hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১২৬
(ক) পরিশোধন পদ্ধতি
সম্পদের উপর সীমাহীন চাহিদার তুলনায় সম্পদের আপেক্ষিক স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশোধন কৌশলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সম্পদের উপর যত দাবি আছে, তা একটি বিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। এতে দ্বৈত লক্ষ্য অর্জিত হবে, লভ্য সম্পদ ও চাহিদাকে সমপর্যায়ে আনা যাবে এবং ঈপ্সিত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জিত হবে।

পুঁজিবাদ ভোক্তাদেরকে তাদের নিজ নিজ অগ্রাধিকার অনুসারে সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তির লক্ষ্যে যা চায় তাই ভোগ করার অনুমতি দেয়। এ মতবাদ ভোক্তাদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় উৎপাদনের যে যে জিনিস ব্যবহার করে তা বাজার নির্ধারিত মূল্যে বিশোধন কৌশল হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের মূল্য নির্ধারণ সর্বোচ্চ উপযোগিতা প্রয়াসী ভোক্তা কতটুকু ভোগ করবে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা প্রত্যাশী উৎপাদক কী উৎপাদন করবে তা নির্ধারণ করে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটি সমতা আনয়ন করে।

পটভূমিকার শর্তাবলী পূরণ না হওয়ার বিশোধন প্রক্রিয়া হিসেবে কেবলমাত্র মূল্য ব্যবস্থার ব্যবহার আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জনকে ব্যর্থ করে দেয়। বাধাহীন ব্যক্তিকেন্দ্রিক অগ্রাধিকার এবং মূল্যবোধহীন প্রচারণা ও ঋণপ্রাপ্তির সহজ সুযোগ সীমাহীন চাহিদার জন্ম দেয়, অথচ একই সময়ে বড় আকারের তীর্যক উপার্জন বণ্টনের ফলে প্রয়োজন মিটানোর জন্য দুর্লভ সম্পদ স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়। এর ফলে প্রয়োজন মিটানোর জন্য লভ্য সম্পদেরই কেবল হ্রাস ঘটে না, সঞ্চয় এবং আমদানি-রপ্তানির মধ্যেও দুরত্ব বৃদ্ধি হয় এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার আরো অবনতি ঘটে। বিশোধন কৌশল হিসেবে মূল্য কৌশলের উপর নির্ভরশীলতা চাহিদা ও সরবরাহের একটি সমতা আনয়নে সহায়তা করে, তবে তা গরীবদের কষ্টের বিনিময়ে তাদের সীমিত উপকরণ দিয়ে উচ্চমূল্যে চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এভাবে তাদের কল্যাণ বিঘ্নিত হয়।

বাজারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকৃত বিশোধন কৌশলের পরিবর্তে পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। এতে ব্যবস্থাটি একনায়কত্বমূলক হবে, অথচ লক্ষ্য অর্জনে কোনো উন্নতি হবে না। আমলাতন্ত্রের হাতে সম্পদ বরাদ্দের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দুর্বল, ধীর ও অদক্ষ হয়ে পড়বে। কারণ ভোক্তাদের অগ্রাধিকার ও উৎপাদকের উৎপাদন ব্যয় সম্পর্কে তাড়াতাড়ি তথ্য প্রাপ্তির কোনো কার্যকর পথ আমলাতন্ত্রের কাছে নেই। এমনকি আমলাতন্ত্রের কাছে সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থা বা সমাজসম্মত মূল্যবোধও নেই। সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের কাছে একমাত্র মানদণ্ড হলো তার নিজস্ব বিবেচনাবোধ, যা সমাজসম্মত মূল্যবোধ বা বাজার পরিস্থিতির সাহায্য ছাড়া সম্পদের আপেক্ষিক দুষ্প্রাপ্যতা বা চাহিদা পূরণের আপেক্ষিক গুরুত্ব বিবেচনায় এনে সম্পদ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারে না। উপরন্তু, ক্ষমতার অবস্থানগুলো এদের উপস্থিতির কারণে তাদের নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারে তারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকে। এর ফলে সম্পদের যে বরাদ্দ ও বিতরণ হয়ে থাকে, তা না হয় দক্ষ না হয় ন্যায়ভিত্তিক। অতএব, সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা প্রয়োগ করার জন্য সর্বোত্তম কর্মকৌশল হচ্ছে, বাজারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া অপসারণ না করা। বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতন্ত্রায়ন ঘটে; এ প্রক্রিয়ায় ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই অংশগ্রহণ করতে পারে। এ ব্যবস্থায় পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে অধিকতর দক্ষতার প্রচলন ঘটে। বরং আরো ভালো হবে অন্য কোনো উপায়ে মূল্য কৌশলের পরিপূরণ করা, যাতে সম্পদের উপর অপ্রয়োজনীয় দাবি নির্ভুল না হলেও অন্তত নিম্নতম পর্যায়ে থাকবে, এসব দাবি সে ধরনের যা ভারসাম্যহীনতা ঘটায় এবং চাহিদা পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

ইসলাম নৈতিক বিশোধন প্রচলনের মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। বিশোধনের দ্বৈত স্তরের মাধ্যমে সম্পদের বরাদ্দ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথম স্তরের বিশোধন খিলাফত ও আদলের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যক্তিগত অগ্রাধিকারের মাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে উৎস মুখেই ব্যক্তিমানুষের অন্তর সচেতনতা থেকে উদ্ভূত সীমাহীন চাহিদা ও সমস্যার মোকাবিলা করে। ইসলাম প্রত্যেক মুসলিমকে সম্পদের উপর তাদের সম্ভাব্য দাবি ইসলামী মূল্যবোধের বিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া অপরিহার্য করেছে, যাতে বাজারে প্রবেশ করার আগেই তার অনেকগুলো বাদ পড়ে যায়। এভাবে সম্পদের উপর যে দাবি ইতবাচক প্রভাব ফেলে না বা মানবকল্যাণ অর্জন থেকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে, সেসব দাবি বাজার মূল্যে দ্বিতীয় বিশোধন স্তরে প্রকাশ পাবার আগেই উৎসমুখেই বিলুপ্ত হয়।

নৈতিক বিশোধন সম্পদের উপর দাবিকে মানবকল্যাণের একটি কাজে পরিণত করে এবং অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সম্পদের ব্যবহার অনুমোদন করে না। উদাহরণস্বরূপ, এ বিশোধন নৈতিকভাবে নিষিদ্ধ সেসব তৎপরতায় সম্পদের ব্যবস্থার অনুমোদন করে না, যেসব তৎপরতায় মানুষ, পশু বা গাছপালা বর্তমান বা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং তাদের কল্যাণ হ্রাস পেতে পারে। এ প্রক্রিয়া একটি সাধারণ জীবনাচার কামনা করে এবং অমিতব্যয়িতা বা অযৌক্তিক প্রতিযোগিতা বা জাঁকজমকের জন্য সম্পদের ব্যবহার অনুমোদন করে না। কারণ এ ধরণের ব্যবহার কল্যাণের ক্ষেত্রে প্রকৃত পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ প্রক্রিয়া সম্পদের ধ্বংস বা অপব্যয়ও বরদাশত করে না (যেমন: মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্যদ্রব্য পুডিয়ে ফেলা)। যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও এমনভাবে পুনর্গঠন করা যায় যে, তা বিশোধন প্রক্রিয়ার পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে সম্পদের উপর দাবিকে যথার্থ সীমার মধ্যে রাখা যাবে। সম্পদ, দক্ষতা ও আর্থিক মধ্যস্থতা সম্পদ বরাদ্দ ও বিতরণের ক্ষেত্রে যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এ নৈতিক প্রক্রিয়াটি সত্যকে এভাবে নমনীয় ও মানবতাসম্পন্ন করে। ব্যারিংটন মূর যথার্থই উল্লেখ করেছেন, কোনো মানবসমাজই সব ধরনের মানবিক আচরণ অনুমোদন করতে পারে না, যদি তা করত তবে শিগগিরই সমাজ হিসেবে তা অবলুপ্ত হতো’। যাইহোক, প্রত্যেকটি সমাজের অন্যতম মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের একটি নৈতিক বিশোধন কে দিতে পারবে? একটি নৈতিক পদ্ধতি কি অবশ্যই । ঐশ্বরিক সূত্র ভিত্তিক হবে এবং এর পিছনে কি অবশ্যই স্রষ্টার নিকট জবাবদিহিতার বিশ্বাস কাজ করবে? অন্যান্য কয়েকটি ধর্মের মতো ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, ঐশ্বরিক মঞ্জুরি এবং পরকালে বিশ্বাস উভয়ই জরুরি।

প্রথমত, ঐশ্বরিক বিধিনিষেধের কারণে আচরণবিধি নিরঙ্কুশ ও বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবে। স্রষ্টার বিধিনিষেধ ছাড়া প্রণীত আচরণ ব্যক্তিগত বিচারে মতভেদের বিষয় হয়ে পড়ে। যেমনটি ঘটেছে পশ্চিমা সমাজে সেকুলার মতবাদ গ্রহণের পর। পরে তাদের মূল্যবোধটিই সম্পূর্ণভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন সভ্যতা ব্যাপক ও গভীরভাবে পর্যালোচনার পর ডুরান্ট ইতিহাস থেকে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন যে, আমাদের সামনে ইতিহাসের এমন কোনো সমাজের উদাহরণ নেই, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যতিরেকে সাফল্যজনকভাবে কোনো নৈতিক জীবন পালন করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মানব সমাজে এমন কে আছে, যে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং সকলের কল্যাণে পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে পারে? যদি মানবসত্তার নিজেদেরকেই এসব নিয়ম তৈরি করতে হতো, তাহলে তা প্রণয়ন করতে তাদের মাঝে এ ধরনের প্রবণতাই কাজ করত, যাতে তা প্রতিপত্তিশালী ও বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের অনুকূলে যায় এবং যা সকলের কল্যাণ করতে অপারগ। এমনকি নিরপেক্ষতার ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহই সর্বসম্মতির সুযোগ নস্যাৎ করে দেয়।

তৃতীয়ত, অন্যদের উপর তাদের কাজের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে সম্পর্কে মূল্যায়ন করার জ্ঞান মানুষের নেই, বিশেষ করে অনেক দূর থেকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব, তাদের আচরণবিধি প্রণয়নের জন্য এমন জ্ঞানী ও বিবেকবান সত্তার প্রয়োজন, যা এ ধরনের প্রতিফল সম্পর্কে কল্পনা করতে পারে, যাতে তাদের কোনো কার্যক্রমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অন্যেরা রক্ষা পায়।

চতুর্থত, সেই পরম সত্তা যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এককভাবে মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন, শক্তি, দুর্বলতা সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম এবং তাদের একমাত্র নিয়ন্ত্রক ও সকল মূল্যবোধের উৎস হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখেন। তার সীমাহীন দয়াময়তায় তিনি মানুষকে অন্ধকারের মধ্যে পথহীন ছেড়ে দেননি; স্বয়ং আদম (আ) থেকে শুরু করে নবীদের এক নিরবচ্ছিন্ন দলের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে প্রয়োজনীয় পথনির্দেশ দিয়েছেন যে পথনির্দেশ সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।

এ যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে মূল্যবোধ নিরপেক্ষতা অকল্পনীয়। মূল্যবোধ কাঠামোর নিরপেক্ষতা কেবলমাত্র সেই ব্যবস্থার সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ যা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং আত্মস্বার্থ বা আত্মকেন্দ্রিক যুক্তিবাদিতাকে মহিমান্বিত করে। নিঃসন্দেহে এটি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলামে প্রধানত সামাজিক দায়িত্ব ও সকলের কল্যাণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মূল্যবোধ সকল খলিফার দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়। তাদের সকলকে ‘মাকাসিদ’ বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এ মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করতে হয়। সামষ্টিক মূল্যবোধ বিবেচনা অপরিহার্য এবং এ মূল্যবোধ বিচার থেকে বিরত থাকার যে কোনো প্রচেষ্টা বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এবং সকলের কল্যাণ অর্জন ব্যর্থ করে দিতে বাধ্য। সমাজসম্মত মূল্যবোধের বিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদের উপর দাবি বিবেচিত হবার পর এভাবে অপ্রয়োজনীয় দাবি পরিত্যাগ করে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আনতে হলে বাজার মূল্যের এ বিশোধন কৌশল দক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক সম্পদ বরাদ্দ ব্যবস্থা প্রচলনে আরো বেশি কার্যকর হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন