hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৩৮
অপূর্ণ পূর্বশর্তসমূহ
পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণমুখী করার জন্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাঠামোতে যে কতগুলো পূর্বশর্তের আবশ্যকীয় প্রয়োজন তা পূরণ হয়নি। উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ক্রমাগতই হ্রাস পেয়েছে। সাধারণভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত কোনো মূল্যবোধ সমাজে ঠাঁই করে নিতে পারেনি। নৈতিক মূল্যবোধের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য এক সময়ে সরকারি নিয়মনীতির উপর খুব জোর দেয়া হত। কিন্তু সরকারি নিয়মনীতির কড়াকড়িও বর্তমানে ক্রমাগতভাবে শিথিল হবার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ‘ঊনিশ শতকের বৃটেনে বাজার সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ছিল প্রধানতম বিষয়। বর্তমানে বৃটেনে নয়, বরং সারা পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়ে চলেছে’।

গত এক শতাব্দী যাবৎ পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান বেশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কতিপয় বৃহৎ উৎপাদন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত প্রাধান্য। বর্তমানে পুঁজিবাদী বিশ্বে এডাম স্মিথ কল্পিত একটি দ্রব্যের উৎপাদনকারী অসংখ্য ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। কোনো দ্রব্যের উৎপাদনে এরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে কতিপয় বিশাল আকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠান এই মুষ্টিমেয় শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত পণ্যটির দাম, উৎপাদনের পরিমাণ এবং ভবিষ্যতে কী পরিমাণে বিনিয়োগ করা হবে- এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের কতিপয় বিশালাকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠান বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সব প্রভূত ক্ষমতাশালী কোম্পানীগুলো শিল্প উৎপাদন, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, পরিবহন ও যোগাযোগ, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থাসহ বাজার অর্থনীতির বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কৃষি ক্ষেত্রেও কৃষি খামারগুলো একত্রীকরণের মাধ্যমে বিশাল বিশাল কৃষি ফার্ম গড়ে উঠেছে। এ সম্পর্কে নর্ম হোয়াইট বলেন, ”বৃহৎ কৃষি খামারের প্রতি সরকারি নীতির পক্ষপাতিত্বের ফলে বিশালাকৃতির করপোরেশনসমূহ জন্ম লাভ করেছে। এরা খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশ্যম্ভাবীভাবে কৃষিখাতের এ ধরনের বিশাল ফার্মের উত্থানে সুদূরপ্রসারী ফলাফল রয়েছে।

প্রথমত, অপরিমেয় অর্থ ও ধন-সম্পদের বদৌলতে এসব বিশাল বিশাল কর্পোরেশনসমূহ এসব দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভূত ক্ষমতা ও প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি করে। সরকার ও জনগণ উভয়ের উপরই এসব কর্পোরেশনের কার্যকলাপের প্রভাব রয়েছে। ব্যবসায়ী ফার্মগুলোর মাত্র ১০% হওয়া সত্ত্বেও বৃহদাকৃতির এই মুষ্টিমেয় কর্পোরেশনসমূহ যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি বাকি ৯০% ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপও বিভিন্নভাবে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়। পুঁজি, উৎপাদন, বিনিয়োগ, নতুন পণ্য, ভোক্তার প্রতিক্রিয়া অথবা কর্মসংস্থান সর্বক্ষেত্রেই এ সকল বৃহৎ কর্পোরেশন মার্কিন অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ করে। অনধিক ২০০ টি এ ধরনের কর্পোরেশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিশাল অংশ দখল করে রেখেছে। কর্পোরেশনগুলো তাদের নজিরবিহীন ও সীমাহীন অর্থনৈতিক শক্তির সাহয্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ জীবনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে অপ্রতিহত প্রভাবের ছাপ রেখে চলছে। অনেক সময় নিজেদের স্বার্থের তাগিদে জনসাধারণের স্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহণে কর্পোরেশনসমূহ সরকারকে বাধ্য করে।

অধিকন্তু দানব আকৃতির এইসব কর্পোরেশনগুলো কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নয়। মুষ্টিমেয় পরিবার এইসব কর্পোরেশনের সিংহভাগ স্টকের মালিক এবং ঐ কতিপয় পরিবারের হাতেই কর্পোরেশনগুলোর নীতি নির্ধারনের চূড়ান্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে আছে। ১৯৬০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করদাতাদের মধ্যে মাত্র ১% লোক শেয়ার স্টকের ৪৮% দখল করে আছে। তাই ‘শেয়ার হোল্ডারদের গনতন্ত্র’ নামক শব্দটি একটি ফাঁকা বুলি মাত্র, বিশেষত যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডাররা বোর্ড মিটিংয়েই অংশ গ্রহণ করে না। ‘ফরচুন’ পত্রিকার তালিকাভুক্ত ৫০০ টি শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৫০টির প্রকৃত নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষমতা এক ব্যক্তি বা একটি পরিবারের সদস্যদের হাতে কেন্দ্রীভূত। তাই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অর্থনীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাতসমূহ কতিপয় ধনাঢ্য অভিজাত শ্রেনীর হাতে সার্বিকভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। বিশাল ক্ষমতা তাদের পণ্য সামগ্রী, মূল্য, বিনিয়োগ প্রভৃতি মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার একচেটিয়া আনুকূল্য প্রদান করেছে যা শুধু সমগ্র জাতিকে নয় বরং সারা বিশ্বকেই প্রভাবিত করছে।

দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেণী, কৃষক, ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্পজীবীরা ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের স্বাধীনতা ও দরকষাকষির ক্ষমতা হারিয়ে বসেছে। গত দুই শতাব্দীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি ও বেতনভোগী শ্রেণীর সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৭৮০ সালে এর সংখ্যা ছিল ২০%, যা ১৯৭০ সালে ৮৪% এ এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অথবা ম্যানেজার বা অফিসার শ্রেণীর লোকের সংখ্যা এই দুই শতাব্দীকালে ৮০% হতে ২০% এ নেমে এসেছে। স্বল্পমেয়াদী তারতম্য বাদ দিলে দেখা যায় দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা হচ্ছে বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে। দানবাকৃতির কর্পোরেশনসমূহের প্রদান কার্যনির্বাহী এবং পরিচালকগণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করছে। এর ফলে সমাজে সম্পদ ও ক্ষমতা আরো বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। কার্ল মার্কসের ভাষায় বলা যায়,’মজুরি-দাসত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে’।

তৃতীয়ত, বাজার অর্থনীতিতে যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার কথা বলা হয় বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো তা সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে সক্ষম। তারা একসাথে গাঁটছড়া বেঁধে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য মূল্যের পরিবর্তে যোগসাজসে একই ধরনের পণ্য মূল্য বাজারে বেঁধে দেয়।

চতুর্থত, বৃহৎ শিল্প বা ব্যবসা প্রতিয়ানগুলোর বিশাল আকৃতির মুখে নতুন কোনো ফার্ম বাজারে প্রবেশের উৎসাহ পায় না। বাজারে প্রবেশের জন্য প্রচুর সম্পদের প্রয়োজন এবং নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ঝুঁকি নিতে সাহস পায় না। কেবলমাত্র প্রচুর বিত্তশালী কোনো ব্যক্তি যার জন্য ব্যাংক ঋণও খোলা রয়েছে, এ ধরনের বাজারে নতুনভাবে প্রবেশের জন্য উদ্যোগী হতে পারে।

পঞ্চমত, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভাগাভাগি হয়ে গেছে। অধিকাংশ বৃহৎ কর্পোরেশনে স্টকহোল্ডারদের পরিবর্তে পেশাজীবী ব্যবস্থাপকগণ সার্বিক দেখাশোনার কাজটি করেন। যদিও তাত্ত্বিকভাবে এসব পেশাজীবী ব্যবস্থাপকগণ শেয়ারহোল্ডারদের বেতনভুক্ত কর্মচারী মাত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরাই প্রকৃত ক্ষমতা বিস্তার করে। শেয়ারহোল্ডারদের শুধু বছর শেষে বার্ষিক সভায় রিপোর্ট শোনার মধ্যে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এসব পেশাজীবী ম্যানেজারদের অধিকাংশই উঠে এসেছেন সমাজের উঁচু স্তর হতে। এন্ড্র হেকার এ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, ‘ইউরোপের বৃহৎ কর্পোরেশনসমূহে গণতান্ত্রিক সামাজিক পরিবেশ বিরাজ করে না। বরং এটাই লক্ষণীয় যে, সমাজের অভিজাত উঁচু শ্রেণী হতে কর্পোরেশনের ব্যব্স্থাপক শ্রেণীকে বাছাই করে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পদ ও সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্কিত বৃহৎ কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপকের পদ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এসব হচ্ছে ক্ষমতার করিডোরে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রবেশপত্র স্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রে একই অবস্থার উল্লেখ করে ‘মিল’ বলেন, কর্পোরেশনগুলো হচ্ছে সম্পদের উৎস এবং ক্ষমতা ও সম্পদ অব্যাহত রাখার জন্য একই সাথে ভিত্তি। যেসব ব্যক্তি ও পরিবারবর্গের প্রভূত সম্পদ রয়েছে, দেখা যায় তারাই এসব কর্পোরেশনের হর্তাকর্তা বিধাতা।

কর্পোরেশনসমূহের আয়তন বৃদ্ধি বিশাল কনগ্লোমারেটে পরিণত হবার পশ্চাতে দৃশ্যত দ্ক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য কাজ করেছে। কিন্তু অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে দ্ক্ষ প্রতিষ্ঠান হবার জন্য এর আয়তন আরো সীমিত হওয়া প্রয়োজন। অধিকাংশ বৃহৎ কর্পোরেশনের কাঠামো হচ্ছে এরূপ, যেন কতগুলো আধা-স্বায়ত্বশাসিত কোম্পানীগুলোর যদি আলাদা স্বাধীন অস্তিত্ব থাকত তবে তারা অধিকতর দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারত। বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ বা বন্ধন পদ্ধতি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংকসমূহের ট্রাস্ট কার্যক্রম ট্রেড এসোসিয়েশন, প্রাইস-লিডারশিপের পদ্ধতি এবং সর্বোপরি উৎপাদক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অশুভ যোগসাজশ অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনকে আরো প্রসারিত করেছে। মুনাফা যদি দ্ক্ষতার পরিমাপক হয় তবে গবেষণা হতে দেখা গেছে যে, অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের লাভের হার যে শিল্পে মুষ্ঠিমেয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কর্তৃত্ব করছে তাদের চেয়ে কম নয়। সুতরাং, দেখা যায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বৃহদায়তনই দক্ষতা নিশ্চিত করে না।

কর্পোরেশন ও কোম্পানীসমূহের বৃহদাকৃহতি লাভের পশ্চাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। প্রতিযোগী ফার্মসমূহ ক্রয় এবং ফার্মসমূহের উল্লম্ব ও আনুভুমিক একত্রীকরণে বৃহৎ কর্পোরেশনের উৎসাহকে উদ্দীপিত করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সস্তা দরে ঋণ দান করে। ব্যাংক হতে এ অর্থের যোগান না হলে এ ধরনের একচেটিয়া অবস্থা সৃষ্টি করা দুঃসাধ্য ছিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বদলে কতিপয় বৃহৎ কোম্পানীকে ঋণদান করাকে পছন্দ করে। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে কৃষিখাতেও বৃহৎ খামারগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, কৃষিখামারের সংখ্যা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ অবস্থার জন্য পক্ষপাতমূলক ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থাই দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১৯% বৃহৎ কৃষিখামার কৃষিখাতে প্রদত্ত ঋণের ৬০% দখল করে আছে, যার পরিমাণ ব্রাজিল ও মেক্সিকোর যৌথ বৈদেশিক ঋণের সমান। কর্পোরেশনসমূহের সম্প্রসারণের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্পোরেশনগুলো তাদের লভ্যাংশের মাত্র অর্ধেক স্টকহোল্ডারদের প্রদান করে, বাকি অংশ নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সম্প্রসারণে ব্যয় করে। লভ্যাংশকে নতুন সম্প্রসারণে বিনিয়োগ স্বীকৃত পন্থা বলা হলেও এটা যেভাবে করা হয় তা যথাযথ নয়। শেয়ারহোল্ডারগণ কীভাবে এবং কোন খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ চায় সে বিষয়ে কোনো মতামত গ্রহণ না করেই বিনিয়োগ খাতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদি বোর্ড মিটিং এর বাইরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মতামত নেয়া হতো, তবে এ ব্যবস্থাকে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক বলা হতো এবং এতে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সীমিত অর্থনৈতিক সম্পদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত হতো।

কর্পোরেশনের সম্প্রসারণ বেকারত্ব সমস্যাকেও তীব্রতর করেছে। এর কারণ হচ্ছে কর্পোরেশনসমূহ শ্রমনিবিড় উৎপাদন প্রক্রিয়ার বদলে পুঁজিনিবিড় ব্যবস্থঅর প্রতি অধিক পক্ষপাতী। ব্যাংক ঋণের অবারিত ছাড় সে উৎসাহে আরো ইন্ধন যোগায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাংকের সুদের হার কম রাখার প্রয়োজনীয়তা, পরবর্তী দুই বছর পাবলিক সেক্টরে ঋণের সুদ পরিশোধের ভার লাঘব করা এবং যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা প্রভৃতি প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র কর্পোরেট সম্প্রসারণকেই উৎসাহিত করা হয়নি, বরং পুঁজি নির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়াকেও অধিকতর পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয়। প্রাথমিকভাবে এসব পদক্ষেপের ফলে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেলেও বেকারত্ব সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে।

উৎপাদন উপকরণসমূহের ব্যক্তি মালিকানা ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা সীমিত অর্থনৈতিক সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা নিশ্চিত করে- এ বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবে সঠিক বলে মনে হয়। কিস্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থা শুধুমাত্র জন্ম দিয়েছে অপ্রয়োজনীয় দানবাকৃতির কনগ্লোমারেট কোম্পানীসমূহ, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ও অপরিসীম বেকারত্ব। এর ফলাফল সম্পর্কে বার্লি চমৎকারভাবে বলেন, ‘পুঁজি রয়েছে, তাই রয়েছে পুঁজিবাদ। মধ্যখানে মার খাচ্ছে ঝুঁকি গ্রহণকারী উদ্যোক্ত শ্রেণী’। তাই দেখা যায়, পুঁজিবাদের দু’টি শক্তিশালী স্তম্ভ তথা ভোক্তাশ্রেণীর সার্বভৌম চূড়ান্ত ক্ষমতা ও উদ্যোক্তা শ্রেণীর সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতা উভয়ের ভিত নড়ে গেছে। ব্যক্তি ভোক্তা ও ব্যক্তি উদ্যোক্তা উভয়ই উৎপাদন সংগঠনের বিশাল শক্তিশালী চাকার কাছে হার মেনে আনুগত্য করছে।

কিন্তু এ ধরনের অবস্থার উদ্ভব বাহির থেকে হয়নি, বরং পুঁজিবাদী কাঠামোর ভিতর থেকে জন্ম নিয়েছে। নৈতিক মূল্যবোধহীন পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি, সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থাও এ অপব্যবস্থা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থাসমূহের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাসমূহও তেমন কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। বরং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণের বদলে এসব সংস্থা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিধিবদ্ধ আইনকানুনসমূহ প্রণীত হয় কর্পোরেশনসমূহের স্বার্থরক্ষার জন্য। প্রকৃতপক্ষে, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মহল কর্তৃকই এসব আইনকানুনের খসড়া প্রণীত হয়। গলব্রেথ তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘আধুনিক অর্থনীতিতে বড় বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের হাতে ক্ষমতা জিম্মি হয়ে আছে। তথাকথিত সার্বভৌম ভোক্তাশ্রেণী ও সাধারণ জনগণের অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। কর্পোরেশনসমূহের অর্থনীতির উপর সুদৃঢ় কায়েমী-স্বার্থ হ্রাস করার অন্যতম উপায় হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের গণতন্ত্রায়ন। কর্পোরেশন গণতন্ত্রায়নের উপায়সমূহ হতে পারে-এদের আকৃতি কমিয়ে ‘অপটিমাম’ পর্যায়ে নিয়ে আসা, একই পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো, কর্পোরেশনের পুঁজির পরিমাণের মধ্যে ইকুইটির অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়া এবং জনগণের মাঝে শেয়ারের মালিকানা ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু অর্থব্যবস্থার আমূল সংস্কার ব্যতীত এ ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করা যায় না। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাতারাতি প্রতিযোগী ফার্ম কিনে ফেলা, বাজারে প্রচুর বন্ড ইস্যু করা, সর্বোপরি বিশাল উৎপাদন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যাংকসমূহের পক্ষপাত ইতিবাচক পরিবর্তনের বদলে বিপরীতমুখী স্রোতকেই জোরদার করে তুলেছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন