hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

২০৩
অর্থনীতির দৃষ্টিতে ম্যালথুসের মতবাদ
কিন্তু আদর্শবাদ ও বৈজ্ঞানিক অর্থনীতির দৃষ্টিতে বিচার করিলে নিঃসন্দেহে প্রমানিত হইবে যে, ম্যালথুসের মতবাদ সম্পূর্ণ ভুল এবং তাহার প্রদর্শিত পন্থা মানবতার পক্ষে মারাত্মক। জনসংখ্যাবৃদ্ধি সম্পর্কে ম্যালথুসের ধারণা যে ভুল, তার বহু পূর্বেই তাহার সহযোগী অন্যান্য অর্থনীতিবিদগণই প্রমাণ করিয়াছেন। কারণ, প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহার বৃদ্ধি পায় না, বৃদ্ধি পায় ক্রমিক সংখ্যার অনুপাতে। এবং মানব বংশের সংখ্যা বৃদ্ধি অপেক্ষা মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহের প্রয়োজন পূর্ণ করার দ্রব্যসামগ্রীই অধিকতর তীব্রগতিতে বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর সর্বত্র খাদ্যপণ্য উৎপাদনের ক্রমশ বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিতেছে। শুধু তাহাই নয়, ম্যালথুসের এই মত আধুনিক শিল্প বিপ্লব ও অর্থোৎপাদনের নাবাবিষ্কৃত পথ ও পন্থা উদ্ভাবিত হওয়ার বহু পূর্বে প্রচারিত হইয়াছিল। তিনি কেবল জমিকেই অর্থ ও খাদ্যোৎপাদনের একমাত্র উপায় বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলেন। কেননা আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উদ্ভাবনীর যুগ তখনো শুরু হয় নাই। ইহাতো উনবিংশ শতাব্দীর ব্যাপার। তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভূমিকাকেও কোন গুরুত্ব দেন নাই। কাজেই বর্তমান শিল্প ব্যবসা’র প্রেক্ষিতে ম্যালথুসের মত কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। বস্তুত অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে বর্তমান জনসংখ্যা কোন সমস্যা-ই নয়। এখানকার সময়ে সর্বাপেক্ষা বড় সমস্যা হইল সম্পদ বন্টনের।

বস্তুত ‘অতিরিক্ত জনসংখ্যা’ কথাটি একান্তই আপেক্ষিক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব। ফল জনসংখ্যা ও খাদ্য পরিস্থিতির মধ্যে সহজেই সামঞ্জস্য রক্ষিত হইতে পারে। অধ্যাপক কানান ইহাকে বলিয়াছে Optimum population অর্থাৎ বাঞ্ছনীয় জনসংখ্যা।

লোকসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে পৃথিবীতে খাদ্য-সামগ্রী মওজুদ নাই বলিয়া দাবি করা মূলতই ভুল। প্রকৃতপক্ষে জমির বুকে বিশ্বস্রষ্টা এত বেশী পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য এবং সব মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করার উপযোগী সামগ্রী সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিছুকাল পূর্বে বৃটেনের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা ডক্টর পি. ডি. সুখাতমি বৃটেনের রয়াল স্ট্যটিষ্টক্যাল সোসাইটির নিকট জনসংখ্যা ও খাদ্যোৎপাদন সম্পর্কে এক রিপোর্ট পেশ করিয়া বলিয়াছিলেন যে, বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ এবং উৎপাদনের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাইয়া আসিয়াছে। সে কারণে কোন সময়ই পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্দির হার খাদ্যোৎপাদনের হারকে ছাড়াইয়া যাইতে পারে নাই। অর্থাৎ প্রতি বৎসর পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়িয়াছে, তেমনি খাদ্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাইয়াছে।

ডক্টর সুখাতমি হিসাব করিয়া দেখাইয়াছেন যে, পৃথিবীতে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহাতে ১৯৮০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা যাহা দাড়াইবে তাহার চাহিদা মিটাইতে হইলে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ এবং ২০০ সালে তিনগুণ বৃদ্ধি করিতে হইবে। -এই কথায় মাথা চক্কর দেওয়ার কোন কারণ নাই। কেননা ঐ পরিমাণ খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য বছর খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ বাড়াইতে হইবে শতকরা ৩ ভাগেরও কম। আর উহা অসম্ভব হওয়ার কোন কারণ নাই। কিছুদিন পূর্বে এক ইংরেজী পত্রিকায় R.G. Hainsworth এর লিখিত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল How may people can earth feed- লেখক পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের উৎপাদনী ক্ষমতা, জমির প্রকার-ভেদ, পানিসেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারত আলোচনা করার পর উপসংহারে সিদ্ধান্তরূপ লিখিয়াছেন:

উল্লিখিত পরিকল্পনা অনুসারে একতা স্পষ্টরূপে অনুমিত হয় যে, গোটা পৃথিবীর সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার অধিবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী উৎপানের যোগ্যতা রহিয়াছে। যে যাহাই হউক, দুনিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুমান এবং মাটির খাদ্যোৎপাদক ক্ষমতা ও উৎপাদন প্রণালীর উৎকর্ষ সাধন করিলে পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যার তিনগুণ বেশী অধিবাসীর জন্য বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা খুবই সহজ হইবে বলিয়া আশা করা যায়। আর লোক-বৃদ্ধির বর্তমান প্রমিক হার যদি স্থায়ী ও অব্যাহত থাকেও তবুও উল্লিখিত সংখ্যা পর্যন্ত পৌছিতে অন্তত একটি শতাব্দী লাগিবে।

এতদ্ব্যাতীত, ইহা বিবেচনার বিষয় যে, পৃথিবীর এক ভাগ মাটি এবং তিন ভাগ পানি। এই তিন ভাগ হইতে শতকরা মাত্র এক ভাগ খাদ্য পাওয়া যায়, বাকি ৯৯ ভাগ লাভ করিতে হয় মাটির উপর হইতে। অথচ বিশেষজ্ঞগণের মত নদ-নদী-সমুদ্র হইতে আরও অনেক বেশী খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়া সম্ভব। সমুদ্রের এক কিউবিক মাইল পানিতে প্রায় চৌদ্দ কোটি টন সাধারণ লবন আছে। তাহা ছাড়া আছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ব্রোমাইড। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, যেহেতু সমুদ্রর পানিতে ২০ হইতে ৩০ গুণ অধিক কার্বণ ডায়োক্সাইড রহিয়াছে, সেইহেতু সেখানে অধিক পরিমাণ গাছপালা জন্মানোর সুযোগ আছে। সর্বোপরি, পানি জগতে মৎস্য-সম্পদ অফুরন্ত। এই অবস্থা পর্যালোচনা করিয়া জাতিসংঘের খাদ্য ওকৃষিসংস্তার বিশেষজ্ঞগণ মৎস্য ও জলীয় উদ্ভিদ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং উহা খাদ্যের জন্য আহরোণের ব্যবস্থা উন্ন ব্যবস্থা, মৎস্যকুলে সংখ্যা বৃদ্ধির আয়োজন এবং আহারযোগ্য জলীয় উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করিলে মানুষের খাদ্যসমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না হউক, বহুল পরিমাণে সমাধান হইবে।

বস্তুত দুনিয়ার মানুষ এক দিকে চরম স্বার্থপরতা ও সর্বগ্রাসী লোভ ও লালসার দরুন এবং অন্যদিকে প্রকৃত-জয়ের দুরন্ত সাহস ও উচ্চাশার অবাবহেতু অন্যান্য সকর মানুষের জন্য খাদ্যসংগ্রহের দ্বারা রুদ্ধ করিয়া দিয়াছে। আসলে খাদ্যাভাব বা খাদ্যসমস্যা বলিতে কিছুই নাই। জীবিকার অনুসন্ধান, খাদ্যোৎপাদনের নূতন নূতন পথ ও উপায় অবলম্বন এবং উৎপন্ন খাদ্যের সুবিচারপূর্ণ বন্টনের ব্যবস্থা না করা, আর গভীর সহানুভূতিপূর্ণ উদার মানবীয় দৃস্টিভংগীর নিদারুণ অভাবই বিশ্ব-মানবকে বর্তমান কঠিন দুর্দশায় নিক্ষিপ্ত করিয়াছে। দুনিয়ার কোন কোন অংশে অজিও খাদ্যপণ্যের এমন প্রাচুর্য রহিয়াছে, যাহা সংশ্লিষ্ট দেশের সমগ্র অধিবাসীদের প্রয়োজনের মূল পরিমাণ অপেক্ষা অনেক বেশী। কিন্তু সেই সব দেশে কৃত্রিম উপায়ে অভাব ও চাহিদা সৃষ্টির জন্য খাদ্যপণ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। কোথায়ও খাদ্যপণ্য গুদামজাত করিয়া, খোলা বাজার হইতে লুপ্ত করিয়া, কালোবাজারে বিক্রয় করিয়া নিদারুণ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করা হয়। এই ধরনর দুর্ভিক্ষের ফলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ মৃত্যুর কবলে ঢলিয়া পড়িতে বাধ্য হয়। ইহা অপেক্ষা মারাত্মক দুঃসহ দৃশ্য দেখা যায় সেইসব দেশে, যেখান একদিকে খাদ্যপণ্যের আকাশছোঁয়া স্তুপ রহিয়াছে, অন্যদিকে পরিতৃপ্ত ও ভরশা-পেটের লোকদের পাশাপাশি কোটি কেটি অন্নহীন, বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন মানুষ হামাগুড়ি দিয়া চলা। একই দেশের অধিবাসীদের মধ্যে খাদ্য প্রাচুর্যে পরিতৃপ্ত উজ্জ্বল মুখের স্বতঃস্ফূর্ত হাসিও দেখা যায়, আবার ক্ষুধার্ত মানবদেহের মালিন্য ও কান্নাভারাক্রান্ত মুখমন্ডলেও এত বেশী দেখা যায় যেন তাহার কোন ইয়ত্তা নাই।

বর্তমান দুনিয়ার সমগ্র লোকসংখ্যা ও খাদ্যপণ্যের পরিমাণ যাচাই করিয়া দেখিলে এবং বৈজ্ঞানিক পন্থানুশীলনের ফলে খাদ্যপণ্য বৃদ্ধিলাভের সম্ভাবনা লক্ষ্য করিলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, আজিকার লক্ষ-কোটি নির্দোষ মানুষকে কঠোর ক্ষুধা, অনশন ও দুর্ভিক্ষে পীড়িত করিয়া তাহাদের বুকের তাজা তপ্ত রক্তধারা নিঃশেষে শুষিয়া লওয়ার জন্য মানব রচিত বিপর্যয়কারী অর্থনীতিই একমাত্র দায়ী। আর প্রত্যেক দেশেই চোরাকারবার, খাদ্যপণ্যের গোপন সঞ্চয় ও মুনাফা লুন্ঠনের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ ব্যাপক আকারে খাদ্যাভাব সৃষ্টি হইয়া থাকে, তাহাও অস্বীকার করা যায় না।

আমেরিকার একজন উদ্ভিতত্ববিদ প্রমাণ করিয়াছেন যে, ভূ-পৃষ্ঠের অসংখ্য ও অপরিমিত উদ্ভিদরাজির মধ্যে অতি কম ও নগণ্যসংখ্যক উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষ এখন পর্যন্ত কিছুটা জ্ঞানলাভ করিতে পারিয়াছে মাত্র এবং এই সামান্য সংখ্যক উদ্ভিদকেও মানুষের কল্যাণ ও উপকারমূলক কাজে ব্যবহার করার দিকে কোন প্রবণতাই পরিলক্ষিত হয় না। উদ্ভিদের খাদ্যাংশ ও অখাদ্যংশের বৈজ্ঞানিক ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উহাকে বিশেষ কাজে ব্যবহার করা যাইতে পারে এবং এই উপায়ে এত বেশী পরিমাণ খাদ্য ও ধন উৎপন্ন হইতে পারে যে, তাহার কোন সীমা নির্ধারণ করা যায় না।

খাদ্যাভাব প্রতিরোধের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণকে উপায় হিসাবে গ্রহণ করার প্রবণতাকে বিদ্রুপ করিয়া Dr.C.E.D.W.nshewo এক প্রবন্ধ লিখিয়াছেন:

“দারদ্র ও খাদ্যাভাব দেখিয়া কিছুসংখ্যক লোক এতদূর বিব্রত ও বিচলিত হইয়া পড়িয়াছে যে, কঠোরভাবে শক্তি প্রয়োগে সাহায্যে জন্মহারকে বন্ধ করিয়া দেওয়া ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি হইতে আত্মরক্ষা করার আর কোন উপায়ই তাহারা দেখিতে পায় না। ইদানীং এই যুক্তি বার বার আমাদের সম্মুখে পেশ করা হইতেছে যে, পৃথিবীর জনসংখ্যা যুদ্ধপূর্বকাল অপেক্ষা শতকরা দশজন করিয়া বৃদ্ধি পাইয়াছে। মাথাপিছু আয় যুদ্ধপূর্ণকাল অপেক্ষা শতকরা পাঁচ হইতে দশের দিকে নিম্নগতি লাভ করিয়াছে।”

কিন্তু লোকসংখ্যা বৃদ্ধির তীব্রতা দেখিয়া যাহারা আতংকিত হইয়া পড়িয়াছে, তাহারা খাদ্যপণ্য বৃদ্ধি করার সুযোগ ও বিরাট সম্ভাবনার দিকে মোটেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাই। অথচ-

“খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক কৃষি-বিজ্ঞান অসংখ্যউপায় উদ্ভাবন করিয়াছে। নদীর তীরভূমি কাটিয়া নদীশেকাস্তী Erusion বন্ধ করা, বালুকাময় মরুভূমিতে পানি সেচের জন্য উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগ করা, আধুনিক সার ব্যবস্থার সাহায্যে জমিকে অধিক উর্বর ও উৎপাদন শক্তি সম্পন্ন করিয়া তোলা এবং বিভিন্ন উপায়ে খাদ্যপণ্যের চাষ করা ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।”

উক্ত প্রবন্ধ লেখকের হিসাব অনুযায়ী খাদ্যোৎপাদনের আধুনিক পন্থা সমূহের মধ্যেও মাত্র তিনটি উপায় ব্যবহার করিলেই কমপক্ ১০ বৎসরের মধ্যে প্রতি একর জমিতে শতকরা ৩০ ভাগ অধিক খাদ্য উৎপন্ন হইতে পারে। আর যেসব দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না, সেসব দেশে অন্যান্য নানাবিধ কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যাইতে পারে। খনিজ পদারথ উৎপাদন, প্রকৃতিক উপাদান ব্যকবহার, কাষ্ঠ ও স্থানীয় শিল্পের সাহায্যে উৎপন্ন পণ্যের বিনিময়ে কৃষিপ্রধান এলাকা হইতে খাদ্যপণ্য। আমদানী করা যাইতে পারে।

বিখ্যাত কৃষিবিদ স্যর এলবার্ট হাওয়ার্ড (sir albert Howard) বলিয়াছেন, বিশ্বের মানবজাতি যদি তাহাদের উর্বরতা, গো-সম্পদের উন্নয়ন এবং শস্যবীজের উৎকর্ষের জন্য সামান্যতম চেষ্টাও করিত, তাহা হইলে বিশ্বের জমির ক্ষমতা অন্ততঃ তিনগুণ বৃদ্ধি পাইত। বর্তমানে বিশ্বের সমুদয় জমির শতকরা মাত্র ১১ ভাগ চাষাবাদের অধীন। এই ১১ ভাগের পরিমাণ হইতেছে ৩৫০ কোটি একর। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এই আবাদী জমির পরিমাণ আরও প্রায় দ্বিগুণ- ৬৬০ কোটি একর বৃদ্ধি করা সম্ভব। (দৈনিক ইত্তেফাক ১২-১-৭৪) অনেক দেশে আবর কর্মক্ষম লোকদের জন্য কাজের সংস্থান করা হয় না বলিয়া বেকার সমস্যা দেখা দেয়। ফলে খাদ্যভাব ও দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। এই বাড়তি লোকসংখ্যার জন্য অন্যত্র কর্মসংস্থান হইলে কোনরূপ বিপর্যয় সৃষ্টি হইতে পারে না।

বস্তুত সামগ্রিকভাবে দুনিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের কোন অভাবই নাই। এই বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও অজস্র সুলভ শ্রমশক্তি প্রয়োগ করিয়া শিল্পের প্রসার করিতে পারিলে কৃষিপ্রধান দেশে বেকার লোকদের জন্য কর্ম ও অন্ন সংস্থান তো হইবেই, সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থ সাচ্ছল্য ও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাইবে। কৃষকও তাহার উদ্বৃত্ত শস্য বিক্রয় করিয়া অতিরিক্ত অর্থসম্পদ উপার্জন করিতে পারিবে। এইরূপ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নাই বলিয়াই দেশে দেশে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি বিশেষ আতংকের বিষয় হইয়া দাড়াইয়াছে।

অথচ কৃষি-শিল্পের পুনর্গঠনের ভিতর দিয়া প্রত্যেক দেশের আর্থিক সাচ্ছল্য সৃষ্টি হইলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি কোনদিনই একটি সমস্যা হইয়া দাঁড়াইবে না। বরং এই লোকসংখ্যা জাতির পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর প্রমাণিত হইতে পারে। অতএব কোন উন্নয়নশীল অর্থনীতিতেই লোকসংখ্যা বৃদ্ধি কোন সমস্যা রূপে গণ্য নয়, কর্মসংস্থান ও প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্যোৎপাদনের অব্যবস্থাই হইতেছে প্রকৃত সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান হইলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা মানব সমাজে এক অভিনব মুক্তির মর্যাদা প্রমাণ দেখিতে পাওয়া যায়। সেসব দেশে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াও তাহা দেশের পক্ষে কোনরূপ সমস্যা হইয়া দাঁড়ায় নাই। বৃটেন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড প্রভৃতির লোকসংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে, কিন্তু এইসব দেশে বাড়তি লোকগুলির জন্য কর্মসংস্থানের কিছু না কিছু ব্যবস্থা করা হইয়াছে বলিয়া লোকসংখ্যা বৃদ্ধি তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করিতে পারে নাই।

আরো একটি উদাহরণ পেশ করা যাইতে পারে। ১৯৫৭ সনের হিসাব মতে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের ৪ কোটি ২১ লক্ষ অধিবাসীর জন্য প্রতি বৎসর প্রায় ২১ কোটি মন চাউলের প্রয়োজন হয়। আর প্রতি বৎসর উৎপন্ন হয় ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ হইতে ২১ কোটি ৫৪ লক্ষ মণ। কিন্তু সব বৎসর প্রয়োজন অনুযায়ী চাউল উৎপন্ন হয় না বলিয়া, (পশ্চিম) পাকিস্তান হইতে চাউল আমদানী করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করিতে হয়। পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতি একর জমিতে গড়ে ১৩ মণ ধান্য উৎপন্ন হয়। একর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ যদি আরো দুই-তিন মণ বৃদ্ধি করা যায়, তবে প্রদেশের খাদ্যাভাব অতি সহজেই পূরণ করা যাইতে পারে। প্রাদেশিক সরকারের কৃষি বিভাগের সেক্রেটারী ১৯৬৭ সনে প্রদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বার্ষিক কৃষি উৎপাদন ১ কোটি ২০ লক্ষ টনে উন্নীত করার তাকীদ করিয়াছিলেন। (দৈনিক আজাদ- ১০-৬৫৭)

দ্বিতীয়তঃ বর্তমানে বাংলাদেশের সীমারেখায় ভূমির পরিমাণ সাড়ে তিন শত কোটি একর। ইহার মধ্যে বর্তমান ২ শত ৯০ কোটি একর জমি আবাদযোগ্য রহিয়াছে। প্রতি বছর গৃহ-নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, শিল্প কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ১ লক্ষ একরের উপর জমি হইতে হয়। অপর এক হিসাবে জানা গিয়াছে, এদেশে আবদাযোগ্য খাস-জরি মোট পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি লক্ষ ৯১ হাজার ৯ শথ ৪০ একর।[দেশকে খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করিয়া তোলার জন্র ৭৭-৭৮ সন নাগাদ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা কর্মসূচী গ্রহণ করা হইয়াছে। মনে রাখা আবশ্যক যে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাত কোটির উপর। (দৈনিক ইত্তেফাক ১০-৪-৭৪)] এই জমিগুলিতে চাষ করার ব্যবস্থা হইলে দেশ খাদ্যপণ্য ও ধনসম্পদের দিক দিয়া সচ্ছল- বরং প্রাচুর্যপূর্ণ হইতে পারে, এই পরিমাণ চাষের জমিতে ১ কোটি ৪ লক্ষ টনের কিছু বেশী চাউল উৎপন্ন হইতে পারে। প্রায় ৮০ লক্ষ একর জমিতে বৎসরে দুই হইতে তিনটি করিয়া ফসল ফলানো সম্ভভ। এইসব উপায়ে বর্তমান উৎপন্ন খাদ্য সম্পূর্ণতা ১৫-১৬ ভাগ বৃদ্ধি করিতে পারিলেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন খুবই সহজ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে বলা হইয়াছে যে, আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ ও পর্যাপ্ত সার ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বর্তমান ১ কোটি ২৩ লক্ষ টন হইতে ৫ কোটি টনে বৃদ্ধি করা যাইতে পারে। (দৈনিক ইত্তেফাক ১০-১০-৭৪) অর্থনীতিবিদগণ এই কথা সহজেই বুঝিতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতির এই অফুরন্ত অবদানকে মানবকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করিয়া মানুষের জীবিকার সংস্থান করিতে চেষ্টা না করিয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির পথই যদি বন্ধ করা হয়, তবে তাহা অপেক্ষা অমানুষিক আচরণ আর কি হইতে পারে।

অতএব বৈজ্ঞানিক অর্থনীতির দৃষ্টিতে ম্যালথুসের মতবাদ যে ভুল এবং বর্তমান যুগেও যাহারা এই মতবাদকে কার্যকর করিবার জন্য চেষ্টিত তাহারা যে মানবতার প্রকাশ্য দুশমন, তাহাতে আর কোনরূপ সন্দেহ থাকিতে পারে না।

এই পর্যায়ে ১৩৯৩ বাংলা সনের ১৫ই চৈত্র (৩০-৪-৮৭ ইং) দৈনিক ইত্তেফাক-এর অর্থনীতির পাতায় বিশ্ব অর্থনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন, শীর্ষক প্রবেন্ধের প্রয়োজনীয় অংশটুকু এখানে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করিতে চাই। তাহাতে বলা হইয়াছিল।

‘দরের পরিবর্তন এবং চাহিদা হ্রাসের পূর্বাভাস আগে কেউ দিতে পারেন নি। দশ বছর আগে ‘ক্লাব অব রোম’ নামের বিশেষজ্ঞদের নোট টি বলেছিল: ১৯৮৫ নাগাদ বিশ্ব জুড়ে কাঁচামালের অভাবে হাহাকার পড়ে যাবে। ১৯৮০ সনে কার্টার সরকার ২০০০ সনে বিশ্বের হাল সম্পর্কে যে রিপোর্ট গ্রহণ করিয়াছিল, তাতে বলা হয়েছিল যে, আগামী ২০ বছর পর্যন্ত সারা বিশ্ব খাদ্যের উৎপাদন কমে যাবে।

‘কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক ছিল না। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের মোট খাদ্যোৎপাদন ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫-এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যা সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বল্পোন্নত দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছ অতি দ্রুত। একইভাবে সব ধরনের বন-সম্পদ গত দশবছরে ২০ হতে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে, আর তার মধ্যেও অগ্রগতিটা বেশী হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ্। (বাংলাদেশ ইহার বাহিরে নয়।)

এর কারণ কি? প্রশ্নের জওয়াবে প্রবন্ধটিতে লেখা হয়েছে:

বিশ্ব জুড়ে খাদ্য-শস্যের চাহিদা বেড়েছে ক্লাব অব রোম ও গ্লোব্যাল ২০০০ রিপোর্টে অনুমিত হারেই। কিন্তু খাদ্যের সরবরাহ বেড়ে গেছে ততোধিক দ্রুততার সাথে। এটা কেবল জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পায় নি, সারা বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকেই ছাড়িয়ে গেছে।

এই কথা হইতে নিঃসন্দেহে মনে করা যায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন বিশে যে কোন দেশেই- খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ার আতংকসৃষ্টিকারী সব ভবিষ্যদ্বাণীই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সেই কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ করার চেষ্টা চরম পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়।

খাদ্যের প্রয়োজন-পরিমাণ উৎপাদন না হওয়ার কারণেই যে খাদ্যাভাব দেখা দেয় এবং কোন দেশে মানুষকে না খাইয়া থাকিতে হয়, তাহাও সত্য নয়। কেননা জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্তার F.A.O মহাপরিচালক মিঃ এড ওয়ার্ড সাওমার ফাও- এর বিশ্বখাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কি কমিটির কাছে পেশকৃত রিপোর্টে বলিয়াছেন: বিশ্বে পর্যাপ্ত খাদ্য মওজুত থাকা সত্ত্বেও কোটি কোটি গরীব জনসাধাণকে প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য হাহাকা করিতে হইতেছে’। (দৈনিক ইত্তেফাক-২৭শে চৈত্র ১৩৯৩ দ্রঃ)

জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য উৎপন্ন হয় না, উক্ত কথার প্রেক্ষিতে তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অতএব এই অজুহাতে জনসংখ্যা কম রাখিবার জন্য নৈতিকতা ও সমাজ ধ্বংসকারী ‘পরিবার পরিকল্পনাকে মানবতার দুশমন ও চরিত্রহীনতার প্রবর্তনকারীদের মারাত্মক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই বলা যায় কি?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন