hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

মুখবন্ধ
সমাজতন্ত্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতির পতনের পর সকলের কাছে মানবসভ্যতার মতাদর্শিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়। এটা কি ইতিহাসের যবনিকাপাত ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত বিপর্যয় এবং পশ্চিমা পুঁজিবাদের সমর্থক অতি উৎসাহী লোকদের দাবি অনুযায়ী পাশ্চাত্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদারবাদের দ্ব্যর্থহীন বিজয়, না তা ইতিহাসের গতিধারায় ক্রমঃপতনশীল অবস্থার একটি পর্যায় মাত্র? যদি সমাজতন্ত্র তার নিজস্ব অসংগতি ও অসমতার ভারে ন্যুব্জ হয়ে থাকে তাহলে এটা কী প্রমাণ করে যে, পুঁজিবাদ তার ঐতিহাসিক অসংগতি, অবিচার ও ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? যদি পুঁজিবাদের কতিপয় নির্দিষ্ট ব্যর্থতার জন্য আংশিকভাবে হলেও সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার পরে দ্রুত বিকল্প খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে। সমাজতন্ত্রের বিশাল সৌধ ভেঙে চুরমার হওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের মন ও বিবেকের দুয়ারে জটিল প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

‘ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ বইটি এসব প্রশ্নের উপর আলোকপাত করার জন্য একটি সময়োচিত প্রচেষ্টা। এতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, যথার্থ উত্তর খুঁজে বের করার জন্য পাশ্চাত্যের অভিজ্ঞতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার প্রয়োজন নেই, বরং অন্যান্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও এর সীমা বিস্তৃত হতে পারে। মানব জাতির সামনে একটি বৈপ্লবিক সুযোগ উন্মোচিত হতে পারে যদি কারো অনুসন্ধিৎসু মন আন্তরিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যকে পরীক্ষা করে দেখেন, যাতে তারা ইসলামী আদর্শের আলোকে এ যুগের অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব সন্তোষজনকভাবে দিয়েছেন। মানবজাতি পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে বিগত তিনশ বছরে চারটি প্রধান অর্থনৈতিক মতাদর্শের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, সেগুলো পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদী-ফ্যাসিবাদ ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এসব মতবাদই মৌলিকভাবে বৈশিষ্ট্যগতভাবে একই ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত যে, মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ধর্ম ও নৈতিকতা প্রাসঙ্গিক নয়; বরং অর্থনৈতিক বিষয়াদি অর্থনৈতিক আচরণের সূত্র দ্বারাই সমাধান করা যায় এবং নৈতিক সামাজিক বিধিবিধান এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পুঁজিবাদ তার সৌধ নির্মাণ করেছিল বল্গাহীন ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মুনাফার অভিপ্রায় ও বাজারব্যবস্থার নীতির উপর। সমাজতন্ত্র মানবজাতির জন্য সুখ-সমৃদ্ধি খুঁজেছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সামাজিক প্রণোদনা ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে। এ দু’য়ের সমন্বয়ে ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও সামরিক উচ্চাভিলাসের জন্ম দেয়। কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে মিশ্র অর্থনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এসব মতবাদের কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য পরিলক্ষিত হলেও তা মানবজাতির প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ পতিত দেবতা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এখন এটা ধারণা করা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক হবে যে, সমাজতন্ত্রের পতন পুঁজিবাদ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের যথার্থতা প্রমাণ করে।

আমাদের সময়কালের অর্থনৈতিক সংকট এখনও আদের মতোই তীব্র ও বিপন্ন রয়ে গেছে। সকল মানবগোষ্ঠীর জন্য একই সঙ্গে একটি দক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা খুঁজে বের করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

ড. মুহাম্মদ উমর চাপরারর ‘Islam and Economic Challange’ গ্রন্থটি এ ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী প্রয়াস। ড. চাপরা পেশাজীবী অর্থনীতিবিদ। তিনি করাচী ও মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস ও সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, পাকিস্তান এর মতো বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন, প্লাটভাইল ও কেনটাকি, লেক্সিনটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বিগত ২৬ বছর ধরে তিনি সৌদি অ্যারাবিয়ান মনিটারি এজেন্সির সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। এ কারণে তিনি অর্থনীতির তত্ত্বগত জ্ঞান রয়েছে। বিগত ১৫ বছর ধরে তিনি অর্থনীতির ইসলামিক তত্ত্ব উন্নয়নের জন্য গভীর মনোনিবেশ সহকারে কাজ করছেন। এর আগে তিনি ‘টুওয়ার্ডস ও জাস্ট মনিটারি সিস্টেম’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ (ইসলামিক ফাউন্ডশন, লেস্টার, ১৯৮৫) রচনা করে মুসলিম বিশ্বের শিক্ষাবিদ মহলে প্রচুর সুনাম অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন। এভাবে ড. চাপরা বর্তমান সময়কালের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধিকতর মৌলিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে সমাধান তুলে ধরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন।

‘Islam and Economic Challange’ শীর্ষক বইটি এক দশকের গবেষণা ও চিন্তার ফসল। তার এই শ্রেষ্ঠ গবেষণা কর্মে তিনি অত্যন্ত সূক্ষভাবে ও পাণ্ডিত্যের সাথে পাশ্চাত্যের প্রধান তিনটি অর্থব্যবস্থার বিশ্লেষণ করেছেন এবং সেগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার একটি বাস্তবসম্মত ব্যালান্স শিট তৈরি করেছেন। তিনি অর্থনীতির ইসলামী তত্ত্ব ও তার সমস্যাসমূহ তুলে ধরে মুসলিম দেশগুলোর অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরামর্শ এবং কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়েনের লক্ষ্যে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ব্যাপক অর্থে তিনি মুসলিম বিশ্বে উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্যে যে উপাদান পেশ করেন তার মধ্যে রয়েছে বাজারব্যবস্থার জন্যে ব্যাপকভিত্তিক প্রনোদনা এবং একটি সহায়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার।

ড. চাপরা একজন সুদক্ষ সমাজ বিজ্ঞানী ও বস্ত্তনিষ্ঠ ইসলামী শিক্ষাবিদ হিসেবে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সমসাময়িক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও তার সমস্যাবলী সম্পর্কে তার ব্যাপক ও সূক্ষ্ম ধারণা রয়েছে; ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তার উপস্থাপনা যথার্থ ও বিশ্বাসযোগ্য। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও সমসাময়িক মুসলিম সমাজের ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা তিনি এমন সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন যাকে এক কথায় পাণ্ডিত্যপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও নির্দেশনাত্মক বলা যেতে পারে। ‘Islam and Economic Challenge’গ্রন্থটি নিছক কোনো তত্ত্বীয় গ্রন্থ নয় বরং নীতি নির্ধারকদের জন্যেও অনেক প্রাসঙ্গিকতা এতে রয়েছে এবং তা শুধু মুসলিম বিশ্বের জন্যই নয়, সার্বিকভাবে সমগ্র বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য।

আমি মনে করি ‘Islam and Economic Challange’ গ্রন্থটি সমসাময়িক অর্থনেতিক ব্যবস্থার উপর একটি উন্নতমানের গ্রন্থ এবং তা সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে ইসলামী তত্ত্ব উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।

ড. চাপরার এই অনুপম অবদানের পেছনে রয়েছে তার চিন্তা ও ধ্যান ধারণার বাস্তব প্রয়োগ। তিনি সমস্যাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন; বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাফল্যকে নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করেছেন এবং একই সঙ্গে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন বা কৃত্রিমতা পরিহার করে সম্পূর্ণ নিখুঁভাবে ইসলামিক বিকল্প ব্যাখ্যা করেছেন।

ড. চাচরা দ্ব্যর্থহীভাবে প্রমাণ করেন যে, শুধু বস্তুগত সম্পদের পিছনে ছুটলে মানুষের কল্যাণ অর্জিত হয় না, দক্ষতা ও সমতার বিষয়টি কেবল তখনই প্রয়োগিক ধারণা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে যদি বিষয়টিকে নৈতিক মূল্যবোধ ও আর্থসামজিক কাঠামোর প্রেক্ষিতে পুনঃ সংজ্ঞায়িত করা হয়। তিনি মানুষকে অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা ও প্রয়াসের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পুনঃ আবিষ্কারের কৈফিয়ত দিয়েছেন। তিনি পাশ্চাত্যের একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদের মতোই অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন উপকরণ যথাসম্ভব কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে অর্থনীতির ক্ষেত্রে উন্নত চিন্তাধারা সমৃদ্ধ একটি নতুন সৌধ নির্মাণ করা যা নৈতিক ভিত্তি থেকে বিচ্ছিন্ন নয় এবং যেখানে এমন একটি আর্থসামাজিক কাঠামোর আওতায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় এবং একই সঙ্গে দক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা সমাজের বিশেষ কোনো শ্রেণীর জন্য নয় বরং সমগ্র মানবতার জন্য নিশ্চিত করা হয়। নৈতিক চেতনা সঞ্জাত এবং কয়েক শতাব্দীর প্রায়োগিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি অর্থনীতিকে বিবর্তনের মাধ্যমে পরবর্তী এমন একটা পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করেছেন যা মানুষের সাধারণ প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে, পারে। যদি তা নিছক সুবিধাভোগীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে থাকে, তাহলে মানুষের কল্যাণের জন্যই সে অর্থনীতির হারানো গতিপথ পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। আগামী দিনের সেই লক্ষ্যেই ‘Islam and Economic Challange’ গ্রন্থটি একটি পদক্ষেপ।

খুরশীদ আহমদ

লেস্টার

৩ জানুয়ারি ১৯৯২

২৭ জামাদা আল-সানী ১৪১২

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন