hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১১১
হারানো সূত্র
দূরপ্রাচ্যের দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ন্যায়পরতা পাশাপাশি অর্জন করতে সমর্থ হলেও এর পশ্চাতে উদারনীতিবাদের ভূমিকাকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা ভুল হবে। এমনকি নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণও স্বীকার করেন যে, বাজার অর্থনীতির উপর জোর প্রদানের অর্থ এ নয় যে, বাজার ব্যবস্থার যে কোনো ফলাফলকে সরকার মেনে নেবে; বরং এটাই কাম্য যে, সরকার বাজার মূল্য ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা চালাবে। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, নিওক্লাসিক্যাল উদারনীতিবাদের প্রয়োগের পাশাপাশি বাজার ও মূল্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ন্যায়পরতার লক্ষ্যকে ধরে রাখা যায়নি।

দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিরাজিত অধিকতর ন্যায়পরতার কারণ উদার নীতিবাদ নয়। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বিশেষ অবস্থা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সরকারি নীতি এর কারণ। স্বাভাবিক শান্তিকালীন সময়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে ন্যায়পরতা সৃষ্টিকারী অবস্থাসমূহের পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব নয়। ন্যায়পরতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল উদ্ভাবন ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নিওক্লাসিক্যাল উদারনীতিবাদের প্রয়োগে আয় বৈষম্যের অবনতি সৃষ্টি করবে। এমনকি যদি অন্যান্য দেশে অনুরূপ সঞ্চয়ধর্মী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিরাজও করে, তবু বর্তমান পাশ্চাত্য ভোগবাদী সভ্যতার আগ্রাসন, ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয় ও বিপুল আর্থ- সামাজিক বৈষম্য তার কার্যকারিতাকে ভোঁতা করে দিয়েছে। এসব দেশের আজকের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কিভাবে সামাজিক আয়ের ক্ষেত্রে ন্যায়পরতা অর্জন ও বজায় রাখা যায়।

আয়ের ক্ষেত্রে ন্যায়পরতাকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা সত্ত্বেও এসব দেশ তা অর্জনের কার্যকর কৌশল উদ্ভাবনে ব্যর্থ হয়েছে। পঁচিশ বছরে উন্নয়ন পরিক্রমাকে অধ্যয়ন করে মোরওয়েটজ মন্তব্য করেছেন, ‘কিভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায় এবং এ জন্য কি নীতি অনুসরণ করতে হবে এ বিষয়ে প্রচুর ও অনায়াসলদ্ধ অর্থনৈতিক আলোচনা সমৃদ্ধ লেখা রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের ফসলকে কিভাবে জনগণের মাঝে সুষমভাবে বণ্টন করতে হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কোনো আলোচনা দেখা যায় না’। যদিও এক দশকেরও আগে এ মন্তব্য করা হয়েছে, তবু আজকের জন্যও একথা সত্য। বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মূলত প্রবৃদ্ধির উপরই নির্ভর করা হচ্ছে। ফিল্ডস যথার্থভাবে বলেছেন, ‘দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধারণভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করলেও দারিদ্র্য নিরসনের জন্য প্রবৃদ্ধি অর্জন যথেষ্ট নয়… অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বৈষম্য হ্রাস পাবে কী বৃদ্ধি পাবে, তা মাথাপিছু গড় আয়ের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে না, বরং তা নির্ভর করে কী ধরনের উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে তার উপর। বৈষম্য হ্রাসের জন্য কার্যকর কর্মসূচি প্রদানের ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে সাম্যের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ আসলে ফ্যাশন নির্ভর সমাজের আরেকটি ফ্যাশন মাত্র। এ অনুভূতিটি আরো তীব্রতার হয়, যখন দেখা যায় নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের একটি বিরাট অংশ ন্যায়পরতা অর্জনকে নীতিমালার মূল লক্ষ্য হিসেবে ধার্য না করে তাকে অনুসৃত নীতির পরোক্ষ লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে। ন্যায়পরতা অর্জনের উপর পর্যাপ্ত আলোচনার অভাব বস্তুত উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের এ বিষয়ের আলোচনার প্রতি অনীহার ফসল মাত্র। ন্যায়পরতা অর্জনের জন্য কার্যকর কৌশল দাবি করে সামাজিক উদ্দীপনার জাগরণ, সামাজিক মূল্যবোধ নিরপেক্ষ নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতির কাঠামোর মধ্যে থেকে তা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে ন্যায়পরতা অর্জনের উপযুক্ত পন্থা যদি কেউ বাতলেও দেয় তবুও অন্যরা গ্রহণ করবে কেন? মিয়ারের ভাষায় উন্নয়ন অর্থনীতির সবচেয়ে অসমৃদ্ধ অংশ হচ্ছে, কিভাবে যথাযথ নীতিমালার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে তার দিকনির্দেশ করতে না পারা। পন্থা বাতলানো সহজ হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি ও বাস্তবায়ন সত্যি কঠিন। এর কারণ বলতে যেয়ে মিয়ার বলেছেন, ‘এমন একটি নীতিমালা বা কর্মসূচি পাওয়া দুষ্কর যাতে সবাই লাভবান হয়। যে কোনো কর্মসূচি হতে কেউ লাভবান হবে আর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক’। তাই এমন একটি কর্মপদ্ধতি নিরূপণ করা প্রয়োজন, যা কোনো কর্মসূচির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদেরও সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে। নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতি এখানে ব্যর্থ হয়েছে। এ মতবাদ প্রদত্ত কর্মসূচি কার্যকর হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত তা ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের অনুকূলে থেকেছে। ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের জন্য ধাবিত হবে এ ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষম বণ্টন আনয়ন করা যায় না। এ ধরনের অর্থনৈতিক আচরণ বস্তুত বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়। সুষম বণ্টন দাবি করে সামাজিক স্বার্থে নিছক ব্যক্তিস্বার্থের কিছু ছাড় দেবার স্পৃহা। নিওক্লাসিক্যাল মডেলে সামাজিক স্বার্থসিদ্ধি ততদূর পর্যন্ত হবে, তা ব্যক্তিস্বার্থের সাথে সংঘাতপূর্ণ না হয়। মূল্যবোধ নিরপেক্ষ উদারনীতিবাদ আত্মত্যাগ স্বীকার করে, সামাজিক স্বার্থরক্ষার কোনো তাগিদ সৃষ্টি করে না। বিশ্ব ব্যাংকের রির্পোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের মানুষের আয় যদি সুষমভাবে বণ্টন করা হতো, তবে বর্তমান খাদ্যশস্যের পরিমাণ দ্বারাই প্রত্যেক নারী, পুরুষ ও শিশুকে প্রতিদিন ৩০০০ ক্যালরি এবং ৬৫ গ্রাম দেখা গেছে ১৯৬৫ সালে মাথাপিছু যে ক্যালরি ছিল তার তুলনায় ১৯৮৫ সালে মাথাপিছু ক্যালরি অনেক কম।

মানুষের অভাব রয়েছে এর কারণ এ নয় যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে হয়নি; বরং এটাই যে, তার সুষম বণ্টন সৃষ্টি করতে পারেনি। যদি এ মডেলের তা করার সামর্থ্য থাকত,তবে যেসব অধিক সম্পদ ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত দেশসমূহে এ মডেলের প্রয়োগ হয়েছে, সেসব দেশে সম্পদের সুষম বণ্টন অর্জিত হতো। তাহলে এসব দেশের উন্নয়ন কমিটিসমূহকে এ কথা স্বীকার করতে হতো না যে, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণে সমস্যাটির নিরসন প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে’। নিওক্লাসিক্যাল মডেলের ন্যায়পরতা অর্জনের ব্যর্থতাই সমাজতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু সমাজতন্ত্রও অধিকাংশ দেশেই ন্যায়পরতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সমাজতন্ত্রের অধিকতর ব্যর্থতা হচ্ছে, অধিকাংশ দেশে সমাজতন্ত্র উৎপাদন দক্ষতাও অর্জন করতে পারেনি। আয় ন্যায়পরতার লক্ষ্য অর্জন যেহেতু উন্নয়নশীল দেশের জরুরি আর্থ-সামাজিক ম্যান্ডেট, তাই যে নিওক্লাসিক্যাল মডেল অতীতে এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে তার পুনরুজ্জীবন দ্বারা নতুন কিছু আশা করা যায় না।

নিওক্লাসিক্যাল মডেলের দিকে পুনরায় ফিরে গেলে উন্নয়নশীল দেশেসমূহে যে আয়-বৈষম্য বিরাজমান, সে অবস্থার কোনো উন্নতি সাধিত হবে না। বরং সংকট ও অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্রতা লাভ করেছে। রাজনৈতিক অসন্তোষ ও সংকট এমন আকার নিতে পারে যাতে উদারনীতিবাদের বিরুদ্ধে এক ক্রুদ্ধ স্রোতধারা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, উদারনীতিবাদ বিরোধী এ স্রোতধারা উন্নয়নশীল দেশসমূহে ন্যায়পরতার লক্ষ্য অর্জনে কী সফল হবে, যখন ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, উন্নয়নশীল ও সমাজতান্ত্রিক উভয় শিবিরেই উদারনীতি বিরোধী মতবাদ ন্যায়পরতার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দুটি মতবাদের মাঝে ফুটবলের মতো ছোটাছুটি করার পরিবর্তে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে নিজের আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনের আলোকে নিজস্ব উন্নয়ন কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন