hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৮৫
যুক্তি ভ্রান্তি
সমস্যা দেখা দেয়ার কারন হলো অন্যান্য যে কোনো দেশের মতোই কল্যাণ রাষ্ট্রকেও একই ধরনের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যদি কল্যাণমূলক খাতে অধিক সম্পদ ব্যয় করা হয়, তবে অন্যান্য উন্নয়নমূলক খাতে কল্যাণ রাষ্ট্র যে বন্ধনের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে তা হতে পরত্রাণ পাওয়া দুষ্কর। শুধুমাত্র বাজার মূল্যব্যবস্থার উপর নির্ভর করে সম্পদের অর্থনৈতিক উপকরণ বা সম্পদের উপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের দাবিকে এমনভাবে হ্রাস করা সম্ভব নয়, যাতে সামাজিক লক্ষ্যসমূহ পূরণ অবিঘ্নিত থেকে যাবে। তার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণের অনুপ্রাণিত করা। উক্ত সামাজিক ঐকমত্য সৃষ্টি এবং তদানুযায়ী জনমত ও দাবিকে সেভাবে অনুপ্রাণিত করা। উক্ত সামাজিক ঐকমত্যর আলোকেই তখন বিভিন্ন খাতে কী হারে অর্থনৈতিক সম্পদ ব্যবহৃত হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু কল্যাণ রাষ্ট্র কাজ করে নৈতিক মূল্যবোধের বগ্লাহীন পুঁজিবাদী কাঠামোর আওতায়, যেখানে সামাজিক প্রয়োজন পূরণের অগ্রাধিকার নির্ণয়ের কোনো নৈতিক ঐকমত্য ভিত্তিক পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া নেই। অথবা সামাজিক ন্যায়নীতি, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বৈদেশিক ভারসম্যের সাথে সংগতি রেখে ব্যক্তি ও দলসমূহকে তাদের দাবদাওয়াকে সংযত ও বিন্যস্ত করার জন্য অনুপ্রাণিত করার কোনো নৈতিক ব্যবস্থাপনা নেই। পক্ষান্তরে, উচিত-অনুচিত এর মানদণ্ড নির্ধারণ না করার সেকুলার মতাদর্শ ও ‘পেরিটো অপটিমালিটি’র কাঠামোর মধ্যে নীতি নির্ধারণ করার ফলে সীমিত সম্পদের উপর সরকারি ও বেসরকারি খাতের চাহিদার বিপুল ও অপ্রতিহত চাপ সৃষ্টি হয়। দেদার বিজ্ঞাপন প্রচার এবং লোভনীয় কনজুমার ঋণের লভ্যতা সমাজের প্রতিপত্তি অর্জনের যে ইঁদুর দৌড় চলছে তাতে আরো ইন্ধন যুগিয়েছে। সর্বোচ্চ সুযোগ, বৈষয়িক সুবিধা ও ভোগ অর্জন জীবনের চরম লক্ষ্য হওয়ায় কল্যাণ রাষ্ট্রের সেকুলার সমাজে জনগণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি খাতে কল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য ব্যাপক ব্যয়ের কারণে যে বিশাল রাজস্ব ঘাটতির সৃষ্টি হয়, তাতে সীমিত সম্পদের উপর চাপ আরো জটিল আকার ধারণ করে।

সীমিত সম্পদের উপর সরকারি ও বেসরকারি খাতের চাহিদার বিপুল চাপে কল্যাণ রাষ্ট্র ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। যদিও এরূপ দ্বিমুখী চাহিদা প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করল, কিন্তু পরবর্তীতে তা সম্পদের ও চাহিদার মাঝে বিরাট ব্যবধান গড়ে তুলল। অনেক দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতার মধ্য দিয়ে এ ব্যবধান প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যেখানে বেইনসাফী অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা প্রয়োজন বলে অনুভূত হয়। রিগ্যান ও থ্যাচারের অর্থনৈতিক চিন্তাধার মোতাবেক বাজারব্যবস্থার উপর অধিক নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। জনপ্রিয়তার নিরিখে এটা মিসেস থ্যাচারের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ নীতি গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করে এবং জনগণের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি আর্থিক ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাথ করেনি।

সুইডেনের মতো দেশ যেখানে জনগণের কল্যাণমুখী সেবার জন্য অধিকতর সুনাম রয়েছে, সেখানে উচ্চমাত্রার ট্যাক্স ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির দরুণ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত যে ,অতিরিক্ত মাত্রার ট্যাক্স জনগণের কর্মসংস্থান, সঞ্চয় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করে। অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় সুইডেনে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার দ্বিগুণ। সুইডিস ক্রোনারের বিপুল অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজারে সুইডেনের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ শেয়ার মার্কেট সংকুচিত হচ্ছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি বেড়ে চলছে। বিশাল কর বেসরকারি সঞ্চয়কে দারুণভাবে ব্যাহত করছে। সুইডেনে বেসরকারি সঞ্চয়ের হার ছিল জাতীয় আয়ের মাত্র ০.৮%। তার তুলনায় অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশে এর হার ছিল ৯.৩%। ফলে সুদের হার বেড়ে যেতে বাধ্য, যা বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিকে আরো হ্রাস করে ভবিষ্যৎ সমস্যাকে তীব্রতর করে তুলবে। কিন্তু সরকারি ব্যয় হ্রাস ছাড়া ট্যাক্স কমানো সম্ভব নয়। অন্যথায় বাজেট ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই সবার কাছে সহজতম পন্থাটি হচ্ছে কল্যাণমুখী কর্মসূচিতগুলোতে সরকারি ব্যয় হ্রাস করা। তাই দেখা যায় নৈতিকতা নিরপেক্ষ কার্যপরিধির মধ্যে থেকে কর হার হ্রাস করা মূলত রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক ভূমিকাসমূহ হ্রাসের নামান্তর মাত্র।

পশ্চিম জার্মানী ও জাপানের মতো দেশ যাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়নি, কিন্তু যারা কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন মাত্রায় ব্যর্থ হয়েছে, তাদের সমস্যা ভিন্নতর। সমধর্মী আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের প্রয়োজনে তারা ঘাটতিবহুল দেশগুলোর চাপের সম্মুখীন হলো। এ চাপ উদ্বৃত্ত দেশসমূহকে দীর্ঘমেয়াদে তাদের সবল মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি অনুসরণে বাধা সৃষ্টি করল। প্রবল চাপের মুখে পশ্চিম জার্মানী ও জাপান উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডিসকাউন্ট হার ১৯৮৭ সালে সর্বনিম্ন ২.৫% এ নামিয়ে আনতে হলো, যা ছিল ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে যথাক্রমে ৪.৫% এবং ৫%। ফলে উভয় দেশই অনাকাঙ্ক্ষিত মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও ফটকাবাজারী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। উভয় দেশকে তাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে (পশ্চিম জার্মানী) এবং ১৯৯০ সালের আগষ্টে (জাপান) ডিসকাউন্ট হার ৬.০% এ বৃদ্ধি করতে হলো। সুদের স্বল্প হারের এ সময়ে জাপানে স্টক ও রিয়েল এস্টেট বাজার শীর্ষে উঠে গেল যা দীর্ঘকাল ধরে রাখা সম্ভব হলো না। ঘাটতি দেশসমূহের অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং সবল মুদ্রা ও রাজস্বনীতি প্রয়োগ না করে শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত দেশসমূহকে চাপের মুখে রাখার মাধ্যমে ঘাটতি দেশগুলোর তেমন কোনো উপকার তো হবেই না, বরং উদ্বৃত্ত দেশগুলোর সংকট বাড়বে। যেহেতু এ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, তাই সমৃদ্ধ অর্থনীতিসমূহও অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হলো। স্বল্পমেয়াদী ফটকাবাজারী লগ্নী পুঁজির স্থান্ন্তর তীব্রতা লাভ করল। ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও মুদ্রাবাজার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে উঠল। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, পণ্য ও স্টক মার্কেটে অসিথরতার সৃষ্টি হলো।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় চাহিদার নৈতিকতা-অনৈতিকতার বালাই না থাকায় একদিকে সার্বিক চাহিদার বিস্ফোরণ ঘটল, অন্যদিকে ঐ কাঠামোর মধ্যে থেকে কল্যাণ রাষ্ট্রে গরীবের অবস্থার যথার্থ উন্নয়ন করতে না পরার সমস্যা আরো জটিলতর হলো। পুঁজিবাদের অগ্রহণযোগ্য ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে যেয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রে সমভাবে অসমাধানযোগ্য নতুন সমস্যার জন্ম দিলো। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে সবচেয়ে কম স্বার্থ ত্যাগ করে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের যে প্রতিযোগিতা তারই নাম হলো সেকুলার পুঁজিবাদের সামাজিক-ডারউইনীয় দর্শন বা ব্যবস্থা। জোড়াতালি দিয়ে এ ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণের প্রচেষ্টার কারণে কল্যাণ রাষ্ট্রের কর্মসূচি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। একদিকে কল্যাণ রাষ্ট্র কতিপয় মানবতাবাদী লক্ষ্য স্বীকার করে নিয়েছে, অন্যদিকে এ রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক ডারউইনবাদ ও ভোগবাদ। আশার সঞ্চার করে পুনঃ নিরাশ করা কতিপয় আর্থ-সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়া ব্যতীত কল্যাণ রাষ্ট্রের উপযুক্ত দুটি দিক দীর্ঘদিন পারস্পরিকভাবে সহাবস্থান করতে পারে না। এ ধরনের সমন্বয় ব্যবস্থা কতিপয় সমস্যার সমাধান করে, আবার অন্য কতকগুলো সমস্যার জন্ম দেয়। তাই সমাজ ও অর্থনীতির এমন মৌলিক পুনর্গঠন প্রয়োজন যাতে সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কল্যাণ রাষ্ট্রের মানবতাবাদী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

অনেক চিন্তাবিদ বর্তমানে এ বাস্তবতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। মরিস ব্রুসের ভাষায়, কল্যাণ রষ্ট্রের ধারণা কোনো রাজনৈতিক সামাজিক চিন্তাভাবনা বা দর্শনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জন্ম লাভ করেনি, কল্যাণ রাষ্ট্র কোনো সুপরিকল্পিত চিন্তার ফসল নয়। বস্ত্তত বিশেষ কতগুলো সমস্যার নিরসনে বছরের পর বছর ধরে যেসব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারই স্তূপীকৃত রূপ ব্যতীত কল্যাণ রাষ্ট্র আর কিছুই নয়। কল্যাণ রাষ্ট্রের দর্শন সম্পর্কে একই ধরনের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পিয়ীট থিয়োনেস, ‘কল্যাণ রাষ্ট্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কারো পক্ষে সম্পূর্ণ ও যথার্থভবে এর প্রচার প্রচারণায় লিপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। কেননা একজন সমাজতন্ত্রীর কছে কল্যাণ রাষ্ট্র অর্ধসমাজতন্ত্র ব্যতীত আর কিছু নয়। আবার লিবারেলদের নিকটও এটি অর্ধ-লিবারেলিজম মাত্র’। সিডনী হুকের মন্তব্য হচ্ছে, “কল্যাণ রাষ্ট্রের পশ্চাতে যে সামাজিক দর্শন তা অপরিণত ও অস্পষ্ট”। বেরিংটনের ভাষায়, কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রবক্তাগণ এমনকি মৌলিক প্রশ্নগুলোরও অস্মপূর্ণ ও নেতিবাচক জবাব ছাড়া অন্য কিছু দিতে সক্ষম নয়। যেমন, কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্যসমূহ কী? কল্যাণ রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে কল্যাণের সংজ্ঞা কী? তিনি পর্যবেক্ষণ করে যে, ‘একটি বিশ্বযুদ্ধ ও বিশ্বসংকটের পর কল্যাণ রাষ্ট্র জন্মলাভ করেছে এমন অভাব বা দুর্ভিক্ষের সময় যখন সবার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ,যে অবস্থা বিরাজমান তা কারো কাম্য নয়; তা হচ্ছে সংকট, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শীত, বেকারত্ব, একনায়কত্ব, খাদ্য বা প্রতিভার অপচয়। তাই দেখা যায়, নেতিবাচক লক্ষ্যসমূহই কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে’। মিরডাল তাই বলেন, ‘কল্যাণ রাষ্ট্রের কর্মসূচিতে সরকারি হস্তক্ষেপের যে ব্যবস্থা দেখা যায় তা মতাদর্শ নয় বরং ঘটনাচক্রেরই ফলশ্রুতি’। সম্ভবত এ কারণেই কল্যাণ রাষ্ট্র আর্থ-সামাজিক সংস্কারে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। কল্যাণ রাষ্ট্রের সুসংবদ্ধ ও সামাজিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ সমন্বিত একক কোনো দর্শন নেই, যার ভিত্তিতে কার্যকর কর্মবূচি প্রণয়ন করা যেতে পারে, যে কর্মসূচির প্রতিটি উপাদান ক্রমঃসামঞ্জস্যময় যা মানবতাবাদী লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সক্ষম।

যে শক্তিসূহ দারিদ্র্য ও বৈষম্যের জন্ম দেয় ও তাকে অব্যাহত রাখে তা এতই শক্তিশালী যে, কল্যাণ রাষ্ট্রের সামাজিক কর্মসূচির জোড়াতালি দেয়া ব্যবস্থা দ্বারা তার অপনোদন সম্ভব নয়। কল্যাণ রাষ্ট্র দরিদ্রের পক্ষে আয়ের পুর্নবন্টনের জন্য পেছনের দরজা দিয়ে যে পরোক্ষ ব্যবস্থা রেখেছে, তা দারিদ্র্য বৈষম্য সৃষ্টিকারী আর্থ-সামাজিক শক্তিসমূহকে অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। দারিদ্র্যের জন্য দায়ী এসব শক্তিসমূহকে সরাসরি মোকাবিলা করা প্রয়োজন; লক্ষণসমূহের বদলে সমস্যঅর মূল্যে আঘাত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আর্থ-সামাজিক কাঠামোর আমূল সংস্কার এবং পুঁজিবাদ বা তার উন্নত সংস্করণ কল্যাণ রাষ্ট্রের ভিতে যে জীবনবোধ তার আমূল পরিবর্তন। এর ফলে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধের মতো সামাজিক সমস্যাগুলো যা সমাজতন্ত্র ও কল্যাণ রাষ্ট্রের আবির্ভাব সত্ত্বেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে তার সমাধান করা সহায়ক হবে।

সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, চিন্তাবিদগণ চাইলেও কল্যাণ রাষ্ট্রের স্ববিরোধিতামুক্ত এক সুসংবদ্ধ দর্শন রচনা করতে পারতেন না। কেননা উপযোগবাদ বা ন্যায়নীতির সামাজিক চুক্তির মতবাদের উপর ভিত্তি করে একটি সামাজিক কল্যাণ দর্শন গড়ে তোলা কী সম্ভব? বিচার-বুদ্ধি, ব্যক্তিস্বার্থ ও সামাজিক চুক্তির ধারণা কী আমাদের পেরিটো অপটিমালিটির অতিরিক্ত কিছু এনে দিতে পারে? এসব দর্শন সামাজিক ঐকমত্যভিত্তিক মূল্যবোধের বিজয় পতাকা তুলে ধরার জন্য মানুষকে জীবনমরণ পণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের রক্তবীজ বপন করে কল্যাণ রাষ্ট্রের সংকট পারস্পরিক সহযোগিতা ও অন্যের কল্যাণে স্বার্থ ত্যাগে অনুপ্রাণিত করতে পারে না। এসব গুণাবলীর উন্মেষ দাবি করে মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে ওঠার তাগিদ এবং নিজের স্বার্থকে কেঁটেছেটে সীমিত সম্পদের উপর চাপ কমানোর মানসিক প্রবণতা।

ব্যক্তিস্বার্থ ও উপযোগবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যে মূল্যবোধ ব্যবস্থা, তাতে দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের অবকাশ অনস্বীকার্য। তাই মানব সমাজের মূল্যবোধের ভিত্তি হওয়া উচিত ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’,’অশুদ্ধ’ বা ‘ভুল’ এরূপ সুস্পষ্ট সত্যের উপর ,যাতে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। এরূপ হলে ধনীদের স্বার্থহানি করে দরিদ্রের উপকার ঘটলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না। একটি সেকুলার সমাজ সামাজিক ব্যবস্থাপনার কোনো প্রতিবাদ করবে না। একটি সেকুলার সমাজ সামাজিক ব্যবস্থাপনার কোনো সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ নয়। মাইকেল নোভাকের ভাষায়, ‘বিভিন্ন শ্রেণীর স্বার্থময় একটি সমাজের মাথার উপর কোনো পবিত্র আচ্ছাদন নেই। এ ধরনের সমাজে এ ধরনের কোনো মনোগত ইচ্ছাই নেই। আধ্যাত্মিকভাবে এটা একটি শূন্য মন্দির। এ মন্দির এমনই অন্তঃসারশূন্য যে, কোনো শব্দ, প্রতিবিম্ব বা প্রতীকই আমাদের সবার কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয়কে মূর্ত করে তোলে না’। কেবলমাত্র ঐমী নির্দেশনাই যদি না থাকে, তবে বিলাস পরিহার ও সবার প্রয়োজন মিটাবার স্বার্থে ব্যবহারে ছাড় দেয়ার জন্য ধনীদের উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করার জন্য আর কিছু আছে কী?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন