মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলামের ভূমি-নীতিতে জমির মালিকানা লাভ। ও ভোগ দখলের দৃষ্টিতে জমিকে চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত হইয়াছে।
প্রথমতঃ আবাদ ও মালিকানাধীন জমি। কেহ না কেহ উহা আবার করিয়া উহাতে বসবাস কিংবা কৃষিকাজ ইত্যাদি কোন-না-কোন উপায়ে উহা ভোগ দখল করিতেছে। এই জমি উহার মালিরেই অধিকারভুক্ত থাকিবে। মালিকের বৈধ অনুমতি ব্যতীত এই জমিকে অপর কেহ ভোগ ব্যবহার করিতে কিংবা উহার কোন অংশ দখল করিতে পারিবে না। তবে রাষ্ট্র ও জাতির বৃহত্তর কোন কল্যাণের প্রশ্ন উঠিলে তখন ব্যাপারটি ভিন্ন দৃষ্টিতে বিবেচনা করিতে হইবে।
দ্বিতীয়তঃ কাহারো মালিকানাভুক্ত জমি হওয়া সত্ত্বেও উহা অনাবাদি পড়িয়া রহিয়াছে। উহাতে পানি সেচ করা হয় না, আগাছা-পরগাছা বা জঙ্গল পরিষ্কার করা হয় না, চাষাবাদ করা হয় না, উহা বসবাসের কাজেও ব্যবহার করা হয় না।
এই মজিও মালিকেরই অধিকারভুক্ত থাকিবে। মালিক উহা অন্যান্য জমির ন্যায় বিক্রয় করিতে পারিবে এবং উহাতে উত্তরাধিকার আইন কার্যকর হইবে।
তৃতীয়তঃ জনগণের সাধারণ কল্যাণের জন্য নির্দিষ্ট জমি। এক গ্রামবাসীর গৃহপালিত পশুর জন্য নির্দিষ্ট চারণভূমি কিংবা কাষ্ট আহরণ ক্ষেত্র অথবা মসজিদ, ঈদগাহ বা কবরস্থান প্রভৃতি সার্বজনীন কাজের জন্য নির্দিষ্ট জমি এই পর্যায়ে গণ্য।
কোন এক ব্যক্তি এই জমির মালিক হইবে না; বরং ইহা ব্যবহার করার ও ইহা হইতে উপকৃত হওয়ার অধিকার সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকিবে।
চতুর্থত: অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমি। উহার কোন মালিক নাই, উহা কেহই ভোগদখল করিতেছে না। এই পর্যায়ের জমি-জায়গাকে ইসলামী অর্থনীতির পরি।ভাণায় () ‘আল মারওয়াত’ বলা হয়।এই জমির পরিচয় দান প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন:
(আরবী)
ইহা জনপদের বাহিরে অবস্থিত এমন জমি, যাহার কেহই মালিক নাই, উহার উপর কাহারো একচেটিয়া অধিকার স্বীকৃত হইবে না।
যে জমিতে সাধারণ মানুষে জন্য প্রয়োজনীয় কোন পদার্থের খনি থাকিবে, উহাতে সর্বসাধরণের ভোগাধিকার স্বীকৃত হইবে, যতকনষণ না কাহাকেও বিশেষভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হইবে।
অনাবাদী জমি আবাদ করার অর্থ হইল: জমিতে বন-জঙ্গল ও আগাছা পরগাছা থাকিলে উহা কাটিয়া সাফ করা, পানি না থাকিলে উহাতে কিংবা পানিতে ডুবিয়া থাকিলে উহা হইতে পানি সিঞ্চন করা, উহাতে চাষাবাদ করা ও ফসল ফলানো; কিংবা উহাতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা; অথবা উহাকে যে কোন প্রকারে ব্যবহারের উপযোগী করিয়া তোলা।
আল্লামা মাওয়ার্দী লিখিয়াছেন: জমি আবাদ করার ব্যাপারটি দেশ চলতি প্রথা অনুযায়ী স্বীকৃত হইবে। কেননা নবী করীম (ﷺ) তাঁহার বাণীতে এ জন্য কোন বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ করেন নাই। উহাকে দেশ চলতি প্রথার উপরই ছাড়িয়া দিয়াছেন।
জমির মালিকানা লভ]
কোন দেশে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম কায়েম হওয়া এবং ইসলামী অর্থনীতি কার্যকর করার সময় সংশ্লিষ্ট দেশের জমিক্ষেতের সাধারণতঃ কয়েকটি অবস্থা থাকিতে পারে, যথা-
১. অনাবাদী পড়োজমি- এখানে যাহার উপর কাহারো মালিকানা স্থাপিত হয় নাই। (নূতন চরাভূমি বন-জঙ্গল বা পরিত্যক্ত জমি) কিংবা যাহার মালিক মৃত বা লুপ্ত হইয়া গিয়াছে, উত্তরাধিকারী কেহ নাই।
২. মুসলমানদের ভোগাধিকারভুক্ত জমি.
৩. অমুসলিমরে ভোগাধিকারভূক্ত জমি এবং
৪. যেসব জমি-জায়গাকে পূর্বেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিরূপে নির্দিষ্ট করা হইয়াছে- ইসলামী অর্থনীতির পরিভাষায় এইরূপ জমিকে বলা হয় খালেছাহ। ()
ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হওয়অর পর শোষেক্ত প্রকার জমি পূর্বানুরূপ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনই থাকিবে। রাষ্ট্র তাহা নিজস্ব কাজে ব্যবহার করিবে কিংবা তৎলব্ধ অর্থ সরকারী কাজে ব্যয় করিবে।
প্রথমোক্ত প্রকার জমি-জায়গা আবাদ ও চাষোপযোগী করিয়া উহাতে ফসল উৎপাদনের জন্য ভূমিহীন লোকদের মধ্যে সুবিচারমূলক নীতি অনুযায়ী বন্টন করিতে হইবে। ইমাম আবূ ইউসুফ (র) ‘কিতাবুল খারাজ’ গ্রন্থে লিখিয়াছেন:
(আরবী)
অনাবাদী, অনুর্বর, মালিকহীন ও উত্তরাধিকারহীন জমি-জায়গা এবং যে জমিতে কেহ চাষাবাদ ও ফসল ফলানোর কাজ করে না তাহা ইসলামী রাষ্ট্রের উপযুক্ত লোকদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়া রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্র। এই ব্যাপারে সকল মুসলমানের সাধারণ ও নির্বিশেষ অধিকার স্বীকার করিতে এবং সর্বসাধারণের কল্যাণ-সাধনকেই নীতি হিসাবে গ্রহণ করিতে হইবে।
অর্থাৎ এই জমি এমনভাবে বন্টন করিতে হইবে, যেন এই বন্টনের ফলে জনগণের কল্যাণেই সাধিত হয়, কোনরূপ ক্ষতি বা অমঙ্গল যেন কাহারও না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখিয়াই এই জমির বন্টনকার্য সম্পন্ন করিতে হইবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেন: ‘নবী করীম (ﷺ) মদীনায় হিজরত করিয়া আসিলে পরে এখানকার সকল শুষ্ক, মৃত, অনাবাদী ও পড়ো-জমি সুনিয়মিতভাবে মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিয়াছিলেন।
এইভাবে একজন নাগরিক যে জমি লাভ করিবে এবং উহাকে আবাদ ও চাষোপযোগী করিয়া লইবে, সে ব্যক্তি ঐ জমির ‘মালিক’ বিবেচিত হইবে।
যে ব্যক্তি কোন মালিকহীন জমি আবাদ করিয়া লইবে, সে-ই উহার ভোগাধিকার ও মালিকানা লাভ করিবে।
‘আবু দাউদ’ নামক হাদীস গ্রন্থে একজন সাহাবীর এই উক্তি উল্লেখ করা হইয়াছে:
(আরবী)
আমি সাক্ষ্য দিতেছি, হযরত নবী করীম (ﷺ) চূড়ান্ত ফয়সালা করিয়া দিয়াছেন যে, জমি-জায়গা সবকিছু আল্লাহর এবং মানুষ তাহারই দাস, অতএব যে ব্যক্তি অনাবাদী জমি চাষোপযোগী ও উৎপাদনক্ষম করিয়া তুলিবে উহার মালিকানা লাভে সে-ই অগ্রাধিকার পাইবে।
তৃতীয় প্রকার জমি: অমুসলিমদের অধিকারভূক্ত জমির অবস্থা সাধারণতঃ তিন প্রকার হইতে পারে। অমুসলিমদের জমির এই প্রকারভেদ তাহাদের রাজনৈতিক মর্যাদা অনুযায়ীই নির্ধারিত হইবে; তাহা এইরূপ:
(ক) অমুসলিম বাসিন্দারা মুসলিমদের সহিত মুকাবিলা করিয়া যুদ্ধ সংগ্রাম করিয়া শেষ পর্যন্ত যদি পরাজয় স্বীকার করিতে বাধ্য হয় অথবা মুসলমানদের সহিত কৃত সন্ধিচুক্তি ভংগ করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং মুসলমানগণ শক্তি প্রয়োগ করিয়া তাহাদিগকে পরাভূত করে, তবে অমুসলিমগণ রাজনৈতিক দিকদিয়া ‘জিম্মী’-‘শক্তি প্রয়োগের ফলে পরাজিত ও বশ্যতা স্বীকারকারী অমুসিলম’ হওয়ার মর্যাদা পাইবে। অনুরূপভাবে তাহাদের ধন-সম্পত্তি ও জায়গা-জমি গণিমতের সম্পদ বা ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারী সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হইবে। অতঃপর ইসলামী রাষ্ট্র উহার বিলিব্যবস্থা, চাষাবাদ ও বন্দোবস্তের জন্য ইচ্ছা করিলে মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিতে পারে। আবার উহার চাষাবাদের কাজ উহার প্রাচীন চাষীদের দ্বারা নির্দিষ্ট শর্ত অনুসারে সম্পন্ন করার ব্যবস্থাও করা যাইতে পারে। কিন্তু মূলত সেই প্রাচীন ভূম্যাধিকারীরা উহার মালিক থাকিবে না। হযরত নবী করীম (ﷺ) খায়বর এলাকায় কার্যত এই নীতিরই প্রয়োগ করিয়াছেন। [(আরবী)]
নবী করীম (ﷺ) মদীনায় হিজরাত করার পর তথাকার ইয়াহুদীদের সহিত ‘যুদ্ধ নয়- শত্রুতাও নয়” –এর চুক্তি করিয়াছিলেন। কিন্তু ইয়াহুদীদের মধ্যে ‘বনু কায়নূকা’ গোত্র ইহা লংঘন করে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করে। অতঃপর তাহারা ইসলামী সৈন্যবাহিনী কর্তৃক আবদ্ধ হইয়া আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হয়। নবী করীম (ﷺ) তাহাদের সকল ধন-সম্পত্তি গণীমতের মাল হিসাবে মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেন। ‘বনী নজীর’ গোত্রও এই একই অপরাধের অপরাধী ছিল, ক্রমাগতভাবে পঞ্চদশ দিবস পর্যন্ত তাহারা অবরুদ্ধ থাকিয়া পরাজয় স্বীকার করে। অতঃপর তাহাদিগকে সকল নগদ সম্পদ ও অস্থাবর সম্পত্তিসহ প্রাণ লইয়া দেশ ত্যাগ করিয়া যাইবার অনুমতি দেওয়া হয়। তাহারা যুদ্ধ করে নাই বলিয়া তাহাদের যাবতীয় জায়গা জমি বিনা যুদ্ধেই নবী করীম (ﷺ)-এর হস্তগত হয়। ফলে তাহা সবই একান্তভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদের নিম্নোদ্ধৃত আয়াতে এই কথাই বলিয়াছেন:
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলা তাহার রাসূলকে তাহাদের (বনু নজীর) হইতে যাহাকিছু অর্জন করাইয়া দিয়াছেন, তাহা তাঁহারই। কারণ, তাহা অর্জন করিবার জন্য তোমাদিগকে ঘোড়া ও উট দোড়াইয়া যুদ্ধ করিতে হয় নাই। কিন্তু আল্লাহ তাহার রাসুলগণকে নিজ ইচ্ছামতই অন্যের উপর আধিপত্য দান করেন। -আল-হাশর: ৬
অতঃপর নবী করীম (ﷺ) এই সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেন। দুইজন সাহাবীর কঠিন দারিদ্রের কথা জানিতে পারিয়া তাহাদিগকে বিশেষ অংশ দান করিয়াছিলেন।
হযরত উমর ফারূক (রা) বলিয়াছেন- বনু নজীরের ধন-সম্পত্তি আল্লাহ তা’আলা তাঁহার রাসূলকে বিনা যুদ্ধেই দান করিয়াছিলেন। সেই জন্য মুসলমানদের কোনরূপ যুদ্ধ বা কষ্ট স্বীকার করিতে হয় নাই। অতএব তাহা খালেসভঅবে নবী করীম (ﷺ)-এর প্রাপ্য। তাহা হইতে তিনি তাহার নিজের বাৎসরিক প্রয়োজন পূরণ করিতেন এবং যাহা উদ্ধৃত্ত থাকিত, তাহাদ্বারা মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় কাজ, বিশেষ করিয়া সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ সরঞ্জাম খরিদ কার কাজ সম্পন্ন করিতেন। [১]
অন্য কথায় এই সম্পত্তি সবই ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারী মালিকানা বলিয়া ঘোষিত এবং বায়তুলমালে সঞ্চিত হইয়াছিল। নবী করীম (ﷺ) কে ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে উহা জনগণের মধ্যে বন্টন করার দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছিল মাত্র। কায়রো ও খরতুম বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফারুক কলেজের শিক্ষক ডঃ জাকারিয়া বুয়ুমী লিখিয়াছেন: বনু নজীর গোত্রের অস্থাবর মাল-সম্পদ দরিদ্র আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে বন্টন করিয়াছেন। মহাজিরদের তীব্র প্রয়োজনের কারণে তাহাদিগকে ৩৫ অংশ দেওয়া হয়। কিন্তু জমি ও তাহাতে যেসব বৃক্ষরাজি বা ফসল ছিল তাহা বন্টন করা হয় না বরং তাহা সরকারী ব্যবস্থাপনায় রাখা এবং তাহা দিয়া দরিদ্র ইয়অতীম ও মিসকীনদের ব্যাপক সাহায্য দানের ব্যবস্থা করা হয়।[(আরবী)]
বনু কুরাইযা নবী করীমের সহিত কৃত সন্ধিচুক্তি লংঘন করিয়া কাফির শত্রুদের সহিত গোপন রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছিল। নবী করীম (ﷺ) তাহাদিগকে অবরুদ্ধ করিয়াছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাহাদের ধন-সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে তাহারেদ রসদের হিস্সা অনুযায়ী বন্টন করা হইয়াছিল।
ইসলামের ভূমিনীতি নির্ধারণের ব্যাপারে খায়বরের ঘটনার বিশেষ গুরুত্ব রহিয়াছে। ৭ম হিজরী সনে খায়বরবাসীদের সহিত মুসলমানদের যুদ্ধ হয় এবং পরে তাহাদের সহিত সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী সমগ্র খায়বরে বিশাল উর্বর ভূমির উপর ইসলামী রাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি বর্ণনায় প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম (ﷺ) খায়বরের সমস্ত জমি খেজুর গাছ অর্ধেক ফল ও ফসল সরকারকে দেওয়ার শর্তে চাষাবাদকারীদের হাতে ন্যাস্ত করিয়াছিলেন। যাতা তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যয় করিতেন। [(আরবী)]
(ক) নবী করীম (ﷺ) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে এই সমগ্র এলাকাকে ছত্রিশটি খন্ডে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেকটি খন্ডের সহিত এক শতটি অংশ যুক্ত করেন। তন্মধ্য হইতে আবারো খন্ড (মোট সম্পত্তির অর্ধেক) রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন-পূরণ ও সামষ্টিক দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দিষ্ট করা হইয়াছিল। অবশিষ্ট আঠারো খন্ড মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে এমনভাবে বন্টন করিয়অ দেওয়া হইয়াছিল যে, উহার প্রত্যেকটি খন্ডেরিই অংশীদার হইয়াছিল একশত লোক। নবী করীম (ﷺ) তাঁহার নিজ প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ইহা হইতেই একটি অংশ গ্রহণ করিয়াছিলেন।
(খ) যেসব অমুসলিম জাতি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হইয়া- কোন জোরজবরদস্তি ও বাধ্যবাধকতা ব্যতীতই- ইসলামী রাষ্ট্রের সহিত সন্ধি করিবে, ইসলামী রাষ্ট্র ঠিক চুক্তি অনুসারেই তাহাদের সকল অধিকার রক্ষা করিবে। তাহাদের নিজস্ব জমি-জায়গা তাহাদেরই ভোগ-দখল থাকিবে। তাহারা চুক্তি অনুসারেই ইসলামী রাষ্ট্রকে দেয় কর রীতিমতই আদায় করিতে থাকিবে।
খায়বর বিজয়ের পর ‘ফিদাক’ নামক স্থানের অধিবাসীগণ নবী করীম (ﷺ)-এর সহিত সন্ধি করিবার জন্য নিজেদের পক্ষ হইতে উদ্যোগী হইয়াছিল এবং তাহাদের জমি-ক্ষেতের উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক ইসলামী রাষ্ট্রকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়াছিল। নবী করীম (ﷺ) তাহাদের আবেদনক্রমেই তাহাদের সহিত সন্ধি করেন। ফিদাক-এর জমি লোকদের মধ্যে বন্টন করা হয় নাই, অধিবাসিদের হাতেই উহা রাখিয়া দেওয়া হয়।[কিতাবুল খারাজ, ইয়াহইয়অ ইবনে আদম, বন্দ ১০০, ৩৯ পৃঃ] ফিদাক এলাক হইতে যাহা আয় হইত, তাহা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যয় করা হইত, যদিও ফিদাকের অধিবাসীগণই এইসব জমি-জায়গার আসল দখলদার ছিল। তাহাদের নিকট হইতে ঐ সব জমি কাড়িয়া লওয়া হয় নাই। অবশ্য হযরত উমর ফারূক (রা)-এর খিলাফতকালে বিশেষ কারণে তাহাদিগকে নির্বাসিত করা হয় এবং ন্যায্য মূল্যর বিনিময়ে তাহাদের জমি-জায়গা রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে খরিদ করা হয়। সরকার পক্ষ হইতে ভূমিক্রয়ের ইহা এক প্রাচীন রীতি।[বুখারী, ২য় জিঃ ৫৭৬ পৃঃ]
‘তাইমা’ নামক স্থানের অধিবাসীগণও নিজের আগ্রহ-উৎসাহে নবী করীম (ﷺ)-এর সহিত সন্ধি করিতে অগ্রসর হয়। ফলে তাহারা তাহাদের নিজ স্বাক্ষরিক হয়।[আহকামে সুলতানিয়া, ফতুহল বুলদান, ৪৮ পৃঃ]
মক্কা বিজয়ের পর নবী করীম (ﷺ)-এর অনুসৃত ভূমিনীতিও এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মক্কা জয় করার পর উহার প্রাচীন বাসিন্দা মুহাজিরগণ নিজেদের জন্মভূীমতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাঁহাদের হিজরাত পূর্বকালীন মালিকানা অনুযায়ী প্রত্যেকেই নিজ নিজ জমি-জায়গার উপর পনরাধিকার লাভ করেন। কারণ মক্কানগর মূলত বিনা যুদ্ধেই বিজিত হইয়াছিল।
নাজরান এলাকার খৃস্টানগণও ইসলামী রাষ্ট্রের সহিত সন্ধি করিয়াছিল। চুক্তি হইয়াছিল যে, তাহাদের জান-মাল, জমি-জায়গা, ধর্মবিশ্বাস ও জাতীয় আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সবকিছুরই নিরাপত্তা থাকিবে। তাহারা এই নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ লাভের বিনিময়ে ইসলামী রাষ্ট্রকে ‘জিযিয়া’দিবে। তাহাদের এই সন্ধিচুক্তি প্রথম খিলাফতকাল পর্যন্ত বহাল তাকে কিন্তু দ্বিতীয় খলীফার আমলে নাজরানের খৃষ্টানগণ প্রকাশ্যভাবে সুদী কারবার করিতে আরম্ভ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাহাদের কর্মতৎপরতা অত্যন্ত তীব্র হইয়া দেখা দেয়। এই কারণে হযরত উমর (রা) তাহাদিগকে নির্বাসিত করেন এবং তাহাদের যাবতীয় ভূ-সম্পত্তির মূল্য ধার্য করিয়া তাহা আদায় করিয়া দেন। অন্য কথায় রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে তাহাদের বিত্ত-সম্পত্তি খরিদ করিয়া লওয়া হয়। ইহার বিনিময়ে সিরীয়া ও ইরাক হইতে তাহাদিগকে চাষাবাদের জন্য জমি দান করা হয়।[বুখারী, ফতুহুল বুলদান, ৭৭ পৃঃ।]
ইয়ামনের আধীবাসীগণও নবী করীম (ﷺ)-এর সহিত সন্ধি-চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছিল। নবী করীম (ﷺ) এই চুক্তি লিখিয়া দিয়াছিলেন যে, তাহারা ইসলাম গ্রহণ করিলে তাহাদের ধন-সম্পদ, জায়গা-জমি ও গচ্ছিত-প্রোথিত ঐশ্বসর্যের উপর ইসলামী রাষ্ট্র কোনরূপ হস্তক্ষেপ করিবে না। অবশ্য ইসলামী রাষ্ট্রের ধার্যকৃত অন্যান্য দেয় এবং সকলকেই যথারীতি আদায় করিতে হইবে। [আহকামে সুলতানীয়া।]
(গ) যেসব অমুসলিম ভূমি-মালিক মুসলমানদের সহিত যুদ্ধ করিয়া নিহত হয়, কিংবা ইসলামী রাষ্ট্র হইতে পালাইয়া চলিয়া চলিয়া যায় এবং শেষ পর্যন্ত উহার মালিক ও অধিকারী বা উত্তরাধিকারী কেহই অবশিষ্ট থাকে না, এইসব জমি-জায়গা বিজয়ী মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইসলামী রাষ্ট্র তাহা জনগণের মধ্যে পূর্ণবন্টন করিবে। হযরত উমর (রা) এই নীতিই অবলম্বন করিয়াছিলেন। এ সম্পর্কে ইমাম আবূ ইউসুফ (রা) লিখিয়াছেন:
(আরবী)
যে সব জমি কিস্রা, কিসরার বংশাবলী এবং যুদ্ধ নিহত ও পালাইয়া দেশ ত্যাগ করিয়া যাওয়া লোকদের মালিকানাভুক্ত ছিল, হযরত উমর (রা) তাহা সবই রাষ্ট্রায়ত্ত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাভুক্ত করিয়া লইয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত যেসব জমি পানির নীচে ডুবিয়াছিল এবং সমস্ত ডাকঘর ও তৎসংলগ্ন জমি-জায়গাও তিনি সরকারে বাজেয়াপ্ত করিয়া লইয়াছিলেন। পরে তিনি এই সব জমি-জায়গা জনগণের মধ্যে চাষাবাদের জন্য বন্টন করিয়া দিয়াছিলেন।
বাংলাদেশ ভূ-খন্ড হইতে অমুসলিম দেশত্যাগীদের ভূ-সম্পত্তির ব্যাপারে এই নীতি পূর্ণভাবে প্রযোজ্য এবং এই দলীলের ভিত্তিতে তাহা সব রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিরূপে গণ্য হইবে।
ইমাম আবূ ইউসুফের বর্ণনা হইতে জানা যায়, হযরত উমরের খিলাফত আমলে এই ধরনের সরকারায়ত্ব জমি-জায়গা হইতে আয়ের পরিমাণ ৪০ লক্ষ দিরহাম পর্যন্ত পৌঁছিয়াছিল।
মোট কথা, স্বয়ং নবী করীম (ﷺ)-এর দশ বৎসরকালীন মাদানী জিন্দেগীতে প্রায় দশলক্ষ্য বর্গমাইল বিস্তৃত এলাকা-গড়ে দৈনিক দুই শত পঁচাত্তর বর্গমাইল অঞ্চল-ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছিল। তাহাতে নবী করীম (ﷺ)-এর ভূমিনীতি এই ছিল যে, যেসব ভূমি যুদ্ধ ও শক্তি প্রয়োগের পর হস্তগত হইয়াছিল, তাহা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হইত। অতঃপর উহার একাংশ সরাসরি ভূমিহীন লোকদের মধ্যে বন্টন করা হইত। এইরূপে যেসব অঞ্চল বিনা-যুদ্ধ করায়ত্ব হইত, তাহাও ‘খালেস’ নামে অভিহিত হইয়া খালেসভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিরূপে বিবেচিত হইত। কিন্তু যে সব অঞ্চলের অধীবাসীগণ ইসলাম গ্রহণ করিত এবং নিজেদের এলাকাকে ইসলামী রাষ্ট্রের অধীন করিয়া লইত অথবা যেসব অমুসলিম ‘জিযিয়া’ দেওয়ার শর্তে ইসলামী রাষ্ট্রের সহিত সন্ধি করিত, তাহাদের জমিক্ষেতের উপর ইসলামী রাষ্ট্র মাত্রই হস্তক্ষেপ করিত না। বরং ইসলামী রাষ্ট্র তাহাদের প্রত্যেকেরই মালিকানার পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিত এবং তাহার বিনিময়ে ইসলামী রাষ্ট্র তাহাদের নিকট হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘কর’ বা ‘খারাজ’ আদায় করিত মাত্র। এতদ্ব্যাতীত মালিকহীন সম্পত্তি যাহা কিছুই হস্তগত হইয়াছিল, নবী করীম (ﷺ) রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবেই তাহা বিভিন্ন সাহাবীকে তাঁহাদের কৃতিত্বপূর্ণ ইসলামী অবদান ও বৃহত্তর জাতীয় খেদমতের জন্য পুরষ্কারস্বরূপ দান করিয়াছেন। ইসলামী অর্থনীতির প্রাচীন পরিভাষায় ইহাকে () ‘জায়গীর দান’ বলা হয়। বলাবাহুল্য, বর্তমান জায়গীরদারী ও সামন্তবাদী ভূমিনীতির সহিত ইহার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক বা সামঞ্জস্য নাই।
নবী করীম (ﷺ)-এর পর প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রা) নবী করীমের ভূমি নীতিকেই বহাল রাখেন এবং কার্যতঃ তিনি তাঁহারই অনুসরণ করিয়া চলেন। তিনিও ভূমিহীন লোকদের মধ্যে মালিকহীন জমি বন্টন করিয়াছিলেন।[কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবাইদ] তাঁহার খিলাফতকালে মুর্তাগণ ইসলামের অনুমাসন মানিয়া চলিতে অস্বীকার করে। ফলে খলীফা তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং তাহাদিগকে পরাজিত করিয়া তাহাদের যাবতীয় বিত্ত-সম্পত্তি খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন করিয়া লন। তাহাদের অনেক জমিকেই রাষ্ট্রীয় চারণভূমিতে পরিণত করা হয়। [তারিখ-ই-তাবারী] হযরত খালিদ বিন অলিদ প্রবল যুদ্ধের পর ইরাক জয় করেন। তখন ইরাকের জমি-ক্ষেত বিজয়ী সৈনিকের মধ্যে বন্টন করার দাবি উথাপিত হয। কিন্তু হযরত আবূ বকর (রা) তাহা না করিয়া ইরারেক বিরাট এলাকাকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলিয়া ঘোষণা করেন এবং উহার চাষাবাদের কাজ উহার পুরাতন ভোগদখলকারীদের উপরই ন্যস্ত করেন। তাহারা জমি চাষাবাদ করিত এবং ইসলামের খিলাফতকে ‘জিযিয়া ও ‘খারাজ’ (ভূমিরাজস্ব) আদায় করিয়া দিত। যদিও পরবর্তী যুগে অবস্থার পরিবর্তন হওয়অর সঙ্গে-সঙ্গেই এই নীতিরও পরিবর্তন হইয়াছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/68
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।