hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৫২
মজুরী-সমস্যা
এই ব্যাপারে সর্বপেক্ষা অধিক জটিল বিষয় হইতেছে শ্রমিকদের মজুরী সমস্যা এবং ইহারই সুষ্ঠু ও সুবিচারপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত সর্বাগ্রে। কেননা ইহারই উপর কেবল শ্রমিক শ্রেণীর জীবন যাত্রা নহে, গোটা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি একান্তভাবে নির্ভর করে।

অধ্যাপক বেনহাম মজুরীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলিয়াছেন: এমন পরিমাণ অর্থকে মজুরী বলা যাইতে পারে, যাহা পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি অনুসারে মজুর তাহার কাজের বিনিময়ে লাভ করিয়া থাকে।

মজুরের পক্ষে এই মজুরী লাভই হইতেছে জীবন-ধারণের একমাত্র উপায়। সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত মজুরের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ঠিক মধুমক্ষিকার ন্যায়। শ্রমের নিঃশব্দ আঘাতে তাহাদের স্বাস্থ্যের মেরুদন্ড পূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যায়, বুকের রক্ত পানি হইয়া যায়। কিন্তু ইহার পরও যদি তাহাদের বাঁচিবার জন্য অপরিহার্য পরিমাণ মজুরী তাহারা লাভ করিতে না পারে, যদি তাহাদের কর্মক্ষমতা অপেক্ষা অধিক খাটিতে হয়, খাটিতে খটিতে যদি তাহাদের স্বাস্থ্য চিরতরে ভাঙিয়া পড়ে, যদি কোন অঙ্গহানি ঘটে- সারা দিনের শ্রম-মেহনতের পর সন্ধ্যাকালে আশ্রয় লইবার মত –হাত পা ছড়াইয়া বিশ্রাম করিবার মত উন্মুক্ত বায়ু সমন্বিত কোন ঘরবাড়ি যদি তাহারা না পায়, রোগব্যাধি হইলে যদি উহার চিকিৎসার ব্যবস্থা না হয়, যদি তাহাদের সন্তান-সন্ততিদের শিক্ষা-দীক্ষা ও লালন-পালনের সুব্যবস্থা না হয়, তাহা হইলে তাহাদের দুঃখের আর অবধি থাকে না। এইরূপ অবস্থায় তাহারা স্বাধীন মানুষের মত মেরুদন্ড খাড়া করিতে ও মাথা উচু করিতে দাঁড়াইতে কোনদিনই সমর্থ হয় না। বস্তুত ইহাই বর্তমান দুনিয়ার শ্রমিক-মজুরদের সর্বাপেক্ষা বড় সমস্যা। এই সমস্যা কেবল পুঁজিবাদী সমাজেই বর্তমান আছে তাহা নয়, সোভিয়েত দুনিয়ার শ্রমিকদেরও ইহাই প্রধানতম সমস্যা। এই সমস্যাবলীর একটিও কোন সমাধান আজ পর্যন্ত হয় নাই- না সোভিয়েত দুনিয়ায়, না কোন পুঁজিবাদী দেশে।

কিন্তু ইসলামী অর্থনীতি এই সকল সমস্যার সমাধান করিয়া দিয়াছে। এমন কি অর্থনীতির দুনিয়ায় এই সমস্যাবলীর ন্যায়সঙ্গত ও স্বাভাব-সম্মত সমাধান করার কৃতিত্ব একমাত্র ইসলামেরই প্রাপ্য। নবী করীম (ﷺ) এর নিম্নোদ্ধৃত হাদীসে ইসলামী সমাজে শ্রমিকদের সঠিক মর্যাদা ও অধিকারের কথা উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষিত হইয়াছে। তিনি ইরশাদ করিয়াছেন:

(আরবী)

তাহারা (মজুর, শ্রমিক ও অধীনস্থ বেতনভোগী কর্মচারীরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাহাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর অর্পণ করিয়াছেন। কাজেই আল্লাহ যাহাদের উপর এইরূপ দায়িত্ব চাপাইয়া দিয়াছেন, তাহাদের কর্তব্য এই যে, তাহারা যেরকম খাদ্য খাইবে তাহাদিগকে সেই রকম খাইতে দিবে, যাহা তাহারা পরিধান করিবে, তাহাদিগকে সেই ধরনের পোশাক পরিধান করার ব্যবস্থা করিয়া দিবে। আর যে কাজ করা তাহাদের পক্ষে কষ্টকর, সাধ্যাতীত, তাহা করিবার জন্য তাহাদিগকে কখনো বাধ্য করিবে না। আর সেই কাজ যদি তাহাদের দ্বারাই সম্পন্ন করিতে হয়, তবে সেজন্য তাহাদের প্রয়োজন অনুপাতে সাহায্য অবশ্যই করিবে।

এই হাদীস হইতে নিম্নলিীখত মূলনীতিসমূহ আমরা জানিতে পারি:

১. মালিক ও পুঁজিদার মজুর ও শ্রমিকদের নিজের ভাইয়ের মত মনে করিবে। দুই সহোদর ভাইয়ের মধ্যে যেমন মৌলিক কোন পার্থক্য থাকে না এবং যেরূপ সম্পর্কও সম্বন্ধ বর্তমান থাকে বা থাকা উচিৎ, তাহাদের সহিতও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করিবে।

২. খাওয়া-পরা-থাকা প্রভৃতি মৌলিক প্রয়োজন-পুরণের মান মালিক ও শ্রমিকের উভয়েরই সমান-হইতে হইবে। মালিক ও পুঁজিদার নিজে যাহা খাইবে ও পরিবে, মজুর-শ্রমিককে তাহাই খাইতে পরিতে দিবার ব্যবস্থা করিবে; কিংবা অনুরূপ মানের (Standard) পরিমাণ অর্থ মজুরিস্বরুপ দান করিবে।

৩. সময় এবং কাজ উভয় দিক দিয়াই সাধ্যাতীত পরিমাণ দায়িত্ব মজুরের উপর চাপান যাইতে পারে- প্রাণান্তকর ও সধ্যাতীত মাত্রার কিছু নয়। এমন কাজ নয় যাহাতে মজুর ও শ্রমিক শ্রান্ত, ক্লান্ত ও পীড়িত হইয়া পাড়িতে পারে। এত দীর্ঘ সময় পর্যন্তও একাধারে মেহনত করিতে বাধ্য করা যাইতে পারে না, যাহা করিলে শ্রমিক অক্ষম হইয়া পড়ে। বস্তুত সময় এবং মজুরী লইয়া মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও মতবৈষম্য বর্তমান পৃথিবীকে বিড়ম্বিত ও বিক্ষুদ্ভ করিয়অ তুলিয়াছে, তাহার সমাধান এবং উভয়ের মধ্যে ইনসাফপূর্ণ সমন্বয় বিধান ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন মতাদর্শই করিতে পারে না।

৪. যে কাজ সম্পন্ন করা শ্রমিকের পক্ষে অসাধ্য, সে কাজ অকৃত থাকিয়া যাইবে, ইসলাম এমন কথা বলে না। পক্ষান্তরে, বাঁচুক কি মরুক, সে কাজ তাহার দ্বারাই করাইতে হইবে- এমন কথা ও হইতে পারে না। এমতাবস্থায় উক্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনানুসারে মজুরকে সাহায্য করিতে হইবে। অধিক সময়ের প্রয়োজন হইলে দীর্ঘ সময়ের অবকাশ দিতে হইবে; অধিক মজুর শ্রমিকের সহযোগিতার প্রয়োজন হইলে তাহা দিয়াই তাহার সাহায্য করিতে হইবে।’

প্রত্যেক মজুরকে দৈনিক কত ঘন্টা কাজ করিতে হইবে, তাহাও একটি কম সমস্যা নয়। নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, কোন ধরনের কাজ উত্তম? উত্তরে তিনি বলিয়াছিলেন: ক্রমাগতত ও নিরবচ্ছিন্ন কাজ- যদিও তাহা পরিমাণে কম হউক না কেন! সেই পরিমাণ কাজেরই দায়িত্ব গ্রহণ কর।

মজুরের কাজের সময় এবং উহার পরিমাণ নির্ধারণের ব্যাপারে নবী করীম (ﷺ)-এর এই নির্দেশ মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করিতে হইবে। প্রকৃত পক্ষে দৈনিক একসঙ্গে যত ঘন্টা কাজ করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব, যত ঘন্টা কাজ করিলে শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও কর্মদক্ষতার উপর কোনরূপ আঘাত পড়ে না, একজন মজুর ঠিক তত ঘন্টা এক সঙ্গে ঠিক সেই পরিমাণ কাজই করিবে, তাহার বেশী নয়।

(আরবী)

মজুরগণ যে পরিমাণ কাজ সহজে এবং সুষ্ঠুভঅবে সম্পন্ন করিতে পারিবে, যে পরিমাণ কাজ করা তাহাদের সাধ্য ও শক্তিতে কুলাইবে, তাহাদিগকে সেই পরিমাণ কাজেই নিযুক্ত করিবে।

বর্তমান দৈনিক ৮ ঘন্টা সময় এক সঙ্গে কাজ করার কথা কার্যকালের এক স্থায়ী মান হিসাবে সর্বত্র গৃহীত হইয়া আছে। অতএবে উহাকেই স্থায়ী কার্যমানরূপে গ্রহণ করিতে হইবে। ইহার অধিক সময় (Overtime) কাজ করাইতে হইলে সে সময়ের জন্য বাড়তি মজুরী দিতে হইবে। ইহা নবী করীম (ﷺ)-এর এই বক্যাংশ হইতেই প্রমাণিত (আরবী) তোমরা যদি তাহাদের উপর অধিক কাজ করার দায়িত্ব চাপাও, তবে সেই হিসাবে বাড়তি মজুরী দিয়া তাহাদিগকে সাহায্য কর।

মজুর শ্রমিকদের দ্বারা স্বাস্থ্য নষ্ট করার মত কোন কাজ কিছুতেই করাইবে না। অর্থনীতিবিদগণ বলেন: সাধারণত দেখা যায় যে, কোন স্থানে কাজের পরিমাণ অপেক্ষা মজুরীর পরিমাণ হ্রাস পাইয়অ যা। মজুরের পক্ষে জীবন ধারণের প্রয়েঅজন পরিমাণ মজুরী লাভ করাও অসম্ভব হইয়া পড়ে। কুরআন মজীদ এই সম্পর্কে বলে যে, এমতাবস্থায় মজুরদের দেশ বিদেশ আসা-যাওয়অ এবং মজুরীর সন্থানে এক স্থান হইতে অন্যত্র চলিয়া যাওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখিতে হইবে- যেন প্রত্যেকেই নিজের শ্রমশক্তির সঠিক মূল্য লাভের অনুকূল ক্ষেত্রে সন্ধান করিতে পারে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে:

(আরবী)

আল্লাহর পথে যে হিজরত করিবে, সে দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্য ও বিপুল প্রাচুর্য লাভ করিবে।

দেশ-বিদেশে শ্রমের সন্ধানে যাতায়াত করার উন্মুক্ত থাকিলে এক স্থানে অধিক মজুরের সমাবেশ হওয়া এবং অনুরূপ সংখ্যায় কর্মসংস্থান না হওয়ার দরুন মজুরী হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দূর হইতে পারে।

যদি এমতাবস্থায়ও মজুর শ্রমিকের অভাব ও দারিদ্র্য পূর্ণরূপে দূর করিবার জন্য রাষ্ট্রকে তৎপর হইতে হইব এবং ম জুরদের প্রয়েঅজন মিটাইয়অ তাহাদের জীবন মান উন্নত করিবার জন্য যাকাত-ভান্ডারকে বিশেষভাবে সক্রিয় করিয়া তুলিতে হইবে। ইহা হইতে মজুর ও শ্রমজীবী, তথা- দেশের জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব। মজুরদের জন্য ইসলামের এই অর্থনেতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা স্যার উইলিয়াম বেভারিজ উপস্থাপিত পরিকল্পনা অপেক্ষা অধিক স্বাভাবিক এবং নিঃসন্দেহে কল্যাণকর।

সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের রিযিক ও যাবতীয প্রয়োজন পূর্ণ করার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের উপররে ন্যস্ত করা হইয়াছে। কুরআনের নির্দেশ অনুসারে প্রত্যেক প্রাণীকেই জীবিকাদানের বার রিযিক-দাতা আল্লাহ তা’আলা নিজে গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন:

(আরবী)

দুনিয়ার সকল প্রকার জীবজন্তু ও প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করিয়া দেওয়া আল্লাহর কাজ।

(আরবী) তাহাদের জৈব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রিযিক আমিই দেই এবং পরে যাহারা আসবে তাহাদিগকেও আমিই দিব।

আর মানব সমাজে আল্লাহর তরফ হইতে এই দায়িত্ব পালনের ভার অর্পিত হয় ইসলামী রাষ্ট্রের উপর। এইজন্য নির্দেশ দিয়া বলা হইয়াছে:

(আরবী)

তাহাদের (ধনীদের) ধনমাল হইতে যাকাত আদায় কর। ইহা তাহাদের মন-আত্মা ও জীবনকে পবিত্র করিবে, ক্রমশ: উন্নত ও বিকশিত করিবে।

যাকাতের সম্পদ বন্টন করা সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ) বলিয়াছেন:

(আরবী)

যাকাত সমাজের ধনীদের নিকট হইতে আদায় করা হইবে এবং সেই সমাজের দরিদ্রদের মধ্যে তাহা বন্টন করা হইবে।

বস্তুত যাকাত ইসলামী সমাজের মালিক ও পুঁজিদারদের শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে একটি অন্যতম প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাহারা মজুরদের প্রতি কোন শোষণমূলক আচরণ করিলে, তাহাদিগকে ছাঁটাই বা পদচ্যুত করার ভয় দেখাইয়া কম মজুরী দিবার সুযোগ গ্রহণ করিতে চেষ্টা করিলে কিংবা কারখানা বন্ধ করিয়া মজুরদের বেকার করিয়া দেওয়ার ভয় দেখাইলে এই প্রতিরোাধ ব্যবস্থাই তাহাদের নির্ভরযোগ্য পৃষ্ঠপোষক হইবে। ইসলামী রাষ্ট্র একদিকে ধনী ও মালিকদের উপর কর ধার্য করিবে, অন্যদিকে কারখানা যাহাতে বন্ধ না হয় ও মজুর শ্রমিকগণ বেকার হইয়া না পড়ে, তাহারও আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

মেহনতী জনতা- মেহনত দৈহিক কি মানসিক- সকল প্রকার শ্রমিকদের পেট ভরা খাদ্য দিতেই হইবে। অন্যথায় তাহাদের কর্মক্ষমতা লোপ পাইবে, যোগ্যতার মান নিম্নগতি ধারণ করিবে। দেশে যথেষ্ট পরিমাণ পণ্যদ্রব্য উৎপন্ন হইবে না। ফলে গোটাজাতি দারিদ্র ও অভাবের গভীর পংকে নিমজ্জিত হইবে। 

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন