hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৪৩
ব্যক্তিগত মালিকানা সীমিতকরণ
পূর্বে যেমন বলা হইয়াছে, ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত মালিকানা চির সম্মানার্হ তাহাতে পরিমাণ বা সংখ্যার কোন সীমা নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হয় নাই। কিন্তু জনস্বার্থের খাতিরে ও জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সে মালিকানাকে কোন সময় নিয়ন্ত্রিত কিংবা সীমিত করিয়া দেওয়ার অধিকার আছে কি?

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারূকের খিলাফতকালে ইরাক, সিরিয়া ও জজীরা মুসলমানদের কর্তৃক বিজিত হইলে এই দেশের কৃষিজমি কি করা হইবে, উহা বিজয়ী মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করা হইবে, কি উহার মালিকদের নিকটেই উহা থাকিতে দেওয়া হইবে, তাহা লইয়অ সাহাবীদের মধ্যে বিশেষ মতভেদ দেয়া দেয়। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের পর তাহাকে উহার পুরাতন মালিকদের নিকটই থাকিতে দেওয়া হইবে বলিয়া সাব্যস্ত হয়্ ফলে জমি সমূহের পুরাতন মালিকরাই উহা ভোগ-দখল করিতে থাকে, নূতন কাহাকেও উহার মালিক হইতে দেওয়া হয় নাই। অবশ্য ‘খারাজ’ (ভূমিকর) ধার্য করা হয়। এই ভূমিকর নির্ধারণ করা হয় এভাবে যে, জমির ফসল ভাগ করিয়া সম্পূর্ণ আলাদা করিয়া রাখা হইত। এই বন্টনে তাহাদের পরিবারবর্গ এবং তাহাদের সারা বছরে যাবতীয় প্রয়োজনের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হইত। এতদ্ব্যতীত বিপদ-আপদে প্রতিরোধের জন্য সঞ্চয় করিয়া রাখার উদ্দেশ্যেও অতিরিক্ত একটা পরিমাণ শস্য তাহাদিগকে দিয়া দেওয়া হইত। অতঃপর যাহা অবশিষ্ট থাকিত, সরকার তাহাই ভূমিকর বাবদ গ্রহণ করিতেন।

হযরত উমর (রা) হুযায়ফা ইবনুল-ইয়ামানকে দজ্‌লা নদীর অপর পাড়ে পাঠাইয়াছিলেন এবং উসমান ইবনে হানীফকে পাঠাইয়াছিলেন অন্য এক অঞ্চলে। তাঁহারা দুইজন তাঁহার নিকট ফিরিয়া আসিলে তিন জিজ্ঞাসা করিলেন:ঢ়

(আরবী)

জমির ব্যাপারে তোমরা কি নীতি অবলম্বন করিয়াছ? সম্ভবত তোমরা কৃষিজীবীদের উপর তাহাদের সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপাইয়া দিয়া তাহাদিগকে খুব বেশী কষ্ট দিয়াছ?

জওয়াবে হুযায়ফা বলিলেন: (আরবী) অতিরিক্ত যাহা ছিল, তাহা সব তাহাদের জন্যই রাখিয়া আসিয়াছি।’ আর উসমান বলিলেন:

(আরবী)

দ্বিগুণ পরিমাণ ফসল তাহাদের জন্য রাখিয়া আসিয়াছি। অবশ্য ইচ্ছা করিলে তাহাও লইয়া আসিতে পারিতাম।

তখন হযরত উমর (রা) বলিলেন:

(আরবী)

সাবধান! তোমাদের কৃষিজীবিদের উপর তাহাদের সামর্থ্যের অধিক কর ভার চাপাইয়া দিও না। আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমি যদি ইরাকের বিধবাদের খেদমতের জন্য জীবিত থাকি, তাহা হইলে তাহাদিগকে এমন অবস্থায় রাখিয়ে যাইব যে, আমার পরে তাহারা কাহারো মুখাপেক্ষী হইতে বাধ্য হইবে না।

ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমর ও অন্যান্য সাহাবী (রা) ইরাক, সিরিয়া, জজীর ও মিসরের বিজিত অঞ্চলের জমিকেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন রাখিয়াছিলেন এবং কোন ব্যক্তিকেই বিজিত অঞ্চলের জমিকেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন রাখিয়াছিলন এবং কোন ব্যক্তিকেই ইহাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি করিয়া লইবার সুযোগ দেন নাই। ইহা এবং পূর্ব অধ্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্ত করা সম্পর্কে যে আলোচনা আমরা করিয়াছি তাহার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা অনায়াসেই বলা যাইতে পারে যে, প্রয়োজন হইলে কৃষি-জমির মালিকানা সীমিত করা সম্পুর্ণ জায়েয। বিশেষ করিয়া বর্তমানকালে বিভিন্ন দেশে যে বিরাট কৃষি-জমির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা রহিয়াছে এবং সেখানে জনস্বার্থ যেভাবে বিপন্ন ও ব্যাহত হইয়া পড়িতেছে, তাহা নানা দিক দিয়াই অত্যন্ত করুণ ও মর্মান্তিক।

সাম্যবাদী ভূমি মালিকানায় এক-একজন লোক বিরাট বিশাল এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি-জমির মালিক হইয়া বসিত। তাহার একার পক্ষে সেই সমস্ত জমির রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, আবাদকরণ ও উহার ফসল সংগ্রহ সংরক্ষণ স্বাভাবিতভাবে খুবই কঠিন ব্যাপার হইয়া দাড়াইত। এখানে যে সব শ্রমিক মজুর কাজ করিত তাহাদের প্রতিও সুবিচার হওয়ার পরিবর্তে জুলুম ও শোষণ হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। এমন কি অনেক জমি অনাবাদী পড়িয়া থাকাও অস্বাভাবিক ছিল না। ইহাতে জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হইতে এবং তাহার ফলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়া নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হইত। এই কারণে উত্তরকালে একজন ব্যক্তি মালিকানায় বিরাট বিশাল অঞ্চলের কৃষি-জমি ছাড়িয়া দেওয়ার পরিবর্তে উহার একটি বিশেষ অংশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মালিকানা হইতে মুক্ত করিয়া তাহা ভূমিহীন চাষীদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়া-ই সমীচীন বিবেচিত হইতে থাকে। ইসলামের ইনসাফগার দৃষ্টিতে এইভাবে ব্যক্তি-মালিকানা সীমিত করিয়া দেওয়া কিছু মাত্র অন্যায় হইতে পারে না।

ইসলামী ফিকাহয় এইরূপ কার্যক্রম গ্রহণকে বলা (আরবী)‘ক্ষতিকর কাজেরপথ বন্ধ করিয়া দেওয়া’। পণ্য মওজুদকারীর অধিক মুনাফা লুণ্ঠনের পথ বন্ধ করা এবং অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করার পথে বাধঅর সৃষ্টি করা সম্পর্কে ইসলামী ফিকাহবিদগণ সম্পূর্ণ রূপে একমত। কেননা এইরূপ করিয়া সমাজ ও জাতির সার্বিক ক্ষতির প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর ইসলামী বিধানের লক্ষেই হইল সার্বিক কল্যাণ। একারণে বলা যায়, মুনাফা সীমিতকরণ ও মালিকানা সীমিতকরণে মূলত কোনই পার্থক্য নাই। আর একটি যখন শরীয়তে জায়েয তখন অপরটি অনিবার্যভাবেই জায়েয হইবে।

অনুরূপভাবে এক ব্যক্তির পক্ষে কিছু জমির অংশের মালিক হওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু সমাজ ও সরকার যখন লক্ষ্য করিবে যে, তাহাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক সম্পত্তির মালিক হইতে দিলে সমাজ ও সমষ্টির পক্ষে ক্ষতি হওয়ার এবং বিপুল সংখ্যক ভূমিহীনদের বেকার ও উপার্জন বঞ্চিত হইয়া থাকা আশংকা রহিয়াছে, তখন তাহার অতিরিক্ত জমি সংগ্রহ চেষ্টার পথে বাধা সৃষ্টি করা কোন প্রকারই জুলুম হইতে পারে না। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এইরূপ বাধা সৃষ্টি করার ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে।

যে অঞ্চলের লোকেরা আঙুর চাষ করিয়া উহা দ্বারা শরাব তৈয়ার করিতে অভ্যস্ত, মালিকী মাযহাবের ফিকাহবিদদের দৃষ্টিতে সেখানে আঙুর চাষ বন্ধ করিয়া দেওয়া কিংবা উহার অবকাশ সীমিতকণের অধিকার সরকারের রহিয়াছে। স্থানান্তরে গমন করার অধিকার প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও হযরত উমর(রা) খলীফাতুল –মুসলিমীন হিসাবে একবার বড় বড় সাহাবীগণকে মদীনা ত্যাগ করিয়া অন্যত্র চলিয়া যাইতে নিষেধ করিয়াছিলেন। ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ইহাও এক প্র্রকারের হস্তক্ষেপ। কিন্তু জাতীয় কল্যাণের দৃষ্টিতে খলীফাতুল-মুসলিমীনকে তাহা সাময়িকভাবে করিত হইয়াছিল। তাই স্থানান্তরে গমনের স্বাধীনতা হরণ, মাত্রাতিরিক্ত সীমিতকরণের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য আছে বলিয়া মনে করা যাইতে পারে কি?

আমাদের প্রতিপাদ্য হইল, সমষ্টির কল্যাণ যখন ব্যক্তি মালিকানা সীমিত করার উপর নির্ভরশীল হইবে তখন- কেবলমাত্র তখনি সেই মালিকানকে হরণ বা নিয়ন্ত্রিত কিংবাসীমিত করা ইসলামী শরীয়াতে জায়েয হইবে। আর অনেক সময় শুধু জায়েযই নয়, একান্ত কর্তব্যও হইতে পারে। ইসলামী বিধানে ইহাদের দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ কিছুমাত্র বিরল নয়। আমানতী তাৎপর্যে ব্যক্তি মালিকানা ইসলামে সাধারণ স্বীকৃত এক সত্য, এ কথা অনস্বীকার্য, কিন্তু এই কথা-ই চূড়ান্ত নয়। এই মালিকানা কখনও শর্তহীন নিরংকুশ নয় এবং কোন অবস্থায়ই তাহার ব্যতিক্রম করা যাইবে না এমন কথঅও নয়। বরং এই ব্যক্তি-মালিকানা সমাজে ও সমষ্টির কল্যাণের শর্তাধীন। সমাজ ও সমষ্টির কল্যাণের জন্য অপরিহার্য হইয়া দেখা দিলেও ব্যক্তি মালিকানা হরণ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাইবে না, কোন মানুষের জন্যই এমন মালিকানা কোন কালেই স্বীকার করা হয় নাই। কেননা ইহা ব্যক্তির নিকট আল্লাহর অর্পিত আমানত মাত্র। তাই আল্লাহ-তা’আলা বিধানেই যখনউহা হরণ বা নিয়ন্ত্রণের দাবি করিবে তখন তাহা অবশ্যই কার্যকর হইবে।

কিন্তু এখানেও মনে রাখিতে হইবে যে, ব্যক্তি-মালিকানা নিয়ন্ত্রণ বা সীমিতকরণের এইসব কাজই কেবলমাত্র সমাজস্বার্থ ও সমষ্টিগত কল্যাণের জন্যই করা সম্ভব। ইসলামে ইহা কোন সাধারণ ও স্থায়ী নীতি বা আদর্শরূপে স্বীকৃত নয়। ইসলামী রাষ্ট্রে এইরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইলে সে জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের নিকট হইতে রায় গ্রহণ করিতে হইবে এবং ইনসাফ মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণও দিতে হইবে। প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে সে জন্য কোনরূপ স্বেচ্ছাচারিতা করার অধিকার দেওয়া যাইতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন