মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলামী অর্থনীতি আধুনিক ব্যাংকের মূল ভিত্তিকেই চূর্ণ করিয়া উহাকে নূতনভাবে গঠন করার নির্দেশ দেয়। ইসলামী সমাজে ব্যাংককে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির একচেটিয়া কর্তৃত্ব হইতে মুক্ত করিয়া নির্বিশেষে সমগ্র মানুষের কল্যাণে নিযুক্ত করা হইবে। এইজন্য সর্বপ্রথম কর্তব্য হইল বিনা সুদের ব্যাংক-ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা।
ব্যাংক কারবারের মূল ইতিহাস আলোচনা করিলে দেকিতে পাই প্রাচীন গ্রীক সমাজে যখন ব্যাংক একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ শুরু করিয়াছি, তখন টাকা লগ্নি করিয়া উহারিই বিনিময়ে সুদ গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। রোমান সমাজের শুরুতে ইহা নিষিদ্ধ থাকিলেও পরে ক্রমশ সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সুদ গ্রহণ শুরু হয়। খৃস্টানদের ধর্মগ্রন্থ ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে’ সুদ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ইহুদীরাই এই নিষেধ প্রকাশ্যভাবে সামান্য করে। অবশ্য রোমান ক্যাথলিকরা যতদিন শাসন কার্য চালাইয়াছে, ততদিন তাহারা সুদের কারবার চলিতে দেয় নাই। দুনিয়ায় ইহুদীরাই এই সুদী কারবারের প্রবর্তক। উত্তরকালে গোটা ব্যাংক ব্যবস্থাই সুদের ভিত্তিতে চলিতে থাকে। ইসলাম এই সুদী কারবারকে সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে। বিশ্বনীর আদর্শে গঠিত সমাজ ও রাষ্ট্রে সুদী কারবার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। বর্তমানে অনুরূপ সমাজ গঠন ও সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবস্থা কায়েম করাই মানবতার শোষণ মুক্তির একমাত্র পথ।
সুদ ছাড়াও কি ব্যাংক চলিতে পারে? এ প্রশ্নের জওয়াব আমাদের পাল্টা প্রশ্ন এইযে, সুদের ভিত্তিতে যখন ব্যাংক চলিতে পার ইহাই যুক্তিসংগত কথা। সুদই ব্যংক চালায় এবং সুদ বন্ধ করিলে ব্যাংকও অচল হইয়া পড়িবে- যুক্তির বিচার এই কথা অচল ও অগ্রহণযোগ্য।
ইসলামী ব্যাংকে জনগণের টাকা আমানতস্বরূপ রাখা হইবে; কিন্তু তাহাতে কিছু মাত্র সুদ দেওয়া বা লওয়া হইবে না। আমানতদারদের অনুমতিক্রমে তাহার টাক কোন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা হইলে ব্যবসায় লব্ধ মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ সে নিশ্চয়ই পাইতে পারিবে, অন্যথায় তাহা শুধু আমানত হিসাবে গচ্ছিত রাখা হইবে। উপরন্তু প্রতিবৎসর তাহা হইতে অনিবার্যরপে যাকাত আদায় করা হইবে। ব্যাংকের খরচ বাবদ কিছু কমিশনও উক্ত টাকা হইতে কাটিয়া লওয়া হইবে।
সুদপ্রথা রহিত হইলে দেশের শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনকোথায় পাওয়া যাইবে, সুদহীন ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে ইহা একটি সাধারণ প্রশ্ন। কিন্তু একটু চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, ইসলামী সমাজে এই উদ্দেশ্যে মূলধন সংগ্রহের ব্যাপারে কোনরূপ অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ার কোনই হেতু নাই। কারণ সেখানে যখনিই কোন শিল্প কারখানা বা লাভজনক বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলিবার প্রয়োজন হইবে, তখনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পূর্ণ পরিকল্পনা ও এষ্টিমেট ব্যাংকের নিকট পেশ করা হইবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিকল্পনাটি গভীরভাবে পরীক্ষা করাইয়া দেখিবে। পরীক্ষা ও সর্বোতভাবে যাচাই করিয়া দেখার পর ইহা গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হইলে ব্যাংকের পক্ষ হইতে দেশের মূলধন মালিকদের নিকট সাধারণ ভাবে উহা পেশ করিয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধনর জন্য আবেদন করা হইবে। তখন দেশের মূলধন মালিকগণ অর্থবিনিয়োগের একটি নির্ভরযোগ্র সুযোগ মনে করিয়াই সে সম্পর্কে উৎসাহ না হইয়া পারিবে না। অন্যতায় প্রত্যেকের নিকট পুঞ্জিকৃত অর্থ বেকার বসিয়া থাকিবে এবং প্রতি বৎসর যাকাত আদায় করিয়া তাহার মূলধন ক্ষয়প্রাপ্ত হইতে বাধ্য হইবে। অতএব, ব্যাংকের এই আবেদনে প্রচুর মূলধন সংগৃহীত হওয়ার নির্ভরযোগ্য সম্ভাবনা রহিয়াছে। বর্তমান সময়ে সুদভিত্তিক মূলধন সংগৃহীত হওয়ার নির্ভরযোগ্য সম্ভাবনা রহিয়াছে। বর্তমান সময়ে সুদভিত্তিক ব্যাংকসমূহ যত পরিমাণ মূলধনসংগ্রহ করিতে পারে, তখন ইহার পরিমাণ কিছুমাত্র কম হইবার কারণ নাই। উপরন্তু ইসলামী ভাবধারয় পরিশুদ্ধ সমাহের নির্মর পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা মানুষকে ধন-সম্পদ নিজের নিকট পুঞ্জিভূত করিয়া রাখিতে উদ্বুদ্ধ করিবে না। উহাকে অধিক বিক্ষিপ্ত এবং জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির কাজে বিনিয়োগ করাতেই জনগণ অধিক উৎসাহ পাইবে।
শুধু তাহাই নয়, উপরোক্ত পন্থায় সংগ্রহীত মূলধন দ্বারা যে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হইবে, ব্যক্তিগতভাবে কোন লোক বা কোন ব্যাংক উহার মালিক হইবে না, উহার মালিক হইবে মুলধনদাতা পুঁজিমালিকগণ। উহার লাভক্ষতি, ভালমন্দ, সুনাম ও দুর্ণামের সহিত প্রত্যেক অংশীদারের নিবিড় যোগাযোগ থাকিবে বলিয়া এ সম্পর্কে প্রত্যেকটি লোকই সচেতন থাকিবে। এই উপায়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানায় উৎপাদন বিন্দুমাত্র নিকৃষ্ট হইলে তখনি উহার প্রতিবিধান ও সংশোধন করিতে প্রত্যেক অংশীদারই চেষ্ট হইচে, কারখানার পরিচালকদিগকে সতর্ক করিয়া উৎকৃস্ট পণ্য উৎপাদনের নির্দেশ দিতে একটুও বিলম্ব করিবে না। কারণ কারখানায় উৎপন্ন পণ্যের উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট হওয়ার সহিত তাহার স্বার্থ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এইরূপ ব্যবস্থার ফলে ইসলামী সমাজের শিল্পকারখানাসমূহ বিপুল সংখ্যক লোকের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সুসমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে। কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে ততোধিক পুঁজিবাদী ব্যাংকের কোন কাজের প্রতিই নাগরিকদের কিছুমাত্র সহানুভূতি থাকিতে পারে ন। কারণ আমানতদাতাগণ নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিশ্রুত পরিমাণ সুদ লাভ করিবেই; জাতীয় অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাইলে কিংবা ক্ষয়প্রাপ্ত হইলে ব্যক্তিগতভাবে তাহাদে কোন লাভ-ক্ষতি নাই। বস্তত এইরূপ সমাজে মানবতা কোন নিরাপত্তা ও কল্যাণ লাভ করিতে পারে না। এখানে কাহারো প্রতি কোনই সহানুভূতি বা দরদ নাই। ইসলামী সমাজে এইরূপ ভাবধারা মুহূর্তের তরেও বরদাশত করা যায় না। বরং সেখানে সামগ্রিক সহৃদয়তা শুভেচ্ছা ও উন্নতি লাভের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বর্তমান থাকার দরূন জাতীয় অর্থনীতির অব্যাহতভাবে উৎকর্ষ লাভে সম্ভব হইবে।
এতদ্ব্যতীত ইসলামী সমাজে ব্যাংকে মূল শিল্প-ব্যবসায়েল পুঁজি বিনিয়োগকারী অংশীদারও করা যাইতে পারে। অর্থাৎ ব্যাংক মূলধনের সুদ পাইবে না, পাইবে মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ। অতএব উহাকে লোকসানেরও ভাগীদার হইতে হইবে। বস্তুত বর্তমান যুগে মূলধন ও মূল শিল্পের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করিয়া উভয়ের মধ্যে পূর্ণ সমন্বয় সাধনের অভাব হইবে না, অনুরূপভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার দরুন জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি পাইবে। বস্তুত শিল্প ও মূলধনের এইরূপ সমন্বয় সাধন এক মাত্র ইসলামী সমাজ ভিন্ন অন্য কোথায়ও সম্ভব নহে।
এখারে আর একটি কথাও স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে Usury ও Interest এর মধ্যে কোনই পার্থক্য নাই। যদিও কেহ কেহ মনে করে যে, কুরআন হাদীসে যে ‘রিবা’ হারাম করা হইয়াছে তাহা ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেওয়া, ঋণের বিনিময়ে গৃহীত অতিরিক্ত অর্থই বুঝায়। কিন্তু ব্যবসায়ী কাজে লগ্নিকৃত টাকার নির্দিষ্ট হারের মুনাফা interest গ্রহণ নিষিদ্ধ নহে।
কিন্তু এইরূপ ধারণা কুরআন হাদীসের সম্পূর্ণ ও সুস্পষ্ট পরিপন্থী। কুরআন মজীদে যে সুদ হারাম করা হইয়াছে তাহা যত রকমেরই হউক না কেন এবং উহা লাভ করার জন্য যে পন্থাই গ্রহণ করা হউক না কেন, সবই সম্পূর্ণরূপে হারাম। বিশেষত যে সময় ‘রিবা’ নিষেধের আয়াত নাযিল হইয়াছিল সে সময়কার আরব সমাজে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত প্রয়োজন প্রদত্ত ঋণের উপর সুদ লওয়া হইত, অনুরূপভাবে ব্যবসায়ে লগ্নিকৃত মূলনের উপরও সুদ গ্রহণের রীতি ছিল। এই উভয় প্রকার সুদকে তখন আরবী ভাষায় ‘রিবা’-ই বলা হইতো। আর কুরআন মজীদে এই ‘রিবা’কেই হারাম করা হইয়াছে।
বস্তুত এই উভয় প্রকারের সুদে মূলগতভাবে কোনই পার্থক্য নাই। বরং বলা যায়, ইহা এক-ই জিনিসের দুইটি দিক। আর এই দুইটি দিকই ইসলামে চিরতরে হারাম।
আধুনিক অনুসন্ধঅন ও গবেষণার ফলে এ কথা প্রমাণিত হইয়াছে যে, সুদ উদ্বৃত্তের উপর প্রভাবশালী হয় না, মূলধন বিনিয়োগের হারই কার্যত উদ্বৃত্তের হারকে প্রভাবিত করে। ইসলাম সুদকে নিষিদ্ধ করিয়াছে বটে, কিন্তু মূলধন বিনিয়োগকে শুধু যে নিষিদ্ধ করা হয় নাই তাহাই নয়, সেজন্য বলিষ্ঠভাবে উৎসাহও প্রদান করা হইয়াছে। পুঞ্জিকৃত অর্থকে ব্যবসায়ের মূরধনরূপে বিনিয়োগের জন্য যাকাত ব্যবস্থা একটা বড় কার্যকারণ। উপরন্তু ইসলাম মুনাফা লাভের ও মুনাফায় অংশীদারিত্ব (Sleeping Partnerships) তথা লাভ-লোকসানে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার অনুমতি দেয় বলিয়া এই কাজে শরীক হইতে ইসলামী আদর্শবাদী মানুষ অতি সহজেই অগ্রসর হইয়া আসিবে, ইহাই স্বাভাবিক।
ইসলামি এই ব্যাংক-ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হইবে- লাভ-লোকসানের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। সুদমুক্ত এই ব্যাংক ব্যবস্থা ‘মুজারিবাত’ নীতিতে এই ধরনের আরো বহু প্রতিষ্ঠান কায়েম করার ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্যকারী হইবে। ইহাতে শ্রম ও মূলধন পরস্পরের সহিত মুনাফার অংশীদার হিসাবে মিলিতগ হইবে। বস্তুত শ্রম ও মূলধনে স্থায়ী সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যাপারটিকে নৈতিক আদর্শ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে স্থাপিত ও পরিচালিত করা সম্ভব হইবে। উভয় পক্ষের নৈতিক দায়িত্বকে উভয়ের ঈমানের অংশরূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। ফলে মুজারিবাতের নীতিতে উৎপাদনের বিভিন্ন ইউনিটের শরীকদারীতে সকল প্রকার কৃষি ব্যবসায় ও শিল্পসংক্রান্ত কাজে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হইতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়ে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে মূলধনের ব্যবস্থা হওয়া Financing দরকার। কৃষিশিল্প ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক স্বল্পমেয়াদের জন্য অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মূলধন বিনিয়োগ করিতে পারে। ব্যাংকের কারবারে অচলবাস্থা দেখা দেওয়ার কারণে অনেক সময় ব্যাংক দেউলিয়াও হইয়া যাইতে পারে। এই কারণে দীর্ঘ মেয়াদী কারবারের জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান গঠন করা যাইতে পারে। এতদ্ব্যতীত ইসলামী ব্যাংক শিল্প, মূলধন কিংবা যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ঋণ দেওয়ার জন্য ‘সিকিউরিটি’ সংগ্রহের ব্যবস্থাও করিতে পারে।
ব্যবসায়-বাণিজ্যেক্ষেত্রে সাময়িক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্বল্পমেয়াদী ঋণ দানের ব্যবস্থা হওয়া একান্ত জরুরী, ইসলামী রাষ্ট্রে এই ধরনের ঋণ সরকারী ক্রেডিট এজেন্সী কিংবা নাগরিকদের দ্বারা গঠিত কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঋণ গ্রহীতার মালিকানাধীন কোন সম্পত্তির উপর দলীল করিয়া অতি সহজেই দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে পারে।
মূলধন সংগ্রহ- পুঁজিগঠন এবং এই পুঁজিকে উৎপাদনী ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী-উদ্যোগকারী (Enterpreneur)দের সহিত ব্যাংক সম্পর্কে কি হইবে? এ পর্যায়ে বলা যাইতে পারে যে, প্রথম অবস্থায় ব্যাংক হইবে ‘অপারেটর’ কিংবা বিজিনেস ম্যানেজার এবং পুঁজি সংগ্রহকারীদের অপারেটর। এই পর্যায়ে মূলধন মালিকদের অধিকার ও অপারেটরের কর্তব্য সম্পর্কে সাধারণ প্রচলিত ইনসাফমূলক রীতিনিতীর ভিত্তিতে শর্ত প্রয়োগ করা যাইতে পারে। ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী যে মুনাফা লাভ করিবে, ব্যাংক মূলধন সঞ্চয়কারী হিসাবে স্থিরীকৃত হার অনুযায়ী উহাতে অংশীদার হইবে।
ব্যাংকক ও ব্যবসায়ীদের একত্রে অংশীদারিত্বের ভিত্তিবে কাজ করার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নাই। মিসরে সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবসায় বিগত কয়েক বৎসর পূর্ব হইতে বিশেষ সাফল্য সহকারে চলিয়া আসিতেছে এবং উহা ক্রমশঃ বিকাশ ও অগ্রগতি লাভ করিতেছে। ইহা এই পর্যায়ে উৎসাহব্যঞ্জক সংবাদ। করাচীতেও এই ধরনের একটি সুদবিহীন তথা মুনাফা ভিত্তিক ব্যাংক কায়েম করা হইয়াছিল; কিন্তু কেবলমাত্র সরকারী অসহযোগিতার দরুনই শেষ পর্যন্ত তাহা অচল হইয়া পড়িতে বাধ্য হয়। [বর্তমান বাংলাদেশেও উহার সূচনা হইয়াছে বটে, তবে উহা সম্পূর্ণ জায়েয ও সুদমুক্তভাবে চলিতে পারিতেছে কিনা, তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখার ব্যাপার।]
বস্তুত ইসলামী ব্যাংক-ব্যবস্থা আধুনিক ব্যাংক ব্যবসায়ের তুলনায় অধিক সাফল অর্জনে সক্ষম। ইহার প্রধন কারণ এই যে, ইসলাম সুদ নিষিদ্ধ করিয়াছে বলিয়া ইহা হইবে সুদবিহীন ব্যাংক। সুদব্যবস্থা না থাকিলে উদ্ধৃত্তের পরিমাণ বৃদ্দি পাইবে না, এমন কথা বলারও কোন যুক্তি নাই। সুদ ব্যবস্থার দরুনই বরং মুলধন সংগ্রহের কাজ মন্থর গতিতে চলে ও মারাত্মক ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ইহারই দরুন সমাজে ও দেশে ব্যাপক বেকার সমস্যা দেখা দেয়, এবং অর্থ-বন্টনের ক্ষেত্রে চরম ও মারাত্মক ধরনের অর্থনৈকি বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ইহারই দরুন সমাজে ও দেশে ব্যাপক বেকার সমস্যা দেখা দেয়, এবং অর্থ-বন্টনের ক্ষেত্রে চরমনা-ইনসাফী ও আকাশছোয়া বৈষম্য দেখা দেয়, এবং অর্থ-বন্টনের ক্ষেত্রে চরম না ইনসাফী ও আকাশছোয়া বৈষম্য দেখা দেওয়া ইহারই কারণে অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়ে। কারণ, খাজনা উসুল, বিল আদায় ও আমদানী-রফতানীর কাজে সাহায্য করা ছাড়াও ইসলামী ব্যাংক ব্যাংক বহির্ভূত (Extra-Banking) বহু কাজও আঞ্জাম দিতে পারে, যাহার ফলে দেশে বিপুল অর্থনৈতিক উন্নতি লাভের সুযোগ হইবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, ব্যাংক উহার মুনাফার একটা অংশ (যেমন শতকরা ৫টাকা) জাতীয় শিক্ষা কিংবা সাধারণ জনকল্যাণমূলক বহুবিধ কাজে বিনিয়োগ করিতে পারে। এই ধরনের বিনিয়োগ হইতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহসাই কোন সুফল হয়ত লক্ষ্য করা যাইবে না; কিন্তু কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উৎকর্ষতার উপর এই কাজের সুস্পষ্ট প্রভাব অবশ্যই প্রতিফলিত হইবে। অতএব সামাজিক সামষ্টিক এই কাজের যে যথেষ্ট মূল্য ও গুরুত্ব রহিয়াছে তাহা অস্বীকার করার উপায় নাই।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তাহা মুদ্রা তৈরী মূলধন সংগ্রহ ও সুদ বর্জন ছাড়াও সেই সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিত, যাহা আধুনিক কালের কেন্দ্রীয় বা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক (Central or state bank) সম্পন্ন করিয়া থাকে। বর্তমান দুনিয়ার ইসলামী রাষ্ট্রগুলির ক্রমর্ধমান অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বায়তুলমাল কায়েমের মাধ্যমে যাবতীয় কর্তব্য ও তৎপরতাকে সমন্বিত করা যাইতে পারে। এইরূপ একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উদ্যোগী হইলে মুসলিম জাহান হইতে কেবল সুদপ্রথাকে চিরতরে উৎপাটিত করা যাইবে তাহাই নয়, উহা দ্বারা মুসলিম তথা সাধারণ জনমানুষের বিশেষ কল্যাণ সাধিত হইবে, এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট ভিত্তি রহিয়াছে। [ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা লক্ষ্যণীয়।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/146
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।