hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১১০
ভবিষ্যতের ছবি
সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, এসব দেশের দ্রুত অর্থনেতিক উন্নয়ন বিশেষত প্রবৃদ্ধি ও ন্যায়পরতার লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের পশ্চাতে অনেকগুলো কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করেছে। তবে এ সমস্ত কারণগুলোর সূতিকাগার হিসেবে একমাত্র উদারনীতিবাদকে কৃতিত্ব দেয়া সঠিক হবে না। এখানে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এ সমস্ত দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে যে ন্যায়পরতা অর্জন করতে পেয়েছে, তা ভবিষ্যতেও ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা। কতিপয় কারণে এসব দেশে আয়-ন্যায্যতা ভারসাম্য সম্প্রতি যেভাবে হ্রাস পেয়েছে তাতে নেতিবাচক উত্তরই পাওয়া যায়।

দক্ষিণ কোরিয়া শিল্প খাতে বৃহদায়তন পরিবার পরিচালিত বিশালাকৃতির কোম্পানী বা কনগ্লোমাটে্স এর পথ ধরেছে। সরকারি সহায়তা ও ব্যাংক ব্যবস্থা হতে ঋণের মাধ্যমে কোরিয়ান কনগ্লোমারেটসমূহ উত্তরোত্তর বৃহদাকৃতি ধারণ করেছে। ১৯৮৪ সালের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, জাতীয় আয়ের ৬৪% এবং রপ্তানির ৭০% নিয়ন্ত্রণ করছে বৃহৎ ১০টি কনগ্লোমারেট। কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শ্রমঘন উৎপাদন পদ্ধতি গ্রামীণ এলাকায় নয়, শুধু শহরাঞ্চলেই লভ্য। ফলে গ্রামাঞ্চল হতে শহরাঞ্চলে বিপুল মানুষের অভিবাসন ঘটেছে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ সিউল, পুসান, টায়ীগু এবং ইনচোন নামক চারটি বৃহৎ শহরে ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। ফলে শহর কেন্দ্রগুলোর গৃহায়ন ও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ সুবিধার উপর সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড চাপ। গ্রাম থেকে ছুটে আসা মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহৎ শিল্প পরিবারের উত্থান আয় বৈষম্যকে তীব্রতর করে তুলছে। ১৯৬৫ সালে নিচের দিকের ৪০% মানুষের আয়ের পরিমাণ ছিল জাতীয় আয়ের ১৯.৩%, যা ১৯৮৭ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬.৯% এ। একই সময় ব্যবধানে উপর দিকের ২০% মানুষের আয় ৪১.৮% হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫.৩% এ দাঁড়িয়েছে।

অন্যান্য উন্নয়নশীর দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়-বণ্টন অনেক বেশি ন্যায়পরতাপূর্ণ হলেও শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে কনগ্লোমারেট পদ্ধতিকে বেছে নেয়ার কারণে আয় বৈষম্য, বিলাস ব্যয় এবং শ্রমিক সংঘাতের বীজ রোপিত হয়েছে। ১৯৮১-৮৫ সময়কালে প্রতি বছর ধর্মঘট হয়েছে গড়ে ১০০টি। ১৯৮৬ সালে ধর্মঘটের সংখ্যা ২৭৬টি। ১৯৮৭ সালে ধর্মঘট সীমা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০৮টিতে। এত প্রমাণিত হয়, ভূমি সংস্কার ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ দ্বারা অর্জিত আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতার মাধ্যমে যে সুষম শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, তা শহরাঞ্চলে আগত শ্রমিকদের দুর্দশা ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের দ্বারা ভগ্নদশা লাভ করেছে। “সামাজিক সম্পর্কের উপর প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, তার দিকে লক্ষ্য না করে কোরিয়া তিন দশক যাবত কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথেই ধাবিত হয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গির এখন পরিবর্তন ঘটেছে”। পারভেজ হাসান যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘পশ্চাৎপদ গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহরাঞ্চলের দিকে মানুষের অত্যধিক অভিবাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা গ্রামীণ ও নগর উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

জাপানের ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত করলেও ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের একটি ধারা দেখতে পাওয়া যায়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাইবাৎসু নামধারী বৃহৎ শিল্প পরিবারগুলোর বিলুপ্ত ও ভুমি সংস্কার সমাজে অর্থনৈতিক শক্তিকে যেভাবে সুষমভাবে বণ্টন করে দিয়েছিল, তাতে মুষ্টিমেয় পরিবারের পক্ষে আর দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করা সম্ভব হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির অসংখ্য শিল্প ইউনিট গড়ে উঠল এবং তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সৃষ্টি হলো। উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাপানের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে ওঠা সম্ভব হলো। কিন্তু চল্লিশ দশকের শেষের দিকে Elimination of Excessive Concentration of Economic Power Law- এর কার্যকারিতা প্রায় লোপ পায় এবং পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এ আইন বাতিল করা হয়। ফলশ্রুতিতে মিতসুবিসি, মিতসুই, সুমিতোমা নামে প্রাক্তন জাইবাৎসু পরিবারগুলোর পূর্বতন অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে পুরাবির্ভাব ঘটে। যদিও এ কোম্পানীগুলোর গঠন প্রণালী জাইবাৎসু সময়কাল হতে ভিন্ন; তবু তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করছে। ক্রমবর্ধমান শক্তি সঞ্চয়কারী জাইবাৎসু ব্যাংকসমূহ এ কোম্পানীগুলোর ধাত্রী হিসেবে কাজ করল। অর্থনীতির উপর এদের ব্যাপক প্রভাব ভবিষ্যতে দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত থাকবে। জাপানে ক্ষদ্র ব্যবসা বাণিজ্যের বিপুল প্রসার ঘটলেও মোট বিক্রয়ে তাদের হিস্যা কমে এসেছে। এসব ব্যবসা-ফার্মের অধিকাংশের নিজস্ব মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নেই। ব্যাংকিং ব্যবসা ছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ী ফার্মের আনুকূল্যের বর্তমান বর্তমান ব্যবস্থাপনা কিছু হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ ঘটাচ্ছে। সম্পদের কুক্ষিগতকরণ জাইবাৎসু সময়ের সমমাত্রার না হলেও এর প্রবণতা সেদিকেই যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বড় বড় বিত্তশালীদের অবলুপ্তির মাত্র চার দশকের মধ্যে বর্তমানে বিশ্বের প্রথম দশজন ধনী ব্যক্তির মধ্যে ছয় জন জাপানের। এ রকম বিশাল ধনশালী ব্যক্তিদের পক্ষে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ফেলাই স্বাভাবিক। জাপানে ‘এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড এ্যাক্ট’ সামন্ততন্ত্রের পুনরুজ্জীবনকে এবং ‘লার্জ স্কেল রিটেইল স্টোর ল’ খুচরা ব্যবসা সেক্টরে বৃহৎ বাণিজ্য সংস্থার অনুপ্রবেশকে রুদ্ধ করেছিল। জাপানের চলমান উদারনীতিকরণ নীতির ফলে, বিশেষত যদি উপযুক্ত এ্যাক্ট দু’টি বাতিল বা তাদের কার্যকারিতা হ্রাস করা হয় তবে, সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ আরো বৃদ্ধি পাবে।

এসব দেশের সঞ্চয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এখন শেয়ার বাজার ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ার ও জমির মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ বাড়ছে। ১৯৫০ সালে ‘নিক্কেই ইনডেক্স’ ছিল ১০২, যা বেড়ে ১৯৬০ সালে। ১,১১৭; ১৯৭০ সালে ২,১৯৩; ১৯৮০ সালে ৬,৮৭০ এবং ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে ধ্বসের পূর্বে ২৬,৬৪৬। অন্যান্য বড় ষ্টক মার্কেটের তুলনায় জাপানে অবশ্যই দ্রুত বাজার দর ফিরে আসে এবং ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সালে ইনডেক্স ৩৮,৯১৬ তে এসে দাঁড়ায়। জাপানে প্রতি চার বছর অন্তর শেয়ার দর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ হার ১৯৭০ সালে ছিল ১০.৭, যা বেড়ে ১৯৮০ সালে হয়েছে ১৯.১ এবং ১৯৮৮ সালে ৬১.৪। জুলাই ১৯৮৯ সালে এ হার মূলত সুদের হার বৃদ্ধির জন্য ৫০.৪ এ নেমে আসে। জুলাই, ১৯৮৯-এ কতিপয় বৃহৎ দেশের স্টকের তুলনামূলক মূল্য ও আয়ের হার ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.৩; যুক্তরাজ্যে ১১.৭; পশ্চিম জার্মানীতে ১৫.৭ এবং ফ্রান্সে ১২.৪। জাপানী স্টকের মূল্য ও আয়ের অতি উচ্চহারের মধ্যে সংকটের বীজ লুকায়িত আছে, যা যে কোনো সময়, শুধু জাপানী অর্থনীতিতে নয় বরং বিশ্ব মুদ্রাবাজার ব্যবস্থায় অশনি সংকেত ডেকে আনতে পারে।

জাপানে জমির মূল্য তীব্রভাবে বেড়েছে। ছয়টি বড় শহরে বাণিজ্য, বসতি বা শিল্প স্থাপনে ব্যবহারের জন্য জমির গড় দাম প্রতি চার বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প, বাণিজ্য বা বসতবাড়ি সম্পত্তি জাপানে এত বেশি ব্যয়সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগালের বাইরে চলে গেছে। একদিন তাদের বসতবাড়ি বা ব্যবসা বাণিজ্য হবে, সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। অফিস ও জায়গাজমির উর্ধমূল্যের দরুণ দ্রব্যসামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের প্রকৃত আয় হ্র্রাস পেয়েছে। জাপান বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ। প্রকৃত প্রস্তাবে ইয়েনের অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতা তার বৈদেশিক বিনিময় হারের চেয়ে কম।

শেয়ার ও সম্পত্তির ফটকাবাজার তাতে থেমে নেই। যাদের অতিরিক্ত জামানত দেবার সামর্থ্য আছে, তারা ব্যাংক হতে ফটকাবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রচুর ঋণ পাচ্ছে। এ ফটকাবাজার বিস্ফোরণ সম্পদের বৈষম্য বাড়িয়ে আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। এখানকার নব্য ধনীদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ধরনের। তারা ভোগবিলাসে অজস্র খরচ করে সামাজিক বৈষম্যকে আরো দৃশ্যমান ও তীক্ষ্ম করার মাধ্যমে সামাজিক সেই সংযোগ সূত্রকে শিথিল করে দেয়, যা সামাজিক সংহতিকে জোরদার করে রেখেছিল। একই ফটকাবাজার বিস্ফোরণ দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানেও আর্থ-সামাজিক ন্যায়পরতার উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে।

তাই দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এসব দেশ ন্যায়পরতার সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হলেও পুঁজিবাদী অর্থ কাঠামোর মধ্যে থেকে আর্থ-সামাজিক ইনসাফকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব হলেও সমগ্র অর্থনীতিকে ন্যায়পরতার লক্ষ্যে পুনর্গঠন না করা হলে আয় ও সম্পদ বৈষম্য আবার সমাজে জেগে উঠবেই। অর্থনীতির বিশেষ করে অর্থব্যবস্থার এরূপ পুনর্গঠন কিভাবে করা যায় তা পরবর্তী ৮-১০ অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন