hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৪৯
কর্মসংস্থান
বেকার, বে-রোজগার ও অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য কর্মসংস্থান করা- জীবিকা উপার্জনের উপায় সংগ্রহ করিয়া দেওয়া- অর্থনৈতিক ইতিহাসের এক চিরন্তনী সমস্যা হইয়া দেখা দিয়াছে। বহু কর্মক্ষম শ্রমজীবী এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাসম্পন্ন লোকও বেকার সমস্যার সর্বগ্রাসী বিপদে নিমজ্জিত হইয়া তিলে তিলে ধ্বংস হইতে চলিয়াছে। অথচ ইহারা কাজ পাইলে একদিকে নিজেদের অন্তর্নিহিত বুদ্থি, প্রতিভা ও কর্মক্ষমতার বাস্তব স্ফূরণ সাধনের সুযোগ পাইত, অন্যদিকে জাতীয সম্পদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাস্তব স্ফুরণ সাধনের সুযোগ পাইত, অন্যদিকে জাতীয সম্পদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরাট কার্য সমাধা করিতে পারিত। একদিকে তাহার নিজেদের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন পূর্ণ করিতে পারিত, অপরদিকে তাহারা প্রচুর অর্থোৎপাদন করিয়া অর্থনৈতিক আবর্তন-সৃষ্টির সাহায্যে সমাজক্ষেত্র হইতে দারিদ্র ও আর্থিক অসাম্য দূর করিতে সমর্থ হইত। তখন ইহারা সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষে অবাঞ্ছনীয় বোঝা না হইয়া সমাজ ও জাতির একনিষ্ঠ খাদেম হইতে পারিত।

কাজেই বেকর-সমস্যা সমাধান করা, কর্মক্ষম লোকদের জন্য কাজের সংস্থান করা, মানব-কল্যাণকামী প্রত্যেক সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষে অবশ্য কর্তব্য। এবং যে অর্থনীতিতে নির্বিশেষ সকল শ্রেণীর বেকার লোকদের জন্য এইরূপ কর্মসংস্থানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে, প্রকৃত পক্ষে তাহাই হইতে পারে মানুষের জন্য কল্যাণকর অর্থনীতি। আর যাহাতে এইরূপ ব্যবস্থা নাই, তাহা কোনদিন মানুষের কোন কল্যাণ সাধন করিতে পারে না। দুনিয়ায় চিরদিনই এমনএক অর্থব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল এবং তা এখনো রহিয়াছে, যাহার অধীন কেহ বেকার ও বে-রোজগার থাকিবে না; প্রত্যেকেরই জন্য সেখানে কর্মের সংস্থান করা হইবে। নিতান্ত অসহায় ও উপায়হীন করিয়া কাহাকেও উপেক্ষিত অবস্থায় ফেলিয়া রাখা হইবে না; বরং এইরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিকেই হাত ধরিয়া উপরে তোলা হইবে। কর্মে নিযুক্ত করিয়া তাহাদিগকে মানুষের মত বাঁচিবার ও মাথা তুলিয়অ দাড়াইবার উপযুক্ত করিয়া তোলা হইবে।

এই দিকে দিয়া ইসলামী অর্থনীতিই মানুষের অভাব মোচনকারী ও বেকার সমস্যার সমাধানকারী একমাত্র অর্থব্যবস্থা। হযরত নবী করীম (ﷺ) ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রোজগারহীন লোকদের জন্য কর্মের সংস্থান করার দায়িত্ব পালন করিতেন। তিনিনিজে বেকার লোকদিগকে কাজে নিযুক্ত করিতেন। জীবিকা উপার্জনের কার্যকর পন্থা লোকদের বলিয়া দিতেন। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতেছে।

একদা একজন সাহাবী নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট কিছু খাদ্যের প্রার্থনা করিলেন। নবী করীম (ﷺ) তাহার ঘরে কোন জিনিস আছে কিনা তাহা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। উত্তরে তিনি বলিলেন: ‘তাহার একখানা কম্বল আছে, উহার একাংশ তিনি পরিধান করেন ও অপর অংশ শয্যা ও গাত্রাচ্ছাদন রূপে ব্যবহার করেন। এতদ্ব্যতীত পানি পান করার জন্য একটিও পাত্রও তাহার আছে।” নবী করীম (ﷺ) তাহাকে এই দুইটি জিনিসই তাহার নিকট উপস্থিত করিবার আদেশ করিলেন। তিনি জিনিস দুইটি লইয়া আসিলে নবী করীম (ﷺ) নিজেই উহার নীলাম ডাকিয়া তাহা দুই ‘দিরহাম’ মূল্যে বিক্রয় করিলেন এবং এক দিরহামের বিনিময়ে তাহাকে একখানি কুঠার ক্রয় করিয়া আনিতে বলিলেন। কুঠার লইয়া আসিলে পর দেখা গেল, শ্রেষ্ঠ মানব- সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) নিজেই উহার তাহল লাগাইয়া দিলেন এবং জঙ্গলে গিয়া উহার দ্বারা কাষ্ঠ কাটিয়া বাজারে বিক্রয় করার জন্য উক্ত সাহাবীকে আদেশ করিলেন। সেই সঙ্গে ক্রমাগতগ পনের দিবস পর্যন্ত এই কাজে লিপ্ত থাকিতেও তাহাকে তাগিদ করিলেন। ফলে পনের দিন পর তাহার আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়। তখন নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করিলেন: ‘অপরের সম্মুখে ভিক্ষার হাত দরাজ করা এবং তার পরিণামে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত হওয়া অপেক্ষা জীবিকার্জনের ইহাই অনেক বেশী উত্তম পন্থা।’

এখানে লক্ষ্য করিবার বিষয় এই যে, নবী করীম (ﷺ) উক্ত সাহাবীকে ভিক্ষা দিয়া ভিক্ষাবৃত্তির উৎসাহ দান করেন নাই, বরং পরিশ্রম করিতে উৎসাহিত করিয়াছেন এবং তাহার কার্যকর উপায় ও পন্থাও নির্ধারণ এবং আবিষ্কার করিয়া দিয়াছেন। প্রত্যকটি মানুষই যতদূর সম্ভব নিজের পায়ে দাঁড়াইবে, অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য ও সচ্ছলতা লাভ করিবে- ইহাই তিনি অন্তরের সহিত কামনা করবেন। তাঁহার গৃহীত কর্মপন্থা ইসলামী সমাজের বেকার-সমস্যার সমাধানের জন্য সুনিশ্চিত পথ নির্দেশ করে। এজন্যই প্রত্যেক নাগরিকের জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থখা করিয়া দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্বত্য।

নবী করীম (ﷺ) প্রায়ই বলিতেন:

(আরবী)

যিনি আমার প্রাণের মালিক, তাহার শপথ করিয়া বলিতেছি, তোমাদের একজনের রশি লইয়া জঙ্গলে যাওয়া, কাষ্ঠ আহরণ করা, তাহা পিঠের উপর রাখিয়া বহন করিয়া আনা এবং বাজারে বিক্রয় করিয়া অর্থোপার্জন করা অপরের নিকট ভিক্ষা চাওয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম। বিশেষতঃ এই অবস্থায় যে, সেই অপর ব্যক্তি তাহাকে দিবে কি দিবে না তাহার নিশ্চয়তা কিছুই না। (বুখারী শরীফ)

হযরত উমর ফারূক (রা) –এর খিলাফতকালে একজন স্বাস্থ্যবান ও শক্তিসম্পন্ন যুবক মসজিদে প্রবেশ করিয়া জনগণের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিল। উমর ফারূক (রা) তাহাকে নিজের নিকট ডাকিয়া উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করিলেন: নিজের জমিতে কাজ করাইবার জন্য এই যুবককে মজুর হিসেবে নিয়োগ করিতে কে প্রস্তুত আছে? একজন আনসার তাহাকে মজুর রাখিতে রাযী হইলেন। খলীফা তাহার মজুরী নির্দিষ্ট করিয়া তাহাকে কাজে নিযুক্ত করিয়া দিলেন।

হযরত উমর (রা) যখনি কোন উপার্জনক্ষণ বেকার পুরুষ দেখিতে পাইতেন, তখনি তিনি বলতেন:

(আরবী)

মুসলমানের সমাজের গলগ্রহ ও অন্য লোকের উপর নির্ভরশীল হইও না।

মোট কথা, সমাজের বেকার লোকদের জন্য কর্ম-সংস্থানের চেষ্টা করা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। ইহার কারণ এই যে, সমাজের লোকদের মাত্র একাংশ যদি উপার্জন করে আর অপর অংশ বেকার বসিয়া থাকে, তবে এ দিকে যেমন উপার্জনকারীদের উপর অর্থনৈতিক চাপ তীব্র হইয়া পড়িবে, অন্যদিকে উৎপাদনের পরিমাণ অত্যন্ত কম হইবে। ফলে জাতীয় অর্থসম্পদ মারাত্মকরূপে হ্রাস পাইয়া যাইবে।[কারওয়ার এ্যান্ড কারমাইকেল: ইলেমেন্টস অব ইকনমিকা।]

তাই ইসলামী অর্থনীতিতে দুনিয়ার সম্পর্ক ত্যাগ করা- উপার্জন পরিহার করিয়া বেকার হিইয়া বসা এবং অন্য লোকদের গলগ্রহ হইয়া থাকা যেমন নিষিদ্ধ, অনুরূপভাবে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করাও অতিশয় হীন ও ঘৃণ্য কাজ। ভিক্ষালব্দ খাদ্যকে নবী করীম (ﷺ) জাহান্নামের অগ্নিদগ্ধ পাথর বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন।

নবী করীম (ﷺ) বলিতেন:

(আরবী)

তোমাদের মধ্য যাহারা ভিক্ষা করে- অথচ ইহা হইতে মুক্ত থাকার মত সম্পদ বা শক্তি-সামর্থ্য তাহাদের রহিয়াছে- তাহারা যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে হাযির হইবে, তখন তাহাদের মুখমন্ডল একেবারে সাংসহীন ও বীভৎস হইয়অ যাইবে।

অপর হাদীসে বলা হইয়াছে: (আরবী)

যে লোক ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিবে সে আল্লাহর সহিত এমনভাবে সাক্ষাৎ করিবে যে, তাহার মুখমন্ডল মাংসহীন হইয়া যাইবে।

এইভাবে বিশ্বমানবের একমাত্র বন্ধু ও কল্যাণ ব্যবস্থাপক হযরত নবী করীম (ﷺ) তাঁহার সাহাবাদের মন-মস্তিষ্ক ও চিন্তাধারায়- তথা স্বভাবে ও প্রকৃতিতে- অমূল পরিবর্তন আনিয়াছিলেন। ফলে ইসলামী সমাজের লোকগণ সর্বহারা হওয়া সত্ত্বেও কখনো ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন নাই।

ভিক্ষাবৃত্তি তো দূরের কথা, সাহাবায়ে কিরাম কাহারো নিকট কিছু চাওয়া পর্যন্ত অপমানকর মনে করিতেন। নৈতিক শিক্ষা ও উন্নত মহান আদর্শের ভিত্তিতে অতি সহজেই তাহাকের জীবন এইরূপ পরিবর্তন সৃষ্টি করা হইয়াছিল। সেজন্য কাহারো উপর কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি বা শাস্তি প্রয়োগ করিতে হয় নাই! কিন্তু ইংলন্ডের ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধের ব্যাপারে মানুষের উপর যে অমানুষিক জুলুম ও পীড়ন চালানো হইয়াছিল, পাশবিকতার দিক দিয়া তাহার কোনই তুলনা পাওয়া যায় না। ইংলন্ডের রাজা অষ্টম হেনরী কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের জন্য কর্মের সংস্থান না করিয়া তাহাদিগকে মোটরের পিছনে উলঙ্গ করিয়া বাঁধিয়া দিয়া বিদ্যুৎগতিতে মোটর চালাইতে আদেশ করিয়াছিলেন। কখনো কখনো ভিক্ষুকদের চাবুক মারিতেও বলা হইত। [ইকনমিক হিষ্ট্রি অব ইংল্যাণ্ড, ১৩৪ পৃঃ।] ১৫৪৭ সনে আইনের বলে ভিক্ষুকদের উত্তপ্ত লৌহ দ্বারা চিহ্নিত করা হইয়াছিল, তাহাদিগকে বড়লোকদের দাসানুদাস বানাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। অনেক সময় তাহাদিগকে শিকল দিয়া বাধিয়াও রাখা হইত। কিন্তু ইসলামের অর্থনীতি ভিক্ষুক সমস্যার সমাধান করিয়াছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে। একদিকে ভিক্ষা কার্য হইতে মানুষকে বিরত রাখিবার জন্য নিষেধ বাণী উচ্চারণ করা হইয়াছে অপরদিকে উপার্জনে আত্মনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হইয়অছে, এবং তাহাদের জন্য কর্মসংস্থানের অনুকূলে ব্যাপক চেষ্টা চালানো হইয়াছে।

উপরের আলোচনা হইতে একথা প্রমাণিত হইয়াছে যে, ইসলামী সমাজে বেকার সমস্যার সমাধান করা গরীব-দুঃখীদের দুর্দশা ও অভাব দূর করা এবং মুহাজিরদের পুণর্বাসন প্রভৃতি সমস্যাবলীর সমাধান করা কিছুমাত্র কঠিন কাজ নয়। হযরত নবী করীম (ﷺ) এর আদেশ অনুসরণ করিলে ইহা অতি সহজেই কার্যকর হওয়া সম্ভব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন