মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
[‘ইসলামের অর্থনীতি’ বই’র প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের একটি সরকারী ডিগ্রী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বইখানির জনসংখ্যা সম্পর্কিত আলোচনা পর্যায়ে কিছু আপত্তি জানাইয়া অভিমত প্রকাশ করেন। উহার জওয়াব লিখিত তথ্যপূর্ণ চিঠিখানি এখানে সন্নেবেশিত করা হিইল।]
আমি জানিয়া বিশেষ সুখী হইয়াছি যে, আপনি আমার লিখিত বই ‘ইসলামের অর্থনীতি’ সম্পূর্ণ পড়িয়াছেন এবং ইহা পড়িয়া যারপর নাই উৎসাহিত হইয়াছেন। সেই সঙ্গে এ কথাও জানিতে পারিলা যে, বইখানি ‘জনসংখ্যা সমস্যা’ সম্পর্কীয় আলোচনা এবং ইহার সমাধানের জন্য আমি যে পন্থা পেশ করিয়াছি তাহা আপনাকে প্রতি কারিত পারে নাই। বরং এই বিষয়ে আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগিয়াছে যে, জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়িতেই থাকিবে এবং তাহাতে খাদ্য সমস্যাও দেখা দিবে। এমতাবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ যদি অনুমোদিত না হয়, তাহা হইলে এই সমস্যার সুস্পষ্ট ও কার্যকর সমাধান কি হইতে পারে?
আমার বইতেই প্রসঙ্গটির বিস্তারিত আলোচনা রহিয়াছে। কিন্তু মন হইতেছে যে, আপনি আমার আলোচনা যথাযথভাবে অনুধাবন করিতে পারেন নাই। তাই বর্তমান পত্রে আপনার সম্মুখে আমার বক্তব্য আরো বিস্তারিত রূপ পেশ করিতেছে। অবশ্য এই আলোচনাও নিছক অর্থনৈতিক তথ্য পরিবেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে। বলা বাহুল্য, যেসব তথ্য আমার গ্রন্থে উল্লেখিত হইয়াছে, এখানে উহর পুনরোল্লেখ করা হইবে না। আশা করি, আমার এই কথাগুলিও গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখিবেন।
‘ইসলামের অর্থনীতি’ বইতে আমি জনসংখ্যা-সমস্যা সম্পর্ক আলোচনা করিতে গিয়া মোট চারটি কথা বলিয়াছি। প্রথম কথা এই যে, পৃথিবীতে জনসংখ্যা তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাইতেছে এ কথা ঠিক, কিন্তু সেইজন্য এক শ্রেণীর অর্থনীতিবিদ জনসংখ্যা রোধের যে উপদেশে দিয়াছেন, তাহা কিছামাত্র যুক্তসংগত নহে। কেননা ইহা হইতে চরম স্বার্থপরতা প্রমাণিত হয় এবং মানবতার সহিত চরম দুশমনি করা হয়। ইহা হইতে এই মনোবৃত্তি প্রকাশ পায় যে, আমরা যাহারা দুনিয়ায় আসিয়াছি, তাহারাই যে এখানে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকিতে ও ভোগ-বিলাস করিতে পারি, অন্য কেহ যেন আমাদের সহিত ভাগ বসাইতে এবং আমাদিগকে অভাবগ্রস্ত করিতে না পারে।
দ্বিতীয় এই যে, কিছু সংখ্যক অর্থনীতিবিদ জনসংখ্যা সমস্যা দেখাইতে গিয়া যাহা কিছু বলিয়াছেন, তাহাও ভুল। যেহেতু জনসংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহার বাড়ে না বাড়ে ক্রমিক সংখ্যার অনুপাতে। এবং খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনও ঠিক সেই অনুপাতেই বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রকৃত পক্ষে কোন সমস্যা নহে।
তৃতীয়তঃ বর্তমান পৃথিবীতে যাহাকিছু খাদ্যসম্পদ আছে, তাহা শুধু বর্তমান জনসংখ্যার জন্য নয়, ইহার বর্তমান আয়োজন দিয়াই ইহার তিনগুণ বেশী লোকের জন্যও বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিতৃপ্তি সহকারে খাদ্য সরবরাহ করিতে পারে। এই প্রসঙ্গে আমি বৈজ্ঞানিকদের উক্তির উল্লেখ করিয়া নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণ করতে চেষ্টা করিয়াছি যে, পৃথিবীর স্থলভাগ ও জলভাগে এত উপাদান রহিয়াছে, বৈজ্ঞানিক পন্থা যাহার অনুশীলন করিলে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ বর্তমান অপেক্ষা তিন-চারগুণ বৃদ্ধি পাইতে পারে।
আর চতুর্থ এই যে, ইসলাম জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানের জন্য কোন প্রকারের জন্মনিয়ন্ত্রণই আদৌ সমর্থন করে না। বরং ইসলামী তীব্র ভাষায় এই ধরন মনোবৃত্তি ও প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করিয়াছে এবং দেখাইয়াছে যে, জন্মনিয়ন্ত্রণের পন্থা অবলম্বন করিলে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান হইবে না; বরং ঠিক তখনই এই সমস্যার সৃষ্টি হইবে। কেননা স্বাভাবিক অবস্থায় ইহা কোন সমস্যাই নহে।
আমি জানি না, আমার আলোচা হইতে আপনি এই কথাগুলি হৃয়ংগম করিতে পারিয়াছেন কিনা। কেননা, যদি তাহা করিতে পারিতেন, তাহা হইলে আপনার নিকট হইতে এই প্রশ্ন আমার নিকট নিশ্চয়ই আসিত না।
১৯৬৩ সনে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গিয়াছে যে, জাতিসংঘের বিশেষ তহবিল গঠনের পর অসংখ্য সম্পদ জরিতেপর ফলে স্পষ্ট রূপে প্রমাণ পাওয়া গিয়অছে যে, এই পৃথিবী অত্যন্ত সম্পদশালী এক গ্রহ। জাতিসংঘর সাধান পরিষদে প্রদত্ত রিপোর্ট উল্লেখিত তহবিলে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পলজিহফম্যান বলিয়াছেন, এমন বহু দেশ রহিয়াছে, যেখানে জমিতে সার এবং উন্নত বীজ ব্যবহার করা হইলে শস্যোৎপাদনের পরিমাণ বর্তমান তুলনায় দুই-তিনগুণ বৃদ্ধি পাইবে।তিনি জানান, বহুস্থানে অপরিমিত খনিজ সম্পদ অনাবৃষ্কৃত রহিয়াছে। বহু স্বল্প আয়ের দেশে পানি সম্পদ এখন পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন ইত্যাদির কাজে ব্যবহার করা হয় নাই। তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখনো কোটি কোটি একজর জমির পানি সরাইয়া অথবা লবণ্যক্ততা দূর করিয়া চাসোপযোগী জমিতে পরিণত করা যাইতে পারে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পারলেই তাহা কোন সমস্যায় পরীণত হয় নাই আমার এই কথাটির ভিত্তি বিশ্বেবৈজ্ঞানিক আবিষ্কৃত উদ্ভাবনী এবং উহার ক্রমবৃদ্ধির হারে উপর স্থাপিত। গোটা পৃথিবীকে সম্মুখে রাখিয়া চিন্তা করিলে আমরা দেখিতে পাই যে, মানুষের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাইতেছে, ঠিক তেমনি খাদ্যোৎাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাইতেছে। মনে করুন, আজ হইতে একশত বৎসর পূর্বে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল- ধরা যাক- বর্তমান সংখ্যার তিনভাগের দুই ভাগ। খাদ্যের পরিমাণ সম্পর্কেও চিন্তা করিলে আমরা বুঝিতে পারিব যে, বর্তমানে যে পরিমাণ খাদ্য নানাভাবে পাওয়া যায় তত পরিমাণ খাদ্য নিশ্চয়ই তখন উৎপন্ন হইত না। আমার মতে বর্তমান পরিমাণের তিনভাগের দুইভাগ পরিমাণই হয়ত উৎপন্ন হইত। খাদ্য সংগ্রহের এমন অনেক পন্তা বা যন্ত্র এখন আবিষ্কৃত হইয়াছে যাহা অতীতে কোনদিন ছিল না শুধু নয়, সেই সূত্রে যে পরিমাণ খাদ্য-সংগ্রহ হইতে পারে তাহা কেহ চিন্তাও করিতে পারিত না। বিশেষতঃ কৃষির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ চিন্তা করিল এই কথা আর জোরালোভাবে প্রমাণিত হয়যে, ইহার দ্বারা খাদ্যের পরিমাণ প্রয়োজন পরিমাণ অপেক্ষাও অনেক বেশী বাড়ানো যাইতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীর দেশে বিজ্ঞানের সাহায্যে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ যেভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে তাহা পর্যালোচনা করিলেই আমার উপরোক্ত দাবী প্রমাণিত হইবে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ রাশিয়ার কথাই ধরা যাক। ১৯১৮ সালে রাশিয়ায় উৎপন্ন খাদ্যের পরিমাণ ছিল ছয় কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টন। আর বিগত ৫৪ সনে প্রকাশিত হিসাবে জানা গিয়াছে যে, সেখানে উৎপাদিত খাদ্যের পরিমাণ হইয়াছ এগার কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টন। আমেরিকা সম্পর্কে জানা যায় যে, বিগত ২০ বৎসরের মধ্যে খাদ্যের উৎপাদন একর প্রতি শতকরা ৩৭ ভাগ বৃদ্ধি পাইয়াছে। এক এক-একটি ফার্মের চাষী শ্রমিক পূর্বাপেক্ষা শতকরা ৪০ ভাগ বেশী উৎপাদন করিতে পারিতেছে। বলা হইয়াছে, ১৯৫২ সন খাদ্যের মওজুদ পরিমাণ ছিল ২৫৪০ লক্ষ বুশেলস, ১৯৫৩ সনে ৫৫ লক্ষ বুশেলস এবং ১৯৫৪ সনে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়া ৬৪০০ লক্ষ বুশেলস হইয়া গিয়াছে।
ইহা হইতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইতেছে এবং আমার দাবি এই যে, প্রয়োজন পরিমাণই বৃদ্ধি পাইতেছে। বাস্তবিকই খাদ্যোৎপাদনের ব্যাপারে যদি নূতন নূতন যন্ত্র ও উন্নত বৈজ্ঞনিক পন্থার প্রয়োগ করা হয়, ভাল বীজ এবং আধুনিক সার ব্যবহার করা হয়, তবে খাদ্যোৎপাদনে পরিমাণ বর্তমান অপেক্ষা দ্বিগুন-তিন গুণ বৃদ্ধি করা যাইতে পারে। ভাল বীজের সাহায্যে খাদ্যোৎপাদন যে পরিমাণ বৃদ্ধি করা যাইতে পারে তাহা দেখাইতে গিয়া T.jenkins নামক প্রসিদ্ধ কৃষি-বিজ্ঞানী বলিয়াছেন যে, -প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিন বৎসরের মধ্যে ৮ বিলিয়ন (Billion) বুশেলস শস্য ৩১০০ লক্ষ একর জমিতে উৎপন্ন করা হইয়াছিল, কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিন বৎসরের মধ্যে ৯১ বিলিয়ন বুশেলস শস্য শুধু ২৮১০ লক্ষ একর জমিতে উৎপাদন করা সম্ভব হইয়াছিল।
বৃটেনও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বে উৎপাদন পরিমাণ অপেক্ষা শতকরা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি করিয়াছে। উহার দাবি এই যে, দেশে সমগ্র জনতার পেট ভরিয়া খাওয়ার পক্ষ যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সেখানে উৎপন্ন হয়। “এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল’ কৃষি বিষয়ে গবেষণা শুরু করিয়াছে। কাউন্সিলের তরফ হইতে ঘোষণা করা হইয়াছে যে, বীজকে তরল Nurient- ভিজাইয়অ বপন করল খুব ভাল ফসল হইয়া থাকে। পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে, সাদা বীজ বপন করিলে ২০ বুশেলস এবং Phosphete-এ ভিজাইয়া বপন করিলে একর প্রতি ২৫ বুশেলস খাদ্য উৎ’পাদন হইতে পারে।
খাদ্যোৎপাদনের ক্ষেত্রে আনবিক শক্তি প্রয়োগ করিতে পারিলে- যেজন্য চারিদিকে গবেষণা ও পরীক্ষা-নীরীক্ষা চলিতেছে- উৎপাদন পরিমাণ অভাবিতরূপে বৃদ্ধি পাইতে পারে। David-E-Lilunthal ১৯৪৯ সনে লিখিয়াছিলেন যে, বিজ্ঞানীগণ গত দুই বৎসর যাবত চেষ্টা করিতেছেন কৃষি ক্ষেত্রে আনবিক শক্তি ব্যবহার করার জন্য। ১৯৪৮ সনে বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে কৃষি উৎপাদন আনবিক শক্তি কিরূপে কার্যকর হইতে পারে- এই সম্পর্কে তিনি আলোচনা করিতে গিয়া বলিয়াছিলেন: আনবিক বিজ্ঞানের একটি অপূর্ব অবদান এই যে, উহা মানব বংশের এক কঠিন সমস্যার সমাধান পেশ করিয়াছেন এবং তাহা হইতেছে দুনিয়ার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ। বৃটেনের আনবি বিজ্ঞানী ডাঃ জন এইচ ফ্রেমলিন (Dr John H. Fremlion) Atomic Scientist News’পত্রিকায় লিখিয়াছেন যে, প্রাচ্য দেশসমূহে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ অপেক্ষা জনসংখ্যার পরিমাণ বেশী। কিন্তু রাশিয়া সহ সমগ্র পাশ্চাত্য দেশে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির গতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি অপেক্ষা অনেক তীব্র। তিনি অনুন্নত দেশসমূহ- বিশেষ করিয়া ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানে- কৃষি ক্ষেত্রে আনবিক শক্তির প্রয়োগের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন।
তিনি আরো বলিয়াছেন, বৃটেন ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশে এ সম্পর্কে এতদূর তথ্য পাওয়া যায় যে, এই সম্যার সমাধান খুবই সহজে করা যাইতে পারে। তাহার মতে শিক্ষিত ও শিল্পায়িত পাক-বাংলা-ভারতে বর্তমান জনসংখ্যার দ্বিগুণ লোকের খাদ্যের ব্যবস্থা করা কিছুমাত্র কঠিন কাজ নহে।
আলবেনিয়অ একটি ক্ষুদ্র দেশ। কিন্তু সেখানেও একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫১-৫৫০) তৈয়ার করা হইয়াছে, যাহার দরুন জাতীয সম্পদ শতকরা একশ’ ভাগ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ১৯৫০ সনে জনসেচের জমির পরিমাণ ছিল ৩৯০০০ হেকটার্স। পাঁচ বৎসরের শেষ ভাগে তাহা হইয়াছে ৮৩০০০ হেকটার্স। ইহাতে খাদ্যশস্যের পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা হইতে সুস্পষ্টরূপে বুঝিতে পারা যায় যে, এইসব ক্ষুদ্র দেশ ও আনবি পক্রিয়ায় খাদ্য পরিমাণ জনসংখ্যা প্রয়োজন অনুপতে বৃদ্ধি করিয়া লইয়াছে এবং তাহা কিছুমাত্র অসম্ভব নহে।
দুনিার বিভিন্ন দেশ খাদ্যশস্য ছাড়াও আরো অনেক প্রকারের খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যের আরো অসংখ্য প্রকারের উপায় উদ্ভাবন করিয়াছে। সুইডেন সম্পর্কে জানা গিয়াছে যে, সেখানে দুইজন বিজ্ঞানী সাধার খরগোশ অপেক্ষা ২ গুণ বড় খরদগোশ উৎপাদন করিতে সমর্থ হইয়াছেন। যেখানে সাধারণ খরগোশের ওজন হয় ৫ পাউন্ড। কিন্তু বিজ্ঞানের সাহায্যে উৎপাদিত খরগোশের ওজর হইতেছে ১২ পাউন্ড পর্যন্ত। এই গবেষণার সাহায্যে মাছ, মোরগ, ছাগল, ও গরু ইত্যাদির ওজর অত্যধিক বৃদ্ধি করা যাইতে পারে এবং তাহা দ্বরা খাদ্য প্রয়োজন অনেকখানি পূরণ হইতে পারে।
বিশ্বের অন্নকষ্ট নিরসনে রসায়নবিদ্যা কতখানি সহায়ক হইয়াছে এবং ভবিষ্যতে ইহা পুষ্টিহীনতা রোধ করিয়া কিভাবে বিশ্বজোড়া মানুষের স্বাস্থোন্নতি ঘটাইতে পারে এবং প্রশ্ন লইয়া ও যথেষ্ট আলোচনা ও গবেষণা হইয়াছ। জার্মানীর বৃহত্তম বিকল্প সামগ্রী উৎপাদনী শিল্পের ডিরেক্টর বোর্ডের অধ্যপক ডঃ বার্নহার্ড টিম বলিয়াছেন, শিল্প রসায়ন ইতিমধ্যেই তিনটি ক্ষেত্রে বিশ্বজোড়া খাদ্য পরিস্থিতির উন্নতি বিধানের সক্ষম হইয়াছে। ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রগুলি রসায়নবিদদের প্রধান কর্মক্ষেত্র হইবে। ক্ষেত্রগুলি হইল, বিকল্প সার, কার্যকর কীটপতংগ নাসক দ্রব্য ও জৈবি প্রোটিন উৎপাদন বিশ্বে বর্তমান মোট সাড়ে ছয় কোটি টন নাইট্রোজেন সার উৎপন্ন হইয়া থাকে। অধ্যাপক বার্নাহার্ডের মতে ২০০০ সালে মানুষের যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হইবে তাহা উৎপাদনের জন্য এই সবই যথেষ্ট। শিল্পোন্নত দেশগুলিতে এখন স্বনির্ভরতার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাইতেছে তাহাতে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় এখন নাইট্রোজেন সারের কারখানা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে। বিশ্বের সব্জি জাতীয় খাদ্যের প্রায় এক চতুর্থাংশই প্রতি বছর নানা রকমের কীটপতংগের আক্রমণে বিনষ্ট হয়। অথচ কীটনাশক দ্রব্য ব্যবহার করিয়া এই অবস্থার উন্নতি করা যাইতে পারে। এবং সব্জি উৎপাদনের হার শতকরা ৩০ ভাগ এমনকি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল ৫০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি কা যাইতে পারে। জৈবিক প্রোটিন সমৃদ্ধ পশুখাদ্যের সাহায্যে পশুবংশ বৃদ্ধিরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা সম্ভব। রাসায়নবিদদের বিশ্বাস, রসায়নিক প্রোটিন সমৃদ্ধ পশু খাদ্যের সাহায্যে বিশ্বের গৃহপালিত পশু দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা যাইতে পারে।
এই সব তথ্যের উল্লেখ আমি এই জন্য করিলাম যে, ইহা দ্বারা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ এই পৃথিবীর বুক হইতে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য কেবল যে নিজের জন্য উৎাদন করিতে পারে তাহই নয়, বরং তাহার প্রয়োজনেও অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করে করা সম্ভব। কোন দেশে যদি খাদ্যের পরিমাণ কম হইয়া থাকে, তবে তাহার অর্থ এই নয় যে, খাদ্যোৎাদনের পরিমাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়া গিয়াছে- আর বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব নয়, অতএব জনসংখ্যার সমস্যা দেখা দিয়াছে; বরং তাহার সুস্পষ্ট অর্থ এই হইতে পারে য, সেখানে প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করা হয় নাই- সে জন্য কার্যকর পন্থা অবলম্বন করা হয় নাই। বস্তুতঃ বিশ্বের যাবতীয় উপায় উপাদান মানুষের খেদমতের জন্যই সৃষ্টি করা হইয়াছে; অতএব প্রকৃতিকে জয় করা এবং তাহাকে নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যবহার করা মানুষের কর্তব্য। আল্লাহর বাণী:
(আরবী)
পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা সবই হে মানুষ- তোমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন।
এর অর্থ ও তাহাই। এই জন্য মানুষ স্বাভাবতই প্রকৃতি জয়ের জন্য আবহমান কাল হইতে চেষ্টা করিয়া আসিতেছে, আর সময় যত তীব্র গীতে মানুষের আয়ত্তে আসিতেছে। এমতাবস্থায় একমাত্র নৈরাশ্যবাদী ও আল্লাহর রিযিকদাতা হওয়া সম্পর্কে অবিশ্বাসী লোকেরাই বলিতে পারেযে, প্রকৃতিকে জয় করা সম্ভব নয়- জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে সেই অনুপাতে খাদ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাইতেছে না। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত। মানুষ ও জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য তো এইখানে যে, প্রকৃতির সম্মুখে অসহায় অবস্থায় আত্মসমর্পণ করার পরিবর্তে প্রকৃতিকেই নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী গড়িয়া লওয়ার শক্তি আল্লাহ ত’আলা মানুষের মধ্যে দিয়াছেন এবং তাহা করাই মানুষের কর্তব্র। আর বর্তমান যুগে বিজ্ঞানই হইতেছে ইহার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই প্রেক্ষিতে সহজেই বলাযায় যে, ম্যাথুসের থিওরী সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া গিয়াছে। এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বা অন্য কোন উপায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধিরোধ না করিয়া জনসংখ্যানুপাতে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সেজন্য আধুনিকতম যাবতীয় পন্থা প্রয়োগের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয় আপনি বলিয়াছেন, জনসংখ্যা ক্রমশঃ বাড়িতেই থাকিবে এবং তাহাতে খাদ্য সমস্যাও দেখা দিবে। আমি আপনার কথার প্রথম অংশ (জনসংখ্যা বাড়িবেই)-স্বীকার করি। কিন্তু উহার দ্বিতীয় অংশ (খাদ্য সমস্যা দেখা দিবে)- মোটেই স্বীকার করি না। কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেমন স্বাভাবিক তেমনি স্বাভাবিক খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধিও। তদুপরি আধুনিক বিজ্ঞানের প্রয়োগে প্রয়োজন অপেক্ষাও অনেক বেশী পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব বলিয়াই আমি বিশ্বাস করি। আমার দৃষ্টিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি আদৌ কোন সমস্যা নহে বরং প্রকৃত সমস্যা হইতেছে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পন্থায় উৎপাদন না করা এবং সুবিচারপূর্ণ ভাবে উহার সুষ্ঠূ বন্টন না করা। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যদি নিত্য নব-পদ্ধতিতে চেষ্টা করা হয় তবে খাদ্যের পরিমাণ কখনিই প্রয়োজনের অপেক্ষা কম হইবে না এবং তাহা যদি সুবিচারপূর্ণভাবে বন্টন করা হয়, তবে পৃথিবীর কোন একটি অংশেও খাদ্য সমস্যা দেখা দিতে পারিবে না। আপনি এজন্য concrete plan চাহিয়াছেন। কিন্তু কাল্পনিক সমস্যাকে ভিত্তি করিয়া কি পরিকল্পনা দেওয়া যাইতে পারে, আমি বুঝিলাম না। যাহা মোটে সমস্যাই নয়, তাহাতেও আপনি বড় কঠিন সমস্যা মনে করিয়া লইয়াছেন, আর যাহা প্রকৃত সমস্যা তাহাকে আপনিমোটই গুরুত্ব দিতেছেন না। আপনি দেখিতেছেন না যে, আল্লাহর বান্দাহদের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাইতেছে, আল্লাহর খাদ্যদানের দুয়ার ও তেমনি নানাভাবে অবারিত হইতেছে। ৫৪ সনের জুলাই মাসের Readers Digest পত্রিকায় Bread from the sea (সামুদ্রিক খাদ্য) শীর্ষক এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধের ভূমিকায় উল্লেখ করা হইয়াছে যে, মুঙ্গা বর্ণর এক উদ্ভিদ জাতীয় দ্রব্য সম্পরক বিজ্ঞানীগণ গভীরভাবে গবেষণা চালাইয়াছেন। সে সম্পর্কে ধারণা এই যে, তাহা মানব জাতির জন্য আনবিক শক্তি অপেক্ষাও অধিকতর মূল্যবান ও কল্যাণকর হইবে। ইহার নাম ALGAE ইহাতে প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় খাদ্যপ্রাণ প্রয়োজন পরিমাণ বর্তমান রহিয়াছে। সমুদ্র, নদী, বিল, ঝর্ণা, এমনকি ধুসর মরুভূমিতে পর্যন্ত খুব বেশী পরিমাণে এবং খুব সহজে ইহার চাষ করিলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অনুযায়ী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ২০৫০ সনের জনসংখ্যা (প্রায় সাত হাজার মিলিয়ন) খাদ্য সমস্যার সমাধান করিয়া দিতে পারিবে। শোনাযায় যে, জাপান, ইসরাঈল, আমেরিকা ও থাইল্যাণ্ডে ইহার চাষ রীতিমত শুরু হইয়া গিয়াছে। থাইল্যান্ডে ‘এ্যালগা’ ও এই ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দ্বারা ই বার্ষিক পাঁ হাজার টন খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা অতীব কৌতুহল উদ্দীপক যে, জনগণের বৈজ্ঞানিক ঊর, Tramiya এর স্ত্রী Hrosti কালিফর্ণিয়ায় এক চা রাটিতে এ্যালগা হইতে প্রস্তুত রুটী শুরবা ও এ্যালগার আইসক্রীম পরিবেশন করেন।
এই আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হইতেও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর এই পৃথিবীতে কত যে খাদ্যদ্রব্য অন্তর্নিহিত হইয়া রহিয়াছে এবং ভবিষ্যতে আরো কত যে আবিষ্কৃত হইবে, তাহার কোনই ইয়াত্তা নাই। এই জন্যইভি. আর উইলিয়ামস নামক জনৈক আধুনিক মৃৎ-বিজ্ঞানী (soil scientit) বলিয়াছেন- “There is no limit to growth of crop yields” তাই আমিও অত্যন্ত জোরালো ভাষায়ই বলিতে চাই: পৃথিবীর বর্তমান খাদ্যের আয়োজন দিয়াই ২২০ কোটির তিন গুণ- ৬৫০ কোটি মানুষের স্বাচ্ছন্দ জীবনযাত্রা চলিতে পারে।
দুনিয়ার মানুষের খাদ্য সমস্যার সমাধান পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে খাদ্য শস্য ধ্বংস করা অভিযান রোধ করিতে হইবে। মানুষ যখন খাদ্যের অবাবে হাহাকার করিতেছে তখন অতিরিক্ত উৎপাদিত গম ধ্বংস করার জন্য কানাডার ফেডারেল সরকার দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় চাষীদের ১০ কোটি ডলার (প্রায় ১২৫ কোটি টাকা) সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। গম ধ্বংস অভিযানকে সাফল্যমন্ডিত করিবার জন্য আলবাটা সাসকাচেওয়ান, ম্যানিটোপ এবং বৃটিশ কলম্বিয়ার ১.৮০.০০ জন চাষীকে এক বৎসর আর্থিক সাহায্য দেওয়া অব্যাহত থাকিবে। যে সমস্ত চাষী গমের জমিকে পতিত হিসাবে ফেলিয়া রাখিবে তাহাদিগকে একর প্রতি ৬ ডলার সাহায্য দেওয়া হইবে বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। আবার যে সমস্ত চাষী গমের জমিতে এক বৎসরের অধিক সবুজ ঘাস জন্মাইবে তাহারা একর প্রতি ১০ ডলার হিসাবে সর্বাধিক ১০,০০০ ডলার সাহায্য পাইবে। মানবধ্বংসকারী এই সব ব্যবস্থা রোধ করা না হইলে বিশ্বের খাদ্যসমস্যা কোনদিনই প্রতিকার করা যাইবে না। বস্তুত বিশ্বে খাদ্যসমস্যা বলিতে কিছুই নাই, সমস্যা হইল সুষ্ঠু উৎপাদন ও বন্টনের মানবিক ব্যবস্থার অভাব। বিশ্বমানবের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য এই সব অমানবিক নীতির প্রতিরোধ করিতে হইবে।
লোকসংখ্যা সমস্যা দেখাইতে গিয়া অনেকে আবার স্থান সংকুলানের প্রশ্নও উত্থাপন করেন। তাহারা বলেন যে, যে হারে লোক বৃদ্দি পাইতেছে তাহাতে পৃথিবীতে এত লোকের স্থান সংকুলান হওয়াও সম্ভব হইবে না। কিন্তু তাহারা ভবিয়া দেখেন না যে, একনো পৃথিবীর বহু অঞ্চল প্রচুর স্থান একেবারে জনশূণ্য অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং নিউজিল্যান্ডে মোটেই স্থানাভাব নাই। বরং সেখান ঘন বসতি কিংবা লোকের স্থান সংকুলন হয় না, সেখান হইতে এই সব শূণ্য এলাকায় লোকদের পুর্বাসন করাহইলে স্থান সংকুলান সমস্যা বলিতে কিছুতেই থাকিতে পারে না। এই সব তথ্য সম্মুখে রাখিয়া চিন্তা করিলে স্বভাবতঃই একটি প্রশ্ন জাগে যে, জনসংখ্যা সমস্যা কি দুনিয়ায় চিরদিনই ছিল? না নব্যযুগের অন্যান্য অসংখ্য প্রকার আবিষ্কারের ন্যায় ইহাও একটি অভিনব আবিষ্কার? আমার মতে, যে ভাবে ইহাকে একটি সমস্যা বলিয়া মনে করা হইতেছে, সেই ভাবে ইহা বর্তমানে নূতন কোন সমস্যা নহে, এ সমস্যা পূর্বকালেও- শত শত, হাজার হাজার বৎসর পূর্বেও ছিল। কিন্তু তখনকার লোকেরা কখনই জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বিপদ বলিয়া মনে করে নাই এবং উহার বৃদ্ধির পথ বন্ধও করে নাই, বরং তাহার জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অনুপাতে খাদ্য সংগ্রহের জন্য পূর্ণ দায়িত্ব সহকারে চেষ্টানুবতী হইয়াছে, মন ও মস্তিষ্ক লাগাইয়া গবেষণা করিয়অছে এবং খাদ্যোৎপাদনের নূতন নূতন পন্থা ও পদ্ধতি আবিষ্কার করিয়াছে। বস্তুত মানব ইতিহাসের ধারাই হইতেছে এইরূপ। খাদ্যাভাব অনুভূত হওয়া, উহা দূর করার জন্য প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্যোৎাদনের ব্যবস্থা করা এবং নূতন রূপে ঐ সমস্যা দেখা দেওয়া, আবার নূতন করিয়া খাদ্যোৎপাদনের জন্য লাগিয়া যাওয়া- প্রকৃতপক্ষে ইহারই নাম হইতেছে মানুষের অর্থনৈতিক চেষ্টা সাধনা। ইহা শেষ হইয়া দেলে মানুসেরও অগ্রগতি রুদ্ধ হইয়া যাইবে।
কিন্তু বর্তমান কালের এক শ্রেণীর অক্ষম রাজনীতিক প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ পাশ্চাত্যের বর্বর জাতিসমূহের অনুকরণে জনসংখ্যা রোধের প্রস্তাব দিতেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের উপদেশ খয়রাত করিতেছে এবং সেজন্য কার্যকর পন্থাও অবলম্বন করিতেছে। আমি মনে করি, মানবতার এইরূপ দুশমনী করার কোন অধিকারই তাহাদের নাই। তাহারা নিজেদের বিলাসিতা, আরাম ও ভোগ –সম্ভোগের ইন্ধন হিসাজে জাতীয় সম্পদের বিরাট অংশ নিঃশেষ করিতেছে, আর বসিয়া বসিয়া জন্মনিয়ন্ত্রণের নছীহত করিতেছে। বস্তুত ইহারা মানবতার দুশমন ছাড়া আর কিছুই নহে।
আমার মতে, দুইটি উপায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যার মুকাবিলা করা যাইতে পারে। প্রথম, আধুনিক পদ্ধতিতে আল্লাহর দেওয়া যাবতীয় উৎপাদন উপায়কে প্রয়োগ করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাহায্যে নূতন নূতন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা। আর দ্বিতীয, সুবিচারপূর্ণ পন্থায় ও সুষ্ঠুভাবে উহার বন্টন করা এবং একটি লোককেও তাহার প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য হইতে বঞিচত না রাখার নীতি গ্রহণ করা।
সুবিচারপূর্ণ ন্টন প্রসংগ সমাজের জনগণের মধ্যে আর্থিক ভারসাম্য স্থাপন- বেশী আয়ের হার কমানো এবং কম আয়ের হার বাড়ানো, অন্যকথায় শ্রেণী-পার্থক্য খতম করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইহার দ্বারাই সমস্যার অর্ধেক সমাধান হইতে পারে। বর্তমানে যাহাদের আয়ের পরিমাণ কম তাহাদের লোকসংখ্যা অধীক বেশী। আার যাহাদের লোক সংখ্যা কম, তাহাদের সম্পদ অনেক বেশী, আয়ের এই তারতম্য কমিয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে আসিবে বর্তমানের শ্রেণী-সংগ্রাম বন্ধ হইবে, অভাব-দারিদ্রের এই লাত ও মর্মান্তিক দৃশ্যও অবসৃত হইবে। প্রাচুর্যের এই পৃথিবীতে সর্বসাধারণ মানুষ মোটামুটিভাবে খাওয়া-পরা-থাকা-শিক্ষা-চিকিৎসা প্রভৃতি যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করার মাধ্যমে সুখে-স্বাচ্ছন্দে বসবাস ও জীবন যাপন করিতে পারিবে- বাঁচিয়া সুখী হইবে।
(আরবী)
ইহাই আমার দৃঢ় বিশ্বস এবং লইয়াই এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাঁচিয়া আছি। আর যতদিন বাঁচিব এই আশা লইয়া বাচিব (২৫-৭-৮৭)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/479/205
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।