hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৭৯
লাভের আশায় পণ্য মওজুদ
অস্বাভাবিকভাবে অধিক মুনাফা লুটিবার লোভে ব্যবসায়ীগণ সাধারণ সুলভ পণ্য বিপুল পরিমাণে খরীদ করিয়া সঞ্চয় করিয়া রাখে। ফলে বাজারে দুষ্প্রপ্যতার দরুন উহার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং মূল্য তীব্র গতিতে ঊর্ধ্বগামী হইয়া থাকে। ইহার পরিণামে তাহা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সীমার বাহিরে চলিয়া যায় এবং দেশে হাহাকার পড়িয়া যায়। হয়তবা অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে মানুষের মৃত্যুমুখে ঢলিয়া পড়ার উপক্রম হয়। তখনমুনাফা শিকারীদল নিজেরদের ইচ্ছামত দর নির্ধারণ করে এবং পশ্চাৎদ্বার হইতে বিক্রয় করিতে শুরু করে। আর কোন প্রকার ভয় না থাকিলে প্রকাশ্য ভাবেই এই অনাচার অনুষ্ঠিত হয়। ফলে জনগণের পক্ষে এইরূপ পণ্য সংগ্রহ করা প্রায়ই অসম্ভব হয়। আর সংগ্রহ করা গেলেও সেজন্য অস্বাভাবিক মূল্য দিয়া জনগণকে সর্বস্বান্ত হইতে হয়। ইসলামী অর্থনীতি এই ধরনের Hoarding অদৌ সমর্থন করে না। নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

পণ্যদ্রব্য আটক করিয়া অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী নিঃসন্দেহে অপরাধী।

(আরবী)

অধিক মূল্যে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে খাদ্যপণ্য আটক করিয়া রাখিতে নবী করীম (ﷺ) নিষেধ করিয়াছেন।

হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করিয়াছেন: (আরবী)

যে ব্যক্তি অতিরিক্ত চড়া দামের আশায় চল্লিশ দিন যাবত খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় না করিয়া আটকাইয়া রাখিবে, আল্লহর সঙ্গে তাহার এবং তাহার সহিত আল্লাহর সম্পর্ক ছিন্ন হইয়া যাইবে।

হযরত আবূ আমামা রাসূলে করীম (ﷺ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেন:

(আরবী)

যে লোক চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যপণ্য আটক করিয়া রাখে অতঃপর যদি তাহা সম্পূর্ণ দানও করিয়া দেয়, তবুও তাহার এই আটক করিয়া রাখার গুনাহর প্রায়শ্চিত্ত হইবে না।

অতএব অত্যধিক মুনাফা লুটিবার আশায়, খাদ্যপণ্য আটক করিয়া রাখা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। [(আরবী)]

খাদ্যদ্রব্য আটক করিয়া যাহারা অত্যধিক মুনাফা লুটিতে চাহে তাহাদের মনস্তত্ব সম্পর্কে নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করিয়াছেন:

(আরবী)

খাদ্য শস্য আটককারী ব্যক্তির মনোবৃত্তি অত্যন্ত বীভৎস ও কুটিল। খাদ্য-দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পাইলে তাহারা চিন্তিত হইয়া পড়ে আর তাহা বৃদ্ধি পাইলে তাহারা আনন্দে মাতিয়া উঠে।

অতএব যে সব উপায়ে অবাধ ক্রয়-বিক্রয় ও ধন বিনিময় ব্যাহত হয়, ক্ষুণ্ণ হয়, ইসলামী অর্থনীতিতে তাহা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ব্যবসায়ীগণ যদি পণ্যদ্রব্য আটক করিয়া অধিক মুনাফা লুটিবার চেষ্টা করে তবল ইসলামী রাষ্ট্র সে ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করিতে বাধ্য এবং তাহাদিগকে যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়া এই কাজ হইতে বিরত রাখার এবং আটককৃত খাদ্যপণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করার কার্যকর ব্যবস্থা অবলম্বন করা উহার কর্তব্য।[নববী (আরবী)]

পণ্য মওজুদ করণ পর্যায়ে এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, যদি কোন লোক নিজের জমির ফসল হইতে নিজের ও পরিবারবর্গের সম্বাৎসরিক প্রয়োজন পূরণ ও ব্যয় নির্বাহের জন্য খাদ্য ফসল সঞ্চয় করিয়া রাখে, তবে তাহাতে কোন দোষ হইবে না। একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমম নববী লিখিয়াছেন:

(আরবী)

আলোচ্য হাদীস হইতে সম্বাৎসরিক খাদ্য এবং পরিবারের লোকজনের খোরাকী জমা করিয়া রাখা সাধারণ অবস্থায় জায়েয বলিয়া প্রমাণিত হয়। বস্তুত মানুষ তাহা নিজের জমি-ক্ষেত হইতে যে ফসল লাভ করে তাহা হইতে প্রয়োজন পরিমাণ সঞ্চয় করিয়া রাখা জায়েয- এই বিষয়ে ইসলামের বিশেষজ্ঞগণ সম্পূর্ণ একমত। নবী করীম (ﷺ)-এর জন্য এইভাবে সম্বাৎসরিক খাদ্য সংগ্রহ করিয়া রাখা হইত।[(আরবী)]

ইহার পর তিনি লিখিয়াছেন, ‘যদি কেহ বাহার হইতে খাদ্য ক্রয় করিয়া পরিবারবর্গের সম্বাৎসরিক খাদ্য সংগ্রহ করিয়া রাখিতে চাহে, তবে ব্যাপারটি স্বতন্ত্রভাবে বিবেচ্য। সেই সময় যদি দেশের খাদ্য সংকট অবস্থা বিরাজ করে, তবে তাহা জায়েয হইবে না। এইরূপ অবস্থা যদি কিছু দিন বা এক মাস কালের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করিয়া রাখা হয়, আর তাহার দরুন যদি সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হইয়া পড়ার আশংকা না হয় তবে তাহা জায়েয হইবে। আর প্রাচুর্যকালে এক বৎসর কিংবা ততোধিক সময়ের জন্য খাদ্য খরীদ করিয়া রাখাও জায়েয হইবে।[(আরবী)]

পরন্তু ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ষড়যন্ত্র বা কোন প্রকার কুটিল কারসাজীর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাইয়অ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার সীমা লংঘন করিলে ইসলামী রাষ্ট্র দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করিয়া দিবে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় কোন জরুরী কারণ ব্যতীত-দ্রব্য-মূল্য নির্ধারণের অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রের নাই। অতএব নিতান্ত স্বাভাবিক কারণে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি পাইলে উহার দর বাঁধিয়া দেওয়া যাইবে না। নবী করীম (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় একবার অনুরূপ অবস্থার উদ্ভব হইয়াছিল। সাহাবায়ে কিরাম দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করিতে অনুরোধ করিলে তিনি বলিয়াছিলেন:

(আরবী)

খাদ্যমূল্য নির্ধারণকারী হইতেছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। তিনিই ইহার মূল্য হ্রাস করেন। কারণ রুজীর মালিক তিনিই, উহার মূল্য নির্ধারণ করন এবং আমি আল্লাহর সহিত এইভঅবে সাক্ষাৎ করিতে আশা পোষণ করি যে, তোমাদের কাহারো রক্তপাত বা মাল-সম্পদ হরণের জুলুম করিয়াছি বলিয়া সেদিন আমার প্রতি কেহ দাবি তুলিবে না।

ইহার কারণ এই যে, দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার ব্যক্তিগত ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করার ব্যাপার। অতএব নির্ধারণের পূর্ণ স্বাধীনতা তাহাদের থাকা উচিত। অন্যথায় তাহাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকারর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ হইয়া পড়ে। তবে এই ব্যাপারে কাহারো উপর কোন প্রকার জুলুম হইলে কিংবা প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে জনগণকে বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হইলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে তাহাতে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে। কেননা তখন ব্যাপারটি আর ব্যক্তিগত না থাকিয়া সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়।[এই পর্যায়ে যে কয়টি হাদীস বর্ণিত ও উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহার দৃষ্টিতে দুর্ভিক্ষ ও সচ্ছল অবস্থা এই দুইয়ের মাঝে সাধারণত কোন পার্থক্য করা যায় না। তবে ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন,দুর্ভিক্ষ বা স্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়া দিলে তখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করিয়া দেওয়া জায়েয। রাসূলে করীমের উপরোক্ত হাদীস হইতেও এই কথাই প্রমাণিত হয়। তাহা হইতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে,সাধারণ অবস্থায় দ্রব্যমুল্য নির্ধারণ করিয়া জুলুম। কিন্তু কোন অবস্থায় তাহা না করার দরুন যদি জনসাধারণের উপর জুলুম হইতে থাকে, তবে তখন তাহা না করাই বরং অতি বড় জুলূম।]

এসলামী অর্থনীতি সমগ্র ব্যাপারে নিছক ব্যক্তিগত ও নিছক পারিবারিক ব্যাপারের উপর সামাজিক ও জাতীয় স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়া থাকে। এই জন্যই, যে সব ব্যবসায়ে একদিকে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর বিপুল স্বার্থ লাভ হয় আর অপর দিকে তাহাতে সাধীত হয় সামগ্রিক বা সামাজিক ক্ষতি, নৈতিক চরিত্র হয় বিনষ্ট- ইসলামী অর্থনীতি তাহা আদৌ বরদাশ্‌ত করে না।

ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্পর্কে ইসলামী অর্থনীতি অবাধ ও উদার নীতি পোষণ করে। এই ব্যাপারে কোনরূপ অস্বাভাবিক ও কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা ইসলাম সমর্থন করে না।– তাহা ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী অথবা রাষ্ট্র- যাহার দিক হইতেই হউক না কেন। এই কারণেই আন্তর্জাতিক ব্যাবসায় বাণিজ্যের জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা করিয়া দেওয়া, স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথ উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া; প্রয়োজন-অনুযায়ী খাল ও নদী খনন করাও ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে গণ্য হইয়াছে। হযরত উমর ফারূক (রা) মিশরে খাল খনন করিয়াছিলেন তাহার ফলে মিশর ও মদীনার মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা হইয়াছিল এবং উভয় দেশে দ্রব্যমূল্য একই স্তরে আসিয়া পৌঁছিয়াছিল। দ্বিতীয় খলীফা এই জন্য অনেক পাকা সড়কও নির্মাণ করিয়াছিলেন। কিন্তু এ-কথা ভুলিয়া গেলেও চলিবে না যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার আশংকা হইলে রাষ্ট্র রক্ষার জন্যই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনানুযায়ী অবাধ বাণিজ্যনীতি প্রত্যাহার করিতে হইবে।

পণ্যের সরবরাহ ও পরিবেশনের পরিমাণ এবং উহার গতিধারার যে নিকটতম সম্পর্ক রহিয়াছে উহার মূল্যমান নির্ধারণের সহিত, তাহা অর্থনীতিবিদ মাত্রেরই জানা আছে। কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি পণ্যের সরবরহ পরিমাণ অত্যধিক বৃদ্ধি পাইলে উহার মূল্য অনিবার্যরূপে হ্রাস পাইবে। পক্ষান্তরে উক্ত পণ্যের সরবরাহ কম হইলে উহার মুল্য নিশ্চিতরূপে উর্ধ্বমুখী হইবে। কিন্তু এই মূলনীতি অনেক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হইতে পারে। ইমাম আবূ ইউসুফের মত, একটি পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ কম হইলেও উহার সস্তা হওয়া এবং উহার প্রাচুর্য সত্ত্বেও দাম পড়া হওয়া অসম্ভব বা বিচিত্র নয়।

কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও বাজারে পণ্যমূল্যের সামঞ্জস্য বিধান করা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য। এখানে যেমন ইচ্ছামত অধিক মূল্য গ্রহণের অধিকার কাহাকেও দেওয়া হয় না; অনুরূপভাবে উহার ন্যায্য মূল্যেল অনেক কমে বিক্রয় করিয়া ব্যবসায়ের একচেটিয়া অধিকার(Monopoly) সৃষ্টি করার সুযোগ কাহাকেও দেওয়া যাইতে পারে না। হযরত উমর (র) একজন লোককে সাধারণ বাজার দর অপেক্ষা কম মূল্যে ‘মুনাক্কা’ বিক্রয় করিতে দেখিয়া বলিয়াছিলেন- ‘হয়-প্রচলিত মূল্যে বিক্রয় কর; অন্যথায় আমাদের বাজার হইতে চলিয়া যাও’। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক) কারণ, একজন ব্যবসায়ী পণ্য মূল্য অন্যায় ভাবে হ্রাস করিয়া দিলে সকল খরিদ্দারকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করিয়া লইতে চাহিলে ব্যবসায়ের গোটা বাজারটাই নষ্ট হইয়া যায় এবং তাহাতে অন্য ব্যবসায়ীদের ভীষণ ক্ষতি হয়। ফলে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন