hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৬০
অসম বন্টন ব্যবস্থা
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মূল লক্ষ্য ছিলো জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক ন্যায়পরতা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সমাজতন্ত্র বাস্তবক্ষেত্রে বৈষম্য সামান্যই দূর করতে পেরেছে। সম্পত্তিহীন শ্রমিকশ্রেণী সম্পত্তি থেকেই বঞ্চিত রয়ে গেল। একজন পুঁজিপতির মালিকানাধীন কারখানার শ্রমিক হওয়ার বদলে সে আরো বেশি ক্ষমতাশালী একচেটিয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কারখানার শ্রমিকে পরিণত হলো। এ নতুন মালিকের পুরস্কার বা শাস্তি দেবার ক্ষমতা আবার অসীম। এখানে শ্রমিক শ্রেণী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় তাদের যে অবস্থান ছিলো তা সত্ত্বেও অধিকতরভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হতে দূরে রয়ে গেলো। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে শ্রমিক শ্রেণী ইউনিয়ন, মুক্ত প্রচার মাধ্যম এবং নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তত কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হতো। উৎপাদন যন্ত্র এবং উৎপাদিত দ্রব্যের উপর শ্রমিক শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন এ নতুন ব্যবস্থাতেও বাস্তবের মুখ দেখল না। বস্তুত তাদের প্রকৃত অবস্থার আরো অবণতি ঘটলো।

কার্লমার্কস যে মজুরি দাসত্বের অবসান চেয়েছিলেন তা বরং আরো তীব্রতর হলো। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় একজন শ্রমিকের অন্তত তার কর্মক্ষেত্র বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সোভিয়েত ব্যবস্থায় রাষ্ট্র নামক একমাত্র মালিক থাকায় সে সুযোগেরও কোনো অবকাশ নেই। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এক কারখানা ছেড়ে অন্য কারখানায় চলে যাবার যে স্বাধীনতা একজন শ্রমিক ভোগ করত, তা হারিয়ে সে এখন সারাজীবন একটি কারখানার শিকলে বাঁধা পড়ে গেলো। এখন সব কিছু নির্ভর করে তার উপরস্থ কর্মকর্তার উপর। কর্মকর্তা বদান্য হলে কারো অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে একজন শ্রমিক দক্ষতার সাথে অধিক পরিশ্রম করলেও সে জন্যে তার কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাবার কোনো সুযোগ এ ব্যবস্থায় নেই। অপরদিকে উর্ধতন কর্মকর্তা প্রতিহিংসাপরায়ণ চরিত্রের হলে কর্মচারীকে নীরবে নির্যাতন সয়ে যেতে হবে। অভিযোগ করারজন্যে তার সামনে কোনো দুয়ার খোলা নেই। যদি সে তার অধিকারের জন্যে লড়াই করতে চায়, তবে তা স্থান হবে বাধ্যতামূলক শ্রমশিবিরে। রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র তাই পুঁজিবাদী সমাজ থেকেও অধিকতর নিপীড়নমূলক হয়ে দাঁড়াল। শুধু এই কারণটিই কি মজুরি শ্রমিকের ভগ্ন বিচুর্ণ মানব সত্তায় পরিণত হওয়ার (এলিনেশন প্রক্রিয়া) জন্যে যথেষ্ট নয়? সোস্যাল ডেমোক্রেট ‘ক্রসল্যাণ্ড’ যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘উৎপাদন উপকরণ হতে শ্রমিক শ্রেণীর বিছিন্নকরণের (এলিনেশন) অন্তর্নিহিত কারণ সমাজতান্ত্রিক সমাজেও বিদ্যমান। কারণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র শ্রমিক শ্রেণী হতে বহু দূরে। শোষণের সম্ভাবনা এবং পুঁজিবাদের সমস্ত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ এখানেও পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।

সামাজিক বৈষম্য ও শ্রেণী পার্থক্যের ধারা এখানেও অপ্রতিহতভাবে চলতে থাকে। ‘মুরে ইয়ানোভিচ’ মন্তব্য করেছেন, ‘সোভিয়েত সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর শ্রেণী ব্যবস্থা। সমাজের উপর স্তরের লোকেরাই ধনতান্ত্রিক সমাজের মতো উচ্চ আয়ের পদমর্যাদাসম্পন্ন চাকরিসমূহ পেয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমাজতান্ত্রিক গবেষণায় দেখা গেছে শ্রমিকদের সন্তানদের জীবনের উচ্চাকাংখা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সৌভাগ্যের মুখ দেখার সুযোগ পায়নি। ‘শ্রমিক রাজত্বের’ বাগাড়ম্বর দ্বারা এ তিক্ত সত্যকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এককালের বিখ্যাত প্রবচন যে “রাষ্ট্রীয় মালিকানা শ্রেণীহীন সমাজ” প্রতিষ্ঠা করবে ভ্রান্তিতে পর্যবসিত হয়েছে। রাষ্ট্র শিল্পসমূহ অধিগ্রহণ করলে আর কোনো শ্রেণীবিশেষই রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করবে না -এরূপ ধারণা করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। এককেন্দ্রীক ব্যবস্থা যা মানব ভ্রাতৃত্বের মতবাদ বা স্রষ্টার সম্মুখে জবাবদিহিতার ধারণার উপর নয়, বরং দ্বান্দ্বিক মতবাদ এবং একশ্রেণী কর্তৃক অন্যশ্রেণীকে উৎখাত বা অধীনস্থ করার দর্শনের উপর ভিত্তিশীল তা হতে শ্রেণীব্যবস্থা আরো বেশি তীব্রতর হতে বাধ্য।

সোভিয়েত ইউনিয়নে ভোগ্যপূণ্য উৎপাদনকে অগ্রাধিকার প্রদান না কার ফলে জনগণের বিচ্ছিন্নকরণ (এলিনেশন) প্রক্রিয়া আরো জোরদার হয়েছে। খাদ্য, বাসস্থান ও জীবনের অন্যান্য অত্যাবশ্যকক সামগ্রীর সরবরাহ রয়ে গেছ। অপ্রতুল। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্যে শ্রমিকদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিপরীত পক্ষে প্রভাবশালী ও শক্তিধর ব্যক্তিবর্গের নিকট সব কিছুই সহজলভ্য। তারা শুধু বিনামূল্যে প্রসাদোপম বাড়ি ও গাড়িই নয়, গোপনভাবে প্রদত্ত অতিরিক্ত বেতন, হ্রাসকৃত মূল্যের দোকানো বিশেষ সুবিধাও ভোগ করে। এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের বিনামূল্যে দ্রব্যসামগ্রী পাবার জন্যে রয়েছে বিশেষ দোকান। এ ব্যবস্থা সমাজে মানুষের শ্রেনী বিভক্তির সুস্পষ্ট দলিল। সেখানে অভিজাত শ্রেনীর জন্যে সকল প্রকার বিলাস সামগ্রীর সুযোগ রয়েছে, অতচ সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হতেও বঞ্চিত। শ্রমিকদের মনোবল ও শৃঙ্খলাবোধের উপর স্বাভাবিকভাবে এ অবস্থা প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অবশ্য বিখ্যাত ‘নাভোসিবিরিস’ রিপোর্টে খ্যাতিমান অর্থনীতিকিদগণ অলস, দুর্নীতিপ্রবণ ও শৃঙ্খলাবোধহীন শ্রমিক সমাজ গড়ে ওঠার পিছনে অর্থনীতির অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণকে দায়ী করেন। তারা কারণ হিসেবে বিরাজমান শ্রেণী বৈষম্য, সামাজিক অন্যায়পরতা ও নৈতিক স্খলনজনিত পরিবেশের প্রতিক্রিয়া দেখতে বস্তুত ব্যর্থ হন। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও শ্রমিক শ্রেণীর সন্তানগণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির সুযোগের বেলায় সমাজের উপর স্তরের প্রভাব ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের তুলনায় কম সুযোগ লাভ করে। সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থা অবৈতনিক হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পুরুষানুক্রমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য টিকিয়ে রাখার প্রবণতা সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে সুযোগ লাভের শর্ত হয়ে দাঁড়ায় সামাজি সিড়িতে শিক্ষার্থীর শ্রেণীগত অবস্থান। ‘ইয়ানোভিচ’ লক্ষ্য করেছেন, যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যত বেশি ভবিষ্যত লাভজনক পেশা সাথে সংযুক্ত তাতে শ্রমজীবী মানুষের সন্তানদের প্রবেশের সুযোগ তত কম এবং “সাদা কলারধারী পেশাজীবীদের সন্তানেরাই সেখানে সিংহভাব দখল করে আছে”।

অন্যান্য দিক থেকেও সোভিয়েত ব্যবস্থা অন্যায়পরতাপূর্ণ। কৃষক শ্রেণী শুধুমাত্র তাদের কৃষি জমিই হারায়নি, তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের জন্যও যথাযথ মুল্য পায়না যা সরকার কৃর্তৃক হ্রাসকৃত ও পূর্বনির্ধারিত। সমগ্র সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নেই আয় প্রয়োজনের তুলনায় নূন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়নে আয়ের বৈষম্য কম হতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের তুলনায় কম নয়। সমাজতন্ত্রী চিন্তাবিদ ‘সুইজি’র দৃষ্টিতে সোভিয়েত সমাজ আয় ও সুযোগের ক্ষেত্রে তীব্রভাবে বৈষম্যমূলক। এ কারণেই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেও কৃষক ও শ্রমিকদের তাদের পূর্ণশক্তিতে কাজ করার জন্যে উদ্বুদ্ধকরণে সফল হওয়া যায়নি। এভাবে এ ব্যবস্থা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তিই হরণ করেনি, এটা শ্রম ও প্রয়োজনের তুলনায় কম মজুরি প্রদান করে সর্বহারা উৎপাদক শ্রেণীর প্রতি বিরাট অবিচার সাধন করেছে। ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ এভাবে সর্বহারা শ্রেণীর দমনযন্ত্রে পরিণত হয়। তাই ‘সুইজি’ এ মর্মে মন্তব্য করতে বাধ্য হন যে, ‘মার্কসীয় মতাদর্শের দাবি পূরণে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন