মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সর্বাধিক বুনিয়াদী প্রয়োজন পূর্ণ করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু শুধু এতটুকুতেই উহার এই দায়িত্ব প্রতিপাতি হইতে পারে না। নাগরিকদের জীবনযাত্রা মান উন্নত করার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া ও ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য। কিন্তু এই কাজ যথাযথরূপে সম্পন্ন করা- কিছুতেই সম্ভব নয়- যতক্ষণ না দেশে প্রয়োজন পরিমাণ পণ্যোৎপাদন হইতে শুরু করিবে এবং উহার বন্টন সুবিচারপূর্ণভাবে ও ন্যায় নীতির ভিত্তিতে হইতে থাকিবে। এই জন্য দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রকেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হয়। ইসলামী রাষ্ট্রকেও অনুরূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে।
রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সর্বপ্রথম নিজের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির গভীরভাবে যাচাই করিতে হইবে। সমগ্র দেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত দেশ হিসাবে গড়িয়া তুলিবার জন্য এবং দেশের বিপুল জনগণকে একটি সংস্কৃতিসম্পন্ন জাতি ও সভ্য মানুষের সমাজ হিসাবে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য- বিশেষ করিয়া একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ইসলামী নাগরিকদের ন্যায় সকল মর্যাদা সহকারে জীবন ধারণের সুযোগ করিয়া দিবার জন্য- কি কি জিনিসের অপরিহার্য প্রয়োজন রহিয়াছে। নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করিয়া সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করিয়া লইতে হইবে। প্রয়োজনীয় জিনিসের পরিমাপ হইয়া যাওয়াপর পর যাঁচাই ও তদন্ত করিয়া দেখিতে হইবে যে, দেশের এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির মধ্যে কোন্ কোন্টি কোথায, কি পরিমাণের ও কি অবস্থায় বর্তমান আছে; এবং কি কি জিনিস মওজুদ নাই। আর মওজুদ জিনিসগুলিকে অধিকতর কার্যকর করিয়া তুলিতে হইলে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা আবশ্যক এবং সেজন্য কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হইতে পারে, তাহাও গভীর দৃষ্টিতে বিবেচনা করিয়া দেখিয়া হইবে।
অতঃপর যেসব অপরিহার্য জিনিস বর্তমান নাই, তাহা লাভ করিবার উপায় ও সন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে। প্রতেক দেশেই প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর পরিমাণে বর্তমান থাকে। পরিকল্পনা গ্রহণকালে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাপ করা একান্ত আবশ্যক। বস্তুত সম্পদ অপরিমেয় ও সীমাসংখ্যাহীন হইতে পারে না- সীমাসংখ্যাহীন হইয়া থাকে দেশের অনিবার্য প্রয়োজন ও সমস্যা; এই জন্যই সুষ্ঠূ পরিকল্পনা মারফতে সীমাবদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদকে অপরিসীম জাতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করার কাজে প্রয়োগ করিতে হয়। অতএব প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বন্টনের মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্য স্থাপন করা হইতেছে ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গোড়ার কথা।
‘দারিদ্র্য কুফরে পরিণত হইতে পারে’ বা ‘দারিদ্র্য মানুষকে কাফির বানাইয়া দেয়।’ অথচ কুফরকে নির্মূল করিবার জন্যই হইবে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। কাজেই দারিদ্র দূরীভূত ও দেশকে দারিদ্র মুক্ত করিবার জন্য উহার সমগ্র শক্তি নিয়োজিত হইতে হইবে। সেই সঙ্গে দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার জন্য উহাকে প্রাণপণে চেষ্টা করিতে হইবে।
দেশের জনশক্তিকে (Human Power) ও পুরাপুরি কাজে লাগানো ও কর্মক্ষম সব মানুষের জন্য কাজের ও উপার্জন উপায়ের ব্যবস্থা করাও ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব বিধায় সর্বাধিক পরিমাণে জনশক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা একান্তভাবে আবশ্যক। বিশেষ করিয়া আধুনিক অনুন্নত দেশগুলির পক্ষে বেকার সমস্যা একটি অতি বড় হুমকি ও বিরাট চ্যালেঞ্জ হইয়া দেখা দেয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। উপরন্তু ইহা এক বিরাট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবীয় সমস্যাও বটে। কাজেই বেকার সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত কোন রাষ্ট্রই কল্যাণ রাষ্ট্র হওয়ার দায়িত্ব পালন করিতে পারে না। ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় তাই ইহার প্রতি যথোপযুক্ত গুরুত্ব আরোপ করিতে হইবে।
কিন্তু এই ব্যাপারে ইসলামী রাষ্ট্রকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে। প্রাচীন উপায় ও দেশ-প্রচলিত পন্থাকেই বাঁচাইয়া রাখিতে হইবে এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন বা অভিনব পন্থা গ্রহণ করা যাইবে না, ইসলামী অর্থনীতিতে এন কোন কথাই থাকিতে পারে না।
মূল উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য অনুকূল অনেক নূতন উপায় ও পন্থা ইসলামী রাষ্ট্রকে গ্রহণ করিতে হইবে। এই হিসাবে, একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ভূমিকা অন্যান্য সকল প্রকার রাষ্ট্র হইতেই ভিন্নতর হইবে, সন্দেহ নাই। উহা নিজেকে কেবল প্রাচীনের অন্ধকুঠরীতে আবদ্ধ করিয়া রাখিবে না, আবার নূতনত্বের উচ্ছসিত আবেগে ও চোখ ঝলসানো চাকচিক্যে একেবারে দিশেহারাও হইয়া যাইবে না- আধুনিকতা ও অভিনবত্বের গড্ডলিকা প্রবাহেও উহা ভাসিয়া যাইবে না। কাজেই, উৎপাদন উপায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক কিছু রদবদল করিয়া লওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ বাধা থাকিতে পারে না। নিছক কৃষিনির্ভর হওয়া যেমন উচিত নহে, তেমনি কৃষিকে উপেক্ষা করিয়া কেবলমাত্র শিল্পবিলাসী হওয়াও চলিতে পারে না। বরং কৃষি ও শিল্প এই উভয় জন্থাকেই জাতীয় পণ্যোৎপাদনে কাজে বিশেষভাবে প্রয়োগ করিতে হইবে, যেন অর্থনৈতিহক প্রয়োজনের দরুণ উহাকে অন্য কোন রাষ্ট্রের সম্মুখে ভিক্ষার হাত দারাজ করিতে না হয়।
পরিকল্পনার ব্যাপারে উল্লিখিত বিষয়গুলির প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রাখার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক সুবিচারের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করিতে হইবে। ধন-সম্পদের ভুল অবিচারমূলক বন্টন-ব্যবস্থা চূর্ণ করিতে হইবে। আর জাতীয় সম্পদের প্রবাহ ও আবর্তন এত অবাধ করিতে হইবে যেন জাতীয় দেহের একটি অঙ্গও তাহা হইতে বঞ্চিত না থাকে। বরং প্রত্যেকটি অঙ্গই পরিচ্ছন্ন ও সতেজ রক্ত ধারায় পরিপ্লুত হইয়া সমষ্টিগতভাবে গোটা মানব দেহটা যেন সজীব ও শক্তিশালী করিয়া তুলিতে পারে।
জাতীয় সম্পদের সুবিচারপূর্ণ বন্টনের ফলে উদ্বৃত্তি ও পুঁজিবিনিয়োগ সমানভাবে চলিতে থাকিবে এবং বেকার সমস্যা দেশ হইতে চিরতর বিলুপ্ত হইবে। লর্ড কিনসের (Lord keynes) মত উদ্বৃত্তি ও পুঁজিবিনিয়োগের। অসামঞ্জস্যই হইতেছে অর্থনৈতিক মন্দাভঅবের প্রকৃত কারণ। এই অবস্থাকে যতদিন দূরীভূত করা সম্ভব না হইবে ততদিন পর্যন্ত কোন সমাজে স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র। দেশের সকল নাগরিকের জন্যই কাজের সংস্থান করিয়া দেওয়া যে রাষ্ট্রের কর্তব্য, দুনিয়ার সকল অর্থনীতিবিদই এ সম্পর্কে একমত। বেকারত্ব একটি মারাত্মক ও সংক্রমক ব্যাধি, ইহা সমাজের কোথায়ও স্থান পাইলেই গোটা সমাজ-দেহকে পঙ্গু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত করিয়া দেয়, সে জাতিকে সর্বোতভাবে ধ্বংসের চরম সীমায় নিয়া পৌঁছায়। শুধু তাহাই নয়, বেকার-সমস্যায় সামগ্রিকভাবে জাতির কর্মক্ষমতা নৈতিক চরিত্র ও আত্মসম্মান-জ্ঞান প্রভৃতি সকল মহৎ গুণই সমূলে বিনষ্ট হইয়া যায়।
এই জন্য দেশীয় সকল প্রকার কৃষিকার্য ও শিল্পোৎপাদনকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার আয়ত্বাধীন করিতে হইবে। শিল্পোৎপাদনের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতা, উচ্ছৃঙ্খলা ও অসংবদ্ধতা বড়ই মারাত্মক হইয়া থাকে। ইহার পথ বন্ধ করা জাতীয় জীবনের সুষ্ঠুতা বিধানের জন্য অপরিহার্য। সম্পত্তি সম্পদ জাতীয়করণ (সমূহবাদ) এবং স্বাধীন ও নিরংকুশ পদ্ধতিতে ধনোৎপাদনের (পুঁজিবাদের) মধ্যবর্তী এক সুবিচারপূর্ণ ও প্রয়োজন পূর্ণকারী নীতি হইল পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিকল্পনা অনুসারে ধনোৎপাদনের সকল ‘ফ্যাক্টর’ সক্রিয় করিয়া তোলা। পুঁজিদার ও কারখানা মালিককে নিজ নিজ স্বাধীন ইচ্ছামত পুঁজি বিনিয়োগ ও পণোৎপাদনের অবাধ সুযোগ দেওয়া এবং একান্তভাবে তাহাদের উপর নির্ভর করা সমাজের পক্ষে মারাত্মক। বরং একটি সুষ্ঠু ও সর্বাত্মক পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের ধন উৎপাদনের সমগ্র ‘ফ্যাক্টরকে’ জাতীয় কল্যাণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করিতে হইবে। ইসলামের সামাজিক সুবিচার ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন অবাধ ও নিরংকুশ ধনোৎপাদনের পথ (Liassez Faire) বন্ধ করিতে হইবে।
সর্বোপরি পরিকল্পনায় কেবল যান্ত্রিক উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি রাখিলেই চলিবে না, বিশেষ সতর্কতার সহিত লক্ষ্য করিতে হইবেযে, যে ধন-উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে, তাহা হইতে নির্বিশেশষে সকল দেশবাসীর প্রয়োজন পূরণ, সর্বধিক কল্যাণ সাধন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব হইবে কিনা। বস্তুত পরিকল্পনা উদ্দেশ্য লাভের একটি উপায় মাত্র- নিজেই কোন উদ্দেশ্য নয়। এই জন্য সমাজতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী ও ইসলামী পরিকল্পনায় মৌলিক পার্থক্য থাকিতে বাধ্য।
প্রত্যেকটি পরিকল্পনায় উৎপন্ন পণ্যদ্রব্যের ও ফসলে সঠিক মূল্যের স্থায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। দেশের দ্রব্যমূল্যের উত্থঅন-পতনের সর্বগ্রাসী আবর্তনে শিল্পপণ্য ও কৃষি-উৎপন্ন ফসলেরই ক্ষতি হয় সর্বাপেক্ষা বেশী। তাই পরিকল্পনায় এই সব উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে যেরূপ দৃষ্টি দেওয়া হইবে, এ সবের সঠিক মূল্য স্থির করিয়া দেওয়ার উপরও অনুরূপভাবে গুরুত্ব আরোপ করিতে হইবে। বৈদেশিক নীতি এমন হওয়া আবশ্যক যে, তাহার ফলে দেশের রপ্তানী উচ্চমূল্য লাভ যেন খুবই সহজ হয়।
দেশের কুটিরশিল্প ও ছোট আকারের শিল্পের উপরও এই পরিকল্পনায় বিশেষ জোর দিতে হইবে। কারণ, প্রত্যেক দেশেই কুটিরে শিল্পে ও ছোট আকারের শিল্পই হয় জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সর্বপ্রধান উপায়। এই ধরনের শিল্প উন্নয়নের জন্য খুব বেশী মূলধনেরও আবশ্যক হয় না। অথচ ইহার সাহায্যে প্রত্যেক সমাজের বিপুল-সংখ্যক মানুষকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী করিয়া তোলা সম্ভব এবং দেশ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বুনিয়াদী প্রয়োজন পূর্ণ করার যোগ্য হইতে পারে। দেশের জাতীয় অর্থনীতির যে প্রধান চাপ থাকে কৃষিকার্যের উপর, কুটির শিল্প উন্নয়নের সাহায্যে তাহা অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হইলে যেসব লোকের বেকার হইয়া পড়ার আশংকা রহিয়াছে, কুটির ও ছোট আকারের যন্ত্রশিল্প উন্নয়নের দ্বারা তাহাদিগকে কর্মে পুনর্নিয়োগ করা সম্ভব হইতে পারে।
পূর্বেই বলিয়াছি, কুটির শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে বৃহদায়ন যন্ত্রশিল্পেরও প্রসার করিতে হইবে, ইহা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় বর্তমান যান্ত্রিক দুনিয়ার প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখ টিকিয়া থাকা সম্ভব হইবে না। কিন্তু যন্ত্রশিল্পের প্রসার সৃষ্টির সময় বিশেষ সতর্কতার সহিত লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, উহার প্রবল ও অপ্রতিহিত চাপে পড়িয়া কুটির শিল্প যেন ধ্বংস হইয়া না যায়। এই জন্যই ইসলামী রাষ্ট্র এই উভয়বিধ শিল্পের সংরক্ষণ এবং উভয়েরই ক্ষেত্র ও সীমা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ সর্ব প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ; ভারী শিল্পের উৎপাদন ইহার পরে স্থান লাভ করে। প্রথমটিকে উপেক্ষা করিলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অপ্রতুলতা তীব্র হ৮ইয়া উঠিবে এবং ভারী শিল্প উৎপাদনের উদ্দাম গতিতে জনসাধারণের জীবন দুর্বিসহ হইয়া পড়িবে। অধিকতর রুটি, মাখন, কাপড় ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে তখন বন্দুক, বেয়নেট ও বোমার উৎপাদনই বৃদ্ধি পাইবে।
জাতীয় পরিকল্পনার সাফল্য নিম্নলিখিত কয়েকটি মূলনীতির উপর নির্ভর করে:
সর্বপ্রথম মূলনীতির এই যে, সর্বাগ্রগণ্যতা ও সর্বাধিক প্রয়োজনের দিকে প্রথম দৃষ্টি দিতে হইবে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদ জরীপ ও যাচাই করিয়া দেখিতে হইবে যে, অসংখ্য জাতীয় প্রয়োজনের মধ্যে কোন্ প্রয়োজনটি সর্ব প্রথম পূরণ করা আবশ্যক এবং সে জন্য কোন উপায় ও পন্থা সর্বাগ্রে কাজে লাগাইতে হইবে।
জাতীয় রক্ষা ও দেশের উন্নয়রে জন্য মূল প্রয়োজন সর্বপ্রথমে পূরণ করার ব্যবস্থা করাই হইতেছে ইসলামী পরিকল্পনার প্রথম মূলনীতি।
দ্বিতীয়তঃ পরিকল্পনা গ্রহণকারী কমিটিকে নিম্নলিখিত নীতিসমূহের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখিতে হইবে:
(১) পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে বৈদেশিক রাষ্ট্রের- সে যে রাষ্ট্রই হউক না কেন- অন্ধ অনুকরণ কিছুতেই বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না। পরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যাপারে প্রধানত ইহাকে বাস্তবে রূপায়িত করার সম্ভাবনার প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
কাজেই অন্ধভাবে পরের অনুকরণ না করিয়া জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও সঙ্গতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখিয়াই পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে।
(২) পরিকল্পনা এমন হওয়া উচিত যাহাকে বাস্তবে রূপায়িত করা নিজ দেশীয় উপাদান ও কাচামালের সাহায্যেই সম্ভব হইবে- বৈদেশিক মূলদন ও ঋণ গ্রহণের আবশ্যক হইবে না। কারণ তখন বিদেশ হইতে কেবল টাকা আর মূরধনই আসে না, সেই সঙ্গে ঋণদাতা বৈদেশিক রাষ্ট্রের রাজনৈকিত বন্ধন এবং বাধ্যবাধকতাও গোটা দেশকে গোলামীর নাগপাশে বন্দী করিয়া ফেলে। শুধু রাজনৈতিক গোলামীই নয়, বৈদেশিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি, নৈতিক দৃষ্টিভংগী ও মাপকাঠি এবং মতবাদ ও চিন্তাধারার সর্বপ্লাবী সয়লাব আসিয়াও সারা দেশটিকে নিমজ্জিত করে। আর কোন ইসলামী রাষ্ট্রই যে তাহা বরদাশত করিতে পারে না, তাহা অনস্বীকার্য সত্য। কাজেই পরিকল্পনা রচনার সময় নিজ দেশীয় শ্রমশক্তি, মূলধন ও প্রাকৃতিক উপায়-উপাদানের পরিমাণের প্রতি বিশেষ সজাগ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। দেশের সীমাবদ্ধ সম্পদ ও অর্থ এমনভাবে প্রয়োগ করিতে হইবে, যাহাতে স্বল্পতম অর্থব্যয় করিয়া বৃহত্তম ফল লাভ করা যাইবে, অর্থনীতির ভাষায়: General allocation of resources and obious result.
(৩) পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য অনেক জিনিস যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি-বিদেশ হইতেও আমদানী করা যাইতে পারে। সেজন্য ইসলামী রাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিকে অধিকতর মজবুত করিয়া তুলতে হইবে। অনুরূপভাবে সে বাণিজ্য এমন সব দেশের সহিত হওয়া উচিৎ, যেসব দেশ হইতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ও যন্ত্রপাতি আমদানী করা সম্ভব হইবে। অন্যথায় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে।
(৪) সকল প্রকার পরিকল্পনা সুষ্ঠুরূপে কার্যকর ও বাস্তবে রূপায়িত করিয়া তোলা একান্তভাবে নির্ভর করে কর্মনিষ্ঠা, ঐকান্তিক বিশ্বাস-পরায়ণতা ও দায়িত্ব জ্ঞানের উপর। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে এইসব গুণ যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ণরূপে স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রভাবশালী হইয়া উঠিবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন পরিকল্পনাই বাস্তবে রূপায়িত হইতে পারে না। এই জন্যই ইসলামী রাষ্ট্রকে সাধারণভাবে সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে এবং বিশেষ কিরয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে এইসব গুণ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করিতে হইবে।
(৫) প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করাও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একান্ত অপরিহার্য! পরিকল্পনা অনুসারে রাষ্ট্র-সরকার ও জনগণ যদি মূলধন বিনিয়োগ না করে তকে কোন পরিকল্পনাই কার্যকর হইতে পারে না। অর্থনৈতিক কার্যক্রম ‘আলাউদ্দীনের প্রদীপ নয়’; চক্ষু বন্ধ করিয়া সপ্ত আকাশ ভ্রমণ করও নয়। ইহা এক রূঢ় কঠিন ও বাস্তব কার্যক্রম। এখানে কোনরূপ অবাস্তব কল্পনা বিলাস ও রংগীন স্বপ্ন সাধের অবকাশ নাই।
পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয মূলধন সংগ্রহ নির্ভর করে জাতীয আয়ের উদ্বৃত্তির উপর। জাতীয় উদ্বৃত্তির জন্য দরকার ব্যক্তিগত বুনিয়াদী প্রয়োজন পূর্ণ করার পর যাহাতে কিছু না কিছু অর্থ অবশ্যই সঞ্চিত হয় তাহার ব্যবস্থা করা, যেন তাহার নিজ নিজ ব্যক্তিগত উদ্বৃত্তিকে রাষ্ট্র-সরকারের নির্দেশ অনুসারে জাতীয় উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগ করিতে পারে।
শেষ কথা এই যে, নির্ভুল তথ্য ও সংখ্যা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করিয়া একটি চমৎকার পরিকল্পনা রচনা কিছুমাত্র কঠিন কাজ নয়; বরং কঠিন কাজ হইতেছে তাহা কার্যে পরিণত করা। এই জন্য নাগরিকদের ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐকান্তিক নিষ্ঠার প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/161
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।