ নয়।

কিন্তু এক শ্রেণীর ‘চিন্তাশীল’ লোক হাদীসের আগাগোড়া কিছুই না জানিয়া বা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ মাত্র না করিয়া, পূর্বাপর সম্পর্কহীনভাবে মধ্যখান হইতে একটু লইয়া নিজেদের মনগড়া মতবাদের প্রমাণস্বরূপ উহাই পেশ করিতে চেষ্টা করেন। তাঁহাদের মতে ষষ্ঠ শতাবঈতে ইসলামের বিরাট বৈপ্লবিক অভ্যত্থান হইয়াছিল শুধু জমিদার ও জোতদারদের নিকট হইতে জমি কাড়িয়া লইয়া ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই কথা যে আদৌ সত্যভিত্তিক নয়, কুরআন হাদীস এবং ইসলামের ইতিহাস হইতেও প্রমাণিত নয়, তাহা ইসলামভিত্তিহক প্রত্যেক ব্যক্তিই বুঝিতে পারেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন