hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের অর্থনীতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

১১
পুঁজিবাদ
পুঁজিবাদ অর্থব্যবস্থার ছয়টি মূলনীতি এখানে উল্লেখ করা যাইতেছে। এ সম্পর্কীয় আলোচনা গোড়াতেই স্মরণরাখিতে হইবে যে, পুঁজিবাদ নিছক একটি অর্থব্যবস্থা মাত্র নয়, বরং একটি জীবন দর্শন- একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

পুঁজিবাদ অর্থনীতির প্রথম ভিত্তি হইতেছে ব্যক্তিগত মালিকানার সীমাহীন অধিকার। ইহাতে কেবল নিত্য নৈমত্তিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি স্বীয় মালিকানায় রাখারই সুযোগ নয়, তাহাতে সকল প্রকার উৎপাদন-উপায় এবং যন্ত্রপাতি ইচ্ছামত ব্যবহার ও প্রয়োগেরও পূর্ণ সুযোগ লাভ করা যায়। ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামত অবলম্বিত যে কোন পন্থা ও উপায়ে অর্থোপার্জন করিতে পারে এবঙ যে-কোন পথে তাহা ব্যয় এবং ব্যবহারও করিতে পারে; যেখানে ইচ্ছা সেখানে কারখানা স্থাপন করিতে পারে এবং যতদূর ইচ্ছা মুনাফাও লুটিতে পারে। শ্রমিক নিয়োগের যেমন সুযোগ রহিয়াছে, তাহাদিগকে শোষণ করিয়া একচ্ছত্রভাবে মুনাফা লুণ্ঠনের পথেও কোন বাধা ও প্রতিবন্ধকতা নাই। ব্যক্তি বা গোটা সমাজ মিলিত হইয়াও কাহাকেও কোন প্রকার কাজ হইতে বিরত রাখিতে পারে না- সে অধিকার কাহারও নাই। [Every person is free to use his property in any manner he likes and he has not to submit to any dictation from any superior in this respect]

মানুষের মধ্যেব্যক্তিগত মালিকানা লাভের জন্মগত ইচ্ছা রহিয়াছে। উহার দাবি সম্পূর্ণ এবং উহার বাস্তব রূপায়নের জন্য ব্যক্তিকে উপার্জন করার এবং উহার ফল এক হাতে সঞ্চিত করিয়া রাখার সুযোগ করিয়া দেওয়া পুঁজিবাদের দ্বিতীয় মূলনীতি। উহার মতে এই সুযোগ না দিলে মানুষ কিছুতেই অর্থোৎপাদনের জন্য উৎসাহী ও অগ্রণী হইবে না।

উহার তৃতীয় মূলনীতি হইতেছে অবাধ প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইহা কেবল বিভিন্ন শ্রেণী ও দলের মধ্যে নয়, এই শ্রেণীর ও একই দলের বিভিন্ন লোকদেরকে মধ্যেও ইহা বর্তমানে কার্যকর রহিয়াছে। মূলত ইহা ‘বাঁচার লড়াই’ (sturggle for existence) নামক দার্শনিক শ্লোগান হইতেই উদ্ভূত। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার মতে প্রতিযোগিতার অবাধ অর্থব্যবস্থায় কেবল সামঞ্জস্যেরই সৃষ্টি করে না, প্রচুর উৎপাদন ও তড়িতোৎপাদনেও ইহাই একমাত্র নিয়ামক। ইহাই মানুষকে বিশ্বরহস্য উৎঘাটন করিয়া অভিনত আবিষ্কার উদ্ভাবনীর কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

মালিক ও শ্রমিকের অদিকারে মৌলিক পার্থক্য করণ এই ব্যবস্থার চতুর্থ মূলনীতি। এই পার্থক্য যথাযথভাবে বর্তমান রাখিয়াও নাকি পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করা যায়। অথচ ইহার ফলে গোটা মানব সমাজ দ্বিধা-বিভক্ত হইয়া পড়ে- একদল উৎপাদন- উপায়ের একচ্ছত্র মালিক হইয়অ পড়ে, আর অপর দল নিতান্তই মেহনতী ও শ্রমবিক্রয়কারী জনতা। প্রথম শ্রেণীর লোক নিজেদের একক দায়িত্বে পণ্যোৎপাদন করে; তাহাতে মুনাফা হইলে তাহা দ্বারা প্রত্যেক নিজ নিজ সিন্ধুকই ভর্তি করে, লোকসান হএল তাহাও একাই নীরবে বরদাশত করে। শ্রমিকদের উপর উহার বিশেষ কিছু প্রভাব প্রবর্তত হয়না। ইহারই ভিত্তিতে পুঁজিদারগণ নিজেদের অমানুষিক ও কঠোরতম কার্যকলাপকেও ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করিতে চেষ্টাকরে। পুঁজিদারদের যুক্তি এই যে, মূলধন বিনিয়োগ, পণ্যোৎপাদন ইত্যাদিতে সকল প্রকার ঝুঁকি ও দায়িত্ব যখন তাহারাই গ্রহণ করে, তখন মুনাফা হইলেও তাহা এককভাবে তাহাদেরই প্রাপ্য এবং শ্রমিকদিগকে শোষণ করাও তাহাদের অবাধ সেোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। বস্তুত শ্রমিক শোষণই পুঁজিবাদ অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার।

পঞ্চম মূলনীতি এই যে, রাষ্ট্র জনগণের অর্থনৈতিক লেনদেন ও আয় উৎপাদনের উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না এবং ব্যক্তিগণের কাজের অবাধ সুযোগ করিয়া দেওয়াই রাষ্ট্র-সরকারের দায়িত্ব। জনগণ যেন শান্তিপূর্ণভাবে অর্থনৈতিক চেষ্টা সাধন করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা এবং জনগণের ব্যক্তিগত মালিকানা অধিকার ও চুক্তিসমূহ (Contracts) কার্যকর করার সুবিধা দেওয়াই রাষ্ট্রের কাজ।

ষষ্ঠ মূলনীতি: সুদ, জুয়া প্রতারণামূলক কাজ-কারবার পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। বিনা সুদে কাহাকেও কিছুদিনের জন্যে ‘এক পয়সা’ দেওয়া পুঁজিবাদীর দৃষ্টিতে চরম নির্বুদ্ধিতা। বরং উহার ‘বিনিময়’ অবশ্যই আদায় করিতে হয় এবং উহার হার পূর্ব হইতেই নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া আবশ্যক। ব্রক্তগত প্রয়োজনে হউক, অভাব-অনটন দূর করার জন্য সাময়িক ঋণ হউক কিংবা অর্থোপার্জনের উপায়-স্বরূপ মূলধন ব্যবহাররে জন্যই হউক, কোন প্রকারেই লেনদেন বিনাসুদে সম্পন্ন করা পুঁজিবাদী সমাজে অসম্ভব।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির উল্লিখিত মূলনীতিসমূহ একটু সূক্ষ্মভাবে যাঁচাই করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, ইহা কখনই সামগ্রিকভাবে মানবসমাজের কল্যাণ সাধন করিতে পারে না। ইহারমধ্যে দুই একটি বিষয় হয়ত এমনও রহিয়াছে যাহা কোন কোন দিক দিয়া মানুষের পক্ষে মঙ্গলজনক হইতে পারে: কিন্তু উহার অধিকাংশই হইতেছে মানবতার পক্ষে মারাত্মক। শুরুতে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে অতিক্রান্ত হওয়ার পরই উহার অভ্যন্তরীণ ত্রুটি ও ধ্বংসকারিতা লোকদের সম্মুকে উজ্জ্বল হইয়া উঠে। তাহারা দেখিতে পায় যে, সমাজে ধনসম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইতেছে সত্য, কিন্তু তাহা মুষ্ঠিমেয় পুঁজিপতির সর্বগ্রাসী হস্তে কুক্ষিগত হইয়া পড়িতেছে আর কোটি কোটিমানুষ নিঃস্ব ও বঞ্চিত হইয়অ পড়িতেছে। উহা ধনীকে আরো ধনী এবং গরীবকে একেবারে পথের ভিখারী করিয়া দিতেছে। সমাজকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া উহার ভিত্তিমূলকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া দিতেছে। একদিকে অসংখ্য পুঁজিদার মাথা উঁচু করিয়া দাড়ায়। অপরদিকে দরিদ্র দুঃখী ও সর্বহারা মানুষের আকাশ-ছোঁয়া পার্থক্র দেখিয়অ পাশ্চাত্র চিন্তাবিদগণও আজ আতঙ্কিত হইয়া উঠিয়াছেন। অধ্যাপক কোলিন ক্লার্ক বলিয়াছেন, বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে সর্বাপেক্ষা কম এবং সর্বপেক্ষা বেশী আয়ের মধ্যে শতকরা বিশলক্ষ গুণ পার্থক্যের সৃষ্টি হইয়অছে। এইরূপ পার্থক্য ও অসামঞ্জস্য এক একটি সমাজে যে কতহ বড় ভাঙ্গন ও বিপর্যয় টানিয়অ আনিতে পার, তাহা দুনিয়ার বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশে ও সমাজে প্রত্যক্ষ রা যাইতে পারে।

পুঁজিবাদী সমাজের আর একটি মৌলিক ত্রুটি হল বাস্তব ক্ষেত্রে ধনিক শ্রেণীই হয় উহার শাসক ও সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তাহারা মিলিতভাবে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নির্ভীকতার সহিত গরীব, দুঃখী কৃষক ও শ্রমিককে শোষণ করে, তাহাদেরই মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া ও রক্ত পানি করিয়া উপার্জিত ধন-সম্পদ নিজেদের ইচ্ছেতম ব্যয় করিয়া বিলাসিতার চরম পরা কাষ্ঠা প্রদর্শন করে; মানুষের বুকের রক্ত লইয়অ উৎসবের হোলী খেলায় মাতিয়া উঠে। শক্তির নেশায় মত্ত হইয়া নিরীহ জনতার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। গোটা দেশের বিপুল অর্থসম্পদ বিন্দু-বিন্দু করিয়া অল্প সংখ্যক লোকের হাতে সঞ্চিত হইয়া পড়ে- কুক্ষিগত হইয়া যায়মুষ্টিয়ে কয়েকজন শোষকের। তখন সমাজের কোটি কোটি মানুষ দাদ্রি ও অভাব-অনটনের গভীর তলদেশে নিমজ্জিত হয়্ জাতিসঙঘের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট হইতে জানা যায়, দুনিয়ার সর্বাধিক বৈষিয়িক ও বাস্তব উৎকর্ষ লাভ হওয়া সত্ত্বেও উহার শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও অধিক অধিবাসী প্রয়োজনানুরূপ খাদ্য, পোশাক, আশ্রয়, চিকিৎসা ও শিক্ষা হইতে বঞ্চিত রহিয়াছে। এই তিক্ত সত্য হইতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, একটি সামস্যপূর্ণ সুখী ও সুসমৃদ্ধ সমাজগঠন করিতে, সাধারণ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ও অধিকার আদায় করিতে এবং মানব-সমাজে পরিপূর্ণ শান্তি ও স্বস্তি স্থাপন করিতে পুঁজিবাদ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ ইয়অছে। পুঁজিবাদভিত্তিক সমাজে উন্নত অর্্যথব্যবস্থার এক বিন্দু আলোকচ্ছটটা কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। বিখ্যাত অরথনীতিবিদ ‘হবসন’ ‘কেরিয়া’ এবং তাহার পর ‘লর্ড কেইন্‌জ’ পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার গভীরতম অধ্যযন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই তত্ত্ব উঘাটিত করিয়াছেন যে, জনগণের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এইরূপ অর্থব্যবস্থার গর্ভ হইতেইজন্মলাভ করে। এইরূপ অর্থব্যবস্থার অনিবার্য এইরূপ অর্থব্যবস্থার গর্ভ হইতেই জন্মলাভ করে। এইরূপ অর্থব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি হইতেতেছ ধন-সম্পদের অসম বন্টন। এই অসম বন্টনই দেশের কোটি কোটি নাগরিকের ক্রয়-ক্ষমতা হরণ করিয়া লয়। ইহার ফলেই সমাজের মধ্যে সর্বধ্বংসী শ্রেণী-সংগ্রামের আগুন জ্বলিয়া উঠে। বর্তমান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুঁজিবাদী দেশ আমেরিকায় সাম্প্রতিককালে এইরূপ পরিস্থিতিরই উদ্ভব হইয়াছে। আমেরিকার পণ্যোৎপাদনের বিপুল পরিমাণের সহিত জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা সামঞ্জস্য রক্ষা করিতে সমর্থ হয় না বলিয়াই তথায় বিপুল পরিমাণ পণ্য অবিক্রিত থাকিয়া যায়। ফলে এক সর্বাত্মক অর্থনৈতি বিপর্যয় সমগ্র দেশকে গ্রাস করিতে উদ্যত হয়। অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকায় বেকার লোকদের সংখ্যা ৭২ লক্ষ পর্যন্ত পৌঁছিবে বলিয়া ‘ফরচুন’ নামক এক মার্কিন পত্রিকা আশংকা প্রকাশ করিয়াছে। আর এহাই হইল পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার অনিবার্য়য পরিণতি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন