hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৩২
দন-সম্পদের মালিকানা
অর্থোৎপাদনের পর্যায়ে সর্বাধিক ও জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইল ধন-সম্পদ ও সম্পত্তির মালিকানার প্রশ্ন। এই নিবন্ধের শুরুতেই আমরা এই বিষয়টি লইয়া আলোচনা করা বাঞ্ছনীয় বলিয়া মনে করি।

ধন-সম্পদের মালিকানা সম্পর্কে ইসলামের মৌল ঘোষণা হইল, আল্লাহর নিরঙ্কুশ মালিকত্ব ও সার্বভৌমত্ব। কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হইয়াছে।

(আরবী)

আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মালিকানা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।

বলা হইয়াছে: (আরবী)

আকাষমণ্ডলে যাহা কিছু আছে, যাহা কিছু আছে জমিনে, তাহার সব কিছুই আল্লাহর জন্য- আল্লাহর মালিকানাধীন।

এই দুইটি এবং দুই ধরনর অসংখ্য আয়াত হইতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, ধন-সম্পদ ও যাবতীয় কল্যাণকর উপকরণ-সামগ্রী যত কিছুর অস্তিত্ব আছে- তাহা মাটি, জমি, নদী-সমুদ্র, পানি, সূর্যতাপ, চন্দ্রের আলো যাহাই হউক না কেন- সব কিছুই নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর মালিকানাভুক্ত। এই ব্যাপারে কেহই তাঁহার সমতুল্য নাই, কেহ তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, এই মালিকত্বে কেহ তাঁহার সহিত শরীকও নাই। উপরন্তু আল্লাহর এই মালিকানা ফল ভোগ ও ব্যায় ব্যবহারের দিক দিয়া নয়, তাঁহার এই মালিকানা হইল মৌলিক সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রওণাধিকারের দিক দিয়া। তাহা সত্ত্বেও আল্লাহর মালিকানা সম্পর্কে এইরূপ কথা বলার কি কারণ থাকিতেত পারে? আমরা মনে করি এই কথা বলার মূলে দুইটি উদ্দেশ্য নিহিত:

একটি এই যে, মানুষ যখন ধন-সম্পদ অর্জন করিয়া লয়, তখন তাহার মনে ধন-সম্পত্তির উপর কর্তৃত্ব লাভের দরুন যে অহংকার ও আত্মম্ভরিতা জাগিয়া উঠে, এই আয়াত দ্বারা উহার পথ বন্ধ করা হইয়াছে। কেননা অহংকার- অর্থনৈতিক অহংকার ও গৌরব- সমাজ জীবনে বহু প্রকারের পাপের স্রোত প্রবাহিত করে। কিন্তু ধন-সম্পদের স্বত্বাধিকারী যদি ঈমানদার লোক হয়, তাহা হইলে সে প্রতিমূহূর্তে মনে রাখিবে যে, এই ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক সে নিজে নয়, মালিক হইলেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। এই বিশ্বাসে তাহার মন ভরপুর ও প্রশান্ত হইয়া থাকিবে এবং ধন-সম্পদ লইয়া তাহার মনে কোনরূপ অহঙ্কার ও অহমিকা জাগিবে না।

আর দ্বিতীয হইল, মালিকানার ব্যাপারে আল্লাহর বিধানকে সে পুরাপুরি মানিয়া ও অনুসরণ করিয়া চলিবে এবং আল্লাহর মর্জীর বিপরীত পথে সে একটি কপর্দক আয়- ও করিবে না, ব্যয়-ও করিবেনা।

সম্পদ ও সম্পত্তির মলিকানা পর্যায়ে কুরআন মজীদের দ্বিতীয় ঘোষণা হইল:

(আরবী)

তোমাদের জন্য আল্লাহ তা’আলা জলভাগের যানবাহন নিয়ন্ত্রিত করিয়া (চলাচলে যোগ্য করিয়া) দিয়াছেন, যেন উহার তাঁহার নির্দেশ মুতাবিক সমুদ্র বক্ষে যাতায়াত করিতে পারে এবং তিনি তোমাদের জন্য খাল ও নদী-নালাকে নিয়ন্ত্রিতত করিয়াছেন; নিয়ন্ত্রিত করিয়াছেন তোমাদের জন্য সূর্য ও চন্দ্রকে- উহা চির আবর্তনশীল। তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিনকেও নিয়ন্ত্রিত করিয়াছেন।

অপর একটি আয়াতে বলা হইয়াছে:

(আরবী)

জমিনে যাহা কিছু আছে তাহা সবই তোমাদের জন্য আল্লাহ তা’আলা নিয়ন্ত্রিত ও কর্মরত করিয়াছেন।

বলিয়াছেন: (আরবী)

তিনি তোমাদের জন্য আকাশমন্ডলে যাহা কিছু আছে তাহা সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত করিয়া দিয়াছেন।

এই আয়াতেযে দুনিয়ার সব শক্তি, উপাদান ও দ্রব্য-সামগ্রীকে মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রিত করিয়া দেওয়ার কথা ঘোষিত হইয়াছে। এই নিয়ন্ত্রণ বিশ্বলোকের সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের তরফ হইতে অনুষ্ঠিত হইয়াছে, এবং নিয়ন্ত্রণ করা হইয়াছে মানুষের জন্য। ইহার বিনিময় তিনি মানুষের নিকট হইতে কোন মূল্য গ্রহণ করেন নাই। নিয়ন্ত্রিত করিয়াছেন মানুষের কাজে ব্যবহৃত হইবার জন্য, মানুষের ভোগ-ব্যবহারে আসার ও তাহাদের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনের জন্য।

এই বিশ্বলোককে মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রিত করিয়া দেওয়ার এই মৌলিক ঘোষণার দুইটি নিগূঢ় তত্ত্ব নিহিত রহিয়াছে।

প্রথম, এই দুনিয়ার কোন কিছু আয়ত্তাধীন করা মানুষের পক্ষে কঠিন হইলেও অসম্ভব নয়। মানুষের বুদ্ধি-বিবেক, প্রতভা ও কর্ম-শক্তি একাগ্রভাবে নিয়োজিত হইলে আল্লাহর দেওয়া তওফীক অনুযায়ী তাহা সম্ভব ও সহজ। ইহাতে মানুষের ইচ্ছা-সংকল্প ও কর্মপ্রতিভাকে উদ্বুদ্ধ করা হইয়াছে। অতএব আল্লাহ তা’আলা এই সবকে মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রিত করিয়া দিলেও মানুষ প্রয়োজনীয় চেষ্টা-সাধনা ও শ্রম নিয়োজিত না করিলে এবং উহা হইতে উপকৃত হইতে ও ফল লাভ করিতে চেষ্টিত না হইলে কোন কিছু লাভ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

আর দ্বিতীয়, আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সমস্ত কল্যাণ লাভ করার ও ভোগ-ব্যবহার করার ব্যাপারে দুনিয়ার সমস্ত মানুষ অভিন্ন ও সমান অধিকার সম্পন্ন। কেননা আল্লাহ তা’আলা এই সবকছিুকে আয়ত্তাধীন হইবার উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত করিয়া দিয়াছেন নির্বিশেষ সমস্ত মানুষের জন্য। ইহাতে বিশেষ কোন ব্যক্তি, বংশ শ্রেণী বা বর্ণের লোকদিগকে সম্বোধন করা হয় নাই এবং এই গুলির উপর কাহাকেও একচেটিয়া কর্তৃত্বের অধিকারীও বানানো হয় নাই।

পরন্তু ধন-সম্পদ ও সম্পত্তি সামগ্রীই মানুষের কোন মুল লক্ষ্যবস্তু নয়। উহা মানুষের জীবন-যাপনের উপকরণ মাত্র। উহা ব্যবহার করিয়া মানুষ নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে ও কল্যাণ লাভ করে। অতএব, যে লোক উহা এই উদ্দেশ্যে ওএই নিয়মে ব্যবহার করিবে, তাহার হাতে এই সম্পদ ও সম্পত্তি তাহার নিজের ও সমাজের জনগণের সাধারণ কল্যাণে নিয়োজিত থাকিবে। কিন্তু কেহ যদি উহাকে আস্বাদনেই মশগুল হইয়া থাকে, তবে তাহার হাতের এই মাল-সম্পদ তাহার নিজের জন্যও যেমন ধ্বংস টানিয়া আনে, তেমনি ধ্বংসের সৃষ্টি করে গোটা সমাজেরও। সাধারণভাবে সমগ্র মানুষের জন্য তাহা সার্বিক বিপর্যয়ের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দেয়। ঠিক এই কারণেই ধন-সম্পদ ও বৃত্ত-সম্পত্তিকে কুরআন মজীদে () ‘পরম কল্যাণের উৎস’ এবং () ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ নামে অভিহিত করা হইয়াছে।

মালিকানা সম্পর্কে পশ্চিম অর্থনীতিবিদদের উপস্থাপিত ধারণা পুঁজিবাদী অর্থনীতির উৎস। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন (Johon Austin) মালিকানার সংজ্ঞা বলিয়াছেন।

মালিকানা মুল অর্থের দিক দিয়া কোন নির্দিষ্ট জিনিসের উপর এক ধরনের অধিকার দেয় যাহা ভোগ-ব্যবহারের দিক দিয়া অসীম এবং ব্যয় ও হস্তান্তর করার ব্যাপারে শর্তহীন। (Leetures on Jurisprudence, Vol. II, P. 790)

মালিকানা অধিকারের এই সংজ্ঞা উহার ইসলামী সংজ্ঞা হইতে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। কেননা এই সংজ্হায় মালিককে অসীম ও শর্তহীন অধিকার দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু ইসলামী অর্থনীতিতে এইরূপ ধারণার কোন স্থান নাই।

ইসলামী অর্থনীতিতে মালিকানার যে সংজ্ঞা দেওয়া হইয়াচে, তাহা নিম্নরূপ:

(আরবী)

মালিকানা ব্যয়-ব্যবহারের অধিকার বিশেষ, শরীয়ত-দাতার অনুমতি, উহার উৎস, উহার প্রমাণকারী; অবশ্য ইহার কোন নিষেধকারী থাকিলে তাহা অন্য কথা।

মালিকানা অপর এক সংজ্ঞায় বলা হইয়াছে:

(আরবী)

ফিকহার পরিভাষায় মালিকানা হইল মানুষ ও কোন জিনিসের পারস্পরিক শরীয়তসম্মত সম্পর্কে; যাহার দরুন মালিক উহার ব্যয়-ব্যবহার করিতে পারে এবং অপর লোকদিগকে উহা ব্যয়-ব্যবহার হইতে নিষেধ করিতে পারে।

শিহাবুদ্দীন আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে উদ্‌রীস মালিকানার সংজ্ঞা দিয়াছেন এই ভাষায়:

(আরবী)

মালিকানা হইল কোন জিনিস বা মুনাফা সম্পর্কে শরীয়তভিত্তিক এমন অনুমতি যাহার দরুন মালিক সেই জিনিস নিজে ভোগ-ব্যবহার করার কিংবা উহার মুনাফা নিজে লাভ করা বা উহার বিনিময় লাভ করার অধিকার পাইয়া যায়। কেননা উহার অবস্থা-ই এইরূপ।

এ যুগের একজন প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মুস্তফা আহম জুরকা লিখিয়াছেন:

(আরবী)

মালিকানা হইল কোন জিনিসকে এমনভঅবে খাস করিয়া লওয়া যাহা শরীয়তের দৃষ্টিতে অন্যদের হস্তক্ষেপ হইতে সুরক্ষিত হয়। এইরূপ যে করিবে সে উহার ব্যয়-ব্যবহার করার অধিকারী হইবে- কোন নিষেধকারী হইলে অন্য কথা।

এই সব সংজ্ঞা মূলত একই জিনিস প্রমাণিত করে। মালিকানা অবশ্যই শরীয়তের বিধান মূতাবিক অর্জন করিতে হইবে। শরীয়ত যেরূপ মালিকানা অধিকার দেয় হাতাই স্বীকৃতব্য। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে মালিকানার মূল উৎস হইল শরীয়তের বিধান-দাতার অনুমতি। শরীয়াত দাতার সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতীত কোনরূপ মালিকানা যে ইসলামে স্বীকৃত নয়, এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই।

ইহা হইতে একথাও প্রমাণিত হয় যে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ন্যায় ইসলামের মানুষের ক্ষেত্রে ধন-সম্পত্তির মালিকত্বের কোন নিজস্ব বা বিশেষ স্থান বা গুরুত্ব নাই। অন্য কথায় নরংকুশ মালিকানা ইসলামে কোন মানুষের জন্যই স্বীকৃত নয়। উহার কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁহার মুকাবিলা- বান্দার মালিকত্ব মূলত মালিকানায় নয়, ইহা আসলে আল্লাহর মালিকানার খিলাফত- আমানতদারি মাত্র।

পক্ষান্তরে সমাজতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় নিরংকুশ মালিকানারও কোন অবকাশ ইসলামে নাই। ব্যক্তি বা রাষ্ট্র কারুর মালিকত্বই আল্লাহর মালিকত্বের সমান নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন