মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জানিয়া রাখ, গণীমতের হিসাবে যে মাল-সম্পদেই লাভ হইবে, উহার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য, তাহার রাসূলের জন্য এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও নিঃসম্বল পথিকদের জন্য নির্দিষ্ট।
কুরআনের এই নির্দেশ অনুসারে নবী করীম (ﷺ) গণীশতের মালের বিরাট অংশ পাঁচ ভাগের চার ভাগ- সামরিক লোকদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিয়াছিলেন এবং উহার এক-পঞ্চমাংশ মাত্র উল্লিখিত খাতে ব্যয়ের জন্য বায়তুলমালে জমা দিয়াছিলেন।
নবী করীম (ﷺ)-এর অন্তর্ধানের পর গণীমতের মাল পাঁচ ভাগের পরিবর্তে মোট তিন ভাগে ভাগ করা হইত। খুলাফাযে রাশেদুন কুরআন উল্লিখিত রাসূল এবং তাঁহার নিকটাত্মীয়দের অংশ বাতিল করিয়া দিয়াছিলেন। [কিতাবুল খারাজ, ১১পৃঃ কিতাবুল আমওয়াল, ৩২৬ পৃঃ] বর্তমানকালে উল্লিখিত দুইটি বাতিল করার পরিবর্তে তাহা সামরিক অস্ত্র-শস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম ক্রয়ে ব্যয় করাই যুক্তিযুক্ত হইবে। [কিতাবুল খারাজ, ১১পৃঃ কিতাবুল আমওয়াল, ৩২৬ পৃঃ]
(২) ‘ফাই’ ও বিনাযুদ্ধে লব্ধ ধন-সম্পদ: ইহার ব্যয়ের খাতও কুরআন মজীদে নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে। ইহা পথম রাষ্ট্রীয় মালিকানার অন্তর্ভুক্ত হইবে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয়িত হইবে। হযরত নবী করীম (ﷺ) এই ধরনের যাবতীয় মাল-সম্পদকে নিজেরই তত্ত্বাবধানে ব্যয় ও বন্টন করিয়াছেন। কুরআন মজীদে বরা হইয়াছে:
(আরবী)
আল্লাহ গ্রামবাসীদের-রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের- নিকট হইতে তাহার রাসূলকে যাহা কিছু বনা যুদ্ধে দান করিয়াছেন, তাহা আল্লাহ, তাহার রাসুল, তাহার নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও নিঃস্ব পথিকদের জন্য (বন্টন করা) হইবে, যেন ধন-সম্পত্তি তোমাদের কেবল ধনীদেরই কুক্ষিগত হইয়া না থাকে।
আয়অতে উল্লিখিত ‘রাসূল এবং তাঁহার নিকটাত্মায়ের অংশ বর্তমান সময় বাতিল হইয়া যাইবে এবং যাহা দেশবাসীর সামগ্রিক কল্যাণকর কাজে- রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন পূরণ করা এবং দেশের যাবতীয় উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় – ব্যয় করা হইবে। ইয়াতীম, মিসকীন ও নিঃস্ব পথিকের জন্য যে অশ্যটি নির্দিষ্ট রহিয়াছে, তাহা তাহাদের জন্যই ব্যয় করিতে হইবে।
মুসলমানদের কল্যাণ ব্যবস্থার দৃষ্টিতে অন্য কোন জাতির উপকার করা, তাহাতে ঋণ দেওয়া কিংবা তাহাদের সহানুভূতি লাভ করার জন্য অর্থদান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত ইহলে এই অর্থ সেজন্যও খরচ করা হইবে।
মনে রাখিতে হইবে, কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াতে ‘ফাই’ বাসাধারণ রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশের ব্যয়েংর খাত নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে। অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশ ব্যয় করার ভার ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকদের উপর ন্যস্ত করা হইয়াছে।
পসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, গণীমত ও ফাই’রন ধন-সম্পদের খুমুস বা এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় করার ব্যাপারে যদি কোনরূপ মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানই উহার মীমাংসা করিয়া দিবে।
এখন চূড়ান্ত কথা এই যে, খারাজ, জিজিয়া ও আমদানী শুল্ক- প্রভৃতি সকল ধন-সম্পদই ফাই’র অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তাহা সবই উল্লিখিতরূপে ব্যয়-ব্যবহার করা হইবে।
(৩) যাকাত: যাকাতের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার খাতও কুরআন মজীদ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে। বলা হইয়াছে:
(আরবী)
যাকাতের সম্পদ কেবল ফকীর ও মিসকীনদের জন্য, তাহাদের জন্যও যাহারা তাহা সংগ্রহ করার কাজে কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত ইহয়া আছে। তাহাদের জন্যও যাহাদের মন আকৃষ্ট করার জন্য সাহায্য দান প্রয়োজন বোধ হয়। ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে এবং ঋণগ্রস্তকে জগদ্দল ঋুণভার হইতে মুক্ত করার জন্যও উহা ব্যয় হইবে। আর তাহা আল্লাহর পথেও ব্যয় হইবে, নিঃস্ব পথিকতেরও তাহা হইতে দান করা যাইবে। বস্তুত ইহা আল্লাত তা’আলার ধার্যকৃত ফরয; আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান।
(ক) বেকার শ্রমজীবী ও রুজিহীনদের সামাজিক নিরাপত্তা
কুরআনের পরিভাষায় ‘ফকীর’ এমন মজুর ও শ্রমজীবীকে বলা হয়, শারীরিক স্বাস্থ্য ও শক্তির দিক দিয়া যে খুব মজবুত এবং কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল অবস্থার কারণে সে বেকার ও উপার্জনহীন হইয়া পড়িয়াছে। কুরআন শরীফে ঠিক এই অর্থেই ইহা ব্যবহৃত হইয়াছে। এই দিক দিয়া সেই সব অভাবগ্রস্ত মেহনতী লোককেও ‘ফকীর’ বলা যাইতে পারে, যাহার কোন জুলুম হইতে আত্মরক্ষা করার জন্য নিজেদের জন্মভূমি ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে। কোন সামরিক এলাকা হইতে বিতাড়িত লোকদেরও ‘ফকীর’ বলা যাইতে পারে। কুরাইশদের অত্যাচারে যেসব মুসলমান হিজরাত করিয়া মদীনায় গিয়া আশ্রয় লইয়াছিলেন এবং রুজি-রোজগারের সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত হইয়াছিলেন, কুরআন মজীদে তাহাদিগকে ‘ফকীর’ বলিয়া আখ্যায়িত করা হইয়াছে:
(আরবী)
যাকাতের সম্পদ সেই সব ফকীর-মুহাজিরদের জন্য. যাহারা নিজেদের ধন-সম্পত্তি ও ঘর-বাড়ি হইতে বিতাড়িত হইয়াছে এবং আল্লাহর ‘অনুগ্রহ’ ও ‘সন্তুষ্টির সন্ধান করিতেছে।’
(খ) মজুর শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা
মজুর শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা দানের জন্য যাকাত বাবদ সংগৃহীত অর্থের একটি অংশ নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে। গরীবদের সাহায্য দান এবং সকল প্রকার দুঃখ-দুর্ভোগ ও অভাব-অনটন হইতে মুক্তিদানই এই বিভাগের উদ্দেশ্য, যেন সমাজ-ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় তাহারা পূর্ণ শক্তি ও সামর্থ্য লাভ করিতে পারে- যেন তাহাদের বুনিয়াদি প্রয়োজন পূর্ণ করিয়া দিয়া তাহাদের জীবন-যাত্রার মান উন্নত করা যায়। বস্তুত ইসলামী রাষ্ট্রের শ্রমজীবীদের জন্য ইহা এক চিরস্থায়ী রক্ষা কবচ। ইহার আরো একটি দিক এই যে, এইরূপ ব্যবস্থা থাকার কারণে ইসলামী সমাজে পুজি ও কারখানা মালিকগণ শ্রমিক-মজুরদের কখনই শোষণ করিতে পারিবে না। তাহারা উপযুক্ত বেতন দিয়া মজুর রাখিতে বাধ্য হইবে এবং মজুর রাখিয়া যথাসময়ে ও যথেষ্ট পরিমাণে তাহাদের বেতন আদায় করিতেও বাধ্য থাকিবে। আর তাহারা যদি শ্রমিকদরে বিপদগ্রস্ত করার জন্য সহসা কারখানা বন্ধ করিয়া দেয় বা সহসা কারখানা বন্ধ করিয়া দেওয়ায় শ্রমজীবীগণ বিপদের সম্মুখীন হইয়া পড়ে, তবে তাহাতেও মালিক শ্রেণীর পরাজয় হইবে। যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্রের এই বিভাগ এইসব শ্রমিকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দানের জন্য পূর্ব হইতেই প্রতিষ্ঠিত থাকিবে।
মজুর-শ্রমিকদের সকল প্রকার বিপদ হইতে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং ইসলামী রাষ্ট্রই সম্পূর্ণ দায়ী। সেখানে কোন ট্রেড ইউনিয়নের বিন্দুমাত আবশ্যকতা নাই। বস্তুত যাকাতের এই ব্যবস্থা পুঁজিদার ও মালিকদের শোষণক্ষমতার বিষদাঁত একেবারে চূর্ণ করিয়া দেয়। পুঁজিদার যদি নিজের মূলধন কোন অর্থকরী কাজে নিযুক্ত না করে, তবুও তাহাদের সঞ্চিত ও পুঞ্জীকৃত অর্থে যাকাত ধার্য হইবে। ফলে তাহারা মজুর-শ্রমিকদিগকে ঠিক সেই পরিমাণ মজুরী দিতে বাধ্য হইবে, যতখানি ইহারা পণ্যোৎপাদনের মূল ব্যাপারে সাহায্য করিয়াছে।
(গ) অক্ষম লোকদের সামাজিক নিরাপত্তা
‘ফকীর’দের ন্যায় মিসকীনদের জন্যও যাকাতের অংশ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে। ‘মিসকীন’ তাহাকেই বলা হয়, দৈহিক অক্ষমতা যাহাকে চিরতনে নিষ্কর্মা ও উপার্জনহীন করিয়া দিয়াছে; বার্ধক্য, রোগ অক্ষমতা ও পংগুতা যাহাকে উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা হইতে বঞ্চিত করিয়া দিয়াছে অথবা যে ব্যক্তি উপার্জন করিতে পারে বটে, কিন্তু যাহা উপার্জন করে তাহা দ্বারা তাহার প্রকৃত প্রয়োজন মাত্রই পূর্ণ হয় না; অন্ধ, পক্ষাগাতগ্রস্ত, পংগু ইত্যাদি সকল লোককেই ‘মিসকীন’ বলা হয়। ইমাম আবূ হানীফা (র) বলেন, মিসকীনের অবস্থা ফকীর অপেক্ষাও বেশী বিপর্যস্ত হইয়া থাকে। কারণ অর্থনৈতিক অসামর্থ্যই তাহাকে দরিদ্র ও অকর্মণ্য করিয়া দিয়াছে। অতএব তাহাদিগকে এমন পরিমাণ অর্থ সাহায্য দিতে হইবে যাহাতে তাহাদের প্রয়োজন মেটে এবং দারিদ্রের দুঃখময় পরিস্থিতি হইতে মুক্তি পাইয়া স্বাচ্ছন্দ্যলাভের দিকে পদক্ষেপ করিতে পারে।
ইসলাম একদিকে যেমন লোকদিগকে ভিক্ষাবৃত্তি হইতে নিবৃত্ত করিয়াছে, অপরদিকে রাষ্ট্রীয় বাজেটে বেকার, পংগু, অক্ষম, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও উপার্জন ক্ষমতাহীন লোকদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দানেরও পূর্ণ ব্যবস্থা করিয়াছে। ইসলামের অর্থনীতি যে কতখানি সমাঞ্জস্যপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ তাহা ইহা হইতে প্রমাণিত হয়।
(ঘ) যাকাত বিভাগের কর্মচারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
যাকাত বিভাগের কর্মচারীগণ দুই ভাগে বিভক্ত হইবে। এক ভাগ যাকাত আদায় করার কাজে নিযুক্ত থাকিবে, আর অপর ভাগ তাহা সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট পন্থায় বন্টন করার কাজ সম্পন্ন করিবে। এই উভয় কাজেই যত কর্মচারী নিযুক্ত থাকিবে, তাহাদের সকলের প্রকৃত প্রয়োজন পরিমাণ বেতন দেওয়া এবং এই গোটা বিভাগের যাহা কিছু ব্যয় হইবে তাহা যাকাতের আমদানী হইতেই খরচ করার অনুমতি আল্লাহ দিয়াছেন। এই বেতন প্রত্যেক কর্মচারী যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার অনুপাতে দিতে হইবে। কিন্তু উহার নিম্নতম হার হইতেছে নিম্নতম প্রয়োজন পূরণ।
(ঙ) মুসলিমদের সংরক্ষণ-ব্যবস্থা
যাকাতের পঞ্চম অংশ ব্যয় করা হইবে ‘মানুষের মন আকৃষ্ট’ করার জন্য। কুরআনে ব্যবহৃত শব্দের মুল হইতেছে ‘তালীফে কুলুব’। ইহার প্রকৃত উদ্দেশ্য হইতেছে, ইসলাম প্রচারের কাজ কোথাও প্রতিরুদ্ধ ও প্রতিহত হইলে, কিংবা মুসলমানদের উপর কোথাও অত্যাচার হইলে এবং তাহা টাকা দ্বারা দূর করা সম্ভব হইলে সেই ক্ষেত্রে যাকাতের এই অংশের অর্থ ব্যয় করা হইবে। যেন ফেতনা ও ফাসাদ, অশান্তি ও বিপর্য সৃষ্টি না হইতে পারে। অত্যাচারীও অনেক সময় টাকা পাইয়া অত্যাচার-নিপীড়ণ বন্ধ করে; এমনকি, কখনো এইরূপ ব্যবহার দেখিয়া মুগ্ধ-বিস্মিত হইয়া শুধু জুলুমই বন্ধ করে না, অনেক সময় ইসলামও গ্রহণ করিয়া থাকে। অনুরূপভাবে সংগতিহীন নও মুসলিমকেও ইহা দ্বারা নিজ পায়ে দাড়াইবার যোগ্র করিয়া তুলিতে চেষ্টা করা হইবে। [তাফসীরে বাইজাবী- প্রথম খণ্ড।]
কিন্তু ইসলামী রাস্ট্র ও জনতা যদি কখনো সামগ্রিকভাবে সমধিক ঐশ্বর্যশালী হইয়া উঠে এবং তখন নিজদেশে এইরূপ অর্থদানের আর কোন প্রয়োজনই না থাকে, তবে এই খাতের অর্থ বৈদেশিক মুসলমান তথা মিত্র রাষ্ট্রের সাহায্যার্থে ব্যয় করা যাইতে পারিবে।
(চ) ক্রীতদাসদের মুক্তিবিধান
যাকাতের ষষ্ঠ অংশ ব্যয় হইবে দাসত্বের বন্ধনগ্রস্ত লোকদের মস্তক মুক্ত ও স্বাধীন করার কাজে। এই অর্থ দ্বারা ক্রীতদাস খরিদ করিয়া তাহাকে মুক্তি করা হইবে; ক্রীতদাস নিজে এই অর্থ লাভ করিয়া উহার বিনিময়ে নিজেকে গোলামীর বন্ধন হইতে মুক্ত করিতে পারিবে।
ইসলাম-সূর্যের প্রথম উদয় লগ্নে আরবদেশে দাস-প্রথার খুব বেশী প্রচলন ছিল। ইসলামী রাষ্ট এই অমানবিক প্রথা বন্ধ করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং সরকারী অর্থের সাহায্যে শান্তিপূর্ণবাবে এই প্রথার মূলোৎপাটনের ব্যবস্থা করে। ফলে খুলাফায়ে রাশেদুনের যুগে এই প্রথা চূড়ান্তভাবে রহিত হইয়া যায়।
আমেরিকার দাস-প্রথা বন্ধ করার জন্য রীতিমত গৃহযুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু ইসলামী হুকুমাত এমন এক অর্থনীতির প্রচলন করিয়াছে যে, ইহার সাহায্যে প্রথমবার আরব দেশের এই যুগ-যুগন্তকালের প্রথাটিকে নিঃশেষে খতম করা সম্ভব হইয়াছিল এবং অনন্তকাল পর্যন্তক যখনই যে দেশেরই এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়া উঠিবে,সেখানেই এই অর্থনীতির দ্বারা শান্তিপূর্ণভাবে মানবসমাজের এই বিরাট ও জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যাইতে পারিবে।
শুধু তাহাই নয়, কাফিরদের সহিত যুদ্ধ সংগ্রাম হওয়ার ফলে মুসলিম মুজাহিদগণ যদি শত্রুর হাতে বন্দী হইয়া পড়ে, তবে এই অর্থ দ্বারা তাহাদিগকে মুক্ত করার ব্যবস্থা বা চেষ্টা করা যাইতে পারিবে। [মা-অর্দী প্রণীত ‘আল আহকামুস সুলতানীয়া’।]
(ছ) ঋণ মুক্তির স্থায়ী ব্যবস্থা
যাকাতের সপ্তম অংশ নির্দিষ্ট হইয়াছে ঋণগ্রস্ত লোকদের সাহায্যার্থে। ঋণগ্রস্ত লোক সাধারণত দুই প্রকার: (১) যাহারা নিজেদের নিত্য-নৈমিত্তিক প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যাপারে ঋণ গ্রহণ করে। এই ঋণগ্রস্ত লোক যদি নিজে ধনী না হয়, তবে তাহাদিগকে যাকাতের এই অংশ হইতে সাহায্য করা হইবে। (২) দ্বিতীয় সেই সব লোক, যাহারা মুসলমানদের সামষ্টিক কল্যাণ সাধন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জর্য ঋণ গ্রহণ করে। ইহারা ধনী হউক নির্ধন হউক- ঋণ করার পরিমাণ অর্থ যাকাতরে এই অংশ হইতে তাহাদিগকে দেওয়া যাইতে পারিবে।
ইমাম আবূ ইউসুফ কিতাবুল খারাজে লিখিয়াছেন ‘গা-রিমীন’ –তাহাদিগকে বলা হয়, যাহারা নিজেদের ঋণ শোধ করিতে অসর্থ। ‘হিদায়াত’ নামক প্রসিদ্ধ ফিকাহ গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে: ‘গারিম’ তাহাকে বলে যাহাদের নিজেদের ঋণের পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত কোন অর্থ সম্পদ নাই। তাফসীল-ই তাবারী গ্রন্থে ‘গারিম’ শব্দ হেইতে সেই সব লোক বুঝান হইয়াছে, যাহারা ঋণের দুর্বহ ভারে বন্দী ও অবনত মস্তক; কিন্তু তাহাদের এই ঋণ অপচয়, অপব্যয়, অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি কিংবা দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণৈ হয় নাই। যাহার বাড়ি-ঘর জ্বলিয়া ভষ্ম হইয়া গিয়াছে, কিংবা বন্যা-প্লাবনে মাল-আসবাব ভাসিয়া গিয়াছে, এই জন্য সে তাহার পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ করিতে সমর্থ হইতেছে না; তাহাকেও ‘গারিম’ বলা হয়। এই সকল ব্যক্তির পক্ষ হইতেই:
(আরবী)
ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুলমাল হইতে এই সব লোকের ঋণ আদায় করিয়া দেওয়া রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্য।
নবী করীম (ﷺ) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবেই ঘোষণা করিয়াছেন:
(আরবী)
যে লোক ধন-সম্পত্তি রাখিয়া মরিয়া যাইবে তাহা তাহার উত্তরাদিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হইবে। আর যে লোক কোন ঋণের বোঝা অনাদায় রাখিয়া যাইবে (তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতেযদি উহার আদায় না করা যায়, তবে) তাহা আদায় করার দায়িত্ব আমার উপর বর্তিবে।
অপর এক হাদীসেতাহার কথাটি এ ভাষায় বর্ণিত হইয়াছে:
(আরবী)
যে ব্যক্তি কোন দায়িত্বভার রাখিয়া যাইবে তাহা বহন করার দায়িত্ব আমর উপর বর্তিবে। যে ব্যক্তি ধন-মাল রাখয়া যাইবে তাহা তাহার উত্তরাধিকারীদের হইবে। আর যাহার কেহই উত্তরাধিকারী থাকিবে না, আমিই তাহার উত্তরাধিকারীদের হইবে। আর যাহার কেহই উত্তরাধিকারী থাকিবে না, আমিই তাহার উত্তরাধিকারী হইব। আমি তাহার অসিয়ত পূরণ করিব।
নবী করীম (ﷺ)-এর এই ঘোষণায় নিঃস্ব ঋণগ্রস্ত লোকদের ঋণ পরিশোধ করার এবং তাহাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা-ব্যবস্থার ভার সরাসরিভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের উপর অর্পণ করা হইয়াছে।
এ সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা এই যে, আকস্মিক দুর্ঘটনা কিংবা কোন বাহ্যিক প্রতিকূলতার কারণে যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়িবে, যাকাতের এই অংশ হইতে তাহাকে নিশ্চয়ই সাহায্য করিতে হইবে।
(জ) বিনাসুদে ঋণ দান
ইসলামী রাষ্ট্র ঋণগ্রস্ত লোকদিগকে কেবল ঋণভার হইতে মুক্ত করিবে তাহাই নয়, ইতিবাচকভাবে জনগণের উৎপাদনমূলক কাজে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন অনুসারে ঋণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করিবে। কিন্তু তাহা সুদের ভিত্তিতে হইবে না। উপরন্তু যাকাতরে যে অংশ ঋণ শোধ করার জন্য নির্দিষ্ট রহিয়াছে, তাহা হইতে লোকদিগকে পূর্বাহ্নেই ঋণ দেওয়া যাইতে পারে।
ইসলামী অর্থনীতিতে সুদী কারবার ও সুদের লেন-দেন একেবারেই জায়েয নহে। কাজেই কেহ কাহাকেও টাকা ঋণ দিলে তাহাতে কোন ক্রমেই সুদ লওয়া বা দেওয়া যাইতে পারে না। কোন নাগরিকই যাহাতে সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণ করিতে না পারে বা ঋণ-লইয়া সুদ দিতে না বাধ্য না হয়- ইসলামী রাষ্ট্রে তাহার পুরাপুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকদিগকে এই সুদ দেওয়া ও নেওয়ার পাপ-অভিশাপ হইতে চিরতরে মুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় বায়তুলমাল হইতে বিনাসুদের ঋণ দেওয়ার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করা হইবে। বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার জন্য বায়তুলমালের একটি বিভাগ স্থায়ীভাবে কাজ করিবে। দেশের জনগণ- এমনকি স্বয়ং খলীফাও এই ফান্ড হইতে প্রয়োজন অনুসারে ঋণ গ্রহণ করিতে পারবে।
খুলাফায়ে রাশেদুনের যুগে এই ব্যবস্থা বিশেষভাবে কার্যকর হইয়াছিল বলিয়া এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক বায়তুলমালসমূহ এই জন্য তৎপর থাকিতে বলিয়া সেকালে সুদী কারবারের অস্তিত্ব পর্যন্ত কোথায়ও ছিল না।
যে সব দেশে অবাধ-স্বাধীন অর্থনীতির (Laissez faire) পচলন থাকে এবং রাষ্ট্র-সরকার যে দেশের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করে না, সে দেশে অসংখ্য প্রকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জটিল সমস্যা মাথাচাড়া দিয়া উঠে। সেখানে মহাজন ও পুঁজিপতিরা সুদের বিনিময়ে ঋণ দান করিয়া অভাবী লোকদিগকে জোঁকের মত শোষণ করিতে পারে। ইউরোপ আমেরিকা- এমনকি রাশিয়া, কোথায়ও ইহার কোন ব্যতিক্রম নাই। একদিকে শোষকগণ মারাত্মকভাবে সুদের জাল-বিস্তার করিয়া অর্থ-লুণ্ঠনের ব্যবস্থা করে এবং অন্যদিকে ইহাদের নামে স্থাপিত আদালতসমূহ সেই শোষণকে আইনসম্মত গণ্য করিয়া উহাকে অধিকতর কার্যকর করিয়া তোলে। পরিণামে পাঁচ-দশ টাকা ঋণ গ্রহণের কারণে এক এক ব্যক্তির যাবতীয় বিত্ত-সম্পত্তি নিলামে উঠিয়া নিঃশেষ হইয়া যায়। মিঃ এইচ, উলফ-এর কথায়, সমগ্র দেশ সুদখোরদের উদগ্র গ্রাসের মধ্যে বন্দী ইহযঅ আছে, ঋণের লৌহ শলাকা দেশের শৈল্পিক ও কৃষ্টি ক্ষেত্রের সর্ব প্রকার উন্নতির পথ রুদ্ধ করিয়া দাড়াইয়া আছে। অথচ কোন মানুষই এমন সমাজব্যবস্থা কিছুতেই বরদাশত করিতে পারে না, যাহাতে অধিকাংশ লোকই ঋণী হইয়া জন্মগ্রহণ করে, ঋণী হইয়া তিক্ত জীবন যাপন করে এবং ঋণগ্রস্ত হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়। শুধু তাহাই নয়, মৃত্যুর পরও এই ঋণের জাল ছিন্ন হয় না, নিজের সন্তানদিগকেও তাহারা এই ঋণভারে জর্জরিত করিয়া রাখিয়া যায়।
এই চিত্র পুঁজিবাদী সমাজের সঠিক রূপই উদ্ভাসিত করে; কিন্তু ইসলামী সমাজের রূপ ইহা হইতে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। ইসলাম একদিকে যেমন সুদকে চিরতরে হারাম করিয়া দিয়াছে, অপর দিকে যাকাতরে অর্থ হইতে অভাবী লোকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিয়াছে এবং সুদের শর্তে ঋণ গ্রহণের কোন বাধ্যবাধকতাই অবশিষ্ট থাকিতে দেয় নাই।
ইসলাম যেরূপ ব্যক্তিগতভাবে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার জন্য ইসলামী জনতাকে উৎসাহিত করিয়াছে, ঠিক সেই সঙ্গে ইসলামী রাষ্ট্রের উপরও অনুরূপ দায়িত্ব চাপাইয়া দিয়াছে। কুরআন উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করিতেছে:
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলাকে উত্তম ঋণ যে লোকই দান করিবে…. আল্লাহ তা’আলা তাহাকে অসংখ্যগুণ বেশী ফিরাইয়া দিবেন।
এখানে ‘উত্তম ঋণ’ এর অর্থ বিনাসুদে ঋণ দান এবং আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ অভাবগ্রস্ত লোককে কিংবা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক কাজে কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করিবার উদ্দেশ্যে ঋণদান করা। কৃসিজীবীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বিনাসুদে কৃষি ঋণ দেওয়া বায়তুলমালের দায়িত্ব। এ সম্পর্কে ফিকাহবিদদের ফয়সালা হইল:
(আরবী)
জমির মালিক যদি দারিদ্রের কারণে তাহার জমি চাষ করিতে অক্ষম হয় তাহা হইলে প্রয়োজন মত তাহাকে বায়তুলমাল হইতে বিনসুদে ঋণ দিতে হইবে, যেন সে কৃষিকাজ করিতে ও তাহার জমিতে ফসল ফলাইতে সক্ষম হয়।’
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণও এ কথা স্বীকার করিয়াছেন যে, যে সমাজে সুদেরহার একেবারে শুণ্যের কোঠায় পৌঁছিয়াছে এবংবিনাসুদে ঋণ দেওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থা রহিয়াছে, বস্তুত তাহাই হইতেছে সর্বাপেক্ষা উন্নত ও সুসভ্য সমাজ। নীতিগতভাবে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার যৌক্তিকতা পাশ্চাত্য চিন্তাবিদগণ স্বীকার করিয়াছেন বটে, কিন্তু তাহা কার্যকররূপে চারু করার কোন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত পেশ করিতে পারেন নাই। তাঁহারা যে সমবায় ঋণ দান সমিতি’ বা ব্যাংকের ব্যবস্থা দিয়াছেন, তাহা মানুষকে অর্থণৈতিক নিরাপত্তা দানের পরিবর্তে সুদের অক্টোপাশে সমগ্র দেশকে দুশ্ছেদ্যবাবে বাধিয়া ফেলিয়াছে।
ইংলন্ডের অষ্টম হেনরীর শাসনকালের পূর্বেই খৃস্টান প্রজাদিগের জন্য সুদী কারবার ও সুদী লেন-দেনকে আইনত নিষিদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু এই আইন শুধু এই জন্যই ব্যল্থ হইয়াছিল যে, সেই সঙ্গে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার কোন বাস্তব ব্যবস্থাই ছিল না। অন্য দিকে ইয়াহুদীদিগকে সুদী কারবার করার আবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হইয়াছিল। ফলে ইহাদের পদাংক অনুসরণ করিয়া খৃস্টানগণও সুদী কারবার করিতে শুরু করিয়াছিল। অতঃপর সরকারকে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অবাধ স্বাধীনতা দিয়াই ক্ষান্ত ও নিষিদ্ধ হইয়া থাকিতে হইল।
কিন্তু ইসলামী অর্থনীতি সুদকে হারাম ঘোষণা করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, নাগরিকগণ যাহাতে বিনাসুদে প্রয়োজন পরিমাণ ঋণ লাভ করিতে পারে, তাহার সুষ্ঠু ও স্থায়ী ব্যবস্থাও করিয়াছে ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুলমাল হইতে।
ইসলাম নাগরিকদিগকে শুধু অবাধ স্বাধীনতা দান করে না, স্বেচ্ছাচারিতার সহিত ধন লুন্ঠন ও শোষণ পীড়ন চালানোর কোন অধিকার ইসলামী রাষ্ট্র কাহাকেও দেয় নাই।
(ঝ) ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা ব্যবস্থা
যাকাতের নবম অংশ ব্যয় হইবে আল্লাহর পথে। ‘আল্লাহর পথে’ কথাটি অত্যন্ত ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রত্যেক জন-কল্যাণকর কাজে-দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যত কাজ করা সম্ভব সেই সব ক্ষেত্রেই- এই অর্থ ব্যয় করা যাইবে।
(হ) নিঃস্ব পথিকদের পাথেয় সংস্থান
যাকাতের দশন অংশ ব্যয় করা হইবে ‘ইবনুস সাবীল’ বা নিঃস্ব পথিকদের জন্য। যেসব লোক কোন পাপ-উদ্দেশ্যে ঘরের বাহির হয় নাই- হইয়অছে কোন সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হইয়অ এবং এইরূপ দেশ-ভ্রমণ ব্যাপদেশে তাহারা একেবারে নিঃসম্বল হইয়া পড়িয়াছে, তাহাদিগকে যাকাতের এই অংশের টাকা হইতে এমন পরিমাণ দান করিতে হইবে যেন তাহা দ্বারা তাহাদের তাৎক্ষণিক অনিবার্য প্রয়োজন পূর্ণ হয় এবং নিজ ঠিকানায় ফিরিয়া যাইতে পারে। এমন কি, যেসব মেহনতী ও শ্রমজীবী লোক কাজের সন্থানে এক স্থান হইতে অন্য স্থানে যাইতে চাহে; কিন্তু তাহাদের পথ খরচের সংস্থান হয় না বলিয়া যাইতে পারে না, এইরূপ লোকদিগকে ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুলমাল এই অংশের অর্থ হইতে যাতায়াতের খরচ দান করিবে। কোন গ্রামবাসী শ্রমিক শহরে আসিয়া উপার্জন করিতে থাকা কালে আকস্মিক অনিবার্য কারণে যদি তাহাকে গ্রামে (ফিরিয়অ) যাইতে হয়, এবং তাহার পথখরচ কিছুই না থাকে,তবে তাহাকে লোকদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার হাত দারাজ করিতে বাধ্য না করিয়া ইসলামী রাষ্ট্রই তাহার প্রয়োজন পূরণ করিয়া দিবে। এইসব আকস্মিক প্রয়োজনশীল লোকের নিজ নিজ ঘরে যদি বিপুল পরিমাণের অর্থ-সম্পদও থাকিয়া থাকে, তবুও তাহাকে এই সময় যাকাতের অর্থ হইতে সাহায্য দান করা শরীয়ত বিরোধী কাজ হইবে না।
যাকাতের এই অংশের অর্থ হইতে কেবল যে নগদ টাকা দিয়া বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা হইবে তাহাই নয়। পথিকদের জন্য মুসাফিরখানা, ওয়েটিং রুম, সাধারণ গোসলখানা ইত্যাদিও তৈয়ার করা যাইতে পারিবে। যেসব রাস্তাঘাট ও পুল ভাংগিয়া যাওয়অর দরুণ সাধারণ লোকদের পথ চলাচল কঠিন হইয়া পড়িয়াছে তাহাও এই অংশৈর অর্থ দ্বারা মেরামত বা পুণনির্মাণ করা যাইবে।
যাকাতের অর্থ যে পরিমাণই আদায় হউক না কেন, তাহা যে সব সময় বাধ্যতামূলকভাবে আটটি খাতের প্রত্যেকটিতে ব্যয় করিতে হইবে, ইসরামী অর্থনীতি এমন কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নাই। প্রয়োজন হইলে উহার বিশেষ একটি খাতেও যাকাতের যাবতীয় অর্থ ব্যয় করা যাইতে পারে। [কুরআন মজীদে যাকাত ব্যয়ের মোট আটটি খাত নির্ধারণের অর্থ এই নয় যে, উহা ভাগ ভাগ করিয়া আটওটি খাতে ব্যয় করিতে হইবে। বরং তাৎপর্য হইল, এই আটটি খাতে বা উহার যে কোন একটি খাতেও ব্যয় করা যাইবে।]
এ পর্যায়ে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যাকাত বাবদ আদায়কৃত অর্থ আঞ্চলিকভাবে বন্টন করা আবশ্যক। স্থানীয় বায়তুলমালে উক্ত অর্থ জমা করা এবং উহারই মাধ্যমে সংশ্লিস্ট অঞ্চলে তাহা বন্টন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা নবী করীম (ﷺ) একস্থানে আদায়কৃত যাকাত ও সদকা অন্যত্র লইয়া যাওয়অকে সমর্থন করেন নাই। এই সম্পর্কে হাদীস অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। তবে নিতান্ত প্রযেঅজন দেখা দিলে তখনকার কথা স্বতন্ত্র। প্রসঙ্গত বলিয়া রাখা ভাল যে, আটটি খাতের বাহিরে অন্য কোন খাতে যাকাতের টাকা ব্যয় করা কিছুতেই যায়েয হইতে পারে না।
নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলা যাকাতের ব্যয়খাত নির্ধারণে কোন নবী বা অপর কাহারো ফয়সালার অপেক্ষায় থাকিতে রাযি হননাই। তিনি নিজেই এ খাত নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন এবং তিনি ইহার ব্যয়খাতকে আটটি ভাগে ভাগ করিয়াছেন।
বর্তমান কালের পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ব্যক্তিকে অর্থোপার্জনের অবাধ স্বাধীনতা দান করা হইয়াছে এবং গরীবদের সাহায্যার্থ তাহাদের নিকট হইতে ইনকাম-ট্যাক্স আদায় করার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কিন্তু কার্যত ইনকাম ট্যাক্স বাবদ আদায়কৃত অর্থ দরিদ্র জনগণের কোন কল্যাণেই ব্যবহৃত হয় না, তাহা ধনীদের পকেটেই প্রত্যাবর্তন করিয়া থাকে। কারণ রাষ্ট্র-সরকারসমূহ ধনীদের নিকট হইতে মোটা রকমের অর্থ ঋণ বাবদ গ্রহণ করিয়া থাকে এবং ইনকাম-ট্যাক্স বাবদ লব্ধ অর্থ সেই ঋণের সুদ আদায় করিতে-ই ব্যয় হইয়া যায়। ফলে দেশে অর্থ-সম্পদের আবর্তনের পরিবর্তে উহার সমগ্রটা মুষ্টিমেয় পুঁজিদারদেরই কুক্ষিগত হইয়া থাকে। বস্তুত ইসলামী অর্থনীতি ছাড়া নিখিল মানুষের সর্ববিধ কল্যাণ সাধথন করার আর কোন পন্থাই নাই- থাকতে পারে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/129
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।