hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৯৪
আমদানি প্রতিস্থাপন এবং রপ্তানি উন্নয়ন
যদি কৃষি ও শিল্পকে সমভাবে গড়ে তুলতে হয়, তবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমদানি প্রতিস্থাপন ও রপ্তানি উন্নয়নের গুরুত্বকে সুস্পষ্টভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। একটিকে খাটো করে অন্যটিকে গুরুত্ব প্রদানের কোনো প্রয়োজন নেই। উভয় খাতই অত্যাবশ্যক, যদিও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপে তাদের তুলনামূলক গুরুত্ব হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে পারে। অবশ্যই এ কথার অর্থ এই দাঁড়ায় না যে, যে কোনো মূল্যেই আমদানি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, সীমিত প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, সীমিত সম্পদের দক্ষ ও সুসম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করা, তাই আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ ও নন- ট্যারিফ দেয়ালগুলো তুলে দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টি উক্ত পদক্ষেপ দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ কতটুকু নিশ্চিত হবে সে নিরিখে দেখতে হবে। উৎপাদন উপকরণের বিভিন্ন খাতে বণ্টনের যুক্তিযুক্ত নীতিমালাকে উপেক্ষা করা সংগত হবে না। কেননা সম্পদের অদক্ষ ব্যবহারের মূল্য দিতে হবে জনগণকে, যা কোনোক্রেমই মেনে নেয়া যায় না। এতদসত্ত্বেও দেখা যায়, আমদানি প্রতিস্থাপন কর্মসূচি দ্বারা ধনিক-বণিক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থ সংরক্ষিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা হ্রাসের শ্লোগানটি ব্যবহার করা হয় জনগণের দেশপ্রেমিক অনুভূতিকে ব্যবহারের জন্য।

অর্থনৈতিক নীতিমালা হিসেবে আমদানি-প্রতিস্থাপন কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি নেই। ত্রুটি হচ্ছে যে অবস্থা ও পদ্ধতিতে তার অপপ্রয়োগ হচ্ছে তাতে। যদি উন্নয়নের লক্ষ্য হয়ে থাকে সমাজে ন্যায়পরতা সৃষ্টি করা, তাহলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন ছিল কৃষি, ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্পের (Small Micro Entreprise-SME) সমর্থনে আমদানি প্রতিস্থাপন কর্মসূচিকে ব্যবহার করা। এর ফলে গ্রামীণ এলাকা এবং ক্ষুদ্র শহর ও নগরীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হতো। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে তাদের ভিটেমাটি হতে উচ্ছেদ হয়ে নগরমুখী হতে হতো না। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় প্রত্যাশিত কৃষিনির্ভর ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্পের উন্নয়নের পদক্ষেপ পরিবর্তে গ্রহণ করা হলো শহরাঞ্চলে বৃহৎ শিল্প কারখানা স্থাপনের কর্মসূচি। বৃহৎ শিল্প স্থাপনে সহায়তার লক্ষ্যে সরকার কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রিত বৈদেশিক মুদ্রাহার ও উচ্চ ট্যারিফহার নির্ধারণ করল। নিম্নমূল্যে উৎপাদন উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে প্রদান করল বিপুল ভর্তুকি। পুঁজিবাদী আন্তর্জাতিক সহায়তা এগিয়ে আসলো। এসব চোখ ঝলসানো বৃহদায়তন প্রকল্পের প্রতি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাসমূহের সুদৃষ্টি উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না।

কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্প খাত সরকারের পক্ষ হতে ভর্তুকি বা অন্য কোনো প্রকার সহায়তা পায়নি, তদুপরি উচ্চ মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রাহারের কারণে এ খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব খাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ছিল প্রাচীনকালের। ক্রমউৎপাদনশীলতার কারণে আয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাত্রা ছিল অনুল্লেখ্য। ফলে বেকারত্ব ও অর্ধবেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। ভারী যন্ত্রপাতির দাম কৃত্রিমবাবে কম রাখায় এবং ট্যারিফহার ও অতিরিক্তভাবে মূল্যায়িত বৈদেশিক মুদ্রার সযোগের কারণে আমদানি প্রতিস্থাপক বৃহৎ শিল্প কারখানা প্রসার লাভ করল। উপরন্তু সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন ও তাদের সার্বিক স্বার্থ দেখা যেহেতু সরকারি নীতিমালার প্রধান লক্ষ্য ছিলনা, তাই আমাদানি প্রতিস্থাপক যে সকল বৃহৎ শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্যে নির্ধারণ করা হলো তা গণমানুষের স্বার্থ ও কল্যাণের অনুকূলে গেল না। যদি তা করা হতো, তাহলে অন্তত সাধারণ মানুষ সুলভ মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় ভোগ্য সামগ্রী লাভ করতে পারত। যদিও এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি সুরাহা সম্ভব হয়ত হতো না। কিন্তু দেখা গেল ঐসব বৃহদায়তান শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হলো যা সাধারণ মানুষের অত্যাবশ্যক দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের প্রয়োজন পূরণের জন্যে নয়, বরং মুনাফামুখী বিলাস দ্রব্য ও ভারী যন্ত্রপাতি উৎপাদনে নিয়োজিত রইল। দেশীয় বাজার ক্ষুদ্র হবার কারণে এসব শিল্প দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল সীমিত এবং অদক্ষ হবার কারণে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি। অপরদিকে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি নির্ভর বিধায় প্রতিস্থাপক শিল্প কারখানা দ্বারা দেশর শিল্পদ্রব্য সামগ্রির ঘাটতি পূরণ ও আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হলো না। প্রকৃত প্রস্তাবে শুধু এক শ্রেণীর আমদানির বদলে অন্য শ্রেনীর আমাদানি প্রতিস্থাপিত হলো মাত্র।

বিদেশ হতে আমদানি করা কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে বড় শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মাদ্যমে প্রত্যাশিত মাত্রার কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি হলো না, যা দিয়ে কৃষি, ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শ্পিরৈ দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। কোনো খাতের প্রবৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতিতে যে ‘লিংকেজ’ প্রতিক্রিয়া তথা অন্যখাতগুলোর জন্যে যে সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি হবার কথা, তা হলো না। বৃহদায়তন শিল্পসমূহের জন্যে যে আমদানি করতে হয় বাড়তি মুনাফা সে পথে আবার ফিরে গেল। ধনী দেশগুলোতে পুঁজির আধিক্য ও শ্রমের স্বল্পতার কারণে সেখানকার প্রযুক্তিসমূহ স্বাভাবিক কারণেই পুঁজি-নিবিড়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিল্পকারখানায় উন্নত বিশ্ব হতে আমদানিকৃত এসব পুঁজি নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে লাগল। ফলে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠলেও সে অনুযায়ী কর্মসংস্থানো সযোগ প্রসারিত হলোনা। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় সম্পদের বৃহৎ ভাগ কৃষি, ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্প খাতে সৃষ্টি হলেও এসব খাত ন্যায্য হিস্যা হিসেবে পুঁজি রূপে এ সঞ্চয়ের ভাগ পেল না। বরং ঐ সঞ্চয় প্রবাহ সরকারের পক্ষপাতমূলক নীতি কারণে বৃহত শিল্পখাতে প্রবাহিত হলো। ফলশ্রুতিতে গ্রামীন হস্তশিল্প বিলেতি তাঁতশিল্প দ্বারা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশের জন্যে বেকার থাকা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকলনা অথবা তারা শহরাঞ্চলে পাড়ি জমাতে বাধ্য হলো।

এর অর্থ অবশ্য এ নয় যে, অর্থনীতির উন্নয়নে বৃহদায়তান পুঁজি নির্ভর শিল্পখাতকে খাটো করে দেখা। কথা হচ্ছে যে, যেহেতু আত্মকর্মসংস্থান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি যেখানে প্রাধান্য পাওয়া সামাজিকভাবে প্রয়োজন, সেখানে পুঁজি-নিবিড় বৃহৎ শিল্প তখনই গড়ে উঠতে দেয়া উচিত, যখন শ্রমনিবিড় শিল্প সমূহ ঐসব দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনে সমর্থ নয় বলে দেখা যায়। ‘উন্নত চিন্তা কিন্তু সরল জীবনযাপন’ –প্রাচ্যের এ দর্শনের নিজস্বতার সাথে সংগতি রেখে দেশীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন ও কর্মপদ্ধতি গড়ে তোলার পরিবর্তে পাশ্চাত্য জীবনবোধ ও পদ্ধতির প্রতি যে আসক্তি ও প্রচারণা চালানো হয়েছে, তাতে বর্তমানে যে ধারার দ্রব্যসামগ্রীর শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে সেই প্রবণতাটাই স্বাভাবিক ছিল। এটা আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে পাশ্চাত্যের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল উৎপাদনকারী বেনিয়া ও শিল্পপতি গোষ্ঠীর কায়েমী স্বার্থে। তারা তাদের পণ্য ও প্রযুক্তি তৃতীয় বিশ্বে বাজারজাতকরণের লোভনীয় পন্থা অনুসরণ করেছে। ব্যাংক ও ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান মারফত ‘ক্রেডিট সেল’ এর মাধ্যমে তার তৃতীয় বিশ্বে তাদের পণ্য সামগ্রীর বাজার সৃষ্টি করে নেয়। ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বের রপ্তানির চেয়ে আমদানি বৃদ্ধি পায়। সৃষ্টি হয় আমাদানি ও রপ্তানির মাঝে ভারসাম্যহীনতা ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের সংকট।

যদি শিল্পায়ন ও আমদানি প্রতিস্থাপনের নীতিমালা সমাজে ন্যায়পরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রচিত হতো তাহলে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন দৃষ্টিভংগি ও পদ্ধতি গ্রহণ করা হতো। তাহলে লক্ষ্য হতো মানুষের মৌলিক দ্রব্য সামগ্রীর প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে উৎপাদন, সকল মানুষের জন্যে কর্মসংস্থান এবং সমাজের বৈষম্যহ্রাস। দেশীয় ধনীক শ্রেণী ও বিদেশী বেনিয়াদের স্বার্থ পূরণের হাতিয়ার হিসেবে দেশীয় শিল্পনীতি ব্যবহৃত হতোনা। সব কিছু করা হতো দেশীয় বাজারের জন্যে, ভোগ্য পণ্য ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ ও রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে গ্রামীণ ও শহরের উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের জন্যে। গ্রামীণ এলাকায় গড়ে তোলা হতো সহজ সরল অথচ দক্ষ ভৌত ও আর্থিক অবকাঠামো। ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্পের জন্যে দেশীয় লাগসই প্রযুক্তি নির্মাণ করা হতো অথবা আমদানি করা হতো ঐ সব প্রযুক্তি যা উন্নয়নশীল দেশের অবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ। দেশীয় শিল্পকে পরিচর্যার জন্যে দেয়া হতো ট্যারিফ প্রতিরক্ষা। এসব যদি করা হতো, তবে শুধুমাত্র দেশজ উৎপাদনই বৃদ্ধি পেতনা, বিদেশী পণ্যের সাথে এগুলো এক পর্যায়ে এসে মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতায় নামতে পারতো। গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর কর্মসংস্থান হতো, গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি পেত, শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ কমে যেত। গ্রামীন মানুষের অধিক আয়ের ফলে তারা উন্নমানের কৃষি উৎপাদন উপকরণ ব্যবহার করতে পারতো। ফলে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেত।

এভাবে যদি আমাদানি প্রতিস্থাপনের শিল্পনীতি গ্রহণ করা হতো, তবে ক্ষুদ্র ও ব্যাষ্টিক শিল্পের উন্নতির মাধ্যমে দেশে পণ্যসামগ্রীর চাহিদার সংকুলান করা সম্ভব হতো। এবং পরিশেষে উদ্ধৃত্ত পণ্য রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে পারত। প্রথমে অবশ্য দেশীয় বাজারের চাহিদা অনুপাতে পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হতো। শিল্প কারখানার ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যখন যখন বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধা (external economic) সৃষ্টি হতো, কখন রপ্তানি বাজার সৃষ্টির সুফল ঘরে তোলা যেত। এ ধরণের শিল্পনীতি হতো উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ের জন্যে। যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রীর প্রয়োজন মিটে যেত, বেকার সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তখন ভারী যন্ত্রপাতি ও ‘ভোক্তা টেকসই’ উৎপাদন উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের নীতিমালা হিসেবে গৃহীত হতে পারতো।

আমদানি প্রতিস্থাপন বা বিদেশ হতে আমাদানি হ্রাসের জন্যে দেশীয় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার যে নীতি, তা উন্নয়নশীল দেশসমূহে সঠিক পন্থায় পরিচালিত না হওয়ায় রপ্তানি উন্নয়নের লক্ষ্য তাও অর্জন হয়নি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সরকারি সহায়তা ও ভর্তুকি সত্ত্বেও গড়ে তোলা পুঁজি-নিবিড় অনেক বৃহদায়তান ভারী শিল্পেরই প্রাথমিক পর্যায়ে তুলনামূলক খরচ সুবিধা ছিলনা। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতার সামনে তারা দাঁড়াতে পারলনা। পক্ষান্তরে কৃষি ও শ্রম নির্ভর ক্ষুদ্র শিল্পসমূহ স্থাপন করে যাদের তুলনামূলকভাবে অধিক দক্ষ ও উৎপাদনশীল করে গড়ে তোলা সম্ভব ছিল, তারা সরকারি সাহায্য সহযোগিতা হতে বঞ্চিত হলো। বৈদেশিক মুদ্রার হার কৃত্রিমভাবে উচ্চমাত্রায় বেঁধে দেয়ায় কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত রপ্তানি বাজারে প্রবেশের কার্যকারিতা হারাল। ফলে রপ্তানি যতদূর বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব ছিল তা হলোনা।

আধুনা রপ্তানি উন্নয়নের উপর যে পরিমাণ অথ্যধিক জোর দেয়া হচ্ছে, সতর্কতার সাথে তার মূল্যায়ন করতে হবে। যদি যে কোনো মূল্যে আমদানি প্রতিস্থাপনের নীতি ক্ষতিকর হয়, তবে যে কোনো মূল্যে রপ্তানি উন্নয়নের নীতিও আকাঙ্ক্ষিত হতে পারেনা। যে খাতে ইতোমধ্যে অনেকগুলো অদক্ষ পুঁজি-নির্ভর বৃহৎ শিল্প স্থাপিত হয়ে গেছে, সেখানে যে কোনো নতুন নীতির দু’টি স্তম্ভ হচ্ছে শ্রমের কম মূল্য নির্ধারণ ও স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন। এ নীতি দ্বারা দেশীয় ধনীক শ্রেণী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অদক্ষ্য শিল্পগুলোর পক্ষে রপ্তানি সম্ভব হতে পারে, তবে তা প্রকৃত মজুরি হ্রাসের দ্বারা দরিদ্র শ্রেণীকে আরো দরিদ্রতর করবে। তাই রপ্তানি উন্নয়নের এ নীতিমালা হবে আর্থ-সামাজিক ন্যায়নীতি বিরোধী। তাই রপ্তানি উন্নয়নের হুজুগে ট্রেনে চটজলদি উঠে পড়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে যেন রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়ার ফসল মেহনতী দরিদ্র শ্রেণীর হাতে আসে।

যেসব প্রবক্তারা আমদানি প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে উন্নয়নের কৌশল হিসেবে শুধুমাত্র রপ্তানি উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে থাকেন, তাদের মনে রাখা প্রয়োজন তৃতীয় বিশ্বের রপ্তানি সামগ্রী উন্নত বিশ্বে সব সময় সকল প্রকার ট্যারিফ ও ট্যারিফ দেয়ালের সম্মুখীন হবে। অপরদিকে ‘ডাম্পিং নীতি’ (Dumping Policy) এবং প্রিডেটরি’ (Predatory) মূল্য নির্ধারণীর মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব তাদের মালামাল তৃতীয় বিশ্বে বাজারজাতকরণ অব্যাহত রাখবে। ‘দি ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার ভাষায়, ইউরোপের ‘কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি’ এবং ধনী দেশসমূহের ‘মাল্টি-ফাইবার এগ্রিমেন্ট’ এর মতো জটিল বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাসমূহের প্রধান ভোক্তভোগী হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো। গত তিন দশকে শিল্পোন্নত বিশ্বে কৃষি ও শিল্পে সরকারি অনুদান উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বাহির হতে আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা। বুনক্যাম্প এর মতে, উন্নত দেশের সরকারসমূহ কর্তৃক আরোপিত এসব বাধানিষেধ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিঘ্নিত করে তুলেছে। উন্নত দেশের এসব রক্ষণশীল পদক্ষেপ ও সরকারি নীতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো হতে কৃষি পণ্য রপ্তানি দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। উদাহারণ স্বরূপ, জাপানে চাল আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্ববাজারে দরের ৯গুণ দামে জাপানে দেশি চাল বিক্রি হয়। উন্নত বিশ্বে ট্যারিফ হার কমানো হলেও ঐসব দেশে নন-ট্যারিফ বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সমূহ দ্বারা বাহির হতে আমাদানি প্রতিহত করে দেশীয় পণ্য সামগ্রীর সংরক্ষণ অব্যাহত থাকে। অধিকন্তু কোনো উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি অগ্রগতি ব্যাহত হয়। আন্কটাড এর হিসাব মতে, উন্নত বিশ্বের সংরক্ষণশীল নীতির ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বছরে ৭০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হতে বঞ্চিত হয় যা তাদের বার্ষিক বৈদেশিক ঋণের ৫০ ভাগের বেশি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন