hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১১৫
খিলাফত
মানবসত্তা পৃথিবীতে তার খলিফা বা প্রতিনিধি (কোরআন-২:৩০, ৬:১৬৫, ৩৫:৩৯, ৩৮:২৮ ও ৫৭:৭০) এবং তার উপর অর্জিত দায়িত্ব যাতে কার্যকরভাবে পালন করতে পারে, সেজন্য তাকে সব ধরনের আধ্যাত্মিক, মানসিক ও বস্তুগত সম্পদে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা হয়েছে। খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালনে ইচ্ছা করলে সে স্বাধীনভাবে চিন্তভাবনা করে ভুল বা সঠিক এবং ন্যায় বা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা মানুষের জীবনের অবস্থা, তার সমাজ বা ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দিতে পারে। প্রকৃতিগতভাবে সে ভালো হওয়ার সে সুখি ও পরিতৃপ্তবোধ করে, যতক্ষণ সে অনড় থাকে অথবা তার অন্তর্গত প্রকৃতির আরো সান্নিধ্যে পৌঁছায়; আর অসুখি ও দুর্দশাগ্রস্ত অনুভব করে, যখন সে এ থেকে বিচ্যুত হয়।

আল্লাহতায়ালা এ বিশ্বকে যে সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন তা সীমাহীন। দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে ব্যবহার করলে সকলের কল্যাণের প্রয়োজন মিটানোর জন্য তা যথেষ্ট। এসব সম্পদ কিভাবে ব্যবহৃত হবে একজন মানুষ তা নিজেই নির্ধারণ করতে পারে। তবে যেহেতু সেই একমাত্র খলিফা নয় এবং কোটি কোটি মানব সন্তান যারা তারই মতো খলিফা এবং তার ভাইও তার সমান, সেহেতু তার সত্যিকারের পরীক্ষা সকল মানুষের কল্যাণে (ফালাহ) আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদের দক্ষ ও সমতাভিত্তিক ব্যবহারের মধ্যেই নিহিত। এটা করা সম্ভব তখনই, যখন তা করা হয় দায়িত্ববোধ ও মাকাসিদ এবং আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞার আলোকে।

তাওহীদ ও খিলাফতের ধারণা সহজাতভাবে অন্যসব ধারণা যেমন: ‘জন্মগত ভাবে পাপী’ বা ‘ইতিহাসে দাবার ঘুঁটি’, ‘জন্মকালে অলিখিত ফলক’ অথবা ‘মুক্ত থাকার জন্যই জন্ম’-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। করুণাময় মহান আল্লাহ কেন ‘জন্মগতভাবে পাপী’কে সৃষ্টি করবেন এবং নিজের কোনো দোষ না থাকলেও কেন তাকে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত করবেন? কান্ট যথার্থই উল্লেখ করেছেন, ‘মানব ইতিহাসে নৈতিক দুর্বৃত্তি ও তার অবিরাম বিস্তার লাভ সম্পর্কে এটি সবচেয়ে বাজে ধারণা যে, তা উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের আদি পিতা-মাতার নিকট থেকে এসেছে’। মূল ‘পাপের ধারণা’ থেকে অর্থ দাঁড়ায় এটা যে, পাপ-পুণ্য প্রজনন প্রক্রিয়ায় হস্তান্তরযোগ্য এবং প্রত্যেক মানুষ অন্যের ব্যর্থতা এবং পাপের প্রভাবেই দুনিয়াতে আগমন করে। উপরন্তু, যে ‘মূল পাপ’ সে নিজে নিজে করেনি, সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য কোনো ‘ত্রাণকর্তা’র যদি আসতেই হয় তবে পৃথিবীতে প্রথম মানব সন্তানের আগমনের সাথে সাথে না এসে কেন সে এত দেরিতে আসবে? মানুষ যদি জন্মগতভাবে পাপী হয় তাহলে কিভাবে তার কৃতকর্মের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে? ‘মূল পাপ’ এর ধারণাটি এভাবেই পবিত্র কোরআনে দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্মফলের উপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তার সঙ্গে প্রবলভাবে সাংঘর্ষিক (উদাহরণ-৬:১৬৪, ১৭:১৫, ৩৫:১৮; ৩৯:৭ ও ৫৩:৩৮)। লুইস যথার্থভাবেই উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের ধারণা ‘দায়িত্ববোধকে অস্বীকার করে বিরাট ক্ষতি করতে পারে’। ‘মূল পাপ’ এর ধারণাটি একজন মুলমান প্রায়শ যে মহান দয়ালু ও করুণাময় (আর-রাহমান ও আর-রহীম) আল্লাহর নাম জপ করে, তার গুণাবলীর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এটা মানুষের বুদ্ধির অগম্য যে, এমন একজন দয়ালূ প্রভু কেন তাদের প্রথম পিতামাতার পাপ সমগ্র মানবজাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। তিনি করুণাময় ও ক্ষমাশীল এবং যা কিছু ভালো গুণের কল্পনা করা যায় তার সবই তার মধ্যে আছে। সুতরাং, এ ধরনের কাজ করা তার জন্যে অসম্ভব (কোরআন-৭:১৮০)। আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, প্রায় সকল আধুনিক দার্শনিকদের মতো উনবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী ও রোমান্টিক ব্যক্তিবর্গ মানব প্রকৃতির সহজাত দুর্বলতার মূলপাপের ধারণাটি পরিত্যাগ করেছিলেন।

অনুরূপভাবে পারিপার্শ্বিক শক্তিকে প্রভাবিত করে নিজ ভাগ্য নির্ধারণে সক্ষম একটি স্বকীয় অমর আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকারকারী পশ্চিমা তত্ত্বসমূহের ‘বন্ধকী’ ও ‘জন্মলগ্নে অলিখিত ফলক’ ধারণাসমূহ মানবসত্তাকে তুচ্ছতায় পরিগণিত করেছে। এসব তত্ত্বের মর্মকথা হলো, মানুষের মন একটি চিহ্নহীন স্লেটের মতো, যার উপর বহিস্থঃ কার্যকরণগুলো পছন্দ মাফিক ছাপ রেখে যায়। এ মত অনুযায়ী মানবসত্তা অসহায় ও অসাড়; বেঁচে থাকার জন্য তাদের জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই। তাদের জীবন ইতিহাস জড় শক্তি দ্বারা নির্ধারিত অথবা মনস্তাত্ত্বিক (ফ্রয়েড), প্রবৃত্তিজাত (লরেঞ্জ), এবং পরিবেশগত (প্যারলভ, ওয়াটসন, স্কিননার ও অন্যান্য) প্রভাব দ্বারা নিয়োজিত। স্কিননারের সুরে সুর মিলিয়ে এ দৃষ্টিভঙ্গি এ সাক্ষ্যই দেয় যে, ‘একক স্বাধীনতা সাধন হতে পারে না। নিয়তিবাদ মানুষের মর্যাদাকে শুধু অবনমিতই করে না, তা বিরাজমান পরিস্থিতি এবং সম্পদের অন্যায্য ও অদক্ষ বিতরণের জন্য মানুষের দায়িত্বশীলতাকেও অস্বীকার করে।

নিয়তিবাদ বলে, আত্মিক শক্তিসমূহ, সামাজিক কাঠামো এবং জীবনের বস্তুগত অবস্থানের পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে না। কিন্তু মানবসত্তা যদি অসাড় হয় এবং তাদের জীবন যদি নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ব-নির্ধারিত হয়, তবে কে এ পরিবর্তন আনবে? তাছাড়া, জীবন যদি পূর্ব-নির্ধারিত হয়, তাহলে ‘বিচ্ছিনতাবোধ’ও এর একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং বুর্জোয়া বা প্রোলেতারিয়েত কাউকেই এর জন্যে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। তাহলে শ্রমিক শ্রেণীর ‘বিচ্ছিন্নতাবোধে’র জন্য বুর্জোয়া শ্রেণীকে দোষ দেয়া হবে অথবা শ্রমিক জাগরণের আহবান জানানো হবে? মানব অস্তিত্বের পূর্ব-নির্ধারিত প্রকৃতি সংজ্ঞায়িত করলে মানব প্রচেষ্টা দ্বারা তা অপরিবর্তনীয়। বুর্জোয়া শ্রেণী ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি উৎখাত করে তার স্থলে রাষ্ট্রীয় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার মার্কসীয় সুপারিশ পলিটব্যুরো কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া মানব জীবনে আর এক ধরনের নিয়তিবাদের প্রচলন ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।

নিয়িতবাদীদের বিপরীত প্রান্তে সার্ত্রের ভোগবাদের অবস্থান। সেখানে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই এবং মানুষের স্বাধীনতা সীমাহীন; কেবল সে অবিরাম স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে পারে না। মানুষের মানসিক জীবনের প্রতিটি দিক ইচ্ছাকৃত, নির্বাচিত এবং নিয়ত দায়িত্বাবদ্ধ। নিঃসন্দেহে এ ধারণা নিয়তিবাদের চেয়ে ভালো। তবে সার্ত্রের মতে, এ স্বাধীনতার নিরঙ্কুশ সব কিছুই অনুমোদিত। মানব জীবনের সহজাত কোনো উদ্দেশ্য বা চুড়ান্ত লক্ষ্য নেই। মানবসত্তার জন্য কোনো অতিপ্রাকৃতিক বা বিষয়সম্মত মূল্যবোধ নেই, তা সে স্রষ্টার আইন বলি কিংবা স্বর্গীয় প্রেম বা অন্য বিছু বলি না কেন। মানবসত্তা এ পৃথিবীতে বিকৃত এবং পরিত্যক্ত, যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে নিজেরাই নিজেদের দেখাশোনা করবে। মূল্যবোধের একমাত্র ভিত্তি মানুষের স্বাধীনতা অনুরণের জন্য কেউ মূল্যবোধ বাছাই করে নেবে এর কোনো বাস্তব যুক্তি থাকতে পারে না। নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার এ ধরনের ধারণা কেবল পুঁজিবাদী ধরনের লেইজে ফেয়ার ও মূল্যবোধ নিরপেক্ষতার সৃষ্টি করবে। সেখানে সম্মত মূল্যবোধের কোনো প্রশ্নের উদয় হবে না, অথবা ব্যক্তি ও সামাজিক স্বার্থের মধ্যে ঐকতান সৃষ্টির জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে না, অথবা সম্পদের দক্ষ সুষম বণ্টনের প্রশ্ন দেখা দেবে না, যার কোনো কিছুই বাজার দ্বারা আপনাআপনি ঘটানো সম্ভব নয়।

এ ধারণাসমূহের সম্পূর্ণ বিপরীত খিলাফতের ধারণা বিশ্বে মানবসত্তাকে একটি সম্মানজনক ও মহিমান্বিত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে (কোরআন-১৭:৭০) এবং মানব-মানবীর জীবনকে একটি অর্থ ও লক্ষ্য প্রদান করেছে। এ অর্থ একটি দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে বৃথা নয় বরং একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে (কোরআন-৩:১৯২, ৩:১৯২, ২৩:১১৫)। তাদের জীবনের ব্রত হচ্ছে, স্বাধীন হওয়া সত্ত্বেও ঐশী পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। ইসলামী মতে ‘ইবাদত’ বা উপাসনা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে (কোরআন- ৫১:৫৬) যার অলঙ্ঘনীয় অনুজ্ঞা হচ্ছে অন্যান্য মানুষের প্রতি কোনো মানুষের দায়িত্ব পালন (হাক্কুল ইবাদ), তাদের আশ্চর্যের কিছু নেই যে, কতিপয় মহান ধর্মের মতো ইসলামে অধিকারের চেয়ে দায়িত্বের উপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পিছনে মৌলিক যুক্তি হলো, যদি প্রত্যেকে দায়িত্ব পালন করে, তবে প্রত্যেকের নিজ স্বার্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে অর্জিত হবে এবং সকলের অধিকার নিঃসন্দেহে সুরক্ষিত থাকবে। এ ব্রতের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন ন্যায়বিচারক, দয়ালু ও করুণাময় সৃষ্টিকর্তা এবং তার নির্দেশনার প্রতি পরিপূর্ণ সমর্পণের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি। মানবসত্তা অবশ্যই তাকে ছাড়া আর কারো কাছে নত হবে না, আর কারো মূল্যবোধ মানবে না এবং আর কারো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বেঁচে থাকবে না। এ পৃথিবীতে তাদের সকল কর্মের জন্য তারা তার কাছে দায়ী থাকবে। অবশ্যই তারা শুধু নিজের কাজের জন্যই দায়ী থাকবে (কোরআন-৬:১৬৪, ১৭:১৫ ও ৩৫:১৮) এবং তাদের নিজেদের কারণে যতটুকু সুসংঘটিত হয়েছে, ততটুকু ছাড়া অন্যদের অতীত বা বর্তমান, বাকি কোনো কাজের জন্যই দোষী সাব্যস্ত হবে না, যেখানে এ পৃথিবীতে যেভাবে তারা দায়িত্ব পালন করেছে, তার উপর ভিত্তি করে তাদেরকে পুরস্কার বা শাস্তি প্রদান করা হবে। এভাবেই তাদের জীবন ‘সৌর ব্যবস্থার বিশাল নক্ষত্রের মতো কালক্রমে নিভে যাবার মতো নয়’, এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের হতাশব্যঞ্জক অনুভব ‘মানুষের অর্জনের সমস্ত মন্দিরটি এ বিশ্বে ধ্বংস স্তূপের নিচে তলিয়ে যাবে”। এও সত্যিকার বাস্তবতা নয়। খিলাফতের যে ধারণা তার বেশ কিছু সংশ্লেষ বা অনুসিদ্ধান্ত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে;

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন