hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

অর্থনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য
অর্থণৈতিক সমস্যার সমাধান এবং সকল প্রকার দারিদ্র ও শোষণ-পীড়ন হইতে মানব জাতিকে মুক্ত করার জন্য- পরন্তু গণজীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধিপূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্য যে অর্থনীতি গৃহীত হইবে, তাহাতে অনিবার্যভাবে নিম্নলিখি মূলনীতিসমূহ বর্তমান থাকিত হইবে। অন্য কথায়, এই মুলনীতিসমূহ যে অর্থনীতিতে বর্তমান থাকিবে, তাহাই মানুষের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করিতে সমর্থ হইবে। আর যাহাতে এই মূলনীতিসমূহ গুরুত্ব সহকারে বিবেচিতনহে, তাহা কখনই মানুষের কল্যাণ সাধন করিতে পারে না।

এই পর্যায়ে এখানে সাতটি মূলনীতির উল্লেখ করা যাইতেছে:

১। মানুষের জীবন এক অবিভাজ্য ও অখন্ড ‘ইউনিট’, উহাকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত ও খন্ড-বিখন্ড করা এবং খন্ডিত জীবনের জন্য খন্ডিত বিধান গ্রহণ করা অতিশয় মারাত্মক। মানব জীবনের এই একত্ব ও অখন্ডত্বের জন্যই উহার সমগ্র দিক ও বিভাগের পারস্পরিক ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত থাকা একান্তই অপরিহার্য। অনুরূপবাবে মানুষের সামগ্রিক জীবন-ব্যবস্থার সহিত অর্থনীতিরও সর্বতোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সমাজে অর্থব্যবস্থার যে মূল্যমান (Vslues) প্রচলিত থাকিবে, উহার রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক জীবন-বিধানেরও অনুরূপ মূল্যমান বর্তমান থাকিতে হইবে। তাহা হইলেই মানুষের গোটা জীবন ব্যবস্থা পরিপূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের অখন্ড ও সার্বিক জীবনের ক্ষেত্রে স্থাপিত হইতে এবং ক্রমবিকাশ লাভ করিতে পারে।

২। সে অর্থনীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হইবে: নির্বিশেষে সমগ্র মনুষ্য জাতির কল্যাণ সাধন ও সমৃদ্ধি বিধান। বিশেষ কোন বংশ, গোত্র, শ্রেণী জাতি বা অঞ্চলের উন্নতির জন্য উহার বিশেষ কোন পক্ষপাতিত্বই থাকিবে না।

৩। যে সমাজে সেই অর্থনীতি কার্যকর হইবে, তাহাতে সামাজিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা পূর্ণরূপে স্থাপিত থাকিতে হইবে। তথায় ব্যক্তি বৈষম্যের অবকাশ থাকিতে পারিবে না। উহার অভ্যন্তরে কোনরূপ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বা বিরোধ থাকিতে পারিবে না। উহা মানব সমাজে কোনরূপ শ্রেণীবৈষম্য সৃষ্টি করিবে না, সমাজের লোকদিগকে শ্রেণী-সংগ্রামে উদ্বুধ্ধ করিবে না, উহার কোনকারণও সেখানে উদ্ভূত হইবে না। এক কথায় উহাতে ব্যক্তির যাবতীয় অধিকার সুরক্ষিত হইবে। ব্যক্তির উপর আবর্তিত সমাজের অধিকারগুলিও তাহাতে সংরক্ষিত থাকিবে এবং ব্যক্তির অর্থনৈতিক চেষ্টা সাধনা সমাজের সাগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী বা উহার পক্ষে ক্ষতিকর হইবে না। ব্যক্তি ও সমাজের পরস্পরের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত ভাবধারা ভিত্তিতে এক অর্থনৈতিক সম্পর্ক সংস্থাপিত হইবে। ব্যষ্টি ও সমষ্টি- উভয়েরই স্বার্থের সংরক্ষণ, ব্যষ্টিকে সমষ্টির স্বার্থে আঘাত হানার সুযোগ না দেওয়া এবং সমাজ সমষ্টিকেও ব্যক্তি স্বার্থ গ্রাস করার অবকাশ না দেওয়া- উভয়েরই স্থায়ী শান্তি ও কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। বস্তুত যে অর্থ ব্যবস্থায় ব্যষ্টি ও সমষ্টির পারস্পরিক স্বার্থে এই নিরবচ্ছিন্নঐক্য ও সামঞ্জস্য বর্তমান রহিয়াছে, তাহাই হইতেছে নিখুঁত ও নির্ভুল অর্থনীতি।

৪। সে অর্থনীতি সমগ্র প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্তাধীন করার এবং উহাকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার সুযোগ করিয়া দিবে। অর্থনৈতিক চেষ্টা, সাধনা ও উপার্জন প্রচেষ্টা চালাইবার অধিকারের ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ সাম্যের প্রতিষ্ঠা করিবে।

৫। এই অর্থব্যবস্থার সাহায্যে বৈষয়িক উন্নতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক উৎকর্ষ এবং চরিত্রের ক্রমবিকাশও পূর্বরূপে সাধিত হইবে। কারণ নৈতিক উন্নতি ব্যতীত বৈষয়িক ও অর্থনৈতিক উন্নতি যে মরীচিকা প্রতারণা মাত্র, তাহা এক সন্দেহাতীত ও ঐতিহাসিক সত্য। পাশ্চাত্য জ গতের যেসব চিন্তাশীল দার্শনিক নৈতিক চরিত্রের নাম পর্যন্ত শুনিতে প্রস্তুত ছিলেন না, তাহারাও আজ এই সত্য স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেছেন। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জি.ডি.হব (G.D. hobb) এই তত্ত্ব স্বীকার করিয়া বলিয়াছেন:

নৈতিক মূল্য ব্যতীত কাজ করায় যে বিপদের আশংকা থাকিয়া যায়, আমি তাহা স্পষ্ট করিয়াই বলিতে চাই। বস্তুত নৈতিক নিরপেক্ষতা অবলম্বনের চেষ্টা করা চরম নির্বুদ্ধিতা, ইহাতে সন্দেহ নাই। কোন ব্যক্তিই রাজনীতি বা সমাজনীতি কোন ব্যাপারেই বস্তুবাদী (secular) হইতে পারে না।

জার্মান অর্থনীতিবিদগণ যথার্থভাবেই নৈতিক গুনের অর্থনৈতিক মূল্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। বর্তমানে অর্থনীতিবিদের মধ্যে নৈতিকতার এই গুরুত্ববোধ অধিকতর তীব্র হইয়া উঠিয়াছে। যাহারা কস্মিনকালেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নৈতিকতার গুরুত্ব স্বীকার করিতেন না, তাহারাও এখন তাহা খুব জোরে-শোরে স্বীকার করিতেছেন।

বস্তুত উদ্দেশ্য সম্পন্ন কোন কাজই নৈতিক চরিত্রের বিধান-বিমুক্ত হইতে পারে না। কোন উদ্দেশ্যই- তাহা ভাল হউক, মন্দ হউক, নিরপেক্ষ হইতে পারে না। কোন ব্যক্তিই নৈতিক চরিত্রের অনুসারী না হইয়াও ‘বিজ্ঞানী’ হইতে পারে বলিয়া মনে করা ‘মুনাফেকী’ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এইরূপ মুনাফিকীর ভিত্তি চিন্তাবিশ্লিষ্টতার উপর স্থাপিত। অতিএব এহেন অর্থব্যবস্থায় মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ লাভ কোনরূপ প্রতিবন্দকতার সৃষ্টি হইতে পারিবে না, বরং উহাকে সেজন্য রীতিমত সহায়ক ও ব্যবস্থাপক হইতে হইবে।‘নৈতিক চরিত্রের বিকাশ’ কথাটি এখানে কুব ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হইতেছে। এহেন অর্থব্যবস্থায় মানুষ যে কেবল তাহার দৈহিক, মানসিক ও নৈতিক শক্তিনিচয়েরই ক্রমবিকাশ সাধনের উপযোগী হইবে তাহাই নয়, উপরন্তু তাহা পরস্পরের অন্তর্নিহিত শক্তি ও যোগ্যতা-প্রতিভা স্ফূরণ সাধনেরও ইতিবাচক সাহায্যকারী হইবে। এমন কি, এই সহযোগিতা ও সহানুভূতি কেবল মাসাজিক চাপে (Social conventions) পড়িয়াই হইবে না, তাহা হইবে ব্যক্তির স্বকীয় ও স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যম-উৎসাহ (Initiative) অনুসারে। আর এইরূপ হইলেই মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব ও নৈতিক চরিত্রের উচ্চতম মর্যাদায়উন্নীত হইতে পারে। মানব সমাজের পারস্পরিক প্রেম-ভালবাসা, সহানুভূতি ও সহৃদয়তার উৎসমুখ বন্ধ হইয়া যাওয়ার পর প্রত্যেক ব্যক্তি সুখ ও সম্পদে সসমৃদ্ধ হইলেও সে সমাজকে নিতান্ত দরিদ্র সমাজই বলিতে হইবে। হযরত ঈসা (আ) এই জন্যই বলিয়াছেনMen does not live bread alone, but he needs some spiritual foods” ‘মানুষ শুধু রুটি পাইয়াই বাঁচিতে পারে না, তাহার ‘আধ্যাত্মিক (নৈতিক) খাদ্যের’ও প্রয়েঅজন রহিয়াছে। মানুষের অনশন বা অর্ধাশনই সমাজের দারিদ্রের একমাত্র প্রমাণ নয়, সমাজের লোকদের পারস্পরিক স্নে-ভালবাসা, সহানুভূতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সহৃদয়তার নির্মল ভাবধারার অভাব হওয়াই হইতেঝে একটি সমাজের দরিদ্র হওয়ার প্রধানতম লক্ষণ।

৬। সে অর্থব্যবস্থা দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জীবন-যাত্রার মৌলিক প্রয়োজন- খাদ্য, পোশাক, আশ্রয়, চিকিৎসা এবং শিক্ষা-পূর্ণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করিবে। যে অর্থনীতি ইহা করিতে পারে না বা করার জন্য আন্তরিকভাবে নিরন্তর চেষ্টা কারে না, তাহা মানুষের গ্রহণযোগ্র অর্থনীতি নয়।

৭। উক্তরূপ অর্থ-ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করা ও যথাযথারূপে উহাকে চালু রাখা ব্যক্তির চিন্তা, মত-প্রকাশ, চ লাফেরা প্রভৃতির স্বাভাবিক স্বাধীনতা হরণকারী কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা দ্বারা অদৌ সম্ভব নয়। বরং সে জন্য দেমের প্রকৃত গণ-অধিকার সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকিতে হইবে। বুর্জোয়া বা সমূহবাদী কিংবা পাশ্চাত্যের প্রতারণাময় গণতন্ত্র নয়, আল্লাহরই সার্বভৌম-ভিত্তিক খিলাফত ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়া আবশ্যক। বিশেষ ধরনের কোন অর্থ ব্যবস্থাকে চালু রাখিবার জন্য কোন নিরংকুশ একনায়কত্ব প্রতিষ্টা অপরিহার্য হইল তাহা যে স্বাভাবিক ও শাশ্বত অর্থব্যবস্তা নয়, তাহা সুস্পশ্ট। এই জন্যই উপরিউক্তরূপ অর্থব্যবস্থার পশ্চাতে উহার দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের জন্য একটি সম্পূর্ণ নিখুঁত গণ-অধিকারবাদী রাষ্ট্রশক্তির অস্তিত্ব বর্তমান থাকা প্রয়োজন। এই রাষ্ট্রশক্তি সমাজের লোকদের প্রাণ, দন ও সম্মানের নিরাপত্তা, বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, চলাফেরা ও সম্মেলন সংগঠনের স্বাধীনতা রক্ষা করিবে। উহা একদিকে সমাজের অর্থব্যবস্থার পূর্ণ পৃষ্টপোষকতা করিবে এবং অপরদিকে সেই অর্থব্যবস্থা ও রাষ্ট্রশক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতা স্থাপন করিবে।

উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের যে অর্থনীতিতে মূলতঃই এবং কার্যকরভাবে বর্তমান থাকিবে, প্রকৃতপক্ষে তাহাই এক আদর্শ, উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত অর্থব্যবস্থা হইতে পারে। যে অর্থব্যবস্থা এই মানদন্ডে উত্তীর্ণ হইতে পারে না, তাহা নির্বিশেষে সমগ্র মানুষের কল্যাণ সাধন- মানুষের জীবনকে সুখী, সুন্দর-সমৃদ্ধ করিতে কোনদিনই সমর্থ হইতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন