hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৮৬
আশার আলো
কালো মেঘের আড়ালেও থাকে আশার রজত রেখা। পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের সমালোচনামূলক ব্যবচ্ছেদে অর্থনৈতিক কালো মেঘের প্রান্তে আশারসে কিরণ দৃশ্যমান করে তুলছে। একমাত্র স্বার্থপরতাই মানবীয় কর্মকাণ্ডের পশ্চাতে ক্রিয়াশীল নয়- এ সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে। দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের সাথে সাথে মানব সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অনিবর্যতা ক্রমশ গুরুত্ব লাভ করছে। ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির মূলধারার সীমা ছাড়িয়ে তাই নানা চিন্তাধারা বিকশিত হয়ে উঠছে। এ সকল মতাদর্শ অবশ্যই প্রায় সমধর্মী, পার্থক্য হচ্ছে গুরুত্ব প্রদানের বিষয়গুলোর বিভিন্নতায়। এ ধরনের তিনটি মতাদর্শ উল্লেখের দাবি রাখে।

একটি মতাদর্শের নাম হচ্ছে Grants Economics। স্বার্থহীনভাবে কাজ করা ব্যক্তিমানুষের যৌক্তিক আচরণ হতে একটি বিচ্যুতি-এ মতাদর্শ তা মনে করে না। ‘শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে মানুষ কাজ করে’- এ ধরনের যুক্তি বাস্তব অবস্থার সামগ্রিক চিত্র নয় মর্মে কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন। অর্থনীতিবিদ হান এর মতে, যৌক্তিক আচরণের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত অর্থনীতিশাস্ত্র সম্ভবত ভুল করেছে। একজন মানুষ শুধুমাত্র পাই পাই আর্থিক লাভক্ষতির চুলচেরা হিসাব করেই চলবে এটা সম্ভবত ঠিক নয়। সুতরাং এ কথাও বলা যায় না। প্রচলিত অর্থনীতিতে মানুষের আচরণের বিষয়ে ফ্রীডম্যান এর সাফাই সত্ত্বেও কিছু অর্থনীতিবিদ ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। এটা বলা সম্ভবত যথৃর্থ হবে যে ,যদি অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও সূত্রের কাজ হয় মানুষের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সঠিক ও অর্থপূর্ণ অনুমানে উপনীত হওয়া, তবে মানুষ স্বার্থপরতা নয়, পরার্থবাদের কাঠামোর মধ্যে থেকে অধিক যুক্তিযুক্ত আচরণ করবে-এ ধারণা করে নিলেই বরং অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে অধিক অর্থবহ পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হবে। তাই মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞানের নামে অথনৈতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে যে মানবিক আচরণের উপাদানকে অস্বীকার করা হয়েছে, তাকে যথাযথ স্থান দেবার জন্য Pareto Optimum-এর বিকল্প হিসেবে Boulding Optimum তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় চিন্তাধারাটি হচ্ছে, প্রয়োজন পূরণভিত্তিক মানবতাবাদী অর্থনীতি। এটি সকল মৌলিক মানবিক মূল্যবোধের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মানবকল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।

শুধুমাত্র সম্পদের উপর প্রচলিত অর্থনৈতিক তত্ত্বের মতো গুরুত্ব মতো গুরুত্ব আরোপের বদলে মানবতাবাদী অর্থনীতি প্রয়োজন পূরণে সন্তোষ ও মানবিক চেতনার উন্নয়নের উপর জোর প্রদান করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে আব্রাহাম মাসলো এর ভাষায় ‘আত্ম-উপলদ্ধি’ বা ‘আত্ম-সম্পূর্ণতা’।

তৃতীয় মতাদর্শ সামাজিক অর্থনীতি মতাদর্শ হিসেবে অভিহিত। এ চিন্তাধারা নৈতিক বিবেচনার ছাঁচে অর্থনৈতিক তত্ত্বের পুনর্বিন্যাসে বিশ্বাসী। উদারনীতিবাদী দর্শন হতে অর্থনীতিবিদগণ নৈর্ব্যক্তিক বিজ্ঞানমনস্কতার প্রতি অঙ্গীকারের যে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছেন, তা প্রকৃত যুক্তির ধোপেও টেকে না এবং প্রত্যাশার প্রয়োজনীয়তার মানদণ্ডেও উতরে যায় না। এটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়, কেননা অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ তথাকথিত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ভিত রচিত কতকগুলো প্রাক-পক্ষপাতিত্ত্বমূলক অনুমানের উপর। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, কেননা এ কথিত অনুসন্ধান সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে না। মূল্যবোধ নিরপেক্ষ একটি শাস্ত্র কখনো জনগণের পছন্দ অপছন্দের ভিত্তিতে নীতিমালা ও সুপারিশ প্রণয়নে সফলতা লাভ করতে পারে না। অধ্যাপক সেন তাই যথাযথভাবেই মন্তব্য করেছেন, ‘অর্থনীতিকে নৈতিকতা থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ফলে কল্যাণ অর্থনীতির সমৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে এবং একই সাথে তা বর্ণনামূলক ও পুর্বাভাসমূলক অর্থনীতির ভিতকে দুর্বল করে দিয়েছে। উপসংতারে তিনি বলেছেন যে, মানুষের আচার আচরণ ও বিচারবোধে যে নৈতিক বিবেচনা চালিত হয়, তার প্রতি যদি অধিকতর সক্রিয় মনোযোগ প্রদান করা হতো, তবে অর্থনীতিকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী, দক্ষ ও কল্যাণকর শাস্ত্রে পরিণত করা যেত। সমস্যা হলো মূল্যবোধ হচ্ছে এমন চেতনাময় একটি প্রপঞ্চ যা বস্তুগত প্রকরণের মতো বিজ্ঞান দ্বারা প্রস্তুত বা নির্ণয় করা যায় না। আর্নল্ড ব্রেখটস এর ভাষায়, ‘মূল্যবোধের ক্ষেত্রে যারা বৈজ্ঞানিক কর্তৃত্বের দাবি করেন, তারা যে ভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত তা বিজ্ঞানসম্মতভাবেই দেখানো যায়’। যদি মূল্যবোধকে ‘বৈজ্ঞানিক পন্থায়’ নির্ণয় করা সম্ভব না হয়, যদি ‘বিচারবোধ’কে প্রয়োগ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায় এ বিচারকের ভূমিকা কে পালন করবে?

এ ক্ষেত্রে কী কোনরূপ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব? এমন একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে তা সামাজিক স্বীকৃতি লাভের জন্য হবে যথেষ্ঠ শক্তিশালী এবং যে কেউ প্রতিষ্ঠিত সামাজিক বিধিবিধানের বিরুদ্ধে কাজ করলে নিন্দিত হবে।

‘আত্মস্বার্থ’ ও ‘অর্থনৈতিক মানুষ’ সংশ্লিষ্ট ধারণার বিলোপ সাধিত হচ্ছে এবং চাহিদা পূরণ ও মূল্যবোধ বিচার সংক্রান্ত ধারণার বিকাশ ঘটছে। এতে দেখানো হচ্ছে যে, মানুষ বৈষম্যের মধ্যে বসবাস করবে না। মানুষ তার যুক্তিবোধ উন্নত করতে, সমস্যার বিশ্লেষণ করতে এবং ভ্রান্তি আবিষ্কার করতে সক্ষম; যেটি সহজ নয়-সেটি হচ্ছে সমস্যার সমাধান। কোনো প্রকার জোড়াতালি বা কৃত্রিম পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। সমাধান নিহিত রয়েছে সার্বিকভাবে সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এরূপ পুনর্গঠনের মধ্যে, যাতে একদিকে ‘অর্থনেতিক মানুষ’ পরিণত হবে ‘নৈতিকভাবে সচেতন’ মানুষে, যিনি ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আর্থ-সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে জীবনযাপনে আগ্রহী; অপরদিকে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে সকলের চাহিদা পূরণ হবে, অথচ আয় ও সম্পদের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা ও বৈষম্য বৃদ্ধি করবে না, বরং তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকবে।

যদিও মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্বারোপের পুনর্জাগরণের বিষয়টি প্রশংসনীয়, কিন্তু পাশ্চাত্যের অর্থনীতিতে তার প্রয়োগ একটি দুরূহ কাজ। প্রধান কথা হচ্ছে, গলব্রেইথ এর মতে, ‘প্রচলিত ধারণার প্রতি রয়েছে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গীকার’- যাতে অর্থনীতিকে দেখা হয় একটি বিজ্ঞান হিসেবে এবং তারা বৈজ্ঞানিক ধারণায় বুদ্ধিবৃত্তিক বিশুদ্ধতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন। ধর্ম প্রদত্ত ঐকমত্য ব্যতীত মূলে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে গত দু’দশকে পাশ্চাত্যে নিরপেক্ষ মূল্যবোধ ব্যবস্থার প্রত অঙ্গীকারের ধাণা বহুদূর এগিয়ে গেছে। স্কাডউচ যথার্থই বলেছেন, সামাজিক নৈতিকতা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত মানদণ্ডের উপর নির্ভরশীল, যা স্বতঃসিদ্ধ বলে বিবেচিত বিধায় খুব একটা বিতর্কের অবকাশ রাখে না। ব্যতিক্রমধর্মী কিছু লোক ছাড়া মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে নৈতিকতা কখনোই ধর্ম থেকে আলাদা করে দেখা হয়নি। উপযোগবাদ ও সামাজিক চুক্তি মতবাদ সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য কোনো মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেনি। পাশ্চাত্য জগত সম্পর্কে মিনস্কি মজার কথা বলেছেন, ‘আমাদের কী করা উচিত সে সম্পর্কে আমাদের ঐকমত্য নেই, কোনো প্রকার সম্মত মূল্যবোধ ছাড়া এরূপ ঐকমত্যে পৌঁছান কঠিন’।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন