hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১৫৬
প্রজাস্বত্বের শর্ত
জমির আকার ছোট করা ছাড়াও প্রজাস্বত্বের শর্তাবলীও সং স্কার করা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম আইনশাস্ত্রের সকল মতাদর্শের ফকীহগণের কাছে ভূমি মালিক ও প্রজাদের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিতর্কের উর্ধ্বে থাকা সত্ত্বেও ফিকাহশাস্ত্রে ভূমি প্রজাস্বত্বের প্রকৃতি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে রয়েই গেছে।

ফিকাহ শাস্ত্রের একটি সংখ্যালঘু অংশ ভাগচাষ বা বর্গাচাষ কিংবা নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব অনুমোদন করেননি। বরং তারা বলেছেন যে, একজন ভূমি মালিক নিজে যতটুকু পারে ততটকু তার নিজেরই চাষ করা উচিত; অবশিষ্ট জমি অন্যকে চাষ করতে দেয়া উচিত। বৃহৎ অংশ আছেন যারা বর্গাচাষ সমর্থন করেন, কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্বব্যবস্থা নিষিদ্ধ করেছেন, তাদের যুক্তি ছিল যে, মহানবী (ﷺ) গোড়ার দিকে ভাগচাষ ও নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব উভয় ব্যবস্থাকেই নিরুৎসাহিত করলেও পরবর্তীতে ভাগচাষের অনুমতি দেন। মহানবী (ﷺ) এর সাহাবীগণ ও তাদের উত্তরাধিকারীগণ সেটাই অনুসরণ করেছেন। অবশ্য ফকীহগণের প্রধান অংশ ভাগচাষ ও নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব উভয় ব্যবস্থাকেই নিরুৎসাহিত করলেও পরবর্তীতে ভাগচাষের অনুমতি দেন। মহানবী (ﷺ) এর সাহাবীগণ ও তাদের উত্তরাধিকারীগণ সেটাই অনুসরণ করেছেন। অবশ্য ফজীহগণের প্রধান অংশ ভাগচাষ ও নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব উভয় ব্যবস্থা অনুমোদন করেছেন এবং তা ‘মুদারাবাহ’ ও শরীয়াহভিত্তিক লিজিং ব্যবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ। এর পিছনে যুক্তি হলো, মাদানী জীবনের অধিকাংশ মুসলিমানের দারিদ্র্য অবস্থার কারণে ধনীদের কাছে তাদের বেশি দাবি ছিল। তখন তিনি ভাগচাষ এবং নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব উভয় ব্রবস্থাকেই নিরুৎসাহিত করেন এবং ভূমি মালিকরা যা নিজে চাষ করতে পারতো তার অতিরিক্ত জমি কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অন্য চাষীদের চাষ করতে দেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। অবশ্য পরবর্তীতে যখন মুসলিমানদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়, তখন তিনি উভয় ব্যবস্থার অনুমতি দেন এবং তা নিছক ভাগচাষ ছিল না, যার পক্ষে দ্বিতীয় গ্রুপের ফকীহরা যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

এতদসত্ত্বেও বেশ কিছু ফকীহ মনে করেন যে, যদিও নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্ব অনুমোদিত, কিন্তু তা ‘মাকরুহ’। তাদের মতে ভাগচাষই অধিক পছন্দনীয়, কারণ ভূমি মালিক ও প্রজা চাষাবাদের ক্ষেত্রৈ মুনাফা ও ঝুঁকি উভয়েরই দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রৈ নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্বের পরিবর্তে এ ব্যবস্থা দু’দিক থেকেই সঠিক। যে সকল আইনবিদ নির্ধারিত ভাড়ায় প্রজাস্বত্বের অনুমতি দিয়েছেন, তারা জমি লিজ প্রদানের বৈধতা সম্পর্কে কতকগুলো শর্তারোপ করে প্রজাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ ইমাম মালিকের মতে, যদি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায় অথবা লিজ গ্রহণকারীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো প্রাকৃতিক কারণে (যেমন খরা, বন্যা) জমি চাষাবাদ করতে সমর্থ না হন, সেক্ষেত্রে লিজ চুক্তি অতিরিক্ত ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার জন্য ভঙ্গ করা যেতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে মতভেদ থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু আইনবিদ মনে করেন, বিষয়টি ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধির আওতাভুক্ত বিধায় রাষ্ট্র নির্ধারিত ভাড়ায় দখলীস্বত্ব প্রদান অন্তত সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করতে পারে অথবা ‘মাকসিদ’ হাসিলের লক্ষ্যে এবং জনগণের স্বার্থে তাকে পর্যাপ্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

যেহেতু প্রজা ও ভূমিহীন কৃষকরা দুর্বল ও ক্ষমতাহীন এবং যখন উচ্চ ভাড়া ও উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তখন এভাবেই আরো কিছুকাল থাকার সম্ভাবনা আছে, সেহেতু ভূমিস্বত্বের আকারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, নির্ধারিত ভাড়ায় ভূমির লিজ প্রদান ব্যবস্থা অবিচার ও দারিদ্র্য বজায় রাখার জন্যঅব্যাহত থাকতে পারে। এমতাবস্থায় মুসলিম সরকারগুলোর কাছে এটাই প্রত্যাশা যে, তারা জমি লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে ভাগচাষ ব্যবস্থাকে সাধারণ ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং ভূমি মারিক ও প্রজাদের মধ্যে উৎপাদনের ন্যায়সংগত বণ্টন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। যতদিন পর্যন্ত পল্লী এলাকায় ক্ষমতার ভিত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে সমপ্রসারিত না হবে এবং ভূমি মালিকদের শাসনের হাতকে কার্যকরভাবে নিষ্ক্রিয় করা না যাবে, ততদিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। মহানবী (ﷺ) মদীনায় প্রাথমিক জীবনে যে বৈপ্লবিক কার্যক্রম চালু করেছিরেন, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কৃষক ও ভূমিহীন চাষীদের কল্যাণে এবং মুসলিম সমাজের সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ হ্রাস করার উদ্দেশ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বলাই বাহুল্য যে, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ইসলাম ভূমি সংস্কারের উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। আয়বণ্টন ও দারিদ্র্যের প্রকোপ নিবারণে ভূমিবণ্টন একটি বড় নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও কোস্টারিকার মতো যে সকল দেশে ভূমির দখলীস্বত্বের সুষম বণ্টনসহ যৌথ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, সে সকল দেশ আয়ের সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সাফল্য লাভ করেছে। অপরদিকে যে সকল দেশে ভূমির দখলীস্বত্বের কেন্দ্রীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে সকল দেশে দারিদ্র্যের প্রাদুর্ভাব এবং আয়বণ্টনে অধিকতর বৈষম্য অব্যাহত থাকবে। ক্ষুদ্র ও স্বাধীন উৎপাদনকারী কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পল্লীখাত কৃষি কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের উৎসাহ প্রদানের জন্য সাহায়ক হবে এবং এভাবেই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যাবে। ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্প কারখানায় এর সম্মিলিত বিস্তৃতি ঘটলে তা কৃষি সংশ্লিষ্ট জনশক্তির শহর এলাকায় স্থানান্তর হ্রাস করবে এবং এর সাথে নগরের অপরাধ ও হিংসাত্মক কার্যকলাপও কমাবে। আয় ও সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য হ্রাস করার মাধ্যমে অধিকাংশ দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমানো এবং ঐ সকল দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুসংহত করা যেতে পারে।

বর্তমানে যে জাজ্বল্যমান বৈষম্য রয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে ভূমি সংস্কার হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা কোনো সরকার কর্তৃক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করার কোনো সুযোগ নেই। যদি অর্থবহ ভূমি সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে হিংসাত্মক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হবে। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যখন এ ধরনের বিপ্লব সংঘটিত হয়, তখন সকল নৈতিক মূল্যবোধ পদদলিত হয়। ভূমি মালিকরা এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভূমিই হারাবে না তাদের সহায়সম্বল এমনকি জীবনও হারাতে পারে। এমতাবস্থায় তাদের উচিত নিজেদের বৃহত্তর ও দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে স্বেচ্ছায় সঠিক ভূমি সংস্কারের চেষ্টা চালানো।

কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়ে থাকেন যে, ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে ভূমি দখলীস্বত্বের আকার কমানো হলে তা কৃষিকাজের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। বিভিন্ন দেশে পরিচারিত বেশ কিছু প্রয়োগিত সমীক্ষা থেকে এরূপ ধারণা প্রমাণিত হয়নি; তবে এ সমীক্ষাগুলো নিশ্চিত করেছে, কৃষি জমির আকার ও প্রতি একরে উৎপাদনের হার পরস্পর বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর মানে হচ্ছে, ক্ষুদ্র আকারের কৃষি জমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃহদাকার জমির চাইতে বেশি। অভিজ্ঞতাসঞ্জাত প্রমাণাদি উল্লিখিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ বড় আকারের ভূমিখণ্ডের মালিকরা তাদের সম্পদের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ করে বৃহদাকার কৃষি ফার্মে বিনিয়োগ (যোমন ভালো বীজ, ঋণ, পানি সরবরাহ ও সার) করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি বিশ্ব্যাংকের মতে, ‘ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষি ফার্মে স্থিতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতা সারা বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন’ -বিশেষ করে সেবা, বাজার ও উৎপাদন উপকরণ, যেমন সার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাদের সীমিত সুযোগ বিদ্যামান। এটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা দরকার যে, ভূমি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন মানে এই নয় যে, জমির আকার অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে হ্রাস করতেই হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন